মাহদীর (আঃ) সংস্কার
‘
ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা’
-র লেখক 486 পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন যে হযরত আলী ইবনে মূসা আল রিদা এবং তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার আহলে বায়েতের গুণাবলী এবং মেরাজ সম্পর্কে বলার সময় বলেন-“
আমি জিজ্ঞেস করলাম ,‘
হে আমার রব কারা আমার ওয়াসী ? আমি একটি ডাক শুনলাম‘
হে মুহাম্মাদ , তোমার ওয়াসী হলো তারা যাদের নাম আমার আরশে লেখা রয়েছে।’
‘
আমি তাকালাম এবং দেখলাম 12টি নূর। একটি সবুজ ঢাকনা প্রত্যেক নূরের উপর এবং আমার ওয়াসীদের নাম তাদের প্রত্যেকটির উপর লেখা রয়েছে আর তাদের প্রথম জন ছিলো আলী এবং শেষজন মাহদী।’
আমি জিজ্ঞেস করলাম ,‘
হে আমার রব , তারা কি আমার পরে আমার ওয়াসী (অসিয়ত সম্পাদনকারী) ?’
আমি একটি কণ্ঠ শুনলাম-‘
তোমার পরে , তারা আমার বন্ধু , নির্বাচিত ব্যক্তিগণ এবং আমার সৃষ্টির উপরে প্রমাণসমূহ। তারা তোমার ওয়াসী। আমি আমার গৌরব ও মর্যাদার শপথ করে বলছি আমি পৃথিবী থেকে অত্যাচারকে বিদায় করে দিবো সর্বশেষ জনের হাতে , সে হলো মাহদী। আমি তাকে পূর্ব ও পশ্চিমে বিজয়ী করবো। আমি বাতাস দিয়ে তার বিজয় আনবো এবং মেঘকে তার অনুগত করবো। আমি তাকে শক্তি দিবো কিছু মাধ্যমের সাহায্যে এবং তার নিজস্ব সেনাবাহিনীর মাধ্যমে। আমি তাকে ফেরেশতা দিয়ে সাহায্য করবো যতক্ষণ না সে আমার সরকার গঠন করে এবং জনতাকে‘
তাওহীদ’
এর চারদিকে জড়ো করে। এরপর আমি তার রাজ্যকে বিস্তৃত করবো এবং দিনগুলোকে বৃদ্ধি করবো বিচার দবিস পর্যন্ত।”
আবারও‘
ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা’
-র লেখক 486 পৃষ্ঠায় আবুল মুআইয়েদ মুয়াফিক্ব ইবনে আহমাদ খাওয়ারাযমী থেকে এবং তিনি আবু সুলাইমান থেকে বর্ণনা করেন যে ,“
আমি রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) বলতে শুনেছি ,“
যে রাতে আমাকে আকাশে উঠানো হলো আমি একটি ডাক শুনলাম-‘
হে মুহাম্মাদ , তুমি কি তোমার ওয়াসীদের দেখতে চাও ?’
আমি বললাম-‘
জী’
।
আমাকে বলা হলো-‘
আরশের ডান দিকে তাকাও’
। আমি তাকানোর সাথে সাথেই আলী , ফাতেমা , হাসান , হোসেইন , আলী ইবনে হোসেইন , মুহাম্মাদ ইবনে আলী , জাফর ইবনে মুহাম্মাদ , মূসা ইবনে জাফর , আলী ইবনে মূসা , মুহাম্মাদ ইবনে আলী , আলী ইবনে মুহাম্মাদ , হাসান ইবনে আলী এবং মুহাম্মাদ ইবনে হাসানকে দেখলাম , যে তাদের মাঝে জ্বলজ্বলে নক্ষত্রের মত দেখাচ্ছিলো।
পরে আমাকে বলা হলো-‘
হে মুহাম্মাদ , তারা আমার দাসদের উপর আমার প্রমাণ। তারা তোমার ওয়াসী এবং মাহদী তাদের মধ্যে তোমার বংশধরদের পক্ষে প্রতিশোধ গ্রহণকারী , আমি আমার গৌরব ও মর্যাদার শপথ করছি যে মাহদী আমার শত্রুদের উপর প্রতিশোধ গ্রহণকারী এবং আমার বন্ধুদের সাহায্যকারী’
।”
‘
ইকদুদ দুরার’
-এর লেখক চতুর্থ অধ্যায়ের প্রথম অংশে আবু নাঈমের‘
সিফাতুল মাহদী’
থেকে এবং তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুলাহ (সাঃ) বলেছেনঃ“
এ জাতির উপর অভিশাপ এর অত্যাচারী শাসকদের জন্য। কীভাবে তারা বিশ্বাসীদের হত্যা করে এবং তাদের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করে , তাদেরকে বাদ রেখে যারা তাদের মেনে চলে। যখন আল্লাহ ইসলামকে মর্যাদা দিতে চাইবেন তিনি অত্যাচারীদের ধ্বংস করবেন। সব কিছুর উপর আল্লাহর ক্ষমতা রয়েছে এবং তিনি একটি জাতিকে শুদ্ধ করতে সক্ষম যা নৈতিকতা হারিয়েছে।”
এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-
“
হে হুযাইফা , যদি পৃথিবীর জীবন একদিনও বাকী না থাকে আল্লাহ সে দিনটিকে এতটা দীর্ঘ করবেন যে আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তি আবির্ভূত হবে এবং শাসন করবে। সে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পরিচালনা করবে এবং ইসলামকে প্রকাশ করবে। আল্লাহ তার শপথ ভঙ্গ করেন না এবং তিনি হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত দ্রুত।”
উল্লিখিত বইয়ের নবম অধ্যায়ের তৃতীয় অংশে এর লেখক আলী ইবনে আবি তালিব থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি মাহদী সম্পর্কে , মাহদী ও তার সংস্কার সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন-“
