কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?0%

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ? লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক: সাইয়্যেদ সাদরুদ্দীন আল সাদর
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 62473
ডাউনলোড: 3531

পাঠকের মতামত:

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 86 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 62473 / ডাউনলোড: 3531
সাইজ সাইজ সাইজ
কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

মাহদী (আঃ) জীবিত আছেন ও রিযক লাভ করছেন

যখন আমরা এ বিষয়ে কথা বলতে এবং প্রমাণ করতে চাই যে প্রতীক্ষিত মাহদী (আঃ) জীবিত আছেন , তার রিযক লাভ করছেন এবং অন্যদের মত জীবন যাপন করছেন , ঐ পর্যন্ত যখন আল্লাহ তাকে আবির্ভূত হওয়ার অনুমতি দিবেন এবং সত্য ও ন্যায়বিচারকে প্রতিষ্ঠা করবেন এবং নিপীড়নকে ধ্বংস করবেন , তখন আমরা আর কিছু বলার আগে নীচের প্রাথমিক বিষয়গুলো উল্লেখ করতে বাধ্য

প্রথমতঃ মানুষের পক্ষে শত শত অথবা হাজার হাজার বছর বেচেঁ থাকা সম্ভব , যদি আল্লাহ চান। এর উদাহরণ আপনারা ইতিমধ্যেই পেয়েছেন।

দ্বিতীয়তঃ প্রতীক্ষিত মাহদী (আঃ) হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি আবুল কাসিম মুহাম্মাদ ইবনে হাসান আসকারী ইবনে আলী হাদী ইবনে মুহাম্মাদ জাওয়াদ ইবনে আলী....যেভাবে তা ইতিমধ্যেই উল্লেখিত হয়েছে।

তৃতীয়তঃ মাহদী (আঃ) ঐ দিনে (15ই শাবান 255হিঃ) জন্মগ্রহণ করেছেন যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি এবং ইমাম হাসান আসকারীর (আঃ) মাহদী ছাড়া অন্য কোন সন্তান ছিলো না। অন্য কথায় , তিনি তার পিতার একমাত্র সন্তান ছিলেন।

এখন আপনাদের কাছে এ বিষয়গুলো পরিষ্কার হওয়াতে আমরা বলতে পারি যে মাহদী (আঃ) জীবিত আছেন এবং রিযক লাভ করছেন।

পক্ষপাতিত্বহীন কোন ব্যক্তির জন্য নীচের যে কোন একটি বিষয় যথেষ্ট-

প্রথমতঃ যা বিশ্বাস করতে সুবিধাজনক তা হলো মাহদী (আঃ) জীবিত আছেন তা বিশ্বাস করা। কারণ আমরা তার জন্ম সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি কিন্তু তার মৃত্যু সম্পর্কে নয়।

একজন সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত লোকও মাহদীর (আঃ) মৃত্যু সম্পর্কে কিছু বর্ণনা করে নি। শুধু যা দেখা যায় তা হলো কিছু অস্বীকারকারী এর সম্ভাব্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে যে , এটি কীভাবে সম্ভব যে মাহদী (আঃ) এত দীর্ঘ জীবন লাভ করবে ?

এ পর্যন্ত আমরা বিশ্বস্ত হাদীসবেত্তা , ঐতিহাসিক ও বংশধারা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে মাহদী (আঃ)-র ইন্তেকাল সম্পর্কে কোন কথা পাই নি।

মাহদীর (আঃ) দীর্ঘ জীবন গতানুগতিক কোন ঘটনা নয় বলে তা অস্বীকার করা আমাদের জন্য সাজে না। আর যে বিশ্বাস করে যে মাহদীর (আঃ) মৃত্যু হয়েছে সে তার মৃত্যু সম্পর্কে প্রমাণ দিতে বাধ্য থাকবে।

