কোরআনের মু‘জিযাহ্

কোরআনের মু‘জিযাহ্ 0%

কোরআনের মু‘জিযাহ্ লেখক:
: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ: কোরআন বিষয়ক জ্ঞান

কোরআনের মু‘জিযাহ্

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 46614
ডাউনলোড: 4351

পাঠকের মতামত:

কোরআনের মু‘জিযাহ্
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 60 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 46614 / ডাউনলোড: 4351
সাইজ সাইজ সাইজ
কোরআনের মু‘জিযাহ্

কোরআনের মু‘জিযাহ্

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

বিচারবুদ্ধির দৃষ্টিতে কোরআনের অলৌকিকতা

কোরআন মজীদ কেবল বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের দৃষ্টিকোণ থেকেই মু জিযাহ্ নয় , বরং বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান-বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকেও মু জিযাহ্ - মানবিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিভা সমূহ যার ধারে কাছেও পৌঁছতে সক্ষম নয়। বিশষ করে বিচারবুদ্ধি ও দার্শনিক জ্ঞানের আলোকে পর্যালোচনা করলে কোরআন মজীদের খোদায়ী কিতাব্ হওয়ার বিষয়টি অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়।

কোরআনের বাহক নিরক্ষর নবী

কোরআন মজীদের বেশ কিছু আয়াতে অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে , হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ) ছিলেন নিরক্ষর (উম্মী) ; তিনি কখনো কারো কাছে লেখাপড়া শেখেন নি। হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) নিজেও তাঁর জাতি ও আত্মীয়-স্বজনের সামনে - যাদের মাঝে তিনি লালিত-পালিত ও বড় হন , তাঁর এ নিরক্ষরতার কথা উল্লেখ করেন। তেমনি যে সব আয়াতে তাঁকে নিরক্ষর বলে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি সে সব আয়াতও তাদের সামনে তেলাওয়াত্ করেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও একজন লোকও এ সত্য অস্বীকার করে নি এবং তাঁর এ দাবীকে মিথ্যা বলে অভিহিত করে নি। এ থেকেই হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর নিরক্ষরতার দাবী অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়।

কিন্তু হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) লেখাপড়া না জানা সত্ত্বেও এমন এক মহাগ্রন্থ নিয়ে এলেন যা দর্শন ও তত্ত্বজ্ঞানে এবং বিভিন্ন ধরনের বিচারবুদ্ধিগত জ্ঞানে ও বৈজ্ঞানিক তথ্যে সমৃদ্ধ , আর তা-ও এমন পর্যায়ের যে , তা বড় বড় বিজ্ঞানী ও দার্শনিকের দৃষ্টিকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করেছে এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য নির্বিশেষে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদগণকে বিস্মিত করেছে। আর এ বিস্ময়ও সর্বকালীন ; সব সময়ই তা অব্যাহত থেকে আসছে এবং কোনো দিনও এ বিস্ময়ের পরিসমাপ্তি ঘটবে না।

অতএব , বলা বাহুল্য যে , কোরআন মজীদের এ জ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক তথ্যাদিতে সমৃদ্ধতা এর মু জিযাহরই বৈশিষ্ট্য।

হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর নিরক্ষরতা একটি অকাট্য প্রমাণিত সত্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা যদি তর্কের খাতিরে এ সত্য সম্বন্ধে চোখ বন্ধ করে রেখে কোরআন বিরোধীদের সাথে সাথে অগ্রসর হই এবং ধরে নেই যে , হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) নিরক্ষর ছিলেন না , বরং লেখাপড়া জানতেন এবং যে কোনো ধরনের জ্ঞান-বিজ্ঞান , শিল্প , ইতিহাস ইত্যাদি অন্যদের কাছ থেকে শিখেছিলেন , তাহলে এ ক্ষেত্রে বিরোধীরা একটি বড় ধরনের , বরং বিস্ময়কর ধরনের দুর্বলতার শিকার হবেন , যে দুর্বলতা তাঁরা না এড়িয়ে যেতে পারবেন , না তার কোনো জবাব তাঁদের কাছে আছে।

