কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?0%

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ? লেখক:
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইমাম মাহদী (আ.)

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক: সাইয়্যেদ সাদরুদ্দীন আল সাদর
: মুহাম্মদ ইরফানুল হক
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 62471
ডাউনলোড: 3531

পাঠকের মতামত:

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 86 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 62471 / ডাউনলোড: 3531
সাইজ সাইজ সাইজ
কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

মাহদী (আঃ) নবীর (সাঃ) পরিবার থেকে

আবু দাউদ তার সহীহর 4র্থ খণ্ডে 17 পৃষ্ঠায় একটি হাদীস এনেছেন যা বর্ণনা করেছেন হযরত আলী (আঃ) নবী (সাঃ) থেকে : যদি পৃথিবীর জীবন আর একদিনের বেশী না থাকে , নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার পরিবার থেকে এক ব্যক্তির আবির্ভার্ব ঘটাবেন।

তিরমিযী তার সহীহ র দ্বিতীয় খণ্ডে 270 পৃষ্ঠায় একটি হাদীস এনেছেন আবু হুরায়রা থেকে যে নবী (সাঃ) বলেছেন :

যদি পৃথিবীর জীবন আর একদিনের বেশী না থাকে আল্লাহ সে দিনটিকে লম্বা করে দিবেন যতক্ষণ না আমার পরিবার থেকে এক ব্যক্তি আবির্ভূত হয়।

এরপর তিনি বলেনঃ এটি একটি ভালো ও সত্য হাদীস। এছাড়া একই ধরনের একটি হাদীস সামান্য পাথর্ক্যে বর্ণনা করেছেন ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক্ব এর 97 পৃষ্ঠায় ও শেইখ শাবান তার ইসাফুর রাগেবীনের 148 পৃষ্ঠায় আবু দাউদ ও তিরমীযি থেকে।

হুদাল ইসলাম এর 25 তম সংস্করণে রয়েছে : ইবনে মাজাহ আলী (আঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদীস এনেছেন যে নবী (সাঃ) বলেছেন : মাহদী আমার পরিবার থেকে।

শেইখ শাবান তার ইসাফুর রাগেবীন -এর 148 পৃষ্ঠায় এবং ইবনে হাজার সাওয়ায়েক্ব এর 99 পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে আহমাদ , আবু দাউদ , তিরমিযি এবং ইবনে মাজাহ নবীর (সাঃ) একটি হাদীস এনেছেন : যদি পৃথিবীর জীবন আর একদিনের বেশী না থাকে আল্লাহ আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটাবেন। অন্য হাদীসগুলোতে আমরা পাই আমার পরিবার।

ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক্ব -এর 97 পৃষ্ঠায় এবং শেইখ শাবান তার ইসাফুর রাগেবীন -এর 148 পৃষ্ঠায় লিখেছেন আহমাদ , আবু দাউদ এবং তিরমিযী নবীর (সাঃ) একটি হাদীস এনেছেন :

পৃথিবী যাবে না অথবা সম্ভবত তিনি বলেছেন : পৃথিবীর অস্তিত্ব বিলীন হবে না যতক্ষণ না আমার পরিবার থেকে এক ব্যক্তি আসে ও শাসন করে।

নূরুল আবসার এর লেখক 231 পৃষ্ঠায় একটি হাদীস এনেছেন আবু দাউদ থেকে যিনি বর্ণনা করেছেন যার-ইবনে-আব্দুল্লাহ থেকে যে নবী (সাঃ) বলেছেন : পৃথিবী নিষ্পন্ন হবে না যতক্ষণ না আমার পরিবার থেকে এক ব্যক্তি আসে এবং আরবদের মাঝে শাসন করে। এরপর তিনি বললেন : সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দিবে।

একই বইতে 229 পৃষ্ঠায় লেখক লিখেছেন : আবু দাউদ আলী (আঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে নবী (সাঃ) বলেছেন : যদি পৃথিবীর জীবন আর একদিনের বেশী না থাকে আল্লাহ আমার পরিবার থেকে এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটাবেন এবং পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবেন যেভাবে তা নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো।

