কোরআনের পরিচয়

কোরআনের পরিচয়0%

কোরআনের পরিচয় লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: কোরআন বিষয়ক জ্ঞান

কোরআনের পরিচয়

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 21818
ডাউনলোড: 3383

কোরআনের পরিচয়
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 33 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 21818 / ডাউনলোড: 3383
সাইজ সাইজ সাইজ
কোরআনের পরিচয়

কোরআনের পরিচয়

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

অত্র গ্রন্থে কোরআন মজীদের বেশ কিছু আয়াত উদ্ধৃত হয়েছে এবং এ সব আয়াতের মধ্যে এমন আয়াতও রয়েছে যাতে আল্লাহ্ তা আলা নিজের জন্য উত্তম পুরুষে বহুবচন অর্থাৎ আমরা শব্দ ব্যবহার করেছেন। তৎকালীন আরবী বাকরীতিতে সর্বোচ্চ কর্তৃত্বশালীদের মুখে নিজের জন্য এক বচন অর্থেই আমরা ব্যবহারের প্রচলন ছিলো , এ কারণে তৎকালীন আরবের মোশরেকরা কোরআন মজীদে আল্লাহ্ তা আলা নিজের জন্য আমরা ব্যবহার করায় এ ব্যাপারে প্রশ্ন তোলে নি তথা একে বহু ঈশ্বরবাদের সপক্ষে প্রমাণ বলে দাবী করে নি। কিন্তু যদিও বাংলা সহ আরো অনেক ভাষায় সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব বা বিনয় প্রকাশের জন্য এর প্রচলন রয়েছে তথাপি বাংলা বাকরীতিতে অনেক ক্ষেত্রে এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে বিনয়স্বরূপ আমরা এবং কর্তৃত্বভাব প্রকাশের জন্য আমি ব্যবহারেরও প্রচলন আছে। এ কারণে বাংলা ভাষায় আল্লাহ্ তা আলার জন্য আমরা ব্যবহার বেখাপ্পা শুনায় বিধায় আমরা এক বচনে এর অনুবাদ করেছি। অত্র গ্রন্থে এ ধরনের সকল আয়াতের ক্ষেত্রেই আমরা এ রীতি অনুসরণ করেছি।

কোরআনের মু জিযাহ্

নবী-রাসূলগণ ( আঃ)-এর নবুওয়াত্ প্রমাণের মূল দলীল ছিলো তাঁদের বিচারবুদ্ধিগ্রাহ্য অস্তিত্ব। তাঁদের আখ্লাক্ব্ , আচরণ ও জীবনধারা থেকে সমকালীন মানুষেরা বুঝতে পারতো যে , তাঁরা কোন মিথ্যা দাবী করতে পারেন না , অতএব , তাঁরা যখন নবুওয়াত্ দাবী করছেন তখন নিঃসন্দেহে তাঁরা নবী। এছাড়া অনেক নবীকে ( আঃ) পূর্ববর্তী নবীগণ ( আঃ) নবী হিসেবে পরিচিত করে দিয়ে গেছেন বা এমন নিদর্শনাদি সহ ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন যাতে আবির্ভাবকালে তাঁকে বা তাঁদেরকে নবী হিসেবে সহজেই চেনা যায়।

কিন্তু এছাড়া অনেক নবীকেই ( আঃ) , বিশেষ করে পূর্ববর্তী নবী ( আঃ) সরাসরি পরিচয় করিয়ে দেন নি (কালগত ব্যবধানের কারণে) এমন নবীদেরকে ( আঃ) , আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের অলৌকিক নিদর্শন ও ঘটনা (মু জিযাহ্) দেয়া হয় যা প্রত্যক্ষ করে লোকদের মধ্যে নবীর নবী হওয়ার ব্যাপারে প্রত্যয় উৎপাদন হতো। কারণ , তাঁরা এমন কাজ করতেন বা তাঁদেরকে কেন্দ্র করে আল্লাহ্ তা আলা এমন ঘটনা ঘটাতেন যা সমকালীন জ্ঞান-বিজ্ঞান ও মানবিক উপায়-উপকরণের দ্বারা সম্ভবপর হতো না।

