বসরার সম্মানিত লোকদের প্রতি ইমামের চিঠি
সাইয়েদ ইবনে তাউস তার‘
মালহুফ ’ -এ উল্লেখ করেছেন যে: ইমাম হোসেইন (আ.) বসরার সৎকর্মশীল সম্মানিত লোকদের কাছে সাহায্যের জন্য একটি চিঠি পাঠালেন , তার পরামর্শক সুলাইমানের মাধ্যমে যার ডাক নাম ছিলো আবু রাযীন এবং তার প্রতি আনুগত্যের জন্য তাদেরকে আহ্বান জানালেন। সেখানে যাদের নাম ছিলো তাদের মধ্যে ছিলো ইয়াযীদ বিন মাসউদ নাহশালি এবং মুনযির বিন জারুদ আবাদি। ইয়াযীদ বিন মাসউদ তখন বনি তামীম , বনি হানযালাহ এবং বনি সা’
আদ গোত্রের লোকদের একত্র করলো। যখন তারা এলো সে বললো ,“
হে বনি তামীম গোত্রের লোকেরা , তোমাদের দৃষ্টিতে আমার কী অবস্থান ও ত্রুটি ?”
তারা বললো ,“
তা পরিষ্কার , আল্লাহর শপথ , আপনি আমাদের পিঠের শক্তি এবং মর্যাদায় প্রথম এবং সম্মানিতদের মাঝে স্থানপ্রাপ্ত এবং আপনি এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ” তখন সে বললো ,“
আমি তোমাদের সবাইকে এখানে ডেকেছি যেন একটি বিষয়ে তোমাদের মতামত জিজ্ঞেস করতে পারি এবং এ জন্য তোমাদের সাহায্য চাইতে পারি। ” তারা বললো ,“
আল্লাহর শপথ আমরা আপনার হিতাকাঙ্ক্ষী এবং আমরা আপনাকে আন্তরিকভাবে পরামর্শ দিতে আলস্য করবো না। আপনি বলতে পারেন , যেন আমরা জানতে পারি তা কী। ” ইয়াযীদ বনি মাসউদ বললো , “ মুয়াবিয়া মৃত্যুবরণ করেছে এবং আমরা শোকপালন করছি না , না আমরা তার মৃত্যুতে দুঃখিত। কারণ অবিচার ও অত্যাচারের দরজাতে ফাটল ধরেছে এবং নিপীড়নের খুঁটিতে কঠিন আঘাত করা হয়েছে। সে বিদ ’ আত তৈরী করেছে তার ছেলের (ইয়াযীদের) প্রতি আনুগত্যের শপথের (দাবী করার) মাধ্যমে এবং সে এতে অনড় ছিলো অথচ তা সঠিক পথ থেকে কত দূওে , যা সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। সে চেষ্টা করেছিলো কিন্তু দুর্বল হয়ে গিয়েছিলো এবং সে পরামর্শ ও মতামত চেয়েছিলো তার বন্ধুদের কাছে কিন্তু তারা তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এরপর তার ছেলে , যে মদ পান করে এবং শয়তান প্রকৃতির , সে উঠে দাঁড়িয়েছে এবং নিজেকে মুসলমানদের খলিফা হিসাবে দাবী করেছে। সে তাদের উপর শাসন করছে তাদের সম্মতি ছাড়াই। যদিও সে এক অজ্ঞ ও মূর্খ ব্যক্তি , এমনকি সে তার পায়ের ছাপও চিনে না। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি যে ইয়াযীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার চাইতে উত্তম। আর ইনি হলেন হোসেইন বিন আলী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নাতি। তার আছে সত্যিকার মর্যাদা , একজন সৎ উপদেশ দানকারী , এক বিরাট জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি এবং তিনি খিলাফতের জন্য বেশী যোগ্য ও অধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তি। কারণ তিনি মুহাজিরদের মধ্যে প্রথম দিকের , একজন প্রধান এবং ধর্মে সবার চাইতে এগিয়ে , তিনি