শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)5%

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড) লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইতিহাস

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 90 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 51367 / ডাউনলোড: 5502
সাইজ সাইজ সাইজ
শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

1

2

3

4

5

ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের চিঠি

আম্মা বা আদ , হে হোসেইন , আমাকে জানানো হয়েছে যে , তুমি কারবালায় থেমেছো। ইয়াযীদ আমাকে লিখেছে , আমি যেন বিছানায় মাথা না রাখি এবং সন্তুষ্ট না হই যতক্ষণ না আমি তোমাকে আল্লাহর কাছে পাঠাচ্ছি অথবা তুমি আমার কাছে এবং ইয়াযীদ বিন মুয়াবিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ কর। সালাম।

যখন এ চিঠি ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে পৌঁছলো , তিনি তা পড়লেন এবং তা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললেন , যে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে মানুষের সন্তুষ্টি খোঁজে সে কখনই সফলতা লাভ করে না।

দূত তাকে চিঠির উত্তর দিতে বললে ইমাম বললেন , তার জন্য কোন উত্তর নেই , আছে গযব (আল্লাহর)।

যখন দূত উবায়দুল্লাহর কাছে পৌঁছলো এবং ইমামের বাণী তার কাছে পৌঁছে দিলো সে ক্রোধান্বিত হলো এবং উমর বিন সা আদের দিকে তাকালো এবং তাকে ইমাম হোসেইন (আ.) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য নিয়োগ দিলো। এর আগে উবায়দুল্লাহ রেই শহরের শাসনভার উমর বিন সা আদকে দান করেছিলো। যখন উমর অপারগতা প্রকাশ করলো উবায়দুল্লাহ তাকে সে পদ ফেরত দিতে বললো যা তাকে দান করা হয়েছিলো। উমর কিছুটা সময় চেয়ে নিলো এবং এরপর তার কাছ থেকে শাসনভার কেড়ে নেয়া হবে এ ভয়ে রাজী হলো।

লেখক বলেছেন যে এটি (যুদ্ধ করতে উমর বিন সা আদের অপারগতা প্রকাশ) আমার কাছে সত্য বলে মনে হয় না। নির্ভরযোগ্য জীবনী লেখকগণ এবং ঐতিহাসিকরা একমত যে উমর বিন সা আদ কারবালায় পৌঁছায় ইমাম হোসেইন (আ.) সেখানে প্রবেশের একদিন পর এবং তা ছিলো মহররমের তিন তারিখ (তাই তা প্রমাণ করে যে সে তার জন্য শুরু থেকেই প্রস্তুত ছিলো)।

শেইখ মুফীদ , ইবনে আসীর এবং অন্যান্যরা বর্ণনা করেন যে , উমর বিন সা আদ বিন আবি ওয়াক্কাস পর দিন চার হাজার ঘোড়সওয়ার সৈন্য নিয়ে কুফা ত্যাগ করে কারবালার দিকে রওনা দিলো। ইবনে আসীর বলেন যে , উমর বিন সা আদের কারবালায় যাওয়ার কারণ হলো যে , উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ আগে তাকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলো দাশতি -তে ,সুসজ্জিত চার হাজার সৈন্য দিয়ে। কারণ দাইলামের লোকেরা এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিলো এবং দ্বিতীয়ত উবায়দুল্লাহ তাকে রেই শহরের দায়িত্ব দিয়েছিলো। উমর বিন সা আদ হাম্মামুল আ য়ানে তাঁবু গেড়েছিলো। যখন ইমাম হোসেইন (আ.) এর বিষয়টি এ পর্যায়ে পৌঁছলো , উবায়দুল্লাহ উমর বিন সা আদকে ডাকলো এবং বললো , যাও , হোসেইনের মোকাবিলা করো এবং কাজ শেষ করে তোমার অবস্থানে ফিরে যাও। উমর বিন সা আদ নিজেকে সরিয়ে নিতে চাইলো , তখন উবায়দুল্লাহ বললো , ঠিক আছে , তাহলে তুমি তা ফেরত দাও যা তোমাকে দেয়া হয়েছে। যখন উবায়দুল্লাহ এরকম বললো তখন উমর জবাব দিলো , আজকের দিনটি আমাকে সময় দিন যেন আমি একটি সিদ্ধান্তনিতে পারি। এ কথা বলে সে স্থান ত্যাগ করলো এবং হিতাকাঙ্ক্ষীদের কাছে মতামত চাইলো। তাদের সকলে তাকে তা থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিলো। তার ভাগ্নে হামযা বিন মুগীরা বিন শা বাহ তার কাছে এলো ও বললো , আমি আপনাকে আল্লাহর নামে অনুরোধ করছি হোসেইনকে মোকাবিলা না করার জন্য , কারণ তা করলে আপনি গুনাহ করবেন এবং তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। আল্লাহর শপথ , যদি আপনাকে পৃথিবী , এর সম্পদ ও পৃথিবীর উপর রাজত্ব ছাড়তে হয় , তাহলেও এটি আপনার জন্য উত্তম তার চাইতে যে , আপনি আল্লাহর কাছে যাবেন আর হোসেইনের রক্ত আপনার ঘাড়ে থাকবে।

উমর বললো সে তা করবে না এবং সারারাত ভেবে কাটালো এই বলে , আমি কি রেই-এর শাসনভার প্রত্যাখ্যান করতে পারি , অথচ তা আমার স্বপ্ন , নাকি ফেরত আসবো হোসেইনের হত্যায় অভিযুক্ত হয়ে ? যদি আমি তাকে হত্যা করি আমি জাহান্নামে চলে যাবো , যেখান থেকে পালানোর কোন পথ নেই অথচ রেই-এর শাসনভার আমার চোখের জ্যোতি।

এরপর সে উবায়দুল্লাহর কাছে ফিরে গেলো এবং বললো , আপনি আমাকে এ কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন এবং সব মানুষ তা শুনেছে। যদি আপনি চান আপনি আমাকে এ কাজে পাঠাতে পারেন অথবা কুফার সম্মানিতদের মাঝে থেকে অন্য কাউকে হোসেইনের বিরুদ্ধে পাঠাতে পারেন , যে আমার চাইতে যোগ্য হবে। এরপর সে তাদের কারো কারো নাম উল্লেখ করলো। উবায়দুল্লাহ বললো , যদি আমাকে অন্য কাউকে পাঠাতে হয় তাহলে আমি তোমার মতামত জিজ্ঞেস করবো না। তাই এখন যদি তুমি কারবালায় যেতে প্রস্তুত থাকো আমাদের সৈন্যদলের উপর আদেশের দায়িত্ব নিয়ে , তাহলে যাও অথবা যে পদ তোমাকে দেয়া হয়েছে তা ফেরত দাও। এ কথা শুনে উমর বললো , আমি নিজেই যাবো। এ কথা বলে সে রওনা দিলো এবং শেষ পর্যন্ত ইমাম হোসেইন (আ.) এর উল্টোদিকে তাঁবু ফেললো।