দ্বিতীয়তঃ যখন মাহদীর (আঃ) জন্ম হয়েছে প্রমাণিত হয় তখন নীচের যে কোন একটি বিষয় আমরা গ্রহণ করতে বাধ্য-

এক , হয় আমরা স্বীকার করে নেবো মাহদী (আঃ) জীবিত আছেন এবং অন্যান্য মানুষের মতই জীবন যাপন করছেন ঐ পর্যন্ত যখন আল্লাহ তাকেআদেশ করবেন আবির্ভূত হওয়ার জন্য অথবাদুই , বিশ্বাস করা যে , তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন এবং আল্লাহ তার ক্ষমতা বলে তাকে আবার জীবিত করবেন একটি নির্ধারিত সময়ে। কিন্তু এতে কোন সন্দেহ নেই যে প্রথম সম্ভাবনাটি প্রাকৃতিক নিয়মের কাছাকাছি পরবর্তীটির চাইতে , কারণ মৃত্যুর পর জীবিত হওয়া আরো দূরবর্তী সম্ভাবনা। নবী-রাসূল-রা (আঃ) মৃতকে জীবিত করতেন একটি অলৌকিক ঘটনার অংশ হিসেবে।

তৃতীয়তঃ যে হাদীস শিয়া ও সুন্নী উভয়ে সত্য বলে গ্রহণ করেছে তা হলো রাসূল (সাঃ)-এর পরে খলিফা এবং মুসলমানদের ইমাম হবেন 12জন যতদিন এ ধর্ম চলবে। মাহদী তাদের মধ্যে 12তম প্রমাণিত হওয়ার পর বিশ্বাস করা বাধ্যতামূলক হয়ে যায় যে তিনি জীবিত আছেন ও জীবন যাপন করছেন। আর তা না হলে মুসলমানদের মধ্যে কোন ইমাম থাকবে না এবং তারা জাহেলিয়াতের যুগের মানুষের মত মৃত্যুবরণ করবে।

মাহদী (আঃ)-এর জীবিত থাকার বিষয়ে বিখ্যাত সুন্নী আলেমদের বর্ণনা রয়েছে তাদের মধ্যে একজন হলেন শেইখ মহিউদ্দীন আল আরাবী যিনি তার কিতাব ফুতুহাতুল মাক্কিয়্যাহ -তে , আল ইয়াওয়াকিত্ব ওয়াল জাওহার কিতাবে যেভাবে শেইখ আব্দুল ওয়াহাব শারানী বর্ণনা করেছেন , যেভাবে ইসাফুর রাগেবীন বলেছেন যে , মাহদী হচ্ছেন ইমাম হাসান আসকারীর (আঃ) ঔরসজাত সন্তান এবং ইমাম হাসান আসকারী 260 হিজরীতে ইন্তেকাল করেছেন। তিনি মাহদীর অস্তিত্ব ও তার আবির্ভাবকাল পর্যন্ত জীবিত থাকাকে সমথর্ন করেছেন। কিন্তু তার মৃত্যু হয়েছে এবং তাকে আবার জীবিত করা হবে একটি নির্দিষ্ট সময়ে এমন কথা বলেন নি।

তাদের মাঝে আছেন শেইখ আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইউসূফ ইবনে মুহাম্মাদ গাঞ্জী। তার কিতাব বায়ান ফী আখবার সাহেবুয যামান -এ ইসাফুর রাগেবীনের লেখক 277 পৃষ্ঠায় যা বলেছেন-

মাহদী (আঃ) জীবিত আছেন ও আত্মগোপনে (গায়বাতে) যাওয়ার পর এখনও জীবন যাপন করছেন এবং তা অসম্ভব কিছু নয়। এ বইয়ের এ কথার প্রমাণগুলোর একটি হচ্ছে যে আল্লাহর বন্ধুদের মাঝে হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) ও হযরত ইলইয়াস (আঃ) এখনও জীবিত আছেন এবং আল্লাহর শত্রুদের মাঝে আছে দাজ্জাল ও শয়তান। এসব ব্যক্তিদের অস্তিত্ব সম্পর্কে কোরআন ও রাষূলের (সাঃ) হাদীস সাক্ষ্য দেয় ,

