ইমাম হোসেইন (আ.) এর মক্কা থেকে কুফা রওনা করা সম্পর্কে
ইমাম হোসেইন (আ.) মক্কা ত্যাগ করেন তারউইয়াহর দিন (৮ই জিলহজ্ব) মুসলিম বিন আক্বীলের শাহাতাদের সংবাদ পাওয়ার আগে , যিনি ঐ দিনগুলোতে কুফায় বিদ্রোহ করেছিলেন। তার সাথে ছিলো তার আত্মীয়স্বজন , সন্তানরা এবং শিয়ারা।
‘
মাতালিবুস সা’
উল ’ ও অন্যান্য বইতে উল্লেখ আছে যে , ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথে কাফেলায় ৮২ জন পুরুষ ছিলো।
‘
আল মাখযূন ফি তাসলীয়াতিল মাহযুন ’ -এ লেখা আছে যে ইমাম হোসেইন (আ.) তার সহযাত্রীদের একত্র করেন যারা তার সাথে ইরাক যাওয়ার জন্য দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং তাদের প্রত্যেককে দশটি স্বর্ণমুদ্রা ও তাদের মালপত্র বইবার জন্য একটি উট দিলেন। এরপর তিনি মঙ্গলবার , ৮ই জিলহজ্বে , তারউইয়াহর দিনে মক্কা ত্যাগ করেন , সাথে ছিলো ৮২ জন পুরুষ , যারা ছিলো তার শিয়া , বন্ধু , দাস ও পরিবার।
[ইরশাদ গ্রন্থে আছে] কবি ফারাযদাক্ব বলেন , আমি একষট্টি হিজরিতে হজ্বে গেলাম। যখন আমি উট চালিয়ে পবিত্র স্থানে উপস্থিত হলাম আমি দেখলাম ইমাম হোসেইন (আ.) মক্কা ত্যাগ করছেন অস্ত্র ও রসদপত্রসহ। আমি জিজ্ঞেস করলাম এটি কার কাফেলা। তারা বললো , তিনি হোসেইন বিন আলী (আ.) । আমি তার দিকে গেলাম এবং সালাম জানিয়ে বললাম ,“
আল্লাহ যেন আপনার আশা পূর্ণ করেন এবং আপনার আশা যেন পূর্ণ হয় , হে নবীর সন্তান , আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কোরবান হোক , কী আপনাকে হজ্ব থেকে দ্রুত সরিয়ে নিচ্ছে ?”
তিনি উত্তর দিলেন ,“
আমি যদি দ্রুত স্থান ত্যাগ না করি আমাকে গ্রেফতার করা হবে। ” এরপর তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি কে। আমি বললাম যে আমি একজন আরব এবং তিনি এ বিষয়ে আর কিছু আমাকে জিজ্ঞেস করলেন না। এরপর বললেন ,“
ইরাকের লোকজন সম্পর্কে আপনার কাছে কী সংবাদ আছে ?”
আমি বললাম ,“
নিশ্চয়ই আপনি এক প্রজ্ঞাপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন। জনগণের হৃদয় আপনার সাথে আছে , কিন্তু তাদের তরবারি আপনার বিরুদ্ধে এবং ভাগ্য অবতরণ করে আকাশ থেকে এবং আল্লাহ করেন যা তাঁর ইচ্ছা। ”
ইমাম বললেন ,“
আপনি সত্য কথা বলেছেন , সমস্ত বিষয়ই আল্লাহ থেকে।
)
كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ(
প্রতিদিন তিনি এক নতুন জাঁকজমকপূর্ণ প্রকাশে আছেন। [সূরা রাহমান: ২৯]
যদি তাঁর সিদ্ধান্তও আমরা যা আশা করি তা একই হয় তাহলে আমরা তাঁকে তাঁর রহমতের জন্য ধন্যবাদ দেই এবং (শুধু) তাঁর সাহায্য চাইতে হবে তাঁকে ধন্যবাদ দেয়ার জন্য। এরপর যদি আশাকে ভাগ্য বন্ধ করে দেয় তাহলে যার পবিত্র নিয়ত আছে এবং যে পরহেজগার তার মর্যাদা লঙ্ঘিত হবে না।”
আমি বললাম ,“
জ্বী , আল্লাহ যেন আপনাকে সফলতা দেন আপনার আশায় এবং নিরাপত্তা দেন তা থেকে যা থেকে আপনি ভয় করেন।”
এরপর আমি তাকে হজ্বের অঙ্গীকার ও নিয়মকানুন সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তিনি সেগুলোর উত্তর দিলেন এবং আমাকে সালাম দিয়ে সরে গেলেন। এভাবে আমরা বিচ্ছিন্ন হলাম।
যখন ইমাম হোসেইন (আ.) মক্কা ত্যাগ করলেন , ইয়াহইয়া বিন সাঈদ বিন আল আস একজন লোক নিয়ে তার সাথে সাক্ষাত করলো যাদেরকে আমর বিন সাঈদ পাঠিয়েছিলো এবং তাকে জিজ্ঞেস করলো তিনি কোথায় যাচ্ছেন এবং তাকে আদেশ করলো যেন তিনি ফিরে যান। ইমাম তার প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ করলেন না , এতে তাদের ভিতরে ঝগড়া শুরু হলো এবং তারা পরস্পরকে চাবুক দিয়ে আঘাত করতে লাগলো। কিন্তু ইমাম এবং তাদের সাথীরা তাদেরকে দৃঢ়তার সাথে পতিহত করলেন।
‘
ইক্বদুল ফারীদ’
-এ বলা হয়েছে যে , যখন আমর বিন সাঈদ ইমামের মক্কা ত্যাগের কথা জানতে পারলো সে বললো ,“
আকাশ ও জমিনের মাঝে যত উট আছে তাতে চড়ো এবং তাকে ধরো।”
লোকজন তার কথায় আশ্চর্য হলো এবং পিছু ধা ওয়া করতে গেলো। কিন্তু তার কাছে পৌঁছাতে পারলো না।
[‘
ইরশাদ’
গ্রন্থে আছে] তানঈম নামে একটি জায়গায় ইমাম পৌঁছালেন এবং ইয়েমেন থেকে আসা এক কর আদারকারী কাফেলার সাক্ষাত পেলেন যাদেরকে বাহীর বিন রায়সান ইয়াযীদের কাছে পাঠিয়েছিলো। মালপত্রের মাঝে ছিলো সবুজ উদ্ভিদ (ইয়েমেনী জাফরান) এবং কাপড় চোপড়। ইমাম হোসেইন (আ.) (যুগের ইমাম হিসেবে এবং ইয়াযীদ খিলাফতের দখলদার হওয়ার কারণে) তা ক্রোক করলেন এবং উটের চালকদের বললেন ,
“
তোমাদের মাঝে যে চায় আমাদের সাথে ইরাক পর্যন্ত যেতে সে আসতে পারো। এর জন্য আমরা তাদেরকে মজুরী দিবো এবং আমরা তাদের সাথে ভালো আচরণ করবো। আর যে ফিরে যেতে চাইবে আমরা তাদেরকে এ স্থান পর্যন্ত মজুরী দিবো এবং তারা যেতে পারে।”
তখন তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক তাদের মজুরী নিলো ও চলে গেলো , আর অন্যরা যারা তাদের সাথে এলো তাদেরকে যথাযথ মূল্য ও কাপড় চোপড় দেয়া হলো।
[‘
কামিল’
