আমর বিন হুমাক্বের শাহাদাত
আমর বিন হুমাক্ব (যেমনটি আগে বলা হয়েছে যে তিনি হুজর বিন আদির সাথে মসজিদে উপস্থিত ছিলেন) রুফা’
আহ বিন শাদ্দাদের সাথে কুফা থেকে পালিয়ে যান এবং মাদায়েনে পৌঁছান এবং সেখান থেকে মসূল যান। সেখানে তারা এক বড় পর্বতে আশ্রয় নেন। যখন এ সংবাদ মসূলের গভর্নর উবায়দুল্লাহ বিন বালতা ’ আহ হামাদানির কাছে পৌঁছল সে কিছু অশ্বারোহী সৈনিক ও শহরের একদল মানুষ নিয়ে তাদের দিকে অগ্রসর হলো। আমরের শরীরে পানি এসেছিল (একটি রোগ) , তাই তার সাহস হলো না তাদের মুকাবিলা করার। কিন্তু রুফা ’ আহ , যে ছিলো শক্তিশালী যুবক , তার ঘোড়ায় চড়লো এবং আমরকে বললো তাকে সে রক্ষা করবে। আমর বললেন ,“
কী লাভ ? নিজেকে রক্ষা করো এবং এদের মাঝ থেকে পালাও। ” ঘোড়সওয়াররা তাকে ধাওয়া করলো কিন্তু সে তাদেরকে তীর দিয়ে আঘাত করলো , তাই তারা ফিরে গেলো।
তারা আমরকে গ্রেফতার করলো এবং তাকে জিজ্ঞেস করলো সে কে। তিনি উত্তর দিলেন ,“
এমন একজন যাকে মুক্ত করে দিলে তোমাদের জন্য ভালো হবে এবং যদি আমাকে হত্যা কর তাহলে তোমরা খুব বড় ক্ষতিতে পড়বে। ” কিন্তু তিনি তার পরিচয় প্রকাশ করলেন না। তারা তাকে মসূলের শাসনকর্তা আব্দুর রহমান বিন উসমান সাক্বাফির কাছে নিয়ে গেলো , যে ছিলো মুয়াবিয়ার ভাগ্নে এবং পরিচিত ছিলো ইবনে উম্মুল হাকাম নামে। সে তার সম্পর্কে মুয়াবিয়ার কাছে লিখলো। মুয়াবিয়া উত্তর দিলো ,“
সে সেই লোক যে স্বীকার করেছে যে সে উসমানকে একটি বর্শা দিয়ে নয় বার আহত করেছে। তাই এখনও তাকে শাস্তি দাও নি ? তাকে একটি বর্শা দিয়ে নয় বার আহত করা উচিত। ” তারা তাকে বের করে আনলো এবং বর্শার নয়টি আঘাত করলো এবং আমর সম্ভবত প্রথম বা দ্বিতীয় আঘাতেই মৃত্যুবরণ করলেন , পরে তার মাথা কেটে ফেলা হয় এবং মাথাটি মুয়াবিয়ার কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ইসলামে তার মাথাই প্রথম যা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পাঠানো হয়।
লেখক বলেন যে , ইসলামের ইতিহাসের বইগুলোতে বিষয়টি ঐতিহাসিকরা (যারা শিয়া নয়) এভাবে বর্ণনা করেছেন শুধু মুয়াবিয়া যে তাকে খুন করেছিলো তা জায়েয করার জন্য। আর বিশিষ্ট শিয়া বর্ণনাকারী শেইখ কাশশি বর্ণনা করেছেন যে , একবার নবী (সা.) এক দল লোককে পাঠালেন এ আদেশ দিয়ে যে ,“
রাত্রির এ রকম সময়ে তোমরা পথ হারিয়ে ফেলবে। তখন বাম দিকে যাবে এবং তোমরা এক ব্যক্তির সাক্ষাৎ পাবে যার এক পাল ভেড়া থাকবে। তোমরা তাকে পথের দিশা জিজ্ঞেস করবে কিন্তু সে তোমাদের পথ দেখাবে না যতক্ষণ না তোমরা তার সাথে খাবার খাও। এরপর সে একটি ভেড়া জবাই করবে এবং তোমাদের জন্য কাবাব তৈরী করবে এবং তোমাদের সাথে খাবে। এরপর সে তোমাদের পথ দেখাবে। তোমরা আমার সালাম তার কাছে পৌঁছে দিও এবং তাকে জানিও মদীনায় আমার উপস্থিতি সম্পর্কে। ”
তারা যাত্রা করলেন এবং ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী তাদের পথ হারিয়ে ফেললেন। তাদের একজন বললেন ,“
নবী কি আমাদের বলেন নি বাম দিকে যেতে ?”
