লেখকের কথা
আল্লাহর মহিমান্বিত নামে
এ বইটি বেশ কিছু হাদীসের ধারাবাহিক সংগ্রহ , যা বর্ণিত হয়েছে পবিত্র নবী (সাঃ) , তার বংশধর ও সাথীদের কাছ থেকে এবং এর সবগুলোই আমাদের সুন্নী ভাইদের উৎস থেকে। এতে আরো রয়েছে সুন্নী বিজ্ঞ ব্যক্তিদের কথা ও লেখা , আল মাহদী (আঃ) সম্পর্কে যিনি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর বংশ থেকে।
আশা করি এ বইটি আমার স্মৃতিচিহ্ন ও অন্যদের জন্য দুরদৃষ্টি হিসেবে থাকবে। আমি বইটিকে সাজিয়েছি একটি ভূমিকা , আটটি অধ্যায় দিয়ে। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি এর সফলতার জন্য এবং তাকেঁ বিনয়ের সাথে অনুরোধ করি যিনি তারঁ নেয়ামতে সর্বশ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী।
বইটি লেখার কারণ ও লেখকের পদ্ধতি
আমার কিছু বিজ্ঞ বন্ধু মর্যাদাপূর্ণ ও বিজ্ঞজনদের এক জমায়েতে আমার সাথে যোগ দেন। আলোচনা চলতে থাকে হাদীসের সত্যতা নিয়ে এবং এক পর্যায়ে তা বহু প্রতিক্ষীত আল-মাহদী (আঃ) এর বিষয়টি পর্যন্ত গড়ায়। এটি এমন একটি বিষয় যা আমরা (12 ইমামী শিয়ারা) বিশ্বাস করি এবং যা ধর্মের প্রধান বিষয়গুলোর একটি।
তখন উপস্থিতদের মাঝে কেউ কেউ জিজ্ঞেস করলেন :‘
আমাদের সুন্নী ভাইরা এ সম্পর্কে কী বলে এবং কোন হাদীস তাদের উৎস থেকে বর্ণিত হয়েছে কিনা , যা আমাদের হাদীসগুলোর সাথে মেলে ?
আমি বললাম :‘
হ্যা , তাদের নিজস্ব গবেষণা অনুযায়ী তাদের কাছে মিশ্রিত (মুসতাফিযা) এবং পূর্ণ নির্ভরযোগ্য (মুতাওয়াতির) হাদীস আছে এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ এ বিষয়ে বইও লিখেছেন। যাহোক , তাদের মধ্যে অল্প ক’
জন এর সত্যতা , বৈশিষ্ট্য ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে বলেছেন , যা আমরা বিশ্বাস করি।
অবশ্য এগুলোর মাঝে রয়েছে বিতর্ক , অনিশ্চয়তা এবং অসম্ভাব্যতা যা আসলে এক প্রজন্ম তার পূর্ববর্তী প্রজন্ম থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে এবং তারা সেগুলো বলে ও উল্লেখ করে তাদের বইগুলো ও লেখালেখিতে শুধু শব্দের পার্থক্য রেখে , কিন্তু অর্থে একই।
তখন একজন বললেন :‘
আপনি কি এ বিষয়ে একটি প্রবন্ধু লিখতে পারেন এবং যে লেখাতে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখবেন শুধু ঐ হাদীসগুলোর মধ্যে যেগুলো তাদের কাছেও এসেছে এবং এরপর ঐসব সমস্যা এবং অসম্ভাব্যতাসমূহ (যেগুলো নিয়ে তারা সমস্যায় আছে) উল্লেখ করবেন এবং এর উত্তর দেবেন ?’