কারণ , বিরোধীদের উপরোক্ত বক্তব্যের অর্থ হচ্ছে , হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) তাঁর সমকালীন জ্ঞানী-গুণী , পণ্ডিত-মনীষী ও বিজ্ঞানীদের নিকট থেকে জ্ঞান অর্জন করেছিলেন এবং তাঁদের চিন্তা-গবেষণা ও তথ্যাদি ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু কার্যতঃ দেখা যাচ্ছে , তিনি মানব প্রজাতিকে যে জ্ঞানসম্পদ উপহার দিয়ে গেছেন তা তৎকালীন সমাজের মানুষের চিন্তাধারা ও আক্বীদাহ্-বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্যশীল তো নয়ই , বরং তার বিপরীত মেরুতে অবস্থিত।

ইতিহাসের দৃষ্টিতে এটা অকাট্য সত্য যে , হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর সমসাময়িক যে লোকদের মাঝে তিনি লালিত-পালিত ও বড় হয়েছিলেন তাদের একাংশ ছিলো মূর্তিপূজক ; তারা কল্পনা ও কুসংস্কারের অন্ধ অনুসারী ছিলো। তাদের মধ্যে একদল ছিলো আহলে কিতাব: তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান , আহ্কাম ও আক্বাএদের উৎস ছিলো বাইবেলের পুরাতন নিয়ম নতুন নিয়ম খণ্ডদ্বয়ভুক্ত পুস্তক সমূহ।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে , সাধারণভাবে মনে করা হয় , বাইবেল হচ্ছে তাওরাত্ ও ইনজীলের (দু টি ঐশী গ্রন্থের) সংকলন। প্রকৃত পক্ষে তা নয়। এ গ্রন্থের দু টি অংশ যথাক্রমে ওল্ড্ টেস্টামেন্ট্ (পুরাতন নিয়ম) ও নিউ টেস্টামেন্ট (নতুন নিয়ম)-এ অনেকগুলো পুস্তক সংকলিত হয়েছে।

বাইবেলভুক্ত পুস্তকগুলোর ঐশিতা , যাদের নামে নামকরণ করা হয়েছে তাঁদের নবুওয়াতের যথার্থতা ও তাঁদের সাথে সম্পৃক্ততার সত্যতা , ঐতিহাসিকতা , বিকৃতি ইত্যাদি প্রশ্ন এবং বাইবেলের বিভিন্ন সংস্করণের প্রশ্ন বাদ রেখে শুধু বিদ্যমান বাইবেল-এর পুস্তকসমূহ সম্পর্কে উল্লেখ করতে হয় যে , এর ওল্ড্ টেস্টামেন্ট অংশে তাওরাত্ ও যাবূর সহ মোট 39টি পুস্তক স্থানলাভ করেছে। এর মধ্যে প্রথম পাঁচটি পুস্তককে (আদি পুস্তক বা সৃষ্টি পুস্তক , যাত্রা পুস্তক , লেভীয় পুস্তক , গণনা পুস্তক ও দ্বিতীয় বিবরণ বা দ্বিতীয় বিধান) তাওরাতের পাঁচটি ভাগ বলে মনে করা হয়।

