দুধের শিশু আব্দুল্লাহ (আলী আল আসগার)-এর শাহাদাত
তার মা ছিলেন রাবাব , যিনি ছিলেন ইমরুল ক্বায়েস বিন আদির কন্যা এবং তার মা ছিলেন হিন্দ আল হানূদ। সাইয়েদ ইবনে তাউস বলেন , যখন ইমাম হোসেইন (আ.) তার যুবকদের ও বন্ধুদের লাশ দেখতে পেলেন তিনি শহীদ হওয়ার জন্য দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলেন এবং উচ্চ কণ্ঠে বললেন ,“
কেউ কি আছে আল্লাহর রাসূলের পরিবারকে রক্ষা করবে ? তওহীদবাদী কেউ কি আছে যে আল্লাহকে ভয় করবে আমাদের বিষয়ে ? কোন সাহায্যকারী কি আছে যে আল্লাহর জন্য আমাদেরকে সাহায্য করতে আসবে ? কেউ কি আছে যে আমাদের সাহায্যে দ্রুত আসবে আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কারের বিনিময়ে ?”
নারীদের কান্নার আওয়াজ উঁচু হলো এবং ইমাম তাঁবুর দরজায় এলেন এবং যায়নাব (আ.) কে ডাকলেন ,“
আমাকে আমার দুধের শিশুটিকে দাও যেন বিদায় নিতে পারি। ” এরপর তিনি তাকে দুহাতে নিলেন এবং উপুড় হলেন তার ঠোঁটে চুমু দেয়ার জন্য। হুরমালা বিন কাহিল আসাদি শিশুটির দিকে একটি তীর ছুঁড়লো , যা তার গলা ভেদ করে তার মাথা আলাদা করে ফেললো (আল্লাহর রহমত ও রবকত তার উপর বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর অভিশাপ পড়ুক তার হত্যাকারীর উপর) । এক কবি এ বিষয়ে বলেছেন ,“
এবং সে ব্যক্তি যে নিচু হয়েছিলো তার বাচ্চাকে চুমু দেয়ার জন্য কিন্তু তার আগেই তীর তাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় তার গলায় চুমু দেয়ার জন্য। ”
এরপর তিনি সাইয়েদা যায়নাব (আ.) কে উচ্চ কণ্ঠে ডাকলেন তাকে ফেরত নেয়ার জন্য। তিনি শিশুর রক্ত তার হাতের তালুতে নিলেন এবং আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বললেন ,“
প্রত্যেক কষ্টই আমার জন্য সহজ যখন আল্লাহ তা দেখছেন। ”
দুধের শিশুটি সম্পর্কে শেইখ মুফীদ বলেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) তাঁবুর সামনে বসলেন এবং শিশু আব্দুল্লাহকে তার কাছে আনা হলো। বনি আসাদের এক লোক তাকে হত্যা করলো তীর ছুঁড়ে।
আযদি বলেন যে , আক্বাবাহ বিন বাশীর আসাদি ইমাম মুহাম্মাদ আল বাক্বির (আ.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে , তিনি আমাকে বলেছেন ,“
হে বনি আসাদ , আমাদের রক্তের একটি দায় ভার তোমাদের উপর আছে। ” আমি জিজ্ঞেস করলাম ,“
হে আবা জাফর , কোন গুনাহতে আমার অংশ রয়েছে ? এবং কোন সেই রক্ত ?”
ইমাম বললেন ,“
একটি শিশুকে আনা হয়েছিলো ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে যিনি তাকে তার কোলে ধরলেন , তোমাদের মধ্যে থেকে এক ব্যক্তি , বনি আসাদের , তার দিকে একটি তীর ছোঁড়ে এবং তার মাথা আলাদা করে ফেলে। ইমাম তার রক্ত জমা করলেন এবং যখন তার দুহাতের তালু রক্তে পূর্ণ হলো তিনি তা যমীনে ছিটিয়ে দিলেন এবং বললেন: সর্বশক্তিমান আল্লাহ , যদি আপনি আকাশ থেকে সাহায্য বন্ধ করে দিয়ে থাকেন তাহলে আমাদের উপর তা দান করুন যা এর চেয়ে ভালো এবং এই দুষ্কৃতিকারীদের উপর আমাদের হয়ে প্রতিশোধ নিন ।”
সিবতে ইবনে জওযি তার‘
তাযকিরাহ ’ -তে বর্ণনা করেছেন হিশাম বিন মুহাম্মাদ ক্বালবি থেকে যে , যখন ইমাম হোসেইন (আ.) দেখলেন তারা তাকে হত্যা করবেই , তিনি কোরআন আনলেন এবং তা খুলে মাথার উপর রাখলেন এবং উচ্চ কণ্ঠে বললেন ,“
আল কোরআন এবং আমার নানা , আল্লাহর রাসূল (সা.) হলেন আমার ও তোমাদের মধ্যে বিচারক। হে জনতা , কিভাবে তোমরা আমার রক্ত ঝরানোকে বৈধ মনে করছো ? আমি কি তোমাদের নবীর নাতি নই ? আমার নানা থেকে কি হাদীস পৌঁছায়নি তোমাদের কাছে আমার ও আমার ভাই সম্পর্কে যে আমরা জান্নাতের যুবকদের সর্দার ? তাহলে জিজ্ঞেস করো জাবির (বিন আব্দুল্লাহ আনসারি)-কে , যায়েদ বিন আরকামকে এবং আবু সাঈদ খুদরীকে , জাফর তাইয়ার কি আমার চাচা নন ?”
শিমর উত্তর দিলো ,“
খুব শীঘ্রই তুমি জ্বলন্ত আগুনের (জাহান্নামের) দিকে দ্রুত যাবে। ” (আউযুবিল্লাহ) । ইমাম বললেন ,“
আল্লাহু আকবার , আমার নানা আল্লাহর রাসূল (সা.) আমাকে জানিয়েছেন যে তিনি দেখেছেন একটি কুকুর তার গলা পূর্ণ করছে তার আহলুল বাইত (আ.) এর রক্ত দিয়ে এবং আমি বুঝতে পারছি সেটি তুমি ছাড়া কেউ নয়। ”
শিমর বললো ,“
আমি শুধু জিহ্বা দিয়ে আল্লাহর ইবাদত করবো , যদি আমি বুঝি তুমি কী বলছো। ” ইমাম হোসেইন (আ.) ফিরে দেখলেন তার শিশুপুত্র পিপাসায় কাঁদছে। তিনি তাকে কোলে নিলেন এবং বললেন ,“
হে জনতা , যদি তোমরা আমার প্রতি দয়া না দেখাও , কমপক্ষে এ বাচ্চার উপর দয়া করো। ” এক ব্যক্তি একটি তীর ছুঁড়লো যা তার গলা বিচ্ছিন্ন করে ফেললো। ইমাম কেঁদে বললেন ,“
হে আল্লাহ , আপনি বিচারক হোন আমাদের মাঝে ও তাদের মাঝে , যারা আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলো সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং এর বদলে আমাদের হত্যা করেছে। ” একটি কণ্ঠ আকাশ থেকে ভেসে এলো ,“
তাকে ছেড়ে দাও হে হোসেইন , কারণ এক সেবিকা তাকে শুশ্রূষা করার জন্য বেহেশতে অপেক্ষা করছে। ” এরপর হাসীন বিন তামীম একটি তীর ছোঁড়ে তার ঠোঁটের দিকে এবং তা থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকে।
ইমাম কাঁদলেন এবং বললেন ,“
হে আল্লাহ , আমি তোমার কাছে অভিযোগ করি , তারা যেভাবে আমার সাথে , আমার ভাই , আমার সন্তানদের এবং আমার পরিবারের সাথে আচরণ করেছে। ”
ইবনে নিমা বলেন যে , তিনি বাচ্চাটিকে তুললেন এবং তার পরিবারের শহীদদের সাথে রাখলেন।
মুহাম্মাদ বিন তালহা তার গ্রন্থ‘
মাতালিবুস সা’
উল ’ -এ‘
ফুতূহ ’ নামের গ্রন্থ থেকে উল্লেখ করেছেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) এর একটি শিশু পুত্র ছিলো , তার দিকে একটি তীর ছোঁড়া হয় যা তাকে হত্যা করে এবং এরপর ইমাম তার তরবারি দিয়ে একটি কবর খোরেন তার জন্য এবং তার জন্য দোআ করে তাকে দাফন করেন।
‘ ইহতিজাজ ’ -এ উল্লেখ আছে যে যখন ইমাম হোসেইন (আ.) একা হয়ে গেলেন এবং তার সাথে তার সন্তান আলী যায়নুল আবেদীন (আ.) এবং দুধের শিশু আব্দুল্লাহ ছাড়া কেউ ছিলো না , তিনি বাচ্চাটিকে তুলে ধরলেন বিদায় জানানোর জন্য , তখন একটি তীর এলো এবং তার গলা ভেদ করে তাকে হত্যা করলো। ইমাম ঘোড়া থেকে নামলেন এবং তার তরবারির খাপ দিয়ে একটি কবর খুঁড়লেন এবং এরপর রক্তে ভেজা বাচ্চাকে বালির নিচে দাফন করলেন। এরপর তিনি তার জায়গা থেকে উঠে দাঁড়ালেন এবং শোকগাঁথা আবৃত্তি করলেন। শাহাদাতের লেখকরা এবং ইহতিজাজের লেখকও বলেন যে , ইমাম এরপর তার ঘোড়ায় চড়লেন এবং যুদ্ধের জন্য এগিয়ে গেলেন এই বলে ,“
এ জাতি অবিশ্বাস করেছে এবং তারা রাব্বুল আলামীনের পুরস্কার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে , এ জাতি হত্যা করেছে আলীকে এবং তার সন্তান হাসানকে , যিনি ছিলেন উত্তম এবং সম্মানিত পিতা-মাতার সন্তান। তারা ঘৃণা ও বিদ্বেষে পূর্ণ ছিলো এবং তারা জনতাকে ডাক দিয়েছে এবং জমা হয়েছে হোসেইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। অভিশাপ এ নীচ জাতির উপর যারা বিভিন্নদলকে একত্র করেছে‘