আমি বললাম :‘
এ ধরনের আলোচনায় প্রবেশ করলে বন্ধুত্বের সীমালংঘন হবে এবং আমি চাই না এরকম কোন ফাটল দেখা দিক এসময়ে যখন আমরা মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য দেখতে চাচ্ছি।’
এরপর আরেকজন বললেন :‘
জ্ঞানের বিষয়ে আলোচনা কোন ক্ষতি আনবে না যদি এ আলোচনা বিতর্কের নিয়মকানুন মেনে চলে এবং কারো কথা যদি সৌজন্য ও নৈতিকতার সীমা অতিক্রম না করে। প্রকৃতপক্ষে কারো অধিকার নেই কঠোরভাবে কথা বলার ও অন্যকে তিরষ্কার করার।
প্রকৃতপক্ষে মানুষ তার ও আদর্শে স্বাধীন এবং তার অধিকার আছে সেগুলোর পক্ষে কথা বলার। তবে আমরা দেখেছি এ ক্ষেত্রে কিছু ব্যক্তি তাদের কথার মাধ্যমে অন্যের ক্ষতি করেছে এবং তাই তারা সে বিষয়ে দায়- দায়িত্ব বহন করে।’
জবাবে আমি বললাম :‘
আমি আপনাদের যুক্তি মেনে নিলাম এবং আমি এ কাজে আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতার উপর নির্ভর করে প্রবেশ করবো সব সৌজন্যমূলক আচরণ বজায় রেখেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে সত্য পথ দেখান যাকে তাঁর ইচ্ছা হয়।’
এ বিয়য়ে সুন্নী ভাইদের লেখা বইগুলোর গুটি কয়েকমাত্র আমরা ব্যবহার করবো যা আমার কাছে আছে। আমি এদের প্রত্যেকটি খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেছি। ওগুলোর বেশীরভাগের মাঝেই হাদীসগুলো সুনির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিকভাবে সাজানো নেই। আমি বেশ কিছু হাদীস সেগুলো থেকে নিয়েছি এবং বিষয়ভিত্তিকভাবে সাজিয়ে নিয়েছি যেন তা আমাদের উদ্দেশ্যকে সফল করে।
আমি প্রত্যেক হাদীসকে নির্দিষ্ট বিষয়ের অধীনে লিখেছি এবং যেসব হাদীসে অনেকগুলো বিষয় আছে সেক্ষেত্রে প্রত্যেকটি বিষয়কে বিষয়ের শিরোনামের অধীনে এনেছি এবং এরপর হাদীসের বিচ্ছিন্নতা উল্লেখ করেছি।
এটি বলা উচিত হবে যে আমি উপরোল্লেখিত হাদীসগুলো নিয়েছি আমার কাছে থাকা বইগুলো থেকে এবং যেসব বই আমার কাছে নেই সেগুলোকে আমি বর্ণনা করেছি সম্মানিত বিশেষজ্ঞদের উপর নির্ভর করে।
এছাড়াও হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে আমি নিজেকে শুধু সেসব বইগুলোতে সীমাবদ্ধ রেখেছি যা সুন্নী প্রিন্টিং হাউস থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া আমি ওসব বই এড়িয়ে গেছি যেসব বই ইরানে প্রকাশিত হয়েছে যেমন ,‘
আল বায়ান-ফি-আখবার-সাহেবুয যামান’
,‘
আল-ফুসুল-মুহিম্মে-ফি-মারিফাত-উল-আইম্মা’
এবং‘
তাযকেরাতুল-উম্মাহু ফি- আহওয়াল-আইম্মা’
। শুধু‘
তাযকেরাতুল আইম্মা’
বই থেকে কিছু বিষয় ছাড়া।
একইভাবে আমি নিজেকে বিরত রেখেছি আমাদের বিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করা থেকে এবং যা আমাদের বইগুলোতে ও লেখাতে জমা আছে। এসব করেছি শুধু এ সাধারণ কারণে যে হয়তো তা সন্দেহের উদ্রেক করবে (যেমন কেউ মনে করতে পারে যে বর্ণিত হাদীস মিথ্যা ও বানানো)। যাহোক , আমি কিছু নজির উল্লেখ করেছি‘
আল-দুরার-আল- মূসাউইয়া-ফি-শার-আল ক্বায়েদ-আল জাফারিয়া’