অন্যদিকে নিউ টেস্টামেন্ট অংশে স্থানলাভ করেছে 27টি পুস্তক। এ পুস্তকগুলোর মধ্যে প্রথম চারটি পুস্তককে ( মথি , মার্ক , লুক ও যোহন লিখিত সুসমাচার ) ইনজীল্ বলে দাবী করা হয়। তবে তা তাওরাতের পাঁচটি পুস্তকের একই গ্রন্থের পাঁচ ভাগ হওয়ার মত ো নয় , বরং একই ইনজীলের চারজন লেখক কর্তৃক লিখিত চারটি সংস্করণ। মূলতঃ এসব পুস্তক ঐশী ইনজীলের চারটি সংস্করণও নয় , বরং এগুলো হচ্ছে সংশ্লিষ্ট লেখকগণ কর্তৃক লেখা হযরত ঈসা ( আঃ )- এর জীবনকাহিনী - যাতে তাঁর ওপর নযিলকৃত ইনজীলের কতক উদ্ধৃতিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ পুস্তক গুলোর লেখকগণের কেউই হযরত ঈসা ( আঃ )- এর ছ্বাহাবী ( হাওয়ারী ) ছিলেন না। তাঁর একমাত্র যে ছ্বাহাবী একই নিয়মে ইনজীল্ লিখেছেন এবং যা অপেক্ষাকৃত নির্ভুল তিনি হলেন বারনাবা ( Barnabas),কিন্তু বারনাবার ইনজীলে সুস্পষ্টভাবে রাসূলে আকরাম হযরত মুহাম্মাদ ( ছ্বাঃ )- এর নাম এবং আল্লাহ্ তা আলা কর্তৃক সৃষ্টিকর্মের সূচনার লক্ষ্য ও কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে তাঁর কথা উল্লিখিত থাকায় এ পুস্তকটিকে বাইবেলে স্থান দেয়া হয় নি।

আমরা যদি ধরে নেই যে , হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) স্বীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা তাঁর সমসাময়িক ঐ সব কথিত জ্ঞানী-গুণী ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের নিকট থেকে হাছ্বিল্ করেছিলেন এবং কোরআনের বিষয়বস্তুসমূহ তাওরাত্ ও ইনজীল্ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন , তাহলে কি তার অনিবার্য দাবী এ নয় যে , কোরআন মজীদের জ্ঞান-বিজ্ঞানে ও বক্তব্যে সমকালীন আক্বীদাহ্-বিশ্বাস ও চিন্তাধারা প্রভাব বিস্তার করবে ? তেমনি , এর দাবী কি এ-ও নয় যে , কোরআন মজীদের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও উক্ত গ্রন্থাবলীতে বিদ্যমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের মধ্যে এক ধরনের মিল খুঁজে পাওয়া যাবে ?

কিন্তু আমরা বাস্তবে দেখতে পাই যে , কোরআন মজীদ এবং বাইবেলের পুরাতন নিয়ম নতুন নিয়ম ভুক্ত পস্তকসমূহের মধ্যে সকল দিক থেকে বৈপরীত্য বিদ্যমান। পুরাতন নিয়ম নতুন নিয়ম ভুক্ত পুস্তকসমূহ এবং তৎকালীন অন্যান্য জ্ঞানসূত্রসমূহ যে সব কল্পকাহিনী ও কুসংস্কারে পরিপূর্ণ কোরআন মজীদ শুধু সে সব থেকে মুক্তই নয় , বরং সে সবের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে।

কোরআন মজীদ বৈজ্ঞানিক ও চারিত্রিক সত্যসমূহ এবং বিচারবুদ্ধিগত ও ঐশী জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিষয়সমূহকে এ সব মিথ্যা ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত ও পবিত্র করেছে , আর তাওহীদ্ ও খোদা-পরিচিতির জ্ঞান থেকে সমকালীন সমাজে বিরাজমান কুসংস্কার সমূহকে বিতাড়িত করেছে।

কোরআন মজীদ আল্লাহ্ তা আলার একত্ব ও পরিচয়ের বিষয়টিকে উপস্থাপনের পর তাঁর পরিচয় ও গুণাবলীকে এমনভাবে এবং এতোখানি উপস্থাপন করেছে যা তাঁর জন্য যথার্থভাবেই প্রযোজ্য। অন্যদিকে যা কিছু আল্লাহর ওপর আরোপ করা হলে কার্যতঃ তাঁর প্রতি দুর্বলতা ও সৃষ্টিসত্তার বৈশিষ্ট্য আরোপ করা হয় তাঁর পরিচিতি থেকে কোরআন মজীদ তা বিদূরিত করেছে অর্থাৎ আল্লাহ্ তা আলা যে এ সব বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্ত ও পবিত্র তা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছে এবং তাঁর পবিত্র সত্তাকে এ সব মিথ্যা কল্পনার উর্ধে তুলে ধরেছে। তেমনি নবুওয়াত্ প্রশ্নেও কোরআন মজীদ প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরেছে।

