আরশে আযীম ছুয়ে যায়
(মুহররম উপলক্ষে মুহতাশিমের বারো স্তবক)
ভাষান্তর
মুহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুস বাদশা
কাব্যরূপ ও সম্পাদনা
আবদুল মুকীত চৌধুরী
ভূমিকা
মার্সিয়া খানির জনক ইরানী সংগীত শিল্পী কামালুদ্দীন আলী মুহতাশিম কাশানী ,যার উপাধি‘
শামসুশ শোয়ারা (কবিদের সূর্য) কাশানী’
,দশম হিজরী শতাব্দীর সূচনালগ্নে পৃথিবীতে পদার্পণ করেছিলেন এবং 996 হিজরীতে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে ছিলেন । তিনি সাফাভীদের সমকালীন ছিলেন । মার্সিয়া গাওয়ার পূর্বে তিনি বাদশাহদের প্রশংসা-গীতি গাইতেন। কিন্তু শীয়া সাফাভী বাদশারা যেহেতু দ্বীনদারী ও দ্বীনের ইমামগণের স্মরণের প্রতি গুরুত্ব দিতেন ,সেহেতু তারা চাইলেন বাদশাহদের গুণগান থেকে কবিদেরকে দূরে সরিয়ে শীয়াদের ইমামগণের ফযিলত ও মানাকিব বর্ণনায় আগ্রহী করতে । মুহতাশিম কাশানী ছিলেন সেই সব কবির একজন যারা সাফাভীদের এক দ্বীনদার বাদশাহ শাহ তাহামাসেবের পরামর্শে ধর্মীয় কবিতার দিকে ফিরে ছিলেন এবং শীয়া ইমামগণের কষ্ট-ক্লেশের কথা বর্ণনা করতেন । তার কবিতাগুলো সাফাভীদের জন্য আদর্শিক ছিল ।
মুহতাশিম কিছুকাল পর সমসাময়িক বিখ্যাত কবিদের মধ্যে স্থান লাভ করেছিলেন । কিন্তু ধর্মীয় বিশ্বাস ও শীয়ায়ী অনুভূতির কারণে সম্পূর্ণ নতুন ও অদ্বিতীয় ধর্মীয় কবিতা ও আহলে বাইতের মাসায়েব (আহলে বাইতের দুঃখ-কষ্ট সম্পর্কে আবেগময় বর্ণনা) বর্ণনায় মশগুল হলেন। মুহতাশিম পরে ধর্মীয় কবিতা ও পবিত্র ইমামগণের মাসায়েবের দিক থেকে ইরানের অন্যতম কবিতে পরিণত হয়েছিলেন এবং তার কবিতা সমস্ত ইরানে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছিল । তাকে মার্সিয়া খনির জনক বলা যেতে পারে ,যিনি প্রথম বারের মতো ধর্মীয় কবিতার এক নতুন দিকের সূচনা করেছিলেন ।
এ কারনেই মুহতাশিম কাশানী ,শীয়া কবি ও ইমাম পরিবারের প্রশস্তি গানকারী কবিদের মধ্যে খ্যাতিমান‘
আশুরায়ী কবি’
বলে পরিগণিত। নিঃসন্দেহে মুহররম মুহতাশিম কাশানীর নামের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে। তিনি‘
দাওয়াযদাহ’
(অর্থাৎ বারো স্তবক) নামে কারবালার শহীদগণের ওপর কবিতা রচনা করে মার্সিয়া খানিতে সুউচ্চ স্থান লাভ করেছিলেন । তার এ মহান কাব্যের প্রথম পংতিমালা ছিল :
‘
গোটা দুনিয়ার সৃষ্টিলোকে এ কোন ফরিয়াদ জাগেলো ফের
এ কোন শোক-মাতম ওঠে ,হায় নওহার করুণ রবের!
