ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথীদের যুদ্ধের প্রশংসা ও তাদের শাহাদাত
আবুল হাসান সাঈদ বিন হিবাতুল্লাহ , যিনি কুতুবুদ্দিন রাওয়ানদি নামে সুপরিচিত , বর্ণনা করেছেন তার সূত্র উল্লেখ করে ইমাম মুহাম্মাদ আল বাক্বির (আ.) থেকে যে , ইমাম হোসেইন (আ.) তার শাহাদাতের আগে তার সাথীদের বলেন যে , তার নানা রাসূল (সা.) তাকে বলেছেন , “ হে আমার প্রিয় সন্তান , তোমাকে হত্যা করা হবে ইরাকে এবং এটি এমন এক স্থান যেখানে নবীরা , তাদের উত্তরাধিকারীরা এবং রাসূলরা পরস্পরের সাথে সাক্ষাত করেছে এবং একে আমূরা বলা হয়। তোমাকে সে স্থানে হত্যা করা হবে তোমার একদল সাথীর সাথে। তোমার যুদ্ধ হবে শুধু ঠাণ্ডা ও প্রশান্তির। ”
তাই সুসংবাদ গ্রহণ করো যে আল্লাহর শপথ , যদি তারা আমাদের হত্যা করে , আমরা আমাদের রাসূল (সা.) এর কাছে চলে যাবো।
আবু হামযা সুমালী , ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেন , তার শাহাদাতের আগের রাতে আমার পিতা তার পরিবার ও সাথীদের একত্র করলেন এবং বললেন ,
“
হে আমার পরিবারের লোকেরা ও আমার শিয়ারা (অনুসারীরা) , এ রাতকে ভেবে দেখো তোমাদের কাছে এসেছে একটি বহনকারী উট হয়ে এবং নিজেদেরকে রক্ষা করো , কারণ এই লোকেরা আমাকে ছাড়া কাউকে চায় না। এরপর যদি তারা আমাকে হত্যা করে তারা তোমাদর পিছু নিবে না। আল্লাহ তোমাদের ওপর রহমত করুন , নিজেদেরকে রক্ষা করো। নিশ্চয়ই আমি আনুগত্য ও শপথের দায়ভার তুলে নিচ্ছি যা তোমরা আমার হাতে করেছো। ”
এ কথা শুনে তার ভাইয়েরা , আত্মীয়রা এবং সাথীরা একযোগে বলে উঠলেন ,“
আল্লাহর শপথ , হে আমাদের অভিভাবক , হে আবা আবদিল্লাহ আমরা আপনার সাথে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করবো না , তাতে লোকে বলবে আমরা আমাদের ইমাম , আমাদের প্রধান ব্যক্তি এবং অভিভাবককে পরিত্যাগ করেছি , তাকে শহীদ করা পর্যন্ত। তখন আমরা আল্লাহ ও আমাদের মাঝে ওজর খোঁজ করবো। আমরা আপনাকে ত্যাগ করবো না , যতক্ষণ না আপনার জন্য কোরবান হই। ” ইমাম বললেন , “
“
নিশ্চয়ই আমি আগামীকাল নিহত হব এবং তোমাদের সবাই আমার সাথে নিহত হবে এবং তোমাদের কাউকে রেহাই দেয়া হবে না। ” এতে তারা বললো ,“
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর , যে তিনি আমাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন আপনাকে সাহায্য করার জন্য এবং আপনার সাথে শহীদ হওয়ার সম্মান দান করেছেন। তাই আমরা কি পছন্দ করবো না যে আমরা আপনার সাথে উচ্চ সম্মান (স্থান) অর্জন করি , হে আল্লাহর রাসূলের সন্তান ?”
ইমাম বললেন ,
“
আল্লাহ তোমাদের উপযুক্ত পুরস্কার দিন। ”
তখন তিনি সবার জন্য দোআ করলেন , যখন সকাল হলো , তাদের সবাইকে শহীদ করা হলো। শেইখ সাদুক্ব ¡¡ বর্ণনা করছেন সালিম বিন আবু জা ’ দাহ থেকে , যিনি বলেন , আমি কা‘
আব আল আহবারকে বলতে শুনেছি যে ,“
আমাদের বইগুলোতে উল্লেখ আছে যে , মুহাম্মদ (সা.) এর সন্তানদের মধ্যে একজনকে হত্যা করা হবে এবং তারা (শহীদরা) বেহেশতে প্রবেশ করবে তার সাথীদের যখম শুকানোর আগেই এবং হুরগণ তাদের স্পর্শ করবে। ” তাই যখন ইমাম হাসান (আ.) আমাদের পাশ দিয়ে গেলেন , আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম তিনিই সেই ব্যক্তি কিনা (যার কথা বইগুলোতে উল্লেখ আছে) , তিনি‘
না ’ বললেন এবং যখন ইমাম হোসেইন (আ.) আমাদের পাশ দিয়ে গেলেন , আমরা তাকে একই প্রশ্ন করলাম তিনি‘
হ্যাঁ ’ বললেন।
বর্ণিত আছে যে , ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) কে জিজ্ঞেস করা হল যে , দয়া করে আমাদের কাছে ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথীদের অবস্থা ও তাদের আত্মত্যাগ সম্পর্কে বর্ণনা করুন। ইমাম বললেন ,
“
তাদের চোখের উপর থেকে পর্দা সরিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং তারা বেহেশতে তাদের স্থান দেখতে পাচ্ছিলেন। তাই তারা জীবন উৎসর্গ করতে পরস্পরকে অতিক্রম করলেন যেন তারা হুরদের সাথে সাক্ষাত করতে পারেন , তাদের সোহাগ পেতে পারেন এবং বেহেশতে তাদের স্থানে পৌঁছে যেতে পারেন। ”
এটি যিয়ারতে নাহিয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। শহীদদের নামের উদ্ধৃতি দেয়ার পর বলা হয়েছে ,
“
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ আপনাদের চোখের সামনে থেকে পর্দা তুলে নিয়েছিলেন এবং আপনাদের উপহার দিয়েছিলেন বিছানো বিছানা ও বিরাট উপহারসমূহ। ”
ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মধ্যে‘
মা ’ আনিয়াল আখবার ’ গ্রন্থে ইমাম মুহাম্মাদ আত তাক্বী (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে , তিনি তার পবিত্র পূর্ব পুরুষ (আ.) দের কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন , যা ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) পর্যন্ত পৌঁছেছে , তিনি বলেছেন , যখন ইমাম হোসেইন (আ.) এর বিজয় কঠিন হয়ে দাঁড়ালো , তার সহযাত্রীরা তাকে ভিন্ন অবস্থায় দেখতে পেলেন , যা অন্যদের মত নয়। পরিস্থিতি যত কঠিন হতে থাকলো তাদের চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো এবং তারা কাঁপতে লাগলেন এবং তাদের অন্তর ভীতিপূর্ণ ছিল। কিন্তু ইমাম হোসেইন (আ.) এবং তার কিছু বিশিষ্ট সাথী ছিলেন হাসিমুখে ও প্রশান্তিতে। তারা পরস্পরকে বলছিলেন ,“
তোমরা দেখছো না তারা মৃত্যুকে সামান্যতম ভয় পায় না। ”
ইমাম হোসেইন (আ.) বললেন ,“
সহ্য কর , হে সম্মানিতদের সন্তানরা , মৃত্যু একটি সাঁকো ছাড়া কিছু নয়। যা তোমাদেরকে কষ্টের ও দুর্দশার জায়গা থেকে অনন্ত বেহেশত ও চির প্রশান্তির জায়গায় নিয়ে যাবে। তাই তোমাদের মধ্যে কে আছে যে চায় না কারাগার থেকে মুক্তি এবং প্রাসাদগুলোর দিকে দ্রুত যেতে ? আর তোমাদের শত্রুদের জন্য মৃত্যু হলো এমন যে , তাদেরকে প্রাসাদগুলো থেকে কারাগারে স্থানান্তরিত করা হবে এবং আল্লাহর ক্রোধের শিকার হবে। আমি আমার বাবা ইমাম আলী (আ.) থেকে শুনেছি , যিনি রাসূল (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে , তিনি বলেছেন যে , এ পৃথিবী বিশ্বাসীদের জন্য কারাগার এবং অবিশ্বাসীদের জন্য বেহেশত। আর মৃত্যু হল তাদের (বিশ্বাসীদের) জন্য বেহেশতে প্রবেশের একটি সাঁকো এবং তাদের (অবিশ্বাসীদের) জন্য জাহান্নামে প্রবেশের পথ , না আমি মিথ্যা বলছি এবং না আমাকে মিথ্যা বলা হয়েছে। ”
কুরাইশদের মূর্তিপূজকদের পথভ্রষ্টতা ও বিধ্বংসী বিদ্রোহ সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন ,
)
وَلَقَدْ جَاءَهُمْ مِنَ الْأَنْبَاءِ مَا فِيهِ مُزْدَجَرٌ (৪) حِكْمَةٌ بَالِغَةٌ فَمَا تُغْنِ النُّذُر(
এবং নিশ্চয়ই তাদের কাছে সতর্ক বাণীর কিছু অংশ এসেছে , যেখানে আছে আত্মনিয়ন্ত্রণ (খারাপ থেকে) , পরিপূর্ণ প্রজ্ঞা , কিন্তু (তারা) সতর্ক বাণী গ্রহণ করে নি। ” [সূরা ক্বামার : ৪-৫]
উমর বিন সা’
আদের সেনাবাহিনীর অবস্থা ছিলো সে রকম। আমাদের অভিভাবক ইমাম হোসেইন (আ.) ও তার সাথীদের বারবার বক্তৃতা , উপদেশ , প্রমাণ পূর্ণভাবে উপস্থিত করা এবং তাদের ভুল শুধরে দেয়া , কোনটিই তাদের কাজে লাগে নি।
আল হুর বিন ইয়াযীদ আর রিয়াহি ইমাম হোসাইন (আ.) এর সাথে যোগ দিলেন
যখন আল হুর দেখতে পেলেন লোকেরা ইমাম হোসেইনকে (আ.) হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং যখন তিনি ইমামকে বলতে শুনলেন ,
“
কেউ কি নেই যে আল্লাহর নামে আমাদের সাহায্য করতে দ্রুত আসবে ? কেউ কি নেই যে নবীর পরিবারকে সাহায্য করবে ?”
তখন আল হুর উমর বিন সা’
আদকে বললেন ,“
হে উমর , তুমি তাহলে সত্যিই এ মানুষটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে ?’
সে বললো ,“
হ্যাঁ , আল্লাহর শপথ , যুদ্ধ যদি সহজে ঘটে তাহলে তাতে মাথা গড়াবে এবং হাতগুলো কাটা যাবে। ” আল হুর বললেন ,“
তাহলে কি তার প্রস্তাব তোমার কাছ অগ্রহণযোগ্য ?”
উমর বললো ,“
যদি পরিস্থিতি আমার হাতে থাকতো , আমি অবশ্যই তার অনুরোধে রাজী হতাম , কিন্তু তোমার সেনাপতি তা গ্রহণ করবে না। ” আল হুর তাকে ছেড়ে গেলেন এবং সবার কাছ থেকে দূরে আলাদা দাঁড়িয়ে রইলেন , তার সহযোগী কুররাহ বিন কায়েস তার সাথে ছিল। আল হুর বললেন ,“
হে কুররাহ , তুমি কি তোমার ঘোড়াকে আজ খাইয়েছো ?”
সে না বললো। আল হুর বললেন ,“
তাহলে তুমি কি চাও না এর পিপাসা মেটাতে ?”
কুররাহ বলে যে , আমি সন্দেহ করলাম যে , সম্ভবত সে যুদ্ধ এড়িয়ে যেতে চায় এবং সে চাইছিলো না যে আমি তাকে চলে যেতে দেখবো , তাই আমি বললাম ,“
আমি তা এখন করবো। ” এ কথা শুনে আল হুর সেখান থেকে সরে গেলেন। কুররাহ বলে যে ,“
আল্লাহর শপথ , যদি আল হুর শুধু আমার কাছে পাশক্র করতো সে কী করতে চাইছিলো আমি ও তার সাথে ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে যেতাম। ” এরপর আল হুর ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে যাওয়া শুরু করল।
মুহাজির বিন আওস তাকে বললো ,“
হে ইয়াযীদের পুত্র , তুমি কী করতে চাচ্ছো ? তুমি কি অবরোধ আরোপ করতে চাও ?”
আল হুর তাকে কোন উত্তর দিলেন না , কিন্তু তিনি কাঁপছিলেন। মুহাজির বললো ,“
সত্যিই , তোমার অবস্থা সন্দেহজনক , আমি তোমাকে কখনও কোন যুদ্ধে এই অবস্থায় দেখি নি যে অবস্থায় তুমি এখন আছো। যদি আমাকে প্রশ্ন করা হতো কে কুফাবাসীর মধ্যে সবচেয়ে সাহসী , আমি তোমার নাম বলতে দ্বিধা করতাম না। এ কী অবস্থায় এখন আমি তোমাকে দেখছি ?”
আল হুর বললেন ,“
আমি নিজেকে বেহেশত ও দোযখের মাঝে দেখছি। আল্লাহর শপথ , আমি বেহেশতের উপর কোন কিছুর মর্যাদা দিব না , যদি আমাকে কেটে টুকরো করে অথবা পড়িয়েওু ফেলা হয়। ” এরপর আল হুর তার ঘোড়াকে আঘাত করলেন [মালহুফ] এবং ইমাম হোসেইন (আ.) এর দিকে যাওয়ার জন্য ঘুরলেন।
আল হুর তার দুহাত মাথার উপর রেখেছিলেন (বন্দীর মত) এবং বলছিলেন ,“
হে আল্লাহ , আমি আপনার দিকে ফিরছি , তাই আমাকে গ্রহণ করুন , কারণ আমি আপনার বন্ধুদের ও নবীর নাতির সন্তানদের হৃদয়ে ভয়ের সৃষ্টি করেছি। ”
[‘
ইরশাদ ’ ,‘
কামিল ’ গ্রন্থে আছে] তাবারি বলেন যে , যখন তিনি ইমাম হোসেইন (আ.) ও তার সাথীদের নিকটবর্তী হলেন , তিনি তার ঢাল উল্টো করে দিলেন এবং তাদেরকে সালাম জানালেন। এরপর তিনি ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে গেলেন এবং বললেন ,“
হে আল্লাহর রাসূলের সন্তান , আমি আপনার জন্য কোরবান হই , আমি ই আপনাকে ফিরে যাওয়া থেকে থামিয়েছি এবং আপনার সাথে আগাগোড়া ছিলাম এবং আপনাকে বাধ্য করেছি এখানে নামতে। কিন্তু আমি জানতাম না যে এই লোকগুলো আপনার প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করবে এবং আপনাকে বর্তমান অবস্থায় আনবে , আল্লাহর শপথ , যদি আমি জানতাম যে তারা আাপনার সাথে এ রকম করবে আমি সে কাজের দায়িত্ব নিতাম না যা আমি করেছি। তাই আমি এখন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইছি সেজন্য যা আমি করেছি , তাই আপনি কি মনে করেন আমার তওবা গ্রহণ করা হবে ?”
ইমাম হোসেইন (আ.) উত্তরে বললেন ,“
আল্লাহ তোমার তওবা কবুল করুন , তোমার ঘোড়া থেকে নেমে আসো। ”
আল হুর বললেন ,“
আমার জন্য ঘোড়ায় চড়ে থাকা এবং আপনার খেদমত করা ও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা উত্তম। এভাবেই শেষ পর্যন্ত আমাকে ঘোড়া থেকে নামতে হবে (যখন আমি আহত হব) । ”
তখন ইমাম বললেন ,“
তোমার উপর তোমার রব রহমত করুন , যা চাও করো। ”
তখন তিনি ইমাম হোসেইন (আ.) এর সামনে দাঁড়ালেন এবং বললেন ,“
হে কুফার লোকেরা , তোমাদের মায়েরা তোমাদের হারাক , তোমরা আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলে , এরপর যখন তিনি তোমাদের কাছে এলেন , তোমরা তাকে শত্রুর হাতে তুলে দিলে , অথচ তোমরা তার জীবন রক্ষার্থে জীবন দিতে চেয়েছিলে! এখন তোমরা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছো তাকে হত্যা করার জন্য! তোমরা তাকে আটক করেছো এবং তার জামার কলার ধরেছো এবং তাকে চারদিক থেকে ঘেরাও করেছো যেন তিনি আল্লাহর প্রশস্তশহরগুলোতে পালিয়ে যেতে না পারেন। তিনি এখন তোমাদের মাঝে বন্দী , এখন তিনি নিজের কোন কল্যাণ করতে পারেন না এবং এ থেকে খারাপকে দূরও করতে পারেন না। তোমরা তাকে , তার নারীদের , সন্তানদের ও পরিবারকে ফোরাত নদীর পানি থেকে বঞ্চিত রেখেছো যা ইহুদী , খৃস্টান ও সাবেঈ এবং ইরাকের শুকর ও কুকরদের জন্য উম্মুক্ত আছে , তাতে ঝাঁপ দেয়ার জন্য , আর তারা পিপাসায় মৃত্যুবরণ করবে ? মুহাম্মদ (সা.) এর মৃত্যুর পর তার বংশধরের সাথে কি খারাপ আচরণই না করেছো তোমরা। আল্লাহ যেন চরম পিপাসার দিনে (কিয়ামতে) তোমাদের পিপাসা না মেটান। ” এ কথা শুনে কিছু সৈন্য তাকে আক্রমণ করলো এবং তার দিকে তীর ছোঁড়া আরম্ভ করলো। তখন আল হুর এলেন এবং ইমাম হোসেইন (আ.) এর সামনে দাঁড়ালেন।
সিবতে ইবনে জাওযির‘
তাযকিরাহ ’ তে উল্লেখ আছে যে , ইমাম হোসেইন (আ.) তখন উচ্চ কণ্ঠে শাবাস বিন রাবঈ , হাজ্জার বিন আবজার , কায়েস বিন আল আশআস এবং ইয়াযীদ বিন আল হারসকে ডাকলেন এবং বললেন ,
“
তোমরা কি আমার কাছে চিঠি লিখো নি ?”
