মাহদী সম্পর্কে কবিতা ও গীতি কবিতা
“
ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা”
-র লেখক 438 পৃষ্ঠায় আমিরুল মুমিনীন আলী (আঃ ) এর একটি কবিতা উল্লেখ করেছেন যেখানে হযরত বলেন (ইমাম হোসেইকে )ঃ“
হে হোসাইন , যখন তুমি নিজেকে পাবে কোন জায়গায় বহিরাগত , এর অভ্যাস ও প্রচলনের সাথে সম্পৃক্ত হও ! আমি যেন দেখছি আমার আত্মা এবং আমার সন্তানদের কারবালায় এবং এর যুদ্ধের দৃশ্য । আমাদের দাড়ি রক্তে রঞ্জিত হবে যেভাবে একজন বধুয়ার জামা রাঙানো হয় । আমি সেই বিপর্যয় দেখছি কিন্তু আমার চর্মচোখে নয় । এর মূল্যের চাবটি আমার কাছে দেয়া হয়েছে । আল্লাহ আমাকে কল্যাণ দান করুন যা আমাকে দেয়া হয়েছে , আল্লাহ আমাদের ক্বায়েমকে কল্যাণ দান করুন যে ন্যায়বিচারকে উপরে তুলে ধরবে ।”
“
হে হোসাইন ! ক্বায়েম আমার রক্তের প্রতিশোধ নেবে । বরং সে তোমার রক্তের প্রতিশোধও নেবে । তাই ধৈর্য ধরো তোমার দুঃখ কষ্টে ।”
একই বইয়ের 439 পৃষ্ঠায় তিনি আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ ) থেকে নীচের কবিতাটি বর্ণনা করেনঃ
“
আল্লাহ তার রহমত ও অনুগ্রহ বর্ষণ করুন সেই সাহসী ইমামের উপর যে মুশরিকদের সৈন্যদের ডিভিশনগুলোকে তার বিজয়ী তরবারীর লক্ষ্য বানাবেন । তিনি ধর্মকে পৃথিবীর সব অংশে প্রকাশ করবেন এবং নিপীড়নকারী মুশরিকদের অপমানিত করবেন । আমি অহংকার ও দাম্ভিকতা থেকে একথাগুলো বলছিনা বরং তা আমাকে দিয়েছেন আলে হাশিমের নির্বাচিত ব্যক্তি (নবী -সাঃ ) ।”
এ একই বইতে আবারও 454 পৃষ্ঠায় তিনি দেবেল খুযাইর গীতি কবিতা থেকে উদ্ধৃত করেছেন যা খুযাই ইমাম রেযা (আঃ ) এর সামনে আবৃতি করেছিলেন । তিনি দেবেলকে উদ্ধৃত করে বলেনঃ
“
আমি আমার গীতি কবিতা আবৃত্তি করলাম এ অংশ পর্যন্ত‘
ইমামের আবির্ভাব হবে যিযন আল্লাহর নামে উঠে দাড়াবেন এবং তার রহমত অনিবার্য । তিনি আমাদের জন্য সত্য ও মিথ্যা চিহ্নিত করবেন এবং পরহেযগারতের পুরুস্কৃত করবেন এবং খারাপদের শাস্তি দিবেন ।”
ইমাম রেযা (আঃ ) চোখের পানি ফেললেন এবং বললেনঃ‘
হে দেবেল , রুহুল কুদ্দুস তোমার জিহবার মাধ্যমে কথা বলেছে --- ।”
আল ফুতুহাতুল মাক্কিয়ার তৃতীয় খণ্ডে 366 নং অধ্যায়ে আমরা নীচের কবিতাটি দেখতে পাইঃ
‘
জেনে রাখো , ওলীদের মধ্যে শেষজনকে শহীদ করা হবে এবং মহাবিশ্বের আলো নিভে যাবে , তিনি মাহদী , মুহাম্মদের পরিবার । সে হিন্দী তরবারীর মত , এক ধ্বংসকারী । তিনি সূর্য়ের রশ্মি যা প্রত্যেক মেঘকে এবং অন্ধকারকে উজ্জ্বল করে । তিনি বৃষ্টির প্রথম ফোটা যা উদারভাবে দান করবে ।’
