শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)0%

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড) লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ: ইতিহাস

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক: আল্লামা আব্বাস বিন মুহাম্মাদ রেযা আল কুম্মি
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বিভাগ:

ভিজিট: 49038
ডাউনলোড: 4848

পাঠকের মতামত:

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 90 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 49038 / ডাউনলোড: 4848
সাইজ সাইজ সাইজ
শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

শোকার্তের দীর্ঘশ্বাস (প্রথম খণ্ড)

লেখক:
প্রকাশক: ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
বাংলা

ইমাম হোসেইন (আ.) এর প্রতি কুফাবাসীদের চিঠি

আল্লাহর নামে যিনি সর্বদয়ালু , সর্বকরুণাময়। হোসেইন বিন আলীর (আ.) প্রতি , সুলাইমান বিন সুরাদ , মুসাইয়াব বিন নাজাবাহ , রুফা আ বিন শাদ্দাদ , হাবীব বিন মুযাহের এবং কুফা শহরের অধিবাসীদের মধ্যে থেকে অনুসারী , বিশ্বাসী ও মুসলমানদের পক্ষ থেকে। আপনার উপর শান্তিবর্ষিত হোক , আমরা আপনার আগে আল্লাহর প্রশংসা ও তাসবীহ করছি যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। আম্মা বা আদ , প্রশংসা আল্লাহর যিনি আপনার একগুঁয়ে শত্রুকে ধ্বংস করেছেন। যে (মুয়াবিয়া) ইসলামী জাতির ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো এবং তাদের বিষয়গুলোকে ছিনিয়ে নিজের হাতে নিয়েছিলো এবং তাদের গণিমত কেড়ে নিয়েছিলো এবং এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিলো তাদের সম্মতি ছাড়াই। সে ধার্মিকদের হত্যা করেছে এবং খারাপদের বাঁচিয়ে রেখেছিলো এবং সে আল্লাহর সম্পদকে অত্যাচারী ও ধনীদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছিলো। এ জন্য তাকে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে যেভাবে সামূদ জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছিলো এবং আমাদের এখন কোন ইমাম নেই (আপনি ছাড়া) । আমরা আপনাকে অনুরোধ করি আমাদের কাছে আসার জন্য যেন আল্লাহ আমাদেরকে সত্যের উপর একতাবদ্ধ করেন। নোমান বিন বাশীর এখন প্রাসাদে একা উপস্থিত , কিন্তু আমরা তার সাথে শুক্রবার দিন (জুম আর নামাযে) একত্র হই না। না আমরা ঈদের দিনও তার কাছে যাই। যদি আমরা জানতে পারি আপনি রওনা করেছেন আমাদের কাছে আসার জন্য আমরা তাকে এখান থেকে বের করে দিবো এবং তার পিছু ধাওয়া করে সিরিয়া পর্যন্ত নিয়ে যাবো , ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর শান্তিও রহমত আপনার ওপরে বর্ষিত হোক।

তারা এ চিঠি দিলো উবায়দুল্লাহ বিন মুসমে হামাদানি এবং আব্দুল্লাহ বিন ওয়াল তাইমিকে এবং তাদেরকে দ্রুত যেতে বললো। তারা দ্রুত গেলো যতক্ষণ না তারা দশই রমযান মক্কাতে পৌঁছালো। এরপর কুফার লোকেরা দুদিন অপেক্ষা করলো এবং ক্বায়েস বিন মুসাহ্হার সাইদাউই এবং আব্দুর রাহমান বিন আব্দুল্লাহ বিন শাদ্দাদ আরহাবি এবং আম্মারাহ বিন আব্দুল্লাহ সালুলিকে আবার পাঠালো একশত পঞ্চাশটি চিঠি দিয়ে যা এক , দুই , তিন অথবা চারজন লিখেছিলো।

এরপর আবার দুদিন পর তারা হানি বিন হানি সাবেঈ এবং সাঈদ বিন আব্দুল্লাহ হানাফিকে দিয়ে একটি চিঠি পাঠালো যার বিষয়বস্তু ছিলো এ রকম:

আল্লাহর নামে যিনি সর্ব দয়ালু , সর্ব করুণাময়। হোসেইন বিন আলী (আ.) এর প্রতি তার অনুসারীদের , বিশ্বাসীদের এবং মুসলমানদের পক্ষ থেকে। আম্মা বা আদ , লোকজন আপনার জন্য অপেক্ষা করছে এবং আর কোন মত পোষণ করবেন না , তাই দ্রুত আসুন , দ্রুত আসুন। আপনার উপর শান্তিবর্ষিত হোক। ”

