হানি বিন উরওয়াহ মুরাদির শাহাদাত
মাসউদী বলেন যে , বুকাইর বিন হুমরান আহমারি মুসলিমের মাথা কেটে নিচে ছুঁড়ে দিলো এবং এরপর তার দেহটিও ছুঁড়ে ফেললো। এরপর উবায়দুল্লাহ আদেশ দিলো যে হানিকে বাজারে নিয়ে যাওয়া হোক এবং তার মাথা কেটে ফেলা হোক তার হাত বাঁধা অবস্থায়। হানি তার মুরাদ গোত্রের লোকদের ডাক দিলেন , যাদের প্রধান ও মুখপাত্র তিনি নিজেই ছিলেন , তাকে সাহায্য করার জন্য। হানি যখন ঘোড়ায় চড়তেন (যুদ্ধের জন্য) বনি মুরাদের চার হাজার বর্ম পরিহিত লোক ও আট হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে তার সাথে থাকতো এবং যদি কিনদা গোত্রের লোকেরা থাকতো যাদের সাথে তার চুক্তি ছিলো , তাহলে ত্রিশ হাজার বর্ম পরিহিত মানুষ তার সাথে থাকতো। তা সত্ত্বেও প্রয়োজনের সময় কেউ তাকে সাড়া দিলো না ঢিলেমি এবং ধোঁকার কারণে।
শেইখ মুফীদ বলেন যে , মুহাম্মাদ বিন আল আশআস উবায়দুল্লাহর কাছে এলো এবং হানির বিষয়ে সুপারিশ করলো এ বলে যে ,“
আপনি জানেন হানি এ শহরে এবং গোত্রের মধ্যে তার পরিবারও কী মর্যাদা রাখে। তার লোকজন জানে যে আমি এবং আমার সাথীরা তাকে আপনার কাছে নিয়ে এসেছি , তাই আমি আপনাকে আল্লাহর সকম ¡ দিয়ে অনুরোধ করছি তাকে আমার কাছে তুলে দিন , কারণ আমি এ শহরের লোকদের সাথে কোন শত্রুতা চাই না। ” উবায়দুল্লাহ তা করার অঙ্গীকার করলো কিন্তু পরে অনুতাপ করলো এবং তৎক্ষণাৎ আদেশ দিলো যে হানিকে বাজারে নিয়ে যাওয়া হোক এবং তার মাথা কেটে ফেলা হোক। তারা তার হাত দুটো একত্রে বাঁধা অবস্থায় তাকে বাজারে নিয়ে গেলো সে যায়গায় যেখানে ভেড়া জবাই করা হয় , তখন তিনি উচ্চ কণ্ঠে বলছিলেন ,“
হে মাযহাজ , আজকে আমার জন্য মাযহাজের কেউ নেই ? হে মাযহাজ , মাযহাজ কোথায় ?”
যখন হানি অনুভব করলেন কেউ তার সাহায্যে এগিয়ে আসছে না তিনি তার হাত দড়ি থেকে টান দিলেন এবং চিৎকার শুরু করলেন ,“
কোন একটি লাঠি , একটি চাকু , একটি পাথর এমনকি একটি হাড়ও কি নেই যা দিয়ে একটি মানুষ নিজেকে রক্ষা করতে পারে ?”
