কোরআন মজীদে বৈজ্ঞানিক তথ্য
কোরআন মজীদ যে আল্লাহর কিতাব তার আরেকটি প্রমাণ হচ্ছে , এতে এমন বহু বৈজ্ঞানিক তথ্য রয়েছে যা কোরআন নাযিলের যুগের মানুষের পক্ষে জানা তো দূরের কথা , পরবর্তী প্রায় তেরশ’
বছর পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত ছিলো এবং মোটামুটি বিগত এক শতাব্দীকালে আবিষ্কৃত হয়েছে। এ সবের মধ্য থেকে কয়েকটি সম্বন্ধে এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো।
এক : উদ্ভিদের প্রাণ
উদ্ভিদের প্রাণ আছে এ তথ্যটি বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে আবিষ্কৃত হয়। অতি সাম্প্রতিককালে এ-ও প্রমাণিত হয়েছে যে , উদ্ভিদ তার পারিপার্শ্বিকতা সম্বন্ধে সচেতন ; পারিপার্শ্বিকতার সব কিছুকে ও সবাইকে চিনতে পারে এবং অন্যদের আচরণের মোকাবিলায় সাড়া দিতে পারে। অথচ এখন থেকে চৌদ্দশ’
বছর আগেই কোরআন মজীদে বলা হয়েছে যে , উদ্ভিদ আল্লাহ্কে সিজ্দাহ্ করে (সূরাহ্ আর্-রাহমান : 6) , অর্থাৎ উদ্ভিদ ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন প্রাণশীল সৃষ্টি।
দুই : জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি
বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে , প্রাণীকুল ও উদ্ভিদকুলের প্রতিটি প্রজাতিরই নারী-পুরুষ রয়েছে। দৃশ্যতঃ কোনো উদ্ভিদের নারী-পুরুষ না থাকলেও একই বৃক্ষে নারী ফুল ও পুরুষ ফুল ধরে অথবা একই ফুলে গর্ভকেশর ও পুংকেশর রয়েছে। এমনকি পরমাণু পর্যন্ত ধনাত্মক এ ঋণাত্মক বিদ্যুত দ্বারা গঠিত। হযরত নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর যুগে কতক উদ্ভিদের নারী-পুরুষ থাকার কথা জানা থাকলেও সকল উদ্ভিদের নারী-পুরুষ থাকার বা একই ফুলের গর্ভকেশর-পুংকেশর থাকার কথা জানা ছিলো না , পরমাণুর দু’
ধরনের বিদ্যুতের কথা জানা থাকা তো দূরের কথা। কিন্তু কোরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে :
“
পরমপ্রমুক্ত তিনি যিনি ধরণীর বুকে গজানো সব কিছুকে এবং তাদের নিজেদেরকেও , আর তারা যে সব কিছুকে জানে না তার সব কিছুকেই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। '' (সূরাহ্ ইয়া-সীন্ :
36)
এখানে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে , লোকেরা যে সব কিছুর জোড়া হওয়ার কথা জানতো না (বা এখনো অনেক কিছুর ব্যাপারে জানে না) তা-ও জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে।
তিন : মাতৃগর্ভে সন্তানের বিকাশপ্রক্রিয়া
মাতৃগর্ভে সন্তানের বিকাশ ও বৃদ্ধির পর্যায়ক্রম সম্বন্ধে কোরআন নাযিলের যুগের মানুষ কিছুই জানতো না। আল্লাহ্ তা‘
আলা জানিয়ে দেন যে , মাতৃগর্ভে শুক্র একটি জড়িত বস্তুর রূপ লাভ করে , তারপর তা মাংসপিণ্ডে পরিণত হয় , এরপর তা থেকে অস্থি সৃষ্টি হয় , এরপর অস্থির ওপর মাংসের আস্তরণ তৈরী হয় , এরপর তাকে নতুন সৃষ্টিতে পরিণত করা হয় (সূরাহ্ আল্-মু’
মিনূন্ : 14)। সাম্প্রতিক কালে বিজ্ঞানীরাও এ প্রক্রিয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
চার : পৃথিবীর গতিশীলতা
কোরআন মজীদ নাযিলের যুগের মানুষ পৃথিবীকে স্থির মনে করত। কিন্তু কোরআন মজীদ তার গতিশীলতার কথা বলেছে। আল্লাহ্ তা‘
আলা এরশাদ করেছেন :
)
ه
ُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الأرْضَ ذَلُولا فَامْشُوا فِي مَنَاكِبِهَا(
“
তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে‘
সুনিয়ন্ত্রিত গতি সম্পন্ন’
(ذَلُول
) বানিয়েছেন , অতএব , তোমরা তার স্কন্ধসমূহে বিচরণ করো।”
(সূরাহ্ আল্-মুল্ক্ :
15)
বাহনপশুকে প্রশিক্ষণ দেয়ার ফলে তার গতি তার পিঠে আরোহণকারীর জন্য নিরাপদমূলকভাবে নিয়ন্ত্রণের উপযোগী হলে ঐ পশুকে‘
