কোরআনের মু‘জিযাহ্

কোরআনের মু‘জিযাহ্ 5%

কোরআনের মু‘জিযাহ্ লেখক:
: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ: কোরআন বিষয়ক জ্ঞান

কোরআনের মু‘জিযাহ্
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 60 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 48516 / ডাউনলোড: 4702
সাইজ সাইজ সাইজ
কোরআনের মু‘জিযাহ্

কোরআনের মু‘জিযাহ্

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

1

2

3

4

5

6

7

8

9

10

11

12

13

অপচয়-অপব্যয় নিষিদ্ধ

কোরআন মজীদের উপরোক্ত আয়াতে এবং এ ধরনের আরো যে সব আয়াতে মানুষকে দানে উৎসাহিত ও কার্পণ্যে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে , তার পাশাপাশি এমন অনেক আয়াতের উল্লেখ করা যেতে পারে যাতে অপচয় ও অপব্যয়ে নিষেধ করা হয়েছে এবং এর ক্ষতিকারকতা সম্বন্ধে মানুষকে জানানো হয়েছে। যেমন , এরশাদ হয়েছে :

) ولا تسرفوا انه لا يحب المسرفي( .

আর তোমরা অপচয় করো না ; নিঃসন্দেহে তিনি (আল্লাহ্) অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না। (সূরাহ্ আল্-আন্ আাম্ : ১৪১)

) ان المبذرين کانوا اخوان الشياطين( .

নিঃসন্দেহে অপচয়কারীরা শয়তানদের ভাই। (সূরাহ্ বানী ইসরাাঈল্ : ২৭)

ধৈর্যধারণে উৎসাহ প্রদান

কোরআন মজীদ বিপদাপদের মুখে ধৈর্য-সহ্য ও দৃঢ়তার নির্দেশ প্রদান করেছে , ধৈর্যশীল ও অটল লোকদের প্রশংসা করেছে এবং তাদের জন্য বিরাট পুরষ্কারের সুসংবাদ দিয়েছে। যেমন , এরশাদ হয়েছে :

) انما يوفی الصابرون اجراهم بغير حساب( .

অবশ্যই ধৈর্যশীল লোকেরা তাদের প্রাপ্য সীমাহীন সুপ্রতিদান লাভ করবে। (সূরাহ্ আয্-যুমার : ১০)

) و الله يحب الصابرين( .

আর আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরাহ্ আালে ইমরাান্ : ১৪৬)

কিন্তু এখানে মনে রাখতে হবে যে , কোরআন মজীদ যালেমের মোকাবিলায় ময্লূমের হাত-পা বেঁধে রাখে নি এবং তাকে তার অধিকার আদায়েও নিষেধ করে নি। বরং যুলুমের মূলোৎপাটন ও ধরণীর বুকে সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যালেম-অত্যাচারীর মোকাবিলায় রুখে দাঁড়ানো ও ন্যায়সঙ্গতভাবে যালেমের নিকট থেকে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য কোরআন মজীদ ময্লূমকে অনুমতি প্রদান করেছে। এ প্রসঙ্গে কোরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে :

) فمن اعتدی عليکم فاعتدوا عليه بمثل ما اعتدی عليکم.(

অতএব , যে তোমাদের বিরুদ্ধে চড়াও হয়েছে তোমরাও তার বিরুদ্ধে চড়াও হও ঠিক যেভাবে সে তোমাদের বিরুদ্ধে চড়াও হয়েছে। (সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্ : ১৯৪)

নরহত্যার শাস্তি

কেউ যদি স্বেচ্ছায়-সজ্ঞানে কাউকে হত্যা করে সে ক্ষেত্রে কোরআন মজীদের বিধানে ঘাতককে হত্যা করার জন্য নিহত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনদেরকে অধিকার দেয়া হয়েছে। কোরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে :

) و من قتل مظلوماً فقد جعلنا لئليه سلطاناً فلا يسرف فی القتل( .

যে কেউ অন্যায়ভাবে নিহত হয়েছে আমি তার অভিভাবককে পরিপূর্ণ অধিকার প্রদান করেছি (প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য) , কিন্তু সে-ও যেন (ঘাতককে) হত্যার ব্যাপারে অপচয় না করে (বাড়াবাড়িমূলক কাজ না করে)। (সূরাহ্ বানী ইসরাাঈল্ : ৩৩)

ইহ-পারলৌকিক বিধিবিধানের সমন্বয়

কোরআন মজীদ যেহেতু ভারসাম্য ও মধ্যম পন্থা ভিত্তিক আইন-কানূন্ ও শর ঈ বিধান প্রবর্তন করেছে , সেহেতু ইহজাগতিক সমাজব্যবস্থা ও সামাজিক বিধিবিধানে পরজাগতিক বিধিবিধানের সাথে সঙ্গতি বিধান করেছে এবং এ উভয় জগতের বিধিবিধানের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেছে।

কোরআন মজীদ একদিকে যেমন মানুষের ইহজাগতিক বিষয়াদিকে সংশোধন ও পরিশুদ্ধ করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে , অন্যদিকে মানুষের পারলৌকিক সৌভাগ্যেরও নিশ্চয়তা বিধান করেছে। হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) এ সব মহান আইন-বিধান সম্বলিত কোরআন মজীদ নিয়ে এসেছেন যার উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্বমানবতাকে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক উভয় জগতের সৌভাগ্যে উপনীত করা।

কোরআন মজীদ বর্তমানে প্রচলিত তাওরাতের ন্যায় নয় যার আইন-বিধান সমূহ কেবল বস্তুগত জগতের সাথে সংশ্লিষ্ট - যাতে ইহজগতের প্রতি দৃষ্টি দেয়া হয়েছে , কিন্তু অপর জগতের প্রতি দৃষ্টি দেয়া হয় নি।

হ্যা , বর্তমানে প্রচলিত তাওরাত্ বস্তুজগতের মধ্যে এমনভাবে সীমাবদ্ধ যে , পরজগতের প্রতি সামান্যতম দৃষ্টিও প্রদান করে নি। এমনকি নেক কাজের পুরষ্কারকেও ইহজগতের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেছে। বর্তমানে প্রচলিত তাওরাত্ বলেছে যে , নেক কাজের পুরস্কার হচ্ছে জাগতিক ধনসম্পদ বৃদ্ধি এবং ইহজগতে অন্যদের ওপর আধিপত্য। অন্যদিকে পাপের শাস্তিকেও ইহজগতের মধ্যে সীমাবদ্ধ রূপে দেখিয়েছে , বলেছে , পাপের শাস্তি হচ্ছে ধনসম্পদ ও ক্ষমতা-আধিপত্য হাতছাড়া হয়ে যাওয়া।

অন্যদিকে কোরআন মজীদ বর্তমানে প্রচলিত ইনজীলের অনুরূপও নয় - যার আইন-কানূন্ ও বিধিবিধান শুধু পরকালের সাথে সংশ্লিষ্ট এবং ইহজাগতিক বিষয়াদি তথা সমাজব্যবস্থা ও জীবনবিধানের প্রতি যা উপেক্ষা প্রদর্শন করেছে।

বর্তমানে প্রচলিত তাওরাত্ ও ইনজীল্ উভয়ের বিপরীতে কোরআন মজীদের আইন-কানূন্ ও বিধিবিধান হচ্ছে সর্বাত্মক ও পূর্ণাঙ্গ - যাতে ইহকালীন বৈষয়িক জীবন ও সমাজব্যবস্থা যেমন শামিল রয়েছে , তেমনি পরকালীন জীবনের সাফল্য ও কল্যাণের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে। কোরআন মজীদে মানুষের জীবনের বস্তুগত ও অবস্তুগত কোনো বিষয়ের প্রতিই উপেক্ষা প্রদর্শন করা হয় নি।

কোরআন মজীদ তার ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষার মাধ্যমে একদিকে যেমন মানুষকে পরকালীন জীবনের প্রতি মনোযোগী করে তুলেছে , অন্যদিকে তাকে পার্থিব জীবনের বিষয়াদির প্রতিও মনোযোগ দিতে বলেছে। যেমন , পরকালীন জীবনের প্রতি মানুষকে আগ্রহী করে তোলার জন্য কোরআন মজীদ এরশাদ করেছে :

) و من يطع الله و رسوله يدخله جنات تجری من تحتها الانهار خالدين فيها و ذالک الفوز العظيم.(

আর যে কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে সে বেহেশতে প্রবেশ করবে - যার তলদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত হচ্ছে ; সেখানে সে চিরদিন থাকবে। আর এ হচ্ছে এক বিরাট সাফল্য। (সূরাহ্ আন্-নিসাা : ১৩)

) و من يعص الله و رسوله و يتعد حدوده يدخله ناراً خالداً فيها و له عذاب مهين(

আর যে কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে ও তাঁর নির্ধারিত সীমারেখা লঙ্ঘন করবে সে দোযখে প্রবেশ করবে ও চিরদিন সেখানে থাকবে , আর তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। (সূরাহ্ আন্-নিসাা : ১৪)

) فمن يعمل مثقال ذرة خيراً يره( .