থেকে যেটি লিখেছেন আমাদের অভিভাবক আয়াতুল্লাহ আবি মুহাম্মাদ সাইয়্যেদ হাসান আল সদর কাযেমী। যার রয়েছে বিরাট অধিকার এবং যার কাছে আমরা অনেক ঋণী। আমি তার নজিরসমূহ উল্লেখ করেছি যুক্তি তর্কের জন্য নয় , বরং শুধুমাত্র আলোচ্য বিষয়টিকে সমর্থন করার জন্য।
আমি আল্লাহর কাছে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে , আমি এসব হাদীস ও পূর্ববর্তী লোকদের কথাকে ন্যায়বিচারের দৃষ্টিতে দেখেছি এবং পক্ষপাতিত্ব ও পথভ্রষ্টতা এড়িয়ে গেছি। আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি যে আমি আমার বিশ্বাসকে যুক্তির আলোকে গ্রহণ করবো কিন্তু বিশ্বাসকে যুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করবো না। যে কেউ বইয়ের বিষয়বস্তু পরীক্ষা করবে সে এ সত্য উপলদ্ধি করতে পারবে।
নিশ্চয়ই প্রত্যেকের ওপর এটি বাধ্যতামূলক বিশেষ করে ধর্মীয় বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে , অন্যের দেখানো পথটির সন্দেহ ও অনুমান থেকে নিজেকে মুক্ত করা। ব্যক্তির উচিত ধর্মীয় গোঁড়ামীর বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা এবং শুধু সত্যকে মনের উদ্দেশ্য রাখা। যা গ্রহণ করা উচিত তা হলো সত্য এবং যদি কেউ তা কোথাও পায় তাহলে সে তাকে জড়িয়ে ধরবে।
আল এক পলক দেখুন
যে গবেষক বিখ্যাত জ্ঞানী ব্যক্তিদের বইগুলোতে‘
উসুলে দ্বীন’
(ধর্মের মূল বিশ্বাস) অথবা‘
ফুরুয়ে দ্বীন’
(ধর্মের শাখা প্রশাখা) সম্পর্কে গবেষণা করেন , তিনি‘
মাহদাভীয়াত’
সম্পর্কে সুন্নী ভাইদের বইগুলোতে আলোচনা দেখতে পারেন। যেমন , এর বিশ্বাসযোগ্যতা , এর নির্ভরযোগ্যতা ইত্যাদি এবং এর বর্ণনাকারীরা অসংখ্য যারা হাদীস শাস্ত্রে প্রথম সারির ব্যক্তিত্ব।
‘
উসুলে দ্বীন’
(মূল বিশ্বাস) ও‘
ফরু’
(শাখা প্রশাখা) এর মধ্যে অনেক বিষয়েই আমাদের ঐক্য রয়েছে। এর মধ্যে মাহদী (আঃ) সম্পর্কে আহলে সুন্নাতের ভাইরা বিশদভাবে লিখেছেন।
তাদের নিজস্ব গবেষণা অনুযায়ী তারা হাদীস বর্ণনা করেছেন‘
মাহদী’
(আঃ) সম্পর্কে নবী (সাঃ)- এর কাছ থেকে সূরাসরি , কিছু তার মর্যাদাবান সাথীদের কাছ থেকে , কিছু তার স্ত্রীদের কাছ থেকে হাদীসের দৈর্ঘ্যে কিছু কমবেশী রেখে। তারা মাহদী (আঃ) সম্পর্কে দীর্ঘ ও সংক্ষিপ্ত উভয় হাদীসই নিয়েছেন তাদের প্রধান হাদীস বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে যেমন , বুখারী , মুসলিম , নাসাঈ , আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ থেকে।
তাদের মধ্যে হাদীস বিশেষজ্ঞদের নাম আরও বলা যায় যেমন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বাল ,আবুল ক্বাসেম তেহরানী , আবু নাঈম ইসফাহানী , হামাদ ইবনে ইয়াক্বুব রাউজানী এবং‘
মুসতাদরাক’
-এর লেখক হাকেম প্রমুখ।
একইভাবে গাঞ্জি , সিবতে ইবনে জাওযী , খাওয়ারাযমী , ইবনে হাজার , মোল্লা আলী মুত্তাকী (কানযুল উম্মালের লেখক) , শাবলাঞ্জী এবং কুন্দুযীর নাম উপেক্ষা করা যায় না।
[এ বিষয়ে তাদের কিছু বই হচ্ছে :‘
মানাক্বেব আল মাহদী’
, আবু নাঈম ইসফাহানীর‘
চল্লিশ হাদীস’
, আবু আব্দুল্লাহ গাঞ্জীর‘
বায়ান ফি আখবার সাহেবুয যামান’
, কানযুল উম্মালের লেখক মোলা আলী মত্তাকীর‘