এবার আমরা এ দু টি প্রসঙ্গে কোরআন মজীদের কয়েকটি আয়াত এখানে তুলে ধরবো।

তাওহীদের ধারণাকে কুসংস্কারমুক্ত করণ

প্রথমে আল্লাহ্ তা আলার পরিচয় সংক্রান্ত কয়েকটি আয়াত তুলে ধরা যাক। আল্লাহ্ তা আলা স্বীয় পরিচয় ব্যক্ত করতে গিয়ে কোরআন মজীদে এরশাদ করেন :

) و قالوا اتخذ الله ولداً سبحانه بل له ما فی السماوات والارض کل له قانتون(

আর তারা (খৃস্টানরা) বলে : আল্লাহ্ সন্তান পরিগ্রহণ করেছেন। আল্লাহ্ পরম প্রমুক্ত (এহেন দুর্বলতা হতে) , বরং আসমান সমূহে ও যমীনে যা কিছু আছে সবই তাঁর , আর সব কিছুই তাঁর সামনে অনুগত হয়ে আছে। (সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্ : 116)

) بديع السماوات و الارض. و اذا قضی امراً فانما يقول له کن فيکون( .

তিনি আসমান ও যমীনের উদ্ভাবক। আর তিনি যখন কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন তখন সে জন্য শুধু বলেন : হও। অতএব , তা হয়ে যায়। (সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্ : 117)

) و الهکم اله واحد لا اله الا هو الرحمن الرحيم( .

আর তোমাদের খোদা হচ্ছেন একমবাদ্বিতীয়ম খোদা ; সেই পরম দয়াময় মেহেরবান ছাড়া আর কোনো খোদা (বা দেব-দেবী)র অস্তিত্ব নেই। (সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্ : 163)

) الله لا اله الا هو الحی القيوم لا تأخذه سنة و لا نوم. له ما فی السماوات و ما فی الارض( .

আল্লাহ্ হচ্ছেন সেই সত্তা যিনি ছাড়া আর কোনো খোদা নেই। তিনি চিরজীবী চিরন্তন শাশ্বত সত্তা ; তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না। আসমান সমূহে ও যমীনে যা কিছু আছে সবই তাঁর। (সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্ : 255)

) ان الله لا يخفی عليه شيء فی الارض و لا فی السماء( .

নিশ্চয়ই আল্লাহ্ হচ্ছেন এমন এক সত্তা যমীন ও আসমানের কোনো কিছুই তাঁর কাছ থেকে গোপন থাকে না। (সূরাহ্ আালে ইমরাান : 5)

) هو الذی يصورکم فی الارحام کيف يشاء. لا اله الا هو العزيز الحکيم( .

তিনিই মাতৃগর্ভে তোমাদেরকে যেরূপ ইচ্ছা আকৃতি দান করেন। সেই মহাপরাক্রান্ত পরম জ্ঞানী ছাড়া আর কোনো খোদা নেই। (সূরাহ্ আালে ইমরাান : 6)

) ذالکم الله ربکم لا اله الا هو خالق کل شيء فاعبدوه و هو علی کل شيء وکيل(

এই হচ্ছেন আল্লাহ্ - তোমাদের প্রভু ; তিনি ছাড়া আর কোনো খোদা নেই। তিনি প্রতিটি জিনিসেরই স্রষ্টা। অতএব , তোমরা তাঁরই দাসত্ব করো। আর তিনি প্রতিটি জিনিসের ওপরই কর্তৃত্বশালী। (সূরাহ্ আল্-আন্ আাম্ : 102)

) لا تدرکه الابصار و هو يدرک الابصار و هوا اللطيف الخبير(

দৃষ্টিসমূহ তাঁকে প্রত্যক্ষ করতে পারে না , বরং তিনিই দৃষ্টিসমূহকে প্রত্যক্ষ করেন। আর তিনি (সকল বিষয়ে) সূক্ষ্মদর্শী সদা-অবগত। (সূরাহ্ আল্-আন্ আাম্ : 103)