অতএব , যে কেউ অণুমাত্রও সৎকর্ম করবে (পরকালে) সে তা দেখতে পাবে। (সূরাহ্ আয্-যিলযালাহ্ : ৭)

) و من يعمل مثقال ذرة شراً يره(

আর যে কেউ অণুমাত্রও পাপকর্ম করবে (পরকালে) সে তা দেখতে পাবে। (সূরাহ্ আয্-যিলযালাহ্ : ৮)

) و ابتغ فيما اتاک الله الدار الآخرة و لا تنس نصيبک من الدنيا(

(হে রাসূল!) আল্লাহ্ আপনাকে যে পরকালের গৃহ প্রদান করেছেন তাকে আঁকড়ে ধরুন (এবং তা ঠিক রাখার জন্য যথাযথ কাজ করুন) , আর পার্থিব জগতে আপনার অংশকেও ভুলে যাবেন না। (সূরাহ্ আল্-ক্বাছ্বাছ্ব্ : ৭৭)

কোরআন মজীদের বহু আয়াতেই জ্ঞানার্জন ও তাক্ব্ওয়া-পরহেযগারীর জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে , একই সাথে পার্থিব জীবনের স্বাদ-আনন্দ ও আল্লাহর দেয়া নে আমত সমূহের সঠিক ব্যবহারকে বৈধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোরআন মজীদ এরশাদ করেছে :

) قل من حرم زينة الله التی اخرج لعباده و الطيبات من الرزق(

(হে রাসূল!) বলুন , আল্লাহ্ তাঁর বান্দাহদের জন্য যে সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছেন এবং যে সব পবিত্র রিয্ক্ব্ প্রদান করেছেন কে তা হারাম করেছে ? (সূরাহ্ আল্-আ রাাফ্ : ৩২)

পারস্পরিক সম্পর্ক

কোরআন মজীদ মানুষকে আল্লাহ্ তা আলার ইবাদত ও আনুগত্য করা , সৃষ্টিলোকের নিদর্শনাদি ও শর ঈ বিধিবিধান নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা এবং সৃষ্টিলোকের অস্তিত্ব , মানুষের রহস্য ও তার সত্তায় নিহিত বিভিন্ন সত্য সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য বার বার আহবান জানিয়েছে। কিন্তু কোরআন মজীদ শুধু মানুষকে আল্লাহ্ তা আলার সান্নিধ্যে পৌঁছে দিয়ে তথা বান্দাহ্ ও স্রষ্টার মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে দিয়েই নিজের দায়িত্ব শেষ করে নি , বরং মানবজীবনের অপর দিকটি অর্থাৎ মানুষের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতিও দৃষ্টি প্রদান করেছে , বিশেষ করে মানুষের মধ্যে মায়া-মহব্বত ও আন্তরিক সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছে।

কোরআন মজীদ বেচাকিনা ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে বৈধ ঘোষণা করেছে এবং রেবা ও নির্বিচার সম্পদ বৃদ্ধি করার প্রবণতাকে হারাম করেছে। যেমন , এরশাদ হয়েছে :

) و احل الله البيع و حرم الربا( .

আর আল্লাহ্ ব্যবসায়কে হালাল করেছেন এবং রেবাকে হারাম করেছেন। (সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্ : ২৭৫)

[আভিধানিক অর্থে রেবা মানে বৃদ্ধি। কিন্তু পারিভাষিক অর্থে অবাণিজ্যিক প্রয়োজনে গৃহীত ঋণের ওপর আসলের চেয়ে অতিরিক্ত গ্রহণই হচ্ছে রেবা। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ধানের ওপর টাকা লাগানো র যে রেওয়াজ আছে যাতে ধান ওঠার আগে ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট দরে ধানের অগ্রিম মূল্য দেয়া হয় যার দর ঐ সময়কার ও ধান ওঠার সময়কার বাজার দরের চেয়ে কম। ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরনের লেনদেন বেচাকিনা হিসেবে ছ্বহীহ্ নয়। ফলে এর মাধ্যমে ঋণদাতা যে মুনাফা করে তা রেবা। অন্যদিকে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক , আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কিস্তিতে বাজার-মূল্যের চেয়ে বেশী মূল্যে গার্হস্থ্য সামগ্রী সরবরাহ করে যে অতিরিক্ত মুনাফা করে তা-ও রেবা। কোনো দোকানদার নগদ বেচাকিনার ক্ষেত্রে একই পণ্য বিভিন্ন মূল্যে বিক্রি করলে বাকী বিক্রির ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম মূল্যে বিক্রি না করলে হাদীছ অনুযায়ী এর অতিরিক্ত মুনাফা হবে রেবা।]

কোরআন মজীদ মানুষের প্রতি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা এবং তা ভঙ্গ না করার জন্য আদেশ দিয়েছে। যেমন , এরশাদ করেছে :

) يا ايها الذين آمنوا اوفوا بالعقود(

হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের প্রতিশ্রুতিসমূহ রক্ষা করো। (সূরাহ্ আল্-মাাএদাহ্ : ১)

অবশ্য এ প্রসঙ্গে স্মর্তব্য যে , কোনো যুলুম , অন্যায় বা পাপাচারের কাজের প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার করলে বা ভালো কাজ না করার অঙ্গীকার করলে তা ভঙ্গ করা ও শর ঈ বিধান অনুযায়ী অঙ্গীকার ভঙ্গের কাফ্ফারাহ্ দেয়া ফরয ; এরূপ ক্ষেত্রে অঙ্গীকার রক্ষা করা কঠিন গুনাহ্। তেমনি কোনো মোবাহ্ কাজে (যেমন : তালাক্ব্ প্রদানের) অঙ্গীকার করার পর তা ভঙ্গ করার মধ্যে কল্যাণ মনে করলে তা ভঙ্গ করে কাফ্ফারাহ্ প্রদান জায়েয আছে।

বিবাহে উৎসাহ প্রদান

যেহেতু মানব প্রজাতির অস্তিত্ব ও ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নারী ও পুরুষের মাঝে বৈবাহিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়া অপরিহার্য , সেহেতু কোরআন মজীদ এ স্বভাবসম্মত কাজটি সম্পাদন অর্থাৎ বিবাহ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। এরশাদ হয়েছে :

) و انکحوا الايامی منکم و الصالحين من عبادکم و امائکم. ان يکونوا فقراء يغنهم الله من فضله و الله واسع عليم(

আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার স্বামী বা স্ত্রী বিহীন নারী ও পুরুষদেরকে এবং তোমাদের বিবাহযোগ্য দাস-দাসীদেরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দাও। আর এরা যদি দরিদ্র ও নিঃসম্বল হয়ে থাকে তো আল্লাহ্ তাঁর অনুগ্রহ দ্বারা তাদেরকে সচ্ছলতা দান করবেন। আর আল্লাহ্ সীমাহীন উদারতার অধিকারী ও সর্ববিষয়ে সদা ওয়াকেফহাল। (সূরাহ্ আন্-নূর্ : ৩২)

) فانکحوا ما طاب لکم من النساء مثنی و ثلاث و رباع فان خفتم ان لا تعدلوا فواحدة( .