তারা বললো ,“
আপনি যা বলছেন তা আমরা জানি না। ” আল হুর বিন ইয়াযীদ , যে তাদের নেতা ছিলেন , বললেন ,“
হ্যাঁ , আল্লাহর শপথ , আমরা আপনার কাছে লিখেছিলাম এবং আমরাই আপনাকে এখানে এনেছি। তাই আল্লাহ ফালতু কাজ ও ফালতু কাজের লোকদের দূরে রাখুন। আল্লাহর শপথ , আমি আখেরাতের উপর এই পৃথিবীকে অগ্রাধিকার দিবো না ” এ কথা বলে তিনি তার ঘোড়াকে ফিরিয়ে ইমাম হোসেইন (আ.) এর সারিতে প্রবেশ করলেন। ইমাম বললেন ,
“
স্বাগতম , তুমি স্বাধীন এ পৃথিবীতে এবং আখেরাতেও । ”
[ইবনে নিমা থেকে] বর্ণিত আছে যে , আল হুর ইমাম হোসেইন (আ.) কে বললেন যে ,“
যখন উবায়দুল্লাহ আমাকে আদেশ দিলো আপনার দিকে আসতে আমি প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এলাম , আমি শুনলাম একটি কণ্ঠ আমাকে পিছন থেকে ডেকে বলছে ,“
হে আল হুর , কল্যাণের সংবাদ নাও , আমি ঘুরে তাকালাম কিন্তু কাউকে দৃশ্যমান পেলাম না। আল্লাহর শপথ , তখন আমি আশ্চর্য হলাম , এই সুসংবাদ কিসের জন্য , কারণ আমি ইমাম হোসেইন (আ.) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য যাচ্ছি এবং আমি তখনও আপনাকে সাহায্য করার ইচ্ছা করি নি। ” ইমাম বললেন ,
“
কিন্তু এখন তুমি (শেষ পর্যন্ত) কল্যাণে পৌঁছেছো। ”
এরপর উমর বিন সা’
আদ চিৎকার করে বললো ,“
হে দুরাইদ , পতাকা কাছে নিয়ে এসো। ” যখন সে তা কাছে আনলো , উমর একটি তীর তার ধনুকে বসালো এবং ছুঁড়লো এবং বললো ,“
সাক্ষী থাকো যে আমি ছিলাম প্রথম ব্যক্তি যে তীর ছুঁড়ে ছিলো। ” তখন অন্যরা তাকে অনুসরণ করলো এবং যুদ্ধের জন্য চ্যালেঞ্জ জানালো।
মুহাম্মাদ বিন আবু তালিব বলেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথীদের মধ্যে কেউ ছিল না যে এতে আহত হয় নি। বলা হয় , তীর বৃষ্টির পর ইমাম (আ.) এর অল্প কিছু সাথী রক্ষা পান এবং পঞ্চাশ জন শাহাদাত লাভ করেন।
[তাবারির গ্রন্থে] আযদি বলেন যে , বনি কালব গোত্রের আবজানাব আমার কাছে বর্ণনা করেছে যে , আমাদের গোত্রে এক ব্যক্তি ছিলো যার নাম ছিলো আব্দুল্লাহ বিন উমাইর , যে ছিলো বনি আলীম শাখার। সে কুফায় বসবাস শুরু করলো হামাদান গোত্রের বনি জা ’ আদের কুয়ার কাছে। তার স্ত্রী উম্মে ওয়াহাব ছিলো আমর বিন কাসিত গোত্রের আবদের কন্যা। সে নুখাইলাতে এক দল সৈন্যকে কুঁচকাওয়াজ করতে দেখে ইমাম হোসেইন (আ.) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে। আবদুল্লাহ বলে যে ,“
আল্লাহর শপথ , মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমার প্রবল ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এখন আমি যুদ্ধ করতে চাই তাদের বিরুদ্ধে যারা নবীর নাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর আল্লাহর কাছে আমার পুরস্কার মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার চাইতে কম হবে না। ” তখন সে তার স্ত্রীর কাছে গেল এবং তাকে জানালো সে কী শুনেছে এবং সে কী চায়। স্ত্রী উত্তর দিলো ,“
তুমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছো তা সঠিক। তোমার আল্লাহ তোমাকে সব বিষয়ে ধার্মিকতার পথ দেখান। যাও এবং আমাকেও সাথে নাও। ” তখন সে চলে এলো এবং ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে এলো এবং তার সাথেই ছিল যতক্ষণ না উমর বিন সা’
আদ তাদের দিকে তীর ছুঁড়লো এবং তার সেনাবাহিনী তাকে অনুসরণ করলো।
এরপর যিয়াদের দাস ইয়াসার এবং উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের দাস , সারিম যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করলো এবং যুদ্ধের জন্য আহ্বান করলো। তা শুনে হাবীব বিন মুযাহির এবং বুরাইর (বিন খুযাইর) দাঁড়ালেন উত্তর দিতে , কিন্তু ইমাম হোসেইন (আ.) তাদেরকে ইশারা করলেন বসে থাকতে। তখন আবদুল্লাহ বিন উমাইর কালবি উঠে দাঁড়ালেন এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অনুমতি চাইলেন। ইমাম দেখলেন সে বাদামী রঙের ও লম্বা মানুষ , শক্তিশালী বাহু ও প্রশস্ত কাঁধের অধিকারী। তিনি বললেন ,
“
আমার মতে সে এক মারাত্মক প্রতিদ্বন্দ্বী , তুমি যেতে পারো যদি তুমি তার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে চাও। ”
যখন আব্দুল্লাহ তাদের দিকে এগিয়ে গেলেন , তারা জিজ্ঞেস করলো ,“
তুমি কে ?”
আবদুল্লাহ তাদেরকে তার বংশধারা বললো। তারা বললো: আমরা তোমাকে চিনি না ,হাযইর বিনাইকন ¡ , হাবীব বিন মুযাহির অথবা বুরাইর বিন খুযাইরের আসা উচিত ছিলো। ইয়াসার সালিমের কাছে নগ্ন তরবারি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। আব্দুল্লাহ বললেন ,“
হে জারজ সন্তান , তুমি কি একজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অপছন্দ করো ? যে-ই তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসবে সে তোমার চাইতে ভালো হবে। ” এ কথা বলে তিনি তৎক্ষণাৎ ইয়াসারকে আক্রমণ করলেন এবং তরবারির আঘাতে তাকে হত্যা করলেন। কেউ চিৎকার করে বললো ,“
এই দলটি তোমার পিছনে লেগে আছে। ” আব্দুল্লাহ তা শুনলো না যতক্ষণ পর্যন্তনা সালিম ঘোড়া চালিয়ে তাকে তার তরবারি দিয়ে আঘাত করলো। আবদুল্লাহ তার বাম হাত বাড়িয়ে দিলেন , তাতে তার আঙ্গুলগুলো কেটে গেলো। এরপর আব্দুল্লাহ তাকে আক্রমণ করলেন এবং তাকে হত্যা করলেন।
দুজনকে হত্যা করার পর আব্দুল্লাহ কবিতা আবৃত্তি করলেন ,“
যদি তোমরা আমাকে না জানো , আমি বনি কালব থেকে , এটি যথেষ্ট যে আমার পরিবার বনি উলেইম থেকে , আমি একজন যোদ্ধা এবং একজন মানুষ যার আছে শক্তিশালী স্নায়ু। আমি তেমন নই যে দুশ্চিন্তার সময় কুঁকড়ে যায়। হে উম্মে ওয়াহাব , আমি তোমার কাছে দায়বদ্ধ একজন মানুষের তরবারি ও বর্শা সম্পর্কে আল্লাহতে বিশ্বাস করে। ”
তার স্ত্রী উম্মে ওয়াহাব , তাঁবুর একটি খুঁটি এক হাতে নিয়ে তার স্বামীর দিকে এগিয়ে গেলেন এবং চিৎকার করে বললেন ,“
আমার পিতামাতা তোমার জন্য কোরবান হোক , নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর পবিত্র বংশধরের প্রতিরক্ষায় যুদ্ধ করো। ” আবদুল্লাহ তার দিকে অগ্রসর হলেন তাকে তাঁবুতে ফেরত পাঠাতে। কিন্তু তিনি তার জামা ধরে বললেন ,“
আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না যতক্ষণ না আমি তোমার সাথে নিহত হই। ”
ইমাম হোসেইন (আ.) তাকে উচ্চ কণ্ঠে ডেকে বললেন ,“
নবীর পরিবারের কারণে তোমাকে যথাযথ পুরস্কার দেয়া হোক , ফিরে আসো , তোমার উপর আল্লাহ রহম করুন , নারীদের কাছে ফেরত আসো , কারণ জিহাদ নারীদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। ” এ কথা শুনে তিনি ফেরত এলেন।
[‘
ইরশাদ ’ ,‘
কামিল ’ এবং তাবারির গ্রন্থে আছে] এরপর আমর বিন হাজ্জাজ তার সেনাবাহিনীসহ ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথীদের ডান দিকে আক্রমণ করলো। যখন তারা কাছে এলো , ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথীরা হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো তাদের দিকে বর্শা তাক করে। তাদের ঘোড়াগুলো বর্শার দিকে এগোতে ভয় পেলো এবং পিছনে ফিরে গেলো। তখন ইমামের সাথীরা তাদের দিকে তীর ছুঁড়ে তাদের কিছুকে হত্যা করলো এবং অন্যদেরকে আহত করলো।
[‘
কামিল ’ , তাবারির গ্রন্থে] বনি তামীমের এক লোক আব্দুল্লাহ বিন হাওযাহ সামনে অগ্রসর হয়ে ইমাম হোসেইন (আ.) এর মুখোমুখি এবং তাঁকে চিৎকার করে ডাকলো। ইমাম বললেন ,“
কী চাও ?”
অভিশপ্ত উত্তর দিলো ,“
তুমি (জাহান্নামের) আগুনের সুসংবাদ লাভ করো। ” (আউজুবিল্লাহ) ইমাম বললেন ,
“
না , তুমি যে রকম বলছো সে রকম নয়। আমি রাহমানুর রাহীম এবং শাফায়াতকারী প্রভুর দিকে যাত্রা করছি , যাকে মানা হয়। ”
এরপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন সে কে এবং তাকে বলা হলো যে সে হাওযাহর সন্তান। ইমাম বললেন ,
“
হে আল্লাহ , তাকে (জাহান্নামের) আগুনে নিক্ষেপ করুন। ”
হঠাৎ করে ঐ ব্যক্তির ঘোড়া উত্তেজিত হয়ে উঠলো এবং তাকে পিঠ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। [‘
ইরশাদ ’ গ্রন্থে আছে] কিন্তু বাম পা জিনে আটকে গেলো এবং তার ডান পা আকাশের দিকে উঠে থাকলো , তখন মুসলিম বিন আওসাজা আক্রমণ করলেন এবং তার ডান পা কেটে ফেললেন। ঘোড়াটি তাকে নিয়ে দৌঁড়াতে শুরু করলো এবং তার মাথা মরুভূমির পাথর ও গাছে বাড়ি খেতে লাগলো যতক্ষণ না তার মৃত্যু হলো। এভাবে তার রুহ দ্রুত এগিয়ে গেলো (জাহান্নামের) আগুনের দিকে।
[তাবারির গ্রন্থে] আযদি বর্ণনা করেন আতা ’ আবিন সায়েব থেকে , সে বর্ণনা করেছে জাব্বার বিন ওয়াএল থেকে এবং সে তার ভাই মাসরূক্ব বিন ওয়াএল থেকে যে , আমি সেনাবাহিনীর সাথে ছিলাম যারা ইমাম হোসেইন (আ.) এর বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়েছিলো। আমি অনুরোধ করলাম একেবারে সামনে থাকার জন্য যেন , ইমামের মাথাটি পাই এবং উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের কাছে সম্মান লাভ করি। যখন আমরা তার কাছে পৌঁছালাম আমাদের মাঝ থেকে ইবনে হাওযাহ নামে এক ব্যক্তি আরও এগিয়ে গেলো এবং বললো ,“
হোসেইন কি তোমাদের মাঝে আছে ?”
কিন্তু ইমাম তাকে উত্তর দিলেন না। যখন সে তা তিন বার বললো , ইমাম বললেন ,
‘
হ্যাঁ , হোসেইন এখানে , তুমি কী চাও ?”
সে বললো ,“
হে হোসেইন (জাহান্নামের) আগুনের সুসংবাদ নাও। ” (আউজুবিল্লাহ) , ইমাম বললেন ,
“
নিশ্চয়ই তুমি মিথ্যা বলছো , আমি ক্ষমাশীল ও শাফায়াতকারী প্রভুর দিকে যাত্রা করছি , যাকে মানা হয়। তুমি কে ?”
সে উত্তর দিল সে হাওযাহর সন্তান। বর্ণনাকারী বলে যে , ইমাম তখন তার দুহাত আকাশের দিকে এতো উঁচুতে তুললেন যে আমরা তার কাপড়ের নিচে বাহুর নিচে সাদা অংশ দেখতে পেলাম এবং বললেন ,
“
হে রব , তাকে (জাহান্নামের) আগুনে দ্রুত পাঠাও। ”
এ কথা শুনে ইবনে হাওযাহ ক্রোধান্বিত হলো এবং চাইলো ইমামের দিকে ঘোড়া ছোটাতে , কিন্তু তাদের মাঝে ছিলো একটি গর্ত। হঠাৎ করে তার পা জিনে পেঁচিয়ে গেলো এবং ঘোড়াটি তাকে হেঁচড়ে নিলো যতক্ষণ না সে পড়ে গেলো। তখন তার পা এবং উরু আলাদা হয়ে গেলো এবং তার দেহের অন্য অংশ জিন থেকে ঝুলে রইলো। এ দৃশ্য দেখে মাসরূক্ব ফিরে এলো এবং অশ্বারোহীদের পিছনে লুকালো। বর্ণনাকারী আরও বলেছে যে ,“
আমি তাকে (মাসরূক্বকে) তার ফেরত আসা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম , সে বললো , আমি এই পরিবার থেকে এমন আশ্চর্য জিনিস দেখেছি যে আমি কখনোই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো না। ”
বুরাইর বিন খুযাইরের শাহাদাত
[তাবারির গ্রন্থে আছে] যুদ্ধ শুরু হলো। আযিদ বলেন যে , ইউসুফ বিন ইয়াযীদ আমাকে বলেছে আফীফ বিন যুহাইর বিন আবি আখনাস থেকে , যে কারবালার উপস্থিত ছিলো , সে বলে , বনি আবদাল ক্বায়েসের বনি সালিমার এক শাখা উমাইয়া বিন রাবি ’ আর এক ব্যক্তি ইয়াযীদ বিন মা’
ক্বাল এগিয়ে এলো। সে বুরাইরকে বললো ,“
হে বুরাইর বিন খুযাইর , তুমি কি দেখতে পাচ্ছো আল্লাহ তোমাকে কী করেছেন ?”
বুরাইর বললেন ,“
আল্লাহর শপথ , আল্লাহ আমার সাথে যথাযথ ব্যবহার করেছেন এবং তোমাদের জন্য খারাপকে বের করে এনেছেন। ” ইয়াযীদ বললো ,“
তুমি মিথ্যা বলছো এবং এর আগে তুমি কখনো মিথ্যা বলো নি , তুমি কি মনে করতে পারো যে একবার আমি তোমার সাথে বনি লওযানে হাঁটছিলাম , তুমি আমাকে বলেছিলে উসমান বিন আফফান নিজেকে নিজে হত্যা করেছে , আর মুয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ান একজন পথভ্রষ্ট লোক এবং সে অন্যকে পথভ্রষ্ট করে অথচ সত্যিকার এবং সৎকর্মশীল ইমাম এবং পথপ্রদর্শক হচ্ছে আলী বিন আবি তালিব ?”
বুরাইর বললেন ,“
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে এখনও এটিই আমার বিশ্বাস। ইয়াযীদ বিন মা’
ক্বাল বললো ,“
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তুমি পথভ্রষ্টদের একজন। ” তখন বুরাইর বললেন , “ তাহলে তুমি কি চাও আমরা পরস্পরকে অভিশাপ দেই এবং যে মিথ্যা বলে তার ওপরে আল্লাহর অভিশাপ প্রার্থনা করি। তারপর যে সঠিক পথে আছে সে তাকে হত্যা করবে যে ভুল পথে আছে। এরপর আমি আসবো তোমার সাথে যুদ্ধ করতে। ”
বর্ণনাকারী বলে যে এরপর উভয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে বেরিয়ে এলো এবং তাদের দুহাত উঠিয়ে আল্লাহর অভিশাপ চাইলো মিথ্যাবাদীর উপর এবং যেন সঠিক পথের অনুসারী পথভ্রষ্টকে হত্যা করে। এরপর তারা পরস্পর যুদ্ধ শুরু করলো । তাদের মধ্যে তরবারি আঘাত বিনিময় হলো এবং ইয়াযীদ বিন মা’
ক্বাল একটি হালকা ও অকৃতকার্য আঘাত করলো বুরাইরকে , তখন বুরাইর তার মাথার ওপরে আঘাত করলেন , যা তার মাথা ফেটে মগজে পৌঁছালো। সে একটা বলের মত মাটিতে গড়িয়ে পড়লো এবং বুরাইরের তরবারি তার মাথায় আটকে রইল এবং তিনি উপর নিচ করতে লাগলেন টেনে বের করার জন্য।
তখন রাযী বিন মানকায আযদি বুরাইরকে আক্রমণ করলো এবং তাকে জড়িয়ে ধরলো। তারা দুজনেই ধস্তাধস্তি করলো যতক্ষণ না বুরাইর তাকে নিচে ফেলে দিলেন ও তার বুকের উপর বসলেন। তখন রাযী চিৎকার করে বললো ,“
আমাকে রক্ষাকারীরা কোথায় ?”
তা শুনে কা‘
আব বিন জাবির বিন আমর আযদি এগিয়ে এলো তাকে সাহায্য করতে , তখন আমি বললাম ,“
এ হলো বুরাইর বিন খুযাইর। কোরআনের ক্বারী , যে আমাদেরকে মসজিদে কোরআন শিখিয়েছে। ” সে বুরাইরকে তার বর্শা দিয়ে আক্রমণ করলো , যখন বুরাইর বর্শার তীক্ষ্ম মাথা অনুভব করলেন তিনি নিজেকে তার উপর ছুঁড়ে দিলেন এবং তার নাকে কামড় দিলেন। কিন্তু কাআব তার বর্শা তার ভিতরে ঢুকিয়ে দিল এবং হৃৎপিণ্ড পর্যন্ত ঢুকিয়ে দিল এবং বর্শার মাথাটি তার পিঠে প্রবেশ করলো। এরপর সে তাকে মাথায় আঘাত করলো এবং তরবারি দিয়ে আঘাত করতে শুরু করলো যতক্ষণ পর্যন্তনা তার মৃত্যু হলো (আল্লাহর রহমত ও বরকত তার উপর বর্ষিত হোক) ।
আফীফ বিন যুহাইর বিন আবি আখনাস বলে যে , আমি যেন দেখতে পাচ্ছি রাযীকে , যে মাটিতে পড়েছিলো , উঠে দাঁড়াচ্ছে তার জামা থেকে ধুলো ঝেড়ে এবং কাআবকে বলছে ,“
আযদ (গোত্র) এর ভাই , তুমি আমার উপকার করেছো এবং আমি তা কখনও ভুলবো না। ”
ইউসুফ বিন ইয়াযীদ বলে যে , আমি আফীফকে জিজ্ঞেস করলাম সে সত্যিই তা নিজ চোখে দেখেছে কিনা , এতে সে উত্তর দিল যে ,“
আমি তা দেখেছি আমার নিজের চোখে এবং শুনেছি আমার নিজ কানে। ”
যখন কা‘
ব বিন জাবির ফেরত এলো , তার স্ত্রী এবং তার বোন নাওয়ার বিনতে জাবির তাকে বললো ,“
তুমি ফাতিমা (আ.) এর সন্তানের বিরোধীদের পক্ষ নিয়েছো এবং কোরআন তেলাওয়াতকারীদের প্রধানকে হত্যা করেছো ? আল্লাহর শপথ এখন থেকে আমি আর কখনও তোমার সাথে কথা বলবো না। কা‘
ব বিন জাবির নিচের কবিতাটি আবৃত্তি করলো:
“
তোমরা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছো এবং জানানো হবে ইমাম হোসেইন (আ.) এর সকাল সম্পর্কে , যখন বর্শাগুলো বেগে ঠেলে দেয়া হচ্ছিলো , আমি কি সে কাজ করি নি যা তোমরা ঘৃণা করো ? সে দিন ভাবতে পারছিলাম না আমি কী করবো , আমার সাথে আমার বর্শা ছিলো , যা নিশানা করতে ব্যর্থ হয় নি এবং একটি সাদা ঝকমকে তরবারি ছিলো , যা ছিলো ধারালো ও ভয়ানক , আমি তা কোষমুক্ত করলাম এবং একটি দলকে আক্রমণ করলাম যাদের ধর্ম আমাদের মত ছিলো না , যা ছিলো হারবের সন্তানের আনুগত্য , আমি তাদের বয়েসী আর কাউকে দেখিনি যারা তীব্র যুদ্ধ করলো। ওরা তারা যারা তাদের সম্মান রক্ষা করে , তারা বর্শা ও তরবারির বিরুদ্ধে ধৈর্য ধরেছিলো এবং যুক্ষক্ষেত্রে প্রবেশ করেছিলো , এতে যদি তাদের কোন লাভ হতো , যখন তোমরা উবায়দুল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে , তাকে এই সংবাদ দিও যে আমি খলিফার প্রতি অনুগত এবং তার আদেশ পালনকারী , আমিই সে যে রাবইরকে হত্যা করেছি এবং মানকাযের ¡ সন্তানদের উপকার করেছি , যখন সে সাহায্যের জন্য ডাক দিয়েছিলো। ”
আমর বিন ক্বারতাহ আনসারীর শাহাদাত
এরপর আমর বিন ক্বারতাহ অগ্রসর হলেন এবং ইমামকে রক্ষার জন্য আক্রমণ করলেন এবং বলছিলেন ,“
আনসারদের ব্যাটালিয়ন জানে যে আমি অঙ্গীকারের এলাকা রক্ষাকারী , আমি ধারালো তরবারি দিয়ে আঘাত করি যুবকের মত , আমার সত্তা এবং আমার পরিবার হোসেইনের সামনে তুচ্ছ মূল্যের। ”
এখানে ইমাম হোসেইন (আ.) কে যে কোন ব্যক্তির পরিবারের চাইতে মূল্যবান বলা হচ্ছে। উমর বিন সা’
আদ ইমামকে বলেছিলো ,“
আমার বাড়ি ধ্বংস করা হবে ইত্যাদি। ” (১৫তম অধ্যায়ে বলা হয়েছে)
সাইয়েদ ইবনে তাউস বর্ণনা করেন যে , মুসলিম বিন আওসাজার শাহাদাতের পর আমর বিন ক্বারতাহ আনসারি এগিয়ে এলেন এবং ইমামকে অনুরোধ করলেন তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার জন্য। যখন ইমাম তাকে অনুমতি দিলেন , তিনি এমন শক্তিতে আক্রমণ করলেন যা ছিলো ঐ ব্যক্তির মত যে বেহেশতে যেতে চায়। এভাবে তিনি সংগ্রাম করলেন বেহেশতের সর্দারের খেদমতে যতক্ষণ পর্যন্তনা তিনি যিয়াদের সেনাবাহিনী থেকে একটি দলকেই হত্যা করলেন। কোন তীর ছিলো না যা ইমামের দিকে অগ্রসর হয়েছিলো আর তিনি তা ঢাল দিয়ে ঠেকান নি এবং কোন তরবারি ছিলো না যা ইমামের দিকে আসছিলো আর তিনি তার নিজের উপর নেন নি। তাই ইমাম কোন আঘাত পেলেন না যতক্ষণ আমর বেঁচে ছিলেন। যখন তিনি পুরো শরীরে আহত হয়ে গেলেন তিনি ইমামের দিকে ফিরলেন এবং বললেন ,“
হে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সন্তান , আমি কি আমার দায়িত্ব পালন করেছি ?”