এ ছাড়াও আছেন জ্ঞানী ও সূফীসাধক শেইখ খাজা মুহাম্মাদ পারসা যিনি তার কিতাব ফাসলুল খিতাব - এ (যেভাবে ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দার লেখক 45 পৃষ্ঠায় লিখেছেন) মাহদী (আঃ) জন্মের কথা উল্লেখ করে বলেছেন- আল্লাহ শৈশবকালে মাহদী (আঃ) উপর প্রজ্ঞা দান করেছেন যেভাবে তিনি দিয়েছিলেন হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) ও ঈসা (আঃ)-কে। খাজা মুহাম্মাদ পারসা আরও বলেছেন- আল্লাহ মাহদীর জীবনকে দীর্ঘায়িত করেছেন যেভাবে তিনি খিযিরকে দীর্ঘ জীবন দিয়েছেন।

আরও আছেন শেইখ আব্দুল ওয়াহাব শারানী যিনি তার কিতাব আল ইয়াওয়াক্বিত আল জাওহার (যেভাবে ইসাফুর রাগেবীনের 157 পৃষ্ঠায় এসেছে)-এ বলেন- মাহদী ইমাম হাসান আসকারীর সন্তান এবং তার জন্ম তারিখ হলো 15ই শাবান , 255 হিজরী। তিনি এখনও বেচেঁ আছেন যতক্ষণ পর্যন্ত না ঈসা ইবনে মারইয়ামের সাথে তিনি সাক্ষাত করেন। এরপর তিনি বলেন- শেইখ হাসান আরাকী এ কথাটি বর্ণনা করেছেন হযরত মাহদীর সাথে তার সাক্ষাতের পর এবং সাইয়্যেদ আলী কাওয়াস এর সমর্থন দিয়েছেন ।

এর মাঝে আছে শেইখ সাদরুদ্দীন কুনাউই যিনি তার মৃত্যুকালে তার ছাত্রদের বলেন (ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দার 469 পৃষ্ঠা অনুযায়ী) , তোমরা আমার চিকিৎসা ও দর্শনশাস্ত্রের বইগুলো বিক্রি করে সে পয়সা দরিদ্রদের দিয়ে দিও। কিন্তু আমার হাদীস ও আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে বইগুলো পাঠাগারে সংরক্ষণ করবে এবং প্রত্যেক রাতে 70 হাজার বার তাওহীদের সাক্ষ্য দাও এবং আমার সালাম পৌঁছে দাও মাহদীর (আঃ) কাছে।

এ বইয়ের লেখক বলতে চান- শেইখ সাদরুদ্দীন- এর কথা মাহদী (আঃ)- এর অস্তিত্ব প্রমাণ করে না কারণ তিনি হয়তো এ চিন্তা করে একথাগুলো বলেছিলেন যে হয়তো তার ছাত্ররা মাহদী (আঃ)-এর আবির্ভাব প্রত্যক্ষ করবে।

তাদের মধ্যে আছেন সাদউদ্দীন হামাভী (ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দারু 474 পৃষ্ঠায় শেইখ আযীয বিন মুহাম্মাদ নাসাফী থেকে বর্ণিত) আল্লাহর ওয়ালীদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন- আল্লাহ এ উম্মাতের জন্য 12জন ওয়ালী (সংরক্ষক) নিয়োগ করেছেন আহলুল বায়েত থেকে এবং তাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উত্তরাধিকারী বানিয়েছেন.... কিন্তু শেষ ওয়ালী যিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর শেষ উত্তরাধিকারী এবং শেষ সংরক্ষক 12তম খলিফা হলেন মাহদী সাহেবুয যামান।