গ্রন্থে আছে] এরপর তিনি আবা ফারাযদাক্বের সাক্ষাত পেলেন। তাদের সাক্ষাতের বিষয়বস্তু পূর্বের বর্ণনার মতই এগিয়ে গেলেন এবং সাফাহ পৌঁছালেন এবং সেখানে তিনি আব্দুল্লাহ বিন জাফরের চিঠি পেলেন যা ইমাম হোসেইন (আ.) কে পাঠানো হয়েছিলো তার দুই ছেলে আউন ও মুহাম্মাদকে সাথে দিয়ে।
এর বিষয়বস্তু ছিলো এরকম:
“
আম্মা বা’
আদ , আমি আল্লাহর নামে আপনাকে বলছি , আমার চিঠি পাওয়ার সাথে সাথে ফিরে আসুন , কারণ আমি আশঙ্কা করছি , যে দিকে আপনি যাচ্ছেন তার পরিণতি হবে মৃত্যু ও আপনার পরিবারের পুরোপুরি ধ্বংস। আর তা যদি ঘটে তাহলে পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যাবে , কারণ আপনি হচ্ছেন হেদায়াতের আলো এবং বিশ্বাসীদের আশা। আপনি তাড়াহুড়া করবেন না , কারণ আমি এ চিঠির পর পরই আসছি। সালাম।”
তাবারি বলেন যে , আব্দুল্লাহ বিন জাফর আমর বিন সাঈদ বিন আল আসের কাছে গেলেন এবং বললেন ,“
ইমাম হোসেইন (আ.) কে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে এবং তাকে ন্যায়বিচার ও সদয় ব্যবহারের অঙ্গীকার করে চিঠি লিখুন এবং তাকে রাজী করান ; আর তাকে অনুরোধ করুন ফিরে আসার জন্য , যেন তিনি সন্তুষ্ট হন এবং ফিরে আসেন।”
আমর বিন সাঈদ বললো ,“
তোমার যা ইচ্ছা লেখ এবং তা আমার কাছে আনো যেন আমি সেখানে আমার সীলমোহর দিতে পারি।”
আব্দুল্লাহ চিঠিটি লিখলেন এবং আমর এর কাছে আনলেন এবং বললেন ,“
তোমার ভাই ইয়াহইয়াকে এ চিঠি দিয়ে পাঠাও যেন ইমাম আশ্বস্ত হন যে , এ চিঠি তোমার চেষ্টা।”
সে তাই করলো। আমর বিন সাঈদ ছিলো ইয়াযীদের নিয়োগকৃত মক্কার গভর্নর।
ইয়াহইয়া এবং আব্দুল্লাহ বিন জাফর চিঠিটি নিয়ে ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে গেলো এবং তা দিলো। ইয়াহইয়া চিঠিটি পড়লো। যখন তারা ফিরে এলো , তারা বললো যে আমরা চিঠিটি ইমাম হোসেইন (আ.) কে দিয়েছিলাম এবং তাকে অনুরোধ করেছিলাম ফিরে আসতে। কিন্তু তিনি কারণ দেখালেন:
“
আমি স্বপ্নে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে দেখেছি এবং তিনি আমাকে একটি দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি তা পালন করবো , তাতে আমার লাভ হোক বা না হোক।”
সে বললো স্বপ্নটি তাকে বলতে , তিনি বললেন ,“
আমি স্বপ্নটির বর্ণনা কাউকে দেই নি এবং না আমি তা করবো , যতক্ষণ না আমি আমার রবের কাছে পৌঁছাই।”
[‘
ইরশাদ’
গ্রন্থে] বর্ণিত আছে যে , যখন আব্দুল্লাহ ইমামকে নিবৃত্ত করতে ব্যর্থ হলেন তিনি তার দুই ছেলে আউন ও মুহাম্মাদকে বললেন তার সাথে থাকতে , তার সাথে যেতে এবং তার পক্ষ হয়ে তাকে নিরাপত্তা দিতে (যদি প্রয়োজন হয়)। এরপর তিনি ইয়াহইয়া বিন সাঈদের সাথে মক্কায় ফিরে এলেন।”
তাবারি বলেন যে , আমর বিন সাঈদের চিঠির বিষয়বস্তু ছিলো:“
আল্লাহর নামে যিনি সর্ব দয়ালু , সর্বকরুণাময় , আমর বিন সাঈদ থেকে হোসেইন বিন আলীর প্রতি। আম্মা বা’
আদ , আমি অনুরোধ করছি যেন আল্লাহ আপনাকে সে জিনিস থেকে দূরে রাখেন যা আপনার ধ্বংসের কারণ হবে এবং আপনাকে পুরস্কারের পথ দেখান। আমাকে জানানো হয়েছে যে আপনি ইরাকের দিকে যাচ্ছেন , আমি আপনাকে দুহাতে আল্লাহর নিরাপত্তায় দিলাম এবং আমি আশঙ্কা করছি যে তা আপনার ধ্বংস আনতে পারে। আমি আব্দুল্লাহ বিন জাফর ও ইয়াহইয়া বিন সাঈদকে আপনার কাছে পাঠাচ্ছি , তাই আমার কাছে দ্রুত আসুন। আমি আপনার কাছে নিরাপত্তার , দয়ার , নৈতিকতার , সদ্ব্যবহারের অঙ্গীকার করছি এবং আল্লাহ এর সাক্ষী , নিশ্চয়তা দানকারী , এর উপর রক্ষক ও অভিভাবক এবং আপনার উপর সালাম।”
ইমাম হোসেইন (আ.) তাকে উত্তর দিলেন ,“
আম্মা বা’
আদ , যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে আহ্বান করে এবং নৈতিক কাজগুলো করে এবং বলে যে সে একজন মুসলমান , সে আল্লাহ ও তার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় নি। আর তুমি আমাকে নিরাপত্তা , নৈতিকতা ও দয়ার দিকে আহ্বান করছো যখন শ্রেষ্ঠ নিরাপত্তা হচ্ছে আল্লাহর কাছ থেকে। আর যে ব্যক্তি এ পৃথিবীতে আল্লাহকে ভয় করে না সে পরকালে তাঁর আশ্রয় পাবে না। আমরা আল্লাহর কাছে চাই যেন আমরা তাকে এ পৃথিবীতে ভয় করি , যেন পরকালে তার নিরাপত্তা পেতে পারি। যদি তোমার উদ্দেশ্য হয় এ চিঠির মাধ্যমে , দয়া ও নৈতিকতা , তাহলে আল্লাহ যেন তোমাকে সদয়ভাবে পুরস্কৃত করেন এ পৃথিবীতে এবং আখেরাতে।”
[‘
ইরশাদ’
গ্রন্থে আছে] ইমাম হোসেইন (আ.) ইরাকের দিকে দ্রুত এগোলেন এবং পিছনের দিকে তাকালেন না এবং যাতুল ইরক্বে পৌঁছালেন। এ জায়গাতে আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.) এর ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিণত হলো। শেইখ তূসি তার‘
আমালি’
তে বর্ণনা করেছেন আম্মারাহ দেহনি থেকে , তিনি বলেন আবু তুফাইল আমাকে বলেছেন যে: মুসাইয়াব বিন নাজাবাহ ইমাম আলী (আ.) এর কাছে আব্দুল্লাহ বিন সাবাকে ধরে নিয়ে এলেন। ইমাম আলী (আ.) জিজ্ঞেস করলেন , কী হয়েছে। তিনি বললেন ,“
