উপক্রমণিকা
কোরআনী বিধি-বিধানের মূল স্পিরিট পূর্ণরূপে আয়ত্ব করার জন্য এবং ইসলামের শিক্ষাকে পরিপূর্ণ রূপে অনুধাবন ও তা আমলে রূপান্তর করার উপলদ্ধির জন্য অবশ্যই কোরআন ও সুন্নাহর সাহায্য গ্রহণ আবশ্যক । ইসলামের কোন বিধান কোরআন ও মহানবীর হাদীসের আলোকে উপস্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত এর প্রকৃত উদ্দেশ্য এর সত্যিকার স্পিরিট এবং এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত খুটিনাটি বিষয়াদি সত্যিকার অর্থে জানা সম্ভব হবে না ।
ইসলামী বিধি-বিধানের ব্যাখ্যার জন্য হাদীসের বিধান অত্যন্ত শক্তিশালী একটি দলিল । এই দলিল ব্যতিরেকে ইসলামের শিক্ষাকে উপলদ্ধি বা অনুধাবন করতে পারার যে কোন দাবী একটি অন্তঃসারশূন্য শ্লোগান বা অসার্থক প্রয়াস বৈ আর কিছু নয় । এই দাবীর সঠিকতা সম্পর্কে ইতিহাসই কেবল সাক্ষ্য হয়ে দাড়াতে পারে ।
দুর্ভাগ্যজনক হলো , মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) -এর ওফাতের পরপরই মুসলমানদের তথাকথিত শাসকবর্গ এই শক্তিশালী দলিলের (হাদীস) ব্যাপারে অত্যন্ত নির্মম আচরণ প্রদর্শন করেছেন । শাসকবর্গ অত্যন্ত সঙ্গত কারণে হাদীসের বর্ণনাকারীগণকে দমন ও নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রেখেছেন ,এমন কি মহানবীর সাহাবীদেরকে শুধুমাত্র হাদীসের উদ্ধৃতি প্রদান ও বর্ণনা করার অভিযোগে শাস্তির মুখোমুখি করেছেন । কোন নির্দিষ্ট শাসক বা খলিফার নাম উল্লেখ এখানে অপ্রয়োজনীয় । তবে স্রোতধারা যখন এই নির্মম রীতির বিরুদ্ধে ঘুরে দাড়ালো মুয়াবিয়া তখন নিকৃষ্টতম বিশ্বাস ঘাতকের ভূমিকায় অবতির্ণ হয়েছিলেন । তার নিয়োজিত ও বৃত্তিলাভকারী অনুগ্রহভাজন হাদীস বর্ণনাকারীরা তাদের কারখানায় তৈরী করতে থাকলো এক বিশাল সংখ্যক জাল ও বানোয়াট হাদীস ; আর হাদীসের ভাষ্য প্রচলনের পবিত্র লেবাসের আড়ালে ঐ সকল জাল-বানোয়াট হাদীস অবৈধভাবে প্রবর্তন বা চালু করে দয়া হলো । এভাবে মুয়াবিয়ার পরোক্ষ সম্মতি ও প্রত্যক্ষ সহায়তায় ভরি ভরি (জাল) হাদীস স্তুপীকৃত হতে থাকলো । আর তিনি (মুয়াবিয়া) সর্বোতভাবে সচেষ্ট ছিলেন এই সকল জাল হাদীসের সাহায্যে ইসলামের প্রকৃত“
অফিসিয়াল ইসলাম”
প্রতিষ্ঠার জন্য । ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ,হাদীস সংকলনকারীগণ এমন খারেজীদের নিকট হতেও হাদীস সংগ্রহ করেছেন কিন্তু উদ্দেশ্য প্রণাদিত হয়ে সুচিন্তিতভাবে ইমাম আলী (আঃ) বা মহানবীর পরবর্তী বংশধর বা তাদের কোন সুহৃদের নিকট হতে হাদীস সংগ্রহ এড়িয়ে গিয়েছেন অনায়াসে । এই স্বাভাবিক পক্রিয়ার মাধ্যমে মুয়াবিয়া ও তার উত্তরসূরী খলিফাদের তত্ত্বাবধানের সাহায্যে একটি সম্পূর্ণ মেকী ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে । শিয়ারা এই ধরণের সকল জাল হাদীস প্রত্যাখ্যান করলেন , ফলে চিহ্নিত হলেন“
রাফেজী”
হিসেবে । সময়ের পরিক্রমায় চমে ত্যাগ-কোরবানী ও অতুলণীয় বিশাল শ্মে-প্রচেষ্টার মাধ্যমে , অবশ্য অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর উত্তরসূরী আহলুল বাইতের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে , তারা (শিয়া) ও তাদের শুভানুধ্যায়ীরা সহীহ্ হাদীস সংগ্রহ ও সংকলন করেছেন এবং সত্যিকার ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথকে সুবিন্যস্ত করেছেন ।
এই বিষয়ের প্রখ্যাত পণ্ডিত সাইয়্যেদ মুরতাজা আল-আসকারী হাদীস সংকলনের এই স্পর্শকাতর বিষয়টির একটি সফল তথ্যানুসন্ধানী কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন এবং অত্যন্ত সফলভাবে হাদীস সংকলনের এই প্রতিচ্ছবি এত চমৎকারভাবে উম্মেচন করেছেন যে , এর প্রতিটি বাক্য ও বক্তব্যের বিষয়াবলী সুস্পষ্টভাবে পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে । এই বিষয়ের উপর তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ ও নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ এই বিষয়টিকে আবেগমুক্তভাবে অবলোকন করার জন্য এবং সহীহ হাদীস হতে মিথ্যা ও জাল হাদীসকে পৃথকী করণের জন্য বিশ্বের সকল মুসলমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে । এই অনুসারে সঠিক রূপ ও অবয়বে ইসলামের পরিচিতি নির্ভরযোগ্য ও সঠিক হাদীসের সাহায্যে স্পষ্টায়নের কারণে তার এই উদ্দ্যোগ ইসলামের জন্যএকটি অত্যন্ত মহৎ সেবা হিসেবে পরিগণিত হবে ।