শাবান মাসের আমল
1. রোজা:
রেওয়ায়েতে বর্ণনা হয়েছে আল্লাহর নবী (স.) এই মাসে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রোজা রাখতেন এবং রমজানের রোজার সাথে নিজের রোজাকে মিলিয়ে দিতেন।
হজরত নবী করিম (স.) বলেছেন: শাবান মাস আমার মাস যে এই মাসে একটি রোজা রাখবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
প্রথম ইমাম হজরত আলী (আ.) বলেছেন: শাবান ও রমজান দুই মাসের রোজা রাখা হল আল্লাহর নিকট তওবা করা (ক্ষমা প্রার্থনা ও পুনরায় গুণাহে প্রত্যাবর্তন না করার শপথ করা ও মার্জনা চেয়ে নেওয়ার শামিল।
ষষ্ঠ ইমাম হজরত জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন: যখন হজরত নবী করিম (স.) শাবান মাসের (হেলাল) চাঁদ দেখতেন এক ব্যক্তিকে আদেশ দিয়ে বলতেন যে মদীনা বাসিদের কানে এ আহবান পৌঁছে দাও যে , আমি আল্লাহর রসূল (স.)-এর তরফ থেকে এসেছি শাবান মাসের চাঁদ উদয়ের খবর তোমাদের নিকটে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এবং নবী (স.)ও বার্তা দিয়ে পাঠিয়েছেন: জেনে রাখ! শাবান মাস আমার মাস , আল্লাহ তার উপর রহমত বষর্ণ করুন যে এই মাসে আমাকে সাহায্য করবে অর্থাৎ রোজা রাখবে।
প্রথম ইমাম হজরত আলী (আ.) বলেছেন: যখন থেকে রসূল (স.)-এর আহবানকারীর এ আহবান শুনেছি যে ;“
শাবান মাস আমার মাস আল্লাহ তার উপর রহমত বষর্ণ করুন যে এই মাসে আমাকে সাহায্য করবে অর্থাৎ রোজা রাখবে।”
তখন থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত কোন দিন এই রোজাগুলি ত্যাগ করেনি।
ষষ্ঠ ইমাম হজরত জাফর সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেছেন:“
যে ব্যক্তি শাবান মাসের প্রথম দিনে রোজা রাখবে তার উপর জান্নাত ফরজ আর যে দুদিন রোজা রাখবে আল্লাহ তায়া’
লা দিবারাত্রি তার প্রতি দৃষ্টি দান করেন আর এই দৃষ্টি জান্নাতে যাওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখবেন ; যে তিন দিন রোজা রাখবে আল্লাহ তাকে নিজের আরশের নিকট স্থান দেবেন ও জান্নাত প্রদান করবেন।”
2. ইস্তেগফার:
প্রতিদিন সত্তর বার এই দোওয়া পড়া:
اَسْتَغْفِرُ اللّهَ وَاَسْئَلُهُ التَّوْبَةَ
উচ্চারণ:“
আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আস আ লুহু ত-তাওবা”
প্রতিদিন সত্তর বার এই দোওয়া পড়া:
اَسْتَغْفِرُاللّهَ الَّذى لا اِلهَ اِلاّ هُوَ الرَّحْمنُ الرَّحیمُ الْحَىُّ الْقَیّوُمُ وَ اَتُوبُ اِلَیْهِ
উচ্চারণ:“
আস্তাগফিরুল্লাহাল লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুয়ার রাহমানির রহীম আল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম ওয়া আতু বু ইলাইহি।”
রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে:“
যে ব্যক্তি প্রতিদিন এই মাসে সত্তর বার ইস্তিগফার করবে অন্য মাসে সত্তর হাজার বার ইস্তিগফার করার সমতুল্য।”
তাওবা কি ভাবে করা উচিত:
রেওয়ায়েতে হজরত নবী করিম (স.) থেকে বর্ণি ত হয়েছে যে , হজরত রসূল (স.) একদা জ্বিলক্বাদা মাসের সোমবার নিজের গৃহ থেকে বের হয়ে বললেন:
হে জনগণ! তোমাদের মধ্যে কে তাওবা করতে চায় ? বর্ণনা কারী বলেন: আমরা সকলেই মিলে ব ললাম আমরা সকলে তাওবা করতে চাই।
অতপর হজরত নবী করিম (স.) বললেন: গোসল করবে , ও জু করবে , চার রাকআত (দুই দুই রাকআত করে) নামাজ পড়বে , প্রতি রাকআতে একবার সূরা আল-হা মদ , তিনবার সূরা তৌহীদ (কুলহু আল্লাহু) এবং একবার একবার করে সূরা নাস (কূল আয়ূজোবি রব্বিন্নাস) ও সূরা ফালাক্ব (কুল আয়ূজোবি রব্বিল ফালা ক্ব) পড়বে অতপর সত্তর বার ইস্তিগফার করবে এবং ইস্তিগফারের পর এই বাক্যকে মিলিয়ে পড়বে।
لا حول و لا قوّة الا بالله العلی العظیم
উচ্চরণ: লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়িল আজিম।
অতপর এই দোওয়া পড়বে:
یا عزیز یا غفار اغفرلی ذنوبی و ذنوب جمیع المؤمنین و المؤمنات فإنّه لایغفر الذّنوب الا انت.
উচ্চারণ:“
ইয়া আজি জু ইয়া গাফ্ফারু ইগফিরলি যুনুবি ওয়া জুনুবা জা’
মিয়ীল মো 'মেনীন ওয়াল মো 'মেনাতি ফা -ইন্নাহু লা -ইয়াগফেরুজ্জুনুবা ইল্লা আনতা।”
অতপর বললেন: আমার উম্মতের এমন কোন ব্যক্তি নেই যে এই আমল করবে কিন্তু তার জন্য আসমান থেকে ধ্বনি আসবে না যে , হে আমার বান্দা! তোমার নিজের আমল প্রথম থেকে আরম্ভ কর তোমার তাওবা কবুল হয়ে গিয়েছে তোমার গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।
এক ব্যক্তি আল্লাহর রসূলের নিকটে প্রশ্ন করে: যদি কেউ এই মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে (সময়ে) এই আমল করে তার জন্য কি কোন উপহার আছে ?
তিনি (স.) উত্তরে বললেন: অবশ্যই আছে , যা কি ছু বলেছি তাই তার জন্যও আছে।
3. শাবান মাসের মোনাযাত:
পবিত্র শাবান মাসে পড়ার জন্য শাবানের মোনাযাত বিশেষ ভাবে বর্ণনা হয়েছে এই মোনাযাতে আল্লাহ তায়ালার অতি মহত্বপূর্ণ গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে। এই মাস ছাড়া অন্য সময় পড়া ও অতি গুরুত্বপূর্ণ
আয়াতুল্লাহ খোমেনী (রহ.) বলেন: আমরা গর্বিত এজন্য যে , জীবন দানকারী (প্রার্থনা) দোওয়া যাকে কুরআনে সাঈদ (قرآن صاعد
) অর্থাৎ:“
উর্ধ্বগামী কুরআন”
বলা হয়েছে তা আমাদের পবিত্র ইমামদের নিকট থেকে বর্ণিত হয়েছে। আমাদের নিকটে ইমামদের মোনাযাতে শাবানিয়া , ইমাম হোসায়েন (আ.)-এর দোওয়া-এ-আরাফাত , জাবুরে আলে মুহম্মদ (স.) সহিফায়ে সাজ্জাদীয়া ও সহিফায়ে মাতেমা (আ.) যে আল্লাহর তরফ হতে হজরত জা হরা (আ.)-এর নিকটে ইলহাম হয়ে ছিল আমাদের ইমামগণ (আ.)-এর নিকট হতে বর্ণনা হয়েছে।
মোনাযাতে শাবানীয়া এমন একটি মোনাযাত যদি তা নিয়ে কেউ চিন্তা করে , তাহলে সে এক উচ্চস্থানে পৌঁছাতে পারে। যারা এই দোওয়া পড়তে চান মাফাতিহুল জিনানে শাবান মাসের যৌথ আমাল অধ্যায় দেখতে পারেন , দোওয়া এই বাক্যে আরম্ভ হয়:
اللهم صلّ علی محمد و آل محمد و اسمع دعائی اذا دعوتک.....