ইমাম বললেন ,
“
অবশ্যই , তুমি আমার আগে বেহেশতে যাচ্ছো। তাই আমার সালাম পৌঁছে দিও রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এবং তাকে বলো যে আমি তোমার পরেই আসছি। ”
এরপর আমর সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করলেন এবং শাহাদাত অর্জন করলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত তার উপর বর্ষিত হোক) ।
[তাবারির গ্রন্থে ,‘
কামিল ’ গ্রন্থে] বর্ণিত আছে যে , আমরের ভাই আলী বিন ক্বারতাহ উমর বিন সা’
আদের সেনাবাহিনীতে ছিলো। যখন সে তার ভাইকে পড়ে যেতে দেখলো সে চিৎকার করে বললো ,“
হে হোসেইন , হে মিথ্যাবাদী এবং মিথ্যাবাদীর সন্তান ,”
(আউযুবিল্লাহ)“
তুমি আমার ভাইকে পথভ্রষ্ট করেছো এবং প্রতারিত করেছো এবং তাকে হত্যা করেছো। ” ইমাম বললেন , “ আল্লাহ তোমার ভাইকে পথভ্রষ্ট করেন নি , প্রকৃতপক্ষে সে ছিলো হেদায়েত প্রাপ্ত , আর তুমি হলে যে পথভ্রষ্ট। ”
অভিশপ্ত বললো ,“
আল্লাহ যেন আমাকে হত্যা করেন যদি আমি তোমাকে হত্যা না করি অথবা মৃত্যুবরণ করি তোমার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে। ” এ কথা বলে সে ইমামকে আক্রমণ করলো এবং নাফে ’ বিন হিলালরামদি অগ্রসর হলেন এবং তার দিকে মুখ করে দাড়ালেন। এরপর তিনি তাকে আক্রমণ করলেন একটি বর্শা দিয়ে এবং তাকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেললেন , তার সাথীরা তাকে উদ্ধার করতে এলো এবং তাকে নিয়ে গেলো। এরপর সে তার ক্ষতস্থানের চিকিৎসা করলো ও আরোগ্য লাভ করলো।
[তাবারির গ্রন্থে আছে] আযদি বলেন যে নযর বিন সালেহ আবু যুহাইর আবাসি বলেন যে , যখন আল হুর বিন ইয়াযীদ ইমাম হোসাইন (আ.) এর কাছে গেলেন ও তার দল ভুক্ত হলেন , বনি তামীমের এক লোক , যার নাম ইয়াযীদ বিন সুফিয়ান বললো ,“
আল্লাহর শপথ , যদি আমার চোখ আল হুরের উপর পড়ে , আমি তাকে আমার বর্শা দিয়ে হত্যা করবো। ” যখন দুই সেনাবাহিনী পরস্পরকে আক্রমণ করছিলো ও পরস্পরকে হত্যা করছিলো , আল হুর ছিলেন একদম সামনে এবং তিনি যুদ্ধ কবিতা আবৃত্তি করছিলেন ,“
আমার ঘোড়ার ঘাড় এবং বুক দিয়ে আমি আমাকে তাদের দিকে নিক্ষেপ করবো বার বার , যতক্ষণ না (পশুটি) রক্তের পোষাক পড়ে। ” এবং তিনি নিচের যুদ্ধ কবিতা আবৃত্তি করতে থাকেন ,“
আমি আল হুর , মেহমানের একজন মেযবান , আমি তোমাদের ঘাড়ে বিদ্যুৎগতির তরবারি দিয়ে আঘাত করি তাকে রক্ষার জন্য , যিনি খীফের (মিনায়) মাটিতে অবতরণ করেছেন এবং আমি এর জন্য আফসোস করি না। ”
বর্ণনাকারী বলে যে , তার ঘোড়ার লেজ ও ভ্রুদুটো আহত হয়েছিলো তরবারির আঘাতে এবং রক্ত এর মধ্য থেকে প্রবাহিত হচ্ছিল। ইবনে যিয়াদের পুলিশ বাহিনীর প্রধান হাসীন বিন তামীম , যাকে পাঠানো হয়েছিলো উমর বিন সা’
আদকে সাহায্য করার জন্য এবং তাকে ইয়াযীদ বিন সুফিয়ানের অধীন পুলিশ বাহিনীর অধিনায়ক বানানো হয়েছিলো , ইয়াযীদ বিন সুফিয়ানকে বললো ,“
এই হলো আল হুর বিন ইয়াযীদ , যাকে তুমি চাও। ” তখন সে আল হুরের দিকে অগ্রসর হলো এবং বললো ,“
হে আল হুর বিন ইয়াযীদ , তুমি কি যুদ্ধ চাও ?”
আল হুর হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিলেন এবং সে তার দিকে এলো। হামীম বললো ,“
আল্লাহর শপথ মনে হলো যেন তার জীবন ছিলো আল হুরের হাতে , সে তাকে তৎক্ষণাৎ হত্যা করলো। ”
হিশাম বিন মুহাম্মাদ বর্ণনা করেছে আবু মাখনাফ থেকে , যে বলেছে , ইয়াইয়া বিন উরওয়াহ আমাকে বলেছে যে , (মুহররমের) দশ তারিখে নাফে ’ বিন হিলাল আক্রমণ করছিলেন নিচের কবিতাটি আবৃত্তি করতে করতে ,
“ আমি হিলালের সন্তান , আমার ধর্ম আলীর ধর্ম। ” মাযাহিম বিন হুরেইস নামে এক ব্যক্তি তার দিকে এলো এবং বললো ,“
আমি উসমানের বিশ্বাসে বিশ্বাসী। ” নাফে ’ বললো ,“
যা হোক , তুমি শয়তানের বিশ্বাসে বিশ্বাসী। ” এ কথা বলে তিনি তাকে আক্রমণ করলেন এবং শেষ পর্যন্ততাকে হত্যা করলেন।
তখন আমর বিন হাজ্জাজ সেনাবাহিনীর দিকে ফিরলো এবং উচ্চকণ্ঠে বললো ,“
হে বোকার দল , তোমরা জানো তোমরা কার সাথে যুদ্ধ করছো ? তোমরা সাহসী কুফাবাসীদের সাথে যুদ্ধ করছো , যারা জীবন দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। তাই কেউ একা একা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে যেও না , কজন তারা অথবা কজনই বেঁচে আছে এবং অল্প সময় বাকী আছে। আল্লাহর শপথ , যদি তোমরা শুধু পাথর দিয়েও তাদের আক্রমণ কর , তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। ” তখন উমার বিন সা’
আদ বললো ,“
তুমি যা বলেছো সত্য এবং তার মতামত গ্রহণ করা হলো। ” তখন সে ঘোষণা করলো কেউ যেন তাদের সাথে একা একা যুদ্ধ করতে না যায়।
বর্ণিত আছে আমর বিন হাজ্জাজ ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথীদের দিকে অগ্রসর হলো এবং বললো ,“
হে কুফাবাসী , তাদেরকে দৃঢ়ভাবে ধরে থাকো যারা তোমাদের এবং তোমাদের সম্প্রদায়ের কথা শোনে এবং তাকে হত্যা করতে দ্বিধা করো না যে ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে এবং ইমামকে অমান্য করেছে। ” ইমাম হোসেইন (আ.) বললেন ,
“ হে আমর বিন হাজ্জাজ , তুমি কি লোকজনকে আমার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করছো ? আমরা কি ধর্ম থেকে বেরিয়ে গেছি আর তোমরা তার উপর দৃঢ় আছো ? আল্লাহর শপথ , যখন তুমি তোমার এই খারাপ কাজগুলো নিয়ে মরবে তখন তুমি জানতে পারবে কে ধর্ম থেকে বেরিয়ে গেছে এবং কে জাহান্নামের (আগুনের) জন্য যোগ্য। ”
মুসলিম বিন আওসাজার শাহাদাত
এরপর আমর বিন হাজ্জাজ ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথীদের ডান দিকের শাখাকে আক্রমণ করে ফোরাত নদীর দিক থেকে , সাথে ছিলো উমর বিন সা’
আদের ডান দিকের বাহিনী , এবং তারা কিছসময়ের জন্য যুদ্ধ করলো।মুসলিম বিন আওসাজা ছিলেন ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথীদের মাঝে যিনি শাহাদাত লাভ করলেন। এরপর আমর বিন হাজ্জাজ এবং তার সাথীরা ফিরে গেলো।
[‘
মানাক্বিব ’ -এ আছে] উল্লেখ করা দরকার যে , মুসলিম বিন আওসাজা কুফায় মুসলিম বিন অক্বীলের (আ.) প্রতিনিধি ছিলেন। তাকে অর্থ সংগ্রহ , অস্ত্রশস্ত্র কেনা ও ইমাম হোসেইন (আ.) এর পক্ষে বাইয়াত গ্রহণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো।
মুসলিম (বিন আওসাজা) কারবালায় বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন , নিচের যুদ্ধ কবিতাটি আবৃত্তি করতে থাকা অবস্থায় ,
“
যদি তোমরা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো , (জেনে রাখো) আমি একজন পুরুষ সিংহ , আমি বনি আসাদের সর্দার ও উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের একজন , যারা আমাদের উপর অত্যাচার করছে তারা সঠিক পথ এবং অমুখাপেক্ষী সর্বক্ষমতাশীল রবের ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। ”
তিনি শত্রুদের সাথে অনেক যুদ্ধ করলেন এবং সেনাদলের যুদ্ধ সহ্য করলেন এবং এক পর্যায়ে পড়ে গেলেন।
বর্ণনাকারী বলে যে , যখন ধুলোর মেঘ নিচে নেমে গেলো মুসলিমকে রক্তে মাখামাখি অবস্থায় দেখা গেলো। ইমাম হোসেইন (আ.) তার মাথার দিকে গেলেন , তখনও তিনি বেঁচে ছিলেন। ইমাম বললেন ,
“
তোমার রব তোমার উপর রহমত করুন , হে মুসলিম বিন আওসাজা ,
)
مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ فَمِنْهُمْ مَنْ قَضَى نَحْبَهُ وَمِنْهُمْ مَنْ يَنْتَظِرُ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا(
বিশ্বাসীদের মাঝে এমনও ব্যক্তিরা রয়েছে যারা আল্লাহর সাথে যা অঙ্গীকার করেছে তার উপর বিশ্বস্তআছে , তাদের কেউ অঙ্গীকার পূরণ করেছে এবং তাদের মাঝে কেউ আছে যে অপেক্ষা করছে (পূরণ করার জন্য) এবং তারা একটুও বদলায়নি। ” [সূরা আহযাব: ২৩]
তখন হাবীব বিন মুযাহির তার কাছে এলেন এবং বললেন ,“
আমার জন্য খুবই অপছন্দনীয় তোমাকে কাদা ও রক্তে মাখা অবস্থায় দেখা হে মুসলিম ,তুমি যেন জান্নাতের সুসংবাদ পাও। ” তখন মুসলিম নরম কণ্ঠে বললেন ,“
তোমার আল্লাহও যেন তোমাকে অনুগ্রহের সুসংবাদ দেন।”
হাবীব বললেন ,“
যদি আমি না জানতাম যে আমাকেও তোমার পথ (শাহাদাত) অনুসরণ করতে হবে এবং তোমার কাছে পৌঁছাতে হবে , আমি আনন্দের সাথে তোমাকে অনুরোধ করতাম তোমার অন্তরের শেষ ইচ্ছার অসিয়ত আমাকে করে যাওয়ার জন্য যতক্ষণ না আমি তোমার আত্মীয়দের ও ধর্মের সাথীদের অধিকার পূরণ করতাম। ” মুসলিম বললেন ,“
আমি এই সর্দারকে তোমার জন্য সুপারিশ করছি। ” তিনি ইমাম হোসেইন (আ.) এর দিকে ইঙ্গিত করে বললেন ,“
তার জন্য তোমার জীবন কোরবান করা উচিত। ” হাবীব বললেন ,“
কা‘
বার রবের ক্বসম , আমি অবশ্যই তা করবো। ” দেরী হলো না , তিনি তাদের হাতে শাহাদাত বরণ করলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) । তার এক দাসী কন্যাকে চিৎকার করতে শোনা গেল ,“
হে আওসাজার পুত্র , হে মালিক। ” আমর বিন হাজ্জাজের সাথীরা হাত তালি দিল ,“
আমরা মুসলিম বিন আওসাজাকে হত্যা করেছি। ” তখন শাবাস তার সাথীদের দিকে ফিরলো এবং বললো , “ তোমাদের মায়েরা তোমাদের জন্য কাঁদুক। তোমরা নিজেদের হাতে নিজেদেরকে হত্যা করছো এবং নিজেদেরকে পৃথক করছো অন্যের জন্য। তারপর আনন্দ করছো যে তোমরা মুসলিম বিন আওসাজাকে হত্যা করেছো। তাঁর শপথ যাকে আমি বিশ্বাস করি , আমি তাকে (মুসলিমকে) যুদ্ধক্ষেত্রে দেখেছি মুসলমানদের সম্মানসহ। আমি তাকে আযারবাইজানের সমতলে যুদ্ধক্ষেত্রে দেখেছি যখন কোন মুসলমান তাদের স্থান থেকে নড়ে নি , সে ছয় জন মুশরিককে হত্যা করেছিলো। যখন এ ধরনের মানুষ মারা যায় , তোমরা এতে উল্লাস প্রকাশ করো ?”
মুসলিম বিন আওসাজার হত্যাকারী ছিলো মুসলিম বিন আব্দুল্লাহ যাবাবি এবং আবদুর রহমান বিন আবি খাশকার বাজালি।
এরপর শিমর ইমামের বাম দিকের সেনাদলকে আক্রমণ করলো। তারা তার এবং সেনাবাহিনীর সামনে দাঁড়ালো এবং তাদেরকে হটিয়ে দিলো তাদের তরবারি দিয়ে। এরপর ইমাম এবং তার সাথীদেরকে সব দিক থেকে আক্রমণ করা হলো এবং আব্দুল্লাহ বিন উমাইর কালবি , যিনি আগে দুব্যক্তিকে হত্যা করেছিলেন , তিনি শহীদ হয়ে গেলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত তার ওপরে বর্ষিত হোক) । হানি বিন সাবাত হাযরামি এবং বুকাইর বিন হাঈ তামিমি তাকে হত্যা করে। তিনি ছিলেন ইমামের সাথীদের মাঝে দ্বিতীয় শহীদ।
এরপর ইমামের সাথীরা কুফার সৈন্যদের সাথে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। তাদের অশ্বারোহীরা , সংখ্যায় বত্রিশ জন , কুফার সেনাবাহিনীকে চতুর্দিক থেকে আক্রমণ করেন এবং তাদের সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে দেন।
আবু তুফাইল যেমন বলেন তাদের সম্পর্কে ,“
এটি কী ধরনের সেনাদল , ঢেউয়ের মত , শক্তিশালী পশু চিতা ও সিংহের মত , সেখানে আছে বৃদ্ধ , যুবক এবং সর্দাররা , যারা ঘোড়ায় চড়ে আছে ; তাদের মাঝখান থেকে পালিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন , যখন সূর্যরশ্মি তাদের পতাকার নিচে অস্ত যায় , এর শক্তি চোখকে দুর্বল করে দেয় , তাদের শ্লোগান নবীর শ্লোগানের মত এবং তাদের পতাকার মাধ্যমে আল্লাহ ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণ করেন।
[তাবারির গ্রন্থে আছে] যখন উরওয়া বিন ক্বায়েস , যে ছিলো অশ্বারোহী দলের অধিনায়ক , এই পরিস্থিতি দেখলো যে তার অশ্বারোহী সৈন্যরা সব দিক থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে , সে আবদুর রহমান বিন হাসীনকে পাঠালো উমর বিন সা’
আদের কাছে এই সংবাদ দিয়ে ,“
তুমি কি দেখতে পাচ্ছো না যে সকাল থেকে আমার অশ্বারোহী বাহিনী এই ছোট্ট দলটির সাথে পা টেনে টেনে চলছে ? পদাতিক সৈন্য ও তীরন্দাজদের তাদের দিকে পাঠাও। ” তখন উমর বিন সা’
আদ শাবাস বিন রাবঈর দিকে ফিরলো এবং বললো ,“
তুমি কি হোসেইনকে আক্রমণ করবে ?”
শাবাস বললো ,“
গৌরব আল্লাহর , তুমি কি শহরগুলোর সর্দার এবং কুফাবাসীদের নেতাকে তীরন্দাজদের সাথে পাঠাতে চাও ? তুমি কি আর কাউকে পাচ্ছো না যে একাজটি করতে পারে ?”
শাবাস ইমাম হোসেইন (আ.) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে করা পছন্দ করছিলো না। আবু যুহাইর আবাসি বলে যে , যুহাইর মুসআব , আব বিন যুবাইরের খিলাফত কালে আমি তাকে (শাবাস) বলতে শুনেছি যে , “ আল্লাহ কখনও কুফাবাসীদের কল্যাণ দান করবেন না এবং তাদেরকে সাফল্য দান করবেন না। আশ্চর্যের কিছু নেই যে আমরা আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) এর সারিতে থেকে যুদ্ধ করেছি এবং তার পরে তার সন্তান (ইমাম হাসান)-এর সাথে থেকে আবু সুফিয়ানের সন্তানদের বিরুদ্ধে , পাঁচ বছর। এরপর আমরা তার সন্তান হোসেইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি যে ছিলো পৃথিবী বাসীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ , মুয়াবিয়ার ও ব্যভিচারী সুমাইয়ার সন্তানের দলে থেকে। বেইজ্জতি , কী বেইজ্জতি!”
এরপর উমর বিন সা’
আদ হাসীন বিন তামিমকে ডেকে পাঠালো এবং তাকে পদাতিক সৈন্য ও পাঁচশত তীরন্দাজ দিয়ে পাঠালো। তারা অগ্রসর হলো এবং ইমাম হোসেইন (আ.) ও তার সাথীদের কাছে পৌঁছালো। তারা তাদের দিকে তীর ছুঁড়লো এবং তাদের ঘোড়াগুলোকে অক্ষম করে দিল এবং সবাই পায়দল এলো।
আযদি বলেন যে , নামীর বিন ওয়াহলাহ বর্ণনা করেছে আইউব বিন মাশরাহ হেইওয়ানি থেকে যে , সে সব সময় বলতো ,“
আল্লাহর শপথ , আমি আল হুর বিন ইয়াযীদের ঘোড়াকে অক্ষম করেছিলাম। আমি একটি তীর ছুঁড়েছিলাম যা এর পেট ফুটো করে ঢুকে পড়েছিলো , সেটি চিৎকার করলো এবং গড়িয়ে পড়ে গেলো (মাটিতে) । হঠাৎ আল হুর সিংহের মত ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং তাদের উপর তরবারি নিয়ে লাফ দিয়ে পড়লো এই বলে ,“
যদিও তোমরা আমার ঘোড়ার পা কেটে দিয়েছো , আমি একটি পুরুষ সিংহের চাইতে সাহসী। ” আল্লাহর শপথ , আমি তার মত কাউকে দেখি নি যে সৈন্যদের সারিগুলোর ক্ষয়-ক্ষতি করলো। তার গোত্রের প্রধানরা তাকে জিজ্ঞেস করলো ,‘
তুমি কি আল হুরকে হত্যা করেছো ?”
