ঈদে গাদীরের কয়েকটি সার্বজনীন নিয়মাবলী
কল্যাণকর কাজ
যদিও এই দিবসের সমস্তকর্মই কল্যাণময় কিন্তু তারপরেও একটি সার্বজনীন নির্দেশ ও ভূমিকা স্বরূপ কিছু নিয়ম-কানুন হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ এই দিনের একটি সৎকর্ম 80 মাসের (আশি মাসের) সৎকর্মের সমপরিমাণ।
অতএব গাদীর দিবসটিও প্রায় রমজান মাস ও শবে কদরের মত মর্যাদাপূর্ণ । এ ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি যে , উক্ত দিন ও রাতের সৎকর্মগুলি সদা-সর্বদা প্রস্ফুটিত ও বিকশিত হতে থাকবে। এ ধরনের সময়গুলিকে মানুষের উচিত সঠিকভাবে ব্যবহার করা এবং সৎ ও কল্যাণকর কাজ সম্পাদন করে উপকৃত হওয়া।
ইবাদত
ইমাম রেযা (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে , তিনি বলেনঃ গাদীর দিবস এমনই একটি দিন যে দিনে যদি কেউ ইবাদত বন্দেগী করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে সম্পদে সমৃদ্ধ করে দেন।
যদিও সাধারণ অর্থে যে কর্মে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্য থাকে এবং যে সব কর্ম বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে দুরত্বকে দূর করে তার নিকটবর্তী করে তাকেই বলা হয়ে থাকে ইবাদত। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এই অর্থে (এই উদ্দেশ্য সম্পর্কিত) প্রত্যেকটি অনুমোদিত (মুবাহ) কর্মই ইবাদত বলে গণ্য হতে পারে। অর্থাৎ যদি মানুষ তার সাধারণ কর্মগুলিও আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিয়তে ও তার সন্তুষ্টির জন্য সম্পাদন করে তাহলে তার জীবনের সমস্ত সাধারণ কাজগুলিও ইবাদত হিসেবে পরিগণিত হবে।
গাদীর দিবসে যে সকল ইবাদতের কথা বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর সব ক’
টিই ঐ সকল ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত যার পরিচয় ইসলামে তুলে ধরা হয়েছে। যেমন: নামাজ , রোজা , গোসল , দোয়া , আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা , জিয়ারত , রাসূল (সা.) ও তার আহলে বাইতের প্রতি দরুদ ও সালাম প্রেরণ এবং তাদের শত্রুদের প্রতি বিদ্বেষপোষণ ইতাদি কর্মসমূহ পবিত্র এই দিনের আমল হিসেবে গণ্য।
রোজা
রোজা , এমনই এক ইবাদত যা রমজান মাসে ওয়াজিব বা আবশ্যক হওয়া ছাড়াও ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা’
র দিনগুলো (রোজা রাখা এ দিনগুলোতে নিষিদ্ধ) ব্যতীত বছরের অন্যান্য দিনগুলিতে মুস্তাহাব। কিন্তু কিছু কিছু দিবসের ক্ষেত্রে এর তাকিদ বা গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং বিভিন্ন হাদীসে তার অসাধারণ মর্যাদার সংবাদও প্রদান করা হয়েছে। যে সকল দিনের বাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে গাদীর দিবস সেগুলিরই একটি। পবিত্র ইমামগণ নিজেরাই যে শুধু এইদিনে রোজা রাখাকে জরুরী মনে করতেন তা নয় বরং তাদের সঙ্গী-সাথি ও নিকটাত্মীয়দেরকেও এই দিনে রোজা রাখার জন্য গুরুত্বারোপ করতেন। অনুরূপভাবে হাদীসেও পরিলক্ষিত হয় যে , এই সুন্নাতটি রাসূল (সা.)-এর রেখে যাওয়া স্মরণীয় একটি সুন্নাত।
ইবনে হোরায়রা হতে বর্ণিত আছে , যে ব্যক্তি 18ই জিলহিজ্জায় রোজা রাখবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য 60 বছরের রোজা লিখে রাখবেন।
ইমাম সাদিক (আ.) এক হাদীসে তার শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে এই রোজা সম্পর্কে বলেছেনঃ এই দিনের একটি রোজা অন্য সময়ের 60 মাসের (ষাট মাসের) রোজার সমতুল্য।
অন্য এক হাদীসে বলেছেনঃ ঈদে গাদীরে খুমের একদিনের রোজা , আল্লাহর নিকট একশ’
টি গহণযোগ্য হজ্জ ও ওমরার সমতুল্য।
অনুরূপভাবে বর্ণনা করেছেনঃ গাদীরে খুমের রোজা পৃথিবীর আয়ুর (জীবনের) সমস্ত রোজার সমান , যদি কেউ এ ধরনের বয়সের অধিকারী হয় এবং সে যদি সারা জীবন রোজা রাখে।
নামাজ
যেমনিভাবে বেশিরভাগ দিনের ও বিশেষ সময়ের নির্দিষ্ট নামাজ আছে তেমনিভাবে ঈদে গাদীরের ক্ষেত্রেও কিছু নামাজ আছে যা বিশেষ রীতিতে পড়ার নির্দেশ এসেছে।
সাইয়্যেদ ইবনে তাউস (র.) তার“
ইকবালুল আমাল”
নামক গ্রন্থে‘
ঈদে গাদীরের আমলসমূহ’
শিরোনামে ইমাম সাদিক (আ.) হতে তিনটি নামাজ বর্ণনা করেছেন। এই তিনটি হাদীসের এক হাদীস অনুযায়ী তিনি বলেছেনঃ
“
এই দিন এমন একটি দিন যে দিনের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা প্রত্যেক মু’