) قل الله يبدؤ الخلق ثم يعيده. فانی تؤفکون(

(হে রাসূল!) বলে দিন : আল্লাহ্ই সৃষ্টির সূচনা করেন , অতঃপর তিনিই তাকে প্রত্যাবর্তন করাবেন (মৃত্যু ও ধ্বংসের পরে পুনরায় সৃষ্টি করবেন)। অতএব , তোমরা কোন্ দিকে ফিরে যাচ্ছো ? (সূরাহ্ ইউনুস : 34)

) الله الذی رفع السماوات بغير عمد ترونها ثم استوی علی العرش و سخر الشمس و القمر کل يجری لاجل مسمی يدبر الامر يفصل الآيات لعلکم بلقاء ربکم توقينون(

আল্লাহ্ হচ্ছেন সেই সত্তা যিনি স্তম্ভ ছাড়াই আসমান সমূহকে সমুন্নত করেছেন - যা তোমরা দেখতে পাচ্ছো। এরপর তিনি আরশকে নিয়ন্ত্রিত করেছেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে সুশৃঙ্খলিত করেছেন ; এদের প্রতিটিই একটি শেষ সময় পর্যন্ত গতিশীল রয়েছে। তিনিই সকল বিষয়ের সুপরিচালনা করেন। (এভাবে) তিনি তাঁর নিদর্শনসমূহ সুস্পষ্টরূপে তুলে ধরেছেন যাতে তোমরা তোমাদের প্রভুর সন্নিধানে উপনীত হবার ব্যাপারে প্রত্যয়ে উপনীত হতে পারো। (সূরাহ্ আর্-রা দ্ : 2)

) و هو الله لا اله الا هو. له الحمد فی الاولی و الآخرة و له الحکم و اليه ترجعون(

আর তিনিই আল্লাহ্ ; তিনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ্ নেই। তাঁর প্রশংসা সমস্ত কিছুর সূচনাপর্ব থেকে শুরু করে সব কিছুর শেষ পর্যন্ত। আর অকাট্য সিদ্ধান্তের এখতিয়ার কেবল তাঁরই ; তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করছো। (সূরাহ্ আল্-ক্বাছ্বাছ্ব : 70)

) هو الله الذی لا اله الا هو عالم الغيب و الشهادة هو الرحمن الرحيم(

তিনি হচ্ছেন আল্লাহ্ যিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ নেই। তিনি গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছু সম্বন্ধে পরিজ্ঞাত ; তিনি পরম দয়াময় মেহেরবান। (সূরাহ্ আল্-হাশর : 22)

) هو الله الذی لا اله الا هو الملک القدوس السلام المؤمن المهيمن العزيز الجبار المتکبر سبحان الله عما يشرکون(

তিনিই আল্লাহ্ যিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ্ নেই। তিনি নিরঙ্কুশ অধিকর্তা , সমস্ত রকমের দোষ-ত্রুটি-দুর্বলতা থেকে প্রমুক্ত-পবিত্র , শান্তির উৎস , নিরাপত্তাদাতা , রক্ষাকর্তা , মহাপরাক্রান্ত , পরম শক্তিমান ও গৌরবের প্রকৃত অধিকারী। লোকেরা তাঁর সাথে যা কিছুকে শরীক করছে তা থেকে তিনি পরম প্রমুক্ত। (সূরাহ্ আল্-হাশর : 23)

) هو الله الخالق الباری المصور له الاسماء الحسنی. يسبح له ما فی السماوات والارض. و هو العزيز الحکيم(

সেই আল্লাহ্ই সৃষ্টিকর্তা , উদ্গতকারী , আকৃতিদাতা ; তাঁর রয়েছে সর্বোত্তম নামসমূহ। আসমান সমূহে ও যমীনে যা কিছু আছে তার সব কিছুই তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করছে। বস্তুতঃ তিনি মহাপরাক্রান্ত পরম জ্ঞানী । (সূরাহ্ আল্-হাশর : 24)

