কোরআনের মু‘জিযাহ্

কোরআনের মু‘জিযাহ্ 0%

কোরআনের মু‘জিযাহ্ লেখক:
: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ: কোরআন বিষয়ক জ্ঞান

কোরআনের মু‘জিযাহ্

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 46604
ডাউনলোড: 4351

পাঠকের মতামত:

কোরআনের মু‘জিযাহ্
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 60 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 46604 / ডাউনলোড: 4351
সাইজ সাইজ সাইজ
কোরআনের মু‘জিযাহ্

কোরআনের মু‘জিযাহ্

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

কোরআনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ (!)

হুসনুল্ ঈজাায্ (حسن الايجاز ) নামক পুস্তিকার লেখক বলেন : কোরআনের প্রদত্ত চ্যালেঞ্জ গ্রহণ এবং কোরআনের অনুরূপ বা বিকল্প গ্রন্থ রচনা করা সম্ভব। [জনৈক খৃস্টান লেখক কর্তৃক লিখিত এ পুস্তিকাটি 1912 খৃস্টাব্দে মিসরের বুলাক্ (নীল নদের তীরবর্তী কায়রোর বন্দর) থেকে প্রকাশিত হয়।]

পুস্তিকার লেখক তাঁর দাবীর সপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ স্বয়ং কোরআন মজীদেরই কিছু বাক্য গ্রহণ করে তার কিছু শব্দ রদবদল করে উপস্থাপন করেছেন। আসলে এভাবে তিনি তাঁর জ্ঞানের দৌড়কেই তুলে ধরেছেন এবং আরবী ভাষার বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাত্ সম্পর্কে তাঁর কতোখানি ধারণা আছে তা-ও প্রকাশ করে দিয়েছেন।

লেখক কোরআন মজীদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ ও এ মহাগ্রন্থের বিকল্প উপস্থাপনের নামে যা পেশ করেছেন আমরা তা এখানে উদ্ধৃত করবো , অতঃপর তাঁর লেখার দুর্বলতা সমূহ অভিজ্ঞ পাঠক-পাঠিকাদের সামনে তুলে ধরবো।

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে , মরহূম্ আল্লামাহ্ খূয়ী লিখিত নুফ্হাতুল্ ঈজাায্ (نفحات الايجاز ) নামক পুস্তকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তবে এখানে আমরা সংক্ষিপ্ত আলোচনাকেই যথেষ্ট মনে করছি। [হুসনুল্ ঈজাায্ (حسن الايجاز ) পুস্তিকার জবাবে আল্লামাহ্ খূয়ী (রহ্ঃ)-এর লেখা এ পুস্তকখানি ইরাকের নাজাফ শহর থেকে প্রকাশিত হয়েছে।]

সূরাহ্ ফাতেহার বিকল্প !

কল্পনাবিলাসী উক্ত লেখক সূরাহ্ ফাতেহার বিকল্প রচনার নামে লিখেছেন :

الحمد للرحمان. رب الاکوان. الملک الديان. لک العبادة و بک المستعان. اهدنا صراط الايمان

সমস্ত প্রশংসা পরম দয়াবানের যিনি সৃষ্টিসমূহের প্রভু ও প্রতিদান প্রদানকারী বাদশাহ। উপাসনা ও দাসত্ব তোমার জন্য এবং সাহায্য প্রার্থনা তোমার কাছে। আমাদেরকে ঈমানের পথে পরিচালিত করো।

লেখক স্বীয় কল্পনাবিলাসিতার কারণে ধারণা করেছেন যে , তাঁর উপস্থাপিত এ বাক্যগুলোতে সূরাহ্ ফাতেহার সমস্ত দিক ও সমগ্র তাৎপর্য শামিল রয়েছে , অথচ সূরাহ্ আল্-ফাতেহাহ্ থেকে তা সংক্ষিপ্ততর।

যে লেখক দুর্বল ও নিম্ন মানের লেখা এবং তাৎপর্যপূর্ণ ও ভারী উঁচু মানের লেখার মধ্যকার পার্থক্য নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এমনই সীমাবদ্ধ ও সঙ্কীর্ণ বিচারশক্তির অধিকারী তাঁর সম্পর্কে কী বলা যেতে পারে! তাঁর জন্য তো এটাই উত্তম ছিলো যে , প্রকাশের পূর্বে তিনি তাঁর লেখাটি আরবী ভাষার সাহিত্যরীতি ও বালাগ্বাত্-ফাছ্বাহাতের সাথে পরিচিত খৃস্টান পণ্ডিতদেরকে দেখাতেন এবং নিজেকে এভাবে খেলো প্রমাণ না করতেন।

