কোরআনের মু‘জিযাহ্

কোরআনের মু‘জিযাহ্ 0%

কোরআনের মু‘জিযাহ্ লেখক:
: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ: কোরআন বিষয়ক জ্ঞান

কোরআনের মু‘জিযাহ্

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 46609
ডাউনলোড: 4351

পাঠকের মতামত:

কোরআনের মু‘জিযাহ্
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 60 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 46609 / ডাউনলোড: 4351
সাইজ সাইজ সাইজ
কোরআনের মু‘জিযাহ্

কোরআনের মু‘জিযাহ্

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

কোরআনের স্বরূপ

তাহলে লাওহে মাহ্ফূয্ নামক অবস্তুগত অস্তিত্বে কোরআন মজীদ কীভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে ?

কোরআন মজীদ হচ্ছেتبيانا لکل شيء - সকল কিছুর সুবর্ণনা (জ্ঞান)। (সূরাহ্ আন্-নাহল : 89)

সকল কিছু মানে কী ? সকল কিছু মানে সকল কিছুই। অর্থাৎ সৃষ্টিলোকের সূচনা থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত সব কিছু ; যা কিছু ঘটেছে তার সব কিছুই এবং ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে যা কিছুর ঘটা অনিবার্য হয়ে আছে তার সব কিছু এবং যা কিছুর ঘটা ও না-ঘটা সমান সম্ভাবনাযুক্ত বা শর্তাধীন রয়েছে তা সেভাবেই , আর একটি অনিশ্চিত সম্ভাবনার সুবিশাল শূন্য ক্ষেত্র এতে নিহিত রয়েছে।

কোরআন মজীদ সম্পর্কে অন্য এক আয়াতে এরশাদ হয়েছে :

) مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ(

আমি এ কিতাবে কোনো কিছুই বাদ দেই নি। (সূরাহ্ আল্-আন্ আাম্ : 38)

এখন প্রশ্ন হচ্ছে , এতো কিছু লাওহে মাহ্ফূযে কীভাবে নিহিত রয়েছে ? অর্থাৎ কোন্ প্রক্রিয়ায় নিহিত রয়েছে ?

এর একটাই প্রক্রিয়া হতে পারে। তা হচ্ছে , ওপরে যার উল্লেখ করা হলো তার সব কিছুই এক অবস্তুগত ত্রিমাত্রিক বাঙ্ময় চলচ্চিত্র আকারে তাতে সংরক্ষিত রয়েছে - যার সকল দৃশ্য তার দর্শকের কাছে প্রতিটি মুহূর্তে সমভাবে দৃশ্যমান ও প্রতিটি বাণী সদাশ্রবণযোগ্য। শুধু বর্ণ ও শব্দ নয় , বরং স্বাদ , ঘ্রাণ ও স্পর্শযোগ্যতার বৈশিষ্ট্যও তাতে রয়েছে যদিও তা অবস্তুগত। যার অন্তরের চোখ ও কান তা দেখার ও শোনার উপযোগী এবং অন্তরের নাসিকা , জিহবা ও ত্বক পূর্ণ মাত্রায় সক্রিয় , তাঁর কাছে তা স্বাদ , ঘ্রাণ ও স্পর্শযোগ্যতা সহ সতত শ্রুত ও দৃশ্যমান।

ঠিক একজন কবির হৃদয়ের কানে যেভাবে বায়ুতরঙ্গহীন কবিতা ধ্বনিত হয় এবং একজন শিল্পীর মানসপটে যেভাবে বস্তুগত উপাদান ছাড়াই একটি বহুরঙা সুন্দর দৃশ্য বিরাজমান , এটা তার সাথে তুলনীয়। তবে শিল্পী দুর্বল স্রষ্টা ; তাঁর মনোলোকে যা অস্তিত্বলাভ করে তার স্থায়িত্ব সীমিত ও স্বল্পস্থায়ী এবং তিনি তা অন্যকে হুবহু দেখাতে অক্ষম , কিন্তু যেহেতু লাওহে মাহ্ফূযে সংরক্ষিত বর্ণ , গন্ধ , শব্দ , স্বাদ , ঘ্রাণ ও স্পর্শযোগ্যতা বিশিষ্ট অবস্তুগত সৃষ্টি হচ্ছে পরম প্রমুক্ত সত্তা কর্তৃক সৃষ্ট তাই তা এ ধরনের দুর্বলতা থেকে মুক্ত এবং তিনি যাকে তার অভিজ্ঞতা (অর্ন্তলোকীয় পঞ্চেন্দ্রিয়ের অভিজ্ঞতা) দিতে চান তা তাঁকে দিতে পুরোপুরি সক্ষম।