মিনের জন্য আল্লাহ তায়ালা অত্যাবশ্যক করে দিয়েছেন। কারণ , এই দিনেই আল্লাহ তার দ্বীনকে পূর্ণ ও নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করেছেন ও সৃষ্টির প্রারম্ভে তাদের নিকট হতে যে ওয়াদা নিয়েছিলেন তার পুনরাবৃত্তি করেছেন এবং তাদেরকে স্বীকার করার সৌভাগ্য দান করেছেন ও অস্বীকারকারীদের মধ্যে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করেননি।”
উক্ত হাদীস শরীফে ওয়াদার উদ্দেশ্য হচ্ছে-ঐ ওয়াদা যা কোরআনে সূরা আরাফের 172 নং আয়াতে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছেঃ আর যখন তোমার পালনকর্তা আদম সন্তানদের পৃষ্ঠদেশ হতে বের করলেন তাদের সন্তানদেরকে এবং তাদের নিজের উপর সাক্ষী দাড় করালেন , আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই ? তারা বলল , অবশ্যই আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি। যাতে কিয়ামতের দিন যেন না বল যে , আমরা আপনার এই (একত্ববাদ) সম্পর্কে জানতাম না।
এটা সেই প্রতিশ্রুতি যা আল্লাহ তার একত্ববাদের উপর ও এক আল্লাহর ইবাদতের উপর মানুষের কাছ থেকে নিয়েছিলেন।
সুতরাং আলোচে হাদীস হতে যা বোঝা যায় তা হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা যেমনভাবে তার একত্ববাদের ও কেবলমাত্র তারই ইবাদতের প্রতিজ্ঞা করিয়েছেন ঠিক বেলায়াতের (শাসনকর্তার) ক্ষেত্রেও তেমনভাবে প্রতিজ্ঞা করিয়েছেন। একত্ববাদের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ যে পরিস্থিতিতে হয়েছিল বেলায়াতের (শাসন কর্তৃত্বের) ক্ষেত্রেও ঠিক একই পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হয়।
যদি কেউ তাদের মত হতে চায় যারা সেদিন রাসূল (সা.)-এর সাথে ছিলেন ও সে সকল সত্যবাদী যারা আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.)-এর সাথে আমিরুল মু’
মিনীন আলী (আ.)-এর বন্ধুত্ব কে সত্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন তাদের সম মর্যাদার অধিকারী হতে চায় এবং ঐ সকল ব্যক্তির মত হতে চায় যারা রাসূল (সা.) , আমিরুল মু’
মিনীন আলী (আ.) , ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হোসাঈন (আ.)-এর পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শহীদ হয়েছেন এবং তাদের মত যারা হযরত ইমাম মাহদীর (আ.) পতাকাতলে ও তার তাবুর ছায়াতলে আছেন এবং মহান ও মহৎ ব্যক্তিগণের অন্তর্ভুক্ত হতে চায় , তাহলে সে যেন যোহরের প্রারম্ভে অর্থাৎ ঠিক সেই সময়ে- যে সময়ে রাসূল (সা.) ও তার সাহাবীগণ গাদীরে খুমের নিকটবর্তী হয়েছিলেন- দু’
রাকাত নামাজ আদায় করে এবং নামাজের পরে শুকরানা সিজদায় (নামাজ শেষ করার পর শুকরিয়া আদায়ের জন্য একটি সিজদা) গিয়ে যেন একশ’
বার বলে- শুকরান লিল্লাহ ।
ঐ সময় তিনি একটি দীর্ঘ দোয়া তার সম্মুখে উপস্থিত জনতাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যা নামাজের পরে পড়তে হয়।
উক্ত দোয়াটি সার্বজনীন কয়েকটি বিষয় কেন্দ্রিকঃ
1. পরিশুদ্ধ আকিদা বা বিশ্বাসের এবং সত্য ও সঠিক ইসলামের প্রতি স্বীকারোক্তি দান করা। যেমন- তৌহিদ (একত্ববাদ) ও নবুয়্যত।
2. বেলায়াত বা শাসনকর্তৃত্বের নেয়ামত ও ঐশী অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞতা। [আলী (আ.)-এর ইমামতের মহান নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ]
3. মহান আল্লাহর শত্রুদের সাথে শত্রুতা পোষণ ও মহান আল্লাহর সঠিক বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্ব প্রদর্শন।
4. সত্য-সঠিক পথে দৃঢ় থাকার প্রত্যাশা।
এই দোয়ার মধ্যে একটি অংশে আমরা পাঠ করে থাকিঃ
“
হে আল্লাহ!
তোমারই দয়া ও করুণা ছিল যে আমরা রাসূল (সা.)-এর দাওয়াত গ্রহণ (আহবানে সাড়া দেয়া) , তাকে সত্যায়ন করা মু’
মিনদের নেতার প্রতি ঈমান আনা এবং বাতিল ও মূর্তি কে অবজ্ঞা করার ক্ষেত্রে সফলকাম হয়েছি। অতঃপর যাকে আমরা বেলায়াত বা অভিভাবকত্বের জন্য নির্বাচন করেছি , তাকে আমাদের অভিভাবক বানিয়ে দাও এবং আমাদেরকে আমাদের ইমাম বা নেতাদের সাথে পুনরুত্থিত কর , এমনভাবে পনরুত্থিত কর যেন আমরা দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে তার নির্দেশের প্রতি অনুগত থাকতে পারি। হে আল্লাহ! আমরা তার দৃশ্য ও অদৃশ্য বিষয়ের পতি , উপস্থিত ও অনুপস্থিত বংশধরদের প্রতি , জীবিত ও মৃতদের প্রতি ঈমান এনেছি এবং তার ইমামতের দায়িত্বের ও নেতৃত্বের প্রতি আমরা সন্তুষ্ট।”
তারাই আপনার ও আমাদের মাঝে মধ্যস্থতার জন্য যথোপযুক্ত , অন্যদের কোন প্রয়োজন নেই। তাদের স্থলাভিষিক্ত আমরা চাই না , তারা ব্যতীত কাউকেই সহচর ও বিশ্বস্ত হিসেবে গ্রহণ করবো না।
এই দোয়ার অপর একটি অংশে বর্ণিত হয়েছেঃ
“
হে আল্লাহ!
