আসীল (সন্ধা) ও লাইল (রাত) প্রসঙ্গে
কোরআনের অভিধানিক অর্থে‘
আসালুন’
শব্দের অর্থ হচ্ছে সন্ধ্যার সময়। (সুত্র: কোরআনের অভিধান , পৃষ্ঠা: 13 (কোরআনে ব্যবহৃত সকল শব্দার্থ সম্বলিত পূর্ণাঙ্গ অভিধান) মুনির উদ্দিন আহমদ , পরিবেশকঃ প্রীতি প্রকাশন , 191 , বড় মগবাজার ঢাকা 1217 , সেপ্টেম্বার 1993)।
কোরআনের অভিধানিক অর্থে‘
লাইলুন’
‘
লাইলাতুন’
শব্দের অর্থ হচ্ছে রাত। (সুত্র: কোরআনের অভিধান , পৃষ্ঠা: 301 (কোরআনে ব্যবহৃত সকল শব্দার্থ সম্বলিত পূর্ণাঙ্গ অভিধান) মুনির উদ্দিন আহমদ , পরিবেশকঃ প্রীতি প্রকাশন , 191 , বড় মগবাজার ঢাকা 1217 , সেপ্টেম্বার 1993)।
রোযা ও ইফতারির সময় সম্পর্কে যাতে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সন্দেহ বা দ্বিধা-বিভক্তির সৃষ্টি না হয় তার সকল প্রমাণ , দলিল এবং ব্যাখ্যা আল কোরআনেই বিদ্যমান রয়েছে। আল্লাহ দিবা-রাত্র এবং মধ্যবর্তী বিভিন্ন সময়ের উল্লেখ করতে ভিন্ন ভিন্ন শব্দমালার ব্যবহারের মাধ্যমে সেই সকল সময়কে সুষ্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছেন। যেমন লাইল অর্থ রাত , তা কোরআনে 162 টি স্থানে উল্লেখিত হয়েছে। তাছাড়া বাংলাতেও লাইল অর্থ যে রাত বুঝায় তা বহুল প্রচলিত যেমন: প্রত্যেকটি মুসলমান লাইলাতুল বারাত (ভাগ্য রজনী) , লাইলাতুল ক্বা দর (মহিমান্বিত রজনী) শব্দের সাথে পরিচিত এবং তার লাইল অর্থ কোন ভাবেই সন্ধাকে বা সূর্যাস্তের সময়কে মনে করে না। তদ্রূপ আল্লাহ সকালকে বুকরা অপরাহ্নকে‘
নাহার’
বলেছেন। পবিত্র কোরআনে বিকালের সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা ,‘
সুরা আল আসর’
রয়েছে , সন্ধা সম্পর্কে আসীল শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে , প্রভাতকাল সম্পর্কে সূরা মুদাচ্ছিরের 34 নং আয়াতে‘
সুবহ’
শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে , সূর্যাস্তের সময়কে পবিত্র কোরআনে‘
গুরবে শামস’
বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সূর্যাস্তের পরে পশ্চিম আকাশে যে রক্তিম আভার সৃষ্টি হয় এবং যা প্রায় 18 থেকে 26 মিনিট বিদ্যমান থাকে সেই সময়কে সূরা ইনশিকাক এর 16 নং আয়াতে‘
শাফাক্ব’
উল্লেখ করা হয়েছে। এবং শাফাকের পূর্ণ পরিসমাপ্তির 10 পরেই যে লাইল বা রাতের শুরু হয় তাও সূরা ইনশিকাক এর 16 এবং 17 নং আয়াত দ্বারা সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণিত।
রাত সম্পর্কে বা রাতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে মানব সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনরকম সন্দেহের অবকাশ না থাকে সে জন্যে পরমকরূনাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রাতের ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। প্রাসঙ্গিকভাবে আমরা তার কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করবঃ