কোরআন মজীদ বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ তা আলাকে এভাবে পরিচিত করেছে - এভাবেই তাঁর গুণাবলী তুলে ধরেছে। কোরআন মজীদ আল্লাহ্ তা আলার গুণাবলী বর্ণনার ক্ষেত্রে সে পন্থাই অবলম্বন করেছে বিচারবুদ্ধি যাকে স্বীকৃতি প্রদান করে ও যার সত্যতা প্রতিপাদন করে। বস্তুতঃ সুস্থ বিচারবুদ্ধি সৃষ্টিকর্তার পরিচয়ের ক্ষেত্রে এ পথ ধরেই অগ্রসর হয়ে থাকে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে , জাহেলীয়াতের পরিবেশে জীবনযাপনকারী একজন নিরক্ষর ব্যক্তির পক্ষে কি এটা আদৌ সম্ভব যে , তিনি বিচারবুদ্ধিগত , জ্ঞানগত ও দার্শনিক সত্য সমূহ এতো উন্নত পর্যায়ে প্রত্যক্ষ করবেন ও বর্ণনা করতে সক্ষম হবেন ? অতএব , এতে সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না যে , এ কোরআন মজীদ তাঁর নিজের রচিত গ্রন্থ নয় , বরং আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত গ্রন্থ।

নবুওয়াতের ধারণাকে কুসংস্কারমুক্ত করণ

কোরআন মজীদ অতীতের নবী-রাসূলগণ ( আঃ) সম্পর্কে কথা বলেছে। এ ক্ষেত্রে কোরআন মজীদ তাঁদেরকে সর্বোত্তম গুণাবলী সহকারে উল্লেখ করেছে , আর তা এমনভাবে উল্লেখ করেছে যে , এর চেয়ে উন্নততর গুণ কল্পনা করা যায় না। নবী-রাসূলগণের ( আঃ) শ্রেষ্ঠত্ব ও পবিত্রতার জন্য যে সব গুণ তাঁদের মধ্যে থাকা অপরিহার্য কোরআন মজীদ তা-ই তাঁদের প্রতি আরোপ করেছে। অন্যদিকে যে সব খারাপ বৈশিষ্ট্য নবুওয়াত্ ও খোদায়ী রিসালাতের সাথে সামঞ্জস্যশীল নয় তা থেকে তাঁদেরকে মুক্ত ও পবিত্র রূপে তুলে ধরেছে।

এখানে এ পর্যায়ের কয়েকটি আয়াত উদ্ধৃত করছি :

) الذين يتبعون الرسول النبی الامی الذی يجدونه مکتوباً عندهم فی التورة والانجيل يأمرهم بالمعروف و ينهاهم عن المنکر و يحل لهم الطيبات و يحرم عليهم الخبائث(

যারা (এ কোরআনে ঈমান পোষণ করে তারা) এমন এক রাসূলের অনুসরণ করে যিনি উম্মী নবী - যার কথা তারা তাদের কাছে মওজূদ তাওরাত্ ও ইনজীলে লিখিতরূপে পাচ্ছে ; তিনি তাদেরকে ভালো ও কল্যাণমূলক কাজের নির্দেশ দেন ও মন্দ কাজ থেকে তাদেরকে নিষেধ করেন এবং তাদের জন্য উত্তম ও পবিত্র জিনিসগুলো হালাল করেন ও তাদের জন্য নোংরা-অপবিত্র জিনিসগুলোকে হারাম করে দেন। (সূরাহ্ আল্-আ রাাফ্ : 157)