আরেকটি চিঠি লিখেছিলো শাবাস বিন রাব ঈ , হাজ্জার বিন আবজার আজালি , ইয়াযীদ বিন হুরেইস বিন রুয়েইম শাইবানি , উরওয়া বিন ক্বায়েস আহমাসি , আমর বিন হাজ্জাজ যুবাইদি এবং মুহাম্মাদ বিন আমর তামিমি , যার বিষয় ছিলো এরকম:

আম্মা বা আদ , বাগানগুলো সবুজ রং ধারণ করেছে এবং ফলগুলো পেকেছে। যদি আপনি চান , এখানে আসতে পারেন , সেনাদল আপনাকে রক্ষায় প্রস্তুত। ”

যখন এ পত্রবাহকরা সবাই একত্র হলো , ইমাম চিঠিগুলো পড়লেন এবং তাদের কাছে জনগণ সম্পর্কে জানতে চাইলেন।

সাইয়েদ ইবনে তাউস বলেন , ইমাম হোসেইন (আ.) উঠে দাঁড়ালেন এবং রুকন ও মাক্বামের মাঝখানে নামায পড়লেন এবং আল্লাহর কাছে কল্যাণ ভিক্ষা চাইলেন। এরপর তিনি মুসলিম বিন আকীল ¡বিন আবি তালিবকে ডাকলেন এবং তা কে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানালেন এবং জবাবে কুফার লোকদের কাছে একটি চিঠি লিখলেন।

শেইখ মুফীদ বলেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) নিচের উত্তরটি পাঠান হানি বিন হানি সাবেঈ ও সাঈদ বিন আব্দুল্লাহ হানাফির মাধ্যমে , যারা ছিলো (কুফা থেকে আসা) শেষ পত্রবাহক।

আল্লাহর নামে যিনি সর্ব দয়ালু , সর্ব করুণাময় , হোসেইন বিন আলী থেকে মুসলমান ও বিশ্বাসীদের মাঝে মর্যাদাসম্পন্ন লোকদের কাছে। আম্মা বা আদ , হানি এবং সাঈদ তোমাদের চিঠিগুলো আমার কাছে নিয়ে এসেছে , তারা তোমাদের শেষ পত্রবাহক। আমি তাদের মাধ্যমে তোমাদের মতামত বুঝেছি এবং তোমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে আমাদের উপর কোন ইমাম নেই। আপনি আমাদের দিকে আসুন , সম্ভবত আল্লাহ আপনার মাধ্যমে আমাদেরকে সত্য ও সৎকর্মশীলতায় একত্রিত করবেন। ’ আমি আমার চাচাত ভাই , আমার ভাই এবং পরিবারের একজন বিশ্বস্তলোক মুসলিম বিন আক্বীলকে তোমাদের কাছে পাঠাচ্ছি। আমি তাকে দিক নির্দেশনা দিয়েছি তোমাদের বিষয়ে খোঁজ নেয়ার জন্য এবং এ বিষয়ে আমাকে লেখার জন্য এবং যদি সে লিখে যে তোমাদের প্রবীণরা , বিজ্ঞরা এবং জ্ঞানী ব্যক্তিরা একই অভিমত পোষণ করে যেভাবে তোমাদের পত্রবাহকরা আমাকে জানিয়েছে এবং যেভাবে তোমাদের চিঠিতে লেখা আছে , তখন আমি তোমাদের কাছে দ্রুত আসবো ইনশাআল্লাহ। আমি আমার জীবনের ক্বসম দিয়ে বলছি যে , কোন ব্যক্তি ইমাম ও পথপ্রদর্শক নয় সে ব্যক্তি ছাড়া যে আল্লাহর কিতাব দিয়ে ফায়সালা করে , ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে এবং সত্য ধর্ম প্রচার করে এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইচ্ছার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে। সালাম। ”

এরপর ইমাম হোসেইন (আ.) মুসলিম বিন আক্বীল বিন আবি তালিব (আ.) কে ডাকলেন এবং তাকে ক্বায়েস বিন মুসাহ্হার সাইদাউই , আম্মারা বিন আব্দুল্লাহ আরজী এবং আব্দুর রাহমান এবং আব্দুল্লাহ বিন শাদ্দাদ আরহাবির সাথে কুফায় পাঠালেন। তিনি তাদেরকে আদেশ করলেন আল্লাহকে ভয় করার জন্য এবং তাদের উদ্দেশ্য গোপন রাখার জন্য , এছাড়া তাদেরকে দয়াপূর্ণ উপদেশ দিলেন এবং বললেন যদি তারা জনগণকে দৃঢ় ও শক্তিশালী হিসেবে দেখতে পায় তাহলে যেন তারা তাকে দ্রুত জানায়।