তাদের মাঝে আছেন শেইখ শাহাবুদ্দীন হিন্দী , যিনি মালিক উল উলামা উপাধিতে পরিচিত তার কিতাব হিদায়াতুস সুয়াদাতে (যেভাবে দুরারিল মুসাউইয়াতে এসেছে) বলেছেন- ইমাম হোসেইন (আঃ)- এর নবম বংশধর হলেন হুজ্জাতুল্লাহ ক্বায়েম আল মাহদী , যিনি গোপন আছেন। তিনি দীর্ঘ জীবন যাপন করবেন ঠিক যেমন ঈসা , ইলইয়াস ও খিযির (আঃ) (বিশ্বাসীদের মাঝে) এবং (অবিশ্বাসীদের মাঝে) দাজ্জাল , এবং সামেরী দীর্ঘ জীবন যাপন করছে।

শেইখ মুহাম্মাদ যিনি খাজা পারসা নামে বিখ্যাত তিনি তার কিতাব ফাসলুল খিতাবে এর মাজির্নে (দুরারিল মূসাউইয়া অনুযায়ী) বলেছেন- খিলাফত ও ইমামত মাহদীতে শেষ হবে। তিনি তার পিতার ইন্তেকাল থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত ইমাম। ঈসা (আঃ) তার পিছনে নামায পড়বেন এবং তাকে স্বীকার করবেন এবং লোকদেরকে তার বিশ্বাসের দিকে আহবান করবেন।

তাদের মাঝে আছে বিখ্যাত হাদীসবেত্তা শেইখ শায়েব ইবনে হাজার আসকালানী যিনি ফাতহুল বারী ফী শারহ সহী আল বোখারী কিতাব লিখেছেন। তার বই ক্বওলুল মুখতাসার- ফী আলামাতুল মাহদী আল মুনতাযার (যেভাবে ফুতুহাতুল ইসলামিয়ার 2য় খণ্ডে। 320 পৃষ্ঠায় এসেছে)- এ বলেন- শক্তিশালী হাদীসসমূহ আমাদের বিশ্বাস সৃষ্টি করেছে যে মাহদী আছেন। মাহদী হলেন সেই ব্যক্তি যার আত্মপ্রকাশ ঈসা ও দাজ্জালের আত্মপ্রকাশের সাথে ঘটবে। মাহদী বলতে এ ব্যক্তিকেই বোঝায় এবং তার আগে আর সবাই মোটেও মাহদী নয়।

যারা এর চেয়ে বেশী জানতে চান তারা কাশফুল আসূরার ফীল গায়ের আনিল ইনতাযার , বইটি পড়তে পারেন যা হাজ্ব মিরযা হুসেইন নূরী তাবারসী লিখে গেছেন।

মাহদী (আঃ) ও যারা তাকে দেখেছে

এ অধ্যায়ে আমরা তিনটি সুন্দর ঘটনা বর্ণনা করবো যা যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করবো না বরং হৃদয়কে প্রশান্ত করার জন্য সেগুলোর উল্লেখ করবো।

প্রথমঃ শেইখ আব্দুল ওয়াহাব শারানী তার কিতাব তাবাক্বাতুল উরাফা -তে শেইখ হাসান আরাক্বীর কথা লিখতে গিয়ে বলেন- আমি সাইয়্যেদ আবুল আব্বাস হারিমির সাথে গেলাম শেইখ হাসান আরাক্বীর সাথে সাক্ষাত করতে। শেইখ আরাক্বী বললেন , আমি কি তোমাদেরকে আমার জীবনের কাহিনী শোনাবো এর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ? আমি এমনভাবে তা বর্ণনা করবো যে তোমরা মনে করবে তোমরা আমার অন্ত রঙ্গ বন্ধু ছিলে শৈশব কাল থেকেই। আমি বললাম , জ্বী আপনি বলতে পারেন।

