শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)5%

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড) লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইতিহাস

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 90 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 51363 / ডাউনলোড: 5502
সাইজ সাইজ সাইজ
শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

1

2

3

4

5

6

7

8

9

10

তৃতীয় অধ্যায়

শাহাদাতের পরের ঘটনাবলী সম্পর্কে

পরিচ্ছেদ - ১

শাহাদাতের পরের ঘটনাবলী

বর্ণনাকারী বলে যে , ইমাম হোসেইন (আ.) এর শাহাদাতের পর তারা তার পোশাক লুট করে নিয়ে যায়। তার গায়ের জামা নিয়ে যায় ইসহাক বিন হেইওয়াহ হাযরামি , সে তা পরার পর তার কুষ্ঠ রোগ দেখা দেয় এবং তার চুল পড়ে যায়।

বর্ণিত আছে যে , তার জামা একশত বা তার বেশী তীর , বর্শা এবং তরবারির আঘাতের চিহ্ন বহন করছিলো।

ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) বলেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) এর দেহতে তেত্রিশটি বর্শার আঘাত ও চৌত্রিশটি তরবারির আঘাত ছিলো। তার পাজামা নিয়ে যায় বাহর বিন কা আব তামিমি এবং বর্ণিত আছে যে সে শয্যাশায়ী হয়ে গিয়েছিলো এবং তার পাগুলো অবশ হয়ে গিয়েছিলো। তার পাগড়ি কেড়ে নেয় আখনাস বিন মুরসিদ হাযরামি যে তা মাথায় পড়েছিলো এবং অন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। তার স্যান্ডেলগুলো কেড়ে নেয় আসাদ বিন খালিদ এবং তার আংটি নেয় বাজদুল বিন সালীম কালবি যে তার আঙ্গুল কেটে তা নিয়ে যায় (আল্লাহর অভিশাপ তার ওপরে) । যখন মুখতার তাকে (বাজদুলকে) গ্রেফতার করলো সে তার হাত ও পা কেটে ফেলেছিলো , সে তার রক্ত প্রবাহিত হতে দিয়েছিলো যতক্ষণ না তার মৃত্যু হয়। ইমামের গোসলের পর পড়ার জন্য পশমের তৈরী লম্বা জামা ছিলো তা লুট করে নিয়ে যায় ক্বায়েস বিন আল আশআস। তার বর্ম নিয়ে যায় উমর বিন সা আদ এবং যখন তাকে হত্যা করা হয় মুখতার তা উপহার দেয় তার হত্যাকারী আবি উমরোহকে। তার তরবারি নিয়ে যায় জামী ’ বিন খালক আউদী , আবার এও বর্ণিত হয়েছে যে , এক তামিমি ব্যক্তি আসাদ বিন হানযালাহ অথবা ফালাফিস মুনশালি তা নিয়ে যায়। তার বিদ্যুৎগতি তরবারিটি যুলফিক্বার ছিলো না , ছিলো অন্য একটি যা ছিলো নবুয়ত ও ইমামতের একটি আমানত এবং তার বিশেষ আংটিও যা তার পরিবারের নিরাপত্তা হেফাযতে ছিলো।

শেইখ সাদুক্ব থেকে মুহাম্মাদ বিন মুসলিম বর্ণনা করেন যে , ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) কে প্রশ্ন করা হয়েছিলো ইমাম হোসেইন (আ.) এর আংটি সম্পর্কে যে , কে তা নিয়েছে যখন তার পোশাক লুট করা হয়েছে। ইমাম (আ.) উত্তর দিলেন , যে রকম বলা হয় তেমন নয়। ইমাম হোসেইন (আ.) ওসিয়ত করে দিয়ে যান তার সন্তান ইমাম আলী যায়নুল আবেদীন (আ.) এর কাছে এবং হস্তান্তর করে গিয়েছিলেন তার আংটি এবং ইমামতের জিনিসপত্র যা এসেছিলো আল্লাহর রাসূল (সা.) থেকে আমিরুল মুমিনীন আলী (আ.) এর কাছে। ইমাম আলী (আ.) তা ইমাম হাসান (আ.) এর কাছে হস্তান্তর করেন এবং ইমাম হাসান (আ.) তা ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে দিয়ে যান , যা পরবর্তীতে আমার পিতা (ইমাম মুহাম্মাদ আল বাকির (আ.)-এর কাছে আসে এবং তা আমার কাছে পৌঁছেছে। এটি আমার কাছে আছে এবং আমি জুম ’ আর দিন পড়ি এবং তা পড়ে নামায পড়ি। ” মুহাম্মাদ বিন মুসলিম বলেন যে , আমি শুক্রবার দিন তার সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলাম এবং তার সাথে নামায পড়লাম। যখন তিনি নামায শেষ করলেন তিনি তার হাত আমার দিকে লম্বা করলেন এবং আমি আংটিটি দেখলাম তার আঙ্গুলে যাতে খোদাই করে লেখা আছে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই , আল্লাহ সাথে সাক্ষাতে প্রস্তুত আছি । তখন ইমাম বললেন , এটি হলো আমার প্রপিতামহ আবু আব্দুল্লাহ হোসেইন (আ.) এর আংটি ।

শেইখ সাদুক্বের আমালি ’ ও রাওযাতুল ওয়ায়েযীন ’ -এ বর্ণিত আছে যে , ইমাম হোসেইন (আ.) এর ঘোড়া তার কেশর ও কপালকে তার রক্তে রঞ্জিত করে নেয় এবং দৌঁড়াতে শুরু করে ও চিৎকার করতে থাকে। যখন নবীর নাতনীরা তার চিৎকার শুনতে পেলেন তারা তাঁবু থেকে বেরিয়ে এলেন এবং ঘোড়াটিকে দেখলেন তার আরোহী ছাড়া , এভাবে তারা জানতে পারলেন ইমাম হোসেইন (আ.) শহীদ হয়ে গেছেন।

ইবনে শহর আশোব তার মানাক্বিব ’ -এ এবং মুহাম্মাদ বিন আবি তালিব বলেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) এর ঘোড়া সেনাবাহিনীর ঘেরাও থেকে পালিয়ে এলো এবং তার কপালের চুল রক্তে ভেজালো। সে দ্রুত নারীদের তাঁবুর দিকে ছুটে গেলো এবং চিৎকার করতে লাগলো। এরপর সে তাঁবুর পিছনে গেলো এবং তার মাথাকে মাটিতে আঘাত করতে লাগলো যতক্ষণ না মৃত্যুবরণ করলো। যখন সম্মানিতা নারীরা দেখলেন ঘোড়াটিতে আরোহী নেই তারা বিলাপ শুরু করলেন এবং সাইয়েদা উম্মে কুলসুম (আ.) তার মাথাতে হাত দিয়ে আঘাত করতে লাগলেন এবং উচ্চ কণ্ঠে বললেন , হে মুহাম্মাদ , হে নানা , হে নবী , হে আবুল ক্বাসিম , ও আলী , ও জাফর , ও হামযা , ও হাসান , এই হলো হোসেইন , যে মরুভূমিতে পড়ে গেছে এবং তার মাথা ঘাড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তার পাগড়ী ও পোষাক লুট করে নিয়ে গেছে। ” এ কথা বলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন।