এ সব মু জিযাহ্ সেগুলো প্রত্যক্ষকারীদের জন্যে যতোখানি প্রত্যয়উৎপাদনকারী হতো শ্রবণকারীদের জন্যে তা থেকে সমপরিমাণ প্রত্যয় উৎপাদন সম্ভব ছিলো না , কারণ , তা বর্ণনাকারীর ওপরে শ্রবণকারীর প্রত্যয়ের ওপর নির্ভর করতো। পরবর্তীকালীন শ্রোতাদের জন্য তার প্রত্যয়ের মাত্রা হয় আরো কম। অবশ্য পূর্ব থেকে মওজূদ ঐশী গ্রন্থে ঈমানের কারণে উক্ত ঐশী গ্রন্থভুক্ত বর্ণনা পাঠেও সংশ্লিষ্ট নবীর মু জিযাহ্ সম্পর্কে প্রত্যয় সৃষ্টি হতে পারে , কিন্তু তা প্রত্যক্ষকারীর মতো হওয়া সম্ভব নয়। এ কারণেই ক্বিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানবজাতির জন্য যার নবুওয়াত কার্যকর সেই শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)কে ঐ ধরনের বহু মু জিযাহর পাশাপাশি একটি অবিনশ্বর মু জিযাহ্ দেয়া হয় , তা হচ্ছে কোরআন মজীদ।

কোরআন মজীদ হচ্ছে এমন একটি মু জিযাহ যা স্থান-কাল নির্বিশেষে সবখানে ও সব সময় প্রত্যক্ষ করা সম্ভব এবং যে মু জিযাহ্কে বিচারবুদ্ধিগ্রাহ্য করা হয়েছে। কোরআনের মু জিযাহ্ তার রচনাশৈলী , বাচনভঙ্গি , জ্ঞানগর্ভতা , সূক্ষ্ম ভাব প্রকাশ ও সংক্ষিপ্ততার মধ্যে নিহিত। এ ধরনের মধ্যম আয়তনের একটি কিতাবে এতো বিপুল সংখ্যক বিষয়ে এতো সুগভীর জ্ঞান দেয়া হয়েছে , অথচ এর সাহিত্যিক মান সর্বোচ্চে - এটা মানবিক ক্ষমতার উর্ধে। এর ভিত্তিতেই কোরআন মজীদ তার সমমানের কোন গ্রন্থ বা নিদেন পক্ষে একটি সূরাহ্ পেশ করার চ্যালেঞ্জ প্রদান করেছে , যে চ্যালেঞ্জ আজ পর্যন্ত কেউই গ্রহণ করতে পারে নি।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে , মানবজাতির মধ্যে উদ্ভুত ভাষাসমূহের মধ্যে আরবী ভাষা হচ্ছে সর্বাধিক সম্ভাবনাময়।

মানুষের ভাষা হিসেবে এর সম্ভাবনাকে সীমাহীন বলে অভিহিত করা চলে না বটে , তবে সে সম্ভাবনা এতোই বেশী যে , কোনো মানুষের পক্ষে তা পুরোপুরি আয়ত্ত করা ও কাজে লাগানো সম্ভব নয় ; কেবল আল্লাহ্ তা আলার পক্ষেই সম্ভব।

আরবী ভাষা সূক্ষ্মতম ভাব প্রকাশ ও তাৎপর্যে সূক্ষ্মতম পার্থক্য প্রকাশের জন্য সর্বাধিক উপযোগী। কেবল শব্দের বানানে পরিবর্তন করে - দু একটি হরফ যোগ ও হারাকাত পরিবর্তন এবং বাক্যের মধ্যে শব্দের অবস্থান অগ্র-পশ্চাত করে - অর্থে এতো বেশী সংখ্যক পরিবর্তন সাধন সম্ভব যা অন্য কোনো ভাষার ক্ষেত্রে চিন্তাও করা যায় না।

আরবী ভাষার এ অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণেই আরবরা নিজেদের ভাষাকে আরাবী (عربی ) অর্থাৎ প্রাঞ্জল ভাষা বলে অভিহিত করতো এবং সে তুলনায় অনারবদের ভাষার সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতা লক্ষ্য করে অনারবদের আজামী (عجمی ) বা বোবা বলে বিদ্রুপ করতো।

হযরত মুহাম্মাদ(ছ্বাঃ)-এর আবির্ভাবের যুগে আরবী ভাষা তার বিকাশের চরমতম শিখরে উপনীত হয়। ঐ সময় আরবী ভাষায় এমন সব কবিতা রচিত হয় যা আজো এ ভাষার শ্রেষ্ঠতম কবিতার আসন দখল করে আছে। ঐ সময় আরবী গদ্যও (যদিও মৌখিক) বিকাশের চরমতম পর্যায়ে উপনীত হয় এবং আরবী ভাষার সূচনাকাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আরবী বক্তা ও বাচনশিল্পীদের আবির্ভাব ঘটে ঐ সময়ই।

বস্তুতঃ বিশ্ববাসীর ওপর আরবদের গর্ব করার মতো কেবল এই একটি বিষয়ই ছিলো। তা সত্ত্বেও আরবী বাচনশিল্পের (কবিতা ও ভাষণের) সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম নায়কগণও কোরআন মজীদের বাচনসৌন্দর্যের কাছে অক্ষম হয়ে পড়েছিলো। তাই সমগ্র কোরআনের বিকল্প রচনা করা তো দূরের কথা , এর ছোট একটি সূরাহর সমমানসম্পন্ন সূরাহ্ও তারা রচনা করতে সক্ষম হয় নি। তাই স্বভাবতঃই লোকেরা কোরআন মজীদের বাণী শুনে অভিভূত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করতো।

লোকেরা এভাবে কোরআনের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকায় আরবী ভাষার শ্রেষ্ঠতম বাচনশিল্পীগণ লোকদেরকে কোরআন শোনা থেকে ফিরিয়ে রাখার জন্যে শেষ পর্যন্ত কোরআনকে জাদু বলে অভিহিত করে। বলা বাহুল্য যে , জাদুর মন্ত্র কখনো জ্ঞানবিজ্ঞানে পরিপূর্ণ এবং রাজনৈতিক , সামাজিক ও ধর্মীয় বিধিবিধান সম্বলিত হয় না , বরং তা হয় দুর্বোধ্য। তা সত্ত্বেও কোরআনের বাচনসৌন্দর্যের কাছে এমনকি কোরআন-বিরোধী মানুষও দলে দলে আত্মসমর্পণ করতো বিধায় তারা একে জাদু বলে অভিহিত করে।

কোরআন মজীদের মু জিযাহর এ-ও অন্যতম বৈশিষ্ট্য যে , এতো জ্ঞানপূর্ণ ও উন্নত সাহিত্যিক ভাবধারা বিশিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও তার ভাষা খুবই সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল ; এ গ্রন্থ মুখস্ত করা ও মনে রাখা সহজ এবং বার বার পড়লে বা শুনলেও কখনোই বিরক্তি আসে না , পড়া ও শুনার আগ্রহ হ্রাস পায় না। এছাড়া এর পঠন-পাঠন মানুষের মন-মগয ও আচরণকে প্রভাবিত করে। এ ধরনের বৈশিষ্ট্য মানবরচিত কোনো গ্রন্থেই নেই।

কোরআন মজীদের মু জিযাহ্ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করে আরবী ও ফার্সী ভাষায় বহু মূল্যবান গ্রন্থ রচিত হয়েছে। এ সব গ্রন্থ অধ্যয়ন করে কোরআন মজীদের মু জিযাহ্ সম্বন্ধে বিস্তারিত ও গভীরতর ধারণা লাভ করা যেতে পারে। [এ বিষয়ে অত্র গ্রন্থকারের কোরআনের মু জিযাহ্ শীর্ষক একটি অপ্রকাশিত গ্রন্থ রয়েছে।]

কোরআনের মু জিযাহ্ প্রসঙ্গে একটি বিষয় উল্লেখ না করলে নয়। তা হচ্ছে , সাম্প্রতিক কালে মিসরের এক ব্যক্তি দাবী করেন , তিনি কম্পিউটারের সাহায্যে কোরআনের বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে , কোরআন মজীদের বর্ণ , শব্দ , হরফে মুক্বাত্বত্বা আত্ , নামসমূহ ইত্যাদি 19 দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য। অতঃপর এ নিয়ে বহির্বিশ্বে কোথাও কোথাও , বিশেষ করে বাংলাদেশে খুবই উৎসাহ সৃষ্টি হয় এবং এ নিয়ে অনেকে বইপুস্তক ও প্রবন্ধ রচনা করেন। অথচ বিগত চৌদ্দশ ' বছরে যে সব কোরআন-বিশেষজ্ঞ কোরআনের মু জিযাহ্ সম্বন্ধে গ্রন্থাদি রচনা করেছেন তাঁদের কেউই 19 সংখ্যা দ্বারা কোরআনের মু জিযাহ্ প্রমাণের চেষ্টা করেন নি। এমনকি এ বিষয়টি ময়দানে আসার পরেও বর্তমানে যে সব দেশে ইসলামী জ্ঞানচর্চা ব্যাপক ও সুগভীর অর্থাৎ ইরান , ইরাক , লেবানন , সিরিয়া ও মিসরে এ দাবীটি গ্রহণযোগ্য হয় নি।

