‘
বিসমিল্লাহ্’
পাঠ নিয়ে বিতর্ক
এ বিষয়ে একটা আনুষঙ্গিক বিতর্ক এই যে , কোরআন মজীদের 114টি সূরাহর মধ্যে সূরাহ্ আত্-তাওবাহ্ বাদে 113টি সূরাহর শুরুতে যেبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
রয়েছে তা সংশ্লিষ্ট সূরাহ্ সমূহের অংশ কিনা।
এ বিষয়ে ফক্বীহদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। ফক্বীহদের মধ্যে অনেকে মনে করেন যে , যে যে সূরাহর শুরুতেبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
রয়েছে সে সে ক্ষেত্রে তা সংশ্লিষ্ট সূরাহর অংশ এবং কোরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে যেমন ঐ সবبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
যথাস্থানে তেলাওয়াত্ করতে হবে ঠিক সেভাবেই নামাযে কোনো সূরাহ্ পড়ার সময় (সূরাহ্ আত্-তাওবাহ্ বাদে) তাبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সহ পাঠ করতে হবে।
অন্য একদল ফক্বীহ্ মনে করেন যে , সূরাহ্ সমূহের শুরুতে যেبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
রয়েছে তার মধ্যে কেবল সূরাহ্ আল্-ফাতেহার শুরুতে তা ঐ সূরাহর অংশ , অন্যান্য সূরাহর শুরুতে তা সংশ্লিষ্ট সূরাহ্ সমূহের অংশ নয়। সুতরাং নামাযে ঐ সব সূরাহর শুরুতে তা পাঠ করতে হবে না। তাঁদের মতে , ঐ সব সূরাহর শুরুতেبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
লেখা হয়েছে বিভিন্ন সূরাহকে পরস্পর থেকে পৃথক করে দেখানোর জন্য।
আবার কেউ কেউ মনে করেন যে , সূরাহ্ আন্-নামল্-এর ভিতরে যেبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
রয়েছে কেবল তা-ই কোরআন মজীদের অংশ ; সূরাহ্ আত্-তাওবাহ্ বাদে সূরাহ্ আল্-ফাতেহাহ্ সহ অন্যান্য সূরাহর শুরুতে যেبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
রয়েছে তার কোনোটিই ঐ সব সূরাহর অংশ নয় , বরং কোরআন তেলাওয়াতبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
বলে শুরু করা যরূরী বিধায় সূরাহ্ আল্-ফাতেহাহর শুরুতে এবং বিভিন্ন সূরাহর মধ্যে পার্থক্য নির্দেশের জন্য অন্যান্য সূরাহর শুরুতে হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ) স্বউদ্যোগে বা জিবরাঈলের পরামর্শে তা যোগ করেন।
কোরআন তেলাওয়াতের সময় সকল মুসলমানই কোরআন মজীদে লিখিত সবগুলোبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
যথাস্থানে তেলাওয়াত করে থাকেন। কিন্তু এ মতপার্থক্যের কারণে প্রথমোক্ত মতের অনুসারীরা নামাযে প্রতিটি সূরাহর শুরুতে (সূরাহ্ আত্-তাওবাহ্ বাদে)بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
পাঠ করেন , দ্বিতীয় মতের অনুসারীরা নামাযে কেবল সূরাহ্ আল্-ফাতেহাহর শুরুতে তা পাঠ করেন এবং তৃতীয় মতের অনুসারীরা নামাযে কেবল প্রথম রাক্‘
আতে সূরাহ্ আল্-ফাতেহাহর শুরুতে তা পাঠ করে থাকেন।
এ মতপার্থক্য সম্বন্ধে কেবল এতোটুকু উল্লেখ করাই যথেষ্ট যে , এ মতপার্থক্য হচ্ছে কোরআন মজীদের ব্যাখ্যা ও ব্যবহার সংশ্লিষ্ট মতপার্থক্য ; এর সাথে কোরআন মজীদের অবিকৃত থাকা বা না-থাকার কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ , এ ব্যাপারে কোনোরূপ মতপার্থক্য নেই যে , স্বয়ং হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর নির্দেশে 114টি সূরাহর মধ্যে 113টির সূরাহর শুরুতেبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
