কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?0%

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ? লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক: সাইয়্যেদ সাদরুদ্দীন আল সাদর
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 62460
ডাউনলোড: 3530

পাঠকের মতামত:

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 86 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 62460 / ডাউনলোড: 3530
সাইজ সাইজ সাইজ
কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

মাহদীর (আঃ) কর্মকাণ্ড ও আহবান

ইকদুদ দুরার -এর লেখক সপ্তম অধ্যায়ে নাঈম ইবনে হেমাদ এর ফাতান থেকে এবং তিনি ইমাম মুহাম্মাদ বাকের (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন-

যখন অনৈতিকতা ব্যাপক আকার ধারণ করবে মাহদী মক্কায় আবির্ভূত হবেন। তখন তার সাথে থাকবে নবী (সাঃ)-এর পতাকা , তরবারী , জামা এবং অন্যান্য নিদর্শন। এশার নামাজ শেষ করার পর পরই তিনি উচ্চ কণ্ঠে বলবেন- হে জনতা , আমি তোমাদেরকে সে সময়ের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি যখন তোমরা তোমাদের রবের সামনে দাড়াবে এবং তিনি তার যুক্তি পেশ করা সম্পূর্ণ করবেন। তিনি নবীদের পাঠিয়েছেন , কিতাব পাঠিয়েছেন এবং তোমাদেরকে আদেশ করেছেন আল্লাহর সাথে কোন শরীক না করতে। আল্লাহ ও তার নবীর কাছে আত্মসমপর্ণ ও আনুগত্যকে রক্ষা কর। কোরআন যা জীবিত করতে চায় তোমরাও তা জীবিত করার জন্য সংগ্রাম কর এবং কোরআন যা কিছুর মৃত্যু চায় তোমরা তার জন্য সংগ্রাম কর। ধার্মিকতায় আমার সাথী ও মন্ত্রী হও কারণ পৃথিবী ধ্বংসের নিকটবর্তী এবং বিদায় জানিয়েছে। আমি তোমাদেরকে আল্লাহ ও তারঁ রাসূলের দিকে আহবান করছি এবং তার কিতাব অনুযায়ী কাজ করার আহবান জানাচ্ছি। মিথ্যা থেকে দুরে থাকো এবং নবীর (সাঃ) সূন্নাতকে (পদ্ধতিকে) জীবিত কর।

মাহদী আবির্ভূত হবেন দ্রুততার সাথে এবং হঠাৎ করে হেমন্তের মেঘের মত তিনশত তেরজন লোকের সাথে , যা বদর -এর সাহাবীদের সংখ্যার সমান। রাতে তিনি ইবাদতে ব্যস্ত থাকবেন এবং দিনের বেলা তিনি হবেন গর্জনরত সিংহের মত। এভাবে আল্লাহ মাহদীর জন্য হেজায -এ বিজয় আনবেন। মাহদী বনি হাশিম-এর লোকদের কারাগার থেকে মুক্ত করবেন যারা সে সময় কারাগারে থাকবেন। কালো পতাকাধারী জনতা কুফায় প্রবেশ করবে এবং মাহদীর কাছে যাবে তাদের অনুগত্যের শপথ করতে। মাহদী নিজে তার সেনাবাহিনীকে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় পাঠাবেন আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করার জন্য। অত্যাচারীরা পরাজিত হবে এবং শহরগুলোর অধিবাসীরা মাহদীর কাছে আত্মসমর্পণ করবে।

একই বইয়ের একই অধ্যায়ে এর লেখক আবু নাঈম-এর সিফাতুল মাহদী থেকে এবং তিনি আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

আমার বংশ থেকে একজন আবির্ভূত হবে যে আমার সূন্নাত অনুযায়ী কাজ করবে। আকাশ থেকে রহমত নাযিল হবে এবং পৃথিবী তার নেয়ামত উগরে দিবে। পৃথিবী ন্যায়বিচার ও সাম্যে পূর্ণ হয়ে যাবে ঠিক যেভাবে তা অত্যাচার ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো।

