মু‘
জিযাহর দাবী প্রত্যাখ্যানের দলীল -
1
কিছু অজ্ঞ লোক ও কিছু গণপ্রতারক অজ্ঞতাবশতঃ অথবা অসদুদ্দেশ্যবশতঃ লিখেছে যে , কোরআন মজীদের কতক আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে , হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) কোরআন মজীদ ছাড়া অন্য কোনো মু‘
জিযাহর অধিকারী ছিলেন না। উক্ত আয়াত সমূহ অনুযায়ী , তাঁর একমাত্র মু‘
জিযাহ্ এবং তাঁর নবুওয়াতের সপক্ষে একমাত্র প্রমাণ হচ্ছে কোরআন মজীদ ; অন্য কোনো মু‘
জিযাহ্ বা প্রমাণই তাঁর নবুওয়াতের সপক্ষে ছিলো না।
এ লোকেরা তাদের বক্তব্যের সপক্ষে দলীল স্বরূপ যে সব আয়াত উদ্ধৃত করে থাকে আমরা এখানে তা উদ্ধৃত করবো এবং তাদের উপস্থাপিত যুক্তিও তুলে ধরবো। এরপর আমরা তাদের দাবীর অসারতা ও ভিত্তিহীনতা প্রমাণ করবো।
প্রথম আয়াত :
)
و ما منعنا ان نرسل بالآيات الا ان کذب بها الاولون.و اتينا ثمود الناقة مبصرة فظلموا بها. و ما نرسل بالآيات الا تخويفاً(
“
মু‘
জিযাহ্ পাঠানো থেকে আমাকে এ বিষয়টি ব্যতীত অন্য কোনো কিছুই বিরত রাখে নি যে , প্রথম যুগের লোকেরা (অতীতের লোকেরা) মু‘
জিযাহকে প্রত্যাখ্যান করেছিলো। (উদাহরণস্বরূপ ,) আমি ছামুদ জাতির নিকট পরীক্ষাস্বরূপ একটি উষ্ট্রী পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তারা তার ওপর যুলুম করেছিলো। আর আমি তো চরমপত্র স্বরূপ (বা চূড়ান্ত সতর্ককরণের লক্ষ্যে ভীতিপ্রদর্শনস্বরূপ) ব্যতীত মু‘
জিযাহ্ পাঠাই না।”
(সূরাহ্ বানী ইসরাঈল্ : 59)
এরা বলে : এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে , হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) কোরআন মজীদ ছাড়া অন্য কোনো মু‘
জিযাহর অধিকারী ছিলেন না। আর আল্লাহ্ তা‘
আলা যে তাঁকে অন্য কোনো মু‘
জিযাহ্ প্রদান করেন নি তার কারণ এই যে , অতীতের জাতিসমূহ তাদের নিকট প্রেরিত মু‘
জিযাহ্ সমূহকে প্রত্যাখ্যান করেছিলো এবং মু‘
জিযাহ্ দেখে সত্যের নিকট নতি স্বীকারে প্রস্তুত হয় নি।
জবাব : এ আয়াত হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) কর্তৃক যে কোনো ধরনের মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শন থেকে বিরত থাকা প্রমাণ করে না। কারণ , এ আয়াতে বলা হয় নি যে , তিনি কোনো ধরনের মু‘
জিযাহ্ই দেখাবেন না। বরং এ আয়াতের তাৎপর্য হচ্ছে এই যে , মোশরেকরা মু‘
জিযাহ্ দেখানোর যে দাবী জানায় হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) তাতে ইতিবাচকভাবে সাড়া দেন নি এবং তারা যে ধরনের মু‘
জিযাহ্ দেখানোর দাবী জানিয়েছিলো তা প্রদর্শনে তিনি রাযী হন নি ও তা প্রদর্শন করেন নি।
অন্য কথায় , এ আয়াতে কেবল সেই ধরনের মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে যা মোশরেকরা নিজ নিজ খেয়ালখুশী মতো দাবী করেছিলো এবং যার পিছনে তাদের প্রবৃত্তির প্রতারণা বৈ কোনোরূপ আন্তরিকতা ছিলো না। আসলে তাদের উদ্দেশ্য ছিলো হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)কে অক্ষম প্রতিপন্ন করে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা ; তাদের দাবীকৃত মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শন করা হলেই তারা তা গ্রহণ করবে এ ধরনের মানসিক প্রস্তুতি তাদের ছিলো না। অত্র আয়াতে কেবল এ ধরনের মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনেই অস্বীকৃতি জানানো হয় , সমস্ত বা যে কোনো ধরনের মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনে অস্বীকৃতি জানানো হয় নি।
স্বয়ং উক্ত আয়াতেই আমাদের এ দাবীর সত্যতা নিহিত রয়েছে :
(1)آيات
শব্দটি হচ্ছেآية
শব্দের বহুবচন।آية
