পরিচ্ছেদ - ২
ইমাম হোসেইন (আ.) এর দুঃখ কষ্টের উপর শোক অনুভব করার ফযীলতের চল্লিশটি হাদীস (রেওয়ায়েত) এবং তার হত্যাকারীদের উপর অভিশাপ দেয়ার জন্য পুরস্কার এবং তার শাহাদাত লাভের উপর ভবিষ্যদ্বাণী।
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ১
এ বইয়ের লেখক আব্বাস কুম্মি বলেন যে , আমার শিক্ষক হাজ্ব মির্যা হোসেইন নূরী (আল্লাহ তার কবরকে আলোকিত করুন) তার কাছ থেকে হাদীস বর্ণনার পূর্ণ সাধারণ অনুমতিসহ আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন। মির্যা হোসেইন নূরী অনুমতি পেয়েছেন (বর্ণনা করার জন্য) আল্লাহর নিদর্শন (আয়াতুল্লাহ) হাজ্ব শেইখ মুর্তাযা আনসারী (আল্লাহ তাকে তাঁর রহমতের ভিতর ঢেকে দিন) থেকে , যিনি তা পেয়েছেন সম্মানিত অভিভাবক হাজ্ব মোল্লাহ আহমাদ নারাক্বী থেকে , তিনি আমাদের সম্মানিত অভিভাবক সাইয়েদ মাহদী বাহারুল উলুম থেকে , তিনি সর্দারদের সর্দার , আমাদের অভিভাবক আক্বা মুহাম্মাদ বাক্বির বেহবাহানি থেকে যিনি ওয়াহীদ নামে সুপরিচিত , তিনি তার পিতা মোল্লাহ মুহাম্মাদ বাক্বির মাজলিসি ইসফাহানি , তিনি তার পিতা মোল্লাহ মুহাম্মাদ তাক্বী মাজলিসি থেকে , তিনি আমাদের সম্মানিত শেইখ মুহাম্মাদ আমেলি থেকে যিনি বাহাউদ্দীন (শেইখ বাহাই) নামে সুপরিচিত , তিনি তার পিতা শেইখ হোসেইন বিন আব্দুস সামাদ আমেলি হারিসি থেকে , তিনি শেইখ যাইনুদ্দীন (শহীদ আস সানি , দ্বিতীয় শহীদ) থেকে , তিনি শেইখ আলী বিন আব্দুল আলী মীসি থেকে , তিনি শেইখ মুহাম্মাদ বিন দাউদ জাযযিনি থেকে , তিনি আলী বিন মুহাম্মাদ থেকে , তিনি তার পিতা মুহাম্মাদ বিন মাকি (শহীদ আল আউয়াল , প্রথম শহীদ) থেকে , তিনি মুহাম্মাদ বিন আল্লামা হিল্লি থেকে , তিনি তার পিতা আল্লামা হিল্লি থেকে , তিনি জাফর বিন সা’
ঈদ হিল্লি থেকে , তিনি ফাখর বিন মা’
ঈদ মুসাউই থেকে , তিনি ইমাদুদ্দীন তাবারসি থেকে , তিনি আবু আলী (মুফীদ আস সানি , দ্বিতীয় মুফীদ) থেকে , তিনি তার পিতা শেইখ তূসী থেকে , তিনি শেইখ মুফীদ থেকে , তিনি সম্মানিত শেইখ সাদুক্ব থেকে , তিনি মাজেলুইয়া কুম্মি থেকে , তিনি আলী বিন ইবরাহীম কুম্মি থেকে , তিনি তার পিতা ইবরাহীম বিন হাশিম কুম্মি থেকে , তিনি রাইয়ান বিন শাবীব (মোতাসিমের মামা) থেকে , যিনি বলেছেন যে , আমি ইমাম আলী আল রিদা (আ.) এর সাথে মহররমের প্রথম দিন দেখা করতে গেলাম। ইমাম রিদা (আ.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন ,“
হে শাবীবের সন্তান , তুমি কি আজ রোযা অবস্থায় আছো ?”
আমি উত্তরে না বললাম। ইমাম বললেন , এ দিন নবী যাকারিয়া (আ.) তার রবের কাছে এভাবে দোআ করেছিলেন:
)
رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ(
“
হে আমার রব , আপনার কাছ থেকে আমাকে একটি ভালো সন্তান দিন। নিশ্চয়ই আপনি দোআ শ্রবণকারী।”
[সূরা আলে ইমরান: ৩৮]
তখন আল্লাহ তার দোআ কবুল করলেন এবং তাঁর ফেরেশতাদের আদেশ দিলেন তাকে সুসংবাদ দিতে তার সন্তান নবী ইয়াহইয়া (আ.) সম্পর্কে। ফেরেশতারা এলো , তিনি মেহরাবে নামাযরত ছিলেন , তারা তাকে ডাক দিলো। তাই যে ব্যক্তি এই দিনে রোযা রাখে এবং আল্লাহর কাছে তার আশা ভিক্ষা চায় , তার দোআ কবুল হবে যেরকম হয়েছিলো যাকারিয়ার।
এরপর ইমাম (আ.) বললেন ,“
হে শাবীবের সন্তান , মহররম এমন একটি মাস অজ্ঞতার যুগে (ইসলাম পূর্ব) আরবরাও এর পবিত্রতাকে সম্মান করতো এবং অত্যাচার ও রক্তপাত এ মাসে নিষেধ করতো , কিন্তু এ লোকগুলো (উমাইয়া বংশের লোকেরা) এ মাসের পবিত্রতাকে সম্মান করলো না এবং তাদের রাসূলের পবিত্রতাকেও নয়। এ মাসে তারা রাসূলের সন্তানকে হত্যা করলো এবং নারী সদস্যদের কারাগারে নিক্ষেপ করলো তাদের জিনিসপত্র লুট করে নেয়ার পর , নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের এ অপরাধকে কখনো কোন কালে ক্ষমা করবেন না।
হে শাবীবের সন্তান , যদি তুমি কারো ওপরে শোক পালন করতে ও কাঁদতে চাও তাহলে তা কর হোসেইন বিন আলী বিন আবি তালিব (আ.) এর উপর , কারণ তার মাথাকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিলো একটি ভেড়ার বেলায় যেমন করা হয় ; তার পরিবারের আঠারোজন ব্যক্তিকেও , যারা ছিলো পৃথিবীর বুকে অতুলনীয়। তাদেরকেও তার সাথে হত্যা করা হয়। আকাশগুলো ও পৃথিবীর মাটি হোসেইনের মৃত্যুতে কেঁদেছে। চার হাজার ফেরেশতা আকাশগুলো থেকে নেমে এসেছিলো তাকে সাহায্য করার জন্য , কিন্তু তারা যখন সেখানে পৌঁছালো তারা দেখতে পেলো যে ইতোমধ্যেই তাকে শহীদ করা হয়েছে। এ কারণে তারা সবাই তার পবিত্র কবরের কাছে এখনো রয়ে গেছে ধুলোমাখা অগোছালো চুল নিয়ে , ক্বায়েম (ইমাম মাহদী)-এর উত্থান দিবস পর্যন্ত। তখন তারা সবাই তাকে সাহায্য করবে এবং তাদের শ্লোগান হবে: হোসেইনের রক্তের প্রতিশোধ।
হে শাবীবের সন্তান , আমার পিতা (ইমাম মূসা আল কাযিম) বর্ণনা করেছেন তার পিতা (ইমাম জাফর আস সাদিক্ব) থেকে তিনি তার দাদা (ইমাম আলী যায়নুল আবেদীন) থেকে যে , যখন আমার দাদা ইমাম হোসেইন (আ.) কে শহীদ করা হয় , আকাশ রক্ত ও লাল বারি বর্ষণ করেছিলো।
হে শাবীবের সন্তান , যদি তুমি হোসেইন (আ.) এর দুঃখ কষ্টের ওপরে কাদো এবং তা এমনভাবে যে তোমার চোখ থেকে অশ্রু বয় এবং তোমার গাল দুটোর ওপরে পড়ে , আল্লাহ তোমার সব গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন , হোক সেগুলো বড় অথবা ছোট এবং সংখ্যায় কম অথবা অনেক।
হে শাবীবের সন্তান , যদি তুমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার মোলাকাত চাও , ঐ অবস্থায় যে তোমার সব গুনাহ থেকে পবিত্র হয়ে গেছো , তাহলে তুমি ইমাম হোসেইন (আ.) এর কবর যিয়ারতে যাও।
হে শাবীবের সন্তান , যদি তুমি চাও বেহেশতের প্রাসাদগুলোতে রাসূল (সা.) ও তার বংশধরদের সাথে বাস করতে তাহলে ইমাম হোসেইন (আ.) এর হত্যাকারীদের উপর অভিশাপ দাও।
হে শাবীবের সন্তান , যদি তুমি চাও তাদের মত পুরস্কার পেতে যারা ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথে থেকে শহীদ হয়েছে তাহলে যখনই তাকে স্মরণ করবে বলো: হায় যদি আমি তাদের সাথে থাকতাম তাহলে আমি বিরাট বিজয় অর্জন করতাম। হে শাবীবের সন্তান , যদি তুমি চাও বেহেশে ত আমাদের উচ্চমযর্দায় বাস করতে , তাহলে আমাদের দুঃখ ও দুর্দশা নিয়ে দুঃখ করো এবং আমাদের আনন্দে আনন্দ করো এবং আমাদের প্রতি ভালোবাসার সাথে যুক্ত থাকো। কারণ যদি কোন ব্যক্তি এ পৃথিবীতে একটি পাথরের সাথেও যুক্ত থাকে , আল্লাহ কিয়ামতের দিন সেটির সাথেই তাকে দাঁড় করাবেন।
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ২
ধারাবাহিক ও পরম্পরাযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সম্মানিত শেইখ মুহাম্মাদ বিন নো’
মান আল মুফীদ (আল্লাহ তার আত্মাকে আরও পবিত্র করুন) বর্ণনা করেছেন সম্মানিত শেইখ আবুল ক্বাসিম জাফর বিন মুহাম্মাদ ক্বওলাওয়েইহ কুম্মি (আল্লাহ তার কবরকে সুগন্ধিযুক্ত করুন) , তিনি ইবনে ওয়ালীদ থেকে , তিনি সাফফার থেকে , তিনি ইবনে আবুল খাত্তাব থেকে , তিনি মুহাম্মাদ বিন ইসমাইল থেকে , তিনি সালেহ বিন আক্ববাহ থেকে , তিনি আবু হারুন মাকফূফ থেকে , তিনি বলেছেন যে , একবার আমি ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) এর কাছে গেলাম। ইমাম আমাকে কবিতা আবৃত্তি করতে বললেন , আমি আবৃত্তি শুরু করলাম । তখন ইমাম (আ.) বললেন ,“
এভাবে নয় , যেভাবে তুমি তার (ইমাম হোসেইনের) জন্য আবৃত্তি করো নিজেদের মধ্যে এবং তার কবরের মাথার দিকে (দাঁড়িয়ে)।”
তখন আমি আবৃত্তি করলাম ,“
হোসেইনের কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার পবিত্র হাড়গুলোকে বলো ....।”
ইমাম (আ.) কাঁদতে শুরু করলেন এবং তাই আমি চুপ করে গেলাম। ইমাম সাদিক্ব আমাকে আবৃত্তি চালিয়ে যেতে বললেন এবং আরও কিছু আবৃত্তি করতে বললেন , তখন আমি আবৃত্তি করলাম ,‘
হে ফারওয়া , উঠো এবং কাঁদো ও শোক প্রকাশ করো তোমার অভিভাবক হোসেইনের জন্য , একটি সুযোগ দাও ইমাম হোসেইনের লাশের পাশে কান্নাকাটি করার জন্য।”
আবু হারুন বলেন যে , ইমাম সাদিক খুব বেশী কাদতে লাগলেন এবং তার ঘরের নারী সদস্যরাও কাঁদতে লাগলেন। যখন তারা চুপ হয়ে গেলেন , ইমাম বললেন ,
“
হে আবু হারুন , যদি কোন ব্যক্তি ইমাম হোসেইন (আ.) এর জন্য কবিতা আবৃত্তি করে এবং তার মাধ্যমে দশ জন লোককে কাঁদায় তাহলে বেহেশত তার জন্য নির্দিষ্ট করা হবে ঐ মুহূর্তেই।”
এরপর ইমাম লোকের সংখ্যা কমাতে লাগলেন এবং যখন একজন পর্যন্ত পৌঁছালেন , বললেন ,“
যদি কোন ব্যক্তি ইমাম হোসেইন (আ.) এর বিষয়ে কবিতা আবৃত্তি করে এবং একজন লোককে এর মাধ্যমে কাঁদায় , তাহলে তার জন্য বেহেশত নির্দিষ্ট হয়ে যায় সেই মুহূর্তেই।”
ইমাম আরও বললেন ,“
কোন ব্যক্তি যদি ইমাম হোসেইন (আ.) কে স্মরণ করে এবং তার জন্য কাঁদে , সে বেহেশত পাবে (পুরস্কার হিসাবে)।”
লেখক (আব্বাস কুম্মি) বলেন যে , যে কবিতা আবু হারুন আবৃত্তি করেছিলেন তা রচনা করেছিলেন সাইয়েদ আলী হিমইয়ারি এবং তা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন শেইখ ইবনে নিমা।
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ৩
পরম্পরাসম্পন্ন ধারাবাহিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শেইখ সাদুক্ব বর্ণনা করেছেন তার ধারাবাহিক ও পরম্পরাসম্পন্ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ইবনে আব্বাস থেকে যে , ইমাম আলী (আ.) রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন , আক্বীল কি আপনার প্রিয় ? রাসূলুল্লাহ (সা.) উত্তর দিলেন ,“
হ্যাঁ আল্লাহর শপথ , সে আমার প্রিয় দু’
কারণে। তার প্রথম কারণ হলো আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে পছন্দ করি , দ্বিতীয় কারণ হলো আবু তালিব তাকে ভালোবাসতেন এবং তার সন্তান (মুসলিম) মৃত্যুবরণ করবে তোমার সন্তান (ইমাম হোসেইন)-এর সাথী হয়ে এবং নিশ্চয়ই বিশ্বাসীদের চোখগুলো কাঁদবে (তার শাহাদাতের কারণে) এবং আল্লাহর নিকটবর্তী ফেরেশতারা তার ওপরে দরুদ পাঠাবে।”
রাসূল (সা.) কাঁদতে লাগলেন এবং তার অশ্রু তার বুকের উপর পড়লো , তিনি বললেন ,“
আমি এ বিষয়ে আল্লাহর কাছেই অভিযোগ করি এর (বেদনা ও কষ্টের) জন্য যা আমার মৃত্যুর পরে আমার বংশধরকে বইতে হবে।”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ৪
পরম্পরাসহ ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে সম্মানিত শেইখ আবুল ক্বাসিম জাফর বিন ক্বাওলাওয়েইহ মুসমে কারদীন থেকে বর্ণনা করেন , যিনি বলেছেন , একদিন ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) আমাকে বললেন ,“
হে মুসমে , ইরাকের অধিবাসী হওয়ায় তুমি কি ইমাম হোসেইন (আ.) কবর যিয়ারতে যাও ?”
আমি বললাম ,“
না , কারণ বসরার লোকেরা আমাকে ভালো করে চিনে এবং তারা খলিফার অনুসারী এবং গোত্রগুলোর নাসিবীদের (নবীর আহলুল বাইত বা পরিবারের সাথে যারা শত্রুতা রাখে) মধ্যে থেকে অনেক শত্রু আছে এবং আমাদের চারদিকেও আছে। আমি ভয় করি যে তারা হয়তো আমার বিরুদ্ধে সুলাইমানের (বিন আব্দুল মালিক , আব্বাসীয় খলিফা) সন্তানদের কাছে অভিযোগ করবে , এরপর সে আমাদের উপর অত্যাচার করবে এবং হয়রানি করবে।”
তখন ইমাম বললেন ,“
তাহলে ইমাম হোসেইনের উপর যে যুলম করা হয়েছে তা স্মরণ করো।”
আমি সম্মতিসূচক উত্তর দিলাম। ইমাম আবার জিজ্ঞেস করলেন ,“
তুমি কি এ কারণে বিপর্যস্ত হও ?”
আমি বললাম ,“
অবশ্যই , আল্লাহর শপথ এবং এ শোক আমার মধ্যে এমন প্রভাব ফেলে যে আমার পরিবার তা আমার চেহারায় দেখতে পায় এবং আমি খাবারও ছেড়ে দেই এবং এ দুঃখ আমার দুগালে স্পষ্ট হয়ে যায়।”
ইমাম সাদিক্ব (আ.) বললেন ,“
আল্লাহ তোমার অশ্রুর ওপরে রহমত করুন , নিশ্চয়ই তুমি তাদের একজন যারা আমাদের শোকে বিপর্যস্তয় হয , যারা আমাদের সমৃদ্ধিতে উল্লসিত হয় এবং আমাদের দুঃখে কাঁদে এবং যারা আমাদের সাথে যুক্ত আছে আমাদের ভয়ের ও শান্তির দিনগুলোতে। সত্য হলো এই যে যখন তুমি মৃত্যুবরণ করবে তখন তুমি আমাদের রহমতপ্রাপ্ত পূর্বপুরুষদের তোমার কাছেই দেখতে পাবে এবং তারা মৃত্যুর ফেরেশতাকে উপদেশ দিবে তোমার বিষয়ে এবং তোমাকে সুসংবাদ দেয়া হবে যা তোমার চোখ দুটোকে আলোকিত করে তুলবে , তখন সে তোমার প্রতি তার চেয়ে বেশী দয়া ও মায়া করবে যতটুকু একজন মা তার সন্তানের প্রতি করে।”
একথা বলে ইমাম কাঁদতে শুরু করলেন এবং আমি নিজেও আমার অশ্রু নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না। এরপর তিনি বললেন ,“
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর , যিনি তাঁর রহমতের মাধ্যমে আমাদেরকে তার সব সৃষ্টপ্রাণীর ওপরে স্থান দিয়েছেন এবং আমাদের আহলুল বাইতকে অনুগ্রহ করেছেন তার বরকত দিয়ে। হে মুসমে , নিশ্চয়ই আকাশগুলো এবং পৃথিবী কাঁদছে সেদিন থেকে যেদিন বিশ্বাসীদের আমির আলী (আ.) কে শহীদ করা হয়েছে। যে ফেরেশতারা আমাদের জন্য কাঁদে তাদের সংখ্যা অনেক এবং তাদের অশ্রু আমাদের শাহাদাতের সময় থেকে শুকিয়ে যায়নি এবং কেউ নেই যে আমাদের জন্য কাঁদে না। এমন কেউ নেই যে আমাদের জন্য এবং আমাদের দুঃখ-কষ্টের জন্য কাঁদে এবং তার চোখ থেকে অশ্রু তার গালের উপর পড়ে আর তার আগেই আল্লাহ তাঁর দরুদ তার উপর পাঠান না এবং যদি একটি অশ্রু ফোঁটাকে , যা তাদের চোখ থেকে ঝরেছে , ছুঁড়ে দেয়া হয় জাহান্নামের গর্তের ভিতরে তাহলে এর উত্তাপ ঠাণ্ডা হয়ে যাবে যেন কোন আগুনই সেখানে কখনও ছিলো না। যে ব্যক্তির হৃদয় আমাদের জন্য ব্যথা অনুভব করে , সে তার মৃত্যুর সময়ে আমাদের দেখতে পেয়ে আনন্দ করবে এবং (তার আনন্দ) পুরোপুরি বজায় থাকবে সে সময় পর্যন্ত যখন সে আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করবে হাউযে কাউসারে। কাউসার নিজেই পরিতৃপ্ত থাকবে আমাদের বন্ধুদের দেখে এবং তার মুখে এমন সব সুস্বাদু খাবার দেয়া হবে যে সে সেখান থেকে চলে যেতে চাইবে না।”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ৫
পরম্পরাসহ ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে শেইখ আবুল ক্বাসিম জাফর বিন ক্বাওলাওয়েইহ কুম্মি তার ধারাবাহিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন আব্দুল্লাহ বিন বাকর থেকে , যিনি একটি দীর্ঘ হাদীসের বিষয়বস্তুর মধ্যে বর্ণনা করেন যে , আমি ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) এর সাথে হজ্ব পালন করলাম এবং এরপর বললাম ,“
হে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সন্তান , যদি ইমাম হোসেইন বিন আলী (আ.) এর কবর খোলা হয় সেখানে কী পাওয়া যাবে ?”
ইমাম বললেন ,“
হে বাকরের সন্তান , তুমি কত বড়ই না এক প্রশ্ন করেছো। নিশ্চয়ই ইমাম হোসেইন বিন আলী (আ.) তার পিতা , মাতা ও ভাইয়ের সাথে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে আছেন এবং তিনি খাদ্য গ্রহণ করেন (নেয়ামতগুলো থেকে) তাদের সবার সাথে এবং তিনি আরশের ডান পাশে আছেন এবং তাদের সাথে যুক্ত আছেন এবং তিনি বলেন , হে আল্লাহ , আপনি তা পূরণ করুন যে প্রতিশ্রুতি আপনি আমাকে দিয়েছেন। এরপর তিনি তার কবরে আসা যিয়ারতকারীদের নাম এবং তাদের পিতার নামের দিকে তাকান এবং তিনি জানেন তারা তাদের মালপত্রের ভিতরে যা এনেছে , তারা তাদের সন্তানদের যেভাবে চিনে তার চাইতে বেশী এবং তিনি তাদের দিকে তাকান যারা তার দুঃখ-কষ্ট স্মরণ করে কাঁদে এবং তিনি তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোআ করেন তাদের সন্তুষ্টি ও আত্মনির্ভরশীলতার জন্য। এরপর তিনি বলেন , হে , যে আমার জন্য কাঁদছো , যদি তোমাকে জানানো হতো কী পুরস্কার ও নেয়ামত তোমার জন্য আল্লাহ নির্দিষ্ট করে রেখেছেন (তোমার শোক পালনের কারণে) , তাহলে তুমি শোকার্ত হওয়ার চাইতে আনন্দিত হতে। এরপর তিনি তাদের সব গুনাহ ও ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ৬
পরম্পরাসহ ধারাবাহিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সম্মানিত শেইখ ও হাদীসবেত্তাদের সর্দার মুহাম্মাদ বিন আলী বাবাওয়েইহ কুম্মি থেকে এবং তিনি তার বর্ণনাকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন ইমাম আলী আল রিদা (আ.) থেকে যে ,“
যে আমাদের দুঃখসমূহ স্মরণ করে এবং আমাদের উপর যে অত্যাচার করা হয়েছে তার জন্য কাঁদে , সে কিয়ামতের দিন আমাদের মর্যাদায় আমাদের সাথে থাকবে এবং যে আমাদের দুঃখসমূহ স্মরণ করে এবং এ জন্য কাঁদে এবং অন্যদের কাঁদায় , তাহলে তার চোখগুলো সেদিন কাঁদবে না যেদিন সব চোখগুলো কাঁদবে এবং যে এ ধরনের সমাবেশে বসে যেখানে আমাদের বিষয়গুলো আলোচিত হয় তাহলে সেদিন তার হৃদয় মরে যাবে না যেদিন সব হৃদয় ধ্বংস হয়ে যাবে।”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ৭
আমার ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে যা শেইখুত তাইফা আবু জাফর তূসী পর্যন্ত পৌঁছেছে , তিনি বর্ণনা করেছেন শেইখ মুফীদ থেকে , তিনি বর্ণনা করেছেন ইবনে ক্বাওলাওয়েইহ থেকে , তিনি তার পিতা থেকে , তিনি সা’
আদ থেকে , তিনি বারক্বি থেকে , তিনি সুলাইমান বিন মুসলিম কিনদি থেকে , তিনি ইবনে গাযাওয়ান থেকে , তিনি ঈসা বিন আবি মানসূর থেকে , তিনি আবান বিন তাগলিব থেকে , তিনি ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) থেকে যে , তিনি বলেছেন ,“
আমাদের ওপর যে জুলুম করা হয়েছে তার কারণে যে শোকার্ত , তার দীর্ঘশ্বাস হলো তাসবীহ এবং আমাদের বিষয়ে তার দুশ্চিন্তা হলো ইবাদত এবং আমাদের রহস্যগুলো গোপন রাখা আল্লাহর পথে জিহাদের পুরস্কার বহন করে।”
এরপর তিনি বললেন ,“
নিশ্চয়ই এ হাদীসটি স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখা উচিত।”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ৮
ফক্বীহ শেইখ আবুল ক্বাসিম জাফর বিন ক্বাওলাওয়েইহ বর্ণনা করেন ইবনে খারেজা থেকে যে , ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) বলেছেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) বলেছেন ,“
আমি হলাম দুঃখের শহীদ এবং আমাকে বন্দী অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে এবং যে আমার কবর যিয়ারত করতে আসবে দুঃখ ভারাক্রন্ত হয়ে - এটি আল্লাহর উপর (দায়িত্ব) যে তাকে তার পরিবারে কাছে ফেরত পাঠাবেন , সন্তুষ্ট অবস্থায়।”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ৯
শেইখ আত তাইফা তূসি থেকে বর্ণিত , আবু আমর উসমান দাক্কাক থেকে ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে , তিনি জাফর বিন মুহাম্মাদ বিন মালিক থেকে , তিনি আহমাদ বিন ইয়াহইয়া আযদি থেকে , তিনি মাখূল বিন ইবরাহীম থেকে , তিনি রাবি বিন মনযির থেকে , তিনি তার পিতা থেকে , তিনি ইমাম হোসেইন বিন আলী (আ.) থেকে যে , তিনি বলেছেন ,“
আল্লাহর এমন কোন বান্দাহ নেই যে অশ্রু ফেলে এবং তার চোখগুলো ভিজে যায় আর আল্লাহ তাকে একটি (দীর্ঘ) সময়ের জন্য বেহেশতে রাখবেন না।”
আহমাদ বিন ইয়াহইয়া আযদি বলেন যে , একদিন আমি ইমাম হোসেইন (আ.) কে স্বপ্নে দেখলাম এবং তার কাছে জিজ্ঞেস করলাম এ হাদীসটির সত্যতা সম্পর্কে এবং ইমাম উত্তর দিলেন যে , তা সত্য।
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ১০
পরম্পরাসহ ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে , শেইখ আবুল ক্বাসিম জাফর বিন ক্বাওলাওয়েইহ বর্ণনা করেছেন এবং তিনি তার ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন আবু আম্মারাহ থেকে , যিনি কারবালার শোকগাঁথা গাইতেন যে , একদিন ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) এর সামনে ইমাম হোসেইন (আ.) এর নাম নেয়া হলো এবং তিনি রাত পর্যন্ত মুচকি হাসিও হাসলেন না এবং তিনি সব সময় বলতেন ,“
হোসেইন হলো বিশ্বাসীদের কান্নার মাধ্যম।”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ১১
আমার ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে যা যুক্ত হয়েছে সম্মানিত শেইখ আলী বিন ইবরাহীম কুম্মি এর সাথে , তিনি বর্ণনা করেছেন তার পিতা থেকে , তিনি ইবনে মাহবুব থেকে , তিনি আলা’
থেকে , তিনি মুহাম্মাদ থেকে , তিনি ইমাম মুহাম্মাদ আল বাক্বির (আ.) থেকে , যিনি বলেছেন , ইমাম আলী বিন হোসেইন যায়নুল আবেদীন (আ.) বলেছেন ,“
যদি কোন বিশ্বাসী ইমাম হোসেইন (আ.) এর শাহাদাতের বিষয়ে কাঁদে এবং তার চোখ থেকে অশ্রু বয় এবং তার গাল দুটোর ওপরে পড়ে , তাহলে আল্লাহ তাকে বেহেশতের প্রাসাদগুলোতে বাস করতে দিবেন , যেখানে সে দীর্ঘ একটি সময়ের জন্য বাস করবে। আর যদি আমাদের উপর যে নিপীড়ন ও নির্যাতন আমাদের শত্রুরা করেছে সে জন্যে একজন বিশ্বাসীর চোখ থেকে অশ্রু বয় (দুঃখে) এবং তার গালের উপর পড়ে , তাহলে আল্লাহ তাকে বেহেশতে একটি আসন উপহার দিবেন এবং যে বিশ্বাসী আমাদের কারণে দুঃখ-কষ্ট ভোগ করে এবং তার অশ্রু তার গালে ঝরে , তাহলে আল্লাহ তার দুঃখকে তার চেহারা থেকে দূর করে দিবেন এবং কিয়ামতের দিন তিনি তাকে তাঁর ক্রোধ থেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন এবং তাকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে রক্ষা করবেন।”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ১২
ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে , শেইখ সাদুক্ব মুহাম্মাদ বিন আলী বিন বাবাওয়েইহ কুম্মি বর্ণনা করেছেন তার পিতা থেকে (ইবনে বাবওয়েইহ আউয়াল) , তিনি কুম্মিদের অভিভাবক আব্দুল্লাহ বিন জাফর হুমাইরি থেকে , তিনি আহমাদ বিন ইসহাক্ব বিন সা’
আদ থেকে , তিনি বাকর বিন মুহাম্মাদ আযদি থেকে যে , ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) একবার ফুযাইলকে বললেন যে ,“
তোমরা যখন পরস্পরের সাথে বসো তোমরা কি আমাদের হাদীসগুলো আলোচনা করো ?”
ফুযাইল বললেন ,“
জ্বী , অবশ্যই আমরা তা করি , আমি যেন আপনার জন্য কোরবান হই।”
ইমাম বললেন ,“
যে আমাদের হাদীসগুলো স্মরণ করে অথবা যার উপস্থিতিতে আমাদেরকে নিয়ে আলোচনা হয় এবং একটি মাছির পাখার সমান অশ্রুফোঁটাও তার চোখ থেকে বয় , আল্লাহ তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন , যদি তা নদীর ফেনার সংখ্যার সমানও হয়।”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ১৩
আমার ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে সম্মানিত শেইখ , হাদীসবেত্তাদের উস্তাদ মুহাম্মাদ বিন আলী বিন বাবাওয়েইহ কুম্মি (শেইখ সাদুক্ব) থেকে , তিনি আবি আম্মারাহ (শোকগাথাঁর আবৃত্তিকারক ও গায়ক) থেকে যে , তিনি বলেছেন যে , ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) আমাকে বলেছেন ,“
হে আবু আম্মারাহ , যে ব্যক্তি ইমাম হোসেইন (আ.) এর জন্য কবিতা আবৃত্তি করে এবং পঞ্চাশ জনকে কাঁদায় তার পুরস্কার হলো বেহেশত এবং যে ব্যক্তি ইমাম হোসেইন (আ.) এর জন্য কবিতা আবৃত্তি করে এবং ত্রিশ জনকে কাঁদায় তার পুরস্কার হলো বেহেশত এবং যে ব্যক্তি ইমাম হোসেইন (আ.) এর জন্য কবিতা আবৃত্তি করে এবং বিশ জনকে কাঁদায় তার পুরস্কার হলো বেহেশত এবং যে ব্যক্তি ইমাম হোসেইন (আ.) এর জন্য কবিতা আবৃত্তি করে এবং দশ জনকে কাঁদায় তার পুরস্কার হলো বেহেশত এবং যখন কোন ব্যক্তি ইমাম হোসেইন (আ.) এর জন্য কবিতা আবৃত্তি করে এবং একজনকে কাঁদায় তার পুরস্কার হলো বেহেশত। যখন কোন ব্যক্তি ইমাম হোসেইন (আ.) এর জন্য কবিতা আবৃত্তি করে এবং নিজে কাঁদে , তার পুরস্কার হলো বেহেশত এবং যে-ই ইমাম হোসেইন (আ.) এর জন্য কবিতা আবৃত্তি করে এবং শোকাভিভূত হয় তার পুরস্কার হলো বেহেশত।”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ১৪
ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে যা জাফর বিন ক্বাওলাওয়েইহ কুম্মি পর্যন্ত পৌঁছেছে , তিনি বর্ণনা করেছেন হারুন বিন মূসা তালউকবারি থেকে , তিনি উমার বিন আব্দুল আযীয কাশশি থেকে , তিনি উমার বিন সাবাহ থেকে , তিনি ইবনে ঈসা থেকে , তিনি ইয়াহইয়া বিন ইমরান থেকে , তিনি মুহাম্মাদ বিন সিনান থেকে , তিনি যাইদ বিন শিহাম থেকে , তিনি বলেন যে , আমি ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) এর সামনে কুফা থেকে আসা একদল ব্যক্তির সাথে বসা ছিলাম , যখন জাফর বিন আফফান প্রবেশ করলেন। ইমাম তাকে স্বাগত জানালেন এবং তাকে নিজের কাছে বসার জন্য ইশারা করলেন এবং বললেন ,“
হে জাফর।”
তিনি বললেন ,“
আমি উপস্থিত (আপনার খেদমতে) , আমি যেন আপনার জন্য কোরবান হই।”
ইমাম বললেন ,“
আমি শুনেছি যে তুমি ইমাম হোসেইন (আ.) এর জন্য শোকগাথা গাও এবং তা তুমি খুব ভালোই কর।”
তিনি বললেন ,“
জ্বী , আমি যেন আপনার জন্য কোরবান হই।”
তিনি আবৃত্তি করলেন এবং ইমাম কাঁদতে শুরু করলেন এবং যারা সেখানে উপস্থিত ছিলো তারাও সবাই কাঁদতে শুরু করলো , ঐ পর্যন্ত যখন ইমামের দাড়ি চোখের পানিতে ভিজে গেলো। তখন তিনি বললেন ,“
হে জাফর , আল্লাহর শপথ , আল্লাহর নিকটবর্তী ফেরেশতারা এখানে অবতরণ করেছে এবং তারা ইমাম হোসেইন (আ.) এর জন্য তোমার কবিতা শুনেছে এবং আমাদের মত কেঁদেছে বরং আরও বেশী কেঁদেছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ তোমার জন্য এই মুহূর্তে বেহেশত প্রস্তুত রেখেছেন এবং তোমার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিয়েছেন। হে জাফর , তুমি কি আরও কিছু শুনতে চাও”
?
জাফর হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলেন এবং ইমাম বললেন ,“
এমন কেউ নেই যে ইমাম হোসেইন (আ.) এর জন্য শোকগাঁথা আবৃত্তি করে এবং অন্যদের কাদানোর পাশাপাশি নিজে কাদে যার জন্য আল্লাহ বেহেশত বাধ্যতামূলক করেন না এবং তাকে ক্ষমা করেন না।”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ১৫
পরম্পরাসহ ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে , শেইখ সাদুক্ব বর্ণনা করেন ইবনে মাসরুর থেকে , তিনি ইবনে আমির থেকে , তিনি তার চাচা থেকে , তিনি ইবরাহীম বিন আবি মাহমূদ থেকে , যিনি বলেন যে , ইমাম আলী আল রিদা (আ.) বলেছেন ,“
মহররম একটি মাস যে সময়ে ইসলামপূর্ব মূর্তিপূজক আরবরা রক্তপাত করাকে অন্যায় মনে করতো , কিন্তু আমাদের রক্ত ঝরানো হয়েছে এ মাসে। আমাদের পবিত্রতা লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং শিশু ও নারী সদস্যদের বন্দী করা হয়েছিলো। আমাদের তাঁবুগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিলো এবং সেখানে যা পাওয়া গেছে তাই লুট করা হয়েছিলো এবং তারা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ককেও সম্মান করে নি। যেদিন ইমাম হোসেইন (আ.) কে শহীদ করা হয়েছে সেদিন আমাদের চোখকে আহত করা হয়েছিলো এবং তখন থেকে অবিরাম আমাদের অশ্রু বইছে। দুঃখ ও পরীক্ষা (কারব ও বালা)-এর ময়দানে আমাদের প্রিয়জনদের অসম্মান করা হয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত দুঃখ ও দুর্দশার জন্য পথ করে দিয়েছে। তাই শোকার্ত মানুষের উচিত এর (ইমাম হোসেইন (আ.) এর শাহাদাতের) উপর শোক পালন করা , কারণ এ বিষয়ে কান্না কবিরা গুনাহগুলোকে ক্ষমা করে দেয়।”
এরপর তিনি বললেন ,“
যখন মহররম মাস আসতো , আমার পিতাকে (ইমাম মূসা আল কাযিমকে) কেউ হাসতে দেখতো না দশ তারিখ পর্যন্তএবং তার উপর শোক নেমে আসতো এবং দশম দিন হতো দুঃখ ও শোক এবং বিলাপের দিন এবং তিনি বলতেন: আজ হলো সেই দিন যেদিন ইমাম হোসেইনকে (আ.) অনেকে মিলে হত্যা করেছিলো।”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ১৬
আমার পরম্পরাসহ ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে যা শেইখ সাদুক্ব পর্যন্তপৌঁছেছে , তিনি বর্ণনা করেছেন তালক্বানি থেকে , তিনি আহমাদ হামাদানি থেকে , তিনি আলী বিন হাসান বিন ফাযযাল থেকে , তিনি বর্ণনা করেছেন তার পিতা থেকে যে ইমাম আলী আল রিদা (আ.) বলেছেন ,“
যে ব্যক্তি দশ মহররমের দিনে তারথিপ বীর বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ দেয়া এড়িয়ে যায় আল্লাহ এ পৃথিবীর ও আখেরাতের বিষয়ে তার আশা আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণ করবেন। যে এ দিনটিকে শোক পালন , দুঃখ এবং কাঁদার জন্য গ্রহণ করবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কিয়ামতের দিনটিকে তার জন্য আনন্দ উল্লাসের দিন বানিয়ে দিবেন এবং আমাদের কারণে বেহেশতে তার চোখ দুটোকে প্রশান্তিময় করে দেয়া হবে , আর যে দশ মুহাররমকে সমৃদ্ধির দিন হিসাবে গণ্য করবে এবং তার ঘরের জন্য (কল্যাণ মনে করে) কিছু কিনবে , তাহলে আল্লাহ তাকে সে বিষয়ে কোন সমৃদ্ধি দান করবেন না এবং কিয়ামতের দিন তাকে উঠানো হবে ইয়াযীদ , উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ ও উমার ইবনে সা’
আদ (তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ হোক)-এর সাথে এবং জাহান্নামের সবচেয়ে গভীর গর্তে ফেলা হবে।”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ১৭
পরম্পরাসহ ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে , শেইখ সাদুক্ব বর্ণনা করেছেন রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছ থেকে যে , তিনি বলেছেন , নবী মূসা বিন ইমরান (আ.) আল্লাহর কাছে দোআ করেছিলেন এবং বলেছিলেন ,“
হে আমার রব , আমার ভাই মৃত্যুবরণ করেছে , তাই তাকে ক্ষমা করে দিন”
। তার কাছে ওহী আসলো ,“
হে মূসা , তুমি যদি চাও , আমি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব মানুষকে ক্ষমা করে দিবো শুধু হোসেইনের হত্যাকারীদের ছাড়া , কারণ অবশ্যই আমি তাদের উপর প্রতিশোধ নিবো।”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ১৮
আমার পরম্পরাসহ ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে যা যুক্ত হয়েছে সম্মানিত শেইখ আবুল ক্বাসিম জাফর বিন ক্বাওলাওয়েইহ কুম্মির সাথে , যিনি বর্ণনা করেছেন তার ধারাবাহিক কর্তৃপক্ষসমূহের মাধ্যমে যে , ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) বলেছেন ,“
নবী ইয়াহইয়া (আ.) এবং ইমাম হোসেইন (আ.) দুজনেরই হত্যাকারীরা ছিলো জারজ। আকাশগুলো কখনো কাঁদে নি শুধুমাত্র এ দুজনের শাহাদাতের কারণে ছাড়া।”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ১৯
পরম্পরাসহ ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে , সম্মানিত শেইখ জাফর বিন ক্বাওলাওয়েইহ বর্ণনার্ করেছেন তার ধারাবাহিক কর্তৃপক্ষসমূহের মাধ্যমে দাউদ রাকী থেকে , যিনি বলেন যে , একদিন আমি ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) এর সামনে উপস্থিত ছিলাম যখন তিনি পানি চাইলেন পান করার জন্য । যখন তিনি পান করলেন , তিনি শোকাভিভূত হয়ে পড়লেন এবং তার চোখদুটো অশ্রুপূর্ণ হয়ে গেলো। তিনি বললেন ,“
হে দাউদ , আল্লাহর অভিশাপ পড়ুক ইমাম হোসেইন (আ.) এর হত্যাকারীদের উপর। কোন বান্দাহ (আল্লাহর) নেই যে পানি পান করে এবং হোসেইনকে স্মরণ করে এবং তার শত্রুদের উপর অভিশাপ দেয় আর আল্লাহ তার খাতায় এক লক্ষ নেক কাজ লিপিবদ্ধ করেন না এবং তার এক লক্ষ গুনাহ ক্ষমা করেন না এবং এক লক্ষ বার তার মর্যাদার আসনকে ওপরে উঠান না। তা যেন এমন যে সে এক লক্ষ দাসকে মুক্তি দিয়েছে এবং কিয়ামতের দিন সে পিপাসামুক্ত পূর্ণ তৃপ্ত হিসাবে উঠে দাঁড়াবে।”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ২০
পরম্পরাসহ ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে , সম্মানিত শেইখ আবিরল কাসিম জাফর বিন ক্বাওলাওয়েইহ বর্ণনা করেন সম্মানিত শেইখ , ইসলামের বিশ্বস্ত (কর্তৃপক্ষ) মুহাম্মাদ বিন ইয়াক্বুব কুলেইনি থেকে , তিনি বর্ণনা করেন তার ধারাবাহিক কর্তৃপক্ষসমূহের মাধ্যমে দাউদ বিন ফারক্বাদ থেকে , তিনি বলেন যে , আমি ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) এর বাড়িতে বসেছিলাম , তখন আমরা একটি কবুতরকে (যার নাম ছিলো যাগাবি) গুম গুম আওয়াজ করতে শুনলাম , ইমাম আমার দিকে ফিরলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন ,“
হে দাউদ , তুমি কি জানো এ পাখিটি কী বলছে ?”
আমি না-সূচক উত্তর দিলাম। তিনি বললেন ,“
এটি ইমাম হোসেইনের (আ.) হত্যাকারীদের অভিশাপ দেয় , তাই এ ধরনের কবুতরকে তোমাদের বাড়িগুলোতে পালন করো।”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ২১
পরম্পরাসহ ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে , সুবিখ্যাত পণ্ডিত আয়াতুল্লাহ (আল্লাহর নিদর্শন) আল্লামা হিল্লি বর্ণনা করেছেন তদন্তকারীদের মধ্যে সার্বভৌম খাজা নাসিরুদ্দীন মুহাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ তূসি থেকে , তিনি বিজ্ঞ শেইখ এবং হাদীস বিশারদ বুরহান মুহাম্মাদ বিন আলী হামাদানি ক্বাযভিনি (যিনি রেইশহরে বাস করতেন) থেকে , তিনি সম্মানিত শেইখ মুনতাজাবুদ্দিন আলী বিন উবায়দুল্লাহ বিন হাসান কুম্মি থেকে , তিনি তার পিতা থেকে , তিনি তার পিতার পিতা থেকে , তিনি সম্মানিত শেইখ আবুল ফাতহ মুহাম্মাদ বিন আলী বিন উসমান কারাজাকি থেকে , তিনি মুহাম্মাদ বিন আব্বাস থেকে , তিনি তার ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে হাসান বিন মাহবুব থেকে , তিনি তার ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে সানদুল থেকে , তিনি দারিম বিন ফিরক্বাদ থেকে , তিনি বলেছেন যে , ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) বলেছেন ,“
তোমাদের ফজরের ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক) এবং নফল (অতিরিক্ত) নামাযে সূরা আল ফজর তেলাওয়াত করো , কারণ তা বিশেষভাবে ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথে সম্পর্কিত। তোমরা কি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কথা এ আয়াতে শোন নি: হে পূর্ণ প্রশান্ত আত্মা , তোমার রবের কাছে ফিরে আসো , পূর্ণ সন্তুষ্ট হয়ে (তাঁর প্রতি) , (তাঁকে) পূর্ণ সন্তুষ্ট করে।”
এখানে ইমাম হোসেইন (আ.) কে সম্বোধন করা হয়েছে এ বলে যে , হে পূর্ণ প্রশান্ত আত্মা , পূর্ণ সন্তুষ্ট হয়ে (আল্লাহর প্রতি) এবং তিনি তার প্রতি পূর্ণ সন্তুষ্ট হওয়ার পর।
নবী পরিবারের সদস্যদের মধ্যে থেকে যারা তার সাথী তারাই হলেন যারা কিয়ামতের দিনে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ সন্তুষ্ট থাকবেন এবং আল্লাহও তাদের প্রতি সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট থাকবেন। নিশ্চয়ই এ সূরাটি বিশেষ করে ইমাম হোসেইন (আ.) ও নবী পরিবারের যে সদস্যরা তার সাহাবী ছিলেন তাদের সাথে সম্পর্কিত। যে ব্যক্তি এ সূরাটি প্রতিদিন তেলাওয়াত করে সে বেহেশতে ইমাম হোসেইনের সাথে এবং তার উচ্চ মাকামে থাকবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ একমাত্র ক্ষমতাধর ও সর্বপ্রজ্ঞাবান।
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ২২
পরম্পরাসহ ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে সম্মানিত ও সফলতা লাভকারী শেইখ আবু জাফর তূসী তার ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে মুহাম্মাদ বিন মুসলিম থেকে বর্ণনা করেন যে , আমি ইমাম বাক্বির (আ.) এবং ইমাম জাফর আস সাদিক্বকে (আ.) বলতে শুনেছি যে ,“
নিশ্চয়ই শাহাদাতের পুরস্কার ও ক্ষতিপূরণ হিসেবে আল্লাহ ইমামতকে ইমাম হোসেইন (আ.) এর বংশধরের মধ্যে রেখেছেন , তার কবরের মাটিতে আরোগ্য রয়েছে , তার কবরের মাথার দিকে আশা পূরণ হয় এবং যিয়ারতকারী তার কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার সময় থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত (তার কাছ থেকে) কোন হিসাব নেয়া হবে না।”
ইমাম সাদিক্ব (আ.) কে মুহাম্মাদ বিন মুসলিম জিজ্ঞেস করেছিলেন ,“
এ পুরস্কারগুলো (মানুষের জন্য) ইমামের কারণে , কিন্তু তার জন্য পুরস্কার কী ?”
ইমাম বললেন ,“
নিশ্চয়ই সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে মিলিত করেছেন এবং রাসূলুল্লাহর সাথেই আছেন , তার মর্যাদায় ও তার মাক্বামে।”
এরপর তিনি কোরআনের এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন ,
)
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِإِيمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُم(
“
এবং যারা বিশ্বাস করে এবং তাদের সন্তানদের মধ্যে যারা বিশ্বাসে তাদের অনুসরণ করে , আমরা তাদেরকে তাদের সন্তানদের সাথে মিলিত করবো।”
[সূরা তুর: ২১]
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ২৩
পরম্পরাসহ ধারাবাহিক কর্তৃপক্ষসমূহের মাধ্যমে , সম্মানিত শেইখ আবুল ক্বাসিম জাফর বিন সাঈদ (মুহাক্কিক হিল্লি) বর্ণনা করেছেন সম্মানিত সাইয়েদ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আলী বিন যুহরা হোসেইনি হালাবি (তার কবর সুগন্ধিযুক্ত হোক) থেকে , তিনি বিজ্ঞ হাদীসবেত্তা , জাতির ও ধর্মের সঠিক পথপ্রদর্শক মুহাম্মাদ বিন আলী বিন শাহর আশোব সারাউই থেকে , তিনি উদ্ধৃতি দিয়েছেন সম্মানিত শেইখ আহমাদ বিন আবু তালিব তাবারসির কিতাব‘
ইহতিজাজ’
-এর একটি দীর্ঘ হাদীস থেকে যা সা’
আদ বিন আব্দুল্লাহ আশ’
আরির সাথে ইমাম আল মাহদী (আল্লাহ তার আগমন ত্বরান্বিত করুন)-এর সাক্ষাৎ সম্পর্কে , যেখানে সা’
আদ ইমাম আল মাহদী (আ.) কে সূরা আল মারইয়ামের , কাফ , হা , ইয়া , আইন , সোয়াদ-এর অর্থ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। ইমাম বলেছিলেন , এই শব্দগুলো হল গোপন সাংকেতিক চিহ্ন যে সম্পর্কে আল্লাহা তার বান্দাহ নবী যাকারিয়া (আ.) কে জানিয়েছিলেন এবং এ সম্পর্কে নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর কাছে ওহী এসেছিলো। ঘটনাটি ছিলো এরকম: নবী যাকারিয়া (আ.) তার রবকে অনুরোধ করেছিলেন পবিত্র পাঁচ জনের নাম শিক্ষা দিতে , এতে জিরবাঈল অবতরণ করলেন এবং তাকে পাঁচ জনের নাম শিক্ষা দিলেন। যখন নবী যাকারিয়া (আ.) চার জনের নাম মুহাম্মাদ (সা.) , আলী (আ.) , ফাতিমা (আ.) , এবং হাসান (আ.) এর নাম বলতেন তখন তার অন্তর আলোকিত হয়ে উঠতো এবং তার দুঃখ দূর হয়ে যেতো কিন্তু যখন তিনি হোসেইন (আ.) এর নাম নিতেন তখন তিনি দুঃখ পূর্ণ হয়ে যেতেন এবং অস্থির হয়ে উঠতেন। একদিন তিনি সর্বশক্তিমান আল্লাহকে জিজ্ঞেস করলেন ,“
হে আমার রব , যখন আমি এ চার জন পবিত্র ব্যক্তির নাম উচ্চারণ করি আমার দুঃখ দূর হয়ে যায় , কিন্তু যখন হোসেইনের নাম নেই , আমি শোকাভিভূত হয়ে যাই , কাঁদি ও বিলাপ করি।”
তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তার কাছে ওহী পাঠালেন‘
কাফ , হা , ইয়া , আইন ও সোয়াদ’
সম্পর্কে। (কাফ)-এ কারবালা , এবং (হা)-তে হালাকাত (ধ্বংস) নবী বংশের ধ্বংস , (আইন)-এ আতাশ বা পিপাসা এবং (সোয়াদ)-এ সবর যা হলো হোসেইনের ধৈর্য ও সহনশীলতা। যখন নবী যাকারিয়া তা শুনলেন তিনি এতো শোকার্ত হলেন যে তিন দিন পর্যন্ত তার ইবাদতখানা থেকে বের হতে অস্বীকার করলেন এবং কোন ব্যক্তিকে অনুমতি দিলেন না তার সাথে সাক্ষাৎ করতে এবং নিদারুণ শোকাভিভূত হয়ে রইলেন এবং অনেক কাঁদলেন এবং তিনি এ শোকগাঁথাটি আবৃত্তি করলেন ,“
হে আমার রব , তুমি কি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে তার সন্তানের দুঃখ-কষ্ট দেখতে দিবে ? হে আমার রব , তুমি কি আলী ও ফাতিমাকে শোকের পোষাক পরাবে এবং তারা কি এ মহাবিপর্যয় প্রত্যক্ষ করবে ?”
তিনি (নবী যাকারিয়া) সব সময় বলতেন ,“
হে আমার রব , আমাকে এমন একটি সন্তান দান করো যে আমার বৃদ্ধ বয়সে আমার চোখের আলো হবে এবং যখন তুমি আমাকে একটি সন্তান দিবে তখন তার প্রতি আমার প্রচণ্ড ভালোবাসা সৃষ্টি করো এবং এরপর আমাকে তাকে হারানোর শোক অনুভব করতে দিও যেমন অনুভব করবেন তোমার হাবীব মুহাম্মাদ (সা.) , যিনি তার সন্তানের মৃত্যুতে শোকাভিভূত হবেন।”
এরপর আল্লাহ নবী যাকারিয়া (আ.) কে একটি সন্তান ইয়াহইয়া (আ.) কে দান করলেন , যার শাহাদাতে নবী যাকারিয়া শোক পালন করলেন। নবী ইয়াহইয়া (আ.) এর (মায়ের) গর্ভকালীন মেয়াদ ছিলো ছয় মাস , ঠিক যেমনটি ছিলো ইমাম হোসেইন (আ.) এর বেলায়।
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ২৪
ধারাবাহিক কর্তৃপক্ষসমূহের মাধ্যমে যা পৌঁছেছে ইসলামের স্তম্ভ শেইখ সাদুক্ব পর্যন্ত , যিনি তার ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে আবিল জারুদ থেকে বর্ণনা করেছেন , তিনি বলেছেন , ইমাম মুহাম্মাদ বাক্বির (আ.) বলেছেন যে , একদিন পবিত্র নবী মুহাম্মাদ (সা.) তার স্ত্রী , মুমিনদের মাতা , উম্মে সালামা (আ.) এর ঘরে ছিলেন এবং তিনি তাকে বললেন তিনি যেন তার সাথে কাউকে সাক্ষাৎ করতে অনুমতি না দেন। ইমাম হোসেইন (আ.) , যিনি সে সময়ে শিশু ছিলেন , সেখানে প্রবেশ করলেন এবং ছুটে নবীর কাছে গেলেন। উম্মে সালামা (আ.) তাকে অনুসরণ করলেন এবং দেখলেন ইমাম হোসেইন নবীর বুকের ওপর বসে আছেন আর নবী কাঁদছেন। তার হাতে কিছু একটা ছিল যেটার উপর দিককে তিনি নিচের দিকে রেখেছিলেন। এরপর তিনি বললেন ,“
হে উম্মে সালামা , জিবরাঈল আমার কাছে এলো এবং আমাকে সংবাদ দিলো যে আমার হোসেইনকে শহীদ করা হবে এবং এ মাটি হলো তার শাহাদাতের স্থান। এটি তোমার কাছে সংরক্ষণ করে রাখো , আর যেদিন এ মাটি রক্তে পরিণত হয়ে যাবে , জানবে যে হোসেইনকে শহীদ করা হয়েছে।”
উম্মে সালামা বললেন ,“
হে আল্লাহর নবী , আল্লাহর কাছে দোআ করেন যেন হোসেইন এ মুসিবত থেকে রক্ষা পায়।”
নবী জাবাব দিলেন ,“
হ্যাঁ , আমি এর জন্য আল্লাহর কাছে দোআ করেছিলাম , কিন্তু আমার কাছে আল্লাহ ওহী পাঠিয়েছেন এবং প্রকাশ করেছেন যে তার শাহাদাতের মাধ্যমে তাকে একটি মর্যাদায় ভূষিত করা হবে যার কাছাকাছি যাওয়া অন্য কারো জন্য সম্ভব হবে না। আর তার থাকবে এমন শিয়া (অনুসারী) যারা (কিয়ামতের দিনে) শাফায়াত করতে পারবে এবং তাদের শাফায়াত (সুপারিশ) গ্রহণ করা হবে এবং মাহদী হবে তার বংশ থেকে। তাই কতই না ভালো তাদের জন্য যারা হোসেইনের সাথে বন্ধুত্ব করবে এবং তার অনুসারীদের অন্তর্ভূক্ত হবে কারণ অবশ্যই কিয়ামতের দিন তারা সফলকাম হবে।”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ২৫
শেইখ সাদুক্ব , যার কাছে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর ধারা পৌঁছেছে , তিনি ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) থেকে বর্ণনাকারীদের ধারার মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন যে , তিনি (কোরআনের এ আয়াত সম্পর্কে) বলেছেন ,
)
وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِسْمَاعِيلَ إِنَّهُ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُولًا نَبِيًّا(
“
এবং কিতাবে ইসমাঈলের স্মরণ কর , নিশ্চয়ই সে (তার) প্রতিশ্রুতিতে সত্যবাদী ছিলো এবং সে ছিলো একজন রাসূল , একজন নবী। ” [সূরা মারইয়াম: ৫৪]
আল্লাহ কিতাবে যে ইসমাঈলের উল্লেখ করেছেন তিনি নবী ইবরাহীম (আ.) এর ছেলে নবী ইসমাঈল (আ.) নন , তিনি আল্লাহর নবীদের মধ্যে অন্য আরেকজন নবী। তিনি তার জাতি থেকে আল্লাহর বাছাইকৃত ছিলেন , তারা তাকে এমন নির্যাতন করেছিলো যে তার মাথা ও মুখের চামড়া তুলে ফেলেছিলো। একজন ফেরেশতা তার ওপর নাযিল হয়েছিলো এবং বলেছিলো ,“
মহিমান্বিত আল্লাহ আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। আপনার মন যা চায় তা আপনি চাইতে পারেন। ” জবাবে নবী বলেছিলেন ,“
হোসাইনের ওপর যা ঘটানো হবে তার জন্য আমি ব্যথিত। ”
হাদীস (
রেওয়ায়েত
)নং
:২৬
শেইখুত তাইফা (তূসী) , যার কাছে আমার নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের ধারা পৌঁছেছে , তিনি পবিত্র নবী (সা.) এর স্ত্রী যায়নাব বিনতে জাহাশ থেকে বর্ণনাকারীদের ধারায় বর্ণনা করেছেন যে , তিনি বলেছেন , একদিন নবী (সা.) আমার ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন , তখন ইমাম হোসেইন (আ.) সেখানে প্রবেশ করলেন। আমি তাকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করলাম যেন তিনি নবীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে না ফেলেন। এরপর আমি কাজে মগ্ন হয়ে গেলাম এবং যেখানে নবী ঘুমাচ্ছিলেন হোসেইন সে ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি তাকে অনুসরণ করলাম এবং দেখলাম যে তিনি পবিত্র নবীর ওপরে শুয়ে আছেন এবং তার বুকের উপর প্রস্রাব করেছেন। আমি তাকে তুলতে চেষ্টা করলাম , কিন্তু নবী বললেন ,“
হে যায়নাব , সে শেষ না করা পর্যন্ত তাকে ছেড়ে দাও। ”
যখন তিনি শেষ করলেন , নবী উঠে গেলেন এবং নিজেকে পবিত্র করলেন এবং নামায পড়া শুরু করলেন। যখনই তিনি সিজদায় গেলেন , হোসেইন তার পিঠে বসলেন। হোসেইন যতক্ষণ পর্যন্তনা তার পিঠ থেকে নামলেন , নবী সিজদাতেই থাকলেন। এরপর যখন তিনি উঠলেন , হোসেইন আবার ফেরত এলেন এবং নবী তাকে তুলে নিলেন। যখন তিনি তার নামায শেষ করলেন , তিনি তার হাত সামনের দিকে প্রসারিত করলেন এবং বললেন ,“
কাছে আসো , কাছে আসো , হে জিবরাঈল।”
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম ,“
হে রাসূলুল্লাহ , আজ আমি আপনাকে এমন কিছু করতে দেখলাম যা আপনি আগে কখনও করেন নি।”
জবাবে নবী বললেন ,“
হ্যাঁ জিবরাঈল আমাকে সমবেদনা জানাতে এসেছিলো এবং আমাকে বললো যে আমার উম্মত আমার হোসেইনকে হত্যা করবে এবং সে তার সাথে আমার জন্য লাল বালি এনেছিলো।”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ২৭
সম্মানিত শেইখ আবুল কাসিম জাফর বিন ক্বাওলাওয়েইহ কুম্মি , যার কাছে নির্ভযোগ্য বর্ণনাকারীদের ধারা পৌঁছেছে , তিনি ইমাম আলী বিন আবি তালিব (আ.) থেকে বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিকতায় বর্ণনা করেছেন যে , একদিন পবিত্র নবী মুহাম্মাদ (সা.) আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। আমি তার জন্য কিছু খাবার কিনেছিলাম যা উম্মে আয়মান আমাদের জন্য উপহার হিসেবে এনেছিলো অর্থাৎ এক বাটি খেজর , এক কাপ দুধ এবং এক বাটি মাখন , যেন তিনি তা থেকে খেতে পারেন। যখন তিনি খাওয়া শেষ করলেন , আমি ধোয়াবার জন্য তার হাতে পানি ঢালতে উঠলাম। যখন তিনি ধোয়া শেষ করলেন , তার ভেজা হাতগুলো তার রহমতপূর্ণ চেহারায় আর দাড়িতে ঘষলেন। এরপর তিনি ঘরের এক কোণায় নামাযের জায়গায় গেলেন এবং সেজদায় গেলেন এবং অনেক সময় ধরে কাঁদলেন। এরপর তিনি তার মাথা উঠালেন এবং আমাদের কারোরই সাহস হলো না তার কাছে যাওয়ার ও কারণ জানতে চাওয়ার। হোসেইন উঠলেন এবং কাছে গেলেন এবং আল্লাহর নবীর উরুর ওপরে বসলেন এবং তার মাথা তার বুকেবর উপর রাখলেন এবং তার চোয়ালকে তার মাথার সাথে রাখলেন এবং বললেন ,“
হে প্রিয় নানা , কেন আপনি কাঁদেন ?”
নবী জবাব দিলেন ,“
আমি তোমাদের সবার দিকে তাকালাম এবং আমি এতোটাই খুশী আর সন্তুষ্ট ছিলাম যে এর আগে এতো আনন্দিত আর কখনই হই নি। এরপর জিবরাঈল নাযিল হলো এবং আমাকে জানালো যে তোমাদের সবাইকে শহীদ করা হবে এবং তোমাদের কবরগুলো হবে একটি থেকে অন্যটি অনেক দূরে। সুতরাং আমি আল্লাহকে ধন্যবাদ দিলাম যা আপতিত হবে (তোমাদের ওপরে) এবং তোমাদের ভালো চাইলাম। ”
হোসেইন বললেন ,“
তাহলে হে নানা , এতো দূরে কারা আমাদের কবরগুলো দেখাশোনা করবে এবং যিয়ারত করবে ?”
এর জবাবে নবী বললেন ,“
আমার উম্মতের মধ্য থেকে তারাই তোমাদের কবর যিয়ারতে আসবে যারা আমার সন্তুষ্টি ও বন্ধুত্ব লাভের আশা করে। আর তাই (কিয়ামতের) হিসাবের স্থানে আমি তাদের সাহায্য করতে যাবো এবং তাদের হাত ধরবো এবং সে দিনের দুর্ভোগ ও ভয় থেকে তাদেরকে পরিত্রাণ দেবো। ”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ২৮
সম্মানিত শেইখ মুফীদ , আমার নির্ভরযোগ্য বর্ণনারীদের ধারাবাহিকতায় , তার ইরশাদ (গ্রন্থে) আওযাঈ থেকে , তিনি আব্দুল্লাহ বিন শাদ্দাদ থেকে , তিনি উম্মুল ফাযল বিনতে হুরেইস থেকে বর্ণনা করেছেন , তিনি বলেছেন , একদিন আমি পবিত্র নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর কাছে গেলাম এবং বললাম ,“
হে আল্লাহর নবী , আজ রাতে আমি একটি খুব খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। ” নবী সেটি কী জানতে চাইলেন। আমি বললাম যে , এটি আমার জন্য খুবই কঠিন ব্যাপার। আমাকে তিনি আবার সেটি তাকে বলার জন্য বললেন। আমি বললাম ,“
আমি দেখলাম যে , আপনার শরীরের একটি অংশ কেটে গিয়ে আমার কোলে পড়লো। ” নবী জবাব দিলেন ,“
তা ঠিক আছে , কারণ নিশ্চয়ই আমার ফাতিমা (আ.) একটা ছেলে সন্তান জন্ম দিবে এবং তখন তুমি হবে তার ধাত্রী। ”
অতএব ইমাম হোসেইন (আ.) জন্ম নিলেন এবং আমার কোলে শুলেন যেমনটি নবী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। একদিন আমি তাকে নবীর কাছে নিলাম। হঠাৎ আমি তার চোখের দিকে তাকালাম এবং দেখলাম তা অশ্রুতে ভরে গেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম ,“
আমার বাবা-মা আপনার জন্য কোরবান হোক , হে আল্লাহর নবী , আপনার কি হয়েছে ?”
তিনি জবাব দিলেন ,“
জিবরাঈল আমার কাছে আসলো আর জানালো যে আমার উম্মতের মধ্য থেকে লোকেরা আমার এ সন্তানকে হত্যা করবে , আর সে (তার শাহাদাতের জায়গার মাটি থেকে) লাল রঙের বালি এনেছে। ”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ২৯
আমার নির্ভরযোগ্য (হাদীস) বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিকতায় , শেইখ মুফীদ তার ইরশাদ (গ্রন্থে) (মুমিনদের মা) উম্মে সালামা (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেন , এক রাতে পবিত্র নবী (সা.) আমাদের মাঝ থেকে দূরে ছিলেন এবং বেশ অনেক সময় ধরে ফিরে আসেন নি। যখন তিনি ফিরে এলেন তার চুল ছিলো এলোমেলো এবং তিনি ধুলায় ধুসরিত ছিলেন আর তার এক হাতের তালু মুঠ করা ছিলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম ,“
হে আল্লাহর নবী , কি হয়েছে যে আমি আপনাকে বিচলিত এবং ধুলায় ভরা দেখতে পাচ্ছি ?”
নবী জবাব দিলেন ,”
আমাকে ইরাকের এক জায়গায় নেয়া হয়েছিলো যাকে কারবালা বলা হয় এবং আমাকে দেখানো হয়েছে সেই জায়গা যেখানে আমার সন্তান হোসেইন ও আমার পরিবারের অন্য সদস্যদেরকে এবং বাচ্চাদেরকে হত্যা করা হবে। আমি তাদের রক্ত (লাল বালি) জড়ো করেছি এবং তা এখানে আমার হাতে। ” এরপর তিনি তার হাতের তালু মেলে ধরলেন এবং বললেন ,“
এটি নাও এবং তোমার কাছে এটি সংরক্ষণ করো। ” আমি তা তার কাছ থেকে নিলাম আর দেখলাম যে এটি লাল রঙের বালি। আমি তা একটি বোতলে রেখে দিলাম এবং এর মুখ সীলগালা করে রাখলাম , আর তা আমার সাথে সংরক্ষণ করলাম। যখন হোসেইন মক্কা ছেড়ে ইরাকের দিকে রওনা দিলো , আমি প্রতিটি দিন আর রাত বোতলটি বের করতাম , এর ঘ্রাণ নিতাম এবং এর দিকে তাকাতাম আর কাঁদতাম সেই যন্ত্রণার জন্য যা তার উপর পড়বে। এরপর ১০ই মহররম , সেই দিন যেদিন হোসেইনকে শহীদ করা হয়েছিলো , আমি এটি বের করলাম সকালের শুরুর দিকে আর এটি এক রকমই ছিলো। এরপর যখন আমি এটি দিনের শেষের দিকে বের করলাম , আমি দেখতে পেলাম যে তা (কারবালার বালি) পুরোপুরি রক্তে পরিণত হয়ে গেছে। আমি শোকে মুহ্যমান হয়ে গেলাম এবং হাহাকার করা শুরু করলাম কিন্তু এটি আমি গোপন রাখলাম পাছে মদীনার শত্রুরা জেনে যায় আর এতে দ্রুত ফুর্তি শুরু করে দেয়। সেই দিন থেকে আমি এ দুঃখকে আমার অন্তরে গোপন করলাম সেই সময় ও সেই দিন পর্যন্ত যখন তার শাহাদাতের খবর মদীনায় পৌঁছে গেলো আর এভাবেই এটির সত্যতা প্রমাণিত হলো।
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ৩০
শেইখ মুফীদ , যার কাছে আমার নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের ধারা পৌঁছেছে , তিনি তার ইরশাদ (গ্রন্থে) বর্ণনা করেছেন যে একদিন পবিত্র নবী মুহাম্মাদ (সা.) বসেছিলেন এবং ইমাম আলী (আ.) , হযরত ফাতিমা (আ.) , ইমাম হাসান (আ.) এবং ইমাম হোসেইন (আ.) তার চারপাশে বসে ছিলেন। নবী তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন ,“
তোমাদের অবস্থা কী হবে যখন তোমাদের সবাইকে হত্যা করা হবে এবং তোমাদের কবরগুলো ছড়িয়ে পড়ে থাকবে ?”
ইমাম হোসেইন (আ.) বললেন ,“
আমরা কি সাধারণভাবে মারা যাবো নাকি আমাদেরকে শহীদ করা হবে ?”
নবী জবাব দিলেন ,“
হে আমার প্রিয় সন্তান , অত্যাচার আর নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে তোমাকে হত্যা করা হবে , আর তোমার ভাইও (হাসান) নিপীড়ন ও নিষ্ঠুরতার মাঝে নিহত হবে , আর তোমার সন্তান-সন্ততিকে পৃথিবীতে বিক্ষিপ্ত করে দেয়া হবে। ”
হোসেইন জিজ্ঞাসা করলেন ,“
কে আমাদেরকে হত্যা করবে , হে আল্লাহর নবী ?”
তিনি জবাব দিলেন ,“
মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্টরা। ”
এরপর হোসেইন জানতে চাইলেন ,“
তাহলে আমাদের মৃত্যুর পর কেউ কি আমাদের (কবর) যিয়ারতে আসবে ?”
নবী জবাব দিলেন ,“
হ্যাঁ , আমার প্রিয় সন্তান , আমার সম্প্রদায় থেকে একদল লোক আমার সন্তুষ্টির জন্য তোমাদের কবর যিয়ারতে আসবে। এরপর কিয়ামতের দিনে হিসাবের সময় আমি তাদের কাছে যাবো এবং তাদের হাত ধরার মাধ্যমে তাদেরকে এর আতঙ্ক ও দুঃখ থেকে রক্ষা করবো। ”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ৩১
নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিকতায় আল্লামা মাজলিসি তার‘
বিহারুল আনওয়ার ’ (গ্রন্থে) উল্লেখ করেছেন যে ,‘
দারুস সামীন ’ (গ্রন্থের) লেখক কোরআনে নিম্নলিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন ,
)
فَتَلَقَّى آدَمُ مِنْ رَبِّهِ كَلِمَاتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ(
“
এরপর আদম তার রবের কাছ থেকে বাণী গ্রহণ করলো , আর আল্লাহ তার দিকে (ক্ষমাশীল হয়ে) ফিরলেন। ” [সূরা বাকারা: ৩৭]
(তিনি লিখেছেন) যে , নবী আদম (আ.) আরশের ভিতে নবী মুহাম্মাদ (সা.) ও ইমামদের (আ.) নাম লেখা দেখতে পেলেন আর জিবরাঈল তাকে নির্দেশনা দিলেন বলার জন্য:“
হে মহাপ্রশংসিত (হামিদ) , মুহাম্মাদের (সা.) সত্যতার মাধ্যমে ; হে সর্বোচ্চ (আলা) , আলীর সত্যতার মাধ্যমে ; হে সৃষ্টিকর্তা (ফাতির) , ফাতিমার সত্যতার মাধ্যমে ; হে (মুহসীন) , হাসান এবং হোসাইনের সত্যতার মাধ্যমে এবং ভালো তো আপনার কাছ থেকেই। ” যখন আদম হোসাইনের নাম উচ্চারণ করলেন , তার চোখ অশ্রুতে ভরে গেলো এবং তার অন্তরে ছিলো ব্যথা। আদম জিবরাঈলকে বললেন ,“
হে ভাই জিবরাঈল , যখন আমি পঞ্চম জনের নাম নিলাম , আমার চোখ অশ্রুতে ভরে গেলো আর আমার হৃদয় টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। ”
জিবরাঈল জবাব দিলেন ,“
তোমার এ সন্তান (হোসেইন)-কে এমন দুর্ভোগ ঘিরে ধরবে যে অন্য সব দুর্দশাকে এর সাথে তুলনা করলে অনেক ছোট ও কম মনে হবে। ” নবী আদম জিবরাঈলকে জিজ্ঞাসা করলেন কী সেই দুর্ভোগ , উত্তরে জিবরাঈল বললেন ,“
তাকে হত্যা করা হবে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় , অসহায় অবস্থায় এবং একজন নিঃসঙ্গ মুসাফির অবস্থায়। তার কোন বন্ধু , কোন সাহায্যকারী থাকবে না। তুমি যদি তাকে দেখতে চিৎকার করছে: হে তৃষ্ণা! হে নিঃসঙ্গতা! এবং তার তৃষ্ণা যেন তার ও আসমানগুলোর মাঝে ধোঁয়া হয়ে ছড়াবে। মৃত্যুর বৃষ্টি আর তরবারি ছাড়া কেউ তার ডাকে সাড়া দেবে না এবং তাকে ভেড়ার মত ঘাড়ের পেছন দিক থেকে জবাই করা হবে। শত্রুরা তার তাঁবুগুলো থেকে তার জিনিসপত্র ডাকাতি করবে এবং তার পবিত্র মাথা তার পরিবারের (বন্দী) নারীদের মাঝখানে এবং তার (ঘরের বন্দী হওয়া) মহিলাদের মাঝখানে তার সাথীদের মাথাগুলো বর্শার আগায় (বিদ্ধ) করে শহরগুলোতে প্রদর্শন করা হবে। এটি তোমার রবের জ্ঞানের মাঝে প্রকাশ পেয়েছে। ” তখন নবী আদম আর জিবরাঈল দুজনেই কাঁদতে লাগলেন যেভাবে তা একজন মা তার সন্তান হারানোতে কাদতে থাকে।
অন্যান্য নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় এসেছে যে , ঈদের দিনে ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হোসেইন (আ.) তাদের নানা , আল্লাহর নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর বাসায় প্রবেশ করলেন এবং বললেন ,“
হে নানা , আজকে ঈদের দিন এবং আরবদের ছোট বাচ্চারা নতুন ও রঙীন জামা পরেছে যখন আমাদের কোন নতুন জামা নেই , তাই আমরা আপনার কাছে এসেছি। ”
নবী তাদের অবস্থার কথা ভেবে দেখলেন এবং কাদলেন , কারণ তাদের জন্য উপযক্ত কোন জামা তার কাছে নেই আর তার কোন ইচ্ছাই ছিলো না তাদেরকে হতাশ ও ভগ্ন হৃদয় নিয়ে ফেরত পাঠাতে। তিনি তার হাত ওপরে উঠালেন আর দোআ করলেন ,“
হে আল্লাহ , তাদের ও তাদের মায়ের হৃদয়কে সন্তুষ্ট করে দিন। ”
হঠাৎ জিবরাঈল বেহেশতের জামাগুলো থেকে দুটো সাদা জামা নিয়ে অবতরণ করলেন। নবী অনেক আনন্দিত হলেন এবং বললেন ,“
হে বেহেশতের যুবকদের নেতারা , এ পোষাকগুলো নাও যা তোমাদের মাপ অনুযায়ী (আল্লাহর পক্ষ থেকে) দর্জির মাধ্যমে সেলাই করা আছে। ”
দুজন ইমামই দেখলেন জামা দুটো সাদা রঙের আর তাই বললেন ,“
হে নানা , এগুলোতো সাদা রঙের , যখন আরব শিশুরা রঙীন পোষাক পড়েছে , আমরা কিভাবে পড়বো ?”
নবী তার মাথা নিচু করলেন এবং তা নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করলেন , তখন জিবরাঈল বললেন ,“
হে মুহাম্মাদ (সা.) , আনন্দ করুন আর চোখ জুড়ান। ঐশী রঙ দিয়ে যিনি রঙীন করেন সেই শক্তিমান তাদের ইচ্ছা পূরণ করবেন এবং তাদেরকে সে সব রঙ দিয়ে খুশী করে দেবেন যা তারা চায়। তাই হে নবী , একটা জগ আর একটা পাত্র আনতে আদেশ করুন। ” একটি পাত্র আনা হলো আর জিবরাঈল বললেন ,“
হে আল্লাহর নবী , আমি জামাগুলোর উপর পানি ঢালবো আর আপনি নিংড়াবেন যতক্ষন পর্যন্তনা ইচ্ছামত রঙ হয়। ”
নবী ইমাম হাসান (আ.) এর জামাটা ভিজালেন আর বললেন ,“
তুমি কোন রঙ চাও ?”
ইমাম হাসান (আ.) জবাবে বললেন যে তিনি সবুজ রঙ বেশী পছন্দ করেন আর তাই নবী তার নিজের হাত দিয়ে জামাটা ঘষলেন যেটার রঙ আল্লাহ ইচ্ছায় ও আদেশে পান্নার মত উজ্জ্বল সবুজ রঙে পরিণত হলো। এরপর তিনি তা ইমাম হাসান (আ.) কে দিলেন যা তিনি পরে নিলেন। এরপর জিবরাঈল অন্য জামাটা নিলেন এবং পাত্রে পানি ঢালা শুরু করলেন। নবী এবার ইমাম হোসেইন (আ.) এর দিকে ফিরলেন , তার বয়স তখন ছিলো পাঁচ বছর , এবং জিজ্ঞেস করলেন ,“
হে আমার চোখের আলো , তুমি কোন রঙ চাও ?”
উত্তরে ইমাম হোসেইন বললেন যে তিনি লাল রঙ বেশী পছন্দ করেন। নবী আবার জামাটি তার নিজের মহিমান্বিত হাত দিয়ে ঘষলেন আর তা রুবী পাথরের মত উজ্জ্বল লাল রঙে পরিণত হলো। এরপর তিনি এটি ইমাম হোসেইন (আ.) এর হাতে তুলে দিলেন এবং তিনিও সেটা পড়ে নিলেন। পবিত্র নবী আর দুই ইমামই অনেক খুশী হলেন আর তারা তাদের মায়ের কাছে ফিরে গেলেন। যখন জিবরাঈল এটি দেখলেন তিনি কান্না শুরু করে দিলেন। নবী বললেন ,“
হে ভাই জিবরাঈল , এটি তো শোকের দিন নয় যখন আমার ছেলেরা আনন্দ করছে , আর তারা খুশী। আল্লাহর শপথ , দয়া করে তোমার দুঃখের কারণ আমাকে জানতে দাও। ”
জিবরাঈল জবাব দিলেন ,“
আমি শোক করছি কারণ আপনার ছেলেরা প্রত্যেকে একটি করে রঙ বেছে নিয়েছে। আপনার ছেলে হাসানের ক্ষেত্রে তাকে বিষ দেয়া হবে আর এর প্রভাবের ফলে তার শরীর সবুজ হয়ে যাবে। আর আপনার ছেলে হোসেইনের ক্ষেত্রে , তলোয়ারের মাধ্যমে তাকে হত্যা করা হবে। আর তার মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হবে যখন তার শরীর লাল রক্তে ঢেকে যাব ।”
এটি শুনে নবী কাঁদতে শুরু করলেন আর তার দুঃখ বেড়ে গেলো।
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ৩২
বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিকতা , যা শেইখ সাদুক্ব পর্যন্ত পৌঁছেছে , তার মাধ্যমে তিনি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে , তিনি বলেছেন , আমি আমিরুল মুমিমনীন ইমাম আলী (আ.) এর সাথে ছিলাম যখন আমরা সিফফীন এর দিকে যাচ্ছিলাম। ফোরাত নদীর তীরে যখন আমরা নাইনাওয়াহ অতিক্রম করছিলাম , ইমাম আলী উচ্চ স্বরে বললেন ,“
হে ইবনে আব্বাস , তুমি কি এ জায়গা চিনতে পেরেছো ?”
আমি না-বোধক জবাব দিলাম। ইমাম বলতে লাগলেন ,“
আমি যা জানি তা যদি তুমি জানতে তাহলে তুমি না কেঁদে এ জায়গা থেকে নড়তে না। ”
এরপর ইমাম আলী (আ.) এতো কাঁদলেন যে তার দাড়ি ভিজে গিয়েছিলো এবং চোখের পানি তার বুকের উপর পড়ছিলো , আর আমিও কাঁদতে শুরু করলাম । তিনি উচ্চকণ্ঠে বলতে শুরু করলেন ,“
হায়! আমার কাছে আবু সুফিয়ান আর হারব কি চায় যে তারা একদল শয়তান হয়ে অবিশ্বাসের বন্ধু হয়েছে ? হে আবা আব্দিলাহ (ইমাম হোসেইন) , ধৈর্য আর সহনশীলতায় অবিচল থেকো। তোমার বাবা সব দেখতে পাচ্ছেন যা তোমার উপর আপতিত হবে। ”
এরপর তিনি পানি চাইলেন এবং অযু করলেন , আর যতক্ষণ চাইলেন নামায পড়লেন এবং এরপর আগে যা বলেছিলেন তা আবার বললেন। শেষ করে তিনি কিছু সময় ঘুমালেন , আর এরপর ঘুম থেকে উঠলেন এবং আমাকে ডাকলেন। আমি বললাম ,“
এই যে আমি আপনার খেদমতে আছি , হে মুমিনদের সর্দার।”
ইমাম আলী (আ.) বললেন ,“
আমি কি তোমাকে বলবো না আমি এখন স্বপ্নে কী দেখলাম ?”
আমি বললাম ,“
নিশ্চয়ই আপনি ঘুমিয়েছিলেন , আর আপনার স্বপ্ন ন্যায়সঙ্গত ও সত্য হবে , হে মুমিনদের নেতা। ” ইমাম আলী (আ.) বললেন ,“
আমি স্বপ্নে দেখলাম যে কিছু লোক সাদা পতাকা নিয়ে এবং উজ্জ্বল , চকচকে তলোয়ারে সজ্জিত হয়ে আসমান থেকে অবতরণ করলো এবং মাটিতে একটি দাগ টেনে দিলো। আমি দেখলাম যে খেজুর গাছের শাখা মাটি ছুঁয়ে যাচ্ছে আর তাদের থেকে লাফিয়ে রক্ত ঝরছে এবং আমি দেখলাম আমার প্রিয় সন্তান এবং আমার চোখের আলো হোসেইন রক্তে ঢাকা পড়ে আছে আর সাহায্যের জন্য চিৎকার করে ডাকছে কিন্তু কেউই তাকে সাড়া দিলো না। আসমান থেকে আসা লোকগুলো তাকে ডেকে বলছে: হে নবীর বংশ , ধৈর্য আর সহনশীলতায় অবিচল থাকো , কারণ তুমি সবচেয়ে অভিশপ্ত লোকের হাতে নিহত হবে। হে আবা আব্দিলাহ (ইমাম হোসেইন) , বেহেশত তোমার জন্য অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষা করছে। এরপর তারা আমাকে সান্ত্বনা দিলেন এবং বললেন: হে আবুল হাসান , তোমার প্রতি সুসংবাদ , কারণ কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তার জন্য তোমার চোখকে জুড়িয়ে দেবেন। আর এরপর তুমি দেখলে যে আমি জেগে গেলাম। তাঁর শপথ , যার হাতে আলীর জীবন! সততায় সবোৎকৃষ্ট আবুল ক্বাসিম (পবিত্র নবী) আমাকে বলেছিলেন যে আমি এ বিস্তীর্ণ এলাকায় আসবো যখন আমি বিদ্রোহী আর অনিষ্টকর লোকদের সাথে যুদ্ধ করতে যাবো। আর এ বিস্তীর্ণ এলাকাই কারবালা নামে পরিচিত যেখানে হোসেইনের সাথে আমার আর ফাতিমার বংশের সতেরো জনকে দাফন করা হবে। আর এ জায়গাটি আসমানেও সুপরিচিত। এ কারব (কষ্ট) ও বালা (মুসিবত)-এর জায়গাটি সেভাবে উল্লেখ করা হবে যেভাবে দুই হারাম (কা‘
বা এবং নবীর মসজিদ) এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের উল্লেখ করা হবে। ”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ৩৩
শেইখ সাদুক্ব , যার কাছে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের ধারা পৌঁছেছে , তিনি তার নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিকতায় হারসামাহ বিন আবি মুসলিম থেকে বর্ণনা করেছেন , তিনি বলেছেন যে , আমরা ইমাম আলী (আ.) এর সাথে সিফফীনের যুদ্ধ করেছিলাম। ফিরে আসার সময় আমরা কারবালায় থামলাম এবং সেখানে সকালের নামায পড়লাম। এরপর তিনি একমুঠো মাটি নিলেন এবং গন্ধ শুঁকলেন আর বললেন ,“
তোমার প্রশংসা , হে (কারলাবার) মাটি! তুমি এক দল লোকের সাহচর্য পাবে যারা কোন হিসাব ছাড়াই বেহেশতে প্রবেশ করবে। ”
যখন আমি আমার স্ত্রীর কাছে ফেরত এলাম , তিনি আলী (আ.) এর শিয়া (অনুসারী) ছিলেন , আমি তাকে বললাম , আমি কি তোমার মাওলা (অভিভাবক) আলীর বাণী তোমাকে শোনাবো না ? আলী এক জায়গায় থামলেন যার নাম হলো কারবালা এবং সকালের নামায পড়লেন আর এক মুঠো মাটি তুলে নিলেন এবং বললেন ,“
তোমার প্রশংসা , হে (কারবালার) মাটি , তুমি একদল লোকের সাহচর্য পাবে যারা কোন হিসাব ছাড়াই বেহেশতে প্রবেশ করবে। ” আমার স্ত্রী জবাব দিলেন যে মুমিনদের সর্দার যা বলেছেন তা সত্য ও সঠিক। যখন ইমাম হোসেইন (আ.) কারবালায় এলেন , আমি ওবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদের বাহিনীতে উপস্থিত ছিলাম। যখন আমি সেই জায়গাটি আর গাছগুলো দেখলাম , আমি ইমাম আলী (আ.) এর কথাটা মনে করলাম। আমি আমার উটের উপর বসলাম এবং ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে গেলাম। আমি তাকে সালাম দিলাম আর তাকে বর্ণনা করলাম এ জায়গা সম্পর্কে তার বাবা ইমাম আলী (আ.) এর কাছ থেকে আমি যা শুনেছিলাম। ইমাম হোসেইন (আ.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন ,“
তুমি কি আমাদের সাথে না আমাদের প্রতিপক্ষের সাথে ?”
আমি জবাব দিলাম ,“
আমি আপনার সাথেও না , আপনার প্রতিপক্ষের সাথেও না , আমি ছোট ছোট বাচ্চা রেখে এসেছি , আমি আশঙ্কা করছি যে উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ তাদের ক্ষতি করবে। ”
ইমাম বললেন ,“
তাহলে এমন জায়গায় চলে যাও যেখান থেকে তুমি আমাদের শাহাদাতের জায়গাও দেখতে পাবে না আর (সাহায্যের জন্য) আমাদের ডাকও শুনতে পাবে না। কারণ তার শপথ যার হাতে হোসেইনের জীবন , আজকে এমন কেউ নেই যে আমাদের (সাহায্যের জন্য) ডাককে শুনতে পাচ্ছে আর আমাদেরকে সাহায্য করছে না , আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুনে ছুঁড়ে ফেলবেন না। ”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ৩৪
শেইখ মুফীদ , যার কাছে বর্ণনাকারীদের ধারা পৌঁছেছে , তিনি আবুল হাকাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেন , আমি আমার শিক্ষক এবং অন্যান্য জ্ঞানীদের কাছ থেকে শুনেছি যে একবার ইমাম আলী (আ.) একটি বক্তৃতা দিলেন যেখানে তিনি বলেছেন ,“
তোমরা যা চাও আমাকে জিজ্ঞেস করে নাও আমাকে হারাবার আগেই। তোমরা কি আমার কাছে জানতে চাইবে না একদল লোকের কথা যারা অন্য একশ মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে বা একশ মানুষকে বন্দী করেছে , কিন্তু আমি তাদের কথা তোমাদের জানিয়ে দেবো যারা প্ররোচিতকারী এবং যারা এটি কেয়ামত পর্যন্ত পরিচালনা করবে। ”
একজন লোক দাঁড়িয়ে বললো ,“
আমাকে বলুন যে আমার মাথায় আর দাড়িতে কতগুলো চুল আছে। ”
ইমাম আলী (আ.) জবাব দিলেন ,“
আল্লাহর শপথ , আমার মাওলা আল্লাহর রাসূল (সা.) আমাকে বর্ণনা করেছেন যা তুমি আমাকে জিজ্ঞাসা করলে। একজন ফেরেশতা তোমার মাথার চুলের আগায় বসে আছে যে তোমাকে অভিশাপ দেয় , আর তোমার দাড়ির প্রত্যেকটি চুলে একটি করে শয়তান বসে আছে যারা তোমাকে উৎসাহিত করে (এবং আহ্বান করে খারাপ ও চরিত্রহীনতার দিকে) এবং তোমার ঘরের একটি সন্তান হবে পবিত্র নবীর সন্তানের হত্যাকারী এবং এ চিহ্নই হলো এর সত্য প্রমাণ যা আমি তোমাকে জানালাম। আর তা না হলে তুমি যা জানতে চেয়েছো আমি তোমাকে সে সম্পর্কে জানিয়ে দিতাম কিন্তু তার (অর্থাৎ চুল গণনার) প্রমাণ দেয়াটা কঠিন। কিন্তু তোমার উপর অভিশাপের ব্যাপারে এবং তোমার অভিশপ্ত ছেলের ব্যাপারে প্রমাণ এটাই যা তোমাকে জানালাম। ”
সে সময়ে তার ছেলে ছোট ছিলো এবং তার পায়ের উপর হামাগুড়ি দিতো। আর যখন ইমাম হোসেইনের অবস্থা সে রকম হলো তখন সে তাকে হত্যা করার বিষয়ে নেতৃত্বে ছিলো এবং ইমাম আলী (আ.) যা বলেছেন তা ঘটেছিলো।
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ৩৫
সম্মানিত শেইখ আবুল কাসিম জাফর বিন মুহাম্মাদ বিন ক্বাওলাওয়েইহ (আল্লাহ তার কবরকে সুগন্ধযুক্ত করুন) , যার কাছে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের ধারা পৌঁছেছে , তিনি বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিকতায় ইমাম মুহাম্মাদ আল বাক্বির (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে , যখন ইমাম হোসেইন (আ.) পবিত্র নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর কাছে আসতেন , তিনি তাকে তার কাছে টেনে নিতেন আর মুমিনদের নেতা ইমাম আলী (আ.) কে বলতেন তাকে যত্নে রাখতে। এরপর নবী নিচু হতেন এবং তাকে চুমু দিয়ে কাঁদতে শুরু করতেন। (একবার) ইমাম হোসেইন তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন কেন তিনি কাঁদছেন। নবী জবাব দিয়েছিলেন ,“
আমার প্রিয় সন্তান , আমি তোমার শরীরের সেই অংশে চুমু দিচ্ছি যা তলোয়ারের সাহায্যে বিচ্ছিন্ন করা হবে এবং তাই আমি কাঁদছি। ”
ইমাম হোসেইন (আ.) বললেন ,“
হে প্রিয় নানা , আমাকে কি হত্যা করা হবে ?”
তিনি জবাব দিলেন ,“
হ্যাঁ , আল্লাহর শপথ , তোমাকে ও তোমার বাবাকে এবং তোমার ভাইকে হত্যা করা হবে। ” ইমাম জিজ্ঞাসা করলেন ,“
হে নানা , আমাদের শাহাদাতের স্থানগুলো কি একটা থেকে অন্যটা দূরে হবে ?”
নবী হ্যাঁ-সূচক জবাব দিলেন , যার উত্তরে ইমাম হোসেইন জিজ্ঞাসা করলেন ,“
আপনার লোকদের মধ্যে কারা আমাদের কবর যিয়ারতে আসবে ?”
তিনি জবাবে বললেন ,“
সিদ্দীকীন (সত্যবাদীরা) ছাড়া আমার উম্মতের মধ্য থেকে কেউ তোমার কবর , তোমার বাবার কবর , আর তোমার ভাইয়ের কবর যিয়ারত করতে আসবে না। ”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ৩৬
সম্মানিত বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ বিন আলী বিন শাহর আশব সারাউই , (আল্লাহ তার কবরকে আলোকিত করুন) যার কাছে বর্ণনাকারীদের ধারা পৌঁছেছে , তিনি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে , একদিন হিন্দ (আবু সুফিয়ানের স্ত্রী) আয়েশাকে ডাকলেন নবীকে একটি স্বপ্নের ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করার জন্য। নবী তাকে স্বপ্নে সে কী দেখেছে তা বর্ণনা করার জন্য বললেন। সে বললো ,“
আমি দেখলাম আমার মাথার উপর একটা সূর্য উদয় হচ্ছে আর আমার ভেতর থেকে একটা চাঁদ বের হচ্ছে। একটি অন্ধকার নক্ষত্র চাঁদ থেকে বের হলো এবং সূর্যকে আক্রমণ করলো। একটি ছোট (উজ্জ্বল) নক্ষত্র যা সূর্য থেকে বের হয়েছিলো তাকে অন্ধকার নক্ষত্রটি গিলে ফেললো পুরো দিগন্তকে অন্ধকারে ঢেকে দিয়ে। এরপর আমি দেখলাম যে অনেকগুলো নক্ষত্র আকাশে আবির্ভূত হলো এবং পৃথিবী অন্ধকার নক্ষত্রে ভরে গেলো যেগুলো দিগন্তকে পুরোপুরি ঢেকে দিলো। ”
যখন নবী এটি শুনলেন , তার চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু করলো এবং তিনি দুবার হিন্দকে চলে যেতে বললেন এ বলে ,“
হে আল্লাহর শত্রু , তুমি আমাকে আবার দুঃখ দিচ্ছো এবং আমাকে আমার প্রিয় মানুষদের মৃত্যুর কথা জানাচ্ছো। ”
যখন সে চলে গেলো তখন তিনি বললেন ,“
হে আল্লাহ , তার ও তার বংশের উপর অভিশাপ দিন। ”
যখন তাকে তার স্বপ্নের তাবীর জিজ্ঞাসা করা হলো , তিনি বললেন ,“
সূর্য ,তার মাথার উপর উদিত হয়েছিলো , সে হলো আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) , আর চাঁদ (যা হিন্দ-এর ভেতর থেকে প্রকাশিত হয়েছিলো) সে হলো রাষ্ট্রদ্রোহী , সীমালঙ্ঘনকারী আর আল্লাহকে অগ্রাহ্যকারী মুয়াবিয়া। আর সেই অন্ধকার যার কথা সে বললো , অন্ধকার নক্ষত্র যা চাঁদ থেকে বের হলো এবং ছোট সূর্যকে (উজ্জ্বল নক্ষত্র) আক্রমণ করার কথা বললো এবং পুরো বিশ্ব অন্ধকারে পরিণত হলো - এর ব্যাখ্যা হলো যে আমার সন্তান হোসেইন মুয়াবিয়ার ছেলের মাধ্যমে নিহত হবে যার ফলে (শোকে) সূর্য কালো হয়ে যাবে আর পুরো দিগন্ত অন্ধকার হয়ে যাবে। আর অন্ধকার নক্ষত্রগুলো , যারা পুরো পৃথিবী ছেয়ে ফেলবে তারা হলো বনি উমাইয়া। ”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ৩৭
শেইখ এবং মুজতাহিদ , বিজয়ী ও সফল ব্যক্তি শহীদ (প্রথম শহীদ) মুহাম্মাদ বিন মাকি , যার কাছে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের ধারা পৌঁছেছে , তিনি শেইখ ও মুজতাহিদ , পুণ্যবান আলেম , দ্বীনের গৌরব আবু মুহাম্মাদ হাসান বিন আহমাদ (নিযামুদ্দীন) বিন মুহাম্মাদ (নাজিবুদ্দীন) বিন নিমা হিল্লি থেকে বর্ণনা করেছেন , যিনি তার সম্মানিত পিতা শেইখ আহমাদ থেকে বর্ণনা করেছেন , যিনি তার ভাই , জাতির ও দ্বীনের নক্ষত্র জাফর বিন মুহাম্মাদ বিন নিমা হিল্লি থেকে বর্ণনা করেছেন , তিনি তার বই‘
মুসীরুল আহযান আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন , যিনি বলেন যে , যখন পবিত্র নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর অসুস্থতা তীব্র হলো , (যার কারণে পরে তিনি ইন্তেকাল করেন) তিনি ইমাম হোসেইন (আ.) কে ডাকলেন এবং তাকে বুকে চেপে ধরলেন যখন তার চেহারায় মৃত্যুর ঘাম স্পষ্ট হয়ে উঠলো। এরপর তিনি বললেন ,“
আমার কাছে ইয়াযীদ কী চায় ? হে আল্লাহ তাকে প্রাচুর্য দেবেন না এবং হে আল্লাহ আপনার অভিশাপ পাঠান ইয়াযীদের উপর। ”
এরপর তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন এবং সে অবস্থায় ’ অনেকক্ষণ থাকলেন। এরপর যখন তার জ্ঞান ফিরলো , তিনি হোসেইনকে চুমু দিলেন , তার দুচোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে পড়ছিলো আর তিনি বলেছিলেন ,“
জেনে রাখো , আমি আর তোমার হত্যাকারী সর্ব শক্তিমানের সামনে দাঁড়াবো (যিনি আমাদের মাঝে ফায়সালা করে দেবেন) । ”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ৩৮
ওপরে বর্ণিত বই থেকে বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিকতায় বর্ণনা করা হয়েছে সাইদ বিন যুবাইর থেকে , যিনি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন , যিনি বলেন যে , একদিন আমি পবিত্র নবী (সা.) এর কাছে বসেছিলাম যখন ইমাম হাসান (আ.) এলেন। যখন নবীর দৃষ্টি তার দিকে গেলো , তিনি কাঁদতে শুরু করলেন এবং বললেন ,“
আমার কাছে আসো , আমার কাছে আসো। ” এবং তার ডান উরুতে তাকে বসালেন। কিছুক্ষণ পর ইমাম হোসেইন (আ.) এলেন এবং নবী তাকে দেখার পর কাঁদতে শুরু করলেন। এরপর তিনি ইমাম হোসেইনকে তার বাম উরুতে বসালেন। এরপর কিছু সময় পর হযরত ফাতিমা (আ.) এলেন এবং নবী আবারও কাঁদতে শুরু করলেন এবং আগের মত করলেন এবং তাকে তার দিক মুখ করে বসতে বললেন। এরপর যখন ইমাম আলী (আ.) এলেন তখন তিনি কাঁদতে শুরু করলেন এবং তার কথাগুলো আবার বললেন তাকে ডান দিকে বসতে ইশারা করলেন। যখন সেখানে বসা সাহাবীরা তা দেখলো তারা বললো ,“
হে আল্লাহর নবী , তাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যাকে দেখে আপনি কাঁদেন নি , তাদের মধ্যে কি এমন কেউ নেই যার সাক্ষাত আপনাকে আনন্দিত করতে পারে ?”
নবী জবাব দিলেন ,“
আমি তাঁর নামে শপথ করি যিনি আমাকে নবুয়তের সম্মান দিয়েছেন এবং আমাকে পুরো সৃষ্টিজগতের ওপরে মর্যাদা দিয়েছেন। এ বিশ্বজগতে আর কেউ নেই যারা এদের চাইতে আমার কাছে বেশী প্রিয়। আর আমার কান্না হলো আমার মৃত্যুর পর তাদের উপর যে দুঃখ-কষ্ট আপতিত হবে তারই ফল। আর আমি স্মরণ করি ঐ জুলুমের বিষয়ে যা হোসেইনের উপর আপতিত হবে। তা এমন যে আমি যেন তাকে দেখতে পাচ্ছি আমার কবরে এবং পবিত্র কাবায় সে আশ্রয় নিচ্ছে , কিন্তু কেউ তাকে সেখানে থামতে দিবে না। এরপর সে ঐ জায়গায় যাবে যা তার শাহাদাতের এবং দুঃখ ও মুসিবতের জায়গা। তখন একদল মানুষ তাকে সাহায্য করবে যারা কিয়ামতের দিনে আমার জাতির মধ্যে সকল শহীদদের নেতা হবে। এটি এমন যে আমি যেন সেই তীরগুলো দেখতে পাচ্ছি যা তার দিকে ছোঁড়া হয়েছে এবং সে তার ঘোড়া থেকে মাটিতে পড়ে গেছে। এরপর তারা তাকে অত্যাচার করে একটি ভেড়ার মত জবাই করবে। ”
এরপর তিনি কান্না আর হাহাকার করা শুরু করলেন এবং তার কাছে যারা ছিলো সবাই কাঁদলেন এবং তাদের আওয়াজ বাড়ছিলো। এরপর তিনি উঠলেন এবং বললেন ,“
হে আল্লাহ , আমার মৃত্যুর পর আমার বংশকে যেসব দুঃখ-কষ্ট সইতে হবে আমি তার জন্য আপনার কাছে নালিশ করছি। ”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ৩৯
সম্মানিত শেইখ জাফর বিন মুহাম্মাদ ক্বাওলাওয়েই কুম্মির কাছে বর্ণনাকারীদের যে ধারা পৌঁছেছে তার মাধ্যমে‘
মুসীরুল আহযান ’ (গ্রন্থে) উল্লেখ আছে যে , আমার কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে , একদিন ইমাম হোসেইন (আ.) তার ভাই ইমাম হাসান (আ.) এর কাছে গেলেন। যখন তিনি ইমাম হাসান (আ.) এর দিকে তাকালেন , তিনি কাঁদতে শুরু করলেন। ইমাম হাসান জিজ্ঞাসা করলেন ,“
হে আবা আব্দিল্লাহ , কেন তুমি কাঁদছো ?”
ইমাম হোসেইন জবাবে বললেন যে , তার ওপরে যা ঘটবে তার কারণে তিনি কাঁদছেন। ইমাম হাসান বললেন ,“
আমার উপর যা ঘটবে তা হলো প্রাণনাশক বিষ কিন্তু আমার দিনগুলো কোনটিই তোমারগুলোর মতো হবে না। তিরিশ হাজার লোক , যারা আমাদের নানার (নবীর) অনুসরণ করে বলে দাবী করে , একত্রিত হবে তোমাকে আক্রমণ করতে এবং তোমার রক্ত ঝরাতে এবং পবিত্রতা নষ্ট করতে এবং তোমার নারীদের ও শিশুদের বন্দী করতে এবং তোমার তাঁবুগুলো লটু করতে। সে সময়ে (আল্লাহর) গযব বনি উমাইয়ার উপর নাযিল হবে এবং আকাশ রক্তের বৃষ্টি ঝরাবে এবং সব কিছুই তোমার জন্য বিলাপ করবে , এতোই বেশী যে বনের হিংস্র পশুরা এবং নদীর মাছও তোমার দুঃখ-কষ্টের জন্য কাঁদবে। ”
হাদীস (রেওয়ায়েত) নং: ৪০
ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে যে ধারা সম্মানিত শেইখ জাফর বিন মুহাম্মাদ বিন ক্বাওলাওয়েইহ কুম্মির কাছে পৌঁছেছে তার মাধ্যমে এবং তিনি তার ধারাবাহিক বর্ণনাকারীদের থেকে হাম্মাদ বিন উসমান থেকে বর্ণনা করেছেন , যিনি ধারাবাহিকতায় ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে , যখন নবী মুহাম্মাদ (সা.) কে আসমানে নেয়া হয়েছিলো (মেরাজের রাতে) , আল্লাহ তাকে বলেছিলেন যে , আমি তোমাকে তিনভাবে পরীক্ষা করবো , তোমার ধৈর্য কেমন তা জানার জন্য। নবী (সা.) জবাব দিলেন ,“
আমি আপনার হুকুমের কাছে আত্মসমর্পণ করি। কিন্তু আপনার পরীক্ষা সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। দয়া করে আমাকে বলুন সেই তিন উপায় কি কি ?”
বলা হলো ,প্রথমটি হচ্ছে ক্ষুধা এবং নিজের আর নিজের পরিবারের উপর অভাবীকে অগ্রাধিকার দেয়া। নবী জবাব দিলেন ,“
আমি গ্রহণ করলাম , হে রব , এবং আমি সন্তুষ্ট ‘ এবং আপনার আদেশের সামনে আমি মাথা নত করি আর অনুগ্রহ ও ধৈর্য তো শুধু আপনার কাছ থেকে। ”
দ্বিতীয়টি হলো , যে মিথ্যা অপবাদ মানুষ তোমাকে দেবে , ভয় ও কঠিন বিপদ এবং আমার পথে তোমার জীবনকে কোরবান করা এবং তোমার জীবন ও সম্পদ দিয়ে কুফরের বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করা , আর তাদের হাতে আর মুনাফিক্বদের পক্ষ থেকে যে কঠোরতা ও কাঠিন্য তোমার উপর আপতিত হবে তার জন্য ধৈর্য ধরা এবং যুদ্ধের ময়দানের জখম , সমস্যা আর কষ্ট। নবী জবাব দিলেন ,“
আমি গ্রহণ করলাম , হে রব , এবং আমি সন্তুষ্ট এবং আপনার আদেশের সামনে আমি মাথা নত করি ; আর অনুগ্রহ ও ধৈর্য তো শুধু আপনার কাছ থেকে। ”
তৃতীয়টি হলো , তোমার মৃত্যুর পর যে দুঃখ-কষ্ট ও শাহাদাত তোমার পরিবারকে সইতে হবে। এরপর তোমার চাচাতো ভাই (ইমাম আলী)-কে অপবাদ রটনা , গালাগালি আর দমনের মুখোমুখি হতে হবে এবং কঠোরতা আর নিপীড়নের শিকার হবে এবং হতাশ হবে এবং শেষ পর্যন্ত শহীদ হবে। নবী জবাব দিলেন ,“
আমি গ্রহণ করলাম , হে রব , এবং আমি সন্তুষ্ট এবং আপনার আদেশের সামনে আমি মাথা নত করি ; আর অনুগ্রহ ও ধৈর্য তো শুধু আপনার কাছ থেকে। ”
আর তোমার মেয়ের (সাইয়েদা ফাতিমার) ক্ষেত্রে , তাকেও কষ্ট সহ্য করতে হবে (ঐসব মুসিবত যা তার সাথে সম্পর্কিত) । এরপর তোমার এ মেয়ে তোমার চাচাতো ভাই থেকে দুটি সন্তান লাভ করবে যাদের মধ্যে একজন (ইমাম হাসান) এক কাপুরুষের মাধ্যমে নিহত হবে এবং তার সম্পদ লুট করা হবে এবং বর্শা দিয়ে তাকে জখম করা হবে , আর এই নির্মম কাজগুগো তোমার উম্মতের লোকেরা করবে। নবী জবাব দিলেন ,“
আমি গ্রহণ করলাম , হে রব। নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য আর নিশ্চয়ই আমরা তার দিকেই ফিরে যাবো। আর আমি সন্তুষ্ট এবং আপনার আদেশের সামনে মাথা নত করি এবং অনুগ্রহ ও ধৈর্য তো শুধু আপনার কাছ থেকেই। ”
তার দ্বিতীয় সন্তানের (ইমাম হোসেইনের) ক্ষেত্রে , লোকেরা তাকে যুদ্ধের জন্য ডাকবে এবং তাকে এমনভাবে হত্যা করবে যে তার সন্তানদের এবং (তার পরিবার ও বন্ধুদের থেকে) যে-ই তাকে সঙ্গ দেবে তাকেও হত্যা করা হবে। এরপর তার পরিবারকে লুট করা হবে এবং সে আমার কাছে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করবে , কিন্তু নিশ্চয়ই শাহাদাত তার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে এবং তাদের জন্যও যারা তার সঙ্গে থাকবে। আর তার শাহাদাত পূর্ব ও পশ্চিমের সব মানুষের জন্য একটি প্রমাণ। আর আসমানগুলো ও পৃথিবী তার জন্য কাঁদবে এবং ফেরেশতারা , যারা তাকে সাহায্য করতে পারবে না , তারাও বিলাপ করবে। এরপর আমি তার বংশ থেকে এক ব্যক্তির (ইমাম মাহদীর) প্রকাশ ঘটাবো , যার মাধ্যমে আমি তোমাকে সাহায্য করবো এবং তার রুহ আছে আমার কাছে , আরশের নিচে।