কোরআন আরবী হওয়ার মানে কী ?
এবার আমরা দেখবো যে , কোরআন মজীদ যেখানে নিজেকেهدی للناس
(হুদাল্ লিন্নাস্ - মানবমণ্ডলীর জন্য পথনির্দেশ) বলে পরিচিত করেছে এমতাবস্থায় বিভিন্ন আয়াতে কোরআন আরবী ভাষায় নাযিল্ হওয়ার কথা উল্লেখ করার উদ্দেশ্য কী ? কেন এ কথা বার বার স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে ?
আল্লাহ্ রাব্বুল্‘
আলামীন এরশাদ করেন :
)
الر. تلک آيات الکتاب المبين. انا انزلناه قرآناً عربياً لعلکم تعقلون(
“
আলিফ-লাম-রা। এ হচ্ছে সুবর্ণনাকারী গ্রন্থের আয়াতনিচয়। নিঃসন্দেহে আমি একে আরবী (প্রাঞ্জলভাষী) কোরআন রূপে নাযিল্ করেছি ; আশা করা যায় যে , তোমরা বিচারবুদ্ধি কাজে লাগাবে।”
(সূরাহ্ ইউসূফ : 1-2)
[
এখানে আমরা
عقل
শব্দমূল থেকে নিষ্পন্ন
تعقلون
ক্রিয়াপদ বিশিষ্ট
لعلکم تعقلون
বাক্যাংশের অর্থ করেছি
“
আশা করা যায় যে
,
তোমরা বিচারবুদ্ধি কাজে লাগাবে
”
।
এটি এর কাছাকাছি অনুবাদ। কোরআন মজীদে এ বাক্যাংশটি এবং অভিন্ন শব্দমূল থেকে নিষ্পন্ন আরো কয়েকটি শব্দ বহু বার ব্যবহৃত হয়েছে। সাধারণতঃ এ কথাটির অনুবাদ করা হয়
“
হয়তো
/
আশা করা যায় যে
,
তোমরা অনুধাবন করবে
/
করতে
পারবে
”
।
কিন্তু তা এর সঠিক অনুবাদ নয়। কারণ
,
তা বুঝানো উদ্দেশ্য হলে
لعلکم تفهمون
বলা হতো। তাছাড়া কোরআন মজীদ অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় নাযিল হয়েছে
;
দুর্বোধ্য ভাষায় নয়। তাই শোনামাত্র তার বাহ্যিক তাৎপর্য গ্রহণের ক্ষেত্রে আরবদের কোনোই সমস্যা ছিলো না। এমতাবস্থায়
تعقلون
বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে
,
আশা করা যায় যে
,
এহেন ব্যতিক্রমী বিস্ময়করভাবে অত্যুচ্চ মানের প্রাঞ্জল বক্তব্য দেখে তোমরা বিচারবুদ্ধি
(عقل
- Reason)প্রয়োগ করে বিশ্লেষণ করতে উদ্বুদ্ধ হবে যে
,
হযরত মুহাম্মাদ
(
ছ্বাঃ
)-
এর ন্যায় লেখাপড়া নাজানা ব্যক্তির পক্ষ থেকে কী করে
এ ধরনের বক্তব্য উপস্থাপন করা সম্ভব হলো।
]
এখানে প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ করা যরূরী মনে করছি যে , অত্র আয়াতের অনুবাদে (এবং পরবর্তীতেও কোনো কোনো আয়াতের ক্ষেত্রে) আমরাمبين
শব্দের অর্থ করেছি‘
সুবর্ণনাকারী’
। কোরআন মজীদে এ শব্দটি 106 বার ব্যবহৃত হয়েছে এবং এর মধ্যে স্বয়ং কোরআন মজীদের বিশেষণ রূপে বহু বার ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া শব্দটি‘
শত্রু’
,‘
জাদু’
‘
গোমরাহী’