তোমাকে সাক্ষী করছি যে , আমাদের এই দ্বীন , মুহাম্মদ ও তার পরিবারবর্গের দ্বীন এবং আমাদের কথা তাদেরই কথা। আমাদের দ্বীন তাদেরই দ্বীন। আমরা তাই বলি যা তারা বলেছেন এবং তার প্রতিই আসক্ত যার প্রতি তারা আসক্ত। যা কিছু তারা অস্বীকার করেছেন আমরাও সেগুলি অস্বীকার করি। যা কিছু তারা পছন্দ করতেন আমরাও সে সবই পছন্দ করি। যাদের সাথে তাঁরা শত্রুতা করতেন আমরাও তাদের সাথে শত্রুতা করি। যাকে তারা অভিশম্পাত করেছেন আমরাও তাকে অভিশম্পাত করি। যাদের প্রতি তারা অসন্তুষ্ট ছিলেন আমরাও তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট এবং আমরা তাদের নিকট (রহমত) অনুদান প্রেরণ করি যাদের প্রতি তারা অনুদান পাঠাতেন।”
এই নামাজ ঐ রূহের তাজাল্লী ও বিচ্ছুরণ স্বরূপ যা আল্লাহর অনুগ্রহসমূহের প্রতি মনোযোগী এবং যা তার অনুগ্রহসমূহের প্রকৃত শুকরিয়া আদায় করেছে। গাদীর দিবসে জোহরের নিকটবর্তী সময়ে নামাজ আদায় করা এ সাক্ষ্য দান করে যে , নামাজ আদায়কারী জানে এই সময়ে জিব্রাইল আল্লাহর সবচেয়ে স্পর্শকাতর বাণী
ও দ্বীনের মৌলিকতম ভিত্তি প্রচারের জন্য অবতীর্ণ হয়েছিলেন এবং বেলায়াত বা নেতৃত্বকে মানুষের জন্য উপহার হিসেবে এনেছিলেন। বেলায়াত মানব সমাজের মাঝে মৌলিক দ্বীনের চিরবিদ্যমান থাকার জামিন বা নিশ্চয়তাদানকারী ও শরীয়তের রূহ এবং তৌহিদ ও রেসালাতের পৃষ্ঠপোষক আর ফজিলত ও তাকওয়ার সংরক্ষক , ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা -যা আল্লাহর রাসূলগণকে প্রেরণ এবং আসমানী গ্রন্থ অবতীর্ণের মূল উদ্দেশ্য তারই দায়িত্ব।
যদি মূল বা আসলই প্রচারিত না হয় , তাহলে প্রকৃত অর্থে আল্লাহর রেসালাতই সম্পাদন হল না।
নামাজ আদায়কারী এ সকল উদ্দেশ্যের প্রতি মনোযোগী এবং এ সব অনুদানের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যই নামাজে দাড়ায় ও কৃতজ্ঞতার সাথে প্রতিপালকের কাছে মাথা নত বা সিজদা করে এবং বিনয়ের সাথে আল্লাহর নিকট হাত উত্তোলন করে , যেন সর্বদা তাকে এই সর্বোচ্চ মর্যাদায় সমাসীন রাখে ও সারাজীবন যেন এই অনুগ্রহের ঝর্না ধারা হতে পরিতৃপ্ত করে এবং ইসলামের প্রাথমিক যুগে রাসূল (সা.)-এর সাথিগণ ও ইসলামী সৈনিকগণ যে মর্যাদা লাভ করেছেন তাদের সমমর্যাদা দান করেন এবং তাকে ঐসকল শহীদদের সাথে গণ্য করেন যারা আমিরুল মু’
মিনীন আলী (আ.) , ইমাম হাসান ও হোসাইন (আ.)-এর পক্ষে যুদ্ধ করে স্বীয় গন্তব্যে পৌছে গেছেন এবং তাদের মর্যাদায় পৌছায় যারা মুহাম্মদের (সা.) বংশধর ইমাম মাহদীর (আ.) পতাকার তলে সমবেত হয়ে তার পক্ষে তলোয়ার চালায় ও তার তাবুতেই আশ্রয় নিয়ে থাকে ।
জিয়ারত
জিয়ারত বা সাক্ষাত সংযোগ ও সংযুক্তির এমনই এক স্বচ্ছ ঝর্না ধারা যা কাঙ্ক্ষিতের সাক্ষাত হতে বঞ্চিত ব্যক্তির চেষ্টার পর কাঙ্ক্ষিতকে পাওয়ার ন্যায় অর্থাৎ এমন এক অবস্থা যা চরম তৃষ্ণার্ত ব্যক্তির তৃষ্ণা নিবারণের পর অনুভব করে এবং বিচ্ছিন্নতার বেদনার পর তার প্রাণকে সেই সংযোগের স্বচ্ছ ঝর্না ধারার পানি দ্বারা পরিতৃপ্ত করে ও পিপাসা নিবারণ করে এবং তার আত্মাকে করে পুত-পবিত্র। জিয়ারত হচ্ছে-ধৈর্যশীলতার ফসল।
জিয়ারতকারীগণ মা’
সুমদের মাজারে যা কিছু পাঠ করে থাকে তা আসলে বন্ধুত ও আন্তরিকতার এক প্রকার বহিঃপ্রকাশ , ভালবাসা ও ঐ সকল সঠিক শিক্ষা যা জিয়ারাতকারী মা’
সুমদের সাথে সাক্ষাতের সময় তার নিকট নিবেদন করে থাকে এবং এর মাধ্যমে তার সমর্থন অর্জন করে থাকে আর এ এমনই এক পন্থা যা পূর্ববর্তীদের রেখে যাওয়া স্মৃতি।
গাদীর দিবসটি হচ্ছে , কর্তৃত্ব ও স্থলাভিষিক্ত এবং প্রতিনিধির দায়িত্ব গ্রহণের দিন। আর এটা এমনই একটি দিন , যে দিনটি আমিরুল মু’
মিনীন হযরত আলী (আ.)-এর সাথে সম্পৃক্ত ও তার নামেই উক্ত দিনে ঈদ পালন করা হয়ে থাকে আর সে কারণেই এ দিনের গুরুত্বপূর্ণ একটি আচার- অনুষ্ঠান হল কর্তৃত্বের অধিকারীর সাথে নতুনভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং তার সাথে আধ্যাত্মিক বা আভ্যন্তরীণ সম্পর্ক সৃষ্টি করা। তাই শিয়াদের বলা হয়েছে যেন তারা এই দিনে , রাসূল (সা.)-এর উত্তরাধিকারী বা ওসীর সামনে দাড়ায় ও তার নির্দেশে তার স্থলাভিষিক্তের সাথে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয় বা বাইয়াত গ্রহণ করে এবং প্রত্যেক বছর যেন এই অঙ্গীকারকে নবায়ন করে আর নবীর (সা.) জ্ঞানের তোরণের নিকট স্বীয় বিশ্বাসের কথা উপস্থাপন করে ও স্বীয় বিশ্বাসের নথিপত্রকেঐ ইমামের সমর্থনের সীলমোহরের মাধ্যমে সুশোভিত করে।
ইমাম রেযা (আ.) এক হাদীসে বলেছেনঃ যেখানেই থাক না কেন , চেষ্টা করবে গাদীর দিবসে আমিরুল মু’
মিনীন আলী (আ.)-এর মাজারের নিকটবর্তী হওয়ার। কারণ , এই দিনে আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের ষাট বছরের পাপসমূহকে ক্ষমা করে দেন এবং রমজান মাসের , শবে কদরের ও ঈদুল ফিতরের রাতের চেয়েও দ্বিগুণ সংখ্যক ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি প্রদান করেন।
তার পবিত্র মাজারের নিকটবর্তী হওয়া যদি কারো পক্ষে অসম্ভব হয় তাহলে সে দূর হতেও জিয়ারত করতে পারে।
পবিত্র ইমামগণ থেকে গাদীর দিবসকে কেন্দ্র করে তিন’
টি জিয়ারতের কথা বর্ণিত হয়েছে , যার প্রতিটিই দূর হতে ও নিকট থেকে পাঠ করা যেতে পারে। ঐগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হচ্ছে- জিয়ারতে“
আমিনাল্লাহ”
যা আকারে ছোট ও সনদ বা সূত্রের দিক থেকে অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য। এই জিয়ারতে আমিরুল মু’
মিনীন আলীকে (আ.) উদ্দেশ্য করে পাঠ করে থাকিঃ
“
সালাম (শান্তি) বর্ষিত হোক আপনার উপর হে বিশ্বজগতে আল্লাহর নিদর্শন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি হে আমিরুল মু’
মিনীন!
