হযরত আলী (আ.)-এর দৃষ্টিতে হযরত মুহাম্মদ (সা.)

হযরত আলী (আ.)-এর দৃষ্টিতে হযরত মুহাম্মদ (সা.)0%

হযরত আলী (আ.)-এর দৃষ্টিতে হযরত মুহাম্মদ (সা.) লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: হযরত মোহাম্মদ (সা.)

  • শুরু
  • পূর্বের
  • 12 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 6070 / ডাউনলোড: 2474
সাইজ সাইজ সাইজ
হযরত আলী (আ.)-এর দৃষ্টিতে হযরত মুহাম্মদ (সা.)

হযরত আলী (আ.)-এর দৃষ্টিতে হযরত মুহাম্মদ (সা.)

লেখক:
প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে প্রেরণের উদ্দেশ্য

খুতবা 147 থেকে

মহান আল্লাহ বান্দাদেরকে মূর্তি পূজার কবল থেকে বের করে তাঁর ইবাদতের দিকে এবং শয়তানের আনুগত্য থেকে তাঁর আনুগত্যের দিকে আনয়ন করার জন্য হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে (মানব জাতির কাছে) প্রেরণ করেছিলেন যাতে করে বান্দারা তাদের মহান প্রভু আল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার পর তাঁকে সঠিকভাবে চিনতে পারে , তাঁকে অস্বীকার করার পর যাতে করে তাঁকে স্বীকার করে নেয় এবং তাঁর প্রতি অবিশ্বাস করার পর স্পষ্ট দলিল দ্বারা তাঁর অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারে , সেজন্য তিনি (আল্লাহ) পবিত্র কোরআন দ্বারা নিজ বান্দার কাছে নিজেকে পরিচিত ও তাঁর নিজ অস্তিত্বকে প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

তাই বান্দারা তাঁকে (মহান আল্লাহকে) চর্মচক্ষু দিয়ে না দেখেও তাদেরকে তাঁর অসীম শক্তির নমুনা দেখানো এবং তাঁর ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি সম্পর্কে তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ ঐশী গ্রন্থ আল-কোরআনে প্রকাশিত হয়েছেন (মহান আল্লাহকে বাহ্যিক চর্মচক্ষু দিয়ে দেখা সম্ভব নয় , বরং তাঁকে তাঁর প্রকাশিত নিদর্শন দ্বারাই অনুধাবন করতে হবে)। আর এ গ্রন্থটিতে মহান আল্লাহ স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন যে , তিনি কিভাবে শাস্তি দানের মাধ্যমে এক দলকে ধ্বংস করেছেন এবং প্রতিশোধ গ্রহণের মাধ্যমে আরেক দলকে ছিন্নভিন্ন (মূলোৎপাটন) করেছেন।

খুতবা 149 থেকে

তবে আমার অসিয়ত : তোমরা অবশ্যই আল্লাহর সাথে কোন কিছুই শরীক করবে না এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র সুন্নাহ্ ধ্বংস করবে না। তোমরা অবশ্যই এ দু টি স্তম্ভকে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত রাখবে এবং এ দু টি প্রদীপকে অবশ্যই প্রজ্বলিত রাখবে।

খুতবা 150

অনন্তর যখন মহানবী (সা.) মৃত্যুবরণ করলেন তখন একদল লোক তাদের পূর্বেকার (পেছনের) জীবনে (জাহেলিয়াতের দিকে) প্রত্যাবর্তন করল , তারা (বিচ্যুত) পথ ও মতসমূহের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে গেল। তারা প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে গেল (রাসূলের আহলুল বাইতকে অস্বীকার ও অগ্রাহ্য করে) অনাত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করল। তারা যাদেরকে (মহানবীর আহলুল বাইত) মুহব্বত করার ব্যাপারে আদিষ্ট হয়েছিল তাদেরকে বর্জন করল। তারা ইমারতকে সুদৃঢ় ভিত্তি ও সঠিক অবস্থান থেকে সরিয়ে নিয়ে অন্য (অনুপযুক্ত) স্থানে

স্থাপন করল। তারা সকল পাপ ও ভুল-ভ্রান্তির উৎসমূল এবং প্রচণ্ড আক্রমণকারীদের প্রবেশ দ্বার। তারা অস্থিরতা ও উত্তেজনার মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। মৃত্যু যন্ত্রণায় তাদের জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পেয়েছে ও তারা ধ্বংস হয়েছে। তারা ফেরাউন বংশের প্রথা ও রীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। তারা (আখেরাতের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে) কেবলমাত্র দুনিয়ার প্রতি আসক্ত ও এর ওপর নির্ভরশীল অথবা সত্য ধর্ম (ইসলাম) থেকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক ও বিচ্ছিন্ন।

খুতবা 151 থেকে

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি , মহান আল্লাহ ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি , হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল , নির্বাচিত-মনোনীত এবং তাঁর প্রিয় বন্ধু। কেউ তাঁর যোগ্যতা ও গুণের নিকটবর্তী হতে পারবে না (অর্থাৎ যোগ্যতা ও গুণে তিনি অতুলনীয়) আর তাঁর শূন্যতাও (তাঁকে হারানোর ক্ষতিও) কখনো পূরণ করা সম্ভব নয়। তিমিরাচ্ছন্ন , পথভ্রষ্টতা , প্রাধান্য বিস্তারকারী অজ্ঞতা এবং ভয়ঙ্কর , নিষ্ঠুর অত্যাচারে যখন সবাই লিপ্ত , (দিশেহারা) মানব জাতি যখন নিষিদ্ধ বিষয়কে হালাল মনে করত এবং জ্ঞানী-প্রজ্ঞাবানদেরকে অবমাননা করত , অলসতা অর্থাৎ ধর্মহীনতাকে পছন্দ করত এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যবরণ করত ঠিক তখনই তাঁর দ্বারা সকল দেশ ও জনপদ আলোকিত হয়েছে (অর্থাৎ সমগ্র মানব জাতি তাঁর দ্বারা হেদায়েত বা সৎ পথের সন্ধান পেয়েছে)।