তারা বাম দিকে গেলেন এবং এক লোকের সাক্ষাৎ পেলেন যার সম্পর্কে নবী (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এবং তাকে পথের কথা জিজ্ঞেস করলেন। লোকটি আমর বিন হুমাক্ব ছাড়া আর কেউ ছিলো না। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন ,“
নবী কি মদীনায় উপস্থিত হয়েছেন ?”
তারা হ্যা-সূচক উত্তর দিলেন এবং তিনি তাদের সাথে রইলেন এবং নবীর (সা.) কাছে গেলেন এবং সেখানেই রইলেন আল্লাহ যতক্ষণ চাইলেন। এরপর নবী (সা.) তাকে বললেন ,“
সে জায়গায় ফেরত যাও যেখান থেকে তুমি এসেছো , যখন বিশ্বাসীদের আমির আলী কুফার দায়িত্ব পাবে , তার কাছে যেও। ”
আমর ফেরত চলে গেলেন। যখন ইমাম আলী (আ.) কুফার খলিফা হলেন তখন তিনি তার কাছে এলেন এবং সেখানেই বাস করতে লাগলেন। ইমাম আলী (আ.) তাকে জিজ্ঞেস করলেন ,“
এখানে কি তোমার কোন বাড়ি আছে ?”
এতে তিনি হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিলেন।
ইমাম বললেন ,“
তাহলে তোমার বাড়ি বিক্রি করে দাও এবং আযদি (গোত্র)-এর মাঝে একটি বাড়ি কিনো। কারণ আগামীকাল যখন আমি তোমাদের মাঝ থেকে চলে যাবো তখন কিছু লোক তোমার পিছু ধাওয়া করবে , আযদি গোত্রের লোকেরা তোমাকে রক্ষা করবে যতক্ষণ না তুমি কুফা ত্যাগ কর এবং মসূলের দুর্গে হাজির হও। তুমি একটি পক্ষাঘাতগ্রস্থ লোকের পাশ দিয়ে যাবে , তুমি তার পাশে বসবে এবং পানি চাইবে। সে তোমাকে পানি দিবে এবং তোমার বিষয়ে খোঁজ- খবর দিবে। তখন তুমি তোমার অবস্থা তার কাছে বর্ণনা করো এবং তাকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিও। সে ইসলাম গ্রহণ করবে এবং এরপর তুমি তোমার হাত দুটো তার উরুদুটোর উপর রাখবে এবং আল্লাহ তাকে তার রোগ থেকে মুক্তি দিবেন। এরপর ওঠো এবং হাঁটো যতক্ষণ না একজন অন্ধ লোকের পাশ দিয়ে যাবে , যে পথের উপর বসে থাকবে। তুমি পানি চাও সে তোমাকে তা দিবে এবং এরপর সে তোমার সম্পর্কে জানতে চাইবে , তখন তুমি তোমার অবস্থার কথা তাকে বর্ণনা করো এবং তাকে ইসলামের দাওয়াত দিও। সে ইসলাম গ্রহণ করবে এবং এরপর তোমার দুহাত তার দুচোখের উপর রেখো। আল্লাহ , যিনি সম্মানিত ও প্রশংসিত তাকে দৃষ্টি দান করবেন। সেও তোমার সাথে সাথে আসবে এবং নিশ্চয়ই এ দুব্যক্তি হবে তারা যারা তোমাকে কবর দিবে। এরপর কিছু অশ্বারোহী ব্যক্তি তোমার পিছু ধাওয়া করবে এবং যখন তুমি অমুক সময়ে অমুক জায়গায় দুর্গের কাছে পৌঁছবে তারা তোমার কাছে আসবে। তখন তুমি ঘোড়া থেকে নেমে গুহায় প্রবেশ করো। নিশ্চয়ই মানুষ ও জীনদের মাঝে সবচেয়ে নিকৃষ্টরা তোমাকে হত্যার জন্য একত্র হবে। ”