শিলালিপিতে এ প্রশস্তি-গীতির পংতিগুলো এবং লাল-কালো পতাকাগুলো ইরান ও অন্যান্য দেশে মসজিদ ও হোসাইনিয়াসমূহকে আশুরার পরিবেশ দান করে ।
এ মহান কবি আমাদের জন্য তার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রদর্শনীমূলক কাব্যগ্রন্থ স্মৃতি হিসাবে রেখে গেছেন এবং কবিতার ভাষায় আশুরার সংস্কৃতিকে মানুষের মধ্যে ,বিশেষ করে আহলে বাইতের গুণগানকারীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এ প্রখ্যাত কবি ও স্বনামধন্য মার্সিয়া গায়কের ইমাম হোসাইন (আ.) ও কারবালার শহীদানের ওপর গাওয়া প্রশস্তিগুলো শীয়া ও বিশেষ করে ফার্সী ভাষাভাষিদের মুখে মুখে রয়েছে এবং অনেক কবির আকর্ষণ করেছে। মুহতাশিমের পরবর্তী অনেক কবিই তাদের নওহা ও কবিতায় তার থেকেই উপকৃত হয়েছেন।
বিষয়বস্তুর গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং কারবালার ঘটনার মর্মস্পর্শী বর্ণনাই গুরুত্বের কারণে ঢাকাস্থ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান কালচারাল সেন্টার আহলে বাইত ও ইমাম হোসাইন (আ.) -এর ভক্তদের জন্য মুহতাশিমের বারো স্তবক-এর অনুবাদ পেশ করছে।
এক.
গোটা দুনিয়ার সৃষ্টিলোকে এ কোন ফরিয়াদ জাগেলো ফের
এ কোন শোক-মাতম ওঠে ,হায় ,নওহার করুণ রবের!
জমীন ফুড়ে আবার এ কোন মহা কিয়ামত এলো ,হায়!
সিঙ্গার ফুক ছাড়াই যে আরশে আযীম ছুয়ে যায়!
কোথা থেকে জাগলো আবার এ বিষণ্ণ স্নান সকাল ,
যার আলোকে জগতবাসী হলো রে সব ব্যাকুল হাল!
পশ্চিম আকাশ ভেদ করে ঐ ওঠে রাঙা অরুণ
আকাশ মাটির অণুতে বয় দীল বেকারার শোক-আগুন।
যদি বলি রোজ কিয়ামত পৃথিবীতে ,নয় রঞ্জন
সর্বব্যাপী উত্থান পুন ,এর নাম যে মুহররম ।
পবিত্রতার দরবারে এ বিষাদের ঠাই নেই!
পবিত্র সে শিইসমূহ শোকাতুর ওরুতে সেই ।
জীন ও ফেরেশতা পড়ে ঐ নওহা মানুষের তরে ,
বনী আদম ভেসে চলে শোকের অশ্রু-সাগরে।
আকাশ–
মাটির সূর্য তিনি ,পূব ও পশ্চিমের আলো
রাসূলেরই কোল থেকে সেই হোসাইনী নূর ছড়ালো।
দুই.
কারবালার মরু ঝড়ে ভেঙ্গে গেছে তরী হায়!
ধুলো মাটি আর রক্তে মিশে পড়ে আছে কারবালায় ।
কালের চোখ কেদে যদি সারা হয় জন্য তার
রক্ত স্রোত উপচে যেত সে অলিন্দে কারবালার।
গোলাপজল করেনি গ্রহণ কারবালার বাগিচায়
যা নিয়েছে কাল ,সে তো অশ্রুঝরা ,হায়!
পানিও দিতে হয়নি রাজি হায় রে কুফার জনগণ
কারবালার মেহমানদের এ কেমনে রে আপ্যায়ন!
শয়তান আর বুনো পশু- তাদেরও তা নেই বারণ ,
বিদায় নেন শুধু শাহে কারবালা হোসাইন পানি বিহন।
পিপাসু সে কান্নার রোল ওঠে আকাশের দিকে
‘
বুক ফেটে যায় দাও পানি’
রব মরু কারবালা থেকে ।
হায় রে এ কোন দৃশ্য দেখি ,শরম পায়নি এ দুশমন
হোসাইনের খীমা ধ্বংস করতে চালায় ঘৃণ্য আক্রমণ!
