মাহদী (আঃ) ও তার শাসন
‘
ইকদুদ দুরার’
-এর লেখক আবু আব্দুল্লাহ ইবনে জওযীর‘
তারিখ’
থেকে এবং তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে এবং তিনি রাসূল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন :
“
পৃথিবীর শাসনকর্তা ছিলো 4 জন। দু’
জন বিশ্বাসী ও দু’
জন অবিশ্বাসী। দু’
জন বিশ্বাসী হলো যুলক্বারনাইন এবং সোলাইমান আর অবিশ্বাসী দু’
জন হলো বাখতুন নাসর (নেবুযাদ নেযযার) এবং নমরুদ। শীঘ্রই আমার বংশ থেকে একজন এর (পৃথিবীর) নিয়ন্ত্রণ লাভ করবে।”
ইসাফুর রাগেবীনের লেখক 152 পৃষ্ঠায় বলেছেন :‘
হাদীসে এসেছে মাহদী পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত মালিক হবেন।’
লেখক বলেছেন :‘
কিছু হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে তার শাসন পূর্ব ও পশ্চিমকে ঢেকে ফেলবে।’
‘
ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা’
-র লেখক‘
জওহারুল আক্বদাইন’
থেকে এবং তিনি আলী থেকে বর্ণনা করেন :
“
যখন মুহাম্মাদ (সাঃ) এর বংশ থেকে ক্বায়েম আত্মপ্রকাশ করবে আল্লাহ তার জন্য পূর্ব ও পশ্চিমের অধিবাসীদের একত্র করবেন।”
মাহদী (আঃ) ও তার সংস্কার
আবু দাউদ তার‘
সহীহ’
-তে 4র্থ খণ্ডের 87 পৃষ্ঠায় আলী (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলল্লাহ (সাঃ) বলেছেন , মাহদী (আঃ) ও তার বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ)
“
যদি পৃথিবীর জীবন আর একদিনও বাকী না থাকে আল্লাহ আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিবেন। সে পৃথিবীকে ইনসাফ ও ন্যায়বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো।”
‘
নুরুল আবসার’
-এর লেখক 231 পৃষ্ঠায় আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন :‘
আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম , মাহদী কি মুহাম্মাদের বংশ থেকে আসবে নাকি অন্য কোন বংশে ?’
তিনি উত্তর দিলেন :“
না সে আসবে আমাদের থেকে। আল্লাহ ধর্মকে সম্পর্ণতা দিবেন তার হাতে ঠিক যেভাবে তিনি আমাদের দিয়ে তার প্রসার ঘটিয়েছেন। আমাদের বরকতে তারা (জনগণ) দুর্যোগ থেকে মুক্তি পাবে যেভাবে তারা মূর্তিপূজা থেকে মুক্তি পেয়েছিলো। আমাদের বরকতে তাদের হৃদয়গুলোকে একতাবদ্ধ করবেন ষড়যন্ত্রমূলক শত্রুতার পর যেভাবে তিনি তাদের হৃদয়গুলোকে মূর্তিপূজার শত্রুতার পর একতাবদ্ধ করেছিলেন। আমাদের বরকতে তারা বিশ্বাসে ভাই হয়ে যাবে , পরস্পরের প্রতি শত্রু হওয়ার পর।”
কিছু আলেম এ হাদীসটিকে হাসান (গ্রহণযোগ্য) এবং বর্ণনা ধারায় শ্রেষ্ঠতর বলে মনে করেছেন এবং হাদীসের বিশেষজ্ঞরা তাদের নিজ নিজ কিতাবে তা লিখেছেন। কিন্তু তাবরানী এটিকে শুধু উল্লেখ করেছেন তার‘
ম’
আজাম’
(আউসাথ)-এ , আবু নাইম শুধু বর্ণনা করেছেন তার‘
হুলিয়াতুল আউলিয়াতে’
এবং আব্দুর রহমান শুধু তার‘
আওয়ালী’
তে।”