তোমাদের জন্য যারা উত্তম এমন নারীদের মধ্য থেকে বিবাহ করো দু জন , তিন জন বা চারজনকে , কিন্তু তোমরা যদি ভয় করো যে , তাদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে না তাহলে মাত্র একজনকে বিবাহ করো। (সূরাহ্ আন্-নিসাা : ৩)

সদাচরণ ও কল্যাণকর কাজ

কোরআন মজীদ স্ত্রীর সাথে সদাচরণ করতে ও তার সমস্ত স্বাভাবিক প্রয়োজন পূরণের জন্য স্বামীর প্রতি নির্দেশ দিয়েছে। তেমনি কোরআন মজীদ সমস্ত মুসলমানের সাথে , বিশেষ করে পিতা-মাতা , আত্মীয়-স্বজন ও ঘনিষ্ঠ জনদের সাথে সদাচরণের জন্য আদেশ দিয়েছে। বরং কোরআন মজীদের দৃষ্টিতে সদাচরণ হচ্ছে মানবজীবনের জন্য অপরিহার্য ব্যাপক ভিত্তিক ও সর্বজনীন কর্মসূচী। তাই শুধু মুসলমানদের সাথেই নয় , বরং মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে মানব প্রজাতির প্রতিটি সদস্যের সাথেই সদাচরণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে কোরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে :

) و عاشروهن بالمعروف(

আর তোমরা তাদের (তোমাদের স্ত্রীদের) সাথে সদাচরণ করো। (সূরাহ্ আন্-নিসাা : ১৯)

) و لهن مثل الذی عليهن بالمعروف(

আর তাদের ওপরে যেভাবে (তোমাদের অধিকার) রয়েছে ঠিক সেভাবেই (তোমাদের ওপর) রয়েছে তাদের জন্য ন্যায়সঙ্গত অধিকার। (সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্ : ২২৮)

) و اعبدوا الله و لا تشرک به شيئاً و بالوالدين احساناً و بذی القربی و اليتامی و المساکين و الجاری ذی القربی و الجاری ذی الجنب و الصاحب بالجنب و ابن السبيل و ما ملکت ايمانکم ان الله لا يحب من کان مختالاً فخوراً(

তোমরা আল্লাহর বন্দেগী ও দাসত্ব করো এবং তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করো না। আর পিতামাতার সাথে সদাচরণ করো এবং সদাচরণ করো আত্মীয়-স্বজন , ইয়াতীম , মিসকীন্ , নিকট প্রতিবেশী , দূর প্রতিবেশী , বন্ধু-বান্ধব , পথিক এবং তোমাদের দাস-দাসী (ও অধীনস্থ)দের সাথে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ উদ্ধত-অহঙ্কারী লোকদেরকে পসন্দ করেন না। (সূরাহ্ আন্-নিসাা : ৩৬)

) و احسن کما احسن الله اليک و لا تبغ الفساد فی الارض ان الله لا يحب المفسدين(

আর (অন্যদের প্রতি) কল্যাণকামী ও দয়ার্দ্র হও ঠিক যেভাবে আল্লাহ্ তোমার প্রতি দয়া করেছেন। আর ধরণীর বুকে বিপর্যয় সৃষ্টি , দুষ্কৃতি ও পাপাচার করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ বিপর্যয়সৃষ্টিকারী ও দুর্বৃত্ত-পাপাচারীদেরকে পসন্দ করেন না। (সূরাহ্ আল্-ক্বাছ্বাছ্ব্ : ৭৭)

) ان رحمة الله قريب من المحسنين(

অবশ্যই আল্লাহর রহমত্ সৎকর্মশীল ও কল্যাণকারীদের অত্যন্ত কাছাকাছি অবস্থান করছে। (সূরাহ্ আল্-আ রাাফ্ : ৫৬)

) و احسنوا ان الله يحب المحسنين(

আর তোমরা (অন্যদের) কল্যাণ সাধন করো ; নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ কল্যাণকারীদের পসন্দ করেন। (সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্ : ১৯৫)

এ হচ্ছে কোরআন মজীদের ভারসাম্যপূর্ণ ও মধ্যম পন্থা অবলম্বনের শিক্ষাসমূহের কিছু দৃষ্টান্ত মাত্র।

ভালো কাজে আদেশ দান ও মন্দ কাজ প্রতিরোধ

কোরআন মজীদ মুসলিম উম্মাহর সমস্ত সদস্যের ওপর ভালো কাজের আদেশ দান ও মন্দ কাজের প্রতিরোধকে অপরিহার্য কর্তব্য রূপে নির্ধারণ করে দিয়েছে এবং এ দায়িত্বকে কোনো বিশেষ জনগোষ্ঠী বা মুষ্টিমেয় সংখ্যক লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেয় নি। কোরআন মজীদ তার এ মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে ব্যাপক আইন-বিধান প্রণয়ন করেছে , বরং এর মাধ্যমেই স্বীয় শিক্ষাকে প্রাণময় ও চিরস্থায়ী করেছে।

ইসলাম সমাজের প্রতিটি ব্যক্তিকে এবং প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে পরস্পরের জন্য পর্যবেক্ষক ও পথনির্দেশকের দায়িত্ব প্রদান করেছে এবং প্রতিটি ব্যক্তিকেই অন্যদের ওপর দায়িত্বশীল করেছে। প্রকৃত পক্ষে ইসলাম প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তির ওপর একেক জন পুলিশের দায়িত্ব প্রদান করেছে যে অন্যদেরকে নেক কাজ , কল্যাণ ও চিরন্তন সৌভাগ্যের দিকে পথনির্দেশ প্রদান করবে এবং যুলুম-শোষণ , নির্যাতন , লুণ্ঠন , পাপ ও দুষ্কৃতি থেকে তাদেরকে ফিরিয়ে রাখবে। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে সমস্ত মুসলমানই ইসলামের প্রচার-প্রসার এবং ইসলামী আইন-বিধান বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্বশীল।

এমতাবস্থায় , এর চেয়ে বৃহত্তর এবং এর চেয়ে অধিকতর শক্তিশালী ও প্রভাবশালী কোনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কথা কল্পনা করাও সম্ভব কি ?

বর্তমান যুগে যে কোনো দেশেই রাষ্ট্রীয় আইন-কানূন্ কার্যকরী করার জন্য বিরাট পরিচালকমণ্ডলী ও শান্তিশৃঙ্খলা বাহিনীর আশ্রয় নেয়া হয় , কিন্তু তা সত্ত্বেও আইনলঙ্ঘন প্রতিরোধ করা সম্ভবপর হয় না। কারণ , পরিচালনা ও শান্তিশৃঙ্খলা বাহিনী যতোই বিশাল এবং যতোই সুসজ্জিত হোক না কেন , তাদের পক্ষে জাতির প্রতিটি মানুষের সাথে প্রতিটি স্থানে ও প্রতিটি সময়ে অবস্থান করে তাদের সমস্ত কাজকর্মের ওপর দৃষ্টি রাখা সম্ভবপর নয়।

কিন্তু ইসলাম এক সমুন্নত মহান পরিকল্পনা ও কর্মসূচীর আশ্রয় নিয়ে এবং ভালো কাজের আদেশ দান ও মন্দ কাজ প্রতিরোধ কে প্রতিটি মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক করে দিয়ে কার্যতঃ শক্তিশালী ও বিশালায়তন এক বাহিনী সৃষ্টি করেছে। আর অন্যান্য বাহিনী ও এ বাহিনীর মধ্যে রয়েছে এক বিরাট পার্থক্য। তা হচ্ছে , কোনোরূপ ব্যয়বাজেট ছাড়াই এ বাহিনী যথারীতি তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং সর্বত্র , সব সময় ও সব বিষয়ে দৃষ্টি রাখছে , আর সেই সাথে ইসলামের সমুন্নত আইন-বিধান বাস্তবায়নেরও নিশ্চয়তা বিধান করছে।

শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড জ্ঞান ও ন্যায়নিষ্ঠা

কোরআন মজীদ একের ওপর অন্যের প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্বের জন্য একমাত্র যে বিষয়টিকে মানদণ্ডরূপে গ্রহণ করেছে তা হচ্ছে জ্ঞান ও ন্যায়নিষ্ঠা - নীতিনিষ্ঠতা তথা খোদাভীরুতা। যেমন , কোরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে :

) ان اکرمکم عند اببه اتقاکم(

অবশ্যই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক সম্মানের পাত্র সেই ব্যক্তি যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ন্যায়নিষ্ঠ ও খোদাভীরু। (সূরাহ্ আল্-হুজুরাাত্ : ১৩)

) قل هل يستوی الذين يعلمون و الذين لا يعلمون( .

