ইমাম হোসেইন (আ.) এর কিছু গুণাবলী সম্পর্কে
আমাদের অভিভাবক ইমাম হোসেইন (আ.) এর গুণাবলীগুলো স্পষ্ট এবং তার সম্মানের ও মর্যাদার উঁচু মিনার আলোকিত ও অনস্বীকার্য। সব বিষয়ে তিনি উচ্চ স্থান ও সম্মানের আসনের অধিকারী। শিয়া এবং অন্যান্যদের মধ্যে কেউ নেই যে প্রশংসা করে নি তার মহত্ত্ব , সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্বকে। তাদের মধ্যে বুদ্ধিমানরা সত্যকে চিনতে পেরেছে এবং মূর্খরা তা পরিচ্ছন্ন করে নিচ্ছে। কেনইবা তা হবে না , কারণ তার সম্মানিত সত্তা উচ্চতম নৈতিক গুণাবলীতে ঘেরাও হয়ে আছে এবং এ মহান চেহারা তার সমস্ত সত্তা জুড়ে আছে এবং সবদিক থেকে সৌন্দর্য তার ভিতরে প্রবেশ করেছে যা কোন মুসলমান অস্বীকার করতে পারে না।
তার নানা মুহাম্মাদ আল মুস্তাফা (যাকে বাছাই করা হয়েছে) (সা.) , নানী হযরত খাদিজা (আ.) , মা হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.) , ভাই ইমাম হাসান আল মুজতাবা (সম্মানিত) (আ.) , তার চাচা জাফর তাইয়ার এবং বংশধরেরা হলো পবিত্র ইমামরা যারা হাশেমী পরিবার থেকে বাছাইকৃত। কবিতায় এসেছে ,“
আপনার জ্যোতি সবার কাছে স্পষ্ট , শুধু সেই অন্ধ ছাড়া যে চাঁদ দেখতে পায় না।”
যিয়ারতে নাহিয়াতে আমাদের অভিভাবক ইমাম আল মাহদী (আল্লাহ তার আত্মপ্রকাশকে তরান্বিত করুন) তার অসাধারণ ব্যক্তিত্বের প্রশংসা করেছেন নিচের ভাষায়:
“
এবং আপনি আপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য পূর্ণ করেছেন চূড়ান্ত প্রস্তুত মনোভাবের সাথে। দানশীলতায় সুপরিচিত আপনি , মধ্যরাতের নামায সম্পন্ন করেছেন অন্ধকারে
আপনার পথ ছিলো দৃঢ় , (আপনি ছিলেন) মানুষের মধ্যে অত্যন্ত দয়াবান , অগ্রবর্তীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ , বংশধারায় উচ্চ সম্মানের অধিকারী , পূর্বপুরুষদের বিষয়ে মর্যাদাপূর্ণ এবং আপনার ছিলো প্রশংসিত আসন এবং (আরও) বেশি কিছু শ্রেষ্ঠত্ব
আপনি ছিলেন প্রশংসিত চরিত্রের , যথেষ্ট উদার
আপনি ছিলেন সহনশীল , মার্জিত , ক্রন্দনকারী , দয়াবান , জ্ঞানী , প্রচণ্ড পরিশ্রমী , একজন শহীদ ইমাম , ক্রন্দনকারী , (বিশ্বাসীদের) ভালোবাসার মানুষ , (কাফেরদের জন্য) ভয়ানক
আপনি ছিলেন আল্লাহর রাসূলের (সা.) সন্তান এবং যিনি পবিত্র কোরআন পৌঁছে দিয়েছেন এবং এ উম্মতের বাহু
এবং যিনি (আল্লাহর) আনুগত্যের পথে সংগ্রাম করে গেছেন
শপথ ও প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী
আপনি ঘৃণা করতেন সীমালঙ্ঘনকারীদের পথ
যারা সমস্যায় আছে তাদের প্রতি দানকারী
যিনি রুকু ও সিজদাকে দীর্ঘায়িত করেছেন
আপনি এই পৃথিবী থেকে বিরত থেকেছিলেন
আপনি একে সবসময় তার দৃষ্টিতে দেখেছেন যে একে শীঘ্রই ছেড়ে যাবে।”
এরপর তিনি আরও বলেন:
“
আমি নিজের প্রতি আশ্চর্য হই যে আমি তার প্রশংসা করতে যাচ্ছি যার প্রশংসায় পাতা শেষ হয়ে গেছে ; সমুদ্রের পানি আপনার শ্রেষ্ঠত্বের বই পূর্ণ করার জন্য যথেষ্ট নয় , যাতে আমি আমার আঙ্গুল ডোবাবো পাতাগুলো ওল্টানোর জন্য (তা পড়ার জন্য)।”
তার বীরত্ব