সুপরিচিত যিয়ারতে নাহিয়াতে আছে , এবং আপনার ঘোড়া তাঁবুর দিকে চলে গেলো , ডাক দিতে দিতে এবং কাঁদতে কাঁদতে , এরপর যখন আপনার পরিবারের নারী সদস্যরা আপনার ঘোড়াকে আরোহী ছাড়া দেখলেন এবং ঘোড়ার জিনকে বাঁকা দেখলেন , তারা তাঁবু থেকে বাইরে বেরিয়ে এলেন , আগোছালো চুল নিয়ে , তাদের চেহারাতে আঘাত করে মাথার চাদর ছাড়া , বিলাপ করে , কাঁদতে কাঁদতে , সম্মানিত হওয়ার পর হতাশ অবস্থায় , তারা শাহাদাতের জায়গাটিতে দৌঁড়ে গেলেন এবং শিমর (অভিশপ্ত) আপনার বুকের উপর বসেছিলো , তার তরবারি চালাচ্ছিলো (আপনার ঘাড়ে) আপনাকে জবাই করার জন্য এবং আপনার চুল তার মুঠিতে ধরা ছিলো , সে আপনাকে জবাই করছিলো তার ভারতীয় তরবারি দিয়ে , আপনার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেলো এবং আপনার শ্বাস প্রশ্বাস থেমে গেলো (আপনার মাথা বিচ্ছিন্ন করা হলো) এবং আপনার মাথা বর্শার আগায় তোলা হল । ১৭

পরিচ্ছেদ-

ইমাম হোসেইন (আ.) এর জিনিসপত্র লুট ও তার আহলুল বাইতের কান্না ও বিলাপ

সাইয়েদ ইবনে তাউস বর্ণনা করেন যে , একজন নারী গৃহকর্মী ইমাম হোসেইন (আ.) এর তাঁবু থেকে বেরিয়ে এলো এবং এক ব্যক্তি তাকে বললো , হে আল্লাহর দাসী , তোমার সর্দারকে হত্যা করা হয়েছে। ” সে বলে যে , আমি আমার গৃহকর্তার কাছে দৌঁড়ে গেলাম এবং কাঁদতে শুরু করলাম , এ দেখে সব নারীরা উঠে দাঁড়ালেন এবং বিলাপ শুরু করলেন । বলা হয়েছে যে , তখন সেনাবাহিনী একত্রে এগিয়ে আসে রাসূলুল্লাহর (সা.) বংশধর ও যাহরা (আ.) এর চোখের আলো হোসেইন (আ.) এর তাঁবু লুট করার জন্য এবং নারীদের কাঁধ থেকে চাদর ছিনিয়ে নেয়ার জন্য। রাসূলুল্লাহর (সা.) পরিবারের কন্যারা এবং তার আহলুল বাইত একত্রে বিলাপ শুরু করলেন এবং কাঁদলেন তাদের সাথী ও বন্ধুদের হারিয়ে।

হামীদ বিন মুসলিম বলে যে , বকর বিন ওয়ায়েলের পরিবারের এক নারী , যে তার স্বামীর সাথে ছিলো , যে উমর বিন সা আদের সঙ্গে ছিলো , দেখলো যে , সেনাবাহিনী নারীদের তাঁবুগুলোর দিকে এগিয়েছে এবং তাদের বোরখা ছিনিয়ে নিচ্ছে , সে একটি তরবারি তুলে নিলো এবং তাঁবুগুলোর দিকে ফিরে চিৎকার করে বললো , হে বকরের পরিবার , তারা রাসূলুল্লাহর (সা.) কন্যাদের লুট করছে , কোন বিচার ও কোন রায় নেই আল্লাহর কাছে ছাড়া , উঠে দাঁড়াও এবং আল্লাহর নবীর রক্তের প্রতিশোধ নাও। ” তা শুনে তার স্বামী তাকে ধরে নিয়ে গেলো।

বর্ণিত আছে যে , নারীদের তাঁবু থেকে টেনে বের করে তাঁবুগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। নবী পরিবারের নারীদের মাথার চাদর ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিলো , তারা ছিলেন খালি পায়ে এবং বন্দীদের মত সারি বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। তারা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং তারা বলেছিলেন , আল্লাহর শপথ , আমাদেরকে হোসেইনের শাহাদাতের জায়গাটিতে নিয়ে চলো । যখন তাদের দৃষ্টি শহীদদের উপর পড়লো তারা বিলাপ করতে শুরু করলেন এবং তাদের চেহারায় আঘাত করতে লাগলেন। বলা হয়েছে , আল্লাহর শপথ আমি আলী (আ.) এর কন্যা যায়নাব (আ.) কে ভুলতে পারি না যিনি হোসেইনের (আ.) জন্য কাঁদছিলেন এবং শোকাহত কণ্ঠে বলেছিলেন , হে মুহাম্মাদ , আকাশের ফেরেশতাদের সালাম আপনার উপর , এ হলো হোসেইন , যে পড়ে গেছে (নিহত হয়েছে) , যার শরীর রক্তে ভিজে গেছে এবং তার শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে এবং আপনার কন্যারা বন্দী হয়েছে। আমি আল্লাহর কাছে অভিযোগ করি এবং মুহাম্মাদ মুস্তাফা (সা.) এর কাছে এবং আলী মুরতাযা (আ.) ও ফাতিমা যাহরা (আ.) ও শহীদদের নেতা হামযার কাছে , হে মুহাম্মাদ (সা.) , এই হলো হোসেইন , যে মরুভূমিতে গড়িয়ে পড়েছে এবং বাতাস তার উপর শ্বাসকষ্ট পাচ্ছে এবং সে নিহত হয়েছে অবৈধ সন্তানদের হাতে , আহ শোক , ওহ মুসিবত , আজ আমার নানা রাসূল (সা.) পৃথিবী থেকে চলে গেছেন , হে মুহাম্মাদ (সা.) এর সাথীরা , আসুন , দেখুন মুস্তাফার (সা.) বংশকে কিভাবে কয়েদিদের মত বন্দী করা হয়েছে। ”

অন্য আরেক বর্ণনায় নিচের কথাগুলি এসেছে , হে মুহাম্মাদ (সা.) , আপনার কন্যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং আপনার বংশকে হত্যা করা হয়েছে। বাতাস তাদের উপর ধুলো ফেলছে। এ হলো হোসেইন , তার মাথা ঘাড় থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং তার পোষাক ও চাদর লটু করা হয়েছে। আমার বাবা কোরবান হোক তার জন্য যার দলকে সোমবার দিন হামলা করা হয়েছে। আমার পিতা তার জন্য কোরবান হোক যার তাঁবুর দড়ি ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। আমার পিতা তার জন্য কোরবান হোক যার সাথে সাক্ষাত এখন আর সম্ভব নয় এবং তার আঘাতগুলো সুস্থ হবার নয়। আমার পিতার জীবন তার জন্য কোরবান হোক যার জন্য আমার জীবন কোরবান। আমার পিতা কোরবান হোক তার জন্য যিনি দুঃখের ভিতর ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় নিহত হয়েছেন। আমার পিতা তার জন্য কোরবান হোক যার দাড়ি থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত পড়েছে। আমার পিতা তার জন্য কোরবান হোক যার নানা মুহাম্মাদ আল মুস্তাফা (সা.) , আমার পিতা তার জন্য কোরবান হোক যারা নানা আকাশগুলোর রবের রাসূল। আমার পিতা কোরবান হোক খাদিজাতুল কুবরা (আ.) এর জন্য। আমার পিতা কোরবান হোক আলী আল মুরতাযার জন্য ; আমার পিতা কোরবান হোক ফাতিমা যাহরা (আ.) এর উপর যিনি নারীদের সর্দার । আমার পিতা তার জন্য কোরবান হোক যার জন্য সূর্য ফিরে এসেছিলো যেন তিনি নামায পড়তে পারেন। ”

