শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)0%

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড) লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইতিহাস

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক: আল্লামা আব্বাস বিন মুহাম্মাদ রেযা আল কুম্মি
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 48966
ডাউনলোড: 4844

পাঠকের মতামত:

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 90 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 48966 / ডাউনলোড: 4844
সাইজ সাইজ সাইজ
শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

পরিচ্ছেদ - ৩

বিহারুল আনওয়ার -এ আল্লামা মাজলিসির আলোচনা

আল্লামা মাজলিসি বিহারুল আনওয়ার ’ -এ বর্ণনা করেছেন যে মুহাম্মাদ বিন আবু তালিব মুসাউই বলেছেন যে , যখন ওয়ালিদ ইমাম হোসেইন (আ.) কে হত্যা করার জন্য চিঠি পেলো তা তার জন্য অত্যন্ত কষ্টের অনুভূত হলো এবং সে বললো ,

আল্লাহর শপথ , আল্লাহ যেন তাঁর নবীর সন্তানকে হত্যা হওয়া আমাকে না দেখান , যদি ইয়াযীদ আমাকে এর বদলে সারা পৃথিবীও দেয় এবং এর ভিতরে যা আছে তাও , তবুও নয়। ”

বলা হয় , এক রাতে ইমাম হোসেইন (আ.) তার বাড়ি থেকে বের হলেন এবং তার নানার কবরের মাথার দিকে গেলেন এবং বললেন ,

সালাম আপনার উপর হে আল্লাহর রাসূল। আমি হোসেইন , ফাতিমা (আ.) এর সন্তান। আমি আপনার প্রিয় এবং আপনার প্রিয়র পুত্র সন্তান। আমি আপনার সন্তান যাকে আপনি আপনার উম্মতের ভিতরে আপনার উত্তরাধিকারী হিসেবে রেখে গেছেন। তাই হে রাসূলুল্লাহ , সাক্ষী থাকুন যে এ লোকেরা আমাকে ত্যাগ করেছে এবং আমাকে অবহেলা করেছে এবং আমাকে নিরাপত্তা দিতে অস্বীকার করেছে। আপনার কাছে আসার আগ পর্যন্ত আপনার কাছে এটিই আমার অভিযোগ। ”

এরপর তিনি উঠলেন এবং নামায পড়তে শুরু করলেন , অনবরত রুকু ও সিজদা করে। ওয়ালিদ তার বাসায় গেলো খোঁজ নেয়ার জন্য যে ইমাম মদিনা ত্যাগ করেছেন কি না। যখন সে দেখলো ইমাম সেখানে নেই তখন সে বললো , আল্লাহকে ধন্যবাদ যে সে চলে গেছে এবং আমাকে রক্ষা করা হয়েছে আদালতে হাজির হওয়া থেকে এবং তার রক্ত ঝরানোতে জড়িত হওয়া থেকে। ” এরপর ইমাম তার বাসায় ফেরত গেলেন এবং দ্বিতীয় রাতে আবার রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কবরে গেলেন এবং কয়েক রাকাত নামায পড়লেন। নামায শেষ করার পর তিনি বললেন , হে আল্লাহ , এটি হচ্ছে তোমার রাসূলের কবর এবং আমি তোমার রাসূলের নাতি। তুমি জানো আমার উপর কী আপতিত হয়েছে। নিশ্চয়ই আমি নৈতিক গুণ ও সৎকর্মশীলতাকে ভালোবাসি এবং খারাপকে ঘৃণা করি। হে গৌরব ও সম্মানের প্রভু , আমি এই কবর এবং যিনি এখানে শায়িত আছেন তার অধিকারের মাধ্যমে অনুরোধ করি যেন আপনি আমার জন্য তা বের করে আনেন যা আপনার ও আপনার রাসূল দ্বারা অনুমোদিত। ”

ইমাম কাঁদলেন সকাল পর্যন্ত। এরপর তিনি তার মাথাকে কবরের উপর রেখে অল্প সময়ের জন্য ঘুমালেন। তিনি স্বপ্নে দেখলেন রাসূল (সা.) তার বাম , ডান ও সামনের দিকে ফেরেশতাসহ তার দিকে আসছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) কাছে এলেন এবং ইমাম হোসেইন (আ.) এর মাথাকে তার বুকে চেপে ধরলেন। এরপর তার দুই চোখের মাঝখানে চুমু দিলেন এবং বললেন ,