একই বইয়ের একই অধ্যায়ে লেখক আব্দুল্লাহ ইবনে আতা থেকে বর্ণনা করেন যে- আমি ইমাম বাক্বির (আঃ)-কে বললাম- আমাকে ক্বায়েম সম্পর্কে বলুন। তিনি বললেন-

আমি ক্বায়েম নই এবং যাকে তোমরা বল সে ক্বায়েম নয়।

আমি জিজ্ঞেস করলাম- মাহদীর পথ ও নীতিমালা কী হবে ? তিনি উত্তর দিলেন- ঠিক রাসূলুল্লাহর (সাঃ) মত।

একই বইয়ে তিনি নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে এবং তিনি বিবি আয়শা থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

মাহদী আমার বংশ থেকে। সে আমার সুন্নাতের জন্য যুদ্ধ করবে ঠিক যেভাবে আমি ওহীর জন্য করেছি।

ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক -এর 98 পৃষ্ঠায় এবং ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 433 পৃষ্ঠায় একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন প্রায় একই কথায়।

ইসাফুর রাগেবীন -এর লেখক 16 পৃষ্ঠায় বলেছেন- মহিউদ্দীন আল আরাবী তার ফুতুহাতুল মাক্কিয়্যাহ -তে বলেছেন- মাহদী এলহাম অনুযায়ী কাজ করবেন যেহেতু নবীর (সাঃ) নীতিমালা তার কাছে প্রকাশিত হবে এলহামের মাধ্যমে , যেভাবে রাসূল (সাঃ) বলেছেন

এভাবে রাসূল (সাঃ) আমাদের বুঝিয়েছেন যে মাহদী রাসূল (সাঃ)-এর অনুসারী এবং তিনি অবিশ্বাসী নন। এছাড়া তিনি আমাদের বুঝিয়েছেন যে তিনি নিষ্পাপ।

মাহদীর (আঃ) পন্থা

ইকদুদ দুরার -এর লেখক পঞ্চম অধ্যায়ে আবু আমারা উসমান ইবনে সাঈদ মুকাররীর সুনান থেকে এবং তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

আকাশের বাসিন্দারা , পৃথিবীর বাসিন্দারা , পাখিরা , পশুরা এবং মাছেরা মাহদীর উপস্থিতিতে আনন্দিত হবে।

একই বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে লেখক আবু নাঈম-এর সিফাতুল মাহদী এবং ইমাম আহমদ-এর মুসনাদ থেকে বর্ণনা করেন এবং তারা আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

আমি তোমাদের মাহদী সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছি- পৃথিবী ও আকাশের বাসিন্দারা তার উপরে সন্তুষ্ট থাকবে।

একই বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে এর লেখক নাঈম ইবনে হেমাদ- এর ফাতান থেকে এবং তিনি জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন- এক ব্যক্তি ইমাম বাক্বির (আঃ)-এর কাছে আসলেন এবং বললেন- আমার সম্পদের উপর যাকাত এর এ পাঁচশত দিরহাম গ্রহণ করুন।

ইমাম বাক্বির (আঃ) বললেন- তুমি এ পাঁচশত দিরহাম তোমার মুসলমান প্রতিবেশী এবং তোমার যে মুসলমান ভাইয়েরা দুর্দশায় আছে তাদের দাও। এরপর ইমাম (আঃ) বললেন- যখন আমাদের বংশধর থেকে মাহদী আল ক্বায়েম আবির্ভূত হবে সে সম্পদকে সমানভাবে বণ্টন করবে এবং চাষীদের সাথে ন্যায়বিচারের সাথে বিনিময় করবে।

একই বইয়ের একই অধ্যায়ে লেখক আবু আমারা মুকাররীর সুনান থেকে এবং হাফেয নাঈম ইবনে হেমাদ-এর ফাতান থেকে এবং তিনি কাআব আল আকবার থেকে বর্ণনা করেন যে- আমি নবীর বইগুলোতে মাহদীর নাম দেখেছি। তার শাসন ন্যায়পরায়নতা বিবর্জিত নয় এবং নিপীড়নমূলকও নয়।

ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক্ব -এর 98 পৃষ্ঠাতে রুইয়ানি , তাবরানি এবং অন্যান্য থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ মাহদী আমার বংশধর থেকে। পৃথিবী ও আকাশের বাসিন্দারা এবং পাখিরা মাহদীর খিলাফত নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে।

একই বইয়ের 99 পৃষ্ঠায় লেখক আহমাদ ও মাওয়ারদী থেকে একই ধরনের বিষয়বস্তু সম্বলিত একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।

মাহদীর (আঃ) প্রশংসনীয় নৈতিকতা

ইকদুদ দুরার -এর লেখক তৃতীয় অধ্যায়ে হারিস ইবনে মুগাইরা নাযরি থেকে বর্ণনা করেন যে- আমি হোসেইন ইবনে আলীকে (আঃ) বললাম- কী চিহ্ন থেকে আমরা মাহদীকে চিনবো ?

তিনি বললেনঃ তার শান্ত অবস্থা ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে।

একই বইয়ের লেখক হাফেয আবু মোহাম্মাদ হোসেইন-এর মাসাবীব থেকে এবং তিনি কাআব আল আকবার থেকে বর্ণনা করেন যে- ঈগল ও তার দুই ডানার মত মাহদী আল্লাহর জন্য বিনীত হবে।

একই বইয়ের অষ্টম অধ্যায়ে তিনি নাঈম ইবনে হেমাদ-এর ফাতান থেকে এবং তিনি তাউস থেকে বর্ণনা করেন- মাহদীর নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি হলো সে হবে তার কর্মকর্তাদের সাথে কঠোর নিয়মের অনুসারী এবং দরিদ্রদের সাথে উদার ও দয়ালু ।

একই বইয়ের নবম অধ্যায়ের তৃতীয় অংশে তিনি নাঈম ইবনে হেমাদ-এর ফাতান থেকে এবং তিনি আবু রুমিয়াহ থেকে বর্ণনা করেন- মাহদী দরিদ্রদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন এবং তাদের গায়ে হাত বুলিয়ে দিবেন।

একই বইয়ের নবম অধ্যায়ের তৃতীয় অংশে তিনি হোসেইন ইবনে আলী (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন-

যখন মাহদী আবির্ভূত হবে তার এবং আরব ও কুরাইশদের মধ্যে আর কিছু ফয়সালাকারী হবে না তরবারী ছাড়া। কী কারণে তারা হযরতের আবির্ভাব এর জন্য তাড়াহুড়া করছে ? আমি আল্লাহর কসম করে বলছি মাহদী মোটা ও জীর্ণ পোষাক ছাড়া কিছু পড়বে না এবং বার্লির রুটি ছাড়া কিছু খাবে না এবং তার তরবারীর নীচে মৃত্যু লুকিয়ে থাকবে।

ধর্ম মাহদীতে (আঃ) গিয়ে শেষ হবে

ইকদুদ দুরার -এর লেখক প্রথম অধ্যায়ে একদল হাদীস বিশেষজ্ঞ যেমন , আবুল ক্বাসিম তাবারানি , আবু নাঈম ইসফাহানি , আব্দুর রহমান ইবনে হাতিম এবং আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ এবং অন্যান্য থেকে বর্ণনা করেন যে আমিরুল মুমিনীন আলী (আঃ) বলেছেন- আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম- ইয়া রাসূলুল্লাহ , মাহদী কি আমাদের বংশ থেকে (আসবে) নাকি অন্যদের ?

তিনি বললেন- প্রকৃত ব্যাপার হলো সে আমাদের থেকে আসবে। আল্লাহ মাহদীতে ধর্মের সমাপ্তি টানবেন যেভাবে তিনি আমাদের মাধ্যমে তা শুরু করেছিলেন।

একই বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে পূর্ববর্তী বর্ণনাকারীদের কাছ থেকে বর্ণনা করেন যে আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) বলেছেন- আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম। মাহদী কি আমাদের থেকে , মোহাম্মাদের বংশধর নাকি অন্যদের থেকে ? তিনি উত্তর দিলেন- প্রকৃত ব্যাপার হলো সে আমাদের কাছ থেকে আসবে। আল্লাহ ধর্মের সমাপ্তি টানবেন মাহদীতে ঠিক যেভাবে তিনি তা আমাদের মাধ্যমে শুরু করেছিলেন