লেখক বলছেন যে , ইমাম আলী (আ.) যে ভবিষ্যদ্বাণী বাণী করেছিলেন তা সত্যে পরিণত হয়েছিলো। সিবতে ইবনে জাওযি তার তাযকিরাহ তে বর্ণনা করেছেন যে , ইমাম আলী (আ.) এর মর্যাদা এখানে সুস্পষ্ট হয়ে যায়। একদিন তিনি উমর বিন সা আদের সাক্ষাত পান , যখন সে বালক ছিলো , এবং বললেন , হে সাদের সন্তান , আক্ষেপ তোমার জন্য , তখন তোমার অবস্থা কেমন হবে যেদিন তুমি বেহেশত ও দোযখের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে থাকবে এবং তুমি দোযখ পছন্দ করবে ? যখন উমর কারবালায় পৌঁছলো সে নাইনাওয়াতে থামলো।

[ ইরশাদ গ্রন্থে আছে] যখন উমর বিন সা আদ কারবালায় পৌঁছলো , সে উরওয়াহ বিন ক্বায়েস আহমাসিকে ডাকলো এবং বললো , হোসেইনের কাছে যাও এবং জিজ্ঞেস করো কেন সে এখানে এসেছে এবং সে কী চায়। সে বললো , সে যেতে লজ্জাবোধ করছে , কারণ সে ছিলো তাদের একজন যারা তাকে আসতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এরপর উমর একই বিষয়ে তার সৈন্যদলের যাকেই বললো সে অপারগতা প্রকাশ করলো। কারণ তারা ছিলো তাদের অন্তুর্ভুক্ত যারা ইমামকে চিঠি লিখেছিলো। তখন কাসীর বিন আব্দুল্লাহ শা বি , যে ছিলো একজন সাহসী ব্যক্তি এবং যে কোন কাজ থেকে কখনো মুখ ফিরিয়ে নিতো না , উঠে দাঁড়ালো এবং বললো , আমি যাবো এবং আপনি যদি চান আমি তাকে হত্যা করবো। উমর বললো , আমি তাকে হত্যা করতে চাই না , তার কাছে যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস করো কেন সে এখানে এসেছে। কাসীর গেলো এবং আবু সামামাহ সায়েদি তাকে দেখলেন এবং বললেন , হে আবা আবদিল্লাহ আল্লাহ আপনাকে বন্ধুত্ব দিন , এক ব্যক্তি আপনার দিকে আসছে যে এথিপ বীর বাসিন্দাদের মধ্যে নিকৃষ্টতম এবং যে সবচেয়ে উদ্ধত এবং যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী রক্ত ঝরিয়েছে। এরপর আবু সামামাহ নিজে উঠে দাঁড়ালেন এবং তার কাছে গেলেন এবং তাকে বললেন তার তরবারি নামিয়ে রাখতে। সে তা করতে অস্বীকার করলো এবং বললো , আমি শুধু একজন দূত , যদি চাও আমি তা তোমার কাছে বলবো অথবা ফিরে যাবো। আবু সামামাহ বললেন , সে ক্ষেত্রে আমি আমার হাত রাখবো তোমার তরবারির হাতলের উপর এরপর তুমি তোমার সংবাদ পৌঁছাতে পারো। সে বললো , না , আমি তোমার হাতকে সেখানে পৌঁছতে দিবো না। আবু সামামাহ বললেন , তাহলে তুমি তোমার সংবাদ আমার কাছে বলো আমি তা হোসেইনের কাছে পৌঁছে দিবো। কিন্তু আমি তোমাকে তার কাছে যেতে দিবো না , কারণ তুমি একজন বদমাশ ব্যক্তি। তারপর তারা পরস্পরকে গালিগালাজ করতে লাগলো , যতক্ষণ না উমর বিন সা দের কাছে কাসীর ফেরত গেলো এবং তাকে সব জানালো।

উমর কুররাহ বিন ক্বায়েস হানযালিকে ডাকলো এবং বললো , আক্ষেপ তোমার জন্য , হোসেইনের কাছে যাও এবং তাকে জিজ্ঞেস করো কেন সে এখানে এসেছে এবং সে কী চায়।

যখন ইমাম (আ.) কুররাহকে দেখলেন , তিনি জিজ্ঞেস করলেন , কেউ কি এ লোককে চেনে ? হাবীব বিন মুযাহির বললেন , হ্যাঁ , সে তামীমের হানযালা উপগোত্রের এবং সে আমাদের বোনের ছেলে , আমি তাকে বিশ্বাসী হিসেবে জানতাম এবং কখনো ভাবিনি সে এখানে এভাবে আসবে। কুররাহ এসে ইমামকে সালাম জানালো এবং উমরের সংবাদ পৌঁছে দিলো। ইমাম উত্তর দিলেন , তোমাদের শহরের লোকেরা আমাকে চিঠি লিখেছে এবং আমাকে এখানে আসার জন্য অনুরোধ করেছে , কিন্তু যদি তোমরা আমার উপস্থিতিকে ঘৃণা করো তাহলে আমি ফিরে যাবো।

তখন হাবীব বিন মুযাহির বললেন , হে কুররাহ , আক্ষেপ তোমার জন্য , তুমি কি অত্যাচারীদের কাছে ফেরত যাচ্ছো ? এ মানুষটিকে সাহায্য করো যার পিতৃপুরুষদের কারণে আল্লাহ তোমাকে দয়া করবেন। কুররাহ বললো , আমি ফিরে যাবো এবং ইমামের সংবাদ উমরের কাছে পৌঁছে দিবো এবং এ বিষয়ে চিন্তা করবো। সে ফিরে গেলো এবং উমরের কাছে পৌঁছে দিলো যা ইমাম তাকে বলেছেন। তখন উমর বললো , আমি আশা করি আল্লাহ আমাকে রক্ষা করবেন তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা থেকে।

এরপর সে উবায়দুল্লাহর কাছে লিখলো , বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম , আম্মা বা আদ , যখন আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছেছি , আমি হোসেইনের কাছে একজন দূত পাঠালাম তাকে জিজ্ঞেস করে কেন সে এখানে এসেছে এবং সে কী চায়। সে উত্তর দিয়েছে যে , এ শহরের লোকেরা তাকে চিঠি লিখেছে এবং তার কাছে দূত পাঠিয়েছে তাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে। তাই সে এখানে এসেছে। সে বলছে যে: যদি এ লোকেরা আমার উপস্থিতি পছন্দ না করে এবং তাদের কথার বিপরীত দিকে চলে গিয়ে থাকে , যা আমার কাছে তাদের দূত মারফত জানানো হয়েছিলো তাহলে আমি ফিরে চলে যাবো। হাসান বিন আয়েয আসাবি বলেছে যে , আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম যখন উমরের চিঠি উবায়দুল্লাহর কাছে পৌঁছে। উবায়দুল্লাহ যখন এ চিঠি পড়লো সে বললো , যখন সে আমাদের থাবার ভিতর আটকা পড়েছে সে পালাবার আশা করছে। এখন পালানোর পথ নেই।

এরপর সে উমর বিন সা আদের কাছে চিঠি লিখলো , আম্মা বা আদ , আমি তোমার চিঠি পেয়েছি এবং তুমি সেখানে যা লিখেছো তা বুঝতে পেরেছি। হোসেইন ও তার সাথীদের কাছে একটি প্রস্তাব দাও যে তারা ইয়াযীদের প্রতি বাইয়াত হোক। যদি সে তা করে আমরা দেখবো কী করা যায়। সালাম। যখন উমর চিঠি পেলো সে বললো , আমি শঙ্কায় ছিলাম যে উবায়দুল্লাহ ন্যায়বিচার করবে না।

মুহাম্মাদ বিন আবি তালিব বলেন যে , উমর বিন সা আদ উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের এ প্রস্তাব ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে পৌঁছায় নি , কারণ সে জানতো যে ইমাম কখনোই ইয়াযীদের কাছে বাইয়াত হবেন না , এরপর উবায়দুল্লাহ সবরুপষকেফকার বড় মসজিদে জমায়েত হতে আদেশ দিলো। তারপর সে বেরিয়ে এসে মিম্বরে উঠলো এবং বললো , হে জনগণ , তোমরা আবু সুফিয়ানের পরিবারকে ভালোভাবেই পরীক্ষা করেছো এবং তোমরা তাদেরকে যেমন চেয়েছো তেমন পেয়েছো ; এ হলো বিশ্বাসীদের আমির ইয়াযীদ। যার আচার-ব্যবহার সুন্দর , যার চেহারা ভালো এবং তার প্রজাদের প্রতি দয়ালু। সে প্রত্যেকের অধিকার দেয় এবং তার রাজ্যে রাস্তাগুলো নিরাপদ। তার পিতা মুয়াবিয়াও তার সময় একই রকম ছিলো। তার পরে তার সন্তান ইয়াযীদও আল্লাহর বান্দাহদের সম্মান করেন এবং তাদেরকে সম্পদ দিয়ে ধনী করেন এবং তাদের মর্যাদা দেন। তিনি তোমাদের অধিকারকে একশ গুণ বৃদ্ধি করেছেন এবং আমাকে আদেশ করেছেন তা আরও বৃদ্ধি করতে এবং তোমাদেরকে প্রস্তুত করতে তার শত্রু হোসেইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। তাই তার কথা শোন এবং তার আদেশ পালন করো। এ কথা বলে সে মিম্বর থেকে নেমে গেলো এবং লোকজনের মাঝে প্রচুর উপহার বিতরণ করলো এবং তাদেরকে হোসেইনের বিরুদ্ধে উমর বিন সা আদকে সাহায্য করতে পাঠালো।

[ মানাক্বিব গ্রন্থে আছে] উবায়দুল্লাহ কারবালাতে সৈন্য পাঠাতে থাকলো যতক্ষণ না উমর বিন সা আদের সাথে বিশ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য [মালহুফ] জমায়েত হলো মহররমের ছয় তারিখ পর্যন্ত। [তাসলীয়াতুল মাজালিস অনুযায়ী] এরপর উবায়দুল্লাহ একজনকে পাঠালো শাবাস বিন রাব ঈর কাছে এ কথা বলে , আমার কাছে আসো যেন আমি তোমাকে হোসেইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পাঠাতে পারি। সে অসুস্থ থাকার ভান করলো এবং নিজেকে সরিয়ে নিলো। উবায়দুল্লাহ তাকে একটি চিঠি পাঠালো এ বলে , আম্মা বা আদ , আমার দূত আমাকে জানিয়েছে যে তুমি অসুস্থতার ভান করছো এবং আমি শঙ্কিত যে তুমি না জানি তাদের একজন যারা

) وَإِذَا لَقُوا الَّذِينَ آمَنُوا قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا إِلَى شَيَاطِينِهِمْ قَالُوا إِنَّا مَعَكُمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُون(

যখন তারা বিশ্বাসীদের সাথে মিলিত হয় তারা বলে: আমরা বিশ্বাস করি ; কিন্তু যখন তারা তাদের শয়তানদের কাছে ফেরত যায় , তারা বলে , নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের সাথে আছি , আমরা শুধু মশকরা করছিলাম। [সূরা বাকারা: ১৪]

যদি তুমি আমাদের আনুগত্যে দৃঢ় থাকো , আমাদের কাছে দ্রুত আসো।

শাবাস ইশার নামাযের পর এলো যেন উবায়দুল্লাহ তার চেহারা না দেখতে পারে যা অসুস্থতা মুক্ত ছিলো। যখন শাবাস এলো উবায়দুল্লাহ তাকে স্বাগত জানালো এবং তাকে তার কাছে বসালো এবং বললো , আমি চাই যে তুমি সে লোকটির (হোসেইনের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাও এবং উমর বিন সা আদকে সাহায্য করো। শাবাস বললো যে , সে তা অবশ্যই করবে [মানক্বিব] । সে তাকে এক হাজার অশ্বারোহী দিয়ে পাঠালো।

[ ইরশাদ গ্রন্থে , তাবারি উল্লেখ করেন] এরপর উবায়দুল্লাহ উমর বিন সা আদকে লিখলো , আম্মা বা আদ , হোসেইন ও তার সাথীদেরকে পানি পানে বাধা দাও। তারা এক ফোঁটা পানিও যেন না পায় যেভাবে (খলিফা) উসমান বিন আফফানের সাথে আচরণ করা হয়েছিলো।

উমর বিন সা আদ সাথে সাথে আমর বিন হাজ্জাজকে পাঁচ শত অশ্বারোহী দিয়ে ফোরাত নদীর তীরে পাঠালো এবং ইমাম ও তার সাথীদের পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিলো। তারা তাদেরকে এক ফোঁটা পানি নিতে দিলো না এবং তা ছিলো ইমাম হোসেইন (আ.) এর শাহাদাতের তিন দিন আগে থেকে (সাত মহররম) ।

[তাবারির গ্রন্থে উল্লেখ আছে] উবায়দুল্লাহ বিন হাসীন আযদি ছিলো বাজিলা গোত্রের (সৈন্যদলের) অন্তর্ভুক্ত , সে উচ্চ কণ্ঠে বললো , [ইরশাদ] হে হোসেইন , তুমি কি পানিকে বেহেশতের নহরের মত দেখতে পাও ? আল্লাহর শপথ , তুমি এর এক ফোঁটাও স্বাদ নিতে পারবে না যতক্ষণ না তৃষ্ণায় মৃত্যুবরণ কর।

ইমাম হোসেইন (আ.) উত্তর দিলেন , হে আল্লাহ , তাকে তৃষ্ণায় মৃত্যু দাও এবং তাকে কখনো ক্ষমা করো না।

হামিদ বিন মুসলিম বলেছে যে , আল্লাহর শপথ , আমি তাকে তার অসুস্থ অবস্থায় দেখতে গিয়েছিলাম। আল্লাহর শপথ যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই , আমি তাকে পানি পান করতে দেখলাম তার কণ্ঠনালী পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত এরপর সে তা বমি করে ফেললো। তখন সে চিৎকার করে বললো: পিপাসা , পিপাসা , এবং পানি পান করলো তার কণ্ঠনালী পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত এবং সে তৃপ্ত হলো না , সে এ অবস্থায় রইলো মৃত্যু পর্যন্ত (তার উপর আল্লাহর অভিশাপ) ।

পরিচ্ছেদ - ১৫

বসরার সম্মানিত লোকদের প্রতি ইমামের চিঠি

সাইয়েদ ইবনে তাউস তার মালহুফ ’ -এ উল্লেখ করেছেন যে: ইমাম হোসেইন (আ.) বসরার সৎকর্মশীল সম্মানিত লোকদের কাছে সাহায্যের জন্য একটি চিঠি পাঠালেন , তার পরামর্শক সুলাইমানের মাধ্যমে যার ডাক নাম ছিলো আবু রাযীন এবং তার প্রতি আনুগত্যের জন্য তাদেরকে আহ্বান জানালেন। সেখানে যাদের নাম ছিলো তাদের মধ্যে ছিলো ইয়াযীদ বিন মাসউদ নাহশালি এবং মুনযির বিন জারুদ আবাদি। ইয়াযীদ বিন মাসউদ তখন বনি তামীম , বনি হানযালাহ এবং বনি সা আদ গোত্রের লোকদের একত্র করলো। যখন তারা এলো সে বললো , হে বনি তামীম গোত্রের লোকেরা , তোমাদের দৃষ্টিতে আমার কী অবস্থান ও ত্রুটি ? তারা বললো , তা পরিষ্কার , আল্লাহর শপথ , আপনি আমাদের পিঠের শক্তি এবং মর্যাদায় প্রথম এবং সম্মানিতদের মাঝে স্থানপ্রাপ্ত এবং আপনি এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ” তখন সে বললো , আমি তোমাদের সবাইকে এখানে ডেকেছি যেন একটি বিষয়ে তোমাদের মতামত জিজ্ঞেস করতে পারি এবং এ জন্য তোমাদের সাহায্য চাইতে পারি। ” তারা বললো , আল্লাহর শপথ আমরা আপনার হিতাকাঙ্ক্ষী এবং আমরা আপনাকে আন্তরিকভাবে পরামর্শ দিতে আলস্য করবো না। আপনি বলতে পারেন , যেন আমরা জানতে পারি তা কী। ” ইয়াযীদ বনি মাসউদ বললো , “ মুয়াবিয়া মৃত্যুবরণ করেছে এবং আমরা শোকপালন করছি না , না আমরা তার মৃত্যুতে দুঃখিত। কারণ অবিচার ও অত্যাচারের দরজাতে ফাটল ধরেছে এবং নিপীড়নের খুঁটিতে কঠিন আঘাত করা হয়েছে। সে বিদ ’ আত তৈরী করেছে তার ছেলের (ইয়াযীদের) প্রতি আনুগত্যের শপথের (দাবী করার) মাধ্যমে এবং সে এতে অনড় ছিলো অথচ তা সঠিক পথ থেকে কত দূওে , যা সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। সে চেষ্টা করেছিলো কিন্তু দুর্বল হয়ে গিয়েছিলো এবং সে পরামর্শ ও মতামত চেয়েছিলো তার বন্ধুদের কাছে কিন্তু তারা তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এরপর তার ছেলে , যে মদ পান করে এবং শয়তান প্রকৃতির , সে উঠে দাঁড়িয়েছে এবং নিজেকে মুসলমানদের খলিফা হিসাবে দাবী করেছে। সে তাদের উপর শাসন করছে তাদের সম্মতি ছাড়াই। যদিও সে এক অজ্ঞ ও মূর্খ ব্যক্তি , এমনকি সে তার পায়ের ছাপও চিনে না। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি যে ইয়াযীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার চাইতে উত্তম। আর ইনি হলেন হোসেইন বিন আলী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নাতি। তার আছে সত্যিকার মর্যাদা , একজন সৎ উপদেশ দানকারী , এক বিরাট জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি এবং তিনি খিলাফতের জন্য বেশী যোগ্য ও অধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তি। কারণ তিনি মুহাজিরদের মধ্যে প্রথম দিকের , একজন প্রধান এবং ধর্মে সবার চাইতে এগিয়ে , তিনি রাসূলুল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। তিনি ছোটদের প্রতি স্নেহশীল এবং প্রবীণদের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন এবং অন্যদের প্রতি দয়ালু। তিনি একজন প্রকৃত নেতা এবং বেহেশত তার মাধ্যমে অর্জিত হয় এবং তিনি ধর্ম প্রচার করেন সৎ উপদেশ ও সতর্কবাণীর মাধ্যমে। তাই সত্যের আলোর সামনে চোখ বন্ধ করে ফেলো না এবং মিথ্যার গর্তে পড়ো না। সাখর বিন ক্বায়েস তোমাদেরকে জামালের (যুদ্ধের) দিনে বিভ্রান্ত করেছিলো এবং অপমানিত করেছিলো , তাই অপমানের দাগকে ধুয়ে ফেলো নবীর নাতিকে সাহায্য করার মাধ্যমে। আল্লাহর শপথ , কেউ তাকে সাহায্য করা থেকে নিজেদের হাতকে গুটিয়ে রাখবে না শুধু তারা ছাড়া যাদের বংশধররা হবে অপমানিত , বঞ্চিত ও পরিত্যক্ত। আমি এখন যুদ্ধের শিরস্ত্রাণ পড়েছি এবং বর্ম বেঁধেছি। যে নিহত হবে না সে শেষ পর্যন্ত মারা যাবে এবং যে এ থেকে পালিয়ে যাবে সে তা থেকে নিস্কৃতি পাবে না। তাই আমাকে ভালোভাবে সাড়া দাও। আল্লাহর রহমত তোমাদের ওপর বর্ষিত হোক।