ইমাম আলী (আ.) যা কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তা ঘটলো এবং আমর তাই করলেন যা তাকে করতে বলা হয়েছিলো। যখন তারা দুর্গে পৌঁছল আমর ঐ দুই লোককে বললেন ওপরে যেতে এবং তাকে বলতে বললেন তারা কী দেখছে। তারা ওপরে উঠলো এবং বললো যে তারা কিছু অশ্বারোহীকে দেখছে তাদের দিকে আসতে। তা শুনে আমর তার ঘোড়া থেকে নেমে গুহায় প্রবেশ করলেন এবং তার ঘোড়া পালিয়ে গেলো। যখন তিনি গুহায় প্রবেশ করলেন তখন একটি কালো সাপ , যেটি সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলো , তাকে কামড় দিলো। যখন অশ্বারোহীরা কাছে পৌঁছল তারা দেখলো তার ঘোড়া দৌড়াচ্ছে এবং বুঝতে পারলো যে আমর কাছে ভিতরেই আছে। তারা তার খোঁজ করতে লাগলো এবং তাকে গুহার ভিতরে দেখতে পেলো। তারা তার শরীরের যেখানেই স্পর্শ করলো তার মাংস খুলে এলো (প্রচণ্ড বিষের কারণে) । তখন তারা তার মাথা কেটে ফেললো এবং তার মাথাকে মুয়াবিয়ার কাছে নিয়ে গেলো , যে আদেশ দিলো তার মাথাকে বর্শার আগায় রাখতে ; ইসলামে এটিই হলো প্রথম মাথা যা বর্শার আগায় রাখা হয়েছিলো।
পরে বর্ণনা করা হবে যে জাহির , যিনি ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথে কারবালায় শহীদ হন , আমর বিন হুমাকের শিষ্য ছিলেন এবং তিনিই তাকে কবর দেন।‘
ক্বামক্বাম ’ -এ বর্ণিত হয়েছে যে , আমর বিন হুমাক্ব ছিলেন কাহিন বিন হাবীব বিন আমর বিন ক্বাহিন বিন যাররাহ বিন আমর রাবি ‘ আ খুযাইর সন্তান। তিনি নবী (সা.) এর কাছে আসেন হুদাইবিয়ার সন্ধির পর। অন্যরা বলেন যে , তিনি বিদায় হজ্বের বছরে ইসলাম গ্রহণ করেন। কিন্তু প্রথম বর্ণনাটি আরও নির্ভরযোগ্য বলে মনে হয়। (ক্বামক্বাম) বইয়ের লেখক আমর বিন হুমাক থেকে বর্ণনা করেন যে , তিনি নবী (সা.) এর পিপাসা মিটিয়েছিলেন , যিনি তার জন্য দোআ করেছিলেন ,“
হে রব , তাকে যৌবনপূর্ণ জীবন দাও। ” আর এভাবে তিনি আশি বছরে পৌঁছালেন কিন্তু তার চুল ও দাড়ি একটিও সাদা হলো না। তিনি ইমাম আলী (আ.) এর শিয়াদের একজন ছিলেন এবং তার সাথে থেকে জামাল , সিফফীন ও নাহরেওয়ানের যুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। এছাড়া তিনি ছিলেন তাদের একজন যারা হুজর বিন আদিকে সমর্থন করতে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন এবং তার সাথীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
তিনি ইরাক ত্যাগ করেন যিয়াদের ভয়ে এবং মসূলের গুহায় আশ্রয় নেন। মসূলের গভর্নর তাকে গ্রেফতার করার জন্য তার সৈন্যদের পাঠায়। যখন তারা গুহায় প্রবেশ করলো , তারা তাকে মৃত দেখতে পেলো , কারণ তাকে সাপে কামড় দিয়েছিলো। তার কবর মসূলে সুপরিচিত এবং তা যিয়ারতের তীর্থস্থান এবং বিরাট মর্যাদা রাখে। তার কবরের উপর একটি গম্বুজ নির্মাণ করা হয়েছে। সাইফুদ দৌলা ও নাসিরুদ দৌলার চাচাত ভাই আবু আব্দুল্লাহ সাঈদ বিন হামাদান এটির সংস্কার কাজ শুরুকরেন ৩৩৬ হিজরির শা’
বান মাসে। সেখানে মাযার নির্মাণ নিয়ে শিয়া ও সুন্নিদের মাঝে সংঘর্ষ হয়। শেইখ কাশশি বর্ণনা করেন যে , তিনি (আমর) ইমাম আলী (আ.) এর শিষ্যদের একজন ছিলেন এবং যারা তার দিকে রুজু করতো তাদের মধ্যে ছিলেন প্রথম।