প্রহরীরা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং তার হাত শক্ত করে বাঁধলো এবং তাকে তার মাথা এগিয়ে দিতে বললো (যেন তারা তার মাথা কেটে ফেলতে পারে) । এতে তিনি উত্তর দিলেন ,“
আমি এ বিষয়ে উদার নই এবং আমাকে হত্যা করতে তোমাদের সাহায্য করবো না। ” তখন রাশীদ নামের উবায়দুল্লাহর এক তুর্কী চাকর হানির ওপরে তার তরবারি দিয়ে আঘাত করলো যা তাকে হত্যা করতে ব্যর্থ হলো। হানি বললেন ,“
নিশ্চয়ই প্রত্যাবর্তন আল্লাহর দিকে। হে আল্লাহ (আমি আসছি) তোমার রহমত ও তোমার বেহেশতের দিকে। ” এরপর সে দ্বিতীয় আঘাত করলো যা হানিকে শহীদ করে দিলো (আল্লাহর রহমত ও শান্তি তার উপর বর্ষিত হোক) ।
ইবনে আসীরের‘
কামিল ’ -এ লেখা আছে যে আব্দুর রহমান বিন হাসীন মুরাদি তুর্কী সেই চাকরের সাক্ষাৎ পেয়েছিলো (যে হানিকে হত্যা করেছিলো) , সে উবায়দুল্লাহর সাথে ভ্রমণে ছিলো এবং সে তাকে হত্যা করেছিলো।
আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর আসাদি হানি ইবনে উরওয়াহ ও মুসলিম বিন আক্বীলের হত্যা সম্পর্কে বলেন (কবি ফারাযদাক্বের উদ্ধৃতি দিয়ে) ,“
যদি তুমি না জান মৃত্যু কী , তাহলে হানির দিকে তাকাও বাজারে এবং আক্বীলের সন্তানের দিকে , যার চেহারা তরবারির আঘাতে ক্ষতে ঢাকা ছিলো এবং অন্যজন , যে ছাদ থেকে মৃত্যুর দিকে পড়েছে , ইবনে যিয়াদের ক্রোধ তাদের দুজনকেই আঘাত করেছে এবং তারা পথের ওপরে প্রত্যেক ভ্রমণকারীর কাছে বীরে পরিণত হয়েছে। তুমি দেখেছো একটি মাথাবিহীন মৃতদেহ , মৃত্যু যার রং পরিবর্তন করে দিয়েছে এবং তার রক্ত প্রবাহিত হয়েছে প্রচুর , নদীর মতো , একজন যুবক যে ছিলো এক যুবতীর চাইতেও লাজুক , ছিলো ধারালো তরবারির চাইতেও ভেদকারী , আসমা কি নিরাপদ কোন বাহনে চলেছে যা হাঁটার গতিতে চলছে এবং মাযহাজ (গোত্র) তাকে প্রতিশোধ নিতে বলছে এবং মুরাদ , তার চারদিকে ঘোরাফেরা করছে ? এবং তাদের সবাই‘
প্রশ্নকারী ও যাকে প্রশ্ন করা হয় ’ তাদের ভয়ে আছে। তাই যদি তুমি তোমার দুই অভিভাবকের (মৃত্যুর) প্রতিশোধ না নাও তাহলে তুমি অবৈধ (সন্তান) ও নীচ। ”
উবায়দুল্লাহ মুসলিম ও হানি দুজনের মাথাকেই ইয়াযীদের কাছে পাঠালো , যে তাকে একটি ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি দিলো , যা ছিলো এরকম ,“
আমি সংবাদ পেয়েছি হোসেইন ইরাকের দিকে আসছে। রাস্তাগুলোর উপর প্রহরী নিয়োগ করো , রসদ জোগাড় করো এবং সতর্ক থাক। সন্দেহজনকদের কারাগারে অথবা হাজতে বন্দী করো এবং তাদের হত্যা করো যারা তোমার সাথে যুদ্ধ করে। ”
‘
ইরশাদ ’ -এ বলা হয়েছে যে ইয়াযীদ বলেছে ,“
সন্দেহের উপর ভিত্তি করে লোকজনকে গ্রেফতার করো এবং অভিযুক্তদের হত্যা করো এরপর আমাকে ঘটনা সম্পর্কে অবহিত রাখো। ”
মাসউদী বলেন , মুসলিম বিন আক্বীল (আ.) মঙ্গলবার দিন ৬০ হিজরির ৮ই জিলহজ্বে কুফাতে বিদ্রোহ করেন। ঐ দিনই ইমাম হোসেইন (আ.) মক্কা ছেড়ে কুফার উদ্দেশ্যে রওনা দেন এবং মুসলিম ৯ই জিলহজ্ব বুধবার , আরাফাতের দিন শাহাদাতবরণ করেন। এরপর উবায়দুল্লাহ আদেশ দিলো মুসলিমের দেহ ঝুলিয়ে রাখতে এবং তার মাথা দামেশকে পাঠিয়ে দিলো। এটিই হচ্ছে বনি হাশিমের প্রথম দেহ যা (শহরের) দরজায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিলো এবং প্রথম মাথা যা দামেশকে পাঠানো হয়েছিলো।
