হাদিসের ইতিহাস অনুসন্ধান

হাদিসের ইতিহাস অনুসন্ধান0%

হাদিসের ইতিহাস অনুসন্ধান লেখক:
: মুহাম্মদ মতিউর রহমান
প্রকাশক: ইসলামী শিক্ষার আন্তর্জাতিক কেন্দ্র
বিভাগ: হাদীস

হাদিসের ইতিহাস অনুসন্ধান

লেখক: আল্লামা সাইয়েদ মুরতাজা আসকারী
: মুহাম্মদ মতিউর রহমান
প্রকাশক: ইসলামী শিক্ষার আন্তর্জাতিক কেন্দ্র
বিভাগ:

ভিজিট: 14172
ডাউনলোড: 2983

পাঠকের মতামত:

বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 19 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 14172 / ডাউনলোড: 2983
সাইজ সাইজ সাইজ
হাদিসের ইতিহাস অনুসন্ধান

হাদিসের ইতিহাস অনুসন্ধান

লেখক:
প্রকাশক: ইসলামী শিক্ষার আন্তর্জাতিক কেন্দ্র
বাংলা

পরিশিষ্ট

An Inquiry into the History of Hadithনামক গ্রন্থটিতে যারা হাদীস উদ্ভাবন এবং জালকরণে প্রত্যক্ষ সাহায্য দিয়েছিলেন ইসলামের প্রাথমিক যুগের সেই খলিফাদের ভূমিকা সুনির্দিষ্ট তথ্যসূত্র সহকারে আলোচিত হয়েছে তারা তাদের বেতনভুক্ত আস্থাভাজন ব্যক্তিবর্গের পৃষ্ঠপোষকতায় এই ধরণের হাদীস সংযোজন ও সংকলন করতে এবং সেগুলোকে সহীহ হিসেবে পরিচিত বা প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষে এর একটি প্রতিষ্ঠানিক বিকাশ সংঘটিত করেছিলেন এই ক্ষেত্রে মহানবীর আহলে বাইতের বা তাদের অনুসারীদের উৎস হতে প্রাপ্ত হাদীসগুলো অবশ্যভাবে নিষিদ্ধ এবং কোন কোন ক্ষেত্রে গোপন রাখা হয়েছিল বনি উমাইয়া এবং বনি আব্বাসীয় শাসকরা এই সময় মহানবীর আহলে বাইতের মর্যাদা বা অসাধারণ অবস্থা জ্ঞাপক হাদীসগুলোকে প্রতিনিধিত্ব মূলক সংগ্রহ হিসেবে কদাচিৎ তাদের অফিসিয়াল ইসলাম - এর স্বীকৃতির আওতায় এনেছে যাহোক , এই ধরণের সুসংগঠিত পরিমণ্ডল এবং এই কেম পরিস্থিতিতে মহানবীর আহলে বাইতের সদস্য বর্গের বিশেষ সমর্থন অথবা তাদের বিশেষ মর্যাদা জ্ঞাপক কোন হাদীস যদি সুন্নী হাদীস বেত্তাগণ্যরর উৎস হতে বর্ণিত হয় , তবে সেই হাদীসগুরোর সত্যতা স্বাভাবিকভাবেই কোনরূপ সন্দেহ ব্যতিরেকে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় । পূর্ব পৃষ্ঠাগুলোতে বর্ণিত এই ধরণের নিপীড়নমূলক পরিস্থিতির মধ্যে শ্রদ্ধেয় সুন্নী হাদীস বেত্তাগণ্যরর সিহাহ গুলোতে এইরূপ হাদীসগুলো কিভাবে রক্ষিত হলো তা কার্যতঃ সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর এক ধরণের বিশেষ রহমত , এবং তা কোন মো জেযার চেয়ে কোন অংশে কম নয় । এইরূপ হাদীসগুলোর একটি হলো হাদীস আল-কিসা (চাদরের হাদীস) । আমাদের শ্রদ্ধেয় সুন্নী হাদীস বেত্তাগণ্যরর সকল নির্ভর যোগ্য উৎসের সূত্রে আল্লামা মুরতাজা আল-আসকারী এই হাদীসটি (হাদীস আল-কিসা) এখানে উপস্থাপন করেছেন । ইহা এই হাদীসটির সঠিকতার সপক্ষে একটি জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করে , যেমনটি শিয়া হাদীস বেত্ত্বাগণ নিজেরা একে সঠিক হিসেবে গণ্য করে ।