বাণী এক : প্রকাশে স্তরভেদ

বিচারবুদ্ধির রায় হচ্ছে , মানুষের কাছে আল্লাহ্ তা আলার মূল বাণী স্থান-কাল-গোত্র-বর্ণ-ভাষাভেদে স্বতন্ত্র হতে পারে না। তবে ব্যক্তির প্রয়োজন ও ধারণক্ষমতা বিভিন্ন হবার কারণে এবং স্থানগত ও কালগত প্রয়োজনের বিভিন্নতার কারণে মানুষের কাছে সে বাণীর বিস্তারিত ও বাহ্যিক রূপে কিছু বিভিন্নতা হতে বাধ্য। একটি অভিন্ন দৃশ্য যখন বিভিন্ন আয়নায় প্রতিফলিত হয় তখন আয়নার গুণ , ক্ষমতা ও স্বচ্ছতার পার্থক্যের কারণে এবং দৃশ্যটি থেকে তার অবস্থানের দূরত্ব ও কৌণিকতার বিভিন্নতার কারণে বিভিন্ন আয়নায় প্রতিফলিত দৃশ্যে পার্থক্য দেখা যায় - যে পার্থক্য মূল দৃশ্যের বিভিন্নতা ও পার্থক্য নির্দেশ করে না , বরং তা গ্রহণকারীদের মধ্যে পার্থক্যের কারণে দৃশ্যের প্রতিফলনসমূহের মধ্যে গুণগত ও মানগত পার্থক্য মাত্র। তেমনি আয়না যদি ভগ্ন হয় তাতে দৃশ্যটি বিকৃত রূপে প্রতিফলিত হতে বাধ্য। কিন্তু তা কোনো অবস্থাতেই মূল দৃশ্যের নিখুঁত অবস্থাকে ব্যাহত করতে সক্ষম হয় না।

একইভাবে স্থান , কাল , পরিবেশ ও ভাষাগত পার্থক্যের কারণে আল্লাহর কালাম্ বিভিন্ন নবী-রাসূল ( আঃ) যেভাবে লাভ করেছেন তাতে পর্যায়গত পার্থক্য ছিলো বটে , কিন্তু তাতে কোনো পারস্পরিক বৈপরীত্য ছিলো না। যে সব ক্ষেত্রে বৈপরীত্য লক্ষ্য করা যায় তার কারণ সে সব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নবী-রাসূলগণের ( আঃ) অবর্তমানে তাঁদের অনুসারী হবার দাবীদার লোকদের মধ্য থেকে কতক প্রভাবশালী লোক তাতে বিকৃতি সাধন করেছিলো।

সবশেষে আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে নির্ধারিত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) যখন আবির্ভূত হলেন তখন তাঁর ব্যক্তিগত সত্তার গুণগত ও মানগত চরমোৎকর্ষ এবং তাঁর স্থান-কাল-পরিবেশ ও ভাষার পূর্ণতম উপযুক্ততার কারণে তিনি এ বাণী লাওহে মাহ্ফূযে যেভাবে ছিলো হুবহু - কোনোরূপ হ্রাসকরণ , সংক্ষেপণ ও সঙ্কোচন ব্যতীত সেভাবেই লাভ করেন। তেমনি যারা লাওহে মাহ্ফূযের অভিজ্ঞতার অধিকারী নয় এমন মানুষদের নিকট যতোখানি সর্বোত্তম ও বোধগম্যভাবে এ বাণী পৌঁছানো সম্ভবপর আরবী ভাষার প্রকাশক্ষমতার অনন্যতার কারণে হযরত জিবরাঈল ( আঃ)-এর সহায়তায় ভাষার আবরণে তিনি ঠিক সেভাবেই তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হন।

