কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?0%

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ? লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক: সাইয়্যেদ সাদরুদ্দীন আল সাদর
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 62468
ডাউনলোড: 3530

পাঠকের মতামত:

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 86 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 62468 / ডাউনলোড: 3530
সাইজ সাইজ সাইজ
কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

মাহদী ( আঃ ) সম্পর্কে জ্ঞানী ব্যক্তিদের কথা

মহিউদ্দীন আরাবী তার ফুতুহাতুল মাক্কীয়া -র তৃতীয় খণ্ডে (366 অধ্যায়) বলেন :

অবশ্যই আল্লাহর এক প্রতিনিধি রয়েছে যিনি আসবেন যখন পৃথিবী পূর্ণ থাকবে নিষ্ঠুরতা ও নিপীড়নে এবং তখন তিনি তা পূর্ণ করে দেবেন ইনসাফ ও ন্যায়বিচারে। যদি পৃথিবীর জীবন একদিনের বেশী অবশিষ্ট না থাকে আল্লাহ দিনটিকে এত দীর্ঘ করে দিবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না এ প্রতিনিধি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর বংশ থেকে এবং ফাতেমা (আঃ)-এর সন্তান থেকে উপস্থিত হন।

ইকদুদ দুরার -এর লেখক ভূমিকায় সে সময়কার পরিস্থিতি ও বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলার মাত্রাতিরিক্ততার নিন্দা করার পর বলেছেন : কেউ কেউ মনে করেন এ ধরনের পরিস্থিতি সবসময় চলতে থাকবে। কিন্তু তারা কিছু হাদিসের বাইরের দিকটি শুধু অনুসরণ করেছেন। তখন আমি বলি এ হাদিসগুলো গ্রহণযোগ্য এবং আমরা তা গ্রহণ করতে ও অনুসরণ করতে বাধ্য। যাহোক এ হাদীসগুলোতে এমন কিছু নেই যা ইঙ্গিত করে এ ধরনের পরিস্থিতি কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে। এটি মনে হয় যে বিদ্রোহের শেষ ও আরামের আগমন এমন এক সময়ে আসবে যখন ইমাম মাহদী নিজেকে প্রকাশ করবেন। কারণ আলেমগণ ও বিজ্ঞ ব্যক্তিরা তাদের বইতে তার সুসংবাদ দিয়েছেন তার আত্মপ্রকাশের এবং এ সত্যের যে আল্লাহ একজন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিবেন তার রাজ্যের জন্য। তা হবে এমন ক্ষমতা দিয়ে যা পাহাড় নাড়াতে পারে এবং তার রাজ্য হবে সুবিস্তৃত। তিনি পুরো দুনিয়া শাসন করবেন এবং একে ইনসাফ ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবেন। তখন লুকানো ভাণ্ডার উম্মোচিত হবে এবং তিনি তা জনগণকে উপহার দেবেন।

ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 410 পৃষ্ঠায় লিখেছেন : শেইখ কামালুদ্দীন ইবনে তালহা তার বই দুররুল মুনাযযাম এ লিখেছেন : গবেষণায় পাওয়া যায় যে আল্লাহর একজন প্রতিনিধি রয়েছেন যিনি সময়ের শেষ দিকে আসবেন যখন পৃথিবী নিষ্ঠুরতায় ও নিপীড়নে পূর্ণ থাকবে। যদি পৃথিবীর জীবন একদিনের বেশী অবশিষ্ট না থাকে তিনি তার প্রতিনিধিকে আনবেন ফাতেমা যাহরার সন্তান থেকে। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তিরা তাকে চিনতে পারবে। তার লম্বা নাক , কালো চোখের পাতা এবং ডান গালে একটি দাগ থাকবে। তার নাম হবে মুহাম্মাদ , তার উচ্চতা হবে মাঝারির চাইতে উচুঁ । তার চেহারা সুন্দর ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং চুল দেখতে খুবই সুন্দর।

