আসমানসম মর্যাদা
গাদীর এমন একটি বহমান খরস্রোতধারা যা আলী (আ.)-এর অগণিত মর্যাদা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এটা নিশ্চিত যে , রাসূল (সা.)-এর সাহাবীদের মধ্যে আলী (আ.)-এর চেয়ে উত্তম কোন ব্যক্তি যদি থাকতো তাহলে সেও এ ধরনের মর্যাদায় উন্নীত হওয়ার কারণে গর্ববোধ করত। কিন্তু এটা সত্য যে , রাসূলে আকরামের (সা.) পরে আলী (আ.)-এর চেয়ে উত্তম ব্যক্তি তো নাই-ই বরং নবীর উম্মতের মধ্যে এমন কেউ নেই যে অনুরূপ মর্যাদায় আলী (আ.)-এর নিকটবর্তী হতে পারে।
আলী (আ.)-এর মর্যাদা সম্পর্কে রাসূল (সা.) ও তার সাহাবীগণ হতে যে সমস্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে তা অন্যান্য সকল সাহাবীর মর্যাদায় বর্ণিত হাদীসের তুলনায় অধিক। যদিও রাজনীতির ধ্বংসাত্মক হাত যতদূর সম্ভব হয়েছে তার মর্যাদাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে এবং নিজের অবস্থানকে রক্ষা করার জন্য তার (আলীর) সম্পর্কে কুৎসা পর্যন্ত রটনা করেছে , তারপরেও তার মর্যাদা এত অধিক।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল বলেন- রাসূল (সা.)-এর সাহাবীগণের মধ্যে অন্য কারো সম্পর্কে আলী (আ.)-এর মত এত অধিক মর্যাদা বর্ণিত হয়নি।
এক ব্যক্তি ইবনে আব্বাসের উপস্থিতিতে বললঃ সুবহানাল্লাহ! আলী (আ.)-এর মর্যাদায় বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা এত অধিক যে , আমার ধারণা তা তিন হাজারের মত হবে। ইবনে আব্বাস বললেন- কেন তুমি বললে না যে , আলীর মর্যাদায় বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ত্রিশ হাজারের কাছাকাছি।
আব্বাসীয় খলিফা মনসরু দাওয়ানিকী , সুলাইমান আমেশ’
কে জিজ্ঞাসা করেছিল যে , আলী (আ.) সম্পর্কে তুমি কতগুলো হাদীস বর্ণনা করেছ ?
জবাবে সুলাইমান আমেশ বলেছিলঃ সামান্য সংখ্যক হাদীসই আমি তার সম্পর্কে বর্ণনা করতে পেরেছি , যার সংখ্যা প্রায় দশ হাজার অথবা কিছুটা বেশী হবে।
ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক নামক গ্রন্থে লিখেছেন ঃ আলী (আ.)-এর শানে (সম্পর্কে) যত কোরআনের আয়াত নাজিল হয়েছে , অন্য কোন ব্যক্তির শানে এত পরিমাণ আয়াত নাজিল হয়নি।
তিনি আরো লিখেছেনঃ আলী (আ.) সম্পর্কে তিনশ’
টি কোরআনের আয়াত নাজিল হয়েছে।
ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেনঃ কোরআনের যেখানেই“
হে ঈমানদারগণ”
কথাটি এসেছে সেখানেই আলী (আ.) তাদের সম্মানিত আমির বা সরদার। আল্লাহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাসূল (সা.)-এর সাহাবীগণকে ধিক্কার দিয়েছেন। কিন্তু আলী (আ.) সম্পর্কে কল্যাণ ব্যতীত অন্য কিছুর উল্লেখ করেন নি।
আমরা এ অধ্যায়ে তার কিছু ফজিলত বর্ণনা করব যা তাকে মুসলমানদের নেতা এবং রাসূল (সা.)-এর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার যোগ্যতা দান করেছেঃ
1. রাসূল (সা.) ও আলী (আ.)-এর যুগল গুণাবলী
যদিও আমরা গুণাবলীর ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে এই পারস্পরিক মিলের গুপ্ত রহস্য উদঘাটন করতে পারব না। কিন্তু হাদীসের মাধ্যমে সেগুলির বিদ্যমানতার প্রতি আলোকপাত করতে পারি। রাসূল (সা.) হতে বর্ণিত হাদীস ও বর্ণনাসমূহে প্রমাণিত হয় যে , রাসূল (সা.) ও আলী (আ.) একই নুরের সৃষ্টি।
এই হাদীস অনুসারে
ক. হযরত আদমকে (আ.) সৃষ্টির পূর্বেও রাসূল (সা.)-এর নূর ও আলী (আ.)-এর নূর ছিল এবং ঐ দুই মহান ব্যক্তিকে একই উপাদান দ্বারা তৈরী করা হয়েছে।
এখানে নূর বলতে ঐ ঐশী সত্তাকে বুঝানো হয়েছে , যে বস্তু দ্বারা নবী ও ইমামগণের মৌলিক অবকাঠামো তৈরী করা হয়েছে।
খ. রাসূল (সা.) বলেছেনঃ
یا علی الناس من شجر شتی و انا و انت من شجره واحده
অর্থাৎ হে আলী! (আল্লাহ তায়ালা) মানুষকে বিভিন্ন বৃক্ষ হতে সৃষ্টি করেছেন , কিন্তু আমাকে ও তোমাকে একই বৃক্ষ হতে সৃষ্টি করেছেন।
গ. তিনি (আল্লাহ) রাসূল (সা.) ও আলীকে (আ.) একই সঙ্গে মনোনীত করেছেন।
ঘ. আলী স্বয়ং রাসূল (সা.)-এর ন্যায়
মোবাহেলা’
র আয়াত ও সে সম্পর্কে যে সকল হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং কিছু কিছু সরাসরি বর্ণিত হাদীস যেটা আমাদের কাছে বিদ্যমান সেগুলো তারই সাক্ষ্য বহন করে যে , আলী ও রাসূল (সা.)-এর মধ্যে কোন পার্থক্যকে নেই।
এই হাদীসানুসারে যখনই প্রয়োজন দেখা দিত যে , রাসূল (সা.) কোন দলকে বা কোন গোত্রকেতাদের অপরাধের কারণে শাস্তি দানের ভয় পদর্শন করতেন , তখনই আলী (আ.)-এর প্রতি ইশারা করে বলতেনঃ“
হয় তোমরা এ কাজ থেকে বিরত হও নয়তো এমন এক ব্যক্তিকে তোমাদের নিকট পাঠাবো যে হুবহু আমার মত।”
ঙ. আলী (আ.)-এর রক্ত মাংস রাসূলেরই রক্ত মাংস [রাসূল (সা.) বলেছেন]ঃ
لحمه لحمی و دمه دمی , گوشت او گوشت من است و خون او خون من است
অর্থাৎ তার মাংস আমার মাংস এবং তার রক্ত আমার রক্ত।
চ. আলী (আ.) রাসূল (সা.)-এর সদৃশ।
ছ. আলীই (আ.) রাসূল (সা.)-এর মূল।
উক্ত বাণীর উদ্দেশ্য হয়তো এটা হতে পারে যে , মূল যেমন গাছকে দৃঢ়ভাবে দাড়িয়ে থাকতে সহযোগিতা করে ঠিক অনুরূপ আলীই (আ.) রাসূল (সা.)-এর দ্বীন ও তার নামকে জীবিত রাখার জন্য মৌলিক অবদান রেখেছেন। অথবা এর অর্থ এটাও হতে পারে যে , আলী (আ.) রাসূল (সা.)- এরই বংশ থেকে। আর নিকট আত্মীয়দের ক্ষেত্রে এ ধরনের বাক্যের ব্যবহার সাধারণভাবেও প্রচলিত।
জ. আলী (আ.) রাসূল (সা.)-এর দেহে মস্তকের ন্যায় তিনি বলেছেনঃ“
আলীর সাথে আমার সম্পর্ক ঐরূপ যেমন শরীরের সাথে মাথার সম্পর্ক।
2. আলী (আ.)-এর প্রতিপালন
ঐতিহাসিকগণ সকলেই একমত যে , আলী (আ.) শিশুকাল থেকেই রাসূল (সা.)-এর ছত্রছায়ায় ও তার অধীনেই লালিত-পালিত হয়েছেন।
রাসূল (সা.)-এর নবুয়্যত ঘোষণার পূর্বে মক্কায় দূর্ভিক্ষ দেখা দেয় ও কোরাঈশগণ আর্থিক সংকটে পড়ে। যেহেতু জনাব আবু তালিবের সন্তানাদি বেশী ছিল , তাই রাসূলে আকরাম (সা.) তার চাচা আব্বাসকে (রা.) বললেন যে , তিনি যেন আবু তালিবকে সাহায্যার্থে তার যে কোন একটি সন্তানকে লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন , আব্বাস (রা.) হযরত জাফরের (রা.) লালন-পালনের দায়িত্ব নিলেন এবং রাসূল (সা.) দায়িত্ব নিলেন আলী (আ.)-এর।
আলী (আ.)-এর উপর যে আল্লাহ তায়ালা এ ধরনের মূল্যবান নেয়ামত দান করলেন এ সম্পর্কে“
ইবনে আছির”
