আশুরা সংকলন

আশুরা সংকলন0%

আশুরা সংকলন প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: ইমাম হোসাইন (আ.)

আশুরা সংকলন

প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 77195
ডাউনলোড: 7466

আশুরা সংকলন
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 51 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 77195 / ডাউনলোড: 7466
সাইজ সাইজ সাইজ
আশুরা সংকলন

আশুরা সংকলন

প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

এ বইটি ইমাম হোসাইন (আ.)-এর আন্দোলনের বিশ্লেষণ এবং আশুরার ঘটনাবলী ও শিক্ষা সম্পর্কে একটি সংকলন যা ঢাকাস্থ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলরের দফতরের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সকল আহলে বাইত প্রেমীর উদ্দেশ্যে নিবেদেন করা হলো যাতে তা তাদের মহান আল্লাহ অভিমুখে পূর্ণতার যাত্রা পথে আলোকবর্তিকা হয় ইনশাল্লাহ।

ইমাম হোসেনের সংগ্রাম

ফকির গরীবুল্লাহ

হোসেন বলেন বিবি না কান্দিও আর ।

আমা বাদে ভাল হবে তোমা সবাকার।

সহরবানু বলে ভাল কিসে হবে আর ।

না রাখিলে মোর বংশ এজিদ কুফার।।

আপনি চলিল ফের করিতে লড়াই।

কুফরে সুপিয়া যাহ কি হবে ভালাই।।

এমাম বলেন বিবি না কান্দিও আর ।

রদ না হইবে কভু কলম আল্লার ।।

ঘিরিয়া রাখিল কুফর পানি বন্দ করে ।

পানি পানি করে যত সব গেল মরে।।

তোমরা মরহ সবে পানির লাগিয়া।।

মেরা জিউ পানি বিনে যায় নেকালিয়া।।

আজ কালি পানি বিনে মরিব নিশ্চয়।

লড়িয়া মরিলে নাম রবে দুনিয়ায় ।।

তোমা সবে সুপে যাই এলাহি আলমিনে।

আর কি ভরসা আছে কারবালা ময়দানে।।

জয়নাল আবদিনের তরে না দিবে ছাড়িয়া। য

যতনে তাম্বুর নিচে রাখ লুকাইয়া।।

এত বলি সবা হইতে বিদায় লইয়া।

চড়িল ঘোড়ার পরে বিসমিল্লা বলিয়া।।

চার রেকাবের উচা ঘোড়া জোরওয়ার।

হাওয়ায় মিশিয়া গেল ময়দান উপর।। [জঙ্গনামা]

কারবালা

কায়কোবাদ

এই কি কারবালা সেই ? এই সেই স্থান ?

এই সেই মহামরু ? হেরিলে যাহারে

অশ্রু ঝরে দু নয়নে কেঁদে ওঠে প্রাণ ?

কত কথা পড়ে মনে ,শিরায় শিরায়

প্রচণ্ড অনল-স্রোত হয় প্রবাহিত ;

প্রাণের নিভৃত কক্ষে- হৃদয়ে- কন্দরে

কি যে এক শোক স্মৃতি হয় উচ্ছ্বসিত!

সেই স্থানে ,কি বলিব বুক ফেটে যায় ,

মুহাম্মদ মোস্তাফার (সা.) আদরের ধন ,

ফাতেমার হৃদি-রত্ন নয়নের মণি ,

বীরশ্রেষ্ঠ মোর্তযার স্নেহের নন্দন ,

ইসলাম ধর্মের আলো ,সৌন্দর্যের স্থান

হোসেন তাপস শ্রেষ্ঠ ,আপন শোণিতে

প্রক্ষালিত মুসলেমের পাপতাপ রাশি

দিয়াছিলা ধর্মযুদ্ধে আপনাই প্রাণ ,

স্মরিলে সে কথা আজি বিদরে হৃদয়।

এই কি কারবালা সেই ? এই সে শ্মশান!