‘
মানাক্বিব ’ -এ লেখা আছে দুটো মাথাই হানি বিন হাবূহ ওয়াদিঈকে দিয়ে দামেশকে পাঠানো হয়েছিলো এবং দামেশকের (শহরের) দরজায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিলো।
শেইখ ফখরুদ্দীনের‘
মাক্বতাল ’ -এ উল্লেখ আছে যে , মুসলিম ও হানির দেহ বাজারে মাটিতে হিঁচড়ে নেয়া হয়েছিলো। যখন মাযহাজ গোত্রের লোকেরা তা জানতে পারলো তারা তাদের ঘোড়ায় চড়লো এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করলো তাদের পরাজিত করা পর্যন্ত এবং মুসলিম ও হানির লাশ তাদের কাছ থেকে নিয়ে নিলো। এরপর তারা লাশের গোসল দিল এবং কাফন পরিয়ে দাফন দিলো। আল্লাহর রহমত তাদের উপর বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর কঠিন অভিশাপ বর্ষিত হোক তাদের হত্যাকারীদের উপর।
সংযোজনী
‘
হাবিবুস সিয়ার ’ -এ উল্লেখ আছে , হানি বিন উরওয়াহ ছিলেন কুফার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং একজন অসাধারণ শিয়া এবং বলা হয় যে তিনি নবী (সা.) এর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং তার সাথী হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন। যখন তাকে শহীদ করা হয় তখন তিনি ছিলেন উননব্বই বছরের বৃদ্ধ। তার ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদা প্রমাণিত হয় উবায়দুল্লাহর সামনে তার বক্তব্যের মাধ্যমে , যা ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে।
মাসউদী বলেন যে , তিনি ছিলেন এজন শিয়া এবং মুরাদ গোত্রের প্রধান। বর্ম সজ্জিত অশ্বারোহী চার হাজার ও পদাতিক আট হাজার ব্যক্তি তার সাথী হতো। যখন ইমাম হোসেইন (আ.) কে মুসলিম ও হানির শাহাদাত সম্পর্কে জানানো হলো তিনি বললেন ,“
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন ” এবং আরও বললেন ,“
তাদের দুজনের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। ”
এছাড়া তিনি লোকজনের উপস্থিতিতে একটি চিঠি পড়লেন ,“
আল্লাহর নামে , যিনি সর্বদয়ালু , সর্ব করুণাময় , আমাদের কাছে এ হৃদয়বিদারক সংবাদ এসে পৌঁছেছে যে , মুসলিম , হানি এবং আব্দুল্লাহ বিন ইয়াক্বতুরকে শহীদ করা হয়েছে। ”
হানি বিন উরওয়াহর কবর যিয়ারত
মুহাম্মাদ বিন মাশহাদির‘
মাযার ’ -এ , সাইয়েদ ইবনে তাউসের‘
মিসবাহুয যায়ের ’ -এ , শেইখ মুফীদের‘
মাযার ’ -এ এবং শেইখ শহীদের‘
মাযার ’ -এ (আল্লাহ তাদের আত্মাকে আরও পবিত্র করুন) কুফার মসজিদে দোআর বিষয়ে উল্লেখ আছে যে ,“
তার (হানি বিন উরওয়াহ) কবরের পাশে দাঁড়াও এবং মুহাম্মাদ (সা.) ও তার পরিবারের উপর সালাম পাঠাও ; এরপর বল ,‘
আল্লাহর শান্তিও রহমত আপনার উপর বর্ষিত হোক হে হানি বিন উরওয়াহ , সালাম বর্ষিত হোক হে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ধার্মিক ও মুখলেস দাস (শেষ পর্যন্ত) । ” এরপর দুরাকাত নামায পড়ো হাদিয়া হিসেবে এবং তাকে বিদায় জানাও।
এছাড়া হানি ছিলেন তাদের একজন যারা ইমাম আলী (আ.) এর সাথে থেকে জামালের যুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। ইবনে শাহর আশোবের‘
