জ্ঞানতত্ত্ব ও ইসলাম

জ্ঞানতত্ত্ব ও ইসলাম0%

জ্ঞানতত্ত্ব ও ইসলাম লেখক:
প্রকাশক: -
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

জ্ঞানতত্ত্ব ও ইসলাম

লেখক: নূর হোসেন মজিদী
প্রকাশক: -
বিভাগ:

ভিজিট: 8463
ডাউনলোড: 2946

জ্ঞানতত্ত্ব ও ইসলাম
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 30 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 8463 / ডাউনলোড: 2946
সাইজ সাইজ সাইজ
জ্ঞানতত্ত্ব ও ইসলাম

জ্ঞানতত্ত্ব ও ইসলাম

লেখক:
প্রকাশক: -
বাংলা

জ্ঞানতত্ত্ব সম্বন্ধে যথেষ্ট জানার আছে এবং লেখক , সাংবাদিক ও জ্ঞানগবেষকদের জন্য এ বিষয়ে বিস্তারিত অধ্যয়নের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি। এ পুস্তকে এ বিষয়ে ন্যূনতম ধারণা দেয়া হয়েছে মাত্র। আশা করি এ পুস্তক পাঠক-পাঠিকাদের মধ্যে এ বিষয়ে অধিকতর অধ্যয়নের আগ্রহ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। আর তাহলেই অত্র পুস্তকের সফলতা।

জ্ঞানের পথে প্রতিবন্ধকতা

বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার কারণে মানুষের কোনো জ্ঞানমাধ্যম যথাযথভাবে কাজ না-ও করতে পারে। সে ক্ষেত্রে ব্যক্তির পক্ষে ঐ মাধ্যমের সাহায্যে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হয় না।

এ ক্ষেত্রে প্রথমেই সহজাত জ্ঞানের কথা চিন্তা করা যেতে পারে। উল্লেখ্য , সহজাত জ্ঞানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এমন যে , কোনোরূপ প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিজে নিজেই তা ব্যক্তির মধ্যে সঞ্চারিত হয়। অবশ্য এ জন্য একদিকে যেমন ব্যক্তির প্রকৃতি অবিকৃত থাকতে হবে , অন্যদিকে একটি বিশেষ সহজাত জ্ঞান ব্যক্তির মধ্যে সঞ্চারিত হবার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পূরণ হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ , যৌন জ্ঞানের অধিকারী হবার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট বয়সে উপনীত হওয়া অপরিহার্য ; এর আগে মানবসন্তানের মধ্যে এতদ্বিষয়ক জ্ঞানের উদয় হয় না। কিন্তু কোনো কারণে , যেমন: বয়স হওয়া সত্ত্বেও কোনো শারীরিক বা মানসিক ব্যাধির কারণে কারো মধ্যে যৌনতার জ্ঞানের উদয় না-ও হতে পারে।

ইন্দ্রিয়নিচয়ের দ্বারা আহরণযোগ্য জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রেও শারীরিক বা মানসিক রোগব্যাধি অথবা অঙ্গহানি-অবস্থা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ বাধার ফলে কোনো জ্ঞান অর্জন করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ , যে ব্যক্তি জন্মান্ধ তার পক্ষে রং সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয়। তেমনি জন্মবধিরের পক্ষে শব্দ ও সুর সংক্রান্ত জ্ঞান লাভ করা অসম্ভব। অন্যদিকে কারো চোখে এমন ত্রুটি থাকতে পারে যার ফলে সে কোনো কোনো রং-কে বা কোনো কোনো বস্তুর আকারকে বিকৃতরূপে দেখতে পারে এবং তার মনে হতে পারে যে , এ বস্তুগুলোর রং ও আকৃতি ঐরূপই। এ ধরনের ইন্দ্রিয়সম্পর্কিত প্রতিবন্ধকতা সাময়িক বা স্থায়ী হতে পারে। তবে উপযুক্ত চিকিৎসার দ্বারা সাময়িক প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব হতে পারে।