দুই পবিত্র আশ্রয়স্থানের ’ লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। এভাবে মুশরিকদের বংশধর উবায়দুল্লাহর জন্য তারা যাত্রা করেছে এবং মুরতাদদের আনুগত্য করার জন্য অন্যদেরকে আহ্বান করেছে আল্লাহর বিরোধিতা করে আমার রক্ত ঝরানোর জন্য , এবং সা’
আদের সন্তান আমাকে হত্যা করেছে আক্রমণাত্মকভাবে এক সেনাবাহিনীর সাহায্যে যা প্রবল প্লাবনের মত এবং এ সব আমার কোন অপরাধের প্রতিশোধের জন্য নয় , শুধু এ কারণে যে , আমার গর্ব হচ্ছে দুই নক্ষত্র , আলী যিনি ছিলেন নবীর পরে শ্রেষ্ঠ এবং নবী ছিলেন কুরাইশ পিতা- মাতার সন্তান , আমার বাবা মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং আমি দুজন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির সন্তান , রূপার মত যা বেরিয়ে এসেছে স্বর্ণ থেকে , আমি হচ্ছি রূপা , দুই স্বর্ণালীর সন্তান , আর কারো নানা কি আমার নানার মত , অথবা তাদের পিতা আমার পিতার মত , এরপর আমি দুজন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির পুত্র সন্তান , আমার মা ফাতিমাতুয যাহরা এবং বাবা যিনি মুশরিকদের পিঠ ভেঙ্গে দিয়েছিলেন বদর ও হুনাইনের যুদ্ধে এবং যিনি শৈশবকাল থেকেই রবের ইবাদত করেছেন যখন কুরাইশরা ইবাদত করতো একসাথে দুই মূর্তির , লাত ও উযযার , তখন আমার বাবা নামায পড়েছেন দুই কিবলার দিকে ফিরে। আর আমার বাবা হলেন সূর্য এবং আমার মা চাঁদ , আর আমি এক নক্ষত্র , দুই চাঁদের সন্তান এবং তিনি (আলী) উহুদের দিনে এমন মোজেযা দেখিয়েছেন সেনাবাহিনীকে দুভাগ করে দেয়ার মাধ্যমে , যা হিংসা দুর করেছিলো এবং আহযাবে (এর যুদ্ধে) ও মক্কা বিজয়ে। যেদিন দুই সেনাবাহিনীতে একটি কথাই ছিলো - মৃত্যু এবং এ সবই আল্লাহর রাস্তায় করা হয়েছিলো , কিন্তু কিভাবে এই নীচ জাতি এ দুই সন্তানের সাথে আচরণ করেছে - যারা সৎকর্মশীল নবী ও আলীর সন্তান , দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধের দিনে যারা লাল গোলাপের মত। ”
এরপর তিনি সেনাবাহিনীর দিকে ফিরে দাঁড়ালেন তার তরবারি খাপমুক্ত করে , জীবনকে পরিত্যাগ করে এবং হৃদয়ে মৃত্যুর দৃঢ় সিন্ধান্ত নিয়ে। তিনি বলছিলেন ,“
আমি আলীর সন্তান , যিনি ছিলেন পবিত্র ও হাশিমের বংশধর এবং এ মর্যাদা আমার জন্য যথেষ্ট যখন আমি গর্ব করি , আমার নানা আল্লাহর রাসূল সবার চেয়ে সম্মানিত। আমরা সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহর বাতি এবং আমার মা ফাতিমা যাহরা (আ.) , যিনি আহমাদ (সা.) এর কন্যা এবং আমার চাচা যিনি দুপাখার অধিকারী বলে পরিচিত এবং আমাদের মাঝে আছে আল্লাহর কিতাব এবং তা সত্যসহ নাযিল হয়েছে এবং আমাদের মধ্যেই আছে বৈধতা এবং কল্যাণপূর্ণ ওহী এবং আমরা হলাম সব মানুষের মধ্যে আল্লাহর আমানত এবং আমরা গোপনে ও প্রকাশ্যে ঘোষণা করি যে কাউসারের উপর আমরা কর্তৃত্ব রাখি এবং আমরা আমাদের অনুসারীদের পান করাবো নবীর পেয়ালা দিয়ে , যা অস্বীকার করা যায় না এবং আমাদের অনুসারীরা হলো অনুসারীদের মধ্যে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন এবং যারা আমাদের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করে কিয়ামতের দিন তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। ”
মুহাম্মাদ বিন আবু তালিব বলেন আবু আলী সালামি তার ইতিহাসে বর্ণনা করেছেন যে , এ শোকগাঁথাটি ইমাম হোসেইন (আ.) এর নিজের সৃষ্টি এবং এর মত কোন শোকগাঁথা নেই:
“
যদিও এ পৃথিবীকে প্রিতীকর মনে করা হয় , আল্লাহর পুরস্কার হচ্ছে সুমহান ও বিশেষ বৈশিষ্টের অধিকারী এবং যদি দেহকে তৈরী করা হয়ে থাকে মৃত্যুর জন্য তাহলে আল্লাহর পথে শহীদ হওয়া মানুষের জন্য সবচেয়ে ভালো এবং যদি রিয্ক্ব বিতরণ করা হয় ও নিশ্চয়তা থাকে তাহলে মানুষের উচিত না তা অর্জনের জন্য কঠিন চেষ্টা করা এবং যদি এ সম্পদ জমা করার ফলাফল হয় তা পেছনে ফেলে যাওয়া তাহলে কেন মানুষ লোভী হবে ?”
এরপর তিনি সেনাবাহিনীকে যুদ্ধে আহ্বান করলেন এবং যে-ই কাছে এলো তৎক্ষনাৎ নিহত হলো এবং লাশের স্তুপ জমা হলো। এরপর তিনি সেনাবাহিনীর ডান অংশকে আক্রমণ করলেন এবং বললেন ,“
অপমান হওয়ার মৃত্যু চাইতে উত্তম এবং অপমান জাহান্নামের আগুনে প্রবেশের চাইতে উত্তম। ”
এরপর তিনি সেনাবাহিনীর বাম অংশকে আক্রমণ করলেন এবং বললেন ,“
আমি হোসেইন , আলীর সন্তান , আমি শপথ করেছি যে শত্রুদের কাছ থেকে পালিয়ে যাবো না এবং আমার বাবার পরিবারকে রক্ষা করবো , যতক্ষণ না আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ধর্মের উপর নিহত হই। ”
কিছু বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন যে , আল্লাহর শপথ , আমি তার মত কোন বীর দেখি নি , যে তার সন্তান , পরিবার ও বন্ধুদের হারিয়ে ভেঙ্গে গেছে। যোদ্ধারা তার ওপরে প্রথমে আক্রমণ চালালো এবং তিনিও তাদের আক্রমণের সমান জবাব দিলেন এবং তিনি তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিলেন যেভাবে নেকড়ে ভেড়ার সাড়িতে ঢুকে পড়ে এবং তাদের তিনি বিতাড়িত করলেন এবং পঙ্গপালের মত ছত্রভঙ্গ করে দিলেন। তিনি অস্ত্রে সুসজ্জিত ত্রিশ হাজার সৈন্যের বাহিনীকে আক্রমণ করলেন এবং তারা তার সামনে পঙ্গপালের মত ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলো। এরপর তিনি তার জায়গায় ফেরত এলেন এবং বললেন ,“
কোন ক্ষমতা নেই ও কোন শক্তি নেই শুধু আল্লাহর কাছে ছাড়া যিনি উচ্চ ও মহান। ”
‘ ইসবাত আল ওয়াসিয়াহ ’ তে বর্ণিত আছে যে তিনি নিজ হাতে আঠারোশ যোদ্ধাকে হত্যা করেন।
‘ বিহারুল আনওয়ার ’ -এ আছে যে , ইবনে শাহর আশোব এবং মুহাম্মাদ বিন আবি তালিব বলেছেন যে , তিনি অবিরাম আক্রমণ করলেন যতক্ষণ না তিনি উনিশশত পঞ্চাশ ব্যক্তিকে হত্যা করলেন , আহতদের সংখ্যা ছাড়াই। উমর বিন সা’
আদ সেনাবাহিনীকে উচ্চ কণ্ঠে বললো ,“
আক্ষেপ তোমাদের জন্য , তোমরা জানো তোমরা কার সাথে যুদ্ধ করছো ? সে হলো ভুড়িওয়ালার সন্তান (এখানে সে ইমাম আলী (আ.) কে বিদ্রুপ করতে চেয়েছে , আউযুবিল্লাহ) সে হচ্ছে আবরদের ঘাতকের সন্তান। তাকে সব দিক থেকে আক্রমণ করো। ” চার হাজার তীরন্দাজ তাকে ঘেরাও করে ফেললো এবং তাঁবুর দিকে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দিলো।
মুহাম্মাদ বিন আবি তালিব , ইবনে শাহর আশোব এবং সাইয়েদ ইবনে তাউস বলেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) তখন বললেন ,“
দুর্ভোগ তোমাদের উপর হে আবু সুফিয়ানের পরিবারের অনুসারীরা , যদি তোমরা অধার্মিক লোক হও এবং কিয়ামতের দিনটিকে ভয় না পাও তাহলে কমপক্ষে স্বাধীন চিন্তার লোক হও এবং বুঝতে চেষ্টা করো যদি তোমরা আরবদের বংশধর হও।”
শিমর বললো ,“
হে ফাতিমার সন্তান , তুমি কী বুঝাতে চাও ?”