লিখেছেন যে , তখন থেকে নিয়ে রাসূল (সা.)-এর নবুয়্যত ঘোষণা পর্যন্ত আলী (আ.) সদা-সর্বদা রাসূল (সা.)-এর সাথেই ছিলেন এবং সব সময়ই তার অনুসরণ করতেন।
তিনি (আলী) নিজেই এ সম্পর্কে বলেছেনঃ
যখন আমি শিশু ছিলাম তখন তিনি (সা.) আমাকে নিজের কাছে টেনে নিতেন ও বুকে চেপে ধরতেন। তিনি আমাকে তার নিজের বিছানায় এমনভাবে শুইয়ে দিতেন যে , তার শরীরের সাথে আমার শরীর মিশে থাকতো এবং তার সুগন্ধি আমাকে সুরোভিত করতো। কখনো এমনও হত যে , তিনি খাদ্যদ্রব্য নিজে চিবিয়ে আমাকে খাওয়াতেন।
স্বনামধন্য ঐতিহাসিক মাসউদী তার“
ইসবাতুল ওসীয়াহ”
নামক গ্রন্থে লিখেছেনঃ
রাসূল (সা.)-এর বয়স যখন ত্রিশ বছর তখন আলী (আ.)-এর জন্ম হয়। তিনি তাকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। রাসূল (সা.)-এর নির্দেশে আমিরুল মু’
মিনীনের মাতা ফাতিমা বিনতে আসাদ আলীর দোলনাকে তার বিছানার পাশে রাখতেন ও তিনি নিজেই আলীর দেখা-শুনার দায়িত্ব পালন করতেন। তার মুখে দধু দিতেন এবং দোলনাকে দোলা দিতেন যাতে সে ঘমিয়ে পড়ে। যখন ঘুম থেকে জেগে উঠতো তার সাথে খেলা করতেন। কখনো তাকে কাধে নিতেন কখনো নিতেন কোলে , আবার কখনো নিতেন বুকে আর বলতেনঃ আলী হচ্ছে আমার ভাই , আমার সাথি , আমার মনোনীত , আমার প্রতিনিধি , আমার সঞ্চয় , আমার জামাতা , আমার বিশ্বস্ত ।
তাকে নিজের সাথে নিয়ে মক্কার চারপাশে ঘুরতেন এবং মরুভূমি ,পাহাড় ও উপত্যকাসমূহে ভ্রমণ করতেন। এই কাজটি দূর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছিলেন আর আবু তালিব , যিনি প্রচুর দান-খয়রাত করতেন , তিনি এত পরিমাণ দান-খয়রাত করতেন যে , দান করতে করতে এক পর্যায়ে তিনি রিক্তহস্ত হয়ে পড়েছিলেন। আর তখন থেকে রাসূল (সা.) আলী (আ.)-এর শিক্ষা-দীক্ষা ও ভরণ-পোষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
3. ইসলামের অগ্রপথিক (প্রথম মুসলমান)
নিঃসন্দেহে আলীই (আ.) প্রথম ব্যক্তি যিনি প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন ও রাসূল (সা.)-এর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। কিন্তু উক্ত আলোচনা শুরু করার পূর্বে দু’
টি বিষয় উল্লেখ করা জরুরী বলে মনে করছি।
(ক) ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে আলী (আ.) ও অন্যান্য মুসলমানদের মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্যকে পরিলক্ষিত হয়। অন্যান্য মুসলমানগণ এমন অবস্থায় ঈমান এনেছে যে , ইতিপূর্বে বছরের পর বছর ধরে মূর্তি পূজা করেছে। কিন্তু আমিরুল মু’
মিনীন আলী (আ.) এমন অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করেছেন যে , কখনোই কোন অমুসলিমদের উপাসনালয়ে যাননি এবং কখনোই মূর্তি পূজাও করেননি। যদি তাকে প্রথম মুসলমান বলি তাহলে সেই অর্থেই তিনি প্রথম মুসলমান যে অর্থে হযরত ইব্রাহিম (আ.) বলেছিলেনঃ“
আমি প্রথম মুসলমান”
।
যদি বলি তিনি প্রথম মু’
মিন তাহলে সেই অর্থেই প্রথম মু’
মিন যে অর্থে হযরত মুসা(আ.) বলেছিলেনঃ“
আমিই প্রথম মু’
মিন”
।
যদি বলি যে আলী (আ.) প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছেন তাহলে সেই অর্থে যে অর্থে কোরআনে কারীম ইব্রাহিম (আ.) সম্পর্কে বলেছেঃ“
স্মরণ কর সে সময়ের কথা যখন তোমার প্রভূ বলেছিল যে , ইসলাম গ্রহণ কর , সে বলেছিল-“
আমি বিশ্ব প্রতিপালকের অনুগত হলাম”
।
আর যদি বলি তিনি ঈমান এনেছেন তাহলে সে অর্থে যে অর্থে রাসূল (সা.) সম্পর্কে কোরআনে এসেছে যে ,“
রাসূল (সা.) বিশ্বাস করেন ঐ সকল বিষয়ের উপর যে সকল বিষয় তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে”
।
(খ) ঈমান কোন কিছুর প্রতি আসক্তি ও বিশ্বাস স্থাপন , এ অর্থে বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম এবং ঈমানের তীব্রতার এ ভিন্নতাই মানুষকে পবিত্র সত্তার নিকটতম ও দূর হওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে ।
আমিরুল মু’
মিনীন আলী (আ.) বিশ্ব প্রতিপালকের প্রতি ঈমান ও ধর্মীয় সত্য ও জ্ঞানের ক্ষেত্রে ছিলেন শীর্ষস্থানে । তিনি স্বয়ং বলেছেনঃ“
আল্লাহর শপথ , যদি বিশ্বের সকল গোপন আবরনসমূহ অপসারিত হয় তাহলেও আমার বিশ্বাসে কিছু বৃদ্ধি পাবে না (কোন পরিবর্তন ঘঠবে না)।”
রাসূল (সা.) তার ঈমান বা বিশ্বাস সম্পর্কে বলেছেনঃ যদি আলীর ঈমান বা বিশ্বাস এক পাল্লায় রাখা হয় আর সমস্ত আসমান ও জমিনকে অন্য পাল্লায় রাখা হয় তাহলেও আলীর ঈমানের পাল্লাটিই বেশী ভারী হবে।
এমন কি যদি উক্ত দু’
টি বিষয় ব্যতিরেকেও আলীকে (আ.) অন্যান্য সাধারণ মুসলমানের মতই মনে করি তারপরও তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন অর্থাৎ যেদিন রাসূল (সা.) তার নবুয়্যত ঘোষণা করেছেন , ঠিক সেদিনই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
আনাস ইবনে মালিক বর্ণনা করেছেনঃ রাসূল (সা.) সোমবার দিনে নবুয়্যত ঘোষণা করেন। আর আলী (আ.) মঙ্গলবার দিন তার সাথে নামাজ আদায় করেন।
অথবা তার প্রতি ঈমান আনেন
এবং ঐ দিনই যখন নবুয়্যত ঘোষণা করলেন সেদিন প্রথম যে ব্যক্তি তার প্রতি ঈমান আনার ও সহায়তা করার ঘোষণা দেন তিনি হলেন হযরত আলী (আ.) যদিও তিনি ছিলেন উপস্থিত জনতার মাঝে বয়সের দিক থেকে সবচেয়ে ছোট।
কারণ , তাঁর বয়স তখনও দশ বছর অতিক্রান্ত হয়নি।
তিনি স্বয়ং নিজেই বলেছেনঃ আমিই সবার আগে ইসলাম গ্রহণ করেছি , আর তা এমন অবস্থায় যখন আমি অপ্রাপ্ত বয়স্কৃ তরুন ছিলাম।
ইসলামে তার প্রথম ঈমান আনয়নকারীর মর্যাদা এত প্রসিদ্ধি লাভ করেছে যে , আহলে সুন্নাতের অনেক আলেম ও ঐতিহাসিকগণ বলেছেনঃ তার প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী হওয়ার বাপারে সকলেই ঐকমত্য।
রাসূল (সা.)-এর অনেক সাহাবী ও তাবেঈনরাও তার এই মর্যাদার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। আল্লামা আমিনী (র.) সাহাবী , তাবেঈন ও আহলে সুন্নাতের পণ্ডিতদের মধ্যে 51 জন (একান্না জন) ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন যারা এই মর্যাদার কথা বর্ণনা করেছেন ও 15 জন (পনের জন) ইসলামের প্রাথমিক যুগের কবি’
র নাম উল্লেখ করেছেন যারা স্বীয় কবিতায় তার এই মর্যাদার কথা তুলে ধরেছেন।
এছাড়াও রাসূল (সা.)-এর অনেক হাদীসে আলীকে (আ.) প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ।