হে আমার প্রিয় হোসেইন , আমি যেন দেখতে পাচ্ছি তুমি রক্তে মাখামাখি হয়ে গেছো দুঃখ ও পরীক্ষা (কারব ও বালা)-এর স্থানে এবং আমার উম্মতের একটি দল তোমার মাথা কেটে ফেলেছে এবং তুমি পিপাসার্ত অথচ তারা তোমার পিপাসা মেটাচ্ছে না। এ সত্ত্বেও তারা আমার শাফায়াত (সুপারিশ) আশা করে (কিয়ামতের দিন) । আল্লাহ যেন তাদেরকে আমার শাফায়াত থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। হে প্রিয় হোসেইন , তোমার বাবা , মা এবং ভাই আমার কাছে এসেছে এবং তারা তোমার সাথে দেখা করতে চায় এবং তুমি বেহেশতে এমন এক উঁচু সম্মান অর্জন করেছো যে তুমি যদি শহীদ না হও তুমি সেখানে পৌঁছাবে না। ”

ইমাম তার নানার দিকে তাকালেন এবং বললেন ,

হে নানা , আমি এ পৃথিবীতে আর ফেরত যেতে চাই না। দয়া করে আমাকে আপনার সাথে নিয়ে যান এবং আপনার কবরে প্রবেশ করান। ”

রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন , তোমার উচিত ফেরত যাওয়া (পৃথিবীর দিকে) এবং শাহাদাত লাভ করা এবং এভাবে যে মহান পুরস্কার আল্লাহ তোমার জন্য বাছাই করে রেখেছেন তা অর্জন করা। কারণ কিয়ামতের দিন তুমি , তোমার পিতা , তোমার চাচা এবং তোমার পিতার চাচা একটি বিশেষ সম্মানিত দল হিসেবে উত্থিত হবে বেহেশতে প্রবেশ করা পর্যন্ত। ”

ইমাম হোসেইন (আ.)মঘে থকে উঠলে দুশ্চিন্তা যুক্ত হয়ে এবং স্বপ্নটি বর্ণনা করলেন তার পরিবার ও আব্দুল মোত্তালিবের বংশধরদের কাছে। ঐ দিন পৃথিবীতে কেউ রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পরিবারের চাইতে বেশী দুশ্চিন্তাযুক্ত ও দুঃখী ছিলো না।

এরপর ইমাম হোসেইন (আ.) যাত্রার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকলেন। মধ্যরাতে তিনি তার মা হযরত ফাতিমা (আ.) এর ও তার ভাই ইমাম হাসান (আ.) এর কবরে গেলেন এবং বিদায় নিলেন। ফজরের সময় যখন তিনি বাসায় ফিরলেন তার ভাই মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়া তার কাছে এলেন ও বললেন , হে প্রিয় ভাই , আপনি আর সবার চাইতে আমার কাছে প্রিয় ও ভালোবাসার এবং আমি আপনি ছাড়া কাউকে উপদেশ দিবো না , কারণ আপনি এর যোগ্য , কেননা আপনি আমার থেকে এবং আপনি আমার জীবন , আমার রুহ এবং আমার চোখ এবং আমার পরিবারের গুরুজন। আপনার আনুগত্য আমার উপর বাধ্যতামূলক , কারণ আল্লাহ আপনাকে আমার ওপরে মর্যাদা দিয়েছেন এবং আপনাকে জান্নাতের যুবকদের সর্দার হিসেবে বাছাই করেছেন। ” এরপর তিনি রাসূল (সা.) এর পুরো হাদীসটি বর্ণনা করেন ,

হাসান ও হোসেইন জান্নাতের যুবকদের সর্দার।

এরপর তিনি বললেন , আমি চাই আপনি মক্কা যান , যদি আপনি শান্তি খুঁজে পান , সেখানেই থাকুন কিন্তু যদি ঘটনা ভিন্ন হয়ে দাঁড়ায় তাহলে ইয়েমেনে চলে যান। কারণ সেখানকার জনগণ আপনার নানা ও বাবার সাহয্যকারী ও অনুসরণকারী এবং তারা মানুষের মাঝে খুবই দয়ালু ও করুণাময় , আর তাদের শহর ও মফস্বলগুলো বড়। তখন যদি পারেন সেখানে থেকে যান। যদি তা না হয় তাহলে আশ্রয় নিন মরুভূমিতে অথবা পাহাড়ের গুহায় এবং এক শহর থেকে আরেক শহরে যান যতক্ষণ না আপনি জনসাধারণের অবস্থা বুঝেন। আর আল্লাহ যেন আমাদের মাঝে এবং জালেম দলের মাঝে বিচার করে দেন। ” ইমাম হোসেইন (আ.) উত্তরে বললেন ,