এখানে উল্লেখ্য যে , উম্মী শব্দের আভিধানিক অর্থ মাতৃগর্ভ থেকে সদ্য দুনিয়ায় আগমনকারী এবং এর পারিভাষিক অর্থ নিরক্ষর। যেহেতু সদ্যজাত শিশু লেখাপড়া জানে না সেহেতু নিরক্ষর লোককে তার সাথে তুলনা করা হয় যার উদ্দেশ্য হচ্ছে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন লোকদের গুরুত্ব তুলে ধরা। নবী করীম (ছ্বাঃ)কে নিরক্ষর রাখার পিছনে নিহিত আল্লাহ্ তা আলার মহাপ্রজ্ঞাময় লক্ষ্য হচ্ছে কোরআন মজীদের নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর দ্বারা রচিত না হওয়ার তথা মু জিযাহ্ হওয়ার বিষয়টিকে অধিকতর যৌক্তিক প্রতিপন্ন করা। সূরাহ্ আল্-জুমু আয় (আয়াত নং 2) এরশাদ হয়েছে যে , আল্লাহ্ তা আলা উম্মীদের মধ্য থেকে একজন রাসূলের আবির্ভাব ঘটিয়েছেন। এখানে সুস্পষ্ট যে উম্মী শব্দটি কেবল পারিভাষিক নিরক্ষর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু আলোচ্য আয়াতে (সূরাহ্ আল্-আ রাাফ্ : 157) উম্মী শব্দটিকে নবী শব্দের বিশেষণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ থেকে জন্মমুহূর্ত থেকে নবী তথা নবী হিসেবে জন্মগ্রহণকারী তাৎপর্য গ্রহণ করাই অধিকতর সঠিক বলে মনে হয় (যদিও চল্লিশ বছর বয়সে তাঁকে তা অবহিত করা ও দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়)। তবে যেহেতু কোরআন মজীদের একই আয়াতের একাধিক বাহ্যিক তাৎপর্য আছে সেহেতু জন্মমুহূর্ত থেকে নবী নিরক্ষর নবী উভয় অর্থই এতে নিহিত রয়েছে বলে গ্রহণ করতে বাধা নেই।

) هو الذی بعث فی الاميين رسولاً منهم يتلو عليهم آياته و يزکهم و يعلمهم الکتاب و الحکمة. و ان کانوا من قبل لفی ضلال مبين(

তিনিই সেই সত্তা যিনি তাদের মধ্যকার নিরক্ষরদের মধ্য থেকে এমন একজন রাসূল উত্থিত করেছেন যিনি তাদের কাছে তাঁর (আল্লাহর) আয়াত পড়ে শোনান ও তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব্ ও অকাট্য জ্ঞান শিক্ষা দেন। নচেৎ এর আগে তো তারা সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিলো। (সূরাহ্ আল্-জুমু আহ্ : 2)

) و ان لک لاجرا غير ممنون. و انک لعلی خلق عظيم(

আর (হে রাসূল!) অবশ্যই আপনার জন্য রয়েছে অফুরন্ত উত্তম প্রতিদান। আর অবশ্যই আপনি সুমহান ও উন্নততম চরিত্রবৈশিষ্ট্যের অধিকারী। (সূরাহ্ আল্-ক্বালাম্ : 3-4)

) ان الله اصطفی آدم و نوحاً و آل ابراهيم و آل عمران علی العالمين(

অবশ্যই আল্লাহ্ আদম , নূহ্ , আালে ইবরাহীম্ ও আালে ইমরাানকে বিশ্ববাসীদের ওপর নির্বাচিত করেছেন। (সূরাহ্ আালে ইমরাান্ : 33)

) و اذ قال ابراهيم لابيه و قومه اننی برآء مما تعبدون الا الذی فطرنی فانه سيهدين(

ইবরাহীম্ যখন তার পিতা ও তার ক্বওমকে বললো : তোমরা যা কিছুর পূজা করছো নিঃসন্দেহে আমি সে সবের প্রতি বিরূপ ; কেবল তাঁর প্রতি বিরূপ নই যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং অবশ্যই তিনি অচিরেই আমাকে পথপ্রদর্শন করবেন। (সূরাহ্ আয্-যুখরূফ : 26-27)

) و کذالک نری ابراهيم ملکوت السماوات والارض و ليکون من الموقنين(

আর এভাবেই আমি ইবরাহীমকে আসমান সমূহ ও যমীনের মালাকুত্ (অদৃশ্য জগত) প্রদর্শন করেছি , আর তা করেছি এ উদ্দেশ্যে যাতে সে ইয়াক্বীন্ পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়। (সূরাহ্ আল্-আন্ আাম্ : 75)

) و وهبنا له اسحاق و يعقوب کلا هدينا و نوحا هدينا من قبل و من ذريته داود و سليمان و ايوب و يوسف و موسی و هارون و کذالک نجزی المحسنين. و زکريا و يحيی و عيسی و الياس کل من الصالحين. و اسماعيل واليسع و يونس و لوطا و کلا فضلنا علی العالمين. و من آبائهم و ذرياتهم و اخوانهم و اجتبيناهم و هديناهم الی صراط مستقيم(