তার মাধ্যমে আল্লাহ শীঘ্র ধ্বংস করবেন বেদআত (ধমীর্য় আবিষ্কার) , সমুন্নত করবেন প্রত্যেক জীবিত জিনিসকে এবং তার সৈন্যদেরকে তৃপ্ত করবেন আদনের ভুমি থেকে। তার সামনে সবচেয়ে সমৃদ্ধ হবে কুফার লোকরা। তিনি নেয়ামতগুলো সমানভাবে ভাগ করে দিবেন এবং লোকদের সাথে সদাচরণ করবেন এবং তার সময়কালে তর্কবিতর্ক উধাও হয়ে যাবে। মেঘ বৃষ্টি দেবে শুধু জমিকে সমদ্ধৃ করার জন্য। এ ইমাম হলেন সেই মাহদী , যিনি আল্লাহর আদেশকে উঁচু করে রাখবেন ঐ পর্যন্ত যে , সমস্ত মিথ্যা ধর্মগুলো উধাও হয়ে যাবে। তখন আর কোন ধর্ম থাকবে না শুধু প্রকৃত ধর্ম ছাড়া।

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 432 নং পৃষ্ঠায় শারীফ মামা সামহুদির জাওহার উল নাগদীন বই থেকে বর্ণনা করেছেন : গবেষণায় লক্ষ্য করা যায় যে , আলী ও ফাতিমার (আঃ) বিয়েতে নবী (সাঃ) এর দোয়ার বরকত হাসান ও হোসাইনের সন্তানদের ভিতর দেখা যায়। তাদের প্রজন্ম থেকে যারা এসেছিলো , তারা যারা চলে গেছে এবং তারা যারা আসবে (ভবিষ্যতে) , এবং যদি ইমাম মাহদী ছাড়া কেউ নাও আসে তা হবে যথেষ্ট (অঙ্গীকার পুরণে এবং বিশৃঙ্খলা বদলে শৃঙ্খলা আনায়)।

ইবনে আসির জাযারি তার বই নেহায় -তে জালা শব্দটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেন : মাহদীর বৈশিষ্ট্য বলতে গিয়ে বলা হয়েছে তা আজলাল আজবাহ এবং তা হচ্ছে চোখ ও কানের মাঝামাঝি নরম চুল এবং তিনি হচেছন সে যিনি তার চুল আচড়াবেন চেহারা থেকে ।

এছাড়া হুদা শব্দটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছেনঃ মাহদী হচ্ছেন এমন যাকে আল্লাহ সত্যের দিকে পথ দেখিয়েছেন । তার এ গুণ এমনভাবে নামের জায়গায় বর্ণিত হয়েছে যে তা নামের মতই হয়ে গেছে এবং ব্যাপক ব্যাবহারে তার নাম মাহদী হয়ে গেছে যার বিষয়ে নবী (সা .) সুসংবাদ দিয়েছেন যে তিনি সময়ের শেষ দিকে আসবেন ।

ফুতুহাতে ইসলামিয়াহ -র দ্বিতীয় খণ্ডে 322 পৃষ্ঠায় লেখক মাহদী সম্পর্কে হাদীসের ব্যাপকতা নিশ্চয়তার পর্যায়ে উল্লেখ করে বলেন যেঃ

এ বিষয়ে নিশ্চিত যে তার আত্মপ্রকাশ অবশ্যম্ভাবী । অবশ্যই তিনি ফাতেমার বংশ থেকে এবং তিনি পৃথিবী ন্যায়বিচারে পূর্ণ করবেন ।

এরপর তিনি বলেনঃ সাইয়্যেদ মুহাম্মদ ইবনে রাসূল বারাযানজী এ বিষয়ে উল্লেখ করেছেন তার আল আশা -হাত বইতে ।

ইবনে আবিল হাদীদ তার নাহজুল বালাগার তাফসীরে দ্বিতীয় খণ্ডে 535 পৃষ্ঠায় , হযরতের (আলী -আঃ ) কিছু খোতবা উল্লেখ করার সময় (যা আমরা আগে উল্লেখ করেছি ) বলেনঃ গবেষণায় দেখা যায় সব মুসলিম মাযহাব একমত যে পৃথিবী ও দায়িত্ব শেষ হবেনা একমাত্র মাহদীর আগমনের পরে ছাড়া এবং আসবেন শেষ সময়ে

