মানদণ্ডসমূহ
রাসূল (সা.) গাদীর দিবস ও বিভিন্নস্থানে বিভিন্নভাবে স্পষ্ট করে আলীকে (আ.) তার খলিফা ও প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় করানো ছাড়াও আরো অনেক হাদীস বলেছেন যা আলী (আ.)-এর খেলাফতকেই প্রমাণ করে। আমরা এ অধ্যায়ে যে সমস্ত হাদীস“
মানদণ্ড”
শিরোনামে তুলে ধরব তাতে রাসূল (সা.) এমন এক মানদণ্ড ও পরিমাপক নির্ধারণের প্রচেষ্টায় আছেন যে , যখন ইসলামী রাষ্ট্রে ভুল-ভ্রান্তি ও যে সব ক্ষেত্রে সত-অসত্য মিশ্রিত হয়ে যায় এবং সত্যকে অসত্য হতে আলাদা করা সাধারণ মানুষের জন্য সমস্যাপূর্ণ হয় , তখন যেন তারা ঐ মানদণ্ড বা পরিমাপকের সহায়তায় সত্যকে গ্রহণ করে অসত্যকে পরিহার করে। এ সমস্ত হাদীসে তিনি হযরত আলীকে (আ.) হেদায়াতের প্রদীপ , ঈমানের মাপকাঠি এবং সত্যের মানদণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ সকল হাদীসানুসারে হযরত আলী (আ.) একজন সাধারণ রাহবার (পথনির্দেশক) নন , বরং এমন ঐশী পথনির্দেশক যে , তার সকল কথাবার্তা ও কাজ-কর্মই হচ্ছে মানদণ্ড , সৎকর্ম হচ্ছে সেটাই যা তিনি সম্পাদন করেন , সত্যবাণী তাই যা তিনি বলেন , সত্য-মিথ্যার দ্বন্দে তিনি যে পক্ষে আছেন সে পক্ষই সত্য। যে ব্যক্তি তার সাথে নেই সে নিশ্চয় বাতিল ও ভ্রান্ত।
1. ভালবাসা
যে বিষয়টি রাসূল (সা.)-এর পর তার উত্তরাধিকারী নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হতে পারে তা হচ্ছে যে , তিনি কাকে বেশী ভালবাসতেন। হাদীস গ্রন্থ সমূহ ও ইসলামের প্রাথমিক যুগের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে , আলী (আ.)-এর সম্পর্কে এত পরিমাণ হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা অন্য কোন সাহাবী সম্পর্কে ততখানি বর্ণিত হয়নি। রাসূল (সা.) আলীকে (আ.) যতটা পছন্দ করতেন ও ভালবাসতেন অন্য কোন সাহাবীকে তিনি ততটা ভালবাসতেন না।
যেমনভাবে ইবনে হাজার তার“
সাওয়ায়েক’’
গ্রন্থে লিখেছেনঃ রাসূল (সা.)-এর নিকট আলীই ছিলেন সর্বাধিক প্রিয়পাত্র।
রাসূল (সা.) যে নিজেই শুধু আলীকে (আ.) ভালবেসে ক্ষান্ত ছিলেন তা নয় , বরং মুসলমানদেরকেও বলতেন তাকে (আলীকে) ভালবাসার জন্যে এবং এটাও বলতেন যে , আলীর প্রতি ভালবাসা পোষণ করার জন্য মহান আল্লাহর নির্দেশ রয়েছে।
কখনো কখনো বলতেনঃ আমি আলীকে যতটা ভালবাসি মহান আল্লাহ তাকে তার চেয়েও বেশী ভালবাসেন।
অথবা- আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয়পাত্র হচ্ছে আলী।
হযরত আয়েশা বর্ণনা করেছেনঃ আল্লাহ এমন কাউকেই সৃষ্টি করেননি যে রাসূল (সা.)-এর নিকট আলীর চেয়ে প্রিয় বা পছন্দের হবে।
তিনি তার সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলতেনঃ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- সাহাবীদের মধ্যে চারজনকে যেন আমি বেশী বেশী ভালবাসি এবং আরো বলেছেন- তিনি নিজেই তাদেরকে বেশী বেশী ভালবাসেন।
সাহাবাগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা ? আমরাও কামনা করি যেন তাদেরই একজন হতে পারি।
তিনি বললেন জেনে রাখ! আলী তাদের অন্যতম। অতঃপর নীরব রইলেন। আবারও মুখ খুললেন এবং বললেন- তোমরা জেনে রাখ! আলী তাদের অন্যতম। এই কথা বলে পূর্বের ন্যায় নীরব হয়ে গেলেন।
অতঃপর আবার বললেনঃ
