শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)0%

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড) লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইতিহাস

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক: আল্লামা আব্বাস বিন মুহাম্মাদ রেযা আল কুম্মি
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 48978
ডাউনলোড: 4844

পাঠকের মতামত:

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 90 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 48978 / ডাউনলোড: 4844
সাইজ সাইজ সাইজ
শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম বিন আক্বীল বিন আবি তালিবের শাহাদাত

[ তাসলিয়াতুল মাজালিস গ্রন্থে আছে] প্রথম ব্যক্তি যিনি আহলুল বাইত থেকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রবেশ করেন তিনি ছিলেন আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম বিন আক্বীল। তিনি এ যুদ্ধ ক্ষেত্রের কবিতাটি আবৃত্তি করেছিলেন , আজ আমি দেখা করবো আমার বাবা মুসলিমের সাথে এবং সেই যুবকদের সাথে আমি সাক্ষাত করবো যারা নবীর ধর্মের জন্য সব কিছু কোরবান করেছিলেন , তারা একদল যারা মিথ্যা বলতে জানে না , কিন্তু তারা ছিলো ন্যায়পরায়ণ ও সম্মানিত বনি হাশিমের বংশধারা , যারা সম্মানিতদের অভিভাবক। ”

তিনি তিন বার আক্রমণ করেন এবং আটানব্বই জনকে হত্যা করেন এবং শেষ পর্যন্ত আমর বিন সাবীহ সাইদাউই এবং আসাদ বিন মালিক তাকে হত্যা করে (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।

আবুল ফারাজ বলেন , তার মা ছিলেন ইমাম আলী বিন আবি তালিব (আ.) এর কন্যা রুকাইয়া। শেইখ মুফীদ এবং তাবারি বলেন যে , উমর বিন সা আদের সেনাবাহিনীর এক ব্যক্তি আমর বিন সাবীহ আব্দুল্লাহর দিকে একটি তীর ছুঁড়ে এবং তিনি তার হাত কপালে রাখলেন নিজেকে রক্ষা করার জন্য। তীরটি তার হাত ভেদ করে কপালে বিদ্ধ হয়ে গেলো এবং তিনি তা আলাদা করতে পারলেন না। অন্য ব্যক্তি একটি বর্শা তার বুকে ঢুকিয়ে দিলো এবং তাকে হত্যা করলো (আল্লাহর রহমত ও বরকত তার উপর বর্ষিত হোক) ।

ইবনে আসীর তার কামিল ’ -এ বলেছেন যে , মুখতার (বিন আবু উবাইদাহ) যায়েদ বিন রিককাদ হাবাবিকে ডেকে পাঠালেন। সে এলো এবং বললো , আমি তাদের মধ্য থেকে এক যুবকের হাতকে একটি তীরের মাধ্যমে কপালে বিদ্ধ করে আটকে দিয়েছিলাম এবং সেই যুবক ছিলো আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম বিন আক্বীল। আমি যখন তার দিকে একটি তীর ছুঁড়লাম সে বলছিলো , হে আল্লাহ , এ লোকগুলো মনে করে আমরা হীন ও নীচ। হে আল্লাহ তাদেরকে হত্যা করো যেভাবে তারা আমাদের হত্যা করেছে। ” আমি তার দিকে আরেকটি তীর ছুঁড়লাম এবং আমি যখন তার দিকে গেলাম সে মারা গিয়েছিলো। তখন আমি তার হৃৎপিণ্ডথেকে একটি তীর টেনে বের করেছিলাম , যা তাকে হত্যা করেছিলো। আমি তার কপালের তীরটি ওপরে নিচে টানতে শুরু করলাম , কিন্তু এর হাতল চলে এলো কিন্তু এর মাথা ভিতরে রয়ে গেলো। ” তা শুনে মুখতারের লোকেরা তার দিকে ছুটে এলো , কিন্তু সে তাদের তরবারি দিয়ে আক্রমণ করলো। ইবনে কামিল বললো , তাকে বর্শা ও তরবারি দিয়ে হত্যা করো না বরং তাকে তোমাদের তীর ও পাথর দিয়ে হত্যা করো। ” তারা তার দিকে তীর ছুঁড়লো এবং সে মাটিতে পড়ে গেলো এবং তাকে জীবন্তপুড়িয়ে ফেলা হলো (আল্লাহর অভিশাপ তার ওপরে) ।

আউন বিন আব্দুল্লাহ বিন জাফর বিন আবি তালিবের শাহাদাত

তাবারি বলেন যে , সেনাবাহিনী তাদরেকে সব দিক থেকে ঘিরে ফেলে ছিলো আব্দুল্লাহ বিন ক্বাতাবাহ তা ’ ঈ নাবহানি আক্রমণ করলো আউন বিন আব্দুল্লাহ বিন জাফর বিন আবি তালিবকে এবং তাকে হত্যা করলো (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার ওপরে) ।

‘ মানাক্বিব ’ -এ আছে যে তিনি এ যুদ্ধ কবিতাটি আবৃত্তি করছিলেন , যদি তোমরা আমাকে না চিনো আমি জাফরের সন্তান , যে ছিলেন সত্যবাদী শহীদ , যিনি বাস করেন আলোকিত বেহেশতে , সবুজ পাখায় ভর করে তিনি সেখানে উড়েন এবং কিয়ামতের দিন এটি সম্মানের জন্য যথেষ্ট। ” এরপর তিনি তিন জন অশ্বারোহীকে এবং আঠারো জন পদাতিক সৈন্যকে হত্যা করলেন এবং আব্দুল্লাহ বিন ক্বাতাবাহ তাঈ ’ তাকে হত্যা করে।

আবুল ফারাজ (ইসফাহানি) বলেন যে , তার মা ছিলেন সাইয়েদা যায়নাব আক্বীলা (আ.) , যিনি ছিলেন ইমাম আলী বিন আবি তালিব (আ.) ও রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কন্যা সাইয়েদা ফাতিমা আয-যাহরা (আ.) এর কন্যা।

সুলাইমান বিন ক্বিব্বাহ আউনের জন্য প্রশংসা কবিতায় বলেছেন , কাঁদো আউনের জন্য যদি কাঁদতে চাও , যিনি দুর্দশার সময় তাকে (ইমাম) কখনো ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না , আমার জীবনের শপথ , নিকটাত্মীয়দের বিরাট দুঃখ-কষ্ট সইতে হয়েছে , তাই কাঁদো এক দীর্ঘ দুর্যোগের কারণে। ”

তার মাতা আক্বীলা (যায়নাব) থেকে ইবনে আব্বাস ফাদাকের বর্ণনা পেয়েছেন , যিনি তার মা ফাতিমা (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে , ইমাম আলী (আ.) এর কন্যা আমাদের আক্বীলা বিচক্ষণ নারী যায়নাব , আমাদের বলেছেন (ইত্যাদি) । ”

মনে রাখা ভালো যে , আব্দুল্লাহ বিন জাফরের ছিলো আউন নামে দুটি ছেলে , যাদের উপাধি দেয়া হয়েছিলো আকবার (বড়) এবং আসগার (ছোট) । তাদের একজনের মা ছিলেন যায়নাব আক্বীলা (আ.) এবং অন্যজন মুসাইয়াব বিন নাজাবাহ ফাযারির কন্যা জুম ’ আর পুত্র। তাদের মধ্যে কে ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথে কারবালায় শহীদ হয়েছিলেন তার বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কিন্তু এটি সুস্পষ্ট যে , (কারবালায়) যিনি শহীদ হন তিনি ছিলেন আউন আল আকবার (বড় জন) । যিনি ছিলেন সাইয়েদা যায়নাবের পুত্র। আর আউন আল আসগারকে হত্যা করা হয়েছিলো হিররাহর ঘটনায় , অভিশপ্ত মুসরিফ বিন আক্বাাহর লোকেরা তাকে হত্যা করেছিলো। আবুল ফারাজ ইসফাহানি তাই বলেছেন।

মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন জাফর বিন আবি তালিবের শাহাদাত

[তাবারি বর্ণনা করেছেন] আমির বিননাহ শাল তামিমি আক্রমণ করে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন জাফর বিন আবি তালিব (আ.) কে এবং তাকে হত্যা করে (আল্লাহর রহমত ও বরকত তার ওপরে বর্ষিত হোক) ।

আবুল ফারাজ (ইসফাহানি) বলেন যে , তার মা খাওসা ছিলেন বনি বকর ওয়ায়েল গোত্রের হাফসাহর কন্যা।

তার সম্মানে প্রশংসা কবিতায় সুলাইমান বিন কিববাহ বলেছেন , যখন সে তাদের মাঝে পড়ে গেলো , যার ছিলো রাসূলের নামে নাম , তারা তাদের ধারালো তরবারি তার মাথার উপর তুললো। তাই যদি তুমি কাঁদতে চাও হে আমার চোখগুলো , তাহলে উদারভাবে কাঁদো এক সামুদ্রিক ঝড়ের মত অশ্রুনিয়ে। ”

‘ মানাক্বিব ’ -এ বর্ণিত হয়েছে যে , তিনি যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে এগিয়ে গেলেন এই বলে , আমি আল্লাহর কাছে অভিযোগ করি শত্রুদের বিরুদ্ধে , যারা এক অন্ধ জাতি এবং ধ্বংস ছড়ায় , যারা কোরআনের বৈশিষ্ট্য , দৃঢ় ওহী এবং এর যুক্তিকে বদলে নিয়েছে , তারা অবিশ্বাসী ও উদ্ধতদের পক্ষ নিয়েছে। ” এরপর তিনি দশ জনকে তরবারি দিয়ে হত্যা করলেন এবং আমির বিন নাহশাল তামিমি তাকে হত্যা করলো।

আবুল ফারাজ বলেন , তারপরে তার ভাই উবায়দুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ বিন জাফরকে শহীদ করা হয় (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার ওপরে) । মানাক্বিব ’ -এ উল্লেখকরা হয়েছে যে , বিশর বিন হুয়েইতার ক্বানাসি তাকে হত্যা করে।

আব্দুর রহমান বিন আক্বীল বিন আবি তালিবের শাহাদাত

উসমান বিন খালিদ বিন আল আসীর জাহনি এবং বিশর বিন সওত হামাদানি ক্বানাসি আক্রমণ করে আব্দুর রহমানকে এবং তাকে হত্যা করে (আল্লাহর রহমত ও বরকত তার উপর বর্ষিত হোক) ।

‘ মানাক্বিব ’ -এ উল্লেখিত আছে যে , তিনি এ যুদ্ধ কবিতাটি আবৃত্তি করছিলেন , আমার বাবা ছিলেন আক্বীল , তাই বনি হাশিমে আমার স্থান জেনে নাও , আর (বনি হাশিম) তারা পরস্পর ভাই এবং খুবই সৎ , কোরআনের উস্তাদ , এ হলো হোসেইন যার ভিত্তি উচ্চ সম্মানিত এবং সে বৃদ্ধ ও যুবক উভয়ের অভিভাবক। ”

তিনি সতেরো জনকে হত্যা করলেন। মাদায়েনি থেকে বর্ণিত হয়েছে যে , উসমান বিন খালিদ বিন আল-আশীম এবং এক হামাদানি ব্যক্তি তাকে হত্যা করেছিলো। এও বলা হয়েছে যে , মুহাম্মাদ বিন মুসলিম বিন আক্বীলের মা ছিলেন এক দাসী এবং উসমান বিন খালিদ জাহনি তাকে হত্যা করে।

‘ তারীখে তাবারি ’ তে আছে যে , মুখতার দুব্যক্তিকে কুফায় গ্রেফতার করে যারা আব্দুর রহমান বিন আক্বীলের হত্যার অংশগ্রহণ করেছিলো এবং তার পোষাক লুট করেছিলো। সে তাদের মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং তাদের পুড়িয়ে ফেলে , আল্লাহর অভিশাপ তাদের উপর।

জাফর বিন আক্বীল বিন আবি তালিবের শাহাদাত

তা মা ছিলেন বিন কিলাব গোত্রের আমীরের কন্যা উম্মুস সাগার। অন্যরা বলেন যে , তার মা ছিলেন খাওসা , যিনি আমর বিন আমির কিলাবির কন্যা ছিলেন। তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করলেন এ বলে , আমি উপত্যকার যুবক , এক ভবঘুরে , আমি হাশিম পরিবার থেকে যারা প্রভাবশালী , এবং নিশ্চয়ই আমরাই নেতা , এ হলো হোসেইন যিনি সব পবিত্রদের মাঝে সবচেয়ে পবিত্র। ”

আব্দুল্লাহ বিন উরওয়াহ খাস আমি তার দিকে একটি তীর ছুঁড়ে এবং তাকে হত্যা করে (আল্লাহর রহমত ও বরকত তার উপর বর্ষিত হোক) ।