তিনি এ ন্যূনতম বিষয়টিও লক্ষ্য করেন নি যে , কোনো কবি বা কোনো লেখক যদি অন্য কারো কোনো লেখার বিকল্প উপস্থাপন করতে চান , সে ক্ষেত্রে তাঁকে এমন লেখা উপস্থাপন করতে হয় যা শব্দচয়ন , বাক্যগঠন ও সাহিত্যের আঙ্গিকতার দিক থেকে হবে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও নিজস্ব ; দু টি লেখার মধ্যে কেবল একটি দিক থেকে মিল ও অভিন্নতা থাকবে। তা হচ্ছে , উভয় লেখার লক্ষ্য বা মূল আবেদন তথা বিষয়বস্তু হবে অভিন্ন।

কোনো লেখককে চ্যালেঞ্জ করা বা তাঁর লেখার বিকল্প উপস্থাপনের মানে এ নয় যে , বিকল্প উপস্থাপনকারী ব্যক্তি প্রতিপক্ষের লেখার বাক্যগঠন ও সাহিত্যরীতির অনুসরণ করবেন এবং প্রতিপক্ষের লেখার কিছু শব্দ পরিবর্তন করে একটি নতুন ( ?!) লেখা তৈরী করবেন , আর এ কাজকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ বা বিকল্প উপস্থাপন হিসেবে নামকরণ করবেন।

এটাই যদি হয় চ্যালেঞ্জ বা বিকল্প উপস্থাপন তাহলে যে কোনো কালামকেই চ্যালেঞ্জ করা ও তার বিকল্প উপস্থাপন করা সম্ভব। আর তাহলে হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর সমসাময়িক যে কোনো আরবের পক্ষেই কোরআন মজীদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ ও বিকল্প উপস্থাপন করা সম্ভব ছিলো। কিন্তু যেহেতু তারা কোনো কালামের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ ও বিকল্প উপস্থাপনের তাৎপর্য ভালোভাবেই অবগত ছিলো এবং কোরআন মজীদের বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাতের রহস্যাবলী প্রত্যক্ষ করছিলো , এ কারণেই তারা কোরআন মজীদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অগ্রসর হয় নি এবং এর সামনে তাদের অক্ষমতার কথা স্বীকার করে একদল কোরআন মজীদের ওপর ঈমান আনয়ন করে ও অপর একদল একে জাদু বলে আখ্যায়িত করে এবং বলে:

) ان هذا الا سحر يوثر( .

(তারা বলে :) এ তো জাদু ছাড়া কিছু নয় - যা তাকে শিক্ষা দেয়া হয়। (সূরাহ্ আল্-মুদ্দাছছির্ : 24)

এছাড়া , আলোচ্য লেখকের উদ্ধৃত বাক্যগুলোতে যেখানে নকল ও কৃত্রিমতা সুস্পষ্টরূপে ধরা পড়ছে , সেখানে কী করে একে সূরাহ্ ফাতেহার সাথে তুলনাযোগ্য বলে মনে করা যেতে পারে ? পুস্তিকাটির লেখক যে আরবী ভাষার বালাগ্বাত্ ও ফাছ্বাহাত্ সম্পর্কে একেবারে অজ্ঞ তা কি তিনি সূরাহ্ ফাতেহার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ ও বিকল্প রচনার দাবী করে ও উক্ত বাক্যসমূহ সর্বসমক্ষে প্রদর্শন করে অধিকতর সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেন নি ?

এবারে লেখকের লেখার দুর্বল দিকসমূহের প্রতি দৃষ্টি দেয়া যাক :

(1) লেখকের রচিত বাক্যالحمد للرحمان (সমস্ত প্রশংসা পরম দয়াবানের) এবং সূরাহ্ ফাতেহার বাক্যالحمد لله (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর) - এ দু টি বাক্যকে অর্থ ও তাৎপর্যের দিক থেকে কী করে অভিন্ন পর্যায়ের বলা যেতে পারে ? কারণ , আল্লাহ্ হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার পরম প্রমুক্ত সত্তার সত্তাগত নাম যাতে তাঁর সমস্ত রকমের গুণ-বৈশিষ্ট্য ও পূর্ণতা শামিল রয়েছে ; রাহমান্ (পরম দয়াবান) তাঁর এ সব গুণ-বৈশিষ্ট্যের অন্যতম রহমত (দয়া)-এর পরিচায়ক গুণবাচক নাম মাত্র। অতএব ,الحمد لله (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর) বাক্যটিতে প্রশংসার লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহ্ তা আলার সমস্ত রকমের পূর্ণতাবাচক গুণ-বৈশিষ্ট্য। কিন্তুالحمد للرحمان (সমস্ত প্রশংসা পরম দয়াবানের) বাক্যটিতে প্রশংসার লক্ষ্য হচ্ছে শুধু তাঁর রহমত বা দয়া। এ ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তা আলার অন্যান্য গুণ-বৈশিষ্ট্য প্রশংসার মধ্যে শামিল নেই।