ইত্যাদির জন্যও বিশেষণ রূপে ব্যবহৃত হয়েছে। সাধারণতঃ এ শব্দটির অনুবাদ করা হয়‘
সুস্পষ্ট’
।‘
সুস্পষ্ট’
এর একটি অর্থ বটে , তবে একমাত্র অর্থ নয় এবং ব্যুৎপত্তিগত অর্থ নয়। এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে‘
সুবর্ণনাকারী’
। কারণ , শব্দটির আদি ক্রিয়াবিশেষ্য (مصدر
) হচ্ছেبين
এবং তা থেকে নিষ্পন্নبيان
-এর মানে হচ্ছে‘
সুন্দরভাবে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাব প্রকাশ’
এবং যখন বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখন এর মানে হচ্ছে‘
সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তাৎপর্য বিশিষ্ট সুন্দর কথা’
। যেমন , এরশাদ হয়েছে :خلق الانسان و علَّمه البيان
-“
তিনি (আল্লাহ্) মানুষ সৃষ্টি করেছেন। (অতঃপর) তাকে সুন্দরভাবে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাব প্রকাশ শিক্ষা দিয়েছেন।”
(সূরাহ্ আর্-রাহমান্ : 3-4) এ কারণেই আরবী ভাষায় সাহিত্যের অলঙ্কারশাস্ত্রকে‘
ইলমে বায়ান্ বলা হয়। এমতাবস্থায় অভিন্ন মূল থেকে নিষ্পন্নمبين
শব্দটি যে সব আয়াতে কোরআন মজীদের বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে সে সব ক্ষেত্রে অবশ্যই তা‘
বায়ানকারী’
তথা‘
সুন্দরভাবে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাব প্রকাশকারী’
অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে - যাকে আমরা সংক্ষেপে‘
সুবর্ণনাকারী’
বলেছি।
এমতাবস্থায় কোরআন মজীদে যে সব ক্ষেত্রে শয়তানকে মানুষের জন্যعدو مبين
বলা হয়েছে সে সব ক্ষেত্রে সম্ভবতঃ তার অধিকতর যুৎসই অর্থ হবে‘
সুবর্ণনাকারী দুশমন’
, কারণ , শয়তান তার অনুসারীদের মাধ্যমে মনোমুগ্ধকর বাকজাল বিস্তার করে মানুষকে গোমরাহীর দিকে নিয়ে যায়। তেমনি কাফেররা যে কোরআন মজীদকেسحر مبين
বলতো তার উদ্দেশ্য ছিলো‘
সুবর্ণনাকারী জাদু’
, কারণ , কোরআন মজীদের ভাষাগত সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে বহু লোকই বুঝতে পারতো যে , কোনো মানুষের পক্ষে এ সব আয়াত ও সূরাহ্ রচনা করা সম্ভব নয় , এ কারণে তারা ইসলাম গ্রহণ করতো।
)
حم. والکتاب المبين. انا جعلناه قرآناً عربياً لعلکم تعقلون(
“
হা-মীম। (এই) সুবর্ণনাকারী গ্রন্থের শপথ। অবশ্যই আমি একে আরবী (প্রাঞ্জলভাষী) পঠনীয় (কোরআন) বানিয়েছি ; আশা করা যায় যে , তোমরা বিচারবুদ্ধি কাজে লাগাবে।”
(সূরাহ্ আয্-যুখরূফ : 1-3)
)
و لقد ضربنا للناس فی هذا القرآن من کل مثل لعلهم يتذکرون. قرآناً عربياً غير ذی عوج لعلهم يتقون(