বিচারবুদ্ধি ও অন্তঃকরণের জ্ঞানার্জনের পথে বাধা হিসেবে কাজ করে প্রবৃত্তির তাড়না , প্রেম-ভালোবাসা , হিংসা-বিদ্বেষ , শত্রুতা , ক্রোধ , ঘৃণা ইত্যাদি মানসিক অবস্থা। মানুষের এ সব বৈশিষ্ট্য সুনির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করে গেলে তথা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে নেতিবাচক অবস্থায় উপনীত হলে তা তার বিচারবুদ্ধি ও অন্তঃকরণের জ্ঞানের পথে সাময়িক বা স্থায়ী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ , ক্রোধের বা ভাবাবেগের সময় কারো কাছে যুক্তিসঙ্গত কথাও অযৌক্তিক বা অগ্রহণযোগ্য বা মিথ্যা মনে হতে পারে। কিন্তু ক্রোধ ও ভাবাবেগ প্রশমিত হবার পর সে ঐ কথাটির যৌক্তিকতা বুঝতে পারে।

তেমনি অন্ধ ভালোবাসার কারণে কারো কাছে কোনো ব্যক্তিকে সমস্ত রকমের দোষত্রুটির উর্ধে অনুপম সুন্দর বা অতুলনীয় গুণাবলীসম্পন্ন বলে মনে হতে পারে। কিন্তু পরে স্বাভাবিকভাবেই তার ভালোবাসার তীব্রতা বা উচ্ছ্বাস হ্রাস পেয়ে বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গির ওপর থেকে প্রতিবন্ধকতা দূরীভূত হয়ে তার কাছে ঐ ব্যক্তির দোষত্রুটিগুলো ধরা পড়তে পারে। অন্যদিকে অন্ধ ঘৃণা-বিদ্বেষের কারণে কারো কাছে এক ব্যক্তিকে সব রকমের উত্তম গুণ থেকে বঞ্চিত জঘন্যতম ব্যক্তি বলে মনে হতে পারে। কিন্তু কালের প্রবাহে তার ঘৃণা-বিদ্বেষের তীব্রতা হ্রাস পাবার পর সে ঐ ব্যক্তির মধ্যে কিছু ভালো গুণও লক্ষ্য করতে পারে।

কিন্তু বিচারবুদ্ধি ও অন্তঃকরণের পথে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা ক্ষেত্রবিশেষে এমন তীব্র হতে পারে যে , তা অপসারিত হবার সম্ভাবনা পুরোপুরি তিরোহিত হয়ে যেতে পারে। তেমনি প্রতিবন্ধকতামূলক কাজের বার বার পুনরাবৃত্তির ফলে তা ব্যক্তির স্থায়ী অভ্যাসে পরিণত হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে এ প্রতিবন্ধকতা আর অপসারিত হবার সম্ভাবনা থাকে না , বরং স্থায়ী রূপ ধারণ করে। দার্শনিক পরিভাষায় একে মালাকাহ্ (ملکة ) বলা হয়। এরূপ অবস্থায় ব্যক্তি একটি ঘৃণ্য কাজেও আনন্দ লাভ করতে পারে। শুধু তা-ই নয় , এ কাজটি তার কাছে আদৌ ঘৃণ্য মনে না-ও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ একজন পাগলের আচরণের কথা বলা যায়। যেমন: একজন পাগল পাগলামির মধ্যে আনন্দ পেতে পারে , বা ধরুন , নির্দ্বিধায় নিজের গায়ে পায়খানা মাখাতে পারে। বিকৃতরুচি লোকদের অবস্থাও অনুরূপ। রুচিবিকৃতির কারণে একজন মানুষ সর্বসমক্ষে অর্ধনগ্ন হতে পারে ; এমনকি কেউ কেউ পুরোপুরি নগ্নও হতে পারে।