‘
ইখতিসাস’
বইতে ইমাম আলী (আ.) এর ঘনিষ্ঠ সাথীদেরকে গণনা করা হয়েছে। জাফর বিন হোসেইন বর্ণনা করেন মুহাম্মাদ বিন জাফর মুয়াদ্দাব থেকে যে , তিনি বলেছেন ,“
রাসূল (সা.) এর সাহাবীদের মাঝ থেকে ইমাম আলী (আ.) এর চারটি স্তম্ভ ছিলো , যারা হলেন- সালমান , মিকদাদ , আবুযার এবং আম্মার। তাবেঈনদের মাঝে ওয়াইস বিন আনীস ক্বারানী (যিনি কিয়ামতের দিন রাবি ’ আ ওযামর গোত্রের সমান সংখ্যক লোকের জন্য সুপারিশ করবেন) এবং আমর বিন হুমাক্ব। জাফর বিন হোসেইন বলেন যে , আমর বিন হুমাক্ব ইমাম আলী (আ.) এর কাছে ঐ মর্যাদা রাখতেন যেমন সালমান রাখতেন রাসূল (সা.) এর কাছে। এরপর আছে রুশাইদ আল হাজারি , মেইসাম আত-তাম্মার , কুমাইল বিন যিয়াদ নাখা’
ঈ , ইমাম আলী (আ.) এর মুক্ত দাস ক্বামবার , মুহাম্মাদ বিন আবু বকর , ইমাম আলী (আ.) এর মুক্ত দাস মুযরে এবং আব্দুল্লাহ বিন ইয়াহইয়া , যার সম্পর্কে জামালের দিন ইমাম বলেছিলেন ,
“
হে ইয়াহইয়ার সন্তান , আমি সুসংবাদ দিচ্ছি যে তুমি এবং তোমার বাবা শারতাতুল খামীস-এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তোমাদেরকে আরশে নির্বাচন করেছেন। ”
এরপর আছে , জানাদ বিন যুহাইর আমিরি এবং আমিরের সব সন্তান ইমাম আলী (আ.) এর শিয়া ছিলো , হাবীব বিন মুযাহির আসাদি , আল হারস বিন আব্দুল্লাহ আ’
ওয়ার হামাদানি , মালিক বিন হুরেইস আশতার , আলাম আযদি , আবু আব্দুল্লাহ জাদালি , জুয়েইরাহ বিন মুসাহহির আবাদি।
একই বইয়ে বর্ণিত আছে যে , আমর বিন হুমাক্ব ইমাম আলী (আ.) কে বলেছিলেন যে , আমি আপনার কাছে সম্পদের বা এ পৃথিবীর সম্মানের খোঁজে আসি নি কিন্তু আমি আপনার কাছে এসেছি যেহেতু আপনি নবীর চাচাতো ভাই এবং সব মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং নারী জাতির সর্দার ফাতিমা (আ.) এর স্বামী এবং নবীর চিরঞ্জীব বংশধরের পিতা এবং মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে আপনার অবদানই সবচেয়ে বেশী। আল্লাহর শপথ , যদি আপনি আমাকে আদেশ করেন পর্বতগুলোকে তাদের জায়গা থেকে সরিয়ে দিতে এবং সমুদ্রের গভীর থেকে পানি তুলে আনতে আমি আপনার আদেশ মেনে চলবো যতক্ষণ না আমার মৃত্যু হয়। আমি সব সময় আপনার শত্রুদের আঘাত করবো আমার হাতের তরবারি দিয়ে এবং আপনার বন্ধুদের সাহায্য করবো এবং আল্লাহ যেন আপনার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন এবং আপনাকে বিজয় দান করেন। এরপরও আমি বিশ্বাস করি না যে , আমি তা সম্পন্ন করতে পেরেছি যা আপনার প্রাপ্য। ” ইমাম আলী (আ.) তার জন্য দোআ করলেন ,
“
হে আল্লাহ , তার অন্তরকে আলোকিত করুন এবং তাকে সঠিক পথ দেখান। আমার ইচ্ছা হয় তোমার মত যদি একশ ’ জন আমার শিয়াদের মধ্যে থাকতো। ”