খুতবা 158 থেকে

মহান আল্লাহ রাসূলদের বিদায় , জাতিসমূহের নিদ্রা ও অসচেতনতা এবং পূর্ববর্তী নবীদের দ্বারা স্পষ্ট বর্ণিত ধর্ম ও বিধি-বিধান বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার বেশ কিছুকাল পরে তাঁকে (সা.) [সমগ্র মানব জাতির কাছে] প্রেরণ করলেন। অতঃপর তিনি তাদের (মানব জাতির) কাছে আগমন করলেন যাতে করে তারা তাঁর সাথে যা আছে তা এবং সেই অনুসরণীয় আলো-যা হচ্ছে পবিত্র কোরআন তা সত্য বলে স্বীকার করে নেয়। অতএব , তোমরা যদি পবিত্র কোরআনকে কথা বলতে বলো তবে তা কখনোই কথা বলতে পারবে না (অর্থাৎ তা নির্বাক) , তবে তোমাদেরকে এই কোরআন সম্পর্কে আমি তথ্য দিতে পারি। তোমরা জেনে রাখো , এতে রয়েছে ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত জ্ঞান , অতীতের বিবরণ (তথ্য) , তোমাদের রোগের ঔষধ (নিরাময়) এবং তোমাদের জীবনের যাবতীয় বিষয়াদির বিধি-বিধান।

খুতবা 160 থেকে

নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মাঝে তোমার জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত আদর্শ। আর তাঁর কাছেই তোমার জন্য দুনিয়া ও বস্তুবাদিতার নিন্দাবাদ , দোষ-ত্রুটি। লাঞ্ছনা , অমঙ্গল ও দুর্যোগের আধিক্য সংক্রান্ত দলিল। কারণ তাঁর থেকে দুনিয়ার যাবতীয় রূপ ও দিককে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং অন্যের (দুনিয়া পূজারী) পদতলে বিছিয়ে রাখা হয়েছিল। তিনি দুনিয়ার স্তন্য পান করা থেকে অব্যাহতি ও মুক্তি পেয়েছিলেন এবং এর যাবতীয় চাকচিক্য , জৌলুস ও আড়ন্বরতা থেকে বহু দূরে ছিলেন।

অতএব , তোমরা নবী (সা.)-কে অনুসরণ কর যিনি সবচেয়ে পূতপবিত্র। নিশ্চয় যারা (তাঁর) অনুসরণ করে তাদের জন্য তাঁর মধ্যে রয়েছে আদর্শ এবং আর যারা সান্ত্বনা সন্ধান করছে অর্থাৎ শোকগ্রস্ত তাদের জন্য রয়েছে সান্ত্বনা। মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় বান্দা হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে নবীর অনুসরণকারী , তাঁর সুন্নাহর পাবন্দ। তিনি দুনিয়াকে খুব কমই ব্যবহার করেছেন এবং এ থেকে খুব সামান্যই গ্রহণ করেছেন।

তিনি ছিলেন পৃথিবীবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী অভুক্ত এবং (তাদের মধ্যে সবচেয়ে) বেশী উপবাসকারী (অর্থাৎ তিনি নিজ উদরকে দুনিয়া দিয়ে অর্থাৎ দুনিয়ার রকমারি সুস্বাদু ব্যঞ্জন দিয়ে কখনো পূর্ণ করেননি , বরং তা শূন্য রাখতেন)। তাঁর কাছে দুনিয়াকে উপস্থাপন করা হয়েছিল কিন্তু তিনি দুনিয়াকে প্রত্যাখ্যানই করেছিলেন (দুনিয়াকে গ্রহণ করতে সম্মত হননি)। তিনি যখন জানতে পারলেন মহান আল্লাহ কোন কিছুকে ঘৃণা করেন তখন তিনিও সেটিকে ঘৃণা করলেন , মহান আল্লাহ যার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেন তিনিও সেটির প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করলেন। মহান আল্লাহ যা তুচ্ছ মনে করেন তিনিও সেটিকেই তুচ্ছ মনে করলেন। মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা ঘৃণা করেন সেটির ভালোবাসাই যদি কেবল আমাদের মাঝে বিদ্যমান থাকে , মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা তুচ্ছ মনে করেছেন আমাদের অন্তরে যদি কেবল এর সম্মান বিদ্যমান থাকে , তা হবে মহান আল্লাহ থেকে দূরে সরে যাওয়া এবং তাঁর বিধি-নিষেধের বিরুদ্ধাচারণের শামিল। মহানবী (সা.) মাটিতে বসে আহার করতেন , ক্রীতদাসের মত বসতেন। নিজ হাতে (তাঁর) চপ্পল সিলাই করতেন , নিজ হাতে কাপড়ে তালি দিতেন , জিন বা আসনবিহীন গাধার ওপর আরোহণ করতেন এবং (গাধার পিঠে যখন চড়তেন তখন) তিনি তাঁর পেছনে অন্য আরেকজন ব্যক্তিকেও বসাতেন। একবার তাঁর বাড়ীর দরজার ওপর এমন একটি পর্দা টাঙ্গানো হয়েছিল যার মধ্যে কিছু ছবি অংকিত ছিল। এ কারণে তিনি (তা দেখে) তাঁর একজন স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন , হে অমুক , পর্দাটি আমার (চোখের সামনে) থেকে সরিয়ে ফেল। কারণ যখনই আমি ঐটির দিকে তাকাই তখনই দুনিয়া ও এর চাকচিক্যের কথা আমার স্মরণ হয়। সুতরাং তিনি অন্তর দিয়েই দুনিয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন এবং তাঁর মন থেকে এর স্মরণকে (সম্পূর্ণরূপে) মিটিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি পছন্দ করতেন এবং ভালোবাসতেন যে , তাঁর চোখের সামনে থেকে দুনিয়ার সব সৌন্দর্য , চাকচিক্য দূর হয়ে যাক যাতে করে তাঁকে দুনিয়া থেকে গর্বের কোন পোশাক যেন পরিধান , একে (এ দুনিয়াকে) যেন তাঁর আবাসস্থল বলে বিবেচনা এবং এ জগতে যেন কোন পদমর্যাদার আশা করতে না হয়। তাই তিনি মন ও হৃদয় থেকে দুনিয়াকে বের করে দিয়েছিলেন এবং দৃষ্টি শক্তির সীমা থেকে দূর করেছিলেন। আর ঠিক একইভাবে যে ব্যক্তি কোন জিনিসকে অপছন্দ ও ঘৃণা করে আসলে সে ঐ জিনিসটির প্রতি দৃষ্টি দিতে (তাকাতে) এবং ঐ জিনিসটির আলোচনা ও স্মরণ করতেও ঘৃণাবোধ করে।