কোন মিথ্যা কথা নেই যা মাহদী উপড়ে ফেলবেন না এবং কোন সূন্নাহ বাকী থাকবে না যা মাহদী জীবিত করবেন না।”
একই বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে তিনি একদল হাদীস বিশেষজ্ঞ যেমন আবু নাঈম ইসফাহানি , আবুল ক্বাসেম তাবরানি , আবু আব্দুর রহমান ইবনে আবু হাতিম , আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে এবং তারা আলী ইবনে আবি তালিব থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মাহদী এবং তার হাতে আল্লাহ ধর্মের যে সমাপ্তি টানবেন তার কথা বলার সময় বলেন-“
জনগণ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে মাহদীর কারণে , ঠিক যেভাবে তারা মুক্তি পেয়েছিলো শিরক থেকে। তার কারণে আল্লাহ তাদেরকে পরস্পরের সাথে অন্তরঙ্গ করবেন শত্রুতার পর ঠিক যেভাবে তাদেরকে তিনি পরস্পরের সাথে অন্তরঙ্গ করেছিলেন খোদাদ্রোহীতার শত্রুতার পর।
একই বইয়ের নবম অধ্যায়ে তৃতীয় অংশে তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আতা থেকে বর্ণনা করেন ,‘
আমি ইমাম বাকিরক্বে জিজ্ঞেস করলাম যখন মাহদী আবির্ভূত হবেন তখন তার পন্থা কী হবে ?’
তিনি উত্তর দিলেন-“
তিনি তার সামনে থাকা খোদাদ্রোহীতামূলক কথাকে ধ্বংস করবেন ঠিক যেভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) করেছিলেন। মাহদী নুতনভাবে ও তাজাভাবে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করবেন।”
একই বইয়ের একই অধ্যায়ের একই অংশে লেখক আলী ইবনে আবি তালিব থেকে বর্ণনা করেন-“
কোন খোদাদ্রোহীতামূলক কথা নেই যা মাহদী উচ্ছেদ করবেন না এবং কোন‘
সুন্নাহ নেই যা মাহদী প্রতিষ্ঠা করবেন না।”
উল্লিখিত বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে তিনি আবু বকর বায়হাকীর‘
বেসাথ ওয়া নুশুর’
, আহমাদ-এর‘
মুসতাদরাক’
এবং আবু নাঈম-এর‘
সিফাতুল মাহদী’
থেকে বর্ণনা করেন এবং তারা সবাই আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“
আমি তোমাদেরকে মাহদীর সুসংবাদ দিচ্ছি। সে আমার উম্মতের ভিতর আবির্ভুত হবে এমন এক সময়ে যখন তারা পরস্পর বিভেদ ও যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। তখন হযরত পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দিবেন ঠিক যেভাবে তা অত্যাচার ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। মাহদী মুহাম্মাদের উম্মতের হৃদয়গুলোকে পূর্ণ করে দিবেন সম্পদ দিয়ে এবং তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন। তার ন্যায়বিচার সবাইকে বকেু জড়িয়ে ধরবে।”
উল্লিখিত বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে তিনি আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন-“
মাহদী তার প্রধান ব্যক্তিদের বিভিন্ন শহরে পাঠাবেন জনগণের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। নেকড়ে এবং ভেড়া সব একসাথে ঘাস খাবে। শিশুরা সাপ ও বিচ্ছু নিয়ে খেলবে সামান্যতম ক্ষতি ছাড়াই। খারাপ বিদায় হয়ে যাবে এবং ভালো থাকবে। জনগণ 750 গ্রাম চাষ করবে পরিবর্তে ফসল তুলবে 525 কিলোগ্রাম ঠিক যেভাবে পবিত্র কোরআনে তা বলা হয়েছে। ব্যভিচার , মদপান ও সূদ-এর শিকড় উপড়ে ফেলা হবে। জনগণ ইবাদত , ঐশী আইন , বিশ্বাস এবং সমাজে মেলামেশার প্রতি আসক্তি অনুভব করবে। মানুষের হায়াত বৃদ্ধি পাবে। আমানত ফেরত দেয়া হবে। গাছগুলো ফল দিবে। রহমত ও বরকত বহুগুণ হবে এবং শয়তানদের ধ্বংস করা হবে। সৎগুণসম্পন্ন লোকেরা বেঁচে থাকবে এবং আহলে বাইতের প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন লোকদের অস্তিত্ব থাকবে না।”
একই বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে লেখক নাঈম ইবনে হেমাদ-এর‘
ফাতান’
থেকে এবং তিনি জাফর ইবনে বাশার শামি থেকে বর্ণনা করেন যে“
(মাহদীর যুগে) অবিচার এমনভাবে তিরস্কৃত হবে যে কোন ব্যক্তির কোন সম্পদ যদি অন্য কারো দাঁতের নীচেও লুকানো থাকে তাও সে খুলে তার মালিককে ফেরত দিবে।”