یحب اللّه و رسوله و یحبه اللّه و رسوله
অর্থাৎ আল্লাহ ও তার রাসূল তাকে (আলীকে) ভালবাসেন এবং সেও (আলীও) আল্লাহ এবং তার রাসূলকে ভালবাসে।
আনাস বিন মালিক হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- রাসূল (সা.)-এর জন্য কিছু ভাজা মুরগী আনা হলে তিনি হাত তুলে দোয়া করলেন- হে প্রভূ !তুমি এমন কাউকে পাঠিয়ে দাও যাকে আল্লাহ ও তার রাসূল ভালবাসে। ঐ মুহূর্তে আলী দরজায় করাঘাত করলেন। যেহেতু আমি চেয়েছিলাম সেই ব্যক্তি আনসারদের মধ্যে কেউ হোক , তাই তাকে বললাম রাসুল (সা.) এখন ব্যস্ত আছেন।
আলী ফিরে গেলেন। কিছুক্ষণ পর আবারও করাঘাত করলেন। আমি একই কথা তাকে বললাম। তিনি ফিরে গেলেন। যখন তিনি তৃতীয়বার করাঘাত করলেন , তখন রাসূল (সা.) বললেনঃ হে আনাস! তাকে আসতে দাও , আমি তারই জন্য অপেক্ষা করছি।
এ ছাড়াও তার প্রতি ভালবাসার কথা এত বেশী বলা হয়েছে যা অন্য কারো সম্পর্কে বলা হয়নি। যেমন-
(1-ক) আলীর সাথে বন্ধুত্ব মানেই আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে বন্ধুত্ব ও আলীর সাথে বিদ্বেষই আল্লাহ ও রাসূলের সাথে বিদ্বেষের শামিল
ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- একদিন রাসূল (সা.) ও আলী পরস্পর হাত ধরে ঘর থেকে বের হলেন ও বললেনঃ তোমরা জেনে রাখ! যে ব্যক্তি স্বীয় অন্তরে আলীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে সে নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। আর যে ব্যক্তি আলীকে ভালবাসলো সে আল্লাহ ও তার রাসূলকেই ভালবাসলো।
রাসুল (সা:) আলীকে বলেছেনঃ
یا علی ! انت سید فی الدنیا و سید فی الاخره حبیبک حبیبی و حبیبی حبیب اللّه و عدوک عدوی و عدوی عدو اللّه والویل لمن ابغضک بعدی
অর্থাৎ হে আলী! তুমি ইহকাল ও পরকালের নেতা। তোমার বন্ধু আমার বন্ধু আমার বন্ধু আল্লাহর বন্ধু। তোমার শত্রু আমার শত্রু ও আমার শত্রু আল্লাহর শত্রু। অভিশাপ তার উপর যে আমার পরে তোমার সাথে শত্রুতা করবে।
আরো বলেছেনঃ
یا علی محبک محبی و مبغضک مبغضی
অর্থাৎ হে আলী! যে তোমাকে ভালবাসলো সে আমাকে ভালবেসেছে আর যে তোমার প্রতি ক্রোধান্বিত সে আমার প্রতি ক্রোধ পুষে রেখেছে তার অন্তরে ।
(1-খ) আলীর প্রতি ভালবাসা পোষণকারী সৌভাগ্যশালী
তিনি বলেছেনঃ যারা আমাকে এবং এই দু’
জনকে (হাসান ও হোসাঈন) ও তাদের পিতা-মাতাকে ভালবাসবে কিয়ামতের দিন তারা আমার স্তরে স্থান লাভ করবে বা আমার সাথে থাকবে।
এবং আরো বলেছেনঃ যারা চায় আমার মত করে বেচে থাকতে ও আমার মত মৃত্যু বরণ করতে এবং ঐ বেহেশতে বাস করতে যার প্রতিশ্রুতি আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন , তারা যেন আলী ইবনে আবী তালিবকে ভালবাসে।
তিনি আরো বলেছেনঃ এ হচ্ছে জিব্রাইল যে আমাকে সংবাদ প্রদান করেছে: প্রকৃত সৌভাগ্যশালী ব্যক্তি সে , যে আলীকে যেমন জীবিতাবস্থায় ভালবাসবে তেমনি তার (আলীর) মৃত্যুর পর , আর প্রকৃত হতভাগ্য সে ব্যক্তি , যে আলীর প্রতি যেমন জীবিতাবস্থায় ঘৃণা পোষণ করবে তেমনি তার মৃত্যুর পরও।
ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন- আমি রাসূল (সা.)-এর কাছে নিবেদন করলাম- হে আল্লাহর রাসূল! আগুন হতে মুক্তিলাভের কোন উপায় আছে কি ?
তিনি বললেন- হ্যাঁ ,
আমি বললাম- সেটা কি ?