বর্ণনাকারীরা ও নির্ভরযোগ্য কর্তৃপক্ষরা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে , যখন ইমাম হোসেইন (আ.) ইরাকে যেতে চাইলেন উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ তখন সৈন্যদলের পর সৈন্যদল পাঠাতে থাকলো তার দিকে এবং পুলিশ বাহিনীকেও জড়ো করলো হত্যা করার জন্য। সে ত্রিশ হাজার সৈন্যের (পদাতিক ও অশ্বারোহী) একটি বাহিনী প্রস্তুত করলো , বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে একের পর এক তাকে অনুসরণ করার জন্য এবং সামরিক সজ্জায় সজ্জিত হয়ে তাকে সবদিক থেকে ঘেরাও করার জন্য। তারা তাকে এ সতর্ক বাণী পাঠালো:“
হয় যিয়াদের পুত্রের আদেশ মানো এবং ইয়াযীদের কাছে বাইয়াতের শপথ করো অথবা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও , যা কলিজা বের করে আনবে এবং মহাধমনী কেটে ফেলবে , আত্মাগুলোকে ওপরে পাঠিয়ে দিবে এবং দেহগুলোকে মাথা নিচু অবস্থায় মাটিতে ছুঁড়ে ফেলা হবে।”
কিন্তু ইমাম তার সম্মানিত নানা ও পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বেইজ্জতির কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করলেন। তিনি আত্মসম্মান এবং জনগণের সম্মানের বিষয়ে এক উদাহরণ সৃষ্টি করলেন এবং তরবারির নিচে (মর্যাদার) মৃত্যু বেছে নিলেন। এরপর তিনি নিজে , তার ভাই এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন ইসলামের (প্রতিরক্ষায়) এবং মৃত্যুকে বেছে নিলেন ইয়াযীদের অত্যাচারের কাছে আত্মসমর্পণের চাইতে। বদমাশ এবং ঘৃণ্য একদল সৈন্য তাদেরকে বাধা দিচ্ছিলো এবং চরিত্রহীন কাফেররা তার দিকে তীর ছুঁড়তে শুরু করলো। কিন্তু ইমাম হোসেইন (আ.) পাহাড়ের মত দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকলেন এবং কোন কিছুই তার দৃঢ়তাকে দুর্বল করতে পারলো না। শাহাদাতের যমীনের উপর তার পা দুটো পাহাড়ের চাইতে দৃঢ় ছিলো এবং যুদ্ধ অথবা মৃত্যুর ভয়ে তার হৃদয় বিচলিত হয় নি। একইভাবে তার সাহায্যকারীরা উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের বাহিনীগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং তাদের অনেককে হত্যা ও আহত করেছিলেন। তারা নিজেরা মৃত্যুবরণ করে নি যতক্ষণ না তারা তাদের অনেককে হত্যা করেছেন এবং তাদেরকে হাশেমী বংশের তেজের মাধ্যমে মৃত্যুর স্বাদ দিয়েছেন। হাশেমীদের মাঝে কেউ শহীদ হয় নি যতক্ষণ না তারা তাদের প্রতিপক্ষকে মাটিতে ফেলেছেন এবং হত্যা করেছেন এবং তাদের তরবারির হাতল পর্যন্ত তাদের দেহের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়েছেন। ইমাম হোসেইন (আ.) নিজে শত্রুদেরকে আক্রমণ করেছেন ভয়ানক সিংহের মত এবং তার মহা ক্ষমতাবান তরবারি দিয়ে তাদেরকে মাটির উপর ছুঁড়ে ফেলেছেন। বর্ণনাকারী এক ব্যক্তির উদ্ধৃতি দিয়েছে যে বলেছে , আল্লাহর শপথ , আমি তার মত কাউকে দেখি নি যে সন্তানদের , আত্মীয়দের এবং প্রিয় বন্ধুদের হারানোর পরও তার হৃদয় ছিলো শক্তিশালী ও প্রশান্ত এবং পা দুটো মাটির ওপরে সুদৃঢ়। আল্লাহর শপথ , আমি তার মত কাউকে দেখি নি , তার আগে ও পরে।”
বর্ণিত আছে যে একটি খামারের মালিকানার বিষয়ে ইমাম হোসেইন (আ.) ও ওয়ালীদ বিন উক্ববার মধ্যে বিরোধ দেখা দিলো। যদিও ওয়ালীদ ছিলো মদীনার গভর্নর (কিন্তু সে ছিলো ভুলের মধ্যে) , ইমাম ক্রোধান্বিত হলেন এবং তার মাথার পাগড়ী খুলে ঘাড়ে ঝুলালেন।
‘
ইহতিজাজ’
নামের বইতে মুহাম্মাদ বিন সায়েব থেকে বর্ণিত হয়েছে যে , একদিন মারওয়ান বিন হাকাম ইমাম হোসেইন (আ.) কে বললো ,“
যদি তোমার সম্মান ও মর্যাদা হযরত ফাতিমার মাধ্যমে না হয়ে থাকে তাহলে কিভাবে তুমি আমাদের চাইতে বেশী সম্মানিত ?”