আসলে লাওহে মাহ্ফূযের স্বরূপ সম্বন্ধে নিশ্চিতভাবে বলা আমাদের কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে কেবল এটাই সুনিশ্চিত যে , তা এক সমুন্নত অবস্তুগত অস্তিত্ব কোরআন মজীদ যাতে সংরক্ষিত। তবে অনেক ইসলাম-বিশেষজ্ঞের ধারণা , স্বয়ং হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর হৃদয় (ক্বালব)ই হচ্ছে লাওহে মাহ্ফূয্। এ মত অনুযায়ী হযরত জিবরাঈল্ ( আঃ) আল্লাহ্ তা আলার কাছ থেকে ইলমে হুযূরী রূপ কোরআন মজীদ নিয়ে লাওহে মাহ্ফূয্ রূপ রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর হৃদয়ে নাযিল্ হন এবং তাতে সংরক্ষিত করে দিয়ে যান। পরে আল্লাহ্ তা আলার নির্দেশে ভাষার আবরণে সেখান থেকে তা ক্রমান্বয়ে মানুষের সামনে নাযিল্ হয়।

কোরআন মজীদ যেভাবে মানুষের সামনে নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর যবানে উচ্চারণ ও পঠনযোগ্য ভাষার আবরণে নাযিল্ হয় তা ছাড়াও যে ভাষাগত বর্ণনা ছাড়াই বর্ণিত সব কিছুর অবস্তুগত রূপ আকারে তথা ইলমে হুযূরী আকারে তাঁর অন্তঃকরণে নাযিল্ হয়েছিলো তার প্রমাণ এই যে , তাঁর চর্মচক্ষুর সামনে সংঘটিত হয় নি কোরআন মজীদে বর্ণিত এমন ঘটনাবলীও তিনি হুবহু চর্মচক্ষুতে দেখার মতো করে তাঁর অন্তর্চক্ষুর দ্বারা দেখতে পেতেন। উদাহরণস্বরূপ , আল্লাহ্ তা আলা হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)কে সম্বোধন করে এরশাদ করেন :

) أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِأَصْحَابِ الْفِيلِ( .

(হে রাসূল!) আপনি কি দেখেন নি আপনার রব হস্তি-মালিকদের সাথে কী আচরণ করেছেন ? (সূরাহ্ আল্-ফীল্ : 1)

এখানেأَلَمْ تَرَ (আপনি কি দেখেন নি) বলতে চর্মচক্ষুতে দেখার অনুরূপ দেখাকে বুঝানো হয়েছে। কারণ , চাক্ষুষ না দেখে শ্রবণ ও পঠন থেকে মানুষের যে জ্ঞান হয় অনুরূপ জ্ঞান বুঝানো উদ্দেশ্য হলেالم تعلم বলাই সঙ্গত হতো। অন্যদিকে আমরা জানি যে , আবরাহার হস্তিবাহিনীকে ধ্বংসের ঘটনা নবী করীম (ছ্বাঃ) চর্মচক্ষে দেখেন নি। সুতরাং এখানে যে অন্তর্চক্ষুর দ্বারা চর্মচক্ষে দেখার অনুরূপ দর্শন বুঝানো হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই।

দুই পর্যায়ের নাযিল

ওপরে হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) কর্তৃক ইলমে হুযূরী রূপ কোরআন মজীদ সরাসরি আল্লাহ্ তা আলার কাছ থেকে জিবরাঈলের ( আঃ) মাধ্যমে লাওহে মাহ্ফূয্ রূপ স্বীয় অন্তঃকরণে লাভ করার অথবা লাওহে মাহ্ফূয্ নামক অন্য কোনো অবস্তুগত অস্তিত্বে সংরক্ষিত কোরআন মজীদ জিবরাঈলের ( আঃ) মাধ্যমে স্বীয় অন্তঃকরণে লাভ করার ও সেখান থেকে যেভাবে তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা থেকে দুই পর্যায়ের নাযিলের বিষয় সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। প্রথম পর্যায়ে কোরআন মজীদ হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর পবিত্র হৃদয়পটে নাযিল্ হয় এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে তাঁর হৃদয়পট থেকে মানুষের মাঝে নাযিল্ হয়।