সে বললো ,“
আল্লার শপথ , আমি তাকে হত্যা করি নি , বরং অন্য একজন তাকে হত্যা করেছে। আমি তাকে হত্যা করতে চাইনি। আবু ওয়ারদাক তাকে কারণ জিজ্ঞেস করলো। এতে সে বললো ,“
কারণ সে ছিলো পরহেজগারদের একজন। যদি আমার এ কাজ গুনাহ হয় এবং আল্লাহর কাছে আমাকে যেতে হয় তাদের আহত করা এবং সেনাবাহিনীতে উপস্থিত থাকার দায়ভার নিয়ে তাহলে তা অনেক সহজ হবে , তাঁর কাছে তাদের হত্যার দায়ভার ঘাড়ে নিয়ে যাওয়ার চাইতে। ” আবু ওয়াদাক বললো ,“
তুমিও তাদের হত্যার গুনাহ নিয়ে আল্লাহর কাছে যাবে। এখন আমাকে বলো যে ,মিততাদের একটি ঘোড়াকে পিছু ধাওয়া করেছিলে , অন্য একটির দিকে তীর ছুঁড়েছিলে এবং তাদের দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে ছিলে এবং তুমি এই কাজ বেশ কয়েক বার করেছো এবং তোমার সাথী সৈন্যদের উৎসাহ দিয়েছো। যদি তোমাদেরকে আক্রমণ করা হয়ে থাকে এবং তোমরা পালিয়ে ছিলে এবং তোমাদের কিছু সাথী তোমাদের উদাহরণ অনুসরণ করেছে তাহলে তাদের হত্যায় তোমাদের সকলের সহযোগিতা ছিলো , তাই তোমরা তাদের রক্ত ঝরানোতে সমান অংশীদার। ” নামীর বললো ,“
হে আবু ওয়াদাক , তুমি আমাদেরকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করছো , কিয়ামতের দিনে তুমি যদি আমাদের হিসাব নিকাশের দায়িত্বে থাকো , আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা না করুন যদি তুমি আমাদের ক্ষমা না করো। ”
এটি উত্তম যে আমরা তাদের সম্পর্কে বর্ণনা করি ,“
এই জাতি কি কিয়ামতের দিনে (হোসাইনের) নানার সুপারিশ আশা করে হোসেইনকে হত্যা করার পর ? না , কখনোই নয় , আল্লাহর শপথ এরা কোন সুপারিশকারী খুঁজে পাবে না এবং কিয়ামতের দিনে তারা গযবে ঢেকে যাবে। ”
[তাবারির গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে] তারা তাদের বিরুদ্ধে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করলেন দুপুর পর্যন্ত। কুফার সেনাবাহিনী তাদেরকে এক দিক থেকে ছাড়া কোন দিক থেকে আক্রমণ করতে পারলো না , কারণ তাদের তাঁবুগুলো ছিল একসাথে যুক্ত। যখন উমর বিন সা’
আদ তা দেখলো সে তার সৈন্যদেরকে বললো তাঁবুগুলোকে বাম ও ডান দিক থেকে আক্রমণ করে সেগুলো উপড়ে ফেলতে এবং তাদেরকে ঘেরাও করে ফেলতে। ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথীদের মধ্যে তিন-চার জন তাঁবুগুলোকে পাহারা দিচ্ছিলেন। তারা আক্রমণকারীদের আক্রমণ করলেন তাঁবুগুলোর মাঝ থেকে এবং যে-ই তাঁবু উপড়ে ফেলতে বা লুট করতে আসছিলো তারা তাকে হত্যা করছিলেন অথবা তীর ছুঁড়ে আহত করছিলেন। তখন উমর বিন সা’
আদ বললো ,“
তাঁবুর কাছে যেও না , উপড়ে ফেলতে বা লুট করতে চেষ্টা করো না বরং সেগুলো পুঁড়িয়ে দাও ” । তখন তারা তাঁবুগুলো পুড়িয়ে দিলো এবং খুঁটি উপড়ে ফেলা ও লুট করা থেকে বিরত রইলো। ইমাম হোসেইন (আ.) বললেন ,
“
তাদেরকে তাঁবুগুলো পুড়তে দাও। যদি তারা তা করে তাহলে আগুন তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে। ”
সেরকমই ঘটলো যেমন বলা হলো এবং একটি দল তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গেলেন এক দিক থেকে।
[তাবারির গ্রন্থে আছে] (আব্দুল্লাহ বিন) উমাইর কালবির স্ত্রী দৌঁড়ে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবশে করলেন এবং তার স্বামীর মাথার কাছে বসলেন (যিনি ইতোমধ্যে) শহীদ হয়েছেন , যা আগেই বর্ণনা করা হয়েছে এবং তার কাছ থেকে ধুলো পরিষ্কার করে বললেন ,“
বেহেশত তোমার জন্য আনন্দদায়ক হোক। ”
যখন শিমর তাকে দেখলো , সে তার দাস রুস্তমকে আদেশ করলো ,
“
তার মাথায় আঘাত করো। ” সে তার মাথায় আঘাত করলো এবং তা দুভাগ হয়ে গেলো এবং তিনি সে জায়গাতেই শাহাদাত বরণ করলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত তার উপর বর্ষিত হোক) ।
এরপর শিমর বিন যিলজাওশান আক্রমণ করলো এবং ইমাম হোসেইন (আ.) এর একটি তাঁবুতে পৌঁছে গেলো এবং তার তরবারি দিয়ে সেটাকে আঘাত করে বললো ,“
আমার কাছে আগুন নিয়ে এসো , যেন আমি তা এর ভেতরে যা আছে তা সহ পুড়িয়ে ফেলতে পারি। ” এ কথা শুনে নারীরা চিৎকার করতে শুরু করলেন এবং ভয়ে তাঁবু থেকে বেরিয়ে এলেন। তখন ইমাম হোসেইন (আ.) উচ্চকণ্ঠে বললেন ,
“
হে যিলজওশনের সন্তান , তুমি কি আগুন আনতে বলছো আমার পরিবারসহ তাঁবু পুড়িয়ে ফেলতে। আল্লাহ যেন তোমাকে (জাহান্নামের) আগুনে পোড়েন। ”
আযদি বলেন যে , সুলাইমান বিন আবি রাশিদ বর্ণনা করেছে হামীদ বিন মুসলিম থেকে , সে বলেছে যে , আমি শিমর বিন যিলজাওশানকে বললাম ,“
সুবহানাল্লাহ ,এ তোমাকে মানায় না , তুমি আল্লাহর ক্রোধের স্বাদ নিতে চাও শিশু ও নারীদের হত্যা করে ? আল্লাহর শপথ , সেনাপতি তোমার উপর সন্তুষ্ট থাকবে যদি তুমি শুধু পুরুষদের হত্যা করো। ” তখন শিমর জিজ্ঞেস করলো আমি কে। আমি বললাম ,“
আমি প্রকাশ করবো না আমি কে ?”
আমি তা বললাম কারণ আল্লাহর শপথ , আমি শংকিত ছিলাম সে অন্যান্যদের সামনে আমাকে কটু কথা বলবে। তখন তার কাছে এক লোক এলো যার আদেশ সে শাবাস বিন রাযী থেকে বেশী মানতো এবং বললো ,“
আমি তোমার কাছে এর চেয়ে খারাপ বক্তব্য এর আগে শুনি নি , না আমি দেখেছি তোমাকে এরকম হীন অবস্থায় নিজেকে স্থাপন করতে। এখন কি তুমি মেয়েদেরকে ভয় দেখানো শুরু করেছো ?”
আমি দেখলাম যে তা শুনে শিমর লজ্জিত হলো এবং পিছনে সরে গেলো। তখন যুহাইর বিন ক্বাইন তাকে ও তার সাথীদেরকে আক্রমণ করলেন তার দশ জন সাথী নিয়ে এবং তাদেরকে তাঁবুগুলো থেকে হটিয়ে দিলেন এবং তারা দূরে চলে গেলো এবং তারা শিমরের এক সাথী আবু উযরাহ যাবাবিকে হত্যা করলেন। তা দেখে পুরো সেনাবাহিনী তাদেরকে আক্রমণ করলো এবং ক্ষতি করলো। ইমামের অনেক সাথী পড়ে যেতে লাগলেন। তাদের একজন ও অথবা দুজন পড়লেই তা দেখা যাচ্ছিলো অথচ শত্রুদের জন্য সে রকম ছিলো না। কারণ তারা ছিলো সংখ্যায় অনেক।
আবু সামামা সায়েদি কর্তৃক নামাযের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া ও হাবীব বিন মুযাহিরের শাহাদাত
[তাবারি গ্রন্থে বর্ণিত আছে] যখন আবু সামামাহ আমর বিন আব্দুল্লাহ সায়েদি দেখলেন তার সাথীরা একের পর এক নিহত হচ্ছেন , তিনি ইমাম হোসেইন (আ.) এর দিকে ফিরলেন এবং বললেন ,“
হে আবা আবদিল্লাহ আমি আপনার জন্য কোরবান হই , আমি দেখতে পাচ্ছি সেনাবাহিনী আপনার কাছে চলে এসেছে। কিন্তু আল্লাহ চাহে তো তারা আপনাকে হত্যা করতে পারবে না যতক্ষণ না তারা আমাদের হত্যা করে। আর আমি চাচ্ছি যে আল্লাহর সামনে নামায পড়ে যাবো (আপনার ইমামতিতে) , যার সময় হয়ে গেছে। ” তখন ইমাম তার মাথা তুললেন এবং বললেন ,
“
তুমি নামাযের (সময়ের) কথা মনে করিয়ে দিয়েছো , আল্লাহ তোমাকে ইবাদতকারী ও তেলাওয়াতকারীদের সাথে অন্তর্ভুক্ত করুন এবং নিশ্চয়ই এটি হচ্ছে নামাযের উত্তম সময়। ”
এরপর তিনি বললেন ,
“
তাদেরকে বলো আমাদের উপর থেকে হাত তুলে নিতে যতক্ষণ না আমরা নামায শেষ করি। ”
এ কথা শুনে হাসীন বিন তামীম বললো ,“
তোমার নামায কবুল হবে না। ” হাবীব বিন মুযাহির বললেন ,“
তুমি মনে করো আল্লাহর রাসূলের সন্তানের নামায কবুল হবে না , আর তোমার মত মদ পানকারীর নামায কবুল হবে ?”
তখন হাসীন বিন তামীম তাকে আক্রমণ করলো এবং হাবীব বিন মুযাহির তার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে এগিয়ে গেলেন। হাবীব তার মাথার সামনের দিকে আঘাত করলেন যা ভেতরে ঢুকে গেলো এবং হাবীব তাকে ফেলে দিলেন (ঘোড়া থেকে) । তখন তার সাথীরা তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এলো এবং তাকে সরিয়ে নিলো। হাবীব বিন মুযাহির বললেন ,“
আমি শপথ করে বলছি যদি আমরা সংখ্যায় তোমাদের মত হতাম অথবা তার অর্ধেকও হতাম তোমরা আমাদের দিকে পিছন দিয়ে পালাতে , হে খারাপ উৎসের মানুষ ও পুরুষত্বহীনেরা। ”
ঐদিন হাবীব বলছিলেন ,“
আমি হাবীব এবং আমার বাবা মুযাহির , যখন সে যুদ্ধক্ষেত্রের একজন অশ্বারোহী তখন তা ভয়ঙ্কর , তোমরা অস্ত্রে সুসজ্জিত এবং সংখ্যায় অনেক , কিন্তু আমরা আরও অনুগত , সহনশীল (তোমাদের চাইতে) আমাদের নফস উচ্চস্থানীয় এবং সত্য সুস্পষ্ট এবং (আমরা) আরও ধার্মিক এবং বেশি ধৈর্যশীল তোমাদের চাইতে। ”
হাবীব বিন মুযাহির ভীষণ আক্রমণ করলেন [‘
মালহুফ ’ ] যতক্ষণ না তিনি বাষট্টি জনকে হত্যা করলেন। [তাবারি] তখন তামীম গোত্রের একজন তাকে আক্রমণ করলো এবং তরবারি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করলো এবং তাকে হত্যা করলো (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার ওপরে) । তার হত্যাকারী ছিলো বনি আক্বাফান গোত্রের বুদাইল বিন সারীম। বনি তামীমের অন্য এক ব্যক্তি তাকে তরবারি দিয়ে মাথায় আঘাত করে , ফলে তিনি (আবার) মাটিতে পড়ে যান , যখন তিনি উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেন , হাসীন বিন তামীম তার মাথায় তরবারি দিয়ে আঘাত করে এবং তিনি (আবার) পড়ে যান। তখন বনি আক্বাফানের সেই ব্যক্তি (বুদাইল) তার ঘোড়া থেকে নেমে আসে এবং তার মাথা কেটে নেয়। এ দেখে হাসীন বললো ,“
তার হত্যাতে আমিও তোমার সাথে একজন অংশীদার। ” এতে সে বললো ,“
আল্লাহর শপথ , আমি ছাড়া কেউ তাকে হত্যা করেনি। ” হাসীন বললো ,“
তার মাথাটি আমাকে দাও যেন তা আমি আমার ঘোড়ার ঘাড়ে ঝুলাতে পারি যেন মানুষ দেখতে পায় ও বুঝতে পারে যে আমিও তার হত্যায় অংশগ্রহণ করেছি। এরপর তুমি তা ফেরত নিতে পারবে এবং উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের কাছে বহন করে নিতে পারবে। কারণ আমি পুরস্কারের আকাঙ্ক্ষা করি না। ” লোকটি তা অস্বীকার করলো কিন্তু তার সাথীরা তাকে রাজী হতে বাধ্য করলো।
এরপর সে হাবীবের মাথাটি হাসীনকে দিলো যা সে তার ঘোড়ার ঘাড় থেকে ঝুলিয়ে দিলো এবং সারিগুলোর মাঝখান দিয়ে প্রদক্ষিণ শুরু করলো এবং ফিরে এলো।
বনি তামীমের ব্যক্তিটি হাবীব এর মাথাটি তার ঘোড়ায় উঠিয়ে নিলো এবং উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের প্রাসাদে নিয়ে গেলো। হাবীবের সন্তান ক্বাসিম , যে বালেগ হওয়ার নিকটবর্তী ছিলো , তার বাবার মাথাটি দেখলো এবং তা চিনতে পারলো , সে তাকে অনুসরণ করলো এবং প্রাসাদের ভিতর প্রবেশ করলো এবং তার সাথেই আবার বেরিয়ে এলো , যতক্ষণ না তার দৃষ্টি তার উপর পড়লো। সে বললো ,“
হে বৎস , কেন তুমি আমাকে অনুসরন করছো ?”
কিশোর উত্তর দিল যে তা কিছু নয়। লোকটি তাকে বললো ,“
কী ব্যাপার আমাকে বলো ?”
