আশুরা সংকলন

আশুরা সংকলন0%

আশুরা সংকলন প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ: ইমাম হোসাইন (আ.)

আশুরা সংকলন

প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বিভাগ:

ভিজিট: 77209
ডাউনলোড: 7467

আশুরা সংকলন
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 51 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 77209 / ডাউনলোড: 7467
সাইজ সাইজ সাইজ
আশুরা সংকলন

আশুরা সংকলন

প্রকাশক: কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দুতাবাস -
বাংলা

এ বইটি ইমাম হোসাইন (আ.)-এর আন্দোলনের বিশ্লেষণ এবং আশুরার ঘটনাবলী ও শিক্ষা সম্পর্কে একটি সংকলন যা ঢাকাস্থ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সেলরের দফতরের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সকল আহলে বাইত প্রেমীর উদ্দেশ্যে নিবেদেন করা হলো যাতে তা তাদের মহান আল্লাহ অভিমুখে পূর্ণতার যাত্রা পথে আলোকবর্তিকা হয় ইনশাল্লাহ।

ইসলামের পুনরুজ্জীবনে আশুরা আন্দোলনের ভূমিকা

ড.মনজুর আলম*

মানবজাতির জন্য আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। আল্লাহ তা আলা আদম (আ.) - কে সৃষ্টি করে দুনিয়াতে সুন্দরভাবে চলার জন্য যে জীবন ব্যাবস্থা দিয়ে পাঠিয়েছেন তার নাম ইসলাম। অল্পদিন পরেই দেখা গেল আদমের এক সন্তান কাবিল আল্লাহর পাঠানো জীবন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে এক খোদাদ্রোহী জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে ফেললো। সেই থেকে পৃথিবীর ইতিহাসের অধিকাংশ সময়ব্যাপী দেখা যায় কাবিলের সন্তানদেরই (অর্থাৎ কাবিলের আদর্শ অনুসারীদের) জয়জয়কার। মানুষকে বিভ্রান্ত মত ও পথের অনুসরণ থেকে দূরে সরিয়ে এনে প্রকৃত কল্যাণের পথে পরিচালনা করার জন্য আল্লাহ তা আলা যুগে যুগে পাঠিয়েছেন ঐশী দূত ,যাদের আরবি ভাষায় বলা হয় নবী ও রাসূল । এসব নবী -রাসূল যে দায়িত্ব পালন করে গেছেন তা হলো মূলত পুনরুজ্জীবনের দায়িত্ব । মানুষ তার আজন্ম শত্রু ইবলিসের প্ররোচনায় আর তার আপন পশু-প্রবৃত্তির তাড়নায় বার বার খোদাকে ভুলে গিয়েছে ,আর আল্লাহ তা আলা যুগে যুগে মানব জাতির পুনরুজ্জীবনের জন্য পাঠিয়েছেন নবী ,রাসূল ও ইমাম ।

নবী -রাসূল ও ইমামদের দায়িত্ব ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন মানব জাতিকে বিভ্রান্তি ও গোমরাহীর ঘুম থেকে পুনরায় জাগ্রত করা। তাদের ভালো করে বুঝিয়ে দেয়া যে ,পশু প্রবৃত্তির দাসত্ব করার জন্য তার সৃষ্টি নয় ,পশুর মতোই পেটের পুজা আর বংশ বিস্তার করে যাওয়াটাই তার একমাত্র কাজ নয়। মানুষের পরিচয় হলো সে আল্লাহর খলিফা হিসাবে এক মহান মর্যাদার অধিকারী। তার সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত হবে নিজের মধ্যে খোদায়ী গুণসমূহ পূর্ণমাত্রায় বিকশিত করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের লক্ষ্যে । এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান ,পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক এবং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন এ সব কিছুরই দিক -নির্দেশনা যুগে যুগে বয়ে এনেছেন নবী -রাসূল গণ। তাদের ভূমিকা ছিলো শিক্ষক ,সমাজ সংস্কারক ও বিপ্লবী নেতার-এক কথায় তারা ছিলেন খোদা সম্পর্কে গাফিল মানব সমাজের জন্য ইসলামী পুনরুজ্জীবনের মশালবাহী।

ইসলামী পুনরুজ্জীবন সম্পর্কে আমার উপলদ্ধি আলোচনার পর আশুরা আন্দোলন সম্পর্কে আমার সামান্য উপলদ্ধি বর্ণনা করছি।