(হে রাসূল!) বলুন : , যারা জানে (জ্ঞানের অধিকারী) আর যারা জানে না (অজ্ঞ) তারা কি সমান হতে পারে ? (সূরাহ্ আয্-যুমার : ৯)

সাম্য ও সমতা প্রতিষ্ঠা

কোরআন মজীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও গভীরতম আইন-বিধান ও শিক্ষাসমূহের অন্যতম হচ্ছে সাম্য ও সমতা। কোরআন মজীদ তার এ সাম্যের বিধানের আওতায় সমস্ত মুসলমানের মধ্যে ঐক্য , অভিন্নতা ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করেছে , সবাইকে এক কাতারে এনে দাঁড় করিয়েছে এবং যে কোনো ধরনের বিশেষ অগ্রাধিকার ও বর্ণগত ভেদাভেদের মূলোৎপাটন করেছে , তেমনি একের ওপর অন্যের প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্বের মূলোচ্ছেদ করেছে।

হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) এরশাদ করেন : জাহেলীয়াতের যুগে যারা ঘৃণ্য , নীচ ও পদদলিত ছিলো মহান আল্লাহ্ তা আলা ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় দান করে তাদেরকে সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী করেছেন এবং ইসলামের মাধ্যমে জাহেলী যুগের গর্ব-অহঙ্কার - বর্ণ , গোত্র আত্মীয়-স্বজন ও পূর্বপুরুষের গৌরব , আর সব রকমের বর্ণ ও শ্রেণীগত ভেদাভেদের মূলোৎপাটন করেছেন। সাদা-কালো , আরব-অনারব নির্বিশেষে সমস্ত মানুষই আদমের বংশধর , আর আল্লাহ্ আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। বস্তুতঃ শেষ বিচারের দিনে আল্লাহর নিকট প্রিয়তম লোক হিসেবে তারাই গণ্য হবে যারা সর্বাধিক ন্যায়নিষ্ঠ - খোদাভীরু। (فروع کافی-٢، باب ٢١: ان المؤمن کفو المؤمنة .)

হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) আরো এরশাদ করেছেন : সাধারণ জনগণের ওপর জ্ঞানীদের মর্যাদার তুলনা হচ্ছে তোমাদের মধ্যকার মুষ্টিমেয় সংখ্যক (শ্রেষ্ঠতর) লোকদের ওপর আমার মর্যাদা। (الجامع الصغير با شرح مناوی ٤/٤٣٢ .)

ইসলাম ঈমানী পূর্ণতার কারণে হযরত সালমান ফার্সীকে অন্য মুসলমানদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছে (যদিও তিনি ছিলেন অনারব) , এমনকি তাঁকে হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর পরিবারের সদস্য হিসেবে পর্যন্ত ঘোষণা করেছে (بحار الانوار- ٤، باب ٧٦: فضائل سلمان .) , অন্যদিকে স্বয়ং হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর চাচা হওয়া সত্ত্বেও আবূ লাহাব্-কে তার কুফরী ও খোদাদ্রোহিতার কারণে জাহান্নামী হিসেবে ঘোষণা করেছে।

হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর জীবনচরিতও প্রমাণ করে যে , তিনি কখনোই এবং কোনো অবস্থায়ই স্বীয় বংশ-গোত্র বা বর্ণকে অন্যদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রাধান্য প্রদান করেন নি। তেমনি ঐ যুগের মানুষ যে সব বিষয়কে গৌরবের কারণ রূপে গণ্য করতো এবং তৎকালে প্রচলিত গর্ব-অহঙ্কার , শ্রেষ্ঠত্ব , মর্যাদা ও বিশেষ সুবিধার আরো যে সব মানদণ্ড বিদ্যমান ছিলো সেগুলোর ভিত্তিতে তিনি কোনোদিনই গর্ব-অহঙ্কার করেন নি বা বিশেষ সুবিধা গ্রহণ করেন নি। বরং তিনি মানুষকে আল্লাহ্ তা আলার একত্ব , নবুওয়াত্ , পরকাল ও নেক আমলের দিকে আহবান করেছেন।

হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) লোকদেরকে চিন্তা ও কর্মের ঐক্য এবং এক খোদার ইবাদত্-বন্দেগী ও আনুগত্যের দিকে পথনির্দেশ দিয়েছেন ও পরিচালনা করেছেন। এ পন্থায় তিনি মানুষের অন্তঃকরণের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে , তাদের অন্তর থেকে অযৌক্তিক গর্ব-অহঙ্কারের মূলোৎপাটন করতে এবং তার পরিবর্তে তাদের হৃদয়ে প্রেম-ভালোবাসা , মায়া-মহব্বত , সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের অঙ্কুরোদ্গম ঘটাতে সক্ষম হন। এর ফলে দেখা গেছে , অনেক সম্পদশালী ও সম্ভ্রান্ত লোক , ইতিপূর্বে ছোটলোকরূপে পরিগণিত দরিদ্র পরিবারের ছেলেদের সাথে নিজেদের মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন প্রতিষ্ঠা করেছেন।

কালোত্তীর্ণ পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান

সার্বিকভাবে আমরা বলতে পারি যে , কোরআন মজীদের ধর্মীয় বিধিবিধান ও পার্থিব আইন-কানূনে এবং ইসলামের নৈতিক শিক্ষায় ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের কল্যাণের প্রতি দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। ইসলাম এমন আইন-বিধান ও সমাজব্যবস্থা প্রদান করেছে যা সকল যুগের সকল দেশের সকল মানবগোষ্ঠীর প্রয়োজন পূরণে তথা তাদের সকল সমস্যার সমাধানে সক্ষম।

ইসলামের আইন-বিধানে একদিকে যেমন মানুষের বস্তুগত ও পার্থিব জীবনের প্রতিটি দিক-বিভাগের প্রতি দৃষ্টি দেয়া হয়েছে , তেমনি মানুষের অবস্তুগত , মনোজাগতিক , নৈতিক , আধ্যাত্মিক ও পারলৌকিক প্রতিটি দিক-বিভাগের প্রতিও দৃষ্টি দেয়া হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে , যিনি এহেন নিখুঁত , পূর্ণাঙ্গ , সর্বাত্মক ও সর্বব্যাপক আইন-বিধান উপস্থাপন করেছেন তাঁর নবুওয়াতে কোনোরূপ সন্দেহের অবকাশ আছে কি ? বিশেষ করে হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) যখন একদল সভ্যতার আলো বর্জিত ও নিরক্ষর মানুষের মাঝে দুনিয়ায় আগমন করেছেন এবং এমন লোকদের মধ্যে বড় হয়েছেন যারা আসমানী কিতাবের শিক্ষার সাথে এক বিন্দুও সম্পর্ক রাখতো না - এর সাথে পরিচিতও ছিলো না , ফলতঃ এ পর্যায়ের আইন-বিধান ও শিক্ষা ছিলো তাদের চিন্তাশক্তির , বরং তাদের কল্পনাশক্তিরও উর্ধে। তাই এ আইন-বিধান না তিনি কারো কাছ থেকে শিখে নিয়ে উপস্থাপন করেছিলেন , না নিজে রচনা করেছিলেন , বরং তা আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকেই তাঁকে প্রদান করা হয়েছিলো - এতে আর কোনোরূপ সন্দেহের অবকাশ থাকে কি ?

কোরআন অবিনশ্বর মু জিযাহ্

যে কেউ ইসলামের ইতিহাস ও কোরআন মজীদের সাথে পরিচিত , সে-ই সন্দেহাতীতভাবে জানে এবং প্রত্যয় পোষণ করে যে , হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ) বিশ্বের সমগ্র মানব গোষ্ঠীকে ইসলামের প্রতি দাও আত দিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে তিনি কোরআন মজীদকে উপস্থাপন করে তাদের ওপর হুজ্জাত্ পরিপূর্ণ করেন , কোরআনের মু জিযাহর মাধ্যমে সংগ্রামের ময়দানে পদার্পণ ও পদচারণা করেন এবং (আল্লাহ্ তা আলার নির্দেশে) সুউচ্চ ও সুস্পষ্ট কণ্ঠে সমগ্র বিশ্ববাসীর সামনে ঘোষণা করেন যে , সবাই যেন পরস্পর ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই কোরআন মজীদের অনুরূপ কোনো গ্রন্থ রচনা করে নিয়ে আসে ; তাহলে তিনি তাঁর নবুওয়াতের দাবী থেকে বিরত থাকবেন। কিছুদিন পরে তিনি তাঁর এ চ্যালেঞ্জের মাত্রা বহু নীচে নামিয়ে আনেন এবং কোরআন মজীদের সূরাহ্ সমূহের অনুরূপ কয়েকটি সূরাহ্ উপস্থাপনের আহবান জানান। এরপর এ চ্যালেঞ্জকে আরো সহজতর করে শুধু একটি সূরাহ্ উপস্থাপনের আহবান জানান। আর এভাবেই চ্যালেঞ্জ সহকারে তিনি তাঁর সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন ; এ চ্যালেঞ্জ ও এ সংগ্রাম অদ্যাবধি অব্যাহত রয়েছে এবং ক্বিয়ামত্ দিবস পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