“
আর আমি মানুষের জন্য এ কোরআনে প্রতিটি বিষয়ের দৃষ্টান্ত পেশ করেছি ; আশা করা যায় যে , তারা (এ সব বিষয়ের প্রতি) মনোযোগী হবে (বা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে)। (এ হচ্ছে) আরবী (প্রাঞ্জলভাষী) পঠনীয় (কোরআন) যাতে কোনো বক্রতা নেই , অতএব , আশা করা যায় যে , তারা তাক্ব্ওয়া (নিজেদেরকে বাঁচাবার নীতি) অবলম্বন করবে।”
(সূরাহ্ আয্-যুমার : 27-28)
)
و کذالک اوحينا اليک قرآناً عربياً لتنذر ام القری و من حولها و تنذر يوم الجمع لا ريب فيه(
“
আর এভাবেই (হে রাসূল!) আমি আপনার প্রতি আরবী (প্রাঞ্জলভাষী) কোরআনকে ওয়াহী করেছি যাতে আপনি উম্মুল ক্বুরাকে (মক্কাহ্ নগরীকে/ এর অধিবাসীদেরকে) ও তার চারদিকে (সারা বিশ্বে) যারা রয়েছে তাদেরকে সতর্ক করেন এবং সতর্ক করেন সেই সমাবেশ দিবস সম্পর্কে যে দিনের আগমনের ক্ষেত্রে কোনোই সন্দেহ নেই।”
(সূরাহ্ আশ্-শূরা : 7)
সূরাহ্ আল্-আহ্ক্বাফ-এর শুরুর দিকে এরশাদ হয়েছে :
)
تنزيل الکتاب من الله العزيز الحکيم(
“
এ হচ্ছে মহাপ্রতাপময় পরম জ্ঞানী আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতরণ।”
(আয়াত নং 2)
একই সূরায় এর পরবর্তী এক আয়াতে এরশাদ হয়েছে :
)
و اذا تتلی آياتنا بينات قال الذين کفروا للحق لما جاءهم هذا سحر مبين(
“
আর তাদের নিকট যখন আমার দ্ব্যর্থহীন সুবর্ণনাকারী আয়াত সমূহ পড়ে শুনানো হবে তখন তাদের নিকট সত্য এসে যাওয়া সত্ত্বেও তা প্রত্যাখ্যানকারী (কাফের হয়ে যাওয়া) লোকেরা এ সত্য সম্পর্কে বলবে : এ তো এক সুবর্ণনাকারী জাদু।”
(আয়াত নং 7)
এর পরবর্তী আয়াতে এরশাদ হয়েছে :
)
ام يقولون افتراه. قل ان افتريته فلا تملکون لی من الله شيئاً(
“
তারা কি বলে যে , তিনি (রাসূল) এটি রচনা করেছেন ? (হে রাসূল! তাদেরকে) বলে দিন : আমি যদি এটি নিজ থেকে রচনা করতাম তাহলে তোমরা আমাকে আল্লাহ্ থেকে (তাঁর আক্রোশ থেকে) মোটেই বাঁচাতে পারবে না।”
(আয়াত নং 8)
এ ধারাবাহিকতায় এরপর এরশাদ হচ্ছে :
)
و من قبله کتاب موسی اِماماً و رحمة. و هذا کتاب مصدق لساناً عربياً لينذر الذين ظلموا و بُشری للمحسنين(
“
আর এর আগে এসেছিলো মূসার কিতাব্ - অনুসরণীয় ও রহমত স্বরূপ। আর এ হচ্ছে (তার) সত্যায়নকারী কিতাব্ যাকে আরবী (প্রাঞ্জল) ভাষার কিতাব্ রূপে অবতরণ করা হয়েছে যাতে তা যালেমদেরকে সতর্ক করে এবং তা সৎকর্মশীলদের জন্য সুসংবাদ।”
(আয়াত নং 12)