তিনি বললেন- আলীর প্রতি ভালবাসা পোষণ করা।
(1-গ) আলীকে ভালবাসা সৎকর্ম
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ
حب علی بن ابیطالب یاکل السیئات کما تاکل النار الحطب
অর্থাৎ আলীকে ভালবাসলে কুলষতা ঐরূপে ধ্বংস হয়ে যায় যেরূপে শুকনা কাঠ আগু্নে পোড়ালে ধ্বংস হয়।
তিনি আরো বলেছেনঃ
عنوان صحیفه المؤمن علی بن ابی طالب
অর্থাৎ আলীর প্রতি ভালবাসা পোষণ করাই হবে মু’
মিনদের আমলনামার শিরোনাম ।
(1-ঘ) আলীর প্রতি ভালবাসা ব্যতীত কোন আমলই গ্রহণযোগ্য হবে না
রাসূলে আকরাম (সা.) বলেন-
لو ان عبدا عبد اللّه الف عام و الف عام و الف عام بین الرکن و المقام ثم لقی اللّه عز و جل مبغضا لعلی بن ابیطالب و عترتی اکبه اللّه علی منخریه فی النار
অর্থাৎ যদি কোন বান্দা লক্ষ কোটি বছর মাকামে ইব্রাহীম এবং হাজরে আসওয়াদের (রোকন ও মাকামের) মধ্যবর্তী স্থানে আল্লাহর ইবাদত করে , কিন্তু আলীর প্রতি ও আমার রক্ত সম্পর্কীয় নিকটাত্মীয়দের প্রতি ঘৃণা পোষণকারী হিসেবে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হয় , তারপরেও আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবে।
তিনি আরো বলেছেনঃ
یا علی لو ان امتی صاموا حتی یکونوا کالحنایا و صلوا حتی یکونوا کالاوتار ثم ابغضوک لاکبهم اللّه علی وجوههم فی النار
অর্থাৎ হে আলী! যদি আমার উম্মত এমনভাবে রোজা রাখে যে , তার দেহ (পিষ্ঠদেশ) ধনুকের রূপলাভ করে এবং যদি এমনভাবে নামাজও পড়ে যে , তার দেহ (ধনুকের) তন্ত্রীর ন্যায় শীর্ণ হয়ে যায় অথচ তার অন্তরে যদি তোমার প্রতি ঘৃণা থাকে , তাহলেই আল্লাহ তাকে নিম্নমুখী করে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন।
(1-ঙ) আলীর প্রতি ঘৃণা এবং রাসূলের প্রতি ভালবাসা এ দু’
টি কখনোই একতিতে হতে পারে না
তিনি বলেছেনঃ
یا علی من زعم انه یحبنی و هو یبغضک فهو کذاب
অর্থাৎ হে আমার প্রাণপ্রিয় আলী! সেই ব্যক্তি মিথ্যাবাদী যে চিন্তা করে আমাকে ভালবাসে অথচ তোমার প্রতি ঘৃণা পোষণ করে।
(1-চ) আলীর প্রতি ঘৃণা করা ও ঈমানদার বলে দাবী করা একেবারেই অসম্ভব
রাসূল (সা.) বলেন-
من زعم انه آمن بی و ما جئت به و هو یبغض علیا فهو کاذب لیس بمؤمن
অর্থাৎ যে ব্যক্তি ধারণাপোষণ করে যে , আমার প্রতি ও আমার দ্বীনের প্রতি ঈমান এনেছে অথচ আলীর প্রতি ঘৃণাপোষণ করে , সে মিথ্যাবাদী , সে মু’
মিন নয়।
(1-ছ) আলীর প্রতি বিদ্বেষপোষণ কুফরের শামিল
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ যদি কেউ তোমার প্রতি বিদ্বেষপোষণ করে মৃত্যু বরণ করে , তাহলে সে কাফের অবস্থায় মৃত্যু বরণ করল। কিন্তু তার আমলের হিসাব মুসলমানদের মতই হবে।
উপরোক্ত হাদীসের গভীরতা খুজে বের করার জন্য ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে।
কিয়ামতের দিন কাফেরদের হিসাব সম্বন্ধে দু’
টি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছেঃ
প্রথম দৃষ্টিভঙ্গি: এমন কাফের যাদেরকে তাদের কুফরীর জন্য জবাবদিহি করতে হবে ও তাদের জন্য কঠিন শাস্থির ব্যবস্থা আছে। কিন্তু ঐ সমস্ত আমলাদি যা ইসলাম ওয়াজিব (ফরজ) করেছিল তার জন্য তার নিকট জবাবদিহি চাওয়া হবে না। যেমনভাবে ঐ পাপকর্ম যা ইসলামে হারাম তা তার কাছ থেকে হিসাব চাওয়া হবে না। কেননা এই হিসাব-কিতাব ঐ ব্যক্তির জন্য যে ব্যক্তি কুফরীর সাথে সংযুক্ত নয়। কারণ যেহেতু কুফরীর তুলনায় সমস্ত পাপকর্ম অতিক্ষুদ্র তাই কাফেরদের ক্ষেত্রে অন্যান্য হারামকৃত বিষয়ে হিসাব চাওয়া হবে না।
