কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?0%

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ? লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক: সাইয়্যেদ সাদরুদ্দীন আল সাদর
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 62469
ডাউনলোড: 3530

পাঠকের মতামত:

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 86 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 62469 / ডাউনলোড: 3530
সাইজ সাইজ সাইজ
কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

গাইবাত (আত্মগোপন)-এর হাদীস

ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক (447 পৃষ্ঠায়) ফারায়েদুস সিমতাঈন থেকে ইমাম মুহাম্মাদ বাকীর (আঃ)-এর কাছ থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি বর্ণনা করেন তার পিতা থেকে যিনি বর্ণনা করেন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে এবং তিনি রাসূল (সাঃ) থেকে যে ,

মাহদী আমার বংশ থেকে। তার জন্য একটি আত্মগোপনকাল থাকবে। যখন সে আবির্ভূত হবে সে পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায় বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দিবে যেমনভাবে তা নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো।

একই বইয়ের 448 পৃষ্ঠায় এর লেখক সাঈদ ইবনে জুবায়ের থেকে এবং তিনি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

আলী আমার ওয়াসী এবং তার বংশ থেকে আসবে প্রতীক্ষিত ক্বায়েম , মাহদী , যে পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। আমি আল্লাহর নামে শপথ করছি যিনি আামকে সতর্ককারী ও সুসংবাদ দানকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন যে , আত্মগোপনকালে মাহদীর ইমামতে যাদের দৃঢ় বিশ্বাস থাকবে তারা লাল দিয়াশলাইয়ের চাইতেও দূর্লভ হবে।

তখন জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী দাঁড়ালেন এবং বললেন- ইয়া রাসূলুল্লাহ , আপনার বংশ থেকে ক্বায়েম এর কি কোন আত্মগোপনকাল থাকবে ? তিনি বললেন- হ্যাঁ , আমি আল্লাহর নামে শপথ করছি যে সে বিশ্বাসীদের পরীক্ষা করবে এবং অবিশ্বাসীদের ধ্বংস করবে (তার আত্মগোপনের মাধ্যমে)। এরপর তিনি বললেন , হে জাবির , এ বিষয়টি ঐশী বিষয় এবং এ রহস্যটি ঐশী রহস্য। তাই এ বিষয়ে কোন সন্দেহ থেকে সর্তক থাকো। কারণ ঐশী বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করা ধর্মদ্রোহীতা।

একই বইয়ের একই পৃষ্ঠায় লেখক হাসান ইবনে খালিদ থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি আলী ইবনে মূসা রিদা (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে ,

আল্লাহ পৃথিবী থেকে প্রত্যেক নৃশংসতা ও নিপীড়নকে মুছে ফেলবেন আমার চতুর্থতম বংশের সন্তানের হাতে যে হবে সর্বশ্রেষ্ঠ দাসীর সন্তান। সে হবে সেই ব্যক্তি যার জন্ম হওয়া সম্পর্কে লোকেরা সন্দেহ পোষণ করবে। সে সেই ব্যক্তি যে আত্মগোপনে যাবে। যখন সে আবির্ভূত হবে পৃথিবী তার রবের আলোতে আলোকিত হয়ে যাবে।

একই বইয়ের (454 পৃষ্ঠায়) লেখক আহমাদ ইবনে যাইদ থেকে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি দেবেল ইবনে আলী খুযাঈ থেকে তিনি ইমাম রিদার (আঃ) সামনে উপস্থিত ছিলেন এবং একটি কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন যাتاء তে শেষ হয়েছিলো , তিনি বলেন- ইমাম রিদা (আঃ) বলেন- আমার পরে ইমাম হচ্ছে আমার সন্তান মুহাম্মাদ এবং তার পরে ইমাম হবে তার সন্তান আলী। তার পরে আসবে হাসান এবং হাসানের পর আসবে হুজ্জাত আল ক্বায়েম , যার আত্মগোপনের সময় জনগণ তার জন্য অপেক্ষা করবে এবং যাকে মানা হবে তার আবির্ভাবের সময়। সে পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে ঠিক যেভাবে তা নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। তার উত্থান সম্পর্কে আমার বাবা আমার পিতামহদের কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূল (সাঃ) বলেছেন- মাহদীর (আবির্ভাবের) উদাহরণ হবে কিয়ামতের মত যা হঠাৎ ঘটবে।