মহানবী (সা.)-এর মধ্যে এমন কিছু আছে যা দুনিয়ার যাবতীয় অনিষ্ট , দুর্যোগ-দুর্গতি এবং দোষ-ত্রুটি পরিষ্কার করে দেবে। মহান আল্লাহর কাছে তাঁর বিশেষ ফযীলত ও মর্যাদা (থাকা) সত্ত্বেও তিনি এ দুনিয়ায় অনাহারে কাটিয়েছেন। মহান আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী বান্দা হয়েও তাঁর থেকে দুনিয়ার চাকচিক্য ও মিথ্যা শান-শওকত দূর করা হয়েছে। অতএব , চিন্তাশীল পর্যবেক্ষণকারীর উচিত যেন সে তার বিবেক-বুদ্ধি দিয়েই পর্যবেক্ষণ করে এবং ভেবে দেখে , মহান আল্লাহ কি তাহলে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে সম্মানিত করেছেন , না অপদস্থ ও লাঞ্ছিত করেছেন ? যদি সে বলে , আল্লাহ তাঁকে লাঞ্ছিত ও অপদস্ত করেছেন , তাহলে সে মিথ্যাই বলল। মহান আল্লাহর শপথ! এটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় ও জঘন্য অপবাদ। আর যদি সে বলে , মহান আল্লাহ তাঁকে সম্মানিত করেছেন , তাহলে তার জানা উচিত , অন্যদের কাছে এ পৃথিবীকে প্রসারিত করে আসলে মহান আল্লাহ তাদেরকেই অপদস্ত ও লাঞ্ছিত করেছেন। তিনি এ দুনিয়াকে তাঁর সবচেয়ে নিকটবর্তী বান্দার কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন। অতএব , অনুসরণকারীর উচিত মহান আল্লাহর নবীর অনুসরণ করা , তাঁর সুন্নাহ্ ও আদর্শ মেনে চলা অর্থাৎ যেখানে তিনি প্রবেশ করেছেন সেখানে প্রবেশ করা। আর যদি এমন না হয় তাহলে সে ধ্বংসের হাত থেকে রেহাই পাবে না। কারণ মহান আল্লাহ তাঁকে কিয়ামতের নিদর্শন , (তাঁর নবুওয়াতই হচ্ছে কিয়ামত অত্যাসন্ন হওয়ার দলিল।

কারণ তাঁর পরে আর কোন নবী নেই) , জান্নাতের সুসংবাদদাতা , (জাহান্নামের) শাস্তির ভয় প্রদর্শনকারীস্বরূপ নিযুক্ত ও প্রেরণ করেছেন। তিনি এ পৃথিবী থেকে অভুক্তাবস্থায় বিদায় নিয়েছেন (দুনিয়ার ভোগ-বিলাস কখনোই তাঁকে স্পর্শ করতে পারে নি) । সম্পূর্ণ সুস্থভাবে ও নিরাপদে আখেরাতে (পরলোকে) গমন করেছেন। তিনি পাথরের ওপর পাথরও স্থাপন করেন নি (সুরম্য প্রাসাদ ও অট্টালিকাও নির্মাণ করেন নি)। আর পরিশেষে এ অবস্থায়ই তিনি তাঁর পথ অতিক্রম করেছেন এবং প্রভুর পক্ষ থেকে আহবানকারীর আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন । আমাদের ওপর মহান আল্লাহর দয়া-করুণা যে কত বড় ও অপরিসীম তার প্রমাণ হচ্ছে , তিনি তাঁকে (হযরত মুহাম্মদকে)আমাদের অনুসরণীয় ও নেতা করেছেন যাকে আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে ও পদে পদে অনুসরণ করছি। মহান আল্লাহর শপথ , আমি আমার এই পশমী বস্ত্রটির ওপর এতটা তালি লাগিয়েছি যে , তা তার ওপর তালিদাতাকে দেখে লজ্জাই পাচ্ছে। এক ব্যক্তি যখন আমাকে (এ ব্যাপারে)বলেছিল , আপনি কি ওটাকে (তালি দেয়া পশমী কাপড়টি) আপনার কাছ থেকে দূর করবেন না ? তখন আমি তাকে বলেছিলাম , আমা থেকে দূর হও! কারণ প্রভাত বেলায় সম্প্রদায় (কওম) রাত জেগে পথ চলাকে প্রশংসা করে (অর্থাৎ সম্প্রদায় এখানে যারা রাত ঘুমিয়ে কাটিয়েছে এবং যাত্রা বিরতি করেছে অর্থাৎ পথ চলেনি তারা ঘুম থেকে জেগে যখন দেখতে পায় রাতে যারা পথ চলেছে তারা তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেছে , তখন তারা রাতে না ঘুমিয়ে পথ চলাকে প্রশংসা করে এবং রাত ঘুমিয়ে কাটানোর জন্য তারা তদের নিজেদের ব্যাপারেই পরিতাপ করতে থাকে)।

খুতবা 161 থেকে

মহান আল্লাহ তাঁকে আলো দানকারী দ্যুতি (নূর) , স্পষ্ট দলিল-প্রমাণ , প্রকাশ্য কর্ম-পদ্ধতি (শরীয়ত) ও পথ প্রদর্শনকারী গ্রন্থ (পবিত্র কোরআন)সহ প্রেরণ করেছেন। তাঁর পরিবার শ্রেষ্ঠ পরিবার এবং তাঁর বংশধারা শ্রেষ্ঠ বংশধারা , যার ডাল-পালা ভারসাম্যপূর্ণ এবং ফলগুলো ঝুঁকে পড়েছে (তোলা বা চয়ন করার উপযুক্ত হয়েছে)। তাঁর জন্মস্থান পবিত্র মক্কা নগরী এবং তাঁর হিজরতস্থল তাইবাহ্ (পবিত্র মদীনা নগরী)। এর (মদীনার) দ্বারাই তাঁর স্মরণ সুউচ্চ ও সম্মানিত হয়েছে এবং সেখান থেকেই তাঁর কণ্ঠ (তাঁর বাণী-কথা) সর্বত্র প্রচারিত হয়েছে। মহান আল্লাহ তাঁকে যথেষ্ট দলিল-প্রমাণ , স্পষ্ট উপদেশ ও সংস্কারধর্মী দাওয়াত অর্থাৎ আহবানসহ প্রেরণ করেছেন। মহান আল্লাহ তাঁর দ্বারা অজ্ঞাত-অজানা ধর্ম ও শরিয়ত প্রকাশিত করেছেন এবং মানব জাতির মধ্যে প্রবিষ্ট বিদআত বা ধর্মবহির্ভূত প্রথা দূর করেছেন। আর তাঁর দ্বারা মহান আল্লাহ বিস্তারিত বিধি-বিধানসমূহও বর্ণনা করেছেন। অতএব , যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্মকে বাদ দিয়ে অন্য কোন ধর্মের অনুসারী হবে তার দুরবস্থা ও দুর্ভাগ্য স্পষ্ট প্রতিভাত হবে এবং তার রজ্জু ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাবে। আর তার পতন , স্খলনও বড় হবে। তখন তার প্রত্যাবর্তনস্থল হবে স্থায়ী (দীর্ঘ) দুঃখ ও কঠোর শাস্তি।