এতে কিশোরটি বললো ,“
যে মাথাটি তোমার কাছে আছে তা আমার বাবার। তা আমার কাছে দাও যেন আমি তা দাফন করতে পারি। ” লোকটি বললো ,“
প্রিয় বৎস , সেনাপতি এর দাফনে খুশী হবেন না এবং আমি চাই সেনাপতি আমাকে প্রচুর পুরস্কার দিবেন এর জন্য। ” বালক বললো ,“
কিন্তু আল্লাহর শপথ , তুমি এমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছো যিনি তোমার চাইতে উত্তম ছিলেন। ” এ কথা বলে বালকটি কাঁদতে লাগলো। দিন গেলো এবং বালকটি বড় হয়ে উঠলো। তার অন্য কোন দুঃখ ছিলো না শুধু তার বাবার হত্যাকারীর পিছু নেয়া ছাড়া যেন তাকে অসচেতনভাবে পায় ও বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে পারে। মুস’
আাব বিন যুবাইরের সময়ে‘
বাজমিরা ’ র যুদ্ধে এই বালক তার সেনাবাহিনীতে প্রবশে করো। সে তার বাবার হত্যাকারীকে একটি তাঁবুতে দেখতে পেলো এবং তাকে অনুসরণ করলো এবং তার জন্য ওঁত পেতে থাকলো। সে তার তাঁবুতে প্রবেশ করলো যখন ঐ ব্যক্তি দুপুরের পরে একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছিলো , সে তাকে তরবারি দিয়ে আঘাত করলো ও তাকে হত্যা করলো।
আযদি বলেন যে , যখন হাবীব বিন মুযাহির নিহত হন , ইমাম হোসেইন (আ.) ভেঙ্গে গেলেন , এরপর বললেন ,“
আমি নিজেকে এবং আমার বিশ্বস্তসাথীদেরকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করছি।”
কোন কোন শাহাদাতের বইতে (মাক্বাতিলে) আছে যে ইমাম বলেছেন ,“
তোমার যা অর্জন তা আল্লাহর কারণে , হে হাবীব , তুমি একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। তুমি এক রাতে পুরো কোরআন তেলাওয়াত করেছিলে। ”
আল হুর বিন ইয়াযীদ আর রিয়াহির শাহাদাত
বর্ণনাকারী বলেন যে আল হুর নিচের যুদ্ধ কবিতাটি আবৃত্তি করতে শুরু করলেন:
“
আমি শপথ করেছি নিহত না হতে যতক্ষণ না হত্যা করি এবং আমি আহত হবো না আরও অগ্রসর হওয়া ব্যতীত , আমি তাদেরকে আক্রমণ করবো ধারালো তরবারি দিয়ে , আমি পিছু হটবো না এবং পালিয়েও যাবো না (যুদ্ধক্ষেত্র থেকে) । ”
এছাড়া তিনি নিচের কবিতাটি আবৃত্তি করলেন:
“
আমি আল হুর , আমি মেহমানের একজন মেযবান , আমি তোমাদের ঘাড় বিদ্যুৎগতি তরবারি দিয়ে আঘাত করি , তার প্রতিরক্ষায় যে খীফের মাটিতে (মীনায়) অবতরণ করেছে এবং আমি এর জন্য আফসোস করি না। ”
তিনি এমন একটি তরবারি হাতে ধরে ছিলেন যা থেকে মৃত্যু বর্ষিত হচ্ছিলো। যেমনটি ইবনে মুতায তার সম্পর্কে বলেন ,“
আমার একটি তরবারি আছে যা মৃত্যু বিকিরণ করে , যখনই তা কোষমুক্ত হয় তা থেকে রক্ত ঝরতে শুরুকরে। ”
আল হুর তার সাথী যুহাইর বিন ক্বাইনের সাথে আক্রমণ করলেন। যদি যুদ্ধে তাদের একজন শত্রুদের দ্বারা ঘেরাও হয়ে যেতো অন্যজন আসতেন তাকে রক্ষায় ও উদ্ধার করতেন। তারা এ কাজ করতেই থাকলেন যতক্ষণ না পদাতিক সৈন্যরা আল হুরকে সবদিক থেকে আক্রমণ করলো ও তাকে হত্যা করলো (আল্লাহর রহমত ও বরকত তার উপর বর্ষিত হোক) ।
বনি কিনদা গোত্রের উবায়দুল্লাহ বিন আমর বাদি বলেন ,“
ভুলে যেও না সাঈদ বিন আব্দুল্লাহকে ও আল হুরকেও , যারা যুহাইরের সাথে প্রয়োজনের মুহূর্তে সাহায্য করেছিলো। ”
ফাত্তাল নিশাপুরি তার‘
রওযাতুল ওয়ায়েযীন ’ -এ আল হুর বিন ইয়াযীদের শাহাদাত সম্পর্কে বলেন যে , যখন ইমাম হোসেইন (আ.) আল হুরের মাথার কাছে এলেন , তখন তার রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিলো। তিনি বললেন ,
“ সাবাস হুর , তুমি স্বাধীন এই পৃথিবীতে ও আখেরাতে যেভাবে তোমার মা তোমায় নাম দিয়েছেন। ”
এরপর তিনি নিচের কবিতাটি আবৃত্তি করলেন:
“ শ্রেষ্ঠ আল হুর হলো বনি রিয়াহের আল হুর , বর্শাঘাত বিনিময়ের সময় আল হুর শ্রেষ্ঠ আল হুর , যে তার জীবনের সাথে উদার ছিলো যখন সকালে হোসেইন ডাক দিলো। ”
শেইখ সাদুক্ব ও একই বর্ণনা দিয়েছেন ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) থেকে। শেইখ আবু আলী মুনতাহাল মাকাল বলেন যে , আল হুর বিন ইয়াযীদ বিন নাজিয়্যাহ বিন সাঈদ ছিলেন বনি ইয়ারবু থেকে।
সাইয়েদ নি’
মাতুল্লাহ জাযায়েরি তুসতারি তার‘
আনওয়ারে নু’
মানিয়া ’ -তে লিখেছেন যে , একদল বিশ্বস্তব্যক্তি আমাকে বলেছেন যে , যখন শাহ ইসমাইল সাফাভি বাগদাদের নিয়ন্ত্রণ নিলেন তিনি কারবালায় ইমাম হোসেইন (আ.) এর মাযার যিয়ারতে এলেন। তিনি কিছু লোককে শুনতে পেলেন আল হুর সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করতে। তাই তিনি কবরের মাথার কাছে এলেন এবং আদেশ করলেন তা খুঁড়তে। জনগণ দেখতে পেলো আল হুর তার কবরে ঘুমাচ্ছেন তাজা রক্তে ভিজে এবং একটি রুমাল তার কপালে বাঁধা ছিলো। শাহ ইসমাইল তার কপাল থেকে রুমালটি খুলতে চাইলেন , যা ঐতিহাসিক সংবাদ অনুযায়ী ইমাম হোসেইন (আ.) বেঁধেছিলেন। যখন রুমালটি খোলা হল তাজা রক্ত বেরিয়ে আসতে লাগলো এবং কবর ভরে গেলো। তখন রুমালটি আবার তার জায়গায় বাঁধা হলো এবং রক্ত বের হওয়া বন্ধ হলো। তারপর তারা আবার রুমালটি খুললেন কিন্তু রক্ত বের ওয়া শুরুহলো। তারা ভিন্ন পন্থায় রক্ত বন্ধ করতে চেষ্টা করলেন কিন্তু পারলেন না এবং শেষ পর্যন্তএ রুমালটি বেঁধে দিলেন , এভাবে আল হুরের উচ্চ মর্যাদা তাদের কাছে নিশ্চিত হলো এবং শাহ একটি মাযার নির্মাণ করতে আদেশ করলেন কবরের ওপরে এবং একজন চাকর নিয়োগ করলেন তা দেখাশোনা করার জন্য।
‘
ওয়াসায়েলুশ শিয়া ’ গ্রন্থের লেখক সম্মানিত হাদীস বিশারদ শেইখ মুহাম্মাদ বিন হাসান আল হুর আমেলি ছিলেন আল হুর বিন ইয়াযীদ আর রিয়াহির বংশধর , যা শেইখ আহমাদ তার‘
দুররুল মুলুক ’ -এ উল্লেখ করেছেন।
[তাবারির গ্রন্থে উল্লেখ আছে] আবু সামামাহ সায়েদি তার চাচাতো ভাইকে হত্যা করলেন , যে তার প্রতি শত্রুতা পোষণ করতো এবং যোহরের নামায পড়লেন ইমাম হোসেইন (আ.) এর ইমামতিতে সালাতুল খওফ (ভীতি) পদ্ধতিতে।
[‘
মালহুফ ’ গ্রন্থে] অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে যে , যুহাইর বিন ক্বাইন এবং সাঈদ বিন আব্দুল্লাহকে ইমাম বললেন তার সামনে দাঁড়াতে যেন তিনি যোহরের নামাযের ইমামতি করতে পারেন। তারা তা করলেন এবং ইমাম তার অর্ধেক সাথীদের সাথে নিয়ে নামায পড়লেন।
বর্ণিত আছে , সাঈদ বিন আব্দুল্লাহ হানাফি ইমামের সামনে দাঁড়ালেন এবং এ কারণে তীরগুলোর লক্ষ্যে পরিণত হলেন। ইমাম যেদিকেই ফিরলেন , সাঈদ তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেন যতক্ষণ না তিনি সম্পূর্ণ আহত অবস্থায় পড়ে গেলেন। তিনি বললেন ,“
হে আল্লাহ , আদ ও সামুদ গোত্রের উপর আপনার অভিশাপের মত অভিশাপ তাদের উপর পাঠান। হে আল্লাহ , আমার সালাম পৌঁছে দিন আমার নবীর কাছে এবং তাকে জানান আমি কী ধরনের ব্যথা ও আঘাত বহন করেছি , কারণ আমি আপনার পুরস্কার আকাঙ্ক্ষা করি আপনার নবীর সন্তানকে রক্ষা করার জন্য। ” এ কথা বলে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত তার উপর বর্ষিত হোক) । তরবারির আঘাত ব্যতীত তার দেহে ছিলো তেরটি তীরের আঘাত।
ইবনে নিমা বলেন যে কিছু কিছু ব্যক্তি বলেন , ইমাম হোসেইন (আ.) এবং তার সাথীরা ইশারার মাধ্যমে একা একা নামায পড়েছিলেন।
[তাবারির গ্রন্থে আছে] ইবনে আসীর এবং অন্যরা বলেন যে যোহরের নামায শেষ হওয়ার পর তারা প্রচণ্ড আক্রমণ করে এবং ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে চলে আসে। তখন সাঈদ ইমামের ঢাল হিসাবে দাঁড়ালেন এবং তাকে সবদিক থেকে রক্ষা করলেন , আর এ কারণে শত্রুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলেন। সবদিক থেকে তীর আসতে লাগলো এবং তিনি পড়ে গেলেন। শহীদদের প্রতি সালামে বলা হয়েছে ,“
সাঈদ বিন আব্দুল্লাহ হানাফির উপর সালাম , যখন ইমাম হোসেইন তাকে অনুমতি দিলেন তাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য , তখন বলেছিলেন , না , আল্লাহর শপথ , আমরা আপনাকে একা ফেলে যাবো না। এরপর আপনি মৃত্যুকে বরণ করেছিলেন এবং ইমামকে রক্ষা করেছিলেন এবং আপনি আল্লাহর অনুগ্রহ প্রত্যক্ষ করেছিলেন বসবাসের স্থানে (বেহেশতে) । আল্লাহ যেন আমাদেরকে আপনার সাথে শহীদদের কাতারে জমা করেন এবং আল্লাহ যেন আপনার বন্ধুত্ব আমাদের দান করেন সর্বোচ্চ সম্মানিতদের স্থানে। ”
আমরা বলি: এই কথাগুলোর উপর একটু ভাবুন যা প্রশান্তিলাভকারী শহীদদের এবং কারবালার অন্যান্য শহীদদের মর্যাদা প্রমাণ করে , যা বুদ্ধিমানদের কল্পনাকে অতিক্রম করে গেছে। তাদের সম্মান সম্পর্কে এতটুকুই যথেষ্ট।
ইবনে নিমাও উল্লেখিত সাঈদের শাহাদাত বর্ণনা করেছেন তাবারী ও ইবনে আসীরের ভাষায়। এরপর তিনি বলেন যে , তখন উমর বিন সা’
আদ আমর বিন হাজ্জাজকে পাঠালো তীরন্দাজদের দিয়ে। তারা ইমাম হোসেইন (আ.) এর বাকী সঙ্গী-সাথীদের দিকে তীর ছুঁড়লো এবং তাদের ঘোড়াগুলোকে হত্যা করলো। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালো যে ইমামের সাথে আর কোন ঘোড় সওয়ার রইলো না। তিনি বললেন ,
“
কমবয়েসী ঘোড়াগুলো কি তাদের পতাকার নিচে দাঁড়াবে আমাদের ছেড়ে ? অথচ আমরা হচ্ছি তাদের সর্দারদের নেতা ? যখন কোন দুর্যোগ আমাদের শহরে প্রবেশ করতে চায় , আমাদের সে শক্তি আছে তা দূরে সরিয়ে দেয়ার এবং কেউ ছাউনির নিচে ঝকঝকে তরবারি নিয়ে হাঁটে না এবং আমাদের দল থেকে কেউ তাকে পাহারা দেয় না। ”
[তাবারির গ্রন্থে বর্ণিত আছে] যুহাইর বিন ক্বাইন বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করছিলেন এবং বলছিলেন ,“
আমি যুহাইর , ক্বাইনের সন্তান। আমি তোমাদেরকে হোসেইনের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখবো আমার তরবারি দিয়ে , কারণ সে নবীর দুই নাতির একজন , যিনি ধার্মিক ও পবিত্র বংশধর , এতে কোন মিথ্যা নেই যে তিনিই ইমাম , আমি তোমাদেরকে হত্যা করবো এবং এতে কোন আফসোস করবো না এবং আমার ইচ্ছে হয় যদি আমি দুভাগে ভাগ হতে পারতাম (তাহলে আমি দুগুণ যুদ্ধ করতাম) । ”
[তাবারির গ্রন্থে আছে] এরপর যুহাইর তার হাত ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাঁধে রাখলেন এবং বললেন ,“
এগিয়ে যান , কারণ আপনি হেদায়েতপ্রাপ্ত ও একজন হাদী (পথপ্রদর্শক) । আজ আপনি আপনার নানা নবী এবং (ইমাম) হাসান এবং মুরতাযা আলী (আ.) এর সাথে এবং দুপাখা বিশিষ্ট সুসজ্জিত ব্যক্তি আপনার চাচা জাফর এবং হামযা জীবন্ত শহীদ আল্লাহর সিংহের সাথে সাক্ষাত করবেন। ”
[মুহাম্মাদ বিন আবি তালিবের‘
মাক্বাতাল ’ -এ আছে] এরপর তিনি আক্রমণ করলেন এবং একশ বিশ জনকে হত্যা করলেন। [তাসলিয়াতুল মাজালিস , তাবারি , কামিল] এরপর কাসীর বিন আব্দুল্লাহ শা ’ আবি এবং মুহাজির বিন আওস তামিমি তাকে আক্রমণ করলো এবং তাকে মাটিতে ফেলে দিলো (আল্লাহর রহমত ও বরকত তার উপর বর্ষিত হোক) । যখন যুহাইর তার ঘোড়া থেকে পড়ে গেলেন , ইমাম হোসেইন (আ.) বললেন ,
“
হে যুহাইর , আল্লাহ যেন তোমাকে তাঁর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে না রাখেন এবং তোমার হত্যাকারীদের উপর তার গযব ফেলেন যেভাবে তিনি তাদের করেছিলেন তাদের যারা বাঁদর ও শুকরে পরিণত হয়েছিলো। ”
নাফে ’ বিন হিলালের শাহাদাত
নাফে ’ বিন হিলাল জামালি (অথবা বাজালি) তার নাম খোদাই করেছিলেন তার তীরগুলোতে এবং সেগুলোকে বিষে চুবিয়ে ছিলেন এবং সেগুলো শত্রুদের দিকে একের পর এক ছুঁড়ছিলেন এই বলে ,“
আমি এই তীরগুলো ছুঁড়ছি যার দাঁতগুলো বিষ বহন করে , যারা ভয় পায় তাদের তাতে কোন লাভ হবে না , এগুলো বিষমাখা যা শত্রুদেরকে পলায়নের উপর রাখে এবং এর আঘাত যমীনকে রক্তে ভরে দেয়। ”
তিনি একের পর এক তীর ছড়ঁতে থাকেন তা সব শেষ হওয়া পর্যন্ত। এরপর তিনি তার হাত তরবারির উপর রাখলেন ও বললেন ,“
আমি ইয়েমেনি গোত্র বাজালাহর এক যুবক , আমি অনুসরণ করি হোসেইন ও আলীর ধর্ম , আজকে আমাকে শহীদ করা হবে এবং তা আমার হৃদয়ের আশা এবং আমি আমার এর কাজগুলোর সাথে সাক্ষাত করবো। ”
তাবারি বলেন যে , তিনি উমর বিন সা’
আদের সাথীদের মাঝ থেকে বারো জনকে হত্যা করেন , তাদেরকে ছাড়াই যাদেরকে তিনি আহত করেছেন , যতক্ষণ না তার দুই হাত বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হলো। এরপর তাকে শিমর বন্দী করে এবং সে তার সাথীদের বলে তাকে মাটিতে হিঁচড়ে উমর বিন সাদের কাছে নিতে। উমর বিন সা’
আদ তাকে বললো ,“
দুর্ভোগ হোক তোমার , তুমি নিজের এ কী করেছো। ” নাফে ’ বললেন ,“
নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার নিয়ত সম্পর্কে জানেন। ” বর্ণনাকারী বলে যে রক্ত তার দাড়িতে বইছিলো আর সে বলছিলো ,“
আল্লাহর শপথ , আমি তোমাদের বারোজনকে হত্যা করেছি , তাদের ছাড়া যাদেরকে আহত করেছি এবং তার জন্য নিজেকে তিরস্কার করি না। যদি আমার হাতদুটো উপস্থিত থাকতো এবং আমার কব্জিগুলো থাকতো , তোমরা আমাকে বন্দী করতে পারতে না। ” শিমর উমর বিন সা’
আদকে বললো , “ আল্লাহ তোমার বিষয়গুলো সহজ করে দিন , তাকে হত্যা করো। ” উমর বললো ,“
তুমি তাকে এনেছো , তুমি তাকে হত্যা করো , যদি চাও ?”
তা শুনে শিমর তার তরবারি কোষমুক্ত করলো। নাফে ’ বললেন ,“
তুমি যদি মুসলমান হতে , তুমি আমাদের রক্ত ঘাড়ে নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করতে ঘৃণা করতে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর , যিনি আমাদের মৃত্যু নির্ধারিত করেছেন সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে অভিশপ্তদের হাতে। ” (আল্লাহর রহমত ও বরকত তার উপর বর্ষিত হোক।)
আব্দুল্লাহ ও আবদুর রহমান গিফারির শাহাদাত
যখন ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথীরা তাদের ক্ষয়-ক্ষতি দেখতে পেলেন এবং বুঝতে পারলেন যে তারা ইমাম ও তার আত্মীয়দের রক্ষায় অক্ষম তখন তারা ইমাম হোসেইন (আ.) এর সামনে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দেয়ার জন্য দ্রুত এগোলেন। আব্দুল্লাহ ও আবদুর রহমান , যারা উরওয়া গিফারীর সন্তান ছিলেন , তারা ইমামের কাছে এলেন এবং বললেন ,“
আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক হে আবা আবদিল্লাহ শত্রু আমাদের কাছে পৌঁছে গেছে এবং সবদিক থেকে আপনার দিকে দ্রুত এগোচ্ছে , তাই আমরা চাই আপনার সামনে নিহত হতে এবং আপনার জন্য জীবন কোরবান করতে। ” ইমাম বললেন ,
“
স্বাগতম , আমার কাছে এসো। ”
তারা ইমামের কাছে এলেন এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে লাগলেন। তাদের একজন বললেন , “ নিশ্চয়ই বনি গিফার এবং খানদাফ এবং বনি নিযার জানে যে , আমি ব্যভিচারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি আমার সুস্পষ্ট ও বিদ্যুৎগতি তরবারি দিয়ে। হে জাতি , সম্মানিত পিতাদের সন্তানদের রক্ষা করো , সেই শত্রুদের বিরুদ্ধে যাদের কাছে আছে পূর্বাঞ্চলের তরবারি ও ধারালো বর্শা। ”
[তাবারির গ্রন্থে] বর্ণনাকারী বলেন যে , দুজন জাবিরি ব্যক্তি , সাইফ বিন হুরেইস এবং মালিক বিন আবদ , যারা ছিলো চাচাতো ভাই ও দুধভাই , ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে এলেন এবং তারা কাঁদছিলেন। ইমাম তাদের জিজ্ঞেস করলেন ,
“
হে আমার ভাইয়ের সন্তানেরা , কেন তোমরা কাঁদছো ? আল্লাহর শপথ , আমি চাই তোমাদের চোখগুলো জ্বলজ্বল করবে। ”
তারা বললেন ,“
আল্লাহ আমাদেরকে আপনার জন্য কোরবান করুন , আমরা আমাদের জন্য কাঁদছি না , বরং আপনার জন্য কাঁদছি , আমরা দেখছি আপনাকে ঘেরাও করে ফেলা হয়েছে , আর আমরা আপনাকে রক্ষায় অক্ষম। ” ইমাম বললেন ,
“
হে আমার ভাইয়ের সন্তানেরা , আল্লাহ যেন তোমাদের এই বিবেক ও সমবেদনার জন্য উপযুক্ত পুরস্কার দান করেন। ”
[‘
মানাক্বিব ’ গ্রন্থে আছে] তখন তারা আরও অগ্রসর হলেন এই বলে ,“
আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক হে আল্লাহর রাসূলের সন্তান ” এবং ইমামও তাদের সালামের জবাব দিলেন। এরপর তারা আক্রমণ করলেন এবং শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়ে গেলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত তাদের উপর বর্ষিত হোক) ।
হানযালা বিন আল-আস’
আদ শাবামির শাহাদাত
[তাবারির গ্রন্থে ,‘
কামিল ’ গ্রন্থে আছে] এরপর হানযালা বিন আল-আস’
আদ শা ’ বামি এলেন এবং ইমাম হোসেইন (আ.) এর সামনে দাঁড়ালেন [মালহুফ] এবং তাকে তীর , বর্শা ও তরবারি থেকে রক্ষা করতে শুরু করলেন তার চেহারা ও ঘাড় দিয়ে [তাবাবি , কামিল] এবং উচ্চ কণ্ঠে বলতে লাগলেন ,
)
يَا قَوْمِ إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ مِثْلَ يَوْمِ الْأَحْزَابِ (৩০) مِثْلَ دَأْبِ قَوْمِ نُوحٍ وَعَادٍ وَثَمُودَ وَالَّذِينَ مِنْ بَعْدِهِمْ وَمَا اللَّهُ يُرِيدُ ظُلْمًا لِلْعِبَادِ (৩ ১ ) وَيَا قَوْمِ إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ يَوْمَ التَّنَادِ (৩২) يَوْمَ تُوَلُّونَ مُدْبِرِينَ مَا لَكُمْ مِنَ اللَّهِ مِنْ عَاصِمٍ وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ(
হে আমার সম্প্রদায় , আমি শংকিত যে তোমাদের তা হতে পারে যা দলগুলোর ঘটেছিলো , যেমন নূহ , আদ ও সামুদ ও তাদের পর যে লোকেরা এসেছিলো এবং আল্লাহ তার দাসদের উপর কোন অবিচার চান না , হে আমার সম্প্রদায় , আমি তোমাদের জন্য শংকিত সে দিনের বিষয়ে যেদিন চিৎকার করে (পরস্পরকে) ডাকার দিন , যেদিন তোমরা পিছনের দিকে ফিরে যাবে , (যখন) তোমাদের কোন রক্ষাকর্তা থাকবে না আল্লাহর ক্রোধ থেকে এবং যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট হতে দেন তার জন্য কোন হাদী নেই। [সূরা মু ’ মিন: ৩০-৩৩]
হে জনতা , হোসেইনকে হত্যা করো না , হয়তো আল্লাহ তাঁর ক্রোধে তোমাদের ধ্বংস করে দিবেন এবং যে মিথ্যা বলে সে অবশ্যই হতাশ হবে। ”
[তাবারি ,‘
কামিল ’ ] ইমাম তাকে উচ্চ কণ্ঠে ডাকলেন ,
“
হে আস’
আদের সন্তান , তোমার আল্লাহ তোমার উপর রহমত বর্ষণ করুন , তারা গযবের যোগ্য হয়ে গেছে সে সময় থেকে যখন যুদ্ধের আগে সঠিক পথের দিকে তোমার দাওয়াত তারা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সে সময় থেকে যখন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এবং তোমার সাথীদের রক্ত ঝরানো বৈধ মনে করেছে। তাই তোমার ধার্মিক ভাইদের হত্যা করার পর তাদের পালাবার পথ কোথায় ?”