বর্ণনাকারী বলেন , আল্লাহর শপথ , এ কথাগুলো শুনে প্রত্যেকেই , হোক সে বন্ধু অথবা শত্রু , কেঁদেছিলো। এরপর সাকিনা (আ.) তার পিতার দেহ জড়িয়ে ধরেন এবং বেদুইনরা চারিদিকে জমা হয় এবং তাকে তার কাছ থেকে টেনে সরিয়ে নেয়।

কাফ ’ আমির মিসবাহ ’ -তে আছে যে , সাকিনা (আ.) বলেছেন যে , যখন হোসেইন (আ.) শহীদ হয়ে যান , আমি তাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম এবং আমি তাকে বলতে শুনলাম , হে আমার শিয়ারা (অনুসারীরা) আমাকে স্মরণ করো যখন পানি পান করো এবং আমার জন্য কাঁদো যখন ভ্রমণকারী অথবা শহীদের কথা শোন। ” তা শুনে আমি ভয়ে উঠে পড়ি এবং কান্নার কারণে আমার চোখ ব্যথা করছিলো এরপর আমি আমার মুখে আঘাত করতে থাকি।১৮

পরিচ্ছেদ - ৩

শহীদদের মাথা , নারীদের অলংকার এবং মজলুমদের সর্দারের উট লুট করে নেয় কুফার সেনাবাহিনী

শেইখ মুফীদ বলেন যে , তারা ইমাম হোসেইন (আ.) এর জিনিসপত্র এবং উটগুলো এবং তার পরিবারের নারী সদস্যদের বোরখাগুলো পর্যন্তলুট করে নিয়ে যায়।

হামীদ বনি মুসলিম বলে যে , আল্লাহর শপথ , আমি আমার নিজের চোখে দেখেছি যে , তারা মহিলাদের ও কন্যাদের কাঁধ থেকে বোরখা গায়ের জোরে ছিনিয়ে নিয়েছে।

আযদি বলেন যে , সুলাইমান বিন আবি রাশিদ বর্ণনা করেছে হামীদ বিন মুসলিম থেকে যে , আমি আলী বিন হোসেইন আল আসগার (ইমাম যায়নুল আবেদীন)-এর বিছানার পাশে গেলাম , তিনি অসুস্থ ও শয্যাশায়ী ছিলেন। শিমর বিন যিলজওশান তার সাঙ্গপাঙ্গ সহ তার কাছে আক্রমণাত্মক ভাবে উপস্থিত হলো এবং বললো , আমরা কি তাকে হত্যা করবো ? আমি বললাম , সুবহানালাহ , আমরা কি বাচ্চাদেরও মারবো ? এ বাচ্চা ছেলেটি এখনই মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গেছে ” । আমি তার উপর লক্ষ্য রাখলাম এবং তাকে রক্ষা করলাম যখনই কেউ তার কাছে আসতে চাইলো , যতক্ষণ না উমর বিন সা আদ সেখানে এলো। সে বললো , কেউ যেন নারীদের তাঁবুতে না ঢোকে এবং কেউ যেন এ অসুস্থ বাচ্চাকে বিরক্ত না করে। যারা তাদের জিনিসপত্র লুট করেছে তাদের উচিত সেগুলো তাদেরকে ফেরত দেয়া। ” আল্লাহর শপথ , কেউ কিছু ফেরত দেয়নি।

কিরমানির আখবারুদ দাওল ’ -এ বর্ণিত আছে শিমর (তার উপর আল্লাহর গযব বর্ষিত হোক) সিদ্ধান্তনিলো (ইমাম) আলী আল আসগার (যায়নুল আবেদীন) কে হত্যা করবে , যিনি অসুস্থ ছিলেন। যায়নাব (আ.) বিনতে আলী বিন আবি তালিব (আ.) এলেন এবং বললেন , “ আল্লাহর শপথ , তোমরা তাকে হত্যা করবে না যতক্ষণ না আমাকে হত্যা করো। ” তা শুনে শিমর তার উপর থেকে হাত উঠিয়ে নিলো।

‘ রাওযাতুস সাফা ’ তে বর্ণিত আছে যে , শিমর অসুস্থ ইমাম (যায়নুল আবেদীন আ.)-এর তাঁবুতে প্রবেশ করলো। সে তাকে দেখলো বালিশের উপর শুয়ে আছেন। শিমর তার তরবারি বের করলো তাকে হত্যা করবে বলে , তখন হামীদ বিন মুসলিম বললো , সুবহানাল্লাহ , কিভাবে তুমি এ বাচ্চা ছেলেটিকে মারবে ? তাকে হত্যা করো না। ” কেউ বলে যে উমর বিন সা আদ শিমরের হাত ধরে ফেললো এবং বললো , তুমি কি আল্লাহর সামনে লজ্জিত নও ? তুমি এ অসুস্থ ছেলেটিকে মারতে চাও ? শিমর বললো , সেনাপতি উবায়দুল্লাহ থেকে আমাদের প্রতি আদেশ আছে হোসেইনের প্রত্যেক পুত্রসন্তানকে হত্যা করার জন্য। ” উমর তাকে বার বার থামালো এবং শেষে সে পিছু হটলো। এপর সে আদেশ করলো মুস্তাফা (সা.) এর বংশধরদের তাঁবু জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য।

ইবনে শাহর আশোবের মানাক্বিব ’ -এ বর্ণিত আছে যে , আহমাদ বিন হাম্বাল বলেন যে , কারবালায় ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) অসুস্থ হওয়ার কারণ ছিলো এই যে , তিনি একটি লম্বা বর্ম পরেছিলেন এবং তিনি এর অতিরিক্ত অংশ ছিঁড়ে ফেলেন খালি হাতে (এ জন্য তার জ্বর এসে যায়) ।

শেইখ মুফীদ বলেন যে , অভিশপ্ত উমর বিন সা আদ তাঁবুগুলির সামনে এলো এবং নারীরা কাঁদতে এবং বিলাপ করতে শুরু করলেন তার সামনে। সে তার সাঙ্গপাঙ্গদের দিকে ফিরলো এবং বললো , কেউ যেন নারীদের তাঁবুতে না ঢোকে এবং কেউ যেন অসুস্থ বাচ্চাকে বিরক্ত না করে । নারীরা তার কাছে চাইলেন যা কিছু তাদের কাছ থেকে লুট করে নেয়া হয়েছে তা ফেরত দেয়া হোক যেন তারা নিজেদের ঢাকতে পারেন (বোরখাতে) । সে বললো , এ মহিলাদের কাছ থেকে যা কিছু লুট করা হয়েছে তা তাদের ফেরত দেয়া উচিত। ” আল্লাহর শপথ , কেউ কিছু ফেরত দেয় নি। এরপর সে কিছু পাহারাদার নিয়োগ করে নারীদের তাঁবুগুলির জন্য এবং অসুস্থ ইমামের জন্য এবং বলে , এদের পাহারা দাও , কেউ যেন এখানে প্রবেশ না করে এবং তাদের হত্যা না করে। ” এ কথা বলে সে তার তাঁবুতে ফিরে যায় এবং তার সাথীদের মাঝে উচ্চকণ্ঠে বলে , কে আছে স্বেচ্ছায় হোসেইনের উপর ঘোড়া চালাবে ?