আশুরা বিপ্লবের তাৎপর্য এক ব্যাপক ও বিস্তৃত যে ,আমার আলোচনায় এ মহান বিষয়ের প্রতি সুবিচার করা সম্ভব নয়। তবুও আমার চোখে আশুরার যে দিক গুলো তুলনামূলক ভাবে বেশি স্পষ্ট তা ই সমকালীন প্রেক্ষাপটে আলোচনা করবো।

আমার দৃষ্টিতে আশুরা বিপ্লবের সবচেয়ে বড় দিক হলো এ বিপ্লব আমাদের চোখে তরবারির ওপর রক্তের বিজয়কে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিশ্ব তাগুতী শক্তি মনে করে মারণাস্ত্রই হচ্ছে শক্তির একমাত্র উৎস। যখন বিশ্বে ছিলো দুই পরাশক্তি (আমেরিকা ও রাশিয়া) ,তখন তারা মেতে উঠেছিলো শক্তিশালী থেকে আরো শক্তিশালী মারণাস্ত্র উদ্ভাবনের প্রতিযোগিতায়। আজ বিশ্বে একটি মাত্র পরাশক্তি রয়েছে ,যে পরাশক্তি আজও কেবল একের পর এক শক্তিশালী মারণাস্ত্র উদ্ভাবন ও সংগ্রহে ব্যস্ত । বিশ্বের ছোট ছোট দেশ এসব ভয়াবহ মারণাস্ত্রের কথা শুনে ভাবে পরাশক্তির অধীনতা স্বীকার করা ছাড়া তাদের অন্য উপায় নেই। তাই আমেরিকা যখন নির্লজ্জভাবে ইসরাইলের প্রতিটি অপকর্মের সমর্থন দিয়ে যায় ,তখন ছোট ছোট দেশ কোনো রকমে মুখ রক্ষার জন্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে মৌখিক একটা দায়সারা গোছের নিন্দা জানিয়ে পরক্ষণেই আমেরিকার পায়ে সিজদাবনত হয়ে জানিয়ে আসে , আমরা আসলে আপনারই গোলাম । আমাদের মৌখিক নিন্দা-বিবৃতি ইত্যাদিকে আমল দেবেন না। বিশ্বের দুর্বল দেশগুলোর এ রকম হতাশাজনক অবস্থায় আশুরার বিপ্লব আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় বেহেশতে যুবকদের সর্দার ইমাম হোসাইনের রক্তের কাছে তাগুতের পরাজয় বরণের কথা ।

অনেকে বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করবেন ,কারবালায় ইমাম হোসাইন (আ.) তো সঙ্গী-সাথীসহ নিহত হয়েছিলেন ,তাকে বিজয়ী বলা যায় কীভাবে ? এ প্রশ্নের উত্তরে হয়তো বলা যায় যে ,আজকের ইতিহাসে ইয়াযীদ একটি ঘৃণিত চরিত্র ,তার কবরের কোনো চিহ্ন আজ আর নেই ,কোনো লোক আজ তার সন্তানের নাম ইয়াযীদ রাখে না। অন্যদিকে ইমাম হোসাইনের মাযার ও কারবালা আজ বিশ্ব মুসলিমের কাছে অতি শ্রদ্ধেয় এক তীর্থস্থান ,ইমাম হোসাইনের মাযারের মতো সুশোভিত ও অলংকৃত মাযার পৃথিবীতে বিরল ,তার জন্য পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ অশ্রু বর্ষণ করে । এ বক্তব্যে সাথে আমি একমত নই। আমি মনে করি ইমাম হোসাইনের বিজয় ইতিহাসে এক শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি হওয়ার মাধ্যমে অর্জিত হয়নি। এ বিজয় অর্জিত হয়েছে ব্যাপক মারণাস্ত্রসজ্জিত ইয়াযীদের বিশাল বাহিনীর সামনে অকুতোভয়ে এগিয়ে যাবার মাধ্যমে। ইয়াযীদের আশা ছিলো ইমাম হোসাইন তার বিশাল বাহিনী দেখে ভয়ে নতি স্বীকার করবেন ,এমনকি আজও গুটিকয় ঐতিহাসিক মন্তব্য করেন যে ,ঐ সময় ইয়াযীদের বশ্যতা স্বীকার করে নেয়াটাই ছিলো বুদ্ধিমানের কাজ । অনেকের পক্ষে আজও বিশ্বাস করা সম্ভব হয় না যে ,ইমাম হোসাইন নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও কারবালার ময়দানে এগিয়ে গিয়েছিলেন । কিন্তু আজ আমরা ইমাম হোসাইনের বিভিন্ন উক্তি ও ঘটনাপরস্পরা বিশ্লেষণ করে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে ,ইমাম হোসাইন চূড়ান্ত পরিণতি সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন হয়েই কারবালায় মাত্র বাহাত্তর জন সঙ্গী নিয়ে ইয়াযীদের সত্তর হাজারেরও বেশি জনবল সম্বলিত বাহিনীর মোকাবিলা করেছিলেন ।