‘ মানাক্বিব ’ -এ বলা হয়েছে যে , তিনি দুজনকে হত্যা করেন , অন্যরা বলেন তিনি পনেরো জন অশ্বারোহী সৈন্যকে হত্যা করেন। বিশর বিন সওত হামাদানি তাকে হত্যা করে।

আব্দুল্লাহ আল আকবার বিন আক্বীল বিন আবি তালিবের শাহাদাত

তার মা ছিলেন এক দাসী। আবু মারহাম আযদি এবং লাক্বীত বিন আয়াস জাহনি তাকে হত্যা করে (আল্লাহর রহমত ও বরকত তার উপর বর্ষিত হোক) ।

ইমাম মুহাম্মাদ আল বাক্বির (আ.) ও মুহাম্মাদ বিন আবু সাঈদ বিন আকীল১৩ বিন আবু তালিব আল আহওয়াল (ট্যারা চোখ বিশিষ্ট) থেকে আবুল ফারাজি ইসফাহানি বর্ণনা করেছেন যে , তার মা ছিলেন এক দাসী এবং লাক্বীত বিন ইয়াসির জাহনি তাকে ঘেরাও করে এবং তাকে হত্যা করে। মাদায়েনি বর্ণনা করেছেন আবু মাখনাফ থেকে , তিনি বর্ণনা করেছেন সুলাইমান বিন রাশিদ থেকে এবং সে হামিদ বিন মুসলিম থেকে।

মুহাম্মাদ বিন আলী বিন হামযা বলেন যে , তার পরে জাফর বিন মুহাম্মাদ বিন আক্বীল শহীদ হন। অন্যরা বলেন হিররা ঘটনায় তাকে হত্যা করা হয়েছিলো। কিন্তু আবুল ফারাজ ইসফাহানি বলেন যে , আমি মুহাম্মাদ বিন আক্বীলের সন্তান জাফর নামে কাউকে বংশ তালিকার বইগুলোতে পাইনি। ”

মুহাম্মাদ বিন আলী বিন হামযা বর্ণনা করেছেন আক্বীল বিন আব্দুল্লাহ বিন আক্বীল বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আক্বীল বিন আবি তালিব থেকে যে , আলী বিন আক্বীল , যার মা ছিলেন একজন দাসী তিনিও আশুরার দিন (কারবালায়) শহীদ হয়েছিলেন। আবু তালিবের বংশধর থেকে যত ব্যক্তিকে আশুরার দিন হত্যা করা হয়েছিলো তাদের সংখ্যা ছিলো বাইশ। যাদের বিষয়ে মতভেদ আছে তাদের ছাড়াই।

ইবনে কুতাইবাহ তার মা ’ আরিফ ’ -এ বলেন যে , আক্বীলের সন্তানরা , যারা ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথে গিয়েছিলেন তারা ছিলেন নয় জন , যাদের মধ্যে মুসলিম বিন আকীল ছিলেন সবচেয়ে সাহসী।

ক্বাসিম বিন হাসান বিন আলী বিন আবি তালিব (আ.) এর শাহাদাত

তার মা ছিলেন একজন দাসী। [ তাসলিয়াতুল মাজলিস -এ আছে] যখন ইমাম হোসেইন (আ.) দেখলেন ক্বাসিম প্রস্তুতি নিয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করার জন্য। তিনি তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং তারা উভয়ে কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারালেন। এরপর ক্বাসিম যাওয়ার জন্য অনুমতি চাইলেন , কিন্তু ইমাম তাকে অনুমতি দিলেন না। তিনি ইমাম হোসেইন (আ.) এর হাত ও পায়ে অনবরত চুমু দিতে লাগলেন যতক্ষণ না তিনি অনুমতি দিলেন।কাসিক যুদ্ধ ক্ষেত্রে গেলেন এবং তার চোখ থেকে অনবরত অশ্রু ঝরছিলো এবং তিনি বলছিলেন , যদি তোমরা আমাকে না জানো , আমি হাসানের সন্তান , নবীর নাতি , যিনি ছিলেন বাছাইকৃত ও বিশ্বস্ত , এ হলো হোসেইন যাকে বন্দী করা হয়েছে যেভাবে বন্ধকের মালিকরা বন্দী করে , সেই লোকদের মাঝে যারা বৃষ্টির পানি থেকে বঞ্চিত হবে। ” তিনি ভয়ানক যুদ্ধ করলেন এবং অত্যন্ত অল্প বয়েসী হওয়া সত্ত্বেও তিনি তরবারি দিয়ে পয়ত্রিশ জনকে হত্যা করছিলেন।