তাবারি বলেন যে , সিনান বিন আনাস এলো উমর বিন সা আদের কাছে এবং তার তাঁবুর দরজায় দাঁড়ালো এবং বললো , আমার ঘোড়ার জিনের ব্যাগ ভর্তি করে দাও পুরস্কারে , কারণ আমি বাদশাহকে হত্যা করেছি যার দরজায় পাহারা ছিলো। আমি তাকে হত্যা করেছি যে ছিলো শ্রেষ্ঠ তার বাবা ও মায়ের দিক থেকে এবং যখন পূর্বপুরুষের আলোচনা হয়েছে তার ছিলো শ্রেষ্ঠ পূর্বপুরুষ । ১৯ উমর বিন সা আদ বললো , তুমি পাগল এবং কখনো তোমার চিন্তার সুস্থতা আসবেনা। তাকে আমার কাছে আনো। ” তাকে আনা হলো এবং উমর তার বেত দিয়ে তার হাতে আঘাত করলো এবং বললো , হে পাগল , তুমি যা উচ্চারণ করেছো তা যদি ইবনে যিয়াদ শোনে সে তোমার মাথা উড়িয়ে দিবে। ”

উক্ববাহ বিন সা মআনকে উমর বিন সা আদ গ্রেফতার করে যে ইমাম হোসেইন (আ.) এর স্ত্রী রাবাবের কর্মচারী ও দাস ছিলো এবং তাকে জিজ্ঞেস করলো , তুমি কে ? সে বললো , আমি একজন দাস। ” তখন তাকে মুক্ত করে দেয়া হয় এবং আমরা তার ব্যাপারে বর্ণনা করেছি মারক্বা বিন সামামাহর সাথে , পূর্ববর্তী পরিচ্ছেদে।

বর্ণিত আছে উমার বিন সা আদ তার সাঙ্গপাঙ্গদের মাঝে উচ্চকণ্ঠে বললো , তোমাদের মধ্যে কে স্বেচ্ছায় হোসেইনের দেহের উপর ঘোড়া চালাবে ? তাদের মধ্যে দশ জন স্বেচ্ছায় তা করার জন্য এগিয়ে এলো। তাদের মধ্যে ছিলো ইসহাক্ব বিন হেইওয়াহ হাযরামি , যে ইমাম হোসেইন (আ.) এর জামা লুটে নিয়েছিলো এবং পরে শয্যাশায়ী হয়ে গিয়েছিলো কুষ্ঠরোগে এবং আহবাস বিন মারসাদ হাযরামি। তারা এগিয়ে গেলো এবং তাদের ঘোড়া চালালো যতক্ষণ পর্যন্তনা ইমাম হোসেইন (আ.) এর পিঠ ও বুক ভেঙ্গে পিশে ফেললো। আমাকে জানানো হয়েছে যে এ ঘটনার পর আহবাশ বিন মারসাদ যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে ছিলো , তখন একটি অজানা তীর এসে তাকে বিদ্ধ করলো এবং সে মৃত্যু মুখে পতিত হলো।

সাইয়েদ ইবনে তাউস বলেন যে , উমর বিন সা আদ তার সাঙ্গপাঙ্গদের মাঝে উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করে , কে চায় স্বেচ্চায় হোসেইনের পিঠ ও বুকের উপর ঘোড়া চালাতে ? দশ জন লোক তা করার জন্য স্বেচ্ছায় এগিয়ে এলো। তাদের মধ্যে ছিলো , ইসহাক বিন হেইওয়াহ হাযরামি , যে ইমাম হোসেইন (আ.) এর জামা লুটে নিয়েছিল , অন্যরা ছিলো আখনাস বিন মুরসিদ , হাকীম বিন তুফাইল সুমবোসি , উমর বিন সাবীহ সাইদাউই , রাজা ’ বিন মানকায আবাদি , সালীম বিন খাইসামাহ জুফী , ওয়াহেয বিন নায়েম , সালেহ বিন ওয়াহাব জুফী , হানি বিন সাবীত হাযরামি এবং উসাইদ বিন মালিক (আল্লাহর অভিশাপ তাদের সবার উপর) । তারা ইমাম হোসেইন (আ.) এর দেহ ঘোড়ার খরেু পিষ্ট করে যতক্ষণ না তার বকু ও পিঠ পিষে যায়। বর্ণনাকারী বলে যে এ দশ জন উবায়দুল্লাহর কাছে আসে এবং উসাইদ বিন মালিক তাদের মধ্যে থেকে বলে যে , “ আমরা শক্তিশালী ঘোড়ার খুর দিয়ে পিঠের পরে বুক পিষেছি। ” (উবায়দুল্লাহ) ইবনে যিয়াদ বললো , তোমরা কারা ? তারা বললো , আমরা হোসেইনের পিঠ ঘোড়ার পায়ের নিচে পিষ্ট করেছি যতক্ষণ পর্যন্তনা তার বুকের হাড় গুড়ো হয়ে গেছে। ” সে (উবায়দুল্লাহ) তাদেরকে কিছু উপহার দিলো।

আবু আমর যাহিদ বলে যে , আমরা ঐ দশ জন সম্পর্কে অনুসন্ধান করেছি এবং সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে , তাদের সবাই ছিলো জারজ। (পরে) মুখতার তাদের সবাইকে গ্রেফতার করেন এবং তাদের হাত ও পা লোহার বেড়ায় বাঁধেন। এরপর তিনি আদেশ দেন ঘোড়া দিয়ে তাদের পিঠ পিষ্ট করতে , যতক্ষণ পর্যন্তনা তারা মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছিলো।

সমাপ্ত

বিশ্বাসীদের আমির আলী (আ.) তার রহস্যগুলো একটি কূপের কাছে বর্ণনা করতেন

শহীদ আল আউয়াল শেইখ মুহাম্মাদ বিন মাকি বর্ণনা করেছেন যে: মেইসাম একদিন বলেছিলেন , একদিন আমার মাওলা (অভিভাবক) বিশ্বাসীদের আমির ইমাম আলী (আ.) আমাকে কুফা থেকে বের করে মরুভূমিতে নিয়ে গেলেন এবং আমরা জা ফি মসজিদে পৌঁছলাম। এরপর তিনি ক্বিবলার দিকে ফিরলেন এবং চার রাকাত নামায পড়লেন। তিনি নামায শেষ করে আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং তার হাত উঠিয়ে বললেন , হে আমার রব , কিভাবে আমি আপনাকে ডাকবো যখন আমি আপনাকে অমান্য করেছি এবং কিভাবে আমি আপনাকে না ডাকতে পারি যখন আমি আপনাকে চিনেছি এবং আমার অন্তরে আপনার ভালোবাসা উপস্থিত। আমি আমার গুনাহপূর্ণ হাত দুটো উঠিয়েছি আপনার কাছে এবং আমার চোখ দুটো আশায় পূর্ণ (দীর্ঘ এক দোআর শেষ পর্যন্ত)।

এরপর তিনি নিঃশব্দে একটি দোআ পড়লেন এবং সিজদায় গেলেন এবং আল আফউ (হে ক্ষমাকারী) বললেন একশ বার। এরপর তিনি উঠলেন এবং মসজিদ থেকে বেরিয়ে এলেন এবং আমি তাকে অনুসরণ করতে শুরু করলাম মরুভূমিতে পৌঁছা পর্যন্ত। এরপর ইমাম একটি দাগ টানলেন এবং বললেন , সাবধান। এ দাগ অতিক্রম করো না।

এ কথা বলে তিনি আমার কাছ থেকে চলে গেলেন। রাত অন্ধকার হওয়ায় আমি নিজেকে বললাম , তুমি তোমার মাওলাকে একাকী ছেড়ে দিয়েছো তার বেশ কিছু শত্রু থাকার পরও। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে তোমার কী কৈফিয়ত হবে ? আল্লাহর শপথ , আমি তাকে অনুসরণ করবো তার অবস্থা জানার জন্য তার আদেশ অমান্য করা হলেও।