আকাশের বুক সেদিন ছিল ভারী বেদন-যন্ত্রণায়
দুশমন ভয়ে ওঠে ফরিয়াদ হেরেমে খীমায় ।
তিন.
ইস ! যদি ভেঙে পড়তো আকাশ সে ক্ষণ
মূল খুটি পড়ে গলে হয় সে যেমন!
ইস! যদি পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যত বয়ে
কালো বান্যার ঢলে মাটি আলকাতারা সম হয়ে !
ইস! আহলে বাইতের সে বুকফাটা কান্নার তপ্ত নিঃশ্বাস
যার আগুনে হতো জগতের সব শস্য বিনাশ!
ইস! সে মুহূর্তে যখন ঘটলো এ অঘটন
আকাশ মাটির’
পর যেন স্থির পারদ তখন !
ইস! মুবারক দেহ তার যখন রাখা হয় মাটির ভেতরে
বের হয়ে যেতো শরীর ছিড়ে প্রাণগুলো বিশ্বচরাচরে!
ইস! যখন নবী-বংশের নৗকাখানি ভেঙে যায়
ডুবে যেতো সৃষ্টিজগত রক্তের দরিয়ায়!
প্রতিশোধের কথা থাকতো না যদি রোজ হাশরে
এর বদলা দুনিয়া তখন নিত কমন করে ?
আলে নবী বিচারের ফরিয়াদ জানাবেন যখন
আরশের ভিত কেপে কেপে টলমল তখন ।
চার.
শোক-মজলিসে দস্তরখানে যখন জগতবাসীকে আহ্বান জানায়
সর্বপ্রথম আম্বিয়াকুলের কাছে সে দাওয়াত পৌছায়।
ওলীর পালা আসে যখন আসমান হয় কম্পমান
শেরে খোদার মাথায় যখন আঘাত হানে ঐ কৃপাণ।
স্বয়ং জিবরীল আমীন ছিলেন খাদেম যে দরোজার
সে দরোজা দিয়ে জালিম ভাঙে পাজর খায়রুন্নেসার।
যে হেরেমে ছিল না ফেরেশতারও প্রবেশের অনুমতি ,
উপড়ে তাদের মদীনা থেকে কারবালায় আনে দুর্মতি।
মরুর বুকে কুফাবাসীর কুঠার আঘাতে
কাটা পড়ে আলে কেসার খেজুর বক্ষ তাতে ।
প্রচণ্ড আঘাত সে বিদীর্ণ করে কলিজা মুস্তফার।
নেমে আসে গলার ওপর বংশধরের মুর্তজার।
কাপড় ছিড়ে আর চুল ছড়িয়ে হেরেমের বিবিরা সব
মহন খোদার দরবারে জোর ফরিয়াদ তোলে ,ইয়া রব!
ধিকিধিকি বহ্ণমান তাদের দহন
সে আগুনে হাসান মুজতবা অঙ্গার হন।
শোকে মুহ্যমান হাটুতে মাথা গুজে মুখ আড়াল
আধার নামে সূর্যগ্রহণ দেখে এ দৃশ্য ভয়াল!
পাঁচ.
তার শুষ্ক কণ্ঠের রক্ত মাটিতে পড়ে যখন
ফুটন্ত বুদবুদ হয়ে আরশ পানে ধায় তখন ।
হায় হায় ঈমানের ঘর এই বুঝি ধ্বংস হয়!
দীনের প্রাণ স্তম্ভসমূহ কতো আর আঘাত সয় ?
দীঘল দহী বৃক্ষ করে ভূপাতিত কী পাষণ্ড তায়!
