এই আয়াত নাজিল হওয়ার পর রাসূল (সাঃ) কী করেছিলেন ?
“
মাজমাউল জাওয়াদ”
গ্রন্থে উল্লেখ আছে আবু বাজরা বলেছেনঃ
“
আমি মহানবী (সাঃ) -এর সাথে সাতমাস ধরে নামায আদায় করছিলাম । তিনি যখন তার ঘর হতে বের হতেন , তিনি হযরত ফাতেমা যাহরা(আলাইহা)-এর ঘরে যেতেন এবং বলতেনঃ“
তোমদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক! হে নবী পরিবারের লোকেরা! আল্লাহ তো কেবল চাহেন তোমাদিগ হতে অপবিত্রতা দুর করতে এবং তোমাদিগকে সম্পূর্ণ রূপে পবিত্র করতে ।”
সুয়ূতী তার তাফসীরে ইবনে আব্বাস হতে উল্লেখ করেছেনঃ আমি নয় মাস ধরে লক্ষ্য করেছি যে , প্রতিদিন নামাযের সময় হলে মহানবী (সাঃ) আলী (আঃ) -এর দরজার কাছে যেতেন এবং বলতেনঃ“
তোমদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক! হে নবীপরিবারের লোকেরা! আল্লাহ তো কেবল চাহেন তোমাদিগ হতে অপবিত্রতা দুর করতে এবং তোমাদিগকে সম্পূর্ণ রূপে পবিত্র করতে । এবং প্রতিদিন পাচবার তিনি ইহা পূনরাবৃত্তি করতেন ।”
সহীহ্ তিরমিজি , মুসনাদে আহমদ , মুসনাদে তায়লাসি ,“
মুসতাদরাকে সহীহাইন”
“
আসাদ আল গাবা”
এবং তাফসীরে তাবারী , তাফসীরে ইবনে কাসির , সুয়ূতীর তাফসীর-এর উদ্ধৃতি মতে , আনাস ইবনে মালিক বলেছেন
যে , ছয় মাস সময় ধরে মহানবী (সাঃ) হযরত ফাতেমা যাহরা (আঃ) -এর দরজার পাশ দিয়ে যেতেন এবং বলতেনঃ“
হে নবী পরিবারের লোকেরা , এখন নামাযের সময় ।”
তিনি আরও বলতেনঃ“
হে আহলুল বাইত! আল্লাহ তো কেবল চাহেন তোমাদিগ হতে অপবিত্রতা দুর করতেএবং তোমাদিগকে সম্পূর্ণ রূপে পবিত্র করতে ।”
“
ইসতিয়াব”
“
আসাদ আল্ গাবা”
“
মাজমউ জাওয়াদ”
“
মুশকিল আল-আসার”
এবং তাফসীরে তাবারী , তাফসীরে ইবনে কাসির এবং সুয়ূতীর তাফসীর-এর উদ্ধৃতি মতে , আবু হামারা বলেছেনঃ“
আমি মদীনায় থাকাকালে আট মাস সময়কাল ধরে দেখেছি যে ফজরের নামায আদায়ের জন্য যখন মহানবী (সাঃ) বের হতেন তিনি আলী (আঃ) -এর ঘরের কাছে যেতেন এবং দরজার দু’
ই পাশে তার হাতগুলো স্থাপন করে বলতেনঃ“
সালাত! সালাত! হে নবী পরিবারের লোকেরা! আল্লাহ তো কেবল চাহেন তোমাদিগ হতে অপবিত্রতা দুর করতে এবং তোমাদিগকে সম্পূর্ণ রূপে পবিত্র করতে ।”
উপরোক্ত হাদীসগুলোতে এই সময়কাল উল্লেখিত হয়েছে একটিতে ছয় মাস , অন্যটিতে সাত মাস ,তৃতীয়টিতে আট মাস এবং চতুর্থটিতে নয় মাস ।
“
মাজমাউল জাওয়াদ”
ও সুয়ূতী তাফসীর গ্রন্থে আবু সাঈদ খুদরীর সূত্রে শব্দাবলীর ভিন্নতা সহযোগে উদ্ধৃত হয়েছে যে , মহানবী (সাঃ) ফজরের ওয়াক্তে 40 দিন হযরত ফাতেমা (সাঃ আঃ)-এর ঘরের নিকটে গিয়েছিলেন এবং বলতেনঃ“
তোমদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক হে নবী পরিবারের লোকেরা! নামাজের সময় সমাগত/আসন্ন ।”