মানাক্বিব ’ -এ উল্লেখ আছে যে , তিনি সে যুদ্ধে এ যুদ্ধ কবিতাটি আবৃত্তি করেছিলেন ,“
এটি একটি যুদ্ধ যার পথ প্রদর্শক হচ্ছে একটি উট , তাদের সামনে তাদের নারী যে ভুল পথের সর্দার , অথচ আলী হলেন অভিভাবকদের অভিভাবক এবং মালিক। ”
সাইয়েদ মোহসীন কাযমি তার‘
তাকমেলাহ ’ তে লিখেছেন ,“
হানি প্রশংসাযোগ্য ব্যক্তিদের একজন ছিলেন এবং আমরা যা উল্লেখ করেছি তা (তার গুণ সম্পর্কে) প্রমাণ করে। ” এরপর তিনি বলেন ,“
আগে সাইয়েদ মাহদী বাহারুল উলুম হানির (আন্তরিকতা) সম্পর্কে সন্দেহে ছিলেন। এরপর তিনি তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করলেন এবং অনুতপ্ত হলেন এবং ক্ষমা চেয়ে হানির প্রশংসায় কবিতা লিখেছেন। ”
এ লেখক (আব্বাস কুম্মি) বলেন যে , উল্লেখিত সাইয়েদ মাহদী বাহারুল উলুম তার‘
রিজাল ’ -এ হানির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং বলেছেন যে , বিভিন্ন সূত্রের খবরগুলো একমত যে হানি বিন উরওয়াহ মুসলিম বিন আক্বীল (আ.) কে তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তিনি তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন এবং জনশক্তি ও অস্ত্রশক্তি সংগঠিত করেন। তিনি মুসলিমকে উবায়দুল্লাহর হাতে তুলে দিতে অস্বীকার করেন , এমনকি এর জন্য জীবন কোরবান করতেও প্রস্তুত ছিলেন , তখনও যখন তাকে হয়রানি করা হয়েছে , মারধর করা হয়েছে , নির্যাতন করা হয়েছে , বন্দী করা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তার দুহাত বাধা অবস্থায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। আর এটি হচ্ছে তার নৈতিক গুণাবলীর ও সফল পরিসমাপ্তির পরিষ্কার প্রমাণ। তিনি ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথী ও শিয়া (অনুসারী) হিসেবে বিবেচিত যারা তার জন্য জীবন কোরবান করেছেন। যে কথাগুলো তিনি উবায়দুল্লাহকে বলেছেন তা তার (আন্তরিকতার) প্রমাণ। তা ছিলো ,“
যে ব্যক্তি এসেছে তিনি আপনার চাইতে এবং আপনার অভিভাবকের (ইয়াযীদের) চাইতে খিলাফতের জন্য বেশী যোগ্য। ” এছাড়া শেইখ ফখরুদ্দীন তুরেইহির‘
মুনতাখাব ’ -এ উল্লেখ আছে যে , তিনি বলেছিলেন ,“
যদি মুহাম্মাদ (সা.) এর পরিবারের কোন শিশুও আমার পায়ের নিচে লুকিয়ে থাকে আমি তা তুলবো না যতক্ষণ না তা কেটে ফেলা হবে। ” এ ধরনের বক্তব্য যা তিনি দিয়েছেন তা সাক্ষী দেয় যে তিনি যা করেছেন তা তার দূরদৃষ্টি ও বুদ্ধির কারণে এবং ঘৃণা বা অহংকারের জন্য নয় এবং শুধু এ কারণেও নয় যে , তিনি মুসলিমকে আশ্রয় দিয়েছিলেন (আর তাই তাকে রক্ষা করতে বাধ্য ছিলেন) ।
ইমাম হোসেইন (আ.) এর নিচের কথাগুলো এর সাক্ষী হয়ে আছে। যখন ইমাম তার ও মুসলিমের শাহাদাতের সংবাদ পেলেন তিনি তাদের জন্য আল্লাহর রহমত প্রার্থনা করলেন এবং কয়েক বার পুনরাবৃত্তি করলেন এবং বললেন ,“
একটি হৃদয় বিদারক সংবাদ আমাদের কাছে পৌছেছে যে মুসলিম বিন আকীল , হানি বিন উরওয়াহ এবং আব্দুল্লাহ বিন ইয়াক্বতুরকে শহীদ করা হয়েছে।”
সাইয়েদ ইবনে তাউসের‘