তখন আমি তাকে অনুসরণ করলাম এবং দেখলাম তার শরীরের ওপরের অংশের সাথে তিনি তার মাথা একটি কুয়ার ভিতরে উপুড় হয়েছেন এবং এর সাথে কথা বলছেন এবং এর কথাও শুনছেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে তার সাথে কেউ আছে , তাই তিনি আমার দিকে ফিরলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন , কে ? আমি বললাম , আমি মেইসাম । তিনি বললেন , আমি কি তোমাকে আদেশ করি নি দাগ অতিক্রম না করতে ? আমি বললাম , হে আমার মাওলা , আমি আশঙ্কা করলাম হয়তো আপনার শত্রুরা আপনার ক্ষতি করবে। তাই আমি অস্বস্তিতে ছিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন , তুমি কি শুনেছো আমি কী বলেছি (কূপকে) ? আমি বললাম , না। তিনি বললেন , হে মেইসাম , আমার অন্তর রহস্যগুলো বহন করছে এবং যখন তা এর কারণে সংকীর্ণ হয়ে আসে আমি আমার দুহাত দিয়ে মাটি খুঁড়ি এবং পাথরের নিচে রহস্যগুলো চাপা দিই এবং বাদাম গাছ মাটি থেকে জন্মায় এবং আমার বীজগুলোর (বংশের) মাঝে তা প্রকাশ পায়।

শেইখ মুফীদ ইরশাদ -এ লিখেছেন যে , মেইসাম ছিলেন বনি আসাদ গোত্রের এক মহিলার দাস। ইমাম আলী (আ.) তাকে কিনলেন এবং তাকে মুক্ত করে দিলেন। তিনি তাকে তার নাম জিজ্ঞেস করলেন যার উত্তরে তিনি বললেন যে তার নাম ছিলো সালিম। ইমাম বললেন , রাসূল (সা.) আমাকে জানিয়েছেন যে তোমার বাবা ইরানে তোমার নাম রেখেছিলেন মেইসাম।

মেইসাম উত্তর দিলেন , নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল (সা.) এবং আমিরুল মুমিনীন (আ.) সত্য বলেন। আল্লাহর শপথ , ওটাই আমার নাম। ইমাম বললেন , তাহলে সেই নামে ফিরে যাও যে নামে নবী তোমাকে সম্বোধন করেছেন এবং সালিম নাম পরিত্যাগ করো ; আর তোমার ডাকনাম (কুনিয়া) হওয়া উচিত আবু সালিম।

একদিন ইমাম আলী (আ.) তাকে বলেছিলেন , আমার মৃত্যুর পর তোমাকে গ্রেফতার করা হবে এবং ক্রুশে ঝোলানো হবে এবং একটি অস্ত্র তোমার পেটে ঢোকানো হবে। এরপর তৃতীয় দিন রক্ত বেরিয়ে আসবে তোমার নাক মুখ থেকে যা তোমার দাড়িকে রাঙিয়ে দিবে। তাই অপেক্ষা করো সে রঙের জন্য। তোমাকে ক্রুশে ঝোলানো হবে আমর বিন হুরেইসের দরজায় , তুমি হবে দশম জন (আরও নয় জনের সাথে ক্রুশ বিদ্ধ হবে)। আর তোমার ক্রুশের কাঠটি হবে সবচেয়ে খাটো এবং অন্যান্যদের চাইতে মাটির সবচেয়ে কাছে। আসো , আমি তোমাকে খেজরু গাছটি দেখাবো যার কাণ্ডে তোমাকে ঝোলানো হবে।

এরপর তিনি তাকে খেজুর গাছটি দেখালেন। মেইসাম প্রায়ই সেই গাছটি দেখতে যেতেন এবং এর নিচে দোআ পড়তেন , আর বলতেন , কী রহমতপূর্ণ খেজুর গাছই না তুমি , আমাকে তোমার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তোমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে আমার জন্য। তিনি প্রায়ই গাছটির কাছে যেতেন এবং এর যত্ন নিতেন যতক্ষণ না তা কেটে ফেলা হলো। তিনি কুফায় সে জায়গাটিকে জানতেন যেখানে তাকে ঝোলানো হবে। তিনি প্রায়ই আমর বিন হুরেইসের সাথে সাক্ষাৎ করতে যেতেন এবং বলতেন , আমি শীঘ্রই তোমার প্রতিবেশী হতে যাচ্ছি , তাই আমার প্রতি সদয় প্রতিবেশী হও। আমর জিজ্ঞেস করতেন , তুমি কি ইবনে মাসউদ অথবা ইবনে হাকীমের বাড়ি কিনতে যাচ্ছো ? কারণ সে জানতো না মেইসাম কী বলছেন।

যে বছর তাকে শহীদ করা হলো সে বছর মেইসাম হজ্বে গেলেন এবং এরপর উম্মু সালামা (আ.) এর কাছে গেলেন। উম্মু সালামা জিজ্ঞেস করলেন তিনি কে এবং তিনি বললেন যে তিনি মেইসাম। তখন তিনি বললেন , আল্লাহর শপথ , আমি প্রায়ই নবীকে তোমার নাম স্মরণ করতে শুনেছি মধ্যরাতে। এরপর মেইসাম উম্মু সালামার কাছে ইমাম হোসেইন (আ.) সম্পর্কে খোঁজ নিলেন , তিনি জানালেন তিনি বাগানে আছেন। তিনি বললেন , দয়া করে তাকে বলুন যে আমি তাকে সালাম জানাতে খুবই পছন্দ করবো , কিন্তু আল্লাহ চাইলে , আমরা দুই জাহানের রবের সামনে পরস্পর সাক্ষাৎ করবো। উম্মু সালামা কিছু সুগন্ধি আনতে বললেন এবং মেইসামের দাড়িতে তা মাখিয়ে দিলেন এবং বললেন , খুব শীঘ্রই তা রক্তে রঞ্জিত হবে ।

এরপর মেইসাম কুফাতে গেলেন এবং গ্রেফতার হলেন এবং তাকে উবায়দুল্লাহর কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। উবায়দুল্লাহকে বলা হলো , এ ব্যক্তি হলো আলীর সবচেয়ে প্রিয়। সে বললো , আক্ষেপ তোমার জন্য , এ ইরানী ব্যক্তি ? সে হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিলো। তখন উবায়দুল্লাহ মেইসামকে জিজ্ঞেস করলো , তোমার রব কোথায় ? মেইসাম উত্তর দিলেন , ওঁত পেতে আছেন অত্যাচারীদের জন্য , আর তুমি হলে অত্যাচারীদের একজন। তখন উবায়দুল্লাহ মেইসামকে বললো , তুমি ইরানী (অনারব) হওয়া সত্ত্বেত্ত তুমি যা বুঝাতে চাও তাই বলছো (তোমার আরবী খুবই ভালো)। তাহলে আমাকে বলো তোমার মাওলা (ইমাম আলী) কী ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে , আমি তোমাকে নিয়ে কী করবো ? মেইসাম বললেন , হ্যাঁ , তিনি বলেছিলেন যে আমি দশম জন যাদেরকে তুমি ক্রুশে ঝোলাবে এবং আমার ক্রুশের কাঠ হবে সবচেয়ে নিচু এবং আমি তাদের চাইতে মাটির কাছে থাকবো। উবায়দুল্লাহ বললো , আল্লাহর শপথ , সে যা বলেছে আমি তার ঠিক উল্টোটা করবো। মেইসাম বললেন , তুমি কিভাবে উল্টোটা করবে যখন আল্লাহর শপথ ইমাম আলী (আ.) রাসূলুল্লাহর (সা.) কাছ তা থেকে শুনেছেন এবং তিনি জিবরাঈলের কাছে শুনেছেন , যিনি আবার শুনেছেন সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছ থেকে ? তুমি কিভাবে তাদের বিরোধিতা করবে ? এবং আমি এমনকি কুফার সে জায়গাটিও জানি যেখানে আমাকে ঝুলানো হবে এবং ইসলামে আমিই হবো প্রথম ব্যক্তি যাকে মুখে লাগাম পরানো হবে।