একই বইয়ের একই অধ্যায়ে লেখক হাফেয আবু বকর বায়হাক্বী থেকে এবং তিনি আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

মাহদী আমার বংশ থেকে , ধর্ম তার মাধ্যমে সমাপ্ত হবে ঠিক যেভাবে তা আমাদের মাধ্যমে শুরু হয়েছিলো।

ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক -এর 97 পৃষ্ঠায় আবুল কাসিম তাবারানি থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

মাহদী আমাদের থেকে। ধর্ম সমাপ্ত হবে তার মাধ্যমে ঠিক যেভাবে তা আমাদের মাধ্যমে শুরু হয়েছিলো।

ইসাফুর রাগেবীন -এর লেখক 148 পৃষ্ঠায় তাবরানি থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

মাহদী আমাদের বংশ থেকে। ধর্ম তার মাধ্যমে সমাপ্ত হবে ঠিক যেভাবে তা আমাদের মাধ্যমে শুরু হয়েছিলো।

ইহুদী ও খৃষ্টানরা

ইকদুদ দুরার -এর লেখক সপ্তম অধ্যায়ে নাঈম ইবনে হেমাদ- এর ফাতান থেকে এবং তিনি সুলাইমান ইবনে ঈসা থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন- আমার কাছে সংবাদ পৌছেছে যে তাবারিয়া হৃদ থেকে অঙ্গীকার-এর নৌকা বের করে আনা হবে। নৌকাটি বহন করে বায়তুল মুকাদ্দাসের সামনে স্থাপন করা হবে। একদল ইহুদী তা প্রত্যক্ষ করবে এবং তারা আত্মসমপর্ণ করবে।

একই বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে লেখক বলেন- কোন কোন হাদীসে এটি বলা হয়েছে- যে কারণে মাহদীকে মাহদী বলা হয় তা হলো তাকে তাওরাতের দিকে পরিচালিত করা হবে এবং তিনি তা সিরিয়ার পাহাড় থেকে বের করে আনবেন। তিনি ইহুদীদের সেই কিতাবের দিকে আহবান করবেন এবং একদল তাওরাতের প্রতি আত্মসমর্পণ করবে।

ইকদুদ দুরার -এর লেখক বলেন- আবু আমারা মাদায়েনি তার সুনান -এ বলেছেন- মাহদীকে মাহদী বলা হয় এ কারণে যে তাকে সিরিয়ার পর্বতমালার দিকে পরিচালিত করা হবে এবং তিনি সেখান থেকে তাওরাতের কিতাবগুলো বের করে আনবেন। তিনি ইহুদীদের সাথে তাওরাতের মাধ্যমে বিতর্ক করবেন ও যুক্তি উপস্থাপন করবেন এবং ইহুদীদের একটি দল তার কাছে আত্মসমর্পণ করবে।

ইসাফুর রাগেবীন -এর লেখক 153 পৃষ্ঠায় বলেছেন- মাহদী অঙ্গীকার-এর নৌকা এবং তাওরাতের কিতাবগুলোকে যথাক্রমে আনথাকিয়ার গুহা থেকে এবং সিরিয়ার পাহাড় থেকে বের করে আনবেন। তিনি ইহুদীদের সাথে তাওরাতের মাধ্যমে বিতর্ক করবেন এবং ইহুদীদের একটি বিরাট দল তার কাছে আত্মসমর্পণ করবে।

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 476 পৃষ্ঠায় মেশকাত আল মাসাবীহ র লেখক থেকে এবং তিনি আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

ঈসা ইবনে মারইয়াম অবতরণ করবেন এবং ন্যায়পরায়নতার সাথে বিচার করবেন। তিনি ক্রুশ ধ্বংস করবেন এবং শুকরের গোশত নিষিদ্ধ করবেন । তিনি জিযিয়া কর বাতিল করবেন। কম বয়সী উটগুলোকে মুক্ত করে দিবেন এবং তাদের উপর আরোহণ করবেন না। তিনি শত্রুতা উচ্ছেদ করবেন এবং বিদ্বেষ , ঘৃণা এবং ঈর্ষা ধ্বংস করবেন।