যাহার বালুকারাশি সিন্দুরের মত

হয়েছিল সুরঞ্জিত হোসেন শোণিতে।

যার প্রাণাধিক পুত্র আলী আকবর

‘‘ পিপাসা ,পিপাসা’’ বলে বিপক্ষের তীরে

দিয়াছিল আপনাই অমূল্য জীবন ।

যাহার করুণ স্মৃতি রয়েছে জড়িত

মরুময় কারবালার প্রতি অনেক অনেক

বালুকণা সাথে যার হাহাকার ধ্বনি

স্বর্গের দেবতাগণ শুনিয়া সতত

মর্মাহত কেদে কেদে আকুল পরান।

এই কি কারবালা সেই ? যার বালুকণা

‘‘ পিপাসা ,পিপাসা’’ বলে উঠিছে কাদিয়া

দিবানিশি ,বক্ষে যার আজিও অংকিত

শহীদের রক্তধারে বালুর উপরে-

‘‘ পিপাসা ,পিপাসা’’ যার প্রতপ্ত সমীর

‘‘ পিপাসা ,পিপাসা’’ বলে বেড়ায় ছুটিয়া

চারিদিকে সে উত্তপ্ত বালুর সাগরে।

ধ্বংসরূপী কারবালার ভীষণ প্রকৃতি

উম্মাদিনী বেশে করাঘাত করি-

‘‘ হা হোসেন ,হা হোসেন’’ বলিয়া কাতরে

কেদে কেদে বার বার উঠিছে চিৎকারি।

কারবালার প্রান্তরে সে শব্দ করুণ

হইতেছে মুখরিত ,জানি না কখন

এ পিপাসা মিটে যাবে জনমের তরে।

মিটিবে কি ? মিটিবে না সপ্ত সিন্ধু জলে।

সে কথা স্মরণে আজি শিহরে পরান।

এই কি কারবালা সেই ? এই সে শ্মশান ,

এই সেই মরুভূমি ? সেই স্থান ?

পিপাসা রাক্ষসী যেথা মূর্তিমতী হয়ে

‘‘ পিপাসা ,পিপাসা’’ বলে কদিছে চিৎকারি।

কত শত পান্থ হেথা গভীর বিষাদে

কদিতেছে হায় হায় করিয়া সতত ,

স্মরি সেই অতীতের করুণ কাহিনী।

নাই সেই নাই কীয় পাপিষ্ঠ এজিদ

মূঢ়মতী ,নাই সেই দুর্ধর্ষ সেনানী

উমর ,হোর নাই ,নাই ও বেদ্দুল্লা ,

তাহাদের অত্যাচারে-গোর উৎপীড়নে

শহীদ হইয়া গেছে সবংশে হোসেন

‘‘ পিপাসা ,পিপাসা’’ বলে কারবালা প্রান্তরে ,

তাহাদের মর্মান্তিক সে কাতার ধ্বনি

রয়েছে মিশিয়ে যেন দিবানিশি হায়

আজিও এ ফোরাতের কুল কুল তানে।

মহরম

শাহাদাৎ হোসেন

রুদ্র দুপর চলে আফতাব শিরে ঝলে

ছুটে জ্বালা চৌদিকে ইঙ্গিত মৃত্যুর ,

কোনখানে নাহি চিন পানি এক বিন্দুর।

মরু-বালু ঝলকায়

উন্মনা ছুটে চলে বাতাসের হলকায়।

নাই পানি ,নাই ছায়া জ্বল-জ্বল মরুকায়া

কারবালা প্রান্তর ঝাঁ-ঝাঁ করে চৌদিক ,

শান্তির রেখা নাই ,সান্তনা মৌখিক।

হাহাকার! হাহাকার!!

আজ বুঝি দুনিয়ায় জাগিয়াছে মহামার।

‘‘ লাও পানি জান যায়’’ ছাতি চাপি পাঞ্জায়

কাতরায় পানি বিনে আজি তারা শাহারায়

শরাবন তাহুরা র সাকী যারা আখেরায়।

মা র বুকে শুখা তন

মিলে নাকো ফোটা দুধ ,কাঁদে শিশু আনমন।

কলেজার টুকরা সে সন্তান এক পাশে

জবে-করা কবুতর ছটফটি মরে হায়!

ফাটে শোকে মা র প্রাণ , দাও পানি ছেলে যায়

দিল বুকে জনকের

ফিরে এল কোলে শিশু বুকে তীর জহরের।

শত্রুর রণভেরী ফোরাতের সীমা ঘেরি

বাজে ঘন গৌরবে দামামার দমদম

ঝঙ্কৃত মুহূমুহূ দামামার দমদম। ।

আস্ফালি হাকে বীর ,

কম্পন অরাতির পরাণী না মানে থির।

রক্তে নহর বয় কোথা জয়-পরাজয়

নিষ্ঠুর তাণ্ডবে রুদ্র সে নেচে ঘুরে

খাত-উনে-জান্নাত আসমানে আখি ঝুরে!