ইমাম হোসেইন (আ.) ক্রোধান্বিত হলেন এবং তার লোহার মত শক্ত থাবা দিয়ে তার ঘাড় ধরলেন এরপর তিনি তার পাগড়ী খুলে ফেললেন এবং তা মারওয়ানের ঘাড়ে বেঁধে দিলেন এবং সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো। এরপর তিনি তাকে ফেলে চলে গেলেন।
লেখক বলেন যে , ইমাম হোসেইনের বীরত্ব একটি সুপরিচিত শব্দ হয়ে দাঁড়ালো এবং অন্যদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে তার সহনশীলতা অন্যদেরকে ক্লান্তও হতাশ করে ফেলেছিলো।
তার যুদ্ধ ছিলো রাসূল (সা.) এর বদরের যুদ্ধের মত এবং অসংখ্য শত্রুর সামনে অল্প সংখ্যক সমর্থক থাকা সত্ত্বেও তার সহনশীলতা ছিলো সিফফীন ও জামালের যুদ্ধে তার পিতা ইমাম আলী (আ.) এর মত।
ইমাম মাহদী (আ.) যিয়ারতে নাহিয়াতে বলেছেন:
“
এবং (তারা) আপনার উপর প্রথম আক্রমণ করেছিলো , তাই আপনিও রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বর্শা ও তরবারি নিয়ে।
এবং আপনি সীমালঙ্ঘনকারীদের সৈন্য বাহিনীকে সম্পূর্ণ পরাজিত করেছিলেন
এবং আপনি যুদ্ধের ধুলার ভিতরে ঘেরাও হয়ে পড়েছিলেন এবং যুলফিক্বার নিয়ে যুদ্ধ করছিলেন এমন তীব্রতায় যেন আপনি ছিলেন আলী- যাকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছিলো
তাই যখন শত্রুরা দেখলো আপনি ছিলেন স্থির ও শান্তকোন ভয় ও দুশ্চিন্তা ছাড়া , তারা পরিকল্পনা করলো এবং আপনার জন্য ফাঁদ তৈরী করলো এবং তারা আপনার সাথে যুদ্ধ শুরু করলো চালাকি ও অসৎ পন্থায় এবং অভিশপ্ত (উমর বিন সা’
আদ) তার সৈন্যবাহিনীকে আদেশ করলো (আপনার দিকে) পানি সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করে দিতে। এবং তাদের সবাই তাদের অত্যাচার শুরু করলো আপনাকে হত্যা করার জন্য এবং আপনার বিরুদ্ধে সারিবদ্ধ হওয়ার জন্য দ্রুত এগিয়ে এলো তারা আপনার দিকে আঘাত করলো তীর ছুঁড়ে এবং তাদের ব্যর্থ হাতগুলো আপনার দিকে প্রসারিত করলো তারা আপনার অধিকার বিবেচনা করলো না , না তারা আপনার বন্ধুদের তরবারি দিয়ে হত্যা করাকে গুনাহ মনে করলো , (এবং) তারা আপনার জিনিসপত্র লুট করে নিলো আপনি (যুদ্ধের) দুঃখ-কষ্ট দৃঢ়তার সাথে সহ্য করলেন এবং তাদের কাছ থেকে আসা বিপদ মুসিবত সহ্য করলেন এমনভাবে যে আকাশের ফেরেশতারা আপনার ধৈর্য দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলো এরপর শত্রুরা আপনাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেললো এবং আপনাকে আহত করলো এবং তারা দেয়ালের মত দাঁড়িয়ে আপনাকে আপনার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললো , আপনার জন্য আর কোন সাহায্যকারী রইলো না , আপনি ধৈর্য ও বিরতিহীন প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদেরকে আপনার পরিবারের নারী ও শিশুদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখছিলেন যতক্ষণ পর্যন্তনা তারা আপনাকে আপনার ঘোড়ার পিঠ থেকে জোর করে নামিয়ে দিলো এবং আপনি মাটিতে পড়ে গেলেন আহত অবস্থায় ঘোড়াগুলো আপনাকে তাদের পায়ের নিচে পিষছিলো , বর্বর বাহিনী তাদের তরবারি নিয়ে আপনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো মৃত্যুর ঘাম আপনার কপালে দেখা দিলো এবং আপনার হাত এবং পা ভাঁজ হলো এবং সোজা হলো ডান দিকে ও বা দিকে (অসুবিধা বোধ করার কারণে) আপনি আপনার পরিবার ও ব্যক্তিগত জিনিসগুলোর বিষয়ে আশঙ্কা করছিলেন যখন এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিজের ব্যথার কারণে হয়তো আপনি আপনার সন্তান সন্ততি ও পরিবার এর জন্য নাও ভাবতে পারতেন।”