খুতবা 162 থেকে

আমরাই (মহানবীর আহলুল বাইত) বংশ মর্যাদা ও কৌলিন্যের দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং রাসূলুল্লাহর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং তাঁর সাথে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।

খুতবা 169

মহান আল্লাহ একটি সবাক ঐশীগ্রন্থ (আল-কোরআন) ও একটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিষয় (ইসলাম ধর্ম ও শরীয়ত) সহকারে একজন হেদায়েতকারী (পথ-প্রদর্শক) রাসূলকে (হযরত মুহাম্মদ) প্রেরণ করেছেন। একমাত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যক্তি ব্যতীত কেউ তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় না (যার স্বভাব-চরিত্রের মাঝে বক্রতা ও বিচ্যুতি বিদ্যমান কেবল সেই তাঁর হেদায়েত থেকে মুখ ফিরিয়ে ধ্বংস হয় এবং চিরস্থায়ী দুর্ভাগ্য ও ধ্বংসের অতল গহবরে চিরতরে তলিয়ে যায়)। সত্য ধর্ম ইসলামের সাথে সদৃশ নবোদ্ভাবিত বিষয়াদি (বিদআতসমূহ যা রাসূলুল্লাহর যুগে ছিল না বরং তাঁর পরে প্রচলিত হয়েছে) প্রকৃতপক্ষে ধ্বংসকারী (এসব বিদআতপন্থীদেরকে সমূলে ধ্বংস করে) তবে মহান আল্লাহ এগুলো (এসব বিদআত) থেকে যা রক্ষা করেছেন তা ব্যতীত। আর মহান আল্লাহর পরাক্রমশালী কর্তৃত্বে রয়েছে তোমাদের দীন ও রাষ্ট্রশক্তির অভ্রান্ততা , অকাট্যতা এবং স্থায়িত্ব।

অতএব , কপটতা পরিহার করে স্বেচ্ছায় বিশুদ্ধ চিত্তে একমাত্র তাঁকেই তোমাদের সমুদয় আনুগত্য প্রদান কর (অর্থাৎ মহান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে আনুগত্য প্রকাশ কর)। মহান আল্লাহর শপথ , হয় তোমরা সবাই এ কাজটি অবশ্যই আঞ্জাম দেবে নতুবা মহান আল্লাহ ইসলামের রাষ্ট্রশক্তি তোমাদের কাছ থেকে অবশ্যই কেড়ে নেবেন। অতঃপর তোমাদের থেকে ভিন্ন ব্যক্তিদের কাছে তা প্রত্যাবর্তন করা পর্যন্ত তিনি তা তোমাদের কাছে আর কখনো ফিরিয়ে দেবেন না।

খুতবা 173 থেকে

(হযরত মুহাম্মদ) তাঁর (আল্লাহর) ঐশী প্রত্যাদেশের বিশ্বস্ত আমানতদার , তাঁর সর্বশেষ রাসূল। তাঁর দয়া ও করুণার সুসংবাদদাতা এবং তাঁর শাস্তির ভয় প্রদর্শনকারী।

খুতবা 178 থেকে

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে , হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর (মহান আল্লাহর) বান্দা , তাঁর সকল সৃষ্টির মধ্য থেকে তাঁর মনোনীত রাসূল , তাঁর নিগূঢ় বাস্তব তাৎপর্য ও সত্যসমূহ ব্যাখ্যা করার জন্য নির্বাচিত। তাঁর (মহান আল্লাহর) সুমহান (উত্তম) অলৌকিক বিষয়াদি অর্থাৎ মু জেযাসমূহের জন্য তিনি বিশেষভাবে নির্ধারিত (অর্থাৎ তিনি মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত মহান আলৌকিক বিষয়াদি অর্থাৎ মু জেযাসমূহেরও অধিকারী ছিলেন)। তিনি তাঁর (মহান আল্লাহর) রিসালতের সকল উৎকৃষ্ট গুণ ও বৈশিষ্ট্যের জন্য একান্তভাবে মনোনীত ও নির্বাচিত। তাঁর দ্বারা হেদায়েতের সকল চিহ্ন ও নিদর্শন স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে এবং অন্ধত্বের (জাহেলীয়াত) গাঢ় কালো আঁধারও তাঁর দ্বারা দূরীভূত হয়েছে।

খুতবা 185 থেকে

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি , হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও তাঁর একান্ত মনোনীত (নির্বাচিত) রাসূল। তিনি মহান আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট এবং তাঁর বিশ্বস্ত আমানতদার। মহান আল্লাহ তাঁর ও তাঁর বংশধরদের ওপর অশেষ দরুদ ও সালাত প্রেরণ করুন। তিনি তাঁকে অত্যাবশ্যকীয় দলিল-প্রমাণ , প্রকাশ্য বিজয় (সত্য ধর্মের বিজয়) এবং সুস্পষ্ট পথ ও পদ্ধতিসহ প্রেরণ করেছিলেন। তাই তিনি প্রকাশ্যে ও সত্য ঘোষণা দিয়ে আল্লাহর রিসালাত (অর্থাৎ সত্য ধর্ম ইসলাম) প্রচার করেছেন। তিনি মানব জাতিকে সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করেছেন সৎ পথের সন্ধান দিয়েছেন। তিনি হেদায়েতের চিহ্ন ও নিদর্শন এবং আলোর মিনার প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি ইসলামের রজ্জুকে শক্তিশালী ও ঈমানের গ্রন্থিসমূহকে সুদৃঢ় করেছেন।

