শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)0%

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড) লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইতিহাস

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক: আল্লামা আব্বাস বিন মুহাম্মাদ রেযা আল কুম্মি
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 48972
ডাউনলোড: 4844

পাঠকের মতামত:

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 90 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 48972 / ডাউনলোড: 4844
সাইজ সাইজ সাইজ
শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

ইমাম হোসেইন (আ.) এর মক্কা থেকে ইরাকের দিকে যাত্রার নিয়ত

[ ইরশাদ ’ গ্রন্থে হতে] মুসলিম বিন আক্বীলের আন্দোলন হয় ৬০ হিজরির জিলহজ্বের আট তারিখে এবং তিনি শহীদ হন আরাফাতের দিন , অথাৎ নয় জিলহজ্ব। ইমাম হোসেইন (আ.) ইরাকের জন্য যাত্রা করেন তারউইয়াহর দিন অর্থাৎ জিলহজ্বের আট তারিখে যেদিন মুসলিম আন্দোলন করেন। যখন ইমাম মক্কায় ছিলেন তখন হিজায ও বসরার একদল লোক তার সাথে এবং তার পরিবার ও শিষ্যদের সাথে যোগ দেয়।

যখন ইমাম ইরাকের দিকে যাওয়ার নিয়ত করলেন তিনি কা বা তাওয়াফ করলেন এবং সাফা ও মারওয়ার মাঝে হাঁটলেন। এরপর তিনি তার ইহরাম খুলে ফেললেন এবং এটিকে উমরাহ হিসেবে ঘোষণা করলেন। তিনি বড় হজ্ব পালনের জন্য অপেক্ষা করতে পারলেন না , কারণ তিনি আশঙ্কা করলেন তাকে মক্কায় গ্রেফতার করা হবে এবং ইয়াযীদের কাছে বন্দী হিসেবে নিয়ে যাওয়া হবে।

[মালহুফ গ্রন্থে] বর্ণিত হয়েছে যে , তারউইয়াহর দিন (৮ই জিলহজ্ব) আমর বিন সাঈদ বিন আল আস মক্কায় এক বড় সৈন্যদল নিয়ে প্রবেশ করে। ইয়াযীদ তাকে আদেশ দিয়েছিলো যদি সে ইমাম হোসেইন (আ.) কে দেখে তাহলে যেন তাকে আক্রমণ করে এবং যদি সম্ভব হয় তাকে হত্যা করে। তাই ইমাম সেদিনই মক্কা ত্যাগ করলেন।

ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন যে , আমি দেখলাম ইমাম হোসেইন (আ.) ইরাক যাত্রা করার আগে কা বার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন এবং জিবরাঈলের হাত তার হাতে। জিবরাঈল উচ্চ কণ্ঠে বলছে: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার (হুজ্জাতের) কাছে বাইয়াত করার জন্য দ্রুত অগ্রসর হও। ”

[ মালহুফ ’ গ্রন্থে] বর্ণিত আছে , যখন ইমাম হোসেইন (আ.) ইরাকের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন , তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং নিচের খোতবাটি দিলেন , সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর , শুধু আল্লাহর ইচ্ছায় এবং আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তি নেই এবং তাঁর রহমত বর্ষিত হোক তাঁর রাসূলের উপর , নিশ্চয়ই মৃত্যু আদমের সন্তানের সাথে বাঁধা আছে যেভাবে একজন যুবতীর গলায় হার থাকে। আমি কতই না চাই ও আশা করি আমার পূর্ব পুরুষদের সাথে মিলিত হতে যেভাবে (নবী) ইয়াকুব (আ.) নবী ইউসুফ (আ.) এর সাক্ষাৎ করার আশায় ছিলেন। নিশ্চয়ই আমি যাচ্ছি আমার শাহাদাতের স্থানের দিকে যা আমার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। আমি যেন দেখতে পাচ্ছি মরুভূমির নেকড়েরা (বনি উমাইয়া) আমার শরীরের প্রতিটি অংশ পৃথক করে ফেলছে নাওয়াউইস ও কারবালার মধ্যবর্তী স্থানে এবং তাদের খালি উদর পূর্ণ করছে।