উচ্চরণ:“
আল্লাহুম্মা স ল্লেআলা মুহম্মাদীন ওয়া আলে মুহম্মাদীন ওয়া সমা’
দোওয়ায়ী ইযা দাআওতোকা...”
অর্থাৎ:“
হে আল্লাহ! মুহম্মাদ ও তাঁর বংশধরের উপর দরুদ বষর্ণ করুন , যখন আমি দোওয়া করি আপনি আমার দোওয়া (প্রার্থনা)কে শোনেন।”
4. হাজার বার জিকর করা:
এই মাসে এই জিকর এক হাজার বার পড়া:
لا اله الا الله و لا نعبد الا ایّاه مخلصین له الدین و لو کره المشرکین
উচ্চারণ:“
লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়ালা না’
বু দু ইল্লা ইয়্যাহু মুখলেসিনা লাহুদ্দীনা ওয়া লাও কারেহাল মুশরেকুন”
এই জিকর পড়া অতি ছোয়াবের কাজ তার মধ্যে হাজার বৎসরের ইবাদাতের ছোয়াব তার আমল নামায় লেখা হবে।
5.দরুদ পড়া :
এই মাসে ব্যপক ভাবে মুহম্মদ (স.) ও তাঁর বংশধরের উপর দরুদ শরীফ পড়া:
اللهم صلّ علی محمد و آل محمد
উচ্চরণ:“
আল্লাহুম্মা সল্লেআলা মুহম্মাদীন ও য় আলে মুহম্মাদ”
অর্থাৎ:“
হে আল্লাহ! মুহম্মাদ (স.) ও তাঁর বংশধরের উপর দরুদ বষর্ণ করুন।
6. এই মাসের প্রতি বৃহস্পতিবার দুই রাকআত নামাজ পড়া:
নামাজ পড়ার নিয়ম: প্রতি র কাতে আল হামদের পরে একশত বার কুলহু আল্লাহু আহাদ পড়তে হবে , নামাজের পর দরুদ পাঠ করতে হবে কেন না দোওয়া কবুল হওয়ার জন্য দরুদ শরীফ অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে।
উল্লেখ্য য যে , এই মাসের প্রথম , তৃতীয় ও পনের তারিখের জন্য বিশেষ আমল বর্ণিত হয়েছে। বিশেষ করে পনের তারিখের রাত্রে , এই রাত দ্বাদশ ইমাম হজরত মাহ্দী (আ.)-এর জন্মের রাত তাই খুবই কল্যাণকর ও মুবারক রাত।
পঞ্চম ইমাম হজরত মুহম্মদ বাকের ইবনে জয়নুল আবেদীন (আ.)-কে পনের শাবানের ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে ; তিনি (আ.) উত্তরে বলেন: এই রাত ক্বদরের রাতের পরে সর্বোত্তম রাত এই রাতে আল্লাহ তায়া’
লা নিজের বান্দাদেরকে কল্যান দান করেন এবং নিজের অনুগ্রহে তাদের পাপ সমূহকে মার্জনা করেন।
6. সাদকা দেওয়া:
এই মাসে সাদকা দেওয়া , যদিও তার পরিমান কম হোক না কেন , এতে জাহান্নামের আগুন তার থেকে দূরে সরে যায়।
ষষ্ঠ ইমাম হজরত জাফর সাদিক ইবনে মুহাম্মদ বাকের (আ.) কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে এই মাসে সর্বোত্তম আমল কি ?
-উত্তরে তিনি (আ.) বললেন: সাদকা দেওয়া ও ইস্তেগফার করা।