যাকাত প্রসঙ্গে
পবিত্র আল কোরআনে যাকাতকে ফরয করা হয়েছে মহান আল্লাহ বলেনঃ‘
ওয়া আক্বীমুস সালাতা ওয়া আতুজ যাকাতা’
অর্থাৎ- তোমরা সালাত কায়েম কর ও যাকাত দাও। (সুত্র: আল কোরআন , সুরা বাকারা , আয়াত: 43 , শুরা নং: 2)।
যাকাতকে ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ বলা হয়। আরবী যাক্কা শব্দ থেকে যাকাত যার অর্থ পবিত্র করা। যাকাত শব্দের অভিধানিক অর্থ নমু (বৃদ্ধি পাওয়া এবং পবিত্র করা)। আরব দেশে ক্ষেতের ফলন বেশী হলে ছেঁটে দেয়ার প্রচলন রয়েছে। কোরআন মজীদে রয়েছে‘
ইউজাক্কিহিম’
অর্থাৎ-মৌলিক প্রয়োজন পূরণের পর যাকাত দানের উপযুক্ত ব্যক্তির জমানো সম্পদের এক বৎসর পূর্ণহলে সম্পদের নির্ধারিত হক আদায় করা। যাকাত দিতে হয় সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে। সম্পদকে পবিত্র করণও যাকাত দানের উদ্দেশ্য। তাছাড়া যাকাত প্রদাতা যাকাত দানের মাধ্যমে পাপের অপরিচ্ছন্নতা থেকে মুক্ত হয়ে যায়। কেউ কেউ বলেছেন , যাকাত শব্দটির উৎপত্তি তাযকিয়া থেকে যার অর্থ মুশাহাদা বা সাক্ষ্য। যাকাত তার প্রদাতাকে পবিত্র করে থাকে এবং তার ইমানের বিশুদ্ধতার সাক্ষ্য দেয়। মোহাদ্দেছে দেহলভী (রহঃ) বলেন , যাকাতের আরেক নাম সাদকা। সাদকা শব্দটি এসেছে সিদকুন থেকে। সিদকুন অর্থ সততা। সাদকা বা যাকাত তাদের প্রদাতার ইমানের সততার দলিল। এই অর্থে যাকাতের নাম সদকা। (সুত্র: মাদারেজুন নবুওয়াত , 3য় খণ্ড , পৃষ্ঠা: 301 , শায়েখ আবদুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী (রহঃ) , সেরহিন্দ প্রকাশন)।
ইসলামী সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার যাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কোরআনে বহুবার সালাতের সাথে যাকাতের উল্লেখ আছে। প্রায় 30টি জায়গায় যাকাতের কথা আছে। যার যাকাত আদায় হয়নি , তার সালাত কায়েম হয়নি। সাধারণত যাকাত বলতে আমরা যা বুঝি তা হল , রমজান মাসে সারা বৎসরের পুজির হিসাব করে তার শতকরা আড়াই ভাগ গরীব দুখীকে দান করা। পবিত্র কোরআনে যাকাত আদায়ের কথা বার বার উল্লেখ থাকলেও তার পরিমাণের কোন উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়না। আবার আল কোরআনে যাকাত কাকে কাকে দিতে হবে , সে কথার উল্লেখ যেখানে আছে সেখানে‘
যাকাত’
শব্দটি নেই , আছে‘
সদকা’
শব্দটি।
এসব সাদকা তো আসলে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য (ফকীর অর্থ যে নিজের জীবিকার জন্য অপরের সাহায্যের কাঙাল। আর মিসকীন অর্থ সেই সব লোক , যারা সাধারণ অভাবীদের তুলনায় আরও বেশি দুরবস্থায় রয়েছে)। ঐসব লোকদের জন্য , যারা সদকার কাজে নিযুক্ত , আর তাদের জন্য , যাদের মন জয় করা দরকার। (তা ছাড়া এসব) দাস মুক্ত করা , ঋণগ্রস্থদের সাহায্য করা , আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের খিদমতে ব্যবহার করার জন্য। এটা আল্লাহর তরফ থেকে একটা ফরয। আর আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং তিনি পরম জ্ঞান বুদ্ধির মালিক। (সুত্র: আল কোরআন , সুরা তাওবা , আয়াত: 60 , শুরা: 10)।
