শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)0%

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড) লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইতিহাস

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক: আল্লামা আব্বাস বিন মুহাম্মাদ রেযা আল কুম্মি
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 49033
ডাউনলোড: 4848

পাঠকের মতামত:

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 90 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 49033 / ডাউনলোড: 4848
সাইজ সাইজ সাইজ
শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

পরিচ্ছেদ - ১৩

কুফার পথে ইমাম হোসেইন (আ.)

আমাদের শেইখ সাদুক্ব , তার বর্ণনাকারীদের ক্রমধারার মাধ্যমে বর্ণনা করেন আমর বিন ক্বায়েস মাশরিক্বি থেকে , যিনি বলেন যে: আমি আমার চাচাতো ভাইসহ ক্বাসরে বিন মাক্বাতিলে ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে উপস্থিত হলাম।

আমরা ইমামকে সালাম দিলাম এবং আমার চাচাতো ভাই তাকে জিজ্ঞেস করলো , আপনার চুলের রঙ কলপের জন্য না রাসায়নিক রঙ-এর জন্য ?

ইমাম উত্তর দিলেন , তা কলপ করা হয়েছে , কারণ আমরা বনি হাশিমের লোকেরা , দ্রুত বৃদ্ধ হয়ে যাই।

এরপর ইমাম আমাদের দিকে ফিরে বললেন , তোমরা কি আমাকে সাহায্য করতে এসেছো ? আমি বললাম , আমার এক বিরাট পরিবার আছে এবং আমার কাছে অন্য লোকদের আমানত আছে। আমি জানি না এর পরিণতি কী হবে , তাই আমি চাই না যে লোকদের সম্পদ (যা আমার কাছে আছে) ধ্বংস হোক। আমার চাচাতো ভাইও একই রকম কথা বললো। তখন ইমাম বললেন , তাহলে এখান থেকে চলে যাও এবং আমাদের ডাক শোনার জন্য অথবা আমাদের দুঃখ দেখার জন্য থেকো না , কারণ যে আমাদের ডাক শোনে এবং আমাদের দুঃখ দেখেও আমাদের সাহায্য করতে দ্রুত এগোয় না , তখন তা মহান প্রসংশিত আল্লাহর অধিকার হয়ে যায় তাকে জাহান্নামের আগুনে মাথা নিচের দিকে দিয়ে ছুঁড়ে ফেলার।

[ ইরশাদ গ্রন্থে আছে] এরপর রাতের শেষ অংশে ইমাম আদেশ দিলেন পানি নেয়ার জন্য এবং ক্বাসরে বনি মাক্বাতিল ত্যাগ করলেন।

উক্ববাহ বিন সাম আন বলেন যে , আমরা ইমামের সাথে গেলাম এবং তিনি ঘোড়ার পিঠে বসে সামান্য ঘুমিয়ে নিলেন। যখন তিনি জেগে উঠলেন , বললেন , ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন , আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।

এরপর তিনি তা দুবার অথবা তিন বার বললেন। তার সন্তান আলী বিন হোসেইন (আ.) একটি ঘোড়াতে যাচ্ছিলেন। তিনি তার কাছে এলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন , আপনি কেন হঠাৎ আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং তাঁর কাছে ফেরত যাওয়ার কথা বললেন ? ইমাম বললেন , হে আমার প্রিয় সন্তান , ঘুমিয়ে পড়েছিলাম এবং আমি দেখলাম একজন ঘোড়সওয়ার আমার পিছন থেকে আমার কাছে এলো এবং বললো , এই লোকগুলো আরও এগিয়ে যাচ্ছে , আর মৃত্যু তাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে । আমি অনুভব করলাম তারা আমাদের রুহ যারা আমাদেরকে আমাদের মৃত্যু সম্পর্কে জানাচ্ছে।

আলী বিন হোসেইন (আ.) বললেন , হে প্রিয় বাবা , আপনার রব যেন খারাপ কোন কিছুনা আনেন , আমরা কি সত্যের উপর নই ? ইমাম বললেন , কেন নয় , তাঁর শপথ যার কাছে সব দাস ফেরত যায়। তখন আলী বললেন , তাহলে আমরা ভয় করি না , কারণ আমরা সত্যের উপর মৃত্যুবরণ করবো।