রাসূলুল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। তিনি ছোটদের প্রতি স্নেহশীল এবং প্রবীণদের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন এবং অন্যদের প্রতি দয়ালু। তিনি একজন প্রকৃত নেতা এবং বেহেশত তার মাধ্যমে অর্জিত হয় এবং তিনি ধর্ম প্রচার করেন সৎ উপদেশ ও সতর্কবাণীর মাধ্যমে। তাই সত্যের আলোর সামনে চোখ বন্ধ করে ফেলো না এবং মিথ্যার গর্তে পড়ো না। সাখর বিন ক্বায়েস তোমাদেরকে জামালের (যুদ্ধের) দিনে বিভ্রান্ত করেছিলো এবং অপমানিত করেছিলো , তাই অপমানের দাগকে ধুয়ে ফেলো নবীর নাতিকে সাহায্য করার মাধ্যমে। আল্লাহর শপথ , কেউ তাকে সাহায্য করা থেকে নিজেদের হাতকে গুটিয়ে রাখবে না শুধু তারা ছাড়া যাদের বংশধররা হবে অপমানিত , বঞ্চিত ও পরিত্যক্ত। আমি এখন যুদ্ধের শিরস্ত্রাণ পড়েছি এবং বর্ম বেঁধেছি। যে নিহত হবে না সে শেষ পর্যন্ত মারা যাবে এবং যে এ থেকে পালিয়ে যাবে সে তা থেকে নিস্কৃতি পাবে না। তাই আমাকে ভালোভাবে সাড়া দাও। আল্লাহর রহমত তোমাদের ওপর বর্ষিত হোক।
এ কথা শুনে বনি হানযালাহ বললো ,“
হে আবা খালিদ (ইয়াযীদ বিন মাসউদের ডাক নাম) , আমরা আপনার তীর বহনকারী এবং গোত্রগুলোর মাঝে শ্রেষ্ঠ। আপনি যদি আমাদেরকে ছুঁড়ে মারেন (শত্রুর দিকে) আমরা লক্ষ্যের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বো এবং আপনি যদি আমাদের সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে যান আপনি বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হবেন। আপনি যদি সমুদ্রের গভীরে প্রবেশ করেন আমরাও আপনার সাথে যাবো এবং আপনি যেদিকে ঘুরবেন আমরাও সেদিকে ঘুরবো। আমরা আপনাকে আমাদের তরবারি দিয়ে রক্ষা করবো এবং আমাদের দেহগুলো হবে আপনার ঢাল। আমরা আপনার খেদমতে আছি যখনই আপনি আমাদের প্রয়োজন মনে করবেন। ”
এরপর বনি সা’
আদ বিন ইয়াযীদ বললো ,“
হে আবা খালিদ , আমাদের দৃষ্টিতে সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ হচ্ছে আপনার বিরোধিতা করা ও আপনার আদেশ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হওয়া। নিশ্চয়ই সাখর বিন ক্বায়েস আমাদেরকে যুদ্ধ করতে নিষেধ করেছিলো (জামালের যুদ্ধে) এবং আমরা আমাদের এ কাজে সন্তুষ্ট ছিলাম এবং আমাদের মর্যাদা রক্ষা হয়েছিলো। আপনি আমাদের কিছু সময় দিন যেন আমরা নিজেদের মাঝে পরামর্শ করে নিতে পারি এবং এ বিষয়ে আমাদের মতামত আপনাকে জানাতে পারি। ”
এসময় বনি আমির বিন তামীম বললো ,“
হে আবা খালিদ , আমরা আপনার পিতার সন্তান ও আপনার মিত্র। আপনি যদি অসন্তুষ্ট হন আমরা সন্তুষ্ট থাকবো না এবং যদি আপনি চলে যান আমরা আপনার পিছনে পিছনে আসবো। তাই আমাদের আদেশ করুন যেন আমরা সাড়া দিতে পারি এবং আমাদের ডাক দিন যেন আমরা আপনাকে মানি। নিশ্চয়ই আদেশ আপনার কাছেই।”
তখন তিনি বনি সা’
আদকে বললেন ,“
হে বনি সা’