হাদীসের আকারে ইহা একতোড়া সুবাসিত ফুল ,যা মহানবী (সাঃ) এবং আহলে বাইতের শানে নাজিল হওয়া তাতঞরি (পবিত্রতা)-এর আয়াতের সুবাস চারদিকে ছড়িয়ে দয় । এই হাদীসগুলো সুন্নী লেখকদের লিখিত সহীহ্ হাদীস , মুসনাদ এবং তাফসীর গ্রন্থ সমূহ হতে সংগৃহীত হয়েছে ।

এই হাদীসটিকে হাদীস আল-কিসা (চাদরের হাদীস) বলা হয় , কারণ আয়াতে তাতহীর যখন নাজিল হচ্ছিল তখন মহানবী (সাঃ) এবং তার আহলে বাইতের সদস্যবর্গ একটি চাদর দ্বারা নিজেদের আবৃত করে রেখেছিলেন ; এর মাধ্যমে তারা অন্য লোকদের হতে নিজেদেরকে পৃথক করে চিহ্নিত করেছিলেন । আরবী ভাষায় ঐ ধরণের চাদরকে আবা বা কিসা বলা হয় এবং অধিকাংশ হাদীসেই কিসা শব্দ দ্বারা ঐ অর্থ বুঝানো হয়েছে । এই কারণে তাদেরকে আসহাব আল-কিসা এবং পাঞ্জাতন আলে আবা হিসেবেও ভূষিত করা হয়

হাকিম তার মুসতাদরাকে সাহিহাই শীর্ষক গ্রন্থে ইবনে আবু জাফর ইবনে আবু তালেব34 হতে উদ্ধৃত করেছেনঃ যখন মহানবী (সাঃ) উপলদ্ধি করলেন যে আল্লাহর পক্ষ হতে আয়াত নাজিল হওয়ার সময় আসন্ন , তখন তিনি বললেন , আমার কাছে ডাক! আমার কাছে ডাক! সাফিয়া বললেন ,হে আল্লাহর নবী , আপনার কাছে কাকে ডাকবো ?

তিনি বললেনঃ আমার আহলে বাইতের সদস্যদের ডাক তারা হলঃ আলী , ফাতেমা , হাসান এবং হুসাইন (আল্লাহ তাদের উপর শা বর্ষণ করুন) । অতঃপর তাদেরকে রাসূল (সাঃ) - এর নিকটে ডাকা হল এবং তারা সকলে সেখানে সমবেত হলে মহানবী (সাঃ) তাদেরকে একটি চাদর দ্বারা আবৃত করলেন । অতঃপর দোয়ার জন্য তিনি তার হাত উদ্ধে তুলে ধরলেন এবং বললেন , হে আল্লাহ ! এরাই আমার আহলে বাইত (পরিবারের লোক) । আমার এবং আমার বংশধরদের উপর তোমার রহমত নাজিল কর । এই সময়ে সর্বশক্তিমান আল্লাহ তার আয়াত নাজিল করলেনঃ হে আহলে বাইত (নবী পরিবার)!আল্লাহ তো কেবল চাহেন তোমাদিগ হতে অপবিত্রতা দুর করতে এবং তোমাদিগকে সম্পূর্ণ রূপে পবিত্র করতে (সূরাঃ আহযাব: আয়াত নং 33) ।

এই হাদীসটি উদ্ধৃত করে হাকিম বলেন , বর্ণনার উৎস/সূত্র অনুসারে এই হাদীসটি সত্য এবং সঠিক