এ থেকে আরো একটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে , কোরআন মজীদের প্রথম নাযিল্ অর্থাৎ হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর পবিত্র হৃদয়পটে নাযিলের ঘটনাটি একবারে ঘটেছিলো। বস্তুতঃ বস্তুজাগতিক উপাদান ও বৈশিষ্ট্য তথা দুর্বলতা থেকে মুক্ত এ অবিভাজ্য কোরআন নাযিল্ একবারেই হওয়া সম্ভব ছিলো। আর তা নাযিল্ হয়েছিলো লাইলাতুল্ ক্বাদরে (মহিমান্বিত রজনীতে)। আল্লাহ্ তা আলা এরশাদ করেন :

) ان انزلناه فی ليلة القدر( .

নিঃসন্দেহে আমি তা (কোরআন) মহিমান্বিত রজনীতে নাযিল্ করেছি। (সূরাহ্ আল্-ক্বাদর : 1)

এ আয়াতে হু (ه ) কর্মপদ দ্বারা পুরো কোরআন নাযিলের কথাই বলা হয়েছে। তেমনি তাতে নাযিল্ -এর কথা বলা হয়েছে ; নাযিল্ শুরু করার কথা বলা হয় নি।

অন্যত্র উক্ত রজনী কে বরকতময় রজনী হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে এবং এরশাদ হয়েছে :

) حم. وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ. إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ(

হা-মীম্। শপথ ঐ সুবর্ণনাকারী গ্রন্থের ; নিঃসন্দেহে আমি তা বরকতময় রজনীতে নাযিল্ করেছি। (সূরাহ্ আদ্-দুখান্ : 1-3)

এখানেও পুরো কোরআন নাযিলের কথা বলা হয়েছে।

অন্যত্র এরশাদ হয়েছে :

) شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ(

রামাযান্ মাস্ - যাতে কোরআন নাযিল্ করা হয়েছে - যা (কোরআন) মানবজাতির জন্য পথনির্দেশ (হেদায়াত্) এবং হেদায়াতের অকাট্য প্রমাণাবলী ও (সত্য-মিথ্যা ও ন্যায়-অন্যায়ের মধ্যে) পার্থক্যকারী (মানদণ্ড)। (সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্ : 185)

এখানে লক্ষণীয় যে , রামাযান মাসে কোরআন নাযিল্ হওয়ার ঘটনাকে এ মাসের জন্য বিশেষ মর্যাদার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে মহিমান্বিত রজনীতে (লাইলাতুল্ ক্বাদর) বা বরকতময় রজনীতেও কোরআন নাযিল্ হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে , এ রাত্রিটি রামাযান মাসেই এবং এ ব্যাপারে মতৈক্য রয়েছে। এ কোরআন নাযিলের কারণেই লাইলাতুল্ ক্বাদর হাজার রাতের চেয়েও উত্তম। সুতরাং কোরআন নাযিলের কারণে রামাযান মাসের মর্যাদার মানে এ নয় যে , এ মাসের বিভিন্ন দিনে বা রাতে কোরআন মজীদের বিভিন্ন অংশ নাযিল্ হয়েছিলো। কারণ , এভাবে কোরআন নাযিল্ অন্যান্য মাসেও হয়েছিলো। আর লাইলাতুল্ ক্বাদর-এর এতো বড় মর্যাদার কারণ কেবল এ নয় যে , এ রাতে কোরআন নাযিল্ শুরু হয়েছিলো , বরং পুরো কোরআন নাযিলের কারণেই এ মর্যাদা।

উপরোদ্ধৃত আয়াতসমূহে কোরআন বা কোরআনের স্থলাভিষিক্ত সর্বনাম দ্বারা যে এ গ্রন্থের অংশবিশেষ তথা কতক আয়াত বা সূরাহ্ বুঝানো হয় নি , বরং পুরো কোরআনকেই বুঝানো হয়েছে তার অন্যতম প্রমাণ হচ্ছে এই যে , অন্যত্র কোরআন মজীদের আয়াত ও অংশবিশেষ নাযিল্ করার কথা স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন , এরশাদ হয়েছে :

) طس تِلْكَ آيَاتُ الْقُرْآنِ وَكِتَابٍ مُبِينٍ(

ত্বা-সীন্। এ হচ্ছে কোরআন ও সুবর্ণনাকারী কিতাবের আয়াত। (সূরাহ্ আন্-নামল্ : 1)