যেহেতু তৎকালীন আরবরা প্রকাশভঙ্গির বলিষ্ঠতা , প্রাঞ্জলতা , বাগ্মিতা , সাহিত্যময়তা ও কাব্যের দিক থেকে বিশেষজ্ঞত্বের অধিকারী ছিলো , বরং এক ধরনের অসাধারণত্বের অধিকারী ছিলো , সেহেতু কোরআনের বিরুদ্ধে লড়াই-এর ক্ষেত্রে তাদের জন্য সহজতম ও সর্বোত্তম পন্থা ছিলো কোরআন মজীদের ক্ষুদ্রতম সূরাহ্ সমূহের সাথে তুলনীয় একটি সূরাহ্ রচনা করা এবং হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর চ্যালেঞ্জ তথা কোরআন মজীদের বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। এভাবে , তারা তাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ও পূর্ণতাপ্রাপ্ত শিল্প এবং যে বিষয়ে তারা সন্দেহাতীতরূপে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলো , তার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জপ্রদানকারীকে পরাভূত করতে পারতো।

এ কাজের মাধ্যমে তারা হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর ওপর বিজয়ী হতে , ইতিহাসে নিজেদের নামকে চিরজীবী করে ও স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করে রাখতে পারতো। সর্বোপরি , এ সহজ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তারা রক্তক্ষয়ী ও ব্যয়বহুল যুদ্ধসমূহ এড়িয়ে যেতে এবং প্রাণহানি থেকে নিশ্চিন্ত হতে পারতো। তেমনি কষ্ট ও কাঠিন্য স্বীকার এবং নিজেদের বাড়ীঘর ও দেশ ত্যাগের দুর্ভোগ থেকেও মুক্ত হতে পারতো।

কিন্তু তৎকালের আরবের বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের প্রতিভাসমূহ যখন কোরআনের মুখোমুখী হলেন এবং কোরআন মজীদের আয়াতের ফাছ্বাহাত্ ও বালাগ্বাত্ লক্ষ্য করলেন ও এ নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করলেন , তখন খুব সহজেই কোরআন মজীদের মু জিযাহ্ হওয়া সম্পর্কে তাঁরা নিশ্চিত প্রত্যয়ে উপনীত হলেন এবং এ সত্য হৃদয়ঙ্গম করতে পারলেন যে , কোরআনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করতে গেলে নিশ্চিত পরাজয় ছাড়া গত্যন্তর নেই। এ কারণেই তাঁদের মধ্যে অনেকে কোরআন মজীদের ওয়াহী হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নেন এবং হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর নবুওয়াতের সত্যতা ঘোষণা করে কোরআন মজীদের সামনে আত্মসমর্পণের শির অবনত করে দেন , আর ইসলাম গ্রহণ করে অবিনশ্বর কল্যাণ ও সৌভাগ্যের অধিকারী হন। কিন্তু তাদের মধ্যকার অপর এক দল কোরআন মজীদের চ্যালেঞ্জের সামনে পরাজিত হওয়া সত্ত্বেও একগুঁয়েমি ও অন্ধত্বের বশবর্তী হয়ে অসির চ্যালেঞ্জের পথ বেছে নয় এবং সাহিত্যযুদ্ধের পরিবর্তে বর্শা ও তলোয়ারের লড়াইকে অগ্রাধিকার প্রদান করে।

কোরআন মজীদের মোকাবিলায় তৎকালীন আরবদের এ অক্ষমতা ও পরাজয়ই কোরআনে করীমের ওয়াহী হওয়ার সপক্ষে সবচেয়ে বড় দলীল এবং সুস্পষ্টতম প্রমাণ। এ থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে , কোরআন মজীদের বিকল্প আনয়ন মানুষের শক্তি-ক্ষমতা ও প্রতিভার আওতা বহির্ভূত।

একটি প্রতিবাদ ও তিনটি জবাব

কোনো কোনো অজ্ঞ লোক দাবী করেছে যে , তৎকালীন আরবরা কোরআনের অনুরূপ বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলো এবং এভাবে কোরআনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছিলো , কিন্তু কালের প্রবাহে কোরআনের মোকাবিলাকারী সে বক্তব্য হারিয়ে গেছে এবং এ কারণে তা আমাদের কাছ থেকে গোপন রয়ে গেছে।

এ দাবী বিভিন্ন দৃষ্টিকোণের বিচারে ভিত্তিহীন ও হাস্যষ্কর দাবী বৈ নয়। কারণ ,

(1) যদি সত্যি সত্যিই এরূপ ঘটনা ঘটতো অর্থাৎ কেউ কোরআন মজীদের বিকল্প উপস্থাপনে সক্ষম হতো এবং কোরআন প্রদত্ত চ্যালঞ্জে বিজয়ী হতো , তাহলে আরবরা অবশ্যই তাদের বিভিন্ন সভা-সমিতিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতো। শুধু তা-ই নয় , বিষয়টি তারা সমস্ত অলিতে-গলিতে প্রচার করতো এবং মেলায় , বাজারে ও হজ্বের অনুষ্ঠানে ঘোষণা করতো।

বস্তুতঃ এরূপ একটি ঘটনা ঘটলে ইসলামের দুশমনরা তা প্রচারের সামান্যতম সুযোগও হাতছাড়া করতো না , বরং তাদের লক্ষ্য হাসিলের জন্য একে পুরোপুরি ব্যবহার করতো। কোরআন মজীদের বিরুদ্ধে এ বিজয়কে তারা মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতো এবং সযত্নে এর হেফাযত করতো ও তাদের দুশমন মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতো। শুধু তা-ই নয় , তারা এ বিষয়টিকে পুরুষানুক্রমে তাদের ইতিহাসগ্রন্থ সমূহে উদ্ধৃত করতো। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে , কোনো ইতিহাস বা সাহিত্য গ্রন্থেই এ ধরনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ ও তাতে বিজয়ের কথা উল্লেখ করা হয় নি।

এ প্রসঙ্গে আরো কয়েকটি কথা উল্লেখ করা যেতে পারে :

(ক) হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর আবির্ভাব ও ইসলামের অভ্যুদয় মানবেতিহাসের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বাধিক চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী ঘটনা , যে কারণে এর বিস্তারিত ইতিহাস শুধু মুসলিম ইতিহাসবিদগণই নন , অমুসলিম ইতিহাসবিদগণও লিপিবদ্ধ করেছেন। এ ব্যাপারে প্রাচীন অমুসলিম ইতিহাসবিদগণ ইসলামী সূত্রের ওপর নির্ভর করেন নি , বরং নিজস্ব সূত্র ব্যবহার করেছেন। সূতরাং কেউ কোরআন মজীদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তার বিকল্প উপস্থাপনে সক্ষম হলে তা নিয়ে কাফেররা এতোই হৈচৈ করতো যে , তৎকালীন ও পরবর্তীকালীন অমুসলিম ইতিহাসবিদগণের ইতিহাস থেকে তা কিছুতেই বাদ পড়তো না , বরং কথিত বিকল্প গ্রন্থ বা সূরাহ্ও তাতে উদ্ধৃত হতো।

(খ) মক্কাহর মুসলমানদের অংশবিশেষ আবিসিনিয়ায় হিজরত করলে কাফেরদের প্রতিনিধিদল তাঁদেরকে ধাওয়া করে আবিসিনিয়ায় পৌঁছে এবং তাঁদেরকে তাদের হাতে সমর্পণের জন্য সে দেশের বাদশাহ্ নাজ্জাশীর নিকট আবেদন জানায়। হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ) তাঁর নিকট যা নাযিল হয়েছে বলে দাবী করছিলেন নাজ্জাশী তা থেকে কিছুটা তেলাওয়াত করে শুনাতে বললে নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর একজন ছ্বাহাবী সূরাহ্ মারইয়াম্ তেলাওয়াত করে শোনান। এ তেলাওয়াত শুনে নাজ্জাশী ও তাঁর পারিষদবর্গ অভিভূত হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় কাফেরদের হাতে কোরআন মজীদের বা তার কোনো সূরাহর বিকল্প থাকলে অবশ্যই তারা বলতো যে , কোরআন কোনো ঐশী কালাম্ নয় , বরং এ হচ্ছে মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর রচিত অতি উন্নত মানের সাহিত্যসমৃদ্ধ রচনা , আর অত্যন্ত সুন্দরভাবে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাব প্রকাশক্ষম প্রাঞ্জল ভাষায় (আরবীতে) এ ধরনের উন্নত মানের রচনা তৈরী করা সম্ভব এবং তারা এর বিকল্প রচনা করেছে। অতঃপর তারা তা পড়ে শুনাতো। কিন্তু তারা এরূপ দাবী করে নি ; করলে অবশ্যই তা ইতিহাসে লেখা থাকতো।

