খুমস প্রসঙ্গে
ইসলামের সকল ফকিহবৃন্দ বিশ্বাস করেন যে , সমস্ত যুদ্ধলব্ধ গনিমত জিহাদকারীদের মধ্যে বন্টিত হয় , শুধুমাত্র এর এক পঞ্চমাংশ ব্যতীত যা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে খরচ করা হয়। খুমসের বিষয়ে শীয়া এবং সুন্নিদের মধ্যে মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়। আমার জন্য ফরজ হচ্ছে যে , কোন সিদ্ধান্তে পৌছানোর আগেই খুমস সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোকপাত করি। এই আলোচনা আমি কোরআন মজিদ থেকে শুরু করছি। আল্লাহ এরশাদ করেছেন:“
এটা জেনে রেখো যে , যা কিছু তোমরা গনিমতের মাল অর্জন কর তার মধ্যকার এক পঞ্চমাংশ হচ্ছে আল্লাহর ও তার রাসূলের , এবং রাসূলের (সাঃ) নিকট আত্মীয়দের , এতিমদের ও মিসকিনদের এবং মুসাফিরদের এবং ভ্রমণকারীদের জন্য”
(সুত্র: আল কোরআন , সূরা আনফাল , আয়াত: 1 , 41 ; সূরা বানী ইসরাইল , আয়াত: 25 ; সূরা রোম , আয়াত: 38 ; সূরা আহযাব , আয়াত: 27 ; সূরা হাশর , আয়াত: 6-9)।
শিয়া ফকিহদের সাথে অন্যান্য ফকীহদের পার্থক্য হলো এই যে , অন্যান্যরা খুমসকে শুধুমাত্র যুদ্ধ থেকে প্রাপ্ত গনিমতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ মনে করেন এবং তা ব্যতীত অন্য কোনো ক্ষেত্রে এ ওয়াজিব আছে বলে মনে করেন না। আর এ ব্যাপারে তাদের দলিল হলো এই যে , এ আয়াতটি যুদ্ধলব্ধ গনিমতের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে।
কিন্তু ধারণা দু’
টি কারণে সঠিক নয়ঃ প্রথমত আরবী ভাষায় যা কিছুই মানুষের হস্তগত হয় তাকেই গণিমত বলা হয় এবং শুধুমাত্র যুদ্ধলব্ধ গনিমতকেই বুঝায় না। যেমন ইবনে মানজুর বলেন ,“
গনিমত হলো আনায়াসে কিছু হস্ত গত হওয়া”
(লিসানুল আরাব ,‘
গণিমত’
শব্দ , ইবনে আসিরের আননেহায়াতে এ শব্দটির অর্থ ঠিক এর কাছাকাছি এবং ফিরূজাবাদীর কথাও তাই)।
তাছাড়া কোরআনও এ শব্দটিকে বেহেশতী নেয়ামতের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে বলেছে:“
ফা’
ইন্দাল্লা-হি মাগ্বা-নিমু কাসীরাহু”
অর্থাৎ- মহান আল্লাহর নিকট রয়েছে মহা পুরুস্কার। (সূরা আন-নিসা , আয়াত: 94 , শুরা নং: 4)।
মূলত গনিমত কথাটি হলো গারামত বা খেসারতের বিপরীত শব্দ। যখন মানুষ কোনো কিছু লাভ করা ব্যতীত এক নির্দিষ্ট পরিমাণ জরিমানা দেয়ার জন্যে আদিষ্ট হয় , তাকে গারামাত বা খোসারাত বলে। যখন লাভবান হয় তাকে গনিমত বলে। অতএব , কেবল যুদ্ধলব্ধ গনিমতের মধ্যেই এ আয়াত সীমাবদ্ধ করার কোনো দলিল নেই এবং বদরের যুদ্ধের সময় এ আয়াত নাযিল হওয়া সীমাবদ্ধকরণের দলিল নয়। আর সম্পদের এক পঞ্চমাংশ হিসাব করার বিধান একটি সামগ্রিক বিধান এবং এটি বিশেষ কোনো বিষয় নয় (অর্থাৎ শুধুমাত্র যুদ্ধলব্ধ ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়)।