(2) সূরাহ্ ফাতেহারرب العالمين. الرحمان الرحيم (যিনি জগতসমূহের প্রভু - যে প্রভু পরম দয়াবান ও মেহেরবান) কথাটির মোকাবিলায়رب الاکوان (যিনি সৃষ্টি সমূহের প্রভু) বাক্যটি খুবই দুর্বল , ত্রুটিপূর্ণ ও অসংহত। সূরাহ্ ফাতেহার বাক্যটির তাৎপর্য ও লক্ষ্য কোনোটিই এতে প্রতিফলিত হয় নি। কারণ , সূরাহ্ ফাতেহার উক্ত বাক্য থেকে প্রমাণিত হয় যে , জগত মাত্র একটি নয় , বরং বহু সংখ্যক জগত রয়েছে এবং আল্লাহ্ তা আলা এ সমস্ত জগতের প্রভু ও পরিচালক। তেমনি তাঁর রহমত (দয়া) সব সময়ের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে এই সমস্ত জগতকে পরিব্যাপ্ত করে রয়েছে।

কী করেرب الاکوان (যিনি সৃষ্টিসমূহের প্রভু) বাক্যটিকে সূরাহ্ ফাতেহার উক্ত বাক্যের সাথে তুলনা করা যেতে পারে ? কারণ ,کون শব্দের (যার বহুবচন হচ্ছেاکوان ) মানে হচ্ছেحدوث (ঘটনা) ওوقوع (সংঘটিত হওয়া)। (এছাড়াওکون শব্দটির আরো অর্থ আছে , যেমন : প্রত্যাবর্তন , স্থলাভিষিক্ত হওয়া , স্থিতি ইত্যাদি।)

তাছাড়াاکوان হচ্ছেکون -এর বহু বচন যা একটি ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য (مصدر ) যার প্রকৃত অর্থ হওয়া বা থাকা (স্থিতিবাচক ক্রিয়ানাম - ইংরেজীতে যাকে Be Verb বলা হয়।) একেرب শব্দের সাথে যুক্তকরণ আরবী সাহিত্যের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। অবশ্যرب -এর পরিবর্তে যদিخالق শব্দটি ব্যবহার করা হতো অর্থাৎخالق الاکوان বলা হতো , তাহলে আরবী সাহিত্যরীতি অনুযায়ী তা সিদ্ধ হতো , কিন্তু লেখক তা করেন নি ; হয়তোবা লেখকের এটা জানাও ছিলো না। অবশ্য সে ক্ষেত্রেও স্বয়ংاکوان শব্দের দুর্বলতা থেকেই যেতো। কারণ ,اکوان শব্দ দ্বারা জগতের বহুত্বও যেমন বুঝানো যায় না , তেমনি আল্লাহ্ তা আলার রহমত যে সমস্ত জগতে পরিব্যাপ্ত তা-ও বুঝানো সম্ভব নয়।

(3) সূরাহ্ ফাতেহাহরمالک يوم الدين (প্রতিফল দিবসের অধিকর্তা) কথাটিকেالملک الديان (প্রতিদান প্রদানকারী বাদশাহ)-তে পরিবর্তিত করায় তাতে সূরাহ্ ফাতেহার কথাটির তাৎপর্য ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হওয়া সম্ভব নয়। কারণ , সূরাহ্ ফাতেহার কথাটির মানে হচ্ছে , আল্লাহ্ তা আলা প্রতিফল দিবসের একমাত্র অধিকর্তা ও বাদশাহ্। কিন্তু লেখকের বাক্যটিতে আল্লাহ্ হচ্ছেন প্রতিদান বা প্রতিফল প্রদানকারী বাদশাহ্। এতে তাঁকে একমাত্র প্রতিফলদাতা বলা হয় নি।