লেখা হয়েছে। সুতরাং এটা সন্দেহাতীত যে , কোরআন মজীদ তিনি যেভাবে রেখে গিয়েছেন তা সেভাবেই আছে ; তাতে কোনো ধরনের রদবদল হয় নি।
যদিও কোরআন মজীদ হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ) যেভাবে রেখে গিয়েছেন ঠিক সেভাবেই আছে কিনা এ প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য ওপরের আলোচনাই যথেষ্ট এবং মুসলিম মনীষীদের মধ্যকার উপরোক্ত বিতর্কের সমাধান করা অপরিহার্য মনে না হতে পারে , কিন্তু যেহেতু কোরআন মজীদ নাযিল্ হয়েছে‘
ইলমী ও‘
ইবাদী ব্যবহারের জন্য সেহেতু এ বিতর্কের অবসানও অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি এবং এ কারণে এ বিষয়টির ওপর আলোকপাত করছি।
যারা মনে করেন যে , কোরআন মজীদের 114টি সূরাহর মধ্যে 113টির সূরাহর শুরুতে যেبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
লেখা হয়েছে তা এ সব সূরাহর বা অন্ততঃ সূরাহ্ আল্-ফাতেহাহ্ বাদে 112টি সূরাহর অংশ নয় তাঁদের এ মত ঠিক নয় , বরং সূরাহ্ আত্-তাওবাহ্ বাদে বাকী 113টি সূরাহর ক্ষেত্রেইبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
এ সব সূরাহর অংশ। কারণ , সূরাহ্ সমূহের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করাই যদি উদ্দেশ্য হতো তাহলে সে জন্য সূরাহ্ সমূহের শুরুতে ও/বা শেষে অন্য যে কোনো পার্থক্য নির্দেশক চিহ্ন বা সঙ্কেত বা শব্দ ব্যবহার করাই যথেষ্ট হতো , কোরআন মজীদেরই (সূরাহ্ আন্-নামল্-এর) একটি আয়াতকে এভাবে ব্যবহার করা হতো না।
এর পরেও আমরা যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেই যে ,بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
দুই সূরাহর পার্থক্য নির্দেশের জন্য লেখা হয়েছে তাহলে সূরাহ্ আত্-তাওবাহর শুরুতেও তা লেখা হতো এবং কোনো সূরাহর শুরুতেই তা তেলাওয়াত্ করা হতো না। আর যদি তা কেবল সূরাহ্ আল্-ফাতেহাহর শুরুতেই কোরআন মজীদের অংশ হতো তাহলে তা অন্য কোনো সূরাহর শুরুতে লেখা হতো না।
যারা মনে করেন যে , কোরআন তেলাওয়াতের জন্য যরূরী বিধায় এভাবে লেখা হয়েছে তাঁদের কথা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ , সে ক্ষেত্রে হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ)-এর মৌখিক আদেশ ও আমলই যথেষ্ট হতো। এমনকি তা যদি সূরাহ্ আল্-ফাতেহাহর শুরুতেও এর অংশ না হতো তাহলে সেখানেও তা লেখা হতো না।بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
বলে কোরআন তেলাওয়াত্ শুরু করার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে গোটা উম্মাহর মধ্যে মতপার্থক্য নেই , যদিও তা কি ফরয/ওয়াজিব্ নাকি সুন্নাত্ তা ভিন্ন আলোচ্য বিষয়। সুতরাং কোনো সূরাহর মাঝখান থেকে তেলাওয়াত্ শুরু করলে যেভাবে সংশ্লিষ্ট স্থানে লেখা না থাকা সত্ত্বেও নবী করীম (ছ্বাঃ)-এর আমল অনুসরণেبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
বলে তেলাওয়াত্ শুরু করা হয় , ঠিক সেভাবেই সূরাহর বা কোরআনের শুরু থেকে তেলাওয়াত্ করার ক্ষেত্রে সকলেই তা পড়ে তেলাওয়াত্ শুরু করতেন ; সূরাহ্ সমূহের শুরুতে লেখার প্রয়োজন হতো না।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে , কোরআন মজীদের শুরু থেকে বা কোনো সূরাহর শুরু থেকে বা কোনো সূরাহর মাঝখান থেকে - তথা যেখান থেকেই তেলাওয়াত শুরু করা হোক না কেন তাاعوذ بالله من الشيطان الرجيم
বলে শুরু করা অপরিহার্য। কারণ , আল্লাহ্ তা‘
আলা এরশাদ করেন:
“
অতএব , (হে রাসূল!)