তার জ্ঞান
মনে রাখা দরকার যে , আহলুল বাইত (আ.) এর জ্ঞান আল্লাহর কাছ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান এবং তারা অন্যের কাছ থেকে জ্ঞান লাভের মুখাপেক্ষী ছিলেন না। তাদের বর্তমান জ্ঞান অতীতের মতই ছিলো (কোন পরিবর্তন ছাড়া)। যুক্তি-তর্ক , গভীর ভাবনা অথবা অনুমানের কোন প্রয়োজন তাদের হতো না এবং তাদের বুদ্ধিমত্তা মানুষের আয়ত্তের বাইরে। যারা তাদের শ্রেষ্ঠত্ব গোপন করার চেষ্টা করে তারা হচ্ছে তাদের মত যারা সূর্যের চেহারাকে চাদর দিয়ে ঢাকতে চায়। জেনে রাখা উচিত যে , তারা গোপন বিষয়গুলোকে পরীক্ষা করে দেখেছেন প্রকাশ্য অবস্থায় থেকেই। তারা জ্ঞানের বাস্তবতা বুঝতে পেরেছেন ইবাদতের নির্জনতায় থেকে এবং তারা তাদের সাথী ও বন্ধুদের ধারণার চাইতে অনেক বেশী উন্নত ছিলেন। তারা সাধারণ লাভ অন্বেষণকারী ও তাদের যারা পরীক্ষা করতে চাইতো তাদের সামনে থামতেন না এবং উত্তেজিতও হতেন না অথবা অলসতা দেখাতেন না। তারা তাদের অবস্থায় ও আলোচনায় ছিলেন প্রজ্ঞাপূর্ণ এবং তাদের যুগে তুলনাবিহীন। বিশেষত্বে ও সম্মানে , শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তারা একে অপরের সাথে ছিলেন সম্পূর্ণ একমত। যখন তারা কথা বলার জন্য মুখ খুলতেন অন্যরা চুপ থাকতো। যখন তারা কথা বলতেন অন্যরা (আশ্চর্য হয়ে) তাদের কথা শুনতো। এভাবে কোন প্রচেষ্টাকারী তাদের কাছে (উচ্চস্থানে) পৌঁছাতে পারতো না। (তাদের অতিক্রম করার) লক্ষ্যও পূর্ণ হতো না এবং তাদের নীতি সফলতা লাভ করে নি। তারা এমন গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন যা ছিলো তাদের প্রতি সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে দান এবং সত্যবাদী (রব) ঘোষণা করেছেন যে , তিনি তাদের বিষয়ে সন্দেহ দূর করে দিয়েছেন। তিনি বিশেষভাবে প্রশংসা করেছেন তাদের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের ঐ পর্যন্ত যে তিনি তাদেরকে প্রমাণ ও যুক্তি-তর্কের ঊর্ধ্বে স্বাধীন করে দিয়েছেন। এ কারণে তারা বলেছেন ,“
আমরা হলাম মানবজাতির অভিভাবক আব্দুল মোত্তালিবের সন্তান।”
তার উদারতা ও দানশীলতা
বর্ণিত হয়েছে যে , একদিন ফাতিমা যাহরা (আ.) তার দুই ছেলে ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হোসেইন (আ.) কে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে নিয়ে গেলেন যিনি খুব অসুস্থ ছিলেন (এবং পরে তিনি এ কারণেই ইন্তেকাল করেন)। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে অনুরোধ করলেন তার দুই ছেলেকে (তার গুণাবলী থেকে) কিছু উত্তরাধিকার হিসেবে দিতে। এতে রাসূল (সা.) বললেন ,“
হাসানের জন্য , সে আমার খোদাভীতি ও শ্রেষ্ঠত্ব উত্তরাধিকার হিসেবে লাভ করবে এবং হোসেইন , সে আমার উদারতা ও বীরত্ব উত্তরাধিকার হিসাবে লাভ করবে।”