খুতবা 190 থেকে

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি , হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল। তিনি মানব জাতিকে মহান আল্লাহর আনুগত্যের দিকে আহবান করেছিলেন। তিনি ধর্মের জন্য জিহাদ করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর শত্রুদেরকে দমন করেছিলেন। তাঁকে প্রত্যাখ্যান ও অস্বীকার করার ক্ষেত্রে (সকল কাফের-মুশরিকদের) ঐকমত্য এবং তাঁর প্রচারিত দীনের আলো নির্বাপিত করার যাবতীয় চেষ্টা-প্রচেষ্টা তাঁকে (তাঁর সুমহান আদর্শ ও দায়িত্ব-কর্তব্য থেকে) বিরত রাখতে পারেনি।

খুতবা 191 থেকে

আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি , হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল। মানব জাতি যখন তীব্র ফেতনা ও ভয়ঙ্কর বিপদাপদে (আকণ্ঠ) নিমজ্জিত ছিল এবং জটিলতা ও বুদ্ধিহীনতার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল , যখন তাদেরকে মৃত্যুর লাগামসমূহ আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছিল এবং পথভ্রষ্টতার পর্দা যখন তাদের অন্তঃকরণসমূহকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল ঠিক সেই সময় মহান আল্লাহ তাঁকে প্রেরণ করেছিলেন।

খুতবা 192 থেকে

তাদের ওপর প্রদত্ত মহান আল্লাহর নেয়ামতসমূহের ক্ষেত্রগুলোর দিকে তোমরা সবাই লক্ষ্য কর , যখন তিনি তাদের কাছে একজন রাসূল প্রেরণ করলেন যিনি তাঁর ধর্মের সাথে তাদের আনুগত্যকে জুড়ে দিলেন এবং তাঁর নিজ আহ্বানের ওপর তাদের বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতিকে সন্নিবেশিত করলেন। তোমরা সবাই লক্ষ্য কর , তাদের ওপর মহান আল্লাহর নেয়ামতসমূহ কিভাবে দয়া ও মহত্ত্বের ডানা বিস্তৃত করেছিল এবং কিভাবে তাদেরকে মহান আল্লাহর নেয়ামতসমূহের বান ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল । মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের কাছে আগত কল্যাণ ও বরকতে তাদের দ্বারা একটি আদর্শিক জাতিসত্তা ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছিল। তাই তারা খোদা প্রদত্ত নেয়ামতসমূহের মাঝে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ও সজীব , প্রাণবন্ত জীবন-ধারায় পূর্ণ তুষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এক শক্তিশালী শাসকের ছত্রছায়ায় তাদের সকল বিষয় সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং প্রবল সম্মান ও মর্যাদার ক্রোড়ে তারা আশ্রয় লাভ করেছিল। আর স্থায়ী রাজ্যশক্তির শীর্ষে তাদের অবস্থানের কারণেই তাদের দিকে সকল বিষয় ঝুঁকে গিয়েছিল।

অতএব , তারাই জগৎসমূহের ওপর শাসনকর্তা এবং সমগ্র বিশ্বের অধিপতি। যারা তাদের মাঝে বিধি-বিধানসমূহ বলবৎ ও কার্যকরী করত (অর্থাৎ শাসন করত) এখন তারাই তাদের ওপর বিধি-বিধানসমূহ বলবৎ ও কার্যকরী করছে। তাদের জন্য বর্শা আর পরীক্ষিত করা হয় না এবং তাদের জন্য কোন শক্ত কঠিন পাথরও ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করা হয় না। যাতে তিনি সকল ভুল-ভ্রান্তি থেকে মুক্ত ও পবিত্র থাকেন সেজন্য মহান আল্লাহ শ্রেষ্ঠ ফেরেশতাকে তাঁর নিত্য সঙ্গী করে দিয়েছিলেন। ঐ ফেরেশতা তাঁকে দিবা-রাত্র শিষ্টাচার শিক্ষা দিতেন এবং জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যাবলীর দিকে পরিচালিত করতেন। উষ্ট্র শাবক যেমনভাবে উষ্ট্রীকে অনুসরণ করে ঠিক সেভাবে আমি তাঁকে অনুসরণ করতাম। তিনি প্রতিদিন তাঁর উন্নত চরিত্র থেকে একটি নিদর্শন আমাকে শিক্ষা দিতেন এবং আমাকে তা পালন করার নির্দেশ দিতেন।...

তাঁর ওপর যখন ওহী অবতীর্ণ হয়েছিল তখন আমি শয়তানের ক্রন্দন ধ্বনি শুনেছিলাম। তাই আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ,‘‘ হে রাসূলুল্লাহ! এ ক্রন্দন ধ্বনি কার ?’’ তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন ,‘‘ এই শয়তান এখন থেকে তার পূজা (ইবাদত) করা হবে না বলে হতাশ ও নিরাশ হয়ে গেছে। নিশ্চয় তুমি আমি যা শুনি তা শুন এবং আমি যা দেখি তা দেখ। তবে তুমি নবী নও , কিন্তু [নবীর] সহকারী এবং নিঃসন্দেহে তুমি মঙ্গল ও কল্যাণের ওপরই আছ।

আমি ঐ সময় তাঁর সাথে ছিলাম যখন কুরাইশদের নেতৃবর্গ তাঁর কাছে এসে বলল ,‘‘ হে মুহাম্মদ! তুমি এমন এক বিষয় দাবী করছ যা তোমার কোন পূর্বপুরুষ এবং তোমার বংশের কোন ব্যক্তি ইতোপূর্বে দাবী করে নি। এখন আমরা তোমার কাছে এমন একটি বিষয়ে প্রশ্ন করব যদি তুমি তার সঠিক জবাব দিতে পার এবং তা আমাদেরকে প্রদর্শন কর তাহলে আমরা নিশ্চিত হব যে , তুমি সত্য নবী ও রাসূল। আর যদি তুমি তা করতে না পার তাহলে আমরা নিশ্চিত হব , তুমি ভয়ঙ্কর মিথ্যাবাদী ও যাদুকর। তখন মহানবী তাদেরকে বললেন ,‘‘ তোমরা কি জিজ্ঞেস করতে