আল্লাহর বাধা শের

হুঙ্কার ছাড়ে রোষে ,খুন চায় জালেমের।

হা হোসেন অকসাৎ নিদারুণ শেলাঘাত

মূর্চ্ছিতা মা-ফাতেমা জান্নাৎ-দরজায়

জুলফিকার ধরে শেরে খোদা পাঞ্জায়।

আসমানে দুনিয়ায়

ক্রন্দনে বাজে শুধু হা-হোসেন! হায়! হায়!’’

এই সেই মহরম সে-দিনের সেই গম

ভুলেছ কি মুসলীম ? দীন তব ইসলাম ,

সত্যের উপাসক তুমি ন্যায়-পয়গাম

মুক্তির পন্থায়-

ছুটে চল নাশি এই মিথ্যা ও অন্যায় ।

হোসেন বধ

সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী

দুরাত্মা শিমর পাপী সহসা যাইয়া

বসিলেক বক্ষে চাপি । নয়ন উন্মীলি

হেরিলা রাজর্ষিবর নির্ম্মম মূরতি ,

শিমর বসেছে বক্ষে শিরচ্ছেদ তরে।

কাতরে কহিলা বীর ;‘‘ ওরে রে শিমর!

আজি পূণ্য জুম্মাবার ,মধ্যাহ্ণ-নমাজ

পড়িবার অবসর দে রে কিছুক্ষণ।

করিস নমাজ-শেষে মস্তক কর্ত্তন।’’

এতেক শুনিয়া পাপী উঠি দাড়াইল।

আনন্দে রাজর্ষিবর ভূমি হ তে উঠি

শোণিতে সমাপি অজু ,পশ্চিমাভিমুখে

সাষ্ঠাঙ্গে বিভুর তরে করিতে প্রণতি

দুরাত্মা শিমর পাপী চক্ষের পলকে

হানিল প্রচণ্ড অসি শিরোধি-শরব্যে।

খণ্ডিত হইল শির-দিব্য জ্যোতিঃরাশি

সহসা বিজলী-তেজে শিখার আকারে

বাহিরিয়া দেহ হ তে দূর অন্তরীক্ষে

নিমেষে মিলায়ে গেল। পাপাত্মা শিমর

সত্রাসে মূর্ছিত হ য়ে পড়িল ধরায়।

খণ্ডিত হইল শির। কপিল ধরণী।

সহসা জলদ-জালে লুকাল তপন।

আধার হইল বিশ্ব। বিভু-সিংহাসন

কাপিলেক থরথর। নিদারুণ শোকে

প্রকৃতি ছাড়িল শ্বাস। উড়ি রজোরাশি

আধারিল দশ দিশি। গগনম-লে

সহস্র সহস্র উল্কা জ্বলিয়া উঠিল।

বহিল প্রবল বেগে উজানে ফোরাত

বিপ্লাবিয়া বেলাভূমি কল্লোলে সমুদ্র

গর্জিল ভীষণ শ্বাসে বিষম বিষাদে।

যাদঃগণ তটদেশে পড়িল আছাড়ি

মড়মড়ি তরুবাজি পড়িল ভাঙ্গিয়া।

বৃন্তচ্যুত হ য়ে আহা! কুসুমনিকর

মহাশোকে ধরা-অঙ্গে পড়িল বিথারি

বিহঙ্গ করুণ কণ্ঠে করি আর্তধ্বনি

পরিল অম্বরদেশ। যত পশু-যূথ

ছুটিল চীৎকারি ঘোর দিক-দিগন্তরে

‘‘ হোসেন ,হোসেন’’ !রবে। প্রস্তর নিচয়

শতধা-বিভক্ত হ য়ে কারবালা প্রান্তরে

ছুটিতে লাগিল শোকে (প্রতপ্ত খোলায়

লাজপুঞ্জ যথা ,হায়! হয় বিস্ফুটিত) !

ব্যাকুল মানবকুল। অস্থির মেদিনী।

আকুল নির্জরবৃন্দ। স্বর্গ বিকম্পিত।

প্রলয়ের শিঙ্গা যেন বিশ্ব বিদারিয়া

সহসা উঠিল বাজি নাশিতে এ সৃষ্টি!

হা হোসেন! হা হোসেন! হায়! হায়!

