মুক্তির পথে

মুক্তির পথে0%

মুক্তির পথে লেখক:
প্রকাশক: যাহরা একাডেমী ক্বোম, ইরান
বিভাগ: আল্লাহর একত্ববাদ

মুক্তির পথে

লেখক: মোহাম্মদ নূরে আলম
প্রকাশক: যাহরা একাডেমী ক্বোম, ইরান
বিভাগ:

ভিজিট: 16473
ডাউনলোড: 3471

মুক্তির পথে
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 34 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 16473 / ডাউনলোড: 3471
সাইজ সাইজ সাইজ
মুক্তির পথে

মুক্তির পথে

লেখক:
প্রকাশক: যাহরা একাডেমী ক্বোম, ইরান
বাংলা

এ বইটিতে অত্যন্ত শক্তিশালী তাত্ত্বিক আলোচনা উপস্থাপন করেছেন। কোন অন্ধ অনুকরণ এবং বিশ্বাস সম্পর্কিত উদ্দীপনাময়ী ও চলমান গতানুগতিক আলোচনা এতে স্থান পায়নি বরং গ্রন্থটির সকল আলোচনাই হয়েছে সম্পূর্ণ সত্য এবং সুপ্রমানিত তথ্যসমূহের উপর ভিত্তি করে। আমরা সুস্থ বুদ্ধি ও বিবেককে কখনো বিতাড়িত করি না বরং একই সঙ্গে রাসূল (সঃ) কর্তৃক বর্ণিত দলীলের উপর স্থবির বুদ্ধিবৃত্তি এবং মানব বুদ্ধিবৃত্তির সমান ব্যবহারের পক্ষপাতি। কেননা তালাবদ্ধ চিন্তা-ভাবনা থেকে মুক্তির চাবি কাঠি হচ্ছে এ বুদ্ধিবৃত্তি। ফলে এরই মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঠিক দিক নির্দেশনা পেতে পারি। সাথে সাথে এ বুদ্ধিবৃত্তি আমাদেরকে এও বলে দেয় যে কোন্ বিষয়টি বিবেক প্রসূত আর কোনটি বিবেক-বহির্ভূত। এ গ্রন্থে বিভিন্ন সহজ বোধগম্য উদাহরণের মাধ্যমে চিন্তার বিকাশ সাধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে যথার্থভাবে ,যেন পরবর্তীতে অন্যান্য চিন্তাবিদ ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিবর্গ এ পথে নিজেদের পরিশ্রম ব্যয় করতে এগিয়ে আসেন।

মুক্তির পথে

মো : নূরে আলম

যাহরা একাডেমী ক্বোম-ইরান

মুক্তির পথে

মোঃ নূরে আলম

প্রকাশনায়

যাহরা একাডেমী বাড়ি নং-20 ,রোড নং-13 ,দৌরী শাহর ,কোম ,ইরান।

পরিবেশনায়

মাওলা আলী (কাঃ) একাডেমী

রেলগেট ,আলীগড় ,পোঃ চাঁচড়া ,থানাঃ কোতয়ালী ,জেলাঃ যশোর-7402।

প্রকাশকাল

18ই জিলহজ্ব 1426 হিজরী

19শে জানুয়ারী 2006 ইসায়ী

22শে ভাদ্র 1412 বাংলা

এই বইটি আল হাসানাইন (আ.) ওয়েব সাইট কর্তৃক আপলোড করা হয়েছে ।

উৎসর্গ

মুক্তিকামী মানুষের পথের দিশা দেখাতে মহাপ্রভু মানব সৃষ্টির প্রারম্ভ হতে অনবরত তাঁর মনোনীত মহাপুরুষদের প্রেরণ করেছেন। তাঁদেরই অনুসৃত পথের কান্ডারী,মুক্তিপ্রার্থী জনতার আশার আলো ,বর্তমান যামানার ইমাম ও নেতা -ইমাম মাহ্দী (আঃ) -এর পবিত্র সত্তার প্রতি।