তাছাড়া সূরাহ্ ফাতেহার আয়াতে যেখানে প্রতিফল দানের জন্য অপর একটি জগতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে লেখকের কথাটিতে তার প্রতি বিন্দুমাত্র ইঙ্গিতও নেই। ফলে পুনরুত্থান ও প্রতিফল দিবসের একমাত্র অধিকর্তা , বাদশাহ্ ও বিচারক যে আল্লাহ্ তা আলা এবং ঐ দিন যে অন্য কারো বিন্দুমাত্রও ক্ষমতা বা এখতিয়ার থাকবে না তা-ও তাঁর কথা থেকে বোঝার উপায় নেই।

সূরাহ্ ফাতেহার আয়াতে এ তাৎপর্য নিহিত রয়েছে যে , প্রতিফল দিবসের একমাত্র ও একক অধিকর্তা , হুকুমদাতা , বিচারক ও পরিচালক আল্লাহ্ তা আলা ; তিনি একাই প্রতিটি ব্যক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণকারী থাকবেন , আর তাঁর বিচারের পরিণতিতে কিছু লোক বেহেশতে যাবে ও কিছু লোক দোযখে যাবে। কিন্তু লেখকের বাক্যে প্রতিফল দিবস উল্লেখ না থাকায় এবং বাক্যগঠনের পার্থক্যের কারণে , আল্লাহ্ তা আলা একমাত্র প্রতিফলদাতা বাদশাহ্ রূপে প্রতিভাত না হওয়ায় উল্লিখিত তাৎপর্য সমূহও তাতে অন্তর্ভুক্ত হয় নি।

বস্তুতঃالملک الديان কথাটিতেمالک يوم الدين আয়াতের এ ব্যাপক তাৎপর্যের একটিও অন্তর্ভুক্ত হয় নি। উল্লিখিত কথাটিতে একমাত্র যে তাৎপর্যটি প্রতিফলিত হয়েছে তা এই যে , আল্লাহ্ তা আলা প্রতিফলদানকারী মালিক ও বাদশাহ্ - যিনি মানুষের কাজের প্রতিফল প্রদান করে থাকেন। আর এ তাৎপর্য ও সূরাহ্ ফাতেহার উক্ত আয়াতের তাৎপর্যের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান বিদ্যমান।

এছাড়া সূরাহ্ ফাতেহার আয়াতটিতেمالک يوم الدين কথাটি সম্বন্ধবাচক। যেমন , যদি বলা হয় : অমুক ব্যক্তি এই বাড়ীর মালিক , তাহলে এর মধ্যে এ তাৎপর্যও নিহিত রয়েছে যে , অন্য কেউ এ বাড়ীর মালিকানায় অংশীদার নয়। কিন্তু হুসনুল্ ঈজায্ (حسن الايجاز ) পুস্তিকার লেখকেরالملک الديان কথাটি গুণবাচক। যেমন , যদি বলা হয় : অমুক ব্যক্তি বাড়ীওয়ালা , তাহলে এর মানে এ নয় যে , সে ছাড়া আর কোনো বাড়ীওয়ালা নেই। তেমনি আল্লাহ্ তা আলাকেمالک يوم الدين (প্রতিফল দিবসের অধিকর্তা) বলার মানে হচ্ছে প্রতিফল দিবসের ওপর আর কোনো অধিকর্তা ও বাদশাহ্ নেই। কিন্তু আল্লাহ্কেالملک الديان (প্রতিদান প্রদানকারী বাদশাহ) বলার মানে হচ্ছে , আল্লাহ্ প্রতিফলদাতা মালিক ও বাদশাহ্ , তবে প্রতিদানকারী মালিক ও বাদশাহ্ আরো থাকতে পারেন।

(4) সূরাহ্ ফাতেহার আয়াতاياک نعبد و اياک نستعين (আমরা কেবল তোমারই উপাসনা ও দাসত্ব-আনুগত্য করি এবং আমরা কেবল তোমার কাছেই সাহায্য চাই) থেকে লেখক শুধু বুঝেছেন যে , উপাসনা ও দাসত্ব শুধু আল্লাহরই হওয়া উচিত এবং সাহায্যপ্রার্থনাও কেবল আল্লাহর কাছেই হওয়া উচিত। এ কারণেই তিনি উক্ত আয়াতকে সামান্য রদবদল করে লিখেছেন :لک العبادة و بک المستعان (উপাসনা ও দাসত্ব তোমার জন্য এবং সাহায্য প্রার্থনা তোমার কাছে)।