উক্ত আয়াতে বুঝা যায় আল্লাহপাক‘
সাদকা’
নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু যাকাত সাদকা কিনা সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকে যায়। শতকরা আড়াই ভাগ যাকাতের ব্যবস্থা আসল কোত্থেকে ? আড়াই ভাগ যাকাত দেওয়ার ব্যবস্থার সাথে পবিত্র কোরআনের যাকাত আদায়ের ভাবধারার সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়না। পূর্ববর্তী নবী (আঃ) দের আমলেও যাকাত আদায়ের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু পবিত্র কোরআনে তার পরিমাণেরও কোন উল্লেখ পাওয়া যায়না। তার একটি কারণ এও হতে পারে যে , যাকাত একটি চিরন্তন সার্বজনীন ও সর্বকালীন ব্যবস্থা যা সালাতের ন্যায় অবশ্যই আদায় করতে হবে , অন্যথায় মুমিন হওয়া যাবে না। যাকাত অনাদায়ে সকল ইবাদত পণ্ডশ্রম মাত্র।
পবিত্র কোরআনে যে যাকাতের কথা বলা হয়েছে তার অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক।‘
আতুজ যাকাতা’
শব্দটি দ্বারা শুধু টাকা-পয়সা , ধন-দৌলতের সম্পর্কের কথা বুঝানো হয়নি , প্রতিটি বিষয়বস্তুর যাকাত আছে। যেমন কর্মের যাকাত , চিন্তা-চেতনার যাকাত , দেহের যাকাত , ধন-দৌলতের যাকাত ইত্যাদি। যতগুলো বিষয়ের সাথে মানুষ দৈহিক এবং মানসিকভাবে জড়িত তার প্রত্যেকটির যাকাত আছে। হাদিস শরীফে সাওম ও রোযাকে যেমন দেহের যাকাত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। 2.5% (শতকরা আড়াই ভাগ) যাকাত প্রদানের নিয়ম অনুষ্ঠানিক রূপ লাভ করে খোলাফায়ে রাশেদার আমলে। নবী করিম (সঃ) এর আমলে মুসলমানগণ তাদের প্রয়োজনের অধিক সম্পদ প্রিয়নবীজি (সাঃ) এর খেদমতে পেশ করতেন। অতঃপর প্রিয়নবীজি (সাঃ) সেখান থেকে অভাবীদের প্রয়োজন মোতাবেক দান করতেন। পবিত্র কোরআনের নির্দেশের সাথে এ ব্যবস্থা সঙ্গতিপূর্ণ মনে হয়।
যেমন পবিত্র কোরআনে এরশাদ হচ্ছে-“
লোকে যখন আপনার নিকট জিজ্ঞেস করবে: কি পরিমাণ সম্পদ তারা দান করবে ? আপনি বলে দিন যা কিছু অতিরিক্ত তাই। (আল কোরআন , সুরা বাকারা , আয়াত: 219 , শুরা নং- 2)।
এভাবে দান করাটা পবিত্র কোরআনের ভাষায় অর্থ নৈতিক যাকাত বলে মনে হয়। পুঞ্জীভূত টাকা বা সম্পদের শতকরা আড়াইভাগ দিলেই আল্লাহর কাছ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে এ ধরণের কোন নির্দেশ , আভাস , ইঙ্গীত পবিত্র কোরআনের কোন খানেই দেওয়া হয়নি। যেহেতু পবিত্র কোরআনের স্পষ্ট আয়াতের মাধ্যমে সম্পদ জমানো , পুঞ্জীভুত করা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে , সেহেতু জমানো টাকা বা সম্পদ হতে শতকরা আড়াই ভাগ যাকাত দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। যেমন এরশাদ হচ্ছে-