মাটির ধূলি ঊর্ধ্বমুখী ছাটে ঝড়ো হাওয়ায় ,
বাতাসে মিশে সে ধূলি পৌছে নবীজীর মাযার
দেয় সাত আকাশে উড়াল মদীনা ঘুরে এবার।
ঊর্ধ্বলোকে ঈসার কাছে যখন শোকে র এ খবর পৌছায়ঁ
শোকের কালো পাশোক তিনি পরতে চান তার গায়।
শোক-মাতম আর রানাজারি চলে আসমানে সারা
বুক ফাটিয়ে কাঁদেন এবার জিবরীল ও ফেরেশতারা।
সে ধুলি এবার স্রষ্টা খোদার দামনে আযীম ছোয়
এসব কল্পনার কথা ,ভ্রান্তি বৈ আর কিছু তো নয়।
যদিও পুত-পবিত্র খোদা সব আবেগের ঊর্ধ্বে শান
অন্তরে আসীন তিনি ,বেদনার তো ছোয়া পান ।
ছয়.
ভয় ,যখন তার খুনীর আমলনামা তুলে ধরা হবে
রহমতের দরোজাখানি সবার পরে বন্ধ হবে তবে।
এমন পাপের পর হাশরের শাফীগণ ,ভয়
সৃষ্টির ক্ষমার সুপারিশে তাদের লজ্জায় পড়তে হয়!
খোদায়ী শাস্তির হাত আস্তিন থেকে নমে যায়
যখন আহলে বাইত জালিমের বিরুদ্ধে নালিশ জানায়।
আহ! আলে আলীর রক্ত ঝরা কাফন যখন
উঠবে মাটি থেকে ,অগ্নিশিখা পতাকা যেমন!
নবী-বংশের যুবাদের দেখে আকাশভেদী আর্তনাদ ওঠে
ফুলেল কাফনে ঘুরে বেড়ায় যখন রোজ হাশেরের মাঠে।
শাহাদাত প্রেমে ভেঙে পড়ে যাদের সারি কারবালায়
হাশেরের মাঠে অন্য সারি ভেঙ্গে সারিবদ্ধ তারা এগিয়ে যায়।
শিকার নিষিদ্ধ হেরেম শরীফে চালিয়েছে যাতর তলোয়ার
হেরেমের মালিকের কাছে থাকবে তাদের কি আশা আর ?
অতঃপর বর্শাগ্রে তুলে একটি শির ,চুল থেকে জিবরীল যার
ধূলোমাটি সালসাবিলের পানিতে করেন পরিস্কার।
সাত.
যেদিন মহান ইমামের শির তোলা হলো বর্শার আগায়
পাহাড়ের পেছনে সূর্য বেরিযে এলো খোলা মাথায়।
মহা তরঙ্গ উছলে ওঠে পাহাড় সমান উচু হয়ে
মেঘমালা বৃষ্টি ঝরায় জারেজার কেদে বয়ে।
যেনো ভূমিকম্পে প্রকম্পিত স্থির ভূপৃষ্ঠ গোটা জমীন
যেনো ঘুর্ণায়মান চক্র হলো আবর্তনের গতি-বিহীন।
আরশপাক সে মুহূর্তে কেপে ওঠে ,যখন
কালচক্র থেমে যায় ,যেন প্রকাশ্য কিয়ামত তখন !
যে খীমাগুলো বাধা ছিল হুরের বেণী দ্বারা
এক মুহূর্তে ধসে পড়ে যেন ভাসমান বুদবুদ তারা।
প্রহরায় ছিলেন রুহুল আমীন জিবরীল যে হাওদার ,
তারা আজ সওয়ার ;নেই হাওদা ও লাগামধারী ,কাফেলার।
হায়! শেষনবীর উম্মত তারা ,যারা এ নৃশংসতা ঘটায়।
জিবরীল আমীন হায় রাসূল সকাশে লজ্জা পায়।
রওনা হয় সেনারা যখন কুফা থেকে শাম দেশে
কী নিদারুণ! মনে হয় রোজ কিয়ামত গেছে এসে!