ইমাম হোসাইন (আ.) -এর এত বিশাল দুনিয়াবী শক্তির বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র জনবল নিয়ে সম্পূর্ণ নির্ভীক চিত্তে এগিয়ে যাবার মাধ্যমেই আশুরা আন্দোলনের এক মহান লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। যে আন্দোলনে ঘোষিত হলো : তাগুতের এই জনবল ,এই দুনিয়াবী শক্তি ,এই মারণাস্ত্র ,ঈমানের শক্তির কাছে তুচ্ছ। এ প্রতিরোধের ঘোষণাই গুড়িয়ে দিল ইয়াযীদের সমস্ত দুনিয়াবী শক্তির দম্ভ। সে দিনের ইয়াযীদের তরবারির ঝলকানি আর আজকের সাম্রাজ্যবাদের ক্রুজ মিসাইল ও প্যাট্টিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রের ভিডিও প্রদর্শনের উদ্দেশ্য একটাই ,তা হলো এগুলোর ভয় দেখিয়ে মানুষকে দাসত্বের নিগড়ে আবদ্ধ করা। যে ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠী এরূপ দুনিয়াবী শক্তি দেখে ভয় পেলো ,তাগুতের দাসত্ব স্বীকার করে নিলো তারাই দুর্বল ঈমানের অধিকারী। এতো বেশি লোক এত সহজে তাগুতের অস্ত্রের ঝলকানিতে ভয় পায় যে ,তাগুতী শক্তি নিজেকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মনে করে বসে। সে মুহূর্তে যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠি ঘোষণা করে সে তাগুতের দাসত্ব স্বীকার করতে রাজি নয় ,তাগুতের হাজারো মারণাস্ত্রের কাছে এতটুকু ভীত না হয়ে সে তার মোকাবিলা করতে রাজি ,তখনই তাগুতের সমস্তত দম্ভ চূর্ণ হয়ে যায়। ক্রোধে অন্ধ হয়ে তাগুত হয়তো এ বিদ্রোহীকে হত্যা করতে পারে ,কিন্তু অন্তরে সে পরাজয় ও হতাশারা গ্লানি ছাড়া আর কিছুই অনুভব করতে পারে না। আশুরার দিন ইয়াযীদ বাহিনী ইমাম হোসাইন (আ.) -এর রক্তপাত করেছিল এবং তার পবিত্র দেহের ওপর ঘোড়া ছুটিয়ে তার শারীরিক অস্তিত্বের অবমাননা করতে চেষ্টা করেছে সত্য ,কিন্তু তারা স্বাধীন আত্মার মর্যাদাকে এতটুকু খাটো করতে পারেনি ,বরং গৌরবান্বিত করেছে। এখানেই ইমাম হোসাইনের বিজয়। এ থেকেই পরবর্তীকালে মানুষ উদ্দীপনা পেয়েছে ,শিক্ষা গ্রহণ করেছে যে তাগুতী শক্তির হাজারো লোকবল ও হাজারো মারণাস্ত্রের চেয়ে ঈমান-যে ঈমান হোসাইনের মতো নির্দ্বিধায় রক্ত বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত-বেশি শক্তিশালী।