মানে চিহ্ন বা নিদর্শন। আলোচ্য আয়াতেآيات
শব্দটির পূর্বেال
যুক্ত হয়েছে। এর ফলে এর তিনটি অর্থ হতে পারে :
(ক) প্রথমতঃ এ আয়াতে ব্যবহৃতال
হতে পারেالف و لام جنسی
(জাতিবাচকال
) । সে ক্ষেত্রে এ আয়াতের অর্থ হবে এই যে , আল্লাহ্ তা‘
আলা হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর নবুওয়াত-দাবীর সত্যতা প্রমাণের জন্য কোনো নিদর্শন (মু‘
জিযাহ্)ই তাঁকে প্রদান করেন নি। সে ক্ষেত্রে এবং পরবর্তী (খ) ক্ষেত্রে , কোরআন মজীদকেও আর মু‘
জিযাহ্ রূপে গণ্য করা চলে না।
কিন্তু এ সম্ভাবনাকে স্বীকার করে নিলে বলতে হবে যে , তাহলে নবী পাঠানোই অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়। কারণ , যে নবী তাঁর নবুওয়াত-দাবীর সত্যতা প্রমাণের জন্য আদৌ কোনো নিদর্শন বা প্রমাণ নিয়ে আসতে সক্ষম নন , বিচারবুদ্ধির দৃষ্টিতে তাঁর নবুওয়াত-দাবী সত্যতা প্রতিপাদনের (تصديق
) উপযুক্ত নয়।
(খ) অথবা এখানেال
হচ্ছেالف و لام جمعی
(বহুবচন বাচকال
) । সে ক্ষেত্রে এ আয়াতের অর্থ হবে , হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)কে তাঁর নবুওয়াত-দাবীর সত্যতা প্রতিপাদনকারী সমস্ত রকমের নিদর্শন (মু‘
জিযাহ্) প্রদানেই অস্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু এ সম্ভাবনাটিও প্রথম সম্ভাবনাটির অনুরূপ এবং একই কারণে তা গ্রহণযোগ্য নয়।
(গ) এমতাবস্থায় আমাদের জন্য তৃতীয় সম্ভাবনাটি গ্রহণ করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। তা হচ্ছে , এ আয়াতেآيات
শব্দটির পূর্বে যেال
ব্যবহৃত হয়েছে তা হচ্ছেالف و لام عهدی
(ইঙ্গিতবাচকال
) ।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে , আরবী ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ীالف و لام عهدی
-এর কাজ কাজ হচ্ছে নির্দিষ্টকরণ বা শ্রোতা পূর্ব থেকে অবগত এমন কোনো কিছুর প্রতি ইঙ্গিতকরণ। যেমন : কেউ তার বন্ধুকে বলল :اشتريت عبداً
-“
আমি একটি দাস ক্রয় করেছি।”
দু’
দিন পরে সেই বন্ধুর সাথে আবার দেখা হলো , তখন সে বললো :بعت العبداً
-“
দাসটিকে বিক্রি করে দিয়েছি।”
দ্বিতীয়োক্ত ক্ষেত্রেعبد
শব্দের পূর্বেال
যোগ করায় বন্ধু বুঝতে পারলো যে , দু’
দিন আগে যে দাসটি ক্রয়ের সংবাদ দেয়া হয়েছিলো তাকেই বিক্রি করা হয়েছে , অন্য কোনো দাসকে নয়। আর শ্রোতার যখন জানা আছে তখন বক্তার জন্য উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই যে ,“
দু’
দিন আগে যে দাসটি ক্রয়ের কথা তুমি জানো তাকে বিক্রি করে দিয়েছি।”
অতএব , এ আয়াতের অর্থ হচ্ছে , কোরআন মজীদ সেই সব বিশেষ নিদর্শন (মু‘
জিযাহ্) প্রদর্শনে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মোশরেকরা অন্যায় জিদ ও বিকৃত মানসিকতা বশতঃ যা প্রদর্শনের জন্য দাবী জানিয়েছিলো।
(2) মোশরেকরা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাবে শুধু এ কারণেই যদি হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) অন্য সমস্ত মু‘
জিযাহ্ আনয়নে বিরত থাকবেন , তাহলে তাঁর আনীত সবচেয়ে বড় মু‘
জিযাহ্ কোরআন মজীদও নাযিল্ হতো না। কারণ , উল্লিখিত আয়াতেآيات
শব্দটির পূর্বে ব্যবহৃতال
যদি সাধারণ (জাতিবাচক) বা সামগ্রিক (বহুবচন বাচক) অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে তাহলে তাতে ব্যতিক্রমের কোনো অবকাশ থাকে না। অতএব , অত্র আয়াতে সুনির্দিষ্ট কতক মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে , সমস্ত মু‘
জিযাহ্ নয়।
(3) আলোচ্য আয়াতে মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনে অস্বীকৃতির পিছনে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে যে , অতীতের জাতিসমূহ তাদের নবীগণ (‘