এটি সুপরিচিত যে , ইমাম হোসেইন (আ.) অতিথিদের আপ্যায়ন ও সেবা করতে ভালোবাসতেন এবং অন্যের আশা পূরণ করতেন এবং আত্মীয়দের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ছিলেন। তিনি দরিদ্র প্রতিবন্ধীদের ও দরিদ্রদের উপহার দিতেন , অভাবীদের দান করতেন , বস্ত্রহীনকে পোষাক দিতেন , ক্ষুধার্তকে খাওয়াতেন , ঋণগ্রস্তদের ঋণমুক্ত করতেন , ইয়াতিমদের স্নেহের সাথে হাত বুলিয়ে দিতেন এবং সাহায্যপ্রার্থীদের সাহায্য করতেন , যখনই তিনি কোন সম্পদ লাভ করতেন তিনি তা অন্যদের মাঝে বন্টন করে দিতেন।
বর্ণিত হয়েছে যে , একবার মুয়াবিয়া মক্কায় গিয়েছিলো এবং সে ইমাম (আ.) কে বেশ কিছু সম্পদ এবং পোষাক উপহার দিলো , কিন্তু তিনি সেগুলো গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন। এরকমই ছিলো দানশীল ও উদার ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য এবং প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারীদের চরিত্র। তার ব্যক্তিত্ব তার দয়ালু স্বভাবের স্বাক্ষী বহন করতো এবং তার বক্তব্য তার অতি উন্নত চরিত্র প্রকাশ করতো এবং তার কর্মকাণ্ডতার উন্নত গুণাবলীকে প্রকাশ করতো।
মনে রাখা উচিত যে , দানশীলতার সাথে প্রশস্তহৃদয় ও অতি ক্ষমাশীলতা একমাত্র আহলুল বাইত (আ.) এর মাঝে একত্র হয়েছে , যা অন্যদের মাঝে শুধু ভাসা ভাসা। আর তাই বনি হাশিমের কারো বিরুদ্ধে কৃপণতার অভিযোগ উঠে নি , কিন্তু তাদের দানশীলতাকে মেঘের (বৃষ্টি) সাথে এবং তাদের সাহসিকতাকে সিংহের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
ইমাম আলী যায়নুল আবেদীন (আ.) সিরিয়াতে তার একটি খোতবাতে বলেছিলেন:“
আমাদেরকে দেয়া হয়েছে প্রজ্ঞা , সহনশীলতা , দানশীলতা , অতি উন্নত বক্তব্য , সাহসিকতা এবং বিশ্বাসীদের অন্তরে (আমাদের জন্য) ভালোবাসা।”
নিশ্চয়ই তারা উদ্বুদ্ধকারী সমুদ্র এবং বৃষ্টিভরা মেঘমালা। ভালো কাজ সম্পাদন তারা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে। তারা ঐশী আইন কানুনকে পুরোপুরি নিজেদের চরিত্র বানিয়েছেন এবং অধ্যাবসায়ের মাধ্যম করেছেন এবং সম্মানের সর্বোচ্চ স্থানের স্বীকৃতি বানিয়েছেন , কারণ তারা ছিলেন উন্নত পিতার উন্নত সন্তান। তারা ছিলেন জাতির অভিভাবক , জনগণের মাঝ থেকে বাছাইকৃত , আরবদের সর্দার , আদমের সন্তানদের মাঝে সবচেয়ে সম্মানিত , পৃথিবীর মাঝে সার্বভৌম ব্যক্তিত্বগণ , আখেরাতের পথপ্রদর্শক , আল্লাহর দাসদের মাঝে তাঁর প্রমাণ (হুজ্জাত) এবং শহরগুলোতে তাঁর আমানতদার , তাদের শ্রেষ্ঠত্ব স্পষ্ট এবং তাদের মাঝে তা দৃশ্যমান।
অন্যরা তাদের কাছ থেকে (দানশীলতার) শিক্ষা গ্রহণ করেছে এবং তাদের পদ্ধতিগুলো থেকে হেদায়াত লাভ করেছে। কিভাবে তিনি তার সম্পদের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করবেন না , যিনি তার পা ফেলেছেন (যুদ্ধক্ষেত্রে তার জীবন কোরবান করার জন্য) , এবং কিভাবে তিনি এ পৃথিবীর বিষয়গুলোকে নীচ বলে ভাববেন না যিনি সাহস (রিয্ক্ব) জড়ো করেছেন পরকালের জন্য। তার বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে প্রস্তুত তার জীবনকে কোরবান করতে যুদ্ধক্ষেত্রে , যে , তিনি তার সম্পদের সাথে কখনো সম্পর্কচ্ছেদ করবেন কিনা। তাহলে সে কিভাবে , যে এ পৃথিবীর আনন্দকে পরিত্যাগ করেছে , এ ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর জিনিসগুলোকে মূল্য দিবে ?