হে ভাই , যদিও এ পৃথিবীতে আমাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য এমন কোন জায়গা নেই , আমি কখনোই কোন দিন ইয়াযীদের কাছে আনুগত্যের শপথ করবো না। ”

এটি শুনে মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়া তার বক্তব্য শেষ করলেন এবং কাঁদতে শুরু করলেন এবং ইমামও কাঁদলেন। এরপর তিনি বললেন , হে ভাই , আল্লাহ যেন উদারভাবে তোমাকে পুরস্কার দান করেন , কারণ তুমি উপদেশ দিয়েছো এবং সঠিক মতই প্রকাশ করেছো। আর তোমার বিষয়ে , হে প্রিয় ভাই , তুমি মদীনায় থেকে যেতে পারো এবং সতর্ক থেকো এবং আমাকে শত্রুদের বিষয়ে সংবাদ জানাতে থাকো। ”

এরপর ইমাম হোসেইন (আ.) একটি কাগজ ও কলম চাইলেন এবং তার ভাই মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়ার জন্য পরামর্শ লিখলেন ,

আল্লাহর নামে যিনি সর্বদয়ালু , সর্ব করুণাময়। এটিতে তা-ই আছে যা হোসেইন বিন আলী অসিয়ত করেছেন তার ভাই মুহাম্মাদের জন্য যে ইবনে হানাফিয়া নামে সুপরিচিত। নিশ্চয়ই হোসেইন সাক্ষ্য দেয় যে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং সে সাক্ষ্য দেয় যে মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর দাস ও রাসূল যাকে তিনি যথাযথভাবে বাছাই করেছেন এবং জানাত ও জাহান্নাম সত্য এবং কোন সন্দেহ নেই কিয়ামতের দিন আসবে এবং কবরে যারা আছে আল্লাহ তাদের সবাইকে উত্থিত করবেন।

আমি উঠে দাঁড়িয়েছি অন্যায় ছড়িয়ে দেয়া বা লোক দেখানোর জন্য নয় ; না অনৈতিকতা ও নিপীড়ন ছড়িয়ে দেয়ার জন্য। বরং আমি বের হয়েছি আমার নানার উম্মতের সংস্কারের জন্য এবং আমি চাই সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে , এভাবে আমি অনুসরণ করবো আমার নানা ও বাবা আলী ইবনে আবি তালিব (আলাইহিম সালাম)-কে। যে ব্যক্তি সত্যকে গ্রহণ করবে আমার মাধ্যমে সে আল্লাহর কাছ থেকে সত্য পাবে। আর যে আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে , তাহলে আমি ধৈর্য ধরবো যতক্ষণ না আল্লাহ আমার মাঝে ও অত্যাচারী সম্প্রদায়টির মাঝে বিচার করে দেন এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ সবচেয়ে ভালো বিচারক। এটি আমার পক্ষ থেকে তোমার কাছে সাক্ষ্য , হে ভাই , এবং আমার পুরস্কার শুধু আল্লাহর কাছে যাঁর ওপরেই শুধু আমি নির্ভর করি এবং তাঁর কাছেই আমার প্রত্যাবর্তন। ”

এরপর তিনি চিঠিটি ভাঁজ করলেন এবং এর ওপরে তার নিজের সীলমোহর দিলেন ও তার ভাই মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়াকে দিলেন এবং তাকে বিদায় জানালেন এবং রাতের অন্ধকারের ভেতর স্থান ত্যাগ করলেন।

মুহাম্মাদ বিন আবু তালিব বলেন যে , মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াকুব ওয়াসায়েল ’ -এ বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াহইয়া থেকে এবং তিনি মুহাম্মাদ বিন হোসেইন থেকে এবং তিনি আইয়ুব বিন নূহ থেকে , তিনি সাফওয়ান থেকে এবং তিনি মারওয়ান বিন ইসমাইল থেকে , তিনি হামযা বিন হুমরান থেকে বর্ণনা করেছেন যে , আমরা ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) এর কাছে ইমাম হোসেইন (আ.) এর আন্দোলন এবং মদীনাতে মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়ার থেকে যাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম , ইমাম উত্তরে বললেন ,