এরপর মেইসামকে কারাগারে বন্দী করা হলো মুখতার বিন আবু উবাইদা সাক্বাফির সাথে। মেইসাম মুখতারকে বললেন , তুমি এখান থেকে মুক্তি পাবে এবং ইমাম হোসেইন (আ.) এর রক্তের প্রতিশোধ নিতে উঠে দাঁড়াবে এবং তুমি তাকে হত্যা করবে যে আমাদেরকে হত্যা করবে। যখন উবায়দুল্লাহ মুখতারকে হত্যা করতে আদেশ দিলো ইয়াযীদ থেকে একটি সংবাদ এলো মুখতারকে ছেড়ে দেয়ার আদেশ দিয়ে। সে তাকে মুক্ত করে দিলো এবং মেইসামকে ক্রুশবিদ্ধ করার আদেশ দিলো।

তিনি কারাগার থেকে বাইরে বের হয়ে এলেন এবং এক ব্যক্তির মুখোমুখি হলেন যে তাকে বললো , তোমার কি এ অবস্থা থেকে নিজেকে মুক্ত করার ক্ষমতা নেই ? মেইসাম মুচকি হাসলেন এবং গাছটির দিকে ঈশারা করে বললেন , আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে এর জন্য এবং একে বড় করা হয়েছে আমার জন্য। যখন মেইসামকে ক্রুশে ঝোলানো হলো আমর বিন হুরেইসের বাড়ির দরজায় , জনতা তার চারদিকে জমা হলো , সে বললো , আল্লাহর শপথ সে প্রায়ই বলতো যে সে আমার প্রতিবেশী হবে। তখন মেইসামকে ক্রুশবিদ্ধ করা হলো। আমর তার কাজের মহিলাকে বললো নিচের মাটি ঝাড়ু দিয়ে দিতে এবং তাতে পানি ছিটিয়ে দিতে এবং তা জীবাণুমুক্ত করতে। মেইসাম তখন বনি হাশিমের মর্যাদা বর্ণনা করতে শুরু করলেন ক্রুশে থেকেই। উবায়দুল্লাহর কাছে সংবাদ পৌঁছালো যে দাসটি তাকে অপমান করেছে। এতে সে তার মুখে লাগাম পরানোর আদেশ দিলো। আর এভাবে মেইসাম ইসলামের প্রথম ব্যক্তি হলেন যাকে মুখে লাগাম পরানো হলো। মেইসামকে শহীদ করা হলো ইমাম হোসেইন (আ.) কারবালায় আসার দশ দিন আগে। তৃতীয় দিন একটি অস্ত্র (সম্ভবত বর্শা) তার পেটে ঢুকিয়ে দেয়া হলো এবং তিনি চিৎকার করে বললেন , আল্লাহু আকবার এবং দিন শেষে তার রক্ত নাক ও মুখ দিয়ে লাফ দিয়ে বেরিয়ে এলো (আল্লাহর রহমত ও বরকত তার ওপরে বর্ষিত হোক)।

বর্ণিত হয়েছে যে , সাত জন খেজুর বিক্রেতা শপথ করলো যে তারা মেইসামের লাশটি সেখান থেকে নিয়ে যাবে ও কবর দিবে। রাত্রে তারা সেখানে এলো যখন প্রহরীরা আগুন কমিয়ে দিয়েছিলো এবং তাদেরকে দেখতে পেলো না। তারা তাকে ক্রুশ থেকে নামিয়ে আনলো এবং বনি মুরাদের রাস্তার পাশে একটি স্রোতধারার পাশে কবর দিলো এবং ক্রুশটি ময়লা ফেলার স্থানে ফেলে দিলো। যখন সকাল হলো অশ্বারোহীরা তাদের খোঁজে বেরিয়ে পড়লো কিন্তু তাদেরকে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হলো।

আমি (এই বইয়ের লেখক) বলি যে , মেইসামের বংশধরদের মাঝে একজন হলো আবুল হাসান মেইসামী আলী বিন ইসমাইল বিন শুয়াইব বিন মেইসাম আত তাম্মার , যিনি একজন শিয়া মুতাকাল্লিম (জ্ঞানী ব্যক্তি) ছিলেন মামুন ও মুতাসিমের শাসনামলে। তিনি নাস্তিক ও বিরোধীদের সাথে বিতর্কে যেতেন এবং তার সমসাময়িক ছিলেন আবু হুযাইল আল্লাফ , যে বসরাতে মুতাযিলাদের সর্দার ছিলো।

শেইখ মুফীদ বলেন যে , আলী বিন মেইসাম আবু হুযাইল আল্লাফকে জিজ্ঞেস করলেন , তুমি কি বিশ্বাস কর না যে ইবলীস (শয়তান) সব ভালো কাজ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখে এবং সে খারাপের দিকে আমন্ত্রণ জানায় ? আবু হুযাইল হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিলো। আলী বললেন , তাহলে কি সে খারাপের দিকে আহ্বান জানায় সেটিকে খারাপ না জেনেই এবং ভালো কাজ থেকে বিরত থাকে সেটিকে ভালো না জেনেই ? আবু হুযাইল উত্তর দিলো , হ্যাঁ , সে সব জানে। আবুল হাসান (আলী) বললেন , এভাবে প্রমাণিত হয় যে , যা ভালো অথবা খারাপ শয়তান সব জানে। আবু হুযাইল একমত হলো। এতে আলী বললেন , তাহলে বলো নবীর পরে ইমাম সম্পর্কে , সে কি সব জানতো - কী ভালো ও কী খারাপ ? আবু হুযাইল না-সূচক উত্তর দিলো। আলী বললো , তাহলে শয়তান তোমার ইমামের চাইতে বেশী জ্ঞানী। তা শুনে আবু হুযাইল বোবা হয়ে গেলো।

রুশাইদ আল হাজারির শাহাদাত (আল্লাহ তার আত্মাকে আরও পবিত্র করুন)

হাজার হলো শহরগুলোর একটি যেখানে বাহরাইনের গভর্নরের দপ্তর অথবা এর উপশহর। বিশ্বাসীদের আমির ইমাম আলী (আ.) তাকে নাম দেন রুশাইদ আল বালায়া (পরীক্ষার রুশাইদ) এবং তাকে পরীক্ষা ও মৃত্যুর বিজ্ঞানে প্রশিক্ষণ দেন (ইলমুল বালায়া ওয়াল মানায়া)। এ কারণে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারতেন কিভাবে একজন ব্যক্তি মারা যাবে এবং কিভাবে কোন ব্যক্তিকে হত্যা করা হবে এবং তিনি যা বলতেন তা সত্য বলে প্রমাণিত হতো।

আমরা মেইসামের ঘটনার সময় বর্ণনা করেছি যে তিনি কিভাবে হাবীব ইবনে মুযাহিরের (শাহাদাতের) বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। আমার মনে আছে শেইখ বাহাই তার তা লীক্বাহ তে বলেছেন যে শেইখ কাফা মি রুশাইদকে ইমাম আলী (আ.) এর কুলীদের একজন বলে উল্লেখ করেছেন ।