তিনি (সা.) বলেছেনঃ প্রথম যে ব্যক্তি হাউজে কাউসারে এসে আমার পাশে দাড়াবে সে ঐ ব্যক্তি যে সবার আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ আলী ইবনে আবী তালিব।
তিনি আরো বলেনঃ প্রথম যে ব্যক্তি আমার সাথে নামাজ আদায় করেছে সে হচ্ছে আলী।
অপর এক বর্ণনায় এসেছেঃ সাত বছর ধরে আলী ব্যতীত কেউ আমার সাথে নামাজ আদায় করেনি এবং তখন ফেরেশতাগণ আমাদের দু’
জনের উপরই দরুদ পড়তেন।
মাসউদী তার“
ইসবাতুল ওসীয়াহ”
গ্রন্থে বর্ণনা করেছেনঃ তিনি (আলী) নবুয়্যত ঘোষণার দু’
বছর পূর্ব হতে রাসূল (সা.)-এর সাথে নামাজ আদায় করতেন।
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে , বিভিন্ন ধরনের বর্ণনায় এই অর্থই অধিকাংশ ব্যক্তি গ্রহণ করেছেন। উদাহরণ স্বরূপ এখানে কিছু প্রসিদ্ধ বিবরণ তুলে ধরছিঃ
1. প্রথম ব্যক্তি যিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
2. প্রথম ব্যক্তি যিনি ঈমান এনেছেন।
3. প্রথম ব্যক্তি যিনি নামাজ আদায় করেছেন।
4. সে-ই ইসলামে আমার উম্মতের মধ্যে অগ্রগামী।
5. সে-ই প্রথম ঈমান আনয়নকারী ও সে-ই প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী।
তিনি নিজেই উক্ত বিষয়ে বহুবার বলেছেনঃ আমিই প্রথম ব্যক্তি যে রাসূল (সা.)-এর উপর ঈমান এনেছি।
আরো বলেছেনঃ আমিই সর্ব প্রথম রাসূল (সা.)-এর সাথে নামাজ আদায় করেছি।
নাহজুল বালাগা’
র একটি খুতবাতে বর্ণিত হয়েছেঃ
আমি সর্বদা তার সাথেই ছিলাম , তা সফরকালে হউক বা ঘরেই হউক। এমনভাবে তার সাথে ছিলাম যেমনভাবে উষ্ট্রী শাবক তার মায়ের সাথে থাকে তিনি প্রতিদিন তার কার্যাদি সম্পাদনের সময় আমাকে সেগুলোর অনুসরণ করতে বলতেন। প্রত্যেক বছর তিনি হেরা পাহাড়ের গুহায় ধ্যান মগ্ন হতেন আর আমি তাকে প্রত্যক্ষ করতাম , আমি ব্যতীত অন্য কেউ তাকে দেখতে পেত না। সে সময় একটি বাড়িতে , যেখানে রাসূল (সা.) ও খাদিজা (রা.) ব্যতীত কেউ ছিল না , কোন পরিবারও তখন পর্যন্ত মুসলমান হয়নি , তখন আমি তাদের মাঝে ছিলাম তৃতীয় জন। ওহী ও নবুয়্যতের দ্বীপ্তিকে অবলোকন করতাম আর নবুয়্যতের সুঘ্রাণকে করতাম অনুভব।
তিনি আরো বলেনঃ যখন এই উম্মতের কোন ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করেনি , তখনও আমি সাত বছর যাবৎ রাসূল (সা.)-এর পাশে থেকে আল্লাহর ইবাদত করেছি।
4. জ্ঞান ও প্রজ্ঞা
নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে সকল গুণাবলীর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখা হয় , জ্ঞান ও প্রজ্ঞা তার মধ্যে অন্যতম। ইসলামী রাষ্ট্র যা অবশ্যই ইসলামী বিধি- বিধানের মূল উৎসের ভিত্তিতে পরিচালিত হতে হবে তার নেতা বা ইমাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ভূমিকা অত্যধিক।
জ্ঞান ও প্রজ্ঞাকে যদি আমরা ইসলামী রাষ্ট্রের নেতৃত্বের জন্য একটা শর্ত মনে করি , তাহলে দেখতে পাব যে , শিয়া-সুন্নী উভয় মাযহাবের আলেমদের দৃষ্টিতে আলীই (আ.) একমাত্র ব্যক্তি যিনি জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ক্ষেত্রে সবার শীর্ষে ছিলেন।
তিনি 23 বছর যাবৎ সর্বক্ষণিক রাসূল (সা.)-এর সাথে ছিলেন।
তার সাথে এমনভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন যে , ইসলামের কোন মৌলিক কিংবা শাখাগত দিক তার অজ্ঞাত ছিল না। সমস্ত সাহাবী তার জ্ঞানের মুখাপেক্ষী ছিলেন কিন্তু তিনি রাসূল (সা.)-এর পরে কারো মুখাপেক্ষী ছিলেন না। কেননা , 23 বছর ধরে তিনি রাসূল (সা.)-এর নিকট বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে উদ্ভূত সকল সমস্যারর সমাধান করার সুযোগ পেয়েছেন এবং এর সদ্ব্যবহারও করেছেন। যখন তিনি প্রশ্ন না করে নীরব থাকতেন তখন রাসূল (সা.) স্বয়ং প্রশ্ন করা ব্যতীতই তাকে সবকিছু বলতেন।
রাসূল (সা.) তাকে বলতেনঃ আমি আদিষ্ট হয়েছি তোমাকে আমার নিকটতম করার জন্যে ও শিক্ষা-দীক্ষা দেওয়ার জন্য।
রাসূল (সা.) হতে বর্ণিত আলী (আ.)-এর অসাধারণ জ্ঞান সম্পর্কিত যেসব হাদীস আমাদের হাতে এসেছে তার সংখ্যা অত্যধিক।
সেখান থেকে কিছু সংখ্যক তুলে ধরছিঃ
اعلم امتی من بعدی علی بن ابی طالب
এই উম্মতের মধ্যে আমার পরে আলীই সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী ব্যক্তি।
علی امیرالمؤمنین وعا علمی
আলী আমার জ্ঞানের পাত্র।
علی باب علمی
আলী হচ্ছে আমার জ্ঞানের দ্বার।
علی عیبه علمی
আলী আমার জ্ঞানের সিন্দুক।
انت اذن واعیه لعلمی
তুমি আমার জ্ঞানের শ্রবণকারী কর্ণ।
তুমিই বিচারের ক্ষেত্রে আমার সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী পজ্ঞাবান ও দ্রষ্টা।
আলীর জ্ঞান সবার চেয়ে বেশী।
انا دار الحکمه و علی بابها
আমি প্রজ্ঞার গৃহ আর আলী তার দ্বার।
انا مدینه الحکمه و علی بابها فمن اراد الحکمه فلیات الباب
আমি প্রজ্ঞার নগর আর আলী তার তোরণ। যে প্রজ্ঞা অর্জন করতে চায় সে যেন তোরণ দিয়েই প্রবেশ করে।
انا مدینه العلم و علی بابها فمن اراد العلم فلیات الباب
আমি জ্ঞানের শহর আর আলী তার দরজা। যে এই শহরে প্রবেশ করতে চায় সে যেন দরজা দিয়েই প্রবেশ করে।
মরহুম আল্লামা আমিনী (র.) তার লিখিত“
আল-গাদীর”
গ্রন্থের ষষ্ঠ খণ্ডে (পৃষ্ঠা-61-77) শামসুদ্দিন মালিকীর এই নিম্নোক্ত কবিতাটিতে-
و قال رسول اللّه انی مدینه من العلم و هو الباب فاقصد
ক্বালা রাসূলুল্লাহহি ইন্নি মাদীনাহ মিনাল ইলমি ওয়া হুয়াল বা’
বু ওয়া ফাক্বসুদি ।
143 জন আহলে সুন্নাতের আলেমের নাম উল্লেখ করেছেন , যারা“
আমি জ্ঞানের নগর আর আলী তার দরজা”
হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আলী (আ.) নিজেও বলেছেনঃ রাসূল (সা.) এক হাজারটি জ্ঞানের অধ্যায় আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন , যার প্রতিটি অধ্যায় হতে আরো এক হাজারটি করে অধ্যায় প্রসারিত হয়।
তিনি আরো বলেনঃ আমাকে জিজ্ঞাসা কর! আমাকে জিজ্ঞাসা কর! তোমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাবার আগেই আমাকে জিজ্ঞাসা কর। আরশের নীচে যা কিছু আছে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর আমি তার জবাব দিব।
আরো বলেছেনঃ আল্লাহর শপথ! আমি জানি যে , কোরআনের কোন আয়াত কী বিষয়ে এবং কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে। কারণ , আল্লাহ আমাকে এমন এক অন্তর দিয়েছেন যেটা চিন্তাশীল আর এমন জিহ্বা দিয়েছেন যেটা পশ্নকারী।
এছাড়াও তিনি বলেছেনঃ আল্লাহর কিতাব (কোরআন) সম্পর্কে আমাকে প্রশ্ন কর! আল্লাহর শপথ! আমি জানি যে , কোন আয়াত কখন , কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে , এটাও জানি যে , সেটা রাতে অবতীর্ণ হয়েছে না-কি দিনে , মরুতে না-কি পাহাড়ে।
দ্বিতীয় খলিফা বলতেনঃ আলী (আ.) হল বিচার কার্যের ক্ষেত্রে আমাদের সবার চেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি।
ইবনে মাসউদ বলেছেনঃ আলী (আ.) হচ্ছে বিচারের ক্ষেত্রে সকল মদীনাবাসীর মধ্যে সর্বোচ্চ জ্ঞানের অধিকারী।
তিনি আরো বলেনঃ আলী হচ্ছে সমস্ত উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বাধিক জ্ঞানী এবং বিচারকার্যে অত্যন্ত পারদর্শী।
উল্লেখ্য যে , বিচারের ক্ষেত্রে জ্ঞানী হওয়ার অর্থ ইসলাম ও আল্লাহর রাসূলের সুন্নাতের ক্ষেত্রে সর্ববিধ জ্ঞান থাকা।
হযরত আয়েশা বর্ণনা করেছেনঃ আলী (আ.) সুন্নাত সম্পর্কে সবার চেয়ে বেশী অবগত।
ইমাম হাসান (আ.) তার মহান পিতার শাহাদাতের পরদিন জনগণের উদ্দেশ্যে বলেনঃ“
গতকাল এমন এক ব্যক্তি আপনাদের মাঝ থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন যিনি জ্ঞানের ক্ষেত্রে এত উচ্চ শিখরে অবস্থান করছিলেন যে , কেউ তার অগ্রগামী ছিলেন না এবং ভবিষ্যতেও কেউ জ্ঞানের ক্ষেত্রে তার পর্যায়ে পৌছাতে পারবেন না।”
ইবনে আব্বাসও সংযোজন করে বলেনঃ
জ্ঞান হচ্ছে ছয় অংশে বিভক্ত , তার মধ্যে পাচঁ অংশ আছে হযরত আলী (আ.)-এর নিকট আর এক অংশ অন্যান্য সকল মানুষের মধ্যে বন্টিত হয়েছে কিন্তু আলী ঐ অংশেও তাদের অংশীদার এবং সেক্ষেত্রেও তার অংশ সবার চেয়ে বেশী ও তিনি সবচেয়ে জ্ঞানী।
তিনি আরো বলেছেনঃ হিকমত বা প্রজ্ঞাকে দশভাবে বিভক্ত করা হয়েছে। তার নয়ভাগ আলীকে (আ.) দেওয়া হয়েছে আর অবশিষ্ট একভাগ দেওয়া হয়েছে সমস্ত মানুষকে।
5. আত্মত্যাগ ও ইসলামকে রক্ষা
যে কেউ ইসলামের প্রাথমিক ইতিহাসগুলি পড়বে তারা সকলেই এটাই বুঝবে যে , হযরত আলী (আ.) তার সমগ্র জীবনকে ইসলামের প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত করেছেন। ইসলাম কখনোই আলী (আ.)-এর চেয়ে বড় কোন রক্ষক পায়নি। ইবনে আব্বাস বলেছেনঃ কোন ব্যক্তিই তার মত নিজেকে বিপদের সম্মুখে ঠেলে দিতেন না।
আমরা এ পর্যায়ে ইসলামের ইতিহাসের ভাগ্যনির্ধারক ও স্পর্শকাতর মুহূর্তের কিছু ঘটনা তুলে ধরবো যা ইসলামের প্রতিরক্ষা ও সত্যের বিজয়ে আমিরুল মু’
মিনীন আলী (আ.)-এর ঐতিহাসিক ও চরম আত্মতাগী ভূমিকার পরিচয় বহন করে।
মক্কায় তের বছর যাবত আমিরুল মু’
মিনীন যে সকল বিপ্লবী ও আত্মত্যাগী ভূমিকা পালন করেন তা স্বতন্ত্র ও বিস্তারিত আলোচনার দাবী রাখে। আমিরুল মু’
মিনীন আলী (আ.)-এর স্মরণীয় একটি আত্মত্যাগ হচ্ছে- রাসূল (সা.)-এর হিযরতের রাতে তার বিছানায় ঘুমানো। এই আত্মত্যাগের মাধ্যমে সাহসিক যে পদক্ষেপ তিনি নিয়েছিলেন তার কারণেই রাসূল (সা.)- এর অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি মক্কার মুশরিকদের নিকট গোপন ছিল এবং রাসূলে আকরাম (সা.) এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাদের পশ্চাদ্ধাবনের ভয়-ভীতি ব্যতিরেকেই তার হিজরতের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে পেরেছিলেন।
উক্ত রাতের গুরুত্ব ও আলী (আ.)-এর কর্মের মূল্যায়নের জন্য এতটুকু জানাই যথেষ্ট যে , নিম্নোক্ত আয়াতটি উপরোক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই নাজিল হয়ঃ
)
و
َمِنَ النَّاسِ مَن يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّـهِ ۗ وَاللَّـهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ(
অর্থাৎ“
আর মানুষের মাঝে একশ্রেণীর লোক আছে , যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে। আল্লাহ তাঁর (এরূপ) বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ।”
ইমাম সাজ্জাদ (আ.) বলেছেনঃ
ان اول من شری نفسه ابتغا رضوان اللّه هو علی بن ابیطالب
অর্থাৎ সর্ব প্রথম যিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে জীবন বাজি রেখেছেন তিনি হচ্ছেন হযরত আলী ইবনে আবী তালিব (আ.)।
হিজরতের পরে ইসলামের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে আমিরুল মু’
মিনীন আলী (আ.)-এর যে সকল আত্মত্যাগের কথা বর্ণিত হয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে- বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করা।
উক্ত বিষয়ে যে সমস্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে , তা হতে প্রমাণিত হয় যে , আলী (আ.) বদরের যুদ্ধে এমন বীরত্ব প্রদর্শন এবং আত্মত্যাগ করেছিলেন যে , তার মর্যাদাকর ও বীরোচিত উপস্থিতির বিষয়টি এমনকি তার শাহাদাতের পরেও মুসলমানদের স্মৃতিতে বিদ্যমান ছিল আর হাদীসের বিভিন্ন গ্রন্থ গুলোও উক্ত বর্ণনাতে পরিপূর্ণ ।
ওহুদের যুদ্ধের দিন তিনি রাসূল (সা.)-এর প্রাণ রক্ষায় এতটা সচেষ্ট ছিলেন যে , কোন কোন বর্ণনাকারী বলেছেন ওহুদের দিনে রাসূল (সা.)-এর জীবন রক্ষা ও মুসলমানদের মুক্তি আলীর ধৈর্যকে ও ত্যাগের ফলশ্রুতিতেই সম্ভব হয়েছিল।
তিনি নিজেই বলেছেনঃ আমি ওহুদের যুদ্ধের দিন ষোল’
টি আঘাত পেয়েছিলাম।
ইবনে আসির তার“
উসদুল গাবা”
গ্রন্থে লিখেছেন- ওহুদের যুদ্ধের দিন ষোল’
টি আঘাত পেয়েছিলেন যার প্রচণ্ডতা এমন ছিল যে , প্রত্যেকটি আঘাত তাকে মাটিতে ফেলে দিচ্ছিল , কিন্তু জিব্রাইল (আ.) তাকে উঠাচ্ছিলেন।
হাদীসে এটাও বর্ণিত হয়েছে , যে ব্যক্তি ওহুদের যুদ্ধে মুশরিকদের কয়েকজন পতাকাধারী সেনাপতিকে হত্যা করে , তিনি ছিলেন হযরত আলী (আ.)। যখন তিনি তাদেরকে হত্যা করলেন তখন রাসূল (সা.) মুশরিকদের একটি দলকে দেখতে পেলেন এবং বললেনঃ হে আমার প্রিয় আলী! তাদের পতি আক্রমণ কর । তিনি আক্রমণ করলেন ও তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দিলেন এবং কিছু সংখ্যককে হত্যাও করলেন। তারপর রাসূল (সা.) অন্য আরেকটি দলকে দেখতে পেলেন এবং আক্রমণের নির্দেশ দিলেন। আলী (আ.) আক্রমণ করলেন ও তাদেরকেও ছত্রভঙ্গ করে দিলেন এবং কিছু সংখ্যককে হত্যা করলেন। যখন এই ঘটনা তৃতীয়বারের মত পুনরাবৃত্তি ঘটল , তখন হযরত জিব্রাইল (আ.) রাসূলকে (সা.) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল!এই হচ্ছে আত্মত্যাগ।
