কোরআনের মু‘জিযাহ্

কোরআনের মু‘জিযাহ্ 0%

কোরআনের মু‘জিযাহ্ লেখক:
: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ: কোরআন বিষয়ক জ্ঞান

কোরআনের মু‘জিযাহ্

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 46615
ডাউনলোড: 4351

পাঠকের মতামত:

কোরআনের মু‘জিযাহ্
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 60 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 46615 / ডাউনলোড: 4351
সাইজ সাইজ সাইজ
কোরআনের মু‘জিযাহ্

কোরআনের মু‘জিযাহ্

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

আরবী ভাষার লিখন পদ্ধতির বিবর্তন

মানবজাতির সকল ভাষারই লিখিত রূপ ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে গেছে এবং জীবিত ভাষাগুলোর লিখিত রূপে এখনো পূর্ণতার পথে অভিযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। অনুরূপভাবে কোরআন মজীদ যখন নাযিল্ হয় তখনো আরবী ভাষার লিখনপদ্ধতি পূর্ণতা লাভ করে নি। তখনো তা পূর্ণতা অভিমুখী বিবর্তনের পথে ছিলো। ফলে আরবী লিপিতে এ ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে যে , কিছু কিছু ক্ষেত্রে লিখনে শ্রবণের পূর্ণ প্রতিফলন ঘটে না। তবে আরবদের ভাষার এক অনন্য বৈশিষ্ট্য এই যে , আরব উপদ্বীপের অশিক্ষিত যাযাবর বেদুঈনদের ভাষাই ছিলো প্রকৃত আরবী ভাষা ও এ ভাষার মানদণ্ড ( Standard language)।অন্যদিকে বিজাতীয়দের সাথে মেলামেশার কারণে শহুরে লোকদের ভাষায় অনেক দুর্বলতা প্রবেশ করেছিলো। বস্তুতঃ যাযাবর আরবরা বই - পুস্তক পড়ে ন , বরং পুরুষানুক্রমে শ্রুতির মাধ্যমে শুদ্ধ আরবী ভাষা শিক্ষা করতো ও সে ভাষায় কথোপকথন করতো। পরে আরবদের এ ভাষাকে লিখিত রূপ দানের প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং তার লিখিত রূপ ধাপে ধাপে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যায়।

আরবী ভাষার লিখিত রূপে প্রথম দিকে অপূর্ণতা থাকা সত্ত্বেও লেখাপড়া-জানা আরবরা কোনো লিখিত জিনিস পড়তে গিয়ে তা থেকে ভুল তাৎপর্য গ্রহণ করতো না। কারণ , অভ্যাসগত কারণে তারা তা সঠিক উচ্চারণেই পড়তো। ব্যাকরণিক নিয়মগুলোর ব্যাপারে তাদের জ্ঞান ছিলো অভ্যাসগত। প্রকৃত ব্যাপার হলো এই যে , যাযাবর বেদুঈনদের ভাষা ও কোরআন মজীদের ভাষা বিশ্লেষণ করেই পরবর্তীকালে আরবী ব্যাকরণের নিয়মাবলী উদ্ঘাটন করা হয়।

এখানে আরবী লিপির পূর্ণতাভিমুখী অভিযাত্রার কয়েকটি ধাপ এখানে তুলে ধরা যেতে পারে।

প্রথমে আরবী ভাষার লিপিতে নোকতাহ্ ব্যবহার করা হতো না। ফলে , উদাহরণস্বরূপ , সীন্ (س ) ও শীন্ (ش ) উভয় হরফই (س ) রূপে লেখা হতো। কিন্তু আরবরা অভ্যাসগত কারণেই বুঝতে পারতো কোথায় সীন্ (س ) উচ্চারিত হবে এবং কোথায় শীন্ (ش ) উচ্চারিত হবে। পরবর্তীকালে অনারবদের উচ্চারণের সুবিধার্থে এ ধরনের হরফগুলোতে নোকতাহ্ যোগ করা হয়। ফলে উচ্চারণ অনুযায়ী কতক শব্দে সীন্ (س )কে লেখা হতে থাকলো শীন্ (ش )। কিন্তু মূলতঃ আরবী ভাষায় এ দু টি অভিন্ন হরফ। তাই প্রথমটির নাম দেয়া হলোساء معربة (আরবীকৃত সীন্) এবং দ্বিতীয়টির নাম দেয়া হলোساء معجمة (অনারবীকৃত সীন্)।