একই বইতে আছে ইসলামের শুরুতে আমর বিন হুমাক্ব ছিলেন তার গোত্রের একজন উট রক্ষক। তার গোত্র রাসূল (সা.) এর সাথে অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিলো। একবার নবী (সা.) এর কিছু সাহাবী তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলো যাদেরকে নবী পাঠিয়েছিলেন ধর্ম প্রচার করতে। তারা নবীকে বলেছিলেন যে তাদের কাছে ভ্রমণের রসদ ছিলো না এবং তারা পথও চিনতো না। নবী (সা.) বললেন ,
“
পথে তোমরা একজন সুঠাম সুন্দর পুরুষের সাক্ষাৎ পাবে যে তোমাদের খাওয়াবে। তোমাদের পানির পিপাসা মেটাবে এবং পথ দেখিয়ে দিবে এবং সে বেহেশতের অধিবাসীদের একজন হবে।”
তারা আমরের কাছে পৌঁছালেন , যে তাদেরকে উটের গোশত ও দুধ খাওয়ালেন এবং তিনি নবীর কাছে এলেন এবং ইসলাম গ্রহণ করলেন , ঐ সময় পর্যন্ত যখন খিলাফত মুয়াবিয়ার কাছে পৌঁছলো (যা ইতোমধ্যেই আলোচিত হয়েছে) ।
এরপর তিনি মসূলের যূও নামে এক জায়গায় লোকজনের কাছ থেকে আলাদা হয়ে রইলেন। মুয়াবিয়া তাকে লিখলো ,“
আম্মা বা’
আদ , আল্লাহ যুদ্ধের আগুন নিভিয়ে দিয়েছেন এবং ফাসাদ ঠাণ্ডা করে দিয়েছেন এবং আল্লাহ ধার্মিকদের সফলতা দান করেছেন। তুমি তোমার বন্ধুদের চাইতে কম দূরে নও বা কম অপরাধীও নও। তারা আমার আদেশের সামনে মাথা নত করে দিয়েছে এবং আমাকে দায়িত্ব পালনে সাহায্য করতে দ্রুত এগিয়ে এসেছে। কিন্তু এখনও তুমি নিজেকে সরিয়ে রেখেছো ; তাই আমার কাজে সাহায্য করতে আসো যেন তোমার পিছনের গুনাহগুলো এর মাধ্যমে ক্ষমা করে দেয়া হয়। সম্ভবত আমি আমার পূর্বসূরীদের মত খারাপ নই। যদি তুমি আত্মসম্মানবোধ রাখো ও রোযাদার , অনুগত এবং ভালো ব্যবহারের লোক হও তাহলে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের নিরাপত্তায় আমার কাছে আশ্রয় নাও। তোমার হৃদয়কে হিংসা থেকে এবং তোমার নফসকে ঘৃণা থেকে পরিষ্কার করো এবং আল্লাহ সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট। ”
আমর মুয়াবিয়ার কাছে যেতে অস্বীকার করলেন , তাই সে কিছু লোককে পাঠালো যারা তাকে হত্যা করলো এবং তার মাথাকে মুয়াবিয়ার কাছে আনলো। তারা তার মাথাকে তার স্ত্রীর কাছে পাঠালো। তিনি তা তার কোলে রেখে বললেন ,“
দীর্ঘদিন তাকে তোমরা আমার কাছ থেকে দূরে রেখেছো এবং এখন তাকে হত্যা করেছো ও তাকে আমার কাছে এনেছো উপহার হিসেবে। কত সদয় না এ উপহার , যা আমার আনন্দ এবং যে নিজেও আমাকে পছন্দ করতো। হে দূত , আমার সংবাদ মুয়াবিয়ার কাছে পৌঁছে দাও এবং তাকে বল যে আল্লাহ অবশ্যই তার রক্তের প্রতিশোধ নিবেন এবং শীঘ্রই তাঁর ক্রোধ ও অভিশাপ আসবে। তুমি একটি গুরুতর অপরাধ করেছো এবং হত্যা করেছো একজন ধার্মিক সাধক ব্যক্তিকে। হে দূত , মুয়াবিয়াকে পৌঁছে দিও আমি যা বলেছি। ” দূত তার সংবাদ মুয়াবিয়ার কাছে পৌঁছে দিলে মুয়াবিয়া মহিলাকে ডাকলো এবং তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো , “ তুমি কি এ শব্দগুলো উচ্চারণ করেছো ?”