ভাগ্যের কলমে যা লেখা হয়েছে তা থেকে পালানোর কোন সুযোগ নেই এবং আমাদের আহলুল বাইতের খুশী আল্লাহর খুশীতেই নিহিত। নিশ্চয়ই আমরা তাঁর পরীক্ষাগুলো সহ্য করবো এবং সহনশীল ব্যক্তির জন্য পুরস্কারটি লাভ করবো। নবী (সা.) ও তার সন্তানের মাঝে যে রশি তা তার কাছ থেকে ছিন্ন করা যাবে না , বরং আমরা সবাই তার সাথে সত্যের (আল্লাহর) কাছে একত্র হবো। এতে তার (নবীর) চোখগুলো প্রশান্ত হবে আমাদের কারণে , আর আল্লাহ যা শপথ করেছেন তা পূর্ণ করবেন তাদের মাধ্যমে। তাই যে-ই আমাদের জন্য তার জীবন কোরবান করতে চায় এবং আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করে , সে যেন আমাদের সাথে বের হয়ে আসে , কারণ আমি আগামীকাল সকালে রওনা দিচ্ছি , ইনশাআল্লাহ। ”

আমাদের অভিভাবক হাদীসবেত্তা মির্জা নূরী তার বই নাফসুর রাহমান ’ -এ লিখেছেন যে , নাওয়াউইস হলো খৃস্টানদের একটি কবরস্থান , বর্তমানে যেখানে আল হুর বিন ইয়াযীদ আর রিয়াহির কবর রয়েছে শহরের উত্তর পশ্চিম অংশে। আর কারবালা , এটি একটি ভূমি যা একটি স্রোতধারার তীরে অবস্থিত এবং পশ্চিম দিক থেকে শহরের দিকে বইছে ইবনে হামযার কবরের পাশ দিয়ে। এতে কিছু বাগান ও মাঠ রয়েছে আর শহরটি এদের মধ্যবর্তী স্থানে।

[মালহুফ গ্রন্থে] বর্ণিত হয়েছে যে , যেদিন ইমাম হোসেইন (আ.) মক্কা ত্যাগ করলেন সেদিন রাতে মুহাম্মাদ বিন হানাফিয়া তার কাছে এলেন এবং বললেন , হে প্রিয় ভাই , আপনি খুব ভালো জানেন কুফার লোকেরা কারা। তারা আপনার পিতা (ইমাম আলী)-এর সাথে এবং ভাই (হাসান)-এর সাথে প্রতারণা করেছিলো এবং আমি আশঙ্কা করছি যে তারা আপনার সাথেও একই আচরণ করবে। যদি আপনি যথাযথ মনে করেন , এখানেই থাকুন , কারণ আপনি এখানে সবচেয়ে সম্মানিত ও নিরাপদ। ”

ইমাম বললেন , হে ভাই , আমি আশঙ্কা করছি ইয়াযীদ বিন মুয়াবিয়া আমাকে আমার অগোচরে মাসজিদুল হারামে আক্রমণ করে বসবে এবং এভাবে পবিত্র আশ্রয়স্থান এবং আল্লাহর ঘর আমার কারণে লঙ্ঘিত হবে। ”

ইবনে হানাফিয়া বললেন , যদি এরকম শঙ্কায় থাকেন তাহলে ইয়েমেন চলে যান অথবা মরুভূমির কোন কোণায় চলে যান যেখানে আপনি নিরাপদ থাকবেন এবং কেউ আপনার গায়ে হাত দিতে পারবে না। ” ইমাম উত্তর দিলেন যে , তিনি প্রস্তাবটি চিন্তা করে দেখবেন।

যখন সকাল হলো , ইমাম যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন এবং এ সংবাদ মুহাম্মাদ বিন হানাফিয়াহর কাছে পৌঁছলো। তিনি এলেন এবং তার উটের লাগাম ধরলেন যার ওপরে ইমাম বসেছিলেন এবং বললেন , হে আমার ভাই , আপনি কি আমার সাথে অঙ্গীকার করেন নি যে আপনি আমার প্রস্তাবটি বিবেচনা করবেন , তাহলে এত দ্রুত আপনি কেন যাচ্ছেন ?

ইমাম উত্তর দিলেন , তুমি চলে যাওয়ার পর , রাসূল (সা.) আমার কাছে এসেছিলেন এবং বললেন , হে হোসেইন , ইরাকের দিকে দ্রুত যাও , কারণ আল্লাহ তোমাকে শহীদ হতে দেখতে চান। ”

মুহাম্মাদ বিন হানাফিয়া বললেন , নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয়ই আমরা তার দিকে ফিরবো। ” তারপর মুহাম্মাদ আরও বললেন , তাহলে এ অবস্থায় এ নারীদের আপনার সাথে নেয়ার কী প্রয়োজন ?