চাও ? তখন তারা বলল ,‘‘ তুমি এ বৃক্ষটিকে আহবান কর যাতে এটি তার মূলসমেত তার স্থান থেকে উঠে এসে তোমার সন্মুখে দণ্ডায়মান হয়। তখন মহানবী (সা.) বললেন ,‘‘ মহান আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। অতএব , মহান আল্লাহ যদি তা তোমাদের জন্য আঞ্জাম দেন তাহলে তখন কি তোমরা বিশ্বাস করবে এবং সত্যের সাক্ষ্য প্রদান করবে ? তারা বলল ,‘‘ হ্যাঁ। তখন মহানবী বললেন ,‘‘ তাহলে তোমরা যা আমার কাছে দাবী করছ তা আমি তোমাদেরকে দেখাব। তবে আমি ভালোভাবে অবগত আছি , তোমরা কল্যাণ ও মঙ্গলের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে না। কারণ তোমাদের মধ্যে কুয়ায় নিক্ষিপ্ত হয় এমন ব্যক্তি এবং দলসমূহকে একত্র ও ঐক্যবদ্ধ করে এমন ব্যক্তিও আছে।’’ এরপর মহানবী (উক্ত গাছটিকে লক্ষ্য করে) বললেন ,‘‘ হে বৃক্ষ! যদি তুমি মহান আল্লাহ ও শেষ বিচার দিবসে বিশ্বাসী হয়ে থাক এবং জেনে থাকো , আমি আল্লাহর রাসূল তাহলে মহান আল্লাহর অনুমতি নিয়ে শিকড় ও মূলসহ তোমার স্থান থেকে উঠে এসো এবং আমার সামনে দাঁড়িয়ে যাও।’’ যে সত্তা তাঁকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন ঐ বৃক্ষটি তাই করল , মূলসমেত (উঠে এসে মহানবীর সামনে) দণ্ডায়মান হল এবং তখন তা তীব্র গর্জন করছিল এবং পাখীর ডানার যেরূপ শব্দ হয় সেরূপ শব্দ করছিল। বৃক্ষটি উড়ে এসে মহানবীর সামনে এসে দাঁড়াল এবং সবচেয়ে উঁচু ডালটি মহানবীকে স্পর্শ করল আর তার কতিপয় শাখা দিয়ে আমার কাঁধও স্পর্শ করল। আমি তখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ডান পাশে ছিলাম। ঐ দলটি যখন এ মুজেযাটি প্রত্যক্ষ করল তখন গর্ব ও দম্ভ করে বলল ,‘‘ হে মুহাম্মদ! এ গাছটিকে আদেশ দাও তো ওটির অর্ধাংশ স্বস্থানে থেকে যাবে এবং বাকী অর্ধাংশ তোমার কাছে চলে আসবে।’’ অতঃপর রাসূল গাছটিকে তা করার আদেশ দিলেন। নির্দেশ শুনে গাছটি অত্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবে তীব্র গর্জন করতে করতে এগিয়ে আসল। তা প্রায় মহানবীর চারপাশ ঘিরে ধরল। (এ দৃশ্য দেখে) তারা কুফরী ও ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে বলল ,‘‘ এ অর্ধাংশটিকে পূর্বে যেমন ছিল তেমনি ঐ বৃক্ষটির বাকী অর্ধাংশের কাছে ফিরে যাবার নির্দেশ দাও। অতঃপর মহানবী (সা.) নির্দেশ দিলে তা বাকী অর্ধাংশের কাছে ফিরে গেল। তখন আমি বললাম ,‘‘ আল্লাহ ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই ; হে রাসূলুল্লাহ! আমি আপনার প্রতি সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকারী। আমি প্রথম স্বীকারোক্তিকারী যে গাছটি মহান আল্লাহর নির্দেশে আপনার নবুওয়াতের সত্যায়নকারী এবং আপনার কথার প্রতি সম্মান প্রদর্শনস্বরূপ যা করার দরকার ছিল তা-ই করেছে।’’ এরপর ঐ সব কাফির-মুশরিক বলল ,‘‘ (হে মুহাম্মদ!) তুমি ভয়ঙ্কর মিথ্যাবাদী , যাদুকর। আজব ধরনের যাদুকরী ক্ষমতা ও শক্তির অধিকারী তুমি যে , (দর্শকদের জ্ঞান-বুদ্ধি) একেবারে লোপ পেয়ে যায়। তোমার ব্যাপারে এ ধরনের ব্যক্তি (তারা আমাকেই বুঝাতে চেয়েছে) কি তোমার সত্যায়নকারী ? আর আমি (আলী) এমন এক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে নিন্দুকের নিন্দা যাদের ওপর বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলে না , যাদের বদনমণ্ডল সিদ্দীক অর্থাৎ পরম সত্যবাদীদের বদনমণ্ডল। যাদের কথা পুণ্যবানদের কথা , যারা রাত্রি জাগরণকারী (রাত জেগে মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী ও ধ্যান করে) ও দিনের আলোকবর্তিকা , যারা পবিত্র কোরআনের রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণকারী , যারা মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সুন্নাহ্ পুনরুজ্জীবিত করে , যারা গর্ব ও অহংকার করে না ও নিজেদেরকে বড় মনে করে না ,

বিশ্বাসঘাতকতা করে না এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে না , যাদের অন্তঃকরণসমূহ বেহেশতে এবং দেহসমূহ এ পার্থিবজগতে কর্মে নিয়োজিত আছে।

খুতবা 194 থেকে

আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি , হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল। তিনি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সর্বোচ্চ পরিমাণ দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করেও নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। এজন্য তিনি শ্বাসরোধকারী কণ্টক ও গলাধঃকরণ করেছিলেন (অর্থাৎ তাঁকে এজন্য অত্যন্ত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে)। তাঁর নিকটাত্মীয়গণ (বনু হাশিম) পক্ষাবলম্বন করেছিল। আর দূরবর্তিগণ (অনাত্মীয়গণ)তাঁর বিরুদ্ধে একত্র হয়েছিল। আরব জাতি তাদের বিরুদ্ধে অশ্বসমূহের লাগাম ঢিলা ও অবনত করেছিল এবং তারা নিজেদের বাহক পশুসমূহের পেটে আঘাত করে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল। ফলে (আরবের) প্রত্যন্ত এলাকা ও দূর-দূরান্ত থেকে শত্রুগণ তাঁর দোরগোড়ায় তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে উপস্থিত হয়েছিল।

খুতবা 195 থেকে

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি , হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল। যখন হেদায়েত অর্থাৎ সুপথপ্রাপ্তির নিদর্শনাদি ধ্বংস ও ধর্মের সমুদয় পথ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল তখন মহান আল্লাহ তাঁকে প্রেরণ করেছিলেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.) [মিথ্যার সৌধকে ধূলিসাৎ করে] প্রকাশ্যে সত্যের ঘোষণা ও প্রচার করেছিলেন , মানব জাতিকে সদুপদেশ দিয়েছিলেন এবং তাদেরকে সুপথে পরিচালিত করেছিলেন। তিনি প্রতিটি বিষয় ও ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন । মহান আল্লাহ তাঁর ও তাঁর পবিত্র আহলুল বাইতের ওপর দরুদ ও সালাম প্রেরণ করুন।

