মাহদী (আঃ) ও তার জন্ম
একদল বিশেষজ্ঞ , তাদের মধ্যে আছেন সূফী হাদীসবেত্তা মুহাম্মাদ খাজা বুখারী তার বই‘
ফাসলুল খেতাব’
এ (ইয়া নাবিউল মাওয়াদ্দার 387 পৃষ্ঠায় যেভাবে লেখা আছে) বর্ণনা করেছেন যে ,“
হযরত ইমাম মুহাম্মাদ জাওয়াদ (আঃ)-এর কন্যা হাকিমাহ এবং আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর (আঃ) ফুপু সবসময় প্রর্থনা করতেন ও কাদতেনঁ এবং আল্লাহর কাছে চাইতেন তিনি যেন তাকে হযরত এর পুত্র সন্তান-এর সাক্ষাত লাভে সফলতা দেন। 255 হিজরীর 15ই শাবান যখন তিনি হযরত হাসান আসকারীর (আঃ) সাথে সাক্ষাত করলেন তখন হযরত তাকে তার সাথে থাকতে বললেন কারণ একটি ঘটনা ঘটবে। তাই তিনি ঐ জায়গায় থেকে গেলেন। খুব সকালে নারজিস বেগম (হযরত মাহদীর মা) অসুবিধা বোধ করতে লাগলেন। তখন হাকিমাহ তার কাছে দ্রুত্র গেলেন এবং এর কয়েক মহুর্ত পর নারজিস বেগম খতনা করা এক বরকতময় সন্তান প্রসব করলেন। যখন হাকিমাহর দৃষ্টি বাচ্চার উপর পড়লো তিনি তাকে কোলে তুলে নিলেন এবং হযরত হাসান আসকারী (আঃ)-এর কাছে গেলেন। হযরত হাসান আসকারী তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং তার বরকতময় হাত পিঠ ও চোখে বুলিয়ে দিলেন এবং তার মুখের উপর মুখ রাখলেন। এরপর তিনি‘
আযান’
দিলেন বাচ্চার ডান কানে এবং‘
আকামাত’
দিলেন তার বাম কানে। এরপর বললেন ,‘
হে ফুপু , তাকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যান।’
হাকিমাহ তা পালন করলেন এবং বাচ্চাকে তার মায়ের কাছে নিয়ে গেলেন। হাকিমাহ বলেন ,‘
আবার আমি আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর বাসায় গিয়েছিলাম। হঠাৎ আমি দেখলাম হযরত একটি হলদু জামা পড়া বাচ্চাকে বহন করছেন যার চেহারা আলোতে উজ্জ্বল হয়ে আছে।’
তখন তার ভালোবাসা আমার হৃদয় ঢেকে ফেললো এবং আমি বললাম ,‘
হে আমার ওয়ালী (অভিভাবক) এ বরকতময় বাচ্চা সম্পর্কে আপনার কী বলার আছে ?’
তিনি বললেন-‘
হে ফুপু , সে সেই প্রতীক্ষিত জন যার সম্পর্কে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।’
তখন আমি নিজেকে মাটিতে ফেলে দিলাম এবং আল্লাহকে সিজদা করলাম কৃতজ্ঞতা জানিয়ে।”
এ বইয়ের লেখক বলতে চান-“
যা আমরা আগে বর্ণনা করেছি এবং পরে যা আমরা বর্ণনা করবো তা তার জন্মকে প্রমাণ করে। এসব রেওয়ায়েতের বেশ কয়েকটি অংশ আছে। এক অংশ ইঙ্গিত করে তিনি 12তম উত্তরাধিকারী , অন্যগুলি বলে তিনি 12তম ওয়াসী। এছাড়া অন্যগুলো বলে তিনি ইমাম হোসেইন (আঃ)-এর নবম বংশধর। আরো কিছু অংশ বলে তিনি ইমাম রিদা (আঃ)-এর 4র্থ বংশধর এবং কিছু বলে তিনি হযরত আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর সন্তান। আরো কিছু অংশ বলে তার আত্মগোপন সম্পর্কে এবং তাকে যে চেনা যাবে না সে সম্পর্কে ।”
এ মুসতাফিযা , বরং মুতাওয়াতির রেওয়ায়েতসমূহ পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করে যে প্রতীক্ষিত মাহদী হলেন ইমাম আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর সন্তান।
এখন কেউ বলতে পারে উপরোক্ত রেওয়ায়েতগুলো বর্ণনা ধারার দুর্বলতায় দুষ্ট তাই এগুলোকে অস্বীকার করা যায়।
লেখক বলতে চান- যে কেউ রেওয়ায়েতগুলো দেখেছে এবং রিজাল শাস্ত্র পড়ে দেখেছে সে কখনোই তা চিন্তা করবে না। কারণ একদল হাদীসবেত্তা এগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা স্বীকার করেছেন এবং কেউ কেউ এদের সত্যতা ও গ্রহণযোগ্যতার পক্ষে প্রমাণ দিয়েছেন। বরং হাকেম , যিনি এ শিল্পের একজন নেতা তিনি নিজেও বোখারী ও মুসলিম- এর অভিমত অনুযায়ী এগুলোকে সঠিক বলে গ্রহণ করেছেন।
আহলে সুন্নাতের বেশীরভাগ আলেম এ হাদীসগুলোর বর্ণনাধারা উল্লেখ করেছেন এবং তাদের সঠিকতা সমর্থন করেছেন। এদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে প্রত্যাখ্যান করার শামিল।
বেশ কিছু সুন্নী আলেম , হাদীসবেত্তা এবং ঐতিহাসিকের নাম আমরা উল্লেখ করতে চাই যাদের বক্তব্য হলো হযরত মাহদী (আঃ)-এর জন্ম হয়েছে , যেমন-
1।‘
ইসাফুর রাগেবীন’
অনুযায়ী শেই মহিউদ্দীন আরাবীর ফুতহাতুল মাক্কিয়্যাহ-তে যা এসেছে।
2। শেইখ আব্দুল ওয়াহহাব শারানীর কিতাব‘
আল ইওয়াকিত- ওয়াল- জাওহার’
-এ।
3। শেইখ মুহাম্মাদ ইবনে ইউসফূ গাঞ্জীর কিতাব‘
আল বায়ান ।
4।‘
নুরুল আবসার’
অনুযায়ী ইবনে ওয়ারদীর‘
তারিখ’
-এ।
5। ইবনে হাজার হাইসামীর কিতাব‘
সাওয়ায়েকুল মুহরেক্বা’
- তে।
6। সেবতে ইবনে জওযীর কিতাব‘
তাযকেরাতুল আইম্মা’
।
7। শেইখ মুহাম্মাদ ইবনে তালহার কিতাব“
মাতালিবুস সূল’
-এ।
8। শেইখ নুরুদ্দীন আলীর কিতাব“
ফুসুলুল মুহিম্মা’
-তে।
9। সম্মানিত সাইয়্যেদ আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মাদ সিরাজুদ্দীন-এর কিতাব‘
সিহাহুল আখবার’
।
10। বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খাল্লেকান তার‘
ওয়াফায়াতুল আইয়ান’
এ।
11। ইবনে খালেক্বানের বর্ণনা অনুযায়ী ইবনে আযরাক্ব-এর কিতাব‘
তারিখ’
-এ।
12। সূফী শেইখ সাইয়্যেদ হাসান আরাক্বী (আল ইওয়াক্বিত ওয়াল জাওহার অনুযায়ী)।
13। শেইখ আলী খাওয়াস (উপরে উল্লেখিত কিতাবে যেভাবে এসেছে)।
14। সূফী আলেম শেইখ মোহাম্মাদ খাওয়াজার“
ফাসলুল খেতাব’
-এ (ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা অনুযায়ী)।
15। সাইয়্যেদ মুমিন শাবলানজি তার‘
নুরুল আবসার’
কিতাবে।
16। সূফী আলেম শেইখ কুন্দুযির‘
ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা’
তে।
17। বিজ্ঞ বংশ ইতিহাসবিদ আবুল ফায়েয মুহাম্মাদ আমিন বাগদাদী সুয়েদী তার‘
সাবা’
য়েকুস যাহাব’
কিতাবে।
18। বর্তমান যুগের বংশ ইতিহাসবিদ আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর সাইয়্যেদ হোসেইন রাফাঈ তার‘
নুরুল আনওয়ারেশ’
কিতাবে।
19। শেইখ আহমাদ জামীর কবিতা অনুযায়ী যা‘
ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা’
তে এসেছে। আখবার সাহেবুয যামান’
-এ।
20। শেইখ আতহার নিশাবুরী’
র কবিতা অনুযায়ী।
21। শেইখ জালালুদ্দীন রুমীর কবিতা অনুযায়ী।
এছাড়াও আরো অনেকে বিষয়টির সত্যায়ন করেছেন। এভাবে দেখা যায় শিয়া ও সুন্নী উভয়েই এ বিষয়ে একমত। যারা সুন্নী সূত্রের বই ও লেখা পড়ে থাকেন তারা বুঝতে পারবেন যে শিয়া ও সুন্নী উভয়েই একমত যে আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর একটি সন্তান ছিলো যার নাম মুহাম্মাদ , তার উপাধি মাহদী ও তার কুনিয়াত বা ডাকনাম হলো আবুল কাসিম এবং এও সত্য যে তিনি ছিলেন তার পিতার একমাত্র সন্তান , তবে তাদের মাঝে মাহদী সম্পর্কে সামান্য মতভেদ আছে। যেমন ইবনে খাল্লেকান ও অন্যান্য সুন্নী ব্যক্তিদের মধ্যে ইবনে খাল্লেকান বলেন ,“
শিয়ারা ভাবে মাহদী হচ্ছেন ইমাম হাসান আসকারীর সন্তান।’
এরপর তিনি বলেছেন ,-‘
মাহদীর জীবন এখন পর্যন্ত চলছে এ বিষয়টি সাধারণ নয় এবং তার সম্ভাবনা কম।”
যখন হাসান আসকারীর ছেলে আবুল কাসেম মাহদীর জন্ম হয়ে গেছে বলে প্রমাণিত হবে তখন মাহদী (আঃ) জন্ম ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে , ভবিষ্যতে জন্ম নেবেন একথা সঠিক নয় বলে প্রমাণিত হবে। যদিও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে মুতাওয়াতির হাদীস থেকে এবং আহলে বাইতের নিষ্পাপ সদস্যদের কথা থেকে , যারা অন্যদের চাইতে বেশী জ্ঞান রাখেন এবং সূফী সাধক এবং পণ্ডিত ব্যক্তিদের কথা থেকে জানা গেছে প্রতীক্ষিত মাহদী এ শিশুটিই যার কথা আমরা ইতিমধ্যে বর্ণনা করেছি।
যাহোক , তার জন্ম সম্পর্কে যা অধিকতর সঠিক বলে মনে হয় তা হলো তিনি জন্ম নিয়েছিলেন 255 হিজরীর 15ই শাবান। আর তাই তার বাবার ইন্তেকালের সময় তার বয়স ছিলো পাচঁ বছর।