কবি বলেছেন ,“
তিনি নিজের বিষয়ে উদার , যেখানে অতি উদার ব্যক্তিরাও কৃপণ , অথচ নিজ সত্তার উদারতা (আত্মত্যাগ) উদারতার সর্বোচ্চ শিখর।”
তাই বলা হয় যে , উদারতা ও সাহসিকতা এক বুক থেকে দুধ পান করেছে এবং একের সাথে অন্যটি যুক্ত। তাই প্রত্যেক উদার ব্যক্তি সাহসী এবং প্রত্যেক সাহসী ব্যক্তি উদার - এটি সাধারণ প্রকৃতি।
এ বিষয়ে আবু তামাম বলেছে ,“
যখন তুমি আবু ইয়াযীদকে কোন সমাবেশে অথবা যুদ্ধক্ষেত্রে দেখো অথবা দেখো ভাঙচুর করছে তখন তুমি একমত হবে যে উদারতা সাহসিকতার নিকটবর্তী হচ্ছে এবং অতি দানশীলতা বীরত্বের নিকটবর্তী হচ্ছে।”
আবুত তাইয়্যেব বলেছে ,“
তারা বলে অতি দানশীলতা যথেষ্ট নয় , যতক্ষণ পর্যন্তনা সে পথিকের জন্য বাড়ি বানিয়েছে , আমি বলি উদার ব্যক্তির সাহস তাকে কৃপণতার বিরুদ্ধে সতর্ক করে। হে উদারতা , তুমি একটি ঘূর্ণায়মান স্রোতের মত পরিণত হতে পারো , তার তরবারি তাকে ডুবে যাওয়া থেকে নিরাপত্তা দিয়েছে।”
একবার মুয়াবিয়া বনি হাশিমের প্রশংসা করলো তাদের অতি দানশীলতার জন্য , যুবাইরের সন্তানদেরকে সাহসিকতার জন্য , বনি মাখযুমকে তাদের দাম্ভিকতার জন্য এবং বনি উমাইয়াকে সহনশীলতার জন্য। যখন ইমাম হাসান (আ.) তার এ কথা শুনলেন তখন তিনি বললেন ,“
আল্লাহ তাকে হত্যা করুন! সে চায় যে বনি হাশিম (তার প্রশংসা শুনে) তাদের সম্পদ বিলিয়ে দিক এবং তার ওপরে নির্ভরশীল হয়ে যাক এবং যুবাইরের সন্তানরা (তার প্রশংসায় প্রভাবিত হয়ে) যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হোক এবং বনি মাখযুম যেন নিজেদের নিয়ে অহংকার করে যেন অন্য লোকেরা তাদের অপছন্দ করে এবং যেন বনি উমাইয়া (উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে) ঝুঁকে পড়ে যেন জনগণ তাদেরকে পছন্দ করতে শুরুকরে।”
মুয়াবিয়া সত্য বলেছে , যদিও সত্যবাদিতা তার কাছ থেকে অনেক দূরে , কিন্তু প্রায়ই এমন হয় যে একজন মিথ্যাবাদী (অনিচ্ছাকৃতভাবে) সত্য বলে ফেলে। যখন বনি হাশিমের বিষয়ে , মুয়াবিয়া বলেছে তাদের মাঝে দানশীলতা আছে এবং সাহসিকতা ও মধ্যপন্থা তাদের মাঝে আছে , আর জনগণ তাদেরকে শুধু বাইরের দিকে অনুসরণ করতো। সমস্ত মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ভালো যেসব গুণাবলী বন্টিত ছিলো সেগুলো তাদের মাঝে এক জায়গায় জমা হয়েছিলো। এটিই ছিলো সত্য এবং বাকী সব মিথ্যা।
তার বাগ্মিতা , বিরত থাকা , বিনয় ও ইবাদত
যদি আমরা তার বাগ্মিতা , উন্নত ইবাদত , বিনয় এবং গুণাবলী সম্পর্কে বর্ণনা করতে শুরু করি তাহলে আমরা এ বইয়ের সীমানা অতিক্রম করে ফেলতে পারি। বরং আমরা তার প্রতি রাসূল (সা.) এর ভালোবাসা ও স্নেহ সম্পর্কিত হাদীসগুলো বর্ণনা করবো।
শেইখ মুহাম্মাদ ইবনে শাহর আশোব তার‘
মানাক্বিব’
-এ ইবনে উমর থেকে বর্ণনা করেছেন যে , একদিন রাসূল (সা.) মিম্বরে বসে খোতবা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ (শিশু) ইমাম হোসেইন (আ.) এলেন এবং তার পা তার জামার সাথে পেঁচিয়ে গেলো এবং তিনি পড়ে গেলেন এবং কাঁদতে শুরু করলেন। পবিত্র রাসূল (সা.) মিম্বর থেকে নেমে তাকে তুলে নিলেন এবং বললেন ,“