কিসার ধরন ও প্রকৃতি

(ক) উম্মুল মো মেনীন আয়শা উদ্ধৃত হাদীস অনুসারেঃ

মুসলিম তার সহীহতে ,হাকিম35 তার মুসতাদরাক -এ , বায়হাকি তার সনানু আল-কুবরাতে এবং তাবারী , ইবনে কাসির এবং সুয়ূতী তাদের তাফসীরে এই আয়াত সম্পর্কে আয়শার নিম্নরূপ বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন ।36

একদিন মহানবী (সাঃ) তার একটি ছাপা চাদর নিয়ে ঘর হতে বের হলেন ।37 এমন সময় হাসান (আঃ) তার নিকট আসলেন এবং মহানবী (সাঃ) তাকে কাছে নিলেন এবং চাদরের নিচে আবৃত করে নিলেন । তারপর হুসাইন (আঃ) আসলেন এবং মহানবী (সাঃ) তাকেও চাদরের নিচে আবৃত করে নিলেন । অতঃপর ফাতেমা (আঃ) কাছে আসলেন এবং তাকেও চাদর দিয়ে আবৃত করা হলো । সবশেষে আসলেন আলী (আঃ) এবং তাকেও চাদরের নিচে আবৃত করে নেয়া হল । অতঃপর তিনি (মহানবী সাঃ) এই পবিত্র আয়াতটি তেলাওয়াত করলেনঃ হে আহলে বাইত! আল্লাহ তো কেবল চাহেন তোমাদিগ হতে অপবিত্রতা দুর করতে এবং তোমাদিগকে সম্পূর্ণ রূপে পবিত্র করতে (সূরাঃ আহযাব 33) ।

(খ) উম্মুল মো মেনীন উম্মে সালামা র হাদীস অনুসারেঃ38

তাবারী তার তাফসীর গ্রন্থে এই পবিত্র আয়াত সম্পর্কে উম্মে সালামা র নিম্নরূপ বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেনঃ যখন এই আয়াত , হে আহলে বাইত (নবী পরিবার)!.. নাজিল হল , মহানবী (সাঃ) আলী ,ফাতেমা , হাসান , এবং হুসাইন (তাদের সকলের উপর শান্তি বর্ষিত হোক)-কে তার নিজের কাছে ডাকলেন এবং তার চাদরের নিচে তাদেরকে আবৃত করলেন । অন্য একটি হাদীসে উম্মে সালামা বলেছেনঃ তিনি তার চাদর দ্বারা তাদেরকে আবৃত করলেন । এই হাদীসটি সুয়ূতিও তার তাফসীর গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন এবং ইবনে কাসির তার তাফসীর গ্রন্থে একই ধরণের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন ।

কিসা দ্বারা আবৃত নবী পরিবারের সদস্যগণ্যরর মর্যাদা

( ক ) উমর বিন ইবনে সালমা র বর্ণনা মতে : তাবারী এবং ইবনে কাসির তাদের তাফীসর গ্রন্থে ,তিরমিজি তার সহীহতে এবং যাহাবী তার মুশকিল আল্ আসার গ্রন্থে উমর39 বিন আবু সালমা র সূত্রে নিম্নরূপ বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেনঃ এই আয়াত , হে আহলে বাইত (নবী পরিবার)! , মহানবী (সাঃ) -এর উপর নাজিল হয়েছিল উম্মে সালামা র গৃহে । এই আয়াত নাজিল হওয়ার পর মহানবী (সাঃ) হাসান ,হুসাইন এবং ফাতেমা (আঃ) -কে ডাকলেন এবং তাদেরকে তার সম্মুখে বসালেন । তারপর তিনি আলী (আঃ) -কে ডাকলেন এবং তাকে তার পশ্চাতে বসালেন । অতঃপর তিনি নিজেকে সহ তাদের সকলকে তার চাদর দ্বারা আবৃত করলেন এবং বললেনঃ এরাই হলো আমার আহলে বাইত (পরিবারের লোক) । হে আল্লাহ ! অপবিত্রতা তাদের থেকে দূরে রাখো এবং তাদেরকে পূতঃপবিত্র রাখো!