‘
ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দার’
লেখক 461 নং পৃষ্ঠায় মহিউদ্দীন আরাবীর‘
দুরুরুল মাকনূন’
বই থেকে একটি কবিতা বর্ণনা করেন । যা এরকমঃ
“
যখন সময় এগিয়ে যাবে বিসমিল্লাহর অক্ষরগুলোর মাধ্যমে । মাহদী আবির্ভূত হবেন । রোযা রাখার পর তিনি কাবা থেকে বের হবেন । আমার পক্ষ থেকে তার প্রতি শুভেচ্ছা পাঠাও ।”
‘
ইকদুদ দুরার’
-এর লেখক 4র্থ পরিচ্ছেদে লিখেছেনঃ“
আল্লামা আদাব আব্দুল্লাহ ইবনে বাশার দার মূল্যবান গীতি কবিতার কয়েক লাইন -এর মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন আলে মুহাম্মদ ও নাফসে যাকিয়ার কথাঃ
‘
নাফসে যাকিয়ার হত্যাকাণ্ডে , যে তা স্মরণ রেখেছে তার জন্য রয়েছে সত্য নিদর্শন । অন্য আরেক নাফস যে কাজে নব্যস্ত আছে যাকে কাবার কাছে হত্যা করা হবে -আবির্ভূত কৎহবে এবং (জনগণকে ) আহবান করবে ইমামের দিকে এবং সে জানাবে যে সূর্য উঠার পর দিনের কিছু অংশ যখন পার হয়ে যাবে , কুফাতে একটি আগুন জ্বালানো হবে রক্তের একটি স্রোতের সাথে । পরিণতিতে কুফা জ্বলতে থাকবে । সিরিয়ার লোকেরা বাইদাহর দিকে তাদের বিরূদ্ধে এক সৈন্যদল পাঠাবে এবং তাদেরকে মাটি গিলে ফেলবে । সাহসী ঘোড়সাওয়াররা (বাতাসের মত যা ধূলা ও ধোয় ছড়ায় ) অগ্রসর হবে সামনে । শুয়াইব ইবনে সালেহ যে থাকবে সৈন্যবাহিনীর সর্বাগ্রে তাদেরকে নিয়ে যাবে এক সাইয়্যেদের কাছে যিনি আলে হাশিম থেকে আবির্ভূত হবেন ; ঐ সাইয়্যেদের মুখের ডান দিকে চোখের ও কানের মাঝামাঝি একটি দাগ রয়েছে ।”
এছাড়া একই বইয়ের ভূমিকায় লেখক মাহদীর প্রশংসায় একটি কবিতা এনেছেন কিন্তু বলেন নি কবিতাটি তার নিজের না অন্য কারো । কবিতাটি এমনঃ
মাহদীর বরকতে ধর্মের কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হবে । মাহদীর বরকতে ধর্মের অধঃপতন শেষ হবে ;
তার সাহায্যে মরুভুমিগুলো (নিষ্ঠুরতা ও অত্যাচার থেকে ) মুক্ত হবে ;
মাহদীর বরকতে নিষ্ঠুরতা ও নিপীড়নের অন্ধকার দূর হবে ;
আল্লাহর শুভেচ্ছা ও সালাম মাহদীর উপর প্রতিদিন ।”
“
ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা”
-র লেখক 466 পৃষ্ঠায়ঃ এ কবিতাটি শেইখ আব্দুল কারীম ইয়ামানী থেকেঃ
“
এর জনতা সমৃদ্ধি ও শক্তির মাঝে বসবাস করছে এবং তোমরা দেখবে হেদায়েতের আলোকে যে‘
হায়দার’
-এর বংশ ও আহলুল বায়েত থেকে আরবি অক্ষর‘
মিম’
এর মাধ্যমে আসবে । তাক মোহদী বলে ডাকা হবে এবং সে সত্যের জন্য আবির্ভূত হবে । সর্বপ্রথম সে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হযরত মুহাম্মদ (সা .) এর সুন্নাহর উপর ভিত্তি করে আদেশ দিবেন ।”