মাহদী সম্পর্কে কবিতা ও গীতি কবিতা

ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 438 পৃষ্ঠায় আমিরুল মুমিনীন আলী (আঃ ) এর একটি কবিতা উল্লেখ করেছেন যেখানে হযরত বলেন (ইমাম হোসেইকে )ঃ হে হোসাইন , যখন তুমি নিজেকে পাবে কোন জায়গায় বহিরাগত , এর অভ্যাস ও প্রচলনের সাথে সম্পৃক্ত হও ! আমি যেন দেখছি আমার আত্মা এবং আমার সন্তানদের কারবালায় এবং এর যুদ্ধের দৃশ্য । আমাদের দাড়ি রক্তে রঞ্জিত হবে যেভাবে একজন বধুয়ার জামা রাঙানো হয় । আমি সেই বিপর্যয় দেখছি কিন্তু আমার চর্মচোখে নয় । এর মূল্যের চাবটি আমার কাছে দেয়া হয়েছে । আল্লাহ আমাকে কল্যাণ দান করুন যা আমাকে দেয়া হয়েছে , আল্লাহ আমাদের ক্বায়েমকে কল্যাণ দান করুন যে ন্যায়বিচারকে উপরে তুলে ধরবে ।

হে হোসাইন ! ক্বায়েম আমার রক্তের প্রতিশোধ নেবে । বরং সে তোমার রক্তের প্রতিশোধও নেবে । তাই ধৈর্য ধরো তোমার দুঃখ কষ্টে ।

একই বইয়ের 439 পৃষ্ঠায় তিনি আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ ) থেকে নীচের কবিতাটি বর্ণনা করেনঃ

আল্লাহ তার রহমত ও অনুগ্রহ বর্ষণ করুন সেই সাহসী ইমামের উপর যে মুশরিকদের সৈন্যদের ডিভিশনগুলোকে তার বিজয়ী তরবারীর লক্ষ্য বানাবেন । তিনি ধর্মকে পৃথিবীর সব অংশে প্রকাশ করবেন এবং নিপীড়নকারী মুশরিকদের অপমানিত করবেন । আমি অহংকার ও দাম্ভিকতা থেকে একথাগুলো বলছিনা বরং তা আমাকে দিয়েছেন আলে হাশিমের নির্বাচিত ব্যক্তি (নবী -সাঃ ) ।

এ একই বইতে আবারও 454 পৃষ্ঠায় তিনি দেবেল খুযাইর গীতি কবিতা থেকে উদ্ধৃত করেছেন যা খুযাই ইমাম রেযা (আঃ ) এর সামনে আবৃতি করেছিলেন । তিনি দেবেলকে উদ্ধৃত করে বলেনঃ

আমি আমার গীতি কবিতা আবৃত্তি করলাম এ অংশ পর্যন্ত ইমামের আবির্ভাব হবে যিযন আল্লাহর নামে উঠে দাড়াবেন এবং তার রহমত অনিবার্য । তিনি আমাদের জন্য সত্য ও মিথ্যা চিহ্নিত করবেন এবং পরহেযগারতের পুরুস্কৃত করবেন এবং খারাপদের শাস্তি দিবেন ।

ইমাম রেযা (আঃ ) চোখের পানি ফেললেন এবং বললেনঃ হে দেবেল , রুহুল কুদ্দুস তোমার জিহবার মাধ্যমে কথা বলেছে --- ।

আল ফুতুহাতুল মাক্কিয়ার তৃতীয় খণ্ডে 366 নং অধ্যায়ে আমরা নীচের কবিতাটি দেখতে পাইঃ

জেনে রাখো , ওলীদের মধ্যে শেষজনকে শহীদ করা হবে এবং মহাবিশ্বের আলো নিভে যাবে , তিনি মাহদী , মুহাম্মদের পরিবার । সে হিন্দী তরবারীর মত , এক ধ্বংসকারী । তিনি সূর্য়ের রশ্মি যা প্রত্যেক মেঘকে এবং অন্ধকারকে উজ্জ্বল করে । তিনি বৃষ্টির প্রথম ফোটা যা উদারভাবে দান করবে ।

ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দার লেখক 461 নং পৃষ্ঠায় মহিউদ্দীন আরাবীর দুরুরুল মাকনূন বই থেকে একটি কবিতা বর্ণনা করেন । যা এরকমঃ

যখন সময় এগিয়ে যাবে বিসমিল্লাহর অক্ষরগুলোর মাধ্যমে । মাহদী আবির্ভূত হবেন । রোযা রাখার পর তিনি কাবা থেকে বের হবেন । আমার পক্ষ থেকে তার প্রতি শুভেচ্ছা পাঠাও ।

ইকদুদ দুরার -এর লেখক 4র্থ পরিচ্ছেদে লিখেছেনঃ আল্লামা আদাব আব্দুল্লাহ ইবনে বাশার দার মূল্যবান গীতি কবিতার কয়েক লাইন -এর মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন আলে মুহাম্মদ ও নাফসে যাকিয়ার কথাঃ

নাফসে যাকিয়ার হত্যাকাণ্ডে , যে তা স্মরণ রেখেছে তার জন্য রয়েছে সত্য নিদর্শন । অন্য আরেক নাফস যে কাজে নব্যস্ত আছে যাকে কাবার কাছে হত্যা করা হবে -আবির্ভূত কৎহবে এবং (জনগণকে ) আহবান করবে ইমামের দিকে এবং সে জানাবে যে সূর্য উঠার পর দিনের কিছু অংশ যখন পার হয়ে যাবে , কুফাতে একটি আগুন জ্বালানো হবে রক্তের একটি স্রোতের সাথে । পরিণতিতে কুফা জ্বলতে থাকবে । সিরিয়ার লোকেরা বাইদাহর দিকে তাদের বিরূদ্ধে এক সৈন্যদল পাঠাবে এবং তাদেরকে মাটি গিলে ফেলবে । সাহসী ঘোড়সাওয়াররা (বাতাসের মত যা ধূলা ও ধোয় ছড়ায় ) অগ্রসর হবে সামনে । শুয়াইব ইবনে সালেহ যে থাকবে সৈন্যবাহিনীর সর্বাগ্রে তাদেরকে নিয়ে যাবে এক সাইয়্যেদের কাছে যিনি আলে হাশিম থেকে আবির্ভূত হবেন ; ঐ সাইয়্যেদের মুখের ডান দিকে চোখের ও কানের মাঝামাঝি একটি দাগ রয়েছে ।

এছাড়া একই বইয়ের ভূমিকায় লেখক মাহদীর প্রশংসায় একটি কবিতা এনেছেন কিন্তু বলেন নি কবিতাটি তার নিজের না অন্য কারো । কবিতাটি এমনঃ

মাহদীর বরকতে ধর্মের কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হবে । মাহদীর বরকতে ধর্মের অধঃপতন শেষ হবে ;

তার সাহায্যে মরুভুমিগুলো (নিষ্ঠুরতা ও অত্যাচার থেকে ) মুক্ত হবে ;

মাহদীর বরকতে নিষ্ঠুরতা ও নিপীড়নের অন্ধকার দূর হবে ;

আল্লাহর শুভেচ্ছা ও সালাম মাহদীর উপর প্রতিদিন ।

ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 466 পৃষ্ঠায়ঃ এ কবিতাটি শেইখ আব্দুল কারীম ইয়ামানী থেকেঃ

এর জনতা সমৃদ্ধি ও শক্তির মাঝে বসবাস করছে এবং তোমরা দেখবে হেদায়েতের আলোকে যে হায়দার -এর বংশ ও আহলুল বায়েত থেকে আরবি অক্ষর মিম এর মাধ্যমে আসবে । তাক মোহদী বলে ডাকা হবে এবং সে সত্যের জন্য আবির্ভূত হবে । সর্বপ্রথম সে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হযরত মুহাম্মদ (সা .) এর সুন্নাহর উপর ভিত্তি করে আদেশ দিবেন ।

একই বইয়ের 461 পৃষ্ঠায় তিনি দুররাত উল মাআরেফ বইয়ের লেখক শেইখ আব্দুর রহমান বাসতামীর এ কবিতাটি বর্ণনা করেছেনঃ

সম্মানিত এবং আহমদ এর বংশ থেকে বিখ্যাতজন আবির্ভূত হবে । সবার আগে তিনি আসমানী ন্যায়বিচার প্রকাশ করবেন জনগণের মাঝে যেভাবে বর্ণনা করেছে হযরত আবুল হাসান রিযা (আঃ ) এবং যা জ্ঞানের ভাণ্ডারে সংরক্ষিত আছে ।