প্রাকৃতিক জগত থেকে উদাহরণের সাহায্যেও বিষয়টি বুঝা যেতে পারে। যেমন: কোনো কোনো গাছ গোড়া থেকে কেটে ফেললে গোড়ার যে অংশ মাটির নীচে থাকে তা থেকে নতুন করে গাছ গজায়। কিন্তু নতুন গজানো গাছ যদি বড় হওয়ার আগেই কেটে বা ভেঙ্গে ফেলা হয় এবং এভাবে পুনরাবৃত্তি চলতে থাকে তাহলে এমন একটা সময় আসে যখন আর ঐ গোড়া থেকে নতুন গাছ গজায় না অর্থাৎ গোড়াটি মরে যায়। তেমনি অব্যবহারের কারণে একটি ছুরিতে মরিচা পড়লে প্রাথমিক অবস্থায় রেত দিয়ে ঘষে তার মরিচা দূর করা যায় এবং এভাবে ছুরিটি পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী হয়ে ওঠে। আর বেশী মরিচা ধরলে অর্থাৎ মরিচা ধরা শুরু হওয়ার পর অনেক দিন ছুরিটি একই অবস্থায় পড়ে থাকলে আগুনে পুড়িয়ে মরিচার পুরু স্তর ফেলে দিয়ে এরপর রেত দিয়ে ঘষে সেটিকে ব্যবহারোপযোগী করা যায়। কিন্তু অনেক বেশীদিন পড়ে থাকার ফলে ছুরিটির পুরো ফলাই যদি মরিচায় পরিণত হয়ে যায় তাহলে অতঃপর আর তা ব্যবহারের উপায় থাকে না।

কোরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াতে ক্বালবের অসুস্থতার কথা বলা হয়েছে। যেমন , মুনাফিকদের সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে:

) فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ(

তাদের অন্তঃকরণে ব্যাধি আছে। (সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্: 10)

অন্তর অসুস্থ হলে তার পক্ষে যে অনেক সহজ বিষয়ও অনুধাবন করা সম্ভব হয় না সে কথাও বলা হয়েছে। দোযখের ফেরেশতা-সংখ্যা মাত্র 19 জন ; এ সংখ্যাটিকে কাফেরদের জন্য একটি পরীক্ষাস্বরূপ করার কথা উল্লেখের পর আল্লাহ্ তা আলা এরশাদ করেন:

) وَلِيَقُولَ الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ وَالْكَافِرُونَ مَاذَا أَرَادَ اللَّهُ بِهَذَا مَثَلا(

যাতে যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে তারা এবং কাফেররা বলে যে , আল্লাহ্ এ উপমা দ্বারা কী বুঝাতে চাচ্ছেন ? (সূরাহ্ আল্-মুদ্দাছছির্: 31)

কোরআন মজীদের অন্য এক আয়াতে অন্তরের বক্রতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে ; বলা হয়েছে:الذين فی قلوبهم زيغ - যাদের অন্তঃকরণসমূহে বক্রতা রয়েছে। (সূরাহ্ আালে ইমরান: 7)

এছাড়া অন্তরে মোহর মেরে দেয়ার কথাও বলা হয়েছে ; যেমন , এরশাদ হয়েছে:

) خَتَمَ اللَّهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ وَعَلَى سَمْعِهِمْ وَعَلَى أَبْصَارِهِمْ غِشَاوَةٌ(

আল্লাহ্ তাদের (কাফেরদের) অন্তরসমূহের ওপর ও তাদের শ্রবণশক্তির ওপর মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তাদের দর্শনশক্তির ওপর আবরণ রয়েছে। (সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্: 7)

মানুষের এ অবস্থার জন্য অবশ্য সে নিজেই দায়ী। অন্তঃকরণ ও বিচারবুদ্ধির অনুধাবনক্ষমতার পথে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা যে মানুষের নিজেরই সৃষ্ট কোরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াতে তা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন , এরশাদ হয়েছে:

) أَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ أَفَأَنْتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلًا أَمْ تَحْسَبُ أَنَّ أَكْثَرَهُمْ يَسْمَعُونَ أَوْ يَعْقِلُونَ إِنْ هُمْ إِلَّا كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ سَبِيلًا(

(হে রাসূল!) আপনি কি তাকে দেখেছেন যে তার প্রবৃত্তিকে ইলাহ্ হিসেবে গ্রহণ করেছে ? এরপরও কি আপনি তার যিম্মাদার হবেন ? আপনি কি মনে করেন যে , তাদের বেশীরভাগ লোকই (মনোযোগ দিয়ে/ শোনার মতো করে) শোনে , অথবা (শুনলেও) বিচারবুদ্ধি কাজে লাগায় ? তারা তো পশু ছাড়া কিছু নয় ; বরং পথ বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে অধিকতর বিচ্যুত। (সূরাহ্ আল্-ফুরক্বান্: 43-44)

কোরআন মজীদের দৃষ্টিতে পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণের প্রবণতাও জ্ঞানের পথে অন্যতম বড় বাধা। যেমন , এরশাদ হয়েছে:

) وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنْزَلَ اللَّهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ (170) وَمَثَلُ الَّذِينَ كَفَرُوا كَمَثَلِ الَّذِي يَنْعِقُ بِمَا لَا يَسْمَعُ إِلَّا دُعَاءً وَنِدَاءً صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَعْقِلُونَ(

তাদেরকে যখন বলা হয় যে , আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তার অনুসরণ করো , তখন তারা বলে: আমরা তো তারই অনুসরণ করবো যার ওপরে আমাদের বাপ-দাদাদের পেয়েছি। তাদের বাপ-দাদারা যদি কোনো বিষয়ে বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ না করে থাকে এবং সঠিক পথ প্রাপ্ত না হয়ে থাকে তবুও (কি তারা তাদের বাপ-দাদাদের অনুসরণ করবে) ? আর (এ ধরনের) কাফেরদের উপমা হচ্ছে এরূপ যে , যেন কোনো ব্যক্তি এমন কোনো জীবকে আহবান করছে যে হাঁকডাক ও চীৎকার ছাড়া আর কিছুই শুনতে পায় না (তাৎপর্য বুঝতে পারে না)। তারা বোবা , বধির ও অন্ধ , অতএব , তারা বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করবে না। (সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্: 170-171)

আল্লাহ্ তা আলা যুলুম-অত্যাচারকে সঠিক পথ প্রাপ্তির সম্ভাবনা স্থায়ীভাবে রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এরশাদ হয়েছে:

) وَيُضِلُّ اللَّهُ الظَّالِمِينَ(

আর আল্লাহ্ যালেমদেরকে পথভ্রষ্ট করে দেন। (সূরাহ্ ইবরাহীম: 27)

) وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ سَبِيلٍ(

আর আল্লাহ্ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য (সত্যে উপনীত হওয়ার) কোনো পথই নেই। (সূরাহ্ আশ্-শূরা: 46)

এছাড়া পাপাচারে গভীরভাবে নিমজ্জিত হয়ে যাওয়াও সত্যে বা সঠিক জ্ঞানে উপনীত হবার পথকে রুদ্ধ করে দেয়। আল্লাহ্ তা আলা এরশাদ করেন:

) وَمَا يُضِلُّ بِهِ إِلَّا الْفَاسِقِينَ (26) الَّذِينَ يَنْقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِنْ بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَنْ يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ(

আর তিনি এর (মশা-মাছির উপমা) দ্বারা সেই পাপাচারীদের ব্যতীত কাউকে পথভ্রষ্ট করেন না যারা আল্লাহর সাথে অঙ্গীকারাবদ্ধ হবার পর তা লঙ্ঘন করে এবং আল্লাহ্ যা যুক্ত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তা বিচ্ছিন্ন করে , আর ধরণীর বুকে পাপাচার ও বিশৃঙ্খলা-বিপর্যয় সৃষ্টি করে। (সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্: 26)

জ্ঞানের পথে স্থায়ী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির আরো কতক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে নবী-রাসূলগণের ( আঃ) উদ্দেশে ঠাট্টা-বিদ্রুপ অন্যতম (সূরাহ্ আল্-ফুরক্বান্: 40-44)।

বস্তুতঃ নিজেদের অনুসৃত কর্মনীতি বা কৃতকর্মের ফলে যাদের জন্য সঠিক জ্ঞানে বা সঠিক পথে উপনীত হবার সম্ভাবনা চিরতরে বিনষ্ট হয়ে গেছে এরূপ লোকদের সম্বন্ধেই আল্লাহ্ তা আলা এরশাদ করেছেন:

) إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا سَوَاءٌ عَلَيْهِمْ أَأَنْذَرْتَهُمْ أَمْ لَمْ تُنْذِرْهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ(

নিঃসন্দেহে যারা কুফরী করেছে , (হে রাসূল!) আপনি তাদেরকে সতর্ক করে থাকুন বা না করে থাকুন (উভয়ই) তাদের জন্য সমান ; অতএব , তারা ঈমান আনয়ন করবে না। (সূরাহ্ আল্-বাক্বারাহ্: 6)

তবে জ্ঞানের পথে বিরাজমান অস্থায়ী বা সাময়িক প্রতিবন্ধকতা বিভিন্ন পন্থায় অপসারণ করা সম্ভব। প্রতিবন্ধকতা প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে যথোপযুক্ত ব্যক্তিদের সাহচর্য ও উপদেশ বা যথাযথ গ্রন্থাবলী অধ্যয়নের ফলে দূরীভূত হতে পারে। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা খুবই দৃঢ়মূল হয়ে গেলে (কিন্তু স্থায়ী হয়ে না গিয়ে থাকলে) বিপদাপদ ও বালা-মুছ্বীবতের ফলে তা দূরীভূত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ , কোনো লোহায় অল্পস্বল্প মরিচা পড়লে রেত দ্বারা ঘষে তা দূর করা যেতে পারে। কিন্তু মরিচার মাত্রা খুব বেশী হলে আগুনে পোড়ানো ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। সুতরাং বিপদাপদ ও বালা-মুছ্বীবত যখন কারো সঠিক জ্ঞানে উপনীত হওয়ার পথ থেকে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে ও তার চক্ষু উন্মীলনে সহায়ক হয় তখন কার্যতঃ সে বালা-মুছ্বীবত তার জন্য আল্লাহ্ তা আলার রহমত স্বরূপ।

জ্ঞানমাধ্যম ও জ্ঞানসূত্রের গ্রহণযোগ্যতার ক্রমবিন্যাশ

অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন জ্ঞানমাধ্যম ও জ্ঞানসূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদির মধ্যে সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় জ্ঞানমাধ্যম ও জ্ঞানসূত্র সমূহের মধ্যে অগ্রাধিকারভিত্তিক ক্রমবিন্যাস নির্ণয় করা অপরিহার্য। আর এটা করতে হলে বিভিন্ন জ্ঞানমাধ্যম ও জ্ঞানসূত্রের শক্তিশালী ও দুর্বল দিকের প্রতি দৃষ্টি দেয়া অপরিহার্য।

এ ক্ষেত্রে প্রথমেই আসে সহজাত জ্ঞানের কথা। সহজাত জ্ঞান যেহেতু সর্বজনীন এবং তা যথাসময়ে মানুষের ভিতর থেকেই উৎসারিত হয় সেহেতু এ ধরনের জ্ঞানের সাথে অন্য কোনো জ্ঞানমাধ্যম বা জ্ঞানসূত্র থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানের সাংঘর্ষিকতা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে ; ক্ষেত্রবিশেষে সাংঘর্ষিকতা দেখা দিলেও সহজাত জ্ঞান স্বয়ং অন্য জ্ঞানকে বাতিল করে দেয়। তাই সহজাত জ্ঞানকে আমাদের এ আলোচনার বাইরে রাখতে হবে এবং অন্যান্য জ্ঞানমাধ্যম ও জ্ঞানসূত্রের ভিতরেই পারস্পরিক অগ্রাধিকার বিবেচনা করতে হবে।

আমরা জানি যে , বিচারবুদ্ধি হচ্ছে স্বয়ং জ্ঞানমাধ্যম ও একই সাথে জ্ঞানের উৎসও বটে। অন্যদিকে তা অপরাপর জ্ঞানমাধ্যম ও জ্ঞানসূত্র থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান ও তথ্যাদির পর্যালোচনাকারী বা বিচারক। অবশ্য এ ভূমিকা পালনের জন্য বিচারবুদ্ধির সুস্থ ও অবিকৃত থাকা অপরিহার্য। তবে বিচারবুদ্ধি অসুস্থ বা বিকৃত হয়ে পড়লে তা বিচারবুদ্ধির কাছেই ধরা পড়ে। এমনকি কোনো ব্যক্তির বিচারবুদ্ধি স্বীয় অসুস্থতা ও বিকৃতি সম্পর্কে সচেতন না থাকলেও অন্যদের বিচারবুদ্ধির কাছে তা ধরা পড়তে বাধ্য। তেমনি প্রয়োজনীয় কোনো তথ্যের অভাবে বা অন্য জ্ঞানমাধ্যম ও জ্ঞানসূত্র থেকে ভুল তথ্য পাওয়ার কারণে বিচারবুদ্ধি তার উপসংহারে ভুল করতে পারে। তবে স্বয়ং বিচারবুদ্ধিই বিচারবুদ্ধির ভুল চিহ্নিত করতে পারে। হতে পারে যে , যে বিচারবুদ্ধি ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে সে তার নিজের ভুল বুঝতে পারছে না। কিন্তু অন্যদের বিচারবুদ্ধি তার ভুল ধরিয়ে দিলে তখন সে ঠিকই তা বুঝতে পারে।

আমরা ইতিপূর্বে যেমন উল্লেখ করেছি , ইন্দ্রিয়নিচয় স্রেফ তথ্য সংগ্রহ করে মাত্র ; এ সব তথ্যকে জ্ঞান বলা চলে না। অধিকন্তু তা ভুল তথ্যও সরবরাহ করে থাকে। তাই ইন্দ্রিয়নিচয় কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য কেবল বিচারবুদ্ধির দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা সাপেক্ষেই গ্রহণযোগ্য।

মানুষের অন্তঃকরণে যে সব তথ্যের উদয় হয় তা-ও বিচারবুদ্ধি কর্তৃক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সাপেক্ষে গ্রহণযোগ্য। কারণ , অন্তঃকরণে উদিত হওয়া তথ্যাদি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে এবং তার মধ্যে কোনো কোনো তথ্যে অস্পষ্টতা থাকতে পারে বা ব্যক্তি তা সঠিকভাবে বোঝার ক্ষেত্রে ভুল করতে পারে। শুধু তা-ই নয় , কারো অন্তরে সম্পূর্ণরূপে বিভ্রান্তিকর তথ্যও উদয় হতে পারে। কোরআন মজীদে সুস্পষ্ট ভাষায় এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে:

) وَإِنَّ الشَّيَاطِينَ لَيُوحُونَ إِلَى أَوْلِيَائِهِمْ لِيُجَادِلُوكُمْ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ(

আর অবশ্যই শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে প্রত্যাদেশ (ওয়াহী) করে যাতে তারা তোমাদের সাথে বিতর্ক করে (তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য ধূর্ততার সাথে কূটতর্ক করতে সক্ষম হয়)। তোমরা যদি তাদের আনুগত্য করো তাহলে অবশ্যই তোমরা মুশরিক হয়ে যাবে। (সূরাহ্ আল্-আন্ আাম্: 121)

এ থেকে সুস্পষ্ট যে , শয়তান মানুষের অন্তঃকরণে বিভ্রান্তিকর ভাব ও ধারণা সৃষ্টি করে দিতে পারে। এমনকি সে সব ভাব ও ধারণা বাহ্যতঃ উত্তম ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ , শয়তান কারো অন্তঃকরণে খাতমে নবুওয়াত্ সম্পর্কে কূট ব্যাখ্যা সহ এ মর্মে প্রত্যাদেশ করতে পারে যে , তোমাকে নবীরূপে মনোনীত করা হলো। কোরআন মজীদ ও বিচারবুদ্ধির দৃষ্টিতে যেখানে নবুওয়াতের ধারাবাহিকতা শেষ হয়ে গেছে সেখানে অন্তঃকরণে জাগ্রত এরূপ ধারণাকে অবশ্যই বিচারবুদ্ধির কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। বিচারবুদ্ধি যখন রায় দেয় যে , পূর্ণাঙ্গ বিধান ও কিতাব নাযিল হওয়া ও সংরক্ষিত থাকার পরে আর নতুন কোনো নবীর অভিষিক্ত হওয়া সম্ভব নয় , তখন নিঃসন্দেহে অন্তঃকরণে জাগ্রত এ ধারণাটি শয়তানের পক্ষ থেকে প্রত্যাদেশ করা হয়েছে।

মোদ্দা কথা , অন্তঃকরণে জাগ্রত তথ্যাদি কেবল তখনি গ্রহণযোগ্য যখন বিচারবুদ্ধির মানদণ্ডে তা গ্রহণযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়।

দ্বিতীয়তঃ অন্তঃকরণে জাগ্রত জ্ঞান নিজে নিজে কখনোই সর্বজনীনতার অধিকারী হতে পারে না। অন্তঃকরণে জাগ্রত সত্য ধারণা - বিচারবুদ্ধির পর্যালোচনায় যা টিকে যায় , এমনকি তা নবুওয়াত-সংশ্লিষ্ট ওয়াহী হলেও , তা যার অন্তঃকরণে জাগ্রত হয় তার জন্য অকাট্য দলীল বটে , কিন্তু অন্যদের জন্য তা অকাট্য দলীল নয়। অন্যদের জন্য তা অকাট্য দলীল হওয়ার বিষয়টি পুরোপুরিভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হওয়ার ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ লোকেরা তাদের বিচারবুদ্ধি দ্বারা ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে পর্যালোচনা করে যদি তাঁর সত্যবাদিতার ব্যাপারে অকাট্য প্রত্যয়ে উপনীত হতে পারে তখন তাঁর প্রত্যাদেশপ্রাপ্তি সম্পর্কেও প্রত্যয়ের অধিকারী হবে এবং তিনি যে প্রত্যাদেশ পেয়েছেন তার ওপরও তাদের প্রত্যয় উৎপাদিত হবে , ফলে তা থেকে তাদের জন্য জ্ঞান অর্জিত হবে।

অতএব , আমরা দেখতে পাচ্ছি যে , অন্তঃকরণে উদিত তথ্য বা জ্ঞানের গ্রহণযোগ্যতা বিচারবুদ্ধির রায়ের ওপর নির্ভরশীল। আর বিচারবুদ্ধি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপর আস্থার ব্যাপারে ইতিবাচক রায় প্রদান করে বিধায় তার কথাকে অন্যরা অন্ধভাবে সত্য বলে মেনে নেয়। অর্থাৎ অন্তঃকরণে উদিত তথ্য বা জ্ঞান যার অন্তঃকরণে তা উদিত হয়েছে তার জন্য অন্তঃকরণে উদিত তথ্য বা জ্ঞান হলেও অন্যদের জন্য তা বিচারবুদ্ধির সমর্থনক্রমে অন্ধভাবে গৃহীত তথ্য বা জ্ঞান মাত্র।

বস্তুতঃ সমস্ত রকমের উদ্ধৃতিযোগ্য জ্ঞানই এ পর্যায়ের। অর্থাৎ যার কাছ থেকে জ্ঞান লাভ হবে বিচারবুদ্ধি তার গ্রহণযোগ্যতার অনুকূলে রায় দিলে কেবল তখনই অন্য ব্যক্তির নিকট তা গ্রহণযোগ্য হবে এবং তা থেকে জ্ঞান অর্জিত হবে। আর অন্তঃকরণের জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তির গ্রহণযোগ্যতার অনুকূলে বিচারবুদ্ধির রায় প্রদানের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয় তথা তার সাথে সম্পর্কিত তথ্যাদি যথাযথভাবে অন্যদের কাছে পৌঁছার ওপর নির্ভরশীল। নচেৎ বিচারবুদ্ধি তার দাবীকে সত্য বলে গ্রহণ না-ও করতে পারে। এ কারণেই এমনকি নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করা সত্ত্বেও একই ব্যক্তিকে কারো বিচারবুদ্ধি নির্ভরযোগ্য মনে করতে পারে এবং কারো বিচারবুদ্ধি অনির্ভরযোগ্য বলে রায় দিতে পারে।