দ্বিতীয় দৃষ্টিভঙ্গি: কাফের যেমনভাবে তার কুফরী ও ভ্রান্ত বিশ্বাসের কারণে প্রশ্নের সম্মুখীন হবে তেমনি তার আমলের কারণেও প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। অর্থাৎ সে ভ্রান্ত বিশ্বাস পোষণের কারণ ছাড়াও স্বীয় পাপকর্মের এবং ওয়াজিব (ফরজ) কর্মসমূহ সম্পাদন না করার কারণেও শাস্তিভোগ করবে।
এই দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থকগণ একটি সূত্র তৈরী করে বলেছেনঃ
الکفارمعاقبون علی الفروع کما انهم معاقبون علی الاصول
অর্থাৎ কাফের যেমন তার বিশ্বাসগত বিচ্যুতির কারণে শাস্তি পাবে তেমনি শাস্তি পাবে তার কৃতকর্মের জন্য।
উপরোক্ত হাদীসে যে সকল কাফেরের কথা বলা হয়েছে তারা সবাই দ্বিতীয় দৃষ্টিভঙ্গির দলিলে।
(1-জ) আলীর প্রতি ভালবাসা ঈমানের চিহ্ন ও তার প্রতি বিদ্বেষ মোনাফিক বা কপটতার চিহ্ন
রাসূল (সা.) তাকে বলেছেনঃ
لا یحبک الا مؤمن و لا یبغضک الا منافق
অর্থাৎ মু’
মিন ব্যতীত তোমাকে কেউ ভালবাসবে না আর মোনাফিক ব্যতীত তোমার প্রতি কেউ বিদ্বেষী হবে না।
তিনি নিজেই বর্ণনা করেছেনঃ আল্লাহর কসম! রাসূল (সা.) আমাকে বলেছেন যে , মু’
মিন ব্যতীত আমাকে কেউ ভালবাসবে না আর মোনাফিক ব্যতীত আমাকে কেউ ঘৃণা করবে না।
উক্ত কারণে সাহাবীগণ বলতেনঃ আমরা আলী ইবনে আবী তালিবের প্রতি শত্রুতা করা দেখে মোনাফিককে চিনতাম।
2. আলীকে কষ্ট প্রদান অর্থাৎ রাসূলকেই কষ্ট প্রদান
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ
من آذی علیا فقد آذانی
অর্থাৎ যে ব্যক্তি আলীকে কষ্ট দিল সে যেন প্রকৃতার্থে আমাকেই কষ্ট দিল।
তিনি আরো বলেনঃ হে আলী! যে তোমাকে আঘাত দিল সে যেন আমাকেই আঘাত দিল আর যে আমাকে আঘাত দিল সে আল্লাহকেই কষ্ট দিল।
.
3. আলীকে গালমন্দ করা রাসূলকে (সা.) গালমন্দ করার শামিল
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আলীকে গালমন্দ করল সে আমাকেই গালমন্দ করল আর যে আমাকে গালমন্দ করল সে আল্লাহকেই গালমন্দ করল আর যে আল্লাহকে গালমন্দ করল আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন।
4.আলীকে পরিত্যাগ করা রাসূলকে পরিত্যাগের শামিল
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ
من فارق علیا فارقنی و من فارقنی فارق اللّه عزوجل
অর্থাৎ যে ব্যক্তি আলীকে পরিত্যাগ করল সে আমাকেই পরিত্যাগ করল আর যে আমাকে পরিত্যাগ করল সে আল্লাহকে পরিত্যাগ করল।
5. আলীর সাথে যুদ্ধ করার অর্থ রাসূলের সাথে যুদ্ধ করা
আবু হোরায়রা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- আলী , ফাতিমা , হাসান ও হোসাঈনকে (আ.) দেখে রাসূল (সা.) বললেন-
انا حرب لمن حاربکم و سلم لمن سالمکم
অর্থাৎ যারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করবে আমি তাদের সাথে যুদ্ধ করব এবং যারা তোমাদের সাথে সন্ধি করবে আমিও তাদের সাথে সন্ধি করব।
6. হিদায়াতের প্রতীক
রাসূলে আকরাম (সা.) আবু বারযাকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ আল্লাহ তায়ালা আলী ইবনে আবী তালিব সম্পর্কে আমাকে বলেছেন- সে হচ্ছে হিদায়াতের প্রতীক , ঈমানের চিহ্ন , খোদাপ্রেমীদের ইমাম ও আল্লাহর সকল আনুগত্যকারীদের জন্য আলোক বর্তিকা।
7. আলী এবং হক বা সত্য
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ
علی مع الحق و الحق معه حیثما دار
অর্থাৎ আলী হক বা সত্যের সাথে আর হক বা সত্য আলীর সাথে যা পরস্পরকে ঘিরে আছে।
8. হক বা সত্য এবং আলী
তিনি আরো বলেনঃ
الحق مع علی حیث دار
অর্থাৎ আলী যে দিকেই যাবে হক বা সত্যও সে দিকেই তার সাথে গমন করবে।
9. আলী , সত্য এবং কোরআন
রাসূলে আকরাম (সা.) বলেছেনঃ
علی مع الحق و القرآن و الحق و القرآن مع علی لن یتفرقا حتی یردا علی الحوض
অর্থাৎ আলী , কোরআন এবং সত্যের সাথে আছে ; সত্য এবং কোরআনও আলীর সাথে আছে। তারা আমার সাথে হাউজে কাউসারে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না।