মালহুফ ’ -এ উল্লেখ আছে যে যখন মুসলিম ও হানির সংবাদের পর আব্দুল্লাহ বিন ইয়াক্বতূরের শাহাদাতের খবর ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে পৌছলো , তার চোখ দুটো পানিতে পূর্ণ হয়ে গেলো এবং তিনি বললেন ,“
হে আল্লাহ , আমাদের জন্য ও আমাদের অনুসারীদের জন্য রহমতের মাক্বাম দান করো এবং আমাদেরকে তোমার নেয়ামতপূর্ণ বিশ্রামস্থলে একত্রিত করো , নিশ্চয়ই তুমি সব কিছুর উপর শক্তি রাখো। ”
আমাদের অভিভাবকরা (ওলামা) (আল্লাহর রহমত তাদের উপর বর্ষিত হোক) হানির প্রতি সালাম উল্লেখ করেছেন এবং এখনও তার কবর যিয়ারত করছেন। তারা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছেন যে তিনি ছিলেন প্রশান্তিলাভকারী শহীদ। (যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন) তারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছেন এবং এভাবে তার রহমত ও করুণায় প্রবেশ করেছেন , আর তার প্রতি সালাম হলো ,“
আল্লাহর অপার শান্তি... (শেষ পর্যন্ত) । ”
এরপর বলা হয়েছে যে , সালামের বিষয়বস্তু শুধু সাধারণ কোন সংবাদ নয় এবং যদি তা হয়েও থাকে তাহলে এর বিষয়বস্তু প্রমাণ করে যে তিনি ছিলেন প্রশান্তিলাভকারী শহীদ , একজন উচ্চ মর্যাদাবান ব্যক্তি এবং তার শেষ ছিলো সুন্দর। আমি আমাদের শেইখদের যেমন , মুফীদ এবং অন্যান্য আলেমদের দেখেছি তারা হানিকে সম্মানিত ব্যক্তিদের মাঝে অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং তার নামের শেষে বলেছেন ,“
আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন ,”
অথবা“
আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন”
এবং আমি কোন আলেমকে পাই নি তার সমালোচনা করতে বা তাকে তিরস্কার করতে।
আর যে ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে যে , উবায়দুল্লাহ যখন কুফায় এলো হানি তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়েছিলেন এবং অন্যান্য গণ্যমান্য লোকদের সাথে তার সাথে দেখা সাক্ষাৎ বজায় রাখলেন যতক্ষণ না মুসলিম বিন আকীল ¡ তার বাড়িতে এলেন। ঘটনাটি কোন ক্রমেই হানির বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে না। কারণ তা ছিলো তাক্বিয়ার (সতর্কতার) কারণে। হানি ছিলেন একজন সুপরিচিত ব্যক্তি এবং উবায়দুল্লাহ তাকে তাই বিবেচনা করতো এবং তার সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতো। যদি এ পরিস্থিতিতে তিনি নিজেকে একাকী ও উবায়দুল্লাহর কাছ থেকে সরিয়ে রাখতেন তাহলে তার সতর্কতা অবলম্বন ব্যর্থ হয়ে যেতো - যা একজন মুসলমানের দায়িত্বের ভিত্তি। তাই তার জন্য প্রয়োজন ছিলো উবায়দুল্লাহর সাথে যোগাযোগ রাখা এবং তার সাথে প্রায়ই সাক্ষাৎ করা যেন তিনি তার সন্দেহের মধ্যে না পড়েন। কিন্তু যখন মুসলিম তার বাড়িতে এলেন , তিনি উবায়দুল্লাহর কাছে যাওয়া কমিয়ে দিলেন এবং অসুস্থ হওয়ার ভান করলেন , কিন্তু যা তিনি চিন্তা করেন নি তাই ঘটলো।