পরীক্ষা করে দেখা গেছে , কথিত দাবী অনুযায়ী কোরআন মজীদের কতক বিষয় 19 দ্বারা বিভাজ্য হলেও সবকিছু 19 দ্বারা বিভাজ্য নয়। (এ সম্বন্ধে অত্র গ্রন্থকারের অপ্রকাশিত কোরআনের মু জিযাহ্ গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।) যথাসম্ভব এ তত্ত্বের পিছনে বাহাইদের ষড়যন্ত্র ক্রিয়াশীল রয়েছে। কারণ , বাহাই ধর্মাবলম্বীরা 19 সংখ্যাকে পবিত্র গণ্য করে। উল্লেখ্য , বাহাই ধর্ম যথাসম্ভব যায়নবাদী ইয়াহূদীদের ষড়যন্ত্রের ফলে অস্তিত্বলাভ করে ঠিক যেভাবে ইংরেজদের ষড়যন্ত্রে কাদিয়ানী ধর্ম অস্তিত্বলাভ করে।

19 সংখ্যার মু জিযাহ্ তত্ত্ব প্রবর্তনের উদ্দেশ্য সম্ভবতঃ এই যে , মুসলমানদের একাংশ প্রথমতঃ এ তত্ত্বে বিশ্বাস স্থাপন করবে , অতঃপর তাদের মধ্যে কতক লোক কোরআনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে 19 সংখ্যা দ্বারা পরীক্ষা করে দেখবে এবং যে সব ক্ষেত্রে 19 সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য পাবে না সে সব ক্ষেত্রে কোরআনের বিকৃতি ঘটেছে বলে তাদের মনে সন্দেহ সৃষ্টি হবে , অতঃপর তা তাদের কাছ থেকে অন্যদের মধ্যে বিস্তারলাভ করবে। তাই এ ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক থাকা যরূরী।

কোরআনের ভবিষ্যদ্বাণী

বলা বাহুল্য যে , কোরআন মজীদের বাচনসৌন্দর্য বা মু জিযাহর সাথে কেবল তাদের পক্ষেই পুরোপুরি পরিচিত হওয়া সম্ভব যারা আরবী ভাষার উন্নততম প্রকাশসৌন্দর্য (ফাছ্বাহাত্ ও বালাগ্বাত্)-এর সাথে পরিচিত। তবে যারা আরবী ভাষার ফাছ্বাহাত্ ও বালাগ্বাতের সাথে পরিচিত নন তাঁদের পক্ষেও এ কিতাবের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য থেকে বুঝা সম্ভব যে , এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত কিতাব। এ সব বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কোরআন মজীদের বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণী ও তার বাস্তবে পরিণত হওয়া। এখানে আমরা এরূপ কয়েকটি ভবিষ্যদ্বাণীর ওপর অত্যন্ত সংক্ষেপে আলোকপাত করবো।

এক : রোমের বিজয়

615 খৃস্টাব্দে তৎকালীন পারস্য সম্রাটের নিকট রোম সম্রাট যুদ্ধে পরাজিত হন। রোমানরা আহলে কিতাব (খৃস্টান) ও পারস্য সম্রাট অগ্নিপূজারী ছিলেন বিধায় মক্কায় কুরাইশরা তাওহীদবাদী মুসলমানদের উপহাস করতে শুরু করে। তখন কোরআন মজীদের সূরাহ্ আর-রূম্ নাযিল করে আল্লাহ্ তা 'আলা জানিয়ে দেন যে , খুব শীঘ্রই মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে রোমানরা বিজয়ের অধিকারী হবে (আয়াত নং 2-3)। এরপর নয় বছরের মাথায় 624 খৃস্টাব্দে রোমান বাহিনী পারস্যভুক্ত আযারবাইজান দখল করে নেয় এবং পরবর্তী কয়েক বছর পর্যন্ত বিজয়ের ধারা অব্যাহত থাকে।