আদ , আল্লাহর শপথ , যদি তোমরা সন্দেহে থাকো এবং বনি উমাইয়ার পক্ষ অবলম্বন কর (এবং হোসেইনকে সাহায্য করতে ব্যর্থ হও) , আল্লাহ কখনোই তোমাদের ঘাড় থেকে তরবারি তুলে নিবেন না অথচ তোমাদের তরবারি তোমাদের হাতেই থাকবে। ”
এরপর সে (ইয়াযীদ বিন মাসউদ) ইমাম হোসেইন (আ.) কে একটি উত্তর পাঠালো ,“
আম্মা বা ’ আদ , আমরা আপনার চিঠি পেয়েছি এবং আপনি যে আহ্বান করেছেন তার উপর গভীরভাবে ভেবে দেখেছি , যেন আমরা আপনার আনুগত্যে আমাদের অংশ নিতে পারি এবং যেন আমরা আপনাকে সাহায্য করার মর্যাদা অর্জন করতে পারি। আল্লাহ কখনো পৃথিবীকে তার প্রতিনিধিবিহীন রাখেন না , তিনি উদারভাবে দানশীল এবং নাজাতের পথ প্রদর্শক। নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর সৃষ্টির ওপরে তাঁর প্রমাণ এবং পৃথিবীতে তাঁর আমানত। আপনি মুহাম্মাদ (সা.) এর জলপাই গাছের একটি শাখা , তিনি ছিলেন উৎস আর আপনি হচ্ছেন শাখা , আমাদের কাছে আনন্দের সাথে দ্রুত আসুন , কারণ আমি বনি তামীমের ঘাড়গুলো আপনার আদেশের নিচে এনেছি এবং তারা আপনার আনুগত্যে পরস্পরকে ছাড়িয়ে যাবে পিপাসার্ত সিংহের মত যে পানি পান করতে দ্রুত এগিয়ে যায়। এছাড়া বনি সা’
আদকে আপনার আনুগত্যে এনেছি এবং তাদের অন্তর থেকে ময়লা ধুয়ে ফেলেছি পানি দিয়ে যা মেঘ থেকে পড়েছে। ”
যখন ইমাম হোসেইন (আ.) চিঠির বিষয়বস্তু পড়লেন তিনি বললেন ,“
তোমরা আর কী চাও , আল্লাহ তোমাদের ভয়ের দিনে (কিয়ামতে) নিরাপত্তা দিন এবং প্রচণ্ড পিপাসার দিনে তোমাদের পিপাসা মেটান এবং কাছে টেনে নিন। ”
যখন ইয়াযীদ বিন মাসউদ ইমামের দিকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখন সে তার শাহাদাতের সংবাদ পেলো এবং সে নিজে শাহাদাত পেলো না বলে আফসোস করতে লাগলো।
আর মুনযিরা বিন জারুদ সম্পর্কে , যখন সে ইমাম হোসেইন (আ.) এর চিঠি পেলো সে তা ইমামের দূতসহ উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের কাছে নিয়ে এলো , কারণ সে ভয়ে ছিলো যে এটি হতে পারে উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদের কোন ষড়যন্ত্র , আর তার কন্যা বাহরিয়া ছিলো উবায়দুল্লাহর স্ত্রী। উবায়দুল্লাহ ইমামের দূতকে জল্লাদের কাছে পাঠালো এবং মিম্বরে উঠে একটি খোতবা পাঠ করলো , সেখানে সে বসরার জনগণকে সতর্ক করলো বিরোধিতা ও বিদ্রোহের বিরুদ্ধে। সেই রাত সে বসরায় কাটালো এবং পরদিন সকালে সে তার ভাই উসমান বিন যিয়াদকে তার প্রতিনিধি বানালো এবং দ্রুত কুফার দিকে যাত্রা করলো।
তাবারি বলেন যে , হিশাম বলেছেন যে আবু মাখনাফ আমার কাছে বর্ণনা করেছেন এবং সে সাকীব বিন যুহাযর থেকে , তিনি আবু উসমান নাহদী থেকে বর্ণনা করেছেন যে , ইমাম হোসেইন (আ.) একই ধরণের একটি চিঠি লিখেছিলেন বসরার পাঁচটি বিভাগের সম্মানিত লোক ও সর্দারদের কাছে তার পরামর্শক সুলাইমানের মাধ্যমে। একই বিষয়বস্তু সম্বলিত আরও চিঠি লেখা হয়েছিলো মালিক বিন মুসমে ’ বাকরি , আহনাফ বিন ক্বায়েস , মুনযির বিন জারুদ , মাসউদ বিন আমর , ক্বায়েস বিন হাইসাম এবং উমার বিন আব্দুল্লাহ বিন মুয়াম্মারের কাছে:
“ আম্মা বা ’ আদ , নিশ্চয়ই আল্লাহ রাসূলুল্লাহ (সা.) কে তাঁর সব সৃষ্টির ওপরে বাছাই করেছেন এবং তাকে নবুয়ত দান করেছেন এবং তাকে রিসালাতের জন্য বাছাই করেছেন। এরপর আল্লাহ তাকে তাঁর রহমতের দিকে (মৃত্যু) নিয়ে গিয়েছেন সব মানুষকে সত্যের দিকে পথ দেখাবার পর এবং সংবাদ প্রচার করার পর , যার জন্য তাকে পাঠানো হয়েছিলো। আর আমরা তার পরিবার (আহলুল বাইত) , বন্ধু , উত্তরাধিকারী এবং তার খলিফা এবং আমরা অন্যদের চাইতে তার উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য বেশী যোগ্য। আর উম্মত এ বিষয়ে আমাদেরকে অতিক্রম করার চেষ্টা করেছে এবং আমরা অসহায়ভাবে নিজেদেরকে সরিয়ে নিয়েছি বিভেদ এড়ানোর জন্য। আমরা শান্তি ভালোবাসি যদিও আমরা আমাদেরকে তাদের চাইতে এ বিষয়ে (খেলাফতে) বেশী যোগ্য এবং বেশী অধিকার রাখি বলে মনে করি। আমি তোমাদের দিকে আমার দূতকে পাঠিয়েছি এবং আমি তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাবের দিকে , নবীর সুন্নাহর দিকে আহ্বান করছি। কারণ আমি দেখছি যে হাদীস (সুন্নাহ্) ধ্বংস করা হয়েছে এবং বিদ ’ আত মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। তাই যদি তোমরা আমার কথায় মনোযোগ দাও এবং আমার আদেশ মানো তাহলে আমি তোমাদেরকে সঠিক পথ দেখাবো এবং তোমাদের উপর শান্তি এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। ”
সম্মানিত লোকদের মধ্যে যে-ই এ চিঠি পেলো সে তা গোপন করলো মুনযির বিন জারুদ ছাড়া , সে ভয় পেয়েছিলো যে এটি হয়তো উবায়দুল্লাহর ষড়যন্ত্র। তাই সে সেই দূতকে উবায়দুল্লাহর কাছে নিয়ে গেলো সেই দিন যেদিন রাতের বেলা উবায়দুল্লাহ কুফা রওনা দিয়েছিলো। সে উবায়দুল্লাহকে চিঠিটি দিলো যেন সে তা পড়তে পারে। চিঠি পড়া শেষ করে উবায়দুল্লাহ দূতকে হত্যার আদেশ দিলো এবং নিজে বসরার মিম্বরে উঠলো এবং আল্লাহর প্রশংসা ও তাসবীহর পর বললো ,“
আম্মা বা ’ আদ , আল্লাহর শপথ , ক্ষুধার্ত উটও আমার মত নয় , না আমি খালি মশকের আওয়াজ শুনে পালাই , আমি নিজে আমার প্রতিপক্ষের উপর গযব এবং মারাত্মক এক বিষ তাদের জন্য যারা আমার বিরোধিতা করে। যে আমার দিকে এক দলা কাদা ছুঁড়ে মারে , সে একটি পাথর পুরস্কার পাবে। হে বসরার জনগণ , বিশ্বাসীদের আমির (ইয়াযীদ) আমাকে কুফার অভিভাবকত্ব দান করেছেন এবং আগামীকাল আমি সেখানে যাবো। আমি আমার ভাই উসমান বিন যিয়াদ বিন আবু সুফিয়ানকে তোমাদের উপর আমার খলিফা (প্রতিনিধি) নিয়োগ দিলাম। সাবধান , বিরোধিতা ও ফাসাদ থেকে দূরে থাকো। কারণ আল্লাহর শপথ , যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই , যদি আমি তোমাদের মাঝে কাউকে বিরোধিতা করতে শুনি , তাহলে আমি অবশ্যই তাকে হত্যা করবো , তার গোত্র প্রধান ও অভিভাবকসহ। আমি উপস্থিত যারা আছে তাদের দায়িত্ব দিচ্ছি যারা অনুপস্থিত আছে তাদের জন্য , যতক্ষণ না পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং আমার বিরোধিতা করে ও আমাকে অপছন্দ করে এমন লোক যেন তোমাদের মাঝে না থাকে। আমি যিয়াদের সন্তান এবং আমার বাবার সাথে আমার বেশী মিল রয়েছে , তাদের চাইতে বেশী , যারা এ পৃথিবীতে এ পর্যন্ত পা রেখেছে এবং আমি আমার মামা ও চাচাদের মত নই। ” এরপর সে বসরা ত্যাগ করলো এবং কুফার দিকে গেলো তার ভাই উসমানকে তার জায়গায় রেখে।
আযদি বর্ণনা করেন যে , আবুল মাখারিক্ব রাসবী বলেন যে , বসরার কিছু শিয়া আব্দুল ক্বায়েস গোত্রের এক মহিলার বাড়িতে জড়ো হলো। মহিলার নাম ছিলো মারিয়া , সা ’ আদ অথবা মানক্বাযের কন্যা , যে ছিলো একজন শিয়া। তার বাড়ি ছিলো তাদের জড়ো হওয়ার জায়গা এবং তারা সেখানে পরস্পর দেখা সাক্ষাৎ করতো। যখন উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদকে জানানো হলো যে ইমাম হোসেইন (আ.) ইরাকের দিকে আসছেন তখন সে তার নিয়োগকৃত তত্ত্বাবধায়ককে চিঠি লিখলো যেন সে পাহারাদার নিয়োগ দেয় এবং রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেয়। ইয়াযীদ বিন নাবীত , যে ছিলো আব্দুল ক্বায়েস গোত্রের একজন , সিদ্ধান্ত নিলো ইমাম হোসেইন (আ.) কে রক্ষায় যাবে। তার দশ জন ছেলে ছিলো যাদেরকে সে জিজ্ঞেস করলো তার সঙ্গে কে যাবে। তার সন্তানদের মধ্যে দুজন আব্দুল্লাহ এবং উবায়দুল্লাহ রাজী হলো তার সাথে যাওয়ার জন্য। যখন শিয়ারা মারিয়ার বাসায় জড়ো হলো , সে তার সাথীদের উপস্থিতিতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলো। তার বন্ধুরা বললো যে তারা তার বিষয়ে উবায়দুল্লাহর লোকদেরকে ভয় পায়। এর উত্তরে সে বললো ,“
যখন আমার উটের ক্ষুরগুলো মরুভূমিতে পড়বে আমি তাদের ধাওয়াকে ভয় করি না। ” এরপর সে যাত্রা করলো এবং সফলতার রাস্তাগুলো তৈরী করলো এবং মক্কায় ইমাম হোসেইন (আ.) এর কাছে পৌঁছে গেলো। সে আবতাহতে অবস্থিত ইমাম হোসেইন (আ.)-এর তাঁবুতে পৌঁছে গেলো। যখন ইমাম হোসেইন (আ.) তার আসার সংবাদ পেলেন তখন তাকে স্বাগত জানানোর জন্য তিনি উঠে দাঁড়ালেন। যখন সে ইমামের তাঁবুর কাছে চলে এলো , তাকে বলা হলো ইমাম ইতোমধ্যেই চলে গেছেন তার জায়গায় তার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য। সে ফিরে চললো এবং দেখলো ইমাম দরজাতে বসে আছেন , তার জন্য অপেক্ষা করছেন এবং তিনি (আ.) বললেন ,
)
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا(
“
আল্লাহর অনুগ্রহে এবং তাঁর রহমতে , এতে তাদের আনন্দ উল্লাস করা উচিত। ” [সূরা ইউনুস : ৫৮]
তখন সে তাকে সালাম জানালো ও বসে পড়লো। এরপর ইমামের কাছে তার উদ্দেশ্য বর্ণনা করলো আর তিনি তার কল্যাণের জন্য দোআ করলেন। সে ইমামের সাথে রয়ে গেলো কারবালা পর্যন্ত এবং সেখানে সে যুদ্ধ করেছিলো এবং তার দুসন্তানসহ সেখানে শহীদ হয়েছিলো।