খুতবা 196 থেকে

মহান আল্লাহ তাঁকে এমন সময় প্রেরণ করেছিলেন যখন কোন নিদর্শন , (হেদায়েতের) আলোকবিচ্ছুরণকারী কোন আলোকবর্তিকা , কোন সুস্পষ্ট পথ ও পদ্ধতি (অর্থাৎ কোন কিছুই) বিদ্যমান ছিল না ।

খুতবা 198 থেকে

অতঃপর মহান আল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ঐ সময় সত্যসহ প্রেরণ করলেন যখন এ পৃথিবীর ধ্বংস অত্যাসন্ন হয়ে পড়েছিল , যখন পরকালের আগমন (কিয়ামত) নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছিল ; আলোকিত হবার পর সকল সৌন্দর্য ও শোভা নিকষ কালো আঁধারে পরিণত হয়েছিল এবং পৃথিবী তার নিজ অধিবাসীদের পদতলে দলিত ও পিষ্ট করছিল ; পৃথিবীর উপরিভাগ রুক্ষ ও কঠিন হয়ে পড়েছিল (অর্থাৎ দুনিয়ার যন্ত্রণা তীব্র আকার ধারণ করেছিল) এবং তা ধ্বংসের নিকটবর্তী হয়ে পড়েছিল। আর এটি ছিল পৃথিবীর জীবনকাল শেষ হবার সময় , এর ধ্বংস হবার চিহ্ন ও নিদর্শনসমূহ নিকটবর্তী হবার সময় , পৃথিবীবাসীদের সমূলে উচ্ছেদ হবার সময় , এর জীবনসূত্র ছিন্ন হবার সময় , এর (পার্থিবজগতের) ইতস্তত বিক্ষিপ্ত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবার সময় , এর (পার্থিবজগৎ ও জীবনের) যাবতীয় চিহ্ন ও নিদর্শন বিলুপ্ত হবার সময় , এর যাবতীয় কুৎসিত দিক ও চেহারা প্রকাশিত হবার সময় এবং এর দীর্ঘ জীবনের সংক্ষিপ্ত হয়ে যাবার সময়।

(এই মহাক্রান্তি কালে) মহান আল্লাহ তাঁকে (হযরত মুহাম্মদ) তাঁর রিসালত বা ঐশী বাণীর প্রচারক , তাঁর উম্মতের সম্মানের প্রতীক , তাঁর যুগের অধিবাসীদের বসন্ত , তাঁর সঙ্গী-সাথীদের গৌরব এবং তাঁর সাহায্যকারীদের মর্যাদার প্রতীক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি , হযরত মুহাম্মদ (সা.) মহান আল্লাহর একান্ত মনোনীত , তাঁর ঐশী বাণীর দূত ও তাঁর রহমতের রাসূল।

খুতবা 199 থেকে

(হে নবী) আপনি আপনার পরিবারবর্গকে নামায পড়ার আদেশ দিন এবং এর ওপর ধৈর্য সহকারে বহাল থাকুন মহান আল্লাহর এ বাণীর জন্য তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ ও নিশ্চয়তা দেয়ার পরও রাসূলুল্লাহ (সা.) এত অধিক নামায পড়তেন যে , তিনি ক্লান্ত হয়ে যেতেন।

খুতবা 202 থেকে

হযরত আলী (আ.) নবী দূহিতা হযরত ফাতেমা (আ.)-কে দাফন করার সময় বলেছিলেন : হে রাসূলুল্লাহ্! আমার পক্ষ থেকে এবং আপনার কন্যার যিনি আপনার সান্নিধ্যে গমন করেছেন এবং আপনার সাথে মিলিত হয়েছেন তাঁর পক্ষ হতে আপনার ওপর সালাম। হে রাসূলাল্লাহ্! আপনার সবচেয়ে প্রিয় কন্যার বিয়োগ ব্যথায় আমার ধৈর্য হ্রাস পেয়েছে , তাঁর শোকে আমার সহ্যশক্তি দুর্বল হয়েছে। তবে আপনার মহাপ্রয়াণ ও আপনাকে হারানোর বিরাট মুসিবতে যে আমি ধৈর্যধারণ করতে পেরেছি তাতেই রয়েছে আমার সান্ত্বনা। আমি আপনাকে কবরে শায়িত করেছিলাম। আর আমার গ্রীবা ও বক্ষদেশের মাঝখানে আপনার পবিত্র আত্মা দেহত্যাগ করেছিল। নিশ্চয় আমরা মহান আল্লাহর এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁর কাছে প্রত্যাবর্তন করব। (আমার কাছ থেকে) আমানত ফিরিয়ে নেয়া হলো এবং যা দেয়া হয়েছিল তা পুনরায় নিয়ে নেয়া হলো। আপনি যে ঘরে বসবাস করছেন সে ঘরের জন্য আমাকে মনোনীত করা পর্যন্ত আমার সকল দুঃখ ও শোক এখন স্থায়ী হয়ে গেল এবং রজনীগুলো নিদ্রাহীনতা ও জাগরণের মধ্যে দিয়েই অতিবাহিত হবে। আর অতি শীঘ্রই আপনাকে আপনার কন্যা আপনার উম্মত তাঁর ওপর যে অত্যাচার করেছে তা অবহিত করবেন। অতএব , আপনি তাঁকে বিস্তারিত সব কিছু জিজ্ঞেস করুন এবং তাঁর কাছ থেকে প্রকৃত অবস্থা জেনে নিন। এটি (আপনার প্রাণপ্রিয় কন্যাকে হারানো) এত অল্প সময়ের মধ্যে ঘটেছে যে , আপনার মৃত্যুর পর দীর্ঘকালও অতিবাহিত হয় নি এবং আপনার পুণ্য স্মৃতি এখনো বিদ্যমান। আপনাদের উভয়ের প্রতি আমার সালাম। এ সালাম একজন চিরবিদায় জ্ঞাপনকারীর , তবে এটি ঘৃণা প্রদর্শনকারী বা বিরক্ত কোন ব্যক্তির সালাম নয়। তাই , আমি যদি (এ স্থান থেকে)চলে যাই তা এজন্য নয় যে , আমি অস্থির ও ক্লান্ত হয়ে গেছি। আর আমি যদি (এখানে চিরস্থায়ীভাবে) থেকে যাই তাহলে তা এজন্য নয় যে , মহান আল্লাহ তাঁর ধৈর্যশীল বান্দাদের কাছে যে অঙ্গীকার করেছেন তাতে আমি কুধারণা পোষণ করি (অর্থাৎ আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়েছি)।