আল্লাহ শয়তানকে হত্যা করুন! নিশ্চয়ই সে হৃদয়কাড়া শিশু। তাঁর শপথ , যার হাতে আমার জীবন , আমি জানি না কিভাবে আমি মিম্বর থেকে নেমে এসেছি।”
আবু সাদাত তার‘
মানাক্বিব’
-এ রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পরিবার (আহলুল বাইত)-এর প্রশংসাকালে ইয়াযীদ বিন যিয়াদ থেকে বর্ণনা করেছেন , যে একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত আয়েশার বাড়ি থেকে বেরিয়ে হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.) বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং তিনি ইমাম হোসেইন (আ.) কে কাঁদতে শুনলেন। তিনি বললেন ,“
হে ফাতিমা , তুমি কি জানো না হোসেইনের কান্না আমাকে অনেক কষ্ট দেয় ?”
ইবনে মাজাহ-এর‘
সুনান’
এবং যামাখশারির‘
ফায়েক্ব’
থেকে‘
মানাক্বিব’
-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে , একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি গলি দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং দেখলেন ইমাম হোসেইন (আ.) অন্যান্য শিশুদের সাথে খেলছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তার হাত দুটো লম্বা করলেন এবং তাকে ধরতে চেষ্টা করলেন , কিন্তু ইমাম হোসেইন (আ.) এদিক ওদিক দৌড়াতে লাগলেন যেন তাকে ধরা না যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) আনন্দ পেলেন এবং শেষ পর্যন্ত তাকে ধরে ফেললেন। এরপর তিনি তার একটি হাত তার থুতনির নিচে এবং অন্য হাতটি তার মাথায় রাখলেন , এরপর তাকে উঁচু করলেন এবং তাকে চুমু দিয়ে বললেন ,“
হোসেইন আমার থেকে এবং আমি হোসেইন থেকে , আল্লাহ তার সাথে বন্ধুত্ব করেন যে হোসেইনকে ভালোবাসে। নিশ্চয়ই হোসেইন গোত্রগুলোর (বনি ইসরাইলের বারোটি গোত্রের) একটি।”
‘
মানাক্বিব’
-এ আব্দুর রহমান বিন আবি লাইলা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে , তিনি বলেছেন: একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সামনে বসা ছিলাম যখন ইমাম হোসেইন (আ.) এলেন এবং রাসূলের পিঠের উপর লাফ দিয়ে উঠতে লাগলেন এবং খেলতে লাগলেন। রাসূল (সা.) বললেন ,“
তাকে ছেড়ে দাও।”
একই বইতে লাইস বিন সা’
আদ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে যে ,“
একদিন রাসূল (সা.) জুম’
আর নামাযের ইমামতি করছিলেন। তখন ইমাম হোসেইন (আ.) , যিনি তখন শিশু ছিলেন , তার পাশে বসা ছিলেন। যখন রাসূল (সা.) সিজদায় গেলেন হোসেইন তার পিঠে উঠে বসলেন এবং পায়ে আঘাত করে বললেন ,‘
হিল হিল’
(যে শব্দ করে ঘোড়া ও উটকে জোরে ছুটতে বলা হয়)। রাসূল (সা.) তাকে হাত দিয়ে ধরে নামালেন এবং তাকে পাশে বসিয়ে দিলেন এবং এরপরে উঠে দাঁড়ালেন। এরপর আবার যখন রাসূল (সা.) সিজদা করতে গেলেন তখন আবার তা ঘটলো , যতক্ষণ পর্যন্তনা তিনি নামায শেষ করলেন।”
হাকিমের‘
আমালি’
থেকে বর্ণিত হয়েছে যে , আবু রাফে বলেছেন যে ,“
একদিন আমি‘
মিদহাহ’