সে উত্তর দিলো ,“
হ্যাঁ , আমি সেগুলো বলেছি এবং না আমি এর জন্য আফসোস করি , আর না আমি এর জন্য দুঃখিত। ” মুয়াবিয়া তাকে বললো তার শহর থেকে চলে যেতে। উত্তরে সে বললো ,“
আমি অবশ্যই তা করবো , কারণ তোমার শহর আমার জন্মস্থান নয় এবং আমি একে কারাগার মনে করি , এবং আমার হৃদয়ে এর কোন স্থান নেই। এখানে অনেক সময় গেছে যে আমি ঘুমাই নি এবং আমার অশ্রুক্রমাগত ঝরেছে। এখানে আমার ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এখানে আমি এমন কিছু পাই নি যা আমার চোখকে আলোকিত করবে। ”
আব্দুল্লাহ বিন আবি সারহ কালবি মুয়াবিয়াকে বললো ,“
হে আমিরুল মুমিনীন , সে এক মুনাফিক্ব মহিলা। তাকে তার স্বামীকে অনুসরণ করতে দিন। ” যখন মহিলা এ কথা শুনলো সে তার দিকে তাকিয়ে বললো ,“
হে ব্যাঙের পেটের ঘা , তুমি কি তাকে হত্যা কর নি যে তোমাকে পোষাক দিয়েছিলো দয়া করে এবং তোমাকে একটি আবা (লম্বা পোষাক) দান করেছিলো ? নিশ্চয়ই তুমি ধর্ম ত্যাগ করেছো এবং নিশ্চয়ই মুনাফিক্ব হলো সে যে অন্যায়ভাবে পিছু ধাওয়া করে এবং আল্লাহর দাস হিসাবে নিজেকে দাবী করে ; আর তার কুফুরীকে আল্লাহ কোরআনে নিন্দা জানিয়েছেন। ” তা শুনে মুয়াবিয়া তার কুলীকে বললো তাকে বাইরে ছুঁড়ে ফেলতে। মহিলা বললো ,“
হিন্দের সন্তানের বিষয়ে আশ্চর্য হই , যে তার আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করেছে এবং আমাকে কঠোর ভাষা ব্যবহার করতে বাধা দিয়েছে! আল্লাহর শপথ , আমি আমার ধারালো লোহার মত কঠোর ভাষা দিয়ে তার পেট চিরে ফেলবো , আমি যদি রাশীদের কন্যা আমিনা হয়ে থাকি। ”
আবু আব্দুল্লাহ ইমাম হোসেইন (আ.) মুয়াবিয়াকে চিঠি লিখলেন ,“
তুমি কি রাসূল (সা.) এর সাহাবী আমর বিন হুমাক্বের হত্যাকারী নও , যে ছিলো একজন ধার্মিক মানুষ , যার দেহ চিকন হয়ে গিয়েছিলো ও তার রঙ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিলো অতিরিক্ত ইবাদতের কারণে ? কোন চেহারা নিয়ে তুমি তাকে নিরাপত্তা (-এর অঙ্গীকার) দিয়েছিলে এবং আল্লাহর নামে শপথ করেছিলে ? যদি কোন পাখিকে একই অঙ্গীকার দেয়া হতো তাহলে তা পাহাড় থেকে নেমে তোমার কোলে আসতো। আর তুমি আল্লাহর মুখোমুখি হয়েছো এবং অঙ্গীকারকে তুচ্ছ মনে করেছো ?”