দ্বিতীয়ত কোনো রেওয়ায়েতে এসেছে যে , মহানবী (সাঃ) এর সকল প্রকার সম্পদ থেকেই খুমস প্রদান করেছেন। অতঃপর আব্দুল কাইস গোত্রের লোক তাঁর (সাঃ) -এর নিকট এসে বলল ,‘
আপনার ও আমাদের মধ্যে মুশরিকরা বাধা হয়ে আছে। আমরা শুধুমাত্র হারাম মাসগুলোতে (অর্থাৎ যখন নিরাপত্তা থাকে) আপনার নিকট আসতে সক্ষম। যে সকল বিষয়ের আমলের মাধ্যমে আমরা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারব এবং অন্যদেরকেও এগুলোর প্রতি আহবান করব এমন কিছু হুকমু আমাদের জন্যে বর্ণনা করুন । মহানবী (সাঃ) বলেন , তোমাদেরকে ঈমান রক্ষা করতে আদেশ দেবো। অতঃপর তিনি ঈমানের ব্যাখ্যা দিলেন ,“
আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য প্রদান , নামায কায়েম করা , যাকাত আদায় করা এবং আয়ের এক পঞ্চমাংশ ব্যয় করা। (সুত্র: সহীহ আল বুখারী , 4র্থ খণ্ড , কিতাবুয মাগাযী , পৃষ্ঠা: 238 , হাদীস: 4023 , আধুনিক প্রকাশনী ; সহীহ বোখারী , খণ্ড-4 , পৃষ্ঠা: 250)।
নিঃসন্দেহে এ হাদীসে গনিমত বলতে যুদ্ধ বহির্ভূত আয়-উপার্জনের কথা বুঝানো হয়েছে। কারণ তারা বলেছিল এমন একস্থানে আমরা আছি যে , মহানবী (সাঃ) -এর ধারে কাছে নয়। অর্থাৎ মুশরিকদের ভয়ে মদীনায় আসতে পারি না। এ ধরনের ব্যক্তিবর্গ যারা মুশরিকদের দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল , তারা মুশরিকদের বিরূদ্ধে জিহাদ অবতীর্ণ হতে অপারগ ছিল। সেখানে যুদ্ধলব্ধ গনিমতের খুমস প্রদানের তো প্রশ্নই আসে না। (সুত্র: ইমামিয়া বিশ্বাসের সনদ , পৃষ্ঠা: 233 , একশ আটচল্লিশতম মূলনীতি , মূলঃ আয়াতুল্লাহ্ জা’
ফর সুবহানী , অনুবাদ: মোহাম্মদ মাঈনউদ্দিন)।
আহলেবাইতের ইমামগণ (আঃ) থেকে বর্ণিত রেওয়াতের মাধ্যমে সকল প্রকার আয় থেকে খুমস দেয়ার ব্যাপারটি পরিস্কার হয়ে গেছে। ফলে এ ব্যাপারে কোনো প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই। (সূত্র: ওয়াসয়েলুশ শিয়া , খণ্ড 6 , কিতাবে খোমস , বাবে আউয়্যাল ; ইমামিয়া বিশ্বাসের সনদ (ইসনা আশারী শিয়াদের বিশ্বাসের দলিল ভিত্তিক ব্যাখ্যা) , পৃষ্ঠা: 233 , মূলনীতি নং- 148)।
শতকরা আড়াই ভাগ যাকাত প্রদানের কথা পবিত্র কোরআনে নেই। কিন্তুশতকরা বিশভাগ খুমস প্রদানের নির্দেশ পবিত্র কোরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। সূরা তাওবার 60 নং আয়াতে বলা হচ্ছে ,‘‘