নীচের কবিতাটিও বাসতামী উল্লেখিত পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেনঃ

মীম অক্ষরটি -شین ( শিন ) এর পরে বিজয়ীর বেশে আবির্ভূত হবে মক্কা শহরে কাবা ঘর থেকে । তিনিই সেই মাহদী যিনি সত্যসহ আবির্ভূত হবেন এবং শীঘ্রই তাকে আল্লাহ পাঠাবেন সত্যের জন্য । তিনি সম্পূর্ণ পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবেন । সর্ব প্রথম তিনি নিষ্ঠুরতা ও নিপীড়নের অন্ধকারকে মুছে দিবেন ও ধ্বংস করে দিবেন । আসমানী বিষয়ে তার হেদায়েতের দায়িত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে । আল্লাহ তাকে নির্বাচন করেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর প্রতিনিধি ও উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য ।

উল্লেখিত বইয়ের 468 নং পৃষ্ঠায় তিনি শেইখ সদরুদ্দীন কুনাউইর একটি কবিতা উল্লেখ করেছেনঃ

মাহদী আবির্ভূত হবেন এবং পৃথিবীতে উঠে দাড়াবেন আসমানী বিষয়ের জন্য । পাশাপাশি , তিনি সব অবিশ্বাসী শয়তানদের ধ্বংস করবেন । সব খারাপ মানুষের ধ্বংস হবে তার হাতে ; শক্তিধর তরবারীর সাহায্যে ; যদি তুমি জানতে পার প্রকৃত মর্যাদা কি তাহলে এটি তোমাকে শয্যাশায়ী করে ছাড়বে । এ তরবারী ও ক্বায়েম এর বাস্তবতা , যাকে সত্যপথে ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে তা আসমানী বিষয় ।

ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা -র 474 পৃষ্ঠায় কুনদুযী একটি গীতি কবিতা বর্ণনা করেছেনঃ

প্রায়ই তারা আমাকে আহলুল বায়েতের ভালোবাসা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে -আমি কি তা এখন লুকাবো , না অস্বীকার করবো ? আমি আল্লাহর কসম করে বলছি আহলুল বাইতের ভালোবাসা আমার রক্ত ও মাংশের সাথে মিশে গেছে । তারা হেদায়েতের মশাল । নবী (সাঃ ) এর পর হায়দার ও হাসনায়েন এলেন । তাদের পরে এলেন আলী , মুহাম্মদ , জাফর সাদিক এবং মূসা । মূসার পর এলেন আলী আর রেযা , যিনি মানুষের আশ্রয় । তারপর তার ছেলে মুহাম্মদ এবং তারপর তার পরহেজগার ছেলে আলী এবং এরপর হাসান এবং মুহাম্মদ । তারা আমার ইমাম এবং মনিব যদিও একটি দল আমাকে গালাগালি করেছে এবং আমার তীব্র নিন্দা করেছে (এ বিশ্বাস রাখার জন্য ) ।

তারা হলেন ইমাম যাদের নাম আমরা প্রায়ই শুনি । তার আল্লাহর হুজ্জাত (প্রমাণ ) তার দাসদের উপর । তার আল্লাহর দিকে হেদায়েতের পথ । তারা হলেন ইমাম যারা আল্লাহর জন্য দিনের বেলা রোযা রেখেছে এবং রাতগুলি কাটিয়েছে আল্লাহর সামনে রুকু ও সিজদা করে । তার একদল যাদের অধীন হল মক্কা , আবতাহ , কিফ , জামা এবং (জান্নাতুল ) বাকী র কবরস্থান । তারা একদল যাদের অধীনে আছে মীনা । দু টি পবিত্র সৌধ , দু টি মারওয়া এবং মসজিদ । তার একদল যাদের প্রত্যেক জায়গাতে একটি মাযার আছে , বরং তাদের একটি মাযার আছে প্রত্যেক হৃদয়ে ।