হে হামযা , আমি তোমাকে এমন এক সংবাদ দিবো যার পরে আর কোনদিন তুমি এ ধরনের প্রশ্ন কোন জমায়েতে করবে না। যখন ইমাম হোসেইন (আ.) মদীনা ছেড়ে যেতে চাইলেন তিনি কাগজ চাইলেন এবং সেখানে লিখলেন , আল্লাহর নামে যিনি সর্বদয়ালু ও সর্বকরুণাময়। এটি হোসেইন বিন আলী বিন আবি তালিব থেকে বনি হাশেমের প্রতি। আম্মা বা আদ , যে আমার সাথে আসবে সে শহীদ হয়ে যাবে , আর যে আমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে সে সফলতা ও শান্তি লাভ করবে না। ওয়াসসালাম।

ইমাম হোসেইন (আ.) এর সাথে ফেরেশতাদের কথাবার্তা

শেইখ মুফীদ তার বর্ণনার ক্রম সূত্র উল্লেখ করে বলেছেন যে , ইমাম জাফর আস সাদিক্ব (আ.) বলেছেন , যখন ইমাম হোসেইন (আ.) মদীনা ত্যাগ করলেন , বিশেষ চিহ্নসহ একদল ফেরেশতা পথে সাক্ষাৎ করলো। তারা তাদের হাতে তরবারি বহন করছিলো এবং বেহেশতের ঘোড়ায় চড়েছিলো। তারা ইমামের কাছে এসে তাকে অভিবাদন জানালো এবং বললো , হে সৃষ্টির ওপরে আল্লাহর প্রমাণ , আপনার নানা , বাবা ও ভাইয়ের পরে , মহান আল্লাহ , যিনি আমাদের মাধ্যমে তার অনেক যুদ্ধে আপনার নানাকে সাহায্য করেছিলেন , তিনি এখন আমাদের পাঠিয়েছেন আপনাকে সাহায্য করার জন্য। ”

ইমাম বললেন , প্রতিশ্রুত সেই ভূমি হচ্ছে কারবালা , তাই তোমরা সেখানে আমার কাছে আসতে পারো। ”

তারা বললো , হে আল্লাহর প্রমাণ , আপনার যা ইচ্ছা আদেশ করতে পারেন এবং আমরা তা সম্পাদন করবো ও আপনাকে মেনে চলবো। আপনি যদি শত্রুকে ভয় পান আমরা তাদের বিরুদ্ধে আপনাকে রক্ষা করবো। ”

ইমাম বললেন , আমার বিরুদ্ধে তারা কোন পথ পাবে না এবং তারা আমাকে কোন ক্ষতিও করতে পারবে না যতক্ষণ না আমি আমার (নির্ধারিত) মাযারে পৌঁছি। ”

ইমাম হোসেইন (আ.) এর প্রতিরক্ষায় জিনদের সেনাবাহিনী

বেশ কিছু সংখ্যক মুসলমান জিনের দল ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে এলো এবং বললো , হে আমাদের অভিভাবক , আমরা আপনার অনুসারী ও সাহায্যকারী ; আর আমরা আপনার আদেশ পালন করবো , তা যা-ই হোক। আপনি যদি চান আমরা এখানে থামবো এবং আপনার সব শত্রুকে হত্যা করবো। ”

ইমাম বললেন , আল্লাহ তোমাদের ভালো পুরস্কার দিন , তোমরা কি কোরআন পড়ো নি যা আমার নানার কাছে নাযিল হয়েছিলো ; যেখানে বলা হয়েছে ,

) أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِكْكُمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِي بُرُوجٍ مُشَيَّدَةٍ(

তোমরা যেখানেই থাকো , মৃত্যু তোমাদের ধরে ফেলবে , এমনও যদি হয় তোমরা উঁচু (ও শক্তিশালী) ইমারতে থাকো না কেন। ’ [সূরা নিসা: ৭৮]

এবং বলা হয়েছে ,

যাদের জন্য কতল হওয়া নির্ধারিত হয়েছে তারা অবশ্যই সে জায়গায় চলে যেতো যেখানে তারা (এখন নিহত হয়ে) পড়ে আছে। ’