কিন্তু এ সত্যের পাশাপাশি উক্ত আয়াতে আরো যে সত্য নিহিত রয়েছে লেখক তা বুঝতে পারেন নি। তা হচ্ছে , এ আয়াত আল্লাহর বান্দাহদেরকে এ শিক্ষা প্রদান করছে যে , তারা যেন তাদের ইবাদত ও আনুগত্যের মধ্য দিয়ে তাওহীদকে সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত করে এবং ঘোষণা করে যে , তারা শুধু আল্লাহরই ইবাদত ও দাসত্ব-আনুগত্য করে থাকে এবং ইবাদত-উপাসনা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে তারা শুধু আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করে থাকে।

এ আয়াতের দাবী হচ্ছে এই যে , মু মিন বান্দাহ্ এ সত্যটি স্বীকার করুক যে , সে এবং অন্য সমস্ত মু মিন বান্দাহ্ আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো ইবাদত-উপাসনা ও আনুগত্য করে না এবং আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে না , বরং শুধু আল্লাহরই ইবাদত ও আনুগত্য করে এবং শুধু আল্লাহ্ তা আলার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করে। কিন্তু উক্ত লেখকের বক্তব্যلک العبادة و بک المستعان (উপাসনা ও দাসত্ব তোমার জন্য এবং সাহায্য প্রার্থনা তোমার কাছে) বাক্যে কি এ ব্যাপক তাৎপর্য রয়েছে ?

অধিকন্তু লেখকের বাক্যটিতে কেবল এ ঘোষণা আছে যে , ইবাদত ও দাসত্ব-আনুগত্য এবং সাহায্য প্রার্থনা পাওয়ার একমাত্র হক্ব্দার আল্লাহ তা আলা , কিন্তু বান্দাহ্ নিজে একমাত্র তাঁর ইবাদত ও দাসত্ব-আনুগত্য করে কিনা এবং একমাত্র তাঁরই কাছে সাহায্য চায় কিনা সে সম্পর্কে কোনো সাক্ষ্য নেই যা সূরাহ্ ফাতেহার আয়াতে রয়েছে। তাছাড়া কোরআন মজীদের আয়াতটিতে বান্দাহর পক্ষ থেকে আল্লাহর কাছে ভবিষ্যতে একমাত্র তাঁর ইবাদত ও দাসত্ব-আনুগত্য করার এবং একমাত্র তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়ার যে অঙ্গীকার বা আশাবাদ নিহিত আছে উক্ত লেখকের বাক্যটিতে তা নেই।

প্রসঙ্গতঃ এখানে আরো উল্লেখ করা যেতে পারে যে , অনেকে এরূপ ভুল ধারণা পোষণ করেন যে , আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো আনুগত্য করা এবং আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো কাছে কোনো ধরনের সাহায্য চাওয়া বুঝি আদৌ বৈধ নয়। বরং এ আয়াতে ইবাদত বলতে যা বুঝানো হয়েছে তার মধ্যে উপাসনা কেবল আল্লাহরই জন্য - এ ব্যাপারে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। কিন্তু দাসত্ব আনুগত্য আল্লাহ্ তা আলার হুকুম-আহ্কামের আনুগত্যের সাথে সাংঘর্ষিক না হলে অন্যের জন্যও অবৈধ নয়। এ কারণেই কোরআন মজীদে দাস-দাসীদের সাথে মনিবের সম্পর্ক এবং তাদের অধিকার ও কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে , অন্যদিকে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের (ছ্বাঃ) আনুগত্যের অধীনে উলীল্ আমর্ (কর্মদায়িত্বশীল)-এর আনুগত্যের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অতএব , সূরাহ্ ফাতেহার এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে , মনিব ও কর্মদায়িত্বশীলদের আনুগত্যের ফলে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের (ছ্বাঃ) আনুগত্যের লঙ্ঘন হলে মনিব ও কর্মদায়িত্বশীলদের আনুগত্য করা যাবে না , তাতে যে কোনো পরিণতিই আসুক না কেন।