আল বুরহান ফিমা জা’
আ ফি সাহেবুয যামান’
, হামাদ ইবনে ইয়াক্বুব রাউজানীর‘
আখবার আল-মাহদী’
, ও‘
আলামাত আল-মাহদী’
এবং ইবনে হাজার আসকালানীর‘
আল-ক্বওল উল মুখতাসার ফি আলামাত মাহদী মুনতাযার’
।
নিশ্চয়ই‘
মাহদী-ই-মুনতাযার’
ও‘
ক্বায়েম’
সম্পর্কে নবী (সাঃ) এর কাছ থেকে হাদীস যা সুন্নী ধারার মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে তার সংখ্যা অনেক এবং সেগুলো তাদের বক্তব্য সম্পর্কে‘
মুতাওয়াতির’
(নির্ভরযোগ্য) ।
ইবনে হাজার‘
সাওয়ায়েক্ব’
- এর 99 পৃষ্ঠায় এরকমই বলেন যে‘
আবুল হোসেন আবরি বলেছেন যে ,‘
মাহদী’
(আঃ) -এর আত্মপ্রকাশ সম্পর্কে যে হাদীসগুলো নবী (সাঃ)- এর কাছ থেকে এসেছে এবং যা আহলুল বাইতের বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে এসেছে সবই ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত হয়েছে।
“
নুরুল আবসার”
-এর 231 নং পৃষ্ঠায় শাবলাঞ্জি বলেন :“
রাসূল (সাঃ)- এর কাছ থেকে যে হাদীস এসেছে যে‘
মাহদী আমার বংশ থেকে ও পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে ভরে দেবে’
তা ধারাবাহিকভাবে বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে এসেছে।”
‘
ফতুহাতুল ইসলামিয়ার দ্বিতীয় খণ্ডের 322 নং পৃষ্ঠায় যাইনি দেহলান বলেন :“
মাহদী (আঃ)- এর আগমন সম্পর্কিত হাদীসের সংখ্যা অনেক এবং সেগুলো‘
মুতাওয়াতির’
(নির্ভরযোগ্য)। সেগুলোর মাঝে হতে পারে কিছু হাদীস‘
সহীহ’
(সঠিক) ,‘
হাসান’
(ভালো) অথবা‘
যাইফ’
(দূর্বল)। যাহোক , (সহীহ) হাদীসের সংখ্যার আধিক্য এবং বর্ণনাকারীর সংখ্যাও অনেক হওয়ার কারণে তা নির্ভরযোগ্য হিসেবে গ্রহণ করা ছাড়া উপায় থাকে না।”
দ্বিতীয় অধ্যায়ের একই পৃষ্ঠায় তিনি উল্লেখ করেছেন যে আল্লামা সাইয়্যেদ মোহাম্মদ ইবনে রাসূল বারযানজী তার বই“
আশশাত ফি আশরাত ই সাআহ”
-র শেষে উল্লেখ করেছেন যে মাহদী (আঃ) সম্পর্কে হাদীসগুলো‘
মুতাওয়াতির’
(নির্ভরযোগ্য)। তিনি আরো বলেন :‘
মাহদাভিয়াতের বিষয়টি সন্দেহাতীত এবং তিনি যে ফাতেমা (আঃ)-এর বংশ থেকে এবং পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবেন তা নির্ভরযোগ্য।’
আমরা যা বলেছি তা হলো মাহদী (আঃ) সম্পর্কিত হাদীসগুলোর নির্ভরযোগ্যতা ও সঠিকতা সম্পর্কে এরকম বিজ্ঞ লোকদের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রয়েছে। এসবের ভিত্তিতে এবং হাদীসের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী সন্দেহের আর কোন সুযোগ থাকে না। অস্বীকার করাতো দূরের কথা।
যদি এখন আমরা ঐসব সাক্ষ্য প্রমাণকে পিছনে রেখে হাদীসগুলোকে পরীক্ষা করতে যাই এদের ধারাবাহিক বর্ণনা ও মর্মার্থ অনুযায়ী তাহলে আমরা হাদীসগুলোকে তিনভাগে ভাগ করতে পারি।
প্রথম প্রকারঃ
ঐ সব হাদীসসমূহ যাদের বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিকতা সুস্পষ্ট এবং সন্দেহমূক্ত। এছাড়া আহলে সুন্নাতের নেতারা ও (হাদীস বিষয়ে) নেতৃস্থানীয়’
ব্যক্তিরা এদের নির্ভরযোগ্যতা ও সঠিকতা স্বীকার করেছেন। হাকেম তার‘
মুসতাদরাকে’