তাই আমি যদি এখানে থেকে যাই , কিভাবে এ হতভাগ্য জাতিকে পরীক্ষা করা হবে ? এবং কে কারবালায় আমার কবরে শুয়ে থাকবে ? যখন আল্লাহ পৃথিবী সম্প্রসারণ করলেন (সে দিন) তিনি আমার জন্য সেই ভূমি পছন্দ করলেন এবং একে আমার অনুসারীদের (শিয়াদের) আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন যেন তারা সেখানে শান্তি খুঁজে পায় এ পৃথিবীতে এবং আখেরাতে। আমার কাছে এসো শনিবার দিন , কারণ আমি সপ্তাহের শেষে দশ তারিখে শহীদ হবো। আমার পরিবারের , বন্ধুদের , ভাইদের এবং আত্মীয়দের কেউ আর বেঁচে থাকবে না আমার মৃত্যুর পর। এরপর আমার মাথা ইয়াযীদের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। ”

জিন বললো , হে আল্লাহর বন্ধু এবং আল্লাহর বন্ধুর সন্তান , যদি আপনার আদেশ পালন আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক না হতো এবং হত্যা করা অবৈধ না হতো আমরা অবশ্যই আপনার সমস্ত শত্রুকে হত্যা করে ফেলতাম তারা আপনার কাছে পৌঁছানোর আগেই। ”

ইমাম বললেন , আল্লাহর শপথ আমরা তোমাদের চাইতে তাদেরকে হত্যা করার জন্য বেশী যোগ্য। কিন্তু উদ্দেশ্য হচ্ছে কাউকে হত্যা করা উচিত (উপযুক্ত) প্রমাণ ও যুক্তিসহ এবং হেদায়েত করা উচিত প্রমাণ ও যুক্তিসহ। ”

অন্য কথায় ইমাম চান নি যে তারা ধ্বংস হোক তাদের কাছে প্রমাণ উপস্থিত করার আগে। (এখানেই তা শেষ হয়েছে যা মুহাম্মাদ বিন আবি তালিবের বইতে উল্লেখছিলো।)

যাত্রার সময় (নবীর স্ত্রী) উম্মু সালামা (আ.) এর সাথে ইমাম হোসেইন (আ.) এর কথোপকথন

আল্লামা মাজলিসি বলেন যে , আমি কিছু বইতে পড়েছি যে , যখন ইমাম হোসেইন (আ.) মদীনা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলেন তখন উম্মু সালামা (আ.) তার কাছে এলেন এবং বললেন , হে আমার প্রিয় সন্তান , আমাকে শোকাহত করো না ইরাকের দিকে যেয়ে। কারণ আমি তোমার নানাকে বলতে শুনেছি যে আমার হোসেইনকে হত্যা করা হবে ইরাকে কারবালা নামের এক জায়গায়। ” ইমাম বললেন ,

হে প্রিয় নানীজান , আমিও তা জানি এবং আমাকে জোর করে হত্যা করা হবে , আর এ থেকে পালানোর কোন সুযোগ নেই। আল্লাহর শপথ , আমি সে দিনটিকে জানি যেদিন আমাকে হত্যা করা হবে এবং আমার হত্যাকারীদের চিনি। এছাড়া সে মাযারকেও চিনি যেখানে আমাকে সমাহিত করা হবে , এবং আমি আমার পরিবার , আত্মীয়স্বজন এবং অনুসারীদের মধ্যে সবাইকে চিনি যারা আমার সাথে মৃত্যুবরণ করবে এবং আমি আপনাকে সেই জায়গাটি দেখাতে চাই যেখানে আমাকে কবর দেয়া হবে। ”

এরপর তিনি কারবালার দিকে ইঙ্গিত করলেন এবং সেখানকার মাটি ওপরে উঠলো এবং তিনি তাকে সে জায়গাগুলো দেখালেন যেখানে তার কবর হবে , কোথায় তিনি শহীদ হয়ে পড়ে থাকবেন , তাঁবু খাটানোর জায়গা এবং কোথায় তিনি থামবেন। যখন উম্মু সালামা এসব দেখলেন তিনি খুব কাঁদতে থাকলেন এবং আল্লাহর কাছে সব অভিযোগ করলেন। তখন ইমাম বললেন , হে নানীজান , আল্লাহ চান আমাকে কতল হওয়া অবস্থায় দেখতে এবং আমার মাথা নৃশংসতায় ও অন্যায়ভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়া দেখতে। এছাড়া (আল্লাহ) চান যে আমার পরিবার এবং নারী স্বজনরা উচ্ছেদ হোক এবং আমার শিশু সন্তানরা নির্যাতিত হোক , মাথায় পর্দা ছাড়া , গ্রেফতারকৃত এবং শিকলে বন্দী অবস্থায় এবং তারা অনুরোধ করবে এবং সাহায্যের জন্য চিৎকার করবে কিন্তু কেউ তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না। ”