এ কথা শুনে বনি হানযালাহ বললো , হে আবা খালিদ (ইয়াযীদ বিন মাসউদের ডাক নাম) , আমরা আপনার তীর বহনকারী এবং গোত্রগুলোর মাঝে শ্রেষ্ঠ। আপনি যদি আমাদেরকে ছুঁড়ে মারেন (শত্রুর দিকে) আমরা লক্ষ্যের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বো এবং আপনি যদি আমাদের সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে যান আপনি বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হবেন। আপনি যদি সমুদ্রের গভীরে প্রবেশ করেন আমরাও আপনার সাথে যাবো এবং আপনি যেদিকে ঘুরবেন আমরাও সেদিকে ঘুরবো। আমরা আপনাকে আমাদের তরবারি দিয়ে রক্ষা করবো এবং আমাদের দেহগুলো হবে আপনার ঢাল। আমরা আপনার খেদমতে আছি যখনই আপনি আমাদের প্রয়োজন মনে করবেন। ”

এরপর বনি সা আদ বিন ইয়াযীদ বললো , হে আবা খালিদ , আমাদের দৃষ্টিতে সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ হচ্ছে আপনার বিরোধিতা করা ও আপনার আদেশ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হওয়া। নিশ্চয়ই সাখর বিন ক্বায়েস আমাদেরকে যুদ্ধ করতে নিষেধ করেছিলো (জামালের যুদ্ধে) এবং আমরা আমাদের এ কাজে সন্তুষ্ট ছিলাম এবং আমাদের মর্যাদা রক্ষা হয়েছিলো। আপনি আমাদের কিছু সময় দিন যেন আমরা নিজেদের মাঝে পরামর্শ করে নিতে পারি এবং এ বিষয়ে আমাদের মতামত আপনাকে জানাতে পারি। ”

এসময় বনি আমির বিন তামীম বললো , হে আবা খালিদ , আমরা আপনার পিতার সন্তান ও আপনার মিত্র। আপনি যদি অসন্তুষ্ট হন আমরা সন্তুষ্ট থাকবো না এবং যদি আপনি চলে যান আমরা আপনার পিছনে পিছনে আসবো। তাই আমাদের আদেশ করুন যেন আমরা সাড়া দিতে পারি এবং আমাদের ডাক দিন যেন আমরা আপনাকে মানি। নিশ্চয়ই আদেশ আপনার কাছেই।

তখন তিনি বনি সা আদকে বললেন , হে বনি সা আদ , আল্লাহর শপথ , যদি তোমরা সন্দেহে থাকো এবং বনি উমাইয়ার পক্ষ অবলম্বন কর (এবং হোসেইনকে সাহায্য করতে ব্যর্থ হও) , আল্লাহ কখনোই তোমাদের ঘাড় থেকে তরবারি তুলে নিবেন না অথচ তোমাদের তরবারি তোমাদের হাতেই থাকবে। ”

এরপর সে (ইয়াযীদ বিন মাসউদ) ইমাম হোসেইন (আ.) কে একটি উত্তর পাঠালো , আম্মা বা ’ আদ , আমরা আপনার চিঠি পেয়েছি এবং আপনি যে আহ্বান করেছেন তার উপর গভীরভাবে ভেবে দেখেছি , যেন আমরা আপনার আনুগত্যে আমাদের অংশ নিতে পারি এবং যেন আমরা আপনাকে সাহায্য করার মর্যাদা অর্জন করতে পারি। আল্লাহ কখনো পৃথিবীকে তার প্রতিনিধিবিহীন রাখেন না , তিনি উদারভাবে দানশীল এবং নাজাতের পথ প্রদর্শক। নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর সৃষ্টির ওপরে তাঁর প্রমাণ এবং পৃথিবীতে তাঁর আমানত। আপনি মুহাম্মাদ (সা.) এর জলপাই গাছের একটি শাখা , তিনি ছিলেন উৎস আর আপনি হচ্ছেন শাখা , আমাদের কাছে আনন্দের সাথে দ্রুত আসুন , কারণ আমি বনি তামীমের ঘাড়গুলো আপনার আদেশের নিচে এনেছি এবং তারা আপনার আনুগত্যে পরস্পরকে ছাড়িয়ে যাবে পিপাসার্ত সিংহের মত যে পানি পান করতে দ্রুত এগিয়ে যায়। এছাড়া বনি সা আদকে আপনার আনুগত্যে এনেছি এবং তাদের অন্তর থেকে ময়লা ধুয়ে ফেলেছি পানি দিয়ে যা মেঘ থেকে পড়েছে। ”

যখন ইমাম হোসেইন (আ.) চিঠির বিষয়বস্তু পড়লেন তিনি বললেন , তোমরা আর কী চাও , আল্লাহ তোমাদের ভয়ের দিনে (কিয়ামতে) নিরাপত্তা দিন এবং প্রচণ্ড পিপাসার দিনে তোমাদের পিপাসা মেটান এবং কাছে টেনে নিন। ”

যখন ইয়াযীদ বিন মাসউদ ইমামের দিকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখন সে তার শাহাদাতের সংবাদ পেলো এবং সে নিজে শাহাদাত পেলো না বলে আফসোস করতে লাগলো।

আর মুনযিরা বিন জারুদ সম্পর্কে , যখন সে ইমাম হোসেইন (আ.) এর চিঠি পেলো সে তা ইমামের দূতসহ উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের কাছে নিয়ে এলো , কারণ সে ভয়ে ছিলো যে এটি হতে পারে উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদের কোন ষড়যন্ত্র , আর তার কন্যা বাহরিয়া ছিলো উবায়দুল্লাহর স্ত্রী। উবায়দুল্লাহ ইমামের দূতকে জল্লাদের কাছে পাঠালো এবং মিম্বরে উঠে একটি খোতবা পাঠ করলো , সেখানে সে বসরার জনগণকে সতর্ক করলো বিরোধিতা ও বিদ্রোহের বিরুদ্ধে। সেই রাত সে বসরায় কাটালো এবং পরদিন সকালে সে তার ভাই উসমান বিন যিয়াদকে তার প্রতিনিধি বানালো এবং দ্রুত কুফার দিকে যাত্রা করলো।

তাবারি বলেন যে , হিশাম বলেছেন যে আবু মাখনাফ আমার কাছে বর্ণনা করেছেন এবং সে সাকীব বিন যুহাযর থেকে , তিনি আবু উসমান নাহদী থেকে বর্ণনা করেছেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) একই ধরণের একটি চিঠি লিখেছিলেন বসরার পাঁচটি বিভাগের সম্মানিত লোক ও সর্দারদের কাছে তার পরামর্শক সুলাইমানের মাধ্যমে। একই বিষয়বস্তু সম্বলিত আরও চিঠি লেখা হয়েছিলো মালিক বিন মুসমে ’ বাকরি , আহনাফ বিন ক্বায়েস , মুনযির বিন জারুদ , মাসউদ বিন আমর , ক্বায়েস বিন হাইসাম এবং উমার বিন আব্দুল্লাহ বিন মুয়াম্মারের কাছে:

“ আম্মা বা ’ আদ , নিশ্চয়ই আল্লাহ রাসূলুল্লাহ (সা.) কে তাঁর সব সৃষ্টির ওপরে বাছাই করেছেন এবং তাকে নবুয়ত দান করেছেন এবং তাকে রিসালাতের জন্য বাছাই করেছেন। এরপর আল্লাহ তাকে তাঁর রহমতের দিকে (মৃত্যু) নিয়ে গিয়েছেন সব মানুষকে সত্যের দিকে পথ দেখাবার পর এবং সংবাদ প্রচার করার পর , যার জন্য তাকে পাঠানো হয়েছিলো। আর আমরা তার পরিবার (আহলুল বাইত) , বন্ধু , উত্তরাধিকারী এবং তার খলিফা এবং আমরা অন্যদের চাইতে তার উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য বেশী যোগ্য। আর উম্মত এ বিষয়ে আমাদেরকে অতিক্রম করার চেষ্টা করেছে এবং আমরা অসহায়ভাবে নিজেদেরকে সরিয়ে নিয়েছি বিভেদ এড়ানোর জন্য। আমরা শান্তি ভালোবাসি যদিও আমরা আমাদেরকে তাদের চাইতে এ বিষয়ে (খেলাফতে) বেশী যোগ্য এবং বেশী অধিকার রাখি বলে মনে করি। আমি তোমাদের দিকে আমার দূতকে পাঠিয়েছি এবং আমি তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাবের দিকে , নবীর সুন্নাহর দিকে আহ্বান করছি। কারণ আমি দেখছি যে হাদীস (সুন্নাহ্) ধ্বংস করা হয়েছে এবং বিদ ’ আত মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। তাই যদি তোমরা আমার কথায় মনোযোগ দাও এবং আমার আদেশ মানো তাহলে আমি তোমাদেরকে সঠিক পথ দেখাবো এবং তোমাদের উপর শান্তি এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। ”

সম্মানিত লোকদের মধ্যে যে-ই এ চিঠি পেলো সে তা গোপন করলো মুনযির বিন জারুদ ছাড়া , সে ভয় পেয়েছিলো যে এটি হয়তো উবায়দুল্লাহর ষড়যন্ত্র। তাই সে সেই দূতকে উবায়দুল্লাহর কাছে নিয়ে গেলো সেই দিন যেদিন রাতের বেলা উবায়দুল্লাহ কুফা রওনা দিয়েছিলো। সে উবায়দুল্লাহকে চিঠিটি দিলো যেন সে তা পড়তে পারে। চিঠি পড়া শেষ করে উবায়দুল্লাহ দূতকে হত্যার আদেশ দিলো এবং নিজে বসরার মিম্বরে উঠলো এবং আল্লাহর প্রশংসা ও তাসবীহর পর বললো , আম্মা বা ’ আদ , আল্লাহর শপথ , ক্ষুধার্ত উটও আমার মত নয় , না আমি খালি মশকের আওয়াজ শুনে পালাই , আমি নিজে আমার প্রতিপক্ষের উপর গযব এবং মারাত্মক এক বিষ তাদের জন্য যারা আমার বিরোধিতা করে। যে আমার দিকে এক দলা কাদা ছুঁড়ে মারে , সে একটি পাথর পুরস্কার পাবে। হে বসরার জনগণ , বিশ্বাসীদের আমির (ইয়াযীদ) আমাকে কুফার অভিভাবকত্ব দান করেছেন এবং আগামীকাল আমি সেখানে যাবো। আমি আমার ভাই উসমান বিন যিয়াদ বিন আবু সুফিয়ানকে তোমাদের উপর আমার খলিফা (প্রতিনিধি) নিয়োগ দিলাম। সাবধান , বিরোধিতা ও ফাসাদ থেকে দূরে থাকো। কারণ আল্লাহর শপথ , যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই , যদি আমি তোমাদের মাঝে কাউকে বিরোধিতা করতে শুনি , তাহলে আমি অবশ্যই তাকে হত্যা করবো , তার গোত্র প্রধান ও অভিভাবকসহ। আমি উপস্থিত যারা আছে তাদের দায়িত্ব দিচ্ছি যারা অনুপস্থিত আছে তাদের জন্য , যতক্ষণ না পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং আমার বিরোধিতা করে ও আমাকে অপছন্দ করে এমন লোক যেন তোমাদের মাঝে না থাকে। আমি যিয়াদের সন্তান এবং আমার বাবার সাথে আমার বেশী মিল রয়েছে , তাদের চাইতে বেশী , যারা এ পৃথিবীতে এ পর্যন্ত পা রেখেছে এবং আমি আমার মামা ও চাচাদের মত নই। ” এরপর সে বসরা ত্যাগ করলো এবং কুফার দিকে গেলো তার ভাই উসমানকে তার জায়গায় রেখে।

আযদি বর্ণনা করেন যে , আবুল মাখারিক্ব রাসবী বলেন যে , বসরার কিছু শিয়া আব্দুল ক্বায়েস গোত্রের এক মহিলার বাড়িতে জড়ো হলো। মহিলার নাম ছিলো মারিয়া , সা ’ আদ অথবা মানক্বাযের কন্যা , যে ছিলো একজন শিয়া। তার বাড়ি ছিলো তাদের জড়ো হওয়ার জায়গা এবং তারা সেখানে পরস্পর দেখা সাক্ষাৎ করতো। যখন উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদকে জানানো হলো যে ইমাম হোসেইন (আ.) ইরাকের দিকে আসছেন তখন সে তার নিয়োগকৃত তত্ত্বাবধায়ককে চিঠি লিখলো যেন সে পাহারাদার নিয়োগ দেয় এবং রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেয়। ইয়াযীদ বিন নাবীত , যে ছিলো আব্দুল ক্বায়েস গোত্রের একজন , সিদ্ধান্ত নিলো ইমাম হোসেইন (আ.) কে রক্ষায় যাবে। তার দশ জন ছেলে ছিলো যাদেরকে সে জিজ্ঞেস করলো তার সঙ্গে কে যাবে। তার সন্তানদের মধ্যে দুজন আব্দুল্লাহ এবং উবায়দুল্লাহ রাজী হলো তার সাথে যাওয়ার জন্য। যখন শিয়ারা মারিয়ার বাসায় জড়ো হলো , সে তার সাথীদের উপস্থিতিতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলো। তার বন্ধুরা বললো যে তারা তার বিষয়ে উবায়দুল্লাহর লোকদেরকে ভয় পায়। এর উত্তরে সে বললো , যখন আমার উটের ক্ষুরগুলো মরুভূমিতে পড়বে আমি তাদের ধাওয়াকে ভয় করি না। ” এরপর সে যাত্রা করলো এবং সফলতার রাস্তাগুলো তৈরী করলো এবং মক্কায় ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে পৌঁছে গেলো। সে আবতাহতে অবস্থিত ইমাম হোসেইন (আ.)-এর তাঁবুতে পৌঁছে গেলো। যখন ইমাম হোসেইন (আ.) তার আসার সংবাদ পেলেন তখন তাকে স্বাগত জানানোর জন্য তিনি উঠে দাঁড়ালেন। যখন সে ইমামের তাঁবুর কাছে চলে এলো , তাকে বলা হলো ইমাম ইতোমধ্যেই চলে গেছেন তার জায়গায় তার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য। সে ফিরে চললো এবং দেখলো ইমাম দরজাতে বসে আছেন , তার জন্য অপেক্ষা করছেন এবং তিনি (আ.) বললেন ,

) قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا(

আল্লাহর অনুগ্রহে এবং তাঁর রহমতে , এতে তাদের আনন্দ উল্লাস করা উচিত। ” [সূরা ইউনুস : ৫৮]

তখন সে তাকে সালাম জানালো ও বসে পড়লো। এরপর ইমামের কাছে তার উদ্দেশ্য বর্ণনা করলো আর তিনি তার কল্যাণের জন্য দোআ করলেন। সে ইমামের সাথে রয়ে গেলো কারবালা পর্যন্ত এবং সেখানে সে যুদ্ধ করেছিলো এবং তার দুসন্তানসহ সেখানে শহীদ হয়েছিলো।

পরিচ্ছেদ - ৭

কুফার উদ্দেশ্যে উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদের বসরা ত্যাগ

যখন উবায়দুল্লাহ ইয়াযীদের চিঠি পেলো সে বসরায় লোকদের মাঝ থেকে পাঁচশ জনকে বাছাই করলো , যাদের মধ্যে ছিলো আব্দুল্লাহ বিন হুরেইস বিন নওফাল , শারীক বিন আ ওয়ার , তাদের দুজনই ছিলো শিয়া এবং মুসলিম বিন আমর বাহিলি এবং তার একদল অনুসারী ও পরিবারকে সাথে নিয়ে কুফার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

[ ইরশাদ ’ গ্রন্থে আছে] যখন সে কুফায় পৌঁছলো , উবায়দুল্লাহ একটি কালো পাগড়ি পড়েছিলো এবং নিজের চেহারা ঢেকে নিয়েছিলো। সেখানকার জনতা সংবাদ পেয়েছিলো যে ইমাম হোসেইন (আ.) কুফায় আসবেন , আর তাই তারা তার আগমনের অপেক্ষায় ছিলো। তারা ভুল করে তাকে ইমাম হোসেইন (আ.) ভাবলো এবং যে দলের ভিতর দিয়েই সে পথ অতিক্রম করলো তারা তাকে সালাম জানিয়ে বললো , স্বাগতম হে রাসূলের সন্তান! যখন উবায়দুল্লাহ দেখলো তারা ইমাম হোসেইন (আ.) এর আগমনে উল্লাস প্রকাশ করছে তখন সে চিন্তিত হয়ে পড়লো। যখন লোকজনের সংখ্যা বাড়তে লাগলো মুসলিম বিন আমর চিৎকার দিয়ে বললো সরে যাও , এ ব্যক্তি সেনাপতি উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ। ” এরপর সে প্রাসাদে পৌঁছালো রাতের বেলা। একদল লোক তখনও তাকে ঘেরাও করেছিলো যারা তখনও ভাবছিলো যে সে ইমাম হোসেইন (আ.) । নোমান বিন বাশীর (তাকে ইমাম হোসেইন (আ.) মনে করে) তার ও তার সাথীদের মখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো। তখন তার এক জন লোক তাকে চিৎকার করে দরজা খুলে দিতে বললো। নোমান তাকে ইমাম হোসেইন (আ.) মনে করে বললো , আমি আল্লাহর নামে আপনাকে অনুরোধ করছি এখান থেকে চলে যাবার জন্য। কারণ আল্লাহর শপথ , আমি আপনার হাতে আমানত হস্তান্তর করবো না এবং না আমি চাই আপনার সাথে যুদ্ধ করতে। উবায়দুল্লাহ চুপ করে রইলো এবং আরও কাছে এলো। নোমান তার সাথে ঝুলানো বারান্দা থেকে কথা বলছিলো। উবায়দুল্লাহ বললো , দরজা খোল , তুমি এখনও দরজা খোল নি এবং তোমার রাত্রিগুলো দীর্ঘ হয়ে গেছে (যে সময় তুমি শাসন করার পরিবর্তে ঘুমিয়েছো) । ” উবায়দুল্লাহর এ কথাগুলো তার পিছনে থাকা এক ব্যক্তি শুনলো , যে পিছন ফিরলো ঐ লোকদের দিকে যারা তাকে ইমাম হোসেইন বলে ভুল করছিলো এবং বললো , হে জনতা , তাঁর শপথ , যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই , এ লোক ইবনে মারজানা (উবায়দুল্লাহ) । ”

মাসউদী বলেন যে , যখন জনতা তাকে চিনতে পারলো তখন তারা তার দিকে পাথর ছুঁড়তে আরম্ভ করলো , কিন্তু সে সরে গেলো। [ ইরশাদ ’ ] এ সময় নোমান তার জন্য দরজা খুলে দিলো এবং সে প্রবেশ করলো এবং জনতার উপর দরজা বন্ধ করে দিলে তারা যে যার দিকে চলে গেলো।

সকালে সে জামায়াতে নামাযের জন্য ঘোষণা দিলো এবং লোকজন জড়ো হলো। উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ আল্লাহর প্রশংসা ও তাসবীহ করলো এবং বললো , আম্মা বা আদ , আমিরুল মুমিনীন (ইয়াযীদ) তোমাদের শহরের ও সীমান্তের দায়িত্ব আামাকে দিয়েছেন এবং তোমাদের গণিমত এখন আমার নিয়ন্ত্রণে এবং তিনি আমাকে আদেশ করেছেন নির্যাতিতদের সাহায্য করতে এবং বঞ্চিতদের দান করতে এবং তিনি আমাকে আরও আদেশ করেছেন যেন আমি অনুগতদের প্রতি সদয় হই এবং তোমাদের মাঝে যারা সন্দেহজনক ও বিদ্রোহী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এরপর আমি তোমাদের বিষয়ে তার আদেশ পালন করবো এবং তার আদেশ বাস্তবে প্রয়োগ করবো। আমি অনুগতদের প্রতি একজন দয়ালু পিতার মত হবো এবং আমার বর্শা ও তরবারি তাদের মাথার উপর পড়বে যারা আমাকে অমান্য করবে এবং আমার শাসনের বিরোধিতা করবে। প্রত্যেক মানুষের উচিত তার নিজেকে ভয় করা , সত্য তোমাদেরকে সতর্ক করুক , হুমকি নয়।

আরেকটি বর্ণনায় বলা হয়েছে যে সে বলেছিলো , আমার কথা ঐ হাশেমীর (মুসলিম বিন আক্বীলের) কাছে নিয়ে যাও যে , তার উচিত আমার ক্রোধ থেকে তার নিজেকে রক্ষা করা। ”

