আশুরা সংকলন

আশুরা সংকলন0%

আশুরা সংকলন প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: ইমাম হোসাইন (আ.)

আশুরা সংকলন

প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 77212
ডাউনলোড: 7467

আশুরা সংকলন
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 51 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 77212 / ডাউনলোড: 7467
সাইজ সাইজ সাইজ
আশুরা সংকলন

আশুরা সংকলন

প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

এ বইটি ইমাম হোসাইন (আ.)-এর আন্দোলনের বিশ্লেষণ এবং আশুরার ঘটনাবলী ও শিক্ষা সম্পর্কে একটি সংকলন যা ঢাকাস্থ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলরের দফতরের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সকল আহলে বাইত প্রেমীর উদ্দেশ্যে নিবেদেন করা হলো যাতে তা তাদের মহান আল্লাহ অভিমুখে পূর্ণতার যাত্রা পথে আলোকবর্তিকা হয় ইনশাল্লাহ।

আশুরা আন্দোলনের শিক্ষা ও তাৎপর্য

পবিত্র আশুরার উত্থানের লক্ষ্য

ইমাম খোমেইনী (রহ.) -এই বাণী থেকে

সকল নবী ও রাসূলকে পাঠানো হয়েছিল সমাজ সংস্কারের জন্য। তারা সবাই জানতেন যে ,সমাজের জন্য ব্যক্তিগত স্বার্থ কুরবানি দিতে হয়। ব্যক্তিগত স্বার্থ তা যত বড়ই হোক না কেনো ,এমনকি যদি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা বস্তুকেও সমাজের কল্যাণে কুরবানি দিতে হয় তাতেও তারা পিছপা হন না। শহীদদের নেতা ইমাম হোসাইন (আ.) এ বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে জেগে উঠেছিলেন এবং সহায়-সম্পত্তি ও অনুগতদের সাথে নিয়ে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন । ইমাম হোসাইন শাহাদাতবরণ করেছিলেন স্বর্গীয় শান্তি ও আল্লাহর ঘরের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য।

* * *

প্রথম দিন থেকে ই ইমাম হোসাইন (আ.) -এর উত্থান বা জিহাদের লক্ষ্য ছিল ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। তিনি লক্ষ্য করলেন ,ভালো কিছুর বাস্তবায়ন সহজে হয়না ,কিন্তু মন্দের চর্চা চলতে থাকে। তার লক্ষ্য ছিলো সমাজে কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করা এবং সমাজ থেকে মন্দ কাজ দূর করা। নিষিদ্ধ জিনিসের চর্চাই সমাজে সব ধরনের অনাচার সৃষ্টির কারণ। আমরা যারা শহীদদের নেতার অনুসারী তাদেরকে অবশ্যই খেয়াল করতে হবে তারা কীভাবে জীবন যাপন করতেন। ইমাম হোসাইন (আ.) -এর জিহাদের লক্ষ্য ছিল সমাজের সব খারাপ ও শয়তানী কাজের মুলোৎপাটন এবং জালিমের শাসন উৎখাত করা।

* * *

শহীদদের নেতা তার সারা জীবন ব্যয় করেছেন সমাজের সব মন্দের মুলোৎপাটন এবং জালিমের শাসন ও নিপীড়ন প্রতিরোধ করতে । তিনি অনৈতিকতা ও শাসক শ্রেণীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন যা আজকের দুনিয়ায় বিশেষভাবে শাসক শ্রেণী করে থাকে।

শহীদদের নেতা তার জিহাদের অন্তর্নিহিত কারণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন ছিলেন । তিনি নিজের এবং তার সন্তানদের জীবন ও মান-সম্মান উপেক্ষা করেছিলেন । তিনি জানতেন এ থেকে কী ফল আসবে। ইমামের সঙ্গে যারা মদীনা থেকে মক্কায় এসে ছিলেন এবং মক্কা থেকে শেষ পর্যন্ত তার সঙ্গে ছিলেন তারা তার পবিত্রতা দেখেছিলেন । ইমাম হোসাইন কী করতে যাচ্ছেন তা তিনি খুব ভালো করে জানতেন। এটা এমন ছিলো না যে ,তিনি দেখতে চেয়েছিলেন কী হয় ;বরং তিনি একটি জালিম সরকারের মুলোৎপাটনের জন্য জিহাদে অবতীর্ণ হয়েছিলেন ।

* * *

শহীদদের নেতা দেখলেন যে ,আদর্শ ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে ইমাম হাসান ও আমীরুল মু মিনীন ইমাম আলী (আ.) -এর জিহাদ এবং পৌত্তলিক ও জালিম শাসকদের বিরুদ্ধে নবিগণের সংগ্রাম কোনো দেশ দখলের জন্য ছিলো না। কারণ ,তাদের কাছে সারা দুনিয়ারও কোনো মূল্য ছিলো না । তাদের সামনে কোনো ভূখণ্ড দখলের উদ্দেশ্যও ছিলো না।