প্রতি অণু-পরমাণু লাগিল ঘোষিতে। [মহাশিক্ষা কাব্য ]

শোকের লু হাওয়া [ দেশ-কাওয়ালী]

কাজী নজরুল ইসলাম

বহিছে সাহারায় শোকের 'লু ' হাওয়া

দুলে অসীম আকাশ আকুল রোদনে।

নূহের প্লাবন আসিল ফিরে যেন

ঘোর অশ্রু শ্রাবণ-ধারা ঝরে সঘনে।।

হায় হোসেনা হায় হোসেনা বলি '

কাঁদে গিরিদরি মরু বনস্থলী

কাঁদে পশু ও পাখী তরুলতার সনে।।

ফকির বাদশাহ গরীব ওমরাহে কাঁদে

তেমনি আজো ,তারি মর্সিয়া গাহে ,

বিশ্ব যাবে মুছে মুছিবে না এ আঁসু ,

চির কাল ঝরিবে কালের নয়নে।।

ফল্গুধারা-সম সেই কাঁদন-নদী

কুল-মুসলিম চিতে বহে গো নিরবধি ,

আসমান ও জমিন রহিবে যতদিন

সবে কাঁদিবে এমনি আকুল কাঁদনে।। (গুল-বাগিচা)

শহীদ কারবালা

ফররুখ আহমদ

উতারো সামান ,দেখ সম্মুখে কারবালা মাঠ ঘোড় সোয়ার।

জ্বলে ধুধু বালু দোযখের মত ,নাই সবজার চিহ্ন আর।

আকাশে বাতাসে কার হাহাকার ? পান্থপাদপ লোহু সফেন ,

আজ কারবালা ময়দানে মোরা দাঁড়ায়েছি এসে হায় হোসেন!

খুনের দরিয়া দেখেছি স্বপ্নে ,কারবালা মাঠে দেখেছি খাব ,

আহাজারি ওঠে দুনিয়া জাহান ,ভাসে আসমানে কোটি বিলাপ ;

হবে সয়লাব দুনিয়া জাহান-শান্ত মক্কা মুয়াজ্জমা ;

জুলুমের তেগ হানবে জালিম পাবে না এখানে উদার ক্ষমা।

দিনান্ত ঝড়ে জুলুমাত-ম্লান শামিয়ানা টানে কোন বে-দীন ?

কুফার দাওয়াত হয়েছে ব্যর্থ ,দাড়াও এখানে সংগীহীন

দেখ এজিদের খঞ্জর ধার ,শোন অগণন আর্তশ্বাস

দেখ সম্মুখে লানতের মত কারবালা মাঠ বিশ্বত্রাস।

উতারো সামান ,দাড়াও সেনানী নির্ভীক-সিনা বাঘের মত।

আজ এজিদের কঠিন জুলুমে হয়েছে এ প্রাণ ওষ্ঠাগত ,

কওমি ঝান্ডা ঢাকা পড়ে গেছে স্বৈরাচারের কালো ছায়ায় ,

পাপের নিশানি রাজার নিশান জেগে ওঠে আজ নভঃনীলায় ,

মুমিনের দিল জ্বলেছে বে-দিল জালিম পাপীর অত্যাচারে

নিহত শান্তি নিষ্কলংক শান্তিপ্রিয়ের রক্তধারে ,

হেরার রশ্মি কেঁপে কেঁপে ওঠে ফারানের রবি অস্ত যায়!

কাঁদে মুখ ঢেকে মানবতা আজ পশু শক্তির রাজসভায়!

ওই শোন দূরে উষর মরুতে শত্রু সেনার পদধ্বনি ,

নেজা তলোয়ার ঝলসিয়া ওঠে দূর মরুতটে উঠছে রণি

ফোরাতের তীরে ঘাঁটি পেতে করে এজিদ সৈন্য কুচকাওয়াজ

ইতারো সামান ,মওতের মত এল কারবালা সামনে আজ।

ভীরু কাপুরুষ জীবন আকড়ি অন্তিম ক্ষণ করে স্মরণ ;

বীর মুজাহিদ নির্ভীক বুকে করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন!

হোক দুশমন অগণন তবু হে সেনানী! আজ দাও হুকুম

মৃত্যু সাগরে ঝাপ দিয়ে মোরা ভাঙবো ক্লান্ত প্রাণের ঘুম!