“
আর আমি রাত্রি ও দিবসকে (স্বীয় অসীম কদুরতে) করিয়া দিয়াছি দুইটি নিদর্শন , এবং রাত্রির নিদর্শনকে করিয়াছি অন্ধকার এবং দিনের নিদর্শনকে করিয়াছি আলোময় , যেন ইহাতে (দিনে) তোমরা তোমাদের রবের দেওয়া জীবিকা অন্বেষণ করতে পার।”
(সূরা বণি ইসরাঈল ,আয়াত: 12)।
“
আর তাদের জন্য আরেকটি নিদর্শন হল রাত , আমিই তার থেকে দিনকে বাহির করিয়া আনি , তখনই তো তারা অন্ধকারে আসিয়া যায়।”
(সুত্র: আল কোরআন , সূরা ইয়াসিন , আয়াত: 37 ,শুরা নং: 36)।
“
ওয়া আয কুরিসমা রাব্বিকা বুকরাতারাও ওয়া আসীলান , ওয়া মিনাল লালাইলি ফাসজুদ লাহু ওয়া সাব্বিহহু লাইলান ত্বাবী-লান”
। আর সকালে ও সন্ধায় আপন প্রভুর নাম স্বরণ কর। এবং রাত্রের কতক সময় মাগরীব ও এশায় তাহাকে সিজদাহ্ কর এবং দীর্ঘ রাত্রি ব্যাপিয়া তাঁহার প্রশংসা বর্ণনা কর। (সূত্র: আল কোরআন , সুরা দহর ,আয়াত: 25-26)।
“
অতঃপর আমি সন্ধ্যার রক্তবর্ণের কসম করিতেছি , এবং রাত্রের ও রাত্রি যাহা সংগ্রহ করে তাহার কসম”
। (সুরা ইনশিকাক ,আয়াত: 16-17)।
“
এবং দিনের কসম যখন ইহা তাহার মহিমা প্রকাশ করে , এবং রাত্রের কসম যখন ইহা তাহাকে ঢাকিয়া লয়। (সূরা শামস , আয়াত: 3-4 ,শুরা নং: 91)।
“
রাতের কসম যখন উহা জগৎকে অন্ধকারে ঢাকিয়া লয়।”
(সূত্র: আল কোরআন , সূরা লাইল , আয়াত: 1 ,শুরা নং: 92)।
“
এবং রাত্রের কসম যখন উহা (অন্ধকারে ঢাকিয়া লয়) নিস্তব্ধ হয়। (সুত্র: আল কোরআন , সূরা দোহা , আয়াত: 2 ,শুরা নং: 93)।
“
উহাই সকালে ও সন্ধ্যায় তাহাকে পড়িয়া শুনান হয়। (সুত্র: আল কোরআন , সুরা ফুরকান , আয়াত: 5 ,শুরা নং: 25)।
“
তিনিই রাত্রিকে করিয়াছেন তোমাদের জন্য আবরণ স্বরূপ এবং নিদ্রাকে আরামের শান্তি করিয়াছেন এবং দিনকে করিয়াছেন পুনরায় উঠিবার সময়। (সুত্র: আল কোরআন , সুরা ফুরকান , আয়াত: 87 ,শুরা নং: 25)।
“
এবং তিনিই রাত্রি ও দিনকে একে অন্যের অনুসরণকারী করিয়াছেন তাহাদের জন্য যাহারা উপদেশ গ্রহণ করিতে চায় অথবা শোকর আদায় করিতে চায়। (সুত্র: আল কোরআন , সুরা ফুরকান , আয়াত: 62 ,শুরা নং: 25)।
“
আল্লাহর নাম স্বরণ করা হইয়া থাকে সকালে ও সন্ধ্যায় তাঁহার মহিমা ঘোষণা করিতে থাকে। (সুত্র: আল কোরআন , সুরা নুর , আয়াত: 36 ,শুরা নং: 24)।
“
আল্লাহ্ই রাত ও দিনকে পরিবর্তন করিতেছেন। নিশ্চই উহাতে জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান লোকদের জন্য বুঝিবার বিষয় রহিয়াছে। (সুত্র: আল কোরআন , সুরা নুর , আয়াত: 36 ,শুরা নং: 24)।
“