10. আলী ও কোরআন
নবী কারিম (সা.) বলেছেনঃ
علی مع القرآن والقرآن مع علی لا یفترقان حتی یردا علی الحوض
অর্থাৎ আলী কোরআনের সাথে আর কোরআন আলীর সাথে তারা ঐ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হবে না যে পর্যন্ত না হাউজে কাউসারে আমার সাথে মিলিত হবে।
11. আলীর মর্যাদা কাবা ঘরের মর্যাদার সমান
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ
انت بمنزله الکعبه تؤتی و لا تاتی
অর্থাৎ হে আলী! তোমার মর্যাদা কাবা ঘরের তুল্য যার পানে সবাই ছুটে আসে। কিন্তু সে কারো দিকে যায় না।
তিনি আরো বলেন-
مثل علی فیکم کمثل الکعبه المتسوره النظر الیها عباده والحج الیها فریضه
অর্থাৎ আলী তোমাদের মাঝে ঠিক কাবা ঘরের মত , যার প্রতি তাকানো ইবাদত ও হজ্জ করা ওয়াজিব (ফরজ)।
12. আলী শিক্ষার তোরণ
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ
علی باب حطه فمن دخل منه کان مؤمنا و من خرج منه کان کافرا
অর্থাৎ আলীই হচ্ছে শিক্ষার দ্বার , যে এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে সেই মু’
মিন আর যে এ দরজা দিয়ে বের হয়ে যাবে সে কাফির।
13. আলী ঈমানের মানদণ্ড
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ
لولاک یا علی ما عرف المؤمنون من بعدی
অর্থাৎ হে আলী! যদি তুমি না থাক তাহলে আমার পরে মু’
মিনদেরকে আর চেনা যাবে না।
14. হক (সত) ও বাতিলের (মিথ্যার) পৃথককারী
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ
نت الفاروق بین الحق والباطل
অর্থাৎ হে আলী! তুমিই সত্য ও মিথ্যার পৃথককারী।
15. ঈমানের প্রতীক
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ
جعلتک علما فیما بینی و بین امتی فمن لم یتبعک فقد کفر
অর্থাৎ হে আলী! আমি তোমাকে আমার ও আমার উম্মতের মাঝে ঈমানের প্রতীক হিসেবে রেখেছি , যে তোমার অনুসরণ করবে না সে কাফের।
16. স্বর্গ ও নরকের বন্টনকারী
রাসূল (সা.) তাকে বলেছেন-
انت قسیم النار
অর্থাৎ তুমি হচ্ছ জাহান্নাম বন্টনকারী।
আর তিনি (আলী) নিজেই বলেছেনঃ
انا قسیم النار
আমি হচ্ছি জাহান্নাম বন্টনকারী।
তিনি আরো বলেন- আমি (আলী) হলাম জাহান্নামের বন্টনকারী। কিয়ামতের দিন আমি জাহান্নামকে বলবো- এটা তোমার জন্য আর ঐটা আমার জন্য অথবা একে তুমি নাও আর তাকে ছেড়ে দাও।
এখানে বন্টনকারী বলতে যিনি ভাগাভাগি করে দেন তাকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যিনি দুইটি জিনিসকে দু’
দলের মাঝে ভাগ করে দেন। সুতরাং যখন বলা হবে যে , আলী জাহান্নামের বন্টনকারী অর্থাৎ তিনি নিজের ও জাহান্নামের মাঝে জনগণকে ভাগ করে দিবেন। অতএব উক্ত হাদীসের উদ্দেশ্য হল যে , আলীর সত্ত্বা হচ্ছে জাহান্নামের বিপরীত অর্থাৎ কিছু লোক জাহান্নামবাসী হবে আর কিছু লোক আলী (আ.)-এর দল হিসেবে গণ্য হবে। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে , আলীই হচ্ছে বেহেশতের প্রতিকৃতি।
দ্বিতীয় যে বিষয়টি তৃতীয় হাদীস হতে স্পষ্ট হয় তা হচ্ছে এই ভাগ- বাটোয়ারা আলী (আ.)-এর ইচ্ছাধীন , কেননা তিনিই তো জাহান্নামকে বলবেন যে কাকে গ্রহণ করবে কাকে বর্জন করবে। যেমনভাবে রাসূল (সা.) তাকে বলেছেনঃ তুমিই হচ্ছ জান্নাত ও জাহান্নামের বন্টনকারী।