ইখতিসাস -এ বর্ণিত হয়েছে যে: যখন যিয়াদ (উবায়দুল্লাহর বাবা) রুশাইদকে ধাওয়া করছিলো তখন তিনি আত্মগোপনে চলে যান। একদিন তিনি আবু আরাকাহর কাছে এলেন যে তার কিছু বন্ধুর সাথে নিজের বাড়ির দরজায় বসেছিলো এবং তিনি সেখানে প্রবেশ করলেন । আবু আরাকাহ শঙ্কিত হয়ে পড়লো এবং তাকে অনুসরণ করলো ভীতি নিয়ে। এরপর সে রুশাইদকে বললো , আক্ষেপ তোমার জন্য! তুমি আমাকে হত্যা করেছো এবং আমার সন্তানদের এতিম বানিয়েছো এবং ধ্বংস ছড়াচ্ছো। রুশাইদ তাকে জিজ্ঞেস করলেন , কেন সে তা বললো। আবু আরাকাহ বললো , এই লোকগুলো তোমার খোঁজে আছে আর তুমি আমার বাসায় এসেছো যখন এখানে উপস্থিত লোকজন তোমাকে দেখছে ? রুশাইদ বললেন , তাদের একজনও আমাকে দেখে নি। আবু আরাকাহ বললো , তুমি কি আমার সাথে কৌতুক করছো ? তখন সে তাকে ধরলো , তার হাত বাধলো এবং তাকে এক ঘরে বন্দী করলো এবং দরজা বন্ধ করে তার বন্ধুদের কাছে এসে বললো , আমার মনে হয় যে একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি আমার বাড়িতে প্রবেশ করেছে। তারা বললো যে তারা কাউকে দেখে নি। সে তার প্রশ্নটি আবার করলো এবং তারা না-সূচক উত্তর দিলো , তাই সে চুপ করে গেলো। এরপর সে ভয় পেলো যে হয়তো আর কেউ তাকে দেখে থাকবে এবং তাই সে যিয়াদের দরবারে গেলো খোঁজ নিতে যে তারা রুশাইদকে নিয়ে কোন আলোচনা করেছে কিনা এবং তারা জানে কিনা (যে রুশাইদ তার বাড়িতে আছে) , তাহলে সে তাকে তাদের হাতে তুলে দিবে। তাই সে গেলো এবং যিয়াদকে সালাম জানিয়ে তার কাছে বসে পড়লো। সেখানে একটি ঠাণ্ডা পরিবেশ ছিলো। তখন হঠাৎ সে রুশাইদকে দেখতে পেলো একটি খচ্চরের ওপরে বসা , যিয়াদের দিকে আসছে। তাকে দেখা মাত্রই তার চেহারার রং বদলে গেলো এবং হতবাক হয়ে গেলো এবং তার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গেলো। রুশাইদ সেখানে প্রবেশ করলেন এবং যিয়াদকে সালাম দিলেন। তাকে দেখে যিয়াদ উঠে দাঁড়ালো ও তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলো। এরপর তাকে স্বাগত জানালো এবং তাকে জিজ্ঞেস করলো সে কেমন আছে এবং তার পরিবারের খোঁজ খবর নিলো এবং তার দাড়িতে আদর করে হাত বুলিয়ে দিলো। রুশাইদ সেখানে কিছু সময়ের জন্য বসলো তারপর উঠে দাঁড়ালো ও চলে গেলো । আবু আরাকাহ যিয়াদকে জিজ্ঞেস করলো , তোমার রব তোমাকে রহম করুন , কে ছিলো এই মর্যাদান ব্যক্তি ? সে বললো যে , ঐ ব্যক্তি ছিলো তার সিরিয়ার বন্ধুদের একজন , যে তাকে দেখতে এসেছিলো। তা শুনে আবু আরাকাহ উঠে দাঁড়ালো এবং তার বাড়ির দিকে দ্রুত ছুটে গেলো। সে সেখানে প্রবেশ করে দেখলো রুশাইদ সে অবস্থায়ই আছে যে অবস্থায় সে তাকে রেখে গিয়েছিলো। আবু আরাকাহ বললো , এখন যেহেতু তুমি এ কৌশল জানো যা আমি এইমাত্র দেখলাম , তোমার যা ইচ্ছা করো এবং বাড়িতে এসো যখন তোমার ইচ্ছা।

আবু আরাকাহর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে একটি বর্ণনা

লেখক বলেন , ওপরে উল্লেখিত আবু আরাকাহ বাজিলাহ গোত্রের এবং ইমাম আলী (আ.) এর সাথীদের একজন। কিন্তু বারক্বি বলেন যে , সে ইয়েমেনের লোক ছিলো এবং তাকে ইমামের সাথীদের একজন বলে গণ্য করেন যেমন ছিলেন , আসবাগ বিন নুবাতাহ , মালিক আশতার এবং কুমাইল বিন যিয়াদ। আবু আরাকাহর পরিবার শিয়া জীবনী লেখকদের এবং ইমাম আলী (আ.) এর হাদীস বর্ণনাকারীদের কাছে সুপরিচিত , যেমন বাশীর নাববাল এবং শাজারাহ যারা ছিলো মায়মুন বিন আবু আরাকাহর সন্তান। ইসহাক বিন বাশীর , আলী বিন শাজারাহ এবং হাসান বিন শাজারাহ ছিলেন সুপরিচিত ও সম্মানিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত । রুশাইদের সাথে আবু আরাকাহর আচরণ তার মর্যাদা কম থাকার কারণে ছিলো বলে নয় , বরং তা ছিলো তার জীবনের ভয়ের কারণে এবং রুশাইদ ও ইমাম আলী (আ.) এর অন্যান্য সাথীদের খোঁজে যিয়াদ শক্তভাবে লেগেছিলো। তাদের ও যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখতো , তাদের আতিথেয়তা করতো অথবা তাদেরকে আশ্রয় দিতো সে তাদের নির্যাতন করতো। এখানে হানির সম্মান ও পৌরুষ পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয় যে তিনি মুসলিম বিন আক্বীলের মেহমানদারী করেছিলেন (কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও) এবং তাকে তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন ও তার জন্য জীবন কোরবান করেছিলেন। আল্লাহ তার কবরকে আরও মর্যাদা দিন এবং তাকে সুন্দর বেহেশত দান করুন। আবি হাইয়ান বাজালি থেকে শেইখ কাশশি এবং তিনি রুশাইদের কন্যা ক্বিনওয়া থেকে বর্ণনা করেন যে: আবু হাইয়ান বলেন , আমি ক্বিনওয়াকে বললাম সে তার বাবার কাছ থেকে যা শুনেছে তার সবটুকু বর্ণনা করতে। সে বললো , আমি আমার বাবাকে বলতে শুনেছি যে , ইমাম আলী (আ.) আমাকে জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে , হে রুশাইদ , কিভাবে তুমি সহ্য করবে যখন ঐ ব্যক্তি (যিয়াদ) যাকে বনি উমাইয়া তাদের অন্তর্ভুক্ত করেছে , তোমাকে ডেকে আনবে এবং তোমার পা , হাত এবং জিহ্বা কেটে ফেলবে ?

আমি জিজ্ঞেস করলাম , হে বিশ্বাসীদের আমির , এর পরিণাম কি বেহেশত হবে ?