আঃ) কর্তৃক আনীত মু‘
জিযাহর সামনে নতি স্বীকারে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলো। আর এ-ও কেবল দাবীকৃত মু‘
জিযাহ্ সম্পর্কে - যা প্রদর্শন করা হয়েছে , কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যথায় উত্থাপিত যুক্তির সত্যতা থাকে না। অর্থাৎ মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনের পরেই তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ , আগুনের সংস্পর্শে না এনে কাষ্ঠ অগ্নিদগ্ধ না হওয়ার পিছনে‘
কাষ্ঠ ভিজা ছিলো বলে পুড়ে নি’
- এ যুক্তি প্রদর্শন করা চলে না।
বস্তুতঃ মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনের পিছনে দু’
টি কারণ থাকতে পারে : হয় খোদায়ী পরম জ্ঞানের ফয়ছ্বালা , নয়তো মানুষের পক্ষ থেকে মু‘
জিযাহ্ দাবী। এছাড়া তৃতীয় কোনো কারণ থাকতে পারে না।
খোদায়ী পরম জ্ঞানের দাবী যদি এই হয় যে , মানুষের হেদায়াতের জন্য আল্লাহ্ তা‘
আলা তাঁর নবীর মাধ্যমে কোনো মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শন করবেন , সে ক্ষেত্রে অতীতের জাতিসমূহ কর্তৃক মু‘
জিযাহ্ প্রত্যাখ্যানের যুক্তিতে তা প্রদর্শন থেকে আল্লাহ্ তা‘
আলা বিরত থাকতে পারেন না। কারণ , প্রথমতঃ আল্লাহ্ তা‘
আলা মানুষের প্রত্যাখ্যানের কারণে তাঁর পরম জ্ঞানের বিপরীত আচরণ করবেন এটা সুস্থ বিচারবুদ্ধি কোনোভাবেই গ্রহণ করতে পারে না। দ্বিতীয়তঃ মানুষের প্রত্যাখ্যান যদি নবীকে মু‘
জিযাহ্ প্রদানের পথে বাধাস্বরূপ হতো তাহলে তা নবী-রাসূল পাঠানোর পথেও বাধাস্বরূপ হতো।
অতএব , মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনের পথে মানুষের প্রত্যাখ্যান কেবল দ্বিতীয়োক্ত ক্ষেত্রেই অর্থাৎ মানুষের দাবীকৃত মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনের ক্ষেত্রেই বাধা হতে পারে। অর্থাৎ মু‘
জিযাহ্ দর্শন ও হুজ্জাত্ পূর্ণ হওয়ার পরেও কেবল খেয়ালখুশীবশতঃ ও সত্যকে নিয়ে ছেলেখেলা করার উদ্দেশ্যে পুনরায় এবং তাদের পসন্দ অনুযায়ী মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনের জন্য লোকেরা দাবী জানালে আল্লাহ্ তা‘
আলা এ জাতীয় দাবীকৃত মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনে বিরত থাকতে পারেন।
এ আলোচনা থেকে আমরা এ উপসংহারে উপনীত হতে বাধ্য যে , নবী-রাসূলগণ (‘
আঃ) তাঁদের নবুওয়াত প্রমাণের জন্যে যে সব প্রাথমিক পর্যায়ের মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শন করেন আলোচ্য আয়াতে সে ধরনের মু‘
জিযাহ্ সম্পর্কে কথা বলা হয় নি। বরং প্রাথমিক পর্যায়ের মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শন ও হুজ্জাত্ পরিপূর্ণ হবার পরেও , প্রদর্শিত মু‘
জিযাহ্ প্রত্যাখ্যান পূর্বক মোশরেকরা তাদের খেয়ালখুশী মোতাবেক যে সব মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনের দাবী জানায় , অত্র আয়াতে কেবল সেই সব মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনেই অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে।
একটি আপত্তি ও তার জবাব
এখানে একটি প্রশ্ন ওঠে , তা হচ্ছে : অতীতের বিভিন্ন জাতি কর্তৃক , তাদের দাবীকৃত মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শিত হবার পরেও তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি কী করে হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর সময়কার আরব জাতির সামনে তাদের দাবীকৃত মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনের পথে বাধা হতে পারে ?