তিনি বললেন- আমি হস্তশিল্প কর্মীদের মাঝে একজন যুবক ছিলাম। শুক্রবারগুলোতে আমরা খেলাধুলা , মদপান ও জুয়া খেলে কাটাতাম। এক শুক্রবার আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ইলহামের মত কিছু লাভ করলাম যে- তোমাকে কি এ ধরনের কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে ? অতএব , আমি এসব কাজ ছেড়ে দিলাম এবং আামর সাথীদের কাছ থেকে পালিয়ে গেলাম। তারা আমার পিছু নিলো কিন্তু আমাকে খুজে পেলো না। আমি বনি উমাইয়্যার মসজিদে প্রবেশ করলাম এবং একজন ব্যক্তিকে মিম্বরে দেখলাম হযরত মাহদী (আঃ) সম্পর্কে কথা বলতে। এর মাধ্যমে আমি মাহদী (আঃ)-এর সাথে সাক্ষাতের জন্য আগ্রহী হয়ে উঠলাম। একটি সিজদাও বাদ যেতো না যে আমি আল্লাহর কাছে তার সাথে সাক্ষাতের ইচ্ছা পুরণ করার জন্য বলতাম না।

একদিন রাতে আমি নফল নামাজ পড়ার সময় হঠাৎ দেখলাম কেউ আমার পিছনে বসা আছেন। তিনি আমার পিঠে তার হাত বুলিয়ে বললেন- হে আমার সন্তান , দয়ালু খোদা তোমার ইচ্ছা পুরণ করেছেন। আমি মাহদী , তুমি কি চাও ?

আমি বললাম- আপনি কি আমার সাথে আমার বাসায় আসবেন ?

তিনি বললেন- হ্যা , তখন আমরা দুজন একত্রে চললাম এবং তিনি পথে বললেন ,- আমাকে কোন নিজর্ন জায়গায় নিয়ে যাও।

আমি তাকে নির্জন স্থানে নিয়ে গেলাম এবং তিনি সেখানে আমার সাথে সাত দিন থাকলেন।

দ্বিতীয়ঃ ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 455 পৃষ্ঠায় (একটি ঘটনা) বর্ণনা করেছেন শেইখ আলী ইবনে ঈসা আরবালী থেকে যিনি শিয়া ও সুন্নী উভয়ের কাছে একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি। লেখক বলেন- জনগণ ইমাম মাহদী (আঃ) এর মোজেযা সম্পর্কে ঘটনা বর্ণনা করে যা বর্ণনা করতে অনেক সময় লাগবে। যাহোক আমি দু টো ঘটনার কথা বলবো যা আমাদের সময়ের নিকটবর্তীকালে ঘটেছে এবং একদল নির্ভরযোগ্য ভাই এগুলো বর্ণনা করেছে।

হিল্লাহ ও ফুরাত শহরের মাঝে (ইরাকে) এক লোক বাস করতো যার নাম ছিলো ইসমাইল ইবনে হাসান। নির্ভরযোগ্য ভাইরা ইসমাইল থেকে বর্ণনা করলো যে , তার বাম উরুতে একটি ফোঁড়া দেখা দিলো যার আকৃতি হলো হাতের তালুর মত । ডাক্তাররা ওই ফোঁড়া দেখে তা সারাতে অপারগতা প্রকাশ করলো। অতএব , ইসমাইল সামাররাতে চলে গেলো এবং ইমাম আলী হাদী ও ইমাম হাসান আসকারী (আঃ)-র মাযার যিয়ারাতে গেলো। এরপর সে ভূগর্ভস্থ ঘরে প্রবেশ করলো। সেখানে দয়ালু আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলো এবং মাহদী (আঃ)-এর কাছে সাহায্য চাইলো।