মাতালিবুস সূল - এর লেখক লিখেছেন : কেউ কেউ বলেছেন আহলুল বাইত বলতে তাদের বোঝায় যারা উত্তরাধীকার লাভে পরস্পর সম্পর্কে নিকটে। অন্যরা বলেন আহলুল বাইত তারা যারা এক গর্ভে একত্রিত হয়। অন্যরা বলে আহলুল বাইত তারা যারা তার সাথে যুক্ত রক্ত সম্পর্কে ও আত্মীয়তায়। এসব অর্থ তাদের মাঝে পাওয়া যায় কারণ তাদের বংশধারা ফিরে যায় নবীর (সাঃ) দাদা আব্দুল মোত্তালিব পর্যন্ত ।

এছাড়া তারা তার [নবীর (সাঃ)] সাথে এক গর্ভে একত্রিত হয়েছে এবং তারা তার সাথে যুক্ত রক্তের সম্পর্কে ও আত্মীয়তায়। এভাবে প্রকৃতপক্ষে আলে (বংশ) ও আহল (আহলুল বাইত) একই , তারা অর্থে পাথর্ক্য রাখুক বা না রাখুক। এ দু য়ের অর্থ নির্দিষ্ট হয়ে আছে।

মুসলিম তার সহীহ -তে সাইদ ইবনে হাসান থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেন : আমি হাসাইন ইবনে সিরা ও উমর ইবনে মুসলিমের সাথে যাইদ ইবনে আরক্বাম এর সাক্ষাতে গেলাম। আমরা যখন বসলাম হাসাইন কথা বলা শুরু করলেন : হে যাইদ , নিশ্চয়ই , যেহেতু আপনার আমলনামায় অনেক ভালো কাজ জমা হয়েছে , নবীকে দেখেছেন , তার কাছ থেকে হাদীস শুনেছেন তার পাশে থেকে যুদ্ধ করেছেন এবং তার পিছনে নামাজ আদায় করেছেন তাই আমাদের কাছে বর্ণনা করুন আপনি নবী (সাঃ) এর কাছ থেকে কী শুনেছেন।

যাইদ বললেন : হে ভাই , নিশ্চয়ই আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি এবং আমার স্মৃতিশক্তি কমে গেছে। এর ফলে আমি নবী (সাঃ) থেকে যা অর্জন করেছিলাম তার এক অংশ আমি ভুলে গেছি। তাই গ্রহণ করো আমি যা তোমাদের কাছে বর্ণনা করি এবং আমাকে বিরক্ত করো না যা আমি তোমাদের কাছে বর্ণনা করছি না সে বিষয়ে।

এরপর তিনি বললেন : একবার নবী (সাঃ) হেমা নামে এক জায়গার কাছে দাড়ালেন যা মক্কা ও মদীনার মাঝামাঝি এবং একটি খোতবা দান করলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগানের পর জনতাকে উপদেশ দিলেন। তিনি বললেন : হে জনতা , আমি একজন মানুষ এবং মনে হচ্ছে আমার রবের দূত (আযরাইল) আসবে এবং আমার প্রাণ নিয়ে যাবে। আমি তোমাদের মাঝে দু টো মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি। তাদের প্রথমটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব যাতে তোমরা পাবে হেদায়েত ও আলো। তাই আল্লাহর কিতাবকে ধরো ; তিনি বললেন : অন্যটি আমার আহলুল বাইত। আমি আমার আহলুল বাইত সম্পর্কে তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমি তোমাদেরকে তাদের বিষয়ে আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। তখন হাসাইন বললো : হে যাইদ , কারা তার আহলুল বাইত , তার স্ত্রীরা কি আহলুল বাইত ? তিনি বললেন : না , তার আহলুল বাইত তারা যাদের উপর যাকাত (গ্রহণ) হারাম।

মাহদী (আঃ) নিকটাত্মীয় থেকে

যখন প্রমাণিত হলো মাহদী (আঃ) নবীর (সাঃ) সন্তান , বংশ এবং পরিবার এবং আলী , ফাতেমা , হাসান এবং হোসেইনের সন্তান তখন তা এমনিতেই প্রমাণ করে যে সেذوی القربی নিকটাত্মীয় বা জ্ঞাতি যাদের জন্য নিখাঁদপ্রেম সবার জন্য বাধ্যতামূলক।