পরিচ্ছেদ - ৫

মাসউদীর বর্ণনা অনুযায়ী মুসলিম বিন আক্বীলের মধ্য রমযানে মক্কা ত্যাগ

[ ইরশাদ ’ গ্রন্থে] মাসউদীর বর্ণনা অনুযায়ী , মুসলিম বিন আক্বীল মদীনা পৌঁছালেন এবং মসজিদে নববীতে নামায পড়লেন এবং পরিবারকে বিদায় জানালেন। তিনি বনি ক্বায়েস থেকে দুজন লোককে পথ প্রদর্শক হিসেবে সাথে নিলেন এবং রওনা দিলেন। তারা একটি ভুল রাস্তা ধরলেন এবং পথ হারিয়ে ফেললেন। তারা তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়লেন এবং আর হাঁটতে পারছিলেন না। যে দুব্যক্তি মুসলিমের সাথে এসেছিলো তারা পানির অভাবে মারা গেলো কিন্তু মৃত্যুর আগে তারা মুসলিমকে পথের নিশানা বলে দিলো। মুসলিম আরও এগিয়ে গেলেন এবং মাযীক্ব নামে সুপরিচিত বিশ্রাম স্থলে থামলেন এবং ক্বায়েস বিন মুশীর সাইদাউইকে একটি চিঠি দিয়ে ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে পাঠালেন , যা ছিলো এরকম:

আম্মা বা আদ , আমি মদীনা ছেড়ে এসেছিলাম দুজন পথ প্রদর্শকের সাথে , কিন্তু আমরা পথ হারিয়ে ফেলি এবং ভীষণ তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ি এবং ঐ দুজন সহযোগী এ কারণে মৃত্যুবরণ করে। আমরা আরও এগিয়ে গেলাম পানি পাওয়া পর্যন্ত এবং এভাবে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারলাম এবং এ জায়গাটি বাতনে জান্নাতে মাযীক্ব হিসেবে পরিচিত। আমি এ ঘটনাকে একটি অকল্যাণের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছি , যদি আপনি মনে করেন তা যথাযথ হবে তাহলে আমাকে অবসর দিন এবং অন্য কাউকে পাঠান এ কাজে , সালাম। ”

ইমাম হোসেইন (আ.) উত্তরে লিখলেন ,

আম্মা বা আদ , আমি আশঙ্কা করছি যে , যে দায়িত্ব দিয়ে তোমাকে পাঠিয়েছি তা থেকে তোমার মুক্তি চাওয়ার কারণ হচ্ছে ভয়। অতএব যে কারণে তোমাকে পাঠিয়েছি সেদিকে তুমি এগিয়ে যাও। সালাম। ”

যখন মুসলিম চিঠিটি পড়লেন , তিনি বললেন যে তিনি নিজের জন্য কোন কিছুকে ভয় করছেন না এবং আরও এগিয়ে গেলেন। তিনি একটি পানির জায়গায় পৌঁছালেন যা ছিলো বনি তাঈ গোত্রের। তিনি সেখানে ঘোড়া থেকে নামলেন এবং এগিয়ে গেলেন। হঠাৎ মুসলিম দেখলেন একজন শিকারী একটি বড় হরিণের দিকে তীর ছুঁড়লো এবং তাকে হত্যা করলো। মুসলিম বললেন , আল্লাহ চাইলে আমরাও আমাদের শত্রুদের এভাবে হত্যা করবো ” । এরপর আরও এগিয়ে গেলেন।

মুরুজুয যাহাব ’ -এ এভাবে লেখা আছে যে , মুসলিম কুফাতে প্রবেশ করলেন শাওয়াল মাসের পাঁচ তারিখে। তাবারির বর্ণনা অনুযায়ী তিনি মুখতার বিন আবি উবাইদার বাসায় ছিলেন এবং শিয়ারা তার সাথে সাক্ষাৎ করতে এলো। যখন একদল জমা হলো তিনি ইমাম হোসেইন (আ.) এর চিঠিটি তাদেরকে পড়ে শোনালেন , তারা তা শুনে কাঁদতে শুরু করলো । তখন আবিস বিন আবি শাবীব শাকিরি উঠে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর হামদ ও তাসবীহ করে বললেন ,