আর আমি তাকে (ইবরাহীমকে) ইসহাক্ব্ ও ইয়াক্বূবকে দান করেছি ; এদের উভয়কেই পথপ্রদর্শন করেছি। আর নূহ্ ; ইতিপূর্বে তাকেও আমি পথপ্রদর্শন করেছি। আর তার (ইবরাহীমের) বংশধরদের মধ্য থেকে দাউদ , সোলায়মান , আইয়ূব , ইউসুফ , মূসা ও হারূন্ (এদেরকেও পথপ্রদর্শন করেছি)। আর এভাবেই আমি যথোপযুক্ত লোকদেরকে শুভ প্রতিদান প্রদান করে থাকি। (তেমনি) যাকারিয়া , ইয়াহ্ইয়া , ঈসা ও ইল্ইয়াস - এদের প্রত্যেকেই যথোপযুক্ত ছিলো , আর ছিলো ইসমা ঈল , ইল্ইয়াসা , ইউনুস ও লূত্ব্। এদের প্রত্যেককেই আমি সমগ্র বিশ্ববাসীর ওপর মর্যাদাবান করেছি। তেমনি তাদের পিতাদের , সন্তানদের ও ভ্রাতাদেরকে (বিশ্ববাসীর ওপর মর্যাদাবান করেছি) এবং তাদেরকে নির্বাচিত করেছি ও সহজ-সরল সুদৃঢ় পথের দিকে পরিচালিত করেছি। (সূরাহ্ আল্-আন্ আাম্ : 84-87)

) و لقد اتينا داود و سليمان علماً و قالا الحمد لله الذی فضلنا علی کثير من عباده المؤمنين(

আমি দাউদ ও সোলায়মানকে জ্ঞান দান করেছি। আর তারা বললো : সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি আমাদেরকে তাঁর অনেক মু মিন বান্দাহর ওপর মর্যাদাবান করেছেন। (সূরাহ্ আন্-নামল : 15)

) و اذکر اسماعيل واليسع و ذالکفل و کل من الاخيار(

আর (হে রাসূল!) ইসমা ঈল , ইল্ইয়াসা ও যালকিফল্-এর কথা স্মরণ করুন ; তাদের প্রত্যেকেই অধিকতর উত্তম লোকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। (সূরাহ্ ছ্বাদ্ : 48)

) اولئک الذين انعم الله عليهم من النبيين من ذرية آدم و ممن حملنا مع نوح و من ذرية ابراهيم و اسرائيل و ممن هدينا و اجتبينا اذا تتلی عليهم آيات الرحمن خروا سجدا و بکيا(

এরা হচ্ছে সেই লোক যাদের ওপর আল্লাহ্ নে আমত বর্ষণ করেছেন ; এরা হচ্ছে আদমের বংশধরদের মধ্যকার নবীগণ , আর তাদের মধ্যে রয়েছে সেই লোকেরা যাদেরকে আমি নূহের সাথে (নৌকায়) বহন করে নিয়েছিলাম , আর এদের (নে আমতপ্রাপ্তদের) মধ্যে রয়েছে ইবরাহীম্ ও ইসরা ঈলের বংশধরদের মধ্যকার লোক ; এরা হলো সেই লোক যাদেরকে আমি পথপ্রদর্শন করেছি ও নির্বাচিত করেছি। এদের সামনে যখনই পরম দয়াময়ের আয়াত তেলাওয়াত্ করা হতো তখনই এরা সিজদায় অবনত হতো ও ক্রন্দন করতো। (সূরাহ্ মারইয়াম : 58) [স্মর্তব্য , অত্র আয়াতটি সিজদাহর আয়াত সমূহের অন্যতম।]

এই হলো কোরআন মজীদে নবী-রাসূলগণের ( আঃ) গুণাবলী বর্ণনা , পবিত্রতা ঘোষণা এবং তাঁদের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনাকারী আয়াত সমূহের অংশবিশেষ।