এখানে উদ্দিষ্ট আয়াতসমূহকে কোরআন না বলে কোরআনের আয়াত তথা কোরআনের অংশবিশেষ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্যত্রও ভিন্ন শব্দ ব্যবহার করে কোরআনের অংশবিশেষ নির্দেশ করা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে :

) إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلا(

নিঃসন্দেহে , আল্লাহ্ কিতাব্ থেকে যা নাযিল্ করেছেন তা যারা গোপন করে এবং সামান্য মূল্যের বিনিময়ে তা বিক্রয় করে ...। (সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্ : 174)

এ আয়াত থেকেও সুস্পষ্ট যে , এতে পুরো কিতাবকে বুঝায় নি , বরং কিতাবের অংশবিশেষ বা ঐ পর্যন্ত নাযিলকৃত অংশকে বুঝানো হয়েছে। আর এর এক আয়াত পরেই আল্লাহ্ তা আলা শুধু কিতাব্ বলে পুরো কোরআন মজীদকে বুঝিয়েছেন। এরশাদ হয়েছে :

) ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ نَزَّلَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ(

এটা এ জন্য যে , আল্লাহ্ সত্যতা সহকারে কিতাব্ নাযিল্ করেছেন। (সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্ : 176)

এ আয়াতে কিতাব্ নাযিল্ করেছেন এবং পূর্বোদ্ধৃত আয়াতে (আল্-বাক্বারাহ্ : 174) কিতাব্ থেকে যা নাযিল্ করেছেন উল্লেখ থেকেই সুস্পষ্ট যে , তাতে পুরো কোরআনকে বুঝানো হয় নি , কিন্তু শেষোক্ত আয়াতে (আল্-বাক্বারাহ্ : 176) পুরো কোরআনকে বুঝানো হয়েছে।

কিন্তু আমরা জানি যে , নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর যবান থেকে লোকদের সামনে দীর্ঘ তেইশ বছর যাবত অল্প অল্প করে কোরআন মজীদ নাযিল্ হয়েছে। বিশেষ করে আমরা জানি যে , কোরআন মজীদের সর্বশেষ আয়াতগুলো নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর ইন্তেকালের মাত্র তিন মাস আগে বিদায় হজ্বের পরে নাযিল্ হয়। এমতাবস্থায় তার আগেই পুরো কোরআন-এর উল্লেখ কী করে হতে পারে ? আর কোরআন বলতে যদি তার অংশবিশেষকে বুঝানো হয় তো সে ক্ষেত্রে কোনো কোনো আয়াতে কোরআনের অংশের উল্লেখের মানে কী ? সুতরাং সন্দেহ নেই যে , যে সব ক্ষেত্রে শুধু কোরআন বা কিতাব্ উল্লেখ করা হয়েছে , অংশ বা আয়াত উল্লেখ করা হয় নি সে সব আয়াতে পুরো কোরআন বুঝানো হয়েছে , অথচ তা বুঝানো হয়েছে কোরআনের সর্বশেষ আয়াত নাযিলের বেশ আগে। এমতাবস্থায় এ উভয় তথ্যের মধ্যে কীভাবে সমন্বয় হতে পারে ?

দৃশ্যতঃ এ ধরনের কথায় স্ববিরোধিতা বা প্রকাশক্ষমতার দুর্বলতা প্রমাণিত হয়। কিন্তু এ সম্পর্কে তৎকালীন ইসলাম-বিরোধীরা কোনো ত্রুটিনির্দেশের জন্য এগিয়ে আসে নি। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে , তৎকালে (পুরো) কোরআন নাযিল্ ও কোরআনের আয়াত বা অংশবিশেষ বা সূরাহ্ নাযিল্ বলতে একই ধরনের নাযিল্ বুঝাতো না।

কোরআন নাযিলের ধরন

পুরো কোরআন মজীদ যে , নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর বস্তুদেহের কর্ণকুহরে শব্দতরঙ্গ সৃষ্টির মাধ্যমে নাযিল্ করা হয় নি , বরং তাঁর হৃদয়পটে নাযিল্ করা হয়েছে তা-ও কোরআন মজীদে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে :

) و انه لتنزيل رب العالمين. نزل به الروح الامين علی قلبک لتکون من المنذرين بلسان عربی مبين( .