এ বইয়ের লেখক বলেন- জিযিয়া বাতিল করবেন অর্থ সবাই ইসলামের অনুসারী হয়ে যাওয়ার কারণে জিযিয়া থাকবে না ঠিক সে অর্থে যে তিনি ক্রুশ ধ্বংস করবেন। এছাড়া শত্রুতা , বিদ্বেষ ও ঘৃণা এবং ঈর্ষা ঈসা ইবনে মরিয়মের অবতরণের বরকতে দূর হয়ে যাবে।

শুধু ইসলাম ধর্ম থাকবে

ইকদুদ দুরার -এর লেখক দ্বিতীয় অধ্যায়ে আবুল হাসান রাবঈ মালেকি থেকে এবং তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মাহদী , তার উপাধি ও তার বায়াত গ্রহণের স্থান সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেনঃ

আল্লাহ মাহদীর মাধ্যমে ধর্মকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবেন এবং তাকে বিজয় দান করবেন। তখন যারা বলবে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই তারা ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউ থাকবে না।

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 476 পৃষ্ঠায় শেইখ মহিউদ্দীন আল আরাবীর ফুতুহাতুল মাক্কিয়্যাহ র 366 অধ্যায় থেকে বর্ণনা করেন যে ,

মাহদী তখন আবির্ভূত হবেন যখন ধর্ম হারিয়ে যেতে থাকবে। যারা তা গ্রহণ করবে না তাদেরকে হত্যা করা হবে এবং যে তার সাথে বিতর্কে জড়িত হবে সে পরাজিত হবে। তিনি ধর্মের বাস্তবতা প্রকাশ করবেন এমনভাবে যদি রাসূল (সাঃ) জীবিত থাকতেন তিনিও এভাবেই বিচার করতেন। তিনি পৃথিবীর বুক থেকে অন্য সব ধমর্কে উচ্ছেদ করে দিবেন। তখন সত্য ধর্ম ছাড়া পৃথিবীতে আর কোন ধর্ম থাকবে না।

মাহদীর (আঃ) সংস্কার

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 486 পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন যে হযরত আলী ইবনে মূসা আল রিদা এবং তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার আহলে বায়েতের গুণাবলী এবং মেরাজ সম্পর্কে বলার সময় বলেন- আমি জিজ্ঞেস করলাম , হে আমার রব কারা আমার ওয়াসী ? আমি একটি ডাক শুনলাম হে মুহাম্মাদ , তোমার ওয়াসী হলো তারা যাদের নাম আমার আরশে লেখা রয়েছে।

আমি তাকালাম এবং দেখলাম 12টি নূর। একটি সবুজ ঢাকনা প্রত্যেক নূরের উপর এবং আমার ওয়াসীদের নাম তাদের প্রত্যেকটির উপর লেখা রয়েছে আর তাদের প্রথম জন ছিলো আলী এবং শেষজন মাহদী।

আমি জিজ্ঞেস করলাম , হে আমার রব , তারা কি আমার পরে আমার ওয়াসী (অসিয়ত সম্পাদনকারী) ?

আমি একটি কণ্ঠ শুনলাম- তোমার পরে , তারা আমার বন্ধু , নির্বাচিত ব্যক্তিগণ এবং আমার সৃষ্টির উপরে প্রমাণসমূহ। তারা তোমার ওয়াসী। আমি আমার গৌরব ও মর্যাদার শপথ করে বলছি আমি পৃথিবী থেকে অত্যাচারকে বিদায় করে দিবো সর্বশেষ জনের হাতে , সে হলো মাহদী। আমি তাকে পূর্ব ও পশ্চিমে বিজয়ী করবো। আমি বাতাস দিয়ে তার বিজয় আনবো এবং মেঘকে তার অনুগত করবো। আমি তাকে শক্তি দিবো কিছু মাধ্যমের সাহায্যে এবং তার নিজস্ব সেনাবাহিনীর মাধ্যমে। আমি তাকে ফেরেশতা দিয়ে সাহায্য করবো যতক্ষণ না সে আমার সরকার গঠন করে এবং জনতাকে তাওহীদ এর চারদিকে জড়ো করে। এরপর আমি তার রাজ্যকে বিস্তৃত করবো এবং দিনগুলোকে বৃদ্ধি করবো বিচার দবিস পর্যন্ত।