এ ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূল সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে।”
ইমাম জিজ্ঞেস করলেন সে কী বলেছে। মুসাইয়াব কী বললো আমি শুনতে পেলাম না , কিন্তু আমি ইমাম আলী (আ.) কে বলতে শুনলাম ,“
হায় , এক ব্যক্তি (ইমাম হোসেইন আ.) একটি দ্রুতগামী ও (অস্ত্র ও রসদ) সজ্জিত উটে চড়ে তোমাদের কাছে আসবে হজ্ব অথবা উমরাহ না করে এবং তাকে হত্যা করা হবে।”
যখন ইমাম হোসেইন (আ.) যাতুল ইরক্বে [মালহুফ] পৌঁছালেন , তিনি বিশর বিন গালিবের সাক্ষাত পেলেন যে ইরাক থেকে আসছিলো। তিনি তার কাছ থেকে সেখানকার জনগণের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। সে বললো ,“
আমি জনগণকে দেখেছি যে তাদের হৃদয় আপনার পক্ষে , কিন্তু তাদের তরবারি বনি উমাইয়ার পক্ষে।”
ইমাম বললেন ,“
বনি আসাদের এ ভাই সত্য বলছে। আল্লাহ তাই করেন যা তার ইচ্ছা এবং আদেশ করেন যা তার ইচ্ছা।”
[‘
ইরশাদ’
গ্রন্থে আছে] যখন উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ এ সংবাদ পেলো যে , ইমাম হোসেইন (আ.) কুফার দিকে আসছেন , সে তার পুলিশ কর্মকর্তা হাসীন বিন তামীমকে ক্বাদিসিয়া দিকে পাঠালো। সে এক সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করলো ক্বাদিসিয়া থেকে খাফফান পর্যন্ত এবং ক্বাদিসিয়া থেকে ক্বাতক্বাতানিয়া পর্যন্ত। এরপর সে জনগণের কাছে ঘোষণা করলো , হোসেইন বিন আলী ইরাকের দিকে আসছে।
মুহাম্মাদ বিন আবু তালিব মুসাউই বর্ণনা করেন যে , যখন ওয়ালীদ বিন উতবা সংবাদ পেলো যে ইমাম ইরাকের দিকে যাচ্ছেন সে উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের কাছে চিঠি লিখলো ,“
আম্মা বা’
আদ , হোসেইন ইরাকের দিকে আসছে এবং সে ফাতিমা (আ.) এর সন্তান এবং ফাতিমা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কন্যা। সাবধান হও! পাছে তুমি তার সাথে খারাপ ব্যবহার কর এবং এ পৃথিবীতে তোমার ও তোমার আত্মীয়দের উপর দুর্যোগ ডেকে আনো যা কোনদিন শেষ হবে না ; আর বিশিষ্ট লোকেরা ও সাধারণ জনগণ এ পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত তা ভুলবে না।”
কিন্তু উবায়দুল্লাহ ওয়ালীদের কথায় কোন কান দিলো না।
রায়আশি , তার ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে বর্ণনা করেন যে , বর্ণনাকারী বলেছেন: আমি হজ্বে গেলাম এবং আমার সাথীদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেলাম এবং একা হাঁটতে শুরু করে পথ হারিয়ে ফেললাম। হঠাৎ আমার দৃষ্টি পড়লো কিছু তাঁবু ও খচ্চরের উপর , আমি তাদের দিকে এগিয়ে গেলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম তারা কারা , তারা বললো যে তাবুগুলো ইমাম হোসেইন (আ.) এর। আমি জিজ্ঞেস করলাম যে , এ হোসেইন কি আলী ও ফাতিমা (আ.) এর সন্তান ? তারা হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিলো। আমি খোঁজ নিলাম কোন তাঁবুতে তিনি আছেন , তারা তা দেখিয়ে দিলো। আমি গেলাম এবং দেখলাম ইমাম দরজায় বসে একটি বালিশে ঠেস দিয়ে একটি চিঠি পড়ছেন। আমি তাকে সালাম দিলে তিনি উত্তর দিলেন। আমি বললাম ,“
হে আল্লাহর রাসূলের সন্তান , আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কোরবান হোক , কেন আপনি এমন খালি মরুভূমিতে তাঁবু ফেলেছেন যেখানে কোন মানুষ জন নেই , নেই কোন দুর্গ।”
ইমাম বললেন ,
“
লোকজন আমাকে ভয় দেখিয়েছে এবং এ চিঠিগুলো কুফার লোকদের , যারা আমাকে হত্যা করবে। কোন পবিত্রতাকে ভূলুণ্ঠিত করা বাদ না রেখে যখন তারা এ অপরাধ করবে , আল্লাহ তাদের উপর এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিবেন যে তাদেরকে হত্যা করবে এবং তাদেরকে বেইজ্জতি করবেন এক দাসীর লোকদের চেয়ে বেশী।”
আমি (লেখক) বলি যে , আমরা দৃঢ়ভাবে অনুভব করি যে ,“
দাসীর লোকদের”
কথাটি একটি ভুল। আর সঠিকটি হলো দাসীর ফারাম (ঋতুস্রাবের কাপড়) , কারণ বর্ণনায় এসেছে যে ইমাম হোসেইন (আ.) বলেছেন ,“
আল্লাহর শপথ , তারা আমাকে ছাড়বে না যতক্ষণ না তারা আমার হৃৎপিণ্ডের রক্ত না ঝরাবে , এরপর যখন তারা তা করবে আল্লাহ এক ব্যক্তিকে তাদের উপর নিয়োগ দিবেন যে তাদেরকে অপমানিত করবে একজন মহিলার ফারামের চাইতে বেশী।”
আর ফারাম হচ্ছে ঋতুস্রাবের কাপড়।
[‘
ইরশাদ’
গ্রন্থে আছে] যখন ইমাম বাতনে উম্মাহর হাজির নামক স্থানে পৌঁছালেন তিনি ক্বায়েস বিন মুসাহহির সায়দাউইকে কুফায় পাঠালেন। কেউ কেউ বলেন যে , তিনি তার সৎ ভাই আব্দুল্লাহ বিন ইয়াক্বতুরকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি তখনও মুসলিম বিন আকীলের শাহাদাতের সংবাদ পান নি। তিনি তার সাথে একটি চিঠি পাঠালেন ,
“
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। হোসেইন বিন আলী থেকে তার বিশ্বাসী ও মুসলমান ভাইদের কাছে। আমি আল্লাহর প্রশংসা করি যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। আম্মা বা’