এর জবাব হচ্ছে : দাবীকৃত মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনের পর তা প্রত্যাখ্যান করা হলে আযাব নাযিল্ হওয়া অপরিহার্য। এটা আল্লাহ্ তা‘
আলার এক স্থায়ী নীতি। অতএব , আল্লাহ্ তা‘
আলা যদি তাদের দাবীকৃত মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শন করতেন এবং তারা তা অস্বীকার করতো তাহলে অবশ্যই তাদের ওপর আযাব নাযিল্ হতো। কিন্তু অন্যদিকে আল্লাহ্ তা‘
আলা হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)কে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন যে , তাঁর বর্তমানে আল্লাহ্ ঐ জাতির ওপর আযাব নাযিল্ করবেন না। আল্লাহ্ তা‘
আলা এরশাদ করেন :
)
و ما کان الله ليعذبهم و انت فيهم(
.
“
(হে রাসূল!) আপনি তাদের মধ্যে থাকা অবস্থায় আল্লাহ্ তাদেরকে শাস্তি (আযাব) প্রদান করবেন না।”
(সূরাহ্ আল্-আনফাাল্ : 33)
এ কারণেই আল্লাহ্ তা‘
আলা তাদের দাবী অনুযায়ী মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনে অস্বীকার করেন। কারণ , আল্লাহ্ জানেন যে , মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শন করা হলেও তারা তা মেনে নেবে না এবং এর ফলে আল্লাহর নিয়ম অনুযায়ী তাদের ওপর আযাব নাযিল্ করা অপরিহার্য হয়ে পড়বে।
বস্তুতঃ লোকদের দাবী ব্যতিরেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রদর্শিত প্রাথমিক পর্যায়ের মু‘
জিযাহ্ সমূহ - যা নবুওয়াত-দাবীর সত্যতা প্রতিপাদন ও মানুষের হেদায়াতের জন্য প্রদর্শন করা হয় , তাকে মু‘
জিযাহ্ হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি এবং স্বয়ং নবীকে নবীরূপে মেনে নিতে অস্বীকৃতি - এতদুভয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ফলে এ জাতীয় মু‘
জিযাহ্ প্রত্যাখ্যানের পরিণতিও নবীকে প্রত্যাখ্যানের পরিণতির অনুরূপ। আর তা হচ্ছে পরকালীন শাস্তি , অন্য কিছু নয়।
কিন্তু মু‘
জিযাহর দাবীদাররা যদি তাদের নিজেদের দাবীকৃত মু‘
জিযাহ্ই প্রত্যাখ্যান করে তাহলে তা সংশ্লিষ্ট লোকদের জিদ , গোয়ার্তুমি ও অন্ধত্বই প্রমাণ করে। কারণ , কোনো ব্যক্তি যদি সত্যান্বেষী হয় তাহলে সে প্রাথমিক পর্যায়ের মু‘
জিযাহ্ দর্শনেই নবীর নবুওয়াতের সত্যতা স্বীকার করবে। কারণ , নবী প্রদর্শিত প্রাথমিক পর্যায়ের মু‘
জিযাহ্ই তাঁর নবুওয়াত-দাবীর সত্যতা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট।
এছাড়া , লোকদের পক্ষ থেকে মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনের দাবী জানানোর মানেই এই যে , সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হচ্ছে যে , দাবীকৃত মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শন করা হলে তারা নবীর নবুওয়াতকে মেনে নেবে। অতঃপর তারা যদি দাবীকৃত মু‘
জিযাহ প্রদর্শিত হবার পরেও তা প্রত্যাখ্যান করে এবং সত্যের সামনে নতি স্বীকারে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে কার্যতঃ তারা নবীকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করলো , বরং নিজেদের দাবীকৃত মু‘
জিযাহকেই বিদ্রুপ করলো ।
আর যেহেতু দাবীকৃত মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শিত হবার পরে প্রত্যাখ্যান করা হলে তার পরিণতিতে আযাব অনিবার্য সেহেতু আল্লাহ্ তা‘
আলা এ আয়াতের শেষে এ জাতীয় মু‘
জিযাহকেآيات تخویفی
(চরমপত্রমূলক বা চূড়ান্ত হুশিয়ারী মূলক মু‘
জিযাহ্) রূপে উল্লেখ করেছেন। অন্যথায় , এরূপ বিপদসঙ্কেতস্বরূপ নয় এমন অন্য যে কোনো মু‘
জিযাহ্ই (যাকে আমরা প্রাথমিক পর্যায়ের মু‘
জিযাহ্ বলে উল্লেখ করেছি) বান্দাহদের জন্য আল্লাহ্ তা‘
আলার রহমত ও হেদায়াত এবং সত্যকে সুস্পষ্ট করে তোলার মাধ্যম বৈ নয়।
এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে যে , আল্লাহ্ তা‘
আলার পক্ষ থেকে হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর কোনো জনগোষ্ঠীর মধ্যে থাকা অবস্থায় সে জনগোষ্ঠীর ওপর আযাব নাযিল না করার ওয়াদা কি কেবল নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর শারীরিক উপস্থিতির মধ্যে সীমাবদ্ধ , নাকি আত্মিক উপস্থিতির ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য।
হযরত নবী করীম (ছ্বাঃ) আল্লাহ্ তা‘
আলার সৃষ্টিকর্মের সূচনাকাল থেকে শুরু করে ক্বিয়ামত্ পর্যন্ত সমগ্র সৃষ্টিলোকের জন্য সর্বজনীন রহমত (সূরাহ্ আল্-আম্বিয়াা’
: 107) , তবে তাঁর উপস্থিতি সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ রহমতের কারণ (সূরাহ্ আল্-আনফাাল্ : 33)। তাঁর এ বিশেষ রহমত হবার কারণে তৎকালীন আরবের কাফেররাও আযাব থেকে রেহাই পেয়েছে। এমতাবস্থায় পরবর্তীকালীন মুসলমানরা তাঁর এ বিশেষ রহমত থেকে বঞ্চিত হবেন এমনটি মনে করা কঠিন।
কিন্তু আমরা বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি যে , যুগে যুগে বিভিন্ন মুসলিম জনপদ আযাবের শিকার হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে ; এর কারণ কী ? এর কারণ সম্ভবতঃ এই যে , হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর আত্মিক উপস্থিতি বলতে যা বুঝায় অর্থাৎ তাঁর সঠিক পরিচয় তথা তাঁর প্রচারিত তাওহীদ ও আখেরাত , তাঁর নবুওয়াত ও কোরআন মজীদ সম্পর্কে যথাযথ ধারণা ও তার ওপর অকাট্য ঈমান এবং পরিপূর্ণভাবে তদনুযায়ী আমল , অন্য কথায় , কোরআন মজীদের যথাযথ অনুসরণ বেশীর ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীতে ও জনপদেই অনুপস্থিত ; এমনকি একেকটি জনপদে এর যথাযথ অনুসরণকারী স্বলপসংখ্যক লোকও পাওয়া যাবে না। তাই আমরা দাবী করতে পারি না যে , তিনি সকল মুসলিম জনপদে ও সকল মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যেই আত্মিকভাবে উপস্থিত আছেন। কোনো জনপদ ও জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্ততঃ কিছু সংখ্যক লোকের দ্বারা যথার্থভাবেই তাঁর আত্মিক উপস্থিতি নিশ্চিত হলে অবশ্যই সে জনপদ ও জনগোষ্ঠী আযাব থেকে বেঁচে থাকবে।
(4) আলোচ্য আয়াতের বাচনভঙ্গিও প্রমাণ করে যে , এতে নির্বিশেষে সমস্ত মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনে অস্বীকৃতি জানানো হয় নি , বরং এখানে দাবীকৃত মু‘
জিযাহ্ই লক্ষ্য - যা বিপদসঙ্কেতস্বরূপ প্রদর্শন করা হয় এবং যা দেখানোর পর প্রত্যাখ্যাত হলে তার পরিণাম হচ্ছে আযাব ও ধ্বংস। কারণ , এ আয়াতের পূর্ববর্তী আয়াতটি হচ্ছে আযাব ও ধ্বংস সংক্রান্ত।
আলোচ্য আয়াতের পূর্ববর্তী আয়াতটিতে এরশাদ হয়েছে :
)
و ان من قرية الا نحن مهلکوها قبل يوم القيامة او معذبوها عذاباً شديداً(
.
“
এমন কোনো জনপদ নেই ক্বিয়ামতের পূর্বে আমি যাকে ধ্বংস না করবো বা যার (যার অধিবাসীদের) ওপর আযাব নাযিল্ না করবো।”
(সূরাহ্ বানী ইসরাাঈল্ : 58)
অন্যদিকে আমাদের আলোচ্য আয়াতে ছামূদ্ জাতিকে প্রদত্ত মু‘
জিযাহর কথা উল্লেখ করা হয়েছে - যা প্রদর্শনের পরেও তারা নবীর ওপর ঈমান আনে নি এবং এ কারণে তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়।
এছাড়া এই একই আয়াতে এ জাতীয় মু‘
জিযাহকে চরমপত্র বা বিপদসঙ্কেত মূলক মু‘
জিযাহ্ রূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং এ আয়াতটিو ما نرسل بالآيات الا تخويفاً
বলে শেষ করা হয়েছে যার মানে হচ্ছে :“
আর আমি তো চরমপত্রস্বরূপ (বা চূড়ান্ত সতর্ককরণের লক্ষ্যে ভীতিপ্রদর্শনস্বরূপ) ব্যতীত মু‘
জিযাহ্ পাঠাই না ।”
এ সব নিদর্শন থেকে প্রমাণিত হয় যে , আলোচ্য আয়াতে মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনে অস্বীকৃতির লক্ষ্য হচ্ছে সেই দাবীকৃত মু‘
জিযাহ্ যা প্রদর্শিত হবার পর প্রত্যাখ্যানের অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে আযাব নাযিল।
কোরআন মজীদের আরো অনেক আয়াত থেকেও আলোচ্য আয়াতের এ তাৎপর্যেরই সমর্থন মিলে। কারণ , কোরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াতের পর্যালোচনা থেকে এটা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে , মোশরেকরা আযাব নাযিলের দাবী জানিয়েছিলো বা এমন সব মু‘
জিযাহ্ দাবী করেছিলো যা প্রত্যাখ্যানের অপরাধে অতীতের বিভিন্ন জাতির ওপর আযাব নাযিল্ হয়েছিলো।
আযাব সংক্রান্ত আয়াত সমূহ
কোরআন মজীদে কাফেরদের মু‘
জিযাহ্ দাবী প্রসঙ্গে যে সব আয়াত নাযিল্ হয়েছে সেগুলোকে মোটামুটি তিন ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে : (1) আযাব নাযিলের প্রস্তাব সংক্রান্ত আয়াত , (2) মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনের দাবী ও তা প্রত্যাখ্যান সংক্রান্ত আয়াত এবং (3) দাবীকৃত মু‘
জিযাহ্ প্রত্যাখ্যানের পরিণতিতে আযাব নাযিল্ সংক্রান্ত আয়াত। আমরা এখানে এ তিন ধরনের আয়াত তিন ভাগে উল্লেখ করবো :
(1) আযাব নাযিলের প্রস্তাব সংক্রান্ত আয়াত :
)
و اذ قالوا اللهم ان کان هذا هو الحق من عندک فامطر علينا حجارة من السماء او ائتنا بعذاب اليم. و ما کان الله ليعذبهم و انت فيهم و ما کان الله معذبهم و هم يستغفرون(
.
“
আর তারা (মোশরেকরা) যখন বললো :“
হে আল্লাহ্! এটা (কোরআন) যদি তোমার পক্ষ থেকে (নাযিলকৃত) সত্য হয়ে থাকে তাহলে আমাদের ওপর আসমান থেকে প্রস্তরবৃষ্টি বর্ষণ করো অথবা আমাদের ওপর যন্ত্রণাদায়ক আযাব নাযিল্ করো।”
কিন্তু (হে রাসূল!) আপনি তাদের মধ্যে থাকা অবস্থায় আল্লাহ্ তাদেরকে শাস্তি (আযাব) প্রদান করবেন না , তেমনি তারা (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ্ তাদের ওপর আযাব নাযিল্ করবেন না।”
(সূরাহ্ আল্-আনফাাল্ : 32-33)
)
قل أ رأيتم ان اتکم عذاباً به بياتاً او نهاراً ماذا يستعجل منه المجرمون(
.
“
(হে রাসূল!) আপনি তাদেরকে বলুন : তোমরা কি এ অবস্থাটা দেখেছো যে , অপরাধীরা তাঁর কাছ থেকে যার আগমনের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করছে সেই আযাব যদি তাদের গৃহে অবস্থান কালে (রাতের বেলা) অথবা দিনের বেলা এসে যায় (তখন কেমন হবে) ?”
(সূরাহ্ ইউনুস : 50)
)
و لئن اخرنا عنهم العذاب الی امة معدودة ليقولن ما يحبسه(
.
“
আমি যদি তাদের শাস্তিকে কয়েক দিনের জন্য পিছিয়ে দেই তাহলে তারা অবশ্যই বলবে : কিসে তা রোধ করলো ?”
(সূরাহ্ হূদ : 8)
)
و يستعجلونک بالعذاب. و لو لا اجل مسمی لجائهم العذاب. و ليأتينهم بغتة و هم لا يشعرون(.
“
আর (হে রাসূল!) তারা আপনার কাছে তাড়াহুড়া করে আযাব প্রার্থনা করছে , কিন্তু (ক্বিয়ামতের জন্য) যদি একটি নির্ধারিত সময়সীমা না থাকতো তাহলে অবশ্যই তাদের ওপর আযাব এসে যেতো এবং তা এসে যেতো এমন আকস্মিকভাবে যে , তারা তা বুঝতেও পারতো না (বা‘
তারা এ বিষয়টি বুঝতে পারছে না)।”
(সূরাহ্ আল্-‘
আনকাবূত্ : 53)
(2) মু‘
জিযাহ্ দাবী করা সংক্রান্ত আয়াত :
)
و اذا جائتهم آية قالوا لن نؤمن حتی نُؤتی مثل ما اوتی رسل الله. الله اعلم حيث يجعل رسالته. سيصيب الذين اجرموا صغار عند الله و عذاب شديد بما کانوا يمکرون(
.