এ সব আয়াতের কোথাও বলা হয় নি যে , আরবদের বুঝতে পারার সুবিধার্থে এ কোরআন আরবী ভাষায় নাযিল্ হয়েছে। বরং এ সব আয়াত থেকে সুস্পষ্ট যে , এ গ্রন্থকে অনন্যসুন্দর প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যাপক ও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাব প্রকাশক সুবর্ণনাকারী গ্রন্থ রূপে নাযিল্ করে এটাই প্রমাণ করা হয়েছে যে , এ ধরনের গ্রন্থ কোনো মানুষের পক্ষে রচনা করা সম্ভব নয় , অতএব , তা আল্লাহর কিতাব।
আরো অনেক আয়াত থেকে এ তাৎপর্যই পাওয়া যায়। যেমন :
)
قل انما امرت ان اعبد الله و لا اشرک به. اليه ادعوا و اليه مأب. و کذالک انزلناه حکماً عربياً. و لئن اتبعت اهواهم بعد ما جاءک من العلم ما لک من الله من ولی و لا واق(
“
(হে রাসূল!) আপনি বলুন :“
অবশ্যই আমি আল্লাহর দাসত্ব করার ও তাঁর সাথে (কাউকে বা কোনো কিছুকে) শরীক না করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। আমি তাঁরই দিকে আহবান করি এবং প্রত্যাবর্তন তো তাঁরই পানে।”
আর এভাবেই আমি তাকে (এ গ্রন্থকে) পরম জ্ঞানপূর্ণরূপে ও সূক্ষাতিসূক্ষ্ম ভাবপ্রকাশক প্রাঞ্জলভাষী (আরবী) রূপে নাযিল্ করেছি। এমতাবস্থায় , আপনার নিকট জ্ঞান এসে যাওয়ার পর যদি আপনি তাদের প্রবৃত্তির (খেয়ালখুশীর) অনুসরণ করেন তাহলে আল্লাহর কাছ থেকে আপনাকে রক্ষা করার জন্য আপনি না কোনো অভিভাবক পাবেন , না কোনো রক্ষাকারী পাবেন।”
(সূরাহ্ আর্-রা‘
দ্ : 36-37)
উপরোক্ত আয়াতে লক্ষ্যণীয় যে , এখানেعربي
শব্দকেحکم
(পরম জ্ঞান/ অকাট্য জ্ঞান) শব্দের সাথে‘
কোরআন’
-এর অবস্থা (حَل
) রূপে ব্যবহার করা হয়েছে যে ক্ষেত্রে‘
আরবী’
শব্দের অর্থ‘
আরব উপদ্বীপের লোক বা তাদের ভাষা’
করলে তা খুবই বিসদৃশ হবে। কারণ , পরম জ্ঞানপূর্ণ গ্রন্থ জনগোষ্ঠী বিশেষ বা অঞ্চল বিশেষের লোকদের ভাষায় প্রকাশ করতে হবে - এটা কোনো যুক্তি নয় , বরং এ বিষয় প্রকাশের জন্য উপযুক্ত ভাষাকে বেছে নিতে হবে। এ জন্য জনগোষ্ঠী বিশেষ বা অঞ্চল বিশেষের লোকদের ভাষাকে যদি বেছে নেয়া হয়ে থাকে তো তা কেবল এ কারণেই বেছে নেয়া হয়েছে যে , এ ভাষা ঐ বিষয় প্রকাশের উপযুক্ত।
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে :
)
حم. تنزيل من الرحمن الرحيم. کتاب فصلت آياته قرآناً عربياً لقوم يعلمون(
“
হা-মীম। এ হচ্ছে পরম দয়াময় মেহেরবানের পক্ষ থেকে অবতরণ (অবতীর্ণ গ্রন্থ)। এ হচ্ছে সূক্ষাতিসূক্ষ্ম ভাবপ্রকাশক প্রাঞ্জলভাষী (আরবী) কোরআন - এমন কিতাব্ যার আয়াত সমূহ সুস্পষ্ট ও অকাট্য অর্থজ্ঞাপক রূপে জ্ঞানবান লোকদের জন্য বর্ণিত হয়েছে।”