আম্মা বা আদ , আমি জনগণের পক্ষ থেকে বলছি না , না আমি খবর রাখি কী তাদের অন্তরে আছে এবং এভাবে আমি আপনাকে ধোঁকা দিতে চাই না। আল্লাহর শপথ , আমি শুধু তাই বলছি যা আমার অন্তরে রয়েছে। আল্লাহর শপথ , আমি আপনার ডাকে সাড়া দিবো যখনই আপনি ডাক দিবেন এবং আপনাদের পাশে থেকে আপনাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো এবং আপনার উপস্থিতিতে আমি তাদেরকে তরবারি দিয়ে আঘাত করবো যতক্ষণ না আমি আল্লাহর সাক্ষাতে মিলিত হই ; আর আমি (এর বদলে) আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া আর কিছু চাই না। ”

এরপর হাবীব বিন মুযাহির ফাক্বা ’ সি উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন , আল্লাহর রহমত হোক তোমার ওপরে , তুমি সংক্ষেপে তাই প্রকাশ করেছো যা তোমার মনে ছিলো। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি , যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই , আমি এ লোকটির (আবিসের) বিশ্বাসের মতই বিশ্বাস রাখি ” এবং তিনি আবিস যা বলেছিলেন তাই বললেন।

হাজ্জাজ বিন আলী বলেন যে আমি মুহাম্মাদ বিন বিশরকে জিজ্ঞেস করলাম , আপনি কি তাকে (মুসলিমকে) কোন উত্তর দেন নি ? তিনি বললেন , আমি চেয়েছি আল্লাহ আমার বন্ধুদের সফলতা ও সম্মান দান করুন , কিন্তু আমি নিহত হতে চাই নি এবং না আমি মিথ্যা বলতে চেয়েছি। ”

[ ইরশাদ ’ গ্রন্থে আছে] আঠারো হাজার লোক মুসলিমের কাছে আনুগত্যের শপথ করলো। তাই তিনি ইমাম হোসেইন (আ.) কে তাদের শপথের কথা জানালেন এবং তাকেফকা আসতে আমন্ত্রণ জানালেন। মুসলিম এ চিঠিটি লিখেছিলেন তার শাহাদাত বরণের সাতাশ দিন আগে। শিয়ারা (অনুসারীরা) ঘন ঘন মুসলিমের সাথে সাক্ষাৎ করতে লাগলো এবং মুসলিমের অবস্থান জানাজানি হয়ে গেলো।

নোমান বিন বাশীর কুফার জনগণকে সতর্ক করে দিলো

এ খবর নোমান বিন বাশীরের কাছে পৌঁছে গেলো , যাকে মুয়াবিয়া কুফার গভর্নর করেছিলো , এবং ইয়াযীদও তাকে তার পদে রেখে দিয়েছিলো। সে মিম্বরে উঠলো এবং আল্লাহর প্রশংসা ও তাসবীহর পর বললো ,

আম্মা বা আদ , হে আল্লাহর বান্দাহরা , আল্লাহকে ভয় করো এবং ফাসাদ ও বিভেদ ছড়ানোর উদ্দেশ্যে তাড়াহুড়ো করো না। কারণ তার পরিণতি হবে মানুষের হত্যা , রক্ত ঝরানো ও সম্পদ দখল হওয়া। আমি তার সাথে যুদ্ধ করি না যে আমার মুখোমুখি হয় না , না আমি তার দিকে অগ্রসর হই যে আমার দিকে অগ্রসর হয় না। আমি তোমাদের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করি না , না আমি কাউকে হিসাব দিতে বলি শুধুমাত্র সন্দেহ ও অভিযোগের কারণে। কিন্তু যদি তোমরা আমার দিক থেকে চেহারা ঘুরিয়ে নাও এবং আনুগত্যের শপথ ভঙ্গ করো অথবা তোমাদের ইমামের বিরোধিতা করার চেষ্টা করো তাহলে আল্লাহর শপথ , যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই , সেক্ষেত্রে আমি আমার তরবারি দিয়ে আঘাত করতে থাকবো যতক্ষণ এর হাতল আমার হাতে থাকবে। এমনও যদি হয় তোমাদের মাঝে আমার কোন সমর্থক আর না থাকে। তারপরও আমি আশা করি যে , তোমাদের মধ্যে যারা সত্য জানে তাদের সংখ্যা বেশী , তাদের চাইতে , যাদেরকে মিথ্যা (শেষ পর্যন্ত) ধ্বংস করে দিবে। ”

আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম বিন রাবি আ হাযরামি , যে বনি উমাইয়ার একজন মিত্র ছিলো , সে উঠে দাঁড়ালো এবং বললো , এ ফাসাদ যা আপনি এখন দেখছেন তা শক্তি প্রয়োগ ছাড়া থামবে না এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে আপনার এ মনোভাব দুর্বলদের মনোভাব। ” নোমান বললো , আমি যদি দুর্বল থাকি এবং আল্লাহকে মেনে চলি তাহলে তা আমি পছন্দ করি তার চাইতে বেশী যখন আমি শক্তিশালী থাকবো অথচ আল্লাহর অবাধ্য হব। ” এ কথা বলে সে মিম্বর থেকে নেমে চলে গেলো। আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম বেরিয়ে আসলো এবং এরপর একটি চিঠি লিখলো ইয়াযীদ বিন মুয়াবিয়াকে এ বলে যে , মুসলিম বিন আক্বীল কুফাতে এসেছে এবং শিয়ারা হোসেইন বিন আলীর প্রতি আনুগত্যের শপথ করেছে। যদি আপনি চান কুফা আপনার রাজত্বের অধীনে থাকুক তাহলে একজন শক্তিশালী লোককে পাঠান যে আপনার আদেশ বাস্তবায়িত করবে এবং আপনার আদেশ অনুযায়ী কাজ করবে। কারণ নোমান বিন বাশীর একজন দুর্বল লোক অথবা ইচ্ছা করে দেখাচ্ছে সে দুর্বল। ”

আম্মারাহ বিন উক্ববাহ এবং উমর বিন সা আদ বিন আবি ওয়াক্কাস একই ধরনের চিঠি লিখলো ইয়াযীদের কাছে। যখন এ চিঠিগুলো ইয়াযীদের কাছে গেলো সে সারজুনকে ডাকলো , যে মুয়াবিয়ার কৃতদাস ছিলো এবং বললো , হোসেইন মুসলিম বিন আক্বীলকে কুফাতে পাঠিয়েছে এবং জনগণ তার কাছে আনুগত্যের শপথ নিতে শুরু করেছে। আর নোমান হচ্ছে দুর্বল লোক এবং তার সম্পর্কে অন্যান্য খারাপ অভিযোগ আছে। তোমার অভিমত অনুযায়ী তার বদলে কাকে আমি কুফার গভর্নর করবো ? সে সময়ে ইয়াযীদ উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলো। সারজুন বললো , যদি মুয়াবিয়া আজ জীবিত হয়ে যেতেন আপনি কি তার পরামর্শ শুনতেন ? ইয়াযীদ হ্যাঁ-বোধক উত্তর দিলো। সারজুন মুয়াবিয়ার একটি চিঠি বের করলো যাতে উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদকে কুফার গভর্নর নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো , এরপর বললো , এটি হচ্ছে মুয়াবিয়ার উপদেশ। কারণ যখন তিনি প্রায় মৃত্যুর মুখে তিনি চেয়েছিলেন কুফা ও বসরা উভয়ের গভর্নর পদটি উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদকে দিতে। ” ইয়াযীদ একমত হলো এবং উবায়দুল্লাহর কাছে খবর পাঠালো। এরপর সে কুতাইবাহর পিতা মুসলিম বিন আমর বাহিলীকে ডাকলো এবং উবায়দুল্লাহর নামে একটি চিঠি হস্তান্তর করলো , যার বিষয়বস্তু ছিলো এরকম: আম্মা বা আদ , কুফাতে আমার অনুসারীরা লিখেছে যে আক্বীলের সন্তান সৈন্যদল জোগাড় করছে মুসলমানদের ভিতরে বিদ্রোহ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য। তাই যখন তুমি আমার চিঠি পড়বে কুফাতে দ্রুত চলে যাবে এবং আক্বীলের সন্তানকে খুঁজবে , যেন তুমি একটি পুঁতি খুজছো , যতক্ষণ না তাকে খুঁজে পাও। এরপর তাকে বাধো (শিকলে) , হয় তাকে হত্যা করো অথবা শহর থেকে বহিষ্কার করো। সালাম। ” ইয়াযীদ তাকে কুফার শাসনকর্তার পদটিও দিল। মুসলিম বিন আমর রওনা হলো এবং বসরায় উবায়দুল্লাহর কাছে পৌঁছালো। আদেশ ও ক্ষমতার অনুমোদন পাওয়ার সাথে সাথে উবায়দুল্লাহ পর দিন যাত্রা শুরুর আদেশ দিলো।