নামে একটি খেলা খেলছিলাম ইমাম হোসেইন (আ.) সাথে , তখন তিনি ছোট শিশু ছিলেন। যখন আমি জিতলাম , তখন আমি তাকে বললাম আমাকে তার পিঠে চড়তে দিতে (যা খেলার নিয়ম ছিলো) , তিনি বললেন যে , আমি কি তার পিঠে চড়তে চাই যে রাসূলের (সা.) পিঠে চড়েছে ? তাই আমি তা মেনে নিলাম। এরপর যখন তিনি জিতলেন আমি বললাম আমিও তাকে আমার পিঠে উঠতে দিবো না যেরকম তিনি করেছেন। কিন্তু তখন তিনি বললেন যে , আমি কি পছন্দ করি না তাকে কোলে নিতে যাকে রাসূল (সা.) কোলে নিয়েছেন ? আমি এখানেও তা মেনে নিলাম।”
একই বইতে ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) থেকে হাফস বিন গিয়াসের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে যে ,“
একদিন রাসূল (সা.) নামায পড়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেন এবং ইমাম হোসেইন (আ.) তার পাশে দাঁড়ানো ছিলেন । রাসূল (সা.) তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বললেন কিন্তু ইমাম তা উচ্চারণ করতে পারলেন না। রাসলূ (সা.) তা আবার বললেন কিন্তু ইমাম তা পারলেন না। রাসূল (সা.) তার তাকবীর সাত বার বললেন এবং সপ্তম বার ইমাম হোসেইন (আ.) তা সঠিকভাবে উচ্চারণ করলেন।”
ইমাম সাদিক্ব (আ.) বলেন যে , এ জন্য নামায শুরুর আগে সাত বার তাকবীর বলা সুন্নাত।
একই বইতে নাক্কাশের তাফসীর থেকে ইবনে আব্বাসের বর্ণনা এসেছে যে , তিনি বলেছেন , একদিন আমি রাসূল (সা.) এর সামনে বসা ছিলাম। এ সময় তার ছেলে ইবরাহীম তার বাম উরুর ওপরে এবং ইমাম হোসেইন (আ.) তার ডান উরুর ওপরে বসা ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের একজনের পর আরেকজনকে চুমু দিলেন। হঠাৎ জিবরাঈল অবতরণ করলেন ওহী নিয়ে। যখন ওহী প্রকাশ শেষ হলো রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন ,“
আমার রবের কাছ থেকে জিবরাঈল এসেছিলো এবং আমাকে জানালো যে সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে তিনি এ দুই শিশুকে একত্রে থাকতে দিবেন না এবং একজনকে অপরজনের মুক্তিপণ (বিনিময়) করবেন।”
রাসূল (সা.) ইবরাহীমের দিকে তাকালেন এবং কাঁদতে শুরু করলেন এবং বললেন ,“
তার মা একজন দাসী , যদি সে মারা যায় আমি ছাড়া কেউ বেদনা অনুভব করবে না কিন্তু হোসেইন হলো ফাতিমা এবং আমার চাচাতো ভাই আলীর সন্তান এবং আমার রক্ত-মাংস , যদি সে মারা যায় শুধু আলী এবং ফাতিমা নয় আমিও ভীষণ ব্যথা অনুভব করবো। তাই আলী ও ফাতিমার শোকের চাইতে আমি আমার শোককে বেছে নিচ্ছি। তাই হে জিবরাঈল , ইবরাহীমকে মৃত্যুবরণ করতে দাও , কারণ আমি হোসেইনের জন্য তাকে মুক্তিপণ করছি।”
ইবনে আব্বাস বলেছেন যে , তিন দিন পর ইবরাহীম মৃত্যুবরণ করলো। এরপর থেকে যখনই রাসূল (সা.) হোসেইনকে দেখতেন , তিনি তাকে চুমু দিতেন এবং তাকে নিজের দিকে টেনে নিতেন এবং তার ঠোঁটগুলোতে নিজের জিভ বুলাতেন। এরপর তিনি বলতেন ,“
আমার জীবন তার জন্য কোরবান হোক যার মুক্তিপণ হিসাবে আমার ছেলে ইবরাহীমকে দিয়েছি। আমার পিতা- মাতা তোমার জন্য কোরবান হোক , হে আবা আবদিল্লাহ ।”