এবং উহার রাতকে ঢাকিয়া আঁধার করিয়া দিয়াছেন এবং ইহার প্রভাতকে আলোকে প্রকাশ করিয়াছেন। (সুত্র: আল কোরআন , সুরা নাযিয়াত , আয়াত: 29 ,শুরা নং: 79)।
“
এবং তোমার প্রভুকে মনে মনে , সবিনয়ে , সকাতরে , গোপনে ও নিম্ন স্বরে প্রভাতও সন্ধ্যায় ইয়াদ কর এবং সাবধান , ইহাতে অবহেলা করিও না। (সুত্র: আল কোরআন , সুরা আরাফ , আয়াত: 205 ,শুরা নং: 7)।
অতঃপর আল্লাহ্ বলেছেন ,“
অন্ধকার আর আলো কি এক ? তবে কি তাহারা আল্লাহর এমন শরীক করিয়াছে যাহারা আল্লাহর সৃষ্টির মত সৃষ্টি করিয়াছে যে 12 কারনে সৃষ্টি উহাদিগের মধ্যে বিভ্রান্তি ঘটাইয়াছে”
(সুত্র: আল কোরআন , সুরা রাদ , আয়াত: 16 , শুরা নং: 13)।
উল্লেখিত সমগ্র আয়াত থেকে সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে , লাইল বা রাত্র হলো এমন একটি সময় যা পরিপূর্ণরূপে বা সম্পূণরূপে অন্ধকারাচ্ছন্ন। যেখানে দিনের আলোর উপস্থিতির কোন প্রশ্নই থাকতে পারে না। লাইল বা রাত্র অর্থ: শাফাক্ব , গুরুবে শামস , আসর বা আসীল নয়। আল্লাহর কোরআন সত্য ও সঠিক হলে যাহারা সন্ধ্যা বা গুরুবে শামস এর সময় ইফতার করে তা সম্পূর্ণ ভুল। অথবা কোরআনে কি ভুল সময় উল্লেখ করা আছে ? (নাউযুবিল্লাহ)। যাহারা আল্লাহর দেয়া সময়ে রোযা পূর্ণ না করে ভুল হাদীস ও নিজেদের মনগড়া সময়ে রোযা পূর্ণ করছে তাহারা সঠিক ? অবশ্যই এই রকম ধারনায় নাউযুবিল্লাহ বলারই কথা। কারন আমাদের মহান আল্লাহ রাব্বুলআলামিন সকলের চিন্তাধারণার উর্দ্ধে এবং তাহার সমতুল্য কেহই নয়। তাই আল্লাহ তায়ালা কোরআনে যা হুকুম দিয়েছেন সেটাই আমাদেরকে মানতে হবে।
কোরআনে লাইল বলা হয়েছে , আসীল বলা হয় নাই। আর আসীল দ্বারা কোরআনে সন্ধা বুঝানো হয়েছে। (সূত্র: তাফহীমুল কোরআন- গোলাম আযম , সুরা দাহর 25-26 , পারা: 29 , সুরা নং: 76 , পৃষ্ঠা: 332 , 12তম ব্যাখ্যা)।
‘
গুদুউয়্যি ওয়াল আসাল’
এর শাব্দিক অর্থ সকাল-সন্ধ্যায়। আর মর্মার্থ , সব সময় (সকাল থেকে সন্ধ্যা ,সন্ধ্যা থেকে সকাল-এভাবে সকল সময়)।
‘
আসাল’
শব্দাটি‘
আসীল’
এর বহুবচন। আসর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়কে বলে আসাল। (সুত্র: তাফসিরে মাযহারী , কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী (রহঃ) , মাওলানা তালেব আলী অনূদিত , 6ষ্ঠ খণ্ড , পৃষ্ঠা: 310)।
“
যাহারা আল্লাহর আয়াতকে ব্যর্থ করিবার চেষ্টা করে তাহাদের জন্য রইয়াছে ভয়ংকর মর্মন্তদ শাস্তি এবং তাহারা শাস্তি ভ
োগ করিতে থাকিবে।
”
(সুত্র: আল কোরআন , সূরা সাবা , আয়াত: 5 , 38)।
তাই পবিত্র কোরআনে আল্লাহ আমাদেরকে রোযা রাত্রি পর্যন্ত পূর্ণ করার আদেশ বা হুকুম দিয়েছেন , শাফাক বা গুরুবে শামস , অথবা আসীল পর্যন্ত নয় , যাহা উল্লেখিত আয়াতসমূহ দ্বারাই প্রমানিত।