একই বইয়ের 461 পৃষ্ঠায় তিনি‘
দুররাত উল মাআরেফ’
বইয়ের লেখক শেইখ আব্দুর রহমান বাসতামীর এ কবিতাটি বর্ণনা করেছেনঃ
“
সম্মানিত এবং আহমদ এর বংশ থেকে বিখ্যাতজন আবির্ভূত হবে । সবার আগে তিনি আসমানী ন্যায়বিচার প্রকাশ করবেন জনগণের মাঝে যেভাবে বর্ণনা করেছে হযরত আবুল হাসান রিযা (আঃ ) এবং যা জ্ঞানের ভাণ্ডারে সংরক্ষিত আছে ।”
নীচের কবিতাটিও বাসতামী উল্লেখিত পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেনঃ
“
মীম অক্ষরটি -شین
( শিন ) এর পরে বিজয়ীর বেশে আবির্ভূত হবে মক্কা শহরে কাবা ঘর থেকে । তিনিই সেই মাহদী যিনি সত্যসহ আবির্ভূত হবেন এবং শীঘ্রই তাকে আল্লাহ পাঠাবেন সত্যের জন্য । তিনি সম্পূর্ণ পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবেন । সর্ব প্রথম তিনি নিষ্ঠুরতা ও নিপীড়নের অন্ধকারকে মুছে দিবেন ও ধ্বংস করে দিবেন । আসমানী বিষয়ে তার হেদায়েতের দায়িত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে । আল্লাহ তাকে নির্বাচন করেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর প্রতিনিধি ও উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য ।”
উল্লেখিত বইয়ের 468 নং পৃষ্ঠায় তিনি শেইখ সদরুদ্দীন কুনাউইর একটি কবিতা উল্লেখ করেছেনঃ
“
মাহদী আবির্ভূত হবেন এবং পৃথিবীতে উঠে দাড়াবেন আসমানী বিষয়ের জন্য । পাশাপাশি , তিনি সব অবিশ্বাসী শয়তানদের ধ্বংস করবেন । সব খারাপ মানুষের ধ্বংস হবে তার হাতে ; শক্তিধর তরবারীর সাহায্যে ; যদি তুমি জানতে পার প্রকৃত মর্যাদা কি তাহলে এটি তোমাকে শয্যাশায়ী করে ছাড়বে । এ তরবারী ও‘
ক্বায়েম’
এর বাস্তবতা , যাকে সত্যপথে ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে তা আসমানী বিষয় ।”
“
ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা”
-র 474 পৃষ্ঠায় কুনদুযী একটি গীতি কবিতা বর্ণনা করেছেনঃ
“
প্রায়ই তারা আমাকে আহলুল বায়েতের ভালোবাসা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে -আমি কি তা এখন লুকাবো , না অস্বীকার করবো ? আমি আল্লাহর কসম করে বলছি আহলুল বাইতের ভালোবাসা আমার রক্ত ও মাংশের সাথে মিশে গেছে । তারা হেদায়েতের মশাল । নবী (সাঃ ) এর পর হায়দার ও হাসনায়েন এলেন । তাদের পরে এলেন আলী , মুহাম্মদ , জাফর সাদিক এবং মূসা । মূসার পর এলেন আলী আর রেযা , যিনি মানুষের আশ্রয় । তারপর তার ছেলে মুহাম্মদ এবং তারপর তার পরহেজগার ছেলে আলী এবং এরপর হাসান এবং মুহাম্মদ । তারা আমার ইমাম এবং মনিব যদিও একটি দল আমাকে গালাগালি করেছে এবং আমার তীব্র নিন্দা করেছে (এ বিশ্বাস রাখার জন্য ) ।