আল্লাহর পথে আপনি যথোচিতভাবে চেষ্টা-প্রচেষ্টা করেছেন , তার কিতাব কোরআনের উপর আমল করেছেন ও তার রাসূল (সা.)-এর সুন্নাতের অনুসরণ করেছেন , যখন আপনার জন্যে আল্লাহ সর্বোত্তম পুরস্কারের কথা ভাবলেন তখন তিনি আপনাকে নিজের কাছে ডেকে নিলেন ও আপনার উন্নত আত্মাকে স্বীয় সান্নিধ্যে স্থান দিলেন। যদিও আপনি সমস্ত সৃষ্টির মাঝে উপযুক্ত প্রমাণ হিসেবে ছিলেন , তবুও আল্লাহ আপনার শাহাদাতের মাধ্যমে আপনার শত্রুদের উপর হুজ্জাত বা প্রমাণ সমাপ্ত করেছেন।”
.
“
হে আল্লাহ!
বিনয় ও নম্রতার অন্তরসমূহ তোমারই প্রেমে দিশেহারা ; তোমার প্রেমিকদের জন্য তোমার দরজা সদা-সর্বদা খোলা , যারা তোমার প্রতি প্রত্যাবর্তনের আশা পোষণ করেন তারা সুস্পষ্ট প্রমাণের অধিকারী। যারা তোমার কাছে প্রত্যাবর্তন করতে চায় তাদের অন্তরে কেবল তুমিই বিদ্যমান। যারা তোমাকে ডাকে তাদের আওয়াজই কেবল তোমার নিকট পৌছায় ও তাদের প্রার্থনা মঞ্জুরের দরজাসমূহ সব সময় খোলা। আর যারা গোপনে তোমার ইবাদত করে তাদের দোয়া অতি তাড়াতাড়ি কবুল কর। তাদের তওবা কবুল হয় যারা তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করে , যে তোমার ভয়ে ক্রন্দন করে তার প্রতিটি অশ্রু ফোটাকে তোমার রহমতে রূপান্তর কর , যে তোমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে তুমি তার সাহায্যে এগিয়ে আস , যে তোমার নিকট সহযোগিতা কামনা করে তুমি তাকে সহযোগিতা কর , তুমি যেসব অঙ্গীকার তোমার বান্দাদেরকে দিয়েছো তার বাস্তবায়ন কর এবং যে তোমার নিকট ক্ষমা চায় তুমি তার ত্রুটিগুলোকে উপেক্ষা ও মার্জনা কর।”
দয়া ও অনুগ্রহ
ঈদে গাদীরের নিয়মাবলীর মধ্যে একটি হচ্ছে-ঈমানদারদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করা। এ বিষয়ে পবিত্র ঈমামগণ বিশেষ সুপারিশ করেছেন। এই দিনে দয়া ও অনুগ্রহের গুরুত্বের নিদর্শন হচ্ছে-
প্রথমতঃ হাদীস ও বর্ণনাসমূহে বিভিন্ন শিরোনামে এ দায়িত্ব পালনের বিশেষ তাগিদ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে হাদীসসমূহে দয়া ও অনুগ্রহের নিদর্শন হিসেবে নমুনা দান , পরস্পরকে সহযোগিতা , উপহার প্রদান , আতিথেয়তা , খাদ্য বিতরণ , ইফতার করানো , দয়া পরবশ হওয়া , ঈমানদার ভাইয়ের মনবাসনা পূর্ণ করার কথা বলা হয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ উপদেশ দেওয়া হয়েছে , এই দিনে যার দান করার মত যথেষ্ট পরিমাণ ধন-সম্পদ নাই সে যেন ঋণ গ্রহণ করে। ইমাম আলী (আ.) নিজে বর্ণনা করেছেনঃ যদি কেউ এই কারণে ঋণ নেয় যে , সে মু’
মিন ভাইদেরকে সাহায্য করবে , তাহলে আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা প্রদান করবো , যদি তাকে জীবিত রাখে , সে যেন তার ঋণ পরিশোধ করতে পারে ; আর যদি জীবিত না রাখে তাহলে ঐ ঋণ তার থেকে নেওয়া হবে না।
অথচ আমরা অবগত যে , শরীয়তের দৃষ্টিতে ঋণ গ্রহণ কাজটি শোভনীয় নয় এবং ইসলাম মানুষের অধিকারকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে থাকে ।
আমিরুল মু’
মিনীন হযরত আলী (আ.) গাদীর দিবস উপলক্ষে জুমআ’
র এক খুতবায় বলেছেনঃ
আল্লাহ আপনাদের রহমত দান করুক! আপনারা যখন অনুষ্ঠান শেষে একে অপর হতে পৃথক হয়ে যাবেন , তখন স্বীয় পরিবারের জন্য উম্মুক্ত হস্তে খরচ করুন , আপন ভাইয়ের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ করুন এবং আল্লাহ তায়ালা যে নেয়ামত দান করেছেন তার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করুন... এই দিনে সৎকাজ সম্পাদন করলে সম্পদ বৃদ্ধি পায় ও আয়ু বাড়ে। পরস্পরের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শন বান্দার প্রতি আল্লাহর রহমত বৃদ্ধি ও সহানুভূতিকে জাগ্রত করে। অতএব , যা কিছু আল্লাহ তায়ালা আপনাদেরকে দান করেছেন তা থেকে উদারতার সাথে দান করুন।
আনন্দ ও প্রফুল্লতার সাথে পরস্পরের সাথে সাক্ষাত করুন এবং আল্লাহ আপনাদেরকে যে নেয়ামত দান করেছেন তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন! যারা আপনাদের প্রতি আশাবাদী হয়ে আছে তাদের প্রতি বেশী বেশী অনুগ্রহ করুন! যতটা সম্ভব হয় নিজেদের ও দুর্বলদের এবং যারা আপনাদের অধীনে আছে তাদের মধ্যে সমতা বজায় রাখুন!।
এই দিনে এক দিরহাম দান করা অন্য দিনে দুইশ’
দিরহাম দান করার সমান ও আল্লাহ যদি চান তাহলে এর চেয়েও বেশী দিতে পারেন।
যে ব্যক্তি প্রথমে তার ভাইয়ের প্রতি অনুগ্রহ করবে ও আগ্রহ সহকারে দয়া দেখাবে , সে ঐ ব্যক্তির পুরস্কার লাভ করবে , যে ব্যক্তি এই দিনে রোযা রেখেছে।