দুই : আবূ লাহাবের স্ত্রীর মৃত্যুকালীন অবস্থা

মক্কায় থাকাকালে হযরত রসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর সবচেয়ে বড় দুশমন ছিলো আবূ লাহাব। আবূ লাহাবের স্ত্রীও তাঁর দুশমন ছিলো। এমতাবস্থায় কোরআন মজীদে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় যে , আবূ লাহাবের স্ত্রী জ্বালানী কাষ্ঠের (লাকড়ির) বোঝা বহনরত অবস্থায় গলায় খেজুর পাতার তৈরি রশির ফাঁস লেগে মারা যাবে (সূরাহ্ লাহাব : 3-5 )। শেষ পর্যন্ত সে এভাবেই মারা যায়।

আবূ লাহাবের স্ত্রীর এভাবে মৃত্যু ঘটার সত্যতা সম্বন্ধে এ পর্যন্ত কোরআন-বিরোধীদের পক্ষ থেকে সন্দেহ প্রকাশ করা হয় নি। তারপরও কেউ যদি এর সত্যতা সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলতে চায় তো তার সংশয় নিরসনের জন্যে এতোটুকু উল্লেখ করাই যথেষ্ট যে , আবূ লাহাবের স্ত্রীর মৃত্যু এভাবে না হয়ে অন্য কোনোভাবে হলে তখনকার আরবের কাফের , মোশরেক ও ইয়াহূদী-খৃস্টানরা হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর নবুওয়াতের দাবীকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্যে একে প্রমাণ হিসেবে পেশ করার সুযোগ মোটেই হাতছাড়া করতো না। বরং তারা রোম , পারস্য , মিসর ও আবিসিনিয়ায় পর্যন্ত তা ব্যাপকভাবে প্রচার করতো এবং এই একটি ঘটনাই ইসলামের মৃত্যু ঘটার জন্য যথেষ্ট হতো।

তিন : মক্কাহ্ বিজয়

হুদায়বীয়াহর সন্ধি বাহ্যিক বিচারে মুসলমানদের জন্য ছিলো অপমানজনক , এ কারণে অনেক ছ্বাহাবী এ সন্ধি সম্পাদনের বিপক্ষে ছিলেন। কিন্তু হযরত নবী করীম (ছ্বাঃ) আল্লাহর নির্দেশে সন্ধি করেন এবং আল্লাহ্ তা আলা কোরআন মজীদের সূরাহ্ আল্ ফাৎহ্ নাযিল্ করে জানিয়ে দেন যে , মুসলমানরা অচিরেই মক্কাহ্ বিজয় করতে পারবে (আয়াত নং 1 ও 27)। অচিরেই এ ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তব রূপ লাভ করে। উল্লেখ্য , সূরাহ্ আল্-ক্বাছ্বাছ্বের 85 নং আয়াতেও এর ইঙ্গিত রয়েছে এবং সূরাহ্ আন্-নাছ্বর্-এও একই ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে।

চার : ফির্ আউনের মৃতদেহ সংরক্ষণ

হযরত মূসা (আঃ)-এর পিছু ধাওয়াকারী ফির্ আউন্ তার দলবলসহ লোহিত সাগরে ডুবে মারা যায়। এ ঘটনা বাইবেলের পুরাতন নিয়মের যাত্রাপুস্তকে এবং কোরআন মজীদে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে যে , ফিরআউনের মৃত্যুর সময় আল্লাহ্ তা আলা তাকে সম্বোধন করে বলেন :

অতএব , আজ আমি তোমার শরীরকে রক্ষা করবো যাতে তা তোমার পরবর্তী লোকদের জন্যে একটি নিদর্শনস্বরূপ হয় , যদিও এতে সন্দেহ নেই যে , অধিকাংশ মানুষই আমার নিদর্শনসমূহের ব্যাপারে উদাসীন থাকে। ( সূরাহ্ ইউনুস : 92)