আদ , আমি মুসলিম বিন আলীর কাছ থেকে চিঠি পেয়েছি , যা আমাকে জানিয়েছে আপনাদের সদিচ্ছা সম্পর্কে এবং আপনাদের সম্মানিত লোকদের আনুগত্য সম্পর্কে যে , তারা আমাদেরকে সাহায্য করবে আমাদের অধিকার ফিরে পেতে। আমি আল্লাহর কাছে , যিনি সম্মানিত ও প্রশংসিত , অনুরোধ করি যেন আমরা সদয় আচরণের সাক্ষাত পাই এবং যেন আপনাদের পুরস্কার দেন শ্রেষ্ঠতম পুরস্কারের মাধ্যমে। আমি মক্কা ত্যাগ করেছি মঙ্গলবার , জিলহজ্বের আট তারিখে , তারউইয়াহর দিনে। যখন দূতরা আপনাদের কাছে পৌঁছবে , তখন আপনাদের কাজ দ্রুত করুন এবং নিজেদের প্রস্তুত করুন , কারণ আমি কয়েক দিনের মধ্যেই আপনাদের কাছে পৌঁছে যাবো। সালামুন আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।”
মুসলিম , ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে তার শাহাদাতের সাতাশ দিন আগে চিঠি লিখেছিলেন , যা ছিলো এরকম ,“
আম্মা বা’
আদ , যে ব্যক্তি পানির খোঁজে যায় সে তার পরিবারের কাছে সে সম্পর্কে মিথ্যা বলে না , (কুফার) আঠারো হাজার লোক আমার হাতে আনুগত্যের শপথ করেছে। তাই আমার চিঠি পাওয়ার সাথে সাথে দ্রুত আসুন।”
কুফার লোকজন ইমামের কাছে লিখেছিলো ,“
এখানে আপনার একলক্ষ তরবারি আছে (আপনাকে সাহায্য করার জন্য)। তাই দেরী করবেন না।”
ক্বায়েস বিন মুসাহহির সায়দাউই কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন ইমামের চিঠি নিয়ে। যখন তিনি ক্বাদিসিয়াহ পৌঁছালেন , হাসীন বিন তামীম তাকে গ্রেফতার করলো এবং তাকে উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের কাছে পাঠিয়ে দিলো। উবায়দুল্লাহ বললো ,“
মিম্বরে বসো এবং অভিশাপ দাও মিথ্যাবাদীর সন্তান মিথ্যাবাদীর ওপরে”
(ইমাম হোসেইনকে উদ্দেশ্য করে , আউযুবিল্লাহ)।
[‘
মালহুফ’
গ্রন্থে’
] অন্য এক জায়গায় বর্ণিত হয়েছে যে , যখন তিনি কুফার কাছাকাছি পৌঁছালেন হাসীন বিন তামীম তাকে তল্লাশী করার জন্য থামালেন । কায়েস ইমামের চিঠিটি বের করে ছিঁড়ে ফেললেন। তাই হাসীন তাকে উবায়দুল্লাহর কাছে পাঠালো। যখন তাকে উবায়দুল্লাহর সামনে দাঁড় করানো হলো , সে তাকে প্রশ্ন করলো যে সে কে। ক্বায়েস বললেন ,“
আমি বিশ্বাসীদের আমির ইমাম আলী (আ.) এর এবং তার সন্তানের শিয়া।”
সে তাকে জিজ্ঞেস করলো কেন সে চিঠি ছিঁড়ে ফেলেছে। ক্বায়েস বললেন ,“
যেন তুমি জানতে না পারো সেখানে কী ছিলো।”
উবায়দুল্লাহ জিজ্ঞেস করলো কে তা লিখেছিলো এবং কাকে সম্বোধন করে লেখা হয়েছিলো। ক্বায়েস বললেন ,“
এটি ছিলো হোসেইন বিন আলী থেকে কুফার একদল লোকের কাছে যাদের নাম আমি জানি না।”
উবায়দুল্লাহ ক্রোধান্বিত হয়ে উঠলো এবং বললো ,“
তুমি আমার কাছ থেকে যেতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্তনা তুমি তাদের নাম বলবে অথবা মিম্বরে উঠবে এবং অভিশাপ দিবে হোসেইন বিন আলীকে , তার বাবাকে এবং তার ভাইকে। নয়তো আমি তোমার (দেহের) প্রত্যেক জোড়া খুলে ফেলবো।”
ক্বায়েস বললেন ,“
আমি তাদের নাম প্রকাশ করবো না কিন্তু আমি অভিশাপ দিতে প্রস্তুত।”
একথা বলে মিম্বরে উঠলেন এবং আল্লাহর প্রশংসা ও তাসবীহ করতে শুরু করলেন । এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সালাম পেশ করলেন এবং ইমাম আলী (আ.) , ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হোসেইন (আ.) এর প্রশংসা শুরু করলেন এবং তাদের উপর আল্লাহর প্রচুর রহমত প্রার্থনা করলেন। এরপর তিনি অভিশাপ দিলেন উবায়দুল্লাহ , তার বাবা এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বনি উমাইয়ার প্রত্যেক অত্যাচারীর ওপরে। এরপর তিনি বললেন ,“
হে জনতা , আমাকে ইমাম হোসেইন (আ.) আপনাদের কাছে পাঠিয়েছেন এবং আমি তাকে অমুক জায়গায় ছেড়ে এসেছি। আপনারা তার ডাকে সাড়া দিন।”
যখন উবায়দুল্লাহকে জানানো হলো ক্বায়েস কী বলেছে সে আদেশ দিলো যেন তাকে প্রাসাদের ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়। এভাবে তাকে শহীদ করা হলো (তার উপর আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক)।
[ইরশাদ গ্রন্থে] বর্ণিত হয়েছে যে , তাকে তার দুহাত বাঁধা অবস্থায় নিচে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিলো এবং তার হাড়গুলো ভেঙ্গে যায় এবং তার ভিতরে তখনও প্রাণের কিছু চিহ্ন উপস্থিত ছিলো। তখন মালিক বিন উমাইর লাখমি এসে তার মাথা কেটে ফেলে। যখন লোকজন তাকে এ কাজের জন্য তিরস্কার করলো সে বললো ,“
আমি চেয়েছিলাম তাকে ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে এবং তাই আমি তা করেছি।”
ইমাম হোসেইন (আ.) হাজির (জায়গার নাম) ত্যাগ করলেন এবং আরবদের এক পানি পানের জায়গায় পৌঁছালেন যেখানে আব্দুল্লাহ বিন মূতী’
আদাউই বাস করতো। যখন সে ইমামকে দেখলো সে তার কাছে গেলো এবং বললো ,“
আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কোরবান হোক , হে আল্লাহর রাসূলের সন্তান , আপনি এখানে কেন ?”