রাসূল (সা.) বললেনঃ হ্যাঁ , কারণ সে আমা হতে আর আমি তার হতে।
তখন জিব্রাইল (আ.) বললেনঃ আমিও আপনাদের হতে।
অতঃপর একটা আওয়াজ শোনা গেল বলছিলঃ
لا سیف الا ذوالفقار و لا فتی الا علی
অর্থাৎ যদি কোন তরবারি থাকে তাহলে তা হচ্ছে আলীর তরবারি জুলফিকার আর সাহসী যুবক যদি থাকে তাহলে সে হচ্ছে আলী।
খন্দকের যুদ্ধের দিন আমিরুল মু’
মিনীন আলী (আ.)-এরই তলোয়ার যুদ্ধের পরিস্থিতিকে মুহূর্তের মধ্যে পরিবর্তিত করে দিয়েছিল ও মুশরিক সাহসী যোদ্ধা আমর ইবনে আবু দাউদ-যার হুঙ্কার মুসলিম সৈন্যদের হৃদয়কে প্রকম্পিত করেছিল-তাকে পরাজিত করেছিল। আর ঐ ঘটনার পর কাফেররা এমন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়েছিল যে , সকলেই বাধ্য হয়েছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে মদীনা থেকে পলায়ন করতে আর সেই থেকে মদীনাতুন নবী (নবীর শহর) তাদের অনিষ্ট হতে চিরদিনের মত রক্ষা পেয়েছিল। তার ঐ সাহসী ভুমিকার স্বীকৃতি ও পুরস্কার স্বরূপ চিরস্মরণীয় যে বাণী রাসূল (সা.) তার প্রশংসায় উচ্চারণ করেছিলেন তা হলঃ খন্দক যুদ্ধের দিন আলীর তরবারির এক আঘাত আমার সমস্ত উম্মতের কিয়ামত পর্যন্ত সম্পাদন করা সকল উত্তম আমলের (কর্মের) চেয়েও শ্রেষ্ঠ এই বাণীটি বীরত্বের পদক স্বরূপ তার গলায় কিয়ামত পর্যন্ত শোভা পাবে।
যখন আলী (আ.) রণক্ষেত্রের দিকে যাচ্ছিলেন , রাসূল (সা.) বলছিলেনঃ সমগ্র ইসলাম সমগ্র কুফরী শক্তির মোকাবিলার জন্য ময়দানে যাচ্ছে।
সে সময় জিব্রাইল (আ.) অবতীর্ণ হয়ে পাঠ করলেনঃ
)
و
َرَدَّ اللَّـهُ الَّذِينَ كَفَرُوا بِغَيْظِهِمْ لَمْ يَنَالُوا خَيْرًا ۚ وَكَفَى اللَّـهُ الْمُؤْمِنِينَ الْقِتَالَ(
অর্থাৎ“
আল্লাহ কাফিরদেকে ক্রুদ্ধাবস্থায় ফিরিয়ে দিলেন। তারা কোন কল্যাণই পায়নি। যুদ্ধে মুমিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।”
আমিরুল মু’
মিনীন আলী (আ.)-এর শানে অবতীর্ণ এই আয়াতটি এতই প্রসিদ্ধ ছিল যে , দুররুল মানসুরে সুয়ূতির বর্ণনানুসারে ইবনে মাসউদ , যিনি রাসূল (সা.)-এর একজন প্রসিদ্ধ সাহাবী ও কোরআনের কারী ছিলেন ,
)
و
َكَفَى اللَّـهُ الْمُؤْمِنِينَ الْقِتَالَ(
আয়াতটিকে এভাবে পাঠ করতেন-
و کفی اللّه المؤمنین القتال بعلی
অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা আলীর মাধ্যমে মুমিনদেরকে যুদ্ধ করা হতে রেহাই দিয়েছেন।
ইবনে মাসউদের এই আয়াতের সাথে এ অংশ জুড়ে দেওয়া থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে , আমিরুল মু’
মিনীন আলী (আ.)-এর সম্পর্কে অবতীর্ণ আয়াতটি তার নিকট কতটা সুস্পষ্ট ছিল।
খায়বার হল অপর একটি ঘটনা , যাতে আলী (আ.)-এর উপস্থিতি ভাগ্যনির্ধারক ভূমিকা রেখেছিল। তিনি যদি খায়বারে উপস্থিত না থাকতেন তবে ইসলাম খায়বারের দরজাতেই থমকে যেত এবং মুসলিম সৈন্যদল ব্যর্থ হয়ে মদীনায় ফিরে যেত। এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ইহুদীরা ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে কিরূপ আচরণ করতো তা সহজেই বোধগম্য। পর পর দু’
দিন মুসলিম সেনারা ভিন্ন ভিন্ন সেনাপতির নেতৃত্বে ইহুদীদের মোকাবেলায় পরাজিত হয়ে রণাঙ্গন ছেড়ে পালিয়ে এসেছিল।
দ্বিতীয় দিন রাসূল (সা.) সকল সৈন্যদের উদ্দেশ্যে বললেনঃ আগামীকাল এই যুদ্ধ পতাকা এমন এক ব্যক্তির হাতে দিব , যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালবাসে এবং আল্লাহ ও তার রাসূলও তাকে ভালবাসে ; সে এমন আক্রমণকারী , যে কখনো যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়ন করে নি। ঐ রাতে সকলের এই প্রত্যাশা ছিল যে , আগামীকাল রাসূল (সা.) যেন তার হাতেই যুদ্ধ পতাকাটি অর্পন করেন। কিন্তু সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাসূল (সা.) আলীকে তলব করলেন। তারা সকলেই বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আলী চোখে ব্যথা অনুভব করছে। তিনি বললেনঃ তাকে এখানে নিয়ে এসো। আলীকে আনা হলো । তিনি স্বীয় মুখের লালা আলীর চোখে লাগিয়ে দিলেন এবং যুদ্ধ পতাকাটি তার হাতে দিয়ে তাকে রণক্ষেত্রে পাঠিয়ে দিলেন আর সেই সুস্পষ্ট বিজয় যা ইতিহাস খ্যাত সেটা তার মাধ্যমেই অর্জিত হল এবং জাজিরাতুল আরবে (আরব ভূখণ্ডে)ইহুদীদের উপস্থিতির সমস্যাটি চিরকালের জন্যে সমাধান হয়ে গেল।
উক্ত যুদ্ধের দিনে আলী (আ.)-এর হাত থেকে যুদ্ধের ঢাল পড়ে গেলে তিনি খায়বারের দূর্গের একটি দরজাকে উপড়ে ফেলেন এবং যুদ্ধের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। যুদ্ধ সমাপ্ত হওয়ার পর সৈন্যগণ ঐ দরজাটি পরীক্ষামূলকভাবে উঠানোর চেষ্টা করে বুঝতে পারলেন যে , দরজাটি বহন করার জন্য 40 জন (চল্লিশ জন)
এবং তা খোলা ও বন্ধ করার জন্যে 8 জনের (আট জনের) প্রয়োজন।
হুনাইনের যুদ্ধের দিন মুসলিম সৈন্যগণ যখন পলায়ন করেছিল এবং রাসূলকে (সা.) একাকী রেখে গিয়েছিল তখন শুধুমাত্র 3 জন (তিনজন) বীর যোদ্ধা ময়দানে অবস্থান করছিলেন। আর তারা হলেন- 1. রাসূল (সা.)-এর চাচা হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মোত্তালিব , 2. চাচাতো ভাই আবু সুফিয়ান ইবনে হারিস এবং 3. আমিরুল মু’
মিনীন আলী ইবনে আবী তালিব (আ.)। সেদিন তিনি অত্যন্ত সাহসীকতার সাথে রাসূল (সা.)-এর পাশে দাড়িয়ে যুদ্ধ করছিলেন এবং স্বীয় জীবন বাজি রেখে মহানবীর জীবন রক্ষা করছিলেন যাতে যুদ্ধের ফলাফল ইসলামের অনুকূলে প্রত্যাবর্তন করে।
ইতিপূর্বে মক্কা বিজয়ের দিনও আলী রাসূল (সা.)-এর কাধে উঠে মূর্তি ভাঙ্গার মাধ্যমে কাবা ঘরকে মূর্তি মুক্ত করে পবিত্র করার সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন।
উল্লেখ্য যে , আলী (আ.) শুধুমাত্র তাবকু যুদ্ধ ব্যতীত- যে যুদ্ধে স্বয়ং রাসূল (সা.)-এর নির্দেশে তিনি মদীনায় ছিলেন- সকল যুদ্ধে অংশ গ্রহণের কৃতিত্ব লাভ করেছিলেন।
হযরত ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেনঃ প্রত্যেকটি যুদ্ধে রাসূল (সা.)-এর পতাকা বহনের দায়িত্ব আলী (আ.)-এর কাধেই ছিল।
এ কারণেই আলী (আ.)-এর অস্তিত্ব ছিল রাসূল (সা.)-এর অস্তিত্বের অনুমোদনকারী ও সাহায্যকারী হিসেবে।
রাসূল (সা.) বলেছেনঃ
لما عرج بی رایت علی ساق العرش مکتوبا لا اله الا اللّه محمد رسول اللّه ایدته بعلی نصرته بعلی