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 106 পৃষ্ঠায় বুখারী ও মুসলিম থেকে বর্ণনা করেন : ইবনে আব্বাসকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো যে কাদেরকে আয়াতে কুরবাতে আল ক্বুরবা বলা হয়েছে ? তখন তিনি বলেন : তারা মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সন্তান।

মাতালিবুস সূল - এর লেখক ইমাম আল হাসান আলী ইবনে আহমাদ ওয়াহাদীর তাফসীর থেকে বর্ণনা করেন (ইবনে আব্বাস বলেছেন) : যখন এ আয়াত

) قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى(

বলুন তোমাদের কাছে এর (রিসালাত) বিনিময়ে কিছুই চাই না শুধু রক্তজ বংশের ভালোবাসা ছাড়া। (সূরা আশ শুরাঃ 23)

নাযিল হয় তখন জিজ্ঞাসা করা হলো : ইয়া রাসূলুল্লাহ , এরা কারা যাদেরকে ভালোবাসার জন্য আমাদের আদেশ করা হয়েছে ?

নবী (সাঃ) উত্তর দিলেন : আলী , ফাতেমা ও তাদের সন্তানরা।

ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক্ব এর 101 পৃষ্ঠায় এবং কুনদুযী তার ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা তের 106 পৃষ্ঠায় একটি হাদীস এনেছেন [একই রকম] উপরোক্ত আয়াতের অধীনে। বর্ণনা করেছেন তাবরানীর মুয়াজাম তাফসীর ই ইবনে আবু হাতিম , মানাজির ই হাতিম , ওয়াসিতই ওয়াহাদী , আবু নাঈমের হিলইয়াত ই আউলিয়া , তাফসীর ই সুয়ালাবি এবং ফারায়েদুস সিমতাইন থেকে।

ইবনে হাজার সাওয়ায়েক্ব এর 101 পৃষ্ঠায় ইমাম যায়নুল আবেদীন (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে , যখন তাকে বন্দী করা হয় তার পিতা হুসেইনকে (আঃ) হত্যা করার পর এবং সিরিয়া যাওয়ার পথে খারাপ মুখের কিছু লোক বলেছিলো : সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর তোমাদের সবাইকে হত্যা করার কারণে , তোমাদেরকে দুরাবস্তায় দেখার জন্য এবং বিদ্রোহের গোড়া ছিন্ন করার জন্য। তিনি বলেছিলেন : তোমরা কি আল্লাহর কিতাব পড় নি যেখানে আল্লাহ বলেছেন :

) قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى(

বলুন তোমাদের কাছে এর (রিসালাত) বিনিময়ে কিছুই চাই না শুধু রক্তজ বংশের ভালোবাসা ছাড়া। (সূরা আশ শুরাঃ 23)

তারা বললো : তাذوی القربی কি তোমাদের বোঝায়! ? তিনি বললেন : হ্যা

মাতালিবুস সূল এর লেখক বলেছেন : ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 234 পৃষ্ঠায় ফেরদাউস এর লেখক থেকে এবং তিনি জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী থেকে বর্ণনা করেন যিনি বলেছেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন :

নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালা প্রত্যেক নবীর সন্তানদের তাদের পিঠ থেকে এনেছেন এবং আমার সন্তানদের এনেছেন আলী ইবনে আবি তালিবের পিঠ থেকে।

লেখক বলেন : এ মূল্যবান হাদীসটি সুস্পষ্টভাবে বলে যে আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) এবং ফাতেমা (আঃ) এর সন্তানরা প্রকৃতপক্ষে নবী (সাঃ) এর সন্তান এবং হাসান ও হোসেইনের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। প্রকৃতপক্ষে প্রতীক্ষিত মাহদী এ পরিবার থেকেই এবং এর পবিত্র সন্তান। তাই তাকে নবী (সাঃ) এর সন্তান হিসেবে গণ্য করা হয়। (গবেষণা অনুযায়ী এবং সন্তান কথাটির পূর্ববর্তী ব্যাখ্যা অনুযায়ী) ।