( খ ) ওয়াসিলাত ইবনে আসকা এবং উম্মে সালামা র উদ্ধৃত হাদীস অনুসারেঃ40

হাকিম তার মুসতাদরাক এবং হায়সামী তার মাজমাউল্ জাওয়াদ গ্রন্থে ওয়াসিলাত হতে উদ্ধৃতি দিয়েছেন যে , মহানবী (সাঃ) তার নিজের সম্মুখে আলী (আঃ) ও ফাতেমা (আঃ) কে এবং হাসান (আঃ) ও হুসাইন (আঃ) কে তার হাটুর উপর বা তার জানুর উপর বসিয়েছিলেন । এই হাদীসটি ইবনে কাসির ও সুয়ূতী তাদের তাফসীর গ্রন্থে এবং বায়হাকি তার সুনানে ও আহমদ বিন হাম্বল তার মুসনাদে উদ্ধৃত করেছেন ।

নবী পরিবারের সদস্যগণ যে স্থানে একত্রিত হয়েছিলেন

ক - আবু সাঈদ খুদরী র উদ্ধৃত হাদীস অনুসারেঃ41

সুয়ূতী তার দররুল মনসুর -এ আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ণনা করেন , জীবরাঈল যখন অবতরণ করেন এবং এই আয়াত হে আহলে বাইত(নবী পরিবার)!. পৌছে দেন তখন মহানবী (সাঃ) উম্মে সালামা র ঘরে ছিলেন । আবু সাঈদ বলেন , ঐ সময় মহানবী (সাঃ) হাসান , হুসাইন , ফাতেমা এবং আলী (আঃ) -কে ডাকলেন এবং তাদেরকে তার কাছে নিলেন এবং তাদেরকে তার চাদর দ্বারা আবৃত করলেন । এই সময় উম্মে সালামাও পর্দার পিছনে বসে ছিলেন । মহানবী (সাঃ) বললেনঃ এরাই হলো আমার আহলে বাইত (পরিবারের লোক) । হে আল্লাহ ! অপবিত্রতা তাদের থেকে দূরে রাখো এবং তাদেরকে পূতঃপবিত্র রাখো!

খ - উম্মুল মো মেনীন উম্মে সালমা র উদ্ধৃত হাদীস অনুসারে :

ইবনে কাসির , সুয়ূতী , বায়হাকি , যাহাবী এবং খাতীব (তার তারীখে বাগদাদ ) উম্মে সালমা র বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন , তিনি বলেছেনঃ এই আয়াত হে আহলে বাইত (নবী পরিবার)!. আমার ঘরে নাজিল হয়েছে এবং ফাতেমা , আলী , হাসান ও হুসাইন (আঃ) ঐ ঘরে ছিলেন । মহনবী (সাঃ) তাদেরকে তার চাদর দিয়ে ঢেকেদিলেন এবং বললেনঃ এরাই হলো আমার আহলে বাইত (পরিবারের লোক) । হে আল্লাহ ! অপবিত্রতা তাদের থেকে দূরে রাখো এবং তাদেরকে পূতঃপবিত্র রাখো! এবং হাকিমও তার মুসতাদরাক -এ্ উম্মে সালামা র উক্ত বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন , তিনি বলেছেন , এই আয়াত আমার ঘরে নাজিল হয়েছে । নিম্ন বর্ণিত গ্রন্থ সমূহেও উম্মে সালামা র হাদীস উদ্ধৃত হয়েছেঃ

তিরমিজি তার সহীহতে ফাতেমা (আঃ) -এর অর্জন সম্পর্কিত অধ্যায়ে এবং অনুরূপ ভাবে রিয়াজ আল-নুজরাহ্ এবং তাহজীব্ আল-তাহজীব গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে , মহানবী (সাঃ) বলেছেন ,হে আল্লাহ ! এরাই হলো আমার আহলে বাইত (পরিবারের লোক) । অপবিত্রতা তাদের থেকে দূরে রাখো এবং তাদেরকে পূতঃপবিত্র রাখো! আহমদ তার মুসনাদ -এ আরও বর্ণনা করেছেন যে , উম্মে সালামা বলেছেন ,করলাম , আমি ঘরে আমার মাথা ঢুকিয়ে দিলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম আমিও কি আপনাদের অন্তর্ভূক্ত আছি ? মহানবী (সাঃ) উত্তরে বললেন , তোমার একটি ভাল ভবিষ্যৎ রয়েছে ।