মাহদী (আঃ ) ও তার বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ )
‘
ইকদুদ দুরারের’
লেখক 1ম অধ্যায়ের 4র্থ অংশে আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবনে আলী থেকে বর্ণনা করেন :
“
মাহদী‘
আশুরা’
-র দিন আবির্ভূত হবেন (আর সেদিন ইমাম হোসেইন (আঃ) শহীদ হন কারবালাতে , সম্ভবত শনিবার দিন) রুকন ও মাক্বামের মাঝে এবং তার ডান দিকে থাকবে জিবরাইল ও তার বায়ে থাকবে মিকাইল। আল্লাহ তার শিয়াদের (অনুসারীদের) সব জায়গা থেকে তার চারদিকে জড়ো করবেন এবং পৃথিবী তাদের জন্য গুটিয়ে যাবে।”
উল্লেখিত বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের চতুর্থ অংশে লেখক আবু আব্দুল্লাহ হাকেম এর‘
মুসতাদয়াক’
থেকে এবং তিনি উম্মে সালামা থেকে বলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন :
“
জনগণ রুকন ও মাকামের মাঝে ঐ ব্যক্তির বাইয়াত করবে যে আমার অনুসারীদের একজন এবং তাদের সংখ্যা‘
বদর’
-এর লোকদের সংখ্যার সমান হবে।”
আবার একই বইয়ের 7ম অধ্যায়ে এর লেখক নাইম ইবনে হেমাদ এর‘
আল ফাতান’
থেকে এবং তিনি আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন :
“
মাহদীর কাছে বাইয়াত করা হবে কোন মানুষকে তার ঘমু থেকে না জাগিয়েই এবং এক ফোটা রক্ত ঝরানো ছাড়াই।”
‘
ফুতুহাতলু মাক্কীয়্যাহ’
-র লেখক (366 অধ্যায়) মাহদীর কথা উল্লেখ করেন যে তিনি ফাতেমার বংশধর ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নামে তার নাম এবং তার প্রপিতামহ হাসান ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব এবং বলেন :“
জনগণ তার কাছে বাইয়াত করবে‘
রুকন’
ও মাকামের মাঝে।”
প্রতীক্ষিত মাহদী (আঃ) অদ্বিতীয়
আমরা এ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে (মাহদী (আঃ) সম্পর্কে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের মন্তব্য উল্লেখ করার সময় ইবনে হাজার এর‘
আল কুয়্যাল উল মুখতাসার ফী আলামাত মাহদী আল মুনতাযার’
-এর মন্তব্য উল্লেখ করেছি :
“
প্রতীক্ষিত মাহদী একজনই এবং অনেক নয়”
ইবনে হাজারের কথা মূল্যবান মন্তব্য। নিশ্চয়ই তা উদ্দেশ্য পূর্ণ করেছে এবং বাস্তবতাকে জানিয়ে দিয়েছে।
নিশ্চয়ই প্রতীক্ষিত মাহদী এবং‘
ক্বায়েম’
মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বংশ থেকে এবং তিনিই সে ব্যক্তি যার কথা আল্লাহ পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছেন। সম্মানিত নবী ও তার আহলে বায়েত তার আগমন সম্পর্কে সুসংবাদ দিয়েছেন , সাহাবীরা এবং তাবেঈন ও বিজ্ঞ ব্যক্তিরা জানিয়েছেন যে তিনি (মাহদী) একজনই এবং অদ্বিতীয়। তিনি অনেকজন নন যদিও তার উপাধি বেশ ক’
টি।
যে হাদীসগুলো আমরা আগে উল্লেখ করেছি এবং যা আমরা আগামীতে উল্লেখ করবো তা সামনের অধ্যায়গুলোতে বিষয়টির সত্যতার ইঙ্গিত করে। নিশ্চিতভাবে এ হাদীসগুলো সব ভুল বুঝাবুঝি দূর করবে এবং মাহদী সম্পর্কে কোন সন্দেহকারীর মনে কোন সন্দেহ থাকবে না যে তিনি একজন ও অদ্বিতীয়।