দৃশ্যতঃ উক্ত হাদীস হচ্ছে যে , আলী (আ.) মানুষের মাঝে জান্নাত ও জাহান্নাম বন্টন করে দিবেন। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এইভাবে বন্টন করার প্রয়োজনই পড়ে না বরং তার উপস্থিতিই বন্টনের মানদণ্ড। অর্থাৎ আলী (আ.) মানুষের বেহেশতবাসী হওয়ার মাপকাঠি ও মানদণ্ড। কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতবাসী বলে গণ্য হবে যতক্ষণ পর্যন্ত আলী (আ.) হতে বিশ্বাস ও কর্মের ক্ষেত্রে বিচ্যুত হবে না । কিন্তু যখনই সে পথচ্যুত হবে এবং ঐ পবিত্র সত্তার সাথে অসামঞ্জস্যশীল হবে তখন এমনই শুকনা কাঠ হবে যা জাহান্নামের জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হবে। অতঃপর উক্ত হাদীসের সারকথাও বাকী তিনটি হাদীসের সারকথার মতই। সবগুলির সারকথা হচ্ছে- আলী (আ.) নিজেই বেহেশতের প্রতিকৃতি ও বেহেশতবাসী হওয়ার মানদণ্ড।
17. পুল সিরাতের অনুমতিদাতা
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ যতক্ষণ পর্যন্ত আলী অনুমতিপত্র লিখবে না ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ পুল সিরাত পার হতে পারবে না।
18. আলীর আনুগত্যেই সৌভাগ্য নিহিত
রাসূলে আকরাম (সা.) আলীর প্রতি ইশারা করে বলেছেন-
والذی نفسی بیده ان هذا و شیعته هم الفائزون یوم القیامه
অর্থাৎ শপথ ঐ সত্ত্বার , যার হাতে আমার প্রাণ- আলী ও তার শিয়াগণ (প্রকৃত অনুসারীগণ) কিয়ামতের দিনে সৌভাগ্যবান হিসেবে পরিগণিত হবে।
19. আলীর প্রকৃত অনুসারীরাই বেহেশতবাসী
রাসূল (সা.) তাকে (আলীকে) বলেছেনঃ
انت و شیعتک فی الجنه
অর্থাৎ তুমি ও তোমার শিয়াগণ (অনুসারীগণ) সকলেরই জান্নাতবাসী।
20. সফলকামী দল
রাসূলে করিম (সা.) তাকে (আলীকে) ইশারা করে বলেন-
هذا و حزبه المفلحون
অর্থাৎ সে এবং তার দল সফলকাম।
21. আলীর অনুসারীগণ আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় এবং তার সন্তুষ্টভাজন
রাসূলে খোদা (সা.) আমাকে (আলীকে) বলেছেন যে , আমি ও আমার শিয়াগণ (অনুসারীগণ) এমন অবস্থায় কিয়ামতের দিন উপস্থিত হব যে , আমরা আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকবো এবং আল্লাহও আমাদের উপর সন্তুষ্ট থাকবেন।
অনুরূপ তুলনা কোরআন শরীফেও এসেছে , সূরা বাইয়্যেনা’
তে বলা হয়েছেঃ
)
ر
َضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ(
অর্থাৎ আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট ও তারাও আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট।
উক্ত আয়াতের পরে রাসূলের হাদীসও বর্ণিত হয়েছে যে , উক্ত আয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে- আলী এবং তার শিয়াগণ (অনুসারীগণ)। এই মর্যাদাটি অর্থাৎ মানুষ আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট আর আল্লাহও তার উপর সন্তুষ্ট হবে এটা মানুষের পূর্ণতার উচ্চতর পর্যায়। কারণ , কোরআন শরীফ এরূপ মানুষের সত্তাকে নাফসে মোতমাইন্না অর্থাৎ পরিতৃপ্ত আত্মা বলে অভিহিত করেছে অর্থাৎ যে আত্মা সর্বদা আল্লাহর স্মরণে মশগুল এবং তার স্মরণে এমন প্রশান্তি লাভ করেছে যে , বস্তু জগতের কোন শঙ্কা , অস্থিরতা ও উদ্বিগ্নতা তাকে বিচলিত করে না , বলা হয়েছে-
)
ي
َا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ () ارْجِعِي إِلَى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَرْضِيَّةً(
অর্থাৎ হে পরিতৃপ্ত আত্মা! আল্লাহর দিকে এসো , তুমি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট এবং আল্লাহও তোমার প্রতি সন্তুষ্ট।
22. আলীকে স্মরণ করাও ইবাদত
রাসূলে আকরাম বলেছেনঃ
ذکر علی عباده
অর্থাৎ আলীকে স্মরণ করাও ইবাদত।
23. আলীর প্রতি তাকানোও ইবাদত
হযরত আয়েশা হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন- আমার পিতাকে দেখেছি যে , তিনি বেশী বেশী আলীর চেহারার প্রতি তাকিয়ে থাকতেন। তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে , হে আমার পিতা! আপনি আলীর প্রতি এভাবে তাকিয়ে থাকেন কেন ?