আনন্দোৎসব
এটা পছন্দণীয় যে , একজন মু’
মিন ব্যক্তি এই দিনে প্রচলিত রীতির মধ্যে থেকে এবং শরীয়তের বিধি-নিষেধ মেনে চলে আনন্দ ও উৎসব করবে এবং স্বীয় জীবনকে অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু ভিন্নভাবে সাজাবে। বিশেষ করে যে সকল আনন্দ-উৎসব বিভিন্ন হাদীসে বিশেষ গুরুত্বের সাথে বর্ণিত হয়েছে সে সব করা উত্তম। যেমন- গোসল করা , আতর বা খোশবু লাগানো , সাজ-গোছ করা , নিজেকে পরিপাটি করে রাখা , নতুন পোশাক পরিধান করা , পাক-পবিত্র থাকা , দেখা-সাক্ষাত করা , স্বাগত জানানো এবং করমর্দন করা , মুক্ত হস্তে খরচ করা ইতাদি।
ঈদে গাদীর দিবসে আনন্দোৎসবের বিষয়টি আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা ও সহমর্মিতার দৃষ্টান্ত হওয়া ছাড়াও স্বয়ং উৎসব পালনের দিকটিও বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে।
ইমাম সাদিক (আ.) এক বর্ণনায় গাদীর দিবসের অনুষ্ঠানাদি উৎযাপন করার পর এই ঈদের কিছু নিয়ম-কানুন পালনের সময় বললেনঃ এই দিনে খাও , পান কর আর যারা এই দিনে দুঃখ প্রকাশ করে আল্লাহ তাদের দুঃখকে আরো কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে দেন তাই এই দিনে আনন্দ-ফুর্তি কর।
উত্তম হচ্ছে যদি কারো ঘনিষ্ঠ কোন ব্যক্তির মৃত্যুর জন্য বা কোন দুর্ঘটনার জন্য দুঃখ পেয়ে থাকে তদুপরি সে যেন এই দিনে কালো পোশাক পরিহার করে চলে। ইমাম রেযা (আ.) বলেছেনঃ এই দিনটি হচ্ছে নতুন পোশাক পরিধানের আর কালো পোশাক পরিহারের দিন।
এই দিনে জাক-জমকপূর্ণ ও গ্রবর পোশাক পরিধান করা উত্তম।
ইমাম রেযা (আ.) বলেছেনঃ
এই দিনটি সাজ-গোছ করার দিন। যদি কেউ এই দিনের সম্মানার্থে নিজেকে সাজায় তাহলে আল্লাহ তার সমস্ত ছোট ও বড় পাপসমূহ মোচন করে দেন এবং একজন ফেরেশতাকে নির্ধারণ করে দেন যেন সে আগামী বছর পর্যন্ত তার জন্য উত্তম কিছু লিখতে থাকে ও তার অবস্থানকে যেন আরো উর্ধ্বে পৌছে দেয়। আর যদি এ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে তাহলে সে শহীদের মর্যাদা পাবে , আর যদি জীবিত থাকে তাহলে সে সৌভাগ্যশীল হবে।
অনুরূপ উত্তম কাজ হচ্ছে , মু’
মিন ভাইদের সাথে আনন্দের সাথে সাক্ষাৎ করা এবং এমন ধরনের কাজ করা যাতে সকলেই বুঝতে পারে সে আনন্দিত।
ইমাম রেযা (আ.) বলেছেনঃ
এই দিনটি হচ্ছে- ঈমানদার ভাইদের জন্যে হাসি-খুশির দিন। যদি কেউ এই দিনে কোন ঈমানদার ভাইয়ের সাথে হাস্যোজ্জল মুখে সাক্ষাৎ করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন ও তার হাজার’
টি আশা পূর্ণ করবেন এবং তার জন্য বেহেশতে সাদা মুক্তার এক প্রসাদ নির্মান করবেন ও তার চেহারাকে উজ্জল করে দিবেন।
দোয়া
ইসলামের পবিত্র শরীয়তে বর্ণিত শ্রেষ্ঠ ইবাদতসমূহের অন্যতম হল দোয়া। দোয়া হচ্ছে এমন একটি ইবাদত যে সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছেঃ“
যে কেউ অহংকারের বশে আমার ইবাদতকে প্রতাখ্যান করবে , সে অপমান ও লাঞ্চনার সাথে দোযখে প্রবেশ করবে।”
দোয়া হচ্ছে- কথা বলা সেই উপাস্যের সাথে যিনি এক ও অদ্বিতীয় এবং এই বিশ্বজগতসহ তার মধ্যে যা কিছু আছে তার স্রষ্টা এবং এর কারণে বান্দার প্রতি আল্লাহ তায়ালার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছেঃ
)
ق
ُلْ مَا يَعْبَأُ بِكُمْ رَبِّي لَوْلَا دُعَاؤُكُمْ(
অর্থাৎ বল যদি দোয়া না করতে (না ডাকতে) তাহলে আমার প্রভূ তোমাদের প্রতি ফিরেও তাকাতেন না (আদৌ মূল্য দিতেন না)।
দোয়া মানুষের জীবনের একটি আবশ্যক জিনিস। দোয়া ব্যতীত জীবন যেন এক এলোমেলো ও হত বিহ্বল উত্তাল তরঙ্গ যা পরিণতিতে এই দুনিয়ার বস্তুবাদিতার জলাভূমিতে আছড়ে পড়বে। দোয়া হল জীবনের সুর ও ছন্দ এবং এমন এক কাফেলার আওয়াজ যা নির্দিষ্ট একটা গন্তব্যের দিকে যাত্রারত। দোয়ার মাধ্যমেই জীবন নতুন করে পল্লবিত হয় , দোয়ার মাধ্যমেই তা বেড়ে উঠে ও ফল দান করে।
সুতরাং মানুষের চাওয়া-পাওয়া এবং আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হওয়ার বিষয়টি বাদ দিলেও দোয়া একজন মু’
মিনের আজীবনের কর্মসূচী ও সর্বকালের প্রয়োজনীয় জিনিস ; কিন্তু কখনো কখনো নির্দিষ্ট সময় ও বিশেষ সুযোগ হাতে আসে যে ক্ষেত্রে দোয়া , ঐ সময় বিকশিত হয়ে ফল দান করে মানুষের অস্তিত্বকে মিষ্টি ও মধুর করে তোলে।
গাদীর দিবসটি দোয়া করার জন্য একটি বিশেষ দিন বা সময়।
ইমাম রেযা (আ.) বলেছেনঃ গাদীর দিবসটি এমনই এক দিন যে দিনে দোয়াসমূহ কবুল হয়।