আমরা যে হাদীসগুলো লিখেছি এবং যে হাদীসগুলো আমরা উল্লেখ করবো সেগুলো মাহদীকে (আঃ) পরিচয় করিয়ে দিবে , সত্যায়ন করবে ও আলাদা করে চিনিয়ে দিবে ; আর তাই মাহদীর (আঃ) সংখ্যা একের অধিক বলে বিবেচনা করা হবে অযৌক্তিক। এখন আমরা সেসব চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করবোঃ
প্রথম : তার বাড়ি ও পরিবারের সুনির্দিষ্ট পরিচয়।
দ্বিতীয় : তার পিতা ও পিতামহদের পরিচয়।
তৃতীয় : তার পিতা ও মাতার নাম।
চতুর্থ : তার নাম , ডাকনাম ও উপাধি।
পঞ্চম : তার গুণাবলী ও নিদর্শনসমূহ।
ষষ্ঠ : তার নৈতিকতা ও আচার-ব্যাবহার।
সপ্তম : তার আত্মগোপন ও তার দীর্ঘ সময়।
অষ্টম : তার আগমন সময়ের শেষে।
নবম : সেসব ঘটনা যা তার পুনরাগমনে ঘটবে।
দশম : তার পুনরাগমনের সময় দাজ্জাল ও সুফিয়ানীর আগমন।
এগারতম : তার কাছে রুকন ও মাক্বামের মাঝে বাইয়াত।
বারোতম : ঈসার (আঃ) অবতরণ ও তার পিছনে নামাজ।
তেরতম : তার সংস্কার কার্যক্রম।
চোদ্দমত : তার আবির্ভাবে বরকত।
পনেরতম : যেসব বিষয়ে জনগণকে আদেশ করবেন।
ষোলতম : তার যদ্ধসমূহ ও বিজয়সমূহ।
সতেরোতম : তার সরকারের প্রসার ও শাসন।
আঠারোতম : তার খিলাফত ও নেতৃত্বের সময়কাল।
উনিশতম : তার ইন্তেকাল বা গুপ্ত হত্যার পরিবেশ পরিস্থিতি।’
বিশতম : তার পুনরাগমনের পর কিছু মতৃ ব্যক্তির প্রত্যাবর্তন।
তাওরাত ও বাইবেলে নবী (সাঃ)-এর কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। সেসব বৈশিষ্ট্যের মধ্যে তার পন্থা , আচার-ব্যবহার , অন্তর্দৃষ্টি , বংশধারা এবং পরিবার রয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিমের কেউই এসব বৈশিষ্ট্যকে বিভিন্ন মুহাম্মাদের বলে ভাবে নি।
লেখক বলতে চান ,‘
আমার মনে হয় (যদিও মনে হওয়াটা সত্য চাওয়া থেকে কাউকে মুক্ত করে দেয় না) বিভিন্ন মাহদী আসবেন এ ধারনার উৎস তিনটি :
প্রথমতঃ শাসন কতর্তৃ , সরকার গঠনে এবং রাজ্য ও খিলাফতের আকর্ষণে হয়তো কেউ কেউ এ দাবী করতে পারে।
দ্বিতীয়তঃ এটি হয়তো কোন সুফী তরিকায় প্রথম আবির্ভার্ব হয়েছে যেখানে বিশেষ খিলাফত লাভে ব্যর্থ হয়ে তারা বিভিন্ন মাহদী আবিষ্কার করেছে।
তৃতীয়তঃ বনি উমাইয়্যার কিছু অনুসারী যখন এমন কিছু হাদীস লক্ষ্য করেছে যেখানে মাহদীর কথা বলা হয়েছে এবং তারা ভেবেছে মাহদী মুহাম্মাদ (সাঃ)- এর বংশ থেকে এবং ফাতেমার বংশ ও হোসেইনের বংশ থেকে এবং হযরত হাসান আসকারীর সন্তান- একথা তারা ঘোষণা করতে বাধ্য হবে যা ছিলো তাদের জন্য খুবই কষ্টকর এবং তাদের লক্ষ্য পরিপন্থী। তখন তারা বিভিন্ন মাহদীতে বিশ্বাস করা শুরু করেছে।
এ বিষয়ে অন্য কথাও পাওয়া যায় যা যুক্তিহীন যেমন , মাহদী আব্বাস- এর বংশধর এবং হাসান আল মুজতবার সন্তান থেকে অথবা তার জন্ম হবে পরে। এগুলোর সবগুলোর মূল কারণ হচ্ছে উপরের তিনটি কারণের একটি।