তৎপর তিনি এই আয়াত তেলাওয়াত করতেনঃ“
হে নবী পরিবারের লোকেরা! আল্লাহ তো কেবল চাহেন তোমাদিগ হতে অপবিত্রতা দুর করতে এবং তোমাদিগকে সম্পূর্ণ রূপে পবিত্র করতে”
। তারপর তিনি বলতেনঃ আমি তার সাথে যুদ্ধ করি যারা তোমদের সাথে যুদ্ধ করে এবং তার জন্য শান্তি কামনা করি যারা তোমদের জন্য শান্তি কামনা করে ।”
এই পবিত্র আয়াত–
দ্বারা সদস্য ঘণের শ্রেষ্ঠত্ব পমাণ করতেন
(ক) ইমাম হাসান (আঃ) :
হাকিম তার মুসতাদরাকে ইমাম হাসান (আঃ) -এর সাফল্য প্রসঙ্গে এবং হাশেমী আহলে বাইত (আঃ) -এর মর্যাদা প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন যে , ইমাম হাসান (আঃ) তার পিতা ইমাম আলী (আঃ) -এর শাহাদাতের পর জনগণ্যর উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এক ভাষণে বলেন : হে জনগণ! আপনারা যারা আমাকে চিনেন তারা চিনেন , আর যারা না-চিনেন তাদের জানা উচিৎ যে আমি হচ্ছি হাসান ইবনে আলী । আমি মহানবী (সাঃ) এবং তার উত্তরাধিকারীর (ওসির) সন্তান । আমি তার সন্তান যিনি মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করেছিলেন এবং তাদেরকে দোযখের শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন । আমি হচ্ছি প্রোজ্জ্বল আলোকবর্তিকার সন্তান । আমি ঐ পরিবারের অধিভুক্ত যাদের কাছে জীব্রাঈল আগমন করতো এবং সেখান হতে বেহেশতে প্রত্যাবর্তন করতো । আমি ঐ পরিবারের অধিভূক্ত যাদের হতে আল্লাহ তা’
য়ালা সকল অপবিত্রতা দুর করেছেন এবং যাদেরকে সম্পূর্ণ রূপে পূতঃপবিত্র করেছেন ।”
মাজমাউল জাওয়াদ এবং তাফসীরে ইবনে কাসিরে বর্ণিত হয়েছে যে , পিতার শাহাদাতের পর ইমাম হাসান (আঃ) খেলাফতে আসীন হন । অতঃপর একদিন নামাযরত অবস্থায় একব্যক্তি তাকে আক্রমণ করে এবং তার উরুতে তরবারি–
দ্বারা আঘাত করে । ফলে তিনি ক’
য়েক মাস যাবৎ শয্যাশায়ী থাকেন । তারপর তিনি সুস্থ হয়ে একটি খুতবা প্রদান করেন । তিনি বলেনঃ হে ইরাকের জনগণ! আল্লাহকে ভয় কর । আমরা তোমদের আমীর এবং তোমাদের মেহমান এবং সেই পরিবারের অধিভূক্ত , সর্বশক্তিমান আল্লাহ যাদের সম্পর্কে বলেছেনঃ“
হে নবী পরিবারের লোকেরা! আল্লাহ তো কেবল চাহেন তোমাদিগ হতে অপবিত্রতা দুর করতে এবং তোমাদিগকে সম্পূর্ণ রূপে পবিত্র করতে ।”
ইমাম হাসান (আঃ) এই বিষয়ের উপর এত বেশী জোর দিয়েছিলেন যে , উপস্থিত সকলে ক্রন্দন করতে শুরু করেছিল ।”
তিবরানীও এই হাদীস উদ্ধৃত করেছেন এবং বর্ণনাকারীদের সকলেই বিশ্বস্ত ।
(খ) উম্মুল মো’
মেনীন হযরত উম্মে সালামাঃ
“
মুশকিল আল-আসার”
গ্রন্থে তাহাবী উমরা হামদানিয়া হতে উদ্ধৃত করেছেনঃ“
আমি উম্মে সালামার নিকটে যেয়ে তাকে সালাম জানালাম । তিনি জানতে চাইলেনঃ আপনি কে ?”