আট.
যাত্রা পথে কাফেলা যখন ময়দান অতিক্রম করে
অবাক বিষাদের করুণ বেদনা সবাইকে ঘিরে ঘিরে ।
নওহার করুণ সুরধ্বনি ষড় দিক পানে ছড়িয়ে যায়
সাত আকাশের ফেরেশতাকুল তাদের কাদনে সুর মেলায়।
বনের হরিণ চমকে ওঠে পথ চলা তার থমকে যায়
নীড় ছেড়ে ছিটকে পড়ে আকাশের যত পাখি ,হায়!
আতঙ্কে স্তব্ধ সব ,কিয়ামতের উৎকণ্ঠা হার মানায়
শহীদের লাশে নজর পড়ে যখন আলে নবীর ,হায়!
শহীদানের লাশের উপর যতই ঘটে দৃষ্টিপাত
গভীর ক্ষত-বিক্ষত লাশে তলোয়ার ও বর্শার আঘাত।
হটাৎ দৃষ্টি পড়ে লাশের মাঝে ফাতেমা তনয়ার
শায়িত পবিত্র দেহের ওপর ,ইমামে জামানার ;
চিৎকার করে বলে ওঠে ,হায় হুসাইন! বুক ফাটায় ,
ফরিয়াদ শুনে যেন আগুন লেগে যায় এ দুনিয়ায় !
সইতে না পেরে নালিশ করে রাসূলের টুকরো কলিজার
মদীনা পানে মুখ করে বলে ,দেখো রাসূল ,নানা আমার !
নয়.
মরুর বুকে পড়ে থাকা এ লাশ নানা ,তোমারই হোসাইন ,
হস্ত-পদ রক্তে রঙিন এ শিকার ,তোমারই হোসাইন ।
তাজা এ খেজুর বৃক্ষ পিপাসার আগুন জ্বালায়
ধোয়া তুলে মাটি থেকে আকাশ পানে ,তোমারই হোসাইন ।
লোহু দরিয়ায় ডুবে গেছে যে মাছ ,কে সে বলো দেখি ?
যার শরীরে ক্ষতসংখ্যা তারারও বেশি ,তোমারই হোসাইন
শাহাদাতের পরিমণ্ডলে নিমজ্জিত এই যে ,যার
রক্তে ঢলে মরু রঙিন ,তোমারই হোসাইন
ফোরাতের কুল ছেড়ে দূরে পড়ে রয়েছে শুষ্ককষ্ঠী ,
যার রক্তস্রোতে বইছে জইহুন নদী ,তোমারই হোসাইন ।
স্বল্প সেনার সেনাপতি ,অজস্র অশ্রু আর আর্তনাদে
খীমা গেড়েছেন জগতের বাইরে ,তোমারই হোসাইন
মাটির ওপর পড়ে যার বইছে হৃদ-স্পন্দন ধিকি-ধিকি ,
শহীদ-নেতা যার হয়নি দাফন ,তোমারই হোসাইন।
বাকী’
র দিকে মুখ ফিরিয়ে ডেকে বলেন মা ফাতেময়
মাটির জন্তু ও আকাশের পাখির কলিজা কাবাব শুনে তায়।
দশ
ভগ্ন হৃদয়ের সান্তনা চেয়ে দেখো মা গো আমাদের হাল
আমরা কতো ভিনদেশী আর পরিচয়হীন দেখো একবার!
তোমার আওলাদ ,যার শাফায়াতকারী ময়দানে হাশর
বিচারের ভার নিয়েছে দেখো জালিম বর্বর।
চির জগতের বাসিন্দা হে! দ্বি-জাগতিক পর্দা সরাও
বিপদ ভরা জগতে আমরা কী বিপন্ন ফিরে তাকাও ।
না না ,এ যেনো ক্ষিপ্র বর্ষণশীল মেঘ আকাশে কারবালার
দেখো সে ফেতনার বান ,বিধ্বংসী বিপদের তরঙ্গ আর ।
রক্ত মাটিতে শহীদানের লাশ হয়েছে একাকার
শির সব দেখো বর্শার ওপর-যারা ছিলো সরওয়ার।
যার মাথা থাকতো সারাক্ষণ রাসূলে কাধে ,হায়!