এছাড়া হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) যখন রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াসের নিকট পত্র পাঠান তখন রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) ও তাঁর দ্বীন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য হেরাক্লিয়াস কয়েক জন আরব বণিকের সাহায্য নেন যারা ছিলো কাফেরদের দলভুক্ত। কোরআন মজীদের বা তার কোনো সূরাহর বিকল্প রচিত হয়ে থাকলে তারাও হেরাক্লিয়াসের সামনে তা পেশ করার সুযোগ হাতছাড়া করতো না। কিন্তু তারা কোনো বিকল্প তৈরীর দাবী করে নি এবং এরূপ কিছু পেশ করে নি।

(গ) হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর যুগে আরব উপদ্বীপের জনগণের মধ্যে মদীনার ইয়াহূদী ও নাজরানের খৃস্টানরা ছিলো অপেক্ষাকৃত সুশিক্ষিত ও সুসভ্য। তারা ছিলো আসমানী গ্রন্থের অধিকারী। বিশষ করে ইয়াহূদীদের মধ্যে জ্ঞানচর্চা বেশী ছিলো এবং খৃস্টানদের আরব উপদ্বীপের বাইরের সাথে যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিলো। এমতাবস্থায় কোরআন মজীদের বিকল্প রচিত হলে তারা তার সংরক্ষণ ও প্রচার-প্রসার করে ইসলামের মোকাবিলা করতো। বিশেষ করে রাজনৈতিক কারণে তাদের যখন দেশত্যাগ করে বাইরে চলে যেতে হয় , তখন তারা ইসলামের বিরুদ্ধে ভালোভাবেই এ অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারতো এবং কিছুতেই তারা এ সুযোগ হাতছাড়া করতো না। কিন্তু এরূপ কোনো বিকল্পের প্রচার তো দূরের কথা , এরূপ বিকল্প রচিত হয়েছে বলেও তারা দাবী করে নি।

(ঘ) জাহেলী যুগের আরবদের বহু সাহিত্যকর্ম , বিশেষ করে তাদের শ্রেষ্ঠতম সাহিত্যকর্মসমূহ এখনো টিকে আছে। সে ক্ষেত্রে কোরআন মজীদের বিকল্প রচিত হলে তার টিকে থাকার সম্ভাবনা ঐ সব সাহিত্যের তুলনায় অনেক বেশী ছিলো।

(2) কোরআন মজীদের চ্যালেঞ্জ শুধু মুষ্টিমেয় সংখ্যক লোক বা শুধু আরবদের প্রতিই ছিলো না , বরং কোরআন মজীদ তার বিকল্প উপস্থাপনের জন্য সর্ব কালের , সর্ব যুগের সর্ব স্থানের সমগ্র মানব গোষ্ঠীকে চ্যালেঞ্জ প্রদান করেছে। এ প্রসঙ্গে কোরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে :

) قل لئن اجتمعت الانس و الجن علی ان يأتوا بمثل هذا القرآن لا يأتوا بمثله و لو کان لبعضهم لبعض ظاهراً(

(হে রাসূল! তাদেরকে) বলে দিন , এ কোরআনের বিকল্প আনয়নের জন্য যদি সমগ্র মানব প্রজাতি ও সমগ্র জ্বিন প্রজাতি একত্রিত হয় তথাপি এর বিকল্প আনয়নে সক্ষম হবে না , এমনকি তারা যদি এ কাজে এক দল অপর দলকে সাহায্য করে তবুও সক্ষম হবে না। (সূরাহ্ বানী ইসরাাঈল্ : 88)

আর ইসলামের পুরো ইতিহাসে খৃস্টান জগত ও ইসলামের দুশমন অন্যান্য জনগোষ্ঠী ও সম্প্রদায় ইসলাম ও মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা হ্রাসকরণ এবং হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) ও কোরআন মজীদকে হেয় করার লক্ষ্যে প্রচুর সময় , শ্রম ও অর্থ ব্যয় করেছে। ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের এ সংগ্রাম অত্যন্ত পরিকল্পিত , সুসংগঠিত ও সুবিস্তৃতভাবে অব্যাহত ছিলো এবং এখনো রয়েছে। এমতাবস্থায় তাদের পক্ষে যদি কোরআন মজীদের বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাত্-এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাকারী কোনো বিকল্প - এমনকি মাত্র একটি সূরাহ্ আনয়ন করে হলেও - উপস্থাপন করা সম্ভব হতো , তাহলে অবশ্যই তারা সে সুযোগ গ্রহণ করতো। সে ক্ষেত্রে কোরআন মজীদের ক্ষুদ্রতম সূরাহ্ সমূহের কোনোটির অনুরূপ একটি সূরাহ্ রচনা করে অত্যন্ত সহজ অথচ সর্বোত্তম পন্থায় তারা স্বীয় লক্ষ্যে উপনীত হতো এবং প্রচুর সময় , শ্রম ও অর্থ ব্যয়ের হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতো। কিন্তু

) يريدون ليطفيوا نور الله بافواههم و الله متم نوره و لو کره الکافرون(

তারা ফুঁ দিয়ে আল্লাহর জ্যোতিকে নির্বাপিত করতে চায় , কিন্তু আল্লাহ্ (স্বয়ং) তাঁর জ্যোতির পরিপূর্ণতা দানকারী , যদিও কাফেররা তা অপসন্দ করে। (সূরাহ্ আছ্ব্-ছ্বাফ্ : 8)

(3) উন্নত সাহিত্যপ্রতিভার অধিকারী কোনো ব্যক্তি যদি বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের বিচারে উন্নততম কালাম্ (কথা , বাণী , ভাষণ ও বক্তব্য) নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণে চর্চা করে এবং তার সৌন্দর্য , প্রকাশসৌকর্য ও সাহিত্যক ঔৎকর্ষ ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করে , অতঃপর সে তদনুরূপ বা অন্ততঃ তার কাছাকাছি মানের কালাম্ রচনা করতে সক্ষম হয়। এ হচ্ছে সর্ব শাস্ত্রে বা সর্ব বিষয়ে প্রযোজ্য একটি সাধারণ ও সুনিশ্চিত বিধি।

কিন্তু কোরআন মজীদ এ সাধারণ বিধির ব্যতিক্রম। কারণ , মানুষ কোরআন মজীদের সাথে যতো বেশীই পরিচিত হোক না কেন , যতো বেশী মনোযোগ সহকারে কোরআনে করীম অধ্যয়ন , পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করুক না কেন এবং কোরআন মজীদ নিয়ে যতোই চর্চা করুক না কেন , যতোই না এর আয়াত সমূহ মুখস্ত করে নিক ও মনমগযে গেঁথে নিক , তথাপি সে কোরআন মজীদের বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের সাথে মিল বিশিষ্ট প্রকাশভঙ্গির অধিকারী কালাম্ রচনা করতে সক্ষম হবে না।

এ সত্য এটাই প্রমাণ করে যে , কোরআন মজীদ এমন এক বিশিষ্ট প্রকাশভঙ্গির অধিকারী যা মানুষকে শিক্ষাদানের সম্ভাবনা ও মানুষের শিক্ষাগ্রহণ ক্ষমতার উর্ধে। অতএব , কারো পক্ষে তা শিক্ষা করা বা অন্যকে শিক্ষাদান এবং তার ভিত্তিতে অনুরূপ প্রকাশভঙ্গি সম্বলিত বক্তব্য রচনা করা সম্ভব নয়।

এ থেকে এটাও বোঝা যায় যে , কোরআন মজীদ হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর নিজের রচিত কালাম্ হলে , তাঁর যে সব বক্তৃতা-ভাষণ ও কথাবার্তা অকাট্য ও অবিকৃতভাবে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে তাতে বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের দিক থেকে কোরআন মজীদের সাথে এক ধরনের মিল খুঁজে পাওয়া যেতো এবং কোরআন মজীদের প্রকাশভঙ্গি ও তাঁর কথাবার্তার প্রকাশভঙ্গিতে বিশেষ ধরনের অভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যেতো। অন্ততঃ তাঁর বক্তব্যের মাঝে ফাঁকে ফাঁকে , আঙ্গিকতা , প্রকাশভঙ্গি ও মানের দিক থেকে কোরআন মজীদের সমপর্যায়ের কথা পাওয়া যেতো। আর তাহলে অবশ্যই এ সব অত্যুন্নত মানের বাক্য বিভিন্ন গ্রন্থে উদ্ধৃত হতো। বিশেষ করে কোরআনের দুশমনরা - যারা ইসলামের শ্রেষ্ঠত্বকে ম্লান করার জন্য সদা সচেষ্ট - এ ধরনের বাক্যাবলী সংরক্ষণ করে রাখতো এবং তার ভিত্তিতে কোরআন মজীদকে হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর নিজের রচিত গ্রন্থ বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করতো।

এখানে আরো একটি কথা মনে রাখা দরকার। তা হচ্ছে , মানবসমাজে বালাগ্বাত্ (ভাষাগত প্রকাশ সৌকর্য) যেভাবে বিদ্যমান দেখতে পাওয়া যায় তাতে অনেক সময় কোনো জনসমষ্টির মধ্যে বালাগ্বাত্-এর অধিকারী কোনো কোনো লোককে পাওয়া যায় , কিন্তু সাধারণতঃ এ ধরনের একজন লোক সংশ্লিষ্ট ভাষার বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের একটি কি দু টি দিকে দক্ষতার অধিকারী হয়ে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ , কেউ হয়তো গদ্যে বালাগ্বাত্-এর অধিকারী , কিন্তু কবিতা রচনায় অক্ষম। অপর একজন হয়তো বীরত্বগাথা কবিতায় বালাগ্বাতের অধিকারী , কিন্তু প্রশংসামূলক কবিতায় নন। অথবা একজন শোকগাথা রচনায় বালাগ্বাত্-এর অধিকারী এবং এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত সুন্দর ও চিত্তাকর্ষক কবিতা রচনায় সক্ষম , কিন্তু তিনি প্রেমবিষয়ক কবিতা রচনা করলে তা হয় খুবই নিম্ন মানের।

কিন্তু কোরআন মজীদ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছে এবং এ ক্ষেত্রে বাচনশিল্পের বিভিন্ন আঙ্গিকতা ব্যবহার করেছে। আর এর প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোরআন মজীদ মু জিযাহর স্তরে অবস্থিত এবং এর প্রকাশসৌন্দর্য ও বাণীনৈপুণ্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই চরমতম পর্যায়ে উপনীত ও পূর্ণতার শেষ সীমায় অবস্থিত , যার ফলে অন্যরা অনুরূপ কালাম্ রচনায় অক্ষম হয়ে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ , এহেন চরমতম ও পূর্ণতম বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো কেবল মানুষের ও তার ভাষার স্রষ্টা আল্লাহ্ তা আলার পক্ষেই সম্ভব এবং এ কারণেই তাঁর কালামে অর্থাৎ কোরআন মজীদে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তাই মানুষের পক্ষে কখনোই এর সাথে তুলনীয় বক্তব্য উপস্থাপন করা সম্ভব হতে পারে না।

চিরকালীন দ্বীনের অবিনশ্বর মু জিযাহ্

এ পর্যন্তকার আলোচনা থেকে একটি বিষয় অত্যন্ত সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে , নবী-রাসূলগণকে ( আঃ) চেনার একমাত্র পথ হচ্ছে মু জিযাহ্। আর যেহেতু পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের ( আঃ) নবুওয়াত বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট যুগের জন্য নির্ধারিত ছিলো , সেহেতু অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই তাঁদেরকে প্রদত্ত মু জিযাহ্ সমূহের মেয়াদও ছিলো সীমাবদ্ধ ও সংক্ষিপ্ত। আর এ সব মু জিযাহ্ কেবল সংশ্লিষ্ট যুগের লোকদের জন্যই নির্ধারিত ছিলো। কারণ , সংশ্লিষ্ট যুগের কিছু লোক ঐ সব সীমাবদ্ধ ও সাময়িক মু জিযাহ্ দর্শন করায় তাদের ওপর আল্লাহ্ তা আলার হুজ্জাত্ পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো এবং অন্যরাও পরম্পরা ভিত্তিতে ও মুতাওয়াতির্ পর্যায়ে এ সব মু জিযাহর খবর জানতে পারায় তাদের জন্যও তা দৃঢ় প্রত্যয়ের পর্যায়ে উপনীত হয়েছিলো , যার ফলে তাদের ওপরও আল্লাহর হুজ্জাত্ পরিপূর্ণ হয়েছিলো।

কিন্তু একটি অবিনশ্বর শরী আত ও নবুওয়াতের জন্য একটি অবিনশ্বর ও পরবর্তী সর্বকালীনন মু জিযাহ্ থাকা অপরিহার্য। কারণ , মু জিযাহ্ কোনো একটি বিশেষ যুগের মধ্যে সীমাবদ্ধ হলে পরবর্তী বিভিন্ন যুগের লোকদের পক্ষে তা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব নয়।

এমনকি এক সময়ের মুতাওয়াতির্ পর্যায়ের বর্ণনাও কালের প্রবাহে হারিয়ে যেতে পারে ; অন্ততঃ বিভিন্ন কার্যকারণের প্রভাবে তার ওপরে সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে। আর সে ক্ষেত্রে পরবর্তী যুগসমূহের লোকেরা - যারা মু জিযাহ্ প্রত্যক্ষ করতে পারলো না - তাদের ওপর হুজ্জাত্ পূর্ণ হবে না এবং তাদের অন্তরে দৃঢ় প্রত্যয় সৃষ্টি হবে না। এমতাবস্থায় আল্লাহ্ তা আলা যদি এহেন লোকদের জন্য আল্লাহর নবীর নবুওয়াতের সত্যতা স্বীকার ও তাঁর শরী আত্ অনুসরণ বাধ্যতামূলক করেন , তাহলে কার্যতঃ তাদেরকে অসম্ভব দায়িত্ব প্রদান করা হবে। কিন্তু আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে কারো ওপরে অসম্ভব দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

এ কারণেই আমরা বলেছি , অবিনশ্বর নবুওয়াতের জন্য অবিনশ্বর মু জিযাহ্ প্রয়োজন যা সব সময়ই সংশ্লিষ্ট নবীর নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণ করবে। এ কারণেই আল্লাহ্ তা আলা সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর নবুওয়াতের জন্য অবিনশ্বর ও কালোত্তীর্ণ মু জিযাহ্ স্বরূপ কোরআন মজীদ প্রদান করেছেন যাতে তা অতীত কালের লোকদের জন্য যেভাবে হুজ্জাত্ ছিলো ঠিক সেভাবেই পরবর্তী কালের লোকদের জন্যও হুজ্জাত্ হয়।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা সংক্ষেপে নিম্নোক্ত উপসংহারে উপনীত হতে পারি :

(1) কোরআন মজীদ অতীতের সমস্ত নবী-রাসূলকে ( আঃ) প্রদত্ত মু জিযাহ্ সমূহ ও হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)কে প্রদত্ত অন্যান্য মু জিযাহর ওপর শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। কারণ , কোরআন মজীদ হচ্ছে অবিনশ্বর মু জিযাহ্ - যার মু জিযাহ্ হওয়ার বৈশিষ্ট্য এখন থেকে অতীতে যেমন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিশ্বের সমস্ত মানুষের জন্য হুজ্জাত্ ছিলো , তেমনি ভবিষ্যতে ক্বিয়ামত্ পর্যন্ত সমস্ত মানুষের জন্য হুজ্জাত্ হয়ে থাকবে।

(2) অতীতের নবী-রাসূলগণের ( আঃ) আনীত শরী আত্ ও বিধিবিধানের যুগের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। কারণ , সংশ্লিষ্ট শরী আত্ সমূহের সত্যতা প্রমাণকারী মু জিযাহ্ সমূহ অতীত হয়ে গেছে এবং সে সবের আধিপত্যও বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