যারা ধন-সম্পদ ভান্ডারে জমা রাখে এবং অপরকেও তা করতে উৎসাহ দেয় এবং আল্লাহ অনুগ্রহবশতঃ যা দান করেছেন তা গোপন রাখে , সে সব কাফেরদের জন্য গ্লানিকর শাস্তি প্রস্তুত রেখেছি। (সুরা নেসা , আয়াত: 37)।
তোমাদের বলা হয়েছে , আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়কর অথচ তোমাদের মধ্যে এমন লোক আছে যারা ধন সম্পদ ভান্ডারে জমা রাখে। (সুত্র: আল কোরআন , সুরা মুহাম্মদ , আয়াত: 38 , শুরা নং- 47)।
যারা ধন ভান্ডারে জমা রাখে এবং গণনা করে এবং মনে করে যে এ ধন তাদেরকে দীর্ঘস্থায়ী করবে , তাদেরকে হোতামা নামক দোজখে নিক্ষেপ করা হবে। (সুত্র: আল কোরআন , সূরা হুমাজাহ , আয়াত: 2-4 , শুরা নং- 104)।
সাইয়েদ আবুল আ’
লা মওদূদী (র)-এর উর্দূ তরজমার বাংলা অনুবাদে অধ্যাপক গোলাম আযম তার ব্যাখ্যায় লিখেছেন। লোকেরা নিজেদের টাকা -পয়সার মালিক নিজেরাই ছিল। তারা জানতে চাইল , আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কী পরিমাণ খরচ করব ? জবাব দেওয়া হয়েছে , তোমাদের টাকা দ্বারা প্রথমে নিজেদের যা দরকার তা ব্যবস্থা কর। তারপর যা বাঁচে তা আল্লাহর পথে খরচ কর। এটা হচ্ছে নিজের ইচ্ছায় যা বান্দাহ তার মনিবের পথে খরচ করে। (সুত্র: আল কোরআনের অনুবাদ , সুরা বাকারা , আয়াত: 219 ; 1ম খণ্ড , পৃষ্ঠা: 72 , অনুচ্ছেদ: 73)।
জনাব গোলাম আযমের এই ব্যাখ্যায় তাহারই একজন মিতা সৈয়দ গোলাম মোরশেদের কথায় বলা যায় যে , কারো কারো মতে নির্দিষ্ট হারে যাকাত প্রদান করে যে কোন পরিমাণ সম্পদ যে কোন ব্যক্তি জমা করতে পারবে। তারা তাদের মতের সমর্থনে শতকরা আড়াইভাগ যাকাত আদায়ের হাদিস ও পবিত্র কোরআনের উত্তরাধিকার আইনের আয়াতগুলোকে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেন। তাদের মতে নির্দিষ্ট হারে যাকাত প্রদানের পর অতিরিক্ত সম্পদ থেকে অপরের জন্য ব্যয় করা বা না করা ব্যক্তির ইচ্ছাধীন। তাদের ধারণা গরীব দুঃখীরা দান বা খয়রাত হিসেবে ব্যক্তির অতিরিক্ত সম্পত্তি হতে সাহায্য পেতে পারে মাত্র- কিন্তু অধিকার হিসেবে দাবী করতে পারেনা। আল কোরআন নির্দেশিত জীবন দর্শনের সামগ্রিক পর্যবেক্ষণে তাদের এ যুক্তির অসারতা ধরা পড়ে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সীমিত সম্পদ রাখার অধিকারে ইসলামের মৌন স্বীকৃতি আছে বটে , কিন্তু এ স্বীকৃতি সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা যায়। অর্থাৎ প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ ব্যক্তি তার নিজের অধিকারে রাখতে পারে তখনি , যখন সমাজের অন্যান্য ব্যক্তির তাতে কোন মৌলিক প্রয়োজন থাকবেনা। তথা সমাজের অন্যান্য মানুষের মৌলিক প্রয়োজন মিটানোর পর কিছু সম্পদ ব্যক্তি নিজ এবং সমাজের প্রয়োজনে জমা করে রাখতে পারে সকলের আমানত স্বরূপ। প্রয়োজন হলে বা কোথাও অভাব দেখা দিলে তা নিঃসংকোচে দান করে দিতে হবে। এই জমা কৃত সম্পদের উপর যেমন তার উত্তরাধিকারীর অধিকার রয়েছে , তেমনি সমাজের গরীব-দুঃখী , এতিম-মিসকিন ও আত্মীয় স্বজনেরও হক বা অধিকার রয়েছে।