আপনি যখন কোরআন পাঠ করবেন তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চান।”
(সূরাহ্ আন্-নাহল্: 98)
এমতাবস্থায় হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ) যদি কোরআন তেলাওয়াতের শুরু সংক্রান্ত হুকুম পালনের কথা সকলকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য এবং সূরাহ্ সমূহের মধ্যকার পার্থক্য নির্দেশের জন্য কোনো কিছু যোগ করতে চাইতেন তাহলে প্রত্যেক সূরাহর শুরুতেاعوذ بالله من الشيطان الرجيم
যোগ করাই হতো অধিকতর উত্তম। এমনকি সে ক্ষেত্রে সূরাহ্ আত্-তাওবাহর শুরুতেبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
না লেখার যে কারণ সম্পর্কে সকলে একমতاعوذ بالله من الشيطان الرجيم
লেখা হলে সে কারণ সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়াতো না।
এ থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে , কোরআন মজীদের 114টি সূরাহর মধ্যে 113টির শুরুতে যেبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
লেখা হয়েছে তা হযরত রাসূলে আকরাম (ছ্বাঃ) নিজের পক্ষ থেকে বা জিব্রাঈলের‘
পরামর্শে’
লিপিবদ্ধ করান নি , বরং ঐ সূরাহ্গুলোبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সহই নাযিল্ হয়েছে এবং তা ঐ সব সূরাহর প্রথম আয়াত বা প্রথম আয়াতের অংশ।
এ মতের বরখেলাফে কোনোই অকাট্য দলীল বর্তমান নেই।
কতক কপিতে শব্দগত পার্থক্যের অভিযোগ
কোনো কোনো বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে যে , কোনো কোনো ছ্বাহাবীর নিকট কোরআন মজীদের যে নিজস্ব কপি ছিলো তাতে বর্তমানে প্রচলিত কোরআন মজীদ অর্থাৎ মুছ্বহাফে’
উছমান্ থেকে কতক শব্দের ও কতক শব্দের বানানে পার্থক্য ছিলো। এ ব্যাপারে ছ্বাহাবী উবাই বিন্ কা‘
ব্-এর কপি সম্পর্কে বলা হয় যে , তাতে সূরাহ্ আল্-ফাতেহাহরو لا الضالين
স্থলেغير الضالين
লেখা ছিলো।
এ সম্বন্ধে বলতে হয় যে , যেহেতু এ সব বর্ণনা খবরে ওয়াহেদ্ , সেহেতু এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ , যেভাবে সকল শীর্ষস্থানীয় ছ্বাহাবীর সহায়তাক্রমে সর্বত্র মুছ্বহাফে’
উছমান্ প্রচার করা হয়েছিলো এবং সকলকে নিজ নিজ কপি তার সাথে মিলিয়ে নিয়ে সংশোধনের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো , আর এ নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হয়েছিলো , এমতাবস্থায় কোনো ছ্বাহাবীর কপিতে তা থেকে কোনো শব্দগত পার্থক্য থাকার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ , ছ্বাহাবীরা যে কোরআন তেলাওয়াত করতেন তা কোনো গোপনীয় বিষয় ছিলো না , বিশেষ করে প্রত্যেক মুসলমানকে যেহেতু দৈনিক কয়েক বার নামাযে সূরাহ্ আল্-ফাতেহাহ্ পাঠ করতে হয় সেহেতু কারো পক্ষ থেকেو لا الضالين
স্থলেغير الضالين
পড়া ও তা গোপন রাখা সম্ভব ছিলো না , ফলে তাঁর মুছ্বহাফে কীরূপ লেখা ছিলো তা-ও গোপন থাকতো না। এমতাবস্থায় তাঁকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিবাদের সম্মুখীন হতে হতো এবং এ নিয়ে সংঘাতের সৃষ্টি হতো না। কিন্তু এ ধরনের কোনো বিরোধ-সংঘাতের কথা কোনো অকাট্য সূত্রেই জানা যায় না।
সুতরাং সর্বোচ্চ মুতাওয়াতির্ সূত্রে বর্ণিত গ্রন্থ কোরআন মজীদের মোকাবিলায় সন্দেহ সৃষ্টিকারী এ ধরনের দাবী সম্বলিত খবরে ওয়াহেদ্ বর্ণনাকে আদৌ সত্য বলে গ্রহণ করা সম্ভব নয়। বরং এ ধরনের বর্ণনাসমূহ যে ইসলামের দুশমনদের দ্বারা অনুপ্রবিষ্ট মিথ্যা ছিলো এ ব্যাপারে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই।