গাদীর দিবসে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া
মরহুম মুহাদ্দিস কোম্মী তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ“
মাফাতিহুল জিনান”
এ ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার বিষয়টিকে ঈদে গাদীরের আচারসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হিসেবে উল্লেখ করে লিখেছেনঃ উক্ত দিনে দ্বীনি ভাইদের সাথে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়া অতি উত্তম কাজ। আর সেটার নিয়ম তিনি তার হাদীসের শিক্ষক মুহাদ্দিস নূরীর রচিত“
মোস্তাদরাকুল ওয়াসায়েল”
গ্রন্থের
“
যাদলু ফেরদৌস”
অধ্যায় হতে বর্ণনা করে বলেছেন যে , অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার নিয়মটি হচ্ছে- মু’
মিন ভাই স্বীয় ডান হাতকে অপর মু’
মিন ভাইয়ের ডান হাতের উপর রেখে বলবেঃ
و اخیتک فی اللّه و صافیتک فی اللّه و صافحتک فی اللّه و عاهدت اللّه و ملائکته و کتبه و رسله و انبیائه والا ئمه المعصومین علیهم السلام علی انی ان کنت من اصحاب الجنه والشفاعه واذن لی بان ادخل الجنه لا ادخلها الا و انت معی
বাংলা
উচ্চারণঃ
আখাইতুকা ফিল্লাহি ওয়া সা’
ফাইতুকা ফিল্লাহি ওয়া সা’
ফাহতুকা ফিল্লাহি ওয়া আ’
হাদতুল্লাহা ওয়া মালা’
ইকাতাহু ওয়া কতুবাহু ওয়া রাসূলাহু ওয়া আম্বিয়াআহু ওয়াল আয়েম্মাতাল মা’
সুমিনা আলাইহিমুস সালামু আলা আন্নি ইন কুনতু মিন আসহাবিল জান্নাতি ওয়াশ শাফাআতি ওয়া উজিনা লি বিআন আদখুলাল জান্নাতা লা আদখুলুহা ইল্লা ওয়া আনতা মাআ’
।
অর্থাৎ আল্লাহর রাহে আমি তোমার ভাই হলাম , আল্লাহর ওয়াস্তে তোমার ঘনিষ্ঠ ও আন্তরিক বন্ধু হলাম , আল্লাহর রাহে তোমার সাথে হাত মিলালাম , আল্লাহর ফেরেশতাদের , আসমানী গ্রন্থ সমূহের ,নবী ও রাসূল এবং পবিত্র ইমামগণের নামে অঙ্গীকার করলাম , যদি আমি বেহেশতবাসী ও শাফায়াতকারীর অন্তর্ভুক্ত হই আর বেহেশতে প্রবেশের অনুমতি পাই তাহলে তোমাকে ছাড়া আমি একা প্রবেশ করবো না।
তখন অপর মু’
মিন ভাই বলবেঃ «قبلت
» (কাবিলতু)।
অর্থাৎ আমি তোমার সাথে একমত পোষণ করলাম বা কবুল করলাম।
অতঃপর পাঠ করবেঃ
اسقطت عنک جمیع حقوق الا خوه ما خلا الشفاعه والدعا والزیاره
বাংলা উচ্চারণঃ“
আসকাততু আনকা জামিআ’
হুকুকিল উখওয়াতি মা খালাশ্ শাফাআতা ওয়াদ্ দু’
য়াআ ওয়ায্ যিয়ারাহ।”
অর্থাৎ ভাইয়ের সকল অধিকার তোমার উপর থেকে তুলে নিলাম শুধুমাত্র শাফায়াত , দোয়া ও সাক্ষাত ব্যতীত।
প্রত্যেক মু’
মিন অপর মু’
মিন ব্যক্তির প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে- দু’
ধরনের। কিছু কিছু আছে যেগুলো শরীয়তের নির্দেশ হিসেবে গণ্য হয় ; তা এই অর্থে যে , প্রত্যেক মু’
মিনেরই দায়িত্ব হচ্ছে অপর মু’
মিন ভাইয়ের প্রতি ভ্রাতৃত্বের অপরিহার্য্য দায়িত্বসমূহহ পালন ও তার অধিকার রক্ষা করা। আর কিছু কিছু আছে যেটা অন্যের সাথে সম্পৃক্ত।
যেহতু শরীয়তের নির্দেশ কারো উপর থেকে তুলে নেওয়া সম্ভব নয় অর্থাৎ শরীয়তের হুকুমকে কেউ কখনো অকার্যকর করতে পারে না তাই যা কিছুই এই অঙ্গীকারের মাধ্যমে অকার্যকর বা তুলে নেওয়া হয়ে থাকে তা হচ্ছে দ্বিতীয় শ্রেণীর বিধান যা প্রত্যেক ব্যক্তিই তার স্বীয় অধির্কারক ক্ষমা করে দিতে পারে বা তুলে নিতে পারে। কিন্তু যে সকল অধিকার শরীয়তগত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত ও প্রত্যকের দায়িত্ব তা পালন করা সেটা ক্ষমা করা বা তুলে নেওয়ার মত নয়।
ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার অঙ্গীকার করার প্রভাব
সন্দেহাতীতভাবে এই ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের অঙ্গীকার সামাজিক দিক থেকে পরস্পরের অন্তরসমূহকে নিকটে আনতে এবং তাদের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি ও আত্মার সজীবতার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে আত্মিক দিক থেকেও এর অতি মূল্যবান ভূমিকা রয়েছে এবং তা হচ্ছে শাফায়াত বা সুপারিশের অঙ্গীকার। আর শাফায়াত বা সুপারিশের মৌলিক নীতি সম্পর্কে আমরা পবিত্র কোরআন থেকে শিক্ষালাভ করেছি এবং আমরা এটা বিশ্বাসও করি যে , আল্লাহ তায়ালা যাকে ইচ্ছা করেন তাকে শাফায়াতের বা সুপারিশের অনুমতি প্রদান করেন।
কিয়ামতের দিনে শাফায়াতকারীদের মধ্যে একদল থাকবে মু’
মিন বান্দাগণ ; অবশ্য তারা সকলেই আল্লাহর অনুমতিতে তা করবেন।
সুতরাং মানুষ এই অঙ্গীকারের মাধ্যমে প্রকৃতার্থে আল্লাহর রহমত ও তার সন্তুষ্টির দরজা উন্মুক্ত করে থাকে কিন্তু এটাও মনে রাখা দরকার যে , রক্ত সম্পর্কিত ও দুগ্ধ ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্ক থেকে যে বিষয়গুলো উদ্ভূত হয় , যেমন- মাহরাম , উত্তরাধিকার ইতাদি সেটা এই ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের মাধ্যমে অর্জিত হয় না।
তাই দু’
ব্যক্তি , যারা পরস্পর আকদে উখুওয়াত বা ভ্রাতৃত্বের অঙ্গীকার করে থাকে তারা যেন অবশ্যই অপরের মাহরাম (যাকে বিয়ে করা হারাম) আত্মীয় স্বজনকে নিজের মাহরাম মনে না করে বরং যেন তাদের সঙ্গে নামাহরামের মত আচরণ করে। তাদের উভয়কে জানতে হবে এই ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কারণে তাদের একজনের ভগ্নী , কন্যা ও মাতা অপরের মাহরাম বলে গণ্য হবে না।