এসব গরীব ও নিঃস্ব দের জন্য এবং (ব্যবস্থাপনায় কর্মরত) কর্মচারীদের জন্যে , যাদের অন্তকরণ (দ্বীনের প্রতি) অনুরাগী করা প্রয়োজন তাদের জন্যে এবং তা নির্ধারিত’’
। সূরা আনফালের (খুমসের) আয়াতে আমরা সে নির্ধারিত অংশটির উল্লেখ দেখতে পাচ্ছি যা যাবতীয় এক পঞ্চমাংশ)।
জনাব গোলাম মোরশেদের ভাষায় বলতে গেলে , হাদীস মোতাবেক যদি 2.5% (শতকরা আড়াই টাকা) যাকাত হয় তাহলে কোরআন মোতাবেক 20% খুমস হয়। তাহলেও তো 22.5% (শতকরা সাড়ে বাইশ টাকা) যাকাত বা সাদকা দিতে হয়। কিন্তু আমাদের শাস্ত্রবিদরা‘
গনিমত’
এর দোহাই দিয়ে সে 20% প্রদেয় নির্দেশটি রদ বা বাতিল করে দিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশকে‘
মুজতাহিদরা’
বাতিল করে দেন , কি সাংঘাতিক কথা! বলা হয়ে থাকে , যেহেতু এখন যুদ্ধও নেই গনিমতও নেই , সে কারনে নাকি এ নির্দেশ স্বাভাবিকভাবে রহিত হয়ে গেছে ? (অথচ স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংঙালী মা বোনদের গনিমতের মাল মনে করা হয়েছিল)। তাহলে পবিত্র কোরআনের আয়াত শাশ্বত ও সর্বকালিন হয় কিভাবে ? অর্থে‘
গনিমত’
শব্দটি আল্লাহপাক এখানে ব্যবহার করেছেন তা কি আমাদের চিন্তা করে দেখতে হবেনা ?‘
গনিমত’
শব্দ ব্যবহার হওয়াতে যদি উক্ত আয়াতের নির্দেশটি রহিত হয়ে যায় , তাহলে সে প্রদেয় অর্থের যারা হকদার তথা আল্লাহ ,রাসূল (সাঃ) ,
আওলাদে রাসূল (সাঃ) , এতিম , মিছকীন ও মুসাফিররা তো আর দুনিয়া থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়নি ? তাহলে যুদ্ধ বন্ধ হবার কারণে এবং গনিমত হস্তগত না হওয়ার কারণে তাঁরাইবা কেন তাঁদের হক বা অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন ? এতে আল্লাহপাক নিজেও রয়েছেন। আল্লাহ কিছুদিনের জন্য তাঁদের অভাব বা প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে ঐ নির্দেশ জারী করলেন , অতঃপর যুদ্ধ বন্ধ হবার কারণে তাঁদের অভাব , প্রয়োজনের কথা ভুলে গেলেন এবং এ আয়াতের নির্দেশ রহিত করে তাদের বঞ্চিত করলেন ? আওলাদে রাসূল (সাঃ) , এতিম , মিসকিন ও মুসাফিররা তখন গনিমতের মাল পাওয়াতে খাবার খেতেন , গনিমত বন্ধ হওয়ায় এখন কি তারা বাতাস খাবেন ? এ কেমন কথা ? আল্লাহ কি আমাদের মত এতই দোদুল্যমান ও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেন ? (নাউযুবিল্লাহ) । আল্লাহ আওলাদে রাসূল (সাঃ) , এতিম , মিসকিন ও মুসাফিরদের বা অভাবগ্রস্থদের অধিকার জলাঞ্জলি দেবেন , এ কথা ভাবতেও তো অবাক লাগে! আসলে আমাদের তথাকথিত‘
মুজতাহিদরা’
একটুও চিন্তা করে দেখেননি যে , আল্লাহতালা এখানে‘
গনিমত’