ইমাম বললেন ,“
আমি বলছি যে আমরা পরস্পর যুদ্ধ করবো কিন্তু নারীরা তো কোন দোষ করে নি। আমার পরিবারের তাঁবু লুট করা থেকে বিরত থাকো যতক্ষণ আমি বেঁচে আছি। ”
শিমর বললো ,“
নিশ্চয়ই তোমার অধিকার আছে। ” তখন সে উচ্চ কণ্ঠে ডাকলো ,“
তাঁবুগুলো থেকে ফেরত আসো এবং তাকে তোমাদের লক্ষ্যে পরিণত করো এবং সে দয়ালু সমকক্ষ। ” তখন পুরো সেনাবাহিনী তার দিকে ফিরলো এবং ইমাম হোসেইন (আ.) পানি পান করতে চাইলেন। যখনই তিনি ফোরাত নদীর দিকে যেতে চাইলেন , সেনাবাহিনী তাকে আক্রমণ করলো এবং নদী থেকে ফিরিয়ে দিলো।
ইবনে শাহর আশোব বলেন জালুদি থেকে আবু মাখনাফ বর্ণনা করেছে যে , ইমাম হোসেইন (আ.) আক্রমণ করেন আ ’ ওয়ার সালামি ও আমর বিন হাজ্জাজ যুবাইদিকে যারা চার হাজার সৈন্যসহ ফোরাত নদীর তীর পাহারা দেয়ার জন্য নিয়োজিত ছিলো। তখন তিনি তার ঘোড়াকে নদীতে প্রবেশ করালেন এবং যখন ঘোড়া তার মুখ পানিতে রাখলো পান করার জন্য ইমাম বললেন ,“
হে আমার ঘোড়া , তুমি তৃষ্ণার্ত এবং আমিও এবং যতক্ষণ না তুমি পান করো আমি আমার তৃষ্ণা মিটাবোনা। ” যখন ঘোড়াটি ইমামের এ কথাগুলি শুনলো সে তার মাথা তুলে ফেললো এবং পানি খেলো না , যেন সে বুঝতে পেরেছে ইমাম কী বলেছেন। ইমাম বললেন , “ আমি পান করবো এবং তুমিও পান করো। ” তিনি তার হাত লম্বা করে দিলেন এবং হাতের তালু পানিতে পূর্ণ করলেন। তখন সেনাবাহিনীর এক ব্যক্তি চিৎকার করে বললো ,“
হে আবা আব্দিল্লাহ , তুমি শান্তিতে পানি পান করছো অথচ তোমার তাঁবুগুলো লুট করা হচ্ছে ?”
তা শুনে ইমাম পানি ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং আক্রমণ করলেন। তিনি শত্রুবাহিনীকে দুভাগ করে এগিয়ে দেখতে পেলেন তার তাঁবুগুলি নিরাপদ আছে।
আল্লামা মাজলিসি তার‘
জালাউল উয়ুন ’ -এ বলেছেন যে , আবারও তিনি তার পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিলেন এবং তাদেরকে সহনশীল হওয়ার আদেশ করলেন এবং তাদেরকে পুরস্কার ও প্রতিদানের শপথ করলেন , এরপর বললেন ,“
তোমাদের চাদরগুলো পরো , পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত হও এবং জেনে রাখো আল্লাহ তোমাদের সাহায্য ও নিরাপত্তা দানকারী এবং তোমাদেরকে শত্রুদের খারাপ আচরণ থেকে মুক্তি দিবেন এবং তোমাদের উত্তম পরিসমাপ্তি ঘটাবেন। তার ক্রোধ তোমাদের শত্রুদের ঢেকে ফেলবে বিভিন্ন দুর্যোগে এবং তিনি তোমাদের উপর বিশেষ বরকত ও আশ্চযজর্নক উপহার দিবেন এ পরীক্ষার পরে। অভিযোগ করো না , এমন কিছু বলো না যা তোমাদের মর্যাদা কমিয়ে দেয়। ”
‘
বিহারুল আনওয়ার ’ -এ আছে যে আবুল ফারাজ বলেছেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) নদীর দিকে গেলেন এবং শিমর বললো ,“
তুমি নদীর দিকে যাবে না , বরং তুমি আগুনের দিকে যাবে। ” (আউযুবিল্লাহ) । এক ব্যক্তি উচ্চ কণ্ঠে বললো ,“
ও হোসেইন , তুমি কি দেখছো না মাছের পেটের মত ফোরাত নড়াচড়া করছে ? আল্লাহর শপথ , তুমি অবশ্যই এর স্বাদ পাবে না যতক্ষণ না তৃষ্ণায় মারা যাও। ” ইমাম বললেন ,“
ইয়া রব , তাকে তৃষ্ণার কারণে মৃত্যু দাও। ” বর্ণনাকারী বলে যে (একই) ব্যক্তি বলতো ,“
আমাকে পান করার জন্য পানি দাও। ” তাকে পানি দিলে সে তা থেকে পান করতো এবং বমি করে ফেলতো। আবারও সে বলতো ,“
আমাকে পান করার জন্য পানি দাও কারণ তৃষ্ণা আমাকে মেরে ফেলছে। ” এ রকম চলতে থাকলো যতক্ষণ পর্যন্তনা সে মৃত্যুমুখে পতিত হলো (আল্লাহর অভিশাপ তার উপর) ।
আবু হাতূফ নামে এক ব্যক্তি একটি তীর ছোঁড়ে ইমাম হোসেইন (আ.) এর দিকে যা তার কপালে বিদ্ধ হয়। তিনি তা টেনে বের করলেন এবং রক্ত তার চেহারা ও দাড়ি ভিজিয়ে দিলো। তখন তিনি বললেন ,“
হে আমার রব , আপনি কি দেখছেন এ খারাপ লোকদের হাতে আমাকে কী সহ্য করতে হচ্ছে ? ইয়া রব , তাদের সংখ্যা কমিয়ে দিন এবং তাদের শেষটিকেও হত্যা করুন এবং তাদের একটিকেও পৃথিবীর উপর রেখেন না এবং তাদের ক্ষমা করবেন না। ”
এরপর তিনি তাদের আক্রমণ করলেন এক ভয়ঙ্কর সিংহের মত এবং কেউ ছিলো না যে তার কাছে পৌঁছতে পারে , তিনি তাদের পেট কেটে হত্যা করলেন। তারা সব দিক থেকে তাকে তীর ছুঁড়তে লাগলো যেগুলোর আঘাত তিনি বুকে ও ঘাড়ে নিলেন এবং বললেন ,“
কত খারাপ আচরনই না তোমরা করলে মুহাম্মাদ (সা.) এর বংশধরদের সাথে তার মৃত্যুর পর। আমাকে হত্যা করার পর তোমরা আল্লাহর কোন বান্দাহকে হত্যা করতে আর ভয় পাবে না এবং আমাকে হত্যা করা তোমাদের কাছে তাদের হত্যাকে সহজ করে দিবে। আমি আল্লাহর কাছে আশা করি যে তিনি তোমাদের হাতে আমাকে অপমানের বদলে আমাকে শাহাদাত দান করবেন এবং এরপর আমার প্রতিশোধ নিবেন এমন মাধ্যমে যে তোমরা তা কখনো চিন্তাও করতে পারবেনা। ”
এ কথাগুলো শুনে হাসীন বিন মালিক সাকনি বল লো ,“
হে ফাতিমার সন্তান , কিভাবে আল্লাহ আমাদের উপর তোমার প্রতিশোধ নিবেন ?”