হবে কারবালা মরু ময়দান শহীদ সেনার শয্যা শেষ

হে সিপাহ-সালার! জঙ্গী ইমাম আজ আমাদের দাও আদেশ!

বাজে রণ-বাজা ,মাতে দুশমন কাপে শংকিত পৃথ্বীতল

দাও সাড়া দাও মুজাহিদ সেনা! সত্য পথের সাধকদল ,

ফেরে চলো আজ দুশমন ব্যুহ বেহেশ্ত অথবা ফোরাত-তীরে

আসে অগণন শত্রু বাহিনী দিগন্ত-ধনু দুনিয়া ঘিরে!

হে ইমাম ! দেখ বিস্মিত রবি তোমার শৌর্য দেখছে আজ

তোমার দীপ্ত পৌরুষে স্লান শত্রু সেনার জরীন তাজ!

ভীরু বুজদিল পারেনা সইতে তোমার যুদ্ধ আমন্ত্রণ

তীর ছুড়ে ছুড়ে বহুদূর হতে শত্রু বাহিনী দেখায় রণ।

তৃষায় তোমার ছাতিফেটে যায় ,কাদে তৃষাতুর শিশু ডেরায় ,

নারীর কান্না শুনছো ইমাম ? ফোরাত এখনো রুদ্ধ হায়!

কারবালা মাঠ হল দিনান্তে মুজাহেদীনের শেষ কবর

ফোরাতের তীর রুদ্ধ এখনো ফোরাত জয়ের নাই খবর!

সূর্য এখনো নামেনি অস্তে তবু রাত্রির মরণ ছাপ ,

নেভে তকদীরে আফতাব ,নেভে মুজাহেদীনের প্রাণ প্রতাপ ,

খিমার দুয়ারে আহাজারি ওঠে ,কাদে শিশু-নারী মরুতৃষায়

ভরে হাহাকারে সাত আসমান অজানা রাতের ঘন ব্যথায়!

হে বীর! এখন চলেছ একাকী সকল সংগী হারায়ে ,হায়

আহত সিংহ ,ক্ষত তনুতটে ঝ র্ছে রক্ত শত ধারায়।

এ কোন ক্লান্তি ঘিরেছে তোমাকে হে দিলীর শের ,সংগীহীন।

ফোরাতের তীরে নিভে যায় রবি শেষ হয়ে আসে রক্ত দিন!

শত্রুর তীর বুকে এসে বিধে নাই ভ্রুক্ষেপ অসাবধানী!

দুধের বাচ্চা ম রে গেছে চেয়ে পিয়াসের মুখে কাতরা পানি।

এক বছরের হাসিন শিশুকে তীর হানিয়াছে ভীরুর দল ,

ভোলে এ শ্রান্তি ক্লান্ত সিংহ! জাগাও তোমার সুপ্তবল!

ঝাঞ্জারা সিনা তবুও সিংহ জয় করে নিল ফোরাত তীর ,

আজলা ভরিয়া মুখে তুলে নিল ফোরাত নদীর শীতল নীর।

লাগেলো আবার তীরের আঘাত পানি ফেলে দিয়ে দাড়ালো বীর

হাহাকার করে উঠলো সভয়ে ফোরাত নদীর মুক্ত তীর।

বাজে রণ বাজা এজিদের দলে তলোয়ার তীর নেজার ছায় ,

জাগে শংকার কাপন আকাশে ,লাগে মৃত্যুর রং ধূলায় ,

সে রণভূমিতে ক্লান্ত সিংহ চলে একা বীর মরণাহত ;

ক্ষত তনু তার তীরের আঘাতে লুটালো বিশাল শিলার মত।

জীবন দিয়ে যে রাখলো বাচায়ে দীনি ইজ্জত বীর জাতির

দিন শেষে হায় কাটলো শত্রু সীমার সে মৃত বাঘের শির।

তীব্র ব্যাথায় ঢেকে ফেলে মুখ দিনের সূর্য অস্তা চলে ,

ডাবে ইসলাম-রবি এজিদের আঘাতে অতল তিমির তলে ,

কলিজা কাপায়ে কারবালা মাঠে ওঠে ক্রন্দন লোহ সফেন

ওঠে আসমান জমিনে মাতম ;কাদে মানবতা :হায় হোসেন।।

কারবালায় ইমাম হুসাইন

মনিরউদ্দীন ইউসুফ

না ,আমি বিদ্রোহী নই : যুদ্ধ করতে আসিনি আমি ।

দেখ না আমার সৈন্য নেই ,দুর্গ নেই ,অস্ত্রাগার নেই।

আমার সঙ্গে আছে আমারী স্ত্রী-পুত্র-কন্যা

আছে ভাই-বেরাদর ও কয়েকজন একনিষ্ঠ অনুগামী বন্ধু।

আমি কারবালা পর্যন্ত এগিয়ে এসেছি একটি দায়িত্ববোধের শুভ তাড়নায়।

আমার মাতামহ আল্লাহর রাসূল শেষ নবী ;