আর তাড়াহুড়া করে মুসলিমের বিদ্রোহ করাতে তার বাধা দেয়ার কারণ হতে পারে তার দূরদৃষ্টির জন্য এবং তিনি চেয়েছিলেন আরও বেশী বেশী লোক জমা হোক এবং যেন বিরাট সংখ্যায় অস্ত্র সংগৃহীত হতে পারে এবং যেন ইমাম হোসেইন (আ.) নিজে কুফাতে আসেন। এভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসে যাবে , আর যদি কখনো যুদ্ধ শুরু হয় তা যেন ইমামের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে হয় এবং তার নিজের বাড়িতে উবায়দুল্লাহকে হত্যা করাতে বাধা দেয়ার বিষয়ে ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে যে এ বিষয়ে বর্ণনায় পার্থক্য রয়েছে। কেউ বলেন যে , হানি নিজে পরিকল্পনা করেন যে তিনি অসুস্থতার ভান করবেন যেন উবায়দুল্লাহ যখন তার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসবে তখন যেন মুসলিম তাকে হত্যা করতে পারে এবং উল্লেখ আছে যে , মুসলিম বলেছিলেন যে একজন মহিলা কেঁদেছিলো এবং বাড়ির ভিতরে উবায়দুল্লাহকে হত্যা না করার জন্য অনুরোধ করেছিলো। সাইয়েদ মুরাতাযা একা তার‘
তানযিয়াহুল আম্বিয়াহ ’ গ্রন্থে এ কারণ উল্লেখ করেছেন। মুসলিমকে আশ্রয় দানের বিষয়ে হানির কাছে উবায়দুল্লাহর প্রশ্ন এবং এর উত্তরে হানির জবাবে ছিলো ,“
আল্লাহর শপথ , আমি মুসলিমকে আমার বাসায় আমন্ত্রণ জানাই নি এবং না আমি তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলাম। সে আমার বাড়িতে এসেছে এবং আমার অনুমতি চেয়েছে সেখানে থাকার জন্য এবং আমি প্রত্যাখ্যান করতে পারি নি , এভাবে এর দায় দায়িত্ব আমার উপর পড়ে।”
এ কথাগুলো হানি বলেছিলেন উবায়দুল্লাহর হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য এবং সতর্কতা অবলম্বনের কারণে এবং এটি সম্ভব নয় যে মুসলিম হানির কাছে আশ্রয় নিবেন তাকে না জানিয়েই এবং তার কাছ থেকে শপথ না নিয়েই , যার কারণে হানি তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বেখবর থাকবেন। আবার এটিও সম্ভব নয় যে হানি একজন গণ্যমান্য শিয়া হয়ে মুসলিমের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বেখবর থাকবেন। এভাবে তা প্রমাণ করে , যা‘
রওযাতুস সাফা ’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে , তা নির্ভরযোগ্য নয় , যে হানি মুসলিমকে বলেছিলেন ,“
তুমি আমাকে এক বিরাট সমস্যা ও কষ্টে ফেলেছো এবং যদি তুমি আমার দরজা দিয়ে প্রবেশ না করতে আমি তোমাকে দূর করে দিতাম। ” -এ কথা বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং এ বক্তব্য আর কোথাও উল্লেখিত হয় নি।
ইবনে আবিল হাদীদ তার‘
শারহে নাহজুল বালাগাহ ’ তে হানি সম্পর্কে দুটো বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। একটি তার প্রশংসা করে , অপরটি তাকে তিরস্কার করে। যেটি প্রশংসা করে তা হলো ইমাম আলী (আ.) সম্পর্কে তার এ বক্তব্যের জন্য যে ,“
তাকে স্বীকৃতি দেয়াতে আমিই প্রথম ছিলাম এবং তাকে অস্বীকার করার বিষয়ে আমি প্রথম হবো না। ” সাইয়েদ (র.) হানিকে প্রশংসা করে বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন এবং যেটি তিরস্কার করে তাতে (নাহজুল বালাগাহ , ক্ষমতায়ন অধ্যায়ে) উল্লেখ করেছেন যে ইমাম আলী (আ.) বলেছেন ,“
রাজত্বের চাবি হচ্ছে প্রশস্ত বক্ষ।”