এরপর সে দযলা নদীতে নেমে মোস্তাহাব গোসল করলো এবং তার পোষাককে বদলে নিলো। হঠাৎ সে দেখলো চারজন ঘোড়সওয়ার সামাররা শহরের দিক থেকে আসছে। তাদের একজন ছিলো বৃদ্ধ মানুষ যার হাতে একটি বর্শা এবং আরেকজন যুবক যিনি রঙ্গীন পোষাক পরে আছেন। যিনি বর্শা বহন করছিলেন তিনি ছিলেন ডান দিকে এবং অন্য দু জন ছিলো বাম দিকে। যে যুবক রঙ্গীন পোষাক পরেছিলেন তিনি ছিলেন মাঝখানে। সেই যুবক ইসমাইলকে জিজ্ঞেস করলেন , তুমি কি আগামীকাল তোমার পরিবারের কাছে যাবে ? ইসলাইল বললো- জ্বী। তিনি বললেন ,- আমার কাছে আসো যেন আমি তোমার সমস্যা সম্পর্কে জানতে পারি। ইসমাইল তার কাছে গেলো । তিনি নীচু হয়ে তার উরুতে তার পবিত্র হাত রাখলেন এবং ঘোড়ার জীনে সোজা হয়ে বসলেন। বৃদ্ধ লোকটি যে বর্শা ধরে ছিলো তিনি বললেন- তুমি সুস্থ হয়ে গেছো। তিনি তোমার ইমাম।

চারজন ঘোড়সওয়ার চলে যেতে লাগলো এবং ইসমাইলও তাদের পিছনে পিছনে চললো।

ইমাম বললেন- ফিরে যাও

ইসমাইল বললো- আমি আপনার কাছ থেকে কখনোই বিচ্ছিন্ন হবো না

ইমাম বললেন , এটি তোমার নিজের ভালোর জন্যই , ফিরে যাও।

ইসমাইল বললো- আমি আপনার কাছ থেকে কোন অবস্থাতেই বিচ্ছিন্ন হবো না

বৃদ্ধ মানুষটি তখন মাঝখানে হস্তক্ষেপ করলো এবং বললো তোমার কি কোন লজ্জা নেই। তোমার ইমাম তোমাকে দু বার আদেশ দিয়েছেন ফিরে যাওয়ার জন্য এরপরও তুমি অবাধ্য হচ্ছো ?

ইসমাইল থামলো। ইমাম সামনে কয়েক কদম এগিয়ে গেলেন এবং পিছনে ফিরে বললেন- যখন তুমি বাগদাদে পৌছবে খলিফা মোতাসিম বিল্লাহ তোমাকে জোরপূর্বক ডেকে পাঠাবে। যখন সে তোমাকে কিছু দিতে চাইবে তা প্রত্যাখ্যান করো। এছাড়া আমাদের সন্তান রাযীউদ্দীনকে বলো তোমার পক্ষ হয়ে আলী ইবনে আওয়াজকে লিখতে। আমিও তাকে ইশারা করবো তোমাকে দেয়ার জন্য যা তোমার ইচ্ছা।

এরপর হযরত তার সাথীদেরসহ চলে গেলেন এবং ইসমাইলের দৃষ্টি তাদের উপর নিবদ্ধ থাকলো ঐ সময় পর্যন্ত যতক্ষণ আর সে তাদের দেখতে পেলো না। সে মাটিতে কিছুক্ষণের জন্য বসে রইলো এরপর তাদের সাথে বিচ্ছেদের কারণে কাদতেঁ শুরু করলো।