তিনি উত্তর দিয়েছিলেন- হে আমার কন্যা! আমি রাসূলকে বলতে শুনেছি যে , তিনি বলেছেন- আলীর প্রতি তাকানোও ইবাদত।
24. আলী (আ.) জান্নাতের দরজা
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ
انا مدینه الجنه و علی بابها یا علی کذب من زعم انه یدخلها من غیر بابها
অর্থাৎ আমি হলাম বেহেশতের নগর আর আলী তার দ্বার , ঐ ব্যক্তি ভুল করবে যে ব্যক্তি দরজা ব্যতীত প্রবেশ করতে চাইবে।
25. আলী (আ.) বেহেশতের দীপ্তিময় প্রদীপ
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ
علی یزهر لا هل الجنه کما یزهر کوکب الصبح لا هل الدنیا
অর্থাৎ ধ্রুবতারা যেমনভাবে পৃথিবীকে আলোকিত করে , আলী ঠিক তেমনিভাবে বেহেশতবাসীদেরকে আলোকিত করবে।
26. মুসলমানদের পিতা আলী
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ
حق علی علی کل مسلم حق الوالد علی ولده
অর্থাৎ প্রত্যেক মুসলমানদের উপর আলীর অধিকার তেমনি , যেমন প্রত্যেক পিতার অধিকার তার সন্তানের উপর।
27. আলীর অনুসরণ
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ
من اطاعنی فقد اطاع اللّه و من اطاعک اطاعنی , و من عصانی فقد عصی اللّه و من عصاک فقدعصانی
অর্থাৎ যারা আমার অনুসরণ করে তারা আল্লাহর অনুসরণকারী , আর যারা আলীর অনুসরণ করে তারা আমার অনুসরণকারী যারা আমাকে অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকে তারা প্রকৃতার্থে আল্লাহর অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকে যারা আলীকে অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকে তারা প্রকৃতার্থে আমার অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকে।
28. রাসূলের গোপনীয়তা রক্ষাকারী
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
صاحب سری علی بن ابیطالب
অর্থাৎ আলী হচ্ছে আমার গোপনীয়তা রক্ষাকারী।
হযরত আয়েশা তার পিতা হতে বর্ণনা করেন যে , আলী ছিল রাসূলের গোপনীয়তা রক্ষাকারী।
29. আলী , রাসূল (সা.)-এর মাথা স্বরূপ
علی منی مثل راسی من بدنی
অর্থাৎ আলীর অস্তিত্ব আমার নিকট ঐরূপ (প্রয়োজনীয়) যেরূপ শরীরের নিকট মাথার অস্তিত্ব ।
30. আলীর উপাধিসমূহ
রাসূল (সা.)-এর খলিফা (প্রতিনিধি) নির্ধারণের মাপকাঠিগুলোর মধ্যে একটি মাপকাঠি হচ্ছে- এমন কিছু উপাধি যা রাসূল (সা.) তার জীবদ্দশায় কোন ব্যক্তিকে দিয়েছেন। যেমন- হাদীসের গ্রন্থাদিতে উল্লেখিত হয়েছে , আলীর মত মর্যাদাকর উপাধিধারী ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর সাহাবীদের মধ্যে দ্বিতীয় কেউ নাই। হাদীসবেত্তারা সকলেই উল্লেখ করেছেন যে , রাসূল (সা.)-এর কোন সাহাবাই হযরত আলী (আ.)-এর ন্যায় মহামূল্যবান উপাধিতে ভূষিত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেনি।
আলীকে রাসূল (সা.) যে সকল উপাধিতে ভূষিত করেছেন সেগুলো আমরা নিম্নে তুলে ধরছি: (30-ক) সিদ্দীক ,
(30-খ) সিদ্দীকে আকবর,
(30-গ) সাইয়্যেদুল আরাব ,
একদিন রাসূল (সা.) আয়েশাকে বললেনঃ“
যদি তুমি আরবের সর্দার (সাইয়্যেদ) ও নেতাকে দেখতে চাও , তাহলে আলী ইবনে আবী তালিবের দিকে তাকাও।”
আয়েশা বললেন- হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আরবের সর্দার নন ? তিনি বললেনঃ“
আমি গোটা মানবজাতির সর্দার আর আলী হচ্ছে আরবের সর্দার।