‘ মানাক্বিব ’ -এ উল্লেখ আছে যে , তিনি এ যুদ্ধ কবিতাটি আবৃত্তি করছিলেন , নিশ্চয়ই আমি ক্বাসিম , আলীর বংশধর , কা বার রবের শপথ , আমরা শ্রেষ্ঠত্ব রাখি নবীর সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে , শিমর (বিন) যিলজাওশান ও অবৈধ সন্তানের চাইতে। ”

শেইখ সাদুক্বের আমালি ’ তে আছে যে , আলী বিন হোসেইন (আল আকবর)-এর পরে , ক্বাসিম বিন হাসান যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রবেশ করেন এ বলে , অস্থির হয়ো না , হে আমার সত্তা , কারণ প্রত্যেকেই ধ্বংস হবে , কারণ আজ তুমি বেহেশতবাসীদের সাথে সাক্ষাত করবে। ” তিনি তিন ব্যক্তিকে হত্যা করলেন এবং তারা তাকে ঘোড়া থেকে মাটিতে ফেলে দিলো। ফাত্তাল নিশাপুরিও একই বর্ণনা দিয়েছেন।

কিন্তু আবুল ফারাজ , শেইখ মুফীদ এবং তাবারি আবু মাখনাফ থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি সুলাইমান বিন আবি রাশিদ থেকে , তিনি হামীদ বিন মুসলিম থেকে , যে বলেছে , এক কিশোর , নতুন চাঁদের টুকরোর মত সে ছিলো , যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রবেশ করলো , তার হাতে ছিলো এক তরবারি এবং সে একটি শার্ট ও একটি আবা (লম্বা আচকান) পড়েছিলো। সে জুতো পরেছিলো যার একটির ফিতা ছেঁড়া ছিলো। আমি যদি ভুলে না গিয়ে থাকি তা ছিলো বাম পায়ের। উমর বিন সা আদ বিন নুফাইল আযদি বললো , আমি তাকে আক্রমণ করতে চাই। ” আমি বললাম , “ সুবহানালাহ , কেন ? এ বাহিনী , যা তাকে চারদিক থেকে ঘেরাও করেছে , নিশ্চিত ভাবে তাকে হত্যা করবে। ” সে বললো , আল্লাহর শপথ , আমি তাকে আক্রমণ করবো। ” সে তাকে আক্রমণ করলো এবং তার দিকে ফেরার আগেই সে তার মাথার উপর আঘাত করলো তার তরবারি দিয়ে , যা তা দুভাগ করে ফেললো। কিশোরটি মুখ নিচে দিয়ে মাটিতে পড়ে গেলো এবং উচ্চকণ্ঠে বললো , হায় , হে প্রিয় চাচা , আমার সাহায্যে আসুন । ইমাম হোসেইন (আ.) লাফ দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে গেলেন এক শিকারী বাজপাখির মত এবং আক্রমণ করলেন ক্রুদ্ধ সিংহের মত। তিনি উমরকে তার তরবারি দিয়ে আক্রমণ করলেন এবং সে তা হাত দিয়ে ঠেকাতে গেলো , যা বিচ্ছিন্ন হয়ে তার কনুই থেকে ঝুলতে লাগলো। [ইরশাদ] তখন সে চিৎকার দিলো যা সমগ্র সেনাবাহিনী শুনতে পেলো এবং ইমাম হোসেইন (আ.) তার উপর থেকে হাত তুলে নিলেন। তখন কুফার সেনাবাহিনী ঘেরাও করলো উমরকে উদ্ধার করতে।

[ তাসলিয়াতুল মাজালিস -এ আছে] যখন সেনাবাহিনী আক্রমণ করলো তাদের ঘোড়ার বুক তাকে (উমরকে) আঘাত করলো এবং যখন তারা চক্রাকারে ঘুরতে লাগলো সে তাদের ঘোড়ার পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে গেলো এবং নিহত হলো। যখন ধুলো নেমে গেলো আমি দেখলাম ইমাম হোসেইন (আ.) ক্বাসিমের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন যার পা মাটিতে লম্বা হয়ে ছিলো। ইমাম হোসেইন (আ.) বললেন , বিদায় হোক সে জাতির , যারা তোমাকে হত্যা করেছে , আর কিয়ামতের দিনে তাদের শত্রুহবে তোমার দাদা (রাসূল সা.) । ”