তিনি বললেন , রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেছেন যে , আল্লাহ চান , তাদেরকে বন্দী দেখতে। ”

তিনি মুহাম্মাদকে সালাম দিলেন ও রওনা করলেন।

ইমাম জাফর আস-সাদিক্ব (আ.) এর কাছে মুহাম্মাদ বিন হানাফিয়ার সরে থাকা সম্পর্কে হামযা বিন হুমরানের প্রশ্ন এবং ইমামের উত্তর এই বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের তৃতীয় ভাগে বিহারুল আনওয়ার ’ -এ আল্লামা মাজলিসির আলোচনায় ইতোমধ্যেই বর্ণিত হয়েছে। ইমাম জাফর আস-সাদিক্ব (আ.) বলেন যে , যখন হোসেইন বিন আলী (আ.) ইরাকের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি বইগুলো ও সাক্ষ্যপত্রগুলোকে উম্মু সালামা (আ.) এর কাছে আমানত হিসেবে রাখলেন এবং যখন ইমাম আলী যায়নুল আবেদীন (আ.) ফেরত এলেন উম্মু সালামা এগুলো তার কাছে হস্তান্তর করলেন। ”

মাসউদী তার ইসবাত আল ওয়াসিয়াহ ’ বইতে লিখেছেন যে , যখন ইমাম হোসেইন (আ.) কুফার লোকদের কাছে একটি চিঠি লেখার পর কুফাতে যেতে চাইলেন এবং কুফাতে মুসলিম বিন আক্বীলকে পাঠানোর আগে উম্মে সালামা (আ.) তার কাছে এলেন এবং বললেন , আমি তোমাকে সেখানে না যাওয়ার জন্য মনে করিয়ে দিচ্ছি। ” ইমাম তাকে কারণ জিজ্ঞেস করলেন , এতে তিনি উত্তর দিলেন , আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি যে , আমার সন্তান হোসেইনকে ইরাকে শহীদ করা হবে এবং তিনি আমাকে একটি মাটি ভর্তি বোতল দিয়েছেন , যা আমি আমার কাছে সযত্নে রেখেছি এবং (প্রায়ই) তা পরীক্ষা করি। ”

ইমাম বললেন , হে প্রিয় মা , আমাকে বাধ্য করা হবে মৃত্যুবরণ করতে। যা নির্দিষ্ট করা হয়েছে তা থেকে পালাবার কোন পথ নেই এবং মৃত্যুর কোন বিকল্প নেই। আমি নিজে জানি সে দিনকে , সময়কে এবং স্থানকে যেখানে আমাকে শহীদ করা হবে। এরপর আমার মাযার , যেখানে আমাকে কবর দেয়া হবে , তার পাশে যে জায়গায় আমাকে শহীদ করা হবে তাও আমি জানি , যেভাবে আমি আপনাকে চিনি। এরপর আপনি যদি চান আমি আপনাকে আমার কবরের স্থানটি দেখাতে পারি এবং তাদেরটিও যাদেরকে আমার সাথে শহীদ করা হবে। ” উম্মে সালামা উত্তর দিলেন তিনি তাই চান। ইমাম হোসেইন (আ.) আল্লাহর নাম উচ্চারণ করলেন এবং (কারবালার) ভূমি ওপরে উঠলো এবং তিনি তাকে ও অন্যান্যদেরকে নিজের কবরের স্থান দেখালেন। এরপর তিনি এ থেকে কিছু মাটি নিলেন এবং তাকে বললেন আগের মাটির সাথে মিশিয়ে নিতে (যা নবী- সা. আগে তাকে দিয়েছিলেন) । এরপর তিনি বললেন , আমাকে (মহররমের) দশম দিনে যোহর নামাযের পর শহীদ করা হবে। আপনার উপর সালাম হে প্রিয় মা , আমরা আপনার উপর সন্তুষ্ট। ”