ইমাম বললেন , হে রুশাইদ , তুমি আমার সাথে আছো এ পৃথিবীতে এবং আখেরাতেও।

ক্বিনওয়া বলেন যে , অবৈধ সন্তান উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ , (উবায়দুল্লাহ কথাটি বর্ণনাকারীর ভুল। সঠিকটি হবে তার পিতা যিয়াদ) তাকে ডাকলো। এরপর সে রুশাইদকে বললো ইমাম আলী (আ.) এর সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করতে এবং প্রহরী তাকে আঘাত করলো তা বলার জন্য। জারজ (যিয়াদ) বললো , তোমাকে এ সম্পর্কে জানানো হয়েছে , অতএব কিভাবে তুমি মরতে চাও ? রুশাইদ বললো , আমার বন্ধু (ইমাম আলী) আমাকে আগেই জানিয়েছেন যে , আমাকে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে শক্তি প্রয়োগ করা হবে এবং যখন আমি তা করতে অস্বীকার করবো আমার দুই হাত , পা এবং আমার জিহ্বা কেটে ফেলা হবে। যিয়াদ বললো , এখন আল্লাহর শপথ , আমি তার কথা মিথ্যা প্রমাণিত করবো। এরপর সে তাকে সামনে এগিয়ে আনার আদেশ করলো এবং বললো তার হাত ও পা কেটে ফেলতে , কিন্তু জিহ্বাকে আস্ত রাখতে। আমি (ক্বিনওয়া) তার হাত ও পা ধরে বললাম , হে প্রিয় বাবা , আপনার উপর যা আপতিত হয়েছে তার জন্য কি আপনি ব্যথা অনুভব করছেন ? তিনি বললেন , না , কিন্তু ঐ ব্যক্তির মত যে জনতার ভিতরে আটকা পড়েছে। যখন তারা তাকে প্রাসাদের বাইরে নিয়ে এলো জনগণ তার কাছ থেকে একটু দূরে জমায়েত হতে লাগলো। তিনি বললেন , যাও আমার জন্য কালি এবং কাগজ আনো যেন লিখে যেতে পারি তোমাদের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত কী ঘটবে। তখন একজন নাপিতকে পাঠানো হলো তার জিহ্বা কেটে ফেলার জন্য এবং সে রাতেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন (আল্লাহর রহমত ও বরকত তার উপর বর্ষিত হোক)।

ফুযাইল বিন যুবাইর বলেন যে , একদিন ইমাম আলী (আ.) সাথীদের সাথে বারনা নামের একটি বাগানে গেলেন এবং একটি খেজর গাছের ছায়ায় বসলেন। তিনি কিছ খেজুর চাইলেন । যা গাছগুলো থেকে তোলা হয়েছে এবং তার কাছে সেগুলো আনা হলো , রুশাইদ হাজারি বললেন , হে বিশ্বাসীদের আমির , এ খেজুরগুলো কেমন ?

তিনি উত্তরে বললেন , হে রুশাইদ , তোমাকে এ খেজুর গাছের কাণ্ডে ক্রুশবিদ্ধ করা হবে।

রুশাইদ বলেন , আমি প্রত্যেক সকাল ও বিকালে গাছটিকে পানি দিতাম। ইমাম আলী (আ.) এর শাহাদাতের পর আমি যখন ঐ গাছের পাশ দিয়ে গেলাম , আমি দেখলাম যে গাছটির ডালপালা কেটে ফেলা হয়েছে , আমি নিজেকে বললাম , আমার শেষ তাহলে নিকটবর্তী হয়েছে। কিছুদিন পর একজন সর্দার এসে বললো যে আমাকে সেনাপতি দেখতে চেয়েছেন। আমি প্রাসাদে গেলাম এবং দেখলাম খেজুর গাছের কাঠগুলো সেখানে রাখা হয়েছে। আরেকদিন যখন আমি গিয়েছিলাম আমি দেখলাম যে গাছের দ্বিতীয় অংশটিকে একটি গোলকে পরিণত করা হয়েছে এবং একটি কুয়ার দুই দিকে বাঁধা হয়েছে তা থেকে পানি তোলার জন্য। আমি নিজেকে বললাম , নিশ্চয়ই আমার বন্ধু আমাকে মিথ্যা বলেন নি।

(অন্য আরেক দিন) সেই সর্দার আমার কাছে এলো এবং বললো , সেনাপতি তোমাকে দেখতে চেয়েছেন। আমি যখন প্রাসাদে ঢুকলাম , দেখলাম গাছের কাণ্ডটি সেখানে রাখা আছে এবং সে গোলকটিও (রিং)। আমি গোলকটির কাছে গেলাম এবং একে পা দিয়ে আঘাত করে বললাম , তোমাকে লালন-পালন ও বড় করা হয়েছে আমার জন্য। এরপর আমি উবায়দুল্লাহর কাছে গেলাম এবং সে বললো , তোমার মাওলা যে মিথ্যা কথা বলেছে তা আমার কাছে বর্ণনা করো। আমি বললাম , আল্লাহর শপথ আমি মিথ্যাবাদী নই , না তিনি মিথ্যাবাদী ছিলেন। আমার মাওলা আমাকে আগেই জানিয়েছেন যে তুমি আমার হাত , পা ও জিহ্বা কেটে ফেলবে। সে বললো , নিশ্চয়ই আমি তার কথাকে মিথ্যা প্রমাণিত করবো। তাকে নিয়ে যাও এবং তার হাত ও পা কেটে ফেলো । যখন তারা তাকে তার লোকজনের কাছে নিয়ে গেলো , তিনি তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বর্ণনা করতে লাগলেন। তখন তিনি বললেন , আমাকে জিজ্ঞেস করো , কারণ এ জাতির কাছ থেকে আমি একটি জিনিস পাই যা তারা আমাকে ফেরত দেয় নি। তা শুনে এক ব্যক্তি ইবনে যিয়াদের কাছে গেলো এবং বললো , আপনি কী করেছেন , আপনি তার হাত ও পা কেটে দিয়েছেন আর সে জনতার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বর্ণনা করছে। ইবনে যিয়াদ আদেশ দিলো তাকে ফিরিয়ে আনতে। যখন তাকে ফিরিয়া আনা হলো ইবনে যিয়াদ আদেশ দিল তার জিহ্বা কেটে ফেলতে এবং এরপর তাকে ক্রুশবিদ্ধ করতে।

শেইখ মুফীদ যিয়াদ বিন নসর হারিসি থেকে বর্ণনা করেন যে , আমি যিয়াদের সাথে ছিলাম যখন তারা রুশাইদ আল হাজারিকে ফেরত আনলো। যিয়াদ তাকে জিজ্ঞেস করলো , আলী তোমাকে কী বলেছিলো যে , আমরা তোমাকে নিয়ে কী করবো ? রুশাইদ বললেন যে , তুমি আমার হাত ও পা কেটে ফেলবে এরপর আমাকে ক্রুশবিদ্ধ করবে। যিয়াদ বললে , আল্লাহর শপথ , আমি তার ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রমাণিত করবো। তাকে বলে যেতে দাও। যখন রুশাইদ বের হয়ে যাচ্ছিলেন যিয়াদ বললো , আল্লাহর শপথ , আমি তার জন্য এর চাইতে খারাপ বিবেচনা করি না যা তার মাওলা তাকে আগেই বলেছে , তাই তাকে ক্রুশে ঝুলাও । এ কথা শুনে রুশাইদ বললেন , তা হতে পারে না। আরেকটি ভবিষ্যদ্বাণী থেকে যায় যা ইমাম আলী (আ.) আমাকে আগেই জানিয়েছেন। যিয়াদ বললো , তার জিভ কেটে ফেলো। এতে রুশাইদ বললো , আল্লাহর শপথ , এ হচ্ছে বিশ্বাসীদের আমির (আ.) এর ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবতা।


13

14

15

16

17

18

19

20

21

22

23

24

25

26

27

28

29

30

31

32

33

34

35