ইমাম বললেন , আল্লাহ তোমাকে অনেক পুরস্কার দিন , সে পুরস্কার যা বাবার কাছ থেকে পুত্রের জন্য যথাযোগ্য।

[ ইরশাদ , কামিল গ্রন্থে আছে] যখন সকাল হলো , ইমাম হোসেইন (আ.) ফজরের নামায পড়লেন এবং দ্রুত তার ঘোড়ায় চড়লেন এবং বাম দিকে ঘুরে স্থান ত্যাগ করলেন। তিনি চেষ্টা করলেন তার সাথীদেরকে সরিয়ে নিতে (আল হুরের সৈন্যদের থেকে)। তখন আল হুর বিন ইয়াযীদ তার কাছে এলো এবং তাকে এবং তার সাথীদেরকে তা করতে বাধা দিলো। আল হুর যত চেষ্টা করলো তাদেরকে কুফা নিতে তারা তা প্রতিরোধ করলো এবং থেমে গেলো। তারা একইভাবে চললেন এবং নাইনাওয়াতে পৌঁছালেন। যখন ইমাম হোসেইন (আ.) সেখানে থামলেন একজন অস্ত্রে সজ্জিত অশ্বারোহী কাঁধে ধনুক নিয়ে কুফা থেকে হাজির হলো। সবাই থামলো এবং তাকে দেখতে লাগলো। যখন সে কাছে এলো সে আল হুরকে ও তার সাথীদেরকে সালাম দিলো কিন্তু ইমাম ও তার সাথীদের সালাম দিলো না। এরপর সে উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের একটি চিঠি আল হুরের কাছে হস্তান্তর করলো যার বিষয়বস্তু ছিলো এরকম:

আম্মা বা আদ , আমার চিঠি ও দূত তোমার কাছে পৌঁছাবার সাথে সাথে হোসেইনের প্রতি কঠোর হও এবং তাকে তৃণহীন ভূমিতে , যেখানে কোন দুর্গ ও পানি নেই সেখানে থামতে বাধ্য করো। আমি আমার দূতকে নির্দেশ দিয়েছি তোমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন না হতে যতক্ষণ না তুমি আমার আদেশ পালন করেছো , সালাম।

যখন আল হুর উবায়দুল্লাহর চিঠি পড়লো সে তাদেরকে বললো , এটি সেনাপতি উবায়দুল্লাহর চিঠি , এতে তিনি আমাকে আদেশ দিয়েছেন যেন আমি আপনাদের থামাই যেখানে এ চিঠি আমার কাছে পৌঁছাবে এবং এ হলো তার দূত , যে আমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না যতক্ষণ না আমি তার আদেশ পালন করি।

[তাবারি বর্ণনা করেন] তখন ইয়াযীদ বিন মুহাজির আবুল শা সা কিনদি ইবনে যিয়াদের দূতের দিকে তাকালেন এবং বললেন , তুমি কি মালিক বিন নুমাইর নও ? সে হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিলো। সে ছিলো বনি কিনদা গোত্র থেকে। আবুল শা সা বললেন , তোমার মা তোমার জন্য কাঁদুক , কী আদেশ তুমি এনেছো ? সে বললো , আমি আমার ইমামের আদেশ ছাড়া কী এনেছি এবং তার প্রতি আমার আনুগত্যের শপথ পূরণ করেছি। আবুল শা সা বললেন , তুমি তোমার আল্লাহকে অমান্য করেছো এবং সে বিষয়ে তোমার ইমামকে মেনেছো যা তোমাকে ধ্বংস করবে এবং তুমি বেইজজতি ও জাহান্নামের আগুন অর্জন করবে , কত খারাপ এক ইমাম তোমার। আল্লাহ কোরআনে বলেন ,

) وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا يُنْصَرُون(

এবং আমরা তাদেরকে ইমাম বানিয়েছি যারা (জাহান্নামের ) আগুনের দিকে আহ্বান করে এবং কিয়ামতের দিনে তাদেরকে সাহায্য করা হবে না। [সূরা ক্বাসাস: ৪১]