আমি জবাব দিলামঃ আমি উমরা হামদানিয়া ।”
উমরা বলেন ,আমি বললাম , হে উম্মুল মো’
মেনীন! যাকে আমাদের মধ্যে আজ হত্যা করা হয়েছে সে ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কিছু বলুন । জনসাধারণের একদল তাকে পছন্দ করে এবং অন্যদল তার প্রতি শত্রু ভাবাপন্ন । (তিনি হযরত আলী (আঃ) -এর কথা বলছিলেন) । উম্মে সালামা বললেনঃ“
তুমি কি তাকে পছন্দ কর , অথবা তার প্রতি বিদ্বেষপরায়ন ।”
জবাবে বললাম ,“
আমি তাকে পছন্দও করি না তার প্রতি বিদ্বেষপরায়নতাও রাখি না’
।”
এখানে বর্ণনাটি ত্রুটিপূর্ণ , এবং তারপর বর্ণনাটি এই রকম পাওয়া যায়ঃ“
আল্লাহ আয়াত নাজিল করলেনঃ“
হে নবী পরিবারের লোকেরা! আল্লাহ তো কেবল চাহেন তোমাদিগ হতে অপবিত্রতা দুর করতে এবং তোমাদিগকে সম্পূর্ণ রূপে পূতঃপবিত্র করতে ।”
সে সময় সে কক্ষে জীব্রাঈল , মহানবী (সাঃ) আলী , ফাতেমা , হাসান এবং হুসাইন (আঃ) ব্যতীত আর কেউ ছিল না । আমি বললামঃ“
হে আল্লাহর নবী! আমিও কি আহলে বাইতের লোকদের একজন ? তিনি জবাব দিলেনঃ আল্লাহ তোমাকে পুরস্কৃত করবেন এবং তোমার প্রতিফল প্রদান করবেন’
। আমি আকাঙ্ক্ষা করতে ছিলাম তিনি বলুন‘
হ্যাঁ’
এবং দুনিয়ার অন্য যে কোন কিছুর তুলনায় এর মূল্য হতো অত্যন্ত অধিক ।”
(গ) সা’
দ বিন আবি ওয়াক্কাসঃ
সিনাই তার“
খাসাইস”
-এ আমির বিন সা’
দ বিন আবি ওয়াক্কাস হতে উদ্ধৃত করেছেন ।
তিনি বলেছেনঃ মুয়াবিয়া সা’
দ বিন আবি ওয়াক্কাসকে বললেনঃ আবু তোরাবকে গালি-গালাজ করা হতে তুমি বিরত থাক কন ? সা’
দ বললেনঃ“
আমি মহানবী (সাঃ) -এর নিকট হতে তিনটি বিষয় শুনেছি ,যার কারণে আমি আলী (আঃ) -এর প্রতি গালি-গালাজ করি না । যদি তার একটিও আমার থাকতো তবে আমি দুনিয়ার যে কোন কিছুর চেয়ে তার মূল্য বেশী দিতাম । আমি মহানবী (সাঃ) -এর নিকট হতে শুনেছি ,
যখন আলী (আঃ) -কে মদীনায় তার প্রতিনিধি হিসেবে রেখে তিনি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য অগসর হলেন , আলী (আঃ) বললেনঃ“
আপনি কি আমাকে মদীনায় মহিলা এবং শিশুদের মধ্যে রেখে যাচ্ছেন ?”
মহানবী (সাঃ) জবাব দিলেনঃ“
তুমি কি তাতে সন্তুষ্ট নও ? তোমার সাথে আমার সম্পর্ক/অবস্থান মুসার সাথে যেমন হারুনের সম্পর্ক ছিল (তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক) । তুমি আমার নিকট সেই মর্যাদার অধিকারী হারুন মুসার নিকট যে মর্যাদার অধিকারী ছিল ।”
(তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক) ।
খায়বারের ভাগ্য নির্ধারনী দিনেও আমি মহানবী (সাঃ) -কে বলতে শুনেছি , তিনি বলেছেনঃ“
আমি আগামীকাল জিহাদের ঝাণ্ডা তার হাতে দিব যিনি আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালবাসেন এবং আল্লাহ ও তার রাসূলও তাকে ভাল বাসেন ।”
এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে আমরা সকলেই এই অনুগ্রহ ও সকলের মধ্যে বিশেষ মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়ার জন্য গভীর আগ্রহ সহকারে অপেক্ষা করছিলাম , এবং ঝাণ্ডা আমাদের হাতে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করছিলাম । এই সময়ে রাসূল (সাঃ) বললেনঃ“
আলীকে আমার কাছে আন ।”
ইমাম আলী (আঃ) উপস্থিত হলেন , কিন্তু তিনি তখন চোখের পীড়ায় আক্রান্ত ছিলেন । মহানবী (সাঃ) তার মুখের থুথু আলী (আঃ) -এর চোখে লাগিয়ে দিলেন এবং ঝাণ্ডাটি তার হাতে দিলেন । অধিকন্ত যখন আয়াতে তাতহীর (হে নবী পরিবারের লোকেরা! আল্লাহ তো কেবল চাহেন তোমাদিগ হতে অপবিত্রতা দুর করতে এবং তোমাদিগকে সম্পূর্ণ রূপে পবিত্র করতে) নাজিল হয়েছিল তখন মহানবী (সাঃ) আলী , ফাতেমা , হাসান এবং হুসাইন (তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক) ডেকে তার নিকটে বসালেন এবং বললেনঃ“
হে আল্লাহ ! এরাই আমার আহলে বাইত ।”
ইবনে জারীর , ইবনে কাসির , হাকিম (তার মুসতাদরাক”
-এ) এবং যাহাবী (তার মুশকিল আল-আসার-এ) সা’
দ বিন আবি ওয়াক্কাস হতে উদ্ধৃত করেছেন যে , এই আয়াতটি নাজিলকালে মহানবী (সাঃ) আলী (আঃ) -কে তার দু’
ই পুত্র এবং ফাতেমা (আঃ) সহ ডেকে নিলেন এবং তার নিজের চাদর–
দ্বারা তাদের জড়িয়ে নিলেন এবং বললেন :“
হে আল্লাহ ! এরাই আমার আহলে বাইত ।”
(ঘ) ইবনে আব্বাস
“
তারিখে তাবারী”
এবং“
তারিখে ইবনে আসির”
-এ বর্ণিত হয়েছে যে , ইবনে আব্বাসের সাথে এক আলোচনাকালে উমর বললেনঃ“
ঠিক তোমদের! হে বনি হাশিম ! ঈর্ষা , প্রবঞ্চনা-প্রতারনা এবং ঘৃণা ব্যতীত তোমদের অন্তরে আর কিছুই নেই , যা তোমাদের হৃদয় হতে দুর হচ্ছে না এবং তা নিঃশেষও করা হচ্ছে না ।”
ইবনে আব্বাস জবাবে বললেনঃ শান্ত হোন হে আমিরুল মো’
মেনীন! ঈর্ষার দোষ ঐ সকল অন্তরের উপর আরোপ করবেন না যাদের হতে আল্লাহ তা’
য়ালা সকল অপবিত্রতা দুর করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে পূতঃপবিত্র করেছেন ,কারন মহানবী (সাঃ) -এর অন্তরও বনী হাশেমীদের অন্তরগুলোর অন্যতম ।”
(2) হাম্বলী মাযহাবের ইমাম আহমাদ্ (তার“
মুসনাদে”
) নেসাঈ (তার“
খাসাইস”
-এ) মুহিব্বে তিবরী (তার“
রিয়াজ আল-নুজরা”
) ও হাশেমী (তার“
মাজমাউল জাওয়াদে”
) আমর বিন মায়মুন হতে বর্ণনা করেছেনঃ
তিনি বলেছেনঃ“
আমি ইবনে আব্বাসের সাথে ছিলাম যখন নয় জন ব্যক্তি তার কাছে আসল এবং বললঃ হে আব্বাসের পুত্র! হয় আমাদের সাথে আস অথবা গাপনীয়তার সুযোগ দাও ।”
তিনি বললেনঃ“
আমি তোমদের সাথে যাব ।”
বর্ণনাকারী বলেনঃ“
সেই সময়ে ইবনে আব্বাসের চোখ ভাল ছিল এবং তিনি দেখতে পেতেন ।”
বর্ণনাকারী বলেনঃ“
তাদের পারস্পরিক আলোচনা হলো এবং তারা কি বিষয়ে আলোচনা করলেন সে সম্পর্কে আমি অ-জানা থাকলাম ।”
কিছু সময় পরে ইবনে আব্বাস আমাদের কাছে ফিরে আসলেন । তিনি তখন তার জামা ধরে ঝাকাচ্ছিলেনএবং বলতে ছিলেনঃ
‘
তাদের ধিক্কার জানাই! তারা কিনা সেই ব্যক্তি সম্পর্কে বলে যিনি দশটি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিলেন । তার পরের বর্ণনায় ইবনে আব্বাস ইমাম আলী (আঃ) -এর গুণ- বৈশিষ্ট্যসমূহ বিশদ উল্লেখ করতে থাকেন যে পর্যন্ত না তিনি বলেনঃ‘
মহানবী (সাঃ) তার নিজের চাদর–
দ্বারা আলী ,ফাতেমা , হাসান এবং হুসাইন (তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক)-কে জড়িয়ে নিলেন এবং বললেনঃ“
হে নবী পরিবারের লোকেরা! আল্লাহ তো কেবল চাহেন তোমাদিগ হতে অপবিত্রতা দুর করতে এবং তোমাদিগকে সম্পূর্ণ রূপে পূতঃপবিত্র করতে ।”
(ঙ) ওয়াসিলাত ইবনে আসকা’
আঃ
তাবারী এ আয়াতের তাফসীরে , ইবনে হাম্বল তার“
মুসনাদ”
-এ ,হাকাম তার“
মুসতাদরাক”
-এ ,বায়হাকী তার“
সুনান”
-এ , তাহাবী তার“
মুশকিল আল-আসার”
-এ এবং হাশেমী তার মাজমাউল জাওয়াদ”
-এ আবু আম্মার-এর সূত্রে উদ্ধৃত করেন তিনি বলেছেনঃ
“
যখন আলী (আঃ) সম্পর্কে আলোচনা চলছিল এবং লোকেরা তার কুৎসা করছিল তখন আমি ওয়াসিলাত ইবনে আসকা’
আ-এর সাথে বসে ছিলাম । যখন তারা যাওয়ার জন্য উঠে দাড়াল তিনি আমাকে বললেনঃ“
বসে থাকুন যাতে আমি সেই ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলতে পারি যার সম্পর্কে তারা কুৎসা করতেছিল । আমি রাসূল (সাঃ) -এর সাথে ছিলাম যখন আলী (আঃ) , ফাতেমা (আঃ) ,হাসান (আঃ) এবং হুসাইন (আঃ) তার নিকট পৌছেছিল এবং রাসূল (সাঃ) তাদের উপর চাদর বিছিয়ে দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেনঃ“
হে আল্লাহ ! এরাই আমার আহলে বাইত । তাদের থেকে অপবিত্রতা দুর কর এবং তাদেরকে পূতঃপবিত্র করে দাও ।”
শিদ্দাদ ইবনে অব্দুল্লাহ -এর সূত্রে“
আসাদ আল-গাবায়”
উদ্ধৃত করা হয়েছে , তিনি বলেছেনঃ আমি ওয়াসিলাত ইবনে আসকা’