শব্দটি কেন ব্যবহার করেছেন ? গনিমত শব্দটির প্রকৃত অর্থ ও তাৎপর্য হল , শুধুমাত্র যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ সম্পদই গনিমত নয় বরং আল্লাহর অনুগ্রহে প্রাপ্ত প্রবৃদ্ধি তথা আল্লাহ অনুগ্রহবশতঃ প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে সমস্ত সম্পদ দান করেন তার সমুদয়ই গণিমতের অন্তর্ভূক্ত। গুনমত শব্দের এ রকম ব্যাখ্যা হওয়াই সমুচিত। হিযরতের পর থেকে মক্কা বিজয়ের পর পর্যন্ত মুসলমানরা সারা বৎসর জেহাদে লিপ্ত থাকতেন। জেহাদে প্রাপ্ত গনিমতের সম্পদই ছিল তাঁদের আয়ের একমাত্র উৎস। কাফেরদের আক্রমণের ভয়ে তাঁরা মদিনার বাইরে ব্যবসা বাণিজ্যের জন্যে যেতে পারতেন না। মুহাজিররা তাঁদের সম্পদ মক্কায় ফেলে এসে মদিনায় নিঃস্ব অবস্থায় জীবন যাপন করতেন। জেহাদের তাড়নায় সারা বৎসরই তাঁরা উৎকন্ঠার মধ্যে থাকতেন , ফলে কৃষিকার্য্য বা আয়ের অন্যকোন প্রচেষ্টা তারা করতে পারতেন না। সে ক্ষেত্রে যুদ্ধলব্ধ গনিমতের মালেই ছিল তাদের আয়ের একমাত্র উৎস। সে কারণেই আল্লাহপাক এখানে‘
গনিমাতুন মিন শাইয়িন’
অর্থাৎ‘
গনিমতের যাবতীয় কিছুর’
বাক্যটি সমুদয় আয় অর্থেই ব্যবহার করেছেন।
শীয়ারা সব ধরণের লভ্যাংশকে মালে গনিমত মনে করে থাকেন এবং আহলে বায়েতের ইমামদের আনুগত্য সাপেক্ষে বৎসর শেষে খরচাদির পর যে সম্পদ অবশিষ্ট থাকে তার খুমস বাহির করে থাকেন। অথচ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের এটার প্রতি ইজমা আছে যে খুমস কেবল ঐ সম্পদের উপর ওয়াজিব হবে যেটা যুদ্ধের মারফৎ মুসলমানদের হাতে আসবে।
জনাব ড. মুহাম্মদ তিজানী আল সামাভীর ভাষায় বলতে হয় যে ,‘
আমি অন্যান্য সন্ধানীদের ন্যায় আল্লাহর গ্রন্থ এবং রাসূল (সাঃ) হাদীসসমূহের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষন নিজের মন মর্জি মোতাবেক করবো না। আর না নিজের মাযহাবের পক্ষ অবলম্বন করে সেগুলির অর্থ করবো। কিন্তু আহলে সুন্নাতের কথা ও মন্তব্যকে আমি কোন খাতায় ফেলবো ? তারা তাদের সিহাহসমূহ এক দিকে তো খুমস কে এক বাক্যে ওয়াজিব বলেছেন ; আবার নিজেদের ব্যাখ্যা ও মাযহাবগত শত্রূতার কারণে সেটার উপর আমল করেন না। এখানে এই প্রশ্নটি উত্তর বিহীন থেকে যায় যে , সেটাকে কার্যকারী কেন করেন না ? অতএব , নির্দ্ধিধায় মুখ ফুটে বেরিয়ে আসে যে , যেটা করতে পারেন না সেটা বলেনই বা কেন ? এধরণের অনেক কথা তাদের সিহাহ ও অন্যান্য গ্রহণন্থসমূহে পেয়ে যাবেন যেগুলির উপর শীয়ারা আমল করে থাকেন। কিন্তু তারা (আহলে সুন্নত ও অন্যান্য মাযহাবের লোকসকল) নিজেরা আমল করেন না। ঐ সমস্ত কথিত বিষয়সমূহের মধ্যে খুমসও একটি বিষয়’
।
ইমাম আবু হানিফার মতে‘
রিকায’
অর্থাৎ ভূ-গর্ভে প্রোথিত সম্পদ , আর মা’
দান অর্থাৎ ভূ-গর্ভে প্রকৃতি-দত্ত (খনি) এ উভয়টার মধ্য এক-পঞ্চমাংশ ওয়াজিব। (সুত্র: সহীহ আল বুখারী , 2য় খণ্ড , কিতাবুয যাকাত , পৃষ্ঠা: 58 , হাদীস: 1401 , টিকা নং: 16 , আধুনিক প্রকাশনী , সন- সেপ্টেম্বার 1986)।
সহীহ আল বুখারীতে‘
রেকায’
সম্পর্কে একটা অধ্যায় নির্ধারণ করেছেন। আর ইবনে মালিক আনাস ও ইবনে ইদরিস (ইমাম শাফেয়ী) বলেন , জাহেলী যুগের ভূগর্ভে প্রোথিত সম্পদকে‘
রিকায’
বলে। এর পরিমাণ কম হোক আর বেশী হোক তাতে এক পঞ্চমাংশ ওয়াজিব হবে। কিন্তু মা’
দান (জমির উপর ভাগের সম্পদ) এর উপর খুমস এজন্যে ওয়াজিব যেহেতু এটা খনিজ নয়। রাসূল (সাঃ) বলেছেন: মা’
দান হচ্ছে বিতরণ যোগ্য আর খনিজ এর উপর ভূগর্ভস্থ ধনে এক পঞ্চমাংশ খুমস দিতে হবে’
। ইমাম আবু হানিফা বলেন , জাহেলী যুগের ভূগর্ভে প্রোথিত সম্পদের ন্যায় খনিও‘
রিকায’
। (সুত্র: সহীহ আল বুখারী , 2র্য় খণ্ড , কিতাবুয যাকাত , পৃষ্ঠা: 58 , হাদীস: 1401 , আধুনিক প্রকাশনী , সন- সেপ্টেম্বার 1986)।
কিন্তু ইমাম বুখারী বলেন , নবী (সাঃ) ভূ-গর্ভস্থ ধনে এক পঞ্চমাংশ নির্ধারণ করেছেন , পানি অর্থাৎ সমুদ্র থেকে প্রাপ্ত ধনে নয়। (সুত্র: সহীহ আল বুখারী , 2য় খণ্ড , কিতাবুয যাকাত , পৃষ্ঠা: 58 , হাদীস: 1401 , আধুনিক প্রকাশনী)।
আর বুখারী তার সেই সহীতেই বলেছেন যে:‘
হাসান বসরী বলেন , আম্বর ও মুক্তার মধ্যে এক পঞ্চমাংশ দেয়া ওয়াজিব’
।‘
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন আম্বর ভূগর্ভস্থ ধন নয় , বরঞ্চ এটা সমূদ্র থেকে উথিত একটি বস্তু। (সুত্র: সহীহ আল বুখারী , 2য় খণ্ড , কিতাবুয যাকাত , পৃষ্ঠা: 58 , হাদীস: 1401 , টিকা নং: 15 , আধুনিক প্রকাশনী , সন- সেপ্টেম্বার 1986)।
এখানে ইমাম বুখারী যে বলেছেন‘
পানি থেকে প্রাপ্ত ধনে নয়’
এটা কোন সাহাবার রেওয়ায়েত ? অথবা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর কোন ঘনিষ্ট সাহাবী থেকে বর্ণিত যে এটা গ্রহণ যোগ্য হবে ? ইবনে আব্বাস ? কিন্তু ইবনে আব্বাস তো এখানে সমুদ্র ও ভূগর্ভস্থ ধনের মধ্যে একটি পার্থক্য দেখিয়েছেন তিনি তো স্পষ্ট বারণ করেননি। কেননা নবী (সাঃ) রিকাযের (সংগ্রহের) উপর খুমস ওয়াজিব করেছেন , সেটা পানির তল দেশে থাকাটা জরুরি নয়।
সত্য সন্ধ্যানীগণ উক্ত হাদীস সমূহ দ্বারা অনুমান করে নিতে পারেন যে , মালে গনিমতের উপর আল্লাহ খুমস ওয়াজিব করেছেন , এর অর্থ শুধু ঐ ধন সম্পদ যা মাটির তলা থেকে বাহির করা হয়ে থাকে। আর যে বাহির করে সম্পদ তারই হয়। সুতরাং গনিমত হিসাবে তার খুমস ওযাজিব হবে। অনুরূপ সমূদ্রহতে যে মনি মুক্তা উদ্ধার করা হয়ে থাকে তার জন্যেও খুমস ওয়াজিব। কেননা সে গুলিও হচ্ছে গনিমত। বুখারীর হাদীসসমূহ দ্বারা আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে এসকল বড় বড় জামাত ও অনুসরণকারীদের কথা আর আমল হচ্ছে সম্পূর্ণ বিপরীত মুখী। এবং দুটোতেই অসামঞ্জস্যতা পাওয়া যায়। শ্রদ্ধেয় পাঠকমন্ডলী , এখন লক্ষ্য করুন তাদের এই ভুল ও ভ্রান্ত দলিল উম্মাতকে কোথা থেকে কোথায় পৌছে দিচ্ছে । যখন বুখারীর মত শ্রেষ্ঠ হাদীস বেত্তা খুমসের পক্ষপাতি। সুতরাং শীয়াদের কথা এখানেও বাস্তবতাপূর্ণ। খুমস সম্পর্কে তারা যে কথা বলেন সে মতে আমলও করেন এবং তাদের কথা ও কাজ পুরা পুরি মিল আছে। (সুত্র: আমিও সত্যবাদীদের সঙ্গী হয়ে গেলাম , পৃষ্ঠা: 189 , মূল: জনাব ড. মুহাম্মদ তিজানী আল সামাভী)।
তাছাড়া আমরা ইসলামের ইতিহাস অধ্যায়ন করলেও খুমস প্রসঙ্গে স্পষ্ট প্রমান পাই যেমন:‘
গণিমত বা যুদ্ধলব্ধ দ্রব্যাদির এক-পঞ্চমাংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা রাখিয়া অবশিষ্ট অংশ মুসলিম সৈন্যদের মধ্যে বন্টন করিয়া দেওয়া হইত। রাষ্টের জন্য রক্ষিত অংশকে (এক-পঞ্চমাংশ) খুমস বলা হইত। হযরত ওমরের (রাঃ) সময় ইহা আয়ের একটি বড় উৎস ছিল। কোষাগারের অংশটি নবী করীম (দঃ)-এর আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিম সৈন্যবাহিনীর সাজ-সরঞ্জামের জন্য ব্যয় করা হইত। (সুত্র: ইসলামের ইতিহাস , স্নাতক ও সম্মান শ্রেনীর জন্য , অধ্যাপক কে.আলী , এম.এ ; পৃষ্ঠা: (152) 181 ; আলী পাবলিকেশনস ; 77 , পাটুয়াটুলী , ঢাকা-1 , সন-1985)।
সাতটি জিনিসের উপর খুমস দেওয়া ওয়াজিব। সেগুলো হলো এইঃ (1) যে গনিমত যুদ্ধের পর কাফেরদের কাছ থেকে পাওয়া যায়। (2) খনিজদ্রব্য। (3) গুপ্তধন। (4) ডুব দিয়ে সমুদ্রতল থেকে হাসিল করা মণি মুক্তা। (5) হালাল মাল যেটা হারামের সাথে মিশে যায়। (6) যে জমিন কাফের জিম্মি মুসলমানের কাছ থেকে খরিদ করেছে। (7) কাজ কারবার , ব্যবসায় বাণিজ্যে , চাষাবাদ বরং যে কোন উপায়ে অর্জিত মুনাফা বা লভ্যাংশের। যদিও মুনাফা থেকে কামাই না হয়। (সুত্র: মুখতাছারুল আহ্কাম , পৃষ্ঠা: 96 , লেখক: ফকীহে আহলে বাইত হযরত আয়াতুল্লাহ আল-ওযমা আকায়ে আলহাজ্জ সাইয়্যেদ মুহাম্মদ রেজা আল মুসাভী গুলপাইগানী মাদ্দা যিল্লাহুল আ’
লী)।