হাকিম আরও বর্ণনা করেন যে , উম্মে সালামা জিজ্ঞেস করেন , হে আল্লাহর নবী! আমি কি আপনার পরিবারের একজন সদস্য নই ? মহানবী (সাঃ) উত্তরে বললেন ,তোমার একটি ভাল ভবিষ্যৎ রয়েছে , কিন্তু কেবলমাত্র এরাই আমার আহলে বাইত (পরিবারের সদস্য) । হায় আল্লাহ ! আমার পরিবারের সদস্যদের মর্যাদা আরও অনেক উচ্চ ।

যখন আয়াতটি নাজিল হয় তখন ঘরে কতজন ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন

সয়ুতীর তাফসীর গ্রন্থে এবং মুশকিল আল্ আসার গ্রন্থে উম্মে সালামা র হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে ,তিনি বলেনঃ এই আয়াত হে আহলে বাইত (নবী পরিবার)!. আমার ঘরে নাজিল হয়েছে এবং ঐ সময় ঘরে সাত ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন , যথা-

জীব্রাঈল , মিকাঈল , আলী , ফাতেমা , হাসান ও হুসাইন (আঃ) এবং আমি ঘরের দরজার মাঝে দাড়িয়েছিলাম এবং বলেছিলামঃ

হে আল্লাহর নবী! আমি কি আপনার পরিবারেরএকজন সদস্য নই ? মহানবী (সাঃ) জবাবে বললেনঃ তোমার একটি ভাল ভবিষ্যৎ রয়েছে এবং তুমি নবীর স্ত্রীগণ্যর একজন ।

আয়াতটি নাজিলকালে য পরিবেশের মধ্যে নবী পরিবারের সদস্যগণ ছিলেন তাবারী তার তাফসীরে আবু সাঈদ খুদরী হতে বর্ণনা করেছেন যে , উম্মে সালামা বলেছেনঃ এই আয়াত আমার ঘরে নাজিল হয়েছে আমি ঘরের দরজায় দাড়িয়ে ছিলাম । একই তাফসীর গ্রন্থে ইহাও বর্ণিত হয়েছে যে , উম্মে সালামা বলেছেনঃ নবী পরিবারের সদস্যগণ তার চারদিক ঘিরে দাড়িয়েছিলেন এবং তার কাধে বহন করা চাদর দ্বারা তিনি তাদেরকে আবৃত করলেন এবং বললেন , এরাই হলো আমার আহলে বাইত (পরিবারের লোক) । অপবিত্রতা তাদের থেকে দূরে রাখো এবং তাদেরকে পূতঃপবিত্র রাখো! এবং আয়াতটি যখন নাজিল হয় তখন তারা মাটিতে বসে ছিলেন । আমি বললাম , হে আল্লাহর নবী! আমি কি আপনার পরিবারের একজন সদস্য নই ? সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি যে , মহানবী (সাঃ) কোন বিশেষ মর্যাদা আমার জন্য অনুমোদন করলেন না এবং বললেন , তোমার একটি ভাল ভবিষ্যৎ রয়েছে ।

এ আয়াতের শব্দাবলীর ব্যাখ্যা এবং স্পষ্টীকরণ

রাগীব তার মুফরাদাত আল-কোরআন শীর্ষক গ্রন্থে মূল শব্দ রাওয়াদা এর আওতায় ইহা বর্ণনা করেন । যখন বলা হয় সর্বশক্তিমান আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন যে , অমুক অমুক বিষয়/জিনিস ঘটবে বা অমুক অমুক বিষয়/জিনিস ঘটবে না । আবার রিজস মূল শব্দের আওতায় তিনি বলেনঃ রিজস হল সই জিনিস যা মানষু ঘণা করে । তিনি আরও বলেন যে , রিজস হল চার প্রকার , যথাঃ প্রাকৃতিক , বুদ্ধিবৃত্তিক , আইনগত বা এই তিনটির সমন্বয়ে কোন একটি । যেমন , লাশের জুয়া এবং বহুত্ববাদের পেশা প্রকৃতি ,বুদ্ধিবৃত্তি এবং আইনের দৃষ্টিকোণ হতে ঘৃণ্য । রাগীবের বক্তব্য এখানে শেষ হয়েছে । সূরাঃ হজ্বের 30 নং আয়াতে আল্লাহ তা য়ালা বলেনঃ সুতরাং তোমরা বর্জন কর মূর্তি পুজার অপবিত্রতা এবং সূরাঃ আল-আনআম-এর 125 নং আয়াতে আল্লাহ বলেন , যারা বিশ্বাস করে না আল্লাহ তাহাদিগকে এইরূপ লজ্জাজনকভাবে লাঞ্ছিত করেন । সূরাঃ আল-আনআম্ এর 145 নং আয়াতে আল্লাহ বলেন , যদি না হয় মরা , বহমান রক্ত অথবা শুকরের মাংশ ,কননা এইগুলো অবশ্যই অপবিত্র । সূরাঃ তওবায় তিনি মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেন , তাদের থেকে দূরে থাক , কারণ তারা মুনাফিক । নূহ (আঃ) -এর লোকদের সম্পর্কে সূরাঃ আ রাফের 71 নং আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ নূহ বলিলঃ তোমদের প্রতিপালকের শাস্তি ও ক্রোধ তা তোমদের জন্য নির্ধারিত হইয়াই আছে ;

হযরত মারিয়াম সম্পর্কে সূরাঃ আলে ইমরানের 42 নং আয়াতে যে মন্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে যখন ফেরেশতারা বলে , হে মারিয়াম , আল্লাহ তোমাকে মনোনীত ও পবিত্র করিয়াছেন এবং বিশ্বের নারীগণ্যর মধ্যে তোমাকে মনোনীত করিয়ছেন এই আয়াতের তাতহীর শব্দ দ্বারা সেই অর্থই বুঝানো হয়েছে । আর এই হাদীসে কিসা হচ্ছে আবার ন্যায় একটি বহিরাবরণ ।

হাদীসসমূহে উপস্থাপিত এই আয়াতের ব্যাখ্যা

সুয়ূতী তার তাফসীরে ইবনে আব্বাসের সূত্রে উল্লেখ করে42 মহানবী (সাঃ) বলেছেনঃ সর্বশক্তিমান আল্লাহ তার সৃষ্টিকে দু অংশে বিভক্ত করেছেন এবং আমাদেরকে করেছেন তাদের মধ্যে সর্বোত্তম! তারপর তিনি বললেনঃ তিনি গোত্র ও পরিবারে বিভক্ত করলেন এবং আমাদের অবস্থান নির্ধারণ করলেন সর্বোত্তম পরিবারসমূহে । এই আয়াত হে নবীপরিবার! আল্লাহ তো কেবল চাহেন তোমাদিগ হতে অপবিত্রতা দুর করতে এবং তোমাদিগকে সম্পূর্ণ রূপে পবিত্র করতে সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা য়ালা এই বিষয়টিই সুস্পষ্ট করে দিলেন । কাজেই আমি এবং আমার পরিবারবর্গ সকল ধরণের পাপ এবং অপবিত্রতা হতে মুক্ত

সুয়ুতী যাহ্হাক ইবনে মুজাহিম হতে বর্ণনা করেন43 যে , মহানবী (সাঃ) বলেছেনঃ আমরা সেই পরিবারের যাদেরকে আল্লাহ তা য়ালা পূতঃপবিত্র ঘোষণা করেছেন , এবং নবুওয়াতের উৎস এবং কেন্দ্রবিন্দু হতে তিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন । আমাদের ঘর হলো সেই ঘর যেখানে সদাসর্বদা ফেরেশতাদের আগমন ঘটতো ; এই ঘর রহমতের অবস্থানস্থল এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ঝর্ণাধারা

তাবারী (তার তাফসীরে) এবং মুহিব-ই-তাবারী (জাখায়েরূ আল-উকবা) আবু সাঈদ খুদরী হতে উদ্ধৃতি দিয়েছেন যে , মহানবী (সাঃ) বলেছেনঃ এই আয়াতটি নাজিল হয়েছে পাচঁ ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে ,যারা হলো: আমি নিজে , আলী , ফাতেমা , হাসান এবং হুসাইন । মুশকিল আল-আসার নামক গ্রন্থে উম্মে সালামা হতে এই বিষয়ে উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে ,তিনি বলেছেনঃ এই আয়াত নাজিল হয়েছিল মহানবী , আলী , ফাতেমা , হাসান এবং হুসাইন (তাদের সকলের উপর শান্তি এবং রহমত বর্ষিত হোক) -কে উদ্দেশ্য করে

পূর্ববর্তী হাদীসসমূহে মহানবী (সাঃ) কিভাবে এই আয়াতের ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছেন এবং কিভাবে তার বক্তব্য ও আচরণ দ্বারা এই বিষয়ের উপর আলোকপাত তা স্পষ্টায়ন করা হয়েছে ।

সহীহ্ মুসলিমের বর্ণনানুসারে , মহানবী (সাঃ) -এর এক প্রখ্যাত সাহাবী জায়েদ ইবনে আরকামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে , মহানবী (সাঃ) -এর পরিবারের সদস্য বলতে কাদেরকে বোঝানো হয়েছে এবং তার স্ত্রীগণও তাদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত কিনা । তিনি জবাবে বললেন ।44 স্ত্রীগণ পরিবারের অন্তর্ভূক্ত নয় । আল্লাহর কসম! একজন মহিলা তার স্বামীর সাথে কিছু সময় বসবাস করে , অতঃপর তালাক প্রাপ্তা হলে তার পিতা ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের কাছে ফিরে যায় । মহানবী (সাঃ) -এর পরিবারের সদস্য হলেন তারা যাদের সাথে তার পারিবারিক বন্ধন (রক্ত সম্পর্ক) আছে এবং যাদের জন্য সাদকা গ্রহণ নিষিদ্ধ ।

মাজমউল-জাওয়ায়েদ গ্রন্থে হাশেমী বর্ণনা করেছেন যে , আবু সাঈদ খুদরী বলেছেনঃ মহানবী (সাঃ) -এর পরিবারের সদস্য হলেন তারা যাদেরকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ সকল ধরণের পংকিলতা এবং অপবিত্রতা হতে পবিত্র করেছেন এবং তাদেরকে পূতঃপবিত্র ঘাষণা করেছেন । তারপর আবু সাঈদ খুদরী আঙ্গুল দ্বারা তাদেরকে গণনা করলেন এবং বললেনঃ তারা হলেন পাচজন , মহানবী , আলী ,ফাতেমা , হাসান এবং হুসাইন (তাদের সকলের উপর শান্তি এবং রহমত বর্ষিত হোক)

তাবারী তার তাফসীরে বর্ণনা করেন , তাতহীর-এর পবিত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় কাতাদা বলেনঃ45 মহানবী (সাঃ) -এর পরিবারের লোক হলো তারা যাদেরকে মহান আল্লাহ তা য়ালা সকল পাপ হতে পবিত্র করেছেন এবং যাদের উপর বিশেষ রহমত অবতির্ণ করেছেন । এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি আরও বলেন , ইহাই ইহা এবং অন্য কিছু নয় , আল্লাহর আকাঙ্ক্ষা হলো সকল ধরণের খারাবী এবং গর্হিত বিষয় হতে মহানবী (সাঃ) -এর পরিবারের সদস্যবর্গ(আহলে বাইত)-কে মুক্ত রাখা এবং তাদেরকে সকল ধরণের পাপ-পংকিলতা হতে পবিত্র রাখা