আর তোমার ইমাম তাদের একজন।

[ ইরশাদ গ্রন্থে আছে] আল হুর এভাবে ইমাম এবং তার সাথীদেরকে সে জায়গায় থামতে বাধ্য করলো যেখানে কোন লোকালয় বা পানি ছিলো না। ইমাম বললেন , তোমাদের জন্য আক্ষেপ , আমাদেরকে ত্যাগ করো যেন আমরা এ গ্রামে (নাইনাওয়া অথবা ঘাযিরিয়া) অথবা ঐখানে (শুফিয়া) তাঁবু ফেলতে পারি।

আল হুর বললো , আল্লাহর শপথ , আমি আপনাকে তা করতে অনুমতি দিতে পারি না। তারা ঐ লোকটিকে আমার উপর গোয়েন্দা নিয়োগ করেছে। তখন যুহাইর বিন ক্বাইন বললেন , হে আল্লাহর রাসূলের সন্তান , আমি দেখতে পাচ্ছি বিষয়টি এর চেয়ে খারাপ হবে। এদের সাথে যুদ্ধ করা আমাদের জন্য এখন সহজ হবে তাদের পরে যে দল আসবে তাদের সাথে যুদ্ধ করার চাইতে। আমার জীবনের শপথ , পরে এত লোক আসবে যে তাদের মোকাবেলা করা আমাদের শক্তির বাইরে হবে। ইমাম বললেন , আমি তাদের বিরুদ্ধে (প্রথমে) যুদ্ধ করবো না।

এ কথা বলে তিনি ঘোড়া থেকে নামলেন , যে দিনটি ছিলো বৃহস্পতিবার , ২রা মহররম ৬১ হিজরি।

সাইয়েদ ইবনে তাউস বলেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) তার সাথীদের মাঝে দাঁড়ালেন এবং একটি খোতবা দিলেন। তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও তাসবীহ করলেন এবং তার নানার কাছে সালাম পাঠালেন এবং এরপর বললেন , তোমরা দেখেছো তারা কী করেছে (শেষ পর্যন্ত) এবং একটি খোতবা দিলেন যা আমরা আগে উল্লেখ করেছি যেটি তিনি আল হুরের সাথে সাক্ষাতের পর দিয়েছিলেন।

পরিচ্ছেদ - ১৪

কাববালায় ইমাম হোসেইন (আ.) এর আগমন , উমর বিন সা আদের প্রবেশ ও তখনকার পরিস্থিতি

যখন ইমাম হোসেইন (আ.) কারবালার সমতল ভূমিতে এসে থামলেন , [কামিল] তিনি জায়গাটির নাম জিজ্ঞেস করলেন। লোকজন উত্তর দিলো যে জায়গাটির নাম আক্বার । ইমাম বললেন ,

হে সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমরা আক্বার (আক্বার শব্দের অর্থ উদ্ভিদশূন্য , বন্ধ্যা) থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।

সিবতে ইবনে জাওযী তার তাযকিরাহ তে লিখেছেন যে ইমাম হোসেইন (আ.) জিজ্ঞেস করলেন জায়গাটির নাম কী। লোকজন উত্তর দিলো যে তা কারবালা এবং একে নাইনাওয়া বলেও ডাকা হয় যা সেখানে একটি গ্রামের নাম। তখন ইমাম (আ.) কাঁদতে শুরু করলেন এবং বললেন , উম্মু সালামা আমাকে জানিয়েছেন: একদিন জিবরাঈল রাসূল (সা.) এর কাছে এলেন এবং তুমি (ইমাম হোসেইন) আমার সাথে ছিলে। হঠাৎ রাসূলুল্লাহ বললেন ,

আমার সন্তানকে ছেড়ে দাও। এ কথা শুনে আমি তোমাকে ছেড়ে দিলাম এবং রাসূলুল্লাহ তোমাকে তার কোলে বসালেন। জিবরাঈল তাকে জিজ্ঞেস করলেন , আপনি কি এ বাচ্চাকে ভালোবাসেন ? রাসূলুল্লাহ হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিলেন। তখন জিবরাঈল বললেন , আপনার উম্মত তাকে হত্যা করবে এবং যদি আপনি চান আমি আপনাকে ঐ জায়গার মাটি দেখাবো যেখানে তাকে শহীদ করা হবে। রাসূলুল্লাহ সে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। তখন জিবরাঈল তার পাখা কারবালার দিকে প্রসারিত করলেন এবং রাসূলুল্লাহকে জায়গাটি দেখালেন।