বাইবেলের যাত্রাপুস্তকে এ বিষয়ে কোনো কথা উল্লেখ নেই এবং হযরত নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর যুগে কারোই জানা ছিলো না যে , হযরত মূসা ( আঃ)-এর সময় ডুবে মরা ফির্ আউনের মৃতদেহ কোথাও সংরক্ষিত আছে। কোরআন মজীদের এ আয়াত নাযিল হবার তেরশ বছর পর উক্ত ফির্ আউনের লাশ একটি পিরামিডের মধ্যে আবিষ্কৃত হয়। (নিঃসন্দেহে তার উত্তরাধিকারীরা লাশটি সমুদ্র থেকে উদ্ধারের পর মমি করে পিরামিডে রেখেছিলো।) লাশটি এখনও কায়রোর জাদুঘরে আছে। এ লাশের ওপরকার লবণের আস্তরণ থেকে এটিকে হযরত মূসা ( আঃ)-এর সময় ডুবে মরা ফির্ আউনের লাশ বলে সনাক্ত করা হয়।

পাঁচ : রাসূলুল্লাহ্ র (ছ্বাঃ) বংশধারা সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণী

হযরত নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর দুই পুত্র ক্বাসেম ও আবদুল্লাহ্ শিশু বয়সে ইন্তেকাল করলে তাঁর দুশমন আবূ লাহাব তাঁকে আব্তার্ (ابتر -লেজকাটা - নির্বংশ অর্থে) বলে উপহাস করতো। তখন কোরআন মজীদের সূরাহ্ আল্-কাওছার্ নাযিল্ হয়। এতে আল্লাহ্ তা আলা হযরত নবী করীম (ছ্বাঃ) কে কাওছার্ (کوثر -প্রচুর) দেয়ার কথা বলেন এবং তাঁর দুশমনকে আব্তার্ বলে ঘোষণা করেন। অবশ্য অনেক মুফাসসির কাওছার্ বলতে বেহেশতে নবী করীম (ছ্বাঃ) যে হাউযে কাওছার্ -এর অধিকারী হবেন - এ অর্থ করেছেন। অনেক আয়াতে একাধিক ইঙ্গিত থাকে , তাই এ অর্থও গ্রহণীয়। কিন্তু কাফের শত্রুর পক্ষ থেকে নির্বংশ বলে উপহাসের জবাব এটা হতে পারে না। তাই অনেক মুফাসসিরের মতে এর প্রকাশ্য অর্থ হচ্ছে এই যে , নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর বংশধরের সংখ্যা প্রচুর হবে । বাস্তবেও তা-ই দেখা যায়। হযরত ফাতেমাহ্ (সালামুল্লাহ্ আলাইহা)-এর মাধ্যমে হযরত রসূলুলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর বংশধারায় সারা দুনিয়ায় যতো লোক রয়েছেন তাঁর যুগের অন্য কোনো লোকের বংশধারায় এতো লোক আছে বলে জানা নেই। অন্যদিকে তাঁর দুশমন আবূ লাহাবের ঐ সময় সন্তানসন্ততির সংখ্যা অনেক থাকলেও যা নিয়ে সে গর্ব করতো - অচিরেই তার বংশধারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

কোরআন মজীদে বৈজ্ঞানিক তথ্য

কোরআন মজীদ যে আল্লাহর কিতাব তার আরেকটি প্রমাণ হচ্ছে , এতে এমন বহু বৈজ্ঞানিক তথ্য রয়েছে যা কোরআন নাযিলের যুগের মানুষের পক্ষে জানা তো দূরের কথা , পরবর্তী প্রায় তেরশ বছর পর্যন্ত অনাবিষ্কৃত ছিলো এবং মোটামুটি বিগত এক শতাব্দীকালে আবিষ্কৃত হয়েছে। এ সবের মধ্য থেকে কয়েকটি সম্বন্ধে এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো।

এক : উদ্ভিদের প্রাণ

উদ্ভিদের প্রাণ আছে এ তথ্যটি বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে আবিষ্কৃত হয়। অতি সাম্প্রতিককালে এ-ও প্রমাণিত হয়েছে যে , উদ্ভিদ তার পারিপার্শ্বিকতা সম্বন্ধে সচেতন ; পারিপার্শ্বিকতার সব কিছুকে ও সবাইকে চিনতে পারে এবং অন্যদের আচরণের মোকাবিলায় সাড়া দিতে পারে। অথচ এখন থেকে চৌদ্দশ বছর আগেই কোরআন মজীদে বলা হয়েছে যে , উদ্ভিদ আল্লাহ্কে সিজ্দাহ্ করে (সূরাহ্ আর্-রাহমান : 6) , অর্থাৎ উদ্ভিদ ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন প্রাণশীল সৃষ্টি।