[অন্যান্য ভাষায়ও একই বর্ণের শব্দমধ্যে অবস্থানভেদে বা অন্য কারণে একাধিক উচ্চারণ , এমনকি দুই বর্ণের মধ্যে উচ্চারণ বদলের দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন : বাংলা ভাষায় সকাল লেখা হয় , কিন্তু উচ্চারণ করা হয় শকাল , তেমনি বসবাস লিখে বশোবাশ্ উচ্চারণ করা হয়। অন্যদিকে শ্রাবণ লিখে উচ্চারণ করা হয় স্রাবণ বিশ্রী লিখে পড়া হয় বিস্রি । ]

এছাড়া আরবী ভাষায় আলিফ হামযাহ্ দু টি স্বতন্ত্র বর্ণ এবং দু টিতে আসমান-যমীন পার্থক্য। হামযাহ্ বর্ণটি প্রথাগতভাবে আরবী ভাষায় হামযাহ্ (ء ) ও আলিফ্ (ا ) এই দুইভাবে লেখা হয় এবং আলিফরূপে ব্যবহৃত হামযাহকে সাধারণতঃ আলিফ্ বলা হয়। কিন্তু এ রকম লেখা হলেও কার্যতঃ আলিফ্ ও হামযাহ্ স্বতন্ত্র বর্ণ। (অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে হামযাহ্ বুঝানোর জন্য আলিফ্-এর ওপরে বা নীচে ছোট করে হামযাহ্ লেখা হয় (أ/إ ) ।) এতদুভয়ের মধ্যে পার্থক্য বুঝার জন্যে মনে রাখতে হবে যে , আলিফ হচ্ছে স্বরচিহ্ন। আর যেহেতু তা চিহ্নমাত্র , বর্ণ নয় , সেহেতু শব্দমধ্যে ব্যতীত তার কোনো নিজস্ব ধ্বনি নেই এবং তা কোনো হারাকাত্ (যবর , যের ও পেশ) গ্রহণ করে না , বা তা সাকিন্ও হয় না , তাশদীদযুক্তও হয় না এবং শব্দের শুরুতে বসে না ; আলিফ্ কেবল যবরযুক্ত বর্ণের পরে বসে যবরের তথা আ-কারের উচ্চারণকে দীর্ঘ করে। অতএব ,اَ/ اِ/ اُ আলিফ নয় , হাম্যাহ্ (ء ) ।

এছাড়া আলিফ দুইভাবে লেখা হয় : আলিফ্ (ا ) আকারে ও ইয়া (ی ) আকারে। শেষোক্ত আলিফকে আলিফে মাকসূরাহ্ (الف مکسورة - ভাঙ্গা আলিফ্) বলা হয়। উদাহরণ স্বরূপموسا (মূসা)কেموسی রূপে লেখা হয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে , যারা কম্পিউটারের সাহায্যে কোরআন মজীদের হরফ সমূহ গণনা করে 19 দিয়ে ভাগ করতে চান তাঁরা আলিফ-রূপী হামযাহকে আলিফ থেকে এবং ইয়া-রূপী আলিফকে ইয়া থেকে কীভাবে আলাদা করবেন ?

এছাড়া আরবী ভাষায় কোনো শব্দের মাঝে বা শেষে কোনো বর্ণ পর পর দুই বার থাকলে এবং প্রথমটি সাকিন্ হলে তা এক বার লেখা হয় এবং বর্ণটির দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়। লেখায় একটি থাকলেও প্রকৃত পক্ষে সেখানে বর্ণ হচ্ছে দু টি। যদিও পরবর্তীকালে আরবী লিপিতে ই রাব্-চিহ্ন যোগ করার সময় একটি দ্বিত্বচিহ্ন (তাশদীদ)ও যোগ করা হয় , কিন্তু মূল আরবীতে হরফ একটিই। প্রশ্ন হচ্ছে , কম্পিউটারের সাহায্যে গণনার ক্ষেত্রে সেটিকে দু টি গণনা করা হবে , নাকি একটি ধরা হবে ? এটা একটা বিচার্য বিষয় বটে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে , বিশেষভাবে কোরআন মজীদের লিপিতে কতক আলিফ বাদ দেয়া হয়েছে। শ্রুতির ভিত্তিতে পুরুষানুক্রমে চলে আসা পঠনে তা উচ্চারিত হচ্ছে , কোরআন ভিন্ন অন্যান্য লেখায়ও তা লেখা হচ্ছে , কিন্তু কোরআন মজীদের ঐতিহ্যিক লিপিতে তা নেই , যদিও তা না থাকার কারণে কোরআন পাঠের ক্ষেত্রে উচ্চারণে ভুলের কোনো কারণ নেই। কারণ , কোরআন পাঠ শিক্ষকের কাছ থেকে শেখা হয় অথবা তার প্রস্তুতিপর্বের অধ্যয়ন থেকে জেনে নেয়া হয় যে , ঐ সব ক্ষেত্রে আলেফ উহ্য রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপرحمان শব্দটি কোরআন মজীদের লিপিতেرحمن রূপে লেখা হয় , কিন্তু লেখায় আলিফ বাদ গেলেও কোরআন তেলাওয়াতে আলিফ উচ্চারিত হয় অর্থাৎم হরফটি দীর্ঘায়িত করে উচ্চারণ করা হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে , কম্পিউটার কি এ সব ক্ষেত্রে আলিফকে গণনা করবে , নাকি করবে না ?