তিনি প্রাচীন যুগের নবুওয়াতের শেষ ব্যক্তি

তার পরে কোনো নবী আর আসবেন না।

তিনি আধুনিক যুগের আল্লাহ প্রেরিত নকীব।

তিনি মানুষের মুক্তবুদ্ধির স্বাধীন ইচ্ছার উদ্বোধনকারী।

তাই প্রাচীন যুগের মতো আল্লাহ মানুষের কাজেকর্মে

কোনো হস্তক্ষেপ করবেন না।

না ,মানুষের পাপে পাস্নাবন আসবে না

ভূমিকম্প না ,ঝঞ্ঝা কিংবা শিলাবৃষ্টিও নয়।

মানুষের কর্মের দায়িত্ব মানুষের-যার বিচার হবে পরলোকে ;

আমি হুসাইন ,তার দায়িত্ব পালনের আগ্রহে আমি মরতে এসেছি

অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার ঐতিহ্য বহন করে নিয়ে এসেছি এই কারবালায়

আমি স্ত্রী-পুত্র ভাই-বেরাদর ও অনুগত বন্ধুগণ নিয়ে মরতে এসেছি।

এ ঐতিহ্য সকল পুরাতন নবী ও আমার মাতামহের।

আমি কারবালায় জিহাদের পতাকা উড্ডীন করে রেখে গেলাম।

তারপরই কোনো এক সময় ইমাম বলে ছিলেন ,

আমরা শহীদ হতে এসেছি।

কাহিনী প্রচলিত আছে ,মুসলমানের ইমাম

কারবালায় অবতীর্ণ হয়েই তার পার্শ্বচরকে

বলে ছিলেন ,অনুভব করতে পারছ শীতল হওয়ার স্পর্শ ?

হ্যাঁ কারবালা ;এখানেই ছাউনি ফেলো ;এখানেই আমার বিশ্রাম!

শাহাদাতের এ ঐতিহ্য আমাদের থেকেই ছড়িয়ে পড়বে

অনাগত যুগ যুগান্ত ধরে সব দেশে।

দেখ মনে রেখো ,আমি যুদ্ধ করতে আসি নি ;

আমার সৈন্য নেই ,দুর্গ নেই ,অস্ত্রাগার নেই।

আমি প্রতিবাদ করতে এসেছি ,ধর্ম ও রাজনীতি আলাদা নয় ;

আমি শহীদ হতে এসেছি।

মানুষের প্রতিনিধিত্ব ,দায়িত্ব ও শাহাদাতের ঝাণ্ডা উচু করে রেখে গেলাম।

মুক্তির আশায়

সোলায়মান আহসান

আকাশে বাতাসে এতো শোক কোনদিন কেউ দেখেনি

কেউ দেখেনি এমন মর্মবিদারী কান্নার রোল ,

কেউ শোনেনি এমন ধ্বনি-হায় হোসেন! হায় হোসেন!

যে ধ্বনির মধ্যে মানবতার ক্রন্দন ধ্বনি মিশে।

যেদিন কারবালার প্রান্তরে লুটিয়ে পড়ল

মুহাম্মদ (সা.) -এর দৌহিত্র ইমাম হোসেনের পবিত্র দেহ

সেদিন লুটিয়ে পড়ল ইসলামের সাম্য ও মৈত্রীর সবুজ ঝাণ্ডা

পরমত সহিষ্ণুতা ,মানুষের বাক স্বাধীনতা আর সত্যের মশাল নিভে গেল ফুৎকারে

আর তাই শোক ক্রমে পাথর হলো ,পাহাড় হলো পৃথিবীর পেরেক হিসেবে।

আমরা সেই শোক বুকে নিয়ে পাড়ি দিতে চাই

মানুষের মুক্তির বার্তাবহ হয়ে মিথ্যা আর বাতিলের

জনপদ ছেড়ে দূরে বহুদূরে।