উক্ত বইয়ের লেখক (488 পৃষ্ঠায়) বর্ণনা করেছেন গায়াতুল মারাম থেকে যা বর্ণনা করেছে ফারায়েদুস সিমতাইন থেকে এবং তা জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী থেকে যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

মাহদী আমার বংশ থেকে আসবে। তার নাম ও ডাক নাম আমার নাম ও ডাক নামের মত হবে। সব মানুষের মধ্যে সে চেহারায় ও চরিত্রে হবে আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী । তার এক আত্মগোপনকাল থাকবে যার কারণে জাতিসমূহ পথভ্রষ্ট হবে। মাহদী একটি জলজ্বলে তারার মত আবির্ভূত হবে এবং পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে ঠিক যেভাবে নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো।

আবার ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা -র একই পৃষ্ঠায় তিনি (শেইখ কুনদুযী) ফারায়েদুস সিমতাইন থেকে তা ইমাম বাকীর (আঃ) থেকে , তিনি তার পিতৃপুরুষদের কাছ থেকে তারা আলী ইবনে আবি তালিব থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

মাহদী আমার বংশ থেকে। তার জন্য থাকবে একটি আত্মগোপনকাল যার কারণে জাতিসমূহ পথভ্রষ্ট হবে। সে পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো।

একই বইয়ের 493 পৃষ্ঠায় তিনি মানাকেব বই থেকে বর্ণনা করেন যা ইমাম বাক্বীর (আঃ) থেকে বর্ণনা করে যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

রহমতপ্রাপ্ত সে যে আমার আহলে বায়েতের ক্বায়েমকে অনুভব করবে এবং তাকে ইমাম বলে বিশ্বাস করবে তার আত্মগোপনকালে (আবির্ভাবের আগে) এবং তার বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্ব করে এবং তার শত্রুদের পরিত্যাগ করে। এ ধরনের ব্যক্তি আমার প্রেমিক ও সাথীদের অন্তর্ভূক্ত হবে এবং বিচার দিবসে তারা হবে আমার লোকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।

একই বইয়ের লেখক আবু বাসীর থেকে বর্ণনা করেন তিনি বর্ণনা করেন ইমাম জাফর সাদিক থেকে তিনি তার প্রপিতামহ থেকে যিনি বর্ণনা করেন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

মাহদী আমার বংশ থেকে। তার নাম হবে আমার নামের মত এবং তার ডাকনাম হবে আমার ডাক নামের মত। সব মানুষের মধ্য থেকে সেই হবে চেহারায় ও চরিত্রে আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী। তার একটি আত্মগোপনকাল থাকবে। যার কারণে জনগণ তাদের ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে। তখন মাহদী আবির্ভূত হবে জ্বলজ্বলে তারার মত এবং পৃথিবীকে পূর্ণ করে দিবে সাম্য ও ন্যায়বিচার দিয়ে ঠিক যেভাবে তা নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো।

একই বইতে একই রকম একটি হাদীস আবু বাসীর থেকে দেখা যায় শুধু এ পাথর্ক্য সহকারে- মাহদী এক জ্বলজ্বলে তারার মত আবির্ভূত হবে এবং তার সাথে আনবে নবীর রিয্ক।

ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক (494) পৃষ্ঠায় আবু বাসীর থেকে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বর্ণনা করেছেন জাবির ইবনে ইয়াযীদ জআফী থেকে যে- আমি জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারীকে বলতে শুনেছি যে- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বলেছেনঃ