“
আর যখনই তাদের কাছে মু‘
জিযাহ্ এসে যাবে তখনই তারা বলবে :“
আল্লাহর রাসূলদেরকে যা দেয়া হয়েছে যতোক্ষণ না তা আমাদেরকেও দেয়া হবে ততোক্ষণ আমরা ঈমান আনবো না।”
আল্লাহ্ই অধিকতর অবগত যে , তাঁর রিসালাত কা’
কে দেবেন। এই অপরাধীদের ওপর তাদের প্রতারণা ও অপকৌশলের কারণে খুব শীঘ্রই আল্লাহর পক্ষ থেকে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা ও কঠিন শাস্তি এসে আপতিত হবে।”
(সূরাহ্ আল্-আন্‘
আাম্ : 124)
এখানে অচিরেই [হযরত রাসূলে আকরামের (ছ্বাঃ) তাদের মাঝে না থাকা অবস্থায় অর্থাৎ তাঁর হিজরতের পরে] মক্কার মোশরেকদের ওপর লাঞ্ছনা-গঞ্জনা চেপে বসার ও তাদের কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে - যা বদর যুদ্ধে স্বল্পসংখ্যক মুসলমানের কাছে তিন গুণেরও বেশী জনশক্তি ও প্রচুর অস্ত্রশস্ত্রের অধিকারী হয়েও তাদের পরাজিত হওয়া ও তাদের অনেকের নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত হয়।
)
بل قالوا اضغاث احلام بل افتراه بل هوا شاعر.فاليأتنا بآية کما ارسل الاولون(
.
“
বরং তারা বলে : এ তো (রাসুলের নবুওয়াত-দাবী ও উপস্থাপিত কোরআন) এক অলীক স্বপ্ন ; না , বরং সে নিজেই তা রচনা করেছে ; না , বরং সে একজন কবি। তা না হলে সে আমাদের জন্য মু‘
জিযাহ্ নিয়ে আসুক ঠিক যেভাবে পূর্ববর্তীদের জন্য (মু‘
জিযাহ্) পাঠানো হয়েছিলো।”
(সূরাহ্ আল্-আম্বিয়াা’
: 5)
)
فلما جائهم الحق من عندنا قالوا لو لا اوتی مثل ما اوتی موسی. او لم يکفروا بما اوتی موسی من قبل. قالوا سحران تظاهرا و قالوا اِنا بکل کافرون(
.
“
অতঃপর আমার নিকট থেকে যখন তাদের কাছে সত্য এসে সমুপস্থিত হলো তখন তারা বললো :“
কেন আমাদেরকে তা দেয়া হলো না যা মূসাকে দেয়া হয়েছিলো ?”
ইতিপূর্বে মূসাকে যা দেয়া হয়েছিলো তাকে কি তারা (এদের মতো কাফেররা) প্রত্যাখ্যান করে নি ? আর তারা বলেছিলো :“
এতদুভয়ই (লাঠি ও উজ্জ্বল হাত) হচ্ছে সুস্পষ্ট জাদু।”
তারা আরো বলেছিলো :“
আমরা এর পুরো ব্যাপারটাকেই প্রত্যাখান করছি।”
(সূরাহ্ আল্-ক্বাছ্বাছ্ব্ : 48)
(3) দাবীকৃত মু‘
জিযাহ্ প্রত্যাখ্যানের পরিণতি সংক্রান্ত আয়াত :
)
قد مکر الذين من قبلهم. فاتی الله بنيانهم من القواعد فخر عليهم السقف من فوقهم و اتاهم العذاب من حيث لا يشعرون(
.
“
তাদের পূর্ববর্তী লোকেরা অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলো। অতঃপর আল্লাহ্ তাদের বাড়ীঘরের ভিত্তি ধ্বসিয়ে দিলেন , ফলে তাদের ওপর ছাদ নিপতিত হলো , আর এমন জায়গা থেকে তাদের ওপর আযাব এলো যে সম্পর্কে তারা ধারণা করে নি।”
(সূরাহ্ আন্-নাহল্ : 26)
)
کذب الذين من قبلهم فاتاهم العذاب من حيث لا يشعرون(.