নোমান বিন বাশীরের ব্যক্তিত্বের ওপরে একটি বর্ণনা

নোমান বিন বাশীর সম্পর্কে এখানে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা যথাযথ হবে। তার নাম ছিলো নোমান বিন বাশীর বিন সা আদ বিন নসর বিন সা লাবাহ খাযরাজি আনসারি। তার মা ছিলো উমরাহ বিনতে রুয়াহাহ , যে ছিলো আব্দুল্লাহ বিন রুয়াহাহ আনসারির বোন , যিনি শহীদ হয়েছিলেন জাফর বিন আবু তালিব (আ.) এর সাথে মুতাহর যুদ্ধে। বলা হয় যে নোমান ছিলো আনসার (মদীনার সাহায্যকারী)-দের মাঝে প্রথম জন্মগ্রহণকারী সন্তান , মদীনায় নবী (সা.) প্রবেশ করার পর , ঠিক যেভাবে আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর ছিলো মুহাজিরদের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী প্রথম সন্তান , মদীনায় রাসূলুল্লাহর (সা.) প্রবেশের পর। তার বাবা বাশীর বিন সা আদ ছিলো প্রথম ব্যক্তি যে সাক্বিফাতে আবু বকরের কাছে প্রথম আনুগত্যের শপথ করে এবং এভাবে আনসাররা তা অনুসরণ করে। আইনুত তামার ’ -এর যুদ্ধে বাশীর এবং খালেদ বিন ওয়ালিদ নিহত হয়। নোমান ছিলো কবিদের পরিবারের একজন এবং খলিফা উসমানের অনুসারী। সে কুফাবাসীদের ঘৃণা করতো যেহেতু তারা ইমাম আলী (আ.) কে ভালোবাসতো। সে ছিলো একমাত্র আনসার যে সিফফীনের যুদ্ধে মুয়াবিয়ার সাথে ছিলো। সে মুয়াবিয়ার দৃষ্টিতে ছিলো সম্মানিত ও মর্যাদাবান। তাই ইয়াযীদ তাকে পছন্দ করতো।

নোমান জীবিত ছিলো মারওয়ান বিন হাকামের খিলাফত পর্যন্ত এবং হামাসের গভর্নর ছিলো। যখন জনগণ মারওয়ানের প্রতি আনুগত্যের শপথ করা শুরু করলো সে লোকজনকে আব্দুল্লাহ বিন যুবাইরের দিকে আহ্বান করলো এবং মারওয়ানের বিরোধিতা করলো এবং এ ঘটনা ঘটলো যখন যাহহাক ইবনে ক্বাইসকে মারজে রুহিতে হত্যা করা হয়েছিলো কিন্তু হামাসের লোকেরা তার ডাকে কান দেয় নি , তাই সে সেখান থেকে পালিয়ে গেলো এবং তারা তাকে পিছু ধাওয়া করলো এবং তাকে খুঁজে পেয়ে হত্যা করলো। ৬৫ হিজরিতে এ ঘটনা ঘটেছিলো।

ইয়াযীদ তাকে দুর্বল ও কুৎসা রটনাকারী বলার কারণ হলো , ইবনে কুতাইবাহ দীনাওয়ারি তার বই আল ইমামাহ ও সিয়াসাহতে বলেছেন যে নোমান বিন বাশীর বলেছিলো যে , নবীর নাতি আমার কাছে বাহদুলের নাতির চাইতে প্রিয়। ” বাহদুলের নাতি আর কেউ ছিলো না ইয়াযীদ ইবনে মুয়াবিয়া ছাড়া , যার মা মায়সুন ছিলো বাহদুল কালবিয়াহর কন্যা। ইবনে কুতাইবাহ হলেন আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম বিন কুতাইবাহ বিন মুসলিম বিন আমর বাহিলী এবং এ মুসলিম বিন আমর হলেন সেই একই ব্যক্তি যাকে ইয়াযীদ উবায়দুল্লাহর কাছে পাঠিয়েছিলো কুফার গভর্নর নিয়োগ করে।

পরিচ্ছেদ - ৬