মুহাম্মদ ইবনে তালহা শাফেয়ী মাতালিবুস সূলে এরকম বলেছেনঃ

বারোতম অধ্যায়ে আবুল কাসিম মুহাম্মদ ইবনে হাসান ইবনে আলী ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে মূসা ইবনে জাফর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে হোসাইন ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব -তিনিই মাহদী , হুজ্জাত , খালাফে সালেহ এবং মুনতাযার ।

তিনিই হচ্ছেন উত্তরাধিকারী এবং হুজ্জাত (প্রমাণ ) যাকে আল্লাহ সমর্থন দিয়েছেন । এছাড়া আল্লাহ তাকে পথ দেখিয়েছেন সত্য পথে এবং তাকে তার মেজাজ দিয়েচেন এবং তার মর্যাদাকে উচুতে উঠিয়েছেন । আল্লাহ তার অনুগ্রহের অলংকারকে তার উপরে দান করেছেন এবং তিনিও নৈতিক গুণাবলীর পোষাক পরিধান করেছেন । নবী (সাঃ ) কিছু বলেছেন যা আমাদের জন্য বর্ণনা করা হয়েছে এবং যে নবীর (সাঃ ) কথা সম্পর্কে জ্ঞাত হবে সে এর অর্থ বুঝতে পারবে । একজন জ্ঞানী ব্যক্তি জানে মাহদী (আঃ )- এর নিদর্শনের খবর এসে গেছে , এবং নবী (সাঃ )- এর কথাই উল্লেখ করা যথেষ্ট যিনি বলেছেনঃ মাহদীর চেহারার আলো হচ্ছে আামার আলো থেকে । যাকে যত্ন করা হয়েছে যাহরার কাছে (যা তার দেহেরই অংশ ), কেউ এ ধরণের মর্যাদা পাবে না যা আমি মাহদীকে দান করেছি । এরপর যে বলবে সে মাহদী সে সত্য কথা বলেছে ।

আমরা যা লিখেছি তা ছাড়াও ফরসী ও আরবীতে আরো অনেক কবিতা রয়েছে যে কেউ সেগুলোর ভেতরে অনুসন্ধান করবে সে আলোকিত হবে । ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক আরো এ ধরণের অনেক কবিতা উল্লেখ করেছেন । যেমন শেইখ আহমাদ জামী , শেইখ আতহার নিশাপুরী , শেইখ জালালুদ্দীন রুমী প্রমুখ ব্যক্তিদের কবিতা । যা হোক আমারা যা বর্ণনা করেছি তা যথেষ্ট ।

দ্বিতীয় অধ্যায়

মাহদী(আঃ ) আরব বংশ থেকে

ইকদুদ দুরার এর লেখক প্রথম অধ্যায়ের চতুর্থ ভাগে আবু আব্দুল্লাহ নাইম ইবনে হেমাদ (তার বই আল ফিতান ) থেকে যিনি আলী (আঃ ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেন - বনি আব্বাসের সাম্রাজ্য হলো এমন যদি তুর্কীরা , ডাইলামাইটরা এবং ইনদুস উপত্যকার অধিবাসীরা ও ভারত তাদেরকে আক্রমণ করে তারা তাদেরকে দ্বংস করতে ব্যর্থ হবে এবং বনি আব্বাসরা সাফল্য লাভ করতেই থাকবে ঐ পর্যন্ত যখন তারা দাস ও দূর্বলদের উপর আক্রমণাত্মক না হয়ে উঠবে । এরপর আল্লাহ একজন গুসেল বানাবেন (এক খারাপ লোক যে বনি আব্বাসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে ও তাদেরকে ধ্বংস করবে ) তাদের উপর আধিপত্য করার জন্য যা এক জায়গা থেকে বেরিয়ে আসবে যেখানে তাদের রাজত্ব প্রকাশিত হয়ে পড়বে । সে এমন কোন শহর অতিক্রম করবে না যা সে দখল করবে না , তার সামনে যে পতাকাই উচু হবে সে তা ধ্বংস করবে । সে যে সম্পদই লাভ করবে তার অপব্যবহার করবে । দুর্ভোগ তার উপর যে তার পক্ষ নেবে । এরকম চলতেই থাকবে যতক্ষণ না একজন আরবের হাতে বিজয় আসে যে সত্যের জন্য উঠে দাড়াবে এবং এর উপর কাজ করবে ।