(সূরাহ্ হা-মীম্ আস্-সাজদাহ্ : 1-3)
এ আয়াতে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে , কোরআনকে“
আরবী”
করা হয়েছে জ্ঞানবান লোকদের জন্য। প্রশ্ন হচ্ছে , এর সাথে তৎকালীন আরব উপদ্বীপের অধিবাসীদের ও তাদের ভাষার কী সম্পর্ক ? তৎকালে আরবদের মধ্যে লেখাপড়া জানা লোকের সংখ্যা ছিলো খুবই কম এবং জ্ঞানী-দার্শনিক আদৌ ছিলো না। তাহলে জ্ঞানীদের স্বার্থে আরবদের ভাষায় কোরআন নাযিল্ হবে কেন ? বরং তৎকালে বিশ্বের অপর কতক অঞ্চলে জ্ঞানী ও দার্শনিকদের অস্তিত্ব ছিলো ; বড় বড় মনীষী সংখ্যায় খুব বেশী না থাকলেও অন্ততঃ মধ্যম স্তরের পণ্ডিত লোকের সংখ্যা কম ছিলো না - আরবে যা ছিলো বিরল ব্যতিক্রম। তাহলে কোরআন নাযিলের জন্য বরং ঐ সব পণ্ডিতদের ভাষা বেছে নেয়া উচিত ছিলো।
কিন্তু তা সত্ত্বেও আল্লাহ্ তা‘
আলা আরবদের ভাষা বেছে নিলেন। কারণ , তৎকালীন আরবরা মূর্খ হলেও তাদের ভাষা ছিলো সূক্ষাতিসূক্ষ্ম ভাবপ্রকাশক প্রাঞ্জল ভাষা যা পরম জ্ঞান প্রকাশের ও সংক্ষেপে সমস্ত জ্ঞানের সমাহার ঘটানোর উপযুক্ত ; অন্যান্য ভাষায় জ্ঞানী-দার্শনিক ও পণ্ডিত লোক থাকলেও তাঁদের ভাষা এ গ্রন্থের জন্য আদৌ উপযোগী ছিলো না। অতএব , এ গ্রন্থ আরবদের ভাষায়ই নাযিল্ হতে হবে ; এ ভাষায় এ গ্রন্থ নাযিল্ হওয়ার পর কখনো না কখনো বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের ও অন্যান্য ভাষাভাষী জ্ঞানবান লোকেরা এর সংস্পর্শে আসবেন এবং এ গ্রন্থ অধ্যয়ন ও বিশ্লেষণ করে এর জ্ঞানসম্পদ উদ্ঘাটন করে মানব প্রজাতিকে উপকৃত করবেন।
এ সব আয়াত থেকে সুস্পষ্ট যে , কোরআন মজীদকে আরব উপদ্বীপের লোকদের বুঝার জন্য সহজ করা এ গ্রন্থকে আরবী ভাষায় নাযিলের উদ্দেশ্য ছিলো না। বরং স্থান-কাল ও পরিবেশ-পরিস্থিতি নির্বিশেষে ক্বিয়ামত্ পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য পথনির্দেশ হিসেবে আল্লাহ্ তা‘
আলার মহাজ্ঞানপূর্ণ এ বাণীকে এমন এক ভাষায় নাযিল্ করা অপরিহার্য ছিলো যার ভাষাশৈলী ও সীমাহীন প্রকাশসম্ভাবনার আশ্রয়ে এতে এর আয়তনের তুলনায় বিস্ময়করভাবে বেশী ও সুগভীর তাৎপর্য নিহিত রাখা সম্ভব হয় , যা অধ্যয়ন ও অনুশীলনের ফলে জ্ঞানীদের নিকট প্রকাশ পেতে থাকবে , আর এর ফলে এ বিস্ময়কর গ্রন্থের উৎস সম্পর্কেও তাঁরা নিশ্চিত হতে পারবেন। এ কারণেই অন্য সমস্ত ভাষার তুলনায় প্রাঞ্জলতম ও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাব প্রকাশক ভাষায় (আরবী) এ গ্রন্থ নাযিল্ করা হয়েছে।