অন্য একটি হাদীসে বলা হয়েছে যে উম্মু সালামা ইমাম হোসেইন (আ.) কে বলেছিলেন , আমার কাছে কিছু বালি আছে যা তোমার নানা আমাকে দিয়েছিলেন এবং যা একটি বোতলে আছে। ” ইমাম বললেন , আল্লাহর শপথ আমাকে হত্যা করা হবে যদি আমি ইরাকে নাও যাই। ” তখন তিনি এক মুঠ মাটি (কারবালার ভূমি থেকে যা উঁচু হয়ে উঠেছিলো) তুললেন এবং উম্মু সালামাকে তা দিয়ে বললেন , “ এটি বোতলের বালির সাথে মিশিয়ে নিন যা আমার নানাজান আপনাকে দিয়েছিলেন , যখন তা রক্তে পরিণত হবে জানবেন যে আমাকে শহীদ করা হয়েছে। ” (এখানে বিহারুল আনওয়ার ’ -এর বর্ণনাটি শেষ হয়েছে।)

জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারীর সাথে ইমাম (আ.) এর কথোপকথন

সাইয়েদ বাহরানি মাদিনাতুল মা জিয ’ -এ সাক্বিবুল মানাক্বিব ’ থেকে ও অন্যরা মানাক্বিবুস সুয়াদা ’ থেকে বর্ণনা করেন যে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারি বলেন , যখন ইমাম হোসেইন (আ.) ইরাকের দিকে যেতে চাইলেন আমি তার কাছে এলাম এবং বললাম , আপনি রাসূলুল্লাহর সন্তান এবং তার প্রিয় দুই নাতির একজন। আমি আর কোন মতামত দিচ্ছি না শুধু এছাড়া যে আপনিও (ইয়াযীদের সাথে) একটি শান্তিচুক্তি করেন যেভাবে আপনার ভাই মুয়াবিয়ার সাথে করেছিলো এবং নিশ্চয়ই তিনি (ইমাম হাসান) ছিলেন বিশ্বস্তও সঠিক পথপ্রাপ্ত। ” ইমাম হোসেইন (আ.) উত্তরে বললেন ,

হে জাবির , আমার ভাই যা করেছিলেন তা ছিলো আল্লাহর ও রাসূলের আদেশ এবং আমি যা করবো তা-ও হবে আল্লাহ ও তার রাসূলের আদেশ। আপনি কি চান আমি এ মহূর্তে রাসূলুল্লাহ , ইমাম আলী এবং আমার ভাইকে আমন্ত্রণ জানাই আমার কাজ সম্পর্কে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ?

এরপর ইমাম আকাশের দিকে তাকালেন , হঠাৎ আমি দেখলাম আকাশের দরজাগুলো খুলে গেলো এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) , ইমাম আলী (আ.) , ইমাম হাসান (আ.) , হযরত ফাতিমা (আ.) , হযরত জাফর তাইয়ার (আ.) এবং (আমার চাচা) যাইদ আকাশ থেকে পৃথিবীতে নেমে এলেন। এ দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন ,

হে জাবির , আমি কি হোসেইনের আগে হাসানের সময়ে তোমাকে জানাই নি যে তুমি বিশ্বাসী হবে না যদি না তুমি ইমামদের কাছে আত্মসমর্পণ করো এবং তাদের কাজে প্রতিবাদ না করো ? তুমি কি সেই জায়গা দেখতে চাও যেখানে মুয়াবিয়া বাস করবে এবং আমার সন্তান হোসেইনের জায়গা এবং তার হত্যাকারী ইয়াযীদের বাসস্থান ?