হে জাবির , আমার ওয়াসীগণ এবং আমার পরে মুসলমানদের ইমামরা হচ্ছে আলী , হাসান , হোসেইন , আলী ইবনে হোসেইন , মুহাম্মাদ ইবনে আলী- বাক্বীর নামে বিখ্যাত। হে জাবির তুমি তার সাক্ষাত পাবে এবং যখন পাবে আমার সালাম তার কাছে পৌছেঁ দিও। বাকীর-এর পর আসবে জাফর ইবনে মুহাম্মাদ , মূসা ইবনে জাফর , আলী ইবনে মূসা , মুহাম্মাদ ইবনে আলী , আলী ইবনে মুহাম্মাদ , হাসান ইবনে আলী এবং আল ক্বায়েম , যার নাম ও ডাক নাম আমার নাম ও ডাক নামের অনুরূপ। ক্বায়েম হাসান ইবনে আলীর সন্তান। মাহদী হলো সেই ব্যক্তি যা পূর্ব ও পশ্চিমের উপর বিজয় লাভ করবে। মাহদী হলো সেই ব্যক্তি যে তার সাথীদের দৃষ্টি থেকে আত্মগোপন করবে। কোন ব্যক্তি তার ইমামতে দঢ়ৃ বিশ্বাস রাখবে না শুধু তারা ছাড়া যাদের হৃদয়ের বিশ্বাসকে আল্লাহ পরীক্ষা করে নিয়েছেন।

মাহদী (আঃ) ও তার আত্মগোপনের ধরন

ইবনে বাবউইয়্যাহ বর্ণনা করেন সাদ ইবনে আব্দুল্লাহ (যিনি ইমাম হাসান আসকারীর মৃত্যু ও দাফন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন) থেকে- অসংখ্য মানুষ ইমাম হাসান আসকারীর দাফন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলো তাই কারো পক্ষে একত্রে কোন মিথ্যা তৈরী করা সম্ভব নয়।

বর্ণনাকারী বলেন- 288 হিজরীতে যখন ইমাম হাসান আসকারীর মৃত্যুর পর 28 বছর পার হয়ে গেছে আমরা আহমাদ ইবনে ওবায়দুল্লাহ ইবনে খাকান- এর সামনে উপস্থিত হলাম। সে ছিলো কোমে খলিফার প্রতিনিধি , রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব ছিলো তার উপর। সেই জমায়েতে আবু তালিবের বংশধর যারা সামাররার অধিবাসী ছিলো তাদের সম্পর্কে ও তাদের বিশ্বাস , ধার্মিকর্তা ও সাহসিকতা নিয়ে আলোচনা হলো। আহমাদ ইবনে ওবায়দুল্লাহ বললো- সামাররা শহরে আলাভী (আলীর বংশধর)-দের মধ্যে আমি হাসান ইবনে আলীর মত কোন ব্যক্তির দেখা পাই নি এবং কোন রাজার মধ্যে ও সমস্ত বনি হাশিমের মধ্যে এমন কারো কথা শুনি নি যে পবিত্রতায় , ব্যক্তিত্বে , শ্রেষ্ঠত্বে ও উদারতায় তার মত। তাকে প্রধান লোকদের উপর গুরুত্ব দেয়া হত। একইভাবে সেনাপতি , মন্ত্রী , লেখক ও সাধারণ জনগণ তাকে খুব শ্রদ্ধা করতো।

যখন ইমাম হাসান আসকারী অসুস্থ হয়ে পড়লেন , খলিফা আমার বাবাকে ডেকে পাঠালো ইমামের অসুস্থতা সম্পর্কে জানতে। আমার বাবা সাথে সাথেই রাজধানীতে চলে গেলো এবং শীঘ্রই ফিরে এলো। তিনি খলিফার পাঁচজন বিশেষ ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের নিয়ে আসলেন যারা তার কাছে নির্ভরযোগ্য ছিলো এবং তাদের একজন ছিলো নুহরাইর খাদেম। তিনি এ পাঁচজন ব্যক্তিকে ইমামের বাড়ি পাহারা দিতে বললেন এবং তার অসুস্থতা সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে বললেন। তিনি বেশ ক জন ডাক্তার ডাকলেন এবং তাদেরকে প্রতিদিন সকালে ও রাতে ইমামকে দেখাশোনার দায়িত্ব দিলেন। দু দিন পর ইমামের অবস্থার অবনতি হওয়ার সংবাদ পৌছালে আমার বাবা ছুটে গেলেন তাকে দেখতে এবং ডাক্তারদের আদেশ দিলেন ইমামকে একা থাকতে দিতে। এরপর তিনি প্রধান কাযীকে ডাকলেন এবং তাকে তার দশজন বিশস্ত সাথী আনতে আদেশ দিলেন যারা বিশ্বাসে , আমানতদারীতে ও ধার্মিকতায় নির্ভরযোগ্য ছিলো। প্রধান কাযী দশজনকে ডাকলেন এবং তাদেরকে ইমামের কাছে রাত দিন থাকার আদেশ দিলেন। তারাও তার খেদমতে রইলো যতক্ষণ পর্যন্ত না ইমাম পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন।