এরপর সে সামাররাতে গেলো যেখানে লোকজন তাকে ঘিরে ধরে জিজ্ঞেস করলো , আমরা তোমার মধ্যে এত পরিবতর্ন দেখছি কেন ? কী ঘটেছে ? ইসমাইল বললো- তোমরা কি জানো ঘোড়সওয়াররা কারা ছিলো যারা শহর ছেড়ে নদীর দিকে গিয়েছিলো ? তারা বললো- তারা মর্যাদাবান ব্যক্তি ছিলো এবং গবাদিপশুর মালিক। ইসমাইল বললো , তারা ছিলো ইমাম ও তার সাথীরা। যিনি রঙ্গীন পোষাক পড়েছিলেন তিনি ছিলেন ইমাম এবং তিনিই তার পবিত্র হাতে আমার জখমে হাত বুলিয়েছিলেন। তারা বললো- আমাদেরকে দেখতে দাও। যখন ইসমাইল তাদেরকে তার উরু দেখালো , সেখানে একটা দাগ পর্যন্ত ছিলো না। জনগণ তার জামা ছিড়ঁতে লাগলো তাবাররুকের জন্য এবং পরে অন্যরা যাতে তার কাছে পৌঁছাতে না পারে তাই তাকে ট্রেজারীতে নিয়ে গেলো। এরপর খলিফার প্রতিনিধি এলো এবং তাকে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো । তার পারিবারিক পরিচিতি , তার দেশের বাড়ী , বাগদাদ থেকে প্রথম সপ্তাহে সে কী উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলো সে সম্পর্কে।

পরদিন সকালে ইসমাইল এক বড় ভীড় এর মাঝ দিয়ে তার দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে সামাররা শহর ত্যাগ করলো। পথে সে এক জায়গায় এসে পৌঁছালো যেখানে অনেক লোক জমা হয়েছিলো এবং তারা তার নাম , বংশধারা এবং কোন জায়গা থেকে এসেছে এসব জিজ্ঞেস করলো। যখন তারা তাকে আগে উল্লেখিত নিদর্শন দেখে চিনতে পারলো তারা তার জামা ছিঁড়তে শুরু করলো তাবাররুক হিসেবে নেবার জন্য। খলিফার প্রতিনিধি ঘটনাটির বিশদ বিবরণ লিখে বাগদাদে পাঠিয়ে ছিলো। মন্ত্রী সৈয়দ রাযী উদ্দীনকে ডেকে পাঠালো ঘটনার সত্যতা জানার জন্য। যখন রাযিউদ্দীন (যে ছিলো ইসমাইলের সাথী ও সমর্থকরা ছাড়ার আগে ইসমাইলের মেযবান) এবং অন্যরা ইসমাইলকে দেখলো তারা নেমে এলো। যখন ইসমাইল তাদেরকে তার উরু দেখালো রাযিউদ্দীন প্রায় এক ঘন্টার জন্য অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইলো। জ্ঞান ফেরার পর সে ইসমাইলের হাত ধরে তাকে মন্ত্রীর কাছে নিয়ে গেলো। রাযিউদ্দীন কেঁদে বললো- সে আমার ভাই এবং সব মানুষের মাঝে সে আমার সবচেয়ে প্রিয়।

মন্ত্রী ইসমাইলের কাছ থেকে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলো এবং সেও তার পুরো বর্ণনা দিলো। মন্ত্রী সেই ডাক্তারদের ডেকে পাঠালো যারা আগে ইসমাইলকে দেখেছিলো। যখন তারা এলো জিজ্ঞেস করলো- কখন আপনারা তার জখম শেষবারের মত দেখেছিলেন ? তারা বললো- দশ দিন আগে । মন্ত্রী ইসমাইলের উরু দেখলো এবং যখন ডাক্তাররা এর কোন চিহ্ন দেখতে পেলো না তারা বললো- এটিতো মসিহর কাজ। মন্ত্রী বললেন , আমরা জানি কে এ কাজটি করেছেন।