এখানে প্রসঙ্গতঃ প্রত্যয় সম্পর্কেও আলোকপাত করা প্রয়োজন। কোরআন মজীদেও প্রত্যয় (يقين ) পরিভাষা ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু সাধারণভাবে এ পরিভাষাটি যে অর্থে ব্যবহৃত হয় তা কোরআন মজীদে ব্যবহৃত অর্থ থেকে স্বতন্ত্র। কোরআন মজীদে প্রত্যয় (يقين ) পরিভাষাটি সুদৃঢ় ও অকাট্য জ্ঞান অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যুক্তিবিজ্ঞানের ভাষায় সত্যায়ন (تصديق ) বলতে যা বুঝায় তারই দৃঢ় রূপ হচ্ছে প্রত্যয় পরিভাষা।

কিন্তু যুক্তিবিজ্ঞানের ভাষায় কোনো বিষয়ে কারো মনে প্রত্যয় থাকার মানে এ নয় যে , অবশ্যই তা সত্য হবে , ঠিক যেভাবে কেউ কোনো তথ্যকে সত্যায়ন করলেই তার সত্যতা অভ্রান্ত নয়। কারণ , একই তথ্যের ব্যাপারে কেউ প্রত্যয় (يقين ) পোষণ করতে পারে , কেউ ধারণা বা বিশ্বাস (طن ) পোষণ করতে পারে এবং কেউ সন্দেহ (شک ) পোষণ করতে পারে। তেমনি একই বিষয়কে কেউ সত্যায়ন করতে পারে এবং কেউ না-ও করতে পারে। আর বলা বাহুল্য যে , একই বিষয়ে পরস্পরের সাথে সাংঘর্ষিক দুই বা তিনটি মত সঠিক হতে পারে না। অতএব , সন্দেহ নেই যে , কোনো বিষয়ে কোনো ব্যক্তি ভ্রান্ত তথ্যের ওপরেও প্রত্যয় পোষণ করতে পারে , এমনকি কোনোরূপ বাছবিচার , চিন্তা-ভাবনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই অন্ধ বিশ্বাসের বশবর্তী হয়েও প্রত্যয় পোষণ করতে পারে। আর অন্ধ প্রত্যয় মিথ্যাকে সত্যে ও ভুলকে সঠিকে পরিণত করতে পারে না।

অতএব , প্রত্যয় (يقين ) পরিভাষাটি কোরআন মজীদে যে অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তার বাইরে প্রচলিত অর্থে বা যুক্তিবিজ্ঞানের ভাষায় ব্যবহৃত প্রত্যয় -এর যথার্থতা নিশ্চিত নয় , ফলে তা থেকে যথার্থ জ্ঞান হাছ্বিল হবার বিষয়টিও নিশ্চিত নয়। বিচারবুদ্ধির মানদণ্ডে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যে ধারণার যথার্থতা সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যাবে কেবল সে ব্যাপারেই প্রত্যয় জ্ঞানের পর্যায়ভুক্ত।

অনেকে যুক্তিবিজ্ঞানের সত্যায়ন (تصديق ) পরিভাষা থেকে বিভ্রান্ত হন। আসলে সত্যায়ন (تصديق ) বলতে এটাই বোঝা যায় যে , ব্যক্তি একটি তথ্য বা ধারণাকে সত্য বলে মনে করছে ; এ থেকে এটা বুঝায় না যে , অবশ্যই তা সত্য হবে। কারণ , ব্যক্তি ভুল তথ্যকে সত্য মনে করতে অর্থাৎ সত্যায়ন করতে পারে - যার দৃঢ়তর মানসিক পর্যায় হচ্ছে প্রত্যয় । অতএব , সত্যায়ন অনিবার্যভাবেই সত্য হওয়ার তথা প্রকৃত জ্ঞান উৎপাদক হওয়ার পরিচায়ক নয়। বরং কোনো কিছু বিচারবুদ্ধির বিশ্লেষণে সত্য প্রমাণিত হওয়াই সত্য হওয়ার তথা জ্ঞানোৎপাদক হওয়ার পরিচায়ক।