অন্যদিকে একমাত্র আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার অর্থ এ নয় যে , স্বাভাবিকভাবে মানুষ একে অন্যের কাছে বা পরস্পর যে সাহায্য চায় তা বৈধ নয়। কারণ , কোরআন মজীদেও নেক আমল ও তাক্ব্ওয়ার কাজে পরস্পরকে সাহায্য করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (সূরাহ্ আল্-মাাএদাহ্ : 2) কিন্তু বান্দাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার ক্ষেত্রে কখনোই এমন মানসিকতা পোষণ করা বৈধ নয় যে , যে ব্যক্তির কাছে সাহায্য চাওয়া হচ্ছে সে নিরঙ্কুশভাবে ও অনন্যমুখাপেক্ষী হিসেবে সাহায্য করতে সক্ষম এবং এরূপ মনে করাও বৈধ নয় যে , ঐ ব্যক্তি সাহায্য না করলে তার সমস্যা সমাধানের বা বিপদমুক্তির আর কোনো পথই ছিলো না বা থাকবে না। বরং স্মরণ রাখতে হবে যে , বান্দাহর জন্য বান্দাহর সাহায্যও আল্লাহ্ তা আলার সৃষ্ট কার্যকারণ বিধি ও সৃষ্টির প্রতি তাঁর অনুগ্রহের অংশবিশেষ এবং আল্লাহ্ না চাইলে ঐ ব্যক্তি তাকে সাহায্য করতে পারতো না বা করতো না অথবা সে সাহায্য না করলেও আল্লাহ্ তা আলা চাইলে তার সাহায্য ও বিপদমুক্তির জন্য অন্য কোনো পথ বের করে দিতেন।

এ হচ্ছে এ আয়াত থেকে মুসলমানদের জন্য সাধারণ কর্মনির্দেশনা। মুসলমানদেরকে আমলের ক্ষেত্রে এ আয়াতের এ কর্মনির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার জন্য চেষ্টা করা উচিত। অর্থাৎ এটা হবে সর্বোচ্চ লক্ষ্য। কিন্তু আল্লাহর খাছ্ব্ বান্দাহ্গণ ছাড়া সাধারণতঃ কেউ এ কর্মনির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে না , বরং কখনো কখনো এ থেকে বিচ্যুত হয় , বিশেষ করে প্রবৃত্তির আনুগত্য করে ছোট-বড় গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ে , তা যতোই না পরে তা থেকে তাওবাহ্ ও ইস্তিগ্বফার্ করুক। তাছাড়া অনেক সময় আমরা অন্যের সাহায্য চাইতে গিয়ে মনে করি যে , ঐ ব্যক্তি সাহায্য না করলে আমাদের এ সমস্যা সমাধানের কোনোই পথ নেই। এরূপ মনে করা প্রচ্ছন্ন শিরক্।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে , এ ধরনের বিচ্যুতির অবস্থায় আল্লাহ্ তা আলার সামনে দাঁড়িয়ে এ সাক্ষ্য দেয়া উচিত কিনা যে , আমরা কেবল তোমারই দাসত্ব ও আনুগত্য করি এবং আমরা কেবল তোমার কাছেই সাহায্য চাই। ? কারণ , এরূপ সাক্ষ্য সুস্পষ্টতঃই মিথ্যা। আর আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সম্বন্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দান অত্যন্ত গুরুতর ব্যাপার। অথচ নামাযে সূরাহ্ ফাতেহাহ্ পাঠ করা অপরিহার্য ; সূরাহ্ ফাতেহাহ্ পাঠ ছাড়া নামায ছ্বহীহ্ হয় না। এমতাবস্থায় কী করণীয় ? কোনো কোনো আারেফ মুফাসসিরের অভিমত হচ্ছে এই যে , পুরো সূরাহ্ ফাতেহাহ্ , বা অন্ততঃ উক্ত আয়াতটিকে নিজের পক্ষ থেকে আল্লাহ্ তা আলার সামনে সাক্ষ্য হিসেবে উচ্চারণ করা ঠিক হবে না , বরং কোরআন মজীদের আয়াত পাঠ করার নিয়তে পড়তে হবে , যতোদিন না নিজেকে উক্ত আয়াতের দিকনির্দেশনার বিচ্যুতি থেকে মুক্ত করা যায়। আল্লাহর খাছ্ব্ বান্দাহ্গণ - যাদের আমল উক্ত আয়াতের দিকনির্দেশনার বিচ্যুতি থেকে মুক্ত তাঁরা পুরো সূরাহ্ ফাতেহাকে আল্লাহর সামনে নিজের বক্তব্য হিসেবে পাঠ করে থাকেন। আর নিজেকে এ স্তরে উপনীত করাই হওয়া উচিত বান্দাহর সর্বোচ্চ লক্ষ্য।