এগুলো থেকে কিছুর নির্ভরযোগ্যতা স্বীকার করেছেন বোখারী ও মুসলিমের নীতি অনুযায়ী এবং এগুলো গ্রহণের পয়োজনীয়তা সম্পর্কে এবং এগুলোর উপরে আমল করাতে কোন সন্দেহ থাকে না ।
দ্বিতীয় প্রকারঃ
ঐ হাদীসগুলো যাদের বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিকতা সঠিক নয় এবং তাদের মিথ্যা সুস্পষ্ট। কিন্তু হাদীস শাস্ত্রের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা সেগুলোকে গ্রহণ করতে বলে কারণ এর বক্তব্য প্রথম দলটির মত শক্তিশালী এবং দেখা যায় যে তা সাধারণভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। বরং বলা যায় যে এর বক্তব্য সমর্থিত হয়েছে ঐক্যমতে।
তৃতীয় প্রকারঃ
ঐ হাদীসগুলো যার মধ্যে আছে সঠিকতা ও দূর্বলতা উভয়টিই। কিন্তু অন্যান্য নির্ভরযোগ্য হাদীসের সাথে এর অসঙ্গতি থাকার কারণে তাদেরকে বাতিল বলে গণ্য করতে হবে এবং হিসাবে নেয়া হবে না। অন্যভাবে বলা যায় এদেরকে কোনভাবেই ব্যাখ্যা করা যায় না যাতে এগুলোর সাথে অন্য হাদীসগুলোর সঙ্গতি পাওয়া যায়। যেমন‘
হযরত মাহদী (আঃ) এর নাম হবে আহমাদ অথবা তার বাবার নাম হবে হযরত মুহাম্মাদ এর বাবার নামের মত অথবা সে হবে আবু মুহাম্মাদ হাসান যাকীর বংশ এবং আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর নয়’
-এগুলো প্রত্যাখ্যান করতে হবে। এছাড়া গবেষণায় দেখা যায় এ হাদীসগুলোর সংখ্যা কম এবং সাধারণভাবে জানা যায় যে এগুলোকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
এটি সম্ভব যে প্রথম বিষয়টি (মাহদী আঃ - এর নাম) ঐ সব হাদীসের কারণেই এসেছে যেগুলো বলে মাহদী (আঃ) এর নাম নবী (সাঃ)-এর নামের অনুরূপ। তখন ভাবা হয়েছে যে নবী (সাঃ) এর নাম আহমাদ ; যদিও‘
মুসতাফিযা’
হাদীসে আমরা পাই‘
মুহাম্মাদ’
। একইভাবে বিশ্বাস করা হয় দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিষয়টিও বানোয়াট এবং শীঘ্রই আপনারা এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আমরা এখানে যে কথাটি বলতে বাধ্য হচ্ছি তা হলো প্রথম ও দ্বিতীয় প্রকার হাদীসগুলোর দু’
একটি এমন বক্তব্য ধারণ করেছে যে তাদের প্রত্যাখ্যান করা প্রয়োজন। ইতিহাস ও বিশেষভাবে পরীক্ষা করলে এ হাদীসগুলো তাদের বানোয়াট হওয়ার সাক্ষ্য দিবে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী যখনই কোন হাদীস কয়েকটি বাক্য ধারণ করে এবং প্রত্যেক বাক্যই স্বাধীনতা রাখে অথবা এর নিজস্ব অর্থ প্রচার করে এবং যদি সাধারণ ঐক্যমত এর একাংশ প্রত্যাখ্যান করে তাহলে শুধু সেই বাক্যটি বাদ দিতে হবে এবং বাকী হাদীস রেখে দিতে হবে।
যদিও সুন্নী বিজ্ঞ ব্যক্তি‘
দায়েরাতুল মা’
আরেফ’
-এর লেখক ফাযেল ফারিদ ভাজদী আফানদী এ নীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং তিনি মনে করেন পুরো হাদীসটিই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমরাও তার সাথে একমত হবো (যদিও আমাদের মত ভিন্ন) এবং এ ধরনের হাদীস উপেক্ষা করবো। বাকী যে হাদীসগুলো থেকে যাবে তা আমাদের বক্তব্য প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট।
- সাইয়্যেদ সাদরুদ্দীন আল সাদর