খুতবা 210

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশায়ও তাঁর ওপর মিথ্যারোপ করা হয়েছিল যদ্দরুন তিনি (সকলের উদ্দেশ্যে) ভাষণ দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন ,‘‘ যে ব্যক্তি ইচ্ছা প্রণোদিত হয়ে আমার ওপর মিথ্যারোপ করবে (অর্থাৎ আমার নামে মিথ্যা কথা বলবে) সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্ধারণ করে নেয়।’’

খুতবা 213 থেকে

তিনি (মহান আল্লাহ) তাঁকে (হেদায়েতের উজ্জ্বল) আলোসহ প্রেরণ করলেন এবং মনোনীত ও নির্ধারিত করার ক্ষেত্রে তাঁকেই অগ্রগামী করলেন (অর্থাৎ মহান আল্লাহ তাঁকে সকল মনোনীত ও নির্বাচিত ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করলেন)। তাঁর মাধ্যমে মহান আল্লাহ সকল ফাটল , চিড় ও বিভক্তি জোড়া দিলেন (অর্থাৎ মানব সমাজের যত দুর্নীতি , বিভেদ ও অনৈক্য বিরাজ-করছিল তা সংশোধন করে দিলেন।) এবং সত্যের উপর সকল প্রাধান্য বিস্তারকারীকে পরাভূত করলেন। তাঁর মাধ্যমে মহান আল্লাহ সকল দুঃখ-কষ্টকে সহজসাধ্য এবং অসমতল ভূমিকে সমতল করে দিলেন। আর এভাবে তিনি ডান-বাম সকল দিক থেকে পথভ্রষ্টতা ও গোমরাহী দূর করলেন।

খুতবা 214 থেকে

আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি , তিনি (মহান আল্লাহ) ন্যায়পরায়ণ যিনি ন্যায়পরাণতা অবলম্বন করেছেন এবং ন্যায়বিচারক ও মীমাংসাকারী যিনি সঠিক মীমাংসা করেছেন । আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে , হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল , তাঁর বান্দাদের নেতা। যখনই মহান আল্লাহ মানব জাতিকে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে উত্তরণ করে দুই বংশধারায় বিভক্ত করেছেন তখনই তিনি তাঁকে সর্বোত্তম বংশধারায় স্থাপন করেছেন। তাই তাঁর পবিত্র বংশধারায় (পূর্বপুরুষদের মধ্যে) কোন লম্পট-ব্যভিচারী ছিল না বা কোন পাপাচারীও তার শরীক হয় নি।

খুতবা 231 থেকে

হযরত মুহাম্মদ (সা.) যে ব্যাপারে আদিষ্ট হয়েছেন তা (সত্য ধর্ম) প্রকাশ্যে প্রচার করেছেন। তিনি স্বীয় প্রভুর ঐশী বাণী (মানব জাতির কাছে) পৌঁছে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে বিভক্তি ও অনৈক্যের ফাটল জোড়া দিয়েছেন ; তাঁকে দিয়ে বিচ্ছিন্নদেরকে (ঐক্যের) সূত্রে গ্রথিত করেছেন ; তাঁর মাধ্যমে মহান আল্লাহ বক্ষসমূহে প্রবিষ্ট শত্রুতা ও অন্তরসমূহে প্রজ্জ্বলিত হিংসা-বিদ্বেষের কারণে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়দেরকে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন।

খুতবা 235 থেকে

মহানবী (সা.)-এর পবিত্র লাশ মোবারক গোসল দিয়ে কাফন পরানোর সময় হযরত আলী (আ.) বলেছিলেন , আপনার জন্য আমার পিতামাতা উৎসর্গীকৃত হোক! আপনার মৃত্যুতে নবুওয়াত ও মহান নবীদের পবিত্র ধারা এবং আসমানের সংবাদসমূহ (ঐশী বাণীসমূহ) সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেল যা অন্য কোন নবীর মৃত্যুতে বন্ধ হয় নি। আমাদের (আহলে বাইত) কাছে আপনার মর্যাদা এতটা যে , আপনার শোক আমাদের কাছে সান্ত্বনার উৎস হয়ে গিয়েছে যা অন্যদের ক্ষেত্রে হয় নি। আপনার বিয়োগ-ব্যথা সর্বজনীন যে এক্ষেত্রে সকল মানুষই সমানভাবে অংশীদার। আর আপনি যদি ধৈর্যাবলম্বন করার আদেশ না দিতেন এবং অস্থির হতে বারণ না করতেন তাহলে আপনার বিয়োগ-ব্যথায় আমরা সবাই কেঁদে নয়নাশ্রু নিঃশেষ করে ফেলতাম আর তখন আপনার বিয়োগ-ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী ও আপনার শোক আমাদের নিত্য-সঙ্গী হয়ে যেত। এ বিয়োগ-ব্যথার দীর্ঘসূত্রতা ও শোকের নিত্যতা আপনার শানে আসলেই যৎসামান্য ও কিঞ্চিৎ (আমরা যদি দীর্ঘকাল আপনার বিয়োগ-ব্যথায় শোক প্রকাশ করতে থাকি তবুও তা যথেষ্ট হবে না)। কিন্তু এটি (আপনার মৃত্যু) এমনই এক বিষয় যা প্রত্যাখ্যান ও প্রতিহত করার উপায় নেই। আপনার জন্য আমার পিতামাতা উৎসর্গীকৃত হোক! আপনার প্রভুর সান্নিধ্যে আমাদেরকে স্মরণ করুন এবং আমাদেরকে আপনার স্মরণে রাখুন।

খুতবা 236

আলী (আ.) হিজরতের পর মহানবী (সা.)-এর সাথে তাঁর সাক্ষাতের পূর্ব পর্যন্ত তাঁর অবস্থা এ ভাষণে বর্ণনা করেছেন : অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর গমন পথ অনুসরণ করে চলতে লাগলাম এবং (যে পথের কথা মহানবী বলেছিলেন) তা স্মরণ করে আমি অগ্রসর হতে লাগলাম। অবশেষে আমি (মহানবীর নির্দেশ মোতাবেক) আল-আরজে(মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী একটি স্থান।)পৌঁছে গেলাম।