এরপর তিনি বললেন , আল্লাহর শপথ , তোমার চাচার ওপরে এটি অত্যন্ত কষ্টকর যে তিনি তোমার সাহায্যে আসতে পারেন নি যখন তুমি তাকে ডেকেছিলে অথবা তিনি সাড়া দিয়েছিলেন কিন্তু তাতে তোমার কোন লাভ হয়নি। ” (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তাঁর উপর।)

[ মালহুফ ’ গ্রন্থে আছে] ইমাম বললেন , আল্লাহর শপথ , এখানে আছে অনেক হত্যাকারী এবং তার সাহায্যকারীদের সংখ্যা খুবই কম। ”

এরপর তিনি তাকে বুকে চেপে ধরলেন এবং তাকে এমন অবস্থায় নিয়ে এলেন যে , তার পা দুটো মাটিতে ঘষা খাচ্ছিলো। [তাবারির গ্রন্থে আছে] ইমাম হোসেইন (আ.) তার বুক চেপে ধরলেন ক্বাসিমের বুকে। আমি নিজেকে বললাম , তিনি তাকে নিয়ে কী করতে চান ? এরপর তিনি তাকে এনে তার সন্তান আলী বিন হোসেইন (আল আকবার) এবং তার পরিবারের অন্য শহীদদের পাশে রাখলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম এ কিশোরটি কে ? আমাকে বলা হলো , সে ক্বাসিম বিন হাসান বিন আলী বিন আবি তালিব।১৪

বর্ণিত আছে যে , ইমাম হোসেইন (আ.) বললেন , ইয়া রব , তাদের সংখ্যা কমিয়ে দাও , তাদের প্রত্যেককে হত্যা করো , তাদের প্রত্যেককে পরিত্যাগ করো এবং তাদেরকে কখনও ক্ষমা করো না। সহ্য কর হে আমার চাচাতো ভাইয়েরা , সহ্য করো হে আমার পরিবার , আজকের পর তোমরা কখনো আর অপমানিত হবে না। ”

সাইয়েদ মুরতাযা আলামুল হুদার (হেদায়েতের পতাকা) এক দীর্ঘ যিয়ারতে আছে যে , শান্তি বর্ষিত হোক হাসান বিন আলীর সন্তান ক্বাসিম এর উপর এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত হোক তার উপর , শান্তিবর্ষিত হোক আপনার উপর হে আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তির সন্তান , শান্তিবর্ষিত হোক আপনার ওপরে হে আল্লাহর রাসূলের সুগন্ধ , শান্তিবর্ষিত হোক আপনার ওপরে যার আশা অপূর্ণ রয়ে গিয়েছিলো এ পৃথিবীর মাধ্যমে। যে তার অন্তরের আরোগ্য আনতে পারে নি আল্লাহর শত্রুদের মাধ্যমে , যতক্ষণ না মৃত্যু তার দিকে দ্রুত এগিয়ে এলো এবং তার আশা মৃত্যুবরণ করলো , শুভেচ্ছা হে রাসূলের প্রিয় ব্যক্তির প্রিয় , কত সফলই না আপনার সংগ্রাম এবং কত উচ্চই না আপনার সম্মান এবং কত সুন্দরই না আপনার ফেরার স্থান। ”

আব্দুল্লাহ বিন হাসান বিন আলী বিন আবু তালিবের শাহাদাত

‘ বিহারুল আনওয়ার ’ -এ রয়েছে যে ক্বাসিমের শাহাদাতের আগে আব্দুল্লাহ বিন হাসান যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করেন যার সম্পর্কে আমরা আগে আলোচনা করেছি। কিন্তু আরও সঠিক হলো যে , তিনি ক্বাসিমের পর যুদ্ধক্ষেত্রে গেছেন এই কথা বলে , যদি আমাকে না জানো আমি হলাম হায়দারের সন্তান , জঙ্গলের এক পুরুষ সিংহ এবং আমি শত্রুর উপর এক ঘূর্ণিঝড়। ”

তিনি তার তরবারি দিয়ে বারো জনকে হত্যা করলেন এবং হানি বিন সাবীত হাযরামি তাকে হত্যা করে (আল্লাহর রহমত ও বরকত তার উপর বর্ষিত হোক) , যার (হানির) চেহারা তখন কালো হয়ে যায়।