আলোচ্য আয়াত কেবল বান্দাহর নিজের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সাক্ষ্যই নির্দেশ করে না , বরং ভবিষ্যত সম্পর্কে অঙ্গীকারও নির্দেশ করে। কারণ , এখানেمضارع ক্রিয়াপদ ব্যবহৃত হয়েছে যা বর্তমান ও ভবিষ্যত উভয়কেই বুঝায়। আর ব্যক্তি যখন নিজে ভবিষ্যতে কোনো কাজ করবে বলে ঘোষণা করে তখন তা কেবল সম্ভাবনাকে বুঝায় না , বরং অনেক ক্ষেত্রে অঙ্গীকারকেও বুঝায় এবং এ আয়াতে অঙ্গীকার অর্থই প্রযোজ্য ; তবে ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে এটিকে আশাবাদ অর্থেও গণ্য করা চলে।

(5) সূরাহ্ ফাতেহারاهدنا الصراط المستقيم (আমাদেরকে সহজ-সরল , সঠিক , সুদৃঢ় ও মধ্যম পথে পরিচালিত করো) আয়াতের লক্ষ্য হচ্ছে এই যে , বান্দাহ্ তার ইবাদত-উপাসনার মাধ্যমে স্বীয় উপাস্যের নিকট এ মর্মে প্রার্থনা জানাবে যে , তিনি যেন স্বীয় বান্দাহকে সংক্ষিপ্ততম ও সহজতম পথে লক্ষ্যে পৌঁছে দেন। তেমনি এতে এ-ও শামিল রয়েছে যে , তিনি যেন তাকে সৎকর্মসমূহ , সদ্গুণাবলী ও সঠিক আক্বেএদের দিকে পথপ্রদর্শন করেন। এ আয়াত শুধু ঈমানের পথে পরিচালিত করার আবেদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে নি। কিন্তুاهدنا صراط الايمان (আমাদেরকে ঈমানের পথে পরিচালিত করো) বাক্যে এ তাৎপর্য অন্তর্ভুক্ত নেই।

এখানে আরো একটি বিষয় লক্ষ্য করা দরকার। তা হচ্ছে , সূরাহ্ ফাতেহাহ্ পড়লে এটা সুস্পষ্ট প্রতিভাত হয় যে , এ সূরাহটি আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণকারী ব্যক্তির পক্ষ থেকে আল্লাহ্ তা আলার কাছে সপ্রশংস দো আ স্বরূপ। অতএব , ঈমানদার ব্যক্তির পক্ষ থেকে ঈমানের পথে পরিচালিত করার জন্য আল্লাহর কাছে দো আ করা খুব বেশী খাপ খায় না।

অবশ্য ঈমানের পথ বলতে যদি ঈমানের সাথে সঙ্গতিশীল পথ বুঝানো হয়ে থাকে তাহলে তাতে কোনো অসঙ্গতি নেই - এটা স্বীকার করতে হবে। তবে ঈমানের পথ কথাটির এ অর্থ কথাটির পরোক্ষ ও আরোপিত অর্থ , স্বতঃপ্রকাশিত অর্থ নয়। অর্থাৎ কথাটি শোনার সাথে সাথেই শ্রোতার মনে বিষয়টি এভাবে রেখাপাত করবে না , বরং প্রথমেই মনে হবে যে , ঈমানে উপনীত হবার পথের জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে ; তদনুযায়ী চলার পথ প্রার্থনার বিষয়টি প্রথমেই শ্রোতার মনে রেখাপাত করবে না। এর পরিবর্তে ঈমানদার ব্যক্তি তাকে ছ্বিরাতুল্ মুস্তাক্বীম্ বা সহজ-সরল , সঠিক , সুদৃঢ় ও মধ্যম পথে পরিচালিত করার জন্য আল্লাহর কাছে দো আ করবে এটাই অধিকতর সঙ্গত। অন্যদিকে ছ্বিরাতুল্ মুস্তাক্বীম্ -এর তাৎপর্যে পার্থিব মোবাহ্ কাজের বেলায় অর্থাৎ যে সব ক্ষেত্রে পাপ-পুণ্য কোনোটিরই সংশ্লিষ্টতা নেই এমন কাজেও সহজতম ও কম আয়াসসাধ্য কষ্টহীন পথ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে , যা ঈমানের পথ -এর মধ্যে শামিল নেই।