অর্থাৎ যখন আমাকে মি’
রাজে (ঊর্ধ্বগমণে) নিয়ে যাওয়া হয় তখন আমি সেখানে দেখেছিলাম যে আরশে লেখা আছেঃ আল্লাহ ছাড়া কোন মাবদু (উপাস্য) নেই , মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল। তাকে আলীর মাধ্যমে অনুমোদন করেছি এবং তার মাধ্যমেই তাকে (রাসূলকে) সাহায্য করেছি।
6. ঘনিষ্ঠতা
রাসূল (সা.)-এর সাথে ঘনিষ্ঠতা ও নৈকট্যের বিষয়টি অন্যতম একটি বিষয় ইসলামী ইতিহাসে খলিফা নির্বাচনের সময় যেটাকে একটা দলিল হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এটা এত বেশী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল যে , সম্ভবতঃ এমন কাউকে খুজে পাওয়া যাবে না যিনি খলিফা হওয়ার যুক্তি হিসেবে রাসূল (সা.)-এর সাথে ঘনিষ্ঠতার দাবী তুলে ধরেনি।
উক্ত বৈশিষ্ট্যটি সাকিফায়ে বনী সায়েদা’
তেও খলিফা নির্বাচনের মানদণ্ড হিসেবে উপস্থিত ও বিবেচিত হয়েছিল। মুহাজিরগণ (হিজরতকারী) যারা‘
সাকিফায়ে বনী সায়েদা’
তে উপস্থিত ছিলেন তারা রাসূল (সা.)-এর সাথে নিজেদের আত্মীয়তার সম্পর্কের বিষয়টিকে দলিল-প্রমাণ হিসেবে উত্থাপন করছিল এবং উক্ত দলিলের ভিত্তিতেই আনসারদেরকে (সাহায্যকারীদেরকে) সা’
দ ইবনে উবাদা’
র সাথে বাইয়াত করা থেকে বিরত রেখেছিল।
আমরাও এরূপ বিশ্বাস করি যে , রাসূল (সা.)-এর সাথে ঘনিষ্ঠতা ও নৈকট্যের বিষয়টি খলিফা বা প্রতিনিধি হওয়ার একটি অন্যতম শর্ত। কিন্তু শুধুমাত্র বাহ্যিক আত্মীয়তাই এ জন্য যথেষ্ট নয় যা সাকিফার আয়োজকরা মনে করেছিল। যদিও আমিরুল মু’
মিনীন আলী (আ.) বাহ্যিকভাবেও রাসূল (সা.)-এর সবচেয়ে বেশী ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি একাধারে রাসূল (সা.)-এর চাচাতো ভাই , জামাতা ও ভাই ছিলেন। মুসলমানদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি নেই যে একসাথে এই তিন’
টি সম্পর্কের অধিকারী ছিল। আলী (আ.) রাসূল (সা.)-এর চাচাতো ভাই ছিলেন এবং তিনি রাসূল (সা.)-এর চাচা আবু তালিবের সন্তান যার (আবু তালিবের) সাথে রাসূল (সা.)-এর সম্পর্ক পিতা-পুত্রের মত ছিল। হযরত আবু তালিব ইসলাম ও রাসূলকে (সা.) রক্ষার জন্য নিজের জীবনকে সপে দিয়েছিলেন এবং তার সমগ্র জীবনকে এ পথে অতিবাহিত করেছেন , জীবনের কঠিনতম মুহূর্তে ও রাসূল (সা.)-এর সাহায্য করা থেকে বিরত থাকেন নি।
তিনি (আলী) রাসূল (সা.)-এর জামাতা ছিলেন অর্থাৎ রাসূল (সা.)-এর প্রিয়তম কন্যা হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.)-এর স্বামী ছিলেন।
সাহাবীদের মধ্যে যারাই তাকে বিবাহের প্রস্তাব পেশ করেছেন , রাসূল (সা.) তাদের প্রত্যকের প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছেন যাতে তাকে আলী (আ.)-এর সাথে বিবাহ দিতে পারেন।
তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে , যেন আমি ফাতিমাকে আলীর সাথে বিবাহ দিই।
আলী (আ.) হচ্ছে সেই ব্যক্তি রাসূল (সা.) যাকে সকল আনসার (সাহায্যকারী) ও মুহাজিরের (হিজরতকারীর) মধ্য থেকে নিজের ভ্রাতার মর্যাদায় ভূষিত করেন।
তিনি বলেছেনঃ
انت اخی فی الدنیا و الاخره
অর্থাৎ হে আলী! দুনিয়াতে ও আখেরাতে তুমিই আমার ভাই।
তিনি আরো বলেছেনঃ
انت اخی و صاحبی
অর্থাৎ তুমি আমার ভাই ও সাথি।
রাসূল (সা.) কখনো কখনো তাকে নিজের ভাই বলে সম্বোধন করতেন , কখনো নিজের আত্মীয় হিসেবে আবার কখনো নিজের আহলে বাইত অর্থাৎ পরিবারের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করতেন।
পবিত্র কোরআনে যখন মুসলমানদেরকে রাসূল (সা.)-এর রেসালাতের (নবুয়্যতি দায়িত্বের) পারিশ্রমিক হিসাবে তার পরিবারবর্গকে সৈৗহার্দ্যপূর্ণ ভালবাসা দেখাতে বলে আয়াত অবতীর্ণ হল যে ,
)
ق
ُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَىٰ(
অর্থাৎ (হে আমার প্রিয় রাসূল! মুসলমানদেরকে) বলুন , আমার নবুয়্যতি দায়িত্বের পারিশ্রমিক হিসেবে তোমাদের কাছে কিছুই চাই না শুধুমাত্র আমার পরিবারবর্গের প্রতি সৈৗহার্দ্যপূর্ণ ভালবাসা ব্যতীত।
সাহাবীগণ তখন তাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! কারা আপনার পরিবারবর্গ ? তিনি বললেনঃ আলী , ফাতিমা ও তাদের দুই সন্তান (হাসান ও হোসাইন)।
হ্যাঁ , আলী (আ.) রাসূল (সা.)-এর নিকটতম আত্মীয় হওয়ার কারণে তিনি নিজে যেমন গর্বিত ছিলেন সাহাবীগণও তেমনি রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে তার নৈকট্যের বিষয়টিকে স্বীকার করতেন। খলিফা নির্বাচনের দিন তিনি দ্বিতীয় খলিফা মনোনীত পরামর্শ পরিষদের সদস্যদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেনঃ তোমাদেরকে আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি! তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে যে রাসূল (সা.)-এর নিকটাত্মীয় হওয়ার ক্ষেত্রে আমার চেয়েও নিকট ? তারা সবাই সমস্বরে বললেনঃ আল্লাহর শপথ , না এমন কেউ নেই।
কিন্তু রাসূল (সা.)-এর সাথে হযরত আলী (আ.)-এর ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি এর থেকেও গভীর ও নিবিড় একটি বিষয়। কারণ তিনি শুধুমাত্র রাসূল (সা.)-এর নিকটাত্মীয়ই নন বরং তার আহলে বাইতও বটে।
যখন আয়াতে তাতহীর (পবিত্রতার আয়াত)
অবতীর্ণ হল , রাসূল (সা.) আলী , ফাতিমা , হাসান ও হোসাঈনকে (আ.) নিজের কাছে ডাকলেন এবং বললেনঃ হে আল্লাহ! এরাই আমার আহলে বাইত বা পরিবারবর্গ।
সকল মুসলমান যাতে জানতে পারে যে , কারা রাসূল (সা.)-এর আহলে বাইত , তাই যখন কোরআনের এই পবিত্র আয়াতটি অবতীর্ণ হলো যে ,
)
و
َأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا(
অর্থাৎ“
আপনি আপনার পরিবারবর্গকে নামাজের জন্য আদেশ করুন এবং আপনি নিজেও তার প্রতি অবিচল থাকুন।”
এরপর তিনি কয়েক মাস যাবৎ প্রতিদিন সকালে তাদের ঘরের সামনে আসতেন আর দাড়িয়ে বলতেনঃ নামাজের সময় হয়েছে। আল্লাহ তোমাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন।
)
إ
ِنَّمَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا(
অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহ চান , হে আহলে বাইত তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূত-পবিত্র করতে।
উক্ত আয়াত পাঠ করার মধ্যে স্বয়ং অন্য একটি ব্যাখ্যা ছিল। আর তা হচ্ছে- সবাই যেন জানতে পারে যে রাসূল (সা.)-এর আহলে বাইত কারা ?