ঠিক যেমনিভাবে ইয়াযীদ তার শক্তির দাপট দেখিয়ে ইমাম হোসাইনকে নতিস্বীকার করাতে চেয়েছিল তেমনিভাবে আজকের যুগের আমেরিকা ও অন্যান্য পরাশক্তি হাইড্রোজেন বোমা ,ক্রজ মিসাইল আর প্রেসিশন বম্বিং-এর ভিডিও দেখিয়ে বিশ্বের মযলুম জনগোষ্ঠীকে দাস বানিয়ে রাখতে চায়। বিশ্বের ক্ষুদ্র দেশগুলো এসব দেখে ভয়ে নতি স্বীকারও করে নেয় পরাশক্তিগুলোর। যখন বিশ্বে দুই পরাশক্তির রাজত্ব (Bipolar World ) ছিলো তখন এটা ধরেই নেয়া হতো যে ,কোনো দেশ যদি আমেরিকার দাসত্ব ছেড়ে আসতে চায় তাহলে তাকে রাশিয়ার দাসত্ব কবুল করতেই হবে ,আর রাশিয়ার বলয়মুক্ত হতে হলে আমেরিকার খপ্পরে ধরা দিতেই হবে । ফলে 1979 সালে ইরানের বিপ্লবী জনতা যখন হযরত আয়াতুল্লাহ খোমেইনী (রহ.) -এর নেতৃত্বে ঘোষণা করলো , লা শারকীয়া লা গারবিয়া (প্রাচ্য নয় ,পাশ্চাত্য নয়) তখন বিশ্বের তাবৎ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের আক্কেল গুড়ুম হয়ে গিয়েছিল । শাহের পাশ্চাত্য প্রভুরা যখন দেখলো জনগণ ভীষণদর্শন ট্যাংক ,কামান আর রিকয়েললেস রাইফেলকে উপেক্ষা করে বুকের রক্ত বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত তখন তারা বুঝলো তাদের সকল মারণাস্ত্র ,সকল সামরিক গবেষণা ,সিআইএ র সকল গোয়েন্দাবৃত্তি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। হেনরী কিসিঞ্জারের মতো খ্যাতিমান কূটনীতিক ঘোষণা করলেন , দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ইরানের বিপ্লব আমেরিকার জন্য সবচেয়ে বড়-রাজনৈতিক বিপর্যয় (Greatest Geopolitical Disaster ) ।

কেনো কিসিঞ্জার ইরানের বিপ্লবকে আমেরিকার জন্য এক মহাবিপর্যয় বলে অভিহিত করলেন ? ইরানের বিপ্লবীরা কি আমেরিকার এক ইঞ্চি পরিমাণ ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছিল ? এর উত্তর মিলবে কিসিঞ্জারের অন্য আরেকটি উক্তি থেকে । ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলাকালে ফরাসী প্রধানমন্ত্রী দ্যগল কিসিঞ্জারকে প্রশ্ন করেছিলেন : ভিয়েতনামে যুদ্ধ চালিয়ে তোমাদের লোকসান ছাড়া লাভ তো হচ্ছে না ,এর পরেও তোমরা ভিয়েতনাম থেকে সৈন্য সরিয়ে আনছো না কেন ? কিসিঞ্জার জবাবে বললেন , এতে আমাদের বিশ্বাস যোগ্যতা (Credibility ) ক্ষতিগ্রস্ত হবে । দ্যগল বললেন , কোথায় তোমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবার ভয় পাচ্ছ ? কিসিঞ্জার বললেন , মধ্যপ্রাচ্যে । কূটনৈতিক পরিভাষায় কিসিঞ্জার যা বলতে চাইলেন তা হচ্ছে ভিয়েতনাম থেকে আমরা যদি সৈন্য সরিয়ে আনি তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানরা আমাদের আর ভয় পাবে না অর্থাৎ মুসলমানদেরকে যে শক্তি দেখিয়ে আমরা পদানত রাখতে চাই ,সে শক্তি প্রদর্শনের জন্য আমাদের ভিয়েতনামে যথেচ্ছ বোমাবর্ষণ করা দরকার। লক্ষ্য করলে দেখবেন ,এ মানসিকতাই ইয়াযিদী মানসিকতা । দ্যগলের সাথে কিসিঞ্জারের এ কথোপকথনের এক দশক পরেই যখন সাম্রাজ্যবাদের সমস্ত কূটচাল আর ভয়-ভীতিকে উপেক্ষা করে ইমাম হোসাইনের পথ ধরে ইমাম খোমেইনীর কণ্ঠে উচ্চারিত হলো , আল্লাহ আকবার এবং জনতা ও কাফন পরে রাজপথে নেমে এলো ,তখন আমেরিকার সিআইএ ,পররাষ্ট্র দফতর ,প্রেসিডেন্টের দফতর ইত্যাদির মধ্যেই পারস্পরিক দ্বন্দ শুরু হয়ে গিয়েছিল । তারা একে অপরকে দায়ী করছিল পরাজয়ের জন্য। কেউ বলছিল সিআইএ র গোযেন্দা তথ্যাবলী ভুল ছিল ,কেউ বলছিল পররাষ্ট্র দফতরের নীতিতে ভুল ছিল ইত্যাদি। এর কারণ ,তারা আজও ইমাম হোসাইনের শিক্ষা উপলদ্ধি করতে পারেনি।