(হে রাসূল!) নিঃসন্দেহে এটি (এ কিতাব্) জগতবাসীদের রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত - যা সহ বিশ্বস্ত রূহ্ (জিবরাঈল) আপনার অন্তঃকরণে নাযিল্ হয়েছে যাতে আপনি সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত হন - সুবর্ণনাকারী প্রাঞ্জল (আরবী) ভাষায়। (সূরাহ্ আশ্-শু আরা : 192-195)

অন্য এক আয়াতেও হযরত জিবরাঈল্ ( আঃ) যে স্বয়ং নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর অন্তঃকরণে কোরআন পৌঁছে দিয়েছিলেন তা-ই উল্লেখ করা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে :

) قُلْ مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِجِبْرِيلَ فَإِنَّهُ نَزَّلَهُ عَلَى قَلْبِكَ بِإِذْنِ اللَّهِ(

(হে রাসূল!) আপনি বলুন : যে কেউ জিবরীলের দুশমন হয় (সে জেনে রাখুক) , নিঃসন্দেহে সে (জিবরীল্) আল্লাহর অনুমতিক্রমেই তা (কোরআন) আপনার অন্তঃকরণে নাযিল্ করেছে। (সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্ : 97)

এখানে হযরত জিবরাঈল্ ( আঃ) যে , পুরো কোরআন নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর অন্তঃকরণে পৌঁছে দিয়েছিলেন সুস্পষ্ট ভাষায় তা-ই বলা হয়েছে।

অন্যদিকে কোরআন মজীদ হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর কণ্ঠ থেকে সাধারণ মানুষের মাঝে নাযিল্ হয়েছিলো অল্প অল্প করে দীর্ঘ তেইশ বছরে - এ এক অকাট্য ঐতিহাসিক সত্য যে ব্যাপারে বিন্দুমাত্র বিতর্কের অবকাশ নেই।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে , কোরআন মজীদের এই প্রথম নাযিল্ অর্থাৎ হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর পবিত্র হৃদয়ে একবারে সমগ্র কোরআন মজীদ নাযিলের স্বরূপ কী ছিলো ?

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে , হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর মাধ্যমে যে মানুষের জন্য আল্লাহ্ তা আলার বাণীর পরিপূর্ণতম বহিঃপ্রকাশ ঘটবে - এ ছিলো আল্লাহ্ তা আলার সৃষ্টিকর্মের সূচনাপূর্ব পরিকল্পনারই অংশবিশেষ। তাই খোদায়ী পরিকল্পনার আওতায় বিশেষভাবে রক্তধারার পবিত্রতা সংরক্ষণ সহ খোদায়ী হেফাযতে এ দায়িত্ব পালনের উপযোগী হয়ে তিনি গড়ে উঠেছিলেন। তদুপরি তাঁর হৃদয়ে একবারে সমগ্র কোরআন মজীদ নাযিলের পূর্বে তাঁর হৃদয়কে প্রশস্ত (شرح صدر ) করা হয়। এ প্রশস্ততা যে বস্তুদেহের হৃদপিণ্ডের প্রশস্ততা ছিলো না , বরং অন্তঃকরণের গুণগত ও মানগত প্রশস্ততা ছিলো তা বলাই বাহুল্য।