[অবশ্য বিশেষ করে অনারবদের জন্যে কোরআন মজীদের অনেক লিপিতেই এ ধরনের ক্ষেত্রে বিলোপকৃত আলিফের পূর্ববর্তী বর্ণের ওপরে (যেমন :رحمان শব্দের বেলায়م বর্ণের ওপরে) ছোট করে আলেফ লেখা হয় ; বাংলাভাষীদের নিকট এটি খাড়া যবর নামে পরিচিত। কিন্তু আসলে তা আলেফ।]

এছাড়া আরবী ভাষায় তানভীনের ব্যবহার কম্পিউটার-গণনার জন্য আরেকটি সমস্যা। আরবী ভাষায় বিশেষ্য ও বিশেষণের শেষে যে তানভীন্ যুক্ত হয় তা মূলতঃ একটি সাকিন্ নূন্ (ن ) এবং বাক্যের শেষে ব্যতীত সব ক্ষেত্রেই উচ্চারিত হয়। যেমন :کتابٌ (কিতাাবুন্)। এখন প্রশ্ন হচ্ছে , তানভীনগুলোকে কি নূন্ (ن )-এর সাথে গণনা করা হবে , নাকি হবে না ? বিশেষ করে যেহেতু বাক্যশেষের তানভীন্ উচ্চারিত হয় না , এমতাবস্থায় তা কি গণনা করা হবে , নাকি হবে না ?

এছাড়া কোরআন মজীদের লেখ্য রূপে বিভিন্ন হরফ দ্বারা যতিচিহ্ন ও উচ্চারণ-নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে , কম্পিউটার কি সেগুলোকে গণনা করবে , নাকি করবে না ? গণনা করলে তা কি সংশ্লিষ্ট হরফ সমূহের প্রকৃত সংখ্যায় পরিবর্তন ঘটাবে না ?

কোরআন মজীদের লিপিতে বর্ণবিলুপ্তি (حذف ) ও শব্দমিলন (ادغام ) আরো দু টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেমন :الله শব্দের আগেلِ শব্দ (স্মর্তব্য ,ل একটি প্রতীকী হরফ হলেও - যার কোনো নিজস্ব অর্থ নেই - এখানে এটি একটি শব্দও (অব্যয়) বটে যার মানে -এর/-এর জন্য ) যোগ হলে তাلله রূপে লেখা হয় ,لالله রূপে নয়। এখানেالله শব্দেরال বিলুপ্ত হয়েছে। এ ধরনের বিলুপ্তি আরো বহু ক্ষেত্রে রয়েছে। তেমনি কোরআন মজীদের বিসমিল্লাহির্ রাহমানির রাহীম্ আয়াতে সবখানেইبسم الله লিখতেاسم শব্দের আলিফ (ا = প্রকৃত পক্ষে হামযাহ্) বিলুপ্ত করা হয়েছে। এ ধরনের বিলোপকে বহু ব্যবহার (کثرة الاستعمال ) জনিত বিলোপ বলা হয়। কিন্তু এ বিলোপ সত্ত্বেও সর্বাবস্থায়ইاللهاسم আলিফ/ হামযাহ্ (ا ) দ্বারা সূচিত শব্দ। সূরাহ্ আল্- আলাক্ব-এর প্রথম আয়াতেباسم লিখতে আলিফ (ا ) বিলুপ্ত করা হয় নি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে , কম্পিউটার এ বিলুপ্ত হরফগুলো কীভাবে গণনা করবে ?

এছাড়া কোরআন মজীদে যেভাবেلِ শব্দالله শব্দের সাথে যুক্ত হয়েلله হয়েছে এবংب শব্দاسم শব্দের সাথে যুক্ত হয়েبسم হয়েছে সেভাবে আরো অনেক শব্দই অন্য শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে থাকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কম্পিউটার এ ধরনের যুক্ত শব্দগুলোকে কীভাবে গণনা করবে - এক শব্দ হিসেবে , নাকি দুই শব্দ হিসেবে ?

সব কিছু 19 দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য নয়

এবার 19 সংখ্যার তথাকথিত মু জিযাহর প্রবক্তাদের দাবীকে প্রায়োগিক দিক থেকে ও বাস্তব বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা যাক।

দাবী করা হয়েছে যে ,بسم الله الرحمن الرحيم আয়াতে 19টি বর্ণ রয়েছে। অথচ প্রকৃত পক্ষে এতে বর্ণসংখ্যা তাদের দাবীর তুলনায় বেশী। কারণ , মূলতঃ বাক্যটি হচ্ছে :باسم الله الرحمان الرحيم এবং এতে বর্ণসংখ্যা 21টি। আরالله শব্দটি মূলতঃالاِلاه (আল্-ইলাাহ্) ; সে হিসেবে বর্ণসংখ্যা 23টি ।

19 সংখ্যার তথাকথিত মু জিযাহর প্রবক্তাদের পক্ষ হতে দাবী করা হয়েছে যে , কোরআন মজীদের সর্বপ্রথম নাযিলকৃত আয়াত সমূহ অর্থাৎ সূরাহ্ আল্- আলাক্ব-এর প্রথম পাঁচ আয়াতের শব্দ ও বর্ণ সমূহ 19 সংখ্যা দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তা নয়। বরং এ পাঁচটি আয়াতে শব্দসংখ্যা 25 ও বর্ণসংখ্যা তাশদীদযুক্ত হরফকে এক হরফ ধরলে 78 এবং দুই হরফ ধরলে 84 - যা 19 সংখ্যা দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য নয়।

আয়াতগুলো হচ্ছে :

) اقرأ باسم ربک الذی خلق. خلق الانسان من علق. اقرأ و ربک الاکرم. الذی علم بالقلم. علم الانسان ما لم يعلم( .

এবার এ আয়াতসমূহের শব্দগুলো গুণে দেখা যাক :

(1)اقرأ (۲) ب (٣) اسم (٤) رب (۵) ک (٦) الذی (٧) خلق (٨) خلق (۹) الانسان (۱۰) من (۱۱) علق (۱۲) اقرأ (۱٣) و (۱٤) رب (۱۵) ک (۱٦) الاکرم (۱٧) الذی (۱٨) علم (۱۹) ب (۲۰) القلم (۲۱) علم (۲۲) الانسان (۲٣) ما (۲٤) لم (۲۵) يعلم

এখানে 25টি শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এই সাথে 2 বারانسان শব্দে , 1 বারاکرم শব্দে ও 1 বারقلم শব্দে যুক্ত আলিফ-লাম্ (ال ) কে আলাদা শব্দ হিসেবে গণ্য করলে মোট শব্দসংখ্যা দাঁড়ায় 29টিতে , আরال -কে শব্দ হিসেবে গণ্য না করলে শব্দসংখ্যা দাঁড়ায় 25টিতে।

19 সংখ্যার তথাকথিত মু জিযাহর প্রবক্তারা সম্ভবতঃ তাঁদের গণনা থেকে দু টিب , দু টিک ও একটিلم বাদ দিয়ে থাকবেন। কিন্তু আরবী ভাষায় এর সবগুলোই শব্দ হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। কারণک হচ্ছেماالذی -এর ন্যায় সর্বনাম এবংب হচ্ছেمِن -এর ন্যায় অব্যয়। এমতাবস্থায় একটিকে গণনা করা ও একটিকে গণনা না করা সম্ভব নয়। তবে এগুলো গণনা না করলেও শব্দসংখ্যা দাঁড়ায় 20টি। তাঁরা আর কোন্ শব্দ বাদ দিয়েছেন বোঝা মুশকিল।