ইমাম হাসান আসকারী (আঃ) 260 হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। এতে সামাররাতে যেন ভূমিকম্প সংঘটিত হলো।

খলিফা তার বেশ কিছু লোককে ইমামের বাড়িতে পাঠালেন এবং তারা ইমামের ঘরগুলো খুঁজলো এবং যা পেলো তাতেই তালা মেরে দিলো। তারা ইমামের সন্তানকে খোজ করলো । তারা ধাত্রীদের নিয়ে এলো ইমাম হাসান আসকারীর দাসীদের পরীক্ষা করার জন্য। একজন ধাত্রী বললো অমুক দাসী গর্ভবতী। খলিফা হুরাইর খাদেম ও তার সাথীদেরকে এবং অন্য মহিলাদের বললো এ দাসীর উপর নজর রাখতে।

এরপর তারা ইমামের দাফন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো এবং পরো শহর থমকে গেলো । বনি হাশিম , সেনাপতিগণ , লেখকগণ ও জনগণ হযরতের জানাযায় অংশ নিলো। সেদিন সামাররাতে যেন কেয়ামতের দশ্যৃ দেখা গেলো। যখন ইমামের দেহকে গোসল দেয়া হলো এবং কাফন পড়ানো হলো খলিফা আবু ঈসা মুতাওয়াক্কিলকে জানাযা পড়ার জন্য সামনে পাঠালেন। যখন আবু ঈসা ইমামের দেহের কাছে গেলো সে কাফনের কাপড় তুলে তার চেহারাকে লোকদেরকে দেখালো এবং বললো- এ ব্যক্তি ইমাম হাসান আসকারীর সাধারণভাবে মৃত্যু ঘটেছে। তার অসুস্থতার সময় অমুক ডাক্তার , অমুক কাযী , অমুক বিশস্ত ব্যক্তি এবং অমুক ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলো এবং তারা সবাই এ বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে পারে। এরপর সে ইমামের চেহারা ঢেকে দিলো এবং জানাযা পড়ালো এবং তার জানাযায় পাচঁ তাকবীর ছিলো। তার আদেশে ইমামের দেহ তার বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে তার প্রপিতামহের বাড়িতে সমাহিত করা হলো।

হযরতের দাফনের পর এবং জনগণ চলে যাওয়ার পর খলিফা এবং তার সাথীরা তার (ইমাম হাসান আসকারী) সন্তান সম্পর্কে খোজঁ খবর নিতে শুরু করলো। তারা প্রতিটি বাড়ি ভালোভাবে খুজে দেখলো। হযরতের সম্পদ উত্তরাধিকারীদের কাছে বন্টন করতে তারা বাধা দিলো। যারা ঐ দাসীর উপর নজর রাখার দায়িত্বে ছিলো তারা দু বছর পর্যন্ত তার উপর নযর রাখলো। এরপর তারা হযরতের সম্পদ তার মা ও ভাইকে প্রদান করলো।

ইমাম হাসান আসকারীর মা নিজেকে হযরতের ওয়াসী বলে দাবী করলো এবং কাযীর সামনে তা প্রমাণিত হলো। কিন্তু তখনও খলিফা যুগের ইমামকে (হযরতের সন্তানকে) খুঁজে বেড়াচ্ছিলো।

মুহাম্মাদ ইবনে হাসান তুসী তার ফেহরেস্ত -এ আহমাদ ইবনে ওবায়দুল্লাহর জীবন অধ্যায়েও রেওয়ায়েতটি এনেছেন। আহমাদ ইবনে আব্বাস ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ নাজাশীও এ রেওয়ায়েতটি বর্ণনা করেছেন।

মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে নুমান (শেইখ মুফিদ) তার বই ইরশাদ-এ বলেছেন- ইমাম হাসান আসকারী 260 হিজরীর রবিউল আউয়াল প্রথম দিন অসুস্থ হন এবং ইন্তেকাল করেন 8ই রবিউল আউয়াল শুক্রবার । ইন্তেকালের সময় ইমাম হাসান আসকারীর বয়স ছিলো 28 বছর। তাকে একই বাড়িতে দাফন করা হয় , যা সামররাতে ছিলো। যেখানে তার প্রপিতামহ সমাধিত ছিলেন। ইমাম হাসান আসকারী (আঃ) তার সন্তানের জন্ম হওয়াকে গোপন রেখেছিলেন এবং তার বিষয়টি ঢেকে রেখেছিলেন যেহেতু সে সময় পরিস্থিতি অনুকূল ছিলো না। সে সময়কার খলিফা ইমামের সন্তানদের খোঁজে খুব খোঁজাখুঁজি করছিলো এবং তাদের বিষয় জানতে চাচ্ছিলো যেহেতু মাহদী সম্পর্কে বিশ্বাস ইমামিয়া শিয়াদের মাঝে ব্যাপক আকার ধারণ করেছিলো এবং তারা তার আগমন আশা করছিলো। ইমাম হাসান আসকারী তার জীবদ্দশায় কখনোই তার সন্তানকে প্রকাশ্যে দেখান নি এবং তার মৃত্যুর পরও তার শত্রুরা তার সন্তানকে চেনার সুযোগ পায় নি।

মাহদী (আঃ)-এর স্বল্পকালীন ও দীর্ঘকালীন আত্মগোপন

প্রতীক্ষিত মাহদীর জন্য দু বার আত্মগোপন রয়েছে-একটি স্বল্পকালীন ও অপরটি দীর্ঘসময়ের জন্য ।

স্বল্পকালীন আত্মগোপন শুরু হয়েছিলো হযরতের জন্ম থেকে এবং তা চলতে থাকে বিশেষ প্রতিনিধি ব্যবস্থার শেষ পর্যন্ত যার মেয়াদ ছিলো 74 বছর।

দীর্ঘকালীন আত্মগোপন শুরু হয়েছে স্বল্পকালীন আত্মগোপনের পর এবং ততদিন পর্যন্ত তা চলবে যখন হযরত মাহদী আত্মপ্রকাশ করবেন এবং তার শক্তি নিয়ে বিদ্রোহ করবেন।

ইসবাতুল ওয়াসিয়া -গ্রন্থে , আলী ইবনে হোসেইন ইবনে আলী মাসুদী বলেন- বর্ণনা এসেছে যে ইমাম আলী আন নাক্বী (আঃ) অনুসারীদের দৃষ্টি থেকে হারিয়ে গেলেন তার গুটিকয়েক বিশেষ অনুসারীদের ছাড়া। যখন ইমামতের দায়িত্ব ইমাম হাসান আসকারীর কাছে অর্পণ করা হলো তিনি তার বিশেষ কিছু অনুসারীর সাথে কথা বলতেন এবং অন্যদের সাথে পর্দার আড়াল থেকে বলতেন। শুধু সে সময় ছাড়া যখন তিনি ঘোড়ায় চড়তেন এবং রাজার বাড়ির দিকে যেতেন।

ইমাম আসকারী এবং তার পিতা এ আচরণ করছিলেন হযরত মাহদীর আত্মগোপন-এর ক্ষেত্র তৈরী করার জন্য। তা এজন্য যেন অনুসারীরা আত্মগোপন-এর বিষয়টির সাথে পরিচিত হয় এবং তা অস্বীকার না করে এবং তারা ইমামের অনুপস্থিতি ও আত্মগোপনের সাথে অভ্যস্ত হয়ে যায়।

ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ)- এর সময় থেকে শুরু করে ইমাম আলী আন-নাক্বী (আঃ) ও ইমাম হাসান আসকারী (আঃ) পর্যন্ত অনুসারীদের নিয়ম ছিলো তারা যখনই ইমামের সাথে দেখা করতে চাইতো তারা সাক্ষাত করতে পারতো। তারা যদি এ থেকে বঞ্চিত হতো তাহলে সন্দেহ ও দোদুল্যমানতা তাদেরকে স্পর্শ করতো। বরং তাদের কারো কারো বিশ্বাস দুর্বল হয়ে যেতো। এজন্য ইমাম আলী আন-নাক্বী (আঃ) ও ইমাম হাসান আসকারী (আঃ) মাসুদীর বর্ণনা মতে এপথ অবলম্বন করেছিলেন যেন অনুসারীরা ধীরে ধীরে ইমামের আত্মগোপনের সাথে অভ্যস্ত হয়ে যায়।

ইমাম হাসান আসকারীর চাইতে তার পিতা ইমাম আলী আন- নাক্বী (আঃ) নিজেকে অনুসারীদের কাছ থেকে কম সরিয়ে রাখতেন। এর কারণ হচ্ছে ইমাম মাহদী (আঃ)-এর জন্য দু বার আত্মগোপন রয়েছে। একটি স্বল্পকালীন যেখানে তার বিশেষ প্রতিনিধি ছিলো যাদের মাধ্যমে অনুসারীরা তাদের ইমামের সাথে চিঠিপত্র আদান প্রদান করতো , ততক্ষণ পর্যন্ত যখন তার অনুসারীরা তার অনুপস্থিতির সাথে অভ্যস্ত হয়ে গেলো এবং তখন থেকে শুরু হলো তার দীর্ঘকালীন আত্মগোপন যখন বিশেষ প্রতিনিধি থাকার ব্যবস্থাও বাতিল হয়ে গেলো।

সপ্তম অধ্যায়

আসমানী কন্ঠস্বর

ইকদুদ দুরার -এর লেখক একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন (অংশ 3 , অধ্যায় চতুর্থ) ইমাম হোসেইন (আঃ) থেকে- যদি তোমরা পূর্ব দিক থেকে একটি আগুন দেখতে পাও তিন অথবা সাত দিনের জন্য তাহলে ইনশাআল্লাহ তোমরা আলে মুহাম্মাদের ফারাজ (মুক্তি) আশা করতে পারো।

ইমাম (আঃ) আরও বলেন- পরে একজন আহবানকারী আকাশ থেকে মাহদীর নাম এমনভাবে বলবে যে তা পূর্ব ও পশ্চিম সবদিকে শোনা যাবে। যারা ঘুমিয়ে থাকবে তারা প্রত্যেকেই জেগে উঠবে এবং যারা বসে থাকবে তারা ভয়ে দু পায়ের উপর দাঁড়িয়ে যাবে। আল্লাহ রহমত বর্ষণ করুন তার উপর যে আহবানের উত্তর দিবে কারণ আহবানকারী আর কেউ নয় জীবরাইল ছাড়া।

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 414 পৃষ্ঠায় দুররুল মানযুম থেকে বর্ণনা করেছেন- মাহদীর আবির্ভাবের প্রমাণগুলোর একটি হলো এক আহবানকারী ডেকে উঠবে- জেনে রাখো , যুগের সর্দার আবির্ভূত হয়েছে। এরপর যে কেউ ঘুমিয়ে থাকবে সে জেগে উঠবে এবং যে দাড়িয়েঁ থাকবে সে বসে পড়বে।

আসমানী নিদর্শনসমূহ

ইকদুদ দুরার -এর লেখক (পরিচ্ছেদে-3 , চতুর্থ অধ্যায়ে) হাফিজ আবু বকর ইবনে হাম্মাদ থেকে এবং তিনি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন- মাহদী আবির্ভূত হবে না যতক্ষণ না সূর্যের সাথে কিছু নিদর্শন আবির্ভূত হয়।

একই বইয়ের একই অধ্যায়ে লেখক হাফিয নাঈম ইবনে হেমাদ এবং তিনি বাশার ইবনে হাযরামী থেকে বর্ণনা করেন- রমযান মাসে ঘটনাসমূহের নিদর্শন হবে আসমানী নিদর্শন এবং এরপর জনগণ পরস্পর বিভেদ করবে। যখন তোমরা নিদর্শনগুলো দেখবে তখন নিজের জন্য যতটকু পারো খাদ্য জমা কর।