উম্মে সালামা তার কথা মনে রাখলেন এবং আশুরার (দশম দিনের) জন্য অপেক্ষায় রইলেন। মাসউদী তার মুরুজুয যাহাব ’ বইতে লিখেছেন যে , যখন ইমাম হোসেইন (আ.) ইরাকের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস তার কাছে এলেন এবং বললেন , হে চাচাতো ভাই , আমি শুনলাম আপনি ইরাকের দিকে যেতে চান অথচ সেখানকার লোক প্রতারক ও ঝগড়াটে। তাড়াহুড়ো করবেন না এবং আপনি যদি চান এ অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করুন এবং যদি আপনি মক্কায় থাকতে না চান , তাহলে ইয়েমেন যান , কারণ তা এক কোণায় অবস্থিত এবং সেখানে আপনার অনেক বন্ধু ও ভাই রয়েছে। এরপর সেখানে থাকুন এবং আপনার দূতদের বিভিন্ন দিকে পাঠান , কুফাবাসীদের এবং ইরাকে আপনার অনুসারীদের কাছে চিঠি লিখুন যেন তারা সেখানে তাদের সেনাপতিদের ক্ষমতাচ্যুত করে এবং যদি তারা তাদের ক্ষমতাচ্যুত করায় সফল হয় এবং সেখানে আপনার সাথে ঝগড়া করার কেউ না থাকে তাহলেই শুধু আপনি সেখানে প্রবেশ করুন , কারণ আমি তাদের বিশ্বাস করি না এবং যদি তারা তা না করে , তাহলে সেখানেই থাকুন এবং আল্লাহর আদেশের জন্য অপেক্ষা করুন , কারণ ইয়েমেনে অনেক দুর্গ ও উপত্যকা আছে। ” তা শুনে ইমাম বললেন , হে চাচাতো ভাই , আমি জানি যেমিত আন্তরিকভাবে আমার হিতাকাঙ্ক্ষী এবং আমার প্রতি সহানুভূতিশীল , কিন্তু মুসলিম বিন আক্বীল আমাকে লিখেছে যে কুফাবাসীরা আমার প্রতি আনুগত্যের শপথ করেছে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়েছে আমাকে সমর্থন দেয়ার জন্য। তাই সবশেষে আমি সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ”

আব্দুল্লাহ বললেন , আপনি কুফাবাসীদের দুবার পরীক্ষা করেছেন। এ লোকেরাই আপনার বাবা ও ভাইকে সমর্থন দিচ্ছিলো। অথচ আগামীকাল তারা হতে পারে আপনার হত্যাকারীদের অন্তর্ভুক্ত , তাদের সেনাপতিদের পক্ষ নিয়ে। এরপর যদি আপনি তাদের দিকে যান এবং উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদকে এ বিষয়ে জানানো হয় তাহলে সে তাদেরকে আপনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পাঠাবে এবং যে লোকগুলো আপনাকে সেখানে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি লিখেছে তারাই আপনার সবচেয়ে বড় শত্রুহয়ে দাঁড়াবে। যদি আপনি আমার কথা সমর্থন না করেন , নারী ও শিশুদেরকে আপনার সাথে নেবেন না। কারণ আল্লাহর শপথ , আমি শঙ্কিত যে আপনাকে উসমানের মত হত্যা করা হবে যখন তার নারী ও শিশুরা তা দেখছিলো। ”

ইবনে আব্বাসকে ইমাম উত্তর দিলেন ,

আল্লাহর শপথ , আমার কারণে কা বার পবিত্রতা নষ্ট হওয়ার চাইতে (সেখানে নিহত হওয়ার চাইতে) আমি অন্য যে কোন জায়গায় নিহত হতে ভালোবাসি। ” তখন ইবনে আব্বাস তাকে বুঝানোর সব আশা হারালেন এবং উঠে চলে গেলেন। এরপর তিনি আব্দুল্লাহ বিন যুবাইরের কাছে গেলেন এবং নিচের কবিতাটি আবৃত্তি করলেন ,

হে চাতক , তোমার একটি খালি জায়গা আছে , তোমার ডিম প্রসব করো এবং কণ্ঠ উঁচু করো , তোমার আসন শূন্য , তোমার ঠোঁটকে মাটিতে যেখানে ইচ্ছা আঘাত করো। হোসেইন ইরাকের দিকে যাচ্ছে এবং তোমার জন্য হিজাযকে পিছনে রেখে যাচ্ছে। ”

আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর শুনলো যে ইমাম কুফার দিকে যাচ্ছেন , সে মক্কায় ইমামের উপস্থিতিতে অস্থির ও দুঃখিত ছিলো। কারণ সেখানকার লোকেরা তাকে ইমাম হোসেইন (আ.) এর সমকক্ষ ভাবতো না। তাই তার কাছে এর চেয়ে বড় কোন সংবাদ ছিলো না যে ইমাম মক্কা ত্যাগ করছেন। তখন সে ইমামের কাছে এলো এবং বললো , হে আবা আবদিল্লাহ আপনি কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ? আমি আল্লাহকে ভয় করি তাদের অত্যাচারে এবং আল্লাহর পরহেজগার বান্দাদের প্রতি তাদের অশ্রদ্ধার বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করার মাধ্যমে। ”

ইমাম হোসেইন (আ.) বললেন ,

আমি কুফা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ” ইবনে আল যুবাইর বললো , আল্লাহ আপনাকে সফলতা দিন , যদি আপনার মত আমার বন্ধু থাকতো আমি সেখানে যেতে অস্বীকার করতাম। ” সে আশঙ্কা করলো হয়তো ইমাম তাকে এ জন্য অভিযুক্ত করবেন তাই বললো , যদি আপনি এখানে থেকে যান এবং আমাকে ও হিজাযের লোকদেরকে আপনার হাতে বাইয়াত করতে আহ্বান জানান। আমরা এতে একমত হব এবং দ্রুত আপনার কাছে অগ্রসর হব , কারণ খিলাফতের জন্য ইয়াযীদ ও তার পিতা থেকে আপনিই বেশী যোগ্য। ”

আবু বকর বিন হুরেইস বিন হিশাম ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে এলো এবং বললো , নিশ্চয়ই আত্মীয়তা দাবী করে আপনার প্রতি আমি যেন দয়াপূর্ণ হই এবং আমি জানি না আপনার হিতাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আপনি আমাকে কী ভাবেন। ”

ইমাম বললেন , হে আবু বকর , তুমি কোন ধোঁকাবাজ নও। ”

আবু বকর বললো , আপনার পিতা ছিলেন আরও যোগ্য এবং জনগণ তাকে আরও বেশী চাইতো ও তাকে বিবেচনা করতো। তারা তার প্রতি আরও অনুগত ছিলো। তারা তার চারপাশে অনেক সংখ্যায় হাঁটতো যখন তিনি মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে গেলেন , শুধু সিরিয়ার লোকেরা ছাড়া , এবং তিনি ছিলেন মুয়াবিয়ার চাইতে ক্ষমতাধর । এরপরও তারা তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং পৃথিবীর লালসা নিয়ে তারা তার উপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। এরপর তারা তাকে রাগ গিলে ফেলতে বাধ্য করেছিলো। তারা তাকে অমান্য করছিলো এবং ঐ পর্যন্ত বিষয়টি পৌঁছলো যে তিনি আল্লাহর মর্যাদা ও সন্তুষ্টির দিকে চলে গেলেন (নিহত হলেন) । এরপর তারা একই কাজ করলো আপনার ভাইয়ের সাথে , আপনার পিতার মত এবং আপনি এসব কিছুর সাক্ষী ছিলেন। তবুও আপনি তাদের কাছে যেতে চান যারা আপনার পিতা ও ভাইয়ের সাথে বিদ্রোহ করেছিলো এবং তাদের নিপীড়ন করেছিলো ? এরপর আপনি তাদের সাথে থেকে সিরিয়া ও ইরাকীদের বিরুদ্ধে এবং যে নিজেকে তৈরী করেছে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চান , অথচ সে বেশী শক্তিশালী এবং লোকেরা তাকে ভয় করে এবং তার সফলতা কামনা করে ? তাই , যদি সে এ সংবাদ পায় যে আপনি তার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন , তখন সে তাদেরকে ঘুষ দিতে পারে এবং নিশ্চয়ই তারা এ পৃথিবীকে চায়। এরপর ঐ লোকগুলোই যারা আপনাকে সাহায্য করবে বলে অঙ্গীকার করেছে তারাই আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হবে এবং যারা আপনাকে ভালোবাসে বলে দাবী করে তারাই আপনাকে ত্যাগ করবে সাহায্যকারীহীন অবস্থায় এবং তারা তাদের সাহায্যে যাবে। তাই আল্লাহকে স্মরণ করুন নিজের বিষয়ে। ”

ইমাম হোসেইন (আ.) উত্তরে বললেন , হে চাচাতো ভাই , আল্লাহ যেন তোমাকে উদারভাবে পুরস্কৃত করেন , তুমি আমাকে আন্তরিকভাবে পরামর্শ দিয়েছো , কিন্তু আল্লাহর সিদ্ধান্ত অবশ্যই ঘটবে। ”

আবু বকর বললেন , হে আবা আবদিল্লাহ আমি আপনাকে আল্লাহর আশ্রয়ে দিলাম। ”