(30 - ঘ ) সাইয়্যেদুল মুসলিমীন ( মুসলমানদের সর্দার ) ও ইমামুল মুত্তাকিন ( পরহেযগারদের ইমাম) ।
(30-ঙ) সাইয়্যেদুল মু’
মিনীন (মু’
মিনগণের সর্দার) ও ইমামুল মুত্তাকিন (পরহেযগারদের ইমাম) এবং ক্বায়্যেদুল গাররিল মোহাজ্জালীন (কিয়ামতের দিন মুখোজ্জল চেহারাধারীদের নেতা ও অগৃদূত)।
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ যে রাত্রে আমি মেরাজে গিয়েছিলাম , সে রাত্রে আলীর তিনটি উপাধি আমার উপর ওহী হয়েছিল। সে তিনটি উপাধি হচ্ছে- (1) সে মু’
মিনদের সরদার , (2) পরহেযগারদের নেতা এবং (3) কিয়ামতের দিনে শুভ্রচেহারাধারীদের মধ্যে প্রধান।
(30-চ) ইযা’
সুবুল মু’
মিনীন (মু’
মিনদের আবর্তনের কেন্দ্র বিন্দু) , রাঈসুল মু’
মিনীন [(অনুসরণের ক্ষেত্রে) মু’
মিনদের পুরোধা]।
(30-ছ) আমিরুল মু’
মিনীন (মু’
মিনদের নেতা)।
(30-জ) সাইয়্যেদু শাবাবি আহলিল জান্নাত।
বাখ্যাঃ যেমনভাবে হাদীসসমূহে এসেছে যে , বেহেশতের অধিবাসী সকলেই যুবক হবে। অর্থাৎ বৃদ্ধগণও বেহেশতে প্রবেশের প্রাক্কালে যুবক হয়ে প্রবেশ করবে। অতএব যিনি বেহেশতের যুবকদের সর্দার হবেন তিনি সমস্ত বেহেশতবাসীদের সর্দার ও নেতা হবেন।
(30-ঝ) খাইরুল বারিয়্যাহ অর্থাৎ সর্বোত্তম সৃষ্টি।
এই উপাধিটি এত প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল যে , যখনই সাহাবীগণ তাকে দেখতেন তখনই বলতেনঃ
قد جاء خیر البریة
অর্থাৎ“
সর্বোত্তম সৃষ্টির আগমন ঘটেছে”
।
(30-ঞ) আল্লাহর হুজ্জাত বা প্রমাণ
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ
انا و علی حجه اللّه علی عباده
অর্থাৎ আমি ও আলী আল্লাহর বান্দাদের উপর হুজ্জাত বা প্রমাণ।
(30-ট) রাসূলের সহযোগি
আনাস বিন মালিক বলেন- যখন সূরা নাসর অবতীর্ণ হল তখন আমরা সকলেরই বুঝলাম যে , এই সূরা রাসূলের ইন্তেকালের বার্তা নিয়ে এসেছে। তখন সালমান ফারসীকে বললাম- রাসূলকে যেন জিজ্ঞাসা করে যে , তার পরে কে আমাদের নেতা ও আশ্রয়স্থল হবে এবং কাকে আমরা প্রাণের চেয়ে বেশী ভালবাসবো। সালমান রাসূলের সমীপে উপস্থিত হলেন এবং এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি উত্তর প্রদানে বিরত থাকলেন। সালমান আবার জিজ্ঞেস করলেন- তারপরেও তিনি উত্তর দিলেন না। সালমানের মনে ভীতি সঞ্চার হল যে , হয়তো রাসূলকে (সা.) তিনি দুঃখ বা কষ্ট দিয়েছেন। তাই আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। কিছুক্ষণ পরে রাসূল (সা.) বললেন- তুমি কি তোমার প্রশ্নের উত্তর আশা করছো ? সালমান বলল- হে আল্লাহর রাসূল! আমি ভয় পেয়েছি যে , হয়তো আমি আপনাকে রাগান্বিত করেছি। তিনি বললেনঃ না এমনটি নয় , জেনে রাখ যে ব্যক্তি আমার ভাই , আমার সহযোগি , আমার খলিফা ও প্রতিনিধি , আমার পরিবারের সদস্য এবং আমার পরে অবশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বোত্তম , আমার ঋণ পরিশোধ করবে এবং আমার ওয়াদাসমূহ পালন করবে সে ব্যক্তি হচ্ছে আলী ইবনে আবী তালিব।
আলী (আ.) নিজেও বিভিন্ন উপলক্ষে উক্ত ফজিলতের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেনঃ“
আমি রাসূল (সা.)-এর ভাই ও উজীর (সহযোগি)। কেউ এটা আমার পূর্বে বলে নাই (দাবী করে নাই) এবং কেউ আমার পরেও তা বলবে না , যদি না মিথ্যাবাদী হয়।”