আমি বললাম , জ্বী। তখন নবী তার পা দিয়ে মাটিতে আঘাত করলেন এবং তা দু ভাগ হয়ে গেলো এবং এর নিচে আরেকটি ভূমি উপস্থিত হলো। তখন আমি দেখলাম একটি নদী প্রবাহিত হচ্ছে , সেটিও দুভাগ হয়ে গেলো , এর নিচে ছিলো আরেকটি ভূমি। এভাবে মাটি ও নদীর সাতটি স্তর (একটির নিচে আরেকটি) ফাঁক হয়ে গেলো যতক্ষণ পর্যন্তনা জাহান্নাম দৃষ্টিগোচর হলো। আমি দেখলাম ওয়ালিদ বিন মুগিরা , আবু জাহল , মুয়াবিয়া ও ইয়াযীদ একসাথে শিকলে বাঁধা অন্যান্য বিদ্রোহী শয়তানদের সাথে এবং তাদের শাস্তি ছিলো জাহান্নামের অন্যান্য লোকদের চাইতে কঠিন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে মাথা তুলতে আদেশ করলেন। আমি দেখলাম আকাশের দরজাগুলো খুলে গেছে এবং বেহেশত দেখা যাচ্ছে। তখন যে বরকতময় লোকেরা অবতরণ করেছিলেন তারা সবাই ফেরত চলে গেলেন। যখন তারা বাতাসে ছিলেন তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ইমাম হোসেইনকে (আ.) ডাক দিয়ে বললেন , আসো এবং আমার সাথে মেলামেশা করো , হে আমার প্রিয় হোসেইন। ”

আমি দেখলাম যে হোসেইনও তাদের সাথে জান্নাতের উচ্চ মর্যাদায় যোগ দিয়েছেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) হোসেইনের হাত ধরে আমাকে বললেন ,

হে জাবির , আমার এই সন্তান এখানে আমার সাথে আছে , তার কাছে আত্মসমর্পণ করো এবং সন্দেহে পড়ো না , যেন বিশ্বাসী হতে পারো। ”

জাবির বলেন যে , আমার দুটো চোখই অন্ধ হয়ে যাক যদি আমি যা দেখেছি এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে যা বর্ণনা করেছি তা যদি মিথ্যা হয়ে থাকে। ”

পরিচ্ছেদ - ৪

ইমাম হোসেইন (আ.) এর (মদীনা থেকে) মক্কায় যাত্রার নিয়ত ও তার প্রতি (ইরাকের) কুফা শহরের জনগণের চিঠি সম্পর্কে

যখন ইমাম হোসেইন (আ.) মক্কার দিকে যাওয়ার নিয়ত করলেন আব্দুল্লাহ বিন মুতি তখন তার সাথে দেখা করতে এলেন ও বললেন , আমি আপনার জন্য কোরবান হই , আপনি কোথায় যাচ্ছেন ? ইমাম বললেন , বর্তমানে আমি মক্কা যাওয়ার নিয়ত করেছি , এরপর আমি মহান আল্লাহর কাছে দিক নির্দেশনা চাইবো। ”

আব্দুল্লাহ বললেন , আল্লাহ আপনার কল্যাণ করুন , আপনি মক্কায় যেতে পারেন কিন্তু যদি কুফায় যান তাহলে তা একটি অভিশপ্ত শহর। আপনার বাবাকে সেখানে গুপ্তঘাতক হত্যা করেছে এবং আপনার ভাইকে সাহায্যবিহীন পরিত্যাগ করা হয়েছিলো এবং বর্শার এক আঘাতে আহত হয়েছিলেন যা তাকে প্রায় মরণাপন্ন করেছিলো। আপনি কা বার সাথে যুক্ত থাকুন যেহেতু আপনি আরবদের অভিভাবক এবং হিজাযের (পশ্চিম আরবের) লোকেরা আপনার সমকক্ষ কাউকে ভাবে না। সেখানকার লোকেরা আপনার সাহায্যে দ্রুত আসবে , আমি আপনার জন্য কোরবান হই , কারণ আপনাকে যদি হত্যা করা হয় আমাদেরকে দাস বানানো হবে এবং আমরা দখল হয়ে যাবো।

শেইখ মুফীদ বলেন , ইমাম হোসেইন (আ.) মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন প্রধান রাস্তা দিয়ে , কোরআনের এ আয়াত তেলাওয়াত করে ,

) فَخَرَجَ مِنْهَا خَائِفًا يَتَرَقَّبُ(

“ সে বেরিয়ে পড়লো , ভীত অবস্থায়। ” [সূরা ক্বাসাস: ২১]

কেউ একজন তাকে বললো , ভালো হয় যদি আমরা কোন বাঁকা পথ ধরি আব্দুল্লাহ বিন যুবাইরের মত এবং প্রধান রাস্তা এড়িয়ে চলি , যাতে আমাদের খোঁজে যারা আছে তারা আপনার কাছে না পৌঁছাতে পারে। ”