আবার একই বইয়ের একই অধ্যায়ে এর লেখক হাফেজ নাঈম ইবনে হেমাদ-এর আল ফাতান থেকে তিনি কা আব আল আহবার থেকে বর্ণনা করেন- মাহদীর আগমনের পূর্বে জ্বলজ্বলে তারাসমূহ আবির্ভূত হবে পূর্বদিক থেকে।

সূর্য ও চাঁদের গ্রহণ

ইকদুদ দুরার -এর লেখক প্রথম পরিচ্ছেদ , চতুর্থ অধ্যায়ে হাফেয নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে এবং তিনি ইয়াযিদ ইবনে খালিল আসাফী থেকে বর্ণনা করেন-

আমি ইমাম বাকির (আঃ)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেন , দু টি নিদর্শন মাহদীর আবির্ভাবের আগে ঘটবে (যা আদম (আঃ)-এর অবতরণ থেকে এখন পর্যন্ত দেখা যায় নি)। একটি নিদর্শন হলো 15ই রমযান সূর্য গ্রহণ হবে এবং চন্দ্র গ্রহণ হবে রমযান মাসের শেষের দিকে।

এক ব্যক্তি বললো- হে রাসূলুল্লাহর সন্তান , আপনি যা বলছেন তা নয়। বরং সূর্য গ্রহণ হবে রমযান মাসের শেষে এবং চন্দ্র গ্রহণ হবে রমযান মাসের মাঝামাঝি। ইমাম বাকের (আঃ) বললেন- যিনি একথা বলছেন তিনি (তোমার থেকে) ভালো জানেন যে আদম (আঃ)-এর অবতরণ থেকে এ পর্যন্ত এ দু টি নিদর্শন ঘটে নি।

ইসাফুর রাগেবীন - এর লেখক একই রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন।

জনগণের মাঝে মতভেদ ও হতাশা

ইকদুদ দুরার -এর লেখক পরিচ্ছেদ এক , চতুর্থ অধ্যায়-এ ইমাম হোসেইন (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন-

যে বিষয়ে তোমরা অপেক্ষা করছো , যেমন মাহদী (আঃ)-এর আগমন , তা পূরণ হবে না যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরের প্রতি বিতশ্রদ্ধ হও এবং তোমাদের ব্যক্তি কিছু অন্যদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দাও এবং যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে অভিযোগ কর।

বর্ণনাকারী বলেন- আমি বললাম- এতে কি ভালো কিছু থাকবে ? ইমাম (আঃ) উত্তর দিলেন- কল্যাণ থাকবে যখন মাহদী আবির্ভূত হবে এবং এ ধরনের নৃশংসতা ও নিপীড়ন ধ্বংস করবেন।

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 491 পৃষ্ঠায় হাফেয আবু নাঈম ইসফাহানীর আরবাঈন থেকে বর্ণনা করেন যে আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) বলেছেন-

আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম- হে রাসূলুল্লাহ , মাহদী কি আমাদের বংশ থেকে নাকি অন্য কোন বংশ থেকে ? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন- বরং সে আমাদের কাছ থেকে। ধর্ম তার হাতে গিয়ে সমাপ্ত হবে যেভাবে তা আমাদের কাছ থেকে শুরু হয়েছে। জনগণ বিদ্রোহ থেকে মুক্তি পাবে মাহদীর মাধ্যমে যেভাবে তারা শিরক থেকে মুক্তি পেয়েছিলো আমাদের মাধ্যমে। মাহদীর মাধ্যমে আল্লাহ তাদের হৃদয়ে ঐক্য সৃষ্টি করবেন যেভাবে তিনি তাদের মধ্যে আমাদের মাধ্যমে ঐক্য সৃষ্টি করেছিলেন ঘৃণা ও শিরকের পর।

ইসাফুর রাগেবীন -এর লেখক 151 পৃষ্ঠায় আহমাদ ও মাওয়ারদি থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- তোমাদেরকে সুসংবাদ মাহদী সম্পর্কে । সে কুরাইশ থেকে এবং আমার বংশ থেকে সে আবির্ভূত হবে জনগণের মাঝে বিভেদ এবং দ্বন্দ্বের সময়।