আবুল ফারাজ থেকে ইমাম মুহাম্মাদ আল বাক্বির (আ.) বর্ণনা করেছেন যে , হুরমালাহ বিন কাহিল আসাদি তাকে হত্যা করে এবং তার শাহাদাতের বিষয়ে পরে ইমাম হোসেনইন (আ.) এর শাহাদাতের প্রেক্ষাপটে আলোচনা করা হবে।

আবু বকর বিন হাসান বিন আলী বিন আবি তালিবের শাহাদাত

ক্বাসিম (আ.) এর মা ছিলেন এক দাসী। আবুল ফারাজ উদ্ধৃতি দিয়েছেন মাদায়েনি থেকে , তিনি তার সূত্র থেকে , তিনি আবু মাখনাফ থেকে , তিনি সুলাইমান বিন রাশিদ থেকে যে আব্দুল্লাহ বিন উক্ববাহ গানাউই তাকে হত্যা করে।

ইমাম মুহাম্মাদ আল বাক্বের (আ.) থেকে উমাইর ও ইবনে শিমরের বর্ণনায় পাওয়া যায় যে , উক্ববাহ গানাউই তাকে হত্যা করে।

সুলাইমান বিন কিব্বাহ তার কবিতায় তাকে এভাবে স্মরণ করেছেন , আমাদের রক্তের (দায় দায়িত্ব) এক ফোঁটা গানির বংশের ঘাড়ে এবং অন্য রক্ত (বনি) আসাদের উপর করা হয় যা গোনা যায় না। ”

আবুল ফারাজ মনে করেন তার শাহাদাত ঘটেছে ক্বাসিমের আগে। কিন্তু তাবারি , ইবনে আসীর , শেইখ মুফীদ এবং অন্যরা তার শাহাদাতকে (ক্বাসিমের) পরে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।

বিশ্বাসীদের আমির আলী (আ.) এর সন্তানদের শাহাদাত

[ ইরশাদ ’ গ্রন্থে আছে] যখন হযরত আব্বাস (আ.) তার পরিবারের বেশীর ভাগকে শহীদ হয়ে যেতে দেখলেন। তিনি তার আপন ভাইদের ডাকলেন , যেমন আব্দুল্লাহ , জাফর এবং উসমানকে। এরপর বললেন , হে আমার মায়ের সন্তানেরা , তোমাদের কোন সন্তানাদি নেই। যুদ্ধক্ষেত্রে আমার আগে যাও এবং জীবন বিসর্জন দাও , যেন আমি প্রত্যক্ষ করি আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা.) সম্পর্কে তোমাদের সততা । ১৫

আব্দুল্লাহ বিন আলী বিন আবি তালিবের শাহাদাত

আব্দুল্লাহ যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করলেন এবং ভীষণ যুদ্ধ করলেন এবং হানি বিন সাবীত হাযরামির সাথে তরবারির আঘাত বিনিময় করলেন এবং শেষ পর্যন্তহানি তাকে হত্যা করলো (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) । ‘

মানাক্বিব ’ -এ এই যুদ্ধ ক্ষেত্রের কবিতা আছে , আমি এক সাহায্যকারীর সন্তান , যিনি ছিলেন অসাধারণ , অপূর্ব সব কাজের সম্পাদনকারী আলী , যিনি ছিলেন আল্লাহর রাসূলের তরবারি , প্রতিশোধ গ্রহণকারী , যার (তরবারি) থেকে শক্তি প্রকাশিত হতো প্রতিদিন। ”

জাফর বিন আলী বিন আবি তালিবের শাহাদাত

তিনি বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন এবং মানাক্বিব ’ -এ আছে তিনি বলছিলেন , নিশ্চয়ই আমি জাফর , অসাধারণত্বের অধিকারী , দানশীল আলীর সন্তান , যিনি ছিলেন নবীর উত্তরাধিকারী , প্রবীণ এবং অভিভাবক , আমি আমার পিতার সাথে সামঞ্জস্যশীল এবং মামার সাথেও। আমি হোসেইনকে রক্ষা করি যিনি উদারতা ও সৌন্দর্যের অধিকারী। ”

হানি বিন সাবীত তাকে আক্রমণ করে ও হত্যা করে (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার ওপরে) ।

ইবনে শহর আশোব বলেন যে , খাওলি আসবাহি একটি তীর ছুঁড়ে যা তার কপাল অথবা চোখে বিদ্ধ হয়।