1

হযরত আল্লামা ওস্তাদ সাইয়্যেদ হুসাইন মুর্তযা নাকাভীর প্রশংসাবাণী

[হযরত আল্লামা সাইয়্যেদ হুসাইন মুর্তুযা নাকাভী ভারতের লাখনৌ র অধিবাসী এক খ্যাতনামা ধর্মীয় সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তাঁর পিতা হযরত আল্লামা আয়াতুল্লাহ আল্ উয্মা সাইয়্যেদ মুর্তুযা হুসাইন সাদর আল্ আফাযিল (1346হিঃ -1407হিঃ) ছিলেন তৎকালীন একজন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ। তাঁর বিভিন্ন মূল্যবান গ্রন্থ আরাবী,ফ ারসী ও উর্দু ভাষায় মুদ্রিত হয়েছে।

পাকিস্তান বিভক্তির পর তিনি লাখনৌ থেকে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের ইসলামী সংস্কৃতির লালন ভুমি ও আল্লামা ইকবালের চারণ ভূমি লাহোরে স্বপরিবারে হিজরত করেন এবং মৃত্যু অবধি তিনি এখানেই বসবাস করে গেছেন। তার সমগ্র জীবন অতিবাহিত হয়েছে ইসলামী সংস্কৃতি উন্নয়নের লক্ষ্যে। আল্লাহ্ তার আত্মার প্রশান্তি দান করুন।(লেখক কর্তৃক ইয়ানুশ শিয়া ,খণ্ড 7 ,পৃঃ 324 -325 থেকে সংগৃহীত )

তারই সুযোগ্য সন্তান যাহরা একাডেমী -র প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা সাইয়্যেদ হুসাইন মুর্তুযা নাকাভী (মাদাঃ)। তিনি বর্তমান ধর্মীয় নগরী ক্কোমের একজন উচ্চস্তরের ফক্কিহ ও বিজ্ঞ আলেম হিসেবে সুপরিচিত। তারই অভিভাবকত্বে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী যাহরা একাডেমী -র সাংস্কৃতিক অভিযান।]

মহান আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ তার সকল সৃষ্টির মাঝে অফুরন্ত ও সীমাহীন । মানবজাতির উপর আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের সীমাহীনতা শুধুমাত্র সংখ্যার হিসেবেই নয় বরং এর রকমভেদও প্রচুর।

আল্লাহ পাক মানুষের জন্যে এমন সব অনুগ্রহ দান করেছেন যা অন্য কোন সৃষ্টিতে দান করেননি। এসব অনুগ্রহের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছে আক্কল বা বুদ্ধিবৃত্তি।

বুদ্ধিবৃত্তি এমন এক অনুগ্রহ যার সঙ্গে দ্বীন ও লজ্জা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ সৃষ্টি জগতে আমরা যে ভিন্নতা ও বৈচিত্রতা পরিলক্ষিত করি তা বুদ্ধিবৃত্তিরই এক অলৌকিক প্রভাব।

এখানে উল্লেখ করা হলো দ্বীন ও লজ্জা হচ্ছে আক্কলের জন্যে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বন্তু -এর কারণ কি ? উত্তরে বলা যায় ,বুদ্ধিবৃত্তির বাহক এ মানুষকে উক্ত দু টি জিনিসই শ্রেষ্ঠত্ব ও মহানুভবতার সুমহান মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দেয়। আর এ মর্যাদা ও মহানুভবতার দাবী হচ্ছে যে ,সে সর্বদা লজ্জাবনত থাকবে শ্রেষ্ঠ মর্যাদাবান সেই মহা অনুগ্রহকারীর সমক্ষে। এ কারণে কৃতজ্ঞতা ও লজ্জাবনতারই অপর নাম হচ্ছে তাক্বওয়া বা খোদাভীতি।