আর সে কারণেই যে সকল দোয়া মুস্তাহাব নামাযসমূহের পরে ও বিভিন্ন সময়ে পড়ার নির্দেশ এসেছে সেগুলি ব্যতীত , পৃথক কিছু দোয়া স্বতন্ত্র ভাবে এই দিনের জন্য বর্ণিত হয়েছে।
গাদীর দিবসের দোয়াসমূহের কেন্দ্রস্থল
গাদীর দিবসের দোয়াসমূহের মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে- বেলায়াতের (শাসনকর্তৃত্বের) নেয়ামত বা অনুগ্রহ। দোয়াকারী এই দিনে তাদের বিভিন্ন দোয়াতে বা প্রার্থনাতে এই মহা অনুগ্রহ সম্পর্কে স্বীয় প্রভূর সাথে কথোপকথন করে থাকে ।
কখনো কখনো এই শ্রেষ্ঠ প্রশংসাসূচক কথাটি উল্লেখ করে বলে থাকে , হে আল্লাহ! তার জন্য তোমাকে জানাই কৃতজ্ঞতা। কখনো আবার আল্লাহর নিকট অনুরোধ করে যেন এই অনুগ্রহটি তার কাছ থেকে ছিনিয়ে না নেয়া হয় অথবা আজীবন ধরে যেন তার উপর দৃঢ় ও অবিচল থাকতে পারে। কখনো আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে , যেমন করে এই মর্যাদাটি তাকে দিয়েছে ও তাকে বেলায়াত (কর্তৃত্ব) গ্রহণের যোগ্যতা দান করেছে , ঠিক তেমনভাবে যেন তার পাপসমূহকে আড়াল করে ও ত্রুটিসসমূহকে ক্ষমা করে দেয়।
কখনো চায় আল্লাহ তাকে যেন এ তৌফিক দান করে যে বেলায়াতের আবশ্যকীয় বিষয়সমূহকে অনুসরণ ও পালন করতে পারে , যেমন ওলীর (অভিভাবকের) শর্তহীন অনুসরণ যা বেলায়াতের মূল শর্ত তা মেনে চলা যেন তার জন্য সহজ হয় ও তাকে যেন তৌফিক দান করে যাতে ইমামগণের শত্রুর সাথে শত্রুতা পোষণ করতে পারে এবং তাদের বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারে।
“
সজ্জিত হওয়ার সময়”
নামক একটি প্রসিদ্ধ দোয়া যা গাদীর দিবসে সকালে পাঠ করা হয়ে থাকে , তাতে এভাবে বর্ণনা করা হচ্ছে-
আমরা আলী (আ.)-এর বন্ধু ও তার বন্ধুদের বন্ধু ; যেমনভাবে তুমি নির্দেশ দিয়েছ তার সাথে বন্ধুত্ব করার ও তার শত্রুদের সাথে শত্রুতা করার। যারা তার প্রতি অসন্তুষ্ট আমরাও তার প্রতি অসন্তুষ্ট , যাদের অন্তুরে তার প্রতি হিংসার আগুন জ্বলে আমরাও তাদের প্রতি আমাদের অন্তরে হিংসার আগুন জ্বালিয়ে রাখব , যারা তাঁর প্রতি ভালবাসাপোষণ করে আমরাও তাদের প্রতি ভালবাসাপোষণ করব।
কখনো কখনো আবার ইমামগণের মান-মর্যাদার কথা স্মরণ করা হয় ও তাদেরকে স্মরণের মাধ্যমে স্বীয় অন্তরকে কলুষমুক্ত করে থাকে এবং দ্বীনের অভিভাবকদের মর্যাদার শীর্ষকে অবলোকন করে আর একের পর এক দরূদের মাধ্যমে নিজেদের আত্মাকে তাদের পাক-পবিত্র আত্মার সাথে মিলিয়ে দেয় ও মানুষের মর্যাদার সীমাহীন সমূদ্রে সাতার কাটতে থাকে গাদীর দিবসের অপর একটি দোয়া হচ্ছেঃ
اللهم صل علی محمد و آل محمد الائمه القاده والدعاه الساده و النجوم الزاهره و الاعلام الباهره و ساسه العباد و ارکان البلاد و الناقه المرسله و السفینه الناجیه الجاریه فی الغامره
অর্থাৎ হে আল্লাহ! শান্তি বর্ষণ করুন রাসূল (সা.) ও তার পরিবারবর্গের উপর , নেতৃত্বদানকারী নেতার উপর , আহবানকারী সর্দারের উপর , উজ্জল নক্ষত্র ও স্পষ্ট নিদর্শনের উপর এবং যারা তোমার বান্দাদের বিভিন্ন বিষয়াদির ব্যবস্থাপনা করে থাকে ও যারা বসবাসযোগ্য ভূমিসমূহের স্তম্ভ তাদের উপর , যারা এমনই এক মো’
জেজা বা অলৌকিক শক্তির অধিকারী যা দ্বারা তুমি মানুষের পরীক্ষা নিয়ে থাক এবং তাদের উপর দরুদ যারা এমনই নাজাতের তরী যা গভীর ঘূর্ণাবর্তের মাঝেও গতিশীল।
হে আল্লাহ! শান্তি বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ ও তার বংশধরের প্রতি যারা তোমার জ্ঞান ভাণ্ডারের সংরক্ষক , একত্ববাদের ও এক আল্লাহর ইবাদতকারীদের দৃঢ় ভিত্তি , দ্বীন ও মহত্ত্বের খনির স্তম্ভসমূহ। শান্তি বর্ষণ করুন তাদের উপর যাদেরকে তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে বেছে নিয়েছ। শান্তি বর্ষণ করুন তাদের উপর যারা পবিত্র , পরহেজগার , মহৎ ও কল্যাণময় ; তারা এমনই দরজা যেখানে মানুষ পরীক্ষার সম্মুখীন হয় , যারা এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করে তারা মুক্তিলাভ করে আর যারা প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকে তারা ধ্বংস হয়।
হে আল্লাহ! শান্তি বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ ও তার পরিবারবর্গের উপর যাদেরকে“
আহলে জিকর বা অবগত”
বলে অভিহিত করে বলেছ যে , তাদের নিকট জিজ্ঞাসা কর , (নবীর) নিকটাত্মীয় বলে যাদের প্রতি ভালবাসার নির্দেশ দিয়েছ , তাদের প্রতি ভালবাসাকে আবশ্যক করে দিয়েছ ও বেহেশত তাদেরই অধীনে দিয়েছ যারা তাদের আনুগত্য করবে।