ইমাম বললেন ,“
তিনি তোমাদের যুদ্ধে ঢেকে ফেলবেন এবং তোমাদের রক্ত ঝরাবেন , এরপর এক ভয়ানক শাস্তিতোমাদের উপর আসবে। ” এরপর তিনি যুদ্ধ করলেন যতক্ষণ না অনেক আঘাতে জর্জরিত হলেন। ইবনে শাহর আশোব ও সাইয়েদ ইবনে তাউস বলেন আঘাতের সংখ্যা ছিলো বাহাত্তর।
ইবনে শহর আশোব আবু মাখনাফ থেকে তিনি ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) থেকে বর্ণনা করেন যে ,“
ইমাম হোসেইন (আ.) এর শরীরে বর্শার তেত্রিশটি আঘাত ও তরবারির চৌত্রিশটি আঘাত ছিলো। ”
ইমাম মুহাম্মাদ আল বাক্বির (আ.) বলেন যে ,“
ইমাম হোসেইন (আ.) বর্শা , তরবারি ও তিনশ বিশটির বেশী তীর থেকে আঘাত পেয়েছিলেন। ”
অন্য এক বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে যে আঘাতের সংখ্যা ছিলো তিনশ ষাটটি। অন্য আরেক বর্ণনা অনুযায়ী আঘাতের সংখ্যা ছিলো তিনশ তিনটি এবং এটিও বলা হয় যে তার আঘাতের সংখ্যা এক হাজার তিনশতে পৌঁছে। তীর তার বর্ম ভেদ করে সজারুর কাটার মত এবং বর্ণনা করা হয় যে তার সব আঘাত ছিলো দেহের সামনের দিকে।
বর্ণিত আছে যে (অতিরিক্ত) যুদ্ধ ইমাম হোসেইন (আ.) কে ক্লান্তকরে ফেলে এবং তিনি বিশ্রাম নেয়ার জন্য খানিক ক্ষণের জন্য থামেন। সে সময় একটি পাথর তার কপালে ছোঁড়া হয় এবং তিনি তার জামার সামনের দিক উচু করলেন তা (রক্ত) মোছার জন্য। তখন একটি বিষ মাখানো তিন মাথার তীর তার বুক ভেদ করলো। কিছু বর্ণনায় আছে যে , তা তার হৃৎপিণ্ডভেদ করলো এবং তিনি বললেন ,“
আল্লাহর নামে এবং আল্লাহর সাহায্যে এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বিশ্বাসের ওপরে। ” এরপর তিনি তার মাথা আকাশের দিকে তুললেন এবং বললেন ,“
হে আল্লাহ , তুমি জানো তারা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে হত্যা করতে যে ছাড়া পৃথিবীতে নবীর আর কোন সন্তান নেই। ” এরপর তিনি তীরটি টেনে বের করলেন তার (বুক অথবা) পিঠ থেকে এবং রক্ত প্রবাহিত হলো ছোট্ট একটি নদীর মত। তিনি তা দিয়ে তার হাতের তালু ভরে ফেললেন এবং তা আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিলেন এবং একটি ফোঁটাও তা থেকে মাটিতে ফিরে এলো না। এরপর তিনি তার অন্য হাতের তালু রক্তে ভরে ফেললেন এবং তা মাথায় ও দাড়িতে মাখলেন এবং বললেন ,“
আমি চাই আমার নানা আল্লাহর রাসূল (সা.) এর সাথে আমার রক্তে রঙ্গীন হয়ে মিলিত হতে এবং আমি বলবো , হে রাসূলুল্লাহ , অমুক অমুক ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে। ”
শেইখ মুফীদ ইমাম হোসেইন (আ.) এর ঘোড়ায় চড়া ও ফোরাত নদীর তীরের দিকে যাওয়া এবং তার ভাই আব্বাস (আ.) এর শাহাদাত বর্ণনা করার পর বলেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) ফোরাত থেকে ফিরে তার তাঁবুর দিকে আসেন। শিমর বিন যিলজাওশান , তার কিছু সহযোগী নিয়ে তার কাছে এলো এবং তাকে সব দিক থেকে ঘেরাও করে ফেললো। মালিক বিন বিশর কিনদি নামে এক ব্যক্তি এগিয়ে এসে ইমাম হোসেইন (আ.) কে গালাগালি করতে লাগলো এবং তার তরবারি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করলো। তা তার রাতে পড়ার টুপি কেটে মাথায় পৌঁছে গেলো এবং রক্ত প্রবাহিত হতে শুরু করলো এবং টুপিটি ভরে ফেললো। ইমাম হোসেইন (আ.) বললেন ,“
তুমি এ হাত দিয়ে আর কখনো খাবে না ও পান করবে না এবং তুমি উঠে দাঁড়াবে (কিয়ামতের দিন) অত্যাচারীদের সাথে। ” তিনি মাথা থেকে টুপিটি সরালেন এবং একটি রুমাল চেয়ে তা দিয়ে মাথা বাঁধলেন। এরপর তিনি আরেকটি টুপি পড়লেন এবং তার উপর একটি পাগড়ী বাঁধলেন।
আমরা (লেখক) বলি যে , তাবারিও এরকমই বর্ণনা করেছেন , কিন্তু বলেছেন তিনি রাতের টুপির বদলে একটি আরবীয় রুমাল পড়েছিলেন এবং আরও বলেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) ক্লান্তহয়ে পড়েছিলেন এবং তখন কিনদার এক ব্যক্তি (মালিক বিন বিশর) এগিয়ে এলো এবং তার মাথার রুমালটি নিয়ে নিলো যা পশম দিয়ে তৈরী ছিলো। সে সেই রুমালটি তার স্ত্রী উম্মে আব্দুল্লাহর কাছে নিয়ে এলো যে ছিলো আল হুরের কন্যা এবং হোসেইন বিন আল হুর বাদির বোন। যখন সে তা থেকে রক্ত ধোয়ার চেষ্টা করলো , তার স্ত্রী বুঝতে পারলো যে তা ছিলো ইমাম হোসেইন (আ.) এর এবং সে বললো ,“
তুমি আল্লাহর রাসূল (সা.) এর নাতির কাপড় চুরি করে এনেছো আমার বাড়িতে ? তা নিয়ে এখান থেকে চলে যাও। ” তার বন্ধুরা বলে যে সে (মালিকের স্ত্রী) মৃত্যু পর্যন্ত রাগ করে ছিলো।
তাবারি বলেন যে , আবু মাখনাফ বর্ণনা করেছে , শিমর দশ জন কুফী পদাতিক সৈন্যকে একত্র করলো এবং ইমাম হোসেইন (আ.) এর নারীদের তাঁবগুলোর দিকে অগ্রসর হলো এবং ইমাম ও তার পরিবারের মাঝখানে অবস্থান গ্রহণ করলো। ইমাম হোসেইন (আ.) বললেন ,“
দুর্ভোগ তোমাদের উপর , যদি তোমরা ধর্মহীন মানুষ হয়ে থাকো এবং ফেরত যাওয়ার দিনকে (কিয়ামতকে) ভয় না পাও , কমপক্ষে তোমাদের পৃথিবীতে স্বাধীন চিন্তাসম্পন্ন এবং মর্যাদাবান লোক হও। তোমার আমার পরিবারের কাছ থেকে অসভ্য ও নির্বোধ লোকদের দূরে রাখো। ” শিমর বললো ,“
হে ফাতিমার সন্তান , নিশ্চয়ই তোমার অধিকার আছে। ” এরপর সে তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে ইমাম হোসেইন (আ.) এর দিকে অগ্রসর হলো। তাদের মাঝে ছিলো আবুল জুনুব আব্দুর রহমান জু ’ ফি , ক্বাশ ’ আম বিন আমর বিন ইয়াযীদ জু ’ ফি , সালেহ বিন ওয়াহাব ইয়াযবী , সিনান বিন আনাস নাখাই এবং খাত্তলি বিন ইয়াযীদ আসবাহি। শিমর তাদের উস্কানি দিলো ইমাম হোসেইন (আ.) কে হত্যা করার জন্য। সে আবুল জুনুবকে বললো , যে অস্ত্রে সুসজ্জিত ছিলো ,“
এগিয়ে যাও। ” সে বললো ,“
তুমি কেন আরও এগোচ্ছো না ?”
শিমর উত্তর দিলো ,“
তুমি কি আমাকে মুখের উপর উত্তর দাও ?”
সে বললো ,“
তাহলে তুমি কি আমাকে আদেশ করছো ?”