যেমন কোরআনে সূরা মাআরিজের ব্যাখ্যায় জনাব গোলাম আযম বলছেন যে , আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতের কল্যান পাওয়াকেই যারা জীবনের উদ্দেশ্য বানিয়ে নেয় , তারা মানবীয় দূর্বলতার নিকট পরাজিত হয় না। ঈমানের বলে নাফসের উপর বিজয়ী হওয়ার যোগ্যতার দরুন তাদের মধ্যে উন্নত মানের চরিত্র সৃষ্টি হয়। এসব গুণের লোকেরাই বেহেশতে সম্মানের সাথে চিরদিন থাকবে। সে গুনগুলোর মধ্যে যার একটি হল:‘
তারা অভাবীদেরকে সাহায্য করা কর্তব্য মনে করে এবং তাদের মালে গরিবদের হক আছে বলে স্বীকার করে। (সুত্র: আল কোরআনসূরা মা’
আরিজ , আয়াত: 24-25 , শুরা নং- 70)।
এই আয়াতের অধিকাংশই বাংলা তরজমার কোরআন শরীফে উল্লেখ আছে যে ,‘
নির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে’
। কিন্তু নির্দিষ্ট শব্দটি বলতে আমি শব্দার্থে আল কোরআনুল মজীদে কোন শব্দ খুজে পাইনি। সেখানে রয়েছে যেমন:‘
ওয়াল্লাযিনা’
-এবং যারা ,‘
ফী’
- মধ্যে ,‘
আমওয়ালিহিম’
-তাদের সম্পদ সমূহের ,‘
হাক্কুম’
-অধিকার ,‘
মাআলুম’
-অবগত। তাহলে এখানে নির্দিষ্ট শব্দটি কোথায় ? (সূত্র: শব্দার্থে আল কোরআনুল মজীদ , সূরা মাআরিজ , আয়াত: 24-25 , অনুবাদঃ মতিউর রহমান খান , আধুনিক প্রকাশনী ঢাকা , বাংলাদেশ ইসলামিক ইনষ্টিটিউট পরিচালিত , নবম খণ্ড , পৃষ্ঠা: 119)।
“
ওয়া ফী আমওয়ালিহিম হাক্কুল লিস সায়িলী ওয়াল মাহরূম”
অর্থাৎ এখানে বলা হয়েছে যে মাল তাদের কাছে ছিল তা শুধু নিজেরাই ভোগ করত না ; সমাজের বিশেষ করে আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের মধ্যে যারা অভাবী তাদের হকও ঐ মালের উপর ছিল বলে মনে করত এবং সে হক আদায় করত। (সুত্র: আল কোরআনের অনুবাদ , সুরা যারিয়াত , আয়াত: 19 , শুরা নং-51 ; অধ্যাপক গোলাম আযম , তৃতীয় খণ্ড ,পৃষ্ঠা: 77 এর 19 নং আয়াতের ব্যাখ্যা)।
হক বা অধিকার কারো দয়া বা ইচ্ছার উপর নির্ভর করেনা। কারন হাদিস শরীফেও প্রিয় নবী (সাঃ) বলেছেন ,‘
নিশ্চয় তোমাদের মালে মানুষের হক বা অধিকার রয়েছে যাকাত ছাড়াও। (সূত্র: তিরমিজি , ইবনে মাজা)।
চার প্রকার মালের উপর যাকাত ওয়াজিব করা হয়েছে। এই চার প্রকার মাল সহজে হিসাব করে যাকাত দেয়া সম্ভব। প্রথম প্রকার হচ্ছে ফসল ও ফল। যেমন খেজুর , আঙ্গুর , মোনাক্কা ইত্যাদি। তরি তরকারী সবজী -এসবের উপর যাকাত নেই। কেননা এসকল জিনিস অতি দ্রূত নষ্ট হয়ে যায়। দ্বিতীয় প্রকারের মাল হচ্ছে , গৃহপালিত পশু। যেমন উট , গরু , মহিষ , বকরি ইত্যাদি। তৃতীয় প্রকারের মাল হচ্ছে সোনা রূপা। চতুর্থ প্রকারের মাল