এভাবে হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর হৃদয়কে গুণগত ও মানগত দিক থেকে লাওহে মাহ্ফূযে পরিণত করা হয় অথবা লাওহে মাহ্ফূয্ যদি স্বতন্ত্র কোনো অবস্তুগত অস্তিত্ব হয়ে থাকে তো তাঁর অন্তঃকরণকে লাওহে মাহ্ফূযের সমপর্যায়ে উন্নীত করা হয় - যাকে আত্মিক মি রাজ নামে অভিহিত করা চলে। তাঁর হৃদয় এ পর্যায়ে উন্নীত হবার কারণেই তা লাওহে মাহ্ফূযে পরিণত হয় বা তার পক্ষে লাওহে মাহ্ফূযের ধারণক্ষমতার সমান ধারণক্ষমতার অধিকারী হওয়া এবং জিবরাঈল্ কর্তৃক সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে অথবা লাওহে মাহ্ফূয্ নামক অন্য অবস্তুগত অস্তিত্ব থেকে নিয়ে আসা কোরআনকে কোনোরূপ হ্রাস , সঙ্কোচন ও সংক্ষেপণ ছাড়া হুবহু গ্রহণ করা সম্ভব হয়। এভাবে আল্লাহর কাছ থেকে বা বর্ণিত স্বতন্ত্র লাওহে মাহ্ফূয্ থেকে কোরআন মজীদ রাসূলুল্লাহ্ (ছ্বাঃ)-এর লাওহে মাহ্ফূয্ রূপ হৃদয়ে নেমে আসে বা নাযিল্ হয়।

অর্থাৎ কোরআন নাযিল্ মানে কোরআনের বস্তুগত উর্ধলোক থেকে পৃথিবীতে নেমে আসা নয় , বরং অবস্তুগত জগত থেকে বস্তুজগতের অধিবাসীর অবস্তুগত হৃদয়ে নেমে আসা ; হৃদপিণ্ড নামক শরীরের বিশেষ মাংসপিণ্ডের ভিতরে প্রবেশ করা নয় , বরং তাকে আশ্রয় করে অবস্থানরত অবস্তুগত হৃদয়ে প্রবেশ।

এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে যে , আমরা ইলমে হুযূরী রূপ কোরআন মজীদের যে স্বরূপের কথা উল্লেখ করেছি , এ ধরনের কোরআনের এক বারে নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর হৃদয়ে অবতীর্ণ হওয়া সম্ভব কিনা ? যেহেতু তা ব্যাপক বিশাল ও সুদীর্ঘকালীন বস্তুজাগতিক ও অবস্তুজাগতিক সব কিছুর অবস্তুগত রূপ , সেহেতু অবস্তুগত হলেও এহেন স্থানগত ও কালগত ব্যাপকবিস্তৃত কোরআন এক বারে কী করে তাঁর হৃদয়ে নাযিল্ হওয়া সম্ভব ?

এ প্রশ্নের তাত্ত্বিক জবাব হচ্ছে , আল্লাহ্ তা আলা চাইলে সেখানে অসম্ভব হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আর বিচারবুদ্ধির রায় হচ্ছে এই যে , যেহেতু বস্তুজাগতিক ও অবস্তুজাগতিক সত্য সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী সেহেতু বস্তুজাগতিক সম্ভাব্যতা ও অসম্ভাব্যতার আলোকে অবস্তুজাগতিক সম্ভাব্যতা ও অসম্ভাব্যতা বিচার করা সম্ভব নয়। তৃতীয়তঃ বস্তুজগতেও আমরা দেখতে পাই যে , যে সব অস্তিত্ব যতো স্থূল তার গতি ততো কম ও স্থানান্তরক্ষমতা ততো শ্লথ এবং যে বস্তুর স্থূলতা যতো কম বা তা যতো বেশী সূক্ষ্মতার কাছকাছি তার গতি ততো দ্রুত এবং তার স্থানান্তরক্ষমতা ততো বেশী। আমরা দেখতে পাই , কঠিন পদার্থের তুলনায় তরল পদার্থ , তরল পদার্থের তুলনায় বায়বীয় পদার্থ ও বায়বীয় পদার্থের তুলনায় বিদ্যুত দ্রুততর গতিতে ও অপেক্ষাকৃত কম সময়ে স্থানান্তরিত হয়। চতুর্থতঃ সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতায় দেখা যায় , যে ধারাবাহিক চলচ্চিত্রটি দেখতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে তা কয়েক মিনিটের মধ্যে কপি করা যায়। এমতাবস্থায় আল্লাহ্ তা আলার ইচ্ছায় পুরোপুরি অবস্তুগত কোরআন মজীদ নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর হৃদয়পটে স্থানান্তরে পরিমাপযোগ্য কোনো সময় লাগা অপরিহার্য নয়।

বর্ণিত আছে যে , হযরত জিবরাঈল ( আঃ) হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)কে হেরা গুহায় প্রথম বার ওয়াহী পৌঁছে দেয়ার সময় তাঁকে বুকে চেপে ধরেছিলেন। এভাবেই কি হযরত জিবরাঈল ( আঃ) পুরো অবস্তুগত কোরআন মজীদ হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর হৃদয়পটরূপ লাওহে মাহ্ফূযে স্থানান্তরিত করেছিলেন ? সম্ভবতঃ তা-ই।

এ ঘটনা হেরা গুহায় সংঘটিত হয়ে থাকুক অথবা নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর গৃহে বা অন্য কোথাও , এতে সন্দেহ নেই যে , এটা লাইলাতুল্ ক্বাদর-এ ঘটেছিলো। আর , কেবল এর পরেই জিবরাঈল্ ( আঃ) সেখানে হোক বা অন্যত্র হোক ভাষার আবরণে প্রথম আয়াতগুলো হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)কে (সম্ভবতঃ তাঁর অন্তরকর্ণে) পাঠ করে শোনান। এ আয়াতগুলো , যেভাবে বর্ণিত হয়েছে , সূরাহ্ আল্- আলাক্ব-এর প্রথম পাঁচ আয়াত হতে পারে , অন্য কোনো আয়াত বা সূরাহ্ও হতে পারে। এতে কোনোই পার্থক্য নেই।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে যে , কতক খবরে ওয়াহেদ্ হাদীছের বর্ণনায় যেমন বলা হয়েছে যে , প্রথম ওয়াহী নাযিলের সময় হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ) বুঝতেই পারেন নি যে , তাঁকে নিয়ে কী ঘটছে অর্থাৎ তাঁকে নবী করা হয়েছে , এ কারণে তিনি ঘাবড়ে যান - এরূপ বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ , আল্লাহ্ তা আলা তাঁর শ্রেষ্ঠতম নবী ও রাসূলকে (ছ্বাঃ) ওয়াহী নাযিল্ করে নবুওয়াতের দায়িত্বে অভিষিক্ত করবেন অথচ নবী করীম (ছ্বাঃ) তা বুঝতেই পারবেন না বলে অস্থির ও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়বেন এবং এরপর তিনি একজন খৃস্টানের কথায় এ ব্যাপারে নিশ্চিত হবেন - তাঁর সাথে আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে এ ধরনের আচরণ অকল্পনীয়। আল্লাহ্ তা আলা অতীতের কোনো নবী-রাসূলের ( আঃ) সাথে এ ধরনের আচরণ করেন নি। সুতরাং এ ধরনের বর্ণনা - যা মুতাওয়াতির্ নয় - আক্বলের কাছে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য যে , কিছু লোকের ভ্রান্ত ধারণার বিপরীতে , হযরত রাসূলে আকরাম্ (ছ্বাঃ)-এর পূত চরিত্র এবং হেরা গুহায় আল্লাহ্ তা আলার ধ্যানে সন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহ্ তা আলা তাঁকে নবী হিসেবে মনোনীত করেন নি , বরং আল্লাহ্ তা আলার সৃষ্টিপরিকল্পনায়ই তাঁকে নবী হিসেবে নির্ধারণ করে রাখা হয়েছিলো এবং এ কারণে আল্লাহ্ তা আলা তাঁর পূর্বপুরুষদের রক্তধারার পবিত্রতা এবং তাঁর চরিত্র ও নৈতিকতা হেফাযতের জন্য বিশেষ সুরক্ষা নিশ্চিত করেছিলেন। তাঁর আগমন আল্লাহ্ তা আলার সৃষ্টিপরিকল্পনায় নির্ধারিত ছিলো বলেই অতীতের প্রত্যেক নবী-রাসূল ( আঃ)ই তাঁর আগমনের কথা জানতেন এবং তাঁরা তাঁর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। অতএব , হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ) নবী হিসেবেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং জন্মসূত্রেই তাওহীদ্ ও আখেরাতে অকাট্য ঈমানের অধিকারী ছিলেন , যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে নবুওয়াতের দায়িত্ব পালনের জন্য অভিষিক্ত হবার আগে তিনি ঈমান -এর পারিভাষিক সংজ্ঞা ও ওয়াহী র স্বরূপের সাথে পরিচিত ছিলেন না।