[ ইরশাদ ’ গ্রন্থে আছে] এরপর সে মিম্বর থেকে নামলো এবং তার সর্দারদের সাথে কড়া আচরণ করলো এবং আদেশ দিলো যে , নিশ্চয়তা দানকারী লোকদের এবং ইয়াযীদের অনুসারীদের নাম লিখে রাখো এবং তাদেরও নাম যারা বিদ্রোহী ও সন্দেহজনক , যারা বিদ্রোহ করতে পারে এবং গণ্ডগোলের সৃষ্টি করতে পারে। এসব লোককে আমার কাছে আনবে যেন আমি তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। এরপর যেসব সর্দাররা তাদের নাম লিখবে না তারা নিশ্চয়তা দিবে যে তাদের মধ্যে কেউ আমাদের বিরোধিতা করবে না ও বিদ্রোহ করবে না। যে তা করবে না তাকে ক্ষমা করা হবে না এবং তার রক্ত ও সম্পদ আমাদের জন্য বৈধ হবে। যদি ইয়াযীদের বিরুদ্ধে কোন বিদ্রোহীকে কোন সর্দারের অধীনে কোন জায়গায় পাওয়া যায় এবং সে তার বিষয়ে আমাদের কাছে কোন সংবাদ না দেয় , তাকে তার বাড়ির দরজায় ফাঁসি দেয়া হবে এবং তার ভাতা বন্ধ করে দেয়া হবে এবং তাকে সিংহের খাবার বানানো হবে। ”

ফুসুলুল মুহিম্মা ’ তে বলা হয়েছে যে , কুফার একদল লোককে সে বন্দী করে এবং তৎক্ষণাৎ হত্যা করে [তাবারি ও মুহাম্মাদ বিন আবি তালিবের গ্রন্থে এবং কামিল ’ গ্রন্থে আছে] ।

যখন মুসলিম বিন আক্বীলকে উবায়দুল্লাহর আগমন সম্পর্কে জানানো হলো এবং তিনি তার কথাগুলো শুনলেন , তিনি মুখতারের বাড়ি ত্যাগ করলেন এবং হানি বিন উরওয়াহ মুরাদির দরজায় গেলেন এবং তাকে ডাক দিলেন। যখন হানি বেরিয়ে এলেন তাকে বিরক্ত মনে হলো। মুসলিম বললেন , আমি তোমার দরজায় এসেছি আশ্রয় নিতে ও একজন মেহমান হিসেবে। ” হানি বললেন , তুমি আমাকে সমস্যায় ফেলে দিলে এবং যদি তুমি আমার বাড়িতে প্রবেশ না করতে এবং আমার সাথে আলোচনা করতে , আমি তোমাকে চলে যেতে বলতে খুশী হতাম। কিন্তু আমার বাড়িতে তুমি প্রবেশ করায় তুমি আমাকে দায়িত্বে বেঁধে ফেলেছো , তাই ভিতরে আসো। ” এভাবে হানি তাকে থাকার জায়গা দিলেন এবং শিয়ারা তার সাথে গোপনে সাক্ষাৎ করতে লাগলো এবং তাকে উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের কাছ থেকে রক্ষা করতে লাগলো। [ মানাক্বিব ’ ] জনগণ মুসলিমের হাতে আনুগত্যের শপথ করতে লাগলো যতক্ষণ পর্যন্তনা তাদের সংখ্যা পঁচিশ হাজারে পৌঁছল। তখন তারা বিদ্রোহ করার জন্য সিদ্ধান্ত নিলো কিন্তু হানি পরামর্শ দিলেন যে তাদের উচিত আরও অপেক্ষা করা।

উবায়দুল্লাহ তার পরামর্শক মা ক্বালকে ডাকলো এবং তাকে তিন হাজার দিরহাম দিলো [কামিল ] এবং তাকে বললো মুসলিম বিন আকীল ও তার সাথীদের অবস্থান খুঁজে বের করতে এবং তাদের সাথে মেলামেশা করতে এবং এরপর সে তাদের সাথে এ সম্পদ ভাগ করে নিবে এবং এভাবে তাদের দেখাবে যে সে তাদেরই একজন এবং এভাবে তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানবে ও তাকে সংবাদ দিবে। মা ক্বাল মসজিদে প্রবেশ করলো এবং শুনলো মুসলিম বিন আওসাজা আসাদি ইমাম হোসেইন (আ.) এর নামে আনুগত্যের শপথ করছে। মুসলিম সে সময় নামাযে ব্যস্ত ছিলেন। যখন তিনি নামায শেষ করলেন মা ক্বাল তার কাছে এলো এবং বললো , হে আল্লাহর বান্দাহ , আমি সিরিয়ার অধিবাসী। যিল কিলার একজন দাস , যাকে আল্লাহ নবীর আহলুল বাইতের (নবী পরিবারের) ভালোবাসা দিয়ে অনুগ্রহ করেছেন। এখানে তিন হাজার দিরহাম আছে এবং আমি এগুলো ঐ ব্যক্তিকে দিতে চাই যার বিষয়ে আমি শুনেছি তিনি কুফায় এসেছেন এবং তিনি ইমাম হোসেইন (আ.) এর নামে আনুগত্যের শপথ নিচ্ছেন। আমি কিছু লোকের মুখে শুনেছি যে আপনি আহলুল বাইত (আ.) এর সাথে পরিচিত। তাই আমি আপনার কাছে এসেছি। আমি আপনাকে অনুরোধ করছি এ সম্পদ গ্রহণ করতে এবং আপনার সর্দারের কাছে আমাকে নিয়ে যেতে যেন আমি তার কাছে আনুগত্যের শপথ করতে পারি এবং আপনি যদি চান আমি শপথ করবো আপনার হাতে , তার সাথে সাক্ষাৎ করার আগে। ” মুসলিম বললেন , আমি তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে আনন্দিত এবং তোমার গন্তব্যে পৌঁছানোর ইচ্ছা দেখে খুশী এবং আল্লাহ যেন তোমার মাধ্যমে আহলুল বাইত (আ.) কে সাহায্য করেন। কিন্তু আমি চাই না যে জনগণ এ বিষয়ে জানুক তা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই এবং আমি অত্যাচারী ও তার ক্ষমতাকে ভয় পাই। ” তখন মুসলিম তার আনুগত্যের শপথকে গ্রহণ করলেন এর প্রতি বিশ্বস্ত ও তা গোপন রাখার দৃঢ় শপথের মাধ্যমে। মা ক্বাল তার কাছে কিছু দিন ধরে আসতে লাগলো এবং একদিন মুসলিম তাকে মুসলিম বিন আক্বীল (আ.) এর কাছে নিয়ে গেলেন।

পরিচ্ছেদ - ৮


8

9

10

11

12

13

14

15

16

17

18

19

20

21

22

23

24

25

26

27

28

29

30

31

32

33

34

35