তারা পরস্পরকে গালিগালাজ শুরু করলো এবং আবুল জুনুব , যে ছিলো এক সাহসী লোক বললো ,“
আল্লাহর শপথ , আমি কত যে চাই এ বর্শাটি তোমার চোখে ঢুকিয়ে দিতে। ” শিমর তাকে ছেড়ে দিলো এবং বললো ,“
আল্লাহর শপথ , আমার ইচ্ছা করছে তোমাকে তরবারি দিয়ে আঘাত করতে। ”
বর্ণনায় আছে যে শিমর , সঙ্গে দশ জন পদাতিক সৈন্য নিয়ে , ইমাম হোসেইন (আ.) এর দিকে ফিরলো এবং তিনি তাদেরকে আক্রমণ করলেন ও ছত্রভঙ্গ করে দিলেন। তখন তারা তাকে আরও কঠিনভাবে ঘেরাও করলো। সে মুহূর্তে একটি শিশু ইমাম হোসেইন (আ.) এর দিকে ছুটে এলো ইমামের পরিবারের তাঁবু থেকে। ইমাম উচ্চ কণ্ঠে তার বোন সাইয়েদা যায়নাব (আ.) কে ডাক দিলেন ,“
এর যত্ন নাও । ” শিশুটি শুনলো না এবং দৌড় দিলো ইমামের কাছে পৌঁছা পর্যন্ত এবং তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। শেইখ মুফীদ তাকে চিহ্নিত করেছেন আব্দুল্লাহ বিন (ইমাম) হাসান নামে , শিশুটি বললো ,“
আল্লাহর শপথ , আমি আমার চাচার কাছ থেকে সরে যাবো না। ”
[তাবারির গ্রন্থে আছে] বাহর বিন কা‘
আব ইমাম হোসেইন (আ.) কে আঘাত করলো তার তরবারি দিয়ে এবং শিশুটি বললো ,“
দুর্ভোগ হোক তোমার হে খারাপ চরিত্রের লোকের সন্তান। তুমি কি আমার চাচাকে হত্যা করতে চাও ?”
অভিশপ্ত শয়তান তাকে তার তরবারি দিয়ে আঘাত করলো , তা শিশুটি তার দুহাতের উপর নিলো এবং তা গোশত পর্যন্ত কাটলো এবং ঝুলতে লাগলো। শিশুটি কেঁদে উঠলো ,“
ও মা , আমার সাহায্যে আসো। ” ইমাম তাকে কোলে তুলে নিলেন এবং বললেন ,“
হে ভাতিজা , সহ্য করো এ পরীক্ষা এবং তা তোমার জন্য বরকত মনে করো। তুমি শীঘ্রই মিলিত হবে তোমার ধার্মিক পিতৃপুরুষদের সাথে যারা হলেন আল্লাহর রাসূল (সা.) , ইমাম আলী বিন আবি তালিব (আ.) , হামযা (আ.) , জাফর (আত তাইয়ার) (আ.) এবং (ইমাম) হাসান বিন আলী (আ.) । ” এরপর তিনি তার হাত তুললেন দোআ করার জন্য এবং বললেন ,“
হে আল্লাহ , আকাশের বৃষ্টি ও পৃথিবীর প্রাচুর্য তাদের জন্য স্থগিত করে দাও। ইয়া রব , যদি তুমি তাদের আরও কিছু দিনের জন্য জীবন দাও , তাহলে তাদেরকে বিতাড়িত করো এবং শাসকদেরকে তাদের উপর সব সময় অসন্তুষ্ট রাখো , কারণ তারা আমাদের আমন্ত্রণ করেছে সাহায্য করার জন্য কিন্তু এরপর আমাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে এবং আমাদেরকে হত্যা করেছে। ”
[‘
মালহুফ ’ গ্রন্থে আছে] সাইয়েদ ইবনে তাউস বলেন যে , হুরমালাহ তার (আব্দুল্লাহ বিন হাসানের) দিকে একটি তীর ছুঁড়লো এবং তাকে হত্যা করলো , তখন সে তার চাচা ইমাম হোসেইন (আ.) এর হাতের উপর ছিলো (আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক তার উপর) ।
ইবনে আবদ রাব্বাহ তার‘
ইকদুল ফারীদ ’ গ্রন্থে বলেন যে , সিরিয়ার এক সৈন্যের দৃষ্টি পড়ে আব্দুল্লাহ বিন হাসান বিন আলী (আ.) এর উপর , যিনি ছিলেন মানুষের মধ্যে খুবই সুন্দর এবং সে বললো ,“
আমি এ কিশোরকে হত্যা করতে চাই। ” এক ব্যক্তি তাকে বললো ,“
দুর্ভোগ তোমার উপর , তার উপর থেকে হাত সরিয়ে নাও। ” কিন্তু সে কোন কান দিলো না এবং তাকে আঘাত করলো তরবারি দিয়ে এবং তাকে হত্যা করলো। যখন তরবারি তার কাছে পৌঁছে গেলো তিনি চিৎকার করে উঠলেন ,“
হে চাচা , আমার সাহায্যে আসেন। ” ইমাম বললেন ,“
এই তো আমি , এ তার কণ্ঠ যার আছে অল্প কজন সাথী এবং প্রচুর হত্যাকারী। ” ইমাম তার হত্যাকারীকে আক্রমণ করলেন এবং তার হাত বিচ্ছিন্ন করে দিলেন এবং অন্য একটি আঘাতে তাকে হত্যা করলেন।
আমি (লেখক) বলি যে , ইবনে আবদ রাব্বাহ পরিষ্কারভাবে ভুল করেছে। সে ক্বাসিম বিন হাসানকে আব্দুল্লাহ বিন হাসান বলে চিহ্নিত করেছে , ক্বাসিম বিন হাসানের শাহাদাত আমরা ইতোমধ্যেই আলোচনা করেছি।
তাবারি বলেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) তখন পদাতিক সৈন্যদের আক্রমণ করেন এবং তাদেরকে তার কাছে ঠেলে সরিয়ে দেন।
শেইখ মুফীদ বলেন যে , পদাতিক সৈন্যরা ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথীদেরকে বাম ও ডান দিক থেকে আক্রমণ করে এবং তাদেরকে হত্যা করে যতক্ষণ না তিন থেকে চারজন ইমামের সাথে রয়ে যান।
তাবারি এবং (ইবনে আসীর) জাযারি একই ভাবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে , যখন ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথে মাত্র তিন থেকে চারজন সাথী ছিলো তিনি একটি লম্বা জামা চাইলেন যা চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। তা ছিলো ইয়েমেনের এবং খুব সূক্ষ্ণভাবে সেলাই করা , তিনি এর দুই পাশের কিছু অংশ ছিঁড়ে দিলেন যেন তা তার শরীর থেকে খুলে নেয়া না হয়। তার একজন সাথী বললেন ,“
আমার মনে হয় আপনার পোশাকের নিচে বর্ম পড়লে ভালো করতেন ।”
ইমাম বললেন ,“
তা হলো অপমানকর জামা এবং তা পড়া আমার জন্য মানায় না ।”
বলা হয় যখন তিনি নিহত হন , বাহর বনি কা‘
আব তার জামাটি তার শরীর থেকে লুট করে নিয়ে যায় , তা আবরণহীন অবস্থায় রেখে।
আযদি বলেন যে , আমর বিন শুয়াইব বর্ণনা করেছে মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান থেকে যে , বাহর বিন কা‘
বের দুহাত দিয়ে শীতকালে পুঁজ বের হতো এবং গ্রীস্মকালে তা কাঠের লাঠির মত শুকিয়ে যেতো।
সাইয়েদ ইবনে তাউস বলেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) বলেছিলেন যে ,“
আমার জন্য একটি জামা আনো যা আমি আমার পোশাকের নিচে পড়বো যেন তারা আমাকে খালি গা করতে না পারে। ” পাতলা বর্ম আনা হলো , তিনি বললেন ,“
এগুলো মর্যাদাহীন ব্যক্তিদের পোষাক। ” এরপর তিনি একটি জীর্ণ ছেঁড়া জামা চাইলেন এবং তা ছিঁড়ে পোষাকের নিচে পড়লেন। যখন তিনি শহীদ হলেন তখন তা তার শরীর থেকে খুলে নেয়া হয়েছিলো।
শেইখ মুফীদ বলেন যে , যখন মাত্র তিন জন সাথী ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথে ছিলো তিনি শত্রুদের দিকে ফিরলেন এবং ঐ তিন জন তাকে রক্ষা করতে দাঁড়ালেন এবং সেনাবাহিনীকে তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন যতক্ষণ পর্যন্তনা তারা শহীদ হয়ে গেলেন এবং ইমাম একা হয়ে গেলেন। তিনি মাথায় এবং শরীরে আহত ছিলেন , এরপর তিনি তাদের আক্রমণ করলেন বাম দিক ও ডান দিক থেকে এবং তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দিলেন।
হামীদ বিন মুসলিম বলে যে ,“
আল্লাহর শপথ , আমি একজন বিদ্ধস্ত মানুষকে এত বীরত্ব প্রদর্শন করতে দেখি নি যার পুত্র সন্তানদের এবং বন্ধুদের হত্যা করা হয়েছে , তবুও তার হৃদয় ছিলো অপরাজেয়। পদাতিক সৈন্যরা তাকে আক্রমণ করেছে এবং তিনি তাদেরকে মোকাবিলা করেছেন এক নেকড়ের মত যে ভেড়ার পালকে আক্রমণ করে এবং তাদেরকে ডান বামে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ” যখন শিমর তা দেখলো , সে অশ্বারোহীদের ডাকলো এবং পদাতিক সৈন্যদের সারির পেছনে তাদের অবস্থান নিতে বললো। এরপর সে তীরন্দাজদের আদেশ করলো ইমামের প্রতি তীর ছুঁড়তে। এমন সংখ্যায় তীর তার দেহে বিদ্ধ হলো যে তা দেখতে সজারুর কাটার মত লাগলো , তখন তিনি তাদের উপর থেকে তার হাত সরিয়ে নিলেন এবং তারা এগিয়ে এলো এবং তার দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে থাকলো।
যায়নাব (আ.) তাঁবুর দরজায় এলেন এবং উমর বিন সা’
আদকে উচ্চ কণ্ঠে ডাকলেন , “ দুর্ভোগ তোমাদের জন্য হে উমর (বিন সা’
আদ) আবু আব্দুল্লাহকে হত্যা করা হচ্ছে আর তুমি তাকিয়ে দেখছো ?”