হে আল্লাহ! শান্তি বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর ; কারণ , তারা তোমার আনুগত্য করার নির্দেশ দিতেন ও পাপ থেকে বিরত থাকতে বলতেন এবং তোমার বান্দাদেরকে তোমারই একত্ববাদের দিকে আহবান করতেন।
ইসলামী ভ্রাতৃত্ব
ইসলামী কৃতিত্বসমূহের মধ্যে (নব্য রীতি ও প্রথা সৃষ্টির ক্ষেত্রে) একটি কতিত্ব হচ্ছে যাদের মধ্যে রক্ত , আত্মীয়তা বা বন্ধু্ত্বের কোন সম্পর্ক নাই তাদের মধ্যে দৃঢ়তম বন্ধন সৃষ্টি করা। ভ্রাতৃত্ব হচ্ছে দু’
জন ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কসমূহের মধ্যে সবচেয়ে নিকট সম্পর্ক। প্রত্যেক জাতির মধ্যেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধন হল সবচেয়ে দৃঢ় ও শক্তিশালী বন্ধন ; কিন্তু আরবদের মধ্যে বিশেষ করে প্রাথমিক যুগের আরবদের মধ্যে এ বিষয়টিকে বিশেষ দৃষ্টিতে দেখা হত। এমনকি তারা এই বিষয়টিকে সত্য-মিথ্যার ও ভুল-নির্ভুল নির্ণয়ের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করত।
এ ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম ছিল যে , ভাইয়ের অধিকার রয়েছে এবং অবশ্যই তাকে সমর্থন ও সহযোগিতা করতে হবে যদিও সে প্রকৃতার্থে জালিম বা অতাচারী ও সীমা লঙ্ঘনকারী হোক না কেন। তার প্রতিপক্ষকে পরাভূত করার জন্য অবশ্যই স্বীয় ভাইকে সাহায্য করতে হবে ; যদিও প্রতিপক্ষ সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাককু না কেন। এ রকম পরিবেশে ইসলাম তাদের এই ভ্রান্ত বিশ্বাসকে ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য ভ্রাতৃত্বের এক নতুন সংজ্ঞা ও নতুন ব্যাখ্যা তুলে ধরেছে। যেমন-
)
إ
ِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ(
অর্থাৎ শুধু মাত্র মু’
মিনগণই পরস্পর পরস্পরের ভাই।
সুতরাং মু’
মিন ব্যতীত সকলেই এই (মু’
মিন) পরিবারের অপরিচিত ; যদিও সে ঐ একই পরিবারে জন্মলাভ ও লালিত-পালিত হয়ে থাকুক না কেন।
এটাই হচ্ছে ভাইয়ের প্রকৃত সংজ্ঞা যার ভিত্তি স্থাপনকারী কোরআন। উক্ত সংজ্ঞার ভিত্তিতেই মু’
মিনগণ পরস্পর পরস্পরে ভাই ভাই।
রাসূল (সা.)-এর জীবনের দু’
টি বিশেষ মুহূর্তে (হিজরতের আগে ও পরে) মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখার লক্ষ্যে ও বিশেষ বিশেষ সমস্যাদির মোকাবিলা করার জন্য -যা নব গঠিত শাসন ব্যবস্থা ও ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য হুমকি স্বরূপ দেখা দিচ্ছিল- ধর্মীয় এই সাধারণ মৌলিক নীতিটি সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও বাস্তবায়িত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন যা মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বিশেষ বন্ধন ও ভালবাসার সৃষ্টি করেছিল ও সকল মুসলমান দু’
জন দু’
জনের সাথে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করেছিল।
ইতিহাস ও হাদীসবেত্তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা লিখেছেনঃ
প্রত্যেকটি মুসলমানের ভাই নির্ধারণের ক্ষেত্রে রাসূল (সা.) যে বিষয়টিকে মাপকাঠি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তা হচ্ছে- বৈশিষ্ট্যসমূহের মিল ও ঈমানের স্তর।
তিনি যাদের মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ্য করতেন তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ষ্ঠ স্থাপন করে দিতেন ; যেমন- উমরকে আবু বকরের সাথে , তালহার সাথে জোবায়ের , ওসমানের সাথে আব্দর রহমান ইবনে আওফের , আবু জা’
কে মিকদাদের সাথে ও তার কন্যা ফাতিমা জাহরাকে (সা.) স্বীয় স্ত্রী উম্মে সালমার সাথে বন্ধন স্থাপন করে দেন।
উক্ত দলিলের উপর ভিত্তি করেই আমিরুল মু’
মিনীন আলীকে (আ.) কারও সাথে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ না করে তাকে নিজের জন্য রেখে দিয়েছিলেন।
তিনি নিজের জন্যে ততক্ষণ পর্যন্ত কোন ভাই নির্ধারণ করেননি যতক্ষণ না আলী (আ.) প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন যেঃ“
আমি দেখলাম আপনি আপনার সকল সাহাবীরই ভাই নির্ধারণ করে দিলেন কিন্তু আমার জন্য তো কোন ভাই নির্ধারণ করে দিলেন না। আমার প্রাণ দেহ ত্যাগের উপক্রম হয়েছে , কোমর ভেঙ্গে গেছে। যদি আমার উপর রাগ করে থাকেন তাহলে আমাকে ভর্ৎসনা করার অধিকার আপনার আছে।”
তিনি প্রত্যুত্তরে বললেনঃ ঐ আল্লাহর শপথ যিনি আমাকে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন , আমি এ বাপারে দেরী করেছি যাতে তোমাকে আমার ভাই হিসেবে নির্বাচন করতে পারি।”
ইসলামী ভ্রাতৃত্বের প্রভাব