তাই ইমাম হোসেইন (আ.) কে যখন বলা হলো জায়গাটির নাম কারবালা তখন তিনি মাটি শুঁকলেন এবং বললেন , এ হলো সেই জায়গা যার কথা জিবরাঈল রাসূলুল্লাহকে জানিয়েছিলেন এবং আমাকে এখানে হত্যা করা হবে।

এরপর শা বি থেকে সিবতে ইবেন জাওযি বর্ণনা করেন যে , যখন ইমাম আলী (আ.) সিফফীনের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি নাইনাওয়ার সামনে উপস্থিত হলেন , যা ছিলো ফোরাত নদীর কাছে একটি গ্রাম। ইমাম সেখানে থামলেন এবং তার সাথীদের মধ্যে যারা অযুর পানি দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন তাদের বললেন , আমাকে এ জায়গাটির নাম বলো। তারা বললো যে , এটি হলো কারবালা। একথা শুনে তিনি খুব কাঁদলেন এবং তার চোখের পানিতে মাটি ভিজে গেলো , তিনি বললেন , একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে গেলাম যখন তিনি কাঁদছিলেন , আমি জিজ্ঞেস করলাম তিনি কেন কাঁদছেন।

তিনি বললেন , এ মুহূর্তে জিবরাঈল আমার কাছে এসেছিলো এবং আমাকে জানালো আমার সন্তান হোসেইনকে হত্যা করা হবে কারবালা নামের এক জায়গায় যা ফোরাত নদীর কাছে। এরপর জিবরাঈল এক মুঠো মাটি তুললেন এবং তা আমাকে দিলেন ; আমি তা শুঁকলাম , আর তাই আমি অশ্রু নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না।

এছাড়া বিহারুল আনওয়ার -এ খারায়েজ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে , ইমাম মুহাম্মদ আল বাক্বির (আ.) বলেছেন যে , একদিন ইমাম আলী (আ.) তার সঙ্গীদের সাথে নিয়ে কারবালা থেকে এক বা দুই মাইল দূরে গেলেন। এরপর তিনি আরও এগিয়ে গেলেন এবং মাক্বদাফান নামে এক জায়গায় পৌঁছলেন এবং সেখানে ইতস্তত ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। এরপর বললেন ,

দুশ নবী ও নবীদের সন্তানদেরকে এখানে শহীদ করা হয়েছে এবং এটি থামার জায়গা , বিরাট প্রশান্তিলাভকারী শহীদদের শহীদ হওয়ার জায়গা , যা প্রাচীন লোকেরা অর্জন করতে পারে নি এবং তাদের পরে যারা আসবে তারাও তাতে পৌঁছতে পারবে না।

[ মালহুফ গ্রন্থে আছে] যখন ইমাম হোসেইন (আ.) সে জায়গায় পৌঁছলেন , তিনি জায়গাটির নাম জিজ্ঞেস করলেন। লোকজন উত্তরে বললো তা কারবালা। ইমাম বললেন , হে আল্লাহ , আমি আপনার আশ্রয় চাই কারব (দুঃখ) এবং বালা (মুসিবত) থেকে।

এরপর তিনি বললেন , এখানে দুঃখ ও মুসিবত বাস করে , তাই এখানে নামো এবং এটি আমাদের থামার জায়গা। এখানে আমাদের রক্ত ঝরানো হবে এবং এখানে আমাদের কবর দেয়া হবে। আমার নানা , আল্লাহর রাসূল (সা.) আমাকে এ বিষয়ে আগেই বলেছেন।

সবাই তার আদেশ মানলেন এবং ঘোড়া থেকে নামলেন এবং আল হুরও তার সাথীদের নিয়ে অন্য এক জায়গায় তাঁবু গাড়লেন।

[ কাশফুল গুম্মাহ গ্রন্থে আছে] সবাই তার আদেশ মানলো এবং ঘোড়া থেকে নেমে তাদের জিনিসপত্র নামালো। আর আল হুর তার সৈন্যদলকে ইমাম হোসেইন (আ.) এর উল্টো দিকে ঘোড়া থেকে নামালেন। এরপর আল হুর উবায়দুল্লাহকে চিঠি লিখলেন এ কথা জানিয়ে যে ইমাম হোসেইন (আ.) কারবালাতে থেমেছেন।

মুরুজুয যাহাব -এ উল্লেখ করা হয়েছে যে , ইমাম হোসেইন (আ.) কারবালার দিকে অগ্রসর হলেন পাঁচ শত ঘোড়সওয়ার এবং আরও একশত পদাতিক বাহিনী নিয়ে যারা ছিলেন তার পরিবার ও সাথীদের অন্তর্ভুক্ত।

মানাক্বিব থেকে বিহারুল আনওয়ার -এ বর্ণিত হয়েছে যে , যুহাইর বিন ক্বাইন বললেন , আমাদেরকে সাথে নিয়ে যান যেন ফোরাত নদীর তীরে কারবালায় আমরা থামতে পারি এবং আমরা সেখানে তাঁবু ফেলবো। তখন যদি তারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে , আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো এবং আল্লাহর সাহায্য চাইবো। ইমামের চোখ থেকে অশ্রুগড়িয়ে পড়লো এবং তিনি বললেন ,

হে আল্লাহ , আমি আপনার কাছে কারব (দুঃখ) ও বালা (মুসিবত) থেকে আশ্রয় চাই।

ইমাম সেখানে থামলেন এবং আল হুরও এক হাজার সৈন্যসহ তার মুখোমুখি হয়ে ঘোড়া থেকে নামলেন। তখন ইমাম কাগজ ও কলম আনার জন্য আদেশ করলেন এবং কুফার ভদ্র সর্দারদের কাছে একটি চিঠি লিখলেন ,

হোসেইন বিন আলী থেকে , সুলাইমান বিন সুরাদ , মুসাইয়্যাব বিন নাজাবাহ , রুফা আহ বিন শাদ্দাদ , আব্দুল্লাহ বিন ওয়া আল এবং বিশ্বাসীদের দলের প্রতি। আম্মা বা আদ , তোমরা ভালো করেই জানো যে , রাসূলুল্লাহ (সা.) বেঁচে থাকতে বলেছিলেন যে , যদি কোন ব্যক্তি দেখতে পায় শাসক নিষ্ঠুর ও অত্যাচারী (শেষ পর্যন্ত)। যা আগে তার খোতবাতে উল্লেখ করা হয়েছে তার নিজের সাথী ও আল হুরের সাথীদের উপস্থিতির আলোচনায়। এর পর তিনি কাগজটি ভাঁজ করলেন এবং তার ওপরে নিজের সীল এঁটে দিলেন এবং তা ক্বায়েস বিন মুসাহ্হার সাইদাউইকে দিলেন ( শেষ পর্যন্ত) , যা ইতোমধ্যেই বর্ণনা করা হয়েছে।

যখন তিনি ক্বায়েসের শাহাদাতের সংবাদ পেলেন তাঁর চোখ থেকে অশ্রুঝরে পড়লো এবং তিনি বললেন , হে আল্লাহ , আমাকে এবং আমার শিয়াদের (অনুসারীদের) জন্য আপনার কাছে সুউচ্চ মর্যাদা দিন এবং আমাদের জড়ো করুন আপনার রহমতের বিশ্রামস্থলে , কারণ আপনি সব কিছুর উপর শক্তি রাখেন।

তখন তার শিয়াদের (অনুসারীদের) মধ্য থেকে হিলাল বিন নাফে বাজালি লাফ দিয়ে সামনে এগুলেন এবং বললেন , হে আল্লাহর রাসূলের সন্তান , আপনার নানা রাসূলুল্লাহ (সা.) সব মানুষের অন্তরে তার ভালোবাসা জোর করে প্রবেশ করাতে পারেন নি , না তিনি পেরেছিলেন তার আদেশের অনুগত করতে ; কারণ তাদের মাঝে ছিলো মুনাফিক্বরা , যারা বলতো তারা তাকে সাহায্য করবে কিন্তু তারা তাদের অন্তরে চেয়েছিলো তাকে ধোঁকা দিতে। তার সামনে তাদের মনোভাব ছিলো মধুর চেয়ে মিষ্টি এবং তার পিছনে মাকাল ফলের চাইতে তিতা , ঐ সময় পর্যন্ত যখন আল্লাহ তার নবীকে নিজের কাছে ডেকে নিলেন। আর আপনার বাবা ছিলেন তার মতই। একদল একত্র হলো তাকে সাহায্য করার জন্য কিন্তু তাকে যুদ্ধ করতে হলো নাকেসীন , অত্যাচারী ক্বাসেতীন এবং বিকৃত মন মারেক্বীনদের বিরুদ্ধে। এরপর ইমাম আলী (আ.) এর সমাপ্তি এলো এবং তিনি বেহেশতের প্রশান্তির দিকে চলে গেলেন। আর আজ এখন যারা আমাদের সাথে আছে তারাও সেদিনের লোকদের মতই এবং লোকজন তাদের অঙ্গীকার ও আনুগত্যের শপথ ভঙ্গ করে আর কারও ক্ষতি করে নি , শুধু নিজেদেরই ক্ষতি করেছে এবং আল্লাহ আমাদেরকে তাদের কাছে অমুখাপেক্ষী করেছেন। আপনি সহনশীলতা ও হিতাকাঙ্ক্ষার সাথে যেখানে ইচ্ছা আমাদের নিয়ে যান - তা পূর্ব অথবা পশ্চিমে হোক। আল্লাহর শপথ , আমরা আল্লাহর সিদ্ধান্তকে ভয় করি না , না আমরা তার সাথে মোলাকাত অপছন্দ করি। আমরা দৃঢ়তা ও দূরদৃষ্টির সাথে সুযোগ গ্রহণ করবো এবং আপনার বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্ব করবো এবং আপনার শত্রুদের বিরুদ্ধে শত্রুতা রাখবো।

তখন বুরাইর বিন খুযাইর হামাদানি উঠলেন এবং বললেন , আল্লাহর শপথ , হে আল্লাহর রাসূল (সা.) এর সন্তান , আল্লাহ আপনার মাধ্যমে আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যেন আমরা আপনার সামনে টুকরো টুকরো হতে পারি এবং কিয়ামতের দিন আপনার নানা আমাদের জন্য সুপারিশ করেন। যারা তাদের নিজেদের নবীর নাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তারা মুক্তি পাবে না। ধিক তাদের ওপর , তারা সামনে কিয়ামতে যা দেখবে সে জন্য এবং তারা সেখানে গোঙাবে এবং আর্ত চিৎকার করবে জাহান্নামে।

এরপর ইমাম হোসেইন (আ.) তার সন্তানদের , ভাইদের ও আত্মীয়দেরকে নিজের চারদিকে জড়ো করলেন এবং কিছু সময়ের জন্য কাঁদলেন ও বললেন , হে আল্লাহ , আমরা আপনার রাসূলের বংশধর। লোকজন আমাদেরকে আমাদের বাড়িঘর থেকে টেনে বের করেছে এবং আমাদেরকে তাড়া করেছে এবং আমাদেরকে আমাদের নানার জায়গা (মদীনা) থেকে চাপ প্রয়োগ করে বের করে দিয়েছে। বনি উমাইয়া আমাদের উপর অত্যাচার করেছে। হে আল্লাহ , আমাদের অধিকারকে তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিন এবং এ অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন।

এরপর তিনি সেখান থেকে অগ্রসর হলেন এবং বুধবার অথবা মঙ্গলবার ৬১ হিজরির ২রা মহররমের দিন কারবালায় প্রবেশ করলেন। এরপর তিনি তার সাথীদের দিকে ফিরে বললেন , লোকজন পৃথিবীর দাস এবং ধর্ম শুধু তাদের মুখের কথা এবং তারা এর যত্ন নিবে যতক্ষণ তা তাদের জন্য আনন্দদায়ক এবং যখন পরীক্ষার উত্তপ্ত পাত্র এসে যায় তখন থাকে শুধু গুটিকয়েক ধার্মিক ব্যক্তি।

এরপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন , এটি কি কারবালা ?

লোকজন উত্তর দিলো , হ্যাঁ। তিনি বললেন , এ জায়গা হলো দুঃখ ও মুসিবতের জায়গা এবং এ জায়গা আমাদের উটগুলোর বিশ্রামস্থান , আমাদের থামার জায়গা , আমাদের শাহাদাতের জায়গা , যেখানে আমাদের রক্ত ঝরানো হবে।

তখন তারা সেখানে ঘোড়া থেকে নামলেন এবং আল হুর এক হাজার সৈন্যের সাথে ঘোড়া থেকে নামলেন মুখোমুখি হয়ে। এরপর তিনি উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের কাছে লিখলেন যে , হোসেইন কারবালায় শিবির গেড়েছে।