হানযালা বললেন ,“
আপনি সত্য বলেছেন , আমি আপনার জন্য কোরবান হই , এখন সময় হয়েছে অন্য বাসায় যাওয়ার এবং ভাইদের সাথে মিলিত হওয়ার। ”
[‘
তাবারি ’ র গ্রন্থ ,‘
মাশহুদ ’ গ্রন্থে] ইমাম বললেন , “ হ্যাঁ , সেদিকে যাও , যা তোমার জন্য উত্তম এ পৃথিবী ও তাতে যা আছে তা থেকে , সেই রাজ্যের দিকে যাও যা কখনো ক্ষয়ে যাবে না। ”
এ কথা শুনে হানযালা বললেন ,“
আপনার উপর শান্তিবর্ষিত হোক হে আবা আবদিল্লাহ আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক আপনার ও আপনার পরিবারের উপর , আল্লাহ যেন বেহেশতে আমাদেরকে আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ” ইমাম বললেন ,“
তাই হোক। ”
এরপর হানযালা এগিয়ে গেলেন [মালহুফ] এবং বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করলেন , এবং যুদ্ধের ভয় সহ্য করলেন যতক্ষণ না তাকে শহীদ করা হল (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
[তাবারি গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে] তখন দুজন জাবিরি ভাই এগিয়ে এসে বললেন , আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক হে রাসূলুল্লাহর সন্তান। ”
ইমাম বললেন ,
“ তোমাদের উপর শান্তিবর্ষিত হোক। ”
তারা শহীদ হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ করলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত তাদের উপর বর্ষিত হোক) ।
শাওযিব ও আবিসের শাহাদাত
বর্ণনাকারী বলেন যে , আবিস বিন শাবিব শাকিরি তার আত্মীয় শাওযিবের কাছে এলেন এবং বললেন ,“
তোমার হৃদয়ের আশা কী ?”
তিনি বললেন ,“
আমি কী চাই ? আমি চাই তোমার পাশে থেকে যুদ্ধ করতে। আল্লাহর রাসূল (সা.) এর সন্তানদের রক্ষা করার উদ্দেশ্যে , যতক্ষণ না আমি শহীদ হই। ” আবিস আরও বললেন ,“
আমি তোমার বিষয়েও একই জিনিস চাই , অতএব আরও এগিয়ে যাও ইমামের দিকে যেন তিনি তোমাকে তার সাথীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নেন , যেভাবে তোমার পূর্ববর্তীরা অগ্রসর হয়েছে যেন আমিও তোমাকে বিবেচনা করতে পারি। এই মহুর্তে যদি আমার চাইতে নিকটতর অন্য কেউ আমার সাথে থাকতো আমি তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে আমার আগে পাঠাতাম , তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে প্রচুর পুরস্কার লাভের আশায়। আজ আমাদের কাজকর্মের শেষ দিন , কারণ আজকের পরে আর কোন কাজকর্ম থাকবে না , শুধু থাকবে হিসাব নিকাশ। ” এরপর শাওযিব এগিয়ে এলেন এবং ইমামকে অভিবাদন জানালেন এবং যুদ্ধ করলেন যতক্ষণ পর্যন্তনা শহীদ হয়ে গেলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত তার উপর বর্ষিত হোক) ।
শাকির হলো ইয়েমেনর একটি গোত্র এবং হামাদান গোত্রের শাখা , যা পৌঁছেছে শাকির বিন রাবি ’ য়াহ বিন মালিক পর্যন্ত। আবিস ছিলেন উপরোক্ত গোত্র থেকে এবং শাওযিব ছিলেন তার মিত্র এই অর্থে যে তিনি তার সাথে থাকতেন এবং তার বিশ্বস্তবন্ধু ছিলেন কিন্তু তার কর্মচারী বা মুক্ত দাস ছিলেন না , যা কেউ কেউ মনে করেন। এর বিপরীতে , আমাদের শেইখ , হাদীস বিশারদ (হোসেইন) নূরী যিনি‘
মুসতাদরাকুল ওয়াসায়েল ’ -এর লেখক , বলেন যে , সম্ভবত , শওযিবের সম্মান আবিসের চাইতে বেশি ছিলো। কারণ তার বিষয়ে বলা হয় যে তিনি (শাওযিব) শিয়া মাযহাবে অগ্রগামীদের একজন ছিলেন।
[তাবারি গ্রন্থে আছে] এরপর আবিস বিন আবি শাবীব ইমাম হোসেইন (আ.) কে বললেন ,“
হে আবা আবদিল্লাহ পৃথিবীর উপর আত্মীয়দের ও অন্যদের মাঝে এমন কেউ নেই যে আমার কাছে আপনার চাইতে বেশী প্রিয়। যদি আমার জীবনের চাইতে বেশি প্রিয় এমন কিছু থাকতো যা দিয়ে আমি জুলুমকে প্রতিরোধ করতে পারতাম তাহলে আমি তাই করতাম। শন্তিবর্ষিত হোক আপনার উপর হে আবা আবদিল্লাহ আমি আল্লাহকে আমার সাক্ষী ডাকি যে , আমি আপনার পিতা ও আপনার পথের উপর (দৃঢ়) আছি। ” এ কথা বলে তিনি তরবারি কোষমুক্ত করলেন। তার কপালে ছিলো একটি আঘাত। তিনি শত্রুকে আক্রমণ করলেন।
আযদি বলেন যে , নামীর বিন রামালাহ বর্ণনা করেছে রাব ’ ঈ বিন তামীম হামাদান থেকে , যে যুদ্ধে উপস্থিত ছিলো: আমি দেখেছি আবীস যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে এগোচ্ছে এবং তাকে চিনতে পেরেছিলাম। আমি তাকে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে দেখেছিলাম। সে ছিলো সাহসী লোক। তাই আমি বললাম ,“
হে জনতা , দেখো এ লোক হচ্ছে সিংহদের মধ্যে সিংহ। সে আবু শাবীবের সন্তান। কেউ যেন তার মোকাবিলায় না যায়। ” তখন আবিস উচ্চ কণ্ঠে বলতে শুরু করলেন ,“
তোমাদের মধ্যে কি কোন পুরুষ নেই ?”
এ কথা শুনে উমর বিন সা’
আদ বললো ,“
তাকে পাথর ছুঁড়ে মারো। ” লোকজন তাকে পাথর ছুঁড়ে মারতে শুরু করলো । যখন আবিস তা দেখলেন তিনি তার বর্ম ও শিরস্ত্রাণ খুলে ফেললেন। প্রশংসা আল্লাহর সেই ব্যক্তির উপর , যে বলেছে ,“
যে ভয়ভীতি ছাড়া তার ঘাড় দিয়ে ধারালো বর্শার সাথে সাক্ষাত করে এবং তার মাথাকে শিরস্ত্রাণ মনে করে যখন বর্শা অগ্রসর হয়। সে কোন বর্ম পরে না শুধু পবিত্র চরিত্রের বর্ম ছাড়া। ”
একজন ইরানী কবি বলেছেন ,“
তিনি তার বর্ম সরিয়ে বললেন , আমি একটি চাঁদ , মাছ নই এবং তিনি তার শিরস্ত্রান খুলে বললেন ,‘
আমি কোন মোরগ নই এবং তিনি বেরিয়ে এলেন কোন বমর্বা শিরস্ত্রাণ ছাড়াই , অলঙ্কৃত হয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য নব বধূর মত। ”
এরপর তিনি শত্রুদেরকে আক্রমণ করলেন (বর্ণনাকারী বলেন যে) আমি যেন দেখতে পাচ্ছি তিনি দুশ মানুষের একটি দলকে পিছনে হটিয়ে দিচ্ছেন। এরপর তারা তার দিকে সবদিক থেকে অগ্রসর হলো এবং তাকে হত্যা করলো (আল্লাহর রহমত ও বরকত বষির্তেহাক তার উপর) । আমি তার মাথাকে দেখলাম একটি দলের হাতে যারা নিজেদের মধ্যে তর্ক করছিলো যে তারা তাকে হত্যা করেছে। এরপর তারা উমর বিন সা’
আদের কাছে এলো , সে বললো“
ঝগড়া করো না , কারণ কোন এক ব্যক্তি তাকে হত্যা করেনি। ” সে তাদেরকে ফিরিয়ে দিলো।
আবুল শা’
সা কিনদির শাহাদাত
আযদি বলেন যে , ফুযাইল বিন খাদীজ কিনদি আমাকে বলেছে যে , আবল শা ’ সা ইয়াযীদ বিন যিয়াদ (অথবা মুহাজির) কিনদি , যে বনি বাহদুলা গোত্রের ছিলেন , ইমাম হোসেইন (আ.) এর সামনে হাঁটু গেড়ে বসলেন এবং একশত তীর ছুঁড়ে মারলেন শত্রুদের দিকে। যার মধ্যে শুধু পাঁচটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছিল। তিনি ছিলেন দক্ষ তীরন্দাজ। যখনই তিনি একটি তীরড়ছিলেছন , উচ্চস্বরে বলছিলেন আমি বাহদুলার সন্তান এবং আরজালার অশ্বারোহী। ”
তার সম্পর্কে ইমাম হোসেইন (আ.) বললেন ,“
হে আল্লাহ , তার তীর ছোঁড়াকে দৃঢ় করো এবং পুরস্কার হিসেবে তাকে বেহেশত দান করো। ”
যখন তিনি তার সব তীর খরচ করে ফেললেন তখন উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন ,“
মাত্র পাঁচটি তীর আমার ব্যর্থ হয়েছে আর আমি জানি আমি পাঁচ ব্যক্তিকে হত্যা করেছি। ” আবুল শা ’ সা কিনদি শাহাদাত বরণকারী প্রথম দলটিতে ছিলেন। সে দিন তিনি নিচের যুদ্ধ কবিতাটি আবৃত্তি করছিলেন ,
“
আমি ইয়াযীদ এবং আমার পিতা মুহাজির , আমি জঙ্গলের সিংহের চাইতে সাহসী , ইয়া রব , আমি হোসাইনের একজন সাহায্যকারী এবং সা’
আদের সন্তানের সাথে সম্পর্ক ছেদ করেছি এবং আমার ডান হাতে রয়েছে ধারালো ও ধ্বংসাত্মক তরবারি। ”
ইয়াযীদ বিন মুহাজির উমর বিন সা’
আদের সাথে কুফা থেকে এসেছিলেন ইমাম হোসেইন (আ.) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে , কিন্তু যখন তিনি দেখলেন যে তারা ইমামের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছে তখন তিনি ইমামের পক্ষে যোগ দিলেন এবং তার জন্যে যুদ্ধ করলেন এবং শাহাদাত অর্জন করলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত বার্ষিত হোক তার উপর) ।
ইমাম হোসেইন (আ.) এর একদল সাথীর শাহাদাত
উমর বিন খালিদ সাইদাউই , জাবির বিন হুরেইস সালমানি , উমর বিন খালিদের দাস সা’
আদ এবং মুজমে ’ বিন আব্দুল্লাহ আয়েযি , সবাই বেরিয়ে এলেন তাদের তরবারি নিয়ে যুদ্ধের শুরুতে। তারা কুফার সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করলেন এবং তাদের সারিতে ঢুকে পড়লেন। শত্রুরাও তাদের আক্রমণের জবাব দিলো এবং তাদেরকে ঘোরাও করে ফেললো এবং তাদেরকে তাদের সাথীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললো। এ দৃশ্য দেখে আব্বাস বিন আলী (আ.) দ্রুত তাদের দিকে এগিয়ে গেলেন এবং তাদেরকে তাদের থাবা থেকে উদ্ধার করলেন। তারপর যখন শত্রুরা আবার এগিয়ে এলো তারা তাদেরকে আক্রমণ করলেন যতক্ষণ পর্যন্তনা তারা সবাই এক জায়গায় শহীদ হয়ে গেলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তাদের উপর) ।
সুয়েইদ বিন আমর বিন আবি মুতা ’ র শাহাদাত
আযদি বলেন যে , যুহাইর বিন আবদুর রহমান খাস’
আমি আমাকে বলেছে যে , ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথীদের মধ্যে শেষ ব্যক্তি যে তার সাথে ছিলেন , তিনি ছিলেন সুয়েইদ বিন আমর বিন আবি মুতা ’ । তিনি শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করছিলেন এবং তিনি সারা শরীরে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অজ্ঞান অবস্থায় শহীদদের সাথে মাটিতে পড়ে যান। যখন তিনি জ্ঞান ফিরে পান তিনি শুনতে পেলেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) কে শহীদ করা হয়েছে। তিনি ভয়ে উঠে দাঁড়ালেন। তারা তার তরবারি নিয়ে গিয়েছিলো , কিন্তু তার ছিলো একটি ছোরা এবং তিনি তা হাতে তুলে নিলেন। তিনি তাদের সাথে কিছু সময়ের জন্য যুদ্ধ করলেন এবং শেষ পর্যন্ত শাহাদাত লাভ করলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) । তার হত্যাকারীরা ছিলেন উরাওয়াহ বিন বাতা ’ তুগলাবি এবং যায়েদ বিন রাককাদ। তিনি ছিলেন (কারবালায়) শেষ শহীদ।
সাইয়েদ ইবনে তাউস তার প্রশংসা করে বলেন যে , তিনি ছিলেন একজন সম্মানিত ব্যক্তি এবং প্রচুর নামায পড়তেন। তিনি হিংস্র সিংহের মত যুদ্ধ করেছিলেন এবং দৃঢ় ছিলেন যতক্ষণ পর্যন্ত না (অজ্ঞান হয়ে) পড়ে গেলেন শহীদদের মাঝে।
আমি (লেখক) বলি যে , শিয়া ও সুন্নী ঐতিহাসিকদের ও হাদীস বিশেষজ্ঞ ও মাক্বতালের লেখকদের বর্ণনায় ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথীদের শাহাদাতের ক্রমধারা এবং তাদের সর্বমোট সংখ্যা ও তাদের যুদ্ধ ক্ষেত্রের কবিতায় মতভেদ রয়েছে। কেউ আগের লোকদের আলোচনা করেছেন শেষে এবং পরের লোকদের আগে। কেউ কেউ শুধতাদের নাম ওদ্ধয কবিতা উল্লেখ করেছেন এবং অন্যরা কিছু সাথীর শাহাদাত বর্ণনা করেছেন কিন্তু বাকীদের বর্ণনা দেন নি।
এখন পর্যন্ত আমি নির্ভর করেছি নির্ভরযোগ্য প্রাচীন ঐতিহাসিকদের সংবাদের উপর , তাই এক দল শহীদের বর্ণনা বাদ পড়েছে , যাদের শাহাদাতের আলোচনা বাকী রয়ে গেছে আমার। তাই আমি তাদের শাহাদাত আলোচনা করছি সেই ক্রমধারায় যা শেই মুহাম্মাদ বিন আলী বিন শাহর আশোব উল্লেখ করেছেন তার কিতাব“
মানাক্বিব ” -এ।
এ ক্রমধারা অনুযায়ী আল হুর প্রথম যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করেন। এরপর বুরাইর বিন খুযাইর , যাদের শাহাদাত ইতোমধ্যেই আলোচনা করা হয়েছে। এরপর ওয়াহাব বিন আব্দুল্লাহ বিন হাববাব কালবি যুদ্ধক্ষেত্রে বেরিয়ে এলেন , তার মা-ও সেদিন তার সাথে ছিলেন , যিনি তাকে বলেছিলেন , “ উঠো , হে আমার সন্তান এবং আল্লাহর রাসূল (সা.) এর নাতিকে রক্ষা করো।”
ওয়াহাব বললেন ,“
নিশ্চয়ই আমি কৃপণতা করবো না। ” এরপর তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে বেরিয়ে এলেন এবং বলছিলেন ,“
যদি তোমরা আমাকে না চেনো , আমি বনি কালব গোত্রের , শীঘ্রই তোমরা আমাকে ও আমার তরবারিকে দেখবে এবং তোমরা দেখবে আমার আক্রমণ ও যুদ্ধে আমার প্রভাব , আমি আমার প্রতিশোধ নিবো আমার সাথীদের প্রতিশোধের পর এবং আমি দুঃখ ও কষ্ট দূর করবো আমার দুঃখের আগে , আমার সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করা কোন কৌতুককর বিষয় নয়। ” তিনি কুফার সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করলেন এবং তাদের একটি দলকে একের পর এক হত্যা করলেন। এরপর তিনি তার মা ও স্ত্রীর কাছে ফিরলেন এবং তাদের দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে বললেন , “ হে মা ,তুমি কি এখন সন্তুষ্ট ?‘
তিনি উত্তর দিলেন ,“
আমি সন্তুষ্ট হবো না যতক্ষণ না তুমি ইমাম হোসেইন (আ.) এর সামনে শহীদ হও। ” এরপর তার স্ত্রী বললেন ,“
আমি তোমাকে আল্লাহর নামে অনুরোধ করছি যেন আমাকে বিধবা করো না , যাও এবং নবীর নাতির সাথে থেকে যুদ্ধ করো , যেন তিনি কিয়ামতের দিন তোমার জন্য সুপারিশ করেন। ” ওয়াহাব ফিরলেন এ কথা বলে ,“
আমি তোমার কাছে অঙ্গীকার করছি , হে ওয়াহাবের মা , তাদেরকে বর্শা ও তরবারি দিয়ে আঘাত করবো , সেই যুবকের তরবারি চালানোর মত যে সর্বশক্তিমান আল্লাহতে বিশ্বাসী , যেন এই জাতিকে যুদ্ধের তিক্ত স্বাদ দিতে পারি , আমি বীর এবং এক যুবক , যার আছে ধারালো তরবারি , আমি যুদ্ধের সময় ভীত নই। প্রজ্ঞাবান আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট। ”
এরপর তিনি তাদের উপর আক্রমণ চালালেন এবং উনিশ জন অশ্বারোহী ও বারো জন পদাতিক সৈন্যকে হত্যা করলেন। তার দুটো হাতই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। এ দৃশ্য দেখে তার মা তাঁবুর একটি খুটি হাতে নিয়ে তার দিকে দৌড়ে গেলেন এই বলে ,“
আমার পিতামাতা তোমার জন্য কোরবান হোক , আল্লাহর নবীর পরিবারের রাস্তায় সংগ্রাম করো। ” ওয়াহাব এগিয়ে এলেন তার মাকে তাঁবুতে ফেরত আনতে , তখন তিনি (তার মা) তার জামা ধরে বললেন ,“
আমি ফিরবো না যতক্ষণ না আমাকে তোমার সাথে হত্যা করা হয়। ” যখন ইমাম হোসেইন (আ.) এ দৃশ্য দেখলেন তিনি বললেন ,
“ আল্লাহ যেন তোমাকে উপুক্ত পুরস্কার দান করেন আমার পরিবারের অধিকারের কারণে। নারীদের কাছে ফেরত যাও , আল্লাহ তোমার উপর রহমত করুন। ”
এ কথা শুনে তিনি ফেরত এলেন এবং ওয়াহাব যুদ্ধক্ষেত্রে ফেরত গেলেন এবং তাকে হত্যা করা হলো (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
ওয়াহাবের স্ত্রী এলেন এবং তার মাথার পাশে বসলেন এবং তার স্বামীর চেহারা থেকে রক্ত মুছে দিতে শুরু করলেন । যখন শিমর তাকে দেখলো সে তার দাসকে আদেশ দিলো তাকে তার লাঠি দিয়ে আঘাত করতে। সে তাই করলো এবং তিনি ছিলেন প্রথম নারী যে ইমাম হোসেইন (আ.) এর পক্ষে শহীদ হয়েছিলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
শেইখ সাদুক্বের‘
রওযাতুল ওয়ায়েযীন ’ ও‘
আমালি ’ তে বর্ণিত হয়েছে যে , ওয়াহাব বিন ওয়াহাব এবং তার মা আগে খৃস্টান ছিলেন এবং তারা ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করেন। তারা ইমামের সাথে করবালা আসেন এবং আশুরার দিনে ওয়াহাব তার ঘোড়ায় চড়েন এবং তাঁবুর একটি খুঁটি তার হাতে ছিলো। তিনি যুদ্ধ করলেন এবং শত্রুপক্ষের সাত অথবা আট জনকে হত্যা করেন। এরপর তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং উমর বিন সা’
আদের কাছে নেয়া হয় , সে তার মাথা বিচ্ছিন্ন করার আদেশ দেয়।