তুহুফুল উক্কুল এর লেখক একটি দীর্ঘ হাদীস এনেছেন হযরত মূসা ইবনে জাফর (আঃ)-এর সাথে খলিফা হারুন-উর-রশীদের কথাবার্তা থেকে এবং আমরা এখানে শুধু ততটুকুই বর্ণনা করবো যতটুকু আমাদের আলোচনায় দরকার। তিনি লিখেছেন :

হযরত মূসা ইবনে জাফর (আঃ) হারুনের কাছে গেলেন কারণ হারুন-উর-রশীদ তার কাছে জানতে চেয়েছেন সেসব বিষয়ে যেসব বিষয়ে কিছু লোক (মিথ্যা) অভিযোগ করেছে হারুনের কাছে তার বিরুদ্ধে। তাই তিনি একটি লম্বা কাগজ বের করলেন যাতে ছিলো তার শিয়াদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ এবং তিনি তা পড়ে শোনালেন।

তখন হযরত বললেন : হে আমিরুল মুমিনীন , আমরা এমন এক পরিবার যারা এ ধরনের অভিযোগে আঘাতপাপ্ত হয়েছি এবং আল্লাহ সর্বক্ষমাশীল এবং যিনি ত্রুটি ঢেকে রাখেন এবং তিনি তার দাসদের কার্যকলাপ থেকে পর্দা তুলে ফেলা থেকে বিরত থাকেন শুধু তখন ছাড়া যখন তিনি তাদের হিসাব নিবেন ; সেদিন হবে এমনই একদিন যখন সম্পদ ও সন্তান কোন কাজে আসবে না এবং শুধু যে আল্লাহর সামনে প্রশান্ত হৃদয়ে আসবে সেই লাভবান হবে। এরপর তিনি বললেন : আমার পিতা আলী থেকে এবং তিনি নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন : যখনই আত্মীয়তার বন্ধুন অনুভূত হয় এবং অন্যের সাথে তা রক্ষা করা হয় তখন একটি আলোড়নের সৃষ্টি হয় এবং তা শান্ত হয়ে আসে ; যদি আমিরুল মুমিনীন (হারুন) আত্মীয়তা বজায় রাখা এবং আমার সাথে হাত মেলানো ভালো মনে করেন তাহলে তিনি তা করতে পারেন।

তখন হারুন তার সিংহাসন থেকে নেমে এলেন এবং তার ডান হাত লম্বা করে হযরতের হাত ধরলেন। তিনি তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং তাকে তার পাশে বসালেন এবং বললেন : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি সত্যবাদী , এবং আপনার পিতা এবং দাদারাও সত্যবাদী ছিলেন। যখন আপনি এসেছিলেন আমি ছিলাম আপনার প্রতি সবচেয়ে কঠোর ব্যক্তি রাগের কারণে। আপনি যেভাবে আমার সাথে কথা বললেন এবং আমার সাথে হাত মেলালেন তাতে রাগের অনুভুতি আমার অন্তর থেকে চলে গেছে এবং আমি আপনার উপর সন্তষ্ট হয়ে গেছি। এরপর তিনি কিছু সময় চুপ থেকে বললেন : আমি আপনাকে আব্বাস ও অন্যান্যদের সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই। কিসের ভিত্তিতে আলী নবীর (সাঃ) চাচা আব্বাসের চাইতে নবীর (সাঃ) উত্তরাধিকারী হওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার রাখে ?

হযরত বললেন : আপনি এ বিষয়ে আমাকে মার্জনা করবেন। হারুন বললো : আল্লাহর শপথ , আমি আপনাকে মার্জনা করবো না যতক্ষণ না আপনি আমার উত্তর দিবেন।

হযরত বললেন : যদি আপনি আমাকে মার্জনা না করেন তাহলে আমাকে নিরাপত্তা দিন। তিনি বললেন : আমি আপনাকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিচ্ছি। হযরত বললেন : অবশ্যই নবী (সাঃ) উত্তরাধিকারী হিসেবে তাকে নিয়োগ দেন নি যিনি হিযরত করতে সক্ষম ছিলেন অথচ হিযরত করেন নি। নিশ্চয়ই আপনার পিতা তাদের মাঝে ছিলো যারা ঈমান এনেছিলো অথচ হিযরত করেন নি এবং আলী ঈমান এনেছিলো এবং হিযরতও করেছিলো। আল্লাহ বলেন :

) وَالَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يُهَاجِرُوا مَا لَكُمْ مِنْ وَلَايَتِهِمْ مِنْ شَيْءٍ حَتَّى يُهَاجِرُوا(

আর যারা ঈমান এনেছে কিন্তু হিজরত করে নি তাদের ব্যাপারে তোমাদের কোন অভিভাবকত্বের দায়িত্ব নেই যতক্ষণ পর্যন্ত তারা হিজরত না করে। (সূরা আনফালঃ 72)

হারুন ফ্যাকাশে হয়ে গেলো এবং বললো : কিসের ভিত্তিতে আপনি নবীর সাথে সম্পর্ক দাবী করেন এবং আলীর সাথে নয় অথচ আলী ছিলেন আপনার পিতা এবং নবী ছিলেন আপনার নানা! ?

হযরত বললেন : নিশ্চয়ই আল্লাহ ঈসা ইবনে মরিয়মকে তার খালিল হযরত ইবরাহিমের সাথে সম্পর্কিত করেছেন ঈসার মা- এর মাধ্যমে যিনি ছিলেন কুমারী। যেভাবে আল্লাহ বলেন :

) وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ كُلًّا هَدَيْنَا وَنُوحًا هَدَيْنَا مِنْ قَبْلُ وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِ دَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ وَأَيُّوبَ وَيُوسُفَ وَمُوسَى وَهَارُونَ وَكَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ (84) وَزَكَرِيَّا وَيَحْيَى وَعِيسَى وَإِلْيَاسَ كُلٌّ مِنَ الصَّالِحِينَ(

আর আমি তাকে দান করেছিলাম ইসহাক ও ইয়া কুব , তাদের প্রত্যেককে সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম ; এর আগে নূহকেও সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম এবং তার বংশধর দাউদ , সুলায়মান ও আইউব , ইউসুফ , মূসা ও হারুনকেও ; আর এইভাবেই সৎকমপরায়ণদেরকে পুরুস্কৃত করি। এবং যাকারিয়া , ইয়াহইয়া , ঈসা এবং ইলয়াসকেও সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম। তারা সকলে সজ্জনদের অন্তর্ভুক্ত । (সূরা আন আমঃ 84-85)

এভাবে তিনি ঈসাকে ইবরাহিমের সাথে সম্পর্কিত করেছেন মরিয়মের মাধ্যমে। ঠিক যেভাবে তিনি সুলাইমান , আইয়ুব , ইউসূফ , মূসা ও হারুনকে তাদের পিতা ও মাতার সাথে সম্পর্কিত করেছেন। ঈসার মর্যাদা তার মাঝে এসেছে তার মায়ের দিক থেকে অন্য কোন ব্যক্তি ছাড়াই ; কোরআনে এসেছে :

) وَإِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَامَرْيَمُ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَاكِ وَطَهَّرَكِ وَاصْطَفَاكِ عَلَى نِسَاءِ الْعَالَمِينَ(

এবং যখন ফেরেশতারা বললো , হে মরিয়ম , নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে নির্বাচিত করেছেন এবং পবিত্র করেছেন এবং তিনি তোমাকে পৃথিবীর মহিলাদের উপর বাছাই করেছেন (ঈসার কারণে)। (সূরা আলে ইমরানঃ 42)

তাই একইভাবে আল্লাহ ফাতেমাকে বাছাই করেছেন , তাকে পবিত্র করেছেন এবং তাকে পৃথিবীর সব মহিলার উপর শ্রেষ্ঠ বানিয়েছেন হাসান ও হোসেইনের জন্য , যারা বেহেস্তের দুই যুবক সর্দার।

মাহদী (আঃ) আলীর (আঃ) বংশ থেকে

ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 494 পৃষ্ঠায় খাওয়ারাযমীর মানাক্বেব থেকে (যার শেষ বর্ণনাকারী সাবেত ইবনে দিনার) যিনি সাইদ ইবনে জুবাইর থেকে এবং তিনি ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে যিনি বলেছেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন :

নিশ্চয়ই আলী আমার পরে আমার উম্মতের ইমাম এবং তার সন্তাদের মাঝ থেকে ক্বায়েম আসবে , এবং যখন সে আবির্ভূত হবে সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে ও ইনসাফে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নিষ্ঠুরতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো।

ইকদুদ দুরার -এর লেখক তার প্রথম অধ্যায়ে আবু দাউদের সুনান , তিরমিযীর জাম এবং নাসাঈর সুনান থেকে , যারা ইবনে ইসহাক থেকে বর্ণনা করেন : আলী (আঃ) তার সন্তান হোসেইনের দিকে তাকালেন এবং বললেন : নিশ্চয়ই আমার সন্তান একজন সাইয়্যেদ (সর্দার) যেভাবে নবী (সাঃ) তাকে নাম দিয়েছেন। খুব শীঘ্রই সে তার পিঠ থেকে আবির্ভূত হবে। যার নাম হবে নবীর (সাঃ) নামের মত। সৃষ্টিতে সে নবীর (সাঃ) মতই কিন্তু নৈতিক চরিত্রে সে সেরকম নয়। সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে।

একই বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে লেখক বায়হাক্বীর বাআস ওয়া নুশুর থেকে একই ধরনের একটি হাদীস এনেছেন , যেখানে আলী (আঃ) বলেছেন যে : আচার স্বভাবে সে নবীর মত নয়।

এছাড়া ঐ বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে লেখক লিখেছেন : আবু ওয়ায়েল বলেছেন : আলী তার ছেলে হোসেইনের দিকে তাকালেন ও বললেন :

নিশ্চয়ই আমার সন্তান একজন সাইয়্যেদ (সর্দার) যেভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে নাম দিয়েছেন। খুব শীঘ্রই এক ব্যক্তি , যার নাম হবে নবীর নামের মত , আবির্ভূত হবে হোসেইনের পিঠ থেকে। সে আবির্ভূত হবে যখন জনগণ থাকবে অবহেলায় নিমজ্জিত ও অসচেতন। এমন এক সময় যখন সত্য থাকবে মৃত এবং নিপীড়ন চলবে জোরদার। আকাশ ও পৃথিবীর বাসিন্দারা তার আবির্ভাবে উল্লসিত হবে। তার থাকবে এক প্রশস্ত কপাল , লম্বা নাক , পশস্ত পেট , পশস্ত উরু , তার ডান গালে একটি চিহ্ন এবং তার সামনের দাতগুলো পরস্পর ফাকাঁ থাকবে। সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নিষ্ঠুরতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো।

মাহদী (আঃ) ফাতেমার (আঃ) বংশ থেকে

আবু দাউদ তার সহীহ র 4র্থ খণ্ডে 87 পৃষ্ঠায় লিখেছেন : উম্মে সালামা বলেন : আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি : মাহদী আমার বংশ থেকে , ফাতেমার সন্তানদের মাঝ থেকে।

ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক্ব -এর 97 পৃষ্ঠায় এবং শেইখ শাবান ইসাফুর রাগেবীনে -র 148 পৃষ্ঠায় এক হাদীস এনেছেন মুসলিম , আবু দাউদ , নাসাঈ , ইবনে মাজাহ ও বায়হাক্বী থেকে।

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা র লেখক 430 পৃষ্ঠায় মাশকুত আল মাসাবিহ থেকে তা আবু দাউদ থেকে এবং তিনি উম্মে সালামা থেকে , যিনি বলেছেন : আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি মাহদী আমার বংশ থেকে , ফাতেমার সন্তানদের মাঝ থেকে।

একই বইয়ের লেখক 223 পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন আলী ইবনে হাল্লাল থেকে তিনি তার বাবা থেকে , যিনি বলেছেন : আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাক্ষাত লাভের সম্মান অর্জন করেছিলাম যখন তিনি সুস্থ বোধ করছিলেন না এবং ফাতেমা তার পাশে বসে কাঁদছিলেন। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন :

হে আমার কন্যা , কেন তুমি কাঁদছো ? তিনি বললেন : আমি ভয় পাচ্ছি আপনার পরে আমার উপর বিপদ নেমে আসবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : হে আমার আদরের কন্যা , আল্লাহ পৃথিবীর অধিবাসীদের উপর দেখাশোনার লাগাম দিয়েছেন। এরপর তাদের মধ্যে থেকে তোমার বাবাকে নিয়োগ দিয়েছেন এবং তাকে রিসালাত দান করেছেন। এরপর তিনি আরেকটি অনুগ্রহ করেছেন। তিনি তোমার স্বামী হিসেবে আলীকে নির্বাচিত করেছেন এবং আমার কাছে ওহী পাঠিয়েছেন যেন আমি তোমাকে তার কাছে বিয়ে দেই। হে ফাতেমা আমরা এমন এক আহলুল বাইত (পরিবার) যে মহান আল্লাহ আমাদের সাতটি জিনিস দান করেছেন যা অন্যদের নেই। যারা আমাদের আগে এসেছে তারাও এবং যারা আমাদের পর আসবে তারাও এ সাতটি জিনিস পাবে না।

আমি তোমার পিতা , নবীদের মধ্যে শেষজন , এবং তাদের মধ্য থেকে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত এবং আমার ওয়াসী হলো তোমার স্বামী যে ওয়াসীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং তাদের মধ্য থেকে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। আমাদের শহীদ হামযা তোমার বাবার ও তোমার স্বামীর চাচা ও শহীদদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং তাদের মধ্য থেকে আল্লাহর সবচাইতে প্রিয়। এছাড়াও আছে সে যার আছে দু টো পাখা , সেও আমাদের মাঝ থেকে। সে ফেরেশতাদের সাথে বেহেশতে উড়বে যে জায়গায় তার যেতে ইচ্ছা হয়। সে তোমার বাবার চাচাতো ভাই এবং তোমার স্বামীর ভাই (জাফর)। এ উম্মাহর দুই সেব্ত (সন্তান) আমাদের মধ্য থেকে এবং তারা হলো হাসান ও হোসেইন। বেহেশতের যুবকদের দুই সর্দার এবং তারা তোমার সন্তান। আমি তারঁ শপথ করে বলছি যিনি আমাকে নবীর মর্যাদা দিয়েছেন যে মাহদী তোমার সন্তানদের মাঝ থেকে। সে পৃথিবীকে ন্যায় বিচারে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো।

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক উল্লেখ করেছেন যে হাফেয আবুল আলা হামাদানী এ হাদীসটি এনেছেন চল্লিশ হাদীস নামের কিতাবে যা মাহদী সম্পর্কে লেখা হয়েছে।

ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 434 পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন আউসাথ - এর লেখক তাবারানী থেকে যিনি আবায়া ইবনে রাবেই যিনি বর্ণনা করেছেন আবু আইউব আনসারী থেকে যিনি বলেছেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফাতেমা (আঃ)-কে বলেছেন : নবীদের মাঝে শ্রেষ্ঠজন আমাদের মাঝ থেকে এবং সে তোমার পিতা। ওয়াসীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠজন আমাদের মাঝ থেকে এবং সে তোমার স্বামী। শহীদদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আমাদের মাঝ থেকে সে হামযা তোমার বাবার চাচা। যে দু টি পাখার অধিকারী সে আমাদের মাঝ থেকে। সে (ফেরেশতাদের) তাদের সাথে উড়ে বেড়াবে বেহেশতে যেখানে তার ইচ্ছা এবং সে জাফর , তোমার বাবার চাচাতো ভাই। এ উম্মাহর দুই সেব্ত (সন্তান) হলো বেহেশতের যুবকদের দুই সর্দার , তারা আমাদের মধ্য থেকে এবং তারা হাসান ও হোসেইন তোমার দুই সন্তান। মাহদী আমাদের মাঝ থেকে সে আসবে তোমার সন্তানদের মাঝ থেকে।

একই বইতে লেখক 490 পৃষ্ঠায় আবু মুযাফ্ফার সামআনীর ফাযায়েল আস সাহাবা গ্রন্থ থেকে বর্ণনা করেছেন যিনি আবু সাইদ খুদরী থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তা প্রায় একই রকম।

এ বইয়ের লেখক বলেন : এ বিষয়ে হাদীসসমূহ মুসতাফিযা । এগুলো ব্যাপকভাবে বর্ণিত এবং আমরা যা লিখেছি তা যথেষ্ট।