আবারও ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 486 পৃষ্ঠায় আবুল মুআইয়েদ মুয়াফিক্ব ইবনে আহমাদ খাওয়ারাযমী থেকে এবং তিনি আবু সুলাইমান থেকে বর্ণনা করেন যে , আমি রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) বলতে শুনেছি , যে রাতে আমাকে আকাশে উঠানো হলো আমি একটি ডাক শুনলাম- হে মুহাম্মাদ , তুমি কি তোমার ওয়াসীদের দেখতে চাও ?

আমি বললাম- জী

আমাকে বলা হলো- আরশের ডান দিকে তাকাও । আমি তাকানোর সাথে সাথেই আলী , ফাতেমা , হাসান , হোসেইন , আলী ইবনে হোসেইন , মুহাম্মাদ ইবনে আলী , জাফর ইবনে মুহাম্মাদ , মূসা ইবনে জাফর , আলী ইবনে মূসা , মুহাম্মাদ ইবনে আলী , আলী ইবনে মুহাম্মাদ , হাসান ইবনে আলী এবং মুহাম্মাদ ইবনে হাসানকে দেখলাম , যে তাদের মাঝে জ্বলজ্বলে নক্ষত্রের মত দেখাচ্ছিলো।

পরে আমাকে বলা হলো- হে মুহাম্মাদ , তারা আমার দাসদের উপর আমার প্রমাণ। তারা তোমার ওয়াসী এবং মাহদী তাদের মধ্যে তোমার বংশধরদের পক্ষে প্রতিশোধ গ্রহণকারী , আমি আমার গৌরব ও মর্যাদার শপথ করছি যে মাহদী আমার শত্রুদের উপর প্রতিশোধ গ্রহণকারী এবং আমার বন্ধুদের সাহায্যকারী

ইকদুদ দুরার -এর লেখক চতুর্থ অধ্যায়ের প্রথম অংশে আবু নাঈমের সিফাতুল মাহদী থেকে এবং তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুলাহ (সাঃ) বলেছেনঃ এ জাতির উপর অভিশাপ এর অত্যাচারী শাসকদের জন্য। কীভাবে তারা বিশ্বাসীদের হত্যা করে এবং তাদের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করে , তাদেরকে বাদ রেখে যারা তাদের মেনে চলে। যখন আল্লাহ ইসলামকে মর্যাদা দিতে চাইবেন তিনি অত্যাচারীদের ধ্বংস করবেন। সব কিছুর উপর আল্লাহর ক্ষমতা রয়েছে এবং তিনি একটি জাতিকে শুদ্ধ করতে সক্ষম যা নৈতিকতা হারিয়েছে।

এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-

হে হুযাইফা , যদি পৃথিবীর জীবন একদিনও বাকী না থাকে আল্লাহ সে দিনটিকে এতটা দীর্ঘ করবেন যে আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তি আবির্ভূত হবে এবং শাসন করবে। সে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পরিচালনা করবে এবং ইসলামকে প্রকাশ করবে। আল্লাহ তার শপথ ভঙ্গ করেন না এবং তিনি হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত দ্রুত।

উল্লিখিত বইয়ের নবম অধ্যায়ের তৃতীয় অংশে এর লেখক আলী ইবনে আবি তালিব থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি মাহদী সম্পর্কে , মাহদী ও তার সংস্কার সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন- কোন মিথ্যা কথা নেই যা মাহদী উপড়ে ফেলবেন না এবং কোন সূন্নাহ বাকী থাকবে না যা মাহদী জীবিত করবেন না।

একই বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে তিনি একদল হাদীস বিশেষজ্ঞ যেমন আবু নাঈম ইসফাহানি , আবুল ক্বাসেম তাবরানি , আবু আব্দুর রহমান ইবনে আবু হাতিম , আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে এবং তারা আলী ইবনে আবি তালিব থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মাহদী এবং তার হাতে আল্লাহ ধর্মের যে সমাপ্তি টানবেন তার কথা বলার সময় বলেন- জনগণ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে মাহদীর কারণে , ঠিক যেভাবে তারা মুক্তি পেয়েছিলো শিরক থেকে। তার কারণে আল্লাহ তাদেরকে পরস্পরের সাথে অন্তরঙ্গ করবেন শত্রুতার পর ঠিক যেভাবে তাদেরকে তিনি পরস্পরের সাথে অন্তরঙ্গ করেছিলেন খোদাদ্রোহীতার শত্রুতার পর।

একই বইয়ের নবম অধ্যায়ে তৃতীয় অংশে তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আতা থেকে বর্ণনা করেন , আমি ইমাম বাকিরক্বে জিজ্ঞেস করলাম যখন মাহদী আবির্ভূত হবেন তখন তার পন্থা কী হবে ?

তিনি উত্তর দিলেন- তিনি তার সামনে থাকা খোদাদ্রোহীতামূলক কথাকে ধ্বংস করবেন ঠিক যেভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) করেছিলেন। মাহদী নুতনভাবে ও তাজাভাবে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করবেন।

একই বইয়ের একই অধ্যায়ের একই অংশে লেখক আলী ইবনে আবি তালিব থেকে বর্ণনা করেন- কোন খোদাদ্রোহীতামূলক কথা নেই যা মাহদী উচ্ছেদ করবেন না এবং কোন সুন্নাহ নেই যা মাহদী প্রতিষ্ঠা করবেন না।

উল্লিখিত বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে তিনি আবু বকর বায়হাকীর বেসাথ ওয়া নুশুর , আহমাদ-এর মুসতাদরাক এবং আবু নাঈম-এর সিফাতুল মাহদী থেকে বর্ণনা করেন এবং তারা সবাই আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

আমি তোমাদেরকে মাহদীর সুসংবাদ দিচ্ছি। সে আমার উম্মতের ভিতর আবির্ভুত হবে এমন এক সময়ে যখন তারা পরস্পর বিভেদ ও যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। তখন হযরত পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দিবেন ঠিক যেভাবে তা অত্যাচার ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। মাহদী মুহাম্মাদের উম্মতের হৃদয়গুলোকে পূর্ণ করে দিবেন সম্পদ দিয়ে এবং তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন। তার ন্যায়বিচার সবাইকে বকেু জড়িয়ে ধরবে।

উল্লিখিত বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে তিনি আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন- মাহদী তার প্রধান ব্যক্তিদের বিভিন্ন শহরে পাঠাবেন জনগণের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। নেকড়ে এবং ভেড়া সব একসাথে ঘাস খাবে। শিশুরা সাপ ও বিচ্ছু নিয়ে খেলবে সামান্যতম ক্ষতি ছাড়াই। খারাপ বিদায় হয়ে যাবে এবং ভালো থাকবে। জনগণ 750 গ্রাম চাষ করবে পরিবর্তে ফসল তুলবে 525 কিলোগ্রাম ঠিক যেভাবে পবিত্র কোরআনে তা বলা হয়েছে। ব্যভিচার , মদপান ও সূদ-এর শিকড় উপড়ে ফেলা হবে। জনগণ ইবাদত , ঐশী আইন , বিশ্বাস এবং সমাজে মেলামেশার প্রতি আসক্তি অনুভব করবে। মানুষের হায়াত বৃদ্ধি পাবে। আমানত ফেরত দেয়া হবে। গাছগুলো ফল দিবে। রহমত ও বরকত বহুগুণ হবে এবং শয়তানদের ধ্বংস করা হবে। সৎগুণসম্পন্ন লোকেরা বেঁচে থাকবে এবং আহলে বাইতের প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন লোকদের অস্তিত্ব থাকবে না।

একই বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে লেখক নাঈম ইবনে হেমাদ-এর ফাতান থেকে এবং তিনি জাফর ইবনে বাশার শামি থেকে বর্ণনা করেন যে (মাহদীর যুগে) অবিচার এমনভাবে তিরস্কৃত হবে যে কোন ব্যক্তির কোন সম্পদ যদি অন্য কারো দাঁতের নীচেও লুকানো থাকে তাও সে খুলে তার মালিককে ফেরত দিবে।