কোন লোক যখন বৎসরের মাঝামাঝি স্বীয় কারবারের লভ্যাংশ থেকে নিজের ও পরিবার-পরিজনের জন্য খোরাক , পোশাক , ঘরের আসবাবপত্র , থাকার জন্য বাড়ী , বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ , মেহমানদের অতিথেয়তা , দান-খয়রাত এবং অন্যান্য এ জাতীয় খরচাদি কিংবা তার উপর যেসব হক অধিকার বর্তিয়েছে যেমন-মান্নত , কাফফারা ইত্যাদি আদায়ে অথবা বিয়ে-শাদী , মেয়ের জন্য দেয় উপঢৌকন এবং চিকিৎসা ইত্যাদির খরচ ও ব্যয়ভার তার সম্মান ও মর্যাদা অনুযায়ী হয়েছে তখন সেটাকে তার বৎসরের খরচের অন্তর্ভুক্ত ধরা হবে। আর এগুলোর উপর খুমস নেই। (সুত্র: মুখতাছারুল আহ্কাম , পৃষ্ঠা: 98 , মাসআলা: 375) ।
যে সব খরচ কাজ কারবারের এবং মুনাফা হাসিলের পিছনে আবশ্যক। যেমন- দোকানের ভাড়া , শিক্ষানবিশের মজুরী , কর্মচারীদের বেতন ইত্যাদিও বৎসরের খরচাদির মধ্যে পরিগণিত। এগুলোর উপরও খুমস নেই। (সুত্র: মুখতাছারুল আহ্কাম , পৃষ্ঠা: 99 , মাসআলা: 376)।
যে টাকা ঋণ নেয়া হয় তাতে খুমস নেই। দান ও উপহারে কোন খুমস নেই। যদিও এহতিয়াত হলো বাৎসরিক খরচের অতিরিক্ত হলে সেটার খুমস প্রদান করা। (সুত্র: আজ্বেবাতুল ইস্তিফতাআত , পৃষ্ঠা: 251 , ওলীয়ে আমরে মুসলিমীনে জাহান হযরত আয়াতুল্লাহ্ আল-উয্মা সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী (মুদ্দা যিল্লুহুল অলী)-এর ফতোয়া সংকলন)।
নিকট আত্মীয় এবং পরিবার-পরিজনের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)‘
খুমস’
কেবলমাত্র বনী হাশেম এবং বনী মোত্তালিবকে দান করিতেন। বনী নওফেল এবং বনী আবদুশ শামস তাঁহার গোত্র হওয়া সত্ত্বেও এবং তাঁহারা বার বার দাবী উত্থাপন করার পরও তিনি তাঁহাদিগকে খুমস এর অংশ দিতেন না। (সূত্র: আল ফারুক , মূল: আল্লামা শিবলী নোমানী , পৃষ্ঠা: 354)।
(1) খুমস কাকে বলেঃ মালের পঞ্চম ভাগকে খুমস বলে। (2) খুমস কার উপর ওয়াজিব ? প্রতি মুসলমানের উপর। (3) খুমস কখন ওয়াজিব ? সারা বৎসর আয়-ব্যয়ের পর অবশিষ্ট মালে। (4) খুমস কাকে দিতে হয় ? খুমস দুই ভাগ করা হয় , এক ভাগ গরীব সৈয়দকে ও অপর ভাগ ইমাম (আঃ) কে দিতে হয়। (5) ইমামের অংশ কাকে দেওয়া হয় ? ইমামের নায়েব মুযতাহিদকে। (6) ইমামের নায়েব কি করবেন ? ধর্ম ও মাযহাবের সকল কার্য্য সম্পন্ন করবেন। ধর্মীয় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা , প্রচার ও মাযহাবকে রক্ষা করবেন। (7) যদি কোন ব্যক্তি খুমস না দেয় , তাহলে কি হবে ? তাকে ইমামের হক (প্রাপ্য) লুন্ঠনকারী বলা হয় ও সে ইমামের প্রকৃত বন্ধু হতে পারে না। (8) যার খুমস জানা নেই সে কি করবে ? যখন জানতে পারবে তখন মুযতাহিদকে জিজ্ঞাসাকরে খুমস দিতে হবে যাতে খোদা ক্ষমা করে। (সুত্র: এমামীয়া দীনিয়াত , 1ম খণ্ড (এমামিয়া মাকাতিবের ধারাবাহিক পাঠ্যক্রম) , পাবলিশার: তানজীমুল মাকাতিব , বিজনওর জেলা , লাখনৌও-3 , ডাক ঠিকানা: 39 , জওহরি মহল্লা , লাখনৌও , ইউ , পি)।