দ্বিতীয়তঃ সূরাহ্ ফাতেহার আয়াতে পথ কে বিশেষ্য-বিশেষণ রূপে (الصراط المستقيم ) উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাকেال দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয়েছে যা দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে , বান্দাহ্ বহুবিধ পথের মধ্য থেকে কেবল সেই একমাত্র পথটিকে চাচ্ছে যা সহজ-সরল , সঠিক , সুদৃঢ় ও মধ্যম পথ । আর বলা বাহুল্য যে , এরূপ পথ কেবল একটিই হতে পারে। অন্যদিকে তথাকথিত বিকল্প বাক্যটিতে পথ কে সম্বন্ধ পদ রূপে (صراط الايمان ) উল্লেখ করা হয়েছে যা থেকে এ অর্থ গ্রহণ করার উপায় নেই যে , ঈমানের পথ একাধিক হতে পারে না। বরং এর অর্থ হচ্ছে এই যে , ঈমানের পথ সমূহের মধ্য থেকে যে কোনো একটি পথ দেখাবার জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে।

এছাড়া উক্ত বাক্যের তাৎপর্য এদিক থেকেও অসম্পূর্ণ যে , এতে শুধু ঈমানের পথ প্রদর্শন বা তাতে পরিচালনার কথাই বলা হয়েছে , কিন্তু ঈমানের পথ যে , সহজ-সরল , সঠিক , সুদৃঢ় ও মধ্যম পথ - যে পথের পথিক কখনো পথভ্রষ্ট হবে না - সেদিকে কোনোরূপ ইঙ্গিত করা হয় নি।

অন্যদিকে সূরাহ্ ফাতেহারصراط الذين انعمت عليهم غير المغضوب عليهم و لا الضالين (তাদের পথ যাদেরকে তুমি নে আমত দিয়েছো - যারা গযবের শিকার নন বা পথভ্রষ্টও নন।) আয়াত ব্যক্ত করে যে , এমন এক সহজ-সরল , সঠিক , সুদৃঢ় ও মধ্যম পথ রয়েছে আল্লাহ্ তা আলার ক্ষমা ও অনুগ্রহপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ যে পথ অবলম্বন করেছেন। এ পথ নবী-রাসূলগণ ( আঃ) এবং সত্যের সাক্ষ্যের মূর্ত প্রতীক ব্যক্তিদের পথ।

এছাড়া এ আয়াত এটাও প্রমাণ করে যে , সহজ-সরল , সঠিক , সুদৃঢ় ও মধ্যম পথের পাশাপাশি বিভিন্ন বক্র পথেরও অস্তিত্ব রয়েছে ; আল্লাহ্ তা আলার গযব ও অসন্তুষ্টিতে নিপতিত লোকেরা সে ধরনের পথসমূহ অবলম্বন করেছে। সে ধরনের পথ হচ্ছে তাদের পথ যারা জিদ , গোয়ার্তুমি ও গোঁড়ামি বশতঃ সত্যের বিরোধিতা করে এবং সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে , যারা অজ্ঞতাবশতঃ হেদায়াতের পথ থেকে বহু দূরে সরে গেছে এবং পথভ্রষ্টতার সীমাহীন প্রান্তরে হাতড়ে বেড়াচ্ছে। এ লোকেরা সত্য ও হেদায়াতের পথের সন্ধান করে নি , বরং তাদের পূর্বপুরুষদের পথকেই বেছে নিয়েছে এবং তাদের অন্ধ অনুসরণ করছে। তারা এমন পথ অবলম্বন করেছে যে পথ আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে তাদের জন্য নির্ধারিত হয় নি।

যে কেউ এ আয়াতটি পড়বে ও আয়াতটি নিয়ে চিন্তা করবে , সে-ই এ বিষয়টি বুঝতে পারবে এবং তার চিন্তায় এ সমুন্নত বিষয়টি ও চারিত্রিক রহস্যটি ধরা পড়বে যে , মানুষের উচিত আল্লাহর অলীগণের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া এবং তাঁদের চরিত্র , আচার-আচরণ ও আক্বীদাহর অনুসরণ করা , অন্যদিকে যারা খোদাদ্রোহিতার পথ অবলম্বন করেছে এবং স্বীয় কৃতকর্মের কারণে খোদায়ী আযাবের উপযুক্ত হয়েছে তাদের পথ থেকে দূরে থাকা।

সূরাহ্ ফাতেহার উক্ত আয়াতে নিহিত এ চারিত্রিক ও মানবিক সঞ্জীবনী শক্তির অধিকারী সত্যটি থেকে কি দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখা সম্ভব , নাকি একে গুরুত্বহীন মনে করা ও উপেক্ষা করা সম্ভব ? অথচ আলোচ্য কল্পনাবিলাসী লেখক ধারণা করেছেন যে , বিষয়টি নেহায়েতই গুরুত্বহীন , অতএব , উপেক্ষাযোগ্য।