সে ইমামকে উট থেকে নামতে সাহায্য করলো এবং তার বাড়িতে নিয়ে গেলো। ইমাম বললেন ,
“
তুমি অবশ্যই শুনে থাকবে মুয়াবিয়া মারা গেছে এবং ইরাকের লোকেরা আমাকে লিখেছে ও আমাকে তাদের দিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।”
আব্দুল্লাহ বিন মূতী’
বললো ,“
হে আল্লাহর রাসূলের সন্তান , আমি আপনাকে আল্লাহর নামে অনুরোধ করছি কুরাইশ এবং আরবদের মর্যাদার পাশাপাশি ইসলামের মযর্দা বিবেচনা করতে। আল্লাহর শপথ , আপনি যদি রাজ্য চান , যা বনি উমাইয়াদের হাতে আছে , তারা অবশ্যই আপনাকে হত্যা করবে এবং যখন তারা আপনাকে হত্যা করবে , এরপর আর কাউকে ভয় করবে না। আল্লাহর শপথ , এভাবে ইসলাম , কুরাইশ এবং আরবদের মর্যাদা লঙ্ঘিত হবে। তাই তা করবেন না এবং কুফাতে যাবেন না এবং নিজেকে বনি উমাইয়াদের কাছে অরক্ষিত করবেন না।”
কিন্তু ইমাম একমত হলেন না এবং আরও এগিয়ে যেতে চাইলেন। উবায়দুল্লাহ আদেশ দিলো ওয়াক্বিসা থেকে সিরিয়া এবং বসরা পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ করে দিতে , যেন কেউ সেখানে প্রবেশ করতে না পারে এবং বের হতে না পারে। ইমাম হোসেইন (আ.) (কুফাতে) কী হচ্ছে না জানা অবস্থায় আরও এগিয়ে কিছু বেদুইনের সাক্ষাত পেলেন। তিনি তাদের কাছে খোঁজ নিলেন এবং তারা উত্তর দিলো ,“
আল্লাহর শপথ , আমরা এছাড়া বেশী কিছু জানি না যে আমরা সেখানে ঢুকতেও পারছি না বের হয়েও আসতে পারছি না।”
ইমাম আরও এগিয়ে গেলেন।
বর্ণিত হয়েছে যে , যখন তিনি খুযাইমিয়াহতে পৌঁছালেন তিনি সেখানে তাঁবু গাড়লেন এক রাত ও এক দিনের জন্যে। সকালে তার বোন হযরত যায়নাব (আ.) তার কাছে এলেন এবং বললেন ,“
হে প্রিয় ভাই , আমি কি আপনার কাছে বলবো না কাল রাতে আমি কী শুনেছি ?”
ইমাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন তিনি কী শুনেছেন। তিনি উত্তর দিলেন , রাতে আমি যখন একটি কাজে তাঁবু থেকে বাইরে বেরিয়েছি আমি এক আহ্বানকারীকে শুনলাম বলছে ,“
হে চোখগুলো সংগ্রাম কর এবং অশ্রুতে ভরে যাও , কে আমার পরে এ শহীদদের জন্য কাঁদবে যাদের ভাগ্য টেনে নিয়ে যাচ্ছে অঙ্গীকার পূরণের জন্য।”
ইমাম হোসেইন (আ.) বললেন ,“
হে প্রিয় বোন , যা নির্ধারিত হয়েছে তা অবশ্যই ঘটবে।”
তাবারি তার‘
তারীখ’
-এ বর্ণনা করেছেন যে , ইমাম আরও এগিয়ে গেলেন এবং যারূদের ওপরে পানির জায়গায় পৌঁছালেন।
আবু মাখনাফ বলেন , বনি ফাযারার এক ব্যক্তি , যার নাম সাদ্দি , আমাকে বলেছে যে , হাজ্জাজ বিন ইউসুফের দিনগুলোতে আমরা আল হারস বিন আবি রাবি’
আর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম যা খেজুর বিক্রেতাদের রাস্তায় অবস্থিত ছিলো , যুহাইর বিন ক্বাইনের মৃত্যুর পর তা বনি আমর বিন ইয়াশকুর থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিলো এবং সিরীয়রা সেখানে আসতো না। মাখনাফ বলেন যে , আমি বনি ফাযারার লোককে বললাম ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথে মক্কা থেকে তোমাদের আসার কথা বর্ণনা কর। সে বললো , আমরা মক্কা ত্যাগ করলাম যুহাইর বিন ক্বাইন বাজালির সাথে এবং ইমাম হোসেইন (আ.) এর পাশাপাশি চলছিলাম , আমরা কোন জায়গায় ইমামের সাথে তাঁবু গাড়া অপছন্দ করছিলাম। যখনই হোসেইন বিন আলী কোন জায়গা ত্যাগ করতেন যুহাইর পিছনে থেকে যেতেন এবং যদি হোসেইন কোন জায়গায় থামতেন , যুহাইর সেখান থেকে সরে পড়তেন যতক্ষণ না আমরা এমন এক জায়গায় পৌঁছলাম যেখানে তার পাশাপাশি তাঁবু গাড়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না। অতএব আমরা এক পাশে তাঁবু গাড়লাম এবং হোসেইন অন্য পাশে। আমরা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম যখন হোসেইন (আ.) এর দূত এলো আমাদের কাছে , আমাদের সালাম জানালো এবং তাঁবুর ভিতরে প্রবেশ করলো। এরপর বললো ,“
হে যুহাইর , আবু আব্দুল্লাহ (ইমাম হোসেইন) আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন আপনাকে তার কাছে আমন্ত্রণ জানাতে।”
আমাদের হাতে যা ছিলো (খাবার) আমরা তা রেখে দিলাম , যেন এমন হয়েছে যে পাখি আমাদের মাথায় স্থির হয়ে বসে আছে।
আবু মাখনাফ বলেন যে , যুহাইরের স্ত্রী দুলহাম বিনতে আমর আমাকে বলেছে যে: আমি যুহাইরকে বললাম ,“
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সন্তান তোমার কাছে দূত পাঠিয়েছেন , কেন তার সাথে গিয়ে দেখা করছো না ? সুবহানাল্লাহ , আমি চাই তুমি তার কাছে যাও এবং শোন তিনি কী বলতে চান। এরপর ফিরে আসো।”
সে বললো যে , যুহাইর গেলেন এবং অল্প সময় পরেই উজ্জ্বল চেহারা নিয়ে ফেরত এলেন। এরপর তিনি আদেশ দিলেন যেন তার মালপত্র ও তাঁবু ইমাম হোসেইন (আ.) এর শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তিনি আমাকে বললেন ,“
আমি তোমাকে তালাক দিয়েছি। তোমার পরিবারের কাছে ফেরত যাও , কারণ আমি চাই তুমি ভালো ছাড়া আর কিছু আমার কাছ থেকে না পাও।”
[‘
মালহুফ’
গ্রন্থে] বর্ণিত হয়েছে যে , যুহাইর বিন ক্বাইন বললেন ,“
আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ইমাম হোসেইন (আ.) কে সাহায্য করার জন্য যতক্ষণ না আমি তার জন্য আমার জীবন কোরবান করি।”
এরপর তিনি তার স্ত্রীকে তার মোহরানা দিয়ে দিলেন এবং তাকে তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে হস্তান্তর করলেন যেন সে তাকে তার আত্মীয়দের কাছে পৌঁছে দিতে পারে। মহিলা উঠে দাঁড়ালেন এবং তার স্বামীকে বিদায় জানালেন অশ্রুসজল চোখে এবং বললেন ,“
আল্লাহ তোমাকে সাহায্য করুন এবং তোমার জন্য কল্যাণ প্রেরণ করুন । আমি শুধু চাই যে কিয়ামতের দিন হোসেইনের নানা (সা.) এর সামনে আমাকে মনে রাখবে।”
তাবারি বলেন যে: এরপর যুহাইর তার সাথীদের বললেন ,“
যে চায় আমার সাথে আসতে সে আসতে পারে , নয়তো এটিই হচ্ছে আমার সাথে তার শেষ চুক্তি এবং আমি একটি ঘটনা তোমাদের কাছে বর্ণনা করতে চাই - যখন আমরা লানজারের এর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলাম এবং আল্লাহ আমাদের বিজয় দিলেন। আমরা অনেক গণিমত হাতে পেলাম যখন সালমান বাহিলি (কেউ বলে সালমান ফারসী) আমাদের বললেন ,‘
তোমরা কি এই বিজয়ে সন্তুষ্ট যা তোমাদের দেয়া হয়েছে এবং যে সম্পদ তোমরা লাভ করেছো ?’
আমরা হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিলাম। তখন তিনি বললেন ,‘
যখন তোমরা মুহাম্মাদের বংশধর যুবকদের সর্দার (ইমাম হোসেইন আ.)-এর সাক্ষাত পাবে তখন তার পাশে থেকে যুদ্ধ করতে আরও খুশী হয়ো এখনকার এ সম্পদ লাভের চাইতে’
।”
যুহাইর বললেন ,“
আমি তোমাদেরকে আল্লাহর আশ্রয়ে দিচ্ছি।”
এরপর যুহাইর পুরো সময় ইমামের সাথীদের মাঝে রইলেন শাহাদাত লাভ করা পর্যন্ত।
বর্ণিত হয়েছে , যখন যুহাইরকে ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথে শহীদ করা হয় তখন তার স্ত্রী তার দাসকে কারবালায় পাঠিয়েছিলেন তার মালিককে কাফন পরানোর জন্য।
সিবতে ইবনে জাওযির‘
তাযকিরাহ’
তে লেখা আছে যে , যুহাইরকে ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথে শহীদ করা হয়েছিলো। যখন তার স্ত্রী এ সংবাদ পেলো সে তার দাসকে বললো ,“
যাও , তোমার মালিককে কাফন পরিয়ে দাও।”
যখন সেই দাস এলো , সে দেখলো ইমামের দেহ কোন কাফন ছাড়াই পড়ে আছে। সে নিজেকে বললো ,“
আমি কিভাবে আমার মালিককে কাফন পরাবো আর হোসেইন তা ছাড়া থাকবে। আল্লাহর শপথ , তা কখনোই ঘটতে পারে না।”
এরপর সে ইমাম হোসেইন (আ.) কে কাফন পরিয়ে দিলো এবং যুহাইরকে আরেকটি কাফন পরালো।
[‘
ইরশাদ’
গ্রন্থে আছে] আব্দুল্লাহ বিন সুলাইমান এবং মুনযির বিন মুশমাইল আসাদি বনি আসাদের দু ব্যক্তি , বর্ণনা করেছে যে , আমরা আমাদের হজ্ব পালন করলাম এবং আমরা ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাক্ষাত ছাড়া কিছুই চাইলাম না , তার বিষয়টি কত দূর পৌঁছেছে জানার জন্য। আমরা আমাদের ঘোড়াগুলোকে দ্রুত ছোটালাম যারূদে পৌঁছা পর্যন্ত এবং তাকে পেলাম। হঠাৎ আমরা দেখলাম একটি লোককে কুফা থেকে আসতে। যখন সে ইমাম হোসেইন (আ.) কে দেখলো সে তার পথ পরিবর্তন করার চেষ্টা করলো। ইমাম নিজে থামলেন কয়েক মুহূর্তের জন্য তার সাথে সাক্ষাত করার জন্য , কিন্তু সে কোন ভ্রক্ষেপ করলো না এবং চলে গেলো। আমরা তার দিকে অগ্রসর হলাম এবং একজন আরেকজনকে বললাম , আসো , আমরা ঐ কুফার লোকটির কাছে যাবো এবং তার কাছে জানবো কুফার অবস্থা কী। এ কথা বলে আমরা তার কাছে গেলাম ও তাকে সালাম দিলাম। সে আমাদের সালামের উত্তর দিলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম সে কোন গোত্রের লোক। সে বললো সে বনি আসাদ গোত্রের। আমরা বললাম আমরাও বনি আসাদ গোত্রের। তখন আমরা তাকে তার নাম জিজ্ঞেস করলাম। সে বললো তার নাম বাকর। আমরাও আমাদের বংশ বললাম তার কাছে এবং তার কাছে কুফার অবস্থা জানতে চাইলাম। সে বললো , হ্যাঁ , আমি কুফার ঘটনাবলী সম্পর্কে জানি। আমি তখনও কুফা ত্যাগ করি নি যখন মুসলিম বিন আক্বীল ও হানি বিন উরওয়াহকে শহীদ করা হয়। আমি দেখেছি তাদের পা দড়িতে বাধাঁ এবং তাদের মৃতদেহ কুফার রাস্তায় হিঁচড়ে নেয়া হচ্ছে।
তখন আমরা ইমামের দিকে গেলাম এবং তার সাথে হাঁটতে শুরু করলাম যতক্ষণ না রাতে তিনি সালাবিয়াহতে থামলেন। আমরা কাছে গেলাম ও তাকে সালাম দিলাম। আমাদের সালামের উত্তর দিলেন এবং আমরা বললাম ,“
আমাদের কাছে আপনার জন্য সংবাদ আছে। যদি আপনি চান তা প্রকাশ্যে আপনার কাছে বলবো এবং যদি আপনি চান আমরা তা আপনাকে গোপনে বলবো।”
তিনি আমাদের দিকে তাকালেন এবং বললেন ,“
তাদের কাছে কোন কিছু গোপন নেই।”
তখন আমরা বললাম ,“
আপনি কি ঐ উটের আরোহীকে দেখেছিলেন যে গতকাল আমাদের দিকে আসছিলো ?”