দুই : জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি

বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে , প্রাণীকুল ও উদ্ভিদকুলের প্রতিটি প্রজাতিরই নারী-পুরুষ রয়েছে। দৃশ্যতঃ কোনো উদ্ভিদের নারী-পুরুষ না থাকলেও একই বৃক্ষে নারী ফুল ও পুরুষ ফুল ধরে অথবা একই ফুলে গর্ভকেশর ও পুংকেশর রয়েছে। এমনকি পরমাণু পর্যন্ত ধনাত্মক এ ঋণাত্মক বিদ্যুত দ্বারা গঠিত। হযরত নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর যুগে কতক উদ্ভিদের নারী-পুরুষ থাকার কথা জানা থাকলেও সকল উদ্ভিদের নারী-পুরুষ থাকার বা একই ফুলের গর্ভকেশর-পুংকেশর থাকার কথা জানা ছিলো না , পরমাণুর দু ধরনের বিদ্যুতের কথা জানা থাকা তো দূরের কথা। কিন্তু কোরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে :

পরমপ্রমুক্ত তিনি যিনি ধরণীর বুকে গজানো সব কিছুকে এবং তাদের নিজেদেরকেও , আর তারা যে সব কিছুকে জানে না তার সব কিছুকেই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। '' (সূরাহ্ ইয়া-সীন্ : 36)

এখানে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে , লোকেরা যে সব কিছুর জোড়া হওয়ার কথা জানতো না (বা এখনো অনেক কিছুর ব্যাপারে জানে না) তা-ও জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে।

তিন : মাতৃগর্ভে সন্তানের বিকাশপ্রক্রিয়া

মাতৃগর্ভে সন্তানের বিকাশ ও বৃদ্ধির পর্যায়ক্রম সম্বন্ধে কোরআন নাযিলের যুগের মানুষ কিছুই জানতো না। আল্লাহ্ তা আলা জানিয়ে দেন যে , মাতৃগর্ভে শুক্র একটি জড়িত বস্তুর রূপ লাভ করে , তারপর তা মাংসপিণ্ডে পরিণত হয় , এরপর তা থেকে অস্থি সৃষ্টি হয় , এরপর অস্থির ওপর মাংসের আস্তরণ তৈরী হয় , এরপর তাকে নতুন সৃষ্টিতে পরিণত করা হয় (সূরাহ্ আল্-মু মিনূন্ : 14)। সাম্প্রতিক কালে বিজ্ঞানীরাও এ প্রক্রিয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

চার : পৃথিবীর গতিশীলতা

কোরআন মজীদ নাযিলের যুগের মানুষ পৃথিবীকে স্থির মনে করত। কিন্তু কোরআন মজীদ তার গতিশীলতার কথা বলেছে। আল্লাহ্ তা আলা এরশাদ করেছেন :

) ه ُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الأرْضَ ذَلُولا فَامْشُوا فِي مَنَاكِبِهَا(

তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে সুনিয়ন্ত্রিত গতি সম্পন্ন (ذَلُول ) বানিয়েছেন , অতএব , তোমরা তার স্কন্ধসমূহে বিচরণ করো। (সূরাহ্ আল্-মুল্ক্ : 15)

বাহনপশুকে প্রশিক্ষণ দেয়ার ফলে তার গতি তার পিঠে আরোহণকারীর জন্য নিরাপদমূলকভাবে নিয়ন্ত্রণের উপযোগী হলে ঐ পশুকে যালূল অর্থাৎ সুগতিসম্পন্ন বা সুনিয়ন্ত্রিত গতি সম্পন্ন বলা হয়।

উক্ত আয়াতে পৃথিবীকে যালূল্ অর্থাৎ সুগতিসম্পন্ন বা সুনিয়ন্ত্রিত গতি সম্পন্ন বলা হয়েছে। পৃথিবীকে যালূ্‌ল্ বলার মধ্যে দিয়ে তার গতিশীলতার কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে , তার গতি মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর বাসোপযোগী ভারসাম্যপূর্ণ।