তাকে দেখে বিচ্ছিন্ন কেমন শত্রুর বর্শার ডগায়!
যার দেহ পালিত হয় স্নেহের আচলে তোমার
ধুলো মাটিতে মলিন হলো দেখো ময়দানে কারবালার ।
হে রাসূলের দেহের টুকরো! ইবনে যিয়াদের চাও বিচার
আহলে বাইতের রেসালাতের যে করেছে ধ্বংস-সার।
এগারো.
নীরব থাকো হে মুহতাশিম! পানি হলো পাথরের অন্তর
ধৈর্যের বাধ আর শক্তির ভিত আজ যে গেছে ধসে ওর
নীরব থাকো হে মুহতাশিম! এসব মর্মবিদারী কথায়
শূন্যের পাখি ও সাগরের মাছ ,কলিজা কাবাব ,এ ব্যথায়।
নীরব থাকো হে মুহতাশিম! শোক-গাথা কত শোনাবে আর
শ্রোতাদের চোখ ফেটে দেখো বইছে কত রক্তধার
নীরব থাকো হে মুহতাশিম!কান্না-ছন্দ বেধো না আর
জমিনের বুক রক্তধারায় জ্বলে পুড়ে হয় ছার-খার!
নীরব থাকো হে মুহতাশিম! রক্তধারায় কাঁদে আকাশ !
সাগর বুকে হাজারো বুদ্বুদ সে রক্তলাল ,দীর্ঘশ্বাস
নীরব থাকো হে মুহতাশিম! সূর্য তোমার দুখ জ্বালায়
চাঁদের মতো শীতল হলো মাতমিয়াদের শোক-ব্যথায়!
নীরব থাকো হে মুহতাশিম! হুসাইন ব্যথা বলো না আর
রাসূলের সামনে জিবরীলের মুখ নেই যে দেখাবার
নীচ দুনিয়া আয়ুষ্কালে করেনি এমন অবিচার
এরূপ জুলুম করেনি কখনো কোনো সৃষ্টির ওপরে আর !
বার.
হে দুনিয়া! তুই জানিস না করেছিস কী অবিচার
আর হিংসা থেকে জন্ম দিয়েছিস অন্যায় কতো অত্যাচার !
তাকে ভর্ৎসনায় যথেষ্ট এই :আলে রাসূলের ওপর
করলো জুলুম দুশমন ,তুই হয়েছিস তার দোসর ;
নমরুদও যা করেনি কোনোদিন হায় রে ইবনে যিয়াদ!
তুই করেছিস তারো বেশি ,পাষণ্ড তুইরে শাদ্দাদ।
ইয়াযীদের মন তুষ্ট করলি হোসাইনের প্রাণ কেড়ে
ভাবিস একবার কাকে খুশি করলি কাকে খুন করে ?
তোর এ পাপ বৃক্ষের ফল শুধু দুর্ভোগ-দুর্দশার
দীনের পবিত্র ফুল ও ফলে হানলি তুই কী ধ্বংস-সার!
দীনের চরম দুশমনদের প্রতিও করা হয় না যা
মুস্তফা ,হায়দার ও বংশের প্রতি তুই করলি তা
স্বয়ং নবী লাল ঠোটে করতেন চুম্বন যে গলায়
জালেম ,তুই চালিয়ে দিলি নির্দয় খঞ্জর তায়!
ভয়ে মরি যখন তাকে হাজির করা হবে ময়দানে হাশর
অন্ধকারে ডুবে যাবে তা আগুনের ধোয়ায় তোর ।
‘
প্রতিটি দিন আশুরা প্রতিটি ময়দানই কারবালা ।’
ইমাম জাফর সাদেক (আ.)