* * *

কুফা ও কারবালায় ইমাম হোসাইন (আ.) যে জিহাদ করেছিলেন তা ছিল জুলুম-অন্যায়ের বিরুদ্ধে আদর্শের সংগ্রাম । এটা ছিলো তার ঈমান এবং এর জন্য তিনি তার সর্বস্ব ত্যাগ করতে পরেছিলেন । তিনি শাহাদাত বরণ করেছিলেন ইসলামের ওপর ঈমান ও অগাধ বিশ্বাসের কারণেই। তার শাহাদাতবরণ করার মাধ্যমে উৎপীড়ক শাসকের পরাজয় হয়েছিলো।

* * *

ইমাম হোসাইন ইয়াযীদের বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হয়েছিলেন ঠিকই ,তবে সম্ভবত তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে ,তিনি ইয়াযীদের রাজত্ব উৎখাত করতে পারবেন না। বলা হয়ে থাকে ,তিনি এটা জেনে-বুঝেই জিহাদে অবতীর্ণ হয়েছিলেন যে ,একজন স্বৈরাচারী ও উৎপীড়ক শাসকের বিরুদ্ধে তাকে জিহাদ করতে হবে । এমনকি তাকে তার ঈমান ও বিশ্বাসের জন্য জীবন পর্যন্ত দিতে হতে পারে। অতএব ,তিনি জেগে উঠলেন ,নিজের জীবন উৎসর্গ করলেন এবং তার সাথে বহু নিরপরাধ মানুষ ও শহীদ হলেন।

* * *

মহান ইমাম ইসলাম ও মুসলমানদের ভবিষ্যতের জন্য উদ্বিগ্ন ছিলেন । তিনি চ্যালেঞ্জ নিলেন ,যুদ্ধ করলেন এবং জীবন উৎসর্গ করলেন। শহীদদের নেতা মনে করলেন ,এ স্বৈরাচার ও জালিম শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা তার কর্তব্য। পারিপার্শ্বিকতা সেভাবেই তৈরী হলো এবং তিনিও তার সঙ্গী-সাথীরা জীবন উৎসর্গ করার মাধ্যমে উৎপীড়ক শাসকের মুখোশ উম্মোচন করলেন। তিনি লক্ষ্য করলেন যে ,একজন জালিম শাসক দেশের লক্ষ্য ভিন্ন দিকে পরিচালিত করছে। তিনি এটাও লক্ষ্য করলেন যে ,একটি জালিম শক্তি রাষ্ট্রের গন্তব্য ব্যাহত করছে এবং তিনি এতে বাধা দেয়া পবিত্র দায়িত্ব বলে মনে করলেন। যদিও এটা স্পষ্ট ছিলো যে ,ইমাম হোসাইন (আ.) এবং তার অনুসারীদের পক্ষে এত বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে দাড়ানো কঠিন ,তারপরও স্বর্গীয় পবিত্র দায়িত্বানুভূতি থেকে তিনি তা করলেন।

তখন শহীদদের নেতার জন্য দায়িত্ব ছিল জেগে ওঠা (জিহাদে অবতীর্ণ হওয়া) ,নিজের রক্ত দেয়া যাতে জাতি পুনর্গঠিত হতে পারে এবং ইয়াযীদের পতাকা ভূলুণ্ঠিত হয়। ঠিক এটাই ঘটলো। ইমাম হোসাইন নিজের রক্ত ও নিজ সন্তানের রক্ত দিলেন ,ইসলামের জন্য তিনি তার সব কিছু দিলেন।

* * *

ইমাম হোসাইন (আ.) জেগে উঠেছিলেন এমন এক সময় যখন তার কাছে উল্লেখযোগ্য কোনো বাহিনী ছিলো না। আল্লাহ মাফ করুন ,তিনি যদি অলস হয়ে বসে থাকতেন এবং বলতেন , এটা আমার দায়িত্ব নয় ,তাহলে এটা উমাইয়্যা শাসক গোষ্ঠিকে সবচেয়ে বেশি খুশি করতো। কিন্তু ইমাম মুসলিম ইবনে আকীলকে পত্র পাঠালেন- লোকজনকে তার আনুগত্য প্রকাশ করে তার বাইআত নেয়ার জন্য দাওয়াত দিতে বললেন যাতে ইয়াযীদের দুর্নীতিগ্রস্থ শাসনের বিপরীতে একটা ইসলামী সরকার গঠন করা যায়। ইমাম খুব স্বাচ্ছন্দেই মদীনায় থাকতে পারতেন এবং তিনি লোকজনকে ইয়াযীদের কাছে বাইআত নিতে বলতে পারতেন। এতে ইয়াযীদ বেশি খুশি হতো এবং সে ও তার লোকজন ইমামের হাতে চুমু দিতো।

শহীদদের নেতা জেগে উঠেছিলেন ইসলামকে শক্তিশালী করতে ,সব ধরনের নিষ্ঠুরতা ,বর্বরতা ও জুলুম প্রতিরোধ করতে এবং তিনি দাড়িয়েছিলেন তখনকার এক স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে।

অনুবাদ : সাইদুল ইসলাম

সুত্র:মাহজুবা ,ফেব্রুয়ারি ,2007