পাঁচ : পরাগায়ণ ও বৃষ্টিবর্ষণে বায়ুর ভূমিকা

কোরআন মজীদে আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে বায়ু প্রবাহিত করার কথা বলতে গিয়ে তাকে লাওয়াক্বেহ্ (لواقح ) বলা হয়েছে (সূরাহ্ আল্-হিজ্র্ : 22)। ইতিপূর্বে মুফাসসিরগণ শব্দটির অর্থ করতেন গর্ভবতী অর্থাৎ বৃষ্টিবর্ষণকারী মেঘ গর্ভে ধারণকারী বায়ু । কিন্তু প্রকৃত পক্ষে শব্দটির মানে হচ্ছে গর্ভসঞ্চারক । কারণ ,لواقح শব্দটিلاقح শব্দের বহুবচন। আরلاقح একটি পুরুষবাচক শব্দ , স্ত্রীবাচক হচ্ছেلاقحة এবং এ দুই শব্দের অর্থ যথাক্রমে গর্ভসঞ্চারক গর্ভবতী

ইতিপূর্বে বায়ুর গর্ভসঞ্চারক হওয়ার বিষয়টি বোধগম্য ছিলো না বলেইلواقح -এর অর্থ গর্ভবতী করা হয়। অথচ বায়ু মেঘকে তার গর্ভে ধারণ করে না , বরং তা বায়ুর সাথে মিশে থাকে। অন্যদিকে সম্প্রতিক কালে বিজ্ঞান বায়ুর গর্ভসঞ্চারক হওয়ার বিষয়টি দুই ক্ষেত্রে প্রমাণ করেছে। প্রথমতঃ অনেক উদ্ভিদেরই পরাগায়ণ বায়ুপ্রবাহের দ্বারা হয়ে থাকে। দ্বিতীয়তঃ জলীয় বাষ্প বায়ুর মধ্যে পুঞ্জিভূত হলেই বৃষ্টি হয় না , বরং বায়ুপ্রবাহের ফলে জলীয় বাষ্পের অণুগুলো পরস্পরের সংস্পর্শে এসে প্রথমে পানিবিন্দুতে ও পরে পানির ফোঁটায় পরিণত হয় , অতঃপর বৃষ্টি হয়। এখানে বায়ু মেঘের গর্ভসঞ্চারকের ভূমিকা পালন করে যার ফলে জলীয়বাষ্প গঠিত মেঘে পানির জন্ম হয়।

ছয় : পানি থেকে প্রাণের উৎপত্তি

বিজ্ঞান বলে , পানি থেকেই প্রাণের উৎপত্তি হয়েছে। কোরআন মজীদ চৌদ্দশ ' বছর আগেই এ কথা বলে দিয়েছে। এরশাদ হচ্ছে :

) و َجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ(

আর আমি পানি থেকেই প্রতিটি জিনিসকে প্রাণশীল করেছি। (সূরাহ্ আল্-আম্বিয়া : 30)

সাত : নভোমণ্ডল গ্যাসীয় ছিল

বিজ্ঞানীদের মতে , গ্রহ-নক্ষত্রাদি সৃষ্টির পূর্বে নভোমণ্ডল গ্যাসীয় আকারে ছিলো। কোরআন মজীদে একথা চৌদ্দশ বছর আগেই বলা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে :

) ث ُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ وَهِيَ دُخَانٌ(

অতঃপর তিনি আকাশকে সুনিয়ন্ত্রিত করলেন ,আর তখন তা ছিলো ধোঁয়া (গ্যাসীয় অবস্থায়)। (সূরাহ্ হা-মীম্ আস্-সাজ্দাহ্/ ফুছ্বছ্বিলাত্ : 11)

আট : আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী একত্র ছিলো

বিজ্ঞানীদের মতে , সূর্য থেকে তার গ্যাসীয় পদার্থ বিচ্ছিন্ন হয়ে গ্রহসমূহ সৃষ্টি হয়েছে এবং তারও পূর্বে নভোমণ্ডলের নক্ষত্রসমূহ গ্যাসীয় আকারে একত্রিত ছিল , পরে তা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয় , ঘন হয় ও আকার লাভ করে। কোরআন মজীদেও এ একত্র থাকার কথা বলা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে :

) أ َوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالأرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا(

কাফেররা কি দেখে নি যে , আসমান সমূহ ও পৃথিবী পরস্পর সংযুক্ত ছিল , অতঃপর আমি এতদুভয়কে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করেছি ? ' (সূরাহ্ আল্-আম্বিয়া : 30)

কোরআন মজীদে এ ধরনের আরো বহু বৈজ্ঞানিক তথ্য রয়েছে।