2
অধ্যাপক আসসামী আল্ গুরাইরীর বক্তব্য
উপস্থিত এ গ্রন্থে আলোচিত বিষয়াবলীর প্রধান লক্ষ্য মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির প্রসার ও বিকাশ সাধন। কেননা ইসলাম হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তি সংশ্লিষ্ট জীবন্ত একটি দেহের আবরণের ন্যায়। তাই ন্যায়সংগত কারণেই ইসলামী চিন্তা-বুদ্ধি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত।
ক) ঐশ্বরীক ও বৈষয়িক বুদ্ধিবৃত্তি।
খ) অলৌকিক ও উদ্ভাবনাময়ী বুদ্ধিবৃত্তি।
গ) বিজ্ঞ বুদ্ধিবৃত্তি ও বর্ণনাময়ী বুদ্ধিবৃত্তি।
ঘ) বিশ্বাসগত বুদ্ধিবৃত্তি ও সমালোচক বুদ্ধিবৃত্তি এবং
ঙ) ধারণাগত বুদ্ধিবৃত্তি ও জ্ঞানগত বুদ্ধিবৃত্তি।
আপনাদের সামনে উপস্থিত বর্তমান গ্রন্থটি বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ লাভে পরিমিত সাহায্য করতে সক্ষম। লেখক এ বইটিতে অত্যন্ত শক্তিশালী তাত্ত্বিক আলোচনা উপস্থাপন করেছেন। কোন অন্ধ অনুকরণ এবং বিশ্বাস সম্পর্কিত উদ্দীপনাময়ী ও চলমান গতানুগতিক আলোচনা এতে স্থান পায়নি বরং গ্রন্থটির সকল আলোচনাই হয়েছে সম্পূর্ণ সত্য এবং সুপ্রমানিত তথ্যসমূহের উপর ভিত্তি করে। আমরা সুস্থ বুদ্ধি ও বিবেককে কখনো বিতাড়িত করি না বরং একই সঙ্গে রাসূল (সঃ) কর্তৃক বর্ণিত দলীলের উপর স্থবির বুদ্ধিবৃত্তি এবং মানব বুদ্ধিবৃত্তির সমান ব্যবহারের পক্ষপাতি। কেননা তালাবদ্ধ চিন্তা-ভাবনা থেকে মুক্তির চাবি কাঠি হচ্ছে এ বুদ্ধিবৃত্তি। ফলে এরই মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সঠিক দিক নির্দেশনা পেতে পারি। সাথে সাথে এ বুদ্ধিবৃত্তি আমাদেরকে এও বলে দেয় যে কোন্ বিষয়টি বিবেক প্রসূত আর কোনটি বিবেক-বহির্ভূত। এ গ্রন্থে বিভিন্ন সহজ বোধগম্য উদাহরণের মাধ্যমে চিন্তার বিকাশ সাধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে যথার্থভাবে ,যেন পরবর্তীতে অন্যান্য চিন্তাবিদ ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিবর্গ এ পথে নিজেদের পরিশ্রম ব্যয় করতে এগিয়ে আসেন। পরিশেষে আমি লেখকের সর্বাঙ্গীণ সফলতা কামনা করছি।
-আসসামী আল্ গুরাইরী
3
প্রাথমিক কথা
হতাশাগ্রস্থ এ পৃথিবী। মুক্তির সন্ধানে দিক-বিদিক ছুটে বেড়াচ্ছে আজকের মানবকুল। ফলে কখনো পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদের মরিচিকায় আট্কে পড়ছে আবার কখনো প্রাচ্যের সাম্রাজ্যবাদের ধুম্রজালে বন্দি হয়ে শ্বাসরুদ্ধকর ও মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হয়েছে মানুষ। কিন্তু তারা মুক্তি কি পেয়েছে ? এটা নিঃসন্দেহে সত্য যে ,কোন তন্ত্র বা মতবাদ-ই মানব কল্যাণের সকল দিক বিবেচনা করে রচিত হয়নি। আর তাই এমতাবস্থায় এ সকল মতবাদের নিশ্চিত পরিণাম হিসেবে বর্তমান বিশ্বকে উপহার দিয়েছে নিরাপত্তাহীনতা ,অশান্তি ও অরাজকতা। ফলে পথহারা হয়ে মানুষ ছুটে বেড়াচ্ছে প্রকৃত মুক্তি ও শান্তির সন্ধানে।
একজন আইন প্রণয়নকারীর জন্যে প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো অতীত ,বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে নিখুত ও পরিপূর্ণ জ্ঞান ধারণ করা। আর এ কাজটি একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর-ই জন্যে সম্ভব। সুতরাং তার আইন অনুসরণের মাধ্যমেই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
আল্লাহ তাআলা রচিত আল্-কোরআন আমাদের জন্যে ইহকালের কল্যাণ ও পরকালের মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। আল-কোরআন হচ্ছে মানবজাতির মুক্তির সনদ। তাই আজকে সময় এসেছে সেই মহান সৃষ্টিকর্তাকে নূতন করে চেনার। মানব রচিত বিভিন্ন অসাড় তন্ত্র-মন্ত্রের বেড়াজাল ভেঙ্গে প্রকৃত কল্যাণদাতা মুক্তিদাতার সত্যকার পরিচয় জানা আজকের মুক্তিকামী মানুষের একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। বর্তমান পুস্তকটি সকল কল্যাণকামী ও শান্তিকামী মানুষের চিন্তার কপাট উম্মুক্ত করে বিশুদ্ধ ও বিকশিত জ্ঞান অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে মহান সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রকৃত ও সঠিক পরিচয় এবং তাঁর গুণাবলীর খাঁটি অনুভূতি কোনক্রমে বিভিন্ন পরিভাষায় সীমাবদ্ধতায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের সৃষ্টি এ পরিভাষা আল্লাহ্ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ও সঠিক জ্ঞান-বুদ্ধিতে যতটুকু সম্ভবপর হয়েছে ,তাঁর প্রকৃত পরিচয়ের কিছু ধারণা উপলদ্ধি বোধের কাছাকাছি করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
যারা ধর্মহীন তথা সেকুলার জীবন যাপনে অভ্যস্থ ,যারা বাস্তবাদী চিন্তা চেতনায় নিজেদের মন-মগজকে ভরে দিয়েছে তারা এ পুস্তক পাঠে উপকৃত হয়ে ধর্মীয় জীবনে ফিরে আসতে পারেন। কেননা ধর্মের মূল প্রবর্তক এ বিশ্বের বিধানকর্তা। যেমনি করে বিশ্ব-বিধাতার‘
তাকভীন’
তথা সৃষ্টিজগতে আপন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত এবং তাঁরই প্রবর্তীত বিধান অনুযায়ী বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের পরিচালিত হচ্ছে তেমনি করে‘
তাশরীয়ি’
জগতে তথা তাঁর সৃষ্টির সেরা জীবের জন্যেও নির্দিষ্ট বিধিবিধান অবতীর্ণ করেছেন। আর এ সকল বিধি-বিধানের সমষ্টিই হল ধর্ম। ব্যক্তি জীবন থেকে বৃহত্তর রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে খোদায়ী বিধান মানুষের কল্যাণ ও সৌভাগ্যের জন্যে প্রবর্তন করেছেন মহান প্রভু। তাই তাঁকে চিনে তাঁর অস্তিত্বের স্বীকৃতি দিয়ে একটি মানুষের শুরু হয় ধর্মীয় জীবনের যাত্রা। একজন মানুষ যখন অন্তরাত্মা দিয়ে গভীরভাবে উপলব্ধি করবে যে তার স্রষ্টা ও প্রভু সর্বদা সর্বক্ষেত্রে বিরাজমান তাকে প্রতিনিয়ত নিয়ন্ত্রন করছে ,তখন সে বেহাল্লাপনা ও লাগামহীন জীবন যাপন ত্যাগ করে বিশ্ব প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পন করে তাঁরই বিধি-বিধান মাথা পেতে নিতে বাধ্য হবে। আর এভাবেই একজন মানুষ তার প্রকৃত আত্ম পরিচয়ের সন্ধান লাভে সমর্থ হবে। অপরদিকে যারা ধর্মীয় জীবন-যাপন তথা ধর্মীয় অনুশাষন মেনে চলেছেন তারাও যদি এ বইটি পাঠ করেন তাহলেও তাদের ধর্মীয় জীবনে একগুয়েমীতা ,অজ্ঞতা ,খামখেয়ালীপানা ও স্রোতের মুখে খড়কুটোর মত ভেসে চলা অনিচ্ছায় এবং অজান্তে ধর্মীয় জীবন পালনের ক্ষেত্রে একাগ্রতা ও ঐকান্তিকতা পুনরায় ফিরে আসতে পারে। এ পুস্তকে আলোচনার বিভিন্ন ধাপে অনেক সময় কিছু তুলনামূলক দার্শনিক ও কঠিন বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে ,যদিও বইটি সকলের সহজ বোধগম্যতার প্রতি দৃষ্টি রেখে লেখার চেষ্টায় কোন প্রকার ত্রুটি করা হয়নি। তারপরও সকল স্তরের বাংলা ভাষাভাষী ভ্রাতা ও ভগ্নিগণ যেন আমার এ গ্রন্থ থেকে উপকৃত হতে পারেন সে জন্যে এ ক্ষেত্রে কঠিন ও সহজ তথা উভয় প্রকার আলোচনার সুত্রপাত করা হয়েছে।
আজকের অশান্ত পৃথিবীতে মানুষ যেন তার প্রকৃত স্রষ্টা ও ত্রাণকর্তাকে চিনে মুক্তির পথকে সুগম করতে পারে সে কারণেই আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। মানবতার কল্যাণে একটি নূতন দিগন্ত উম্মোচন করুন এ পুস্তকে সে কামনাই করছি। অবশেষে সুপ্রিয় পাঠক মহলের সেবায় নিবেদিত আমার এ যৎসামান্য শ্রমটুকু সার্থক হলে নিজেকে ধন্য মনে করবো। -
মোঃ নূরে আলম।