সে কোন উত্তর দিলো না এবং তিনি আবার বললেন ,“
দুর্ভোগ তোমার উপর , তোমাদের মধ্যে কি একজন মুসলমানও নেই ?”
কিন্তু আবারও কেউ উত্তর দিলো না।
তাবারি বলেন যে , উমর বিন সা’
আদ ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে গেলো এবং যায়নাব (আ.) বললেন ,“
হে উমর বিন সা’
আদ , আবু আব্দুল্লাহকে হত্যা করা হচ্ছে আর তুমি তাকিয়ে দেখছো ?”
বর্ণনাকারী বলে যে , আমি যেন এখনও দেখতে পাচ্ছি তার গাল ও দাড়িতে অশ্রু ঝরছে এবং সে যায়নাব (আ.) এর দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
সাইয়েদ ইবনে তাউস বলেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) অনেক আঘাতে ক্লান্তহয়ে পড়লেন এবং তাকে সজারুর মত (তীরের কারণে) দেখতে লাগছিলো। সালেহ বিন ওয়াহাব ইয়াযনী একটি বর্শা তার একপাশে বিদ্ধ করে এবং তিনি ঘোড়া থেকে মাটিতে পড়ে যান বাম গালের ওপরে। এরপর তিনি বললেন ,“
আল্লাহর নামে , এবং আল্লাহর অনুমতিতে এবং আল্লাহর রাসূলের বিশ্বাসের ওপরে। ” এরপর উঠে দাঁড়ালেন।
বর্ণনাকারী বলে যে , সাইয়েদা যায়নাব (আ.) তাঁবুর দরজা থেকে বেরিয়ে এলেন এবং উচ্চ কণ্ঠে বললেন ,“
হে আমার ভাই , হে আমার অভিভাবক , হে আমার পরিবার , হায় যদি আকাশ পৃথিবীতে ভেঙ্গে পড়তো এবং পাহাড়গুলো চূর্ণ হয়ে মরুভুমিতে ছড়িয়ে যেতো!”
বর্ণিত হয়েছে , শিমর তার সাথীদের উচ্চ কণ্ঠে ডেকে বললো ,“
এ মানুষটির জন্য তোমরা অপেক্ষা করছো কেন ?”
তখন তারা তাকে সব দিক থেকে আক্রমণ করলো।
হামীদ বিন মুসলিম বলে যে , ইমাম হোসেইন (আ.) একটি পশমী লম্বা জামা পড়েছিলেন এবং মাথায় পাগড়ী এবং চুলে ওয়াসমাহর কলপ ছিলো। আমি তাকে শহীদ হওয়ার আগে বলতে শুনলাম , যখন তিনি পায়ের উপর ছিলেন , কিন্তু যুদ্ধ করছিলেন যেন ঘোড়ায় চড়ে আছেন এবং নিজেকে তীর থেকে রক্ষা করছিলেন এবং অশ্বারোহী বাহিনী সব দিকে ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছিলো এবং তিনি তাদের তরবারি দিয়ে আক্রমণ করলেন ,“
তোমরা একত্রে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছো ? আল্লাহর শপথ , আমার পরে তোমরা আর কাউকে হত্যা করবে না যার হত্যাতে আল্লাহ তোমাদের উপর এর চাইতে বেশী ক্রোধান্বিত হবেন। আল্লাহর শপথ , আমি চাই যে আল্লাহ আমাকে ভালোবাসুন তোমাদের ঘৃণার পরিবর্তে এবং তিনি আমার প্রতিশোধ নিন তোমাদের উপর এমন এক মাধ্যমে যে সম্পর্কে তোমরা সচেতন নও। সাবধান , যদি তোমরা আমাকে হত্যা করো , আল্লাহও তোমাদেরকে হত্যা করবেন এবং তোমাদের রক্ত ঝরাবেন। এরপর তিনি তোমাদের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিবেন না যতক্ষণ না তিনি ভয়ানক শাস্তিকে দ্বিগুণ করবেন। ”
বর্ণিত আছে যে , তিনি সেদিন দীর্ঘ সময়ের জন্য বেঁচে ছিলেন এবং সেনাবাহিনী যদি চাইতো তাকে হত্যা করতে পারতো। কিন্তু তারা এ বিষয়ের জন্য একে অন্যকে উপযুক্ত মনে করলো এবং প্রত্যেক দল চাইলো অন্যরা তাকে হত্যা করুক। শিমর তাদের মাঝে চিৎকার করে বললো , “ কিসের জন্য তোমরা অপেক্ষা করছো ? এ লোককে হত্যা করো। তোমাদের মা তোমাদের জন্য কাঁদুক। ” এরপর তারা তাকে সবদিক থেকে আক্রমণ করলো।
শেইখ মুফীদ বলেন যে , যারাহ বিন শারীক তার বাম হাতকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং তার কাঁধে তরবারির আরেকটি আঘাত বসিয়ে দেয় এবং তিনি তার মুখের উপর পড়ে গেলেন।
তাবারি বলেন যে , তখন তারা পিছনে হটে গেলো এবং তিনি ছিলেন খুবই খারাপ অবস্থায় এবং তিনি উঠে দাঁড়ালেন ও পড়ে গেলেন। সেই মুহূর্তে সিনান বিন আনাস বিন আমর নাখাই তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত করলো এবং মাটিতে ফেলে দিলো।
শেইখ মুফীদ ও তাবারসি বলেন যে , খাওলি বিন আল আসবাহি দ্রুত এগিয়ে এলো এবং ঘোড়া থেকে নেমে এলো তার মাথা বিচ্ছিন্ন করতে , কিন্তু সে কাঁপতে লাগলো। শিমর বললো , “ আল্লাহ তোমার হাত ভেঙ্গে দিক , কেন তুমি কাঁপছো ?”
এরপর সে ঘোড়া থেকে নেমে এলো এবং তার মাথা কেটে ফেললো।
আবুল আব্বাস আহমেদ বিন ইউসুফ দামিশকি ক্বিরমানি , যিনি ১০১৯ হিজরিতে মারা যান , তার‘
আখবারুল দাওল ’ গ্রন্থে বলেছেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) এর পিপাসা তীব্র হয়ে উঠলো , কিন্তু তারা তাকে পানি পান করার জন্য পানি দেয় নি। এক পেয়ালা পানি তার হাতে এলো এবং তিনি উপুড় হলেন তা পান করার জন্য। হাসীন বিন নামীর তার দিকে একটি তীর ছুঁড়লো , যা তার থুতনি ভেদ করলো এবং পেয়ালাটি রক্তে ভরে গেলো। তখন তিনি তার দুহাত আকাশের দিকে তুলে বললেন ,“
হে আল্লাহ , তাদের সংখ্যা কমিয়ে দাও , তাদের প্রত্যেককে হত্যা করো এবং তাদের মধ্য থেকে একজনকেও পৃথিবীর উপর ছেড়ে দিও না। ” তখন তারা তাকে সব দিক থেকে আক্রমণ করলো এবং তিনি তাদেরকে বাম ও ডান দিকে তাড়িয়ে দিলেন যতক্ষণ পর্যন্তনা যারাহ বিন শারীক তার বাম কাঁধে আঘাত করে এবং আরেকটি আঘাত কাঁধে ঢুকিয়ে দেয় এবং তাকে মাটিতে ফেলে দেয়। শিমর তখন তার ঘোড়া থেকে নেমে এসে তার মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং তা খাওলি আসবাহির হাতে হস্তান্তর করে। এরপর তারা তার জামা- কাপড় লুট করে।
আমি (লেখক) বলি যে , সাইয়েদ ইবনে তাউস , ইবনে নিমা , শেইখ সাদুক্ব , তাবারি , ইবনে আসীর জাযারি , ইবনে আব্দুল বির , মাসউদী এবং আবুল ফারাজ বলেছেন যে , অভিশপ্ত সিনান (বিন আনাস) তার মাথা বিচ্ছিন্ন করেছিলো।
সাইয়েদ ইবনে তাউস বলেন যে , সিনান এগিয়ে এলো এবং বললো ,“
যদিও আমি জানি যে সে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নাতি এবং তার মা-বাবা মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ , তবুও আমি তার মাথা কাটবো। ” এরপর সে তার পবিত্র ঘাড়ে আঘাত করে তার তরবারি দিয়ে এবং তার পবিত্র ও সম্মানিত মাথা আলাদা করে ফেলে।
একজন কবি এ সম্পর্কে বলেছেন ,“
কোন দুর্যোগ হোসেইনের দুর্যোগ থেকে বড় হতে পারে যখন সিনানের হাত তাকে হত্যা করছিলো। ”
আবু তাহির মুহাম্মাদ বিন হাসান (অথবা হোসেইন) বারাসি (অথবা নারাসি)‘
মা’
আলিমুদ দ্বীন ’ গ্রন্থে বলেন যে , ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) বলেছেন , যখন ইমাম হোসেইন (আ.) এর বিষয়টি এই পর্যায়ে পৌঁছে যায় , তখন ফেরেশতারা আল্লাহর সামনে কাঁদতে থাকে এবং বলে , “ হে আল্লাহ এ হোসেইন আপনার মেহমান , সে আপনার রাসূলের নাতি ” , তখন আল্লাহ ইমাম আল ক্বায়েম (আল মাহদী)-এর একটি ছবি দেখালেন এবং বললেন ,“
আমি তাদের উপর প্রতিশোধ নিবো এর মাধ্যমে। ”
বর্ণিত হয়েছে যে , মুখতার সিনানকে গ্রেফতার করে এবং তার প্রতিটি আঙ্গুল একের পর এক কেটে ফেলে। এরপর সে হাত দুটো ও পা দুটো কেটে ফেলে এবং তাকে একটি বড় পাত্রে ছুঁড়ে ফেলে , যাতে ছিলো ফুটন্তজলপাই তেল।
বর্ণনাকারী বলেন , যে মুহূর্তে তারা ইমাম হোসেইন (আ.) এর মাথা কেটে ফেললো এক প্রচণ্ডঘুর্ণিঝড় আবির্ভূত হলো এবং পুরো দিগন্তকে অন্ধকারে ছেয়ে ফেললো। এরপর এক লাল ঝড় বইলো যার কারণে কিছু দেখা যাচ্ছিলো না এবং সেনাবাহিনী ভাবলো আল্লাহর অভিশাপ বোধ হয় নামলো। এরকম এক ঘন্টা চললো এবং তার পর থামলো।
হিলাল বিন নাফে ’ বলেন যে , আমি উমর বিন সা’
আদের সাথীদের সাথে দাঁড়িয়ে ছিলাম এবং কেউ একজন চিৎকার করে বললো ,“
অধিনায়ক , সুসংবাদ নিন , শিমর হোসেইনকে হত্যা করেছে। ” তখন আমি তার শাহাদাতের স্থানে গেলাম এবং তার পাশে দাঁড়ালাম এবং তিনি মারা যাচ্ছিলেন। আল্লাহর শপথ , আমি এর চেয়ে ভালো কোন লাশ যা রক্তে ভেজা ছিলো এবং তার চেহারার চাইতে আলোকিত কোন চেহারা দেখিনি। তার চেহারার আলো এবং অসাধারণ সৌন্দর্য আমাকে তার মৃত্যু ভুলিয়ে দিলো।
এ অবস্থায় তিনি পানি চাইলেন এবং এক ব্যক্তি তাকে বললো ,“
আল্লাহর শপথ , তুমি তা পাবে না যতক্ষণ না জ্বলন্তআগুনে (জাহান্নামে) প্রবেশ কর। ” (আউযুবিল্লাহ) । আমি ইমামকে বলতে শুনলাম ,“
দুর্ভোগ হোক তোমার , আমি জ্বলন্ত আগুনের দিকে যাচ্ছি না , না আমি সেখানে ফুটন্তপানির স্বাদ নিবো , বরং আমি যাচ্ছি আমার নানা আল্লাহর রাসূল (সা.) এর কাছে এবং আমি বাস করবো তার সত্যপূর্ণ বাসস্থানে আল্লাহর আশ্রয়ে , যিনি সর্বশক্তিমান এবং আমি পবিত্র পানি পান করবো এবং এরপর আমি তার কাছে অভিযোগ করবো তোমরা আমার সাথে কী করেছো ” । তা শুনে তাদের সবাই ক্রুদ্ধ হলো। যেন তাদের বুকের ভেতর কোন দয়ামায়া ছিলো না এবং এ পরিস্থিতিতে যখন তিনি তাদের সাথে কথা বলছিলেন তারা তার মাথা কেটে নিলো। আমি তাদের নৃশংসতায় আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম এবং বললাম ,“
আমি আর কোন দিন কোন কাজে এখন থেকে তোমাদের সাথে থাকবো না। ”
কামালুদ্দিন মুহাম্মাদ বিন তালহা তার‘
মাতালিবুস সা’
উল ’ -এ বলেন যে , আল্লাহর হাবীব রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নাতির মাথা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিলো একটি ধারালো তরবারি দিয়ে। এরপর তার মাথাকে ওপরে তুলে বর্শার আগায় , যা ধর্মত্যাগীদের জন্য করা হয় , এবং তারা একে প্রদর্শন করে বিভিন্ন শহরের রাস্তায় আল্লাহর বান্দাদের মাঝে এবং তারা তার পরিবার ও সন্তানদেরকে নিয়ে যায় অসম্মানের সাথে এবং উটের উপর তাদের চড়িয়ে দেয় বসার জন্য কোন জিন ছাড়াই। একথা জেনেও যে , তারা রাসূলের বংশধর , অথচ তাদের প্রতি ভালোবাসা বাধ্যতামূলক যেভাবে কোরআনে ও প্রকৃত বিশ্বাসে উল্লেখ আছে। যদি আকাশগুলো ও পৃথিবীর কথা বলার শক্তি থাকতো তাহলে তারা তাদের জন্য কাঁদতো ও বিলাপ করতো। যদি অবিশ্বাসীরা এ বিষয়ে জানতো তারা তাদের জন্য কাঁদতো ও বিলাপ করতো। যদি আইয়ামে জাহেলিয়াত (অজ্ঞতার যুগ)-এর সময়কার উদ্ধত লোকগুলো উপস্থিত থাকতো তারাও তাদের জন্য কাঁদতো এবং তাদের শাহাদাতে পরস্পরকে সমবেদনা জানাতো। যদি নিপীড়নকারী অত্যাচারীরা শাহাদাতের ঘটনাবলীর সময় উপস্থিত থাকতো তারা তাদের সহযোগিতা ও সাহায্য করতো। আক্ষেপ সেই দুর্যোগের জন্য যা খোদাভীরুদের হৃদয়কে আঘাত করেছে এবং তা উত্তরাধিকার সূত্রে এসেছে। আক্ষেপ সেই ভয়ানক দুর্যোগের জন্য যা বিশ্বাসীদের হৃদয়কে করেছে শোকার্ত ও ব্যথাতুর করেছে তাদের জন্য যারা ভবিষ্যতে আসবে। আফসোস নবীর বংশধরের জন্য , যাদের রক্ত ঝরানো হয়েছে , এবং মুহাম্মাদ (সা.) এর পরিবারের জন্য যাদের তরবারি গতি হারিয়ে ফেলেছে এবং আলীর বংশধরের জন্য আফসোস যারা সাহায্য থেকে বঞ্চিত ছিলো এবং তাদের অভিভাবকদের হত্যা করা হয়েছিলো। আফসোস হাশিমীদের জন্য। যাদের পবিত্রতা লংঘন করা হয়েছিলো এবং যাদের রক্ত ঝরানো বৈধ বলে মনে করা হয়েছিলো।
আলী বিন আসবাত থেকে‘
নাওয়াদির ’ -এ বর্ণিত হয়েছে , তিনি বর্ণনা করেছেন তার কিছু সাথী থেকে , যে ইমাম মুহাম্মাদ আল বাক্বির (আ.) বলেছেন ,“
দশই মহররম , আমার বাবা (ইমাম যায়নুল আবেদীন আ.) ভীষণ অসুস্থ ছিলেন এবং তাঁবুর ভিতরে ছিলেন। আমি দেখলাম আমার বন্ধুরা এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করছে ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথে এবং তার জন্য পানি আনছে। একবার তিনি সেনাবাহিনীর ডান অংশকে আক্রমণ করলেন এবং তার পর বাম অংশ এবং একবার মাঝখানের অংশকে। তারা তাকে হত্যা করলো এমনভাবে যে রাসূল (সা.) তাদেরকে একটি পশুকেও এভাবে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। তারা তাকে হত্যা করে তরবারি , বর্শা , পাথর , লম্বা লাঠি এবং ছোট লাঠি দিয়ে। এরপর তারা তার দেহকে ঘোড়ার খুর দিয়ে পদদলিত করে। ”
আমি (লেখক) বলি যে , ইমাম হোসেইন (আ.) শুক্রবার দিন , ১০ই মহররম শাহাদাত বরণ করেন , একষট্টি হিজরিতে , যোহরের নামাযের পর। তিনি সাতান্ন বছর বয়সী ছিলেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে যে তাকে শহীদ করা হয়েছিলো শনিবার অথবা সোমবার , কিন্তু অধিকতর সঠিক বলে মনে হয় শুক্রবার।