এ প্রসঙ্গে জনৈক ইয়াহূদী পণ্ডিতের সাথে আল্লামাহ্ খূয়ীর যে কথোপকথন হয় তা এখানে উদ্ধৃত করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। উক্ত ইয়াহূদী পণ্ডিতের সাথে আল্লামাহ্ খূয়ীর আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো : ইয়াহূদী ধর্মের যুগ তার মু জিযাহ্ সমূহ হারিয়ে যাওয়ার কারণে বিলুপ্ত হয়েছে।

আল্লামাহ্ খূয়ী তাঁকে বললেন : হযরত মূসা ( আঃ)-এর শরী আত্ কি শুধু ইয়াহূদীদের জন্য ছিলো , নাকি সমস্ত জাতি ও জনগোষ্ঠীর জন্য সাধারণ ও সর্বজনীন শরী আত্ ছিলো ? তা যদি শুধু ইয়াহূদীদের জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত হয়ে থাকে তাহলে অন্যান্য জাতি ও জনগোষ্ঠীর জন্য অন্য নবী-রাসূল প্রয়োজন। আর সে ক্ষেত্রে আপনাদের দৃষ্টিতে উক্ত পয়গাম্বর রাসূলে আকরাম্ হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ) ছাড়া আর কে হতে পারেন ? আর হযরত মূসা ( আঃ)-এর শরী আত্ যদি সর্বজনীন ও বিশ্বজনীন হয়ে থাকে এবং সমগ্র মানব প্রজাতির জন্য তা সাধারণ শরী আত্ হয়ে থাকে তাহলে তার সপক্ষে অকাট্য ও জীবন্ত দলীল থাকা অপরিহার্য। অথচ কার্যতঃ এখন এ জাতীয় দলীল-প্রমাণ মওজূদ নেই। কারণ , হযরত মূসার ( আঃ) মু জিযাহ্ সমূহ শুধু তাঁর নিজের যুগের জন্যই বিশেষভাবে নির্ধারিত ছিলো। তাই তাঁর পরে আর সে সব মু জিযাহর কোনো চিহ্ন বর্তমান নেই যা সর্ব যুগে অকাট্য ও প্রত্যয় সৃষ্টিকারী রূপে গণ্য হতে পারে এবং ইয়াহূদী ধর্মের স্থায়িত্ব ও প্রবাহমানতা প্রমাণ করতে পারে।

আপনি যদি বলেন যে , এ সব মু জিযাহ্ বর্তমানে বিদ্যমান না থাকলেও মুতাওয়াতির্ বর্ণনার কারণে এ সব মু জিযাহ্ সংঘটিত হবার বিষয়টি অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় , তাহলে জবাবে বলবো , প্রথমতঃ মু জিযাহ্ কেবল তখনই প্রত্যয় উৎপাদক হতে পারে যখন তা তাওয়াতোর্ পদ্ধতিতে প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ প্রত্যেক যুগে ও প্রত্যেক পুরুষে প্রত্যেক জাতির মধ্যেই এতো বেশী সংখ্যক লোক কর্তৃক বর্ণিত হয় যে , তা প্রত্যয় উৎপাদনকারী হতে পারে। কিন্তু আপনারা প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক জাতি ও জনগোষ্ঠীর প্রতিটি প্রজন্মের মধ্যে হযরত মূসা ( আঃ)-এর মু জিযাহ্ সম্পর্কে এ ধরনের তাওয়াতোর্ প্রমাণ করতে পারবেন না।

দ্বিতীয়তঃ যদি মু জিযাহ্ সম্পর্কে বর্ণনাপ্রাপ্তিই তা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট বলে গণ্য হয় , তাহলে তা শুধু হযরত মূসা ( আঃ)-এর মু জিযাহর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয় , বরং আপনারা যেভাবে হযরত মূসা ( আঃ)-এর মু জিযাহ্ বর্ণনা করেছেন তেমনি খৃস্টানরা হযরত ঈসা ( আঃ)-এর মু জিযাহ্ বর্ণনা করছে এবং একইভাবে মুসলমানরাও হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর মু জিযাহ্ বর্ণনা করছে। এমতাবস্থায় এ সব বর্ণনার মধ্যে এমন কী পার্থক্য রয়েছে যে , হযরত মূসা ( আঃ)-এর মু জিযাহ্ সম্পর্কে আপনাদের বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হবে , অথচ অন্যদের বর্ণনা তাদের পয়গাম্বরদের সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য হবে না ? আর তাদের পয়গাম্বরের মু জিযাহ্ সম্পর্কে তাদের বর্ণনা যদি সংশ্লিষ্ট মু জিযাহ্ সমূহ সংঘটিত হওয়ার সত্যতা প্রমাণে যথেষ্ট হয় , তাহলে তাদের নবীদের মু জিযাহ্ এভাবে বর্ণিত হওয়া সত্ত্বেও কেন আপনারা তাঁদের নবুওয়াতের সত্যতা স্বীকার করছেন না ?

জবাবে উক্ত ইয়াহূদী পণ্ডিত বলেন : ইয়াহূদীরা হযরত মূসা ( আঃ)-এর যে সব মু জিযাহ্ বর্ণনা করে থাকে খৃস্টান ও মুসলমানরাও তার সত্যতা স্বীকার করে , কিন্তু তাদের পয়গাম্বরদের মু জিযাহ্ সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় (অর্থাৎ ইয়াহূদীরা বিশ্বাস করে না)। এ কারণে তা প্রমাণের জন্য অন্যবিধ দলীল-প্রমাণের প্রয়োজন রয়েছে।

জবাবে আল্লামাহ্ খূয়ী বলেন : হ্যা , সন্দেহ নেই , খৃস্টান ও মুসলমানরা হযরত মূসা ( আঃ)-এর মু জিযাহ্ সমূহ বিশ্বাস করে। কিন্তু তা ইয়াহূদীদের মুতাওয়াতির্ ও প্রত্যয় উৎপাদক বর্ণনার ভিত্তিতে নয় , বরং এর কারণ এই যে , তাদের পয়গাম্বরগণ ( আঃ) তাদেরকে এ সব মু জিযাহ্ সম্পর্কে অবগত করেছেন। খৃস্টান ও মুসলমানরা তাদের পয়গাম্বরদের ( আঃ) মাধ্যমেই হযরত মূসা ( আঃ)-এর মু জিযাহ্ সম্পর্কে জ্ঞান ও প্রত্যয় হাছ্বিল করেছে। এমতাবস্থায় তারা যদি তাঁদের নবুওয়াত স্বীকার না করে তাহলে তাদের পক্ষে হযরত মূসা ( আঃ)-এর মু জিযাহ্ সমূহের সত্যতা স্বীকারের কোনো পথই থাকে না।

এ দুর্বলতা শুধু ইয়াহূদী ধর্মের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয় , বরং অতীতের প্রতিটি ধর্মেই এ দুর্বলতা রয়েছে। কেবল ইসলামের মু জিযাহ্ই অবিনশ্বর - যা সকল যুগেই জীবন্ত এবং সকল জাতি ও জনগোষ্ঠীর মধ্যেই প্রবহমান রয়েছে। এ মু জিযাহ্ ক্বিয়ামত্ দিবস পর্যন্ত বিশ্ববাসীর সামনে বাঙ্ময় হয়ে থাকবে এবং তাদেরকে নিজের দিকে আহবান জানাতে থাকবে। আমরা এ প্রবহমান ও অবিনশ্বর মু জিযাহ্ অর্থাৎ কোরআন মজীদের মাধ্যমে ইসলামকে জানি এবং এ দ্বীনের সত্যতা স্বীকার করি। আর যেহেতু আমরা ইসলামকে জেনেছি ও এর সত্যতা স্বীকার স্বীকার করেছি , সেহেতু অতীতের সমস্ত নবী-রাসূলকে ( আঃ) স্বীকার করতে বাধ্য। কারণ , ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ) তাঁদেরকে স্বীকৃতি দিয়েছেন ও তাঁদের নবুওয়াতের সত্যতা প্রতিপাদন করেছেন।

মোট কথা , কোরআন মজীদ হচ্ছে অবিনশ্বর মু জিযাহ্ - যা অতীতের সমস্ত আসমানী কিতাবের সত্যতা প্রতিপাদন করেছে এবং অতীতের সমস্ত নবী-রাসূলের ( আঃ) নবুওয়াতের সত্যতা ও তাঁদের নিষ্কলুষতা-পবিত্রতার সাক্ষ্য প্রদান করেছে , আর তাঁদেরকে তাঁদের যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।


16

17

18

19

20

21

22

23

24

25

26

27

28

29

30

31

32

33

34

35

36

37

38