ইসলামে ভ্রাতৃত্ব শিরোনামে যে মূলনীতিটি প্রবর্তিত হয়েছে তা শুধুমাত্র একটা চুক্তিগত বন্ধন বা বাহ্যিক কর্মসূচীই নয় ; বরং প্রকৃত বা বাস্তব একটি বিষয় যার যথার্থ ও অস্তিত্বগত বাস্তব প্রভাব রয়েছে। এই মুহাম্মদী উম্মত ও ঈমানদারগণের এক বিশাল পরিবার একটি নির্দিষ্ট জীবনাদর্শের অনুসারী। এই পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্য অপর সদস্যের প্রতি দায়িত্বশীল ও একে অপরের উপর হকদার।
পবিত্র ও নিষ্পাপ ইমামগণ (আ.) হতে বর্ণিত অনেক হাদীস আমাদের নিকট বিদ্যমান যেগুলোতে দ্বীনি ভাইয়ের প্রতি দায়িত্ব ও অধিকার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে পরিপূর্ণ নির্দেশসমূহ বর্ণিত হয়েছে। আমরা হাদীসটি শেখ আনসারীর মাকাসেব গ্রন্থের“
মোহাররামাহ”
শীর্ষক অধ্যায় থেকে বর্ণনা করব।
শেখ আনসারী“
ওসায়েলুশ শিয়া”
গ্রন্থ হতে এবং তিনি শেখ কারাজাকির“
কানজুল ফাওয়ায়েদ”
গ্রন্থ সূত্রে আমিরুল মু’
মিনীন আলী (আ.) হতে বর্ণনা করেছেন যে , রাসূলে আকরাম (সা.) বলেছেনঃ প্রত্যেক মুসলমান ভাই তার অপর ভাইয়ের উপর 30টি (ত্রিশ) অধিকার রাখে যার জিম্মাদারী বা দায়- দায়িত্ব থেকে সে কখনোই মুক্ত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তা আদায় করবে অথবা অধিকারী ব্যক্তি তাকে ক্ষমা করে দিবেঃ
1. তার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিবে।
2. তার কষ্টে দয়া দেখাবে।
3. তার ত্রুটিসমূহকে গোপন করে রাখবে।
4. যখন সে পতনের পথে যাবে তখন তাকে রক্ষা করবে।
5. সে ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করে দিবে।
6. কেউ তার নিন্দা করলে তার প্রতিবাদ করবে।
7. সর্বদা তার কল্যাণ কামনা করবে।
8. তার ভ্রাতৃত্ব ও ভালবাসা রক্ষা করবে।
9. তার নিরাপত্তা পাপ্তকে রক্ষা করবে।
(নিরাপত্তা পাপ্তকে রক্ষা করা দ্বীন ইসলামের আবশ্যক বিষয়সমূহের মধ্যে একটি যার মধ্যে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়টিও উল্লেখযোগ্য এটা ঐ অর্থে যে , যদি কোন মুসলমান কোন কাফেরকে নিরাপত্তা দান করে ও তাকে স্বীয় সাহায্যের মাধ্যমে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করায় এমন অবস্থায় যে , তাতে যেন কোন প্রকার ষড়যন্ত্র বা প্রতারণা না থাকে , তাহলে এ ক্ষেত্রে সকল মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে মুসলমান ভাইয়ের সম্মানার্থে ঐ কাফের ব্যক্তিটির কোন প্রকার ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকা আর এরই নাম হচ্ছে নিরাপত্তা পাপ্তকে রক্ষা করা বা নিরাপত্তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন।)
10. অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাবে।
11. মৃত্যু বরণ করলে তার জানাযাতে শরীক হবে।
12. তার দাওয়াত গ্রহণ করবে।
13. তার উপঢৌকন গ্রহণ করবে।
14. তোমার প্রতি কৃত কল্যাণের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবে।
15. তার অনুগ্রহের শুকরিয়া আদায় করবে।
16. সৎকাজে তাকে সহযোগিতা করবে।
17. তার সম্ভ্রম রক্ষা করবে।
18. তার চাহিদা পূরণ করবে।
19. তার আবেদনের ইতিবাচক সাড়া দিবে।
20. যদি সে হাচি দেয় তাহলে বলবে“
ইয়ারহামুকাল্লাহ”
(আল্লাহ তোমার উপর রহমত বর্ষণ করুন)।
21. পথ হারানো পথিককে তার গন্তব্যে পৌছে দিবে।
22. তার সালামের উত্তর দিবে।
23. তার সাথে সদালাপ করবে।
24. তার দানকে গ্রহণ করবে।
25. তার কসম বা শপথকে বিশ্বাস করবে।
26. তার বন্ধু্দেরকে নিজের বন্ধু মনে করবে।
27. তার বন্ধু্দের সাথে শত্রুতা করবে না।
28. তাকে সহযোগিতা করবে , চাই সে জুলুমকারী হোক অথবা নির্যাতিতই হোক না কেন। অর্থাৎ যদি জুলুমকারী বা নির্যাতনকারী হয় তাকে নির্যাতন করা থেকে বিরত রাখ আর যদি নির্যাতিত হয় তাহলে তার অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে তাকে সাহায্য কর।
29. তাকে যেন কখনোই সঙ্গীহীন বা একা ছেড়ে না দেয়।
30. উত্তম কিছু যা নিজের জন্যে পছন্দ করে তা যেন তার জন্যেও পছন্দ করে , আর যেটা মন্দ , যা নিজে পছন্দ করে না সেটা যেন তার জন্যেও পছন্দ না করে।
তখন হযরত আলী (আ.) বললেনঃ আমি শুনেছি রাসূল (সা.) বলেছেনঃ
“
কখনো কখনো তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ ভ্রাতৃত্বের কিছু কিছু অধিকার আদায় কর না , যার ফলে সে কিয়ামতের দিন তার ক্ষুন্ন হওয়া অধিকারের দাবিদার হবে এবং সে (যে তার অধিকার ক্ষুন্ন করেছে) আল্লাহর ন্যায়বিচারের কাঠগড়াতে দাড়াবে।”