হযরত আলীর মতে দ্বীনি শিক্ষার সূচনা হচ্ছে আল্লাহর উপর ঈমান। আল্লাহর উপর ঈমান বা বিশ্বাসই হচ্ছে সকল উন্নতি ও অগ্রগতির মূল উৎস ও মানবতার মুক্তিদূত। সে-ই ভাগ্যবান ব্যক্তি যিনি অপরাপর লোকজনের মাধ্যমে মানুষকে দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন ।

যাহরা একাডেমী এমন এক সংস্থার নাম যেখানে কতক চিন্তাবিদ ও বিদ্বান ব্যক্তি সংঘবদ্ধভাবে জাহেলিয়াতের অন্ধকারের মাঝে নাজাতের পথ প্রদর্শনের লক্ষ্যে গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের মশাল হাতে মানবজাতিকে পথ-নির্দেশনার গুরু দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এদেরই অন্যতম আমাদের প্রিয় যুবক ,দ্বীনের আলেম ,হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমীন মাওলানা মোঃ নূরে আলম (সাল্লামাহুল্লাহু) তিনি জ্ঞানের সুগভীর মহাসাগরে অবগাহন করে জ্ঞান ও বিদ্যা অর্জনে যথেষ্ট পরিশ্রমের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি এ মহা সাগরে ডুব দিয়ে মহামূল্যবান অনেক হীরা-মাণিকও হস্তগত করেছেন । এক্ষনে তিনি সেই মহারত্ম থেকে নির্বাচন করে একটি ক্ষুদ্র ঝাড়বাতি সাজিয়েছেন যার মাধ্যমে তিনি তার স্বদেশী মুসলমানসহ মানবজাতির গবেষকদের জন্যে মুক্তির পথ এমনভাবে সুস্পষ্ট করেছেন যে তা শুধু পথই আলোকিত করবে না বরং সে পথের আকর্ষণও কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে দিবে। তিনি তার বইয়ের নামকরণ করেছেন মুক্তির পথে । এই গবেষণার পথে মাওঃ নূরে আলম যথেষ্ট কষ্ট স্বীকার করেছেন। আর এক্ষেত্রে জনাব হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমীন শেখ আস্-সামী আল্ গুরাইরী (আবু আনফাল) সাহেব তাকে দিক নির্দেশনার ব্যাপারে কোন প্রকার ত্রুটি করেননি বরং তিনি একজন দয়ালু ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং উদ্ধৃতি সমূহের উপর নজর রেখেছেন পরিশ্রমের সাথে। ফলে উক্ত বাতির সৌন্দর্য আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

যাহরা একাডেমী -র সকল সদস্যদের পক্ষ থেকে আমি এবং আমাদের একাডেমীর সম্মানিত প্রধান পরিচালক জনাব হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমীন আল্লামা আলহাজ্ব শেখ সাব্বির হাসান মেইসামী ,উক্ত গবেষকদ্বয়ের প্রতি জানাই অশেষ ধন্যবাদ। আর আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি তিনি যেন বিশ্ব মুসলিমকে জ্ঞানের আলো বিতরণ করে মানবতার কল্যাণ ও পরিপূর্ণতার সকল সরঞ্জাম সুবন্দোবস্ত করার তৌফিক দান করেন। সাথে সাথে একাডেমীর সকল সদস্য ও গবেষক ,বিশেষতঃ এ গ্রন্থকার ও তার লেখার দিক নির্দেশকের ঐকান্তিকতা ও দ্বীনের খেদমত করার সুযোগ বৃদ্ধির জন্যে মহান আল্লাহর নিকট দোয়া প্রার্থনা করছি।