ইমাম বললেন ,“
হ্যাঁ , আমি তাকে দেখেছি এবং আমার ইচ্ছা ছিলো তার কাছ থেকে খোঁজ খবর নেয়ার।”
আমরা বললাম ,“
আল্লাহর শপথ , আমরা আপনার পক্ষ থেকে তাকে জিজ্ঞেস করেছি , সে ছিলো আমাদের গোত্রের , বুদ্ধিমান , সৎ এবং সুস্থ বিচারবোধসম্পন্ন এবং সে বললো সে তখনও কুফা ত্যাগ করে নি যখন সে দেখেছে মুসলিম বিন আক্বীল এবং হানি বিন উরওয়াহকে শহীদ করা হয়েছে এবং তাদের লাশ কুফার রাস্তায় হেঁচড়ানো হচ্ছে।”
ইমাম বললেন ,“
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্ন ইলাইহি রাজিউন। তাদের দুজনের উপর আল্লাহর রহমত হোক।”
তিনি এ কথা বেশ কয়েকবার বললেন। তারপর আমরা বললাম ,“
আমরা আল্লাহর নামে আপনাকে ও আপনার পরিবারকে বলছি এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য। আপনার কোন সাথী এবং সমর্থক কুফায় নেই। আমরা আশঙ্কা করছি হয়তো সেখানকার লোকেরা আপনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে।”
তখন ইমাম আক্বীলের সন্তানদের দিকে তাকালেন এবং বললেন ,“
তোমাদের এখন কী মতামত যেহেতু আক্বীলকে শহীদ করা হয়েছে ?”
তারা উত্তর দিলো ,“
আল্লাহর শপথ , আমরা ফিরে যাবো না যতক্ষণ না মুসলিমের রক্তের প্রতিশোধ গ্রহণ করি , অথবা নিজেরা নিহত হই।”
তখন ইমাম আমাদের দিকে তাকালেন ও বললেন ,“
তাদের (মৃত্যুর) পরে জীবনে ভালো আর কিছু নেই।”
তখন আমরা সন্দেহাতীতভাবে বুঝতে পারলাম যে তিনি যেতে চাচ্ছেন এবং বললেন ,“
আল্লাহ তোমাদের প্রতি সদয় হোন।”
এরপর বললেন ,“
আল্লাহর রহমত হোক তোমাদের দুজনের উপর।”
তখন তার সাথীরা বললেন ,“
আল্লাহর শপথ , নিশ্চয়ই আপনি মুসলিমের চাইতে বেশী মর্যাদা রাখেন। আপনি যদি কুফায় যান জনগণ আপনার ডাকে সাড়া দিবে।”
তখন ইমাম চুপ করে গেলেন এবং সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। এরপর তিনি তার সাথীদের ও দাসদের বললেন তারা যেন যত পারে তত পানি নেয় এবং এগিয়ে যায় ।
[‘
মালহুফ’
গ্রন্থে] বর্ণিত আছে , যখন সকাল হলো , কুফাবাসীদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি , যার নাম আবু হিররাহ , এলো এবং ইমাম হোসেইন (আ.) কে সালাম দিলো ও বললো ,“
হে আল্লাহর রাসূলের সন্তান , কেন আপনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে এসেছেন ?”