গোঁজামিলের আশ্রয়গ্রহণ

কোরআন মজীদের সূরাহ্-সংখ্যা 114টি যা 19 দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য। [তবে আমরা যেন ভুলে না যাই যে , এ সংখ্যাটি একই সাথে 2 , 3 ও 6 দ্বারাও নিঃশেষে বিভাজ্য।] 114টি সূরাহর মধ্যে সূরাহ্ আত্-তাওবাহ্ বাদে বাকী 113টি সূরাহর শুরুতেبسم الله الرحمن الرحيم রয়েছে এবং সূরাহ্ আন্-নামল্-এর মাঝখানে আরো একবার এ আয়াতটি রয়েছে। ফলে এর সংখ্যা দাঁড়ালো 114তে যা 19 দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য। এখানে 19 সংখ্যার তথাকথিত মু জিযাহর প্রবক্তারা সবগুলো বিসমিল্লাহ্ কে হিসাব করেছেন। কিন্তু এ আয়াতে ব্যবহৃতاسم, الله, الرحمنالرحيم - এই চারটি শব্দ সমগ্র কোরআন মজীদে যতোবার ব্যবহৃত হয়েছে তাকে 19 দিয়ে ভাগ করতে গিয়ে তাঁরা সূরাহ্ আল্-ফাাতেহাহ্ ব্যতীত বাকী সূরাহ্গুলোর (112টি সূরাহর) শুরুতে ব্যবহৃতبسم الله الرحمن الرحيم কে হিসাব থেকে বাদ দিয়েছেন। কারণ , অন্যথায় তা 19 দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য হয় না।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাঁরা একই আয়াত একবার হিসাব করেন এবং একবার হিসাব থেকে বাদ দেন কোন্ যুক্তিতে ?

19 সংখ্যার তথাকথিত মু জিযাহর প্রবক্তাদের বক্তব্যে এ ধরনের গোঁজামিল আরো অনেক রয়েছে। যেমন : কোরআন মজীদে 14টি হরফ দিয়ে 14 ধরনের হুরূফে মুক্বাত্বত্বা আত্ তৈরী করা হয়েছে এবং তা 29টি সূরাহর শুরুতে ব্যবহৃত হয়েছে। বলা হয়েছে যে , এ তিনটি সংখ্যা যোগ করলে হয় 57 - যা 19 দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য। প্রশ্ন হচ্ছে , তিনটি বিষয়ের সংখ্যা একত্রিত করে কেন ভাগ করতে হবে ? প্রতিটি বিষয় স্বতন্ত্রভাবে কেন 19 দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য নয় ?

19 সংখ্যার তথাকথিত মু জিযাহর প্রবক্তারা স্বীকার করেছেন যে ,الله, الرحمنالرحيم - এই তিনটি নাম বাদে কোরআন মজীদে আল্লাহ্ তা আলার আর যে সব গুণবাচক নাম উল্লিখিত হয়েছে তার কোনোটিই 19 সংখ্যা দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য নয়। প্রশ্ন করা যেতে পারে : কেন ? 19 সংখ্যার মু জিযাহর দাবী সত্য হলে অবশ্যই আল্লাহ্ তা আলার প্রতিটি গুণবাচক পবিত্র নামই স্বতন্ত্রভাবে 19 দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য হওয়া উচিত ছিলো। আর প্রকৃত পক্ষে উক্ত তিনটি পবিত্র নামও 19 দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য নয় - তা আমরা পূর্বেই প্রমাণ করেছি।

সংখ্যা কলুষিত!

19 সংখ্যার তথাকথিত মু জিযাহর প্রবক্তাদের পক্ষ থেকে 19 সংখ্যাটি গ্রহণের পক্ষে একটা উদ্ভট যুক্তি পেশ করা হয়েছে। তা হলো , অন্যান্য মৌলিক সংখ্যা বিভিন্ন ধরনের ভুল অর্থ আরোপের দ্বারা কলুষিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ তারা উল্লেখ করেছে যে , 13 সংখ্যাকে দুর্ভাগ্যজনক মনে করা হয় , কিন্ত 19 সংখ্যাটি নিষ্কলুষ রয়ে গেছে। [স্মর্তব্য , এটা পুরোপুরি বাহাইদের যুক্তি। কারণ , তারা 19 সংখ্যকে পবিত্র গণ্য করে থাকে।]