সাইয়্যেদ হুসাইন মুর্তুজা নাকাভী

27 শে শা বান 1420 হিঃ

হাওযা-ই-ইলমিয়া ,ক্কোম

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান।

2

অধ্যাপক আসসামী আল্ গুরাইরীর বক্তব্য

উপস্থিত এ গ্রন্থে আলোচিত বিষয়াবলীর প্রধান লক্ষ্য মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির প্রসার ও বিকাশ সাধন। কেননা ইসলাম হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তি সংশ্লিষ্ট জীবন্ত একটি দেহের আবরণের ন্যায়। তাই ন্যায়সংগত কারণেই ইসলামী চিন্তা-বুদ্ধি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত।

ক) ঐশ্বরীক ও বৈষয়িক বুদ্ধিবৃত্তি।

খ) অলৌকিক ও উদ্ভাবনাময়ী বুদ্ধিবৃত্তি।

গ) বিজ্ঞ বুদ্ধিবৃত্তি ও বর্ণনাময়ী বুদ্ধিবৃত্তি।

ঘ) বিশ্বাসগত বুদ্ধিবৃত্তি ও সমালোচক বুদ্ধিবৃত্তি এবং

ঙ) ধারণাগত বুদ্ধিবৃত্তি ও জ্ঞানগত বুদ্ধিবৃত্তি।

আপনাদের সামনে উপস্থিত বর্তমান গ্রন্থটি বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ লাভে পরিমিত সাহায্য করতে সক্ষম। লেখক এ বইটিতে অত্যন্ত শক্তিশালী তাত্ত্বিক আলোচনা উপস্থাপন করেছেন। কোন অন্ধ অনুকরণ এবং বিশ্বাস সম্পর্কিত উদ্দীপনাময়ী ও চলমান গতানুগতিক আলোচনা এতে স্থান পায়নি বরং গ্রন্থটির সকল আলোচনাই হয়েছে সম্পূর্ণ সত্য এবং সুপ্রমানিত তথ্যসমূহের উপর ভিত্তি করে। আমরা সুস্থ বুদ্ধি ও বিবেককে কখনো বিতাড়িত করি না বরং একই সঙ্গে রাসূল (সঃ) কর্তৃক বর্ণিত দলীলের উপর স্থবির বুদ্ধিবৃত্তি এবং মানব বুদ্ধিবৃত্তির সমান ব্যবহারের পক্ষপাতি। কেননা তালাবদ্ধ চিন্তা-ভাবনা থেকে মুক্তির চাবি কাঠি হচ্ছে এ বুদ্ধিবৃত্তি। ফলে এরই মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঠিক দিক নির্দেশনা পেতে পারি। সাথে সাথে এ বুদ্ধিবৃত্তি আমাদেরকে এও বলে দেয় যে কোন্ বিষয়টি বিবেক প্রসূত আর কোনটি বিবেক-বহির্ভূত। এ গ্রন্থে বিভিন্ন সহজ বোধগম্য উদাহরণের মাধ্যমে চিন্তার বিকাশ সাধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে যথার্থভাবে ,যেন পরবর্তীতে অন্যান্য চিন্তাবিদ ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিবর্গ এ পথে নিজেদের পরিশ্রম ব্যয় করতে এগিয়ে আসেন। পরিশেষে আমি লেখকের সর্বাঙ্গীণ সফলতা কামনা করছি।

-আসসামী আল্ গুরাইরী

3

প্রাথমিক কথা

হতাশাগ্রস্থ এ পৃথিবী। মুক্তির সন্ধানে দিক-বিদিক ছুটে বেড়াচ্ছে আজকের মানবকুল। ফলে কখনো পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদের মরিচিকায় আট্কে পড়ছে আবার কখনো প্রাচ্যের সাম্রাজ্যবাদের ধুম্রজালে বন্দি হয়ে শ্বাসরুদ্ধকর ও মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হয়েছে মানুষ। কিন্তু তারা মুক্তি কি পেয়েছে ? এটা নিঃসন্দেহে সত্য যে ,কোন তন্ত্র বা মতবাদ-ই মানব কল্যাণের সকল দিক বিবেচনা করে রচিত হয়নি। আর তাই এমতাবস্থায় এ সকল মতবাদের নিশ্চিত পরিণাম হিসেবে বর্তমান বিশ্বকে উপহার দিয়েছে নিরাপত্তাহীনতা ,অশান্তি ও অরাজকতা। ফলে পথহারা হয়ে মানুষ ছুটে বেড়াচ্ছে প্রকৃত মুক্তি ও শান্তির সন্ধানে।

একজন আইন প্রণয়নকারীর জন্যে প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো অতীত ,বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে নিখুত ও পরিপূর্ণ জ্ঞান ধারণ করা। আর এ কাজটি একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর-ই জন্যে সম্ভব। সুতরাং তার আইন অনুসরণের মাধ্যমেই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

আল্লাহ তাআলা রচিত আল্-কোরআন আমাদের জন্যে ইহকালের কল্যাণ ও পরকালের মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। আল-কোরআন হচ্ছে মানবজাতির মুক্তির সনদ। তাই আজকে সময় এসেছে সেই মহান সৃষ্টিকর্তাকে নূতন করে চেনার। মানব রচিত বিভিন্ন অসাড় তন্ত্র-মন্ত্রের বেড়াজাল ভেঙ্গে প্রকৃত কল্যাণদাতা মুক্তিদাতার সত্যকার পরিচয় জানা আজকের মুক্তিকামী মানুষের একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। বর্তমান পুস্তকটি সকল কল্যাণকামী ও শান্তিকামী মানুষের চিন্তার কপাট উম্মুক্ত করে বিশুদ্ধ ও বিকশিত জ্ঞান অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে মহান সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রকৃত ও সঠিক পরিচয় এবং তাঁর গুণাবলীর খাঁটি অনুভূতি কোনক্রমে বিভিন্ন পরিভাষায় সীমাবদ্ধতায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের সৃষ্টি এ পরিভাষা আল্লাহ্ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ও সঠিক জ্ঞান-বুদ্ধিতে যতটুকু সম্ভবপর হয়েছে ,তাঁর প্রকৃত পরিচয়ের কিছু ধারণা উপলদ্ধি বোধের কাছাকাছি করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

যারা ধর্মহীন তথা সেকুলার জীবন যাপনে অভ্যস্থ ,যারা বাস্তবাদী চিন্তা চেতনায় নিজেদের মন-মগজকে ভরে দিয়েছে তারা এ পুস্তক পাঠে উপকৃত হয়ে ধর্মীয় জীবনে ফিরে আসতে পারেন। কেননা ধর্মের মূল প্রবর্তক এ বিশ্বের বিধানকর্তা। যেমনি করে বিশ্ব-বিধাতার তাকভীন তথা সৃষ্টিজগতে আপন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত এবং তাঁরই প্রবর্তীত বিধান অনুযায়ী বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের পরিচালিত হচ্ছে তেমনি করে তাশরীয়ি জগতে তথা তাঁর সৃষ্টির সেরা জীবের জন্যেও নির্দিষ্ট বিধিবিধান অবতীর্ণ করেছেন। আর এ সকল বিধি-বিধানের সমষ্টিই হল ধর্ম। ব্যক্তি জীবন থেকে বৃহত্তর রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে খোদায়ী বিধান মানুষের কল্যাণ ও সৌভাগ্যের জন্যে প্রবর্তন করেছেন মহান প্রভু। তাই তাঁকে চিনে তাঁর অস্তিত্বের স্বীকৃতি দিয়ে একটি মানুষের শুরু হয় ধর্মীয় জীবনের যাত্রা। একজন মানুষ যখন অন্তরাত্মা দিয়ে গভীরভাবে উপলব্ধি করবে যে তার স্রষ্টা ও প্রভু সর্বদা সর্বক্ষেত্রে বিরাজমান তাকে প্রতিনিয়ত নিয়ন্ত্রন করছে ,তখন সে বেহাল্লাপনা ও লাগামহীন জীবন যাপন ত্যাগ করে বিশ্ব প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পন করে তাঁরই বিধি-বিধান মাথা পেতে নিতে বাধ্য হবে। আর এভাবেই একজন মানুষ তার প্রকৃত আত্ম পরিচয়ের সন্ধান লাভে সমর্থ হবে। অপরদিকে যারা ধর্মীয় জীবন-যাপন তথা ধর্মীয় অনুশাষন মেনে চলেছেন তারাও যদি এ বইটি পাঠ করেন তাহলেও তাদের ধর্মীয় জীবনে একগুয়েমীতা ,অজ্ঞতা ,খামখেয়ালীপানা ও স্রোতের মুখে খড়কুটোর মত ভেসে চলা অনিচ্ছায় এবং অজান্তে ধর্মীয় জীবন পালনের ক্ষেত্রে একাগ্রতা ও ঐকান্তিকতা পুনরায় ফিরে আসতে পারে। এ পুস্তকে আলোচনার বিভিন্ন ধাপে অনেক সময় কিছু তুলনামূলক দার্শনিক ও কঠিন বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে ,যদিও বইটি সকলের সহজ বোধগম্যতার প্রতি দৃষ্টি রেখে লেখার চেষ্টায় কোন প্রকার ত্রুটি করা হয়নি। তারপরও সকল স্তরের বাংলা ভাষাভাষী ভ্রাতা ও ভগ্নিগণ যেন আমার এ গ্রন্থ থেকে উপকৃত হতে পারেন সে জন্যে এ ক্ষেত্রে কঠিন ও সহজ তথা উভয় প্রকার আলোচনার সুত্রপাত করা হয়েছে।