তারা হলেন ইমাম যাদের নাম আমরা প্রায়ই শুনি । তার আল্লাহর হুজ্জাত (প্রমাণ ) তার দাসদের উপর । তার আল্লাহর দিকে হেদায়েতের পথ । তারা হলেন ইমাম যারা আল্লাহর জন্য দিনের বেলা রোযা রেখেছে এবং রাতগুলি কাটিয়েছে আল্লাহর সামনে রুকু ও সিজদা করে । তার একদল যাদের অধীন হল মক্কা , আবতাহ , কিফ , জামা এবং (জান্নাতুল ) বাকী’
র কবরস্থান । তারা একদল যাদের অধীনে আছে মীনা । দু’
টি পবিত্র সৌধ , দু’
টি‘
মারওয়া’
এবং মসজিদ । তার একদল যাদের প্রত্যেক জায়গাতে একটি মাযার আছে , বরং তাদের একটি মাযার আছে প্রত্যেক হৃদয়ে ।”
মুহাম্মদ ইবনে তালহা শাফেয়ী‘
মাতালিবুস সূলে’
এরকম বলেছেনঃ
“
বারোতম অধ্যায়ে আবুল কাসিম মুহাম্মদ ইবনে হাসান ইবনে আলী ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে মূসা ইবনে জাফর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে হোসাইন ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব -তিনিই মাহদী , হুজ্জাত , খালাফে সালেহ এবং মুনতাযার ।
তিনিই হচ্ছেন উত্তরাধিকারী এবং‘
হুজ্জাত’
(প্রমাণ ) যাকে আল্লাহ সমর্থন দিয়েছেন । এছাড়া আল্লাহ তাকে পথ দেখিয়েছেন সত্য পথে এবং তাকে তার মেজাজ দিয়েচেন এবং তার মর্যাদাকে উচুতে উঠিয়েছেন । আল্লাহ তার অনুগ্রহের অলংকারকে তার উপরে দান করেছেন এবং তিনিও নৈতিক গুণাবলীর পোষাক পরিধান করেছেন । নবী (সাঃ ) কিছু বলেছেন যা আমাদের জন্য বর্ণনা করা হয়েছে এবং যে নবীর (সাঃ ) কথা সম্পর্কে জ্ঞাত হবে সে এর অর্থ বুঝতে পারবে । একজন জ্ঞানী ব্যক্তি জানে মাহদী (আঃ )- এর নিদর্শনের খবর এসে গেছে , এবং নবী (সাঃ )- এর কথাই উল্লেখ করা যথেষ্ট যিনি বলেছেনঃ‘
মাহদীর চেহারার আলো হচ্ছে আামার আলো থেকে । যাকে যত্ন করা হয়েছে যাহরার কাছে (যা তার দেহেরই অংশ ), কেউ এ ধরণের মর্যাদা পাবে না যা আমি মাহদীকে দান করেছি । এরপর যে বলবে সে মাহদী সে সত্য কথা বলেছে ।”
আমরা যা লিখেছি তা ছাড়াও ফরসী ও আরবীতে আরো অনেক কবিতা রয়েছে যে কেউ সেগুলোর ভেতরে অনুসন্ধান করবে সে আলোকিত হবে ।“
ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা”
-র লেখক আরো এ ধরণের অনেক কবিতা উল্লেখ করেছেন । যেমন শেইখ আহমাদ জামী , শেইখ আতহার নিশাপুরী , শেইখ জালালুদ্দীন রুমী প্রমুখ ব্যক্তিদের কবিতা । যা হোক আমারা যা বর্ণনা করেছি তা যথেষ্ট ।