আল্লামা মাজলিসি বলেন , তিনি এক বর্ণনাতে দেখেছেন যে , ওয়াহাব আগে খৃস্টান ছিলেন , এরপর তিনি তার মা সহ ইসলাম গ্রহণ করেন ইমাম হোসেইন (আ.) এর হাতে। যখন তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করেন তিনি তরবারি দিয়ে চব্বিশ জন পদাতিক সৈন্য ও বারোজন অশ্বারোহী সৈন্যকে হত্যা করেন। এরপর তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং উমর বিন সা’
দের কাছে আনা হয় , যে তাকে বলেছিলো ,“
কী সাহস-ই না তুমি রাখো। ” এরপর সে তার মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে আদেশ দেয়। তার মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় এবং তার মাথাটি ইমাম হোসেইন (আ.) এর তাঁবুর দিকে ছুঁড়ে দেয়া হয়। তার মা তার মাথাটি তুলে তাতে চুমু দেন এরপর তা ছুঁড়ে মারেন উমর বিন সা’
দের সৈন্যবাহিনীর দিকে যা একজন সৈন্যকে আঘাত করে ও হত্যা করে। এরপর তিনি তাঁবুর একটি খুঁটি তুলে নেন এবং অন্য দুজনকে হত্যা করেন যতক্ষণ না ইমাম হোসেইন (আ.) তাকে দেখলেন এবং বললেন ,
“ হে ওয়াহাবের মা , ফিরে আসো , তুমি এবং তোমার সন্তান আল্লাহর রাসূলের সাথে থাকবে এবং নারীদের কাছ থেকে জিহাদ তুলে নেয়া হয়েছে। ”
তা শুনে তিনি ফেরত এলেন এবং বললেন ,“
হে রব , আমাকে হতাশ করেন না। ” ইমাম তাকে বললেন ,
“ তোমার রব তোমাকে হতাশ না করুন , হে ওয়াহাবের মা। ”
এরপর আমর বিন খালিদ আযদি সাইদাউই যুদ্ধক্ষেত্রে বেরিয়ে এলেন এবং ইমাম হোসেইন (আ.) কে বললেন ,“
হে আবা আবদিল্লাহ আমি আপনার সাথীদের সাথে মিলিত হতে চাই এবং আমি আপনাকে একাকী ও শহীদ হতে দেখতে অপছন্দ করি। ”
ইমাম উত্তর দিলেন ,
“ এগিয়ে যাও এবং খুব শীঘ্রই আমরা তোমাদের সাথে মিলিত হবো। ”
তিনি আরও অগ্রসর হয়ে বললেন ,“
হে আমার সত্তা , দয়ালু রবের দিকে অগ্রসর হও , রুহানীয়াতের ও মিষ্টি উদ্ভিদের সুসংবাদের দিকে , আজ তোমরা যা ভাল কাজ করেছো তার প্রতিদান পাবে , যা ফলকে লেখা আছে পুরস্কার দানকারী রবের নিকট , ভয় পেয়ো না , ভীত হয়ো না , কারণ প্রত্যেক জীবিত জিনিস ধ্বংস হবে এবং তোমার শান্তির বেশির ভাগ অংশ হলো ধৈর্য হে বনি কাহতানের আযদের দল। ” এরপর তিনিদ্ধযকরলেন এবং শহীদ হয়ে গেলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
‘ মানাক্বিব ’ -এ বর্ণিত আছে যে , তখন তার সন্তান খালিদ তাকে অনুসরণ করলেন এই বলে , “ বনি কাহতানের মৃত্যুতে ধৈর্য ধরো যেন দয়ালু , মর্যাদাবান , গৌরব , প্রকাশ এবং সম্মানিত , চিরস্থায়ী ’ ও দানশীল প্রভুর সন্তুষ্টি‘
অর্জন করতে পারো , হে প্রিয় বাবা , আপনি শ্রেষ্ঠ মুক্তার প্রাসাদে , মুগ্ধকারী বেহেশতে পৌঁছে গেছেন। ” তিনি আরও অগ্রসর হলেন এবং যুদ্ধ করলেন যতক্ষণ পর্যন্তনা তিনিও শহীদ হয়ে গেলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
তারপর সা’
আদ বিন হানযালা তামিমি , যে ইমাম হোসেইন (আ.) এর সেনাবাহিনীর মাঝে সম্মানিতদের একজন ছিলেন , যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করলেন এই বলে ,“
তরবারি ও বর্শার সামনে ধৈর্য ধরো , এর উপর ধৈর্য ধরো বেহেশতে প্রবেশের জন্য এবং হুর আল আইনের কাছে পৌঁছার জন্য , যে বিজয় ও সফলতা আশা করে এবং তা সন্দেহ ও অনুমান নয়। হে আমার সত্তা , সংগ্রাম করো প্রশান্তির জন্য এবং চেষ্টা করো সৎকর্মশীলতা অর্জন করতে। ”
তিনি ভীষণভাবে আক্রমণ করলেন এবং শেষ পর্যন্ত শহীদ হলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
এরপর উমাইর বিন আব্দুল্লাহ মাযহাজি বেরিয়ে এলেন এ যুদ্ধ কবিতাটি আবৃত্তি করতে করতে: “ বনি সা’
আদ ও মাযহাজ জানে যে , যুদ্ধের সময় আমি একজন ভয়ানক সিংহ , আমি সুসজ্জিত সৈন্যের মাথায় আঘাত করি আমার তরবারি দিয়ে এবং যোদ্ধাকে মাটিতে ফেলে দেই এবং তাকে নেকড়ে ও খোঁড়া হায়েনার খাদ্য বানাই। ” তিনি যুদ্ধ করতে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্তনা মুসলিম যাবাবি এবং আব্দুল্লাহ বাজালি তাকে হত্যা করে (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
মুসলিম বিন আওসাজা তাকে অনুসরণ করলেন , যার শাহাদাত ইতোমধ্যেই আলোচনা করা হয়েছে।
এরপর আবদুর রহমান ইয়াযনী যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করলেন এই বলে ,“
আমি আবদুল্লাহর সন্তান এবং ইয়ামানের বংশধর , আমি হোসেইন ও হাসানের ধর্মে আছি , আমি তোমাদের আঘাত করি ইয়েমেনিবযেকর তরবারি দিয়ে যার মাধ্যমে আমি , যিনি আশ্রয় দেন , তার সাক্ষাত আশা করি। ” এরপর তিনি শাহাদাত লাভ করলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
এরপর ইয়াহইয়া বিন সালীম মাযানি বের হয়ে এলেন নিচের যুদ্ধ কবতিাটি আবৃত্তি করে ,“
আমি সেনাবাহিনীকে আঘাত করবো আমার ফয়সালাকারী তরবারি দিয়ে , এক বিদ্যুৎগতি তরবারি যা শত্রুদের দিকে দ্রুত এগোয় , আমি অদক্ষ নই , না আমি ভীত , না আমি এগিয়ে আসতে থাকা মৃত্যুকে ভয় করি ” এবং তিনিও একই ভাগ্য বরণ করলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
কুররাহ বিন আবি কুররাহ গিফারি তাকে অনুসরণ করলেন নিচের যুদ্ধ কবিতাটি আবৃত্তি করে:“
গিফারের পুরো বংশ জানে এবং নিযারের বংশের পরে বনি খানদাদও জানে যে , উত্তপ্ত যুদ্ধের সময় আমি এক সিংহ এবং আমি আঘাত করি ব্যভিচারী দলকে তরবারি দিয়ে , সৎকর্মশীলদের বংশকে রক্ষায়। ” তিনি আটষট্টিজন ব্যক্তিকে হত্যা করলেন এবং নিহত হলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
এরপর মালিক বিন আনাস কাহিলি যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করলেন এই বলে ,“
আলীর সন্তানরা আল্লাহ ভক্ত আর উমাইয়ার সন্তানরা শয়তানের ভক্ত। ” এরপর তিনি চৌদ্দ জনকে হত্যা করলেন এবং কেউ কেউ বলেন যে তিনি আঠারো জনকে হত্যা করেন এবং নিজে শহীদ হন (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
আমি (লেখক) দৃঢ় ভাবে অনুভব করি যে , মালিক বিন আনাস কাহিলি নামে যাকে ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি আনাস বিন হুরেইস কাহিলি ছাড়া অন্য কেউ নন , যিনি নবী (সা.) এর সাহাবী ছিলেন। ইবনে আসীর জাযারি তার আসাদুল গাবাহতে বলেছেন যে , আনাস বিন মালিক কুফার অধিবাসী ছিলেন। আশআস বিন সালীম বর্ণনা করেন তার বাবা থেকে , যিনি বলেন যে , রাসূল (সা.) একবার বলেছিলেন ,
“
আমার এই সন্তানকেই (ইমাম হোসেইনকে ইংগিত করে) ইরাকের এক জায়গায় হত্যা করা হবে , তখন যে থাকবে তার উচিত তাকে সাহায্য করা। ” এভাবে তিনি ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথে শহীদ হন।
শেইখ নিমা তার‘
মুসীরুল আহযান ’ -এ বলেন যে , আনাস বিন হুরেইস কাহিলি যুদ্ধক্ষেত্রে এলেন এ বলে ,“
আমাদের গোত্র কাহিল এবং দাওদানও জানে , যেমন জানে খানদাফ ও ক্বায়েস আইলান যে , আমার জাতি এখন সমস্যার সম্মুখীন , হে জাতি , ভয়ানক সিংহে পরিণত হও এবং স্বাগতম জানাও এই সম্প্রদায়কে বিদ্যুৎগতির তরবারি দিয়ে , আলীর বংশধর দয়ালখোদার অনুসারী , আর হারবের বংশধর শয়তানের অনুসারী। ”
আমি (লেখক) বলি যে , তাকে কাহিলি বলা হয় এজন্য যে তার পূর্ব পুরুষ ছিলেন কাহিল।‘
যিয়ারতে নাহিয়া ’ তে বলা হয়েছে ,“
শান্তিবর্ষিত হোক আনাস বিন আল কাহিলি আল আসাদির উপর। ”
এরপর আমর বিন মুতা জু ’ ফি বেরিয়ে এলেন এই বলে ,“
আজ তরবারির আঘাত করা আমাদের জন্য আনন্দের , হোসইনের জন্য সহিংস আক্রমণ , এর মাধ্যমে আমরা সফলতা আশা করি এবং জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা চাই যখন আশ্রয়ের কোন আশা থাকবে না। ” তাকে হত্যা করা হয় (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
তারপর আসেন জন বিন মালিক ,‘
আবুযার গিফারির মুক্ত দাস [‘
মালহুফ ’ গ্রন্থ অনুযায়ী] তিনি (জন) ছিলেন একজন কালো দাস। ইমাম হোসেইন (আ.) তাকে বলেছিলেন ,
“ আমি তোমাকে চলে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছি , কারণ তুমি আমাদের মাঝে ছিলে আনন্দের সময় , তাই নিজেকে আমাদের পথে বন্দী করো না। ”
জুন উত্তর দিলেন ,“
হে আল্লাহর রাসূলের সন্তান , আমি আপনাদের খাবার পরিবেশন করেছিলাম খুশীর (এবং নিরাপত্তার) দিনগুলিতে , তাই কিভাবে আমি আপনাকে কষ্টের সময় ছেড়ে যাবো ? আল্লাহর শপথ , আমার ঘামের গন্ধ নোংরা , আমার বংশধারা নিচু এবং আমার রং হচ্ছে কালো। তাহলে বেহেশতের অনুমতি দিন , যেন আমার গন্ধ সুগন্ধে পরিণত হয় , আমার বংশধারা সম্মানিত হয় এবং আমার চেহারা আলোকিত হয়ে যায়। আল্লাহর শপথ , না , আমি আপনাকে ছেড়ে যাবো না , যতক্ষণ না আমার এই কালো রক্ত আপনার পবিত্র রক্তের সাথে মিশে যায়। ” এরপর তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে বেরিয়ে এলেন এই বলে ?“
মুহাম্মাদ (সা.) এর সন্তানদের রক্ষায় কালো তরবারির আঘাতকে মুশরিকরা কেমন অনুভব করে , আমি তাদেরকে রক্ষা করবো আমার কথা ও হাত দিয়ে এবং আমি কিয়ামতের দিন বেহেশত আশা করি এর মাধ্যমে। ” এরপর তাকে শহীদ করা হয় (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
[‘
মালহুফ ’ গ্রন্থে আছে] তিনি (জন) পঁচিশ জনকে হত্যা করেন এবং নিজে শহীদ হন। ইমাম হোসেইন (আ.) এলেন এবং তার মাথার পাশে দাঁড়ালেন এবং বললেন ,
“ হে আল্লাহ , তার চেহারাকে আলোকিত করে দিন , তার গন্ধকে সুগন্ধ করে দিন , তাকে অন্তর্ভুক্ত করুন ধার্মিকদের মাঝে এবং তাকে মুহাম্মদ (সা.) এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিন।”
ইমাম মুহাম্মাদ আল বাক্বির (আ.) বর্ণনা করেন যে , যখন লোকজন কারবালার সমতলে শহীদদের কবর দিতে এলো , তারা দেখলো দশ দিন পরে জনের লাশ থেকে মেশকের সুগন্ধ বের হচ্ছে।
এরপর আনীস বিন মা ’ কাল আসবাহি বেরিয়ে এলেন আবৃত্তি করতে করতে ,“
আমি আনীস , মা ’ কালের সন্তান এবং আমার ডান হাতে আছে ক্ষুরধার তরবারি , যা আমি মাথাগুলোর উপর তুলে ধরি যুদ্ধের সময় , সম্মানিত হোসাইনের প্রতিরক্ষায় , যাকে বিশিষ্টতা দান করা হয়েছে এবং তিনি আল্লাহর রাসূলের সন্তান , যিনি সব নবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। ” তিনি বিশ জনের বেশীকে হত্যা করলেন এবং শাহাদাত অর্জন করলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
তারপরে এসেছিলেন ইয়াযীদ বিন মুহাজির (আবুল শা ’ সা কিনদি) । যার শাহাদাত আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি।
এরপর হাজ্জাজ বিন মাসরুক্ব জু ’ ফি , ইমাম হোসেইন (আ.) এর মুয়াযযিন , যুদ্ধক্ষেত্রে বেরিয়ে এলেন এই বলে ,“
সামনে এগিয়ে যান হে হোসেইন , যিনি পথপ্রদর্শক এবং হেদায়েতপ্রাপ্ত , আজ আপনি দেখা করবেন আপনার নানার সাথে , আপনার পিতা আলীর সাথে যিনি ছিলেন উদার , যাকে আমরা কোরআনের মাধ্যমে চিনেছি। ” তিনি পঁচিশ জনকে হত্যা করলেন এবং নিজে নিহত হলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
এরপর সাঈদ বিন আবদল্লাহ হানাফি , হাবীব বিন মুযাহির আসাদি , যুহাইর বিন ক্বাইন বাজালি এবং নাফে ” বিন হিলাল জামালি শাহাদাত বরণ করেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) । তাদের শাহাদাত ইতোমধ্যেই আলোচনা করা হয়েছে।
জানাদাহ বিন হুরেইস আনসারি তাদের অনুসরণ করলেন এই বলে ,“
আমি জানাদ এবং হুরেইসের সন্তান , আমি না ভীত , না পুরুষত্বহীন , যতক্ষণ না আমার উত্তরাধিকারীরা আমার কাছ থেকে সম্পদ বুঝে নেয়। আজ আমার দেহ মাটির উপর পড়ে থাকবে। ” এরপর তাকে শহীদ করা হয় (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
এরপর তার সন্তান আমর বিন জানাদাহ বেরিয়ে এলেন এই বলে ,“
হিনদের সন্তানের গলা টিপে ধরো এবং এ বছর তাদের দিকে ছুঁড়ে দাও মুহাজির ও আনসারদের অশ্বারোহী বাহিনী , যারা মুহাম্মাদ (সা.) এর দিনগুলিতে তাদের বর্শায় রঙ লাগিয়েছিলো মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানে এবং আজ সেগুলো রঙীন হবে ব্যভিচারীদের রক্তে , আজ সেগুলো রঙিন হবে নীচ লোকদের রক্তে , যারা কোরআন পরিত্যাগ করেছে খারাপের প্রতিরক্ষায় , তারা এসেছে বদরের (যুদ্ধের) রক্তের প্রতিশোধ নিতে , যারা এ জন্য এনেছে ধারালো তরবারি ও বর্শা। আমি আমার রবের শপথ করে বলছি , আমি আমার ধারালো তরবারি দিয়ে আঘাত করতেই থাকবো এই খারাপ লোকগুলিকে , আযদির উপর তা যথাযথ কর্তব্য যে সেতিপদ্রি ন তার শত্রুর মোকবিলা করবে এবং তাকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিবে এবং আক্রমণ করবে আরও অগ্রসর হয়ে। ” এরপর তিনি যুদ্ধ করলেন ও নিহত হলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
এরপরে এক যুবক যুদ্ধক্ষেত্রে বেরিয়ে আসেন যার বাবা ইতোমধ্যেই শহীদ হয়েছেন। তার মা তাকে বলেছিলেন ,“
হে প্রিয় সন্তান , বের হও এবং রাসূলুল্লাহর (সা.) নাতির সামনে যুদ্ধ করো ।”
যখন যুবকটি বেরিয়ে এলেন , ইমাম তাকে দেখলেন এবং বললেন ,
“ এই যুবকটির বাবাকে হত্যা করা হয়েছে , সম্ভবত তার মা পছন্দ করবে না সে যুদ্ধক্ষেত্রে বেরিয়ে আসুক। ”
যুবকটি বললো ,“
বরং আমার মা আমাকে তা করতে আদেশ করেছেন। ”
এরপর সে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করলো এই আবৃত্তি করে ,“
আমার অভিভাবক হলেন হোসেইন এবং কী শ্রেষ্ঠই না অভিভাবক , যিনি সুসংবাদ দানকারী ও সতর্ককারী রাসূল (সা.) এর অন্তরের আনন্দ , আলী (আ.) তার বাবা ও ফাতিমা (আ.) তার মা। তোমরা কি এমন কাউকে জানো যে তার সমান ? তার চেহারা ঝলমলে তারার মত এবং তার কপাল পূর্ণচাঁদের মত উজ্জ্বল। ”
যখন তিনি শহীদ হলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) তার মাথাটি ইমাম হোসেইন (আ.) এর তাঁবুর দিকে ছুঁড়ে দেয়া হলো। তার মা তার মাথা তুলে নিয়ে বললেন ,“
সাবাস আমার সন্তান , হে আমার হৃদয়ের সন্তুষ্টি , হে আমার চোখের শান্তি। ” এ কথা বলে তিনি তা ছুঁড়ে দিলেন এক ব্যক্তির দিকে যে এর আঘাতে নিহত হলো। এরপর তিনি তাবুর একটি খুটি তুলে নিলেন এবং তাদেরকে আক্রমণ করলেন এই বলে ,“
আমি আমার প্রভুর একজন দুর্বল ও বৃদ্ধা দাসী , যার বাড়ি খালি এবং সে জীর্ণ ও দুর্বল হয়ে গেছে , কিন্তু আমি তোমাদেরকে আঘাত করবো ভয়ানকভাবে , সম্মানিতা ফাতিমা (আ.) এর সন্তানদের প্রতিরক্ষায়। ” তিনি তা দিয়ে দুজনকে হত্যা করলেন , তা দেখে ইমাম তাকে ডেকে ফেরত আনলেন এবং তার জন্য দোআ করলেন।
আমি (লেখক) দৃঢ়ভাবে অনুভব করি যে , যুবকটি মুসলিম বিন আওসাজা আসাদির সন্তান ছাড়া আর কেউ ছিলেন না।‘
রওযাতুল ইহবাব ’ ও‘
রওযাতুশ শুহাদা ’ তে উল্লেখিত মুসলিম বিন আওসাজা ও তার সন্তানের শাহাদাতের ঘটনাটি প্রায় একই রকম (আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন) ।
এরপর ইমাম হোসেইন (আ.) এর তুর্কী কৃতদাস , যিনি কোরআনের একজন হাফেয ছিলেন তিনি বেরিয়ে এলেন এই যুদ্ধ কবিতাটি আবৃত্তি করে ,“
সমুদ্রে আগুন ধরে যাবে আমার তরবারি ও বর্শার আঘাতে এবং বায়ুমণ্ডলপূর্ণ হয়ে যাবে আমার ছোঁড়া তীরে , যখন তরবারি আমার ডান হাতে চলে আসে , হিংসুকদের হৃদয় ফেটে যায়। ”
তিনি বহু লোককে হত্যা করলেন এবং কেউ কেউ বলেন তিনি সত্তর জনকে হত্যা করলেন এবং তারপর তার ঘোড়া থেকে পড়ে গেলেন। ইমাম হোসেইন (আ.) তার কাছে এলেন এবং কাঁদলেন এবং তার দাসের গালের উপর নিজের গাল রাখলেন। তিনি (দাস) তার চোখ খুললেন এবং ইমাম হোসাইন (আ.) এর মুখটি দেখলেন এবং মচকি হেসে আসমানী বাসস্থানের ’ দিকে চলে গেলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
তারপরে এলেন মালিক বিন দাওদান , যিনি বললেন ,“
তোমাদের দিকে এই আঘাত মালিকের কাছ থেকে , যে ভয়ানক সিংহ , তার আঘাত , যে রক্ষা করে উদার ও সম্মানিত লোকদের , যে পুরস্কার আশা করে আল্লাহর কাছ থেকে যিনি নেয়ামতের মালিক। ” এরপর তিনি শাহাদাত লাভ করেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
এরপর আবু সামামাহ সায়েদি তার অনুসরণ করলেন এই বলে ,“
সমবেদনা জানাচ্ছি মুস্তাফা (সা.) এর বংশধর ও তার কন্যাদেরকে , শত্রুদের দ্বারা মুহাম্মাদ (সা.) এর সন্তান অবরুদ্ধ হওয়ার কারণে , যিনি মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ , সমবেদনা জানাচ্ছি যাহরা (আ.) কে যিনি নবীর কন্যা এবং তার স্বামীকে , যিনি নবীর পরেই ছিলেন জ্ঞানের ভাণ্ডার , সমবেদনা জানাচ্ছি পূর্ব ও পশ্চিমের বাসিন্দাদের এবং হোসেইনের সেনাবাহিনীর জন্য কান্না , যিনি সৎকর্মশীল , তাই কে আছে আমার সংবাদ পৌঁছে দিবে নবী ও তার কন্যার কাছে যে , আপনার সন্তান বিপদে পড়েছে। ” এরপর তিনি শহীদ হয়ে গেলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
তারপরে এলেন ইবরাহীম বিন হাসানী আসাদি , যিনি বলছিলেন ,“
আমি তোমাদের হাড়ের সংযোগস্থলে এবং পায়ের গোড়ায় আঘাত করবো তরবারি দিয়ে যেন এই জাতি আমার রক্ত ঝরায় এবং যেন আবু ইসহাক শাহাদাত অর্জন করে , জাতি বলতে আমিঝবাচ্ছি ব্যভিচারী নারীদের বদমাশ সন্তানদের। ” এরপর তাকে হত্যা করা হয় (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
এরপর আমর বিন ক্বারতাহ এলেন , যার শাহাদাত আমরা আগেই বর্ণনা করেছি।
তারপর এলেন আহমাদ বিন মুহাম্মাদ হাশমি , যিনি বলছিলেন ,“
আজ আমি পরীক্ষা করবো আমার বংশধারা এবং আমার ধর্মকে আমার ধারালো তারবারি দিয়ে যা আমার ডান হাতে রয়েছে এবং আমি যুদ্ধে আমার ধর্মের প্রতিরক্ষা করবো এর মাধ্যমে। ” শেষ পর্যন্ততিনি নিহত হলেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
‘ মানাক্বিব ’ -এ উল্লেখ আছে যে ইমাম হোসেইন (আ.) এর একদল সাহাবী প্রথম আক্রমণে শহীদ হন। তারা হলেন: (১) নাঈম বিন আজালান , (২) ইমরান বিন কা‘
আব বিন হুরেইস আশজা ’ ঈ , (৩) হানযালাহ বিন আমর শাইবানি , (৪) ক্বাসিত বিন যুহাইর , (৫) কিনানাহ বিন আতীক্ব , (৬) আমর বিন মাশী ’ য়াহ , (৭) যারগামাহ বিন মালিক , (৮) আমির বিন মুসলিম , (৯) সাইফ বিন মালিক নামিরি , (১০) আবদুর রহমান আরহাবি , (১১) মুজমে ’ আয়েযি , (১২) হাব্বাব বিন হুরেইস , (১৩) আমর জানদা ’ ঈ , (১৪) জাল্লাস বিন আমর রাসিবী , (১৫) সাওয়ার বিন আবি উমাইর ফাহমি , (১৬) আম্মার বিন আবি সালামা ওয়ালানি (১৭) মাসউদ বিন হাজ্জাজ , (১৮) আব্দুল্লাহ বিন উরওয়াহ গিফারি , (১৯) যুহাইর বিন বাশীর খাস’
আমি , (২০) আম্মার বিন হিস্সান , (২১) আব্দুল্লাহ বিন উমাইর , (২২) মুসলিম বিন কাসীর , (২৩) যুহাইর বিন সালীম , (২৪) ও (২৫) আব্দুল্লাহ ও উবায়দুল্লাহ বিন যাইদ বাসারি , (২৬) উমরোহ , ইমাম হোসেইন (আ.) এর দাস , (২৭) ও (২৮) ইমাম আলী (আ.) এর দুজ মুক্ত দাস , (২৯) ইবনে হুমাক্বের দাস যাহির আমর (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তাদের উপর) ।
আমার (লেখকের) অভিমত , উল্লেখিত শেষ নামটি ভুল ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে , সঠিক নাম হবে যাহির যিনি আমর বিন হুমাক্বের দাস ছিলেন। যিয়ারতে নাহিয়াতে এবং এ সম্পর্কিত যিয়ারতে রাজাবিয়াহতে (যেভাবে‘
মিসবাহুর যায়ের ’ -এ উল্লেখ আছে) উল্লেখ আছে“
যাহিরের উপর শান্তিবর্ষিত হোক যে আমর বিন হুমাক্ব খুযাইর দাস ছিলেন। ” ইনিই ওপরে উল্লেখিত ব্যক্তি।
বিখ্যাত ক্বারী মো ’ মান মিসরি বলেন যে , আমর বিন হুমাক্ব ছিলেন রাসূল (সা.) এর মুহাজির সাহাবীদের একজন এবং তাবেঈন যার জন্য নবী (সা.) বেহেশত ঘোষণা করেছিলেন , যিনি ইমাম আলী (আ.) এর সাথে (বিশ্বস্ত) ছিলেন। ইমাম আলী (আ.) এর শাহাদাতের পরও আমর জীবিত ছিলেন। আবার , যখন মুয়াবিয়া তার পিছু নিলো তিনি এক দ্বীপে পালিয়ে গেলেন , তার সাথে ছিলেন ইমাম আলী (আ.) এর আরেক সাথী যাহির। দুজনেই মধ্যরাতে এক উপত্যকায় অবতরণ করেন এবং একটি সাপ আমরকে কামড় দেয়। যখন সকাল হলো এবং জায়গাটি ফুলে উঠলো এবং আমর যাহিরকে বললেন ,“
আমার কাছে থেকে সরে যাও , কারণ আমি আমার বন্ধু রসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি যে জীন ও মানুষ আমায় হত্যা জড়িত থাকবে এবং শীঘ্রই অ্র আমাকে হত্যা করা হবে। ” তারা কথা বলছিলেন হঠাৎ তারা কিছু ঘোড়ার ঘাড় দেখতে পেলেন , যারা আমরের সন্ধানে ছিলো। যাহিরকে আমর বললেন ,“
হে যাহির , নিজেকে লুকাও , যখন তারা আমাকে হত্যা করবে এবং আমার মাথা নিয়ে যাবে এবং আমার দেহ ফেলে যাবে , তুমি আমাকে কবর দিও। ” যাহির বললো ,“
না , আমি তা করবো না , বরং আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো আমার তীর দিয়ে এবং তা যখন শেষ হয়ে যাবে , আমিও তোমার সাথে নিহত হবো। ” আমর বললেন ,“
আমি যা করতে বলছি করো। আল্লাহ এতে তোমাকে সফলতা দিবেন। ” তখন যাহির নিজেকে লুকিয়ে ফেললো এবং লোকজন এলো এবং তাকে (আমরকে) হত্যা করলো। এরপর তারা আমরের মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেললো এবং তা সাথে নিয়ে গেলো। তা ছিলো ইসলামে প্রথম মাথা যা বর্শার মাথায় বিদ্ধ করা হলো। যখন তারা চলে গেলো যাহির তার লুকানো স্থান থেকে বেরিয়ে এলেন এবং আমরকে কবর দিলেন। তারপর তিনি জীবিত ছিলেন যতক্ষণ পর্যন্তনা কারবালাতে ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথে শহীদ হলেন।
এ বর্ণনাতে প্রমাণিত হয় যে , যাহির ইমাম আলী (আ.) এর বিশিষ্ট সাহাবীদের একজন ছিলেন। তিনি ছিলেন রাসূল (সা.) এর সাহাবী আমর বিন হুমাকের সমমর্যাদার এবং ইমাম আলী (আ.) এর শিষ্য। তিনি ছিলেন (আল্লাহর) সৎকর্মশীল বান্দাহ , অত্যধিক ইবাদত তাকে বৃদ্ধ , শীর্ণকায় এবং তার রঙকে ফ্যাকাশে করে দিয়েছিলো। আমরকে দাফন করার সৌভাগ্য তার হয়েছিলো , তার আনন্দ পূর্ণতা পায় ইমাম হোসেইনকে সাহায্য করার সময় এবং তিনি শাহাদাত লাভ করেন।
যাহিরের বংশধরদের মধ্যে ছিলেন আবু জাফর বিন মুহাম্মাদ বিন সিনান , যিনি ইমাম মূসা আল কাযিম (আ.) , ইমাম আলী আল রিদা (আ.) এবং ইমাম মুহাম্মাদ আল জাওয়াদ (আ.) এর সাথীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
এছাড়া উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ঐতিহাসিকরা কিছু নাম উল্লেখ করেছেন যারা দশই মহররম উপস্থিত ছিলো ইমাম হোসেইন (আ.) কে সাহায্য করার জন্য , কিন্তু তারা নিজেদেরকে রক্ষা করে এবং পালিয়ে যায়।
১) আবদুর রহমান বিন আবদ রাব্বাহ আনসারি। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে , সে বলেছে ,“
আমি যখন পড়ে যেতে দেখলাম ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথীদের , আমি (ভয়ে) পালিয়ে গেলাম তাদেরকে পিছনে রেখে। ”
২) মারক্বা ’ বিন তামামাহ আসাদি। তাবারি এবং ইবনে আসীর বলেন যে , তিনি তার তীরের থলেটি মাটিতে রাখলেন এবং হাঁটু গেড়ে বসলেন এবং যুদ্ধ করছিলেন ঐ পর্যন্ত যখন তার আত্মীয়দের মধ্যে এক দল তার কাছে এলো এবং তাকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিল এবং তাকে বললো তাদের কাছে ফেরত যেতে। তিনি তাদের সাথে ফিরে গেলেন এবং উমর বিন সা’
আদ তাকে উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের কাছে নিয়ে গেলো এবং তার বিষয়ে বললো। উবায়দুল্লাহ তাকে যারাহতে নির্বাসন দিল। ফিরোযাবাদি বলেন যে , যারাহ হলো জ্বল উদ্ভিদ-এর ভূমি এবং মিসর ও তারাবুলুসের একটি জায়গার নাম এবং বাহরাইনে একটি পাহাড়ের নাম যেখানে ঝর্না রয়েছে।
৩) তাবারি এবং ইবনে আসীর বলেন যে , উক্ববাহ বিন সাম ’ আনকে উমর বিন সা’
আদ গ্রেফতার করে এবং সে ছিলো ইমাম হোসেইন (আ.) এর স্ত্রীর (ইমরুল ক্বায়েস ক্বালবির কন্যা ও সাকিনাহ (আ.) এর মা) চাকর। যখন উমর জিজ্ঞেস করলো কী পদে সে অধিষ্ঠিত ছিলো , সে উত্তর দিলো , সে ছিলো একজন দাস এবং তার কোন ক্ষমতা ছিলো না। তাই উমর তাকে মুক্তি দিয়ে দিলো।
৪) যাহ্হাক বিন আব্দুল্লাহ মাশরিকি , আমরা তার সম্পর্কে বর্ণনা করা যথাযথ মনে করছি। লূত বিন ইয়াহইয়া আযদি বলে যে , আব্দুল্লাহ বিন আল আসিম হামাদানি তাকে বলেছে যে , যাহ্হাক বিন আব্দুল্লাহ মাশরিক্বি তাকে বলেছে যে , আমি মালিক বিন নযর আরহাবির সাথে ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে উপস্থিত হলাম। আমরা তাকে অভিনন্দন জানালাম ও তার কাছে বসলাম। ইমাম আমাদের সালামের জবাব দিলেন এবং আমাদের স্বাগতম জানানোর পর জিজ্ঞেস করলেন কেন আমরা সেখানে এসেছি। আমরা বললাম ,“
আমরা এখানে এসেছি আপনাকে সালাম জানাতে এবং সুস্থতার জন্য দোআ করতে , এছাড়া আপনাকে আবার দেখতে। এছাড়া আমরা এসেছি আপনাকে জানাতে সে কুফার জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য , তাই যেন আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। ” ইমাম বললেন ,“
আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট এবং শ্রেষ্ঠ বিচারক। ” আমরা তার কাছে লোকজনের খারাপ দিকগুলো বর্ণনা করলাম , এরপর আমরা তাকে বিদায়ী সালাম জানালাম এবং তার অনুমতি চাইলাম। ইমাম বললেন ,“
কেন তোমরা আমাকে সাহায্য করছো না ?”
মালিক বিন নযর বললো ,“
আমি ঋণগ্রস্ত , এবং আমার ছেলে-মেয়ে আছে। ” এবং আমি বললাম ,“
আমিও ঋণগ্রস্ত যদিও আমার ছেলে মেয়ে নেই , তাই যদি আপনি অঙ্গীকার করেন ঐ সময়ে আমাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য যখন আপনার প্রতিরক্ষা আপনার জন্য কোন লাভ বয়ে আনবেনা , তাহলে আমি আপনার সাথে থাকবো। ” ইমাম বললেন ,“
সে ক্ষেত্রেমিততা করতে পারো। ” তাই আমি তার সাথে রয়ে গেলাম। যাহ্হাক বিন আব্দুল্লাহ ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথে রয়ে গেলো আশুরার দিন পর্যন্ত এবং সে আশুরার দিন ও রাত সম্পর্কে বর্ণনা করেছে। সে আরও বলেছে যে , যখন আমি দেখলাম ইমামের সব সাথীরা শহীদ হয়ে গেছে এবং শত্রুরা তার ও তার পরিবারের উপর হাত তুলছে এবং সুয়েইদ বিন খাস’
আমি এবং বাশীর বিন আমর হাযরামী শুধু আছে , আমি তার কাছে এলাম এবং বললাম ,“
হে আল্লাহর রাসূলের সন্তান , আপনি কি মনে করতে পারেন আমাদের মাঝে কী চুক্তি ছিলো এবং আমি কথা দিয়েছিলাম যে , যতক্ষণ যোদ্ধারা আপনার সাথে থাকবে ততক্ষণ আমি আপনার সাথে থাকবো এবং তাদের সাথে থেকে যুদ্ধ করবো , যদি তা না হয় তাহলে আমি মুক্ত হয়ে যাবে এবং আপনি এতে একমত ছিলেন।”
ইমাম বললেন ,“
তুমি সত্য বলেছো , কিন্তু তুমি নিজেকে কিভাবে রক্ষা করবে ? যদি তা পারো , তোমার স্বাধীনতা আছে। ”
সে সময় সাথীদের ঘোড়াগুলো যখন আহত হচ্ছিলো এবং তীর ছোঁড়া হচ্ছিলো , আমি গোপনে সাথীদের একটি তাঁবুতে আমার ঘোড়া লুকিয়ে ফেললাম এবং মাটিতে দাঁড়িয়ে মোকাবিলা করতে লাগলাম। এরপর আমি ইমামের সামনে দুজনকে হত্যা করলাম এবং অন্য একজনের হাত বিচ্ছিন্ন করে ফেললাম। সেদিন ইমাম আমাকে বেশ কয়েক বার বললেন ,“
কারো হাত বিচ্ছিন্ন করো না , আল্লাহ যেন তোমার হাত বিচ্ছিন্ন না করেন। আল্লাহ যেন তোমাকে নবীর বংশধরের উসিলায় পুরস্কার দান করেন ” ।
তারপর যখন তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন আমি তাঁবু থেকে আমার ঘোড়াটি আনলাম এবং এর ওপরে বসলাম। এরপর আমি একে হাঁকালে এটি সেনাবাহিনীর মাঝ থেকে দ্রুত বেরিয়ে গেলো। তারা আমাকে রাস্তা দিলো এবং আমি বেরিয়ে গেলাম এবং পনেরো জন অশ্বারোহী আমার পিছু নিলো যতক্ষণ না আমি ফোরাতের তীরে শাফিয়াহ গ্রামে গিয়ে পৌঁছালাম। তারা আমার কাছে এলো এবং যখন আমি পিছনে ফিরলাম কাসীর বিন আব্দুল্লাহ শা ’ আবি , আইউব বিন মুশরেহ হেইওয়ানি এবং ক্বায়েস বিন আব্দুল্লাহ সায়েদি আমাকে চিনতে পারলো। তারা বললো ,“
এতো যাহ্হাক বিন আব্দুল্লাহ মাশরিক্বি , আমাদের চাচাতো ভাই। আমরা তোমাদের আল্লাহর নামে অনুরোধ করছি তার উপর থেকে হাত তুলে নাও। ” তা শুনে বনি তামীমের তিন জন তাদের পক্ষ নিলো এবং অন্যরাও অনুসরণ করলো। এভাবে আল্লাহ আমাকে রক্ষা করলেন।
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (কারবালায়) ইমাম হোসেইন (আ.) এর পক্ষ না নেওয়াতে তিরস্কৃত হওয়ার সময় যথার্থ বেলইছেন ,“
সাথীদের একজনের নামও (যারা কারবালায় শহীদ হবে) মোছা যেতো না এবং অন্য কেউ যুক্তও হতে পারতো না , আমরা তাদের নাম জানতাম তাদের সাথে সাক্ষাতের আগেই। ”
মুহাম্মাদ বিন হানাফিয়া বলেছিলেন ,“
তাদের (ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথীদের) নাম এবং তাদের পিতাদের নাম আমাদের কাছে লিখা ছিলো। আমার পিতা-মাতা তাদের জন্য কোরবান হোক , হায় যদি আমি তাদের সাথে থাকতাম , আমিও এ বিরাট সফলতা অর্জন করতে পারতাম। ”
সম্মানিত ও বিশ্বস্ত শেইখ মুহাম্মাদ বিন হাসান সাফ্ফার কুম্মি , যিনি ২৯০ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন , তার বই‘
বাসায়েরুদ দারাজাত ’ -এ বলেছেন হুযাইফা গিফারি থেকে যে , যখন ইমাম হাসান (আ.) মুয়াবিয়ার সাথে শান্তিচুক্তি করেন এবং মদীনাতে ফেরত আসেন আমি তাঁর সাথে ছিলাম। একটি উটের উপর একটি বস্তা ছিলো তার সাথে সবসময় এবং ইমাম তা তাঁর দৃষ্টির আড়াল হতে দিচ্ছিলেন না। একদিন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম ,“
হে আবা মুহাম্মাদ , আমি আপনার জন্য কোরবান হই , এটি কিসের বস্তা যা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে না ?”
ইমাম বললেন ,“
হে হুযাইফা , তুমি কি জানো না এতে কী আছে ?
আমি উত্তরে না বললাম। ইমাম হাসান (আ.) বললেন ,“
এটি একটি রেজিস্টার খাতা। ”
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম কিসের রেজিস্টার। তিনি বললেন ,“
এটি একটি রেজিস্টার যাতে আমাদের শিয়াদের নামগুলো রয়েছে। ”
আমি জিজ্ঞেস করলাম ,“
দয়া করে আমার নামটি এতে দেখান। ” ইমাম আমাকে বললেন পরদিন সকালে আসতে। আমি সকালে গেলাম আমার ভাতিজাকে নিয়ে। যে পড়তে জানতো , আর আমি পড়তে জানতাম না। ইমাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি কেন এত সকালে এসেছি। আমি বললাম যে , আমি তা দেখতে এসেছি যা তিনি শপথ করেছেন। ইমাম হাসান (আ.) জিজ্ঞেস করলেন ,“
তোমার সাথে এ যুবকটি কে ?”
আমি বললাম , সে আমার ভাতিজা এবং সে পড়তে জানে , আর আমি পড়তে জানিনা। তিনি আমাদের বসতে ইশারা করলেন। ইমাম আদেশ দিলেন রেজিস্টারটি আনতে। রেজিস্টার আনা হলো এবং আমার ভাতিজা তা খুলে ধরলো দেখার জন্য , এর অক্ষরগুলো জ্বলজ্বল করছিলো। এরপর পড়তে পড়তে সে হঠাৎ বললো ,“
হে চাচা , এই যে আমার নাম। ” আমি বললাম , “ তোমার মা তোমার জন্য শোক পালন করুক , আমার নাম পড়ো। কিছুক্ষণ সন্ধানের পর সে আমাকে আমার নাম দেখালো এবং আমরা খুব উৎফুল্ল হলাম এবং আর এ যুবক ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথে কারবালায় শহীদ হয়ে গিয়েছিলো।