যালূল’
অর্থাৎ‘
সুগতিসম্পন্ন’
বা‘
সুনিয়ন্ত্রিত গতি সম্পন্ন’
বলা হয়।
উক্ত আয়াতে পৃথিবীকে‘
যালূল্’
অর্থাৎ‘
সুগতিসম্পন্ন’
বা‘
সুনিয়ন্ত্রিত গতি সম্পন্ন’
বলা হয়েছে। পৃথিবীকে‘
যালূ্ল্’
বলার মধ্যে দিয়ে তার গতিশীলতার কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে , তার গতি মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর বাসোপযোগী ভারসাম্যপূর্ণ।
পাঁচ : পরাগায়ণ ও বৃষ্টিবর্ষণে বায়ুর ভূমিকা
কোরআন মজীদে আল্লাহ্ তা‘
আলার পক্ষ থেকে বায়ু প্রবাহিত করার কথা বলতে গিয়ে তাকে“
লাওয়াক্বেহ্”
(لواقح
) বলা হয়েছে (সূরাহ্ আল্-হিজ্র্ : 22)। ইতিপূর্বে মুফাসসিরগণ শব্দটির অর্থ করতেন‘
গর্ভবতী’
অর্থাৎ‘
বৃষ্টিবর্ষণকারী মেঘ গর্ভে ধারণকারী বায়ু’
। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে শব্দটির মানে হচ্ছে‘
গর্ভসঞ্চারক’
। কারণ ,لواقح
শব্দটিلاقح
শব্দের বহুবচন। আরلاقح
একটি পুরুষবাচক শব্দ , স্ত্রীবাচক হচ্ছেلاقحة
এবং এ দুই শব্দের অর্থ যথাক্রমে‘
গর্ভসঞ্চারক’
ও‘
গর্ভবতী’
।
ইতিপূর্বে বায়ুর গর্ভসঞ্চারক হওয়ার বিষয়টি বোধগম্য ছিলো না বলেইلواقح
-এর অর্থ‘
গর্ভবতী’
করা হয়। অথচ বায়ু মেঘকে তার গর্ভে ধারণ করে না , বরং তা বায়ুর সাথে মিশে থাকে। অন্যদিকে সম্প্রতিক কালে বিজ্ঞান বায়ুর গর্ভসঞ্চারক হওয়ার বিষয়টি দুই ক্ষেত্রে প্রমাণ করেছে। প্রথমতঃ অনেক উদ্ভিদেরই পরাগায়ণ বায়ুপ্রবাহের দ্বারা হয়ে থাকে। দ্বিতীয়তঃ জলীয় বাষ্প বায়ুর মধ্যে পুঞ্জিভূত হলেই বৃষ্টি হয় না , বরং বায়ুপ্রবাহের ফলে জলীয় বাষ্পের অণুগুলো পরস্পরের সংস্পর্শে এসে প্রথমে পানিবিন্দুতে ও পরে পানির ফোঁটায় পরিণত হয় , অতঃপর বৃষ্টি হয়। এখানে বায়ু মেঘের গর্ভসঞ্চারকের ভূমিকা পালন করে যার ফলে জলীয়বাষ্প গঠিত মেঘে পানির জন্ম হয়।
ছয় : পানি থেকে প্রাণের উৎপত্তি
বিজ্ঞান বলে , পানি থেকেই প্রাণের উৎপত্তি হয়েছে। কোরআন মজীদ চৌদ্দশ ' বছর আগেই এ কথা বলে দিয়েছে। এরশাদ হচ্ছে :
)
و
َجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ(
“
আর আমি পানি থেকেই প্রতিটি জিনিসকে প্রাণশীল করেছি।”
(সূরাহ্ আল্-আম্বিয়া’
:
30)
সাত : নভোমণ্ডল গ্যাসীয় ছিল
বিজ্ঞানীদের মতে , গ্রহ-নক্ষত্রাদি সৃষ্টির পূর্বে নভোমণ্ডল গ্যাসীয় আকারে ছিলো। কোরআন মজীদে একথা চৌদ্দশ’
বছর আগেই বলা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে :
)
ث
ُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ وَهِيَ دُخَانٌ(
“
অতঃপর তিনি আকাশকে সুনিয়ন্ত্রিত করলেন ,আর তখন তা ছিলো ধোঁয়া (গ্যাসীয় অবস্থায়)।
”
(সূরাহ্ হা-মীম্ আস্-সাজ্দাহ্/ ফুছ্বছ্বিলাত্ : 11)
আট : আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী একত্র ছিলো
বিজ্ঞানীদের মতে , সূর্য থেকে তার গ্যাসীয় পদার্থ বিচ্ছিন্ন হয়ে গ্রহসমূহ সৃষ্টি হয়েছে এবং তারও পূর্বে নভোমণ্ডলের নক্ষত্রসমূহ গ্যাসীয় আকারে একত্রিত ছিল , পরে তা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয় , ঘন হয় ও আকার লাভ করে। কোরআন মজীদেও এ একত্র থাকার কথা বলা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে :
)
أ
َوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالأرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا(
“
কাফেররা কি দেখে নি যে , আসমান সমূহ ও পৃথিবী পরস্পর সংযুক্ত ছিল , অতঃপর আমি এতদুভয়কে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করেছি ?”
'
(সূরাহ্ আল্-আম্বিয়া’
:
30)
কোরআন মজীদে এ ধরনের আরো বহু বৈজ্ঞানিক তথ্য রয়েছে।