“
তাদের পূর্ববর্তীরা (আল্লাহর কালামকে) প্রত্যাখ্যান করেছিলো। অতঃপর এমন জায়গা থেকে তাদের ওপর আযাব এলো যে সম্পর্কে তারা ধারণা করে নি।”
(সূরাহ্ আয্-যুমার্ : 25)
মোট কথা , আমাদের আলোচ্য মু‘
জিযাহ্ সংক্রান্ত আয়াতটিতে সেই মু‘
জিযাহর কথা বলা হয়েছে হুজ্জাত্ পরিপূর্ণ হয়ে যাবার পরেও জিদ ও গোঁয়ার্তুমি বশতঃ কিছু লোক যা দাবী করেছিলো এবং যার পিছনে সত্যান্বেষিতা ও বাস্তবদর্শিতার অস্তিত্ব ছিলো না। আলোচ্য আয়াতে এ জাতীয় দাবীকৃত মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শন করা হবে না বলে জানানো হয়েছে। সব ধরনের মু‘
জিযাহ্ , এমনকি প্রাথমিক পর্যায়ের মু‘
জিযাহ্ও - যা মানুষের হেদায়াত ও সত্যকে সহজে চিহ্নিতকরণযোগ্য করার লক্ষ্যে প্রদর্শন করা হয় , তা-ও প্রদর্শন করা হবে না - এমন কথা বলা হয় নি।
উক্ত আয়াত থেকে আমরা যে অর্থ গ্রহণ করেছি তার সপক্ষে উল্লিখিত দলীল-প্রমাণ ছাড়াও কোরআন মজীদে আরো অনেক দলীল-প্রমাণ রয়েছে।
এছাড়া উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মুসলমানদের সকল ধারার সূত্রে বর্ণিত বিভিন্ন হাদীছ রয়েছে যা থেকে আমাদের গৃহীত অর্থের সমর্থন মেলে। উদাহরণস্বরূপ আমরা এখানে এ ধরনের দু’
টি বর্ণনা উদ্ধৃত করছি :
(1) হযরত ইমাম বাক্বের্ (‘
আঃ) এরশাদ করেন : কিছু লোক হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর নিকট মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনের দাবী জানায়। তখন জিবরাঈল (‘
আঃ) অবতীর্ণ হলেন এবং বললেন , আল্লাহ্ তা‘
আলা এরশাদ করেছেন : দাবীকৃত মু‘
জিযাহ্ প্রদর্শনের পথে পূর্ববর্তীদের দ্বারা এ জাতীয় মু‘
জিযাহ্ প্রত্যাখ্যাত হওয়ার বিষয়টি ছাড়া আর কোনো বাধাই নেই। অতএব , ক্বুরাইশদের জন্য যদি তাদের দাবীকৃত মু‘
জিযাহ্ প্রেরণ করি এবং তারা তার প্রতি ঈমান আনয়ন না করে তাহলে পূর্ববর্তীদেরই ন্যায় তাদের ওপরও গযব নাজিল হবে। এ কারণেই এ জাতীয় মু‘
জিযাহ্ প্রেরণকে আমি পিছিয়ে দিয়ে থাকি।”
(تفسير برهان-١/٦٠٧
.)
(2) ইবনে আব্বাস (‘
আঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে , মক্কাহর অধিবাসীরা হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)কে তাদের জন্য ছ্বাফা পাহাড়কে স্বর্ণে পরিণত করতে এবং মক্কাহর আশেপাশের পাহাড়গুলোকে অপসারণ করতে বলে - যাতে তা সমভূমিতে পরিণত হয় এবং তারা সেখানে কৃষিকাজ করতে পারে।
ঠিক এ সময় হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর ওপর এ মর্মে ওয়াহী নাযিল্ হয় যে ,‘
আপনি যদি চান তো আমি তাদের দাবীকে উপেক্ষা করবো (অর্থাৎ তাদের দাবী পূরণ করবো না) ; হয়তোবা তাদের মধ্যকার কিছু লোক ঈমান আনয়ন করবে। আর আপনি যদি চান তাহলে তাদের দাবী পূরণ করবো । কিন্তু এ অবস্থায় তারা যদি তাকে (প্রদর্শিত মু‘
জিযাহকে) প্রত্যাখ্যান করে তাহলে পূর্ববর্তীদের ন্যায় তাদেরকে ধ্বংস করে দেবো।’
তখন হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) দো‘
আ করলেন :“
হে আল্লাহ্! তাদের প্রতি দয়া করুন এবং তাদেরকে অবকাশ প্রদান করুন।”
অতঃপর এ আয়াত নাযিল্ হলো :“
মু‘
জিযাহ্ পাঠানো থেকে আমাকে এ বিষয়টি ব্যতীত অন্য কোনো কিছই বিরত রাখে নি যে , প্রথম যুগের লোকেরা (অতীতের লোকেরা) মু‘
জিযাহকে প্রত্যাখ্যান করেছিলো। (উদাহরণস্বরূপ ,) আমি ছামূদ জাতির নিকট পরীক্ষাস্বরূপ একটি উষ্ট্রী পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তারা তার ওপর যুলুম করেছিলো। আর আমি তো চরমপত্রস্বরূপ (বা চূড়ান্ত সতর্ককরণের লক্ষ্যে ভীতিপ্রদর্শন স্বরূপ) ব্যতীত মু‘
জিযাহ্ পাঠাই না।”
(تفسير طبری-١٥/٧٤
.)
এ প্রসঙ্গে আরো বহু হাদীছ রয়েছে ; তাফসীর ও হাদীছের গ্রন্থাবলীতে তা দেখা যেতে পারে।