প্রশ্ন হচ্ছে , কোনো সংখ্যাকে কি কলুষিত করা যায় ? কোনো সংখ্যার কলুষিত হওয়ার বিষয়টি কি বিচারবুদ্ধি গ্রহণ করে ? পাশ্চাত্য জগতে কুসংস্কারাচ্ছন্ন চিন্তাধারার কারণে লোকেরা 13 সংখ্যাকে দুর্ভাগ্যজনক মনে করে এবং অনেক ক্ষেত্রে নাকি 13তম ক্রমিক খালি রাখা হয় অর্থাৎ ক্রমিক নং 12-র পরেই 14 আসে বা 12-র পরে 12-এ এবং তার পরে 14 ব্যবহার করা হয়। প্রকৃত পক্ষে এর কোনো মূল্য আছে কি ? বিশেষ করে কোরআন মজীদের দৃষ্টিতে এ ধরনের কুসংস্কারের কোনো মূল্য আছে কি ? যদি তা-ই থাকতো তাহলে কোরআন মজীদে 13তম ক্রমিকে কোনো সূরাহ্ থাকতো না।

আমরা যদি যুক্তির খাতিরে স্বীকার করে নেই যে , সংখ্যা কলুষিত হতে পারে বা সংখ্যাকে কলুষিত করা যেতে পারে , তাহলে বলবো যে , 19 সংখ্যাও কলুষিত হয়েছে। কারণ , সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্রে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সৃষ্ট বাহাই ধর্মে 19 সংখ্যাটি পবিত্র ; তাদের সপ্তাহ্ 7 দিনে নয় , 19 দিনে এবং এ ধরনের 19 সপ্তাহে মাস ও 19 মাসে বছর। এমতাবস্থায় 19 সংখ্যার কলুষিত হয়ে পড়ার ব্যাপারে আর কোনো সন্দেহ থাকে কি ?

এ থেকে প্রায় নিশ্চয়তার সাথে বলা যেতে পারে যে , 19 সংখ্যা দ্বারা কোরআন মজীদের মু জিযাহ্ প্রমাণ করা সম্ভব বলে যে তত্ত্ব প্রচার করা হয়েছে তার উদ্ভবের পিছনে অবশ্যই বাহাইদের ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র কার্যকর রয়েছে।

19 সংখ্যার মু জিযাহ্ স্বীকারের বিপদ

অনেকে মনে করেন যে , 19 সংখ্যার দ্বারা কোরআন মজীদের মু জিযাহ্ প্রমাণের তত্ত্বটি ঠিক না হলেও এটিকে যেহেতু কোরআন মজীদের সপক্ষে ব্যবহার করা হচ্ছে সেহেতু এর দ্বারা অনেকের মনে , বিশেষ করে আধুনিক শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের মনে কোরআনের ওপর বিশ্বাস মযবূত হবে। অতএব এটি ভুল হলেও এটিকে খণ্ডন করা ঠিক নয়।

এ এক ধরনের বিপজ্জনক প্রবণতা। প্রথমতঃ অন্ধ বিশ্বাস ভিত্তিক ধর্মসমূহের ন্যায় ইসলাম কোনো অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন পন্থায় নিজেকে গ্রহণ করানোর পক্ষপাতী নয় , বরং এর বিরোধী। দ্বিতীয়তঃ এ ধরনের অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন পন্থা সাময়িকভাবে ইসলামের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি ও তার প্রচারের জন্য সহায়ক হিসেবে দেখা গেলেও চূড়ান্ত পরিণতিতে তা ইসলামের জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ হিসেবে প্রমাণিত হতে বাধ্য।

19 সংখ্যার মু জিযাহর তত্ত্ব যদি গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যায় তাহলে লোকেরা কোরআন মজীদের সব কিছুকেই 19 দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে বসবে। অতঃপর তারা যখন দেখবে যে , কোরআন মজীদের অনেক কিছুই 19 দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য নয় ( আর আমরা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছি যে , কোরআন মজীদের অনেক কিছুই 19 দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য নয় ) , তখন পূর্ববর্তী আসমানী কিতাব্ সমূহের ন্যায় কোরআন মজীদও বিকৃত হয়েছে বলে তাদের মনে ধারণা সৃষ্টি হবে। এর ফলে তাদের ঈমান ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই এ ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা তত্ত্বের প্রচার বন্ধ করা এবং যেহেতু ইতিমধ্যেই তা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে সেহেতু তার ভিত্তিহীনতার বিষয়টি তুলে ধরা অপরিহার্য।