মন্ত্রী ইসমাইলকে খলিফার সামনে নিয়ে গেলো , খলিফা ইসমাইলকে ঘটনার বর্ণনা দিতে বললো এবং ইসমাইল তার খুটিনাটিু বর্ণনা দিলো যা ঘটেছে। যখন খলিফা ইসমাইলকে এক হাজার দিনার উপহার দিলেন ইসমাইল বললো- কিভাবে আমি এ উপহারের এক অংশও নিতে সাহস করবো ? খলিফা বললেন- কাকে তুমি ভয় পাও ? সে বললো- যিনি আমাকে সুস্থ করেছেন তাকে , কারণ তিনি আমাকে নিষেধ করেছেন আপনার কাছ থেকে কিছু নিতে। এ কথা শুনে খলিফা কাদতেঁ শুরু করলো।

আলী ইবনে ঈসা বলেন- আমি একবার এ ঘটনা বর্ণনা করছিলাম একটি দলের কাছে যারা আমার চারদিকে বসে ছিলো। ইসমাইলের ছেলে শামসুদ্দিনও সেখানে উপস্থিত ছিলো কিন্তু তখন আমি তাকে চিনতাম না। শামসুদ্দিন বললো আমি ইসমাইলের ছেলে।

আমি বললাম- তুমি কি তোমার বাবার উরুতে জখমটি দেখেছিলে ? সে বললো- সে সময় আমি শিশু ছিলাম। কিন্তু আমি আমার বাবা-মা , আত্মিয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছে এ বিষয়ে শুনেছি এবং জায়গাটি দেখেছি তা সুস্থ হয়ে যাবার পর। আমি কোন জখমের চিহ্ন সেখানে দেখি নি এবং সেখানে লোম গজিয়ে গেছে।

আলী ইবনে ঈসা আরও বললেন- আমি এ ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম সাইয়্যেদ সাফিউদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ এবং নাজমুদ্দীন হায়দার ইবনে আমিরের কাছেও এবং তারা আমাকে এ সম্পর্কে জানিয়েছে এবং বলেছে- আমরা ইসমাইলকে আগেও দেখেছি এবং তার সস্থতার পরও দেখেছি।

এছাড়া তার ছেলে আমাকে বলেছে যে তার পিতা তার সুস্থতার পরে সামাররাতে 40 বার গিয়েছিলো এ আশায় যে হয়তো সে আবার তার সাক্ষাত লাভ করবে।

দ্বিতীয়ঃ সাইয়্যেদ বাক্বী আসওয়া আলাউই হাসানী আমাকে বলেছেন যে তার বাবা আসওয়া মাহদীর অস্তিত্ব স্বীকার করতো না। তিনি মাঝে মাঝেই বলতেন , যখন মাহদী আসবেন এবং আমাকে সুস্থ করবেন আমি লোকজনের কথায় (মাহদী সম্পর্কে) সাক্ষী দিবো। আমরা যখন সবাই এশার নামাজের জন্য একত্র হলাম আমরা আমাদের বাবার কাছ থেকে একটি চীৎকার শুনতে পেলাম। আমরা তার কাছে গেলাম এবং তিনি বললেন- এই এখন ইমাম এ জায়গা দিয়ে গেছেন , তার খোঁজ কর! আমরা সবাই তার খোঁজে বের হলাম কিন্তু কাউকে খুঁজে পেলাম না। আমরা যখন ফিরে আসলাম তখন আমাদের বাবা বললেন-

কেউ একজন আমার কাছে এলো ও বললো- হে আসওয়াহ । আমি বললাম- আপনার সেবায় । তিনি বললেন , আমি মাহদী। আমি এসেছি তোমাকে সুস্থ করতে। তিনি তার হাত লম্বা করে দিলেন এবং আমার উরুতে চাপ দিলেন এবং এরপর চলে গেলেন। বর্ণনাকারী বলেন- এ ঘটনার পর সে হরিণের মত দৌড়াতো এবং কোন চিহ্নই আর দেখা যায় নি।

আলী ইবনে ঈসা বলেন , আমি এ ঘটনা সম্পর্কে সাইয়্যেদ বাক্বীর ছেলের কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম এবং সেও তা স্বীকার করেছে।

ষষ্ঠ অধ্যায়