আজকের অশান্ত পৃথিবীতে মানুষ যেন তার প্রকৃত স্রষ্টা ও ত্রাণকর্তাকে চিনে মুক্তির পথকে সুগম করতে পারে সে কারণেই আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। মানবতার কল্যাণে একটি নূতন দিগন্ত উম্মোচন করুন এ পুস্তকে সে কামনাই করছি। অবশেষে সুপ্রিয় পাঠক মহলের সেবায় নিবেদিত আমার এ যৎসামান্য শ্রমটুকু সার্থক হলে নিজেকে ধন্য মনে করবো। -

মোঃ নূরে আলম।

4

এ বিশ্ব

বিশ্ব-সৃষ্টি কতই না সুন্দর! মনোরম সব কিছু। নিখুঁত ভাবে সাজানো রয়েছে এ জগতের প্রতিটি বস্তু। নভোমন্ডল ,গ্রহসমূহ ,নক্ষত্ররাজি ,বায়ুমন্ডল ,নদ-নদী ,সাগর-মহাসাগর ,বন-জঙ্গল ও পাহাড়-পর্বত সব কিছুই এক নির্দিষ্ট পথে ,নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিভ্রমণ ও পরিচালিত হচ্ছে।

পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীর বস্তুনিষ্ঠ সত্তা নিয়ে পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে স্পষ্টত-ই আমাদের কাছে সে বস্তুর অন্তর্নিহিত সব সৃষ্টি নিপূণতা ও রহস্য উদ্ঘাটন হয়ে যায়। তবু এখনো বহু প্রাণী সমুদ্রের তলদেশে অজানা রয়ে গেছে যা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে অক্ষম এখনও অথবা প্রাপ্ত প্রাণীর গুপ্ত নিপূণতা সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে ওয়াকেবহাল হতে আরো প্রচুর সময়ের প্রয়োজন বলে মনে করেন।

এ বস্তজগতের প্রতিটি প্রাণী ও বস্তু রহস্যময়। এর সৃষ্টি ধারা ,আকৃতি ধারণ ,জন্ম লাভ ও বৃদ্ধির সূচারু কার্যপ্রণালী সমস্ত কিছুই আমাদের বুদ্ধির গভীরে বিশদভাবে নাড়া দেয় এবং চিন্তাশীলদের চিন্তায় তাক লাগিয়ে দেয়।