যখন আলীকে (আ.) আবু বকরের কাছ থেকে সূরা বারাআত (সূরা তওবা) নিয়ে মক্কায় হজ্জ অনুষ্ঠানে প্রচার করার নির্দেশ দিয়ে পাঠিয়েছিলেন , তখন তিনি এই কাজের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছিলেন যে ,
لا یبلغها الارجل من اهلی
অর্থাৎ (এই সূরাটি)আমার পরিবারবর্গের কোন সদস্য ব্যতীত অন্য কেউ যেন প্রচার না করে।
হ্যাঁ , আলী (আ.) যেমন রাসূল (সা.)-এর নিকটতম আত্মীয় তেমনি আবার আহলে বাইতও। কিন্তু রাসূল (সা.)-এর সাথে ঘনিষ্ঠতার ক্ষেত্রে তার এই অর্থেরও অনেক উর্ধ্বের একটি সম্পর্ক রয়েছে যেটাকে আমরা খলিফা হওয়ার একটা শর্ত হিসেবে মনেকরি। ঐ ঘনিষ্ঠতা খেলাফতের একটা শর্ত যেটা দু’
পক্ষের সম্পর্ককে এতটা এক করে দেয় যে তাতে তাদের মধ্যে আর কোন দ্বৈত্বতা থাকে না এবং পরস্পর একক সত্তায় পরিণত হয়ে যায় ফলে নৈকট্য ও ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি উপস্থাপনের প্রয়োজনই পড়ে না। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছেঃ
)
ف
َقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنفُسَنَا وَأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَتَ اللَّـهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ(
অর্থাৎ বল! এসো আমরা আহবান করি আমাদের সন্তানদের এবং তোমরা তোমাদের সন্তানদের আর আমাদের নারীদের ও তোমাদের নারীদের এবং আমাদের নিজদিগকে ও তোমাদের নিজদিগকে...।”
এ আয়াতের প্রেক্ষাপটে আল্লাহর নির্দেশে রাসূল (সা.) তার সন্তানদেরকে , নারীদেরকে ও নিজদিগকে ডাকতে এবং নাজরানের খৃষ্টানদেরকে মোবাহেলার (একে অপরের উপর অভিশাপ কামনা করে দোয়া করার) জন্য আহবান করতে হয়েছিল। তিনি হাসান , হোসাঈন , আলী ও ফাতিমাকে সাথে নিয়ে এসেছিলেন যাতে সকলেই অবগত থাকে যে , ঐ“
নিজদিগ”
হিসেবে যাকে আহবান করা হয়েছে সে হচ্ছে আলী (আ.)। আর আলীই হচ্ছে রাসূল (সা.)-এর‘
নাফস বা আপনসত্তা’
।
শুরার দিন (নির্বাচনের দিন) তিনি বলেছিলেনঃ তোমাদেরকে আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি , বল! তোমাদের মাঝে এমন কেউ কি আছে যাকে রাসূল (সা.) আপন মর্যাদায় ভূষিত করেছেন (নিজের সত্তা বলে অভিহিত করেছেন) ? তারাঁ সকলেই জবাবে বললেনঃ আল্লাহর শপথ , না নেই।
ঠিক এ কারণেই রাসূল (সা.) বলতেনঃ
علی منی و انا منه لا یؤدی عنی الا انا او علی
অর্থাৎ আলী আমা হতে আর আমি আলী হতে। আমি এবং আলী ব্যতীত কেউ যেন আমার বাণী না পৌছায়।
তিনি আরো বলতেনঃ
لحمه لحمی و دمه دمی
অর্থাৎ তার (আলীর) রক্ত-মাংস , আমার রক্ত-মাংস।
কাফেরদের হুমকির জবাবে তিনি বলেছিলেনঃ এমন ব্যক্তিকে তাদের কাছে পাঠাবো যে হবে ঠিক আমার মতই।
এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল যে , রাসূল (সা.)-এর অন্তরে আলীর মর্যাদা কতখানি। তিনি তার উত্তরে সাহাবীদের দিকে ফিরে বলেছিলেনঃ এই ব্যক্তি আমার নিজের অন্তরে আমার নিজের মর্যাদা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে।
রাসূল (সা.)-এর সাথে নৈকট্যের দৃষ্টিতে আলী (আ.)-এর সঙ্গে অন্যদের তুলনা করতে গেলে বোঝা যায় আলী (আ.) ব্যতীত অন্য সকলেই রাসূল (সা.)-এর অপরিচিত বা পর। যদি রাসূল (সা.)-এর সাথে আত্মীয়তা বা ঘনিষ্ঠতা খলিফা হওয়ার শর্তসমূহের মধ্যে একটি শর্ত হয়ে থাকে তাহলে আলী (আ.)-এর বর্তমানে খেলাফতের দায়িত্ব অন্য কারো উপর অর্পিত হতে পারে না কারণ , আলী (আ.)-এর উপস্থিতিতে তাদের পালা আসার প্রশ্নই আসে না।
7. আত্ম সংযম
ইসলামী রাষ্ট্রে রাসূল (সা.)-এর খলিফা বা স্থলাভিষিক্তের অবস্থান হচ্ছে ক্ষমতার শীর্ষস্থানে । সকল জাতীয় ও সাধারণ সম্পদ থাকবে তার অধীনে এবং তিনি যে কোন অবস্থায় , যে কোন সময় সেই সম্পদ ব্যবহার ও খরচ করতে পারবেন। তাই একজন ইসলামী রাষ্ট্রের নেতার ন্যায়পরায়ণতা ও ইনসাফ হতে দূরে সরানোর ও তার শক্তি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার মাধ্যমে সম্পদ পূঞ্জিভূত করার জন্য দুনিয়ার প্রতি সামান্যতম আসক্তিই যথেষ্ট। ইসলামী রাষ্ট্রের এ ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। অনেকেই রাসূল (সা.)-এর খলিফা বা প্রতিনিধির নাম ধারণ করে রাষ্ট্রের নেতৃত্বের আসনে বসেছে কিন্তু জনগণের সাথে রোম ও পারসে সম্রাটদের ন্যায় আচরণ করেছে। সুতরাং ইসলামী রাষ্ট্রের একজন নেতার যে সকল গুণাবলী থাকা অত্যাবশ্যক ও অপরিহার্য তার একটি হচ্ছে- আত্ম সংযম ও দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্ততা।
আমিরুল মু’
মিনীন আলী (আ.)-এর আত্ম সংযম সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেনঃ
یا علی ان اللّه قد زینک بزینه لم یزین العباد بزینه احب منها و هی زینه الا برار عند اللّه و هی الزهد فی الدنیا فجعلک لا ترز من الدنیا شیئا و لا ترز الدنیا منک شیئا
অর্থাৎ হে আলী! আল্লাহ তোমাকে এমন একটি সৌন্দর্য দান করেছেন , যার থেকে উত্তম ও পছন্দণীয় কোন সৌন্দর্য তিনি তাঁর বান্দাদের দান করেন নি আর তা হচ্ছে- সৎকর্মশীলদের সৌন্দর্য অর্থাৎ দুনিয়াতে আত্ম সংযমী হয়ে থাকা। মহান আল্লাহ তোমাকে এমনরূপে সৃষ্টি করেছেন যে , দুনিয়া হতে তোমার কোন মুনাফা অর্জনের প্রয়োজন নেই এবং দুনিয়াও তোমার (মর্যাদার) কিছুই কমাতে পারবে না।
তার আত্ম সংযমের বিষয়টি সার্বিকভাবে তার খিলাফতকালের পূর্বের ও পরের সকল পর্যায়ে এমনই এক বহিঃপ্রকাশ ছিল যা এক কিংবদন্তী ও অলৌকিক বিষয়। এবার তার জীবনের অত্যুজ্জ্বল আত্ম সংযমের কয়েকটি নমুনা তুলে ধরবো যা দুনিয়ার প্রতি তার নিরাসক্তির স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।
আমিরুল মু’