আবুল ফারাজ (ইসফাহানি) বলেন যে , আম্মাহগণ (যারা শিয়া নন) সোমবার সম্পর্কে যা বর্ণনা করেছেন তা একটি ভুল এবং তা কোন রেওয়াতে সমর্থিত নয়। এটি এজন্য যে , যে মহররমে (৬১ হিজরি) শাহাদাত ঘটে তার প্রথম দিনটি ছিলো ভারতীয় জ্যোর্তিরবিদ্যার দিনক্ষণের সকল হিসাবে বুধবার , তাই ১০ই মহররম সোমবার হতে পারে না (বরং শুক্রবার) , এবং এটি একটি প্রমাণ যা রেওয়াতের সত্যতাকে নিশ্চিত করে।
শেইখ মুফীদ ইমাম হোসেইন (আ.) এর শাহাদাত সম্পর্কে ১০ই মহররমকে উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন তা ছিলো শুক্রবারের প্রভাত। অন্যরা বলেন শনিবার , উমর বিন সা’
আদ তার বাহিনী জড়ো করেছিলো এবং পূর্ববর্তী সংবাদ অনুযায়ী তা ছিলো শুক্রবার। আর কারবালায় প্রবেশ সম্পর্কে শেইখ মুফীদ বলেন তা ছিলো ২রা মহররম বৃহস্পতিবার , একষট্টি হিজরিতে।
সিবতে ইবন জওযির‘
তাযকিরাহ ’ তে বর্ণিত আছে যে , ইমাম হোসেইন (আ.) কে শহীদ করা হয় শুক্রবার , যোহর ও আসরের নামাযের মধ্যবর্তী সময়ে। কারণ তিনি তার সাথীদের নিয়ে সালাতুল খওফ পড়েছিলেন।
একই বইতে উল্লেখ আছে তার হত্যাকারীদের সম্পর্কে বেশ কিছু সংবাদ আছে। হিশাম বিন মুহাম্মাদ (কালবি) বলেন যে , সিনান বিন আনাস নাখাঈ ছিলো হত্যাকারী , অন্যজন ছিলো হাসীন বিন নামীর , যে তার দিকে একটি তীর ছুঁড়ে ছিলো এবং এগিয়ে এসে তার মাথা বিচ্ছিন্ন করে ছিলো। এরপর সে তার ঘোড়ার ঘাড় থেকে তালিঝয়ে দেয় যে ন (উবায়দুল্লাহ) ইবনে যিয়াদ এতে খুশী হয়। তৃতীয় নামটি হলো মুহাজির বিন আওস তামিমি , চতুর্থ জন কাসীর বিন আব্দুল্লাহ শা ’ আবি , পঞ্চম জন শিমর বিন যিলজাওশান। আমরা বলি ষষ্ঠ জন ছিলো খাওলি বিন ইয়াযীদ বিন আসবাহি (আল্লাহর অভিশাপ পড়ুক ইমাম হোসেইন (আ.) এর সকল হত্যাকারীদের উপর) ।
মুহাম্মাদ বিন তালহা শাফেঈ এবং আলী বিন ঈসা ইরবিলি ইমামি বলেন যে , উমর বিন সা’
আদ তার সাথীদের আদেশ করলো ,“
সামনে যাও এবং তার মাথা কেটে ফেলো। ” নাসর বিন হারশাহ যাবাবি সামনে অগ্রসর হলো এবং ইমাম হোসেইন (আ.) এর ঘাড়ে বার বার আঘাত করলো। উমর বিন সা’
আদ ক্রোধান্বিত হলো এবং তার ডান দিকে দাঁড়ালো এক ব্যক্তিকে ইশারা করার পর বললো ,“
আক্ষেপ তোমার জন্য , এগিয়ে যাও এবং হোসেইনকে মুক্তি দাও। ” খাওলি বিন ইয়াযীদ (আল্লাহ তাকে চিরকালের জন্য জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করান) এগিয়ে এলো এবং তার মাথা কেটে ফেললো।
দায়নূরী বলেন যে , সিনান বিন আওস নাখাঈ একটি বর্শা তার দিকে ঠেলে দেয় এবং তাকে মাটিতে ফেলে দেয়। তখন খাওলি বিন ইয়াযীদ আসবাহি অগ্রসর হলো তার মাথা বিচ্ছিন্ন করার জন্য। তার হাত কাঁপছিলো এবং তার ভাই কা‘
বাল বিন ইয়াযীদ তার মাথা বিচ্ছিন্ন করে এবং তার ভাই খাওলির হাতে তা দেয়।
ইবনে আবদ রাব্বাহ বলেন যে , সিনান বিন আনাস তাকে হত্যা করে এবং খাওলি বিন ইয়াযীদ আসবাহি , যে ছিলো বনি হামীর থেকে , তার মাথা কেটে ফেলে। সে তার মাথাটি উবায়দুল্লাহর কাছে নিয়ে গেলো এবং বললো ,“
আমার ঘোড়ার থলেতে প্রচুর সম্পদ তুলে দিন ...। ” (যা পরে উল্লেখ করা হবে।)
ইমাম জাফর আস সাদিকা.(আ.) বলেছেন , যখন ইমাম হোসেইন (আ.) এর উপর একটি আঘাত করা হলো , তিনি তার ঘোড়া থেকে পড়ে গেলেন এবং তারা দৌঁড়ে আসলো তার মাথা কেটে ফেলতে। একটি কণ্ঠ আকাশ থেকে শোনা গেলো ,“
হে , যে জাতি তাদের নবীর ইন্তেকালের পর উদ্ধত হয়ে গেছে এবং পথভ্রষ্ট হয়েছে , আল্লাহ যেন তাদের রোযা ও ঈদুল ফিতরের অনুগ্রহ দান না করেন। ” তখন তিনি (ইমাম আ.) বললেন , অতএব আল্লাহর শপথ , তারা সমৃদ্ধি লাভ করে নি এবং তারা বৃদ্ধি পেতে থাকবে যতক্ষণ না প্রতিশোধ গ্রহণকারী (ইমাম মাহদী) উঠে দাঁড়াবেন ইমাম হোসেইনের জন্য।
ইবনে ক্বাওলাওয়েইহ কুম্মি বর্ণনা করেছেন হালাবি থেকে , যিনি বর্ণনা করেছেন ইমাম সাদিক্ব (আ.) থেকে যে , যখন ইমাম হোসেইন (আ.) কে শহীদ করা হলো , কুফার সেনাবাহিনীর মধ্যে কেউ একজন চিৎকার দিলো। যখন তাকে এজন্য তিরস্কার করা হলো , সে বললো ,“
কেন আমি কাঁদবো না যখন আমি দেখছি যে আল্লাহর রাসূল (সা.) দাঁড়িয়ে আছেন একবার তিনি পৃথিবীর দিকে দেখছেন এবং অন্য সময় তেমাদেরদ্ধেযর দিকে দেখছেন এবং আমি ভয় পাচ্ছি পাছে তিনি পৃথিবীবাসীর উপর অভিশাপ দেন এবং তোমরা ধ্বংস হয়ে যাও। ” কুফার সেনাবাহিনী বললো , “ সে পাগল। ” তাদের মধ্যে যারা অনুতপ্ত ছিলো তারা বললো ,“
আল্লাহর শপথ , আমরা আমাদের প্রতি কী করেছি ? আমরা বেহেশতের যুবকদের সর্দারকে হত্যা করেছি সুমাইয়াহর সন্তানের জন্য। ” এরপর তারা উবায়দুল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলো এবং তাদের অবস্থা সে পর্যন্ত পৌঁছলো যা হওয়া উচিত। বর্ণনাকারী বলেন আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম ,“
আমি তোমাদের জন্য কোরবান হই , কে ছিলো সেই আহ্বানকারী ?”
তারা বললো ,“
আমরা অনুমান করি তিনি ছিলেন জিবরাঈল। ”
মাশহাদির বর্ণনায় আছে যে , উম্মে সালামা (আ.) এর কাছে সালামা গেলেন , তখন তিনি কাঁদছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন ,“
আপনি কাঁদছেন কেন ?”
তিনি বললেন , আমি আল্লাহর রাসূল (সা.) কে স্বপ্নে দেখলাম তার মাথা ও দাড়ি ধুলায় মাখা। আমি জিজ্ঞেস করলাম ,“
হে রাসূলুল্লাহ (সা.) আপনার কী হয়েছে যে আপনি ধুলায় মাখা ? তিনি বললেন ,“
এই মাত্র আমি আমার হোসেইনের হত্যাকাণ্ডপ্রত্যক্ষ করেছি। ”
ইবনে হাজারের‘
সাওয়ায়েক্বে মুহরিক্বা ’ -এ বর্ণিত আছে যে , ইমাম হোসেইন (আ.) এর শাহাদাতের দিন যে চিহ্নগুলি দেখা গিয়েছিলো তার মধ্যে একটি ছিলো আকাশ এত কালো হয়ে গিয়েছিলো যে , দিনের বেলা তারা দেখা গিয়েছিলো। যে কোন পাথর তুললে তার নিচে তাজা রক্ত দেখা গিয়েছিলো এবং আরও বলা হয় আকাশ লাল হয়ে গিয়েছিলো তার শাহাদাতে এবং সূর্য পীচের মত কালো। তারাগুলো দিনের বেলা দেখা যাচ্ছিলো এবং মানুষ মনে করেছিলো কিয়ামতের দিন (পুনরুত্থানের দিন) চলে এসেছে। সে দিন সিরিয়াতে যে কোন পাথর উঠানো হয়েছিলো তার নিচে তাজা রক্ত দেখা গিয়েছিলো।