ইমাম হোসাইন শিখিয়েছেন বাহ্যিক অর্জন বড় কথা নয় ,সত্যের সাক্ষ্যদিতে পারাটাই আসল বিজয়। তাই অনেকে যদিও মনে করেন ইমাম খোমেইনী (রহ.) ও ইরানের বিপ্লবীরা 1979 সালের পয়লা ফেব্রুয়ারিতে একটা ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিজয় অর্জন করেছিলেন ,সেটা আসলে ভুল ধারণা। বিজয় অর্জিত হয়েছিল তখনই যখন শাহের সর্বাধুনিক অস্ত্রসজ্জিত বাহিনীর বিরুদ্ধে জনগণ খালি হাতে এগিয়ে গিয়েছিল নির্দ্বিধায়। ইরানের বিরুদ্ধে ইরাক কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের সময় ইমাম খোমেইনী বলেছিলেন , আমরা যদি যুদ্ধক্ষেত্রে এগুতে এগুতে বাগদাদ পর্যন্ত অগ্রসর হই তবু তাকে বিজয় বলা যাবে না। আর আমরা যদি পিছু হটতে হটতে একেবারে তেহরানেও এসে ঠেকি তবুও তাকে পরাজয় বলা যাবে না। আমাদের বিজয় আমাদের ওপর ন্যস্ত খোদায়ী দায়িত্ব পালন করার মধ্যেই নিহিত। এ শিক্ষা আশুরা বিপ্লবেরই শিক্ষা।

আশুরা বিপ্লবের আরেকটি বড় দিক হলো সঠিক ধর্মকে মেকী ধর্মাচরণ থেকে পৃথকীকরণ। বর্ণিত আছে যে ,ইয়াযীদের সৈন্যরা আশুরার দিন একে অপরকে বলছিল : তাড়াতাড়ি হোসাইনের শির কেটে নাও ,আসরের নামাযের সময় পার হয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ তারা ধর্মের বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠান পালন করতো কিন্তু ধর্মের লক্ষ্য আদর্শকে কতল করতে এতটুকু দ্বিধাগ্রস্ত ছিল না। আজকের যুগের ইয়াযীদরাও মাঝে মাঝে ধর্মের পাশোক ধারণ করে ধর্মের শিক্ষাকে ধ্বংস করতে এতটুকু পিছপা নয়। আমেরিকান ইসলাম , সউদী ইসলাম ইত্যাদি নানান রূপ ধরে ইসলামের নামে ইসলামী আদর্শকে ধ্বংস করার চেষ্টা হচ্ছে। হজ্বের মতো সমাবেশে আমেরিকা ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়া নিষিদ্ধ করা হচ্ছে ইসলামেরই নামে। নির্ভেজাল তাওহীদ প্রতিষ্ঠার নামে সৃষ্টি করা হয়েছে বিষাক্ত ওয়াহাবী মতবাদ ,যে মতবাদ অনুযায়ী লম্পট রাজাদের বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র জায়েয ,ইয়াহুদী-নাসারা শাসিত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রতিটি আদেশ-নির্দেশ মেনে চলা জায়েয ,কিন্তু ইমাম হোসাইন (আ.) -এর জন্য শোক প্রকাশ করা বিদআত ,হে মুসলমানদের দুঃখ দুর্দশার প্রতিকারকল্পে ইয়াহুদী-নাসারাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়া নাজায়েয। আশুরার বিপ্লব আমাদের শিক্ষা দেয় যে ,বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠান পালনকারীরাও ইয়াযীদের দলভুক্ত হতে পারে এবং তাদেরই হাতে ঝরতে পারে আজকের হোসাইনীদের রক্ত।

আজ বড় শয়তানের দেশ আমেরিকার প্রেসিডেন্টও উদ্ধৃত করেন পবিত্র কুরআনের আয়াত ,ঠিক যেমনিভাবে ইয়াযীদ কারবালার বন্দিনী হযরত যায়নাবের সামনে উচ্চারণ করেছিল । ইয়াযীদ সেদিন কুরআনের আয়াত , আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন ,যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন উচ্চারণ করে বোঝাতে চেয়েছিল যে ,আল্লাহর ইচ্ছাতেই যায়নাবের (সালামুল্লাহ আলাইহা) সঙ্গী-সাথী দের এ বন্দি দশা এবং আল্লাহর ইচ্ছাতেই ইমাম হোসাইনের পবিত্র দেহ পদদলিত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টও আজ কুরআনের আয়াত উচ্চারণ করে ফিলিস্তিনিদের দাসখত লেখার অনুষ্ঠানে। যে চুক্তি দিয়ে ইয়াহুদীবাদীদের সমস্ত অপকর্মকে বৈধতা দেয়া হলো ,যে চুক্তি দিয়ে ঘোষণা করা হলো লক্ষ্য কোটি ফিলিস্তিনির হত্যা ,সন্ত্রাস ,ধর্ষণ ও জুলুমের মাধ্যমে দেশছাড়া করা সম্পূর্ণ বৈধ ,যে চুক্তি দিয়ে মুসলমানদের তৃতীয় কেবলা সান্ত্রাসবাদী জালিম ইয়াহুদী শাসকদের হাতে তুলে দেয়া হলো ,যে চুক্তি দিয়ে ফিলিস্তিনিদের দিয়ে ইয়াহুদীদের আনুগত্য করতে বাধ্য করা হলো ,সে দাসখতের নাম দেয়া হলো শান্তি চুক্তি । আর দাসখত লেখার অনুষ্ঠানে ওরা কুরআনের আয়াত , যদি তারা শান্তির আহবান নিয়ে আসে তোমরাও তাতে রাজি হও উদ্ধৃত করার মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করে যে ,কুরআনই তোমাদের এ দাসখত লেখাকে সমর্থন করে ।

আশুরার আর ও অনেক দিক ও গভীর তাৎপর্য রয়েছে । সকল দিকের উপলদ্ধি আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে ধারণ অসন্তুষ্ট । আমি এ এটুকু বলে শেষ করবো যে ,যুগে যুগে যখনই মানুষ ইসলাম বিস্মৃত হয়েছে তখনই আল্লাহ মানুষকে সংশোধন করার জন্য নবী ,রাসূল ও ইমাম পাঠিয়েছেন। ইমাম হোসাইন (আ.) এমন এক সময়ে আশুরার বিপ্লব সাধন করেছিলেন যখন ইসলামের বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠান বিদ্যমান থাকলেও মানুষ ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে সরে গিয়েছিল । এ বিপ্লব করতে গিয়ে তিনি রক্ত দিয়ে সত্যের সাক্ষ্য দান করে প্রমাণ করলেন যে ,রক্ত সকল মারণাস্ত্রের বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারে। আশুরার এ শিক্ষার আজ ইরানের বিপ্লবে ,লেবাননের হিযবুল্লাহ কর্তৃক শক্তিশালী ইসরাইলী বাহিনীর মোকাবিলায় এবং কাশ্মীর ,আলজেরিয়া ,মিশর-সুদানসহ বিশ্বে ইসলামের মুজাহিদদের প্রেরণার উৎস।

*অধ্যাপক ,অর্থনীতি বিভাগ ,সাউথইষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় ,ঢাকা

কবিতা

মোহররমের চাঁদ এল ঐ

কাজী নজরুল ইসলাম

মোহররমের চাঁদ এল ঐ কাঁদাতে ফের দুনিয়ায়

ওয়া হোসেনা ওয়া হোসেনা তারি মাতম শোনা যায়।।

কাঁদিয়া জয়নাল আবেদীন বেহোশ হ 'ল কারবালায়

বেহেশতে লুটিয়া কাঁদে আলি ও মা-ফাতেমায়।।

আজও শুনি কাঁদে যেন কুল মুলুক্ আসমান জমীন

ঝরে মেঘে খুন লালে-লাল শোক-মরু সাহারায়।।

কাশেমের লাশ লয়ে কাঁদে বিবি সকিনা

আসগারের ঐ কচি বুকে তীর দেখে কাঁদে খোদায়।।

কাঁদে বিশ্বের মুসলিম আজি ,গাহে তারি মর্সিয়া

ঝরে হাজার বছর ধ 'রে অশ্রু তারি শোকে হায়।।

[জুলফিকার]

শহীদে কারবালা

ফররুখ আহমদ

'সকলে শহীদ হৈল দস্তকারবালাতে '

ফোরাতের তীরে তীরে কাঁদে আজও সংখ্যাহীণ প্রাণ ;

উদভ্রান্ত ঘূর্ণিরর মত শান্তি চায় মাতমে - কান্নায় ,

যেখানে মৃত্যুর মুখে তৃষ্ণাতপ্ত মরুর হাওয়ায়

জিগরের খুন দিল কারবালার বীর শহীদান।

স্মৃতির পাথর পটে সে কাহিনী রয়েছে অম্লান

উজ্জ্বল রক্তের রঙে ,মোছেনি তা মরু সাহারায় ,

লোভের পঙ্কিল পথে অথবা রাত্রির তমসায়

যেখানে জ্বালালো দীপ সত্যাশ্রয়ী আদম সন্তান।

নির্ভীক মুসার পণ ,খলিলের সুদৃঢ় ঈমান

যেখানে দেখেছি দীপ্ত ,মসীকৃষ্ণ রাত্রির ছায়ায়

কুতুব তারার মত প্রোজ্জ্বল আপন মহিমায়

যেখানে দেখেছি চেয়ে সর্বত্যাগী হুসেনের দান ,

যেখানে শুনেছে প্রাণ মৃত্যুঞ্জয়ী শহীদের গান

পুঁথির পাতায় নয় জীবনের প্রতিটি পৃষ্ঠায়।।

শহীদে কারবালা

শাহাদাৎ হোসেন

দামামার দমদম তুৰ্য্যের বাজনা

থেমে গেছে ,স্তব্ধ সে মৃত্যুর সাহানা ।

ছায়াময়ী সন্ধ্যা সে নামে ধীরে বিশ্বে

নিভে যায় আলো-রেখা আঁধারের দৃশ্যে ।

রক্তে নহর বয় কারবালা-বক্ষে

অশ্রুর ধারা ঝরে প্রকৃতির চক্ষে ।

সন্ধ্যার আসমান উঠিয়াছে রাঙিয়া

শহীদের খুন যেন দিয়েছে কে ঢালিয়া ।

ওকে বীর ধেয়ে যায় ফোরাতের কুলেতে

উন্মাদ পিপাসায় কর চাপি বুকেতে ?

মণি-দীপ ও যে গো হজরৎ বংশের

দুষমনে খেদায়ে করে ধরি শমশের

ফোরাতের বারি পানে শীতলিতে পরাণী

চলে দ্রুত ,ঘর্ম্মেতে সিক্ত সে পেশানী।

ও কি পুন! স্বাদুনীরে অঞ্জলি ভরিয়া

মুখে তুলি পান বিনা দিল যে ও ফেলিয়া ।

কূলে উঠি ওই অঙ্গের বসনে

উন্মোচি একে একে ভূতলের শয়নে

ঢালে দেহ বীরবর বীরসাজ ত্যজিয়া

শ্রান্ত কি কেশরী ও পড়িয়াছে ঢলিয়া

জম্বুক সংগ্রামে ? হুঙ্কারি নিমেষে

কে রে তুই নির্ম্মম ধেয়ে এলি কি বেশে ?

কি করিস! কি করিস! রে ঘাতক কেমনে

বসিলি রে নির্ভয়ে ও ছাতির আসনে!

কোনা প্রাণে নির্ম্মম নূরাণী ও অঙ্গে

বসিলি রে উল্লাসে দানবের ভঙ্গে ?

ও কি পুন খঞ্জরে রক্তের ফিনকি!

মনে নাই রে-ঘাতক হাসরের দিন কি ?

ওই শোন্ ক্রন্দনে বেজে ওঠে দুনিয়া-

হায়! হায়! হা হোসেন! আসমান চুনিয়া-

খুন ঝরে প্রান্তরে জান্নাত নিঙাড়ি ,

কল্লোলে কাঁদে নদী সৈকতে আছাড়ি।

নূরনবী হজরৎ নিশিদিন যাহারে

চুমিতেন বুকে ধরি ,সস্নেহে আদরে ,

সেই আজি প্রান্তরে রক্তের শয়নে

আছে শুয়ে পাণ্ডুর জ্যোতি-লেখা নয়নে।

করিলি কি নির্দয়! ফুৎকারে নিভালি

প্রোজ্জ্বল দীপখানি ,ইসলামে ডুবালি!

[কলকাতা ,1327]

ইমামের শাহাদাত

হোসেন মাহমুদ

ধু ধু মরুভূমি ,আকাশে জ্বলন্ত সূর্য সারাদিন ঢালে অসহ্য উত্তাপ

নেই কোন সবুজের আভাস ডাকে না পাখি শুধু বৈরী বালির বিস্তার

অনাহার তৃষ্ণায় ধুকে মরছে অবরুদ্ধ একদল নিরীহ মানুষ

তাদের অপরাধ-তারা সাথী এক সত্যনিষ্ঠ ন্যায়বান মানুষের ।

ইমাম হোসেন সিজদা থেকে তোলেন মাথা ,এবার তার শেষ প্রস্তুতি

নিষ্ঠুর অত্যাচারী এজিদ হয়েছে এখন মুসলিম সাম্রাজ্যের খলিফা

হায়! দুর্ভাগ্য এই কওমের যে ,এক স্বৈরাচারী আজ তাদের শাসক

যে কি না কবর রচনা করেছে ইসলামী সাম্যের মহান ধারার।

তার অশুভ শক্তির প্রবল দাপটে সবাই থরথর কম্পমান

সম্পূর্ণ ভূলুণ্ঠিত আজ পবিত্র স্থান মক্কা ও মদীনার মর্যাদা

ভয় ত্রাসের সেই অন্ধকারে সত্যের মত দীপ্ত শুধু হোসেন

কে না জানে তিনি রাসূলের প্রিয় দৌহিত্র ,পুত্র আলী ও ফাতেমার

এ চরম দুর্দিনে তিনিই একমাত্র আশা সমগ্র মুসলিম উম্মাহর।

দশ মুহররম । শিশুদের আহাজারি-পানি! পানি! বুকে যন্ত্রণা বাড়ে

সত্যের বাধ ভাঙ্গে ,ইমাম অশ্বরূঢ় ,আজই হবে শেষ ফয়সালা ।

দুলদুল দুলকি চালে পৌছে যায় ফোরাতের তীরে ,শত্রুরা অপেক্ষায়

তাকে দেখেই শুরু করে তীর বর্ষণ ,কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই তার

হাতের খোলা তলোয়ার শুধু ঝলসায় ,যেন বিদ্যুতের চকিত চমক

শত্রুরা ঘিরে ফেলে তাকে ,কিন্তু সত্যের সামনে কি করে টিকবে মিথ্যা ?

রণহুঙ্কার ,অস্ত্রের ঝনঝন ,আঘাত ও প্রত্যাঘাত ,এক শত্রু মরে

পরক্ষণেই আসে আরেকজন ,তবু তিনি পৌছে যান ফোরাতের তীরে।

হায় পানি ,তোমার অন্য নাম জীবন! তিনি আজলায় তুলে নেন পানি

মুখে দিতে গিয়েই মনে পড়ে যায় কাতার কচি শিশুদের মুখ

আঙ্গলের ফাক গলে পড়ে যায় পানি ,কিছুতেই হয়না পান করা।

হোসেন উঠে দাড়াতেই শত্রুসৈন্যের দল পুনরায় ঘিরে ধরে তাকে

আবার লড়াই। কিন্তু আর কত ? সব শক্তি নিঃশেষ হয়ে আসে তার

আঘাতে আঘাতে রক্তাক্ত দেহ ,অবসন্ন তিনি লুটিয়ে পড়েন ভূমিতে

তার চোখের সামনে ভুলুণ্ঠিত খিলাফত । দূরে শিবিরে ওঠে কান্নার রোল

সব আশাই শেষ ,সত্য ও ন্যায়ের শ্রেষ্ঠ পতাকাবাহী চলে যাচ্ছেন

আজ আশুরায় শাহাদাতের পিয়ালা ঠোটে ,খোলে জান্নাতের দরোজা।

এই তো সময়! পশুর অধর্ম সীমার তৎপর হয়ে ওঠে মুহূর্তেই

আর নিষ্কম্প হাতে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ইমামের পবিত্র মস্তক

একদিকে মর্মভেদী বিলাপ ও আহাজারিতে বিদীর্ণ আকাশ বাতাস

অন্যদিকে রক্তের নদীতে নেয়ে নাচে হাসে শত্রুরা উন্মত্ত উল্লাসে

পৃথিবী নীরবে চেয়ে দেখে মানব ইতিহাসের এই করুণ ট্টাজেডি। [অংশ বিশেষ]