এটি পরিষ্কার যে একজন আরব বলতে উপরোক্ত বাক্যে মাহদীকে বোঝানো হয়েছে , যিনি প্রতীক্ষিত এবং যিনি সময়ের শেষ দিকে আসবেন এবং তার নিদর্শনগুলো হচ্ছে সেগুলো যা এ বইয়ের এ অধ্যায়ে এসেছে যা আল ফিতান বই থেকে নেয়া হয়েছে । এখানে এর লেখক ইসাস আবু আব্দুল্লাহ নাইম ইবনে হেমাদ আবি ক্বাবিল থেকে বর্ণনা করেনঃ জনগণ আরামে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না বনি আব্বাসের রাজত্ব শেষ হয় । এরপর তারা সমস্যায় থাকবে মাহদী না আসা পর্যন্ত ।

লেখক বলেন ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় হালাকুর বিদ্রোহের সময় থেকে প্রাচ্য স্বাধীনতা ভোগ করে নি । অস্থির অবস্থা ও বিভেদ , শাসক ও বাদশাহদের মাঝে চলতেই থাকে । এরকমই ছিলো আলীর কথা সে বিজয় অর্জন করা পর্যন্ত এবং কোন আরবের কাছে হস্তান্তর না করা পর্যন্ত বলতে সম্ভবত তিনি এটিই ইঙ্গিত করেছেন যে বিভেদ ও অস্থির অবস্থা হালাকুর আগমনের সাথে ও তার বিদ্রোহের সাথে সম্পৃক্ত এবং তা তেমনই থাকবে মাহদীর আবির্ভাব পর্যন্ত । মাহদীর বিজয় ও জনগণকে (তার মিশনের দিকে ) আহবান ও শহরগুলোর উপরে তার আধিপত্যের একটি কারণ হচ্ছে হালাকুর পরে অস্থির অবস্থা । মনে হয় হালাকু নিজেই সরকারের দায়িত্ব হযরত (মাহদী )-এর কাছে তুলে দেবেন । আরেকটি কারণ হচ্ছে হাদীসসমূহ যা তার পরিবার ও আত্মীয়দের চিহ্নিত করে এবং প্রমাণ করে যে মাহদী আরব বংশীয় ।

রাগেব তার মুফরাদাত -এ বলেনঃ (عرب ) আরবরা হচ্ছে ইসমাইলের বংশধর এবং (اعراب ) হচ্ছে এর বহুবচন । পরবর্তীতে বেদুইনদের এ নামে ডাকা হতো ।

সাবায়েকুযযাহাক এর লেখক 4র্থ পৃষ্ঠায় বলেছেনঃ শহরবাসীদেরকে বলা হয় (عرب ) আরব , এবং মরুবাসীদেরকে (اعراب ) আ রাব বলা হয় এবং যা সাধারণভাবে ঘটে তা হলোاعراب শব্দটি উভয় দলের জন্য ব্যবহৃত হয় ।

জাওহারী সিহাহ তে বলেনঃ (عرب ) আরব একটি গোত্র এবং তারা শহরবাসী । তাদেরকে আরাবী বলা হয় । কিন্তু সাধারণভাবে সব স্তরে (عرب )আরব শব্দটি ব্যবহার হয় । একই কথা অভিধানগুলোতে লেখা আছে ।

এবার এর লেখক বলেনঃ আরবعرب শব্দটিاعراب শব্দ থেকে নির্মিত হয়েছে আর এর অর্থ নেয়া হয়েছে এ কথা থেকেاعراب الرجل حاجتة তাই জেনে রাখুন আরব নয় - হোক সে ইরানি , তুর্কী , রোমান অথবা ইউরোপীয় সবাই (عجم ) আজাম । লোকোর সাধারণত বিশ্বাস করে যেعجم শব্দটি ফার্সীভাষীদের বোঝায় আসলে তা নয় । বরং পশ্চিমারা ফরাসীদের সম্পর্কে এ শব্দটি ব্যবহার করেছে এবং তাদেরও যারা এ দলে পড়ে । যাহোকاعجم শব্দটিতে একটি আলিফ যোগ হয় কোন ব্যক্তির জন্য যখন সে আরব হওয়া সত্ত্বেও পরিষ্কার করে কথা বলতে পারে না ।