হচ্ছে বাণিজ্য সামগ্রী তা যে ধরনেরই হোক না কেনো। যেমন কাপড় , বাসন কোসন , বিছানা , আসবাবপত্র ইত্যাদি। এ সকল সম্পদ নেসাব পরিমাণ হলে এবং এক বৎসর জমা থাকলে বছরান্তে হিসাব করে যাকাত দিতে হবে। (সূত্র: মাদারেজুন্ নবুওয়াত , 3য় খণ্ড , পৃষ্ঠা: 302 , শায়েখ আব্দুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী (রহ:) , সেরহিন্দ প্রকাশন , 89 যোগীনগর রোড , উয়ারী , ঢাকা-1203)।
আল্লামা হযরত শিবলী (রাঃ) একজন বড় অলি আল্লাহ ছিলেন। একদিন বাগদাদের বাদশা মুওয়াক্কীল বিল্লাহ হযরত শিবলীকে প্রশ্ন করলেন , আচ্ছা বলতো , বিশ দিরহামের যাকাত কত হবে ? হযরত শিবলী উত্তর দিলেন , বিশ দিরহামের যাকাত হবে সাড়ে বিশ দিরহাম। এতে বাদশা আশ্চার্যান্বিত এবং রাগান্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন , এ কেমন কথা! এ শিক্ষা তুমি কোথায় পেলে ? উত্তরে হযরত শিবলী বললেন , হযরত আবু বকর (রাঃ) থেকে। তার নিকট চল্লিশ হাজার দিনার ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যাকাতের হুকমু করলে তিনি নিজের জন্য একটি দিনারও না রেখে সমুদয় অর্থ আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেন। বাদশা বললেন , আচ্ছা এতো সমান সমান হল , কিন্তু তুমি ঐ আধা দিনার অতিরিক্ত কোথায় পেলে ? হযরত শিবলী (রাঃ) বললেন , ইহা আপনার উপর জরিমানা , বিশ দিরহাম আল্লাহর পথে খরচ না করে জমা রাখার জন্য। (সূত্র: শামসুল হক অনুদিত , তায্কারাতুল আউলিয়া , 2য় খণ্ড , আবুল হাসান নূরী বাগদাদী প্রসঙ্গ ; গ্রন্থস্বত্ত: আহলে কোরআন , পৃষ্ঠা: 99)।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকটে যাকাতের মাল নিয়ে আসা হলে তিনি কোরআনের নির্দেশ মোতাবেক যাকাত প্রদাতার জন্য দোয়া করতেন। কোরআন মজীদে এরশাদ করা হয়েছে ,“
আপনি তাদের যাকাতের মাল গ্রহণ করে তাদেরকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করে দিন এবং তাদের জন্য দোয়া করুন ।”
এই আয়াতে সালাত শব্দটির মাধ্যমে দোয়া বুঝানো হয়েছে। (সূত্র: মাদারেজুন্ নবুওয়াত , 3য় খণ্ড , পৃষ্ঠা: 303 , শায়েখ আব্দুল হক মোহাদ্দেছে দেহলভী (রহ:) , সেরহিন্দ প্রকাশন , 89 যোগীনগর রোড , উয়ারী , ঢাকা-1203)।
“
যা (কিছু ধন সম্পদ) তোমরা সুদের ওপর দাও , (তা তো এ জন্যেই দাও) যেন তা অন্য মানুষদের মালের সাথে (শামিল হয়ে) বৃদ্ধি পায় , আল্লাহ তায়ালার দৃষ্টিতে তা (কিন্তু মোটেই) বাড়ে না , অপরদিকে যে যাকাত তোমরা দান করো তা (যেহেতু একান্তভাবে) আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশে দান করো , তাই বরং বৃদ্ধি পায় , জেনে রেখো , এরাই হচ্ছে (সেসব লোক) যারা (যাকাতের মাধ্যমে) আল্লাহর দরবারে নিজেদের সম্পদ বহুগুণে বাড়িয়ে নেয়। (সুত্র: আল কোরআন , সুরা রুম , আয়াত: 39 , শুরা নং- 30 ; আল কোরআন একাডেমী লন্ডন)।