ইমাম বললেন ,“
আক্ষেপ তোমার জন্য হে আবু হিররাহ , বনি উমাইয়া আমার সম্পদ জব্দ করেছে কিন্তু আমি তা ধৈর্যের সাথে সহ্য করেছি। তারা আমাকে অপমান করেছে এবং আমি সহ্য করেছি , কিন্তু এরপর আমার রক্ত ঝরাতে চেয়েছে (হারাম শরীফে)। আল্লাহর শপথ , একদল অত্যাচারী লোক আমাকে হত্যা করবে এবং আল্লাহ তাদেরকে অপমানিত করবেন এবং তাদের উপর একটি ধারালো তরবারি নিয়োগ দিবেন। এরপর আল্লাহ তাদের উপর এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিবেন যে তাদেরকে অপমানিত করবে সাবার সম্প্রদায়ের চাইতে বেশী। যার শাসক ছিলো একজন নারী যে তাদের সম্পদ ও জীবনকে শাসন করতো।”
সম্মানিত শেইখ আবু জাফর কুলাইনি বর্ণনা করেন , হাক্বাম বিন উতাইবাহ থেকে যে , এক ব্যক্তি সালাবিয়াহতে ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথে সাক্ষাত করে , যখন তিনি কারবালা (অথবা কুফা) যেতে চাচ্ছিলেন। সে এলো এবং ইমামকে সালাম জানালো। তিনি উত্তর দিলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেন সে কোথাকার লোক।
সে বললো সে কুফার লোক । ইমাম বললেন ,“
আল্লাহর শপথ , হে কুফার ভাই , যদি আমি মদীনায় তোমার সাক্ষাত পেতাম তাহলে আমার বাড়িতে জিবরাঈলের চিহ্ন দেখাতাম যেখানে সে আমার নানার কাছে ওহী এনেছিলো। হে কুফার ভাই , নিশ্চয়ই প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিরা আমাদের প্রশ্ন করেছে এবং জ্ঞান লাভ করেছে , তাই এটি অবাস্তব যে আমরা এটি (শাহাদাত লাভ করা) জানবো না।”
এরপর তিনি দ্রুত এগোলেন এবং যুবালাহ পৌঁছালেন , যেখানে তিনি আব্দুল্লাহ বিন ইয়াক্বতূরের শাহাদাতের সংবাদ পেলেন।
[‘
মালহুফ’
গ্রন্থে] অন্য এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে , তিনি সেখানে (যুবালাহতে) মুসলিম বিন আক্বীলের শাহাদাত সম্পর্কে সংবাদ পেলেন।
[‘
ইরশাদ’
, তাবারির গ্রন্থে আছে] এরপর তিনি একটি চিঠি বের করলেন এবং অন্যান্যদের উপস্থিতিতে তা পড়লেন ,
“
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। আম্মা বা’
আদ , আমরা একটি হৃদয়বিদায়ক সংবাদ লাভ করেছি যে , মুসলিম বিন আক্বীল , হানি বিন উরওয়াহ এবং আব্দুল্লাহ বিন ইয়াক্বতূরকে শহীদ করা হয়েছে এবং যারা আমাদের শিয়া বলে দাবী করেছিলো তারা আমাদের পরিত্যাগ করেছে। তোমাদের মধ্যে যারা চলে যেতে চায় তারা যেতে পারে , তাদেরকে তিরস্কার করা হবে না এবং তাদের কাছ থেকে বাইয়াত উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।”
তাই লোকজন তার কাছ থেকে চলে যেতে শুরু করলো । তার সাথে শুধু তারা রইলো যারা তার সাথে মদীনা থেকে এসেছিলো এবং ঐ অল্প কয়েকজন যারা পথে তার সাথে যোগ দিয়েছিলো। তিনি এ পদক্ষেপ নিলেন , কারণ তার সাথের বেদুইনরা ভেবেছিলো তিনি এমন কোথাও যাচ্ছেন যেখানে লোকজন তার আনুগত্য করবে। তাই ইমাম তাদেরকে অন্ধকারে রাখতে চাইলেন না এবং শুধু তাদেরকে চাইলেন যারা তার সাথে থাকবে এবং যারা জানতো শেষ পর্যন্ত কী ঘটবে। কারণ ইমাম সবসময় স্মরণে রেখেছিলেন নবী ইয়াহইয়াকে (যাকারিয়া নবীর সন্তানকে) এবং ইঙ্গিত দিতেন যে তাকেও একইভাবে হত্যা করা হবে এবং তার কাটা মাথা উপহার হিসেবে নেয়া হবে (যেমন ঘটেছিলো নবী ইয়াহইয়ার বেলায়)।
[‘
মালহুফ’
গ্রন্থে] বর্ণিত হয়েছে যে ইমাম আলী বিন হোসেইন যায়নুল আবেদীন (আ.) বলেছেন ,“
আমরা মক্কা থেকে ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথে ছিলাম এবং তিনি এমন কোন জায়গায় থামেন নি ও তা ছেড়ে আসেন নি যেখানে নবী ইয়াহইয়া (আ.) কে স্মরণ করেন নি। তখন একদিন তিনি বললেন: আল্লাহর দৃষ্টিতে এ পৃথিবীর নিকৃষ্ট জিনিসগুলোর একটি হলো ইয়াহইয়ার মাথাকে বনি ইসরাইলের এক ব্যাভিচারিণীর কাছে উপহার হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।”
[‘
ইরশাদ’
গ্রন্থে’
আছে] যখন সকাল হলো , তিনি তার সাথীদের বললেন প্রচুর পরিমাণ পানি সংগ্রহ করতে এবং তারা আরও এগিয়ে গেলেন এবং বাতনুল আক্ববাহতে পৌঁছালেন এবং সেখানেই থামলেন। সেখানে তিনি আমর বিন লযন নামে বনি ইকরিমাহর এক ব্যক্তির সাক্ষাত পেলেন এবং সে ইমামকে জিজ্ঞেস করলো তিনি কোথায় যেতে চাচ্ছেন। ইমাম বললেন যে তিনি কুফায় যেতে চাচ্ছেন। একথা শুনে সে বললো ,“
আমি আল্লাহর নামে আপনাকে ফিরে যেতে অনুরোধ করছি , কারণ তরবারির মাথা ও ধারালো কিনারা ছাড়া আর কেউ আপনার মেযবান হবে না। যদি ঐ লোকেরা (কুফাবাসীরা) , যারা আপনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে , যুদ্ধের মুখোমুখি হওয়ার জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করতো এবং আপনার জন্য বিষয়গুলো ঠিকঠাক করে নিতো তাহলে তাদের কাছে যাওয়া ভালো ছিলো। কিন্তু পরিস্থিতি’
পায়্র উল্টো যেভাবে আমি আপনাকে জানালাম। তাই আমার মতে আপনি সেখানে যাওয়া পরিত্যাগ করুন।”
ইমাম বললেন ,“
হে আল্লাহর দাস , আমি বেখবর নই যা তুমি বলেছো। কিন্তু কেউ আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধে যেতে পারে না।”
তারপর তিনি বললেন ,“
আল্লাহর শপথ , এ লোকগুলো আমাকে ছাড়বে না যতক্ষণ না তারা আমার হৃৎপিণ্ডের রক্ত ঝরাবে এবং যখন তারা তা করে সারবে তখন আল্লাহ এক ব্যক্তিকে তাদের ওপরে নিয়োগ দিবেন যে তাদেরকে জাতিগুলোর মাঝে সবচেয়ে বেশী অপমানিত করবেন।”
শেইখ আবুল ক্বাসিম জাফর বিন মুহাম্মাদ বিন ক্বাওলাওয়েইহ ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) থেকে বর্ণনা করেন যে , যখন ইমাম হোসেইন বিন আলী (আ.) বাতনুল উক্ববাতে পৌঁছালেন তিনি তার সাথীদের বললেন ,“
আমি দেখতে পাচ্ছি আমাকে হত্যা করা হচ্ছে।”
তারা জিজ্ঞেস করলেন ,“
কেন , হে আবা আবদিল্লাহ ?”
তিনি উত্তর দিলেন তিনি এ সম্পর্কে স্বপ্ন দেখেছেন। তারা জিজ্ঞেস করলো তা কী। তিনি বললেন ,
“
আমি দেখলাম কিছু কুকুর আমাকে আহত করছে এবং সাদা-কালো মিশ্রিত রঙের একটি কুকুর সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট।”
এ কথা বলে তিনি আরও এগোলেন এবং শারাফে পৌঁছালেন এবং সকালে তার লোকজনকে প্রচুর পরিমাণ পানি সংগ্রহ করে নিতে বললেন এবং আরও এগিয়ে গেলেন।