সূর্য একটি গোলাকার অগ্নিকুন্ড যা অনাদিকাল থেকে আলো ও তাপ দিয়ে পৃথিবীর জীব ও জগতকে প্রভাবিত করছে। সমুদ্রের ঢেউ ,নদীর জোয়ার ভাটা ইত্যাদি সকল কিছু এমনকি মানুষের প্রতিটি স্পর্শকাতর অঙ্গ-প্রতঙ্গ পর্যন্ত সূর্য দ্বারা প্রভাবিত। চন্দ্র আলো বিকিরণ করে রাত্রের অন্ধকারে। পাহাড়-পর্বত ভূ-পৃষ্ঠে খুঁটির কাজ করছে। গাছপালা ,তরুলতা ,বন-জঙ্গল ইত্যাদি পৃথিবীতে বায়ূ দূষণ প্রতিরোধ করে চলছে। আবার মানুষ ছাড়াও ভূপৃষ্ঠে ও ভূগর্ভে ,সাগরের তলদেশে ও উপরিভাগে রয়েছে নান প্রকারের আশ্চর্য প্রাণী। ভূ-পৃষ্ঠের মৃত্তিকা এবং এর রংয়ের প্রকারভেদও প্রচুর। নদ-নদীও সাগরেও রয়েছে কত প্রকার স্বাদের জল। আর বিশ্ব প্রকৃতির যা কিছু নিয়ে আমরা আলোচনা করছি তা অন্যান্য গ্রহসমূহের তুলনায় অত্যন্ত ক্ষুদ্র যা পৃথিবী নামে পরিচিত। এরই মধ্যে সবচেয়ে আশ্চর্য সৃষ্টি হচ্ছে মানুষ। মানব দেহের প্রতিটি অংশই বিষ্ময়কর। আমাদের মস্তিষ্কের ব্রেন সম্বন্ধে সামান্য বিজ্ঞান ভিত্তিক পর্যালোচনা একজন মানুষকে নির্বাক করে দিতে সক্ষম। মানব মস্তিস্কে অবস্থিত স্মৃতিশক্তির বিষয়টা আরো বিষ্ময়কার। মানুষের দেহাভ্যন্তরে হৃৎপিন্ড ,কিডনী ,পাকস্থলী সব কিছুই এক বিশাল জগতের অবতারণা।

এ পৃথিবীর প্রতিটি সৃষ্টিতে আমরা যে নিয়ম-শৃঙ্খলা ও সুসংহতি প্রত্যক্ষ করি তা সাধারণ ও বুদ্ধিজীবি তথা এ উভয় স্তরের মানুষের বিবেক-বিচক্ষণতায় কৌতুহলী জিজ্ঞাসার উদ্রেক ঘটাতে পরিপূর্ণ সহায়ক।

পৃথিবী গতিশীল। পরিবর্তনশীল ও ঘূর্ণায়মান। পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে প্রতিনিয়ত আবর্তিত হচ্ছে। আর এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি বস্তু ও প্রাণী নির্দিষ্ট নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে গতিশীল অবস্থায় রয়েছে। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানীরা তাদের স্ব স্ব গ্রন্থে প্রকৃতির এ সমস্ত দিকগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। এতসব কিছুর মাঝে আমরা যে বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারি তা হল ,বিশ্ব প্রকৃতির সর্বস্তরে এক প্রকার শৃঙ্খলা ,লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও নিয়মনীতি বিরাজমান। এ ব্যাপারে আপনাদের সামনে সৃষ্টিজগতের মাত্র দু টি উপমার সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছি।

5

সৃষ্টিজগতের বিষ্ময়কর উপমা

বাদুড় পাখি

পুষ্প ও কীট পতঙ্গ