মিনীন আলী (আ.)-এর খেলাফতকালে যখন ইসলামী রাষ্ট্রের সমস্ত ধন-সম্পদ তার অধীনে ছিল তখনও তিনি ছেড়া-তালি দেওয়া পোশাক পরিধান করতেন।
শুকনো ও শক্ত রুটি এবং অতি সাধারণ খাবার খেতেন , পরিবার-পরিজনের জীবিকা নির্বাহের জন্যে নিজের হাতে কষ্ট করে রুজি উপার্জন করতেন , আর তা দিয়েই সংসার পরিচালনা করতেন।
সুয়াইদ ইবনে গাফালাহ বর্ণনা করেছেনঃ দারুল ইমারাতে (রাষ্ট্রিয় কার্যালয়ে) আলী ইবনে আবী তালিবের কাছে উপস্থিত হলাম। সেখানে দেখলাম যে , তিনি বসে আছেন আর তার সামনে একটি টক দুধ-এর পাত্র রাখা আছে যার ঘ্রাণ দূর হতেই পাওয়া যাচ্ছিল আর তার হাতে ছিল এক টুকরো রুটি যা দেখে যবের খোসার রুটি বলে মনে হল। রুটিটা কখনো হাত দিয়ে আবার কখনো বা হাটুর সাহায্য নিয়ে টুকরো টুকরো করছিলেন এবং তা দুধে ডুবাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় আমাকে যখন দেখলেন , বললেনঃ কাছে এসো ও আমাদের সাথে খাবারের সাথি হও। আমি বললামঃ রোজা রেখেছি। তিনি বললেনঃ আমি রাসূল (সা.) হতে শুনেছি যে , তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রোজা রাখার কারণে নিজের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ঐ সকল প্রিয় বস্তু খাওয়া হতে বিরত থাকে , আল্লাহ তায়ালা নিজের উপর অপরিহার্য করেন , তাকে বেহেশতের খাবার ও পানীয় দ্বারা পরিতৃপ্ত করাকে।
সুয়াইদ বলেনঃ তার কানিজ বা দাসী সেখানে উপস্থিত ছিল , তাকে বললামঃ কেন এই বৃদ্ধলোকটির অধিকারের ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় পাওনা ? কেন তার রুটির আটাগুলি চালুনি দিয়ে ছেকে মসৃণ কর না ও এই মোটা দানাগুলি তা থেকে আলাদা কর না ? সে বললঃ তিনি আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন কখনো আমরা তার রুটির আটাগুলি চালুনি দিয়ে না ছাকি । তিনি আমাদের কথা-বার্তা বুঝতে পারলেন ও বললেনঃ তাকে তুমি কি বলছিলে ? আমি আমার কথাগুলির পুনরাবৃত্তি করলাম। তিনি আমার প্রশ্নের উত্তরে বললেনঃ আমার পিতা-মাতা তাদের প্রতি উৎসর্গ হউক যিনি কখনো রুটির আটা চালুনি দিয়ে চালোনি এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কখনোই একাধারে তিনদিন গমের আটার রুটি দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করেননি।
ইমাম এখানে রাসূল (সা.)-এর জীবনীর প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।
অপর একজন বলেছেনঃ কোরবানীর ঈদের দিন অর্থাৎ ঈদুল আযহার দিন আমি হযরত আলী (আ.)-এর কাছে উপস্থিত হলাম। তিনি গোস্তের তরকারী দিয়ে আমাকে খেতে বললেন। আমি বললামঃ আল্লাহ আপনাকে এত নিয়ামত দান করেছেন সবচেয়ে ভাল হত যদি আমার জন্য হাসের গোশতের ব্যবস্থা করতেন। তিনি বললেনঃ আমি রাসূল (সা.) হতে শুনেছি , তিনি বলেছেনঃ আল্লাহর সম্পদের মধ্যে দুই পেয়ালা ব্যতীত খলিফাদের কোন অধিকার নাই। এক পেয়ালা নিজের ও পরিবারের খাওয়ার জন্য এবং এক পেয়ালা মেহমানকে খাওয়ানোর জন্য।
উক্ত পবিত্র বাক্যবলী হতে এটাই প্রমাণিত হয় যে , তার শাসন পরিচালনা ও গণমুখিতা সবকিছুই তিনি রাসূল (সা.)-এর নিকট থেকে শিক্ষালাভ করেছেন এবং সবকিছুর ক্ষেত্রে তিনি তারই অনুসরণ করেন। যা কিছুই তার ভিতর আমরা দেখতে পাই তা তার ব্যক্তিগত জীবনে হউক বা সামাজিক জীবনেই হউক প্রত্যেকটি শিক্ষণীয় ছিল যা তিনি 23 বছর (তেইশ বছর) ধরে রাসূল (সা.)-এর নিকট থেকে শিক্ষালাভ করেছেন।
অনেকে লিখেছেনঃ তার জন্য উপঢৌকন হিসেবে ফালুদা আনা হল। তিনি ফালুদার পাত্রটি সামনে রেখে তার দিকে তাকিয়ে বললেনঃ যদিও সুন্দর , সুস্বাদু ও সুগন্ধময় খাবার। কিন্তু এটা খাওয়ার অভ্যাস আমার নেই। আর যা খাওয়ার অভ্যাস আমার নেই , তা আমি অভ্যাসও করতে চাই না।
তার খেলাফতকালে তাকে দেখেছি যে , তিনি কুফার বাজারে একটি তলোয়ার বিক্রির জন্য প্রদর্শন করছিলেন এবং বলছিলেনঃ কে এই তলোয়ারটি কিনতে চায় ? আল্লাহর শপথ! এই তলোয়ার দিয়েই আমি অনেক বার রাসূল (সা.)-এর চেহারা থেকে দুঃখ-কষ্টের ধূলা-বালি মুছে দিয়েছি (দুঃখ-কষ্ট দূর করেছি)। যদি আমার নিকট এক টুকরো কাপড় ক্রয়ের টাকা থাকত তাহলে আমি এটা কখনোই বিক্রি করতাম না।
যখন তিনি ক্ষুধার জ্বালায় পেটে পাথর বাধতেন , তখনও তার ওয়াকফ্ করা সম্পদ থেকে বাৎসরিক যে আয় হত তার পরিমাণ ছিল 40 হাজার (চল্লিশ হাজার) দীনার।
তাকে কুফার বাজারে দেখেছি , পরিবার-পরিজনের জন্য খেজুর কিনে পোটলা বেধে পিঠে বহন করে নিয়ে যেতে। তাকে সাহায্য করার জন্য অনেকেই ছুটে এসেছেন এবং তার কাছে আবেদনও করেছেন ঐগুলি বাড়িতে পৌছে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি বলেছিলেনঃ পরিবারের পিতাই এসব বহনের জন্য সবার চেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি।
এসব কারণেই যখন উমাইয়া খলিফা আব্দুল আজিজের নিকট আত্ম সংযমের কথা বলা হচ্ছিল ও আত্ম সংযমীদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের নাম নেওয়া হচ্ছিল তখন তিনি বলেছিলেন যে , পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ আত্ম সংযমী হলেন আলী ইবনে আবী তালিব (আ.)।
তার ওয়াকক করা সম্পত্তির আয়ের বিষয়টি ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে , প্রতি দীনার গড়ে 18 নূকুদু অর্থাৎ 3.7 গ্রাম সোনা। অতএব , 40 হাজার (চল্লিশ হাজার) দীনারের মধ্যে 30 হাজার (ত্রিশ হাজার) মিসকাল অর্থাৎ 150 কেজি সোনা। যদি সোনাকে কমপক্ষে আজকের বাজারের (বইটির প্রকাশকালে) সাথে তুলনা করি অর্থাৎ প্রতি মিসকাল 160 ,000 ইরানী রিয়াল হিসেবে ধরি তাহলে তার বাৎসরিক উপার্জন দাড়ায়- 4 ,800 ,000 ,000 ,000 রিয়াল (ইরানী) অর্থাৎ 350 কোটি টাকার সমান।