ইমাম বললেন , আল্লাহর শপথ , না , আমি এ রাস্তা ছাড়বো না যতক্ষণ পর্যন্তনা আল্লাহ আমাকে আদেশ করেন। ”

ইমাম হোসেইন (আ.) মক্কায় প্রবেশ করলেন শুক্রবার , শা বান মাসের তৃতীয় দিনে , এ আয়াত তেলাওয়াত করে ,

) وَلَمَّا تَوَجَّهَ تِلْقَاءَ مَدْيَنَ قَالَ عَسَى رَبِّي أَنْ يَهْدِيَنِي سَوَاءَ السَّبِيلِ(

যখন সে (মূসা আ.) তার চেহারা মাদায়েনের দিকে ঘুরিয়ে বললো: হয়তো আমার রব আমাকে সঠিক পথ দেখাবেন। ” [সূরা ক্বাসাস: ২২]

যখন ইমাম হোসেইন (আ.) মক্কায় স্থির হলেন সেখানকার জনগণ এবং যারা হজ্ব করতে এসেছিলো এবং অন্যান্য শহরের লোকেরা তার সাথে দেখা করতে আসলো। আব্দুল্লাহ বিন যুবাইরও মক্কায় ছিলো এবং কা বা ঘরের কাছে আশ্রয় নিয়েছিলো এবং নামায পড়তে লাগলো ও তাওয়াফ করতে থাকলো। সে-ও অন্যান্য লোকের সাথে এলো ইমাম হোসেইন (আ.) কে সালাম জানাতে , প্রত্যেক দুদিনে একবার অথবা এর চেয়ে বেশী। ইমামের মক্কায় উপস্থিতি তাকে অস্বস্থিতে ফেলে দিলো , কারণ সে জানতো যতক্ষণ ইমাম মক্কায় থাকবেন সেখানকার জনগণ তার (আব্দুল্লাহ বিন যুবাইরের) কাছে আনুগত্যের শপথ করবে না (কারণ সে-ও খেলাফত চাইছিলো) । কারণ তারা ইমামকে ভালোবাসতো এবং তাদের ওপরে শাসনকর্তা হওয়ার জন্য তাকে বেশী যোগ্য মনে করতো।

আর কুফার জনগণের বিষয়ে , যখন তারা মুয়াবিয়ার মৃত্যু সংবাদ পেলো তারা ইয়াযীদ সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করতে শুরু করলো । এছাড়া তারা জানতে পেরেছিলো যে ইমাম হোসেইন (আ.) ইয়াযীদের প্রতি আনুগত্যের শপথ করতে অস্বীকার করেছেন এবং মক্কায় চলে গিয়েছেন। আর আব্দুল্লাহ বিন যুবাইরও মক্কায় পালিয়ে গেছে তার সাথে এবং তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

ইমামের শিয়ারা (অনুসারীরা) সুলাইমান বিন সুরাদ খুযাঈর বাড়িতে জড়ো হলো মুয়াবিয়ার মৃত্যু নিয়ে আলোচনা করতে এবং আল্লাহর প্রশংসা এবং তাসবীহ করতে। সুলাইমান উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন , মুয়াবিয়ার মৃত্যু হয়েছে এবং ইমাম হোসেইন (আ.) ইয়াযীদের প্রতি আনুগত্যের শপথ নিতে অস্বীকার করেছেন ও মক্কায় চলে গিয়েছেন। তোমরা তার ও তার বাবার শিয়া (অনুসারী) । তাই যদি তোমরা তাকে সাহায্য করতে চাও ও তার শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাও তাকে চিঠি লিখো এবং তাকে এ বিষয়ে জানাও। কিন্তু যদি তোমরা ভয় পাও যে তোমরা ঢিলেমী করবে এবং পিছু হটবে তাহলে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করো না (তাকে এখানে আমন্ত্রণ জানিয়ে) । ” প্রত্যেকেই ঐক্যবদ্ধভাবে শপথ করলো যে তারা তাকে সাহায্য করবে এবং তার শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে তার আদেশে এবং তাদের জীবনকে এগিয়ে দিবে কোরবান করতে । যখন সুলাইমান তা শুনলেন , তিনি তাদেরকে আহ্বান জানালেন ইমামকে চিঠি লেখার জন্য এবং তারা লিখলো।