একে প্রত্যাখ্যান করে তিনি (সাইয়েদ) বলেন যে এটি গল্প ছাড়া কিছু নয় এবং রেওয়ায়েত হওয়ার ভিত্তি রাখে না। কারণ এতে বর্ণনাকারীদের উল্লেখ নেই। এছাড়া এটি অন্য কোন বই থেকে বা ইতিহাসে ও জীবনীমূলক বই থেকেও উল্লেখিত হয় নি। ঐতিহাসিকরা সেই ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন যে মুয়াবিয়া জনগণকে তার ছেলে ইয়াযীদের কাছে বাইয়াত হওয়ার জন্য আদেশ করেছিলো এবং যারা সম্মত হয়েছিলো এবং যারা অস্বীকার করেছিলো তাদের বিষয়ে এবং অন্যান্য বিষয়েও উল্লেখ করেছেন , কিন্তু ওপরের ঘটনাটি সেখানে অনুপস্থিত। তাই যদি এ ঘটনা সত্য হতো তাহলে তার উল্লেখ থাকতো , কারণ তা উল্লেখযোগ্য একটি বিষয়। এছাড়া হানি ইয়াযীদের প্রতি আনুগত্যের শপথ ভঙ্গ করেছিলেন এবং ইমাম হোসেইন (আ.) কে সাহায্য করতে গিয়ে বিদ্রোহ করেছিলেন এবং তার জন্য নিহত হয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে তারা তার ওপরে উল্লেখিত দোষ উল্লেখ করতেন যদি তা সত্য হতো। হানির বিষয়টি ছিলো আল হুর (আ.) এর মত যিনি তওবা করেছিলেন তিনি যা করেছিলো তার জন্য এবং তার তওবা কবুল হয়েছিলো। তার বিষয়টি ছিলো হানির চেয়েও গুরুতর। তাই হানি ক্ষমা লাভে আরও যোগ্যতা রাখেন (যদি সে কখনো ভুল করে থাকে) ।
আবুল আব্বাস মুবাররাদ বলেন যে , মুয়াবিয়া খোরাসানের শাসনভার কাসীর বিন শিহাব মাযহাজিকে অর্পণ করে। কাসীর সেখানে অনেক সম্পদ আত্মসাৎ করে এবং হানি বিন উরওয়ার বাড়িতে পালিয়ে আশ্রয় নেয়। যখন এ সংবাদ মুয়াবিয়ার কাছে পৌঁছালো সে এক আদেশ দিলো হানির রক্ত ঝরাতে হবে , কোন ক্ষমা ছাড়া। তাই হানি কুফা ত্যাগ করলেন এবং মুয়াবিয়ার কাছে আশ্রয় নিতে গেলেন। মুয়াবিয়া তাকে চিনতে পারলো না। যখন সব লোক চলে গেলো তখন হানি তার জায়গায় বসে রইলেন। যখন মুয়াবিয়া তাকে জিজ্ঞেস করলো তখন তিনি বললেন তিনি হানি বিন উরওয়াহ। মুয়াবিয়া বললো ,“
তোমার এই দিনটি অন্য দিনগুলোর মত নয়। যখন তোমার বাবা গর্ব করে বলেছিলো: আমি আমার সিঁথি চিরুনী দিয়ে আঁচড়াই এবং আমার জোব্বা পরিধান করি। আমি চড়ি একটি মাদী ঘোড়ায় যার লেজ ও কেশর কালো এবং আমি যখন হাঁটি আর আমার পাশে থাকে বনি আতীফের সর্দাররা এবং যদি নিপীড়ন আমার পথের দিকে আসে আমি মাথা বিচ্ছিন্ন করি। ” হানি বললেন ,“
নিশ্চয়ই আমি আজকে বেশী সম্মানিত গতকালের চেয়ে।”
মুয়াবিয়া এর কারণ জিজ্ঞেস করলো , হানি বললেন যে , ইসলামের কারণে। মুয়াবিয়া বললো ,“
কাসীর বিন শিহাব কোথায় ?”
হানি বললেন ,“
সে আমার সাথে আছে এবং আপনার দলের অন্তর্ভুক্ত। ” মুয়াবিয়া বললো ,“
তুমি কি দেখেছো সে কত সম্পদ আত্মসাৎ করেছে ? তাহলে তার কাছ থেকে এর একটি অংশ তুমি নিয়ে নাও এবং এর এক অংশ তাকে দাও। ”
এছাড়া , বর্ণনায় আছে যে ইয়াযীদের সৈন্যরা ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাহায্যকারীদের একজনকে কারবালায় গ্রেফতার করে এবং তাকে ইয়াযীদের কাছে নিয়ে যায়। ইয়াযীদ তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো ,“
তুমি কি সেই ব্যক্তির সন্তান যে বলেছিলো: আমি আমার সিঁথি চিরুনী দিয়ে আঁচড়াই ?”
ব্যক্তিটি হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিলো , তখন ইয়াযীদ তাকে হত্যা করলো (আল্লাহর রহমত ও বরকত তার উপর বর্ষিত হোক) ।