তাবারির তারীখ ’ -এ লেখা আছে যে , আযদি বলেছেন , আবু জাব্বাব ইয়াহইয়া বিন আবু হাইয়াহ বর্ণনা করেন আদি বিন হুরমালা আসাদি থেকে , তিনি আব্দুল্লাহ বিন সালিম এবং মাযরি বিন মাশমাইল আসাদি থেকে যে , তারা বলেছেন যে: আমরা কুফা থেকে মক্কায় গেলাম হজ্ব পালন করতে , তারউইয়াহর দিন (৮ই জিলহজ) আমরা মক্কায় প্রবেপশ করলাম। যোহরের সময় আমরা দেখলাম ইমাম হোসেইন (আ.) এবং আব্দুল্লাহ বিন যুবাইরকে , কা বা ও হাজারুল আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে। আমরা তাদের দিকে গেলাম এবং ইবনে আল যুবাইরকে শুনলাম ইমাম হোসেইন (আ.) কে বলছেন যে , আপনি চাইলে এখানে থাকতে পারেন এবং কর্তৃত্বে থাকুন। আমরা আপনার সমর্থক , সাহায্যকারী , আপনার হিতাকাঙ্ক্ষী এবং আপনার অনুগত।

ইমাম বললেন , আমার পিতা আমাকে বলেছিলেন যে , এক ব্যক্তির রক্ত এখানে অন্যায়ভাবে ঝরানো হবে আর আমি সেই ব্যক্তি হতে চাই না। ”

ইবনে আল যুবাইর বললেন , তাহলে এখানে থাকুন এবং বিষয়টি আমার উপর ছেড়ে দিন। কারণ আমি আপনাকে মেনে চলবো এবং কোন ধোঁকা দিবো না। ”

ইমাম বললেন , আমি তা করতে চাই না। ”

এরপর তারা ফিসফিস করে কথা বলা শুরু করলেন এবং এক পর্যায়ে যোহরের সময় জনতাকে চিৎকার করে বলতে শুনলাম মিনার দিকে দ্রুত এগোবার জন্য । তখন আমরা দেখলাম ইমাম হোসেইন (আ.) কা বা তাওয়াফ করা শুরু করেছেন , এরপর তিনি সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাঈ করলেন এবং তার কিছু চুল কেটে ফেললেন। এরপর তিনি তার উমরাহ শেষ করে কুফার দিকে রওনা করলেন। আর আমরা অন্যান্য লোকদের সাথে মিনা গেলাম।

সিবতে ইবনে জাওযী তার তাযকিরাতুল খাওয়াস -এ লিখেছেন যে , যখন মুহাম্মাদ বিন হানাফিয়া ইমাম হোসেইন (আ.) এর কুফা রওনা হওয়ার সংবাদ পেলেন তখন তিনি অয করছিলেন এবং তার সামনে একটি জগ ছিলো। তিনি প্রচুর কাঁদলেন। তখন মক্কায় এমন কেউ ছিলো না যে তার চলে যাওয়াতে দুঃখিত ও ব্যথিত হয় নি। কারণ তারা তাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছিলেন তাকে তা থেকে বিরত রাখতে। এরপর তিনি নিচের কবিতা আবৃত্তি করলেন ,

আমি রওনা দিবো , কারণ কোন যুবকের জন্য মৃত্যুতে লজ্জা নেই , যখন সে তা চায় যা সঠিক এবং সে সংগ্রাম করে একজন মুসলমানের মত , যে ন্যায়পরায়ণ লোকদের উদ্বুদ্ধ করেছে তার জীবন কোরবান করার মাধ্যমে , যে অভিশপ্তদের ছত্রভঙ্গ করেছে এবং অপরাধীদের বিরোধিতা করেছে। যদি আমি বেঁচে থাকি আমি আফসোস করবো না (যা আমি করেছি) এবং যদি আমি মারা যাই আমি যন্ত্রণা পাবো না। অপমান ও বেইজ্জতির ভিতরে তোমাদের বেঁচে থাকা যথেষ্ট হোক। ”

এরপর তিনি কোরআনের এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন ,

) وَكَانَ أَمْرُ اللَّـهِ قَدَرًا مَّقْدُورًا(

এবং আল্লাহর কাছে সিদ্ধান্ত- অপরিবর্তনীয়। ” [সূরা আল আহযাব: ৩৮]

পরিচ্ছেদ - ১১