আ হতে শুনেছি যে , ইমাম হুসাইন (আঃ) -এর মস্তক যখন আনা হল একজন ইমাম হুসাইন (আঃ) এবং তার পিতার কুৎসা করতেছিল । ওয়াসিলাত দাড়িয়ে গল এবং বললঃ“
আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি যে , আমি যখন হতে মহানবী (সাঃ) -কে তাদের সম্পর্কে বলতে শুনেছিঃ হে নবী পরিবারের লোকেরা! আল্লাহ তো কেবল চাহেন তোমাদিগ হতে অপবিত্রতা দুর করতেএবং তোমাদিগকে সম্পূর্ণ রূপে পূতঃপবিত্র করতে ।”
আমি সর্বদা আলী , ফাতেমা , হাসান এবং হুসাইন(তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক)-কে ভালবেসেছি ।”
উম্মে সালামা বর্ণিত আরেকটি হাদীসঃ
আহমদ তার“
মুসনাদ”
-এ , তাবারী তার তাফসীরে এবং তাহাবী তার মুশকিল আল-আসার-এ , আসার”
-এ শাহর ইবনে হৌসব-এর সূত্রে উদ্ধৃত করেছেন , তিনি বলেছেনঃ যখন ইমাম হুসাইন (আঃ) -এর শাহাদাতের খবর (মদীনায়) পৌছালো আমি রাসূল (সাঃ) -এর স্ত্রী উম্মে সালামাকে বলতে শুনলাম , তিনি বলেছেনঃ“
তারা হুসাইন (আঃ) কে হত্যা করেছে ! আমি নিজে দেখেছি যে মহানবী (সাঃ) তার খায়বারের চাদর তাদের উপর বিছিয়ে দিলেনএবং বললেনঃ হে আল্লাহ ! এরাই আমার আহলে বাইত! তাদের থেকে অপবিত্রতা দুর কর এবং তাদেরকে পূতঃপবিত্র করে দাও! ।”
(চ) আলী ইবনে হুসাইন (আঃ) :
তাবারী , ইবনে কাসির এবং সুয়ূতী তাদের তাফসীর গ্রন্থে এই আয়াতের তাফসীরে উল্লেখ করেন যে , আলী ইবনে হুসাইন (আঃ) একজন সিরিয়াবাসীকে বললেনঃ“
তুমি কি সূরা আহযাবের এই আয়াতটি পড়েছ , হে নবী পরিবারের লোকেরা! আল্লাহ তো কেবল চাহেন তোমাদিগ হতে অপবিত্রতা দুর করতে এবং তোমাদিগকে সম্পূর্ণ রূপে পূতঃপবিত্র করতে ।”
সিরিয়াবাসী লোকটি বললঃ“
এই আয়াত আপনার সাথে কি সম্পর্কযুক্ত ?”
ইমাম জবাব দিলেন :‘
হ্যাঁ ,ইহা আমাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত’
।
খাওরাজমি তার“
মাকতাল”
নামক গ্রন্থে এই বর্ণনা নিম্নরূপে উদ্ধৃত করেছেনঃ
“
মহানবী (সাঃ) -এর প্রপৌত্র ইমাম হুসাইন (আঃ) -এর শাহাদাতের পর যখন ইমাম সাজ্জাদ (আঃ) ও মহানবী (সাঃ) -এর পরিবারভুক্ত অন্য বন্দীদেরকে দামেস্কে নিয়ে যাওয়া হয় এবং দামেস্কের জামে মসজিদের পাশে জেলখানায় তাদেরকে রাখা হয় , একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি তাদের কাছে এগিয়ে আসে এবং জিজ্ঞাসা করেঃ“
সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি তোমাদেরকে হত্যা করেছেন এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করেছেন , লোকদেরকে তোমদের হাত হতে রক্ষা করেছেন ও আমিরুল মু’
মেনীন ইয়াজিদকে তোমদের উপর কর্তৃত্ব অর্পণ করেছেন’
। আলী ইবনে হুসাইন (আঃ) জিজ্ঞাস করলেনঃ“
হে বুদ্ধ লোক! আপনি কী কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করেন ?”
লোকটি জবাব দিলেনঃ হ্যাঁ । অতঃপর ইমাম (আঃ) জিজ্ঞাস করলেনঃ এই আয়াতটি কী তেলাওয়াত করেছেনঃ“
আমি আমার নবুওয়াতী কাজের বিনিময়ে তোমদের কাছে আর কিছুই চাইনা , একমাত্র আমার নিকটাত্মীয়ের প্রতি ভালবাসা ছাড়া ।”
বৃদ্ধ লোকটি বললঃ“
আমি ইহা তলাওয়াত করেছি ।”
ইমাম (আঃ) বললেনঃ এই আয়াতটি কী পড়েছেনঃ“
সুতরাং নিকটাত্মীয়কে দিবে তাদের প্রাপ্য অধিকার , এবং অভাবগ্রস্থ ও মুসাফিরকেও (সূরাঃ বনী ইসরাঈল : 26) । ইহাই তাহাদের জন্য উত্তম যারা আল্লাহর অনুগ্রহ চায় এবং তাহারাই সফলকাম”
এবং কারআনের এই আয়াত ,“
লোকে তোমাকে যুদ্ধলব্ধ সম্বন্ধে প্রশ্ন করে ; বল , যুদ্ধ লব্ধ সম্পদ আল্লাহ এবং রাসূলের ; সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন কর , এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর , যদি তোমরা মো’
মেন হও । (সূরাঃ আনফাল্ : 1) । বৃদ্ধ লোকটি জবাব দিলঃ হ্যাঁ , আমি এই আয়াতসমূহ পড়েছি ।”
ইমাম (আঃ) বললেনঃ“
আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি যে , নিকটাত্মীয় শব্দ–
দ্বারা আমাদেরকে বুঝানো হয়েছে এবং এই আয়াতসমূহ আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে অবতির্ণ (নাজিল) হয়েছে । (ইমাম (আঃ) আরও বললেন : ) কোরআন শরীফের এই আয়াতটি কী তেলাওয়াত করেছেন যেখানে আল্লাহ তা’
য়ালা বলেছেনঃ“
হে নবী পরিবারের লোকেরা! আল্লাহ তো কেবল চাহেন তোমাদিগ হতে অপবিত্রতা দুর করতেএবং তোমাদিগকে সম্পূর্ণ রূপে পূতঃপবিত্র করতে ।”
বৃদ্ধ লোকটি বললঃ“
হ্যাঁ , আমি ইহা তেলাওয়াত করেছি ।”
ইমাম (আঃ) বললেনঃ“
নবী পরিবারের লোকেরা বলতে কী বুঝানো হয়েছে! আমরা হচ্ছি তারা যাদেরকে আল্লাহ তা’
য়ালা বিশেষভাবে আয়াতে তাতহীর”
এর সাথে সংযুক্ত করেছেন ।
বৃদ্ধ লোকটি বললঃ“
সর্বশক্তিমান আল্লাহর শপথ! আপনারা কী একই পরিবারভূক্ত ?”
ইমাম (আঃ) জবাব দিলেনঃ আমি আমার নানা রাসূলুল্লাহর নামে শপথ করে বলছি , আমরা একই লোক ।”
বৃদ্ধ লোকটি হতবাক হয়ে গল এবং তার বক্তব্যে ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করল । তারপর তার মাথা আকাশের দিকে উত্তোলন করে বললঃ“
হে আল্লাহ! আমি যা বলেছি তার জন্য ক্ষমা চাই এবং এই পরিবারের বিরুদ্ধে শত্রুতা আমি পরিত